ভারতের কলকাতায় নৃশংসভাবে খুন হওয়া ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যা মামলার অন্যতম দুই পলাতক আসামি মোস্তাফিজুর রহমান ফকির ও ফয়সাল আলী সাজীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
আজ বুধবার দুপুর থেকে বিকাল পর্যন্ত খাগড়াছড়ির পাতাল কালীমন্দিরের দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় হেলিকপ্টার দিয়ে সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
তাদের গ্রেপ্তারে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদের নেতৃত্বে ডিবির একাধিক টিম দুপুর থেকে খাগড়াছড়ি ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন পাহাড়ে হেলিকপ্টার দিয়ে সাঁড়াশি অভিযান চালায় বলে জানা গেছে।
ডিবি জানায়, নাম-পরিচয় গোপন করে খাগড়াছড়ির পাতাল কালীমন্দির এলাকায় সনাতন ধর্মাবলম্বী সেজে লুকিয়ে ছিলেন গ্রেপ্তার ফয়সাল ও মোস্তাফিজ। তারা পলাশ রায় ও শিমুল রায় নাম ধারণ করেছিলেন। সনাতন ধর্মাবলম্বী সেজে তারা ২৩ দিন ওই কালীমন্দিরে ছিলেন।
গ্রেপ্তারের পর খাগড়াছড়ি থেকে দুই আসামিকে হেলিকপ্টারে ঢাকায় আনা হয়। রাজধানীর পূর্বাচলে হেলিকপ্টারে নেমে এসব তথ্য জানান ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।
তিনি বলেন, মঙ্গলবার খবর পাওয়া যায়, খাগড়াছড়ির দুর্গম পাহাড়ে লুকিয়ে রয়েছেন ফয়সাল ও মোস্তাফিজ। খবর পেয়ে ডিবির একটি টিম আগেই পাহাড়ে গিয়ে অভিযান শুরু করে। পরে আজ আমরা গিয়ে হেলিকপ্টার দিয়ে সাঁড়াশি অভিযান চালাই।
হারুন অর রশীদ বলেন, অজ্ঞান করার জন্য সংসদ সদস্য আনারের নাকে ক্লোরোফরম দেন ফয়সাল। আর মোস্তাফিজ আনারকে উলঙ্গ করে চেয়ারে বেঁধে রাখেন। শিমুল ভূঁইয়ার মূল দুই সহযোগী ছিলেন আজ গ্রেপ্তার ফয়সাল ও মোস্তাফিজ।
ডিবিপ্রধান আরও বলেন, খাগড়াছড়ির পাতাল কালী মন্দির এলাকায় সনাতন ধর্মাবলম্বী সেজে পলাশ রায় ও শিমুল রায় নাম ধারণ করেন ফয়সাল ও মোস্তাফিজ। নাম-পরিচয় গোপন করে ছদ্মবেশে সেই কালী মন্দিরেই থাকতেন দুজন। তারা ২৩ দিন ওই কালী মন্দিরে ছিলেন। আনারকে হত্যার পর ১৯ মে ফয়সাল ও মোস্তাফিজ দেশে ফেরেন।
১৯ মে রাতে আক্তারুজ্জামান শাহীনের সঙ্গে কথা বলেন ফয়সাল ও মোস্তাফিজ। এরপর শাহীন তাদের মাত্র ৩০ হাজার টাকা দেন। এরপর তারা দুর্গম পাহাড়ের ওই কালী মন্দিরে চলে যান। তাদের দুজনকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদে আরও তথ্য-উপাত্ত বের করা হবে বলেও জানান হারুন অর রশীদ।
হারুন বলেন, কলকাতার যে ফ্ল্যাটে এমপি আনারকে হত্যা করা হয়, সেই কিলিং মিশনে ছিলেন সাতজন। হত্যাকাণ্ডে জড়িত শিমুল ভূঁইয়ার পর দ্বিতীয় ও তৃতীয় হলেন ফয়সাল ও মোস্তাফিজ। হত্যাকাণ্ডে মূল পরিকল্পনাকারী আক্তারুজ্জামান শাহীনকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা এখন আমাদের মূল কাজ। এ ছাড়া এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে আরও যারা জড়িত, তাদের প্রত্যেককে আমরা আইনের আওতায় আনব। বাংলাদেশ, ভারত ও নেপাল মিলিয়ে মোট নয়জন গ্রেপ্তার হলেন হত্যার ঘটনায়।
পরে গ্রেফতারকৃত দুই আসামিকে রাজধানীর মিন্টো রোডের ডিবি কার্যালয়ে নেওয়া হয়।
ডিবি সূত্র বলছে, সন্দেহভাজন আসামিদের মধ্যে মোস্তাফিজুর ও ফয়সাল এমপি আনার খুন হওয়ার আগে গত ২ মে কলকাতায় যান। তারা দেশে ফিরে আসেন ১৯ মে। এই দুজনকে হন্যে হয়ে খুঁজছিল ডিবি। দুজনের বাড়ি খুলনার ফুলতলায়। খুনের পরিকল্পনা বাস্তবায়নকারী হিসেবে চিহ্নিত শিমুল ভূঁইয়ার বাড়িও একই এলাকায় এবং দুজনের ঘনিষ্ট। ফয়সাল ও মোস্তাফিজের কাছে এমপি আনার হত্যাকাণ্ডের অনেক তথ্য-উপাত্ত রয়েছে। তাদের কাছ থেকে অনেক কিছু জানা যাবে বলে জানিয়েছেন ডিবির তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
গ্যাস বাবুর মোবাইল উদ্ধারে ঝিনাইদহের পুকুরে অভিযান
এদিকে, এমপি আনার হত্যা মামলার অন্যতম আসামি কাজী কামাল আহমেদ বাবু ওরফে গ্যাস বাবুকে নিয়ে তার ফেলে দেওয়া মোবাইল ফোনসহ অন্যান্য আলামত উদ্ধারে ঝিনাইদহে চালানো অভিযান শেষ হয়েছে। তবে গ্যাস বাবুর ফেলে দেয়া কোনো ফোন এখনো পাওয়া যায়নি।
ঝিনাইদহের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ফারুক আযমের নেতৃত্বে বুধবার সকাল ১১টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত জেলেদের পুকুরে নামিয়ে অভিযান চালানো হয়। অভিযান শেষ হলেও প্রাথমিকভাবে কোনো আলামত উদ্ধার হয়নি বলে জানা গেছে।
এরইমধ্যে দুপুর ১২ টার দিকে উদ্ধার অভিযান পরিদর্শনে ঢাকা থেকে হেলিকপ্টারে ঝিনাইদহে আসেন ডিএমপির গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) প্রধান হারুন অর রশীদ।
অভিযান শেষে ডিবি প্রধান বলেন, এ হত্যায় মোট ৭ জন অংশ নেয়। তাদের মধ্যে ৫ জনকে আমরা গ্রেপ্তার করেছি। বাকি দুজনকে গ্রেপ্তারে জোর প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। তারা নদী, সাগরে বা মাটির নিচে যেখানেই থাকুক না কেন আমরা তাদের গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হবো। তবে কোনো নিরপরাধ ব্যক্তিকে হয়রানি করা হবে না এবং অভিযুক্ত কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। গ্যাস বাবুকে নিয়ে তার ফেলে দেওয়া মোবাইল ফোন তিনটি উদ্ধারের চেষ্টা করা হচ্ছে।
এ সময় এমপি আনার হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিএমপির সহকারী কমিশনার (ডিবি) মাহফুজুর রহমান, ঝিনাইদহের পুলিশ সুপার আজিম উল আহসানসহ পুলিশ কর্মকর্তরা উপস্থিত ছিলেন।
একদিন আগে গত মঙ্গলবার ডিবি প্রধান হারুন অর রশীদ বলেছিলেন, বাবু আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। তাতে মোবাইল ফোনগুলো জলাশয়ে ফেলে দেয়ার কথা বেরিয়ে আসে। বাবুর জবানবন্দি অনুযায়ী, এক নেতার নির্দেশে তিনি ফোনগুলো আশপাশের কোনো নালা বা পুকুরে ফেলে দিয়েছেন। পানি থেকে আলামত উদ্ধারে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি ও জেলেদের কাজে লাগানো হবে। স্থানীয় পুলিশ জলাশয়গুলো নজরদারিতে রেখেছে, যাতে কেউ ফোন সরিয়ে ফেলতে না পারে।
তিনি বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে প্রথমে বাবু দাবি করেন, মোবাইল ফোনগুলো হারিয়ে গেছে। তিনি এ ঘটনায় জিডি (সাধারণ ডায়রি) করেছেন। পরে নতুন তথ্য উঠে আসে, ফেলে দেয়া ওই ফোনগুলো দিয়েই হত্যাকাণ্ডের মূল আসামি আমানুল্লাহ ওরফে শিমুল ভূঁইয়ার সঙ্গে বহুবার কথা বলেছেন বাবু। অসংখ্য মেসেজ ও তথ্য আদান-প্রদান করেছেন। তাই সেগুলোতে ডিজিটাল তথ্য-উপাত্ত পাওয়ার আশা করা হচ্ছে।
এক প্রশ্নের জবাবে ডিবিপ্রধান বলেন, তদন্ত চলমান থাকায় এখনই কে দোষী আর কে নির্দোষ, তা বলা যাচ্ছে না। তবে কোনো নিরপরাধ ব্যক্তিকে হয়রানি করা হবে না। আবার কোনো দোষী ব্যক্তিকে ছাড় দেওয়া হবে না।
তিনি আরও বলেন, হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনাকারী আক্তারুজ্জামান শাহীন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বন্দি বিনিময় চুক্তি রয়েছে। ভারতের কাছেও শাহীন মোস্ট ওয়ান্টেড। তাই ভারত চেষ্টা করবে শাহীনকে ফিরিয়ে আনার জন্য।
এর আগে গত ৬ জুন রাতে ঝিনাইদহ শহরের আদর্শপাড়া এলাকা থেকে গ্যাস বাবুকে আটক করে ডিবির একটি দল। বাবু ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক। আনার হত্যা মামলার অন্যতম আসামি শিমুল ভূঁইয়ার নিকটাত্মীয় এই বাবু।
প্রসঙ্গত, এমপি আনার চিকিৎসা জন্য গত ১২ মে দুপুরে দর্শনা-গেদে সীমান্ত হয়ে ভারতের কলকাতায় যান। প্রথম দু’দিন যোগাযোগ থাকলেও ১৪ মে থেকে পরিবারের সদস্যরা তার খোঁজ পাচ্ছিলেন না। পরে আনোয়ারুলের পরিবার পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে যোগাযোগ করা হয়। পরে ভারতের দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশন ও কলকাতায় বাংলাদেশ উপ- হাইকমিশনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। এরপর থেকে ওই সংসদ সদস্যের খোঁজে তদন্ত শুরু করে কলকাতা পুলিশ। সংস্থাটি জানায়, দিল্লি ও কলকাতা হাইকমিশনের কাছ থেকে তথ্য পাওয়ার পরই তার খোঁজে তৎপরতা শুরু করে পুলিশ। পরে গত ২২ মে কলকাতার নিউটাউন এলাকার সঞ্জীবা গার্ডেনসের বিইউ ৫৬ নম্বর ফ্ল্যাটে এমপি আনারকে নৃশংসভাবে খুন করা হয় বলে সংবাদ ছড়িয়ে পড়ে।
জুলাই গণহত্যার দায়ে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে একটি অভিযোগে দেওয়া আমৃত্যু কারাদণ্ডের সাজা বাড়িয়ে মৃত্যুদণ্ড চেয়ে আজ আপিল বিভাগে আবেদন করতে যাচ্ছে প্রসিকিউশন। সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, শেখ হাসিনার আমৃত্যু কারাদণ্ডের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ড চেয়ে আজই আপিল দায়ের করা হবে এবং এরপর ব্রিফিংয়ে বিস্তারিত তথ্য জানানো হবে।
এর আগে, গত ১৭ নভেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে একটি অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড এবং অন্য একটি অভিযোগে আমৃত্যু কারাদণ্ড প্রদান করেন। একইসঙ্গে দেশে থাকা তাদের সব সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশ দেন আদালত। প্রসিকিউশন জানিয়েছে, তারা রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি পর্যালোচনা করে আমৃত্যু কারাদণ্ডের সাজাটিকে মৃত্যুদণ্ডে উন্নীত করার জন্য আপিল করার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। আইন অনুযায়ী রায় ঘোষণার ৩০ দিনের মধ্যেই এই আপিল দায়েরের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
ট্রাইব্যুনালের রায়ে প্রথম অভিযোগে বলা হয়, ২০২৪ সালের ১৪ জুলাই গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ভিসি মাকসুদ কামালের সঙ্গে কথোপকথনে শেখ হাসিনা আন্দোলনকারীদের ‘রাজাকার’ আখ্যা দিয়ে উসকানিমূলক বক্তব্য দেন। এছাড়া আসামিরা অপরাধ দমনে অধীনস্থদের বাধা দেননি, যার পরিপ্রেক্ষিতে রংপুরে আবু সাঈদ পুলিশের গুলিতে নিহত হন। এসব অপরাধে শেখ হাসিনা ও কামালকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেওয়া হয়, যার বিরুদ্ধেই আজ আপিল করছে প্রসিকিউশন।
অন্যদিকে, দ্বিতীয় অভিযোগে শেখ হাসিনা ও কামালকে আগেই মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এই অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, সাবেক মেয়র ফজলে নূর তাপস ও জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনুর সঙ্গে ফোনালাপে শেখ হাসিনা ড্রোন, হেলিকপ্টার ও মারণাস্ত্র ব্যবহার করে হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন। এর ফলে ৫ আগস্ট চানখারপুলে ছয়জন এবং সাভারের আশুলিয়ায় ছয়জনকে হত্যা করে লাশ পুড়িয়ে ফেলার মতো নৃশংস ঘটনা ঘটে। উল্লেখ্য, এই মামলায় রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে উভয় অভিযোগে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। বাজেয়াপ্তকৃত সম্পদ জুলাই আন্দোলনে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে বিতরণের নির্দেশও দিয়েছেন আদালত।
সাংবাদিক আনিস আলমগীর, অভিনেত্রী মেহের আফরোজ শাওন, মারিয়া কিশপট্ট এবং ইমতু রাতিশ ইমতিয়াজ—এই চারজনের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। গত রবিবার (১৪ ডিসেম্বর) রাতে রাজধানীর উত্তরা পশ্চিম থানায় জুলাই রেভ্যুলশনারি অ্যালায়েন্সের কেন্দ্রীয় সংগঠক আরিয়ান আহমেদ বাদী হয়ে এই অভিযোগটি দায়ের করেন। এদিকে একই রাতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাংবাদিক আনিস আলমগীরকে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি) কার্যালয়ে নেওয়া হয়েছে।
উত্তরা পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী মোহাম্মদ রফিক আহমেদ অভিযোগ দায়েরের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, অভিযোগটি গ্রহণ করা হয়েছে এবং এটি মূলত ‘সাইবার রিলেটেড ইস্যু’। তাই প্রাথমিক সত্যতা যাচাই ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশনার সাপেক্ষে এটিকে মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করার বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের জুলাই মাসে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পর রাজনৈতিক পটপরিবর্তন হলেও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুসারীরা বিভিন্ন কৌশলে দেশে অবস্থান করে রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতা নষ্টের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছেন। অভিযোগকারীর দাবি, গত ৫ আগস্টের পর থেকে অভিযুক্তরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও বিভিন্ন টেলিভিশন টক শোতে অংশ নিয়ে নিষিদ্ধ সংগঠনকে পুনরুজ্জীবিত করার প্রচারণা চালাচ্ছেন, যার মূল উদ্দেশ্য আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন করা। অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, তাদের এসব বক্তব্য ও অনলাইন কার্যক্রমের ফলে নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগ ও যুবলীগের কর্মীরা উসকানি পাচ্ছে এবং রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্র, সহিংসতা ও অবকাঠামো ধ্বংসের মতো কর্মকাণ্ডে জড়িত হচ্ছে।
অন্যদিকে, অভিযোগ দায়েরের রাতেই ধানমন্ডি এলাকার একটি জিম থেকে ব্যায়াম শেষে বের হওয়ার সময় সাংবাদিক আনিস আলমগীরকে ডিবি হেফাজতে নেওয়া হয়। ডিবির প্রধান বিষয়টি নিশ্চিত করে জানিয়েছেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে ডিবি কার্যালয়ে আনা হয়েছে এবং এ বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত পরে জানানো হবে। উল্লেখ্য, সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন টেলিভিশন টক শোতে দেওয়া বক্তব্যের কারণে সাংবাদিক আনিস আলমগীর বেশ আলোচনায় ছিলেন।
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র এবং ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য সংসদ সদস্য প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদিকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি চালানোর ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে অভিযুক্ত সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর একটি সেলফি তুলেছেন, যা সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশ করেছেন।
জুলকারনাইন সায়েরের পোস্ট অনুযায়ী, হামলাকারী ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান এবং তার সহযোগী মোটরসাইকেল চালক আলমগীর হোসেন গত ১২ ডিসেম্বর (শুক্রবার) সন্ধ্যায় ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে প্রবেশ করে। এরপর তাদের জাহাঙ্গীর কবির নানকের পিএস মো. মাসুদুর রহমান বিপ্লব এই ভারতীয় মোবাইল নম্বরটি (+৯১৬০০১৩৯৪০**) ফয়সাল করিম মাসুদকে জোগাড় করে দেন বলে বিশেষ গোয়েন্দা সূত্রের বরাত দিয়ে তিনি জানান।
ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান এই ভারতীয় নম্বর ব্যবহার করে গত রাতে কয়েকটি নম্বরে নিজেদের সেলফি পাঠান, যার মধ্যে একটি ইন্টারসেপ্ট করে ছবিটি পাওয়া যায়। ছবিটি ভারতের আসাম রাজ্যের গুয়াহাটিতে তোলা হয়েছে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
উল্লেখ্য, গত ১২ ডিসেম্বর জুমার নামাজের পর রাজধানীর পুরানা পল্টনের বক্স-কালভার্ট রোডে মোটরসাইকেলে করে এসে চলন্ত রিকশায় থাকা ওসমান হাদির মাথায় গুলি করা হয়। এই হত্যাচেষ্টার ঘটনায় তাঁর পরিবার মামলা দায়ের করেছে। এই হামলার ঘটনায় এখন পর্যন্ত মোট ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন— হামলায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের মালিক, মানবপাচার চক্রের দুজন সহযোগী, সন্দেহভাজন শুটার ফয়সালের স্ত্রী, শ্যালক এবং বান্ধবী।
১৫ ডিসেম্বরের নাটকীয় মুহূর্ত: ভুট্টোর জাতিসংঘ ত্যাগ
১৯৭১ সালের ১৫ ডিসেম্বর, নিউইয়র্কের জাতিসংঘ সদরদপ্তর থেকে পাকিস্তানের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টো এক আবেগঘন বিদায় নেন। সেদিন গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির মধ্যে কুয়াশাচ্ছন্ন আবহাওয়া ছিল। নিরাপত্তা পরিষদের অধিবেশন থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় তাঁর চোখে জল ছিল বলে মার্কিন গণমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে উঠে আসে। ভুট্টো সেদিন অধিবেশনে জাতিসংঘের বিরুদ্ধে আগ্রাসনকে বৈধতা দেওয়ার অভিযোগ তুলে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং বলেন, “রাখুন আপনাদের নিরাপত্তা পরিষদ। লজ্জাজনক আত্মসমর্পণের সঙ্গে আমি যুক্ত হবো না। আমি কোনো ইঁদুর নই। পালাচ্ছি না, পরিষদ ছেড়ে চলে যাচ্ছি।” ভুট্টোর এই নাটকীয় প্রস্থান পরদিন নিউইয়র্ক টাইমসের পাতায় স্থান পায়। এই সময়ে ফ্রান্স ও ব্রিটেনের যৌথ প্রস্তাব এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের উত্থাপিত প্রস্তাবে যুদ্ধবিরতি ও পূর্ব পাকিস্তানের কথিত ‘বিদ্রোহী’দের সাথে রাজনৈতিক সমঝোতার আহ্বান জানানো হয়, যা কূটনীতিকদের কাছে ঢাকার আসন্ন পতনের ইঙ্গিত দেয়।
ষোলো ঘণ্টার আলটিমেটাম এবং আত্মসমর্পণের বার্তা চালাচালি
গুরুত্বপূর্ণ শহর ও ঘাঁটি হারানোর পর পাকিস্তানের শাসকরা পরাজয় নিশ্চিত হয়ে পড়েন। এর আগে ১৪ ডিসেম্বর প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান জেনারেল আমির আবদুল্লাহ খান নিয়াজিকে চিঠি পাঠিয়ে অবিলম্বে যুদ্ধ বন্ধ এবং সৈন্যদের জীবন রক্ষার্থে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন। ইয়াহিয়া খান উল্লেখ করেন যে তিনি ইতিমধ্যেই জাতিসংঘে পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তৎপরতা শুরু করেছেন।
এই বার্তা পাওয়ার পর জেনারেল নিয়াজি ও গভর্নর সামরিক উপদেষ্টা ফরমান আলী যুক্তরাষ্ট্রের কনসাল জেনারেল হার্বার্ট স্পিভ্যাকের সাথে দেখা করে 'সম্মানজনক শর্তসাপেক্ষে যুদ্ধবিরতি'র একটি বার্তা ভারতের কাছে পাঠানোর অনুরোধ জানান। স্পিভ্যাক বার্তাটি দিল্লির বদলে ওয়াশিংটনে পাঠান, যেখান থেকে তা ভারতের তৎকালীন সেনাপ্রধান শ্যাম মানেকশর কাছে পৌঁছায় ১৫ ডিসেম্বর দুপুরে।
জেনারেল মানেকশ সেই বার্তার জবাবে স্পষ্ট জানিয়ে দেন যে, বাংলাদেশে অবস্থানরত পাকিস্তানি সামরিক ও আধা সামরিক বাহিনী আত্মসমর্পণ করলেই কেবল তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে এবং ভারতের পক্ষ থেকে কোনো প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না। তিনি ঢাকায় বিমান হামলা বন্ধের নির্দেশও দেন। আত্মসমর্পণের জন্য তিনি পরদিন সকাল ৯টা পর্যন্ত সময়সীমা বেঁধে দেন, যদিও পরে জে এফ আর জ্যাকবের লেখা অনুযায়ী এই সময়সীমা আরও কয়েক ঘণ্টা বাড়ানো হয়েছিল।
যুদ্ধের শেষ দিনের চিত্র
যুদ্ধের শেষ এই দিনে একদিকে আত্মসমর্পণের বার্তা চালাচালি চলছিল, অন্যদিকে ভারতীয় যুদ্ধবিমান দিনভর পাকিস্তানি বাঙ্কার, আবাসস্থল ও কমান্ড-কেন্দ্রগুলোর ওপর বোমা বর্ষণ করতে থাকে। পাকিস্তানি সেনারা আত্মরক্ষার জন্য কিছু বাঙ্কারের ছাদে হাত-পা বেঁধে স্থানীয়দের শুইয়ে রেখেছিল, যার ফলে ভারতীয় বিমান হামলা মাঝে মাঝে ব্যর্থ হয়। একই সময়ে স্থলপথে মুক্তি ও ভারতীয় সেনারা ঢাকার দিকে দ্রুত অগ্রসর হচ্ছিলেন। নিউইয়র্ক টাইমসের বর্ণনা অনুযায়ী, সেদিন মুক্তিবাহিনীর ঢাকামুখী যাত্রা ছিল বিজয়ীর মতো, পথে সাধারণ মানুষ তাদের শুভেচ্ছা জানাচ্ছিল, তবে নদীতে তখন লাশের স্তূপ ভাসছিল।
১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবসে ৫৪ জন প্যারাট্রুপার বাংলাদেশের পতাকা নিয়ে বিশ্ব রেকর্ড গড়তে যাচ্ছেন। এই ৫৪ জনের মধ্যে একজন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী। তিনি ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদির ছবি আঁকা হেলমেট পরে জাম্প করবেন। রোববার (১৪ ডিসেম্বর) প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে এই তথ্য জানানো হয়।
সেখানে বলা হয়, ‘১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবসে ৫৪ জন প্যারাট্রুপার বাংলাদেশের পতাকা নিয়ে বিশ্ব রেকর্ড গড়তে যাচ্ছেন। এই ৫৪ জনের একজন আশিক চৌধুরী জাম্প করবেন ওসমান হাদির ছবি আঁকা হেলমেট পরে। বিজয়ের দিনে স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের ভ্যানগার্ড ওসমান হাদির দ্রুত আরোগ্য কামনায় সবাইকে দোয়া ও প্রার্থনার আহ্বান জানাই।’
উল্লেখ্য, আগামী ১৬ ডিসেম্বর সকাল ১১টা থেকে ঢাকার তেজগাঁওয়ে পুরনো বিমানবন্দরে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনী পৃথকভাবে ফ্লাই পাস্ট মহড়া পরিচালনা করবে।
চলবে বিজয় দিবসের বিশেষ ব্যান্ড-শো। পরে সকাল ১১টা ৪০ মিনিট থেকে ‘টিম বাংলাদেশ’-এর ৫৪ জন প্যারাট্রুপার স্বাধীনতার ৫৪ বছর উদযাপনে পতাকা হাতে প্যারাস্যুটিং করবেন। জনসাধারণের জন্য এই বিশেষ আয়োজন উন্মুক্ত থাকবে।
এর আগে গত শুক্রবার দুপুরে ঢাকায় গুলিবিদ্ধ হন ওসমান হাদি।
তিনি জাতীয় সংসদের ঢাকা-৮ আসনে সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছিলেন। সেদিন রাত থেকে তিনি এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি আছেন।
ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী এবং ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদিকে গুলি করে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের মালিক মো. আব্দুল হান্নানকে তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
আজ রবিবার (১৪ ডিসেম্বর) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট দিদারুল আলমের আদালতে শুনানি শেষে এই আদেশ দেওয়া হয়। পল্টন থানার উপপুলিশ পরিদর্শক সামিম হাসান হান্নানকে ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে হাজির করেন এবং পরবর্তীতে সাত দিনের রিমান্ড চান।
পুলিশের রিমান্ড আবেদনে উল্লেখ করা হয় যে, আসামির কাছ থেকে ঘটনায় ব্যবহৃত আগ্নেয়াস্ত্র ও মোটর সাইকেল উদ্ধার, জড়িত অজ্ঞাত পরিচয়ের পলাতক আসামিদের নাম, ঠিকানা সংগ্রহ, অবস্থান ও গ্রেপ্তারের জন্য, মূল রহস্য উদঘাটন এবং অবৈধ অস্ত্র সংগ্রহের উৎস জানার জন্য রিমান্ড প্রয়োজন।
জানা যায়, র্যাব-২ হান্নানকে আটক করে পল্টন মডেল থানায় সোপর্দ করে। গত ১২ ডিসেম্বর দুপুর ২টা ২৪ মিনিটে পল্টন মডেল থানাধীন বক্স কালভার্ট এলাকায় শরীফ ওসমান হাদিকে লক্ষ্য করে অজ্ঞাত পরিচয় দুই সন্ত্রাসী একটি মোটরসাইকেলে এসে গুলি করে। গুলিবিদ্ধ হয়ে তিনি গুরুতর আহত হন এবং বর্তমানে এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে র্যাব-২ সন্ত্রাসীদের ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের রেজিস্ট্রেশন নম্বর (ঢাকা মেট্রো ল-৫৪-৬৩৭৫) শনাক্ত করে এবং বিআরটিএ থেকে মালিক হিসেবে মো. আব্দুল হান্নানকে চিহ্নিত করে। এই ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান বলেন, ১৯৫২, ১৯৬৯, ১৯৭১, ১৯৯০ ও ২০২৪-এর ঐতিহাসিক ঘটনাগুলো পরস্পরবিরোধী নয় বরং এগুলো বাংলাদেশের জাতীয় সত্তা ও ইতিহাস নির্মাণ করেছে। এসব ঘটনাকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে বিভাজন সৃষ্টির যে রাজনৈতিক অপচেষ্টা চলছে, সে ব্যাপারে জাতিকে সচেতন ও ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষ্যে আজ ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫ রবিবার ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র মিলনায়তনে আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদ, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. এম. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, শহিদ গিয়াস উদ্দিন আহমদের ছোট বোন অধ্যাপক সাজেদা বানু, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের আহ্বায়ক কমিটির আহ্বায়ক শামসুজ্জামান দুদু, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) ভিপি আবু সাদিক কায়েমসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অফিসার্স এসোসিয়েশন, তৃতীয় শ্রেণি কর্মচারী সমিতি ও কারিগরি কর্মচারী সমিতির নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন। রেজিস্ট্রার মুনসী শামস উদ্দিন আহম্মদ অনুষ্ঠান সঞ্চালন করেন।
এসময় বিভিন্ন অনুষদের ডিন, বিভিন্ন বিভাগের চেয়ারম্যান, ইনস্টিটিউটের পরিচালক, প্রক্টর, প্রভোস্ট, শিক্ষক, বিভিন্ন দফতরের প্রধান, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন। আলোচনা সভার শুরুতে শহিদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের লক্ষ্যে দাঁড়িয়ে ১মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান বলেন, শহিদ বুদ্ধিজীবীদের আত্মত্যাগ শুধু স্মরণীয় কোনো ইতিহাস নয় বরং আমাদের জাতীয় ঐক্য, পরিচয় ও অস্তিত্বের ভিত্তি। এই আত্মত্যাগ যতদিন আমাদের স্মৃতিতে জীবিত থাকবে, ততদিন জাতি হিসেবে আমাদের ঐক্য অটুট থাকবে।
উপাচার্য বলেন, শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস কেবল আনুষ্ঠানিক কোনো দিবস নয়; এটি আত্মত্যাগের দায় স্বীকার করার উপলক্ষ।
তিনি আরও বলেন, বর্তমান সময়ে বাংলাদেশ একটি কঠিন ও ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। এই সময়ে শহিদদের স্মৃতি আমাদের জন্য ঐক্যবদ্ধ থাকার সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা। শিক্ষক, চিকিৎসক, সাংবাদিকসহ প্রত্যেকে নিজ নিজ দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করার মধ্য দিয়েই শহিদদের প্রতি আমাদের ঋণের কিছুটা হলেও শোধ করা সম্ভব।
শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত বিভিন্ন কর্মসূচিতে সর্বস্তরের মানুষের আরও বেশি অংশগ্রহণের উপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, এসব আয়োজন শুধু স্মরণ নয় বরং ঋণ স্বীকার ও দায়িত্ব পালনের একটি সম্মিলিত অঙ্গীকার।
দিবসটি উপলক্ষ্যে উপাচার্য ভবনসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ ভবনসমূহে কালো পতাকা উত্তোলন করা হয়। উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খানের নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদ প্রাঙ্গণস্থ কবরস্থান, জগন্নাথ হল প্রাঙ্গণস্থ স্মৃতিসৌধ, বিভিন্ন আবাসিক এলাকার স্মৃতিসৌধ এবং মিরপুর ও রায়ের বাজার শহিদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। এছাড়া, বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদসহ বিভিন্ন হল মসজিদে শহিদ বুদ্ধিজীবীদের রুহের মাগফেরাত কামনা করে দোয়া করা হয় এবং বিভিন্ন উপাসনালয়ে বিশেষ প্রার্থনা করা হয়।
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস–২০২৫ উপলক্ষে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়েছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)। মহান মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত বিজয়ের প্রাক্কালে দেশকে মেধাশূন্য করার নৃশংস অপচেষ্টার শিকার শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে আজ রবিবার, ১৪ ডিসেম্বর সকালে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণের মাধ্যমে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।
এ সময় বুয়েটের মাননীয় উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবু বোরহান মোহাম্মদ বদরুজ্জামান স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। সঙ্গে উপস্থিত বুয়েট পরিবারের সকল সদস্য নীরবতা ও গভীর ভাবগম্ভীরতার মধ্য দিয়ে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের আত্মত্যাগকে হৃদয়ে ধারণ করে তাঁদের বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করেন।
শ্রদ্ধা নিবেদন অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষদের ডিনবৃন্দ, বিভাগীয় প্রধানগণ, ছাত্রকল্যাণ পরিদপ্তরের পরিচালক, রেজিস্ট্রার, প্রভোস্টবৃন্দ, অফিস প্রধানগণ, ইনস্টিটিউট ও সেন্টারের পরিচালকবৃন্দসহ শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন। উপস্থিত সবার কণ্ঠে ও চোখে ছিল জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের হারানোর বেদনা ও তাঁদের আদর্শে দেশ গড়ার দৃঢ় প্রত্যয়।
উল্লেখ্য, শহীদ বুদ্ধিজীবীরা জাতির বিবেক ও আলোকবর্তিকা। তাঁদের রক্তের ঋণ শোধ করা সম্ভব না হলেও বুয়েট বিশ্বাস করে—শিক্ষা, গবেষণা ও মানবিক মূল্যবোধে সমৃদ্ধ জাতি গঠনের মধ্য দিয়েই তাঁদের প্রতি প্রকৃত শ্রদ্ধা জানানো যায়। শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে সেই অঙ্গীকারই পুনর্ব্যক্ত করলো বুয়েট।
দেশে চলমান ভয়াবহ নিরাপত্তা সংকটের পরিপ্রেক্ষিতে লুট হওয়া বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার না হওয়া পর্যন্ত আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন স্থগিত রাখার দাবিতে একটি আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. মাহমুদুল হাসান এই নোটিশটি মন্ত্রিপরিষদ সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব, আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব, নির্বাচন কমিশন সচিব, পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এবং র্যাবের মহাপরিচালকের কাছে জনস্বার্থে প্রেরণ করেন।
নোটিশে উল্লেখ করা হয় যে, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদ পতন হলেও পরবর্তী সময়ে দেশের বিভিন্ন থানা ও নিরাপত্তা স্থাপনা থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদ লুট হয়, যার একটি বড় অংশ এখনও উদ্ধার হয়নি। এসব অবৈধ অস্ত্রের কারণে আসন্ন নির্বাচনে ভোটার ও প্রার্থীদের জীবনের নিরাপত্তা মারাত্মক ঝুঁকির মুখে পড়েছে।
আইনজীবী মো. মাহমুদুল হাসান বলেন যে, ইতিমধ্যেই নির্বাচনী সহিংসতা ও প্রাণনাশের আশঙ্কা দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে এবং এই চরম নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে নির্বাচন আয়োজন করলে তা ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনবে। নোটিশে ১২ ডিসেম্বর, ২০২৫ তারিখে ঢাকা-৮ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদীর গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনাকে অবৈধ অস্ত্রের উপস্থিতির প্রমাণ হিসেবে তুলে ধরা হয়।
নোটিশে আরও বলা হয়, এই পরিস্থিতিতে নির্বাচন আয়োজন করা হলে তা সংবিধানের ৩২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী নাগরিকদের ‘জীবনের অধিকার’ লঙ্ঘন করবে। যদিও ‘জুলাই সনদ’ গণভোট একটি জাতীয় ঐকমত্যের বিষয় হওয়ায় তাতে সহিংসতার আশঙ্কা কম, তবে জাতীয় সংসদ নির্বাচন একটি প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক প্রক্রিয়া হওয়ায় অবৈধ অস্ত্রের উপস্থিতিতে নির্বাচন আয়োজনকে আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে।
এমতাবস্থায়, নোটিশে আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৬ তারিখে ‘জুলাই সনদ’ গণভোট যথাসময়ে আয়োজনের দাবি জানানো হলেও, সব লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার এবং সুষ্ঠু নির্বাচনী পরিবেশ নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত জাতীয় সংসদ নির্বাচন স্থগিত রাখার আহ্বান জানানো হয়েছে। নোটিশ প্রাপ্তির সাত দিনের মধ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ না করা হলে সংবিধানের ১০২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী হাইকোর্টে জনস্বার্থে রিট পিটিশন দায়ের করা হবে বলেও জানানো হয়েছে।
ভারতের অভ্যন্তরে অবস্থানরত আওয়ামী লীগের পলাতক সদস্যরা বাংলাদেশে আসন্ন জাতীয় নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করার লক্ষ্যে সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিকল্পনা, সংগঠন ও বাস্তবায়নে সহায়তা করছে—এমন অভিযোগ তুলেছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার। এই পরিস্থিতিতে ঢাকা নয়াদিল্লির কাছ থেকে জরুরি ও কার্যকর পদক্ষেপ প্রত্যাশা করেছে, যাতে এ ধরনের অপরাধমূলক তৎপরতা বন্ধ হয়। একই সাথে, প্রতিবেশী রাষ্ট্র হিসেবে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা এবং বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সুরক্ষায় দিল্লির পক্ষ থেকে দায়িত্বশীল ভূমিকা প্রত্যাশিত বলেও ঢাকা জানিয়েছে।
রোববার (১৪ ডিসেম্বর) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মাকে তলব করে অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে এসব উদ্বেগ তুলে ধরা হয়। সরকারের অভিযোগ, ভারতে অবস্থানরত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর সমর্থকদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়ানোর জন্য নিয়মিত উসকানিমূলক বক্তব্য দিচ্ছেন, যা বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার জন্য গুরুতর হুমকি।
অন্যদিকে, জবাবে ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা জানিয়েছেন যে, বাংলাদেশে একটি শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক—এটাই ভারতের প্রত্যাশা এবং এই লক্ষ্যে ঢাকাকে সব ধরনের সহযোগিতা দিতে দিল্লি প্রস্তুত।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বৈঠকে শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে আদালতের দেওয়া দণ্ডের মুখোমুখি করতে দ্রুত প্রত্যর্পণের বিষয়েও দিল্লির প্রতি আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেছে। এছাড়াও, ভারতে অবস্থানরত আওয়ামী লীগের পলাতক সদস্যদের দেশবিরোধী কর্মকাণ্ডের দিকেও হাইকমিশনারের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়।
ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী এবং ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদিকে গুলি করার ঘটনায় পুলিশ আরও দুই জনকে গ্রেফতার করেছে, যদিও তাদের নাম-পরিচয় এখনো প্রকাশ করা হয়নি। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী আজ রবিবার (১৪ ডিসেম্বর) এই তথ্য নিশ্চিত করেন।
এর আগে, র্যাব হামলাস্থলে ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের মালিক আব্দুল হান্নানকে আটক করেছিল। জানা যায়, আব্দুল হান্নান চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার সুন্দরপুর ইউনিয়নের বাগডাঙ্গা পশ্চিমপাড়া এলাকার বাসিন্দা এবং তিনি পেশায় একজন শ্রমিক।
উল্লেখ্য, গত শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর বিজয়নগরের বক্স কালভার্ট এলাকায় দুর্বৃত্তরা শরীফ ওসমান হাদিকে গুলি করে পালিয়ে যায়। গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে প্রথমে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এবং পরে এভারকেয়ার হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন যে, তাঁর অবস্থা এখনও আশঙ্কামুক্ত নয়।
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং গণভোটকে সামনে রেখে সরকার সকল রাজনৈতিক দল এবং গুরুত্বপূর্ণ নেতৃবৃন্দকে নিরাপত্তা প্রটোকল প্রদান করবে বলে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে। রবিবার (১৪ ডিসেম্বর) প্রকাশিত এই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয় যে, পুলিশ এই প্রটোকল দেবে।
এই নিরাপত্তা প্রটোকলের মধ্যে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, আসন্ন নির্বাচনের সম্ভাব্য প্রার্থী, তাঁদের বাসস্থান, কার্যালয়, চলাচল, জনসভা এবং সাইবার স্পেসে কীভাবে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়, সে বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা থাকবে।
এছাড়াও, গণঅভ্যুত্থানের সম্মুখসারির নেতৃত্ব এবং গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে বিশেষ বাড়তি নিরাপত্তা প্রদানের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয় যে, ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র এবং ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী শরীফ ওসমান হাদীর ওপর হামলার ঘটনায় হামলাকারী ও তার সহযোগীদের পুলিশ ইতোমধ্যে শনাক্ত করেছে। তাদের গ্রেফতারের লক্ষ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিবিড় অভিযান চলছে। হামলায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটি জব্দ করা হয়েছে এবং সন্দেহভাজনদের হাতের ছাপ (ফিঙ্গারপ্রিন্ট) পরীক্ষা করা হচ্ছে।
প্রেস উইং থেকে আরও জানানো হয় যে, প্রধান সন্দেহভাজন ব্যক্তি যাতে সীমান্ত পার হতে না পারে, সেজন্য শুক্রবার রাতেই সমস্ত ইমিগ্রেশন চেকপোস্টে সন্দেহভাজনদের ছবি ও তথ্য সরবরাহ করা হয়েছে এবং সীমান্ত এলাকায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও র্যাবের টহল জোরদার করা হয়েছে। অভ্যন্তরীণভাবে একাধিকবার সন্দেহভাজনদের অবস্থান শনাক্ত করা গেলেও স্থান পরিবর্তনের কারণে এখনো তাদের গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। পুলিশ প্রধান সন্দেহভাজনের চলাচলের ইতিহাস (ট্রাভেল হিস্ট্রি) সংগ্রহ করেছে, যা থেকে দেখা যায় যে তিনি আইটি ব্যবসায়ী পরিচয়ে গত কয়েক বছরে একাধিক দেশ ভ্রমণ করেছেন; সর্বশেষ গত ২১ জুলাই সিঙ্গাপুর ভ্রমণের তথ্য পাওয়া গেছে। এই হামলার সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে এমন আরও কয়েকজন সন্দেহভাজনকে ইতোমধ্যে নজরদারিতে রাখা হয়েছে।
দুর্বৃত্তদের গুলিতে গুরুতর আহত ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ও ঢাকা-৮ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান বিন হাদির শারীরিক অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি। তিনি এখনও ‘ডিপ কোমা’য় রয়েছেন। তবে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন তার পরিবার ও সংগঠন।
রোববার (১৪ ডিসেম্বর) দুপুরে হাদির চিকিৎসার সার্বক্ষণিক খোঁজ রাখা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগের চিকিৎসক ও ন্যাশনাল হেলথ এলায়েন্সের সদস্য সচিব ডা. আব্দুল আহাদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, হাদির শারীরিক অবস্থা আগের মতোই অপরিবর্তিত রয়েছে, তবে তার শরীরে কিছু অভ্যন্তরীণ সাড়া (ইন্টারনাল রেসপন্স) পাওয়া যাচ্ছে। চিকিৎসকরা তাকে ৭২ ঘণ্টার নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখেছেন, যা আগামীকাল সোমবার রাতে শেষ হবে। ইনকিলাব মঞ্চের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, নির্দিষ্ট সময় পার না হওয়া পর্যন্ত তাকে এখনই আশঙ্কামুক্ত বলা যাচ্ছে না।
এদিকে, হাদির পরিবার ও রাজনৈতিক সহযোদ্ধারা তাকে বিদেশে নেওয়ার প্রস্তুতি নিলেও বিষয়টি পুরোপুরি নির্ভর করছে তার শারীরিক সক্ষমতার ওপর। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, বিদেশে স্থানান্তরের ধকল সয়ে নেওয়ার মতো শারীরিক স্থিতিশীলতা ফিরে এলেই কেবল তাকে দেশের বাইরে পাঠানো সম্ভব হবে।