দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা জ্ঞাত আয়বহির্ভূত আইনের মামলায় ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের বহিষ্কৃত সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাটের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন শুনানির তারিখ পিছিয়ে আগামী ২৬ সেপ্টেম্বর নির্ধারণ করেছেন আদালত।
আজ মঙ্গলবার শুনানি শেষে ঢাকার বিশেষ আদালত-৬ এর ভারপ্রাপ্ত বিচারক মো. ইকবাল হোসেনের আদালত এই তারিখ ধার্য করেন।
মামলাটির অভিযোগ গঠন শুনানির জন্য আজ দিন ধার্য ছিল। কিন্তু এদিন সম্রাটের পক্ষের আইনজীবী আফরোজা শাহনাজ পারভীন (হীরা) পরবর্তী শুনানির জন্য সময়ের আবেদন করেন। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত আগামী ২৬ সেপ্টেম্বর অভিযোগ গঠনের পরবর্তী তারিখ ধার্য করেন। সংশ্লিষ্ট আদালতের বেঞ্চ সহকারী জাহিদুল ইসলাম এ তথ্য জানিয়েছেন।
২০১৯ সালের ১২ নভেম্বর দুদকের উপপরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম ২ কোটি ৯৪ লাখ ৮০ হাজার ৮৭ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে সম্রাটের বিরুদ্ধে মামলাটি করেন।
২০২০ সালের ২৬ নভেম্বর মামলাটি তদন্ত করে সম্রাটের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র জমা দেন দুদকের উপপরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম। সম্রাটের বিরুদ্ধে মোট চারটি মামলা করা হয়। বর্তমানে সব মামলায় তিনি জামিনে রয়েছেন।
যুক্তরাজ্য সফররত বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস আজ লন্ডনে ব্রিটিশ রাজা তৃতীয় চার্লসের সঙ্গে একান্তে বৈঠক করেছেন। সেখানে তাঁরা বাংলাদেশের চলমান সংস্কার কার্যক্রম নিয়ে আলোচনা করেন।
বৈঠকের বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম সাংবাদিকদের বলেন, ‘আজ সকাল ১১:২০ মিনিটে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ও ব্রিটিশ রাজা তৃতীয় চার্লসের মধ্যে একান্ত বৈঠক হয়, যা ছিল একেবারে ব্যক্তিগত।’
বৈঠকে বাংলাদেশের চলমান গণতান্ত্রিক রূপান্তর প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা হয়।
প্রেস সচিব জানান, বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা তাঁর সরকার গৃহীত সংস্কার কার্যক্রম সম্পর্কে রাজা চার্লসকে অবহিত করেন।
তিনি আরও জানান, প্রায় ৩০ মিনিটের এ বৈঠক অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ ছিল। যেহেতু রাজা চার্লস বহুদিন ধরে প্রফেসর ইউনূসকে চেনেন, সেহেতু নানা বিষয় নিয়ে তাদের আলোচনা হয়েছে।
শফিকুল আলম বলেন, ‘এই পুরো সফরের মধ্যে আমি বলব, এটি ছিল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা।’
একান্ত সাক্ষাতের পর, রাজা ও রাণীর স্বাক্ষরযুক্ত একটি ছবি উপহার হিসেবে প্রফেসর ইউনূসকে প্রদান করা হয়, যা প্রধান উপদেষ্টার জন্য একটি বড় সম্মানের ছিল বলে জানান প্রেস সচিব।
বাকিংহাম প্যালেসে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ইউনূসকে ব্যক্তিগত সাক্ষাতের জন্য স্বাগত জানান রাজা চার্লস।
নিয়মিত কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক সাক্ষাতের পাশাপাশি রাজা চার্লস এমন ব্যক্তিদের সাক্ষাৎ দেন, যারা তাদের নিজ নিজ ক্ষেত্রে অসাধারণ কৃতিত্ব অর্জন করেছেন- বিশেষ করে যারা রাজকীয় নিয়োগ পেয়ে থাকেন বা তাদের নামে প্রদত্ত পুরস্কার গ্রহণ করছেন।
ব্যক্তিগতভাবে সাক্ষাৎ করে বা ‘অডিয়েন্স’ প্রদান করে রাজা চার্লস নির্দিষ্ট ব্যক্তি ও তাদের কাজের গুরুত্বকে স্বীকৃতি দেন এবং তাঁদের সম্পর্কে আরও জানার পাশাপাশি রাজকীয় অভিজ্ঞতা উপভোগ করার সুযোগ করে দেন।
`অডিয়েন্স’ মানে হলো রাজা ও কাউকে একান্তভাবে সাক্ষাৎ প্রদান করা।
ভারতের আহমেদাবাদে ২৪২ আরোহী নিয়ে এয়ার ইন্ডিয়া ফ্লাইটের ভয়াবহ দুর্ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি এই কঠিন সময়ে ভারতের জনগণ এবং সরকারের প্রতি সহানুভূতি একাত্মতা প্রকাশ করেছেন।
বৃহস্পতিবার (১২ জুন) এক বার্তায় অধ্যাপক ইউনুস বলেন, ‘এয়ার ইন্ডিয়া ফ্লাইটের দুর্ঘটনায় ২৪২ আরোহীসহ আহমেদাবাদে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ দুর্ঘটনার জন্য আমি ব্যথিত ও শোকাহত।’
তিনি আরও বলেন, ‘ভুক্তভোগী ও তাদের পরিবারের জন্য আমরা প্রার্থনা করছি। এই কঠিন সময়ে ভারতের জনগণ ও সরকারের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করছে বাংলাদেশ।’
‘আমরা ওই ঘটনার শিকার পরিবারের প্রতি আমাদের গভীর সমবেদনা জানাই, যারা তাদের প্রিয়জনদের হারিয়েছেন। এই কঠিন সময়ে ভুক্তভোগী ও তাদের প্রিয়জনদের জন্য আমাদের সহানুভূতি ও প্রার্থনা রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ভারতের জনগণ এবং সরকারের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করি এবং যেকোনোভাবে পূর্ণ সহায়তা প্রদান করতে প্রস্তুত,’ বলেন অধ্যাপক ইউনুস।
অধ্যাপক ইউনুস বর্তমানে যুক্তরাজ্যে একটি সরকারি সফরে রয়েছেন।
আহমেদাবাদে ২৪২ আরোহী নিয়ে এয়ার ইনডিয়ার উড়োজাহাজ বিধ্বস্তের ঘটনায় সবার নিহতের আশঙ্কা প্রকাশ করেছে স্থানীয় পুলিশপ্রধান।
বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার উড়োজাহাজটি বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় দুপুরে আহমেদাবাদের সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে লন্ডনের উদ্দেশ্যে উড়াল দেওয়ার পরই দুর্ঘটনায় পড়ে।
ওই উড়োজাহাজে ২৩২ জন যাত্রী ও ১০ জন ক্রু ছিলেন বলে ভারতের সিভিল এভিয়েশন দপ্তর জানিয়েছে।
উড্ডয়নের পর একপর্যায়ে আরও উপড়ে উঠতে ব্যর্থ হওয়ায় উড়োজাহাজটি নিচে নেমে আসে এবং বিমানবন্দরের কাছে একটি মেডিকেল হোস্টেলের উপর বিধ্বস্ত হয়। সেখানে অন্তত পাঁচ শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে বলে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে।
গত মে মাসে সারাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় ৬১৪ জন নিহত ও ১ হাজার ১৯৬ জন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে যাত্রী কল্যাণ সমিতি। বৃহস্পতিবার (১২ জুন) সংগঠনটির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরীর সই করা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এমন তথ্য দেওয়া হয়েছে।
দেশের জাতীয়, আঞ্চলিক ও অনলাইন সংবাদপত্রে প্রকাশিত সড়ক, রেল ও নৌপথের দুর্ঘটনার সংবাদ মনিটরিং করে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।
প্রেস বিজ্ঞপ্তির প্রতিবেদনে বলা হয়, মে মাসে রেলপথে ৪৮টি দুর্ঘটনায় ৩৫ জন নিহত ও ১৪ জন আহতের তথ্য গণমাধ্যমে উঠে এসেছে। তথ্যমতে, নৌপথে ৭টি দুর্ঘটনায় ৯ জন নিহত ও ১০ জন নিখোঁজ রয়েছে।
সড়ক, রেল ও নৌ-পথে সর্বমোট ৬৫২ টি দুর্ঘটনায় ৬৫৮ জন নিহত ও ১ হাজার ২১০ জন আহত হয়েছে। এই সময়ে ২৩৩টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ২৫৬ জন নিহত ও ২০১ জন আহত হয়েছে। এই মাসে সবচেয়ে বেশি সড়ক দুর্ঘটনা সংগঠিত হয়েছে ঢাকা বিভাগে। ১৩৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ১৪৮ জন নিহত ও ২৭১ জন আহত হয়েছে।
সবচেয়ে কম সড়ক দুর্ঘটনা সংগঠিত হয়েছে বরিশাল বিভাগে। ৩০টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩০ জন নিহত ও ৪৪ জন আহত হয়েছে। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির দুর্ঘটনা মনিটরিং সেল গণমাধ্যম পর্যবেক্ষণে এই তথ্য পাওয়া গেছে।
এই সময় সড়ক দুর্ঘটনায় সংগঠিত ৯৪৫টি যানবাহনের পরিচয় মিলেছে। এতে দেখা যায়, ২৯ দশমিক ৪১ শতাংশ মোটরসাইকেল, ২২ দশমিক ৫৩ শতাংশ ট্রাক-পিকাপ-কাভার্ডভ্যান ও লরি, ১২ দশমিক ৪৮ শতাংশ বাস, ১৪ দশমিক ১৭ শতাংশ ব্যাটারিচালিত রিক্সা ও ইজিবাইক, ৬ দশমিক ৬৬ শতাংশ সিএনজিচালিত অটোরিক্সা, ৯ দশমিক ৩১ শতাংশ নছিমন-করিমন-মাহিন্দ্রা-ট্রাক্টর ও লেগুনা, ৫ দশমিক ৩৯ শতাংশ কার-জিপ-মাইক্রোবাস দুর্ঘটনায় পড়েছে।
সংগঠিত মোট দুর্ঘটনার ৪৯ দশমিক ৭ শতাংশ গাড়ি চাপা, ২৪ দশমিক ৯৫ শতাংশ মুখোমুখি সংঘর্ষ, ২০ দশমিক ১০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে, ৫ দশমিক ২ শতাংশ বিবিধ কারণে। এছাড়া চাকায় ওড়না পেছিয়ে ০ দশমিক ৩৩ শতাংশ ও ০ দশমিক ৫০ ট্রেন-যানবাহনের সংঘর্ষে ঘটে।
দুর্ঘটনার ধরন বিশ্লেষণে দেখা যায়, সংগঠিত মোট দুর্ঘটনার ৩৩ দশমিক ৫০ শতাংশ জাতীয় মহাসড়কে, ৩২ দশমিক ৮৩ শতাংশ আঞ্চলিক মহাসড়কে, ২৮ দশমিক ১৪ শতাংশ ফিডার রোডে সংঘটিত হয়েছে। এছাড়াও সারা দেশে সংঘটিত মোট দুর্ঘটনার ৩ দশমিক ৫১ শতাংশ ঢাকা মহানগরীতে, ১ দশমিক ৫০ শতাংশ চট্টগ্রাম মহানগরীতে ও ০ দশমিক ৫০ শতাংশ রেলক্রসিংয়ে সংগঠিত হয়েছে।
সড়কে দুর্ঘটনায় আক্রান্ত ব্যক্তির মধ্যে ৭ জন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, ১৫৪ জন চালক, ১০৩ জন পথচারী, ৬৭ জন পরিবহন শ্রমিক, ৯২ জন শিক্ষার্থী, ৫ জন শিক্ষক, ৮৮ জন নারী, ৫৮ জন শিশু, ৩৭ জন সাংবাদিক, ২ জন চিকিৎসক, ১ জন মুক্তিযোদ্ধা ও ৭ জন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীর পরিচয় মিলেছে।
দেশের রাজনীতি-সচেতন সবার দৃষ্টি এখন রাজধানী লন্ডনে। আগামীকাল শুক্রবার যুক্তরাজ্যে সফররত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠকে ভোটের দিনক্ষণ, সংস্কার, জুলাই সনদসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ইস্যু নিয়ে কী বোঝাপড়া হয়, তা নিয়ে চলছে নানা আলোচনা।
সংস্কার, নির্বাচনসহ চলমান রাজনৈতিক নানা ইস্যুতে বিএনপি ও অন্তর্বর্তী সরকারের চলমান উত্তেজনাকর পরিস্থিতির মাঝে এমন একটি বৈঠক নিয়ে দেশের রাজনৈতিক মহল থেকে শুরু করে বিভিন্ন শ্রেণিপশার মানুষের মধ্যে বেশ কৌতূহল সৃষ্টি হয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টা কর্তৃক এপ্রিলে ভোটের ঘোষণাকে বিএনপি মেনে নেয়নি। ফলে ভোটের সময় নিয়ে বিতর্ক এখনো মেটেনি। তবে এই বৈঠকের খবরে এসব বিষয় নিয়ে কয়েক মাস ধরে রাজনীতিতে যে অস্থিরতা বিরাজ করছিল, ভোটের সম্ভাব্য সময় ঘোষণায় সেটি আপাতত কমেছে।
গত সোমবার বিকালে চার দিনের সফরে যুক্তরাজ্যের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়েন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। লন্ডনে যে হোটেলে প্রধান উপদেষ্টা উঠেছেন সেখানেই তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠক করবেন তিনি। সুনির্দিষ্ট কোনো এজেন্ডা না থাকলেও ২ ঘণ্টার গুরুত্বপূর্ণ এ বৈঠকে সব বিষয়েই তাদের মধ্যে কথা হবে বলে জানা গেছে।
রাজনৈতিক মহল এই সাক্ষাতকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তারেক রহমানের সাক্ষাৎ ফলপ্রসূ হলে নির্বাচনের সম্ভাব্য সময়, গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার এবং জুলাই সনদসহ আরও অনেক বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকার ও বিএনপির যে দূরত্ব বা মতবিরোধ সৃষ্টি হয়েছে, সেটা কমে আসতে পারে।
ঈদুল আজহার আগের দিন জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, আগামী বছরের এপ্রিলের প্রথমার্ধে যেকোনো দিন জাতীয় নির্বাচন হতে পারে। বিএনপিসহ অনেক দল এ ‘সময়সীমা’ মেনে না নিলেও ভোটের সম্ভাব্য সময় ঘোষণাকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন রাজনৈতিক অঙ্গনের অনেকে। যদিও রাজনীতি-সংশ্লিষ্ট অনেকে মনে করেন, রোজার আগে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে ভোটের সময় নির্ধারণ করতে পারলে রাজনৈতিক বোঝাপড়া আরও স্বস্তিদায়ক হতো।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এই সাক্ষাৎ যাতে হয়, এ ব্যাপারে সর্বশেষ বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াও ভূমিকা রাখেন। পরে দুই পক্ষের ইচ্ছায়, বিশেষ করে সরকারের দিক থেকে বাড়তি আগ্রহে সাক্ষাতের সময় নির্ধারণ হয়। এ বিষয়ে গত সোমবার রাতে বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী পর্ষদ স্থায়ী কমিটিতে আলোচনা হয়। তারা এই সাক্ষাতকে দেশ ও জাতির ভবিষ্যতের জন্য হিতকর হবে বলে মনে করেন।
বিএনপির দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র জানায়, এ ক্ষেত্রে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ভূমিকা রাখেন। খালেদা জিয়াকে ঈদের শুভেচ্ছা জানাতে ৭ জুন রাতে তাঁর বাসভবনে যান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যরা। তখন তিনি জ্যেষ্ঠ নেতাদের কাছে জানতে চান, অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে এত দূরত্ব তৈরি করা হলো কেন। তিনি নেতাদের উদ্দেশে বলেন, এই সময়ে কোনো বিষয় নিয়ে রাজপথে যাওয়া ঠিক হবে না। যত সমস্যাই থাকুক, আলোচনায় বসে সমাধান করতে হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, স্থায়ী কমিটির নেতাদের এই সাক্ষাতের পরদিন রোববার খালেদা জিয়া তার বড় ছেলে ও দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে কথা বলেন। এরপরই সোমবার রাতে স্থায়ী কমিটির সভা হয়। এই সভা থেকে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সৌজন্য সাক্ষাতকে স্বাগত জানানো হয়। বিএনপির নেতারা মনে করেন, এই সাক্ষাৎ বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক সংকট কাটাতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে এবং একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পথ প্রস্তুত করতে সহায়ক হতে পারে।
এ বিষয়ে গত মঙ্গলবার বিভিন্ন গণমাধ্যম কর্মীদের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিকভাবে কথা বলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। দেশের রাজনৈতিক সংকট কাটাতে বৈঠকটি ‘টার্নিং পয়েন্ট’ হতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
মির্জা ফখরুল বলেন, প্রধান উপদেষ্টা ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের এ বৈঠক অত্যন্ত বড় একটি ইভেন্ট, ‘মেজর পলিটিক্যাল ইভেন্ট’। এ সাক্ষাৎটি হলে অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যেতে পারে, নতুন ডাইমেনশন সৃষ্টি হতে পারে দেশের রাজনীতিতে। এ সময় তিনি খুব শিগগিরই তারেক রহমান দেশে ফিরবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
এদিকে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠকে বাংলাদেশ নিয়ে যেকোনো বিষয়ে আলোচনা হতে পারে বলে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানিয়েছেন। মঙ্গলবার বিকেলে লন্ডনে বাংলাদেশ হাইকমিশন ভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান।
শফিকুল আলম বলেন, ‘১৩ জুন শুক্রবার লন্ডনে অনুষ্ঠেয় ওই বৈঠকের নির্দিষ্ট কোনো এজেন্ডা (আলোচ্যসূচি) নেই। তিনি বলেন, ‘তারেক রহমান এই মুহূর্তে বাংলাদেশের বড় রাজনৈতিক দলের নেতা এবং প্রফেসর ইউনূস অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান। তারা যখন বসবেন, তখন বাংলাদেশের এখনকার যেকোনো বিষয়ে আলোচনা হতে পারে। আলোচনায় বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, আগামী জাতীয় নির্বাচন, জুলাই চার্টার (জুলাই সনদ)—এগুলোর যেকোনো বিষয়ে আলাপ হতে পারে।’
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের লন্ডনে অনুষ্ঠেয় বৈঠক প্রসঙ্গে দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী গতকাল বুধবার বলেন, ‘গোটা জাতি আজ লন্ডনের দিকে তাকিয়ে।’
বিএনপির নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি বলেন, ‘বিশ্বাস করি, এটি হবে ঐতিহাসিক বৈঠক এবং এ বৈঠকের মাধ্যমে দেশের রাজনীতিতে সুবাতাস বইবে।’
রিজভী বলেন, ইতোমধ্যে ডিসেম্বরে নির্বাচনের যৌক্তিকতা তুলে ধরেছে বিএনপি। যৌক্তিক সময়েই নির্বাচন হবে বলে জাতি প্রত্যাশা করে। আলোচনার মধ্য দিয়ে নির্বাচনসহ সব সমস্যার সমাধান সম্ভব।
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান এলাকায় ঢাকা থেকে সিলেট ছেড়ে আসা আন্তঃনগর জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস ট্রেনের নিচে কাটা পড়ে শাহিন মিয়া (৩০) নামে যুবকের এক পা ও বুবেক এক অংশ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। পরে স্থানীয়রা দ্রুত উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়ার পথে মৃত্যু হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নিহত শাহিনের লাশের সাথে থাকা রাসেল মিয়া।
বুধবার (১১ জুন) বিকাল ৫ টার দিকে উপজেলার লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে এ ঘটনা ঘটে। নিহত শাহিন মিয়া কমলগঞ্জ উপজেলার আদমপুর ইউনিয়নের আধকানী গ্রামের বাজিদ মিয়ার ছেলে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা সিলেটগামী আন্তঃনগর জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস ট্রেন লাউয়াছড়া উদ্যান অতিক্রম করার সময় হঠাৎ ওই ব্যক্তি রেললাইনের উপর চলে আসেন। এ সময় তিনি ট্রেনের নিচে কাটা পড়ে গুরুতর আহত হন। পরে স্থানীয়রা দ্রুত তাকে উদ্ধার করে শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।
শাহিনের লাশের সাথে থাকা রাসেল মিয়া জানান, শাহিন লাউয়াছড়ায় ঘুরতে এসে ট্রেনের নিচে পড়ে গুরুত্বর আহত হয়। সেসময় আমার লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের প্রধান ফটকের পাশে ছিলাম। অন্যদের সাথে আমিও তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাই। কিন্তু পথেই শাহিনের মৃত্যু হয়। তবে এ প্রতিবেদন লেখা অবস্থায় শাহিনের পরিবারের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
কমলগঞ্জ থানার ওসি তদন্ত শামীম আকনজি বিষয়টি নিশ্চিত করেছে বলেন, ঘটনার খবর পাওয়ার সাথে সাথেই ঘটনাস্থলে পুলিশের একটি টিম পাঠিয়েছি, তবে কিভাবে তিনি রেল লাইনে চলে আসেন, সে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
হজযাত্রীদের জন্য জরুরি বার্তা দিয়েছে বাংলাদেশ বিমান এয়ারলাইন্স। এতে, হজযাত্রীদের ফিরতি যাত্রাসহ যাবতীয় কার্যক্রমের জন্য ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেটে বিমানের বিক্রয়কেন্দ্রে এবং অতি জরুরি প্রয়োজনে জেদ্দা বা মদিনার অফিসে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।
আজ বুধবার বাংলাদেশ বিমান এয়ারলাইন্স এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায়।
বিমান কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, প্রতিবছর হজযাত্রীরা হজ পালন শেষে ফিরতি যাত্রা সুষ্ঠু, সুন্দর এবং নিরবিচ্ছিন্ন করার জন্য মক্কা ও মদিনায় অস্থায়ী অফিস স্থাপন করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় এবারও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স মক্কা ও মদিনায় অস্থায়ী অফিস স্থাপনের জন্য যাবতীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে।
এতে বলা হয়, ‘সম্প্রতি সৌদি আরবের ভিসা নীতিমালায় বাংলাদেশসহ ১৪টি দেশের নাগরিকদের জন্য সাময়িক ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। যার ফলে বিমানের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সৌদি ভিসা আবেদনসহ যাবতীয় কার্যক্রম সম্পন্ন করা সত্ত্বেও এখন পর্যন্ত তারা হাজীদের সেবায় দেশটিতে যেতে পারছেন না।’
হজযাত্রীদের ফিরতি যাত্রায় টিকিট পরিবর্তনসহ যাবতীয় কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে হজ এজেন্সি ও প্রতিনিধিদের নিম্নলিখিত ঠিকানায় অফিস চলাকালীন সময়ে যোগাযোগের অনুরোধ করা হয়েছে।
এছাড়া, অতি জরুরি প্রয়োজনে বিমান জেদ্দা সিটি অফিস বা বিমান মদিনা সিটি অফিসে যোগাযোগ করা যেতে পারে।
বিজ্ঞপ্তিতে দেওয়া ঠিকানা—
জেলা বিক্রয় অফিস, মতিঝিল, ঢাকা
বিমান ভবন
মতিঝিল, ঢাকা, বাংলাদেশ।
ফোন: +৮৮০২-২২৩৩৫৭০০২, +৮৮০১৭২৭৯৯০৯২২
ই-মেইল: hajjcelldso@biman.gov.bd
জেলা বিক্রয় অফিস, চট্টগ্রাম
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, চট্টগ্রাম
বিমান ভবন, ১/২ সিডিএ এভিনিউ, পূর্ব নাসিরাবাদ, চট্টগ্রাম।
ই-মেইল: cgpuu@biman.gov.bd
ফোন: +৮৮০১৭৭৭৭১৫৭০০
+৮৮০১৭৭৭৭১৫৭২৩
+৮৮০১৭৭৭৭১৫৭২৫
জেলা বিক্রয় অফিস, সিলেট
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, সিলেট বিমান ভবন, মজুমদারি, এয়ারপোর্ট রোড, সিলেট।
ই-মেইল: zyluu@biman.gov.bd
ফোন: +৮৮০১৭৭৭৭১৫৭১০
+৮৮০১৭২৫২৩৫৬৬৪
দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় ১০৭ জনের নমুনা পরীক্ষায় ১০ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়েছে। এ সময়ে শনাক্তের হার ৯ দশমিক ৩৫ শতাংশ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আজ এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়, দেশে এ পর্যন্ত ১ কোটি ৫৭ লাখ ২৬ হাজার ৪৮৬ জনের নমুনা পরীক্ষায় মোট করোনা শনাক্ত হয়েছে ২০ লাখ ৫১ হাজার ৭৭০ জন। এ পর্যন্ত শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ০৫ শতাংশ।
করোনা আক্রান্ত হয়ে আজ কেউ মারা যায়নি। এখন পর্যন্ত দেশে করোনায় মৃতের সংখ্যা ২৯ হাজার ৫০০ জন। মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৪৪ শতাংশ।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, করোনা আক্রান্তদের মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছে ২ জন। এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছে ২০ লাখ ১৯ হাজার ৩৮০ জন। সুস্থতার হার ৯৮ দশমিক ৪২ শতাংশ।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, তিনি পরবর্তী নির্বাচিত সরকারের অংশ হতে আগ্রহী নন। তিনি জোর দিয়ে বলেন, তাদের কাজ হলো নির্বাচন আয়োজনের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকারের কাছে সুষ্ঠুভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর নিশ্চিত করা।
নির্বাচনের পরে দায়িত্ব গ্রহণকারী পরবর্তী গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারের অংশ হওয়ার কোনো ইচ্ছা তার আছে কিনা এবং কোনো পদে থাকবেন কিনা—সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের উত্তরে ড. ইউনূস বলেন, ‘কোনো উপায় নেই, কোনো উপায় নেই। আমার মনে হয়, আমাদের উপদেষ্টা পরিষদের কোনো সদস্য এটি করতে চান না।’
অধ্যাপক ইউনূস স্পষ্টভাবে বলেন, তাদের কাজ হলো ক্ষমতা হস্তান্তর সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা এবং নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করার সময় জনগণ যাতে খুশি হয়—তা নিশ্চিত করা।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা নিশ্চিত করতে চাই যে, নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে। এটি আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।’
প্রশ্নোত্তর পর্বের পর তিনি লন্ডনের চ্যাথাম হাউসের রয়্যাল ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্সে তিনি আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, আওয়ামী লীগ যদি তরুণদের হত্যা, গুম করতে এবং অর্থ চুরি করতে পারে। তাই একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে তাদের পরিচয় নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আপনি কি এখনও এটিকে রাজনৈতিক দল বলবেন? তাহলে, এটি একটি বিতর্কিত বিচার নয়।’
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, তারা মনে করেন, ৫ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় সেই অধ্যায় বন্ধ হয়ে গেছে। কিন্তু যারা দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন (আওয়ামী লীগ) - তাদের কেউই ভুল স্বীকার করেননি বরং তারা জনগণকে উত্তেজিত করছেন।
তিনি বলেন, জাতি আপাতত দেশের নিরাপত্তা ও রাজনীতির সুরক্ষায় আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘বিচার সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগের কার্যক্রম আপাতত স্থগিত থাকবে। আমরা কেবল এটাই করেছি।’
গণমাধ্যমের স্বাধীনতা সম্পর্কে জানতে চাইলে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, অতীতে গণমাধ্যম কখনও এত স্বাধীনতা ভোগ করেনি।
আরেকজন সাংবাদিক ‘বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরটি ‘সিটি করপোরেশনের বুলডোজার দিয়ে ভেঙে ফেলা’ এবং ‘প্রশাসনের নীরবতা’ ও কিছু দল বা ব্যক্তির জমায়েত নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।
উত্তরে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, অনেক বিষয় ও প্রশ্ন একসঙ্গে এসেছে এবং তারা সবকিছু সঠিকভাবে পরিচালনা করতে পারেননি। ‘এটা এমন এক সময় ছিল—যা আমরা অতিবাহিত করেছি। পরিস্থিতি ক্রমশ খারাপ হচ্ছিল এবং এখন বিষয়গুলো শৃঙ্খলায় এসেছে...। দেশে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা আমাদের জন্য একটি বড় কাজ ছিল।’
যুক্তরাজ্যে চার দিনের সরকারি সফরের দ্বিতীয় দিনে বুধবার দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জনাথন পাওয়েলের সঙ্গে বৈঠক করছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বৈঠকটি লন্ডন সময় সকাল ৯টা ৩০ মিনিটে শেষ হওয়ার কথা।
এরপর চাথাম হাউসের এশিয়া-প্যাসিফিক প্রোগ্রামের পরিচালক বেন ব্ল্যান্ড এবং দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক জ্যেষ্ঠ গবেষক ড. চিয়েতিগজ বাজপেইয়ের সঙ্গে দেখা করবেন তিনি।
প্রধান উপদেষ্টার ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি আবুল কালাম আজাদ মজুমদার জানিয়েছেন, অধ্যাপক ইউনূস আজ রয়্যাল ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্সে (চাথাম হাউস) একটি গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ দেবেন।
বিকেলে চাথাম হাউসের পক্ষ থেকে তার সম্মানে সংবর্ধনা আয়োজন করা হয়েছে। সন্ধ্যায় অধ্যাপক ইউনূস ব্রিটেনের রাজা তৃতীয় চার্লসের আমন্ত্রণে একটি নৈশভোজে যোগ দেবেন, যা দ্য কিংস ফাউন্ডেশনের ৩৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত।
অধ্যাপক ইউনূস মঙ্গলবার লন্ডনে পৌঁছেছেন। এই চার দিনের সফরের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদার করা, বিশেষ করে অর্থনৈতিক সহযোগিতা, বাণিজ্য ও বিনিয়োগে আরও শক্তিশালী করা।
এরআগে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব রুহুল আলম সিদ্দিকী বলেন, “এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সফর।”
তিনি আরও জানান, অধ্যাপক ইউনূস ব্রিটেনের রাজার সঙ্গে বৈঠক করবেন এবং ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা করবেন। এছাড়া তার আরও কয়েকটি উচ্চপর্যায়ের বৈঠকের পরিকল্পনা রয়েছে।
ঈদ-উল-আজহার টানা ছুটিতে চায়ের রাজ্য মৌলভীবাজার জেলার বিভিন্ন পর্যটন ও দর্শনীয় স্পটগুলোতে দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে। সাজেকের কিছু স্পট বন্ধ এবং সেন্ট মার্টিনসহ কয়েকটি এলাকায় নিষেধাজ্ঞা থাকায় চায়ের রাজ্যে বিপুল সংখ্যক পর্যটকের সমাগম ঘটেছে। শহর ও শহরের বাইরের বিভিন্ন স্থানে দর্শনার্থী ও পর্যটকদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে।
এদিকে, আগত পর্যটক ও দর্শনার্থীরা যাতে নির্বিঘ্নে ঈদ আনন্দ উপভোগ করতে পারেন এবং তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে ট্যুরিস্ট পুলিশের সদস্যরা সার্বক্ষণিক মাঠে সক্রিয় রয়েছেন। তবে বেশ কিছু পর্যটন স্পটে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতি দেখতে পাননি বলে জানিয়েছেন ঘুরতে আসা পর্যটকরা।
বন্যপ্রানী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের তথ্যমতে গত চারদিনে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে ৩ হাজার ৯শত ৪৬জন পর্যটক প্রবেশ করেন। পর্যটকদের প্রবেশ ফি থেকে ৪ লক্ষ ৫০ হাজার ৫শত ৭০ টাকা রাজস্ব আদায় করা হয়। ঈদের দিন পর্যটকের সংখ্যা কম থাকলেও ঈদের পর দিন থেকে পর্যটকদের উপস্থিতি ছিলো লক্ষণীয়।
ঈদের তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম দিন সরেজমিনে বিভিন্ন পর্যটন স্পটে গিয়ে দেখা যায়, শ্রীমঙ্গল বধ্যভূমি ৭১, বাংলাদেশ চা গবেষণা কেন্দ্র, রাবার বাগান, বিটিআরআই চা বাগান, চা কন্যার ভাস্কর্য, দার্জিলিং টিলা, নীলকণ্ঠ সাত রঙের চা কেবিন, হরিণছড়া গলফ মাঠ, বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী সেবা ফাউন্ডেশন ও জীব বৈচিত্র্য ভরপুর বন্যপ্রাণীর অভয়ারণ্য জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, পদ্মকন্যা নয়নাভিরাম মাধবপুর লেক, ঝর্ণাধারা হামহাম জলপ্রপাত, ত্রিপুরা সীমান্তবর্তী ধলই চা বাগানে অবস্থিত মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস-ঐতিহ্যের বাহক বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহী হামিদুর রহমান স্মৃতিসৌধ, বন্যপ্রাণির অভয়ারণ্য রাজকান্দি বন, শমসেরনগর বিমানবন্দর, প্রাচীন ঐতিহ্যের বাহক লক্ষ্মীনারায়ণ দিঘী, ২০০ বছরের প্রাচীন ছয়চিরী দিঘী, শমসেরনগর বাঘীছড়া লেক, আলিনগর পদ্মলেক, মাগুরছড়া পরিত্যক্ত গ্যাসফিল্ড, ডবলছড়া খাসিয়া পুঞ্জি, মাগুরছড়া খাসিয়া পুঞ্জি, অপরূপ শোভামণ্ডিত উঁচু নিচু পাহাড়বেস্টিত সারিবদ্ধ পদ্মছড়া চা বাগান, শিল্পকলা সমৃদ্ধ মনিপুরী ললিত কলা একাডেমি, প্রকৃতির পূজারী খাসিয়া, গারো, সাঁওতাল, মুসলিম মনিপুরী, টিপরা ও গারোসহ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জাতিসত্তার জীবন ধারা ও সংস্কৃতিসহ প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর এই জনপদ পর্যটকদের ঢল নেমেছে।
এছাড়াও মৌলভীবাজার জেলায় হাওড়, পাহাড় ও টিলাবেষ্টিত প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর শতাধিক দৃষ্টিনন্দন পর্যটন স্পট রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি পর্যটক সমাগম ঘটে শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জ উপজেলায়। সবুজের সমারোহে ঘেরা চা বাগান, জীববৈচিত্র্য ও নান্দনিক প্রকৃতি দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আকৃষ্ট করে। প্রতি বছর ঈদসহ বিভিন্ন সরকারি ছুটিতে পর্যটকদের উপস্থিতি বেড়ে যায় কয়েকগুন।
ঈদ উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা পর্যটকরা ছবি ও সেলফি তুলে পরিবারের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করছেন। পাশাপাশি ছোট্ট শিশুরাও আনন্দে মেতে উঠেছে। বিভিন্ন চায়ের দোকানে বসে পর্যটকেরা প্রাণবন্ত আড্ডায় মেতে উঠেছেন। পাশাপাশি, চাঁদের গাড়িখ্যাত জিপ গাড়িগুলো নিয়ে চা বাগানের আঁকাবাঁকা পথে ঘুরে বেড়াতে দেখা গেছে অনেককেই।
রাজধানী ঢাকা থেকে পরিবার নিয়ে আসেন আসিফ। তিনি বলেন, ‘মৌলভীবাজার জেলা তো অন্যান্য জেলার থেকে সুন্দর। বাংলাদেশের মধ্যে অসম্ভব সুন্দর একটি স্থান এই জেলা। দেশের পর বিদেশেও এ জেলার সুনাম রয়েছে। কমলগঞ্জ ও শ্রীমঙ্গল উপজেলার বিভিন্ন চা বাগানে গিয়েছি, ছবি তুলেছি। যদিও আবহাওয়া অনেক গরম তবুও ভালো লেগেছে। সুন্দর সবুজ পরিবেশ। চা বগান তো বরাবরই সুন্দর হয়ে থাকে, অনেকটা সময় কেটেছে সেখানে।’
সাতখিরা থেকে ঘুরতে কমলগঞ্জ এসেছেন তান্নী হাসান। তিনি এই প্রতিবেদককে জানান, 'আজকের ভ্রমণটি আমার খুব ভালো লাগছে। নুরজাহান চা বাগান ও গ্র্যান্ড সুলতান রিসোর্টে গিয়েছি, মানে এতো মনোমুগ্ধকর এবং সবুজের অরণ্য দেখতে খুবই ভালো লাগছে। সবকিছু মিলিয়ে পরিবারের সবাইকে নিয়ে চায়ের দেশে ঘুরতে ভালো লাগছে।'
সিলেট থেকে শিশুদের নিয়ে ঘুরতে আসা শিক্ষিকা মিলি আক্তার। তিনি বলেন, ‘পরিবার নিয়ে ঘুরতে এসেছি। সুন্দর পরিবেশে নির্ভাবনায় সময় কাটাতে পেরেছি, এটা খুব ভালো লাগছে। বধ্যভূমি ৭১ ও কমলগঞ্জ উপজেলার শমশেরনগর গল্ফ মাঠে শিশুরা খেলাধুলা করছে। শহরের ভেতরে এমন খোলা জায়গায় শিশুদের আনন্দ করতে দেখে ভালো লাগছে। কাজের ব্যস্ততায় সময় বের করা যায় না। তাই ঈদের ছুটিতে পরিবার নিয়ে ঘুরতে বের হয়েছি।'
লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. কাজী নাজমুল হক এ প্রতিবেদকে বলেন, ঈদের টানা ছুটিতে প্রচুর পর্যটক লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে পরিবার - পরিজন নিয়ে ঘুরতে এসেছেন, আগত পর্যটকরা যাতে নির্ভিগ্নে ঘুরে বেড়াতে পারে সেজন্য বনকর্মীদের পাশাপাশি, সিএমসি‘র সদস্যদের তদারকি, সিপিজি‘র সদস্য ট্যুরিস্ট গাইডরা রয়েছেন। এছাড়া পর্যটকদের নিরাপত্তায় সার্বক্ষণিক টুরিস্ট পুলিশ ও কমলগঞ্জ থানা পুলিশের একটি টিম দায়ীত্ব পালন করছেন। তিনি জানান, গত চারদিনে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে ৩হাজার ৯শত ৪৬জন পর্যটক প্রবেশ করেন।পর্যটকদের প্রবেশ ফি থেকে ৪ লক্ষ ৫০হাজার পঁচশত সত্তর টাকা রাজস্ব আদায় করা হয়।
ট্যুরিস্ট পুলিশ শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ জোনের ওসি মো. কামরুল হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘ঈদে পর্যটকদের নিরাপত্তায় আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। যাতে কেউ কোনো সমস্যায় না পড়েন। লাউয়াছড়া, মাধবপুর লেক, বধ্যভূমি, দার্জিলিং টিলাসহ বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানগুলোতে আমাদের টহল ব্যবস্থা সার্বক্ষণিক ভাবে চলমান রয়েছে।’
কমলগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ আবু জাফর মো. মাহফুজুল কবীর বলেন, ‘ঈদুল আযহা'র ছুটিতে পর্যটকদের নিরাপত্তায় ট্যুরিস্ট পুলিশের পাশাপাশি প্রতিদিন থানা পুলিশের একটি টিম কাজ করছে,এছাড়া আমি নিজেও ট্যুরিস্টদের নিরাপত্তার বিষয়টি তদারকি করি।’
তিনি বলেন, ঈদের ছুটিতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রতি বছর হাজারো পর্যটক চায়ের দেশ শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জের মনোরম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসেন। দেশি-বিদেশি পর্যটকদের কাছে এসব দর্শনীয় স্থান অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে চা বাগানগুলো পর্যটকদের পছন্দের তালিকার শীর্ষে সময়-সময় থাকে।’
মৌলভীবাজার সহকারী পুলিশ সুপার (শ্রীমঙ্গল সার্কেল) আনিসুর রহমান বলেন, ‘পর্যটক ও স্থানীয়দের নিরাপত্তার জন্য কাজ করে যাচ্ছি। ঈদের ছুটিতে ঘুরতে আসা পর্যটকদের জন্য ট্যুরিস্ট পুলিশের সাথে সমন্বয় করে প্রতিটি পর্যটন স্পর্টগুলোতে আমাদের পুলিশ আছে। পর্যটকরা যেন ঈদের ছুটি কাটিয়ে নির্ভিগ্নে বাড়ি ফিরতে পারে সেই লক্ষেই আমরা কাজ করছি।’
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ফের বাড়তে শুরু করেছে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ। চিহ্নিত হচ্ছে ভাইরাসটির নতুন নতুন সাব ভ্যারিয়েন্ট। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশেও সংক্রমণ বৃদ্ধির শঙ্কায় সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ শুরু করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
সংক্রমণ ঠেকাতে বন্দরে নজরদারি জোরদার করার পাশাপাশি জনসাধারণের উদ্দেশ্যে সাতটি পরামর্শ দিয়েছে সংস্থাটি। বুধবার (১১ জুন) দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব সতর্কতার কথা জানান অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবু জাফর।
তিনি বলেন, ‘পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে করোনা ভাইরাসজনিত সংক্রমণের হার বৃদ্ধি পেয়েছে। করোনা ভাইরাসের কয়েকটি নতুন সাব ভ্যারিয়েন্ট এরইমধ্যে চিহ্নিত হয়েছে।’
‘আন্তর্জাতিক ভ্রমণকারীদের মাধ্যমে বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসের সংক্রমনের বিস্তার প্রতিরোধে দেশের সব স্থল-নৌ-বিমান বন্দরের আইএইচআর ডেস্কে নজরদারি এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়গুলো জোরদার করার বিষয়ে এরইমধ্যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে,’ যোগ করেন তিনি।
এসময় স্বাস্থ্য মহাপরিচালক স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধি ও সংক্রমণ থেকে বাঁচতে ৭ নির্দেশনা দেন। সেগুলো হলো-
১. জনসমাগম এড়িয়ে চলুন। একান্ত প্রয়োজন হলে অবশ্যই মাস্ক পরুন।
২. শ্বাসতন্ত্রের রোগ থেকে বাঁচতে নিয়মিত মাস্ক ব্যবহার করুন।
৩. হাঁচি বা কাশির সময় নাক-মুখ ঢেকে রাখুন (কনুই বা টিস্যু ব্যবহার করে)।
৪. ব্যবহৃত টিস্যু ঢাকনাযুক্ত ময়লার ঝুড়িতে ফেলুন।
৫. সাবান ও পানি অথবা হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে ২০ সেকেন্ড ধরে হাত ধুয়ে ফেলুন।
৬. অপরিষ্কার হাতে চোখ, নাক, মুখ স্পর্শ করবেন না।
৭. আক্রান্ত ব্যক্তিদের থেকে অন্তত ৩ ফুট দূরত্ব বজায় রাখুন।
সংবাদ সম্মেলনে করোনা শনাক্তকরণ ও চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রস্তুতির বিষয়েও বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে। অধ্যাপক ডা. আবু জাফর বলেন, করোনা শনাক্তে আবারও আরটি-পিসিআর ও র্যাপিড অ্যান্টিজেন পরীক্ষার ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি করোনার টিকা, প্রয়োজনীয় ওষুধ, অক্সিজেন, হাই-ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা, ভেন্টিলেটর, আইসিইউ ও এইচডিইউ সুবিধাসহ কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালগুলো প্রস্তুত রাখতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এছাড়াও সেবা প্রদানকারী স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য নিরাপত্তা সরঞ্জাম যেমন—কেএন-৯৫ মাস্ক, পিপিই ও ফেস শিল্ড নিশ্চিত করার নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়সহ সরকারের অন্যান্য সংশ্লিষ্ট সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে এসব প্রস্তুতি চলছে বলে জানায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
এদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, আন্তর্জাতিক ভ্রমণকারীদের মাধ্যমে করোনা ভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট দেশে ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। এ প্রেক্ষাপটে দেশের বিমানবন্দর, স্থলবন্দর ও নৌবন্দরে আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য বিধিমালার (আইএইচআর) আওতায় পরিচালিত ডেস্কগুলোকে আরও সক্রিয় করা হয়েছে। একই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদেরকে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
যশোরের শার্শায় সন্ত্রাসীদের হামলয় বিএনপি কর্মী নিহত হয়েছে। এলাকায় অধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এ ঘটনা ঘটেছে বলে জানা যায়।
মঙ্গলবার (১০ জুন) রাত ১০টার দিকে উপজেলার লক্ষ্মণপুর ইউনিয়নের দুর্গাপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহত লিটন (৩০) দুর্গাপুর গ্রামের আজগর আলীর ছেলে।
স্থানীয়রা জানান, গতকাল (মঙ্গলবার) রাত ১০ টার দিকে লিটন বাজারে বসে চা খাচ্ছিলেন। এ সময় ওই এলাকার সেলিম ও রমজান তার ওপর দেশীয় অস্ত্র নিয়ে অতর্কিত হামলা চালায় এবং কুপিয়ে গুরুতর জখম করে।
এ সময় লিটনের চিৎকারে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। পরে স্বজনরা এসে তাকে উদ্ধার করে শার্শা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
নিহতের বাবা আজগর আলী বলেন, ‘স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল মমিন, সেলিম হোসেন ও রমজান আলীর সঙ্গে তার ছেলের দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক বিরোধ ছিল। তারা এর আগেও কয়েকবার আমার ছেলেকে মারধরও করেছে। ঈদের আগের দিন তাদের মধ্যে বাগবিতণ্ডা ও ধাক্কাধাক্কিও হয়। এসব ঘটনার জেরে লিটনকে হত্যা করা হয়েছে।’
শার্শা উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নুরুজ্জামান লিটন বলেন, ‘লিটন বিএনপির একজন সক্রিয় কর্মী। শত্রুতার জেরে সেলিম ও রমজানসহ সন্ত্রাসীরা তাকে কুপিয়ে হত্যা করেছে। আমি এই হত্যার সুষ্ঠু বিচার চাই।’
শার্শা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রবিউল ইসলাম বলেন, ‘উপজেলার লক্ষ্মণপুর ইউনিয়নের দুর্গাপুর গ্রামে একজনকে কুপিয়ে হত্যা করেছে সন্ত্রাসীরা। হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের আটকের জন্য পুলিশের অভিযান চলছে।’
কমনওয়েলথ মহাসচিব শার্লি আয়র্কর বোচওয়ে বলেছেন, আগামী বছরের জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক সংস্কারে বাংলাদেশকে সহায়তা করতে আগ্রহী সংস্থাটি।
গতকাল লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে বোচওয়ে বলেন, 'বাংলাদেশ যদি চায়, বিশেষ করে সাংবিধানিক সংস্কারের জন্য, তাহলে আমরা সহযোগিতা করতে প্রস্তুত।'
বোচওয়ে বলেন, গণতন্ত্র ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে সহায়তা করা আগামী পাঁচ বছরের জন্য কমনওয়েলথের অন্যতম প্রধান অগ্রাধিকার।
তিনি আরও জানান, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে সদস্য রাষ্ট্রগুলোর সংগ্রামে সহায়তা করাও সংগঠনের অগ্রাধিকারভিত্তিক লক্ষ্য।
কমনওয়েলথ ২.৭ বিলিয়ন জনগণের প্ল্যাটফর্ম উল্লেখ করে ঘানার এই নাগরিক বলেন, বর্তমানে সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে বার্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ প্রায় ৮৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং আগামী কয়েক বছরে তা কমপক্ষে ১ ট্রিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে।
তিনি বলেন, কমনওয়েলথের অনেক সদস্য রাষ্ট্র জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত এবং এর মধ্যে অনেক দেশ আকারে অত্যন্ত ছোট।
'আমরা তাদের জলবায়ু অর্থায়নে প্রবেশাধিকার পেতে সহায়তা করার চেষ্টা করব,' তিনি বলেন।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস কমনওয়েলথ মহাসচিবকে ক্রীড়া খাতে সম্ভাবনা অনুসন্ধান এবং সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে তরুণদের সম্পৃক্ততা বাড়ানোর আহ্বান জানান।
'ক্রীড়া শুধু বিনোদনের মাধ্যম নয়, এটি একটি সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গিও। আমরা ক্রীড়াবিদদের উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য উৎসাহ দিচ্ছি। কমনওয়েলথের স্মরণীয় হয়ে ওঠার জন্য ক্রীড়া হতে পারে একটি ভালো মাধ্যম,' বলেন প্রধান উপদেষ্টা।
কমনওয়েলথ মহাসচিব জানান, চলতি মাসে তারা ঢাকায় একটি যুব প্রোগ্রাম আয়োজন করতে যাচ্ছেন।
তিনি আরো জানান, কমনওয়েলথের ১.৫ বিলিয়ন জনগণ তরুণ এবং তাদের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে যুক্ত করার জন্য তারা কাজ করছেন।
তিনি জানান, তারা কমনওয়েলথ বৃত্তিগুলো পুনর্গঠনের পরিকল্পনাও করছেন, একটি ক্ষেত্র যা প্রধান উপদেষ্টা গুরুত্ব দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন।
সাক্ষাৎকালে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী, এসডিজি বিষয়ক সিনিয়র সচিব লামিয়া মোরশেদ এবং যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের হাইকমিশনার আবিদা ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।