সারা দেশের সাধারণ শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে কোটাবিরোধী আন্দোলন ক্রমেই বেশ বড় আকার ধারণ করছে। গত কয়েক দিন ধরে কোটা সংস্কার তথা কোটাবিরোধী আন্দোলনের টানা কর্মসূচিতে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা অচল হয়ে পড়ে। গত বুধবার শিক্ষার্থীদের ‘বাংলা ব্লকেড’- এর কারণে রাজধানী ঢাকা কার্যত অচল হয়ে পড়ে। ভোগান্তিতে পড়ে সাধারণ মানুষ। এদিকে গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর শাহবাগে পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের মুখোমুখি অবস্থান দেখা গেছে।
অন্যদিকে কোটাবিরোধী চলমান এই আন্দোলন নিয়ে সরকার হার্ডলাইনে রয়েছে বলে লক্ষ্য করা গেছে। সরকারের দায়িত্বশীল বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীসহ পুলিশ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিভিন্ন বক্তব্যে তা বোঝা গেছে।
দৈনিক বাংলার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধির পাঠানো তথ্যমতে, সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্করের দাবিতে হাইকোর্টের দেওয়া চার সপ্তাহের স্থিতাদেশ অমান্য করে গতকাল আবারও রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি পালন করতে নামেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। এতে এ অঞ্চলে পুলিশ ও আন্দোলনকারীদের সঙ্গে একটি মুখোমুখি অবস্থার তৈরি হয়।
বিকেল ৫টার আগ থেকেই সেখানে জড়ো হতে থাকেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। তবে শুরুতেই তাদের জমায়েতে পুলিশ কোনো বাধা না দিলেও একসময় তা একটি রোষানলে রূপ নেয়। পুলিশ এ সময় শাহবাগ হয়ে কারওয়ানবাজার সড়কে সতর্ক অবস্থান নিয়েছিল।
শাহবাগে সতর্ক অবস্থানে থাকা পুলিশ চেয়েছে শিক্ষার্থীরা যেন শাহবাগ ছাড়া অন্য কোনো মোড় দখল নিতে না পারে। তাই তারা ব্যারিকেডও বসিয়ে রাখে। তবে পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের একসময় ধাক্কাধাক্কি হয়। জানা যায়, পুলিশের সাঁজোয়া যানে উঠে কয়েকজন শিক্ষার্থী ভুয়া ভুয়া স্লোগানও দেন। পরে শিক্ষার্থীরা সমস্বরে ‘গো ব্যাক গো ব্যাক’ স্লোগান দিতে থাকেন। এরপর থেকে আস্তে আস্তে পিছু হটে পুলিশের সাঁজোয়া যান।
অন্যদিকে নতুন করে কর্মসূচি দিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। আজ শুক্রবার বিকেল ৪টায় সারা দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ মিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা দিয়ে গতকাল রাত নয়টায় আন্দোলনকারীরা শাহবাগ মোড় ছাড়েন। এরপর শাহবাগ মোড়ের যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। পরে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যে গিয়ে তাদের কর্মসূচি শেষ করেন। কর্মসূচি ঘোষণা করে আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ হাসান বলেন, আমাদের এক দাবিসহ গতকাল সারা দেশে আন্দোলনে যে হামলা এবং বাধা দেওয়া হয়েছে আর যারা এটি করেছে তাদের বিচারের দাবিতে দেশের সব ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। তিনি বলেন, সংসদের জরুরি অধিবেশন ডেকে আইন পাস করতে হবে। তার আগ পর্যন্ত আমরা রাজপথে থাকব।
শুধু রাজধানী ঢাকায় নয়। সারা দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোটাবিরোধী আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে। জাহাঙ্গীরনগর, জগন্নাথ, চট্টগ্রাম, বাংলাদেশ কৃষি, কুমিল্লা, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের কোটাবিরোধী আন্দোলনকে সরকারবিরোধী আন্দোলনে রূপ দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করে বলেছেন, ‘আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের রাজনৈতিক ফাঁদে ফেলে নতুন আন্দোলন করার পাঁয়তারা করছে বিএনপি। কোটা আন্দোলনকে ঘিরে সরকারবিরোধী আন্দোলনের খায়েশ পূর্ণ হতে দেব না।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, ‘অনাকাঙ্ক্ষিত কোনো পরিস্থিতি তৈরি হলে পুলিশ বসে থাকবে না।’
জনপ্রশাসনমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেছেন, সরকারি চাকরিতে কোটার বিষয়টি এখন আদালতের বিষয়। তাই আদালতেই এর সমাধান হোক।
যে বিষয়টি আদালতের, সেখানে না গিয়ে রাস্তায় ব্যারিকেড, ভোগান্তি সৃষ্টি করা অযৌক্তিক কাজ বলে মনে করেন তিনি।
এ ছাড়া তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত বলেছেন, ‘বুধবার সর্বোচ্চ আদালতের দেওয়া আদেশে সরকারের ২০১৮ সালের পরিপত্র আবার বলবৎ হয়েছে। আদেশ অনুযায়ী কোটা বিষয়ে হাইকোর্টের রায় আর কার্যকর থাকছে না। সুতরাং জনদুর্ভোগ তৈরি হয় এ ধরনের কার্যক্রম থেকে বিরত থাকুন।’ তিনি আরও বলেন, ‘সর্বোচ্চ আদালতের এই কার্যক্রম পুরোপুরি সমাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত সরকারও এ বিষয়ে কোনো কিছুই করতে পারবে না। এ বিষয়ে কোনো ঘোষণাও দিতে পারবে না।’
অন্যদিকে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার ড. খ. মহিদ উদ্দিন বলেছেন, কোটা নিয়ে বুধবার (১০ জুলাই) আদালত একটি নির্দেশনা দিয়েছেন। তাই আর কোটা নিয়ে আন্দোলনের কোনো অবকাশ নেই। আমরা অনুরোধ করব, আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা নতুন করে জনদুর্ভোগ সৃষ্টির মতো কর্মসূচি দেবেন না; অন্তত এই চার সপ্তাহ। এরপরও যদি আন্দোলনের নামে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করা হয়, তাহলে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে পুলিশ।
এ ছাড়া কোটা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফেরার আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে চলমান কোটাবিরোধী আন্দোলন নিয়ে নিজেদের অবস্থান জানায় ছাত্রলীগ। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সাদ্দাম হোসেন আদালতের পর্যবেক্ষণ বিবেচনার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, ‘শুধু নির্বাহী বিভাগ থেকে আদেশ চাওয়া বুদ্ধিমানের কাজ নয়। ভালো সিদ্ধান্ত নিতে সময় লাগে।’ কোটা পদ্ধতির গুরুত্ব তুলে ধরে ছাত্রলীগ সভাপতি বলেন, ‘কোটা ব্যবস্থা একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক কাঠামো যা অংশগ্রহণ এবং লিঙ্গ ভারসাম্য নিশ্চিত করে। সরকার ও হাইকোর্ট এ সমস্যা সমাধানে সক্রিয়ভাবে কাজ করছে। শিক্ষার্থীদের ধৈর্য ধরতে হবে।’
কুবি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ, আহত ৫০ : কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি জানান, সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় অন্তত ৫০ জন শিক্ষার্থী, ২ জন ক্যাম্পাস সাংবাদিক ও ৪ জন পুলিশ আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়-সংলগ্ন প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর ভবনের সামনের সড়কে এ ঘটনা ঘটে। দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের উদ্দেশে শিক্ষার্থীরা রওনা দিলে আনসার ক্যাম্পসংলগ্ন রাস্তায় পুলিশ তাদের বাধা দেয়। এ সময় দুই পক্ষে উত্তেজনা দেখা দিলে পুলিশ টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে। পুলিশের বাধার মুখে শিক্ষার্থীরা ‘লড়াই লড়াই লড়াই চাই, লড়াই করে বাঁচতে চাই’, ‘একাত্তরের হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার’, ‘দিয়েছি তো রক্ত, আরও দেব রক্ত’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে পুলিশ ফাঁকা গুলি ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে। এতে শিক্ষার্থীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়।
জাবি শিক্ষার্থীদের মহাসড়ক অবরোধ :
জাবি প্রতিনিধি জানান, পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে এক দফা আদায়ে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ কর্মসূচি শুরু করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টার দিকে একটি মিছিল নিয়ে মহাসড়কে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিম ও পুলিশ বাধা দিলেও তা উপেক্ষা করে মহাসড়কে অবস্থান নেন তারা। শিক্ষার্থীরা জানান, পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী বিকেল ৩টার দিকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে অবরোধ পালন করার কথা। মহাসড়কে শতাধিক পুলিশের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। তবে প্রথমদিকে মারমুখী থাকলেও শিক্ষার্থীদের অবস্থান নেওয়ার পর তাদের সতর্ক অবস্থানে দেখা যায়। ঢাকা জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অপস অ্যান্ড ট্রাফিক) আব্দুলাহিল কাফি গণমাধ্যমকে বলেন, এ মহাসড়ক অবরোধ করলে অসুস্থ মানুষ, রোগী ছাড়াও উত্তরবঙ্গগামী মানুষের ব্যাপক ভোগান্তি হয়। এসব ভোগন্তি এড়াতে মহাসড়ক অবরোধ না করার জন্য শিক্ষার্থীদের প্রতি অনুরোধ। কারণ আইনি ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হতে চাই না আমরা।
জবি শিক্ষার্থীদের আন্দোলন অব্যাহত : জবি প্রতিনিধি জানিয়েছেন, সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের তালা ভেঙে মিছিল বের করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থীরা। এ সময় বেশ কয়েকবার পুলিশি বাধা উপেক্ষা করে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল করেন। বৃহস্পতিবার বিকাল সাড়ে ৪টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্মুক্ত লাইব্রেরির সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি শুরু করেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। এ সময় কোটা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে বাধা দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তবে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যদের তালা ভেঙে বিক্ষোভ মিছিলটি বের করেন। মিছিলে অংশ নেওয়া আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের পুরান ঢাকার শাঁখারী বাজার থেকে রায়সাহেব বাজার মোড়ে পুলিশ ব্যারিকেড দেয়। তবে ব্যারিকেড এবং বাধা দিয়ে শিক্ষার্থীদের ধরে রাখতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। পরবর্তীতে মিছিলটি জিরো পয়েন্ট পেরিয়ে শাহবাগে অবস্থান নেয়।
চট্টগ্রামে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে পুলিশ ও ছাত্রলীগের হামলা : চবি প্রতিনিধি জানান, চট্টগ্রামে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ওপর দ্বিমুখী হামলা চালিয়েছেন পুলিশ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এ ঘটনায় দুইজন নারী শিক্ষার্থীসহ মোট ১০ জন আহত হয়েছেন। শিক্ষার্থীরা দাবি করেন পুলিশি পাহারায় তাদের ওপর হামলা চালান ছাত্রলীগ কর্মীরা। বৃহস্পতিবার সরকারি চাকরির সকল গ্রেডে অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাতিল করে কোটাপদ্ধতি সংস্কার করার এক দফা দাবিতে চট্টগ্রাম নগরীর টাইগারপাস এলাকায় অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা। দুপুর আড়াইটা থেকে তাদের কর্মসূচি শুরু হলে বিকেল চারটায় শিক্ষার্থীদের ওপর প্রথম হামলা করে পুলিশ। এ সময় দুইজন নারী শিক্ষার্থীসহ পাঁচজন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। আহতদের চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।
পুলিশের বাধার মুখে শিক্ষার্থীরা টাইগার পাস থেকে লং মার্চ করে দুই নম্বর গেট এলাকায় আসার সময় নগরীর ওয়াসা মোড়ে ফের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালান কয়েকজন ছাত্রলীগ কর্মী। পরে শিক্ষার্থীরা পুনরায় তাদের লং মার্চ নিয়ে নগরীর দুই নম্বর গেট এলাকায় যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মিছিলের পেছন থেকে অতর্কিতভাবে লাঠিপেটা করে পুলিশ। এ ঘটনায় আরও পাঁচজন শিক্ষার্থী আহত হন ও আন্দোলনকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান। পরে শিক্ষার্থীরা একত্রিত হয়ে নগরী দুই নম্বর গেটে অবস্থান নেন ও আন্দোলন চালিয়ে যান।
কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের লাঠিচার্জ : শেকৃবি প্রতিনিধি জানান, সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা পুনর্বহালের প্রতিবাদে রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শেকৃবি) শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে লাঠিচার্জ করেছে পুলিশ। এতে আহত হয়েছে অন্তত ১০ জন সাধারণ শিক্ষার্থী। বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সেকেন্ড গেটের সামনে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সাথে পুলিশের ধাক্কাধাক্কি হয়। একপর্যায়ে শিক্ষার্থীদের ওপর লাঠিচার্জ করে পুলিশ। কিছুক্ষণ পর সংঘর্ষে রূপ নেয়। একপর্যায়ে শিক্ষার্থীরা পুলিশের বাধা উপেক্ষা আগারগাঁও সড়ক দখলে নেয়।
ইবিতে কুষ্টিয়া খুলনা মহাসড়ক অবরোধ : ইবি প্রতিনিধি জানান, কোটা সংস্কারের দাবিতে কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী খুলনা-কুষ্টিয়া মহাসড়ক অবরোধ করেন আন্দোলনকারীরা। বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে তিনটা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা প্রাঙ্গণে জড়ো হয়ে পদযাত্রা শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয় ফটক খুলে পুলিশি বাধা অতিক্রম করেন আন্দোলনকারীরা মহাসড়কে অবস্থান করে। শান্তিপূর্ণভাবে প্রায় ঘণ্টাখানেক সড়ক অবরোধের পর পুনরায় মৃত্যুঞ্জয়ী মুজিব ম্যুরালে অবস্থান করে কোটাবিরোধীরা।
সাংবাদিক মুন্নি সাহা ও তার স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ৩৫টি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট অবরুদ্ধ (ফ্রিজ) করেছে সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট। অ্যাকাউন্টগুলোতে মোট ১৮ কোটি ১৬ লাখ ৫৩ হাজার ৭৩৯ টাকা আছে। গতকাল শনিবার সিআইডি থেকে দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়েছে, মুন্নি সাহা ও তার স্বামী কবির হোসেন সাংবাদিকতা পেশাকে ব্যবহার করে বিধিবহির্ভূতভাবে প্রভাব খাটিয়ে প্রতারণা ও চাঁদাবাজির মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করেন। অবৈধভাবে উপার্জিত অর্থ নিজ এবং স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে পরিচালিত ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে লেনদেন করে আসছে বলে সিআইডির কাছে অভিযোগ আসে। অভিযোগের ভিত্তিতে সিআইডি, ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ বিধিমালা, ২০১৯ মোতাবেক সন্দেহভাজন ব্যক্তি ও তার স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং অনুসন্ধান শুরু করে।
'প্রাথমিক অনুসন্ধানে মুন্নি সাহা ও তার স্বামী কবির হোসেন এবং তাদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে থাকা ব্যাংক হিসাবের তথ্য পর্যালোচনা দেখা যায়, সন্দেহভাজন ব্যক্তি ও তার স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে বিভিন্ন ব্যাংকে মোট ৪৬টি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে। যার মধ্যে বর্তমানে ৩৫টি চালু আছে। এসব অ্যাকাউন্টে সন্দেহজনকভাবে মোট ১৮৬ কোটি ৫৬ লাখ ৯১ হাজার আট টাকা লেনদেন করা হয়েছে এবং বর্তমানে ১৮ কোটি ১৬ লাখ ৫৩ হাজার ৭৩৯ টাকা আছে। প্রাথমিক অনুসন্ধানে ওই ব্যাংক হিসাবগুলোর লেনদেন সন্দেহজনক মনে হলে সেগুলো অবরুদ্ধ করার আবেদন করা হয়।'
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের সিনিয়র স্পেশাল জজ মুন্নি সাহা ও তার স্বামী কবির হোসেন এবং তাদের স্বার্থ সম্পৃক্ত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে থাকা ১৮ কোটি ১৬ লাখ ৫৩ হাজার ৭৩৯ টাকাসহ ৩৫টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ (ফ্রিজ) করার আদেশ দেন। তাদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান চলমান বলেও বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভর্তি বাতিলের সিদ্ধান্তে সাময়িক স্থগিতাদেশ জারি করেছেন এক বিচারক। এই আদেশ হাজার হাজার আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর জন্য সাময়িক স্বস্তি এনেছে, যাদের এই নীতির আওতায় অন্যত্র স্থানান্তরিত হওয়ার মুখে পড়তে হয়েছিল।
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় ট্রাম্প প্রশাসনের এই নীতিকে যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান ও অন্যান্য ফেডারেল আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন হিসেবে অভিহিত করেছে। এর আগে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভর্তির ক্ষমতা বাতিল করে।
হোমল্যান্ড সিকিউরিটি সেক্রেটারি ক্রিস্টি নোয়েম এক্স-এ লেখেন, আইন মেনে চলতে ব্যর্থ হয়েছে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়। প্রশাসন স্টুডেন্ট অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ ভিজিটর প্রোগ্রামের অধীনে হার্ভার্ডের সার্টিফিকেশন বাতিল করেছে। এটি যুক্তরাষ্ট্রের সব বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য একটি সতর্কবার্তা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য অনুসারে, গত শিক্ষাবর্ষে ৬ হাজার ৭০০ জনেরও বেশি আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী এই প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়েছিল। সম্প্রতি হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য নির্ধারিত ৬ কোটি ডলারের ফেডারেল অনুদান বাতিল করা হয়। প্রতিষ্ঠানটি ক্যাম্পাসে ইহুদিবিদ্বেষ ও জাতিগতবৈষম্য মোকাবিলায় ব্যর্থ বলে অভিযোগ করা হচ্ছে।
গত কয়েক সপ্তাহে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন হার্ভার্ডের জন্য বরাদ্দ প্রায় ৩০০ কোটি ডলারের ফেডারেল অনুদান এবং চুক্তি জব্দ বা বাতিল করেছে।
রোহিঙ্গারা সমুদ্রপথে ঝুঁকি নিচ্ছে বলে জাতিসংঘের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। মিয়ানমার ও বাংলাদেশে ভয়াবহ মানবিক পরিস্থিতি রোহিঙ্গাদের আরও বেশি করে বিপজ্জনক নৌযাত্রায় ঝুঁকি নিতে বাধ্য করছে। এতে মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটছে। জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর এ তথ্য জানিয়েছে। গতকাল শনিবার বিবিসির এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি মাসেই রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিয়ে একটি নৌকা ডুবে যায়। এতে আনুমানিক ৪২৭ জন প্রাণ হারিয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। সংস্থাটি বলেছে, মানবিক সহায়তার তহবিল কমে যাওয়ায় এই সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর দুর্দশা আরও গভীর হয়েছে।
ইউএনএইচসিআর জানায়, গত ৯ ও ১০ মে দুটি নৌকা ডুবে যায়। এতে প্রায় ৫১৪ জন রোহিঙ্গা ছিলেন। ধারণা করা হচ্ছে, তারা বাংলাদেশে কক্সবাজারের শরণার্থী শিবির ও মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে যাত্রা শুরু করেছিলেন। এ ঘটনায় মাত্র ৮৭ জনকে জীবিত উদ্ধার করা গেছে। যদি ৪২৭ জনের মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত হয়, তবে এটি এই বছরের রোহিঙ্গাদের জন্য সমুদ্রপথে সবচেয়ে ভয়াবহ দুর্ঘটনা হবে।
সংস্থাটি আরও জানায়, এ সব রোহিঙ্গারা বর্ষা মৌসুমের মধ্যেই সমুদ্রপথে যাত্রা বেছে নেয়। যা তাদের চরম হতাশা ও নিরুপায়তার ইঙ্গিত।
ইউএনএইচসিআর-এর এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের আঞ্চলিক ব্যুরোর পরিচালক হাই কিউং জুন বলেন, মানবিক পরিস্থিতির অবনতি এবং তহবিল কাটছাঁট রোহিঙ্গাদের জীবনে ভয়াবহ প্রভাব ফেলছে। তারা এখন নিজেদের ও পরিবারের জন্য নিরাপত্তা, সুরক্ষা এবং মর্যাদাপূর্ণ জীবনের সন্ধানে বিপজ্জনক পথ বেছে নিচ্ছে।
সংস্থাটি বাংলাদেশসহ রোহিঙ্গা শরণার্থী আশ্রয়দানকারী দেশগুলো ও মিয়ানমারে অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুতদের জীবনের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে আরও আর্থিক সহায়তার আহ্বান জানিয়েছে। ২০২৫ সালের জন্য ইউএনএইচসিআর-এর চাওয়া ৩৮৩ দশমিক ১ মিলিয়ন ডলারের মধ্যে এখন পর্যন্ত মাত্র ৩০ শতাংশ তহবিল জোগাড় হয়েছে।
২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র ইউএনএইচসিআরকে ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি অনুদান দিয়েছে, যা সংস্থাটির মোট অনুদানের ৪০ শতাংশ। মার্চ মাসে সংস্থাটি ব্যয়ের সীমাবদ্ধতার কারণে ৩০০ মিলিয়ন ডলারের বেশি পরিকল্পিত কার্যক্রম বন্ধ রেখেছে।
আজ ১১ জ্যৈষ্ঠ জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৬তম জন্মবার্ষিকী। জাতীয় পর্যায়ে কবির জন্মবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। বাংলা সাহিত্যের উজ্জ্বল নক্ষত্র জাতীয় কবির জন্মবার্ষিকী উদযাপিত হচ্ছে গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায়।
বাংলা ১৩০৬ বঙ্গাব্দের ১১ জ্যৈষ্ঠ বর্ধমান জেলার আসানসোলের জামুরিয়া থানার চুরুলিয়া গ্রামে তিনি জন্মেছিলেন। তার ডাক নাম দুখু মিয়া। পিতার নাম কাজী ফকির আহমেদ ও মা জাহেদা খাতুন।
শৈশব-কৈশোর-তারুণ্যের জীবনের পরতে পরতে সংগ্রাম করতে হয়েছে তাকে। জড়িয়েছিলেন নানা পেশায়। ১৯১৭ সালে যোগ দেন সেনাবাহিনীতে। অংশ নেন প্রথম বিশ্বযুদ্ধেও।
কাজী নজরুল ইসলাম চির প্রেমের কবি। তিনি যৌবনের দূত। তিনি প্রেম নিয়েছিলেন, প্রেম চেয়েছিলেন। মূলত তিনি বিদ্রোহী কিন্তু তার প্রেমিক রূপটিও প্রবাদপ্রতিম। তাই মানুষটি অনায়াসেই বলতে পারেন ‘আমার আপনার চেয়ে আপন যে জন খুঁজি তারে আমি আপনায়।’
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৬তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে জাতীয় পর্যায়ে আজ রোববার থেকে শুরু হচ্ছে তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠান। এবারের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান: কাজী নজরুলের উত্তরাধিকার’। অনুষ্ঠানসমূহ সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
সংস্কৃতি-বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সহযোগিতায় এবং কুমিল্লা জেলা প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় আজ থেকে ২৭ মে পর্যন্ত কুমিল্লায় এই অনুষ্ঠান আয়োজন করা হবে।
কুমিল্লা জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে বিকেল ৩টায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন সংস্কৃতি-বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।
মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মফিদুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করবেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক মো. লতিফুল ইসলাম শিবলী এবং কবি পৌত্রী ও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম ইনস্টিটিউট ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান খিলখিল কাজী।
স্মারক বক্তৃতা করবেন অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান এবং স্বাগত বক্তৃতা করবেন কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মো. আমিরুল কায়ছার।
অনুষ্ঠানে ‘নজরুল পুরস্কার ২০২৩ ও ২০২৪’-এর জন্য মনোনীত গুণীজনদের হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হবে।
আলোচনা শেষে একাডেমির বিশেষ নিবেদন ‘চেতনা ও জাগরণে নজরুল’ শীর্ষক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
এছাড়া আগামীকাল সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় একাডেমির সংগীত, নৃত্য ও আবৃত্তি বিভাগের আয়োজনে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হবে ‘চেতনা ও জাগরণে নজরুল’ শীর্ষক অনুষ্ঠান। সভাপতিত্ব করবেন শিল্পকলা একাডেমির সচিব ও দায়িত্বপ্রাপ্ত মহাপরিচালক মোহাম্মদ ওয়ারেছ হোসেন। এতে স্বাগত বক্তৃতা করবেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সংগীত, নৃত্য ও আবৃত্তি বিভাগের পরিচালক মেহজাবীন রহমান।
এ ছাড়া একাডেমির নবীন কণ্ঠশিল্পী ও নৃত্যশিল্পীরা পরিবেশন করবেন সমবেত সংগীত এবং সমবেত নৃত্য। সবশেষে পরিবেশিত হবে নাটক ‘সেতুবন্ধ’, পরিবেশনায় থাকবে বাঁশরি রেপার্টরি থিয়েটার।
এদিকে, যথাযোগ্য মর্যাদায় আজ রোববার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৬তম জন্মবার্ষিকী পালন করা হবে। এ উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা এবং কর্মচারীরা আজ সকাল সোয়া ছয়টায় অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে সমবেত হবেন। সেখান থেকে তারা সকাল সাড়ে ছয়টায় উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খানের নেতৃত্বে শোভাযাত্রা সহকারে কবির সমাধিতে গমন, পুষ্পস্তবক অর্পণ ও ফাতেহা পাঠ করবেন। পরে উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খানের সভাপতিত্বে কবির সমাধি প্রাঙ্গণে এক স্মরণ সভা অনুষ্ঠিত হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) জনসংযোগ দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম গতকাল এ কথা জানান।
১৯৭২ সালে কবি নজরুলকে সপরিবারে নিয়ে আসা হয় স্বাধীন বাংলাদেশে। এরপর মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশেই ছিলেন। ১৯৭৬ সালের ২৯ আগস্ট তৎকালীন পিজি হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন এই মহাবিদ্রোহী ও প্রেমিক পুরুষ। কবির ইচ্ছানুসারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে তাকে সমাহিত করা হয়।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিষয়ে তার অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করে বলেছেন, চলতি বছরের ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুনের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
গতকাল শনিবার ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা এ কথা বলেন।
পরে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম সাংবাদিকদের বলেন, ‘অধ্যাপক ইউনূস এক কথার মানুষ। তিনি একটি সময়সীমা নির্ধারণ করেছেন। তিনি সেই সময়সীমার বাইরে যাবেন না। পরবর্তী জাতীয় নির্বাচন ডিসেম্বর থেকে আগামী জুনের মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে’।
তিনি বলেন, সব দলই জানিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে তাদের আস্থা আছে। তার অধীনেই সবাই নির্বাচন চেয়েছে এবং ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচনের কথা বলেছেন ড. ইউনূস।
প্রেস সচিব বলেন, স্থানীয় নির্বাচনে জোর দিয়েছে এনসিপি। আওয়ামী লীগের আমলের সব নির্বাচন অবৈধ ঘোষণা চেয়েছে তারা। বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপি প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগ নয়, তাকে সমর্থন জানিয়েছে।
এখন থেকে একজন গ্রাহক সর্বাধিক ১০টি মোবাইল ফোন সিম ব্যবহার করতে পারবেন। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গতকাল শনিবার বিটিআরসির এক কর্মকর্তা এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, আগে একজন গ্রাহক সর্বোচ্চ ১৫টি সিম নিবন্ধন করতে পারতেন। তবে নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এখন থেকে সর্বোচ্চ ১০টি সিমই নিবন্ধন করা যাবে।
বিটিআরসি জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক অনুশীলন এবং জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থ বিবেচনা করে একজন গ্রাহকের নামে সর্বোচ্চ নিবন্ধনযোগ্য সিম সংখ্যা ১৫ থেকে দশে কমিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটও বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। সংস্থাটি আরও জানায়, সর্বোচ্চ ১০টি ব্যক্তিগত সিম নিবন্ধনের সীমা নির্ধারণ করা হলে প্রায় ২৬ লাখ গ্রাহকের মোট ৬৭ লাখ সিম বন্ধ করতে হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে।
আজ শনিবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের সভা শেষে উপদেষ্টা পরিষদের এক অনির্ধারিত বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ওপর অর্পিত তিনটি প্রধান দায়িত্ব (নির্বাচন, সংস্কার ও বিচার) বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।
এ নিয়ে উপদেষ্টা পরিষদ এক বিবৃতি দিয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়, প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে রাজধানীর শের-ই-বাংলা নগর এলাকায় পরিকল্পনা কমিশনে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
এসব দায়িত্ব পালনে বিভিন্ন সময় নানা ধরনের অযৌক্তিক দাবি দাওয়া, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও এখতিয়ার বহির্ভূত বক্তব্য এবং কর্মসূচি দিয়ে যেভাবে স্বাভাবিক কাজের পরিবেশ বাধাগ্রস্ত করে তোলা হচ্ছে এবং জনমনে সংশয় ও সন্দেহ সৃষ্টি করা হচ্ছে, তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয় বৈঠকে।
বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, দেশকে স্থিতিশীল রাখতে, নির্বাচন, বিচার ও সংস্কার কাজ এগিয়ে নিতে এবং চিরতরে এদেশে স্বৈরাচারের আগমন প্রতিহত করতে বৃহত্তর ঐক্য প্রয়োজন বলে মনে করে উপদেষ্টা পরিষদ।
এ বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর বক্তব্য শুনবে এবং সরকারের অবস্থান স্পষ্ট করবে।
শত বাধার মাঝেও গোষ্ঠীস্বার্থকে উপেক্ষা করে অন্তর্বর্তী সরকার তার ওপর দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। যদি পরাজিত শক্তির ইন্ধনে এবং বিদেশি ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে সরকারের ওপর আরোপিত দায়িত্ব পালনকে অসম্ভব করে তোলা হয়, তবে সরকার সকল কারণ জনসমক্ষে উত্থাপন করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জুলাই অভ্যুত্থানের জনপ্রত্যাশাকে ধারণ করে। কিন্তু সরকারের স্বকীয়তা, সংস্কার উদ্যোগ, বিচার প্রক্রিয়া, সুষ্ঠু নির্বাচন ও স্বাভাবিক কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করে এমন কর্মকাণ্ড অর্পিত দায়িত্ব পালন করাকে অসম্ভব করে তুললে সরকার জনগণকে সঙ্গে নিয়ে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, ঈদের আগেই বাজারে ১ হাজার, ৫০ ও ২০ টাকার নতুন নোট আসছে। তবে টাকায় কোনো ব্যক্তির ছবি থাকবে না।
শনিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পল্লী কর্মী-সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) অডিটোরিয়ামে ক্রেডিট এনহেন্সমেন্ট স্কিমের (সিইএস) উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে গভর্নর এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে পিকেএসএফ’র চেয়ারম্যান জাকির আহমেদ খানের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) কান্ট্রি ডিরেক্টর হোয়ে ইউন জিয়ং এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারক।
অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে গভর্নর বলেন, ‘আমাদের টাকা ছাপানো শুরু হয়ে গেছে। তিনটা নোট আসছে শিগগিরই। সেটা হচ্ছে ১ হাজার টাকার নোট, ৫০ টাকা ও ২০ টাকা। এই নতুন নোট ঈদের আগেই আমরা পাবো। এখানে কোন ব্যক্তির ছবি থাকবে না। নতুন নোটে থাকবে দেশের বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্থাপনা।’
এসময় বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে তিনি বলেন, পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনা অন্তর্বর্তী সরকারের রাজনৈতিক অঙ্গীকার। বিশ্বের বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রচারিত হওয়ায় তা ফেরত পাঠাতে চাপ তৈরি হয়েছে। এর ফলেই দেখলাম ব্রিটিশ ক্রাইম এজেন্সি কিছু সম্পদ ফ্রিজ করেছে। পাচার করা অর্থ ফ্রিজ করায় অর্থ ফেরত আনার প্রথম ধাপ সম্পন্ন হয়েছে। পাচারের টাকা ফেরাতে অন্তর্বর্তী সরকার কাজ করছে বলে তিনি জানান।
তিনি বলেন, মাইক্রোএন্টারপ্রাইজ ফাইন্যান্সিং অ্যান্ড ক্রেডিট এনহেন্সমেন্ট প্রজেক্টের আওতায় এই স্কিমের মাধ্যমে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ব্যাংক থেকে ঋণ পাওয়া সহজ হবে, যা এতদিন ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানের (এমএফআই) পক্ষে সংগ্রহ করা কঠিন ছিল।
গভর্নর বলেন, ‘স্কিমের আওতায় পিকেএসএফ অংশীদার এমএফআইগুলোকে ২৪০ কোটি টাকার রিজার্ভ তহবিল ভিত্তিতে ব্যাংক ঋণ গ্যারান্টি দেবে। ঋণের গ্যারান্টি অনুযায়ী এককালীন শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ কমিশন আদায় করা হবে। এর মাধ্যমে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ব্যাংক ঋণ পাওয়া সহজ হবে।
সরকার ও এডিবির সহায়তায় এই পাইলট প্রোগ্রামে আজ পাঁচটি বেসরকারি ব্যাংক ও একটি নন ব্যাংকিং ফিনান্সিয়াল ইন্সটিটিউশন চুক্তিবদ্ধ হয়েছে বলে জানান তিনি। আর্থিক সাক্ষরতা বাড়াতে ব্যাংকগুলোকে প্রতিটি স্কুলের সঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর।
তিনি বলেন, মাইক্রো ফাইন্যান্স সেক্টর যদি অটোমেটেড হয়ে যায়, ইফিশিয়েন্টলি কাজ করে তাহলে পরিচালন ব্যয় অনেক কমে যায়। যারা দক্ষ হবে তারাই টিকে থাকবে এই প্রতিযোগিতামূলক বাজারে। আমরা রেগুলেটরি ইন্টারভেনশন করবো না।
‘বাংলাদেশি’ ট্যাগ দিয়ে দেশের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে অবৈধভাবে শিশু, নারী-পুরুষদের ঠেলে দিচ্ছে (পুশ-ইন) ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। এ নিয়ে প্রতিবেশী এই দুই দেশের অভিন্ন সীমান্তে নতুন করে উত্তেজনা শুরু হয়েছে।
বিএসএফের পুশ-ইন করা মানুষের মধ্যে বাংলাদেশি নাগরিক, রোহিঙ্গা শরণার্থী ও পরিচয় না জানাও অনেকে রয়েছেন। বিষয়টি মানবাধিকার লঙ্ঘনের আশঙ্কার পাশাপাশি দুই দেশের মধ্যকার কূটনৈতিক সম্পর্ক, বাণিজ্য ও জনসম্পৃক্ততায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন বিশ্লেষকরা।
এ বিষয়ে ঢাকার পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কূটনৈতিক প্রতিবাদ জানানো হলেও সীমান্তের বিভিন্ন জায়গায় এই ধরনের ঘটনা অব্যাহত রয়েছে।
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) এক সূত্র জানায়, শুধু বৃহস্পতিবারই (২২ মে) একশর বেশি মানুষ বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে পাঠানো হয়েছে। পঞ্চগড়, লালমনিরহাট, ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, মৌলভীবাজার, ফেনী, কুমিল্লা ও খাগড়াছড়ির সীমান্ত এলাকা থেকে তাদের আটক করে বিজিবি।
সরকারি ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ৪ থেকে ১৫ মের মধ্যে ভারতে থেকে অন্তত তিন শতাধিক মানুষকে বাংলাদেশে পুশ-ইন করা হয়েছে।
বিজিবি ও সীমান্তবর্তী এলাকার বাসিন্দাদের মতে, ভারতের দিক থেকে ‘পুশ-ইন’ কিংবা ‘পুশ-ইনের চেষ্টা’ ক্রমেই বাড়ছে। এ ছাড়া সীমান্তে চলাচলের ব্যাপারে কঠোর অবস্থান নিয়েছে বিএসএফ, যা স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক বাড়াচ্ছে বলে জানা যায়।
অবৈধ অভিবাসীদের ফেরত পাঠানোর জন্য ভারত ও বাংলাদেশ আইনি কাঠামোর পাশাপাশি চুক্তি করলেও সেসব উপেক্ষা করেই পুশ-ইন কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব কর্মকাণ্ড আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের লঙ্ঘন এবং দুই দেশের বিদ্যমান দ্বিপাক্ষিক চুক্তির পরিপন্থী।
বিএসএফের পুশ-ইনের ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম বলেন, কিছু বাংলা ভাষাভাষী ব্যক্তিকে ভারত থেকে বাংলাদেশে পাঠানোর পর আটক করেছে বিজিবি। তারা কোনো পরিচয়পত্র বা পাসপোর্ট দেখাতে পারেননি। তাদের মধ্যে কেউ কেউ দাবি করছেন যে তারা এর আগে বাংলাদেশ থেকে ভারতে গিয়েছিলেন।
আইজিপি জানান, সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থা তাদের পরিচয় যাচাইয়ের পর পুলিশ ও বিজিবির সমন্বয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আটকদের মধ্যে অনেকে অভিযোগ করেছেন, তাদের চোখ বেঁধে দূরবর্তী অঞ্চল থেকে এনে নির্জন সীমান্ত এলাকায় ফেলে যাওয়া হয়েছে।
বিজিবি তাদের আটক করে পরিচয় জানতে ও যথাযথ নিরাপত্তা নিশ্চিতের উদ্দেশ্যে জিজ্ঞাসাবাদ করছে।
গত বুধবার (২১ মে) পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন জানান, নয়াদিল্লির সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে এবং নির্ধারিত পদ্ধতির বাইরে যাতে কিছু না ঘটে, তার জন্য ঢাকার পক্ষ থেকে চেষ্টা চলছে।
নির্ধারিত কার্যপ্রক্রিয়ার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘তারা (ভারত) তাদের অবস্থান কিছুটা জানিয়েছে, আমরাও আমাদের অবস্থান ব্যাখ্যা করেছি। আমরা বোঝানোর চেষ্টা করছি যে এটা সঠিক নয়।’
উপদেষ্টা জানান, ভারত একটি তালিকা দিয়েছে, যা বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যাচাই করছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশের অবস্থান হলো, প্রত্যেকটি ঘটনা পৃথকভাবে খতিয়ে দেখা হবে এবং প্রকৃত বাংলাদেশি হিসেবে প্রমাণ থাকলেই কেবল তাদের গ্রহণ করা হবে।
সম্প্রতি জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান বলেছেন, যেকোনো প্রত্যাবাসনই কূটনৈতিক চ্যানেলের মাধ্যমেই হওয়া উচিত।
পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে টানা ১০ দিনের ছুটি নিশ্চিত করতে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে আজ শনিবারও সরকারি অফিস খোলা রয়েছে।
সরকারি অফিসের পাশাপাশি দেশের সকল ব্যাংকও খোলা আছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এর আগে ৬ মে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, ঈদে ১১ ও ১২ জুন (বুধবার ও বৃহস্পতিবার) নির্বাহী আদেশে ছুটি ঘোষণা করার কারণে ৫ জুন থেকে ১৪ জুন পর্যন্ত সরকারি চাকরিজীবীরা ঈদের ছুটি উপভোগ করবেন। এই টানা ছুটি বাস্তবায়নের অংশ হিসেবেই মূলত ১৭ ও ২৪ মে—এই দুই শনিবার অফিস চালু রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। সাধারণত সপ্তাহের এই দিনগুলোতে সরকারি অফিস বন্ধ থাকে, তবে এবার তা পরিবর্তন করা হয়েছে।
প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়, ছুটিকালীন সময়ে দেশের সব সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আধা-স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। তবে ১৭ ও ২৪ মে—এই দুই শনিবার সব অফিস যথারীতি চালু থাকবে। এছাড়া, জরুরি পরিষেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সেবাগুলো যেমন: বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস, ফায়ার সার্ভিস, বন্দর, পরিচ্ছন্নতা, টেলিফোন ও ইন্টারনেট সেবা, ডাক বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট যানবাহন ও কর্মীরা ছুটির আওতার বাইরে থাকবে।
একইভাবে, চিকিৎসা সেবা, হাসপাতাল এবং ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জাম পরিবহনে নিয়োজিত কর্মী ও যানবাহনও এই ছুটির বাইরে থাকবে। সরকারি দপ্তরের ব্যতিক্রমধর্মী এ উদ্যোগের ফলে টানা ছুটির সুবিধা যেমন মিলবে, তেমনি দেশের গুরুত্বপূর্ণ পরিষেবাগুলোর কার্যক্রমও নির্বিঘ্নে চলবে।
জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভা শেষে সমসাময়িক বিষয়ে আলোচনা করতে উপদেষ্টা পরিষদের সঙ্গে বৈঠকে বসতে পারেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
শনিবার (২৪ মে) এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ইউএনবিকে এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘একনেক সভার পরই প্রধান উপদেষ্টা উপদেষ্টাদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে পারেন।’ তবে এ বিষয়ে তিনি বিস্তারিত কিছু জানাননি।
ওই কর্মকর্তা আরও জানান, চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা ও বিভিন্ন জল্পনার মধ্যে শনিবার সন্ধ্যায় বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে আলাদা আলাদা বৈঠক করবেন প্রধান উপদেষ্টা।
প্রধান উপদেষ্টার আমন্ত্রণে বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল তার সরকারি বাসভবন যমুনায় বৈঠকে অংশ নেবে।
বৈঠকে তারা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে নিজেদের পর্যবেক্ষণগুলো নিয়ে আলোচনা করবেন এবং দ্রুত সংস্কার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে এ বছরের মধ্যেই নির্বাচন আয়োজনের একটি সুস্পষ্ট রোডম্যাপ দেওয়ার আহ্বান জানাবেন
দেশে ক্রমবর্ধমান রাজনৈতিক উত্তেজনা ও নানা গুঞ্জনের মধ্যে আজ (শনিবার) প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে বসতে চলেছে বিএনপির একটি প্রতিনিধিদল।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য শুক্রবার (২৩ মে) দিবাগত রাতে ইউএনবিকে জানান, শনিবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনায় এ বৈঠক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
তিনি বলেন, ‘দেশের উদ্ভূত রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করতে আমাদের প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।’
বিএনপির এই নেতা জানিয়েছেন, তাদের সঙ্গে বৈঠকের পর প্রধান উপদেষ্টা বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গেও বৈঠকে বসবেন বলে তারা জানতে পেরেছেন।
রাজনৈতিক উত্তেজনা প্রশমিত করতে এবং অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে যে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়েছে, তা নিরসনের অংশ হিসেবেই বিএনপি এই বৈঠকে অংশ নিচ্ছে বলে জানান তিনি।
তিনি আরও জানান, এ অবস্থায় প্রধান উপদেষ্টা পদত্যাগ করুক বিএনপি তা চায় না। কারণ তা নতুন করে দেশে রাজনৈতিক সংকট ডেকে আনবে বলে মনে করেন তিনি।
তবে এই বৈঠকে তারা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে নিজেদের পর্যবেক্ষণগুলো নিয়ে আলোচনা করবেন এবং দ্রুত সংস্কার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে এ বছরের মধ্যেই নির্বাচন আয়োজনের একটি সুস্পষ্ট রোডম্যাপ দেওয়ার আহ্বান জানাবেন বলে জানান ওই নেতা।
এর আগে, গতকাল (শুক্রবার) বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ একটি বেসরকারি টেলিভিশনে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘আমরা সোমবার (১৯ মে) থেকেই প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে সময় চেয়ে আসছি, কিন্তু এখনও তা নির্ধারণ করা হয়নি।’
তিনি আরও বলেন, প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগ আমরা চাইনি; আমরা শুধু কয়েকজন বিতর্কিত উপদেষ্টার পদত্যাগ চেয়েছি।
‘ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচনের জন্য একটি রোডম্যাপ চেয়েছি। তিনি রোডম্যাপ না দিয়ে পদত্যাগ করতে চাইলে সেটি তার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত হতে পারে, কিন্তু আমরা সেটি চাইনি।’
এর আগের দিন (বৃহস্পতিবার) বিএনপি কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছিল, ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের একটি সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণা না করা হলে অন্তর্বর্তী সরকারকে সহযোগিতার বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করতে বাধ্য হতে পারে তারা।
সেদিন এক সংবাদ সম্মেলনে নিরপেক্ষতা ও সুনামের স্বার্থে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ও নবগঠিত রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার কারণে যেসব উপদেষ্টা ‘বিতর্কিত’, তাদের অবিলম্বে অব্যাহতি দেওয়ার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানান দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন।
সম্প্রতি বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের আন্দোলন এবং বুধবার সেনাপ্রধানের একটি অফিসার সমাবেশে দেওয়া বক্তব্যে সরকারের কার্যক্রম ও নির্বাচনের বিষয়ে করা মন্তব্যে হতাশ হয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস পদত্যাগের কথা ভাবছেন।
জ্যৈষ্ঠ মাসের দশ দিন চলছে। এই সময়ে প্রকৃতিতে তাপমাত্রা যেমন থাকে তেমনি থাকে বৃষ্টিপাতও। বাংলা এই মাসের শুরুতেই রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় বৃষ্টিপাত হয়েছে। ফলে প্রকৃতিতে তাপমাত্রা কমেছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ কাজী জেবুন্নেছা গণমাধ্যমকে বলেন, বঙ্গোপসাগর ও এর কাছাকাছি এলাকায় গভীর সঞ্চারণশীল মেঘমালা সৃষ্টি হচ্ছে। এর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর, বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা এবং সমুদ্রবন্দরগুলোর ওপর দিয়ে ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। আর এ জন্য চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কসংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, দেশের এই বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে আগামী আরও দশ দিন। বাংলাদেশ সংলগ্ন এলাকায় জড়ো হওয়া গভীর সঞ্চারণশীল মেঘমালার জন্য এই বৃষ্টিপাত হচ্ছে।
আজ শুক্রবার সকাল ৯টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ থেকে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল হয়ে উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু মিয়ানমারের আকিয়াব উপকূল পর্যন্ত অগ্রসর হয়েছে। এটি আরও অগ্রসর হওয়ার অনুকূল পরিবেশ রয়েছে। আগামী ২৭ মে পশ্চিমমধ্য এবং তৎসংলগ্ন উত্তর বঙ্গোপসাগর এলাকায় একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে।
এর আগে আবহাওয়া অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, চলতি মাসের শেষ দিকে সাগরে একটি নিম্নচাপ হতে পারে। এ থেকে একটি ঘূর্ণিঝড়ও সৃষ্টি হতে পারে।
কাজী জেবুন্নেছা বলেন, ২৫ থেকে ২৬ মে সাগরে লঘুচাপের সৃষ্টি হতে পারে। সেটি নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে এটি ঘূর্ণিঝড়ে রুপ নেবে কী না, তা এখনও বলা যাচ্ছে না। এ নিয়ে নিশ্চিত করে এখনও কিছু বলার সময় আসেনি।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যমতে, মে মাস সাধারণত ঘূর্ণিঝড়প্রবণ মাস হিসেবে পরিচিত। গত বছরের মে মাসেই ঘূর্ণিঝড় রিমাল সৃষ্টি হয়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করেছিল। গত বছরের ২৬ মে এ ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানে বাংলাদেশের উপকূলে। এবারও নিম্নচাপ ও সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড়ের সময় কাছাকাছি। এর আগেও একাধিক বড় ধরনের ঘূর্ণিঝড় এ মাসে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হয়েছে। তাই আবহাওয়াবিদরা এ সময় সতর্ক থাকতে বলছেন।
কাজী জেবুন্নেছা আরও বলেন, ‘সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হওয়ার উপযোগী রয়েছে। তবে নিম্নচাপ তৈরি হলে সেটি কোথায় যাবে, কীভাবে শক্তি সঞ্চয় করবে, এসব বিষয় আরও কিছুদিন পর জানা যাবে।’এবার যদি ঘূর্ণিঝড় হয়, তবে এর নাম হবে ‘শক্তি’। নামটি শ্রীলঙ্কার দেওয়া।
সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে। দেশে রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।