উষ্মমণ্ডলীয় দেশ হওয়ায় বাংলাদেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার এমনিতেই বেশি। এ কারণে দক্ষিণ এশিয়ার স্বল্পায়তন এ ভূখণ্ডে বর্তমান বাস করছে ১৭ কোটি ৩৪ লাখ মানুষ। জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির ব্যাপক সহজলভ্যতা ও প্রয়োগের পরও এ দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির গড় হার পৃথিবীর বেশির ভাগ দেশের চেয়ে বেশি।
জাতিসংঘ বলছে, জনমিতির তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, জনসংখ্যা বৃদ্ধির এ হার থাকতে পারে আরও ৪৭ বছর। আর বাংলাদেশিদের প্রজনন উর্বরতার হার স্বাভাবিক থাকলে স্বাধীনতার ১০০ বছর পর্যন্ত জনসংখ্যা বাড়তে থাকবে। তারপর আস্তে আস্তে কমতে থাকবে এ দেশের জনসংখ্যা। রোগ-প্রতিরোধে সাফল্য ও পুষ্টিকর খাদ্যাভ্যাস বাড়ায় দেশে মৃত্যুহার কমানোতে সাফল্য এসেছে। এ ধারা ভবিষ্যতে অব্যাহত থাকবে। আর তাতেই ধারণা করা হচ্ছে, বাংলাদেশিদের প্রজনন উর্বরতার হার স্বাভাবিক থাকলে ২০৭১ সালে দেশের জনসংখ্যা হবে ২২ কোটি ৬১ লাখ ২৯ হাজার ৮৮৯ জন। এ সময় দেশের জনসংখ্যা ঘনত্ব হবে প্রতি বর্গ কিলোমিটারে ১৭৩৭ জনের বেশি। আর যদি প্রজনন উর্বরতার হার আরও উচ্চ হয় তাহলে এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াতে পারে ২৭ কোটি ২৬ লাখ ৪১ হাজারে।
বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস উপলক্ষে জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক বিভাগের জনসংখ্যা বিভাগ (ইউএনডিইএসএ) এই প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার বিকেলে প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়।
ওই প্রতিবেদন অনুসারে, সরকারের নানা ব্যবস্থা গ্রহণ, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে প্রচারণা এবং নিকট ভবিষ্যৎ থেকেই বৈশ্বিক গতিময় জীবনযাত্রার সম্ভাবনা থাকলেও বাংলাদেশে জনসংখ্যার গড় হার বৃদ্ধি মোটামুটি স্বাভাবিকই থাকতে পারে। প্রজনন উর্বরতার এ হার এই শতাব্দীজুড়েই বহমান থাকবে। তবে যদি কোনো কারণে বাংলাদেশে প্রজনন হার স্বাভাবিকের চেয়ে কমেও যায় তবুও জনসংখ্যা বাড়বে ২০৭১ সাল পর্যন্ত। সে ক্ষেত্রে ২০৭১ সালে এ দেশে জনসংখ্যা হবে ১৮ কোটি ৬০ লাখ ৫২ হাজারের বেশি। এ সময় দেশের জনসংখ্যার ঘনত্ব থাকবে প্রতি বর্গ কিলোমিটারে ২০৭৪ জনের বেশি।
এ ছাড়া চলতি শতক তথা ২১ শতকের শেষ বছর অর্থাৎ ২০৯৯ সালে বাংলাদেশিদের স্বাভাবিক প্রজনন উর্বরতা বজায় থাকলে জনসংখ্যা হবে ২০ কোটি ৯৬ লাখ ৪২ হাজারের বেশি। প্রজনন উর্বরতা বৃদ্ধি পেলে জনসংখ্যা হবে ৩০ কোটি ৮ লাখের বেশি এবং প্রজনন উর্বরতা কমে একই বছরে বাংলাদেশের জনসংখ্যা থাকতে পারে ১৩ কোটি ৭৪ লাখের কিছু বেশি।
তবে বর্তমানে বাংলাদেশের প্রজনন হার যদি বজায় থাকে তবে ২০৩৭ সালেই বাংলাদেশের জনসংখ্যা বেড়ে দাঁড়াবে ২০ কোটিতে। একই হারে ২০৭১ সাল নাগাদ অর্থাৎ স্বাধীনতার ১০০ বছর পর বাংলাদেশের জনসংখ্যা হবে ২৫ কোটি ৩৬ লাখ ৮৪ হাজারের বেশি এবং এই শতকের শেষ নাগাদ বাংলাদেশের জনসংখ্যা গিয়ে দাঁড়াবে ২৭ কোটি ৪২ লাখে।
জনসংখ্যাসংক্রান্ত কোনো শর্ত যেমন- জন্ম ও মৃত্যুহার, অভিবাসন, প্রজনন উর্বরতা ইত্যাদি বিষয়ে কোনো পরিবর্তন না হয় তবে বাংলাদেশের জনসংখ্যা প্রথম ২০ কোটির মার্জিন পার করবে ২০৩৮ সালে। ২০৭১ সালে এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াবে ২৩ কোটি ৩২ লাখে এবং চলতি শতকের শেষ বছর অর্থাৎ ২০৯৯ সালে দেশের জনসংখ্যা হবে ২৩ কোটি ২০ লাখে।
মহান বিজয় দিবস ২০২৫ উপলক্ষে বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মাধ্যমে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ, কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে দোয়া-মোনাজাতসহ বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করেছে বিএমইউ প্রশাসন। এছাড়া জাতীয় এই দিবস উপলক্ষে মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) বিএমইউ হাসপাতালের রোগীদের মাঝে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হয়।
এছাড়াও বিজয় দিবসকে সামনে রেখে সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) বিএমইউ ক্যাম্পাসে স্বেচ্ছায় রক্তদান, বিনামূল্যে রক্তের গ্রুপ নির্ণয় ও বৃক্ষরোপন কর্মসূচী পালন করা হয়। ওই দিন বিএমইউর বি ব্লকের শহীদ ডা. মিলন হলের সম্মুখ প্রাঙ্গণে ট্রান্সফিউশন মেডিসিন বিভাগের উদ্যোগে স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচী পালন করা হয় এবং পরিচালক (হাসপাতাল) অফিসের উদ্যোগে বিএমইউ এর টিএসসিতে নিম, লেবু, কাঁঠালসহ ফলজ, বনজ ও ওষুধি বৃক্ষরোপণ করা হয়।
বাংলাদেশের জনগণের ঐতিহাসিক শ্রেষ্ঠ এই বিজয়ের দিনে আজ ১৬ ডিসেম্বর সকালে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে মাননীয় ভারপ্রাপ্ত ভাইস চ্যান্সেলর ও প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. মোঃ আবুল কালাম আজাদ এর নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ, ডিনবৃন্দ, শিক্ষকবৃন্দ, বিভিন্ন বিভাগের চেয়ারম্যানগণ, শিক্ষক, অফিস প্রধানগণ, চিকিৎসক, ছাত্রছাত্রী, কর্মকর্তা, নার্স, মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট ও কর্মচারীবৃন্দ পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করেন।
সেখানে মাননীয় ভারপ্রাপ্ত ভাইস-চ্যান্সেলর অধ্যাপক ডা. মোঃ আবুল কালাম আজদ, বিজয় দিবসকে জাতির শ্রেষ্ঠ অর্জন হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, মহান বিজয় দিবসের অঙ্গীকার হলো একটি শোষণমুক্ত, বৈষম্যমুক্ত, দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার। আমার বৃটিশ শাসন ও শোষণ থেকে, পাকিস্তানী শাসন ও শোষণ থেকে মুক্ত হয়েছি কিন্তু স্বাধীনতা অর্জন এবং বিজয়ের ৫৪ বছর বছরেও আমরা জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী বাংলাদেশ আজো গড়ে তুলতে পারিনি। তাই আমাদের শপথ নিতে হবে একটি শোষণমুক্ত, বৈষম্যমুক্ত, দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার।
জাতীয় এসকল কর্মসূচীতে বিএমইউ এর মাননীয় ভারপ্রাপ্ত ভাইস-চ্যান্সেলর অধ্যাপক ডা. মোঃ আবুল কালাম আজাদ, উপ-উপাচার্য (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মোঃ মুজিবুর রহমান হাওলাদার, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. নাহরীন আখতার, রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ডা. মোঃ নজরুল ইসলাম, প্রক্টর ডা. শেখ ফরহাদ, পরিচালক (হাসপাতাল) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোঃ ইরতেকা রহমান, পরিচালক (অর্থ ও হিসাব) খন্দকার শফিকুল হাসান রতন, পরিচালক (মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগ) মোঃ মাসুদ রানা, মাননীয় ভাইস চ্যান্সেলর মহোদয়ের একান্ত সচিব-১ নিউরোসার্জন বিশেষজ্ঞ ডা. মোঃ রুহুল কুদ্দুস বিপ্লব, অতিরিক্ত পরিচালক (সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল) ডা. মোঃ শাহিদুল হাসান বাবুল, উপ-রেজিস্ট্রার (আইন, অতিরিক্ত দায়িত্ব) দন্তরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. আবু হেনা হেলাল উদ্দিন আহমেদ, ডা. মোঃ আকবর হোসেন, উপ-রেজিস্ট্রার সাবিনা ইয়াসমিন, উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ও মাননীয় ভাইস চ্যান্সেলর মহোদয়ের একান্ত সচিব ২ মোঃ লুৎফর রহমান, উপ-রেজিস্ট্রার মোঃ ইয়াহিয়া খাঁন, উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মোঃ হুমায়ুন কবীর, সহকারী পরিচালক মাহামুদুল হাসান, সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ আবু নাজির, কর্মকর্তা শামীম আহম্মদ, মোঃ ইলিয়াস খাঁন, তৃতীয় শ্রেণী কর্মচারী কল্যাণ সমিতির সভাপতি জাহাঙ্গীর হোসেন লিটন, সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) যথাযোগ্য মর্যাদায় মহান বিজয় দিবস-২০২৫ উদযাপন করেছে। এ উপলক্ষ্যে ঢাকার পিলখানাস্থ বিজিবি সদর দপ্তরসহ বাহিনীর সকল রিজিয়ন, প্রতিষ্ঠান, সেক্টর ও ইউনিটসমূহে বিস্তারিত কর্মসূচি পালন করা হয়।
মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো: শরীফুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়
দিবসের কর্মসূচি অনুযায়ী সকালে সূর্যোদয়ের সাথে সাথে পিলখানাস্থ বিজিবি সদর দপ্তরসহ সারাদেশে বিজিবির সকল স্থাপনায় জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। প্রত্যুষে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা কর্তৃক পুষ্পস্তবক অর্পণ অনুষ্ঠানে বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী (Major General Mohammad Ashrafuzzaman Siddiqui) অংশগ্রহণ করেন। সকাল ০৭:৪৫ ঘটিকায় বিজিবি মহাপরিচালক মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে পিলখানাস্থ ‘সীমান্ত গৌরব’-এ পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এ সময় বিজিবি’র একটি সুসজ্জিত চৌকষ দল শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ‘গার্ড অব অনার’ প্রদান করে।
মহান বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে পিলখানাসহ সারাদেশে বিজিবি’র সকল ইউনিটে প্রীতিভোজের আয়োজন করা হয়। পিলখানায় আয়োজিত কেন্দ্রীয় প্রীতিভোজে বিজিবি মহাপরিচালক প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়া পিলখানাস্থ বিজিবি সদর দপ্তরের কেন্দ্রীয় মসজিদসহ সকল ইউনিটের মসজিদে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের সুস্বাস্থ্য, জাতির শান্তি ও সমৃদ্ধি এবং বাহিনীর উত্তরোত্তর অগ্রগতি ও একাত্মতা কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়।
মহান বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে বিজিবি সদস্য ও তাদের পরিবারবর্গ এবং বিজিবি’র স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের জন্য বিজিবি সিনেমা হলে বিনামূল্যে মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক চলচ্চিত্র প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা হয়। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পিলখানাস্থ বিজিবি সদর দপ্তরের জাদুঘর ও চিড়িয়াখানা বিনা টিকেটে প্রদর্শনীর জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়। বিজিবি পরিচালিত স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের অংশগ্রহণে বিভিন্ন ক্রীড়া অনুষ্ঠান যেমন-টি টুয়েন্টি ক্রিকেট, ফুটবল, কাবাডি ও হা-ডুডু টুর্নামেন্ট এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এছাড়া সকাল ১১.০০ টা থেকে বিকেল ০৪.০০ টা পর্যন্ত হাতিরঝিলে অ্যাস্ফিথিয়েটারে বিজিবি অর্কেষ্টা এবং ব্যান্ডদল কর্তৃক সংগীত ও বাদ্য পরিবেশন করা হয়।
দিবসের অন্যান্য কর্মসূচির মধ্যে বিজিবি সদর দপ্তরসহ সারাদেশে বিজিবি’র বিভিন্ন স্থাপনায় বর্ণিল আলোকসজ্জা করা হয় এবং সকল ইউনিটের গেইট ও গেইট সংলগ্ন সড়কের আশেপাশের এলাকা ও স্থাপনাসমূহে জাতীয় পতাকা, বিভিন্ন ব্যানার ও ফেস্টুন দ্বারা সজ্জিত করা হয়।
নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের প্রত্যয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে (ডিএসসিসি) মহান বিজয় দিবস উদ্যাপিত হয়েছে। ডিএসসিসির মাননীয় প্রশাসক জনাব মোঃ মাহমুদুল হাসান, এনডিসি এঁর নেতৃত্বে জাতীয় স্মৃতিসৌধে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ এবং সূর্যোদয়ের সাথে সাথে নগর ভবনে ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে বিজয় দিবস অনুষ্ঠানমালার সূচনা হয়।
মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা মোঃ রাসেল রহমান স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়।
বিজয় দিবসের সকালে নগর ভবনে আলোচনা, সাংস্কৃতিক, চিত্রাঙ্কন ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ডিএসসিসি পরিচালিত সংগীত ও নৃত্য শিক্ষা কেন্দ্রের শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের অংশগ্রহণে উপর্যুক্ত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে ডিএসসিসি প্রশাসক উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রশাসক একাত্তর ও চব্বিশের বীর শহিদগণের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে বলেন, "বাঙালি জাতি মুক্তিকামী-বীরের জাতি, যখনই অন্যায় হয়েছে, বৈষম্য হয়েছে, জুলুম হয়েছে, তখনই বিপ্লব হয়েছে, বিজয় অর্জিত হয়েছে।" অতীতে বার বার বিজয় অর্জিত হলেও বিজয়ের কাঙ্ক্ষিত ফলাফল সম্পূর্ণভাবে ভোগ করা যায়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, "বৈষম্যহীন ও বাসযোগ্য নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের মাধ্যমে একাত্তর ও চব্বিশের ফল ঘরে তুলতে প্রত্যেককে নাগরিক দায়িত্ব পালনের শপথ নিতে হবে।"
এছাড়া, শহিদ মুক্তিযোদ্ধাদের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত, মুক্তিযোদ্ধা ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের সুস্বাস্থ্য এবং জাতির শান্তি, সমৃদ্ধি ও অগ্রগতি কামনা করে ডিএসসিসি পরিচালিত ৬ টি মসজিদ ও মন্দির, গীর্জা, প্যাগোডা ও অন্যান্য উপাসনালয়ে বিশেষ মোনাজাত/প্রার্থনার আয়োজন করা হয়। পাশাপাশি, ডিএসসিসি পরিচালিত মহানগর জেনারেল হাসপাতালে রোগীদের দুপুরে প্রীতিভোজ পরিবেশন করা হয়েছে। এছাড়া, নগর ভবন জাদুঘর ও কলাবাগান শিশুপার্ক জনসাধারণের জন্য দিনব্যাপী বিনামূল্যে প্রবেশের সুযোগ রাখা হয়৷
ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ও ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য সংসদ সদস্য প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদিকে গুলি করে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় মূল সন্দেহভাজন ফয়সাল করিম মাসুদের ঘনিষ্ঠ সহযোগী কবির ওরফে ‘দাঁতভাঙা কবির’কে সাত দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছেন আদালত। মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক ফয়সাল আহমেদের ১০ দিনের রিমান্ড আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট হাসিবুজ্জামানের আদালত এই আদেশ দেন।
এর আগে কবিরকে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এই মামলায় এর আগে মূল অভিযুক্ত ফয়সালের স্ত্রী সাহেদা পারভীন সামিয়া, শ্যালক ওয়াহিদ আহমেদ সিপু ও বান্ধবী মারিয়া আক্তার লিমাকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। এছাড়া ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মোটরসাইকেলের মালিক আব্দুল হান্নানকেও ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তিন দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, গত ১২ ডিসেম্বর জুমার নামাজের পর নির্বাচনী প্রচারণা শেষে ফেরার পথে রাজধানীর পল্টন মডেল থানার বক্স কালভার্ট এলাকায় হাদিকে লক্ষ্য করে গুলি চালায় মোটরসাইকেলে আসা দুর্বৃত্তরা। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে দেশে প্রাথমিক চিকিৎসা ও অস্ত্রোপচারের পর উন্নত চিকিৎসার জন্য সোমবার সিঙ্গাপুরে পাঠানো হয়েছে। মামলার বাদী ইনকিলাব মঞ্চের সদস্যসচিব আব্দুল্লাহ আল জাবের অভিযোগ করেছেন, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বানচাল করা এবং দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে আওয়ামী লীগের পলাতক নেতাকর্মীদের ষড়যন্ত্র ও নির্দেশনার অংশ হিসেবেই এই হামলা চালানো হয়েছে।
সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ও ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য সংসদ সদস্য প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদির শারীরিক অবস্থার কিছুটা অবনতি ঘটলেও বর্তমানে তা স্থিতিশীল রয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে হাদির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে ইনকিলাব মঞ্চের পক্ষ থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে জানানো হয়, সিঙ্গাপুরে পৌঁছানোর পর তার কিছু প্রাথমিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। এরপর তার অবস্থার কিছুটা অবনতি হলেও দুপুর ৩টার দিকে তার ভাইয়ের বরাতে নিশ্চিত করা হয়েছে যে, বর্তমানে তিনি স্থিতিশীল অবস্থায় আছেন। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তার সুস্থতার জন্য আরও একটি অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন, তবে তার বর্তমান শারীরিক পরিস্থিতি এখনো সেই অস্ত্রোপচারের জন্য অনুকূল হয়ে ওঠেনি।
উল্লেখ্য, গত শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) রাজধানীর পল্টন এলাকায় গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর হাদিকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও পরে এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। পরবর্তীতে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নির্দেশে এবং সংশ্লিষ্ট উপদেষ্টা ও চিকিৎসকদের পরামর্শে উন্নত চিকিৎসার জন্য সোমবার তাকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) ক্যাম্পাসে পাকিস্তানের পতাকা এঁকে তা পদদলিত করার কর্মসূচিতে বাধা দেওয়ার প্রতিবাদে রাজাকারদের প্রতীকী ছবিতে জুতা নিক্ষেপ করে ঘৃণা প্রকাশ করেছেন একদল শিক্ষার্থী। মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাস্কর্য চত্বরে এই প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করা হয়।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, মহান বিজয় দিবসে পাকিস্তানের প্রতি ঘৃণা প্রদর্শনের অংশ হিসেবে তারা ক্যাম্পাসে পাকিস্তানের পতাকা আঁকতে চেয়েছিলেন, কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও একদল শিক্ষার্থী তাতে বাধা প্রদান করে। এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থী আসিফ হোসেন ও ইসলামি ইতিহাস বিভাগের সাদ আহমেদ বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় লাখো মানুষকে হত্যাকারী পাকিস্তানের প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করতে প্রশাসনের অনুমতির প্রয়োজন হওয়াটা দুঃখজনক। তারা প্রশ্ন তোলেন, স্বাধীনতার এত বছর পরেও কেন পাকিস্তানের প্রতি ঘৃণা প্রদর্শনে বাধার সম্মুখীন হতে হবে।
উল্লেখ্য, এর আগে সোমবার দিবাগত রাতে ক্যাম্পাসে পাকিস্তানের পতাকা আঁকতে বাধা দেওয়ার জেরে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করে বিক্ষোভ করেন। রাতভর উপাচার্যের গাড়ি আটকে রাখার পর ভোর পাঁচটার দিকে অবরোধ তুলে নেওয়া হলে উপাচার্য ও প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা ক্যাম্পাস ত্যাগ করেন।
মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে আজ মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে জানানো হয়েছে, সন্ধ্যা ৬টায় বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি), বিটিভি নিউজ এবং বাংলাদেশ বেতারে তার এই ভাষণ একযোগে সম্প্রচার করা হবে।
এর আগে দিনের শুরুতে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে একাত্তরের বীর শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন প্রধান উপদেষ্টা। ভোর ৬টা ৫৬ মিনিটে স্মৃতিসৌধের বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন তিনি। এ সময় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর সমন্বয়ে গঠিত একটি চৌকস দল তাকে রাষ্ট্রীয় অভিবাদন জানায়। পুষ্পস্তবক অর্পণের পর তিনি শহীদদের স্মরণে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন এবং পরে দর্শনার্থী বইয়ে স্বাক্ষর করেন।
শ্রদ্ধা নিবেদনের সময় প্রধান বিচারপতির পাশাপাশি অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাবৃন্দ, তিন বাহিনীর প্রধানগণ, বীর মুক্তিযোদ্ধা, কূটনীতিক এবং উচ্চপদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
মহান বিজয় দিবসে এক অনন্য বিশ্ব রেকর্ড গড়ল বাংলাদেশ। স্বাধীনতার ৫৪ বছর পূর্তি উপলক্ষে সশস্ত্র বাহিনীর উদ্যোগে ৫৪ জন প্যারাট্রুপার একসঙ্গে জাতীয় পতাকা হাতে স্কাই ডাইভিং করে এই ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন। মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) রাজধানীর তেজগাঁও পুরাতন বিমানবন্দর সংলগ্ন প্যারেড গ্রাউন্ডে এই ঐতিহাসিক ঘটনা ঘটে। এটিই বর্তমানে বিশ্বের বুকে সর্বাধিক পতাকা হাতে প্যারাস্যুটিং করার রেকর্ড।
‘টিম বাংলাদেশ’-এর ব্যানারে ৫৪ জন সাহসী প্যারাট্রুপার এই প্রদর্শনীতে অংশ নেন। এই ঐতিহাসিক মুহূর্তটি সশরীরে প্রত্যক্ষ করেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। রেকর্ড গড়ার এই আয়োজনের পাশাপাশি সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর সমন্বয়ে এক মনোমুগ্ধকর ফ্লাইপাস্ট মহড়াও অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে বিমানবাহিনীর বিভিন্ন বিমান ও হেলিকপ্টার আকাশে কসরত প্রদর্শন করে।
মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এই ‘এয়ার শো’ ও বিশ্ব রেকর্ড গড়ার দৃশ্য দেখতে তেজগাঁওয়ের পুরাতন বিমানবন্দরে সাধারণ মানুষের ঢল নামে। সকাল থেকেই আগারগাঁও সংলগ্ন বিমানবন্দরের ফটকে দর্শনার্থীদের দীর্ঘ সারি দেখা যায়। সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী ও বিজিবি সদস্যদের কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে উৎসুক জনতা এই বর্ণাঢ্য আয়োজন উপভোগ করেন।
মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে জীবন উৎসর্গকারী বীর পুলিশ সদস্যদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী এবং পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম বিপিএম। মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) সকাল ৮টায় রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ লাইনস স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে তারা এই শ্রদ্ধা জানান।
প্রথমে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা স্মৃতিসৌধের বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মো. খোদা বখস চৌধুরী। এরপর পুলিশ বাহিনীর পক্ষ থেকে আইজিপি বাহারুল আলম এবং পরবর্তীতে ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জত আলী শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এছাড়া বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন এবং বাংলাদেশ পুলিশ উইমেন নেটওয়ার্কের (বিপিডব্লিউএন) নেতৃবৃন্দও ফুল দিয়ে বীর শহীদদের স্মরণ করেন।
যথাযোগ্য মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদ শেখের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে যশোরের শার্শার কাশিপুর বিওপি সংলগ্ন এলাকায় অবস্থিত বীরশ্রেষ্ঠের সমাধিস্থলে বিজিবি মহাপরিচালকের পক্ষ থেকে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। যশোর ব্যাটালিয়নের (৪৯ বিজিবি) ব্যবস্থাপনায় আয়োজিত এই কর্মসূচিতে গার্ড অব অনার প্রদান ছাড়াও বীর শহীদের রুহের মাগফিরাত কামনায় ফাতেহা পাঠ, বিশেষ মোনাজাত এবং উপস্থিত সকলের মাঝে তবারক বিতরণ করা হয়।
এ সময় যশোর ব্যাটালিয়নের উপ-অধিনায়ক মেজর নূর উদ্দিন আহমাদসহ বীরশ্রেষ্ঠের পরিবারের সদস্য, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। যশোর ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল সাইফুল্লাহ্ সিদ্দিকী জানান, মহান মুক্তিযুদ্ধে বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শেখের আত্মত্যাগ ও অবদানকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণীয় করে রাখতেই প্রতি বছরের ন্যায় এবারও বিজিবির পক্ষ থেকে এই বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
মহান বিজয় দিবস উদযাপন ও একাত্তরের বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে সাধারণ মানুষের ঢল নেমেছে। মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) সকাল থেকেই লাল-সবুজের পতাকা হাতে শিশু থেকে বৃদ্ধ—সর্বস্তরের মানুষের পদচারণায় এবং ‘জয় বাংলা’ স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে পুরো স্মৃতিসৌধ এলাকা। খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে হাজারো মানুষ শহীদদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জানাতে সেখানে সমবেত হন।
দিনের শুরুতে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস শহীদদের বেদিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এ সময় সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল রাষ্ট্রীয় অভিবাদন জানায় এবং বিউগলে করুণ সুর বেজে ওঠে। রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টা স্মৃতিসৌধ এলাকা ত্যাগ করার পরই প্রধান ফটক সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। এরপরই ফুল হাতে জনতার বাঁধভাঙা স্রোত প্রবেশ করতে থাকে মূল বেদির দিকে।
অনেকেই দেশাত্মবোধক গানের সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়ে এবং নীরবতা পালন করে শহীদদের স্মরণ করেন। আশুলিয়া থেকে পরিবার নিয়ে আসা মাহফুজুর রহমান জানান, মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত এই দেশ ও স্বাধীনতার জন্য আত্মত্যাগকারী বীরদের শ্রদ্ধা জানাতেই তিনি ছুটে এসেছেন। অন্যদিকে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শোয়াইব রহমান বন্ধুদের নিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে এসে বলেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি আবেগ ও সম্মান জানাতেই তাদের এই আগমন। বিজয়ের উল্লাসের পাশাপাশি শহীদদের ত্যাগের মহিমাও এদিন গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছে জাতি।
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদিকে হত্যাচেষ্টার ঘটনাটি কয়েক মাসের দীর্ঘ পরিকল্পনার অংশ ছিল বলে তদন্তে উঠে এসেছে। তদন্তসংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, হামলার আগের রাতে মূল অভিযুক্ত ফয়সাল ও আলমগীর সাভারের আশুলিয়ার একটি রিসোর্টে অবস্থান করেন। সেখানে তাদের মনোরঞ্জনের জন্য নারী সঙ্গীর ব্যবস্থাসহ বিনোদনের আয়োজন করেছিল মাস্টারমাইন্ডরা। পরদিন শুক্রবার সকালে তারা ঢাকায় ফিরে জুমার নামাজের পর হাদির ওপর গুলি চালিয়ে পালিয়ে যান। পল্টন থানায় দায়ের করা এই মামলাটি বর্তমানে তদন্ত করছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
মামলার তদন্তের অংশ হিসেবে গতকাল শুটার ফয়সালের স্ত্রী সামিয়া, শ্যালক শিপু এবং রিসোর্টে থাকা বান্ধবী মারিয়ার পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। এর আগে হামলায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের মালিক আব্দুল হান্নানকে তিন দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছিল। এছাড়া গতকাল সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জ থেকে ফয়সালের ঘনিষ্ঠ সহযোগী কবিরকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব, যাকে ভিডিও ফুটেজে হাদির আশেপাশেই দেখা গিয়েছিল। অন্যদিকে, হামলাকারীদের সীমান্ত পার হতে সহায়তার অভিযোগে শেরপুরের সীমান্ত এলাকা থেকে বিজিবি ও পুলিশ কয়েকজনকে আটক করেছে, যাদের মধ্যে কয়েকজনকে মুচলেকা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হতে পারে বলে জানিয়েছে ডিবি।
এদিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য গতকাল সোমবার দুপুরে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে শরিফ ওসমান হাদিকে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হয়েছে। সেখানে পৌঁছানোর পর তাকে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী সায়েদুর রহমান জানিয়েছেন, বাংলাদেশ সরকার ও সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালের মধ্যে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রয়েছে এবং তিনি হাদির সুস্থতার জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন।
মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে একাত্তরের বীর শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) সকালে স্মৃতিসৌধের বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে তিনি স্বাধীনতার জন্য জীবন উৎসর্গকারী সূর্যসন্তানদের স্মরণ করেন।
পুষ্পস্তবক অর্পণের পর প্রধান উপদেষ্টা মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্মৃতির প্রতি সম্মান জানিয়ে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। এ সময় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর সমন্বয়ে গঠিত একটি চৌকস দল তাকে রাষ্ট্রীয় অভিবাদন জানায় এবং বিউগলে বেজে ওঠে করুণ সুর। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে ড. ইউনূস সেখানে উপস্থিত উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, উচ্চপদস্থ সেনা কর্মকর্তা, বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং শহীদ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন।
এর আগে, সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে ঢাকা পুরাতন বিমানবন্দর এলাকায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি আর্টিলারি রেজিমেন্ট ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে মহান বিজয় দিবসের আনুষ্ঠানিক সূচনা করে। দেশজুড়ে যথাযোগ্য মর্যাদা ও বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে পালিত হচ্ছে এবারের বিজয় দিবস।