কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে সৃষ্ট উদ্ভূত পরিস্থিতিতে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ শুরু হয়। প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতার একযোগে সম্প্রচার করছে। এর আগে বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস উইং থেকে এ ভাষণের কথা জানানো হয়।
উল্লেখ্য, গত রোববার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোটা প্রসঙ্গে কথা বলার সময় মন্তব্য করেন ‘মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে এত ক্ষোভ কেন? মুক্তিযোদ্ধার নাতিপুতিরা কিছুই পাবে না, রাজাকারের নাতিপুতিরা সব পাবে?’
সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাজধানী ঢাকাসহ ৬ জেলায় মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।
দেশের কৃষিকে দীর্ঘমেয়াদে আধুনিক ও টেকসই রূপ দিতে সরকার ২৫ বছরের একটি মহাপরিকল্পনা হাতে নিচ্ছে। ভবিষ্যতের ঝুঁকি, প্রযুক্তির অগ্রগতি- সবকিছু মিলিয়ে এ সমন্বিত কাঠামো তৈরির কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। আগামী ডিসেম্বরেই এর চূড়ান্ত খসড়া তৈরি হয়ে যাবে।
আজ বৃহস্পতিবার ‘কৃষি ও খাদ্যে রাজনৈতিক অঙ্গীকার’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক সম্মেলনের প্রথম দিনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব তথ্য জানান কৃষি সচিব ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান। বাংলাদেশ কৃষি সাংবাদিক ফোরামের (বিএজেএফ) আয়োজনে রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে সম্মেলনটি হচ্ছে। প্রথম দিনের বিষয়বস্তু ছিল- ‘কৃষির রূপান্তর: দেশীয় উপযোগী কৃষিযন্ত্র ও কৃষিপণ্য রপ্তানির চ্যালেঞ্জ’।
সচিব জানান, ১৩টি মূল খাত এবং এর অধীন অসংখ্য উপখাতকে সামনে রেখে পরিকল্পনা সাজানো হচ্ছে। কৃষির সঙ্গে সম্পৃক্ত ১৭টি সংস্থা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের জন্যও আলাদা ২৫ বছর মেয়াদি রোডম্যাপ তৈরি করা হচ্ছে। দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার পাশাপাশি স্বল্পমেয়াদে কয়েকটি পাঁচ বছর মেয়াদি প্রকল্পও নেওয়া হবে। তবে প্রতিটি প্রকল্পই বিশদ গবেষণা ও যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে নেওয়া হবে।
সারের খরচ সাশ্রয়
অনুষ্ঠানে সার ব্যবস্থাপনা সংস্কার নিয়ে সচিব বলেন, ‘আমরা এমন একটি নীতি প্রণয়ন করছি যাতে প্রতি বছর দুই-তিন হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় হয়। চলতি বছর সাশ্রয় হয়েছে এক হাজার কোটি টাকা। কৃষি যান্ত্রিকীকরণ প্রকল্পের ৬০০ কোটি টাকা ফেরত গেছে সরকারের কোষাগারে। ২০ কোটি দিয়ে পুরো প্রকল্প শেষ করা সম্ভব হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সবজির দাম কেজি ১০০ টাকা হলে কেউ কথা বলেন না, কিন্তু পেঁয়াজের দাম ১০০ হলেই আলোচনার ঝড় ওঠে। কৃষক কি ন্যায্য দাম পাবেন না?’ আগামী তিন বছরের মধ্যে আদা ও পেঁয়াজে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের লক্ষ্যও তুলে ধরেন তিনি। একই সঙ্গে আলুর দাম না পেয়ে কৃষকের আত্মহত্যার ঘটনায় তীব্র আক্ষেপ প্রকাশ করেন।
কৃষিযন্ত্রে ‘মেড ইন বাংলাদেশ’
সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) যান্ত্রিক ধান চাষাবাদ প্রকল্পের পরিচালক ড. কে এম সাইফুল ইসলাম। তিনি বলেন, আমদানি-নির্ভরতা কমিয়ে স্থানীয়ভাবে কৃষিযন্ত্র তৈরির পূর্ণাঙ্গ ইকোসিস্টেম তৈরি করছে ব্রি। শ্রীলঙ্কা, জাপানসহ বিভিন্ন দেশের প্রযুক্তিগত সহায়তায় এখন দেশেই মানসম্পন্ন কৃষিযন্ত্র তৈরি হচ্ছে। যা সময়, ব্যয়, শ্রম-সংকট- সব ক্ষেত্রেই যুগান্তকারী পরিবর্তন আনবে।
তিনি জানান, মাঠপর্যায়ে উদ্যোক্তা সৃষ্টি, মেকানিক প্রশিক্ষণ, সার্ভিস হাব, খুচরা যন্ত্রাংশ সরবরাহ- সব মিলিয়ে একটি সমন্বিত কাঠামো তৈরিতে কাজ করছে ব্রি।
যে কারণে থেমে আধুনিক কৃষিযন্ত্র উৎপাদন
দেশে আধুনিক কৃষিযন্ত্র উৎপাদনের বড় বাধাগুলোর দিকে আঙুল তোলেন ব্রি–এর বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা দুরুল হুদা। তার ভাষায়, হালকা প্রকৌশল খাতের অদক্ষতা, সিএনসি-ভিত্তিক প্রযুক্তির অভাব, দক্ষ জনবল সংকট- সব মিলিয়ে স্থানীয় উদ্যোক্তারা আন্তর্জাতিক মানের কম্বাইন হারভেস্টার বা রাইস ট্রান্সপ্লান্টার তৈরি করতে পারছেন না।
তিনি দুঃখ করে বলেন, স্বাধীনতার ৫৪ বছরেও দেশে ইঞ্জিন তৈরির মতো রাষ্ট্রীয় কোনো প্রতিষ্ঠান দাঁড়াতে পারেনি। পুরোনো শিল্পগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় শিল্পভিত্তিও দুর্বল হয়েছে।
কৃষিকে লাভজনক পেশায় রূপান্তর
পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ফজলুল কাদের বলেন, কৃষিকে কেবল উৎপাদনের খাত হিসেবে দেখলে হবে না, একে লাভজনক, সম্মানজনক ও শিক্ষিত পেশা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
তিনি জানান, পিকেএসএফের সহযোগী সংস্থাগুলো মাঠপর্যায়ে বছরে এক লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকা বিতরণ করে, যার ৪০ শতাংশই কৃষি খাতে যায়। দেশের কৃষি অর্থায়নের প্রায় ৮৫ শতাংশই এমএফআই (ক্ষুদ্র ঋণ) খাতের মাধ্যমে হচ্ছে।
ধান উৎপাদনে বিপ্লব
ব্রি মহাপরিচালক ড. মোহাম্মদ খালেকুজ্জামান বলেন, স্বাধীনতার পর খাদ্যনিরাপত্তাই ছিল প্রধান লক্ষ্য। তখন প্রতি হেক্টরে দেড়–দুই টন উৎপাদন হতো। এখন অনেক জায়গায় তা আট থেকে ১০ টন ছাড়িয়ে গেছে। হাইব্রিড জাতের উন্নয়ন ও প্রযুক্তির সমন্বয়ে ভবিষ্যতে গড় ফলন ১০ টনের ওপরে যাবে।
রপ্তানিতে বড় সম্ভাবনা
প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল বলেন, ‘কৃষি প্রক্রিয়াকরণ খাতে বিশ্ব বাজার চার ট্রিলিয়ন ডলারের। আমাদের দেশে বাজার মাত্র এক বিলিয়ন ডলার। এক্ষেত্রে আমাদের অনেক সুযোগ রয়েছে। প্রক্রিয়াকরণ খাতে বৈচিত্র্যের অভাব আছে। খাতেও কিছু দুর্বলতা রয়েছে। ৪০০ প্রতিষ্ঠান থাকলেও সবাই উন্নত মানের পণ্য উৎপাদন করতে পারে না।’
তিনি জানান, কৃষি পণ্য রপ্তানিতে ১৮টি দপ্তর থেকে অনুমতি নিতে হয়। এটি খরচ ও সময় সাপেক্ষ। এজন্য ওয়ানস্টপ সার্ভিস চালু করতে হবে। কান্ট্রি ব্র্যান্ডিং করতে হবে। এক্ষেত্রে বিভিন্ন দেশে থাকা দূতাবাসকে কাজে লাগাতে হবে। বাণিজ্যিক কূটনীতিতে অন্য দেশের মতো বাংলাদেশের আরও বেশি কাজ করতে হবে।
কামরুজ্জামান কামাল আরও বলেন, ‘কৃষি পণ্য রপ্তানিতে মান নিয়ন্ত্রণ সেভাবে গড়ে ওঠেনি। আন্তর্জাতিক মানের পরীক্ষাগারের স্বল্পতা রয়েছে। অনেক পণ্য ভারত ও সিঙ্গাপুর থেকে পরীক্ষা করিয়ে আনতে হয়। বিএসটিআইয়ের মান বিশ্বের অনেক দেশ গ্রহণ করে না। এক্ষেত্রে মান প্রণয়নে আমাদের আরও উন্নতি ঘটানো উচিত। নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে গ্রাম পর্যায় থেকেই আমাদের কাজ করতে হবে।’
ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেছেন, শুধু একজন মন্ত্রী বা উপদেষ্টা দিয়ে দেশের কাঙ্ক্ষিত সাফল্য অর্জন সম্ভব নয়। রাষ্ট্রীয় কাঠামো পরিবর্তন বা উন্নয়ন করতে হলে পার্লামেন্টে আদর্শিক, তাকওয়াবান ও সৎ নেতৃত্ব পাঠানো জরুরি। বৃহস্পতিবার দুপুরে বরিশালের চরমোনাই দরবারে তিন দিনব্যাপী মাহফিলের দ্বিতীয় দিনে উলামা-শিক্ষাবিদ-বুদ্ধিজীবী সম্মেলনে আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, বর্তমান বিধি বা ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনতে হলে পার্লামেন্টে এমন প্রতিনিধিদের প্রয়োজন, যাদের অন্তরে তাকওয়া, আদর্শ ও সততা রয়েছে।
আ ফ ম খালিদ হোসেন আরও বলেন, আলেম ওলামারা জনগণের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত, তারা সমাজের শক্তির প্রতীক। এই সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করতে হবে। আমরা অন্ধকার থেকে আলোর পথে এগোচ্ছি। আগামী দিনে নতুন দিকনির্দেশনা পাব এবং কখনোই অন্ধকারে ফিরে যাব না।
তিনি সতর্ক করে বলেন, ধর্মের অপব্যাখ্যা করে জনগণের সেন্টিমেন্ট উসকে দেওয়ার অধিকার কারও নেই। ইসলাম নিয়ে মন্তব্য করতে হলে আলেম-ওলামাদের সঙ্গে ঐকমত্য হতে হবে, না হলে সংঘাত অনিবার্য হয়ে উঠবে।
এ সময় চরমোনাই পীর ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন,
এককভাবে ফ্যাসিস্টদের আবার ক্ষমতায় আসতে দেওয়া হলে পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে উঠবে। সম্মেলনে অন্যান্য অতিথি, আলেম ও শিক্ষাবিদরাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্তর্বর্তী সরকার আজ জাতীয় মানবাধিকার কমিশন (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫ অনুমোদন করেছে। নতুন অধ্যাদেশে কমিশনকে দেশের বিভিন্ন আটককেন্দ্র ও জেলাখানা পরিদর্শন করে নির্যাতন প্রতিরোধে ‘ন্যাশনাল প্রিভেন্টিভ মেকানিজম’ হিসেবে কাজ করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের সাপ্তাহিক বৈঠকে অধ্যাদেশটির চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়।
বৈঠকের পরে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের জানান, ‘জাতীয় মানবাধিকার কমিশন এখন দেশের বিভিন্ন আটককেন্দ্র ও জেলাখানা পরিদর্শন করে নির্যাতন ও অমানবিক আচরণ প্রতিরোধে কাজ করবে। এটি আন্তর্জাতিক চুক্তির আওতায় বাংলাদেশকে দায়িত্বপূর্ণ রাখার অংশ।’
তিনি আরও জানান, কমিশন স্বাধীনভাবে পরিদর্শন ও প্রতিবেদন প্রকাশ করতে পারবে এবং প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেবে।
এর আগে, গত ৩০ অক্টোবর উপদেষ্টা পরিষদ নীতিগতভাবে অধ্যাদেশটির চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছিল। সূত্র: বাসস
অন্তর্বর্তী সরকার আজ উপদেষ্টা পরিষদের সাপ্তাহিক বৈঠকে রাজধনী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) অধ্যাদেশ ২০২৫-এর খসড়া অনুমোদন করেছে। বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দেশের সব ভবন ও নির্মাণ কাজের অনুমোদনের জন্য একটি পৃথক কর্তৃপক্ষ গঠনের নির্দেশ দেন।
বৈঠকের পর প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম সাংবাদিকদের জানান, প্রধান উপদেষ্টা গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন, যাতে একটি পৃথক কর্তৃপক্ষ গঠন করা যায়, যা দেশের সব স্থাপনা ও নির্মাণ কাজের অনুমোদন দেবে। বর্তমানে রাজউক শুধুমাত্র নিজস্ব এলাকায় অনুমোদন দিতে পারে।
বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা নিরাপদ নির্মাণ বিধি মানা হচ্ছে কি না তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। প্রেস সচিব বলেন, গ্রামাঞ্চলসহ দেশজুড়ে চার থেকে পাঁচ তলা ভবন নির্মাণ হচ্ছে, তবে প্রশ্ন হলো এগুলো জাতীয় ভবন নির্মাণ কোড মেনে তৈরি হচ্ছে কিনা। এছাড়া ভূমিকম্প ও অগ্নি ঝুঁকির বিষয়টি বিবেচনা করা হচ্ছে কিনা, তা নিশ্চিত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
নতুন রাজউক অধ্যাদেশে পুনর্বিকাশ, জমি পুনর্বিন্যাস, খেলার মাঠ, জলাশয় ও প্রাকৃতিক জলাধারের সুরক্ষা সংক্রান্ত বিধান অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। শফিকুল আলম বলেন, ‘জমির মালিক ৬০ শতাংশের সম্মতিতে পুনর্বিকাশ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা যাবে।’
প্রধান উপদেষ্টা নির্দেশ দিয়েছেন, নতুন অধ্যাদেশে নির্মাণ, জলাশয় খনন, নিচু জমি ভরাট, প্রাকৃতিক জলপ্রবাহ বাধা, খেলার মাঠ ও উদ্যানের শ্রেণী পরিবর্তন নিয়ন্ত্রণের বিধান রাখা হয়েছে। এছাড়া অনুমোদিত নকশা ব্যতীত নির্মাণ, ঝুঁকিপূর্ণ ও ব্যত্যয়ী স্থাপনা অপসারণের শাস্তি এবং রাজউকের চেয়ারম্যান, সদস্য বা কর্মচারীদের রাজউকের সঙ্গে সংযুক্ত কোনো চুক্তি বা শেয়ারে অংশগ্রহণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। সূত্র: বাসস
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সাবেক মন্ত্রী ফরহাদ হোসেন ও তার স্ত্রী মোনালিসা ইসলামের বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
গতকাল বুধবার এক ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান দুদকের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. আক্তার হোসেন।
তিনি জানান, তাদের বিরুদ্ধে বিপুল পরিমাণ জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও অর্থপাচারের অভিযোগ আনা হয়েছে।
দুদক মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন জানান, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সাবেক মন্ত্রী ফরহাদ হোসেন এক কোটি ১১ লাখ ৮৬ হাজার ২৫২ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করে ভোগ দখলে রেখেছেন। এছাড়া তিনি ১২টি ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে ৬ কোটি ৩৫ লাখ ৬৮ হাজার টাকার সন্দেহজনক লেনদেন করেছেন। অপরদিকে ফরহাদ হোসেনের স্ত্রী মোনালিসা ইসলামের নামে ৯৪ লাখ ৫ হাজার ৯৩২ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে।
পুলিশ সদর দপ্তর দুই ধাপে ১৩৬ জন পুলিশ পরিদর্শককে বদলি করেছে। পৃথক দুটি প্রজ্ঞাপনে তাদেরকে বদলি করা হয়।
বুধবার (২৬ নভেম্বর) পুলিশ সদর দপ্তরের পার্সোনাল ম্যানেজমেন্ট শাখার অতিরিক্ত ডিআইজি আব্দুল্লাহ আল জহির স্বাক্ষরিত পৃথক দুটি প্রজ্ঞাপনে তাদের বদলি করা হয়।
এর মধ্যে একটি প্রজ্ঞাপনে ৭৩ জনকে ও অন্য একটি প্রজ্ঞাপনে ৬৩ জন পুলিশ পরিদর্শককে বদলি করা হয়।
প্রজ্ঞাপন বলা হয়, আগামী শনিবারের (২৯ নভেম্বর) মধ্যে বদলি হওয়া কর্মকর্তাদের বদলি করা কর্মস্থলে যোগদান করতে হবে। বদলি হওয়া কর্মকর্তাদের মধ্যে কেউ যদি আগে কোনো বদলি আদেশ পেয়ে থাকেন তাহলে সেটি বাতিল বলে গণ্য হবে।
আসন্ন ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে তফসিল ঘোষণার আগে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে আবার বৈঠকে বসেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। নির্বাচনের নিরাপত্তা কৌশল পর্যালোচনা ও চূড়ান্ত করতেই এই বৈঠক ডাকা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৭ নভেম্বর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে সকাল সাড়ে ১০টায় এই বৈঠক শুরু হয়েছে। এতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনের সভাপতিত্বে চার নির্বাচন কমিশনার, স্বরাষ্ট্র সচিব, ইসি সচিবসহ বাহিনী ও সংস্থার শীর্ষ ব্যক্তিরা অংশ নিয়েছেন।
জানা গেছে, আজকের বৈঠকে নির্বাচনকালীন নিরাপত্তা পর্যালোচনা করে ইসির পক্ষ থেকে একটি সমন্বিত কর্মকৌশল নির্ধারণের নির্দেশনা দেওয়া হবে। একইসঙ্গে, ভোটের আগে ও পরে কতদিন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মাঠে মোতায়েন থাকবে এবং প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে কতজন সদস্য নিয়োজিত থাকবে, সে বিষয়েও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসতে পারে।
এর আগে, গত ২০ অক্টোবর প্রথম দফা প্রাক-প্রস্তুতিমূলক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছিল, যেখানে সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা হয়। ওই সভায় ভোটের আগে ও পরে মোট আট দিন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েনের একটি প্রস্তাব আসে। সবমিলিয়ে, এবারের নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ১৩ থেকে ১৮ জন সদস্য থাকার বিষয়েও আলোচনা হয়।
ইসি জানায়, শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে বাহিনীর মোতায়েন সংখ্যা ও সময়কাল আজকের বৈঠকে আনুষ্ঠানিকভাবে চূড়ান্ত করা হবে।
অগ্রণী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরিবারের দুইটি লকার থেকে মোট ৮৩২.৫ ভরি বা ৯ কেজি ৭১৬ গ্রাম স্বর্ণ উদ্ধার করা হয়।
গত মঙ্গলবার একজন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), বাংলাদেশ ব্যাংকের বুলিয়ন শাখার স্বর্ণ বিশেষজ্ঞ, এনবিআরের কর গোয়েন্দা ও সিআইসির দুই কর্মকর্তা এবং সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে লকার খোলা হয়।
২০০৭ সালের ১ সেপ্টেম্বর জমা দেওয়া সম্পদ বিবরণীতে শেখ হাসিনা পূবালী ব্যাংকের ১টি এবং অগ্রণী ব্যাংকের ২টি লকারের ঘোষণা দেন। সেই বিবরণী পুনঃযাচাইয়ের অংশ হিসেবে গত ১৪ সেপ্টেম্বর দুদকের উপপরিচালক মো. মাসুদুর রহমান লকার খোলার জন্য আদালতে আবেদন করেন। যার পরিপ্রেক্ষিতে লকার খোলা হয়েছে।
বুধবার পূবালী ব্যাংক মতিঝিল কর্পোরেট শাখা এবং অগ্রণী ব্যাংক প্রিন্সিপাল শাখায় লকার তিনটি খোলা হয় বলে দুদক থেকে এক প্রেস বিবৃতিতে জানানো হয়।
লকারগুলোর মধ্যে- পূবালী ব্যাংক লকার নং-১২৮ এর গ্রাহক শেখ হাসিনা। যেখানে একটি খালি ছোট পাটের ব্যাগ পাওয়া গেছে। অগ্রণী ব্যাংক লকার-নং ৭৫১/বড়/১৯৬ শেখ হাসিনা ও সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের নামে। যেখানে পাওয়া যায় ৪ হাজার ৯২৩.৬০ গ্রাম স্বর্ণালংকার।
অন্যদিকে অগ্রণী ব্যাংক লকার নং ৭৫৩/বড়/২০০ এর গ্রাহক শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা সিদ্দিক। যেখানে পাওয়া যায় ৪ হাজার ৭৮৩.৫৬ গ্রাম স্বর্ণালংকার। সব লকারের মালামাল ইনভেন্টরি তৈরি করে শাখার ব্যবস্থাপকের জিম্মায় রাখা হয়েছে।
লকারে শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা সিদ্দিক, সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, সজীব ওয়াজেদ জয় ও ববি ওয়াজেদের হতে পারে বলে ধারণা দুদকের।
আর গত ১০ সেপ্টেম্বর ১০ সেপ্টেম্বর রাজধানীর মতিঝিলের পূবালী ব্যাংক সেনা কল্যাণ ভবন শাখায় শেখ হাসিনার একটি লকার (নম্বর ১২৮) জব্দ করে সিআইসি।
গত ১৭ নভেম্বর মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ শেখ হাসিনা ও তার দোসর সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে মৃত্যুদণ্ড দেয়। সেদিনের রায়ে দণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামির সমস্ত সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার আদেশ দেয় ট্রাইব্যুনাল। একই সঙ্গে আন্দোলনে শহীদ ও আহতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্যও আদালত নির্দেশনা দেয়।
ফেরারি দুই আসামির সমস্ত সম্পত্তি ক্রোক ও বাজেয়াপ্ত করার জন্য জব্দ হওয়া লকার খোলা হচ্ছে বলে এনবিআর জানায়।
গত বছর ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার শেখ হাসিনা ও তার পরিবার সদস্যদের কর ফাঁকি ও দুর্নীতির তদন্তের নির্দেশ দেয়। এরই অংশ হিসেবে শেখ হাসিনার নামে থাকা বিভিন্ন ব্যাংকের লকার জব্দ করে সিআইসি।
সাবেক ডিবি প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ এবং পুলিশের সাবেক আইজি বেনজীরের স্ত্রী জীশান মির্জা এবং কন্যা তাহসীন রাইসা বিনতে বেনজীরের আয়কর নথি জব্দের আদেশ দিয়েছেন আদালত।
বুধবার দুদকের পৃথক তিন আবেদনের শুনানি নিয়ে ঢাকার কর অঞ্চল-২০ কে এ নির্দেশ দেন ঢাকার মেট্রোপলিটন সিনিয়র স্পেশাল জজ সাব্বির ফয়েজ।
সংশ্লিষ্ট আদালতের বেঞ্চ সহকারি রিয়াজ হোসেন গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানান। দুদকের উপপরিচালক মুহাম্মদ জয়নাল আবেদীন তিনজনের আয়কর নথি সরবরাহ চেয়ে আবেদন করেন।
ডিবি হারুনের আবেদনে বলা হয়, হারুন অর রশীদ সরকারি ক্ষমতার অপব্যবহার করে ১৭ কোটি ৫১ হাজার ১৭ হাজার ৮০৬ টাকা মূল্যের জ্ঞাত আয়বর্হিভূত সম্পদ অর্জন করে ভোগদখলে রেখে দুদক আইনে অপরাধ করেছেন। মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে তার আয়কর নথি জব্দ করে পর্যালোচনা করা একান্ত প্রয়োজন।
বেনজীরের স্ত্রী জীশানের আবেদনে বলা হয়, জীশান মিথ্যা তথ্য প্রদানের মাধ্যমে ১৬ কোটি ১ লাখ ৭১ হাজার ৩৩৬ টাকা মূল্যের সম্পদ অর্জনের তথ্য গোপন করে এবং ৩১ কোটি ৬৯ লাখ ৫৫ হাজার ১৪৯ টাকা মূল্যের জ্ঞাত আয়বহির্ভূত স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ অর্জন ভোগদখলে রেখে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ২০০৪ এর ২৬ (২) ও ২৭ (১) ধারার এবং তার স্বামী বেনজীর আহমেদ বাংলাদেশ পুলিশের গুরুত্বপূর্ণ পদে কর্মরত থেকে ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে তাকে (জীশান) এ অপরাধে প্রত্যক্ষভাবে সহায়তা করে দণ্ডবিধি’র ১০৯ ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন মর্মে প্রতীয়মান হওয়ায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে তার সব আয়কর রিটার্নসহ সংশ্লিষ্ট রেকর্ডপত্র জব্দ করে পর্যালোচনা করা একান্ত প্রয়োজন।
তাহসীন রাইসার আবেদনে বলা হয়, তাহসীন রাইসা বিনতে বেনজীরের ৫ কোটি ৫৯ লাখ ৫৫ হাজার ৮৫ টাকা মূল্যের জ্ঞাত আয়বহির্ভূত স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ অর্জনপূর্বক ভোগদখলে রেখে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ২০০৪ এর ২৭ (১) ধারার এবং বেনজীর আহমেদ বাংলাদেশ পুলিশ ও র্যাবের গুরুত্বপূর্ণ পদে কর্মরত থেকে ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে জীশানকে এ অপরাধে প্রত্যক্ষ সহায়তা করে দণ্ডবিধির ১০৯ ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন মর্মে প্রতীয়মান হওয়ায় মামলা দায়ের করা হয়। মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে তার আয়কর নথি জব্দ করা প্রয়োজন।
অধঃস্তন আদালতের বিচারকদের বড় সংখ্যায় পদোন্নতি দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। সারাদেশে একসঙ্গে ৮২৬ বিচারককে পদায়ন ও বদলি করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে আইন বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়।
বুধবার উপসচিব এ এফ এম গোলজার রহমান স্বাক্ষরিত বদলি ও পদোন্নতির পৃথক দুটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। পদোন্নতির পর তাদের নতুন কর্মস্থলে পদায়নও করা হয়েছে।
জেলা ও দায়রা জজ পদে পদোন্নতির প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস (বেতন ও ভাতাদি) আদেশ, ২০১৬’-এর বেতন স্কেলের প্রথম গ্রেডে ৭০,৯২৫-৭৬,৩৫০ বেতনক্রমে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ পদ থেকে জেলা ও দায়রা জজ পদে পদোন্নতি দিয়ে পুনরাদেশ না দেওয়া পর্যন্ত তাদের নিয়োগ/বদলি করা হলো।
প্রজ্ঞাপনের তথ্যানুযায়ী, তিনটি পদে মোট পদোন্নতি ও পদায়ন হয়েছেন ৮২৬ জন। এর মধ্যে অতিরিক্ত জেলা জজ থেকে জেলা জজ ২৫০ জন, যুগ্ম জেলা জজ থেকে অতিরিক্ত জেলা জজ ২৯৪ জন ও সিনিয়র সহকারী জজ থেকে যুগ্ম জেলা জজ ২৮২ জন।
প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়, বদলি হওয়া বিচারকদের দপ্তরপ্রধান কর্তৃক মনোনীত কর্মকর্তার কাছে আগামী ২৭ (বৃহস্পতিবার) নভেম্বর বর্তমান পদের দায়িত্বভার অর্পণ করে আগামী ১ ডিসেম্বরের মধ্যে বদলিকৃত কর্মস্থলে যোগদানের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে।
এছাড়া প্রশিক্ষণ, মাতৃত্বকালীন ছুটি, বহিঃবাংলাদেশ ছুটিতে থাকা কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ ও ছুটি শেষে কর্মস্থলে যোগদান করে কার্যভার হস্তান্তর করে অবিলম্বে পদোন্নতিপ্রাপ্ত কর্মস্থলে যোগদানের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে।
নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ জানিয়েছেন, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট একই দিনে আয়োজনের প্রস্তুতি ইতোমধ্যে নিয়ে রেখেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তিনি বলেন, নির্বাচন ও গণভোট একই দিনে অনুষ্ঠিত হবে- এই ধারণা আগে থেকেই পরিষ্কার ছিল, তাই কমিশন মানসিক প্রস্তুতি এবং প্রাথমিক কাজগুলো আগেই সম্পন্ন করেছে।
বুধবার আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে সচিব এসব কথা বলেন।
গণভোটের অধ্যাদেশ জারি হওয়ার পর কমিশনের প্রস্তুতি কোন পর্যায়ে জানতে চাইলে আখতার আহমেদ বলেন, ‘দায়িত্বের আভাস পেলেই প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করা হয়। আপনি যদি ভাবেন যে একটা দায়িত্ব আপনার ওপর আসতে যাচ্ছে, তাহলে স্বাভাবিকভাবেই মানসিক প্রস্তুতি থাকে। আমাদেরও সেই প্রস্তুতি ছিল। পাশাপাশি আমরা আগাম কাজও শুরু করে দিয়েছিলাম।’
তিনি জানান, আগামী শনিবার সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত শেরেবাংলা নগর সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ মক ভোটিং আয়োজন করা হবে। জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট-উভয় প্রক্রিয়া একই কেন্দ্রে একসঙ্গে পরিচালনার অনুশীলন হিসেবে এই মক ভোটিং করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘একই দিনে দুই ধরনের ভোট পরিচালনা করতে গেলে কিছু সমন্বয় প্রয়োজন হতে পারে। সেই বাস্তবতা যাচাই করতেই আমরা এই রিহার্সালের আয়োজন করেছি।’
তিনি জানান, মক ভোটিংয়ের মাধ্যমে পরীক্ষা করে দেখা হবে- কেন্দ্রের সংখ্যা বাড়ানো প্রয়োজন হবে কি না, ভোটকক্ষের সংখ্যা বাড়বে বা কমবে কি না, ভোটার ব্যবস্থাপনা কীভাবে সমন্বয় করা যাবে, দুই ধরনের ব্যালট ব্যবস্থাপনা একসঙ্গে করতে কতটুকু সময় লাগবে এবং সামগ্রিকভাবে কেন্দ্র পরিচালনায় কী ধরনের সমন্বয় প্রয়োজন হবে।
আখতার আহমেদ বলেন, ‘আমরা চাই পুরো প্রক্রিয়াটা নিখুঁতভাবে পরিচালনা করতে। একটি সফল রিহার্সাল থেকে পাওয়া অভিজ্ঞতা পরবর্তী সিদ্ধান্তে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।’ তিনি সাংবাদিকদেরও ওই রিহার্সাল কভার করার আমন্ত্রণ জানান।
ইসি সচিবালয়ের পরিচালক (জনসংযোগ ও তথ্য) মো. রুহুল আমিন মল্লিক গণমাধ্যমকে জানান, ২৯ নভেম্বর সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত সকল শ্রেণির ভোটারের অংশগ্রহণে রাজধানীর শেরেবাংলা নগর সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ে মক ভোটিং অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহসহ ইসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন বলে তিনি জানান।
মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত শেখ হাসিনাকে প্রত্যর্পণে বাংলাদেশের চিঠি ভারত পর্যালোচনা করছে বলে জানিয়েছেন দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল।
বুধবার ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নয়াদিল্লিতে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে তিনি এ কথা জানান।
রণধীর জয়সওয়াল বলেন, বিষয়টি ভারতের চলমান অভ্যন্তরীণ বিচারিক ও আইনগত প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে যাচাই করা হচ্ছে।
ব্রিফিংয়ে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে জয়সোওয়াল বলেন, ‘চলমান বিচারিক ও অভ্যন্তরীণ আইনি প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে চিঠিটি পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। আমরা শান্তি, গণতন্ত্র, অন্তর্ভুক্তি এবং স্থিতিশীলতাসহ বাংলাদেশের জনগণের সর্বোত্তম স্বার্থের বিষয়ে অঙ্গীকারবদ্ধ। এ লক্ষ্য অর্জনে আমরা অব্যাহতভাবে সব অংশীজনের সঙ্গে গঠনমূলকভাবে যুক্ত থাকব।’
এদিকে নয়াদিল্লিকে দেওয়া চিঠির বিষয়ে বুধবার পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘শেখ হাসিনাকে ফেরত চেয়ে পাঠানো চিঠির জবাব এখনো আসেনি।’ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ খবর জানান।
কোন প্রক্রিয়ায় ভারতে চিঠি পাঠানো হয়েছে, সে প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা সাংবাদিকদের বলেন, ‘নোট ভারবাল (কূটনৈতিক পত্র) আমাদের মিশনের মাধ্যমে ওদের (ভারতের) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। কোন উত্তর আসেনি। এত তাড়াতাড়ি উত্তর আশাও করি না আমরা।’
এর আগে মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভারত থেকে ফেরত আনার বিষয়ে নতুন করে চিঠি পাঠিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। গত শুক্রবার (২১ নভেম্বর) পাঠানো ওই চিঠির বিষয়টি গত রোববার গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন।
এদিকে শেখ হাসিনাকে ফেরত চেয়ে বাংলাদেশ যে চিঠি পাঠিয়েছে তা পাওয়ার কথা স্বীকার করেছে দিল্লি। রণধীর জয়সওয়াল সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেন, ‘হ্যাঁ, আমরা চিঠিটি পেয়েছি এবং তা পর্যালোচনা করা হচ্ছে।’
ভারত এর জবাব দেবে কি না স্পষ্ট না করে তিনি বলেন, ‘চলমান বিচারিক ও অভ্যন্তরীণ আইনি প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে বাংলাদেশসহ দেশটির মানুষের শান্তি, গণতন্ত্র, অন্তর্ভুক্তি ও স্থিতিশীলতার সর্বোত্তম স্বার্থে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এ বিষয়ে সব স্টেকহোল্ডারের সঙ্গে আমরা গঠনমূলক যোগাযোগ চালিয়ে যাব।’
গত জুলাইয়ের অভ্যুত্থানের পর মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গত সোমবার রায় দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। রায়ে শেখ হাসিনা ও তার সরকারের সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। একই মামলায় রাজসাক্ষী হওয়ায় সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন ট্রাইব্যুনাল।
রায়ের দিনই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে ভারত সরকারের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে দুজনকে প্রত্যর্পণের দাবি তোলে। পরে সচিবালয়ে প্রতিক্রিয়ায় আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল ভারতকে আবারও চিঠি পাঠানোর পরিকল্পনার কথা জানান। এরপর সেই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবেই নতুন চিঠি পাঠানো হয়।
অন্যদিকে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলে নোটিশ জারি প্রক্রিয়াধীন বলে জানা গেছে।
পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রে জানায়, গত বছরের ছাত্র-জনতার জুলাই অভ্যুত্থানে নির্বিচারে হত্যা ও দমনে নির্দেশ দেওয়ার অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (আইসিটি) কর্তৃক হাসিনা ও কামালের মৃত্যুদণ্ডাদেশের পর ইন্টারপোলে নোটিশ জারির বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।
সারা বিশ্বেই মানুষ শহরমুখী, এতে শহরে বাড়ছে মানুষের ভিড়, সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মেগা সিটির সংখ্যা। সম্প্রতি প্রকাশিত জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, এখন বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল শহর ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তা।
এর আগে সবচেয়ে জনবহুল নগর ছিল জাপানের রাজধানী টোকিও। সেই নগর সরিয়ে জাকার্তা ১ নম্বরে উঠে এসেছে। তালিকায় সবচেয়ে বেশি উল্লম্ফন হয়েছে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার। জাতিসংঘ প্রকাশিত তালিকায় ঢাকার অবস্থান ২ নম্বরে।
সবশেষ তালিকা অনুযায়ী, বর্তমানে ৪ কোটি ১৯ লাখ মানুষ জাকার্তায় বসবাস করেন। ইন্দোনেশিয়ার ঘনবসতিপূর্ণ দ্বীপ জাভার পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত জাকার্তা একটি উপকূলীয় শহর। গত ১৮ নভেম্বর জাতিসংঘ ‘ওয়ার্ল্ড আরবানাইজেশন প্রসপেক্টস ২০২৫’ শিরোনামে এই প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে।
জাকার্তার পরেই আছে ঢাকা, এই নগরে এখন ৩ কোটি ৬৬ লাখ মানুষ বাস করেন। তবে ঢাকার জনসংখ্যা যে হারে বাড়ছে, তাতে ২০৫০ সাল নাগাদ জাকার্তাকে সরিয়ে ঢাকাই বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল নগরে পরিণত হবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে জাতিসংঘ।
গত ১৮ নভেম্বর জাতিসংঘ ‘ওয়ার্ল্ড আরবানাইজেশন প্রসপেক্টস ২০২৫’ শিরোনামে এই প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
ইউনাইটেড নেশনস ডিপার্টমেন্ট অব ইকোনমিক অ্যান্ড সোশ্যাল অ্যাফেয়ার্স এই প্রতিবেদনটি প্রস্তুত করেছে।
স্কাই নিউজের খবরে বলা হয়েছে, প্রতিবেদনটি অনুমানের ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা। এই প্রতিবেদনের মাধ্যমে জাতিসংঘ তাদের ২০১৮ সালের জনসংখ্যাবিষয়ক তথ্য হালনাগাদ করেছে।
এই প্রতিবেদনে শহরে বসবাসকারী মানুষের সংখ্যার নাটকীয় বৃদ্ধি তুলে ধরা হয়েছে। জাতিসংঘের প্রতিবেদনে একে মানুষ্য বসতির নতুন প্রবণতা বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
ঢাকার পরে আছে জাপানের রাজধানী টোকিও। তবে জাকার্তা ও ঢাকার তুলনায় গত ২৫ বছরে টোকিওতে জনসংখ্যা বৃদ্ধি অনেকটাই স্থিতিশীল থেকেছে। টোকিওর বর্তমান জনসংখ্যা ৩ কোটি ৩৪ লাখ।
এর আগে ২০০০ সালে জাতিসংঘ প্রকাশিত মূল্যায়নে বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল নগর ছিল টোকিও।
২০০০ সালের পর টোকিওর তুলনায় জাকার্তার জনসংখ্যা ৫ গুণ হারে এবং ঢাকা জনসংখ্যা ৭ গুণ হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।
জাতিসংঘের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, বর্তমানে এক কোটির বেশি জনসংখ্যা রয়েছে, বিশ্বে এমন মেগা সিটির সংখ্যা বেড়ে ৩৩ হয়েছে। ১৯৭৫ সালে বিশ্বে মাত্র ৮টি মেগা সিটি ছিল। অর্থাৎ মেগা সিটি বেড়ে চার গুণ হয়েছে।
জাকার্তা, ঢাকা ও টোকিওর পর ৪ নম্বরে আছে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লি (বাসিন্দা ৩ কোটি ২ লাখ), চীনের সাংহাই (২ কোটি ৯৬ লাখ), চীনের গুয়াংজু (২ কোটি ৭৬ লাখ), ফিলিপাইনের ম্যানিলা (২ কোটি ৪৭ লাখ), ভারতের কলকাতা (২ কোটি ২৫ লাখ) এবং দক্ষিণ কোরিয়ার সিউল (২ কোটি ২৫ লাখ)।