সরকারি চাকরিতে জনবল নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটা সংস্কার চেয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চলাকালে দুর্বৃত্তদের হামলায় ধ্বংসযজ্ঞে পরিণত হয়েছিল বাংলাদশ টেলিভিশন (বিটিভি)। আজ শুক্রবার সকালে রামপুরায় বিটিভি কার্যালয়ে এই ধ্বংসযজ্ঞ নিজ চোখে দেখেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সকাল ১০টার দিকে তিনি বিটিভি কার্যালয়ে পৌঁছান। এসময় তার সঙ্গে ছিলেন প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিচালক (ডিজি) ড. জাহাঙ্গীর আলম।
পরিদর্শন শেষে আন্দোলন চলাকালে বিটিভিসহ বিভিন্ন স্থাপনায় যারা নাশকতা চালিয়েছে তাদের ধরতে দেশের জনগণের সহযোগিতা চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, যারা এমন হামলার সেঙ্গে জড়িত তারা দেশের আনাচে-কানাচে লুকিয়ে রয়েছে। তাদের খুঁজে বের করে শাস্তির মুখোমুখি করতে হবে। এজন্য দেশের জনগণের সহযোগিতা প্রয়োজন।
ধ্বংসযজ্ঞকারীদের রুখে দিতে জনসাধারণকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে এসময় সরকারপ্রধান বলেন, আধুনিক প্রযুক্তির মেট্রোরেল পরিবহন এভাবে ধ্বংস করেছে তা মানতে পারছি না। সরকারের উন্নয়ন যারা ধ্বংস করছে, তাদের বিরুদ্ধে দেশবাসীকেই রুখে দাঁড়াতে হবে। এ তাণ্ডব যারা করেছে, তাদের বিচার দেশবাসীকে করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সাধারণ মানুষ যেন নির্বিঘ্নে কর্মক্ষেত্র পৌঁছাতে পারে সেটা সুনিশ্চিত করা হবে, দেশ যেন আর্থিকভাবে সচ্ছল হতে পারে সেই চেষ্টা করা হবে। এ দেশ মানুষ রক্ত দিয়ে স্বাধীন করেছে, সেটা ব্যর্থ হতে পারে না।
বিটিভির মহাপরিচালক (ডিজি) ড. জাহাঙ্গীর আলম জানান, দুর্বৃত্তরা বিটিভির কেন্দ্রে আগুন দিয়েছে, ক্যামেরাসহ অনেক কিছুই পুড়িয়ে দিয়েছে। অনেক যন্ত্রপাতি লুটপাটও করেছে। ১৭টি গাড়ি পুড়িয়েছে, ৯টি গাড়ি ভাঙচুর করেছে, দুটি সম্প্রচার ভ্যান পুড়িয়ে দিয়েছে। এছাড়াও আগুনে বিল্ডিংয়ের অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
গত ১৮ জুলাই দুপুর ২টার দিকে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় রামপুরার বিটিভির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। আগুনে টিভি সেন্টারের ভেতরের রিসিপশন, ক্যান্টিন ও একটি বাস পুড়ে যায়। এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) নাশকতাকারীদের হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত রাজধানীর মিরপুর ১০ নম্বর মেট্রোরেল স্টেশন পরিদর্শন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
যুদ্ধবিধ্বস্ত লেবানন থেকে স্বেচ্ছায় দেশে ফিরে আসতে ইচ্ছুক আটকে পড়া বাংলাদেশিদের মধ্যে আরও ৭০ জন আজ রোববার দেশে ফিরবেন। শুক্রবার রাতে বৈরুতে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, রোববার রাত ১১টায় তারা দুবাই হয়ে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছাবেন।
এর আগে সবশেষ গত বৃহস্পতিবার রাতে ৫২ জনকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। সেদিন রাত ১১টায় এমিরেটসের একটি ফ্লাইটে তারা দুবাই হয়ে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছান। সম্পূর্ণ সরকারি খরচে এ পর্যন্ত মোট ২৬৮ জন বাংলাদেশিকে লেবানন থেকে বাংলাদেশে প্রত্যাবাসন করা হয়েছে বলে জানা গেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে। এর মধ্যে গত ২১ অক্টোবর প্রথম দফায় ফেরত এসেছেন ৫৪ জন, ২৩ অক্টোবর দুটি ফ্লাইটে ৯৬ জন, ২৮ অক্টোবর মধ্যরাতে ৩০ জন এবং ২৯ অক্টোবর রাতে ৩৬ জনকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে।
লেবাননে চলমান সাম্প্রতিক সময়ের যুদ্ধাবস্থায় যত জন প্রবাসী বাংলাদেশি দেশে ফিরে আসতে ইচ্ছুক তাদের সবাইকেই সরকার নিজ খরচে দেশে ফেরত আনবে। বাংলাদেশ দূতাবাস, বৈরুত থেকে দেশে ফিরে আসতে ইচ্ছুক বাংলাদেশিদের নিরাপদে প্রত্যাবর্তনের জন্য এবং যেসব প্রবাসী বাংলাদেশি ফিরে আসতে অনিচ্ছুক তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা নিয়েছে।
দূতাবাস জানায়, বৈরুতে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, লেবাননে চলমান যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে যারা স্বেচ্ছায় দেশে যেতে দূতাবাস বরাবর আবেদন করেছেন এবং যাদের পাসপোর্ট, আকামাসহ আবশ্যক ট্রাভেল ডকুমেন্টস প্রস্তুত রয়েছে, তাদের যাবতীয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে দূতাবাসের ব্যবস্থাপনায় দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ দূতাবাস- বৈরুত, লেবানন এবং আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) সহযোগিতায় এসব বাংলাদেশি দেশে ফিরে আসছেন।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দেশ থেকে প্রতি বছর ১২ থেকে ১৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার পাচার হয়েছে বলে দাবি করেছেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। তিনি বলেছেন, মূলত বাণিজ্যের আড়ালে হয়েছে এসব অর্থ পাচারের ঘটনা। পাচার হওয়া এসব অর্থ দেশে ফেরত আনা সম্ভব। তবে তা সময়সাপেক্ষ। গতকাল শনিবার রাজধানীর ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম কার্যালয়ে পাচার হওয়া অর্থ ও তা উদ্ধারের উপায় শীর্ষক সেমিনারে এসব মন্তব্য করেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক। সেমিনারের আয়োজন করে ইকোনোমিক রিপোর্টার্স ফোরাম ও সম্ভাবনার বাংলাদেশ।
আওয়ামী লীগ আমলে রাষ্ট্রীয় কাঠামো ব্যবহার করে অর্থ পাচার হয়েছে অভিযোগ করে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর ব্যাংক খাত থেকে যে ১৭ বিলিয়ন ডলার পাচার হওয়ার কথা বলেছেন, বাস্তবে তার পরিমাণ আরও বেশি। রাষ্ট্রীয় কাঠামো ব্যবহার করে সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ প্রভাবশালীরা ব্যাংক খাত ও বাণিজ্যের আড়ালে প্রতি বছরে ১২ থেকে ১৫ বিলিয়ন ডলার পাচার করেছে। যদিও শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতায় থাকাকালে কী পরিমাণ টাকা পাচার হয়েছে এর প্রকৃত হিসাব কোথাও নেই। তিনি বলেন, পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনা সম্ভব হলেও প্রক্রিয়াটি খুবই জটিল। যে দেশে অর্থ পাচার করা হয়েছে সেই দেশের সঙ্গে আইনি চুক্তি ও সমঝোতার মাধ্যমে ফিরিয়ে আনার পদক্ষেপ নিতে হবে। রাজনৈতিক, আমলাতান্ত্রিক ও ব্যবসায়িক সংস্কৃতি পরিবর্তন না হলে অর্থ পাচার ও দুর্নীতি বন্ধ হবে না।
ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, অর্থপাচার রোধে রাষ্ট্রকেই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। অর্থপাচার বন্ধে রাজনীতি, আমলাতন্ত্র ও ব্যবসাকে আরও দায়িত্বশীল হতে হবে। এ সময় সবাইকে সচেতন হওয়ার পাশাপাশি প্রতিবাদে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান তিনি। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোতে পাচার হওয়া অর্থ ফেরাতে ইতোমধ্যে কাজ শুরু হয়েছে। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের সঙ্গে বৈঠক করেছে সরকার। আগামী দুই বছরের মধ্যে যদি একটা পয়সাও ফেরত আসে তাহলে সেটাও বড় অর্জন হবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে ঋণ খেলাপির সংস্কৃতি যারা চালু করেছেন, সেই প্রভাবশালীরাই পাঁচ তারকা হোটেলে বসে ব্যাংক খাতের নীতি পলিসি তৈরি করত। আর বাংলাদেশ ব্যাংক সেসব পলিসি শুধু ঘোষণা করত। ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশ ব্যাংক ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা বিভাগ বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) দুর্নীতি ও অর্থপাচারে সহায়ক হিসেবে কাজ করেছে। দেশের ব্যাংক খাতকে যে খাদের কিনারায় ঠেলে দেওয়া হয়েছে, তার পেছনে মূল দায়ী হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বর্তমান পরিস্থিতিতে এসব প্রতিষ্ঠানের মৌলিক সংস্কার ও ঢেলে সাজানো ছাড়া বিকল্প নেই।
টিআইবি পরিচালক আরও বলেন, দুদক এখন যাদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান করছে, সেই তথ্য-উপাত্ত তাদের হাতে আগেই ছিল। দুদক প্রমাণ করল, যারা ক্ষমতায় আসছে বা আসবে তাদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান করা যাবে না। সে জন্য তাদের সংস্কার করা দরকার। গ্রিনওয়াচ ঢাকার এডিটর মোস্তফা কামাল মজুমদারের সঞ্চালনায় সেমিনারে আরও বক্তব্য রাখেন ওয়েস্ট সিডনি ইউনিভার্সিটির এমিরেটস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান চৌধুরী ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক জসিম উদ্দিন আহমেদ প্রমুখ।
গণভবনকে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান স্মৃতি জাদুঘরে’ রূপান্তরের জন্য কমিটি ঘোষণা করে এর সদস্যদের নাম জানিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম। শনিবার গণভবনের গেটে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এ কমিটি ঘোষণা করেন।
কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে থাকছেন কিউরেটর, শিক্ষক, লেখক ও চলচ্চিত্র নির্মাতা ড. এবাদুর রহমান। যুগ্ম আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করবেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মো. মাহফুজ আলম। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- লেখক ও মানবাধিকারকর্মী মুসতাইন বিল্লাহ; জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের শিক্ষক জাহিদ সবুজ; জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞানের শিক্ষক ড. নুরুল মোমেন ভূঁইয়া; আলোকচিত্রী, শিক্ষক ও শিল্পকলা একাডেমির গবেষণা ও প্রকাশনা বিভাগের পরিচালক তানজিম ওয়াহাব; লেখক ও গবেষক সহুল আহমেদ মুন্না; স্থপতি মেরিনা তাবাসসুম; বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক; আর্কাইভস ও গ্রন্থাগার অধিদপ্তরের মহাপরিচালক; প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের মহাপরিচালক; স্থাপত্য অধিদপ্তরের প্রধান স্থপতি; গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী; স্থাপত্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত প্রধান স্থপতি মো. আসিফুর রহমান ভূঁইয়া; ইনস্টিটিউট অব আর্কিটেক্টস বাংলাদেশের সভাপতি বা উপযুক্ত প্রতিনিধি; নকশাবিদ আর্কিটেক্টসের লিড আর্কিটেক্ট বায়েজিদ মাহবুব খন্দকার এবং ডিজাইন ওয়ার্কস গ্রুপের স্থপতি তানজিম হাসান সেলিম। এ ছাড়া কমিটিতে এক-দুজন ছাত্র প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত হবে বলে জানান নাহিদ ইসলাম।
কমিটি ঘোষণার পর তথ্য উপদেষ্টা বলেন, গত ১৬ বছরে বাংলাদেশে যে নিপীড়নের স্মৃতিচিহ্ন তৈরি রয়েছে, সেগুলো জুলাই গণ-অভ্যুত্থান স্মৃতি জাদুঘরে সংরক্ষণ করা হবে। এর পাশাপাশি এই জাদুঘরে ছাত্র-জনতার বিজয়ের স্মৃতিচিহ্নও সংরক্ষণ করা হবে। তিনি বলেন, ‘জাদুঘরে ‘আয়নাঘরের’ একটি রেপ্লিকা তৈরির কথাও ভাবা হচ্ছে। স্মৃতিচিহ্ন সংরক্ষণের পাশাপাশি গবেষণার ক্ষেত্র হিসেবেও এই জাদুঘরকে প্রতিষ্ঠা করা হবে।’ ছাত্র-জনতার বিজয়ের স্মৃতিচিহ্ন হিসাবে জনগণ এই জাদুঘরকে ধারণ করবেন বলেও নাহিদ ইসলাম আশা প্রকাশ করেন।
প্রেস বিফ্রিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মো. মাহফুজ আলম বলেন, ‘বাংলাদেশের জনগণ নিজেদের মানবিক মর্যাদা রক্ষার্থে গণভবনে প্রবেশ করে ফ্যাসিবাদী সরকার-প্রধানের দম্ভ ভেঙে দিয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘গত ১৬ বছরে এই গণভবন বাংলাদেশের মানুষের দুঃখ-যাতনার জায়গায় পরিণত হয়েছিল। আবার এই গণভবনে জনগণের বিজয়ের স্মৃতিচিহ্নও রয়েছে। ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে জনগণের বিজয়ের চিহ্নও এই জাদুঘরে সংরক্ষণ করা হবে।’ চলতি সপ্তাহেই জুলাই গণঅভ্যুত্থান স্মৃতি জাদুঘরের নবগঠিত কমিটি কাজ শুরু করতে পারবে বলেও আশা প্রকাশ করেন মাহফুজ।
দেশে গণপরিবহন পরিচালনা-সংক্রান্ত নীতির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা গণপরিবহন ব্যবহার করেন না। তাই তাঁরা ভোগান্তি বুঝতে পারেন না বলে জানিয়েছে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন। এ সময় গণপরিবহন-সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়হীনতার কারণে এই খাতে শৃঙ্খলা নেই বলেও উল্লেখ করে সংগঠনটি।
শনিবার সংগঠনটির কার্যালয়ে ‘প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থাপনা ও কাঠামোগত সংস্কার’ বিষয়ে জাতীয় সংলাপ আয়োজন উপলক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় সংলাপের ঘোষণাপত্র পাঠ করেন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ আই মাহবুব উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, ‘গণপরিবহন ৫৩ শতাংশ যাত্রী পরিবহন করে। আর ব্যক্তিগত যানবাহন ১১ শতাংশ যাত্রী পরিবহন করে। অথচ ব্যক্তিগত যানবাহন ৭০ শতাংশ সড়ক দখল করে চলে। এটা সাধারণ মানুষের প্রতি চরম বৈষম্য।’
ঘোষণাপত্রে বলা হয়, ‘রাজধানীতে মোটরবাইক ও ব্যক্তিগত যানবাহন নামাতে আইনগত কোনো বাধা নেই। কিন্তু বাস-মিনিবাস নামাতে নানা বাধা রয়েছে।’
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) সম্পর্কে ঘোষণাপত্রে আরও বলা হয়, এ প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন প্রশাসনিক ক্যাডার থেকে, যাদের সড়ক বা মোটরযান-সম্পর্কিত বাস্তব জ্ঞান থাকে না। বিআরটিএতে সড়ক ও মোটরযান বিষয়ে অভিজ্ঞ ব্যক্তি বা কোনো একাডেমিশিয়ানকে চেয়ারম্যান করার পরামর্শ দিয়েছে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন। পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটিতে যোগ্যতাসম্পন্ন জনশক্তি থাকা এবং বিআরটিএর নিয়ন্ত্রণে চালক তৈরির প্রশিক্ষণকেন্দ্র স্থাপন করার জন্যও সুপারিশ করা হয়েছে।
ঢাকা ট্রান্সপোর্ট কো-অর্ডিনেশন অথরিটির (ডিটিসিএ) সমালোচনা করে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন জানায়, মানুষ এই প্রতিষ্ঠান চেনে না, তাদের কার্যকারিতা নেই। ডিটিসিএকে কার্যকর করতে হবে।
ফাউন্ডেশনটি আরও জানায়, সড়ক ও সড়ক পরিবহনের সঙ্গে বিআরটিএ, ডিটিসিএ, বাংলাদেশ পুলিশ, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর, এলজিইডি, স্থানীয় সরকার প্রশাসন ও সিটি করপোরেশনের মধ্যে সমন্বয়ের ঘাটতি রয়েছে। এ কারণে সড়কে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ সফল হচ্ছে না। দুর্ঘটনাও কমছে না। এই সমন্বয়হীনতা দূর করতে একটি উচ্চপর্যায়ের কো-অর্ডিনেশন বডি তৈরি করতে হবে।
রাজধানীতে কোম্পানিভিত্তিক বাস সার্ভিস চালুর পরামর্শ দিয়েছে সংগঠনটি। এতে রাজধানীতে ব্যক্তিগত যানবাহনের ব্যবহার নিরুৎসাহিত হবে এবং যানজট কমবে বলে আশা তাদের।
চাঁদাবাজিকে সড়কে বিশৃঙ্খলার অন্যতম কারণ উল্লেখ করে ফাউন্ডেশন বলেছে, ‘গণপরিবহনে চাঁদাবাজির বিপুল অর্থ রাষ্ট্রের বহুদূর পর্যন্ত পৌঁছায়। তাই গণপরিবহনের উন্নতি ও শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে না। রাজনৈতিক পোশাকের একটি গোষ্ঠী গণপরিবহন খাতে অব্যবস্থাপনা টিকিয়ে রাখে নিজেদের স্বার্থে।’
তারা আরও জানায়, অদক্ষ চালক, ত্রুটিপূর্ণ মোটরযান, অনুপযুক্ত সড়ক, মালিকশ্রেণির অপেশাদারি ব্যবস্থাপনার কারণে সড়কে কাঠামোগত হত্যাকাণ্ড ঘটছে। এই দায় কর্তৃপক্ষ এড়াতে পারে না। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের তৈরি করা সড়কের মান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশন জানিয়েছে, বিদ্যমান বাস্তবতায় পরিবহনে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা ও সড়কে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আগামী ৭ ও ৮ ডিসেম্বর দুই দিনব্যাপী একটি জাতীয় সংলাপ অনুষ্ঠিত হবে। এ সংলাপ আয়োজনের জন্য দেশের ৩৭ জন বিশিষ্ট নাগরিকের সমন্বয়ে একটি উপদেষ্টা পরিষদ গঠন করা হয়েছে।
গত দুই দশকে বাংলাদেশের নদীগুলোতে ভারী ধাতুর কারণে দূষণের মাত্রা আশঙ্কাজনক পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। এসব দূষণ নিয়ন্ত্রণ এবং ক্ষতিপূরণের জন্য অবিলম্বে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। চলতি বছরের ১২ জুলাই ‘এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অ্যান্ড পলিউশন রিসার্চ’-এ প্রকাশিত গবেষণায় এসব তথ্য জানা গেছে। এ গবেষণায় ২০০১ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ১০টি ভারী ধাতুর (এএস, পিবি, সিডি, সিআর, এফই, এমএন, সিইউ, সিইউ, সিও, এনআই, জেডএন) দূষণের প্রবণতা পরীক্ষা করে দেশের জলপথের ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অ্যান্ড পলিউশন রিসার্চ একটি একাডেমিক জার্নাল। এটি জার্মানিভিত্তিক স্প্রিংগার নেচারের শাখা স্প্রিংগার প্রকাশ করে। দেবাশীষ পণ্ডিত ও মোহাম্মদ মাহফুজুল হকসহ একদল বিশেষজ্ঞ প্রিজমা ক্রাইটেরিয়া অনুসরণ করে পদ্ধতিগতভাবে ৫৫টি নথি পর্যালোচনা করেন।
গবেষণায় দেখা যায়, ২০০১-২০১০ সালে যে পরিমাণ দূষণ হয়েছিল, সে তুলনায় গত দশকের (২০১১-২০২০) দূষণের মাত্রা অনেক খারাপ ছিল। লক্ষণীয় বিষয় হলো- ঢাকার বুড়িগঙ্গা নদী বাংলাদেশের সবচেয়ে দূষিত নদী হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।
সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চল
গবেষণায় প্রধানত তিনটি বিভাগের ওপর আলোকপাত করা হয়েছে। সেগুলো হলো- ঢাকা, রাজশাহী ও চট্টগ্রাম। এসব এলাকার নদীগুলোর বেশিরভাগে ভারী ধাতুর উপস্থিতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও), মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পরিবেশ সুরক্ষা সংস্থা (ইউএসইপিএ) এবং বাংলাদেশের পরিবেশ অধিদপ্তরের (ডিওই) নির্ধারিত সীমা ছাড়িয়ে গেছে।
আর্সেনিক (এএস), সীসা (পিবি), ক্যাডমিয়াম (সিডি), ক্রোমিয়াম (সিআর), লোহা (এফই) ও ম্যাঙ্গানিজের (এমএন) গড় ঘনত্ব তিনটি ঋতুতেই গ্রহণযোগ্য সীমা ছাড়িয়ে যায়। আর গ্রীষ্মের মাসগুলোতে সর্বাধিক দূষণ হয়। ট্যানারি, টেক্সটাইল ও ইলেক্ট্রোপ্লেটিং কারখানাসহ শিল্প কারখানার মাধ্যমে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ঢাকার প্রাণকেন্দ্র দিয়ে প্রবাহিত বুড়িগঙ্গা। এসব শিল্প কারখানা ভারী ধাতুসম্পন্ন অপরিশোধিত বর্জ্য সরাসরি নদীতে ফেলে দেয়। এটি পরিবেশগত মারাত্মক সংকট তৈরি করে এবং যা বছরের পর বছর ধরে খারাপ হয়ে চলেছে।
দূষণের প্রধান উৎস
গবেষণায় ভারী ধাতু দূষণের একাধিক উৎস চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রাকৃতিক আবহাওয়া সম্পর্কিত প্রক্রিয়াগুলোর পাশাপাশি মানবসৃষ্ট কর্মকাণ্ড অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। কৃষি থেকে সার ও কীটনাশক, খনন, ইলেকট্রোপ্লেটিং, বস্ত্রশিল্প, কয়লা খনি ও শিল্প বর্জ্য যেমন ব্যাটারি ও রং নদীর পানির দূষণের গুরুত্বপূর্ণ কারণ। এসব দূষক বাস্তুতন্ত্রে জমা হয়, যা জলজ জীববৈচিত্র্য, মানব স্বাস্থ্য এবং পরিবেশকে হুমকির মুখে ফেলে।
জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন
গবেষণাটি দূষণ রোধে শক্তিশালী আইন এবং আরও কার্যকর প্রয়োগের জরুরি প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছে। এসব দূষণ রোধে সুপারিশগুলোর মধ্যে রয়েছে- পানিসম্পদ রক্ষার গুরুত্ব সম্পর্কে শিল্প সংশ্লিষ্টদের ও জনগণকে শিক্ষিত করতে অব্যাহত পর্যবেক্ষণ, ব্যাপক গবেষণা এবং সচেতনতামূলক প্রচার।
বিশেষজ্ঞরা নদী অববাহিকা পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনায় একটি সমন্বিত পদ্ধতির আহ্বান জানিয়েছেন; যা টেকসই সমাধানের দিকে মনোনিবেশ করে। দ্রুত এ বিষয়ে পদক্ষেপ না নিলে লাখ লাখ মানুষের জীবন-জীবিকার জন্য গুরুত্বপূর্ণ বাংলাদেশের নদীগুলো অপূরণীয় ক্ষতির মুখে পড়তে পারে। গবেষণার অন্যতম গবেষক মৃত্যুঞ্জয় কুণ্ড বলেন, ‘আমাদের নদীগুলোতে বিশেষ করে ঢাকার মতো অঞ্চলে উচ্চমাত্রার বিষাক্ত ভারী ধাতু জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে রক্ষায় এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে।’ এ গবেষণা মানব প্রভাবের কারণে ক্রমবর্ধমান পরিবেশগত ঝুঁকির একটি স্পষ্ট স্মারক হিসেবে কাজ করে; যেখানে মানব কার্যক্রম গ্রহের জলবায়ু ও বাস্তুতন্ত্রে প্রধান প্রভাবক হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশে নদীগুলোর সুরক্ষা কেবল জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের বিষয় নয়, বরং দেশের দীর্ঘমেয়াদি পানি সুরক্ষা এবং জনস্বাস্থ্যের নিরাপত্তার বিষয়ও।
বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোতে সাইবার আক্রমণের প্রবণতা আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন ধরনের সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে অনুরোধ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজি ডিপার্টমেন্টের অতিরিক্ত পরিচালক এস এম তোফায়েল আহমাদ এক চিঠিতে সব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে এ অনুরোধ জানান।
চিঠিতে বলা হয়, বাংলাদেশে সাইবার সিকিউরিটি ইনটেলিজেন্সের (বিসিএসআই) নিয়মিত তথ্য নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণ ও পর্যালোচনায় বাংলাদেশের কিছু ব্যাংকে ডুয়েল কারেন্সি কার্ডে ফেসবুক অ্যাড ম্যানেজার ব্যবহার করে বেআইনিভাবে লেনদেন হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। এ লেনদেনের মাধ্যমে সাধারণ গ্রাহকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন এমন তথ্যও জানা যাচ্ছে। বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সক্রিয় এসব সাইবার অপরাধীরা প্রতিনিয়ত দেশের সাধারণ মানুষ তথা ব্যাংকের গ্রাহকদের হয়রানি করছে। বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, বিশ্বব্যাপী সাইবার আক্রমণের প্রবণতা বেড়ে চলেছে। বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোতেও সাইবার আক্রমণের প্রবণতা আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে। ব্যাংকগুলো প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ম্যালওয়্যার আক্রমণের শিকারও হচ্ছে। এ ধরনের সাইবার আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে ব্যাংকগুলোকে ১৭টি পদক্ষেপ জরুরি ভিত্তিতে নেওয়ার অনুরোধ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ের গণঅভ্যুত্থানের পর প্রশাসন, বিচার বিভাগ, পুলিশসহ প্রায় সব জায়গায় পরিবর্তন আনা হয়েছে। বাদ থাকছে না পাঠ্যপুস্তকও। সেই জায়গায়ও আসছে বড় কিছু পরিবর্তন।
আগামী বছরের প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের পাঠ্যপুস্তকে যুক্ত হচ্ছে জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানের গ্রাফিতি। বাদ দেওয়া হচ্ছে বইয়ের প্রচ্ছদে থাকা সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি সংবলিত উক্তি। একই সঙ্গে বাংলাদেশের জন্মের ইতিহাসে যার যা ভূমিকা তা সেভাবে সন্নিবেশিত করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
খবর: বিবিসি বাংলা।
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান জানান, ইতিহাসে যার যেমন ভূমিকা সেসব বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতার ইতিহাসে যারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন তাদের বিষয় যুক্ত হচ্ছে। আগামী বছরের পাঠ্যপুস্তক ২০২৪ সালের বিদ্যমান পাঠ্যক্রমে নয় বরং ২০১২ সালের পাঠ্যক্রমে হচ্ছে।
যুক্ত হচ্ছে গণঅভ্যুত্থানের গ্রাফিতি
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে গড়ে ওঠা শিক্ষার্থীদের প্ল্যাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মূল দাবি এক সময় সরকার পতনের এক দফা দাবিতে রূপ নেয়। এ আন্দোলনে বিভিন্ন সময়ে শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদের ভাষা হিসেবে দেয়ালচিত্রকে বেছে নেয়।
শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পরও পুরো ঢাকা শহরের বিভিন্ন দেয়ালে দেয়ালে শিক্ষার্থীরা গ্রাফিতি আঁকে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বহু ভবনের দেয়াল, সীমানা প্রাচীর, সড়ক-দ্বীপ, মেট্রোরেলের স্তম্ভ, উড়াল সড়কের স্তম্ভ কোনো কিছুতেই নিজেদের অর্থে গ্রাফিতি আঁকতে বাদ রাখেনি শিক্ষার্থীরা।
এসব গ্রাফিতিতে ওই সময়টুকুকে ধারণ করার চেষ্টা করা হয়েছে। অভ্যুত্থানে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের প্রতিকৃতি ও তাদের প্রতি শ্রদ্ধা ফুটিয়ে তোলা হয়েছে গ্রাফিতিতে।
পাশাপাশি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, রাষ্ট্র-সমাজের সংস্কার, ঘুষ-দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, স্বৈরতন্ত্রের অবসান, বাক-স্বাধীনতা, অধিকার নিশ্চিত করা থেকে শুরু করে সব ধরনের অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ আর প্রতিরোধের উক্তিও ফুটে উঠেছে এসব গ্রাফিতিতে।
এনসিটিবির কর্মকর্তারা জানান, জুলাইয়ের গ্রাফিতি যে সবগুলো বইয়ে যাবে তা নয়, কিছু কিছু বইয়ে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
একই সঙ্গে যেহেতু ২০২৪-এর জুলাইয়ের অভ্যুত্থানের বিষয়টি একেবারেই সাম্প্রতিক এবং তা নিয়ে লেখা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। এ বছর সময়ও একেবারেই কম, ফলে লেখা হিসেবে না রেখে কিছু পাঠ্যবইয়ে অভ্যুত্থানের গ্রাফিতি বা দেয়ালে আঁকা ছবি রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এনসিটিবি।
এনসিটিবির চেয়ারম্যান বলেন, ’২৪-এর জুলাইয়ের ঘটনাবলি, এ জাতীয় যেসব লেখা রয়েছে তা আসলে কতটা মানসম্পন্ন আর লেখাগুলো তৈরি করাও বেশ সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। তারপরও কিছু বিষয় যেতে পারে কিন্তু সেটা মন্ত্রণালয়ের অনুমতি প্রয়োজন। এখনও অনুমোদন আমরা পাইনি। তবে কিছু কিছু বইয়ের ব্যাক কাভারে কিছু গ্রাফিতি যাচ্ছে, বাচ্চারা দেয়ালে যে চিত্রাঙ্কন এঁকেছে বা মনীষীদের বাণী ওই জাতীয় বিষয় যাচ্ছে। বাংলা, ইতিহাস, বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বইয়ের মতো কিছু বইয়ের প্রচ্ছদে বা বইয়ের কোনো কোনো অংশে এসব গ্রাফিতি বা দেয়ালে আঁকা ছবি যুক্ত করা হবে।’
শেখ হাসিনার উক্তি বাদ দেওয়া হবে
এখন বেশ কয়েকটি শ্রেণির পাঠ্যবইয়ের পেছনের প্রচ্ছদে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যেসব ছবি ও উদ্ধৃতি রয়েছে সেগুলো বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এনসিটিবি। বইয়ের শেষ পৃষ্ঠায় থাকা শেখ হাসিনার এসব উক্তিকে অপ্রাসঙ্গিক উল্লেখ করে এনসিটিবির চেয়ারম্যান বলেন, সেগুলো থাকবে না। সেগুলো অপ্রাসঙ্গিক। শিক্ষার্থীদের মনে যাতে রাজনৈতিক কোনো ধারণার উদ্রেক না হয় সে কারণে এসব বাদ দেওয়া হচ্ছে। বইয়ের পেছনের প্রচ্ছদে শেখ হাসিনার উদ্ধৃতির পরিবর্তে চিরন্তন কিছু বাণী যুক্ত করা হবে বলে জানান তিনি।
ইতিহাসবিষয়ক যেসব পরিবর্তন হচ্ছে
বর্তমানে বাংলাদেশের বিভিন্ন শ্রেণির বইয়ে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে শেখ মুজিবুর রহমানের ভূমিকাকে বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধসহ বিভিন্ন ইতিহাস নির্ভর বিষয়েও কিছু কাটছাঁট করা হচ্ছে। একই সঙ্গে যুক্ত করা হচ্ছে জিয়াউর রহমানসহ অন্যদের ভূমিকাও।
এনসিটিবির চেয়ারম্যান বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ‘ইতিহাসের বিষয় আছে, যেগুলোতে যার যার ভূমিকা সেটা সঠিকভাবে ছিল না। এ রকম অভিযোগ আছে। আমরাও পেয়েছি। সেগুলো দেখা হচ্ছে।
যার যতটুকু ভূমিকা সেভাবে দেওয়া হবে। যেমন: মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা ইতিহাসের অন্যান্য যারা পিলার তাদের বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হবে। মেজর জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন- এমন বিষয়ও যুক্ত হচ্ছে আগামী বছরের পাঠ্যইয়ে।
ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান বলেন, ‘স্বাধীনতার ঘোষণায় আমাদের তৎকালীন মেজর জিয়াউর রহমান একাধিক ঘোষণা দিয়েছিলেন। সেগুলো সেভাবেই আসবে আশা করছি। একইসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধে অন্যান্যদের যে ভূমিকা তাও অন্তর্ভুক্ত করা হবে। এ ছাড়া মাওলানা ভাসানী, তাজউদ্দীন আহমেদ, জেনারেল আতাউল গণি ওসমানী যার যা ভূমিকা এগুলো ইতিহাসের অংশ হিসেবে যুক্ত করা হবে।’
গণঅভ্যুত্থানে নিহতদের কথা অন্তর্ভুক্ত হবে?
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের প্রাথমিক পর্যায়ে গত ১৬ জুলাই রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদ নিহত হন। পুলিশের গুলির বিপরীতে বুক পেতে দাঁড়িয়ে যান তিনি।
বিভিন্ন ভিডিওতে পুলিশ গুলি করার পর সাঈদকে ঢলে পড়তে দেখা যায়। পরে মারা যান তিনি। যদিও পুলিশ যে মামলা করে তাতে ভিন্ন বক্তব্য থাকায় তা নিয়ে চলে তুমুল সমালোচনা। সাঈদের এ মৃত্যু সে সময় তোলপাড় তোলে দেশে।
এ আন্দোলনে ঢাকায় ১৮ জুলাই নিহত হয়েছেন এমন একজন মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধ। বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের ছাত্র মুগ্ধ উত্তরায় গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন। আন্দোলনকারীদের পানি সরবরাহ করছিলেন মুগ্ধ। উত্তরাতেই বাসা তার।
আন্দোলনকারীদের উদ্দেশে তার বলা ‘পানি লাগবে, পানি, পানি লাগবে, পানি’ এ উক্তি পরবর্তীতে আন্দোলনের প্রধান স্লোগানে পরিণত হয়।
গণঅভ্যুত্থানে নিহত এ দুইজনের কথা পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে এরই মধ্যে আলোচনা হয়েছে বলে জানান এনসিটিবির চেয়ারম্যান। তবে এখনো মন্ত্রণালয় থেকে এ বিষয়ে অনুমোদন পাওয়া যায়নি বলে জানান তিনি।
ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান বলেন, ‘এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এটা এখনও সিদ্ধান্ত আসে নাই। আমাদের মন্ত্রণালয় থেকে সিদ্ধান্ত এলে আমরা বলতে পারবে। এখনো সিদ্ধান্ত পাইনি, এ জন্য যুক্ত করার কথা বলা যাবে না। মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত দেরিতে এলেও আগামী বছরের বইতে শেষ মুহূর্তেও এ বিষয় বইয়ে অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব।’
তিনি বলেন, ‘ছাপাখানায় কিছু বই চলে গেছে, কিছু বই এখনও যাওয়ার অপেক্ষায় আছে। জানুয়ারিতে বই দেওয়ার জন্য আমাদের প্রিন্টারদের সঙ্গে আমাদের কথা হচ্ছে। বই দেওয়ার জন্য তাদের প্রস্তুতিও আছে। এখন তারা যদি সব সহযোগিতা করে তাহলে তা সম্ভব, কঠিন হলেও অসম্ভব নয়।’
মূল্যবোধের বিষয় যুক্ত হবে
আগামী বছরের পাঠ্যবইয়ে যাতে কোনো গোষ্ঠী, সম্প্রদায় বা কারো প্রতি আঘাত না করা হয়, সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রেখে সব বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে বলে জানান এনসিটিবির চেয়ারম্যান এ কে এম রিয়াজুল হাসান। তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশের মূল্যবোধ, ধর্মীয় ও সামাজিক মূল্যবোধের সঙ্গে সাংঘর্ষিক কোনো কিছু পাঠ্যবইয়ে থাকবে না।’
সতর্কতার জন্য এটা করা হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘কোনো ধর্মীয় গোষ্ঠী বা সামাজিক ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী তারা যেন আহত না হয় বা তাদের বিষয়ে যাতে বিরূপ কোনো মন্তব্য না থাকে সেটা দেখা হয়েছে। কাউকে আঘাত যেন করা না হয় সে বিষয়টি দেখা হচ্ছে।’
পণ্য ও সেবার দাম নিয়ন্ত্রণে সঠিক পথেই আছে বাংলাদেশ। এই মুহূর্তে টাকার প্রবাহে ভারসাম্য রাখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সামনে সংকোচনশীল হওয়ার বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)।
শুক্রবার সকালে জাপানের টোকিওতে রিজিওনাল ইকোনমিক আউটলুক প্রতিবেদন নিয়ে ব্রিফিং করে সংস্থাটি। আইএমএফ জানায়, মন্দা থেকে দ্রুত ঘুরে দাঁড়াচ্ছে এশিয়া। চড়া মূল্যস্ফীতি থেকে বেরিয়ে আসছে এই অঞ্চল। তাই অনেক দেশে কমবে সুদের হার। তবে দুশ্চিন্তা আছে রপ্তানি নিয়ে।
বিফ্রিংয়ে আরও জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ সুদের হার কমানোর পর থেকেই এশিয়ায় মূল্যস্ফীতি কমছে। তবে এ অঞ্চলে ঋণের পরিমাণ প্রতিনিয়ত বাড়ছে।
আইএমএফের এশিয়া ও প্যাসিফিক অঞ্চলের পরিচালক কৃষ্ণা শ্রীনিবাসন বলেন, ‘এশিয়ার অর্থনীতির ওপর দিয়ে অনেক বিপদ গেছে। এসব সামাল দিতে অনেক দেশকে ঋণ নিতে হয়েছে। আমি যদি বিশ্বের সার্বিক ঋণ হিসাব করি, তাহলে এর ২৮ থেকে ৩৫ ভাগই এশিয়ার। এমনকি বৈশ্বিক মন্দার পর চীন ও জাপানের সরকারকে বড় পরিসরে ধার করতে হয়েছে। ফলে এই অঞ্চলে প্রবৃদ্ধির গতি কম।’
এ সময় প্রশ্ন আসে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে। আইএমএফ জানায়, স্থানীয় অর্থনীতিতে একাধিক ধাক্কা লেগেছে। জটিলতা আছে পণ্য সরবরাহে। এখান থেকে বেরিয়ে আসতে বদলাতে হবে কিছু আর্থিক নীতি।
সংস্থাটির এশিয়া ও প্যাসিফিক অঞ্চলের সহকারী পরিচালক থমাস হেলব্লিং বলেন, অস্থির সময় পার করেছে বাংলাদেশের রাজনীতি। সেই সঙ্গে যোগ হয়েছে টানা বন্যার ধাক্কা। এর ফলে পণ্য সরবরাহে বাধা পড়েছে। তবে বাংলাদেশে পণ্য ও সেবার দাম ২০২২ সাল থেকে বেশি। তাই আপাতত সংকোচনমূলক মুদ্রানীতির বিকল্প নেই। সঙ্গে বিদেশ থেকে অর্থ লেনদেনে ভারসাম্যহীনতাও আছে। চাইলে বাংলাদেশ যেকোনো উৎস থেকে বাজেট সহায়তা নিতে পারে।
আইএমএফের প্রাক্কলন, চলতি বছর বাংলাদেশে জিডিপির প্রবৃদ্ধি হবে ৪ দশমিক ৬ শতাংশ। পরের বছর তা কমে দাঁড়াবে ৪ দশমিক ৪ ভাগে।
দেশে ফিরেছেন আন্তর্জাতিক হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হাফেজ মুয়াজ মাহমুদ। শুক্রবার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অতরণের পর তাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমান, বিভিন্ন মাদ্রাসার শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।
দেশে ফিরে হাফেজ মুয়াজ মাহমুদ বলেন, ‘সবার কৃতজ্ঞতা আদায় করছি। এটা আমার মর্যাদা নয়, এটা মহান আল্লাহর কোরআনের মর্যাদা। মহান আল্লাহ আমাকে সাহায্য করেছেন বলে আমার জন্য সহজ হয়েছে। সবার কাছে দোয়া চাই, দুনিয়াতে যেভাবে প্রথম হয়েছি এভাবে জান্নাতুল ফিরদাউসে এক সঙ্গে থাকতে পারি।’
ভবিষ্যতে কী হতে চায় জানতে চাইলে বলেন, ‘আমার স্বপ্ন আমি ভবিষ্যতে আল্লাহর দ্বীন শিখে যোগ্য আলেম হয়ে ব্যাপকভাবে পবিত্র কোরআনের খেদমত করা।’
প্রসঙ্গত, তুরস্কে অনুষ্ঠিত নবম আন্তর্জাতিক হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অর্জন করেন হাফেজ মুয়াজ মাহমুদ। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের হাত থেকে মুয়াজ মাহমুদ সম্মাননা ক্রেস্ট ও পুরস্কার গ্রহণ করেন।
গত ২৮ মার্চ জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের তত্ত্বাবধানে এ প্রতিযোগিতার বাছাই পর্বে দেশের শত শত মেধাবী হাফেজদের পেছনে ফেলে প্রথম স্থান অর্জন করে তুরস্ক আন্তর্জাতিক হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতার জন্য বাংলাদেশের একমাত্র প্রতিনিধি নির্বাচিত হন মুয়াজ মাহমুদ। এ ছাড়া চলতি বছরের ২১ আগস্ট মক্কায় ৪৪তম আন্তর্জাতিক কোরআন প্রতিযোগিতায় ১২৩টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ প্রথম স্থান অর্জন করে। সে সময় হাফেজ মুয়াজ মাহমুদ ১৫ পারা গ্রুপে প্রথম স্থান অর্জন করেন।
জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে নিহতদের মধ্যে থেকে প্রতি সপ্তাহে ২০০ পরিবারকে অনুদান দেবে ‘জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন’। শুক্রবার সংবাদ সম্মেলনে অনুদান বিতরণের পরিকল্পনার কথা জানান ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম। শাহবাগে ফাউন্ডেশনের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে সারজিস বলেন, ‘আমরা আপাতত প্রতি সপ্তাহে ২০০ জন করে শহীদ পরিবারের মধ্যে অনুদানের টাকা বা চেক হস্তান্তরের পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছি। এর অংশ হিসেবে শনিবার সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নগরভবনে নির্ধারিত ২০০ শহীদ পরিবারের প্রতিটিকে পাঁচ লাখ টাকা করে বিতরণ করা হবে।’
তিনি বলেন, ‘এটা সম্পূর্ণ বাংলাদেশের মানুষের টাকা। এর আগে আমরা বিভিন্ন ব্যক্তিপূজা দেখেছি, সংগঠনপূজা দেখেছি। সেগুলো থেকে বের হয়ে এখন যাদের টাকা পাওয়া উচিত তাদেরকে খুঁজে বের করে আমরা টাকাটা দিচ্ছি।’ গত জুলাই মাসে শুরু হওয়া সরকার বিরোধী আন্দোলনে ৩৬ দিনের মধ্যে আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনের অবসান ঘটে। ওই সময়ে ৮৭১ জনের মৃত্যুর তথ্য এ পর্যন্ত সংকলিত করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম (এমআইএস)।
সারজিস আলম বলেন, ‘প্রতি সপ্তাহে আমরা ২০০ জন শহীদ পরিবারের কাছে ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে সহযোগিতা পৌঁছে দিতে চাই। শনিবার সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত ৪টি ধাপে ২০০ শহীদ পরিবারের কাছে আর্থিক সহায়তা পৌঁছে দেব। সেটার জন্য ২০ জনের একটি টিম কাজ করছে।’ কাজটি করতে গিয়ে বিভিন্ন সমস্যার মুখোমুখি হয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রথমে ঢাকা বিভাগ নিয়ে কাজ করছি। কিন্তু এখানে শহীদ পরিবারের সংখ্যা আরও বেশি। অবিবাহিত কেউ যদি শহীদ হয়ে থাকেন, সেখানে হিসাবগুলো খুবই সহজ। মায়ের সম্মতি নিয়ে বাবাকে কিংবা বাবার সম্মতি নিয়ে মাকে নমিনি করছি। বিবাহিত শহীদ ভাইদের ক্ষেত্রে স্ত্রী এবং বাবা/মায়ের কোনো একজনকে মিলিয়ে যৌথ নমিনি করে টাকাটা হস্তান্তর করতে পারছি; কিন্তু কিছু ব্যতিক্রম কেইস দেখতে পাচ্ছি। শহীদ ভাইয়ের সহধর্মিণীর সঙ্গে বাবা/মায়ের (শ্বশুর/শাশুড়ি) দূরত্ব রয়েছে। এই ধরনের কনফ্লিক্টের ক্ষেত্রে আমরা সেগুলো কিছুদিন পরে টাকাটা হস্তান্তর করতে চাচ্ছি।’ জুলাই-অগাস্টের গণঅভ্যুত্থানে ‘শহীদদের’ পরিবারকে ৫ লাখ এবং আহতদের এক লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে গত ১৮ সেপ্টেম্বর ‘জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের’ কার্যনির্বাহী কমিটির প্রথম সভায়।
ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি এবং তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম বলেছেন, বাংলাদেশের একটা প্রজন্মান্তর ঘটে গেছে। তরুণরা বাংলাদেশকে নতুন করে পথ দেখিয়েছে। অর্থনীতিসহ সবকিছুতেই তরুণরা নেতৃত্বে আসার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। যে প্রজন্ম জুলাই অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে একটি নতুন বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখেছে, সেই প্রজন্মই বাংলাদেশের সর্বক্ষেত্রে নেতৃত্ব দেবে।
আজ শুক্রবার ঢাকায় ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ‘জাতীয় যুব দিবস ২০২৪’ উদযাপন উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।
নাহিদ ইসলাম বলেন, তরুণদের নিয়ে শুধু বাংলাদেশের মানুষই নয়, সমগ্র পৃথিবী নতুন করে ভাবছে, আর অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে। কারণ বাংলাদেশের তরুণরা এই জুলাই অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে পৃথিবীকে একটি নতুন পথ দেখিয়েছে। ফলে এই তারুণ্য বাংলাদেশকে পরবর্তীতে কোথায় নিয়ে যাবে পুরো পৃথিবী এখন সেটি দেখার অপেক্ষায় রয়েছে।
তিনি বলেন, তারুণ্যের ভেতরে যে উদ্যম, স্পৃহা ও সচেতনতা রয়েছে, এই সকল গুণাবলিকে যদি কাজে লাগানো যায়, তাহলে বাংলাদেশ অবশ্যই কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছে যেতে পারবে।
জুলাই অভ্যুত্থানে সকলেই রাস্তায় নেমে এসেছিল। একদিকে ছিল দেশমাতৃকা, অপরদিকে মৃত্যু। মাতৃভূমি অথবা মৃত্যু যেকোনো একটাকে বেছে নিয়ে আমাদের লড়তে হয়েছিল।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে যুব ও ক্রীড়া এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেন, সরকারি ক্ষেত্রে আগামী ২ বছরে ৫ লাখ কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা হবে।
তিনি আরও বলেন, মানবজীবনের শ্রেষ্ঠ সময় যৌবনকাল এবং মানবসম্পদের শ্রেষ্ঠ অংশ যুবসমাজ। ‘ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড’ হিসেবে এই যুবশক্তি দেশের অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
আমাদের অন্তবর্তীকালীন সরকার যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের মাধ্যমে কর্মপ্রত্যাশী যুবকদেরকে মানবসম্পদের উপযোগী করে গড়ে তুলছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
এরপর উপদেষ্টাদ্বয় ‘জাতীয় যুব দিবস ২০২৪’ উদযাপন উপলক্ষ্যে আয়োজিত যুব মেলায় বিভিন্ন স্টল পরিদর্শন করেন। অনুষ্ঠানে ১২ জন সফল আত্মকর্মী ও ৩ জন শ্রেষ্ঠ যুব সংগঠককে ‘জাতীয় যুব পুরস্কার ২০২৪’ দেয়া হয়।
যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. রেজাউল মাকছুদ জাহেদীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. গাজী মো. সাইফুজ্জামানসহ মন্ত্রণালয় ও দপ্তর সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অর্থ পাচারের অভিযোগে সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সাবেক ভূমিমন্ত্রী এবং চট্টগ্রাম-১৩ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনীত এমপি সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ এবং তার স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র, লন্ডন, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং সিঙ্গাপুরে অর্থ পাচারের অভিযোগ রয়েছে।
সিআইডি জানায়, ২০০৫ সালে সাইফুজ্জামান যুক্তরাষ্ট্রে নাহার ম্যানেজমেন্ট ইনকরপোরেটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠান খোলেন। ২০০৫ সাল থেকে বিভিন্ন সময় এই প্রতিষ্ঠানের নামে যুক্তরাষ্ট্রে ৯টি ফ্ল্যাট কেনেন। এ ছাড়াও ২০১৪ ও ২০১৫ সালে কম্পিউটার সফটওয়্যার ব্যবসা করার জন্য দুবাইয়ে র্যাপিড র্যাপ্টর এফজিই এবং জেবা ট্রেডিং এফজিই নামে দুটি প্রতিষ্ঠান খোলেন। সাইফুজ্জামানের স্ত্রী রুখমিলা জামান চৌধুরীর নামে আল-বারশা সাউথ-থার্ড এলাকায় কিউ গার্ডেন্স ও বুটিক রেসিডেন্সে দুটি ফ্ল্যাট কেনেন, যার দাম ২২ লাখ ৫০ হাজার ৩০০ দিরহাম। ২০১৬ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে সাইফুজ্জামান চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং আরব আমিরাতে ৬২০টি বাড়ি কেনেন, যার বাজারমূল্য প্রায় ৪৮ কোটি ডলার। ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে সাইফুজ্জামান চৌধুরী ২০১০ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত নিজের ও স্ত্রী রুখমিলা জামানের নামে যুক্তরাজ্য ও দুবাইয়ে ৮টি প্রতিষ্ঠান খোলেন, যার স্থায়ী ও চলতি সম্পদের মূল্য ২১ কোটি ৭২ লাখ ৬০ হাজার ডলার।
অভিযোগ রয়েছে যে, বাংলাদেশ থেকে পাচারকৃত অর্থ দিয়ে তিনি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতে এসব কোম্পানি খুলে বিনিয়োগ করেছেন। এ ছাড়াও বাংলাদেশ ব্যাংক এখন পর্যন্ত যে ২১টি প্রতিষ্ঠানকে বিদেশে বিনিয়োগের অনুমোদন দিয়েছে সেই তালিকায় সাইফুজ্জামান চৌধুরী বা তার পরিবারের কারও নাম নেই।
ভোটের আগে নির্বাচন কমিশনে সাইফুজ্জামান চৌধুরী যে সম্পদ বিবরণী জমা দেন, সেখানে তার বিদেশে থাকা সম্পদের কোনো তথ্য নেই। অর্থ পাচার, মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন অনুসারে একটি সম্পৃক্ত অপরাধ বিধায় সাইফুজ্জামান চৌধুরী এবং তার স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করেছে সিআইডির ফিন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট।
ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ ও জামালপুরের শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজসহ দেশের ছয় সরকারি মেডিকেল কলেজের নাম পরিবর্তন করা হয়েছে। ব্যক্তির নাম বাদ দিয়ে এসব প্রতিষ্ঠানের জেলার নামে নামকরণ করা হয়েছে।
গতকাল বুধবার স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব ডা. মো. সারোয়ার বারীর সই করা এক প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার প্রজ্ঞাপনটি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়।
যে ছয়টি কলেজের নাম পরিবর্তন করা হয়েছে সেগুলো হলো শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ, নোয়াখালী; শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ, টাঙ্গাইল; বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ, ফরিদপুর; কর্নেল মালেক মেডিকেল কলেজ, মানিকগঞ্জ; আব্দুল মালেক উকিল মেডিকেল কলেজ নোয়াখালী; এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ, দিনাজপুর।
এসব মেডিকেল কলেজের নাম পরিবর্তন করে যথাক্রমে- নোয়াখালী মেডিকেল কলেজ, টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজ, ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ, মানিকগঞ্জ মেডিকেল কলেজ, নোয়াখালী মেডিকেল কলেজ, দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ নামে নামকরণ করা হয়েছে।
এর আগে গেল ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে সরকার পতনের পর এসব মেডিকেল কলেজগুলোর নাম পরিবর্তনের দাবি তোলেন শিক্ষার্থীরা। এরই ধারাবাহিকতায় এবার সরকারিভাবে এসব মেডিকেল কলেজের নাম পরিবর্তন করা হলো।