ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারকে স্বাগত জানিয়েছে যুক্তরাজ্য। গতকাল শুক্রবার (৯ আগস্ট) যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি এক বিবৃতিতে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে স্বাগত জানায়। বিবৃতিটি যুক্তরাজ্য সরকারের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে গঠিত বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে যুক্তরাজ্য স্বাগত জানায়। বাংলাদেশের জনগণের স্বার্থে দেশটিতে শান্তিশৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার কাজে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ওপর যুক্তরাজ্যের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে।
ডেভিড ল্যামি বলেন, আমরা নতুন করে যেকোনো ধরনের সহিংসতা ও প্রাণহানি রোধ করতে সবার প্রতি আহ্বান জানাই। জবাবদিহি ও একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক গণতান্ত্রিক ভবিষ্যতের দিকে শান্তিপূর্ণ যাত্রা বাংলাদেশের জনগণের প্রাপ্য।
৮ আগস্ট ড. ইউনূসের নেতৃত্বে ১৭ সদস্যের অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করেছে বাংলাদেশ। তবে তিন উপদেষ্টা শপথ নেননি।
সমৃদ্ধশালী উপসাগরীয় রাষ্ট্র কাতার বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার গৃহীত সংস্কার কর্মসূচিতে পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছে।
আজ মঙ্গলবার ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় কাতারের রাষ্ট্রদূত সেরায়া আলি আল-কাহতানি প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং তার সরকারের বার্তা পৌঁছে দেন।
রাষ্ট্রদূত প্রধান উপদেষ্টাকে বলেন, ‘বাংলাদেশকে সব ধরনের সহায়তা দিতে কাতার আগ্রহী।’
বাংলাদেশের সংস্কার কর্মসূচিতে কাতারের পূর্ণ সমর্থনকে "চমৎকার" অভিহিত করে অধ্যাপক ইউনূস সে দেশের আমিরকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠ বন্ধু হিসেবে পাশে থাকার জন্য কাতার সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
প্রধান উপদেষ্টা কাতারের সঙ্গে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্পর্ক আরও গভীর করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি কাতারের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগ এবং দেশের বিভিন্ন অর্থনৈতিক অঞ্চলে তাদের কারখানা স্থানান্তর করার আহ্বান জানান।
বাংলাদেশ এখন ব্যবসার জন্য প্রস্তুত উল্লেখ করে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘আমরা চাই কাতারের ব্যবসায়ীরা এখানে সম্ভাবনা অন্বেষণ করুক।’ তিনি জানান, আগামী এপ্রিলের শুরুতে বাংলাদেশ একটি বিনিয়োগ সম্মেলন আয়োজন করবে।
রাষ্ট্রদূত বিনিয়োগ আমন্ত্রণের প্রশংসা করে বলেন, কাতারের আরও বেশি ব্যবসায়ী খুব শিগগিরই বাংলাদেশ সফর করবে বলে তিনি আশা করছেন।
সাক্ষাৎকালে অধ্যাপক ইউনূস তাঁর সরকারের সংস্কার কর্মসূচি এবং রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের জন্য গঠিত ঐকমত্য কমিশনের কার্যক্রম তুলে ধরেন।
ড. ইউনূস জানান, আগামী মাসে তিনি কাতার সফরে যাবেন, সেখানে গ্যাসসমৃদ্ধ উপসাগরীয় দেশটিতে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যোগ দেবেন।
রাষ্ট্র সংস্কার নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য গঠনে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনা শুরু হচ্ছে। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের উদ্যোগে প্রথম পর্যায়ে আগামী বৃহস্পতিবার (২০ মার্চ) বিকাল ৩টায় লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সাথে আলোচনার সময়সূচি নির্ধারণ করা হয়েছে।
পর্যায়ক্রমে অন্যান্য দলগুলোর সঙ্গেও আলোচনার সময়সূচি ঘোষণা করা হবে। মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এমন তথ্য জানিয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।
সংস্কার বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য গঠনের উদ্দেশ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূসের সভাপতিত্বে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠিত হয়েছে। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি কমিশনের কার্যক্রম শুরু হয়।
প্রথম পর্যায়ে গঠিত সংস্কার কমিশনগুলোর মধ্যে সংবিধান সংস্কার কমিশন, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন এবং দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে আসা গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশগুলোর ওপর রাজনৈতিক দলের সুনির্দিষ্ট মতামত ১৩ মার্চের মধ্যে জানাতে অনুরোধ করে সুপারিশগুলোর স্প্রেডশিট আকারে ৩৮টি রাজনৈতিক দলকে পাঠানো হয়।
এ পর্যন্ত ১৫টি রাজনৈতিক দলের কাছ থেকে কমিশন মতামত পেয়েছে। দলগুলো হল- লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপি, খেলাফত মজলিশ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ, জাকের পার্টি, ভাসানী অনুসারী পরিষদ, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন-এনডিএম ও ‘আম জনতার দল’, রাষ্ট্রসংস্কার আন্দোলন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিশ, বাংলাদেশ জাসদ, বাংলাদেশ লেবার পার্টি, আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি) ও নাগরিক ঐক্য।
বিএনপি-জামায়াতসহ ২৩টি রাজনৈতিক দল এখনো তাদের পূর্ণাঙ্গ মতামত দেয়নি। দলগুলো এজন্য আরও সময় চেয়েছে। ১৩ মার্চের মধ্যে দলগুলোকে সুনির্দিষ্ট মতামত পাঠাতে চিঠি দিয়ে অনুরোধ করেছিলেন কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ। নির্ধারিত তারিখের মধ্যে কেবল ৭টি দল তাদের মতামত জানিয়েছিল।
এর বাইরে সংস্কার কমিশনের অন্যান্য সুপারিশের বিষয়ে দলের মতামত থাকলে কমিশন সেটাও গ্রহণ করবে বলে চিঠিতে বলা হয়েছিল।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাসে ১৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত আন্দোলনকারীদের ওপর হামলায় জড়িত ১২৮ জন শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় হামলাসংক্রান্ত তথ্যানুসন্ধান কমিটির প্রতিবেদনের আলোকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে তালিকায় থাকা দুইজন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও শাখা ছাত্রলীগের নেতা বলে জানা গেছে।
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা ১২৮ জনের তালিকায় ৮২ নম্বরে ইব্রাহিম হাসান সানিমের নাম রয়েছে, যিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) নাট্যকলা বিভাগের শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি। আর তালিকায় ১২১ নম্বরে রয়েছেন মাহমুদুল হাসান আকাশের নাম, যিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ও মার্কেটিং ইউনিট জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন।
শিক্ষার্থীরা জানায়, মাহমুদুল আকাশ জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের সময় গত ১৫ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনরত সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার সময় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে। একটি ছবিতে তাকে লাঠি হাতে মিছিলের প্রথম সারিতে দেখা যায়।
তালিকায় ইব্রাহিম সানিমের অভিযোগে বলা হয়েছে, সে ভিসি চত্বর এলাকায় নারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করে। আরেক ছাত্রলীগ নেতা আকাশের অভিযোগে বলা হয়েছে, ১৫ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার সময় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে। তাকে লাঠি হাতে মিছিলে প্রথম সারিতে দেখা যায়।
এ ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) মুনসী শামস উদ্দিন আহম্মদ বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এরিয়ায় যারা হামলার সাথে জড়িত ছিল এবং যাদেরকে চিন্হিত করা গেছে তাদেরকে সিন্ডিকেটে বহিষ্কার করা হয়েছে। অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের যারা এ তালিকায় রয়েছে, তাদের বহিষ্কারের অনুরোধ জানিয়ে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়কে চিঠি পাঠানো হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক সাইফুদ্দিন আহমদ বলেন, এটা বহিষ্কারের তালিকা নয়। এটা সত্যানুসন্ধান কমিটির প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের যে দুইজনের নাম রয়েছে এই বিষয়ে আমরা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে অবহিত করবো। প্রয়োজনে আমরা তাদের বিরুদ্ধে অন্যভাবেও ব্যবস্থা নেয়ার চেষ্টা করবো।
এ বিষয়ে জবি প্রক্টর অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ তাজাম্মুল হক বলেন, এ বিষয়ে আমরা এখনো অবহিত না। যদি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আমাদের এ বিষয়ে কিছু জানায় নিশ্চয় আমরা তখন জানবো এবং ব্যবস্থা নিতে পারবো।
পবিত্র রমজান মাসে দাম সহনীয় রাখতে টাটকা ফলের ওপর আমদানি শুল্ক কমিয়েছে সরকার।
মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়, গত ১৬ মার্চ জারি করা দুটি প্রজ্ঞাপনে আমদানি পর্যায়ে সম্পূরক শুল্ক ৩০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশ করা হয়েছে এবং ৫ শতাংশ অগ্রিম কর সম্পূর্ণ অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া ১০ মার্চ পৃথক প্রজ্ঞাপনে ফল আমদানির ওপর অগ্রিম আয়কর ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হয়। ফলে মোট শুল্ক কমানো হয়েছে ১৫ শতাংশ।
এতে বলা হয়, রমজানে মূল্যস্ফীতি স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে বৃহত্তর জনস্বার্থে এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
এনবিআরের দাবি, বৃহত্তর জনস্বার্থে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গত কয়েক মাসে ভোজ্যতেল, চিনি, আলু, ডিম, পেঁয়াজ, চাল, খেজুর, কীটনাশকসহ বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ওপর আমদানি শুল্ক, নিয়ন্ত্রণ শুল্ক, ভ্যাট, অগ্রিম আয়কর, অগ্রিম করের উল্লেখযোগ্য অংশ অব্যাহতি দিয়েছে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘কর অব্যাহতিসহ সরকারের বিভিন্ন সময়োপযোগী পদক্ষেপের কারণে এ বছর পবিত্র রমজান মাসে দ্রব্যমূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখা সম্ভব হয়েছে।’
বৃহত্তর জনস্বার্থে বহুল ব্যবহৃত গণপরিবহন মেট্রোরেলের ওপর বিদ্যমান ভ্যাট সম্পূর্ণরূপে অব্যাহতি দিয়েছে সরকার।
বইয়ের সহজলভ্যতা নিশ্চিত করা, আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষা ব্যবস্থার প্রসার এবং শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধির লক্ষ্যে স্থানীয় সরবরাহ ও আমদানি উভয় পর্যায়ে ই-বুক সেবার ওপর ভ্যাট অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া হজযাত্রীদের খরচ কমাতে সরকার হজের টিকিটের ওপর আবগারি শুল্ক পুরোপুরি প্রত্যাহার করেছে এবং জনস্বার্থে বিভিন্ন কর অব্যাহতি দিয়েছে।
শিশু ধর্ষণ মামলার দ্রুত বিচারের লক্ষ্যে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হবে বলে জানিয়েছেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। সোমবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান তিনি।
আসিফ নজরুল বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে গতকাল সোমবার এক বিশেষ সভায় শিশু ধর্ষণ মামলার দ্রুত বিচারের জন্য বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠনসহ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন-২০২০ এর সংশোধনীর ব্যাপারে সরকার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’ আগামী বৃহস্পতিবার আইনটি সংশোধন করে গেজেট প্রকাশ করা হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
আইন উপদেষ্টা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন সংশোধনীর ব্যাপারে বলেন, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতে দেখা যায়- মামলার জট লেগে থাকে। কারণ এখানে দুই ধরনের মামলা আসে। এসবের একটা হচ্ছে সম্মতি সাপেক্ষে ধর্ষণের ঘটনা। এ ধরনের মামলা বেশি আসে। এখন থেকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণের ঘটনা আলাদা অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হবে, যাতে বিচারপ্রক্রিয়া সহজ করা যায়। দ্বিতীয় ক্ষেত্রে সম্মতি ব্যতিরেকে ধর্ষণ, তার বিচার ও তদন্তের সময় কমানো হয়েছে। এ ছাড়া কেবল পুরুষ কর্তৃক না যেকোনো ব্যক্তি কর্তৃক ধর্ষণের ঘটনা ধর্ষণের মামলা হিসেবে গণ্য হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
এই আইন সংশোধনীর ব্যাপারে তিনি আরও বলেন, ডিএনএ রিপোর্ট ছাড়াই মেডিকেল সার্টিফিকেট এবং পারিপার্শ্বিক সাক্ষ্যের ভিত্তিতে যদি বিচার করা সম্ভব হয়, তাহলে আদালত ডিএনএ রিপোর্ট ছাড়াই বিচার কাজ সম্পন্ন করতে পারবে। এই সংশোধনী আনার ব্যাপারেও সবাই নীতিগতভাবে একমত হয়েছে।
ভিকটিমের সুরক্ষা দিতে নানা ধরনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
আসিফ নজরুল আরও বলেন, মাগুরার ওই শিশু ধর্ষণের মামলা চলছে নিজস্ব গতিতে এবং দ্রুততার সঙ্গে এর বিচার হবে। এই মামলার তদন্ত কাজ ২-৩ দিনের মধ্যে শেষ হবে উল্লেখ করে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে আগামী কয়েকদিনের মামলার বিচার কাজ শেষ হয়ে যাবে।
ব্রিফিংয়ে পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান জানান, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন সংশোধনীর ব্যাপারে কিছু মতামত পাওয়া গেছে। এগুলো আমরা যাচাই-বাছাই করব। এরপর আগামী বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের সভায় এটি অনুমোদন পাবে বলে আশা করছি।
তিনি বলেন, বিচারপ্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে ডিএনএ পরীক্ষার জন্য চট্টগ্রাম ও রাজশাহীতে আরও দুটি ল্যাব প্রতিষ্ঠা করা হবে।
সাড়ে ৫৩ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদসহ ৩৪১ কোটি টাকার বেশি সন্দেহভাজন লেনদেনের অভিযোগে যশোর-৬ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মো. শাহীন চাকলাদার ও তার স্ত্রী ফারহানা জাহান মালার নামে দুটি মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
সোমবার রাজধানীর সেগুন বাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে সংস্থাটির মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. আক্তার হোসেন ব্রিফিংয়ে জানান।
প্রথম মামলায় মো. শাহীন চাকলাদারের বিরুদ্ধে পাবলিক সার্ভেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে ক্ষমতার অপব্যবহারপূর্বক ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে ৪২ কোটি ৪৬ লাখ ৬৪ হাজার ৬২৩ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে। তার ২৯টি ব্যাংক হিসাবে ৩৪১ কোটি ৬১ লাখ ৬৬ হাজার ৩৬৪ টাকা সন্দেহজনক লেনদেন করেছেন বলে অভিযোগে বলা হয়েছে।
অন্যদিকে দ্বিতীয় মামলায় শাহীন চাকলাদারের স্ত্রী ফারহানা জাহান মালার বিরুদ্ধে ১১ কোটি ২০ লাখ ৮৫ হাজার ২২১ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে। স্বামীর অবৈধ সম্পদে ফারহানা মালা সম্পদশালী হয়েছেন বলেও এজাহারে বলা হয়েছে।
আসামিদের বিরুদ্ধে দুদক আইন ২০০৪-এর ২৭(১) ধারা এবং দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন ১৯৪৭ এর ৫(২) ধারা তৎসহ মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪(২) ও ৪(৩) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।
শাহীন চাকলাদার যশোর-৬ আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর থেকে তিনি আত্মগোপনে আছেন। গত জানুয়ারি মাসে দুদকের পৃথক মামলায় শাহীন চাকলাদারকে চার বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
করোনাভাইরাসের টিকা কেনার সময় রাষ্ট্রের ২২ হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে বেক্সিমকো ফার্মার ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমানের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
সোমবার ঢাকার সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে সংস্থাটির মহাপরিচালক আক্তার হোসেন ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান। দুদকে অভিযোগটি দিয়েছেন বাংলাদেশ চিকিৎসা গবেষণা পরিষদের (বিএমআরসি) কর্মকর্তা মইদুল ইসলাম।
দুদকে জমা হওয়া অভিযোগপত্র থেকে জানা গেছে, ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার তিন কোটি টিকা কেনার জন্য সরবরাহকারী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয় বাংলাদেশের বেক্সিমকো ফার্মাকে।
অভিযোগে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ সরকার, বেক্সিমকো এবং সেরাম ইনস্টিটিউটের মধ্যেকার টিকা কেনার চুক্তি প্রক্রিয়ায় সরকারি ক্রয়বিধি অনুসরণ করা হয়নি। যৌক্তিক কারণ না দেখিয়ে টিকা আমদানিতে তৃতীয় পক্ষ হিসেবে বেক্সিমকোকে অন্তর্ভুক্ত করায় অন্যান্য দেশের চেয়ে বেশি মূল্যে বাংলাদেশকে সেরামের টিকা কিনতে হয়েছে।
এতে আরও বলা হয়েছে, সরকার সরাসরি সেরাম ইনস্টিটিউটের কাছ থেকে টিকা আনলে প্রতি ডোজে যে টাকা বাঁচত তা দিয়ে ৬৮ লাখ বেশি টিকা কেনার চুক্তি করা যেত। বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস প্রতি ডোজ টিকা থেকে অন্য সব খরচ মিটিয়ে ৭৭ টাকা করে লাভ করেছে।
অভিযোগে জানা গেছে, ভারত থেকে আমদানি করা অক্সফোর্ড–অ্যাস্ট্রাজেনেকা কোভিড ১৯ টিকা বিতরণের খরচ দেখানো হয়েছে ৪০ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে খরচ হয়েছে ১৮ হাজার কোটি টাকা। বাকি ২২ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন সালমান এফ রহমান ও তার সিন্ডিকেট।
করোনা ভ্যাকসিনকে কেন্দ্র করে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের নেতৃত্বে চক্রটি এই ২২ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে এবং এই সিন্ডিকেটের শক্তির বলয়েই আটকে যায় বঙ্গভ্যাক্স- যা অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে। সিন্ডিকেটে আরও ছিলেন তৎকালীন স্বাস্থ্য সচিব লোকমান হোসেন, বাংলাদেশ চিকিৎসা গবেষণা পরিষদের (ডিএমআরসি) চেয়ারম্যান মোদাচ্ছের আলী ও প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস।
অভিযোগ বিস্তারিত বিষয়ে আরও জানা গেছে, বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যাল ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা ড্যাম্বাসিনের ৭০ মিলিয়ন ডোজ পেয়েছে, যার মূল্য প্রায় ৪২৫ টাকা। টিকায় মোট খরচ হয়েছে ২ হাজার ১৭৫ বিলিয়ন টাকা। অন্যদিকে চীন থেকে সিনোফার্মার ভ্যাকসিনের ৩.১৫ মিলিয়ন ডোজ আমদানিতে ২৭.৪৭৫ বিলিয়ন টাকা খরচ হয়েছে, যা প্রতিটি ৮ হাজার ৭২২.২০ টাকা বা প্রায় ১০০ ডলার। অথচ সরকারি কমিটি ১৫ মিলিয়ন ডোজ সিনোফার্মার ভ্যাকসিনের প্রতিটি ১০ ডলারে কেনার অনুমোদন দেয়। এখানে ক্রয়ের ক্ষেত্রে বড় ধরনের আর্থিক দুর্নীতি হয়েছে বলে অভিযোগে বলা হয়েছে।
এ বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আক্তার হোসেন বলেন, ‘কীভাবে এসব টাকা আত্মসাৎ হয়েছে এখনই বিস্তারিত বলা যাচ্ছে না। আমরা অনুসন্ধান শেষে বিস্তারিত জানাব।’
জানা গেছে, সিন্ডিকেটটি করোনার প্রকোপ শেষ হয়ে গেলে গ্লোব বায়োটেকের বঙ্গভ্যাক্স ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের অনুমোদন দেয়। এরপর একটি আনঅফিসিয়াল মিটিংয়ে সালমান এফ রহমানের মালিকানাধীন বেক্সিমকো গ্রুপের সঙ্গে গ্লোব বায়োটেককে প্রযুক্তি শেয়ার করার দাবি করা হয়। বেক্সিমকো ও গ্লোব বায়োটেক মিলে জয়েন্ট ভেঞ্চারে বঙ্গভ্যাক্স বাজারজাত করার দাবির সঙ্গে একমত না হলে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে বেক্সিমকোর চুক্তি করে ভ্যাকসিন বাংলাদেশে আমদানি করে। ফলে বঙ্গভ্যাক্সের অনুমতি আর দেওয়া হয়নি। এখানে প্রতিষ্ঠানটির ৪০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।
এ দুর্নীতি অনুসন্ধানে দুদকের উপ-পরিচালক আফরোজ হক খানকে প্রধান করে চার সদস্যদের একটি অনুসন্ধান টিম গঠন করা হয়েছে বলে জানা যায়।
উল্লেখ্য, গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী সরকারের পতনের পর ১৩ আগস্ট রাজধানীর সদরঘাট এলাকা থেকে নৌ-পথে পালানোর সময় সালমান এফ রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়। বর্তমানে তিনি কারাগারে আটক রয়েছে।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নতির জন্য আরও জোরালো চেষ্টা অব্যাহত রাখতে পুলিশকে নির্দেশনা দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সংখ্যালঘুসহ দেশের প্রতিটি নাগরিক যাতে নিজেদের নিরাপদবোধ করেন, পুলিশকে এমন ব্যবস্থা নিতে বলেছেন তিনি।
আজ সোমবার প্রধান উপদেষ্টার তেজগাঁও কার্যালয়ে পুলিশের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক বৈঠকে তিনি এমন নির্দেশনা দিয়েছেন। এতে সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা নিজেই।
দেশের বর্তমান পরিস্থিতির ওপর জোর দিয়ে ড. ইউনূস বলেন, ‘নির্বাচনের সময় যত ঘনিয়ে আসছে, পরাজিত শক্তি তাদের অপচেষ্টা ততই জোরদার করছে।’
এ ধরনের তৎপরতা বন্ধে পুলিশ বাহিনীকে সদা সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি নতুন বাংলাদেশ নির্মাণ বাধাগ্রস্ত করতে এমন সব প্রপাগান্ডা নিয়েও পুলিশকে সতর্ক থাকতে বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা।
পুলিশের সহায়তা ছাড়া নতুন বাংলাদেশ গড়া যাবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি। এ সময়ে প্রধান উপদেষ্টা মাঠ পর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তাদের বক্তব্য শোনেন এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে তাদের নির্দেশনা দেন।
বিশেষ এই সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, স্বরাষ্ট্র সচিব নাসিমুল গনি এবং পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম।
আগামী রোববারের মধ্যে বকেয়া বেতন পরিশোধের আশ্বাসে বাংলাদেশ রেলওয়ের অস্থায়ী (টিএলআর) শ্রমিকরা তাদের কর্মবিরতি প্রত্যাহার করেছেন।
সোমবার (১৭ মার্চ) রাজধানীর রেলভবনে বাংলাদেশ রেলওয়ের অস্থায়ী (টিএলআর) কর্মচারীদের পক্ষ থেকে কর্মবিরতি প্রত্যাহারের এ ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
এর আগে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব ফাহিমুল ইসলাম আন্দোলনরত টিএলআর শ্রমিকদের বকেয়া বেতন আগামী রবিবারের (২৩ মার্চ) মধ্যে পরিশোধের আশ্বাস দেন।
সাংবাদিকদের ব্রিফকালে তিনি বলেন, ইন্টিগ্রেটিড বাজেট এন্ড একাউন্টিং সিস্টেম (আইবাস) সংক্রান্ত জটিলতার কারণে রেলওয়ের টিএলআর শ্রমিকদের বেতন-ভাতা পরিশোধে সমস্যা ছিলো। সে সমস্যা সমাধানে অর্থবিভাগ ও মন্ত্রণালয় পর্যায়ে অভ্যন্তরীণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
‘আশা করা যাচ্ছে, আগামী রবিবারের মধ্যে টিএলআর শ্রমিকদের বকেয়া বেতন তাদের ব্যাংক একাউন্টে পৌঁছে যাবে।’
আগামী এপ্রিল মাস থেকে তাদের বেতন প্রতিমাসের দশ তারিখের মধ্যে পরিশোধ করা সম্ভব হবে বলেও তিনি জানান। তার এ আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে টিএলআর শ্রমিকরা তাদের কর্মবিরতি প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন। তবে রবিবারের মধ্যে বকেয়া বেতন পরিশোধ করা না হলে তারা পুনরায় আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করবে বলে জানান।
ব্রিফিংকালে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক আফজাল হোসেনসহ রেলপথ মন্ত্রণালয় ও রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও টিএলআর শ্রমকদের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের ১২৭ জন কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠকে বসবেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। আগামীকাল সোমবার প্রধান উপদেষ্টার তেজগাঁও কার্যালয়ে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
আজ রোববার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে নিয়মিত ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার।
তিনি বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে মানুষের মধ্যে এক ধরনের উদ্বেগ রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে আগামীকাল (সোমবার) সারা দেশের মাঠপর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন প্রধান উপদেষ্টা।
আবুল কালাম আজাদ বলেন, পুলিশ সুপার ও তার ওপরের পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের সঙ্গে এই বৈঠক হবে। বিভিন্ন মহানগর কমিশনার, রেঞ্জ ডিআইজি, ক্রাইম টিমের সদস্যসহ ১২৭ জন শীর্ষ পুলিশ কর্মকর্তা বিশেষ বৈঠকে যোগ দেবেন। পুলিশের আইজিপি সেখানে স্বাগত বক্তব্য রাখবেন। ৫ আগস্টের পর পুলিশের পক্ষ থেকে নেওয়া বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তারা প্রধান উপদেষ্টাকে জানাবেন। একই সঙ্গে পুলিশের মোরাল অ্যাকটিভিটিজ ফিরিয়ে আনার জন্য কী কী উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তাও অবহিত করবেন।
ব্রিফিংয়ে বলা হয়, এবার পুলিশ সপ্তাহ হবে ২৯ এপ্রিল। সেখানে প্রধান উপদেষ্টা বক্তব্য রাখবেন এবং দিকনির্দেশনা দেবেন। তার আগে আজকের সভায় পুলিশকে বিশেষ দিকনির্দেশনা দেওয়ার জন্য ডাকা হয়েছে।
আগামীতে যারাই রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসবে তাদের হাসিনা সরকারের সব গুম, খুনের বিচার করতে হবে বলে জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেন, এ বিচার নিশ্চিতের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে, অন্যায় করে কেউ পার পায় না।
রোববার রাজধানীতে এক ইফতার মাহফিলে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এসব কথা বলেন তিনি।
আওয়ামী সরকারের শাসনামলে গুম, খুনের শিকার পরিবার ও চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে শহীদ পরিবারের সদস্যদের নিয়ে রাজধানীর একটি হোটেলে এই ইফতার মাহফিলের আয়োজন করে আমরা বিএনপি পরিবার।
সুষ্ঠু ভোটের মাধ্যমে রাষ্ট্র ক্ষমতায় গিয়ে জনগণের প্রত্যাশিত দেশ গড়ার শপথ নিয়ে বিএনপির এই শীর্ষ নেতা বলেন, দেশের মানুষের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অধিকারকে প্রতিষ্ঠার জন্যই গুম ও খুনের শিকার হয়েছেন।
তিনি বলেন, দেশের মানুষের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অধিকারকে প্রতিষ্ঠার জন্য অনেকে গুম ও খুনের শিকার হয়েছেন। আমরা আপনাদেরই মতো। আয়না ঘরে অনেকেই ছিলেন, কেউ ফিরে এসেছিল, কেউ আসেনি। আমরা রাজনীতি করি, তাই সামনে নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এমন প্রত্যাশা করছি।
তারেক রহমান বলেন, জনগণের ভোটে বিএনপি যদি ক্ষমতায় যায়, তবে যে কর্মসূচি আছে তার পাশাপাশি বিগত স্বৈরাচারের সরকারের বিরুদ্ধে যারা লড়াই করছে, শহীদ হয়েছে, সবগুলোর বিচার করব। গণতন্ত্র রক্ষা, ব্যক্তিস্বাধীনতা ও যারা নির্যাতিত তাদের বিচার এ বিষয়ে ঐক্যবদ্ধ থাকব।
একজন রাজনীতিবিদ হিসেবে সামনে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে এমন প্রত্যাশার কথা জানিয়ে বিএনপির এই শীর্ষ নেতা জানান, আগামীতে যে-ই রাষ্ট্র ক্ষমতায় যাবে, তাদের বিগত দিনের সব অন্যায়ের বিচার করতে হবে।
সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকলে সব অন্যায়ের বিচার সম্ভব মন্তব্য করে তারেক রহমান আশা প্রকাশ করেন, অন্তত এই ইস্যুতে কোনো রাজনৈতিক দলের মধ্যেই বিভেদ থাকবে না।
এর আগে, হাসিনার শাসনামলে গুম, খুনের শিকার পরিবার ও ২৪-এর গণঅভ্যুত্থানে শহীদ পরিবারের মধ্যে তারেক রহমানের পক্ষ থেকে ঈদ উপহার বিতরণ এবং কয়েক ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হয়।
শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী হেজাজ বিন আলিমের শরীরে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। তাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে তার পরিবার।
নিহত হেজাজের ভাই আবিদ বিন আলম বলেন, ‘আমার ভাইয়ের শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। তবে কে বা কারা পিটিয়েছে এ বিষয়ে তিনি কিছু বলেননি।’
এ ছাড়া মৃত্যুর আগে হেফাজ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সাংবাদিকদের জানান, ‘তাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী হেফাজতে ব্যাপক মারধর করা হয়।’
রোববার দুপুরে আবিদ বিন আলম বলেন, ময়নাতদন্ত শেষে আমার বড় ভাই হেজাজের মরদেহ গ্রহণ করেছি। ভাইকে ধানমণ্ডিতে জানাজা শেষে দাফন করা হবে।
এর আগে গত শনিবার ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) হেফাজতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় হেজাজ বিন আলিমের (৩৭)। ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের নেফ্রোলজি বিভাগে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।
রোববার দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে হেজাজের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। পরে মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ তার পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করে।
নিহত হেজাজ বিন আলমের বাড়ি টাঙ্গাইল জেলার সদর থানা এলাকায়। মৃত্যুর আগে ধানমন্ডি শেরেবাংলা রোডের ৪৯/এ বাসায় থাকতেন তিনি। তার বাবার নাম শাহ আলম খান।
এদিকে ঢাকা জেলা প্রশাসনের (এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট) মো. রৌশন আহমেদের উপস্থিতিতে সুরতহাল প্রতিবেদনে মোহাম্মদপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) শেখ কাদের আহমেদ উল্লেখ করেন, গত ১১ মার্চ সি ও এল ও সেনাবাহিনীর একটি টিম হেজাজকে গ্রেপ্তারপূর্বক মোহাম্মদপুর থানায় হস্তান্তর করলে সে অসুস্থ থাকায় দুইবার প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। পরে তাকে বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করা হয়। অতঃপর হেজাজ পরদিন আদালত থেকে জামিন হন। ১৫ মার্চ জাপান বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতাল থেকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ভোররাতে তাকে গ্রেপ্তার করে ডিবি। পরে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ‘নেফ্রলজি’ বিভাগে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত ৮টার দিকে ঢাকা মেডিকেলের ৯০১ নাম্বার ওয়ার্ডে তার মৃত্যু হয়।
এ বিষয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডিবি ওয়ারী বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে তারা বলেন, ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারের সঙ্গে কথা বলতে হবে, এ বিষয়ে আমরা কিছু বলতে পারব না।
মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলী ইফতেখার হাসান বলেন, তার বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র হত্যার কোনো মামলা ছিল না। তার বিভিন্ন রকমের নাম ছিল, নামের বিভ্রাটের কারণে পরে তাকে একটি ডাকাতি মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়। পরদিন তিনি জামিনে বের হয়ে যান।
জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু ও তার স্ত্রী আফরোজা হকের নামে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এছাড়া ১৩ শ' কোটি টাকার ঠিকাদারি কাজ ভাগবাটোয়ারার মাধ্যমে লুটপাটের অভিযোগে গোপালগঞ্জ-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শেখ সেলিমের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করেছে সংস্থাটি।
আজ রোববার রাজধানীর সেগুন বাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে সংস্থাটির মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. আক্তার হোসেন ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান।
তিনি জানান, সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল ইনুর প্রথম মামলায় পাবলিক সার্ভেন্ট হিসেবে অপরাধমূলক অসদাচরণ ও ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে অসাধু উপায়ে জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ ৪ কোটি ৮৪ লাখ ২৫ হাজার ৫০৭ টাকার সম্পদের মালিকানা অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে। ইনুর ৪টি ব্যাংক হিসাবে ১১ কোটি ৮৮ লাখ ১৬ হাজার ১৯ টাকা সন্দেহজনক লেনদেন করেছেন। এই অর্থকে মানিলন্ডারিংয়ের সম্পৃক্ত অপরাধ ‘দুর্নীতি ও ঘুষ’ সংঘটনের মাধ্যমে প্রাপ্ত বলে দুদকের অভিযোগে বলা হয়েছে। আসামির বিরুদ্ধে দুদক আইন ২০০৪-এর ২৭(১) ধারা এবং দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন ১৯৪৭ এর ৫(২) ধারা তৎসহ মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন,২০১২ এর ৪(২) ও ৪(৩) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।
দ্বিতীয় মামলায় ইনু ও তার স্ত্রী আফরোজা হকের বিরুদ্ধে ১ কোটি ৪৯ লাখ ৮৫ হাজার ৭৪ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে। সাবেক তথ্যমন্ত্রী অসদুপায়ে উপার্জিত অর্থ দ্বারা স্ত্রী সম্পদশালী হয়েছেন বলে এজাহারে বলা হয়েছে। আসামিদের বিরুদ্ধে দুদক আইন ২০০৪-এর ২৭(১) ধারা এবং দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন ১৯৪৭ এর ৫(২) ধারা তৎসহ পেনাল কোডের ১০৯ ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।
ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর গত বছরের ২৬ আগস্ট হাসানুল ইনুকে উত্তরা থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
অন্যদিকে ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ সেলিমের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার ও বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতর মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন স্থানের ১ হাজার ৩০০ শত কোটি টাকার টেন্ডার কাজে পছন্দের ঠিকাদারের নিকট হতে ১০ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশ হারে কমিশন গ্রহণপূর্বক কার্যাদেশ প্রদানের অভিযোগ রয়েছে। এই বিষয়ে দুদক অনুসন্ধান শুরু করেছে বলে জানানো হয়।
জানা গেছে, ২০০৮ সাল আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর শেখ হাসিনার ফুফাতো ভাই শেখ সেলিমের মন্ত্রীত্ব না থাকলেও ক্ষমতার প্রভাব কোনো অংশে কম ছিল না। এক সময়ের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও গোপালগঞ্জ-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম। সবশেষ কয়েকটি সরকারে মন্ত্রিত্ব না থাকলেও শেখ পরিবারের প্রভাব কাজে লাগিয়ে গত ১৫ বছরে উন্নয়ন কাজে নিয়মিত কমিশন বাণিজ্য করে গেছেন তিনি।
দুদকের অভিযোগ থেকে জানা গেছে, বঙ্গবন্ধুর ভাগনে পরিচয়ে স্বাস্থ্য, স্থানীয় সরকার, সড়ক পরিবহনসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের ঠিকাদারি কাজের বড়ই অংশ ছিল তার নিয়ন্ত্রণে।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী সরকার পতনের পর শেখ সেলিম আত্মগোপনে রয়েছেন বলে জানা গেছে। গত বছরের ২০ আগস্ট তিনি ও তার পরিবারের ৯১ ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সব হিসাব তলব করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
১৯৯৬ থেকে ২০০১ পর্যন্ত শেখ হাসিনার প্রথম শাসনামলে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন শেখ ফজলুল করিম সেলিম। এরপর টানা চারটি সংসদে ছিলেন বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি।