বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মধ্যে গত ৫ আগস্ট ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচির দিন ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। পদত্যাগের পর দেশ ত্যাগ করেন শেখ হাসিনা। এদিন সারা দেশে বিক্ষুব্ধ জনতার রোষানলের পড়ে পুলিশ সদস্যরা। ভাঙচুর করা হয় বাহিনীটির গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও থানা। ফলে মুখথুবড়ে পড়ে বিভিন্ন থানার কার্যক্রম। পুলিশের অনেক সদস্যই কর্ম বিরতিতে চলে যান।
আজ সোমবার সন্ধ্যায় পুলিশ সদর দপ্তরের গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগ থেকে এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়, সারা দেশের সর্বমোট ৬৩৯টি থানার মধ্যে ৬২৮টি থানার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। মেট্রোপলিটন (মহানগর) এলাকার ১১০টি থানার মধ্যে ১০৮টি এবং জেলার ৫২৯টি থানার মধ্যে ৫২০টি থানার কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
এছাড়া ১১টি থানা সম্পূর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় এবং প্রয়োজনীয় লজিস্টিকস্, আসবাবপত্রসহ অন্যান্য সকল সরঞ্জামাদি ধ্বংসপ্রাপ্ত হওয়ায় এসব থানার কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব হয়নি। তবে আগামী ২-৩ দিনের মধ্যে এই ১১টি থানার কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব হবে।
এর আগে গত শনিবার পুলিম সদর দপ্তর জানিয়েছিল, থানার কার্যক্রম পুনরুদ্ধার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় প্রতিটি থানা এলাকায় নাগরিক নিরাপত্তা কমিটি গঠনের জন্য পুলিশ সদর দপ্তর থেকে সকল জেলা পুলিশ সুপার ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
কমিটির প্রধান লক্ষ্য হবে আইনশৃঙ্খলা পুনরুদ্ধারে জনসম্পৃক্ততা বাড়ানো। এ লক্ষ্যে কমিটি একটি অ্যাকশন প্ল্যান প্রস্তুত করে মনিটরিং ও মূল্যায়নের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করবে। কমিটির আওতাধীন এলাকার আইনশৃঙ্খলা পুনঃস্থাপনের লক্ষ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ও কমিটির সদস্যদের সমন্বয়ে যৌথ টহল প্রদানের মাধ্যমে হানাহানি, চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাই প্রতিরোধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। এলাকায় বিদ্যমান সামাজিক সংঘাত যেমন বাড়িঘর ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ইত্যাদি নিরসনে নিবিড় ব্যক্তিগত যোগাযোগ স্থাপনের মাধ্যমে বিরোধ নিষ্পত্তির ব্যবস্থা নিবে। স্থানীয় জনসাধারণের জীবন, সম্পদ, স্থাপনা, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় উপাসনালয়সহ এলাকার শান্তিশৃঙ্খলা নিয়মিত তদারকি করে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। এলাকার মাদক, ইভটিজিং ইত্যাদি সমস্যা নিরসনে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। এছাড়া, স্থানীয় বিভিন্ন ধর্মীয় রাজনৈতিক দলসমূহ ও দল-উপদলের মধ্যে বিরাজমান উত্তেজনা নিরসন ও সম্প্রীতি স্থাপনের লক্ষ্যে কার্যক্রম পরিচালনা করবে।
স্থানীয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা কমিটির আকার নির্ধারণ করবেন। গ্রহণযোগ্য আইনজীবী/বিচারক, অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা, সশস্ত্র বাহিনীর কর্মকর্তা, সিনিয়র সিটিজেন, সর্বজন সমাদৃত স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, স্থানীয় জনগণের প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠনের সভাপতি/সেক্রেটারি, স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি, মানবাধিকারকর্মী, নারী অধিকারকর্মী এবং এনজিও প্রতিনিধি কমিটির সদস্য হবেন।
কমিটি পুলিশ সদস্যদের নিরাপত্তা বিঘ্নকারীদের বিরুদ্ধে জনপ্রতিরোধ গড়ে তোলা; কেউ যেন কোন প্রকারের উসকানি দিয়ে পরিবেশ ঘোলাটে করতে না পারে সেজন্য জনসচেতনতা সৃষ্টি এবং পুলিশ সদস্যদেরকে আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণের ক্ষেত্রে সার্বিক সহযোগিতা প্রদানসহ অন্যান্য কার্যক্রম গ্রহণ করবে।
মরক্কোর এক ব্যক্তিকে আঘাতের ভিডিওকে বাংলাদেশের ঘটনা হিসেবে প্রচার করে বিভ্রান্তি ছড়ানোর অপচেষ্টা শনাক্ত করেছে প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশের (পিআইবি) ফ্যাক্টচেক ও মিডিয়া রিসার্চ টিম বাংলাফ্যাক্ট।
বাংলাফ্যাক্টের অনুসন্ধান টিম জানায়, জলাধারের ওপর এক ব্যক্তিকে আঘাতের ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটি বাংলাদেশের নয় মরক্কোর।
অনুসন্ধান দলের তথ্যমতে, সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে, যেখানে দাবি করা হচ্ছে যে ‘গাজীপুরে এক ব্যক্তিকে উঁচু জলাধারের ওপর তুলে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে’। ১ মিনিট ২৬ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে দেখা যায়, উঁচু একটি জলাধারের ওপর এক ব্যক্তি আরেকজনকে লাঠিসদৃশ বস্তুর আঘাত করছেন। আহত ব্যক্তি হাত দিয়ে আঘাত ঠেকানোর চেষ্টা করলেও তাকে বারবার প্রহার করা হয়। এরপর আরেকজন ব্যক্তি জলাধারের অ্যাক্সেস সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে আহত ব্যক্তিকে বাঁচানোর চেষ্টা করলে তাকেও আঘাত করা হয় এবং তিনি নিচে নেমে আসেন।
বাংলাফ্যাক্টের যাচাইয়ে উঠে এসেছে, ভিডিওটি গাজীপুরের কোনো ঘটনার নয়। প্রকৃতপক্ষে এটি গত ১১ জুলাই মরক্কোর বেনি মেলাল শহরের ঘটনা।
দাবিটি যাচাই করতে ভিডিও থেকে নেওয়া কিছু স্থিরচিত্রের রিভার্স ইমেজ সার্চ করে দেখা যায়, মরক্কোর গণমাধ্যম ‘গার্ডিয়েন মরোক্কো’-এর ওয়েবসাইটে গত ১২ জুলাই প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে ছবিটি ব্যবহার করা হয়েছে।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ১১ জুলাই বেনি মেলাল শহরের ওলাদ ইউসুফ এলাকায় এক ব্যক্তি তার বাবার মৃত্যুর তদন্তের দাবিতে উঁচু জলাধারে ১০ দিনেরও বেশি সময় ধরে বিক্ষোভ করছিলেন। ওই ব্যক্তির বিশ্বাস, তার বাবা দুর্ঘটনায় মারা যাননি বরং হত্যা করা হয়েছে। পরবর্তীতে দমকল বাহিনীর এক সদস্য টাওয়ারে উঠে বিক্ষোভকারীকে বোঝানোর চেষ্টা করেন যেন নিরাপদে নেমে আসেন। কিন্তু বিক্ষোভকারী হঠাৎ দমকলকর্মীর মাথায় ও হাতে লাঠি দিয়ে আঘাত করেন এবং পরে তাকে ধাক্কা দিয়ে টাওয়ার থেকে ফেলে দেন। আহত দমকলকর্মীকে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনায় মরক্কোর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তদন্ত শুরু করেছে।
বাংলাফ্যাক্টের যাচাইয়ে নিশ্চিত করা হয়েছে, মরক্কোর এই ভিডিওকে গাজীপুরের ঘটনা বলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়ানো হচ্ছে, যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
বাংলাদেশে চলমান গুজব, ভুয়া খবর ও অপতথ্য প্রতিরোধে এবং জনগণের কাছে সঠিক তথ্য পৌঁছে দিতে বাংলাফ্যাক্ট দায়িত্ব পালন করছে।
‘মুক্ত ও সুষ্ঠু’ নির্বাচন আয়োজনে সরকারের প্রস্তুতির কথা উল্লেখ করে বাংলাদেশে পরবর্তী জাতীয় নির্বাচনকে অন্তর্ভুক্তিমূলক হিসেবে দেখার আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত মারি মাসদুপুই।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, নির্বাচন কমিশন খুব ভালোভাবে কাজ করবে। এটাই যে তাদের উদ্দেশ্য তা পরিষ্কার। তাই আশা করছি, নির্বাচনটি যতটা সম্ভব অন্তর্ভুক্তিমূলক হবে।’
তবে নির্বাচন কতটা অন্তর্ভুক্তিমূলক হবে, তা প্রস্তুতির ধরন ও প্রয়োগের ওপর নির্ভর করছে বলেও এ সময় উল্লেখ করেন তিনি।
সাংবাদিকের সঙ্গে আলাপকালে রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘অবশ্যই আমরা সবাই জানি, বাংলাদেশের একটি ঐতিহাসিক রাজনৈতিক দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ রয়েছে। যতক্ষণ না সেই দল নিজেদের সংস্কার করছে, ক্ষমা চাইছে এবং তাদের কিছু নেতার বিচার হচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত যে তাদের নির্বাচনে অংশ নেওয়া কঠিন সেটি আমরা বুঝি।’
তার মতে, অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন মানে শুধু বড় দল নয়, স্বতন্ত্র ও ছোট দলগুলোর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করাও গুরুত্বপূর্ণ। যত বেশি দল অংশ নেবে, নির্বাচন তত বেশি অন্তর্ভুক্তিমূলক হবে বলে মনে করেন তিনি।
চলতি বছরের মে মাসে অন্তর্বর্তী সরকার সন্ত্রাসবিরোধী আইনের আওতায় এক গেজেটের মাধ্যমে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও দলটির অঙ্গসংগঠনগুলোর সব ধরনের কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। যতদিন না আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল দলটির নেতাদের বিচার সম্পন্ন করছে, ততদিন এই নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে বলেও জানানো হয়।
রাষ্ট্রদূত বলেন, অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ‘মুক্ত ও সুষ্ঠু’ নির্বাচন আয়োজনের পরিবেশ তৈরিতে কাজ করছে। এটি তাদের অঙ্গীকার। ফ্রান্স এই প্রচেষ্টাকে সমর্থন করছে। সম্ভব হলে, আমরা ইউরোপীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক দল পাঠিয়েও সহায়তা করতে চাই।
আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি বা এপ্রিলের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে—এমন ইঙ্গিত দিয়ে প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস এরই মধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রস্তুতি শেষ করার নির্দেশ দিয়েছেন।
ঢাকায় ফরাসি দূতাবাসে রবিবার রাতে অনুষ্ঠিত ফ্রান্সের জাতীয় দিবসের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তৃতায় রাষ্ট্রদূত মাসদুপুই বলেন, গণতন্ত্র মানে স্বাধীনতা, সমতা এবং ভ্রাতৃত্ববোধ ও অন্তর্ভুক্তি।
তিনি বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টার বিচক্ষণ ও অসাধারণ নেতৃত্বে বাংলাদেশ এখন সত্যিকারের গণতান্ত্রিক নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। তাতে অনেক বাধা আসবে। তবে সাহস ও দৃঢ় প্রত্যয় থাকলে বাধাগুলো কাটিয়ে ওঠা যাবে।’
এয়ারবাস বিষয়ে আলোচনা চলছে
এয়ারবাস ক্রয়সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘আলোচনা এখনো চলছে। এটি বন্ধ হয়নি।’
যুক্তরাষ্ট্র থেকে বোয়িং বিমান কেনার বিষয়টি বিবেচনায় নিচ্ছে বাংলাদেশ, যাতে বাণিজ্য ঘাটতি কমানো যায় এবং প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আরোপিত ৩৫ শতাংশ শুল্ক (আগামী ১ আগস্ট থেকে কার্যকর) এড়ানো সম্ভব হয়।
রাষ্ট্রদূতের মন্তব্য, ‘আমরা চাই সবাই সমান সুযোগ পাক। আমাদের মনে হয়, বিমানের বহরে এয়ারবাস ও বোয়িং—উভয় ধরনের উড়োজাহাজ থাকলে যাত্রীদের জন্য তা সবচেয়ে বৈচিত্র্যপূর্ণ সেবা নিশ্চিত করবে।’
গত জুনে লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এয়ারবাসের নির্বাহী সহ-সভাপতি ওয়াউটার ভ্যান ওয়ার্স। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশকে আমরা একটি অগ্রাধিকারমূলক দেশ হিসেবে দেখছি।’
ভ্যান ওয়ার্স আরও জানান, বছরে ৮০০টি বিমান সরবরাহ করা এয়ারবাস শুধু যাত্রীবাহী নয়, হেলিকপ্টার ও যুদ্ধবিমান তৈরিতেও দক্ষ। বাংলাদেশ যদি বিমানের বহরে এয়ারবাস যুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে রপ্তানি ঋণ সংস্থা (ইসিএ) থেকে ৮৫ শতাংশ অর্থায়ন পাওয়া যেতে পারে।
সম্পর্ক ইতিবাচক রয়েছে
রাষ্ট্রদূত মাসদুপুই বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের চলমান সংস্কারের প্রতি ফ্রান্সের সমর্থন রয়েছে। সরকারের সঙ্গে আরও গভীরভাবে যুক্ত হতে আমরা আগ্রহী।
তিনি বলেন, ‘অনেক প্রকল্প পর্যালোচনার পর্যায়ে রয়েছে। তাই সেগুলোর জন্য ধৈর্য ধরতে হবে। তবে আমরা চাই, সেগুলো যেন দ্রুত বাস্তবায়ন করা যায়।’
‘আমাদের দ্বিপাক্ষীয় সম্পর্ক খুব ভালো, সবসময়ই ইতিবাচক। আমরা নানা খাতে বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করছি এবং সেটা আরও বাড়াতে চাই।’
তিনি জানান, জলবায়ু পরিবর্তন পর্যবেক্ষণে স্যাটেলাইট ডেটা ব্যবহারের মাধ্যমে বাংলাদেশের সার্বভৌম সক্ষমতা বাড়াতে মহাকাশ প্রযুক্তি নিয়ে নতুন সহযোগিতা শুরু করছে ফ্রান্স। উন্নয়ন ও কৌশলগত স্বায়ত্তশাসনের ক্ষেত্রেও সহযোগিতার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন তিনি।
মাকাল ফল—বাংলায় অতি প্রচলিত একটি কথা, যার অর্থ উপরে সুন্দর হলেও ভিতরে অন্তঃসারশূন্য ছাঁই। ঢাকার আবহাওয়ারকে আজ এই শব্দের সঙ্গে তুলনা করলে মন্দ হয় না! কারণ আজ সকালে ঢাকার পরিবেশ ছিল বেশ মনোরম, মেঘাচ্ছন্ন আকাশ, সঙ্গে ঠান্ডা মৃদু বাতাস।
ধারণা করা হচ্ছিল, এই সুন্দর আবহাওয়ায় ঢাকার বাতাসের মানে উন্নতি দেখা যাবে। তবে দেখা গিয়েছে তার পুরোপুরি উল্টোচিত্র। ঢাকার বাতাসের মানে বরং গতকালের তুলনায় অনেকটা অবনতি হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) সকাল ৯টার দিকে ঢাকার বাতাসের একিউআই স্কোর হলো ৮৯। এই স্কোর নিয়ে বিশ্বের দূষিত বাতাসের শহরের তালিকার চতুর্দশ স্থানে উঠে এসেছে ঢাকা।
গতকাল (সোমবার) একই সময়ে একিউআই স্কোর মাত্র ৫৪ নিয়ে তালিকার ৬৪তম স্থানে নেমে গিয়েছিল ঢাকা।
যদিও বায়ুমান সূচক অনুযায়ী গতকালের মতো আজও ঢাকার বাতাসের মান ‘মাঝারি পর্যায়ে রয়েছে, তবে স্কোর অনুযায়ী গতকাল বায়ুমান ‘ভালো’র কাছাকাছি থাকলেও আজ কিন্তু তা নেই। বরং আজ ‘সংবেদনশীলদের জন্য অস্বাস্থ্যকর’ হয়ে ওঠার কাছাকাছি চলে গেছে ঢাকার বাতাস। তাই এই মনোরম আবহাওয়াতেও প্রাণখুলে নিশ্বাস নিতে ঢাকাবাসীর স্বাস্থ্যঝুঁকি রয়েছে।
কারণ একিউআই স্কোর শূন্য থেকে ৫০-এর মধ্যে থাকলে তা ‘ভালো’ হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়। অন্যদিকে, এই স্কোর ৫০ থেকে ১০০ মধ্যে থাকলে তা ‘মাঝারি’ বলে গণ্য করা হয়। এরপর একিউআই স্কোর ১০১ থেকে ১৫০ হলে ‘সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর’ বলে গণ্য করা হয়। এই পর্যায়ে সংবেদনশীল ব্যক্তিদের দীর্ঘ সময় বাইরে পরিশ্রম না করার পরামর্শ দেওয়া হয়।
এদিকে, আজও দূষিত বাতাসের শহরের তালিকায় শীর্ষে অবস্থান করছে কঙ্গোর কিনশাসা। শহরটির একিউআই স্কোর ১৯৪। তাছাড়া ১৭১ ও ১৭০ স্কোর নিয়ে তালিকার দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে রয়েছে চিলির সান্তিয়াগো ও ভিয়েতনামের হ্যানয়।
কণা দূষণের এই সূচক ১৫১ থেকে ২০০ হলে ‘অস্বাস্থ্যকর’, ২০১ থেকে ৩০০ হলে ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ এবং ৩০১-এর বেশি হলে তা ‘বিপজ্জনক’ হিসেবে বিবেচিত হয়। জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি সৃষ্টি করে ৩০০-এর বেশি যেকোনো সূচক।
বাংলাদেশে একিউআই সূচক নির্ধারিত হয় পাঁচ ধরনের দূষণের ভিত্তিতে— বস্তুকণা (পিএম১০ ও পিএম২.৫), নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইড (এনও₂), কার্বন মনো-অক্সাইড (সিও), সালফার ডাই-অক্সাইড (এসও₂) ও ওজোন।
ঢাকা দীর্ঘদিন ধরেই বায়ুদূষণজনিত সমস্যায় ভুগছে। শীতকালে এখানকার বায়ুমান সাধারণত সবচেয়ে খারাপ থাকে, আর বর্ষাকালে তুলনামূলকভাবে উন্নত হয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) জানিয়েছে, বায়ুদূষণের কারণে প্রতিবছর বিশ্বে আনুমানিক ৭০ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়। এসব মৃত্যুর প্রধান কারণ হলো স্ট্রোক, হৃদরোগ, দীর্ঘস্থায়ী শ্বাসকষ্ট (সিওপিডি), ফুসফুসের ক্যান্সার এবং শ্বাসযন্ত্রের তীব্র সংক্রমণ।
পেশা, অর্থনৈতিক অবস্থা, ব্যক্তি স্বার্থসহ নানা কারণে বিয়ে ও সন্তান গ্রহণের ক্ষেত্রে মানুষের আগ্রহ কমছে। এর অন্যতম কারণ, অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা ও প্রজনন বিষয়ে তরুণদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের স্বাধীনতার অভাব।
সম্প্রতি ১৪টি দেশের ১৪ হাজার তরুণের মাঝে পরিচালিত এক জরিপে এমন চিত্র উঠে এসেছে। জরিপ করেছে জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল ইউএনএফপিএ এবং ইউ গভ সার্ভে।
বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস-২০২৫ উদযাপন উপলক্ষে গতকাল সোমবার পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর কর্তৃক ঢাকার ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আয়োজিত এক আলোচনাসভায় এ তথ্য জানানো হয়।
বিশ্বে জনসংখ্যা এভাবে হ্রাস পেতে থাকলে এক সময় তা বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে।
সম্প্রতি প্রকাশিত স্টেট অব ওয়ার্ল্ড পপুলেশন রিপোর্টে বলা হয়েছে, বিশ্বব্যপী জনসংখ্যা ৮ বিলিয়নের নিচে নেমে আসাও সমস্যা নয়। প্রকৃত সমস্যা হলো প্রজনন হারে প্রভাব পড়া।
এর ফলে বিশ্বের এক বৃহৎ জনগোষ্ঠী সন্তান ধারণের সুযোগ অথবা আকাঙ্ক্ষা হতে বঞ্চিত হবে।
জরিপে দেখা গেছে, একাধিক সন্তান গ্রহণের ইচ্ছা বা প্রত্যাশা থাকলেও তা বাস্তবে রূপ পায় না। অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতার কারণে; কর্মসংস্থান ও অর্থনৈতিক সক্ষমতার অনিশ্চিয়তা, জীবনযাত্রায় উচ্চ ব্যয়ের কারণে প্রায় অর্ধেকেরও বেশি তরুণ পছন্দের সংখ্যা অনুযায়ী সন্তান গ্রহণ করতে সক্ষম হয় না।
প্রতি চারজনে একজন পছন্দ মতো সময়ে সন্তান নিতে চেয়ে ব্যর্থ হয়েছেন।
এদের ৪০ শতাংশ পরবর্তীতে সন্তান ধারণের প্রত্যাশাকে বাদ দিতে বাধ্য হয়েছে। প্রায় ১৩ শতাংশ তরুণের অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণ এবং একটি সময় যখন তার সন্তান চেয়েও ব্যর্থ হয়েছেন। ১৪ শতাংশ তরুণ উপযুক্ত সঙ্গীর অভাবে সন্তান গ্রহণে সমর্থ হয় না। ১৮ শতাংশ জনগণ পরিবার পরিকল্পনা অথবা প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তির কোনো সুযোগ নেই।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম বলেন, ‘ক্ষমতায়নের পূর্বশর্ত হলো অর্থনৈতিক স্বাবলম্বিতা অর্জন।
আর্থিকভাবে সক্ষম হলে ক্ষমতায়নের পথ সহজ হয়। একটি সম্ভাবনাময়, ন্যায্য বিশ্ব গড়তে হলে আমাদের সমতা অর্জন করতে হবে। এই লক্ষ্য বাস্তবায়নে যত বাধা আছে, তা আমাদের ঝেড়ে ফেলতে হবে।’
স্বাস্থ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা পছন্দের পরিবার গড়ার জন্য তারুণ্যের ক্ষমতায়নের কথা বলছি। কিন্তু এর জন্য প্রয়োজন উপযুক্ত শিক্ষা, সহায়ক পরিবেশ এবং সচেতনতা। তরুণদের উপযুক্তভাবে প্রস্তুত করতে আমাদের সবাইকে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে।’
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান বলেন, ‘রাষ্ট্র বিনির্মাণে তরুণ সমাজের ভূমিকা কী হতে পারে, তা জাতি দেখেছে। তরুণরাই জাতির ভবিষ্যৎ। যেভাবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, মেশিন লার্নিং এবং রোবটিকসের উন্নতি হচ্ছে, তার প্রভাব পড়বে জীবনের নানা ক্ষেত্রে কর্মসংস্থানেও। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে।’
স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাজমুল হোসেন বলেন, বিশ্বে আজকে জনসংখ্যা হলো ৮২৩ কোটি ৪৫ লাখ ২৪ হাজার ৭৫০ জন। সর্বশেষ পাঁচ মিনিটে বিশ্বে ১ হাজার ২৫০ মানুষের জন্ম হয়েছে এবং এক হাজারের মতো মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
ধারণা করা হয়, এ সংখ্যা এক হাজার কোটিতে পৌঁছাবে ২০৫৬ সালে। ১ হাজার ৯০ কোটিতে পৌঁছাবে ২০৯৮ সালে। এর পর থেকে এ সংখ্যা কমবে।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে প্রতি বর্গমাইলে ৩ হাজার ২৭২ জন মানুষ বসবাস করে এবং প্রতি ৫০০ বর্গমাইলে একটি করে মেডিকেল কলেজ আছে। এটিও বিশ্বে রেকর্ড। এত ঘনবসতিপূর্ণ মানুষ ও এত মেডিকেল কলেজ পৃথিবীর কোথাও নেই।’
২০২৬ সালের হজ কার্যক্রমে অংশ নিতে অনুমোদিত এজেন্সিগুলোর কাছে আবেদন আহ্বান করেছে ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়।
গতকাল সোমবার এজেন্সিগুলোকে আবেদন দাখিলের অনুরোধ জানিয়ে ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে চিঠি পাঠানো হয়েছে।
২০২৬ সালের হজ কার্যক্রমের জন্য সৌদি সরকার কর্তৃক ইতোমধ্যে রোডম্যাপ বা টাইম লাইন প্রকাশ করা হয়েছে- উল্লেখ করে চিঠিতে ধর্ম মন্ত্রণালয় কর্তৃক অনুমোদিত যে সব হজ এজেন্সি ২০২৬ সালের হজ কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে ইচ্ছুক সে সব হজ এজেন্সির স্বত্বাধিকারী বা ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের কাছ থেকে মন্ত্রণালয় প্রস্তুতকৃত নির্ধারিত ফরমে আবেদন করতে বলা হয়েছে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) নবগঠিত আয়কর গোয়েন্দা ও তদন্ত ইউনিট (আইটিআইআইইউ) তাদের পুর্নাঙ্গ কার্যক্রম শুরুর প্রথম সাত মাসে প্রায় ১ হাজার ৮৭৪ কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকির বিষয় উদঘাটনের মাধ্যমে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে।
২০২৪ সালের ডিসেম্বর থেকে গত সাত মাসে নবগঠিত এই দপ্তরটি ১৮৩ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রাথমিক তদন্ত পরিচালনা করেছে এবং এর ফলে প্রায় ১ হাজার ৮৭৪ কোটি টাকার কর ফাঁকি শনাক্ত করেছে। এনবিআর-এর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আজ এ তথ্য জানানো হয়।
উদঘাটিত রাজস্ব ফাঁকি হতে ৬৩ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ইতোমধ্যে ২৩১টি এ-চালানের মাধ্যমে ১১৭ কোটি ৪৩ লক্ষ টাকা উদ্ধার করে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা করা হয়েছে।
২০২৪ সালের ডিসেম্বরে প্রতিষ্ঠার পর থেকে আইটিআইআইইউ তার গোয়েন্দা কার্যক্রমের মাধ্যমে রাজস্ব পুনরুদ্ধার, কর ফাঁকি শনাক্তকরণ এবং আইনানুগ ও ন্যায্য রাজস্ব সংগ্রহ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে অক্লান্ত পরিশ্রম করে আসছে।
এছাড়াও, ইতোমধ্যে সুনির্দিষ্ট কর ফাঁকির তথ্য পাওয়ায় শতাধিক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবসমূহ সাময়িক জব্দ করা হয়েছে। আয়কর গোয়েন্দা ও তদন্ত ইউনিট করদাতাদের স্বেচ্ছায় সঠিক কর প্রদানে উৎসাহিত করছে এবং একইভাবে কর ফাঁকিবাজ ও অর্থ পাচারকারীদের প্রতি স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে।
যেকোনো ধরনের কর ফাঁকি ও বেনামি সম্পদ অর্জনের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট আইন অনুযায়ী যথাযথ ব্যবস্থা নিতে আয়কর গোয়েন্দা ও তদন্ত ইউনিট বদ্ধ পরিকর।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশের রাজস্ব খাতে আয়কর গোয়েন্দা ও তদন্ত ইউনিটের যাত্রা নৈতিক, প্রযুক্তিগত ও আইনগত দিক থেকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। ইতোমধ্যে অর্জিত সাফল্যই প্রমাণ করে- এই ইউনিটের কার্যক্রম কেবল রাজস্ব পুনরুদ্ধার নয়, করদাতাদের কমপ্লায়েন্স বৃদ্ধি ও কর সংস্কৃতি বিকাশে কার্যকর ভূমিকা রাখবে ।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে, কর আদায়ে ন্যায্যতা ও জবাবদিহিতার মাধ্যমে জাতির সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নসহ অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর করা সম্ভব। আয়কর গোয়েন্দা ও তদন্ত ইউনিটের ক্রমবর্ধমান সক্ষমতা, প্রযুক্তি নির্ভরতা এবং দক্ষ মানবসম্পদ ভবিষ্যতে বাংলাদেশের শক্তিশালী রাজস্ব কাঠামো বিনির্মাণে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করবে বলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে।
আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, বর্তমান সরকারের আমলেই জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার সম্পন্ন হবে।
তিনি বলেন, ‘জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানে নারায়ণগঞ্জের ২১ জন শহীদ হয়েছেন, এছাড়াও সাড়ে তিনশ মানুষ আহত হয়েছেন। আপনাদের দৃঢ়কণ্ঠে জানাতে চাই বিচারের কার্যক্রম পূর্ণ গতিতে এগিয়ে চলছে। কোনো রকম গাফিলতি থাকবে না। আমরা বিশ্বাস করি বর্তমান সরকারের শাসনামলেই জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার হবে।’
আজ সোমবার বিকেলে সদর উপজেলার হাজীগঞ্জ এলাকায় দেশের প্রথম ‘জুলাই শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ’ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আইন উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘জুলাইয়ে আহত ও নিহত অনেকগুলো মামলার তদন্তের অগ্রগতি হয়েছে। ৫ আগস্টের আগেই এসব মামলার চার্জশিট দিতে বলা হয়েছে। চার্জশিট দিলেই বিচারের প্রক্রিয়া শুরু হবে। প্রয়োজনে দ্রুত বিচার আইনে শহীদদের হত্যার বিচার করা হবে।’
দেশের গণতন্ত্র টিকিয়ে রাখার উদ্দেশ্যে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে আইন উপদেষ্টা বলেন, জুলাইয়ে মানুষের আত্মত্যাগ, শোক, সাহস নিয়ে দেশবাসী একটা পরিবারে পরিণত হয়েছিলাম। ফ্যাসিস্টদের বাদ দিয়ে দেশের সব মানুষ একটা পরিবার হয়ে আন্দোলন করেই বিজয় পেয়েছিলাম। সেই ঐক্যকে ধরে রাখতে হবে।
তিনি বলেন, বৈষম্যহীন নতুন একটা বাংলাদেশ গড়তে চাই। যেখানে প্রকৃত গণতন্ত্র থাকবে। যেখানে কোন শাসক এসে অপশাসকে পরিণত হবে না। স্থানীয়ভাবে আইনশৃঙ্খলা লঙ্ঘনকারীরা বিশৃঙ্খলা করছে, ভয়ংকর হত্যাকাণ্ড হচ্ছে, চাঁদাবাজি হচ্ছে। জুলাইয়ে যেমন ঐক্যবদ্ধ থেকে ফ্যাসিস্ট সরকারকে পরাজিত করেছিলেন, এইভাবে ঐক্যবদ্ধ থাকলেই চাঁদাবাজদের প্রতিরোধ করতে পারবেন। সরকারের পাশাপাশি আপনারাও চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবেন। প্রশাসন আপনাদের সহযোগিতা করবে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. চৌধুরী রফিকুল আবরার, পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোখলেছ উর রহমান ও গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব নজরুল ইসলাম।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, জুলাই শহীদদের প্রকৃত সম্মান হবে বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়া।
তিনি জানান, ন্যায়বিচার, যথাযথ স্বীকৃতি ও দায়িত্ব পালনের মাধ্যমেই শহীদদের প্রতি প্রকৃত শ্রদ্ধা জানাতে হবে।
শহীদ পরিবারগুলোকে সম্মান জানানো, আহতদের তালিকা চূড়ান্ত করে ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করা এবং রাষ্ট্রীয় বাহিনীর হাতে নাগরিক হত্যার পুনরাবৃত্তি যেন আর না ঘটে-এই নিশ্চয়তা দিতে হবে।
সোমবার (১৪ জুলাই) নারায়ণগঞ্জে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়নে নির্মিত দেশের প্রথম ‘জুলাই শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ’ উদ্বোধনকালে তাঁর বক্তৃতায় পরিবেশ উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।
তিনি আরো বলেন, স্বৈরাচারবিরোধী ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের আত্মত্যাগই আজকের স্বাধীন ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের ভিত্তি। জুলাই গণঅভ্যুত্থান আমাদের শেখায়—গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় নির্ভীকভাবে রাস্তায় দাঁড়াতে হয়। এই স্মৃতিস্তম্ভ কেবল অতীতের স্মরণ নয়, এটি ভবিষ্যতের জন্য দায়বদ্ধতা তৈরি করে। তিনি বলেন, সকলে মিলে বৈষম্যহীন বাংলাদেশ বিনির্মাণের মাধ্যমে শহীদের স্মরণ করতে হবে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল, শিল্প এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. চৌধুরী রফিকুল আবরার, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মো. মোখলেস উর রহমান, গৃহায়ন ও গণপূর্ত সচিব মো. নজরুল ইসলাম, ঢাকা বিভাগের কমিশনার শরফ উদ্দিন আহমদ চৌধুরী ও নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞাসহ বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা ও বিশিষ্টজনেরা।
উপদেষ্টাবৃন্দ স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে খোঁজখবর নেন ও সহমর্মিতা প্রকাশ করেন। পরে উপদেষ্টা শহীদদের স্মৃতিতে বৃক্ষরোপণ করেন।
জুলাই স্মৃতি জাদুঘরের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়। আগামী ৫ আগস্ট জাদুঘরটি উদ্বোধন করা হবে। সে অনুযায়ী প্রস্তুতি চলছে।
সোমবার (১৪ জুলাই) ঢাকায় গণভবনে জুলাই পুনর্জাগরণ অনুষ্ঠানমালার বিষয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, ‘আগামী ৫ আগস্ট জুলাই স্মৃতি জাদুঘর উদ্বোধন করা হবে। তবে জাদুঘরটি দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করা হবে আরো পরে’।
সংবাদ সম্মেলনে মহিলা ও শিশুবিষয়ক উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম, উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
সংস্কৃতি উপদেষ্টা বলেন, একজন দর্শনার্থী জাদুঘরে প্রবেশ করার পর তিনি যেন উপলব্ধি করতে পারেন- কেন হলো জুলাই বিপ্লব , আওয়ামী লীগের দুঃশাসন এবং অভ্যুত্থানের স্মৃতি। তিনি আরও বলেন, শেখ হাসিনা ও তার সহযোগীদের অপরাধের বিচার আদালত করবে কিন্তু আমাদের উদ্দেশ্য হলো একজন দর্শনার্থী জাদুঘরে এসে যেন শেখ হাসিনার অপরাধের বিচার নিজের বিবেক দিয়ে করতে পারেন।
জুলাই স্মৃতি জাদুঘর পরিচালনার জন্য একটি আইনি কাঠামো দাঁড় করানো হবে বলেও জানান তিনি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জুলাই স্মৃতি জাদুঘরে জুলাই আন্দোলনের স্থিরচিত্র, বিভিন্ন স্মারক, নানা উপকরণ, শহীদদের জামাকাপড়, চিঠি, গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র, ওই সময়ের পত্রিকার কাটিং, অডিও-ভিডিওসহ বিভিন্ন স্মৃতি স্মারক থাকবে।
এছাড়া সেখানে বিশেষ স্থান পাচ্ছে স্বৈরাচার ও গণহত্যাকারী শেখ হাসিনার পালিয়ে যাওয়ার দৃশ্যও। এ জাদুঘর বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরেরই একটি অংশ।
প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, একটি বৈষম্যমুক্ত নতুন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় যুবদের জনসম্পদে রূপান্তর এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরিতে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার অঙ্গীকারবদ্ধ।
‘বিশ্ব যুব দক্ষতা দিবস’ উপলক্ষে আজ সোমবার এক বাণীতে তিনি বলেন, ‘জাতিসংঘের আহ্বানে প্রতি বছরের ন্যায় এবারও ১৫ জুলাই ‘বিশ্ব যুব দক্ষতা দিবস’ উদ্যাপিত হচ্ছে জেনে আমি আনন্দিত।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমাদের জাতীয় উন্নয়ন ত্বরান্বিত করা, শিল্পক্ষেত্রে বহুমুখী শ্রমের চাহিদা পূরণ এবং আন্তর্জাতিক বাজারে অধিকসংখ্যক শ্রমিকের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে দক্ষ জনশক্তি অপরিহার্য। পরিবর্তিত বিশ্ব প্রেক্ষাপটে আমাদের যুবসমাজকে দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তর করতে আধুনিক প্রযুক্তির সর্বোত্তম ব্যবহারের বিকল্প নেই। এ প্রেক্ষিতে ইউনেস্কো-ইউনেভোক নির্ধারিত দিবসটির এ বছরের প্রতিপাদ্য- ‘কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও ডিজিটাল দক্ষতার মাধ্যমে যুবদের ক্ষমতায়ন’ যথার্থ হয়েছে বলে আমি মনে করি।’
তিনি বলেন, দেশবিদেশের শ্রমবাজারের চাহিদার ভিত্তিতে যুবদের প্রশিক্ষণ প্রদান ও তাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরিতে সরকার ইতোমধ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। স্থানীয় বাজারের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি আগামী দিনে দক্ষ জনশক্তি রপ্তানিতে বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থান আরো শক্তিশালী হবে বলে আমি মনে করি। জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (এনএসডিএ) সরকারি-বেসরকারি অংশীজনদের সঙ্গে নিয়ে একটি দক্ষতা উন্নয়ন ইকোসিস্টেম গড়ে তুলতে কাজ করে যাচ্ছে। দক্ষ যুবসম্পদ তৈরিতে প্রতিষ্ঠানটির সকল কার্যক্রম আরো জোরদার করার জন্য আমি আহ্বান জানাই।
প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, একটি আধুনিক উন্নত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় যুবসমাজের দক্ষতা উন্নয়নের মাধ্যমে তাদেরকে পরিবর্তনশীল কর্মক্ষেত্রের উপযোগী ও উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। আমি আশা করি, এ বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধিতে ‘বিশ্ব যুব দক্ষতা দিবস, ২০২৫’ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
প্রধান উপদেষ্টা ‘বিশ্ব যুব দক্ষতা দিবস’ উপলক্ষে গৃহীত সকল কর্মসূচির সার্বিক সাফল্য কামনা করেন।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেছেন, চব্বিশের জুলাই মাসে ফ্যাসিবাদবিরোধী যে সংগ্রাম বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের মাধ্যমে সূচনা হয়েছিল, ১৪ জুলাইয়ের ঘটনাপ্রবাহ সে আন্দোলনকে নতুন মোড় দেয়।
তিনি বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অংশগ্রহণকারীদের প্রতি অবমাননাকর বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, বিশেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী শিক্ষার্থীরা মধ্যরাতেই পথে নেমে এসেছিলেন। নারীদের বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর সেই অপমানের বিরুদ্ধে আন্দোলনকে বেগবান করেছিল এবং সকলের প্রতিরোধের মুখে ফ্যাসিবাদী শাসন ক্রমাগত পশ্চাদপসরণে বাধ্য হয়েছিল।
সোমবার (১৪ জুলাই) ঢাকায় ফরেন সার্ভিস একাডেমির দোয়েল হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর দ্বিতীয় পর্যায়ের ১৩তম দিনের আলোচনার শুরুতে অধ্যাপক আলী রীয়াজ এসব কথা বলেন।
এ সময় কমিশনের সদস্য হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ড. ইফতেখারুজ্জামান, ড. বদিউল আলম মজুমদার, সফর রাজ হোসেন, ড. মো. আইয়ুব মিয়া এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নারীদের সক্রিয় অংশগ্রহণকে মর্যাদা দিয়ে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় থেকে ১৪ জুলাইকে ‘জুলাই নারী দিবস’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে উল্লেখ করে কমিশনের সহ-সভাপতি বলেন, রাষ্ট্র বিনির্মাণে নারীদের প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে হবে। এই প্রাতিষ্ঠানিক রূপের মাধ্যমেই রাজনীতিতে, রাষ্ট্র গঠনে এবং আইন প্রণয়নে নারীদের মর্যাদার সঙ্গে অংশগ্রহণের পথ তৈরি হবে। তিনি এ বিষয়ে এক জায়গায় পৌঁছে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আজকের আলোচনায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), গণঅধিকার পরিষদ, গণসংহতি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টিসহ ৩০টি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিগণ অংশগ্রহণ করেন। আজ নারী প্রতিনিধিত্ব এবং দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভা—এই দুইটি বিষয় নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে।
ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালের (স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ) সামনে নৃশংস হত্যার শিকার ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগকে হিন্দু দাবি করে ভারতের একাধিক গণমাধ্যমে মিথ্যা প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে বলে জানিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং।
রোববার রাতে প্রেস উইং ফ্যাক্ট চেক তাদের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেইজে প্রকাশিত বিবৃতিতে এসব তথ্য জানায়। সেখানে বলা হয়, ‘এনডিটিভি, ইন্ডিয়া টুডে এবং ডব্লিউআইওএনসহ ভারতের একাধিক গণমাধ্যম নিহত মো. সোহাগ ওরফে লাল চাঁদকে হিন্দু হিসেবে হিসেবে উপস্থাপন করেছে, যা সম্পূর্ণ মিথ্যা। বাস্তবে তিনি একজন মুসলিম ব্যবসায়ী।’
বিবৃতিতে আরো বলা হয়, লাল চাঁদের পিতার নাম মো. আইয়ুব আলী এবং মায়ের নাম আলেয়া বেগম। তার স্ত্রীর নাম স্ত্রী লাকি বেগম। এই দম্পতির দুই সন্তান। ফাতেমা ও সোহান।
গত ৯ জুলাই স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৩ নম্বর গেটের সামনে দুর্বৃত্তরা লাল চাঁদকে পিটিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করে। মৃত্যুর পরও তার মরদেহে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করা হয়। মর্মস্পর্শী এই ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে দেশজুড়ে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
হত্যার ঘটনায় পুলিশ এখন পর্যন্ত ৭ জনকে হেফাজতে নিয়েছে। নিহত সোহাগকে গত শুক্রবার তার গ্রামের বাড়ি বরগুনা সদর উপজেলার ঢলুয়া ইউনিয়নের বান্দারগাছিয়া গ্রামে মায়ের কবরের পাশে দাফন করা হয়।
প্রেস উইং আরো জানায়, ‘ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো শিরোনামে সোহাগকে হিন্দু বলে উল্লেখ করলেও প্রতিবেদনে তার ধর্ম বা ব্যক্তিগত পরিচয় সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দেয়নি।’
বিবৃতিতে প্রেস উইং অভিযোগ করেছে, ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো বাংলাদেশে কথিত সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে ধারাবাহিকভাবে মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর প্রতিবেদন প্রকাশ করছে।
গাজায় রোববার ইসরাইল বিমান হামলা চালিয়েছে। হামালায় শিশুসহ ৪৩ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতির আলোচনা অচলাবস্থার মধ্যে ইসরাইল এ হামলা চালায়। গাজার নাগরিক প্রতিরক্ষা সংস্থা এ তথ্য জানিয়েছে।
গাজা সিটি থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর জানায়।
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ২১ মাস ধরে চলা ভয়াবহ যুদ্ধবিরতি বন্ধে একটি অস্থায়ী যুদ্ধবিরতির বিষয়ে একমত হওয়ার চেষ্টায় ইসরাইল এবং ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীর প্রতিনিধিরা এখন এক সপ্তাহ ধরে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন।
গাজার নাগরিক প্রতিরক্ষা সংস্থার মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল বলেছেন, গাজায় একটি পানি বিতরণ কেন্দ্রে ইসরাইলের ড্রোন হামলায় আট শিশুসহ ১০ জন নিহত হয়েছে।
ইসরাইলি সেনাবাহিনী গাজার মধ্যাঞ্চলে অবস্থিত নুসাইরাত শরণার্থী শিবিরের এই হামলার জন্য ‘কারিগরি ত্রুটি’কে দায়ী করেছে। সেনাবাহিনী আরো জানিয়েছে, একজন যোদ্বাকে লক্ষ্য করে আক্রমণ চালানোর সময় কারিগরি ত্রুটির কারণে লক্ষ্যবস্তু থেকে কয়েক ডজন মিটার দূরে গোলাটি পড়ে।
রোববার মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেছেন, তিনি একটি গাজা যুদ্ধবিরতির চুক্তির বিষয়ে আশাবাদী। ওয়াশিংটন ইসরাইলের শীর্ষ মিত্র এবং ট্রাম্প যুদ্ধবিরতির জন্য চাপ দিচ্ছেন।
বাসাল বলেন, কিন্তু যুদ্ধ বন্ধের কোনও তাৎক্ষণিক লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। রোববার ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড জুড়ে হামলায় গাজা সিটির একটি বাজারে ১১ জনসহ কমপক্ষে ৪৩ জন নিহত হয়েছেন।
নুসাইরাতের বাসিন্দা খালেদ রায়ান এএফপিকে বলেন, দুটি বড় বিস্ফোরণের শব্দে তিনি ঘুম থেকে উঠেন।
তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রতিবেশী এবং তার সন্তানরা ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়েছিল’।
আরেক বাসিন্দা, মাহমুদ আল-শামি, আলোচকদের যুদ্ধবিরতি চুক্তি নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘আমাদের সাথে যা ঘটেছে তা মানবতার ইতিহাসে কখনও ঘটেনি’। ‘যথেষ্ট হয়েছে।’