ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা জানিয়েছেন, বাংলাদেশ ও ভারতের মানুষের স্বার্থে অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে কাজ চালিয়ে যেতে চায় দিল্লি। দুই দেশের মানুষের পারস্পরিক যোগাযোগ ও স্বার্থকে সবসময় গুরুত্ব দেয় দিল্লি।
আজ বুধবার (১৪ আগস্ট) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।
পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা এম তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা।
ভারতীয় হাইকমিশনার সাংবাদিকদের বলেন, আজ শুধু সৌজন্য সাক্ষাৎ ছিল। কোনো এজেন্ডা ছিল না। দুই দেশের মানুষের স্বার্থে অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে কাজ চালিয়ে যেতে চায় ভারত।
দুই দেশের পারস্পরিক সম্পর্ক অটুট থাকবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।
তবে ভারতে অবস্থানরত বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইস্যুতে করা প্রশ্নের জবাব দেননি প্রণয় ভার্মা।
বর্তমানে প্রযুক্তি-নির্ভর সেবায় প্রতিষ্ঠানগুলো শুধু হার্ডওয়্যার ক্রয় করেই দায়িত্ব শেষ করে না, বরং সেই ডিভাইসের নিরবচ্ছিন্ন পারফরম্যান্স নিশ্চিত করতেই বেছে নেয় অ্যানুয়াল মেইনটেন্যান্স কনট্রাক্ট (এএমসি) সেবা। এ ধরনের কনট্রাক্টের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের সার্ভার, স্টোরেজ, নেটওয়ার্কিং ডিভাইস ও অন্যান্য আইটি ডিভাইসসমূহ নিরাপদ এবং কার্যক্ষম থাকে। এই এএমসি সার্ভিসকে আরো সহজলভ্য করছে ‘সার্ভিসিং২৪ ক্লায়েন্ট’ অ্যাপ। ওয়েব ও মোবাইলভিত্তিক এই অ্যাপ সল্যুশন্সের মাধ্যমে সার্বক্ষণিক সেবা পাচ্ছেন গ্রাহকরা।
সাধারণত অরিজিনাল ইকুইপমেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার কোম্পানিগুলোর এএমসি সেবা বেশ ব্যয়বহুল ও নির্দিষ্ট শর্তাধীন হয়। সেখানে এসএলএ, রেসপন্স টাইম, অথবা হার্ডওয়্যার রিপ্লেসমেন্ট ইত্যাদি বিষয়গুলো অনেক সময় সীমাবদ্ধতার মধ্যে পড়ে। তাছাড়া পুরোনো মডেলের ইকুইপমেন্টগুলোর জন্য স্পেয়ার পার্টস পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে, যা সিস্টেম ডাউনটাইমের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এছাড়া- একই ডেটা সেন্টারে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের হার্ডওয়্যার থাকলে ওইএম সাধারণত কেবল তাদের নিজস্ব ব্র্যান্ড নিয়েই কাজ করে। এতে কো-অর্ডিনেশন প্রবলেম হয়।
আরও যে সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় তা হলো, অতিরিক্ত খরচ, দীর্ঘ ডাউনটাইম, সীমিত কভারেজ (শুধুমাত্র নির্দিষ্ট ব্র্যান্ড বা মডেল), স্পেয়ার পার্টস দীর্ঘ ডেলিভারি টাইম, অন-সাইট সাপোর্টে দেরি, পুরোনো মডেলের ইওএল/ইওএসএল পণ্যে সাপোর্ট না থাকা ইত্যাদি।
তাই থার্ড পার্টির সেবার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের সার্ভার, স্টোরেজ, নেটওয়ার্কিং ডিভাইস ও অন্যান্য আইটি ডিভাইসসমূহ নিরাপদ এবং কার্যক্ষম রাখতে ঝুঁকছে কোম্পানিগুলো। সার্ভিসিং২৪ এর থার্ড-পার্টি এএমসি সেবা হচ্ছে, একটি কাস্টমাইজড ও ব্যয় সাশ্রয়ী সেবা, যা শুধু হার্ডওয়্যার মেইনটেন্যান্স নয়, বরং গ্রাহকের হাতে পুরো সিস্টেমের স্মার্ট কন্ট্রোল তুলে দিচ্ছে।
এর মাধ্যমে তারা পাচ্ছেন- রিয়েল টাইম সার্ভিস ট্র্যাকিং, সার্ভিস রিপোর্ট ও এএমসি স্ট্যাটাস মনিটরিং, স্পেয়ার পার্টস রিকোয়েস্ট ও টিকিট ম্যানেজমেন্ট, দ্রুত ও সহজ ইন্টারফেস, বিভিন্ন ব্র্যান্ড ও মডেলের সার্ভার, স্টোরেজ ও নেটওয়ার্ক ডিভাইসের জন্য একীভূত এএমসি সাপোর্ট।
গ্রাহকরা আরো পাবেন- ইওএল/ইওএসল, প্রোডাক্টের জন্য বিশেষায়িত সাপোর্ট ও স্পেয়ার পার্টস, দ্রুত অন-সাইট সার্ভিস — এসএলও অনুযায়ী, পার্ট রিপ্লেসমেন্ট, ট্রাবলশু্যটিং ও ফার্মওয়্যার আপডেট সহ সম্পূর্ণ কভারেজ, ২৪/৭ হেল্পডেস্ক ও টেলি-সাপোর্ট, দক্ষ ও অভিজ্ঞ ইঞ্জিনিয়ারদের দ্বারা সার্ভিস প্রদান, ব্যয় সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব টেক সল্যুশন ইত্যাদি।
পাশাপাশি সার্ভিসিং২৪ এর এই অ্যাপ প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে গ্রাহকরা খুব সহজেই টিকিট তৈরি করা থেকে শুরু করে আইটি সিস্টেমের সকল ধরনের আপডেট, রিয়েল-টাইম ট্র্যাকিং ও মনিটরিং—সবকিছু এক জায়গা থেকেই জানতে ও নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন।
এই অ্যাপভিত্তিক সেবা সম্পর্কে ‘সার্ভিসিং২৪’-এর চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার (সিইও) নাসির ফিরোজ বলেন, “আমাদের সার্ভিস আরো নির্বিঘ্ন করতে আমরা অ্যাপভিত্তিক পূর্ণাঙ্গ সুল্যশন্স এনেছি। এতে সেবাগ্রহীতাদের আর কোনো বাড়তি ভোগান্তি পোহাতে হবে না। ক্লায়েন্ট ও ইউজারদের ফিডব্যাক এই অ্যাপের পরবর্তী হালনাগাদের জন্য আমাদের কাছে বেশ গুরুত্বপূর্ণ। আশা করছি তারা এই সলুশ্যন এর মাধ্যমে উপকৃত হবেন।”
পাঁচ বছরে দেশে মাছের উৎপাদন বেড়েছে ৭ দশমিক ৪১ লাখ টন। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে উৎপাদন ছিল ৪২ দশমিক ৭৭ লাখ টন। ২০২৩-২৪ সালে বেড়ে দাঁড়ায় ৫০ দশমিক ১৮ লাখ টনে।
বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএফআরআই) আয়োজিত মৎস্য সপ্তাহের সেমিনারে এ তথ্য জানানো হয়। গতকাল বুধবার রাজধানীর ফার্মগেটে কৃষি গবেষণা কাউন্সিলে এই সেমিনার আয়োজন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার।
বিএফআরআইয়ের মহাপরিচালক অনুরাধা ভদ্রের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. তোফাজ্জেল হোসেন। সম্মানিত অতিথি ছিলেন মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশনের চেয়ারম্যান ফারাহ শাম্মী ও মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আবদুর রউফ। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিএফআরআইয়ের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. মশিউর রহমান।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ফরিদা আখতার বলেন, ‘আমরা প্রাকৃতিকভাবে এমন স্থানে আছি, যেখানে মাছ না খেয়ে বাঁচার উপায় নেই। দেশে ৬৪ প্রজাতির মাছ বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল। সেখানে বিএফআরআইয়ের গবেষণার ফলে ৪১ প্রজাতির মাছ ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে।’
তিনি বলেন, সারাদেশে জলাশয়গুলো চিহ্নিত করে দেশি মাছের প্রজাতি রক্ষা করতে হবে। বিভিন্ন জলাশয়ে মাছের নানা প্রজাতি রয়েছে। এসব জলাশয় চিহ্নিত করে দেশীয় প্রজাতির মাছ সংরক্ষণ ও বৃদ্ধি করতে হবে।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা আরও বলেন, অভয়াশ্রম গড়ে তোলা ও রক্ষা করা মৎস্যসম্পদ উৎপাদনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কেননা মুক্ত জলাশয়ের পরিমাণ দিন দিন আশঙ্কাজনক হারে কমছে।
এর পেছনের কারণ হিসেবে তিনি বলেন, এখানে আগে নীতি-নির্ধারণীতে হয়তোবা মনোযোগ কম ছিল, তাই আমরা এ খাতে গুরুত্ব দিচ্ছি। আমাদের মুক্ত জলাশয় গড়ে তোলতে যা করণীয়, তা করতেই হবে।
জিনগত বিলুপ্তি রোধ করা দরকার উল্লেখ করে মৎস্য উপদেষ্টা বলেন, মাছের প্রজাতিগুলো রক্ষা করা শুধু বাংলাদেশের জন্যই নয়, বরং আন্তর্জাতিক মৎস্যসম্পদের প্রয়োজনেও করতে হবে। কারণ আমরা প্রাকৃতিকভাবে এমন এক স্থানে রয়েছি, যেখানে মাছ না খেয়ে বাঁচার কোনো উপায় নেই।
মাছ শিকারে বিষ ও বিদ্যুতের ব্যবহারকে উদ্বেগের কারণ হিসেবে উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, মানুষ কত নিষ্ঠুর। তারা মাছ শিকারে বিষ ও বিদ্যুৎ ব্যবহার করছে। এটি হচ্ছে মানুষের লোভ ও তাৎক্ষণিক লাভের কারণে।
প্লাস্টিক দূষণ মারাত্মক আকার ধারণ করেছে উল্লেখ করে ফরিদা আখতার বলেন, মৎস্যসম্পদ ধ্বংসের পেছনে পানি ও প্লাস্টিক দূষণ অন্যতম ক্ষতির কারণ। সম্প্রতি প্লাস্টিক বিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে কোনো সমঝোতায় আসতে পারেনি। প্লাস্টিক চুক্তি প্রকৃতির জন্য ক্ষতিকর হওয়ায় বাংলাদেশও স্বাক্ষর না করে চলে এসেছে।
মূল প্রবন্ধে মো. মশিউর রহমান বলেন, দেশে ৬৬৯টি অভয়াশ্রম আছে- জমির পরিমাণ ১ হাজার ১৬৯ হেক্টর। তিনি বলেন, পাঁচ বছরে মাছের উৎপাদন বেড়েছে ৭ দশমিক ৪১ লাখ টন।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. তোফাজ্জেল হোসেন বলেন, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় এখন থেকে নিজেরাই অভয়াশ্রম ঘোষণা করতে পারবে। সে জন্য আইন সংশোধন করা হয়েছে।
ঢাকার কেরানীগঞ্জে বুড়িগঙ্গার তীরের জায়গা দখল করে নির্মিত অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে দুই দিনের অভিযান শুরু করেছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। অভিযানের প্রথম দিনে সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের অবৈধভাবে নির্মাণ করা একটি বাগানবাড়ি (বাংলো) গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। অভিযানে প্রায় দেড় একর জমি উদ্ধার করা হয়েছে।
গতকাল বুধবার সকালে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের কাউটাইল মৌজায় কোন্ডা ইউনিয়নের কাউটাইল এলাকায় এ অভিযান চালানো হয়। অভিযানে বুড়িগঙ্গা নদীর তীর দখল করে নির্মিত বাগানবাড়ির তিনটি দোতলা ভবন ও একটি ডকইয়ার্ডের প্রায় ২০০ ফুট সীমানা প্রাচীরও ভেঙে ফেলা হয়।
বিআইডব্লিউটিএর ঢাকা নদীবন্দরের যুগ্ম পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, সরকার এরই মধ্যে ঢাকার চারপাশের বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, তুরাগ ও বালু নদের সীমানা নির্ধারণ করে ৮০ কিলোমিটার এলাকায় পিলার স্থাপন করেছে। ২০০৯ সালে এসব নদীতীরে অবৈধভাবে গড়ে তোলা স্থাপনা উচ্ছেদ কার্যক্রম শুরু হয়। গত বছরের ৫ আগস্টের পর নানা প্রতিকূলতার কারণে উচ্ছেদ অভিযান চালানো সম্ভব হয়নি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে আজ উচ্ছেদ অভিযান শুরু করা হয়। বুড়িগঙ্গার স্বাভাবিক প্রবাহ রক্ষায় এ অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। দখলদার যত প্রভাবশালীই হোক না কেন, কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। আজ কাউটাইল ও দোলেশ্বর এলাকায় নদীতীরের সব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে।
অভিযানে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ রাজস্ব সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) শেখ আব্দুল্লাহ আল মামুন, বিআইডব্লিউটিএর ঢাকা নদীবন্দরের উপপরিচালক আবু সালেহ এহতেশাম, ভৈরব নদীবন্দরের উপপরিচালক নুর হোসেন ও মেঘনা নদীবন্দরের উপপরিচালক রেজাউল করিম অংশ নেন।
ভারতের ভূখণ্ডে বাংলাদেশবিরোধী কর্মকাণ্ড সংঘটিত হচ্ছে, এমন কোনো তথ্য নেই বলে জানিয়েছেন দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার ভারতের মাটিতে নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কার্যালয় ও কার্যক্রম বন্ধের জন্য দিল্লিকে অনুরোধ প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে রণধীর জয়সওয়াল এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘ভারতের মাটিতে কথিত আওয়ামী লীগের সদস্যদের বাংলাদেশবিরোধী কোনো ধরনের কর্মকাণ্ড বা ভারতের আইনবিরোধী কোনো কর্মকাণ্ডের বিষয়ে তারা অবগত নন।’
তিনি আরো বলেন, ‘ভারত সরকার অন্য দেশের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক কার্যক্রম চালানোর অনুমতি দেয় না। সুতরাং বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি অনুচিত।’
সেসময় রণধীর জয়সওয়াল পুনর্ব্যক্ত করেন, ‘বাংলাদেশের জনগণের ইচ্ছা ও ম্যান্ডেট নির্ধারণের জন্য শিগগিরই অবাধ, সুষ্ঠু ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে আশা করছি।’
এর আগে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে এক বিবৃতি দেওয়া হয়। সেখানে বলা হয়, ‘নিষিদ্ধ’ রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের অফিস ভারতের রাজধানী দিল্লি এবং কলকাতায় স্থাপনের খবরে বাংলাদেশ সরকারের দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়েছে।
বিবৃতিতে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কার্যালয়গুলো অবিলম্বে বন্ধ করার জন্য অনুরোধ জানানো হয়।
এছাড়া ভারতের মাটি ব্যবহার করে বাংলাদেশবিরোধী কোনো কার্যক্রম যাতে কেউ চালাতে না পারে, বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য ভারত সরকারের প্রতি বাংলাদেশ অনুরোধ জানায়।
ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগরে দ্রুতগতির একটি প্রাইভেট কার উল্টে তিনজন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও একজন।
বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) সকাল ৬টার দিকে শ্রীনগর উপজেলার ষোলঘর এলাকায় এক্সপ্রেসওয়ের যাত্রী ছাউনির পাশে ঢাকামুখী লেনে এই দুর্ঘটনা ঘটে।
তবে এ ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে হতাহতদের নাম পরিচয় জানা যায়নি।
মুন্সীগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক সফিকুল ইসলাম জানান, ঢাকামুখী বেপরোয়া গতির প্রাইভেট কারটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়ক বিভাজনের রেলিংয়ের সঙ্গে ধাক্কা লেগে উল্টে যায়। গাড়িটিতে চারজনই ছিলেন।
তিনি আরও জানান, দুর্ঘটনার পর ঘটনাস্থলেই দুজন নিহত হন। অন্য দুজনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় উদ্ধার করে শ্রীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠালে চিকিৎসকরা আরও একজনকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ দুর্ঘটনার কারণে প্রায় এক ঘণ্টা ওই সড়কে যান চলাচল ব্যাহত হয়। পরে হাইওয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যদের উদ্ধার অভিযানের পর যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
হাসাড়া হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল কাদের জিলানী জানান, গাড়িটি সরিয়ে নেওয়ার পর সকাল সোয়া ৭ টার দিকে ঢাকামুখী লেনে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
শ্রীনগর ফায়ার স্টেশনের স্টেশন অফিসার দেওয়ান আজাদ হোসেন বলেন, ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায় প্রাইভেট কারটির ভাঙা অংশের মধ্যে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে রক্ত। পড়ে আছে দুটি মরদেহ, আর আহত একজনের কান্না শোনা যাচ্ছিল।
সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের নতুন সচিব ড. মোহাম্মদ আবু ইউছুফ উপস্থিত সকলের প্রতি শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেছেন, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় যে গতিতে এগোচ্ছে আরও গতি বাড়াতে সমন্বয় টিমের মাধ্যমে কাজ করতে চাই। আমি সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের যাবতীয় সেবা দরিদ্র, দুঃস্থ, অসহায়, অসচ্ছল মানুষের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছে দিতে সকলের সহযোগিতা চাই। এজন্য আমরা সবাই একসাথে কাজ করবো।
তিনি আজ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং কর্মচারীদের সাথে পরিচিতি ও মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এ কথা বলেন।
নতুন সচিব বলেন,
আমি এই মন্ত্রণালয়ের সুনাম কাজের মাধ্যমে, আইন কানুন মেনে মানুষের সেবা দ্রুত নিশ্চিত করতে আপনাদের সহযোগিতা চাই। তিনি বলেন, সচিবের রুম আপনাদের জন্য সার্বক্ষণিক খোলা থাকবে এবং ফাইল দ্রুত নিষ্পত্তি করে কাজের যথার্থতা নিশ্চিত করবেন। আপনারা নির্ভয়ে কাজ করবেন, আমার সার্বিক সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে। পাশাপাশি আমিও আপনাদের থেকে শিখতে চাই এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে দেশের নয়টি সরকারি এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে আয়োজন করা হচ্ছে জাতীয় নীতি প্রতিযোগিতা ২০২৫। জাতীয় নীতি প্রতিযোগিতা ২০২৫ এর প্রতিপাদ্য "বাংলাদেশ ২.০: তারুণ্যের নেতৃত্বে আগামীর পথে " নির্ধারণ করা হয়েছে। এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারীরা ধারণাপত্র জমা দিয়ে শুরু করবে এবং নির্বাচিত দলসমূহ পূর্ণাঙ্গ নীতিপত্র প্রস্তুত ও উপস্থাপনা করবে। বিজয়ীরা পুরস্কৃত হওয়ার পাশাপাশি তাদের নীতি প্রস্তাবগুলো সরকারিভাবে পলিসি প্রণয়নের ক্ষেত্রে বিবেচনায় নেওয়া সুযোগ সৃষ্টি করা হবে।
নীতি প্রতিযোগিতার বিষয়গুলো হল-
১. রাজনীতিতে তরুণদের অংশগ্রহণ ও গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ
২. জুলাই পরবর্তীতে সময়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি: জাতীয় স্বার্থ ও বৈদেশিক সম্পর্কের পুনঃসংজ্ঞায়ন
৩. নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ: শিক্ষা ও দক্ষতার রূপান্তর
৪.দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তি প্রতিষ্ঠা ও সাংস্কৃতিক সংযোগ: জুলাই অভ্যুত্থানের পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশী তরুণদের ভূমিকা
৫. গুজব প্রতিরোধে বাংলাদেশের করণীয় ও বাংলাদেশের বৈশ্বিক ভাবমূর্তি
৬. জুলাই গণভুত্থান ও সাংবিধানিক পুনর্গঠন: তরুণদের আকাঙ্ক্ষার বাংলাদেশ
৭.বাংলাদেশের এলডিসি থেকে উত্তরণ: সম্ভাবনার ব্যবহার ও নতুন চ্যালেঞ্জের মোকাবেলা প্রস্তুতি
৮. সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা অর্জনের পথে: ব্যবস্থা পুনর্গঠন ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ
৯. চতুর্থ শিল্প বিপ্লব: বাংলাদেশের উদ্বোধনী সম্ভাবনা ও প্রয়োগের ক্ষেত্র
রাষ্ট্রের নীতি নির্ধারণী বিষয়সহ রাষ্ট্র পরিচালনার সকল ক্ষেত্রে তারুণ্যের অন্তর্ভুক্তি ও অংশগ্রহণ অপরিহার্য। আমাদের কাঙ্ক্ষিত দীর্ঘমেয়াদি পরিবর্তনের জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন নীতিগতভাবে অগ্রসর হওয়া। তরুণদের চিন্তাপ্রক্রিয়া, মননশীলতা এবং গবেষণাধর্মী সক্ষমতাকে সামনে রেখে এক নতুন পরিবর্তনের সূচনা করা সম্ভব আর সেটি হতে হবে রাষ্ট্রের নীতি নির্ধারণী প্রক্রিয়ায় তারুণ্যের অন্তর্ভুক্তির মধ্য দিয়ে।
এ সময় যুব ও ক্রীড়া সচিব বলেন, এই প্রতিযোগিতা কেবল একটি প্রতিযোগিতা নয় এটি আগামী প্রজন্মের নেতৃত্বে বিনিয়োগ। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, তরুণদের বুদ্ধিবৃত্তিক অংশগ্রহণই আমাদের রাষ্ট্রকে দীর্ঘমেয়াদি টেকসই উন্নয়নের পথে এগিয়ে নেবে এবং বাংলাদেশ ২.০-কে বাস্তবায়নের ভিত্তি গড়ে তুলবে।
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আগামী ১০ সেপ্টেম্বর খসড়া ভোটকেন্দ্রের তালিকা প্রকাশ করবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
আজ বুধবার ইসির উপ-সচিব মো. মাহবুব আলম শাহ স্বাক্ষরিত একটি চিঠিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে, যা জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের পাঠানো হয়েছে।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র স্থাপন ও ব্যবস্থাপনা নীতিমালা-২০২৫’ কমিশনে অনুমোদিত হয়েছে এবং তা ২৬ জুন ২০২৫ তারিখে বাংলাদেশ গেজেটের অতিরিক্ত সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছে। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২-এর অনুচ্ছেদ ৮ (১) ও (২) অনুযায়ী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটকেন্দ্রের তালিকা সংরক্ষণ ও চূড়ান্তকরণের জন্য গেজেটে কমপক্ষে ২৫ দিন পূর্বে তা প্রকাশ করার বিধান রয়েছে।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে এলাকা ভিত্তিক ভোটকেন্দ্রের খসড়া তালিকা প্রকাশ, এই তালিকার ওপর দাবি/আপত্তি গ্রহণ এবং তা নিষ্পত্তির মাধ্যমে নীতিমালা অনুযায়ী চূড়ান্ত তালিকা প্রস্তুতের নির্দেশনা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কমিশন নির্ধারিত সময়সূচি অনুযায়ী : খসড়া ভোটকেন্দ্রের তালিকা প্রকাশ: ১০ সেপ্টেম্বর, দাবি/আপত্তি গ্রহণের শেষ তারিখ: ২৫ সেপ্টেম্বর, দাবি/আপত্তি নিষ্পত্তির শেষ তারিখ: ১২ অক্টোবর, সম্ভাব্য চূড়ান্ত ভোটকেন্দ্রের তালিকা প্রস্তুত ও প্রকাশ: ২০ অক্টোবর।
উল্লেখিত সময়সূচি অনুযায়ী এবং ভোটকেন্দ্র স্থাপন নীতিমালা অনুসারে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করতে জেলা পর্যায়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে নির্ধারিত ছকের আলোকে খসড়া ও সম্ভাব্য চূড়ান্ত ভোটকেন্দ্রের সংখ্যাগত তথ্য (সফটকপিসহ) আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তার মাধ্যমে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নির্বাচন সহায়তা-১ শাখায় পাঠাতে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, সারাদেশ জলাশয়গুলো চিহ্নিত করে দেশি মাছের প্রজাতি রক্ষা করতে হবে। তিনি বলেন, বিভিন্ন জলাশয়ে মাছের নানান প্রজাতি রয়েছে। এসব জলাশয় চিহ্নিত করে দেশীয় প্রজাতির মাছ সংরক্ষণ ও বৃদ্ধি করতে হবে।
উপদেষ্টা বুধবার (২০ আগষ্ট) রাজধানীর ফার্মগেটে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলে 'টেকসই মৎস্যসম্পদ ব্যবস্থাপনায় অভয়াশ্রমের গুরুত্ব ও ভবিষ্যত করণীয়' -শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এ কথা বলেন। সেমিনারটির আয়োজন করে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএফআরআই)।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা বলেন, অভয়াশ্রম গড়ে তোলা ও রক্ষা করা মৎস্যসম্পদ উৎপাদনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কেননা মুক্ত জলাশয়ের পরিমাণ দিন দিন আশঙ্কাজনক হারে কমছে।
এর পেছনের কারণ হিসেবে তিনি বলেন, এখানে আগে নীতি-নির্ধারণীতে হয়তোবা মনোযোগ কমছিল। তাই আমরা এখাতে গুরুত্ব দিচ্ছি। আমাদের মুক্ত জলাশয় গড়ে তুলতে যা করণীয় তা করতেই হবে।
জিনগত বিলুপ্তি রোধ করা দরকার উল্লেখ করে মৎস্য উপদেষ্টা বলেন, মাছের প্রজাতিগুলো রক্ষা করা এটি শুধু বাংলাদেশের জন্য নয় বরং আন্তর্জাতিক মৎস্যসম্পদের প্রয়োজনে করতে হবে। কারণ আমরা প্রাকৃতিকভাবে এমন স্থানে রয়েছি যেখানে মাছ না খেয়ে বাঁচার উপায় নেই।
৪১ প্রজাতির মাছ ফিরিয়ে আনা হয়েছে উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, দেশে ৬৪ প্রজাতির মাছ বিলুপ্তপ্রায় হয়ে গিয়েছিল। সেখানে বিএফআরআইর গবেষণার ফলে ৪১ প্রজাতির মাছ ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে।
মাছ শিকারে বিষ ও বিদ্যুতের ব্যবহারকে উদ্বেগের কারণ হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, মানুষ কত নিষ্ঠুর তারা মাছ শিকারে বিষ ও বিদ্যুতের ব্যবহার করছে। এটি হচ্ছে মানুষের লোভ ও তাৎক্ষণিক লাভের কারণে।
প্লাস্টিকদূষণ মারাত্মক আকার ধারণ করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, মৎস্যসম্পদ ধ্বংসের পেছনে পানি ও প্লাস্টিকদূষণ অন্যতম ক্ষতির কারণ। সম্প্রতি প্লাস্টিক বিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে কোন সমঝোতায় আসতে পারেনি। প্লাস্টিক চুক্তি মানুষের পক্ষে ও প্রকৃতির জন্য ক্ষতিকর হওয়ায় বাংলাদেশও স্বাক্ষর না করে চলে এসেছে।
বিএফআরআইর মহাপরিচালক ড. অনুরাধা ভদ্রের সভাপতিত্বে এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন মন্ত্রণালয়ের সচিব (রুটিন দায়িত্ব) মো. তোফাজ্জেল হোসেন, সম্মানিত অতিথি ছিলেন মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশনের চেয়ারম্যান ফারাহ শাম্মী ও মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো. আবদুর রউফ। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিএফআরআইর ঊধ্বর্তন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. মশিউর রহমান। এসময় বিএফআরআই এর বিজ্ঞানীবৃন্দ, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ, মৎস্যজীবী ও সুধীজন উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস নিজেকে সুস্থ রাখতে অসংক্রামক রোগের বিষয়ে সবাইকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ এবং বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আজ ঢাকায় প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে আন্তঃমন্ত্রণালয় সহযোগিতা বাড়াতে ‘যৌথ ঘোষণাপত্র’ স্বাক্ষরিত হয়।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। এ সময়ে তিনি এ আহ্বান জানান।
যৌথ ঘোষণাপত্রে ৩৫টি মন্ত্রণালয় বা বিভাগ স্বাক্ষর করেছে। অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা পাঁচটি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবগণের হাতে যৌথ ঘোষণাপত্র তুলে দেন।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে উপদেষ্টা, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিব ও সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অংশ নেন। ঘোষণাপত্রে অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ এবং দীর্ঘমেয়াদি কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়।
প্রধান উপদেষ্টা তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘অসংক্রামক রোগ শুধু স্বাস্থ্য খাতের চ্যালেঞ্জ নয়, বরং এটি ব্যক্তিগত ও জাতীয় জীবনের উন্নয়নের সঙ্গেও সম্পৃক্ত। তাই এককভাবে নয়, বরং সকল মন্ত্রণালয়ের সমন্বিত প্রচেষ্টার মাধ্যমেই এ সমস্যার টেকসই সমাধান সম্ভব।’
তিনি আরো বলেন, ‘এই যৌথ ঘোষণাপত্র স্বাক্ষরের মাধ্যমে জাতীয় স্বাস্থ্য সুরক্ষায় আমরা একসঙ্গে কাজ করতে নতুন করে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হলাম।’
অনুষ্ঠানে বক্তারা জানান, ডায়াবেটিস, ক্যান্সার, হৃদরোগ ও শ্বাসকষ্টজনিত অসুখসহ অসংক্রামক রোগ ইতোমধ্যে দেশের জনস্বাস্থ্যের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি, স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা এবং চিকিৎসা ব্যবস্থার টেকসই উন্নয়নে যৌথ ঘোষণাপত্র বাস্তবায়ন কার্যকর ভূমিকা রাখবে।
বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও একটি আন্তর্জাতিক মানের একটি নির্বাচন আয়োজনের লক্ষ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ৪ মিলিয়ন ইউরোর একটি সহায়তা প্যাকেজ দেবে বলে ঘোষণা করেছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ইইউ রাষ্ট্রদূত ও প্রতিনিধি দলের প্রধান মাইকেল মিলার।
তিনি বলেন, ‘ইউরোপীয় ইউনিয়ন ৪ মিলিয়ন ইউরোর বেশি একটি সহায়তা প্যাকেজ প্রদান করবে, যা বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে নির্বাচন পরিচালনায় সহায়তা করবে।’
গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে ছয় সদস্যের ইইউ প্রতিনিধি দলের বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ কথা বলেন তিনি।
মাইকেল মিলার বলেন, একটি গণতান্ত্রিক নির্বাচনের দিকে এগিয়ে নিতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এখানে বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করছে।
‘আমরা ২০২৬ সালের শুরুর একটি সময়সীমার দিকে এগোচ্ছি,’ তিনি যোগ করেন।
বাংলাদেশের নির্বাচন পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্নের জবাবে ইইউ রাষ্ট্রদূত বলেন, এখন আলোচনার বিষয় হলো আগামী কয়েক সপ্তাহ ও মাসে নির্বাচনগুলোর বিশ্বাসযোগ্যতা নিশ্চিত করতে যে বাস্তবসম্মত পদক্ষেপগুলো অবিলম্বে নেওয়া প্রয়োজন।
‘এবং এ কারণেই আমরা এখন আমাদের দক্ষতা কাজে লাগাচ্ছি। কারণ আমরা চাই আপনাদের নির্বাচনগুলো অত্যন্ত গ্রহণযোগ্য হোক, আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে হোক এবং অবশ্যই অবাধ ও সুষ্ঠু হোক,’ তিনি বলেন।
মিলার আরও বলেন, তিনি শুধু ইইউ প্রতিনিধি দলের সহকর্মীদের সঙ্গেই আসেননি, বরং ইউরোপীয় পার্টনারশিপ ফর ডেমোক্রেসির প্রতিনিধিদের সঙ্গেও এসেছেন। তারা বাস্তবায়নকারী অংশীদার ও নির্বাচনী বিশেষজ্ঞ, যারা আসন্ন নির্বাচনে নাগরিক পর্যবেক্ষণে জোরালো মনোযোগ নিশ্চিত করতে এখানে থাকবেন।
তিনি উল্লেখ করেন, সক্ষমতা বৃদ্ধিতে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনকে সরাসরি সহায়তা দেওয়া হবে—যার মধ্যে অপারেশনাল পরিকল্পনা ও বিরোধ নিষ্পত্তির মতো ক্ষেত্র অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
মিলার বলেন, ‘বাংলাদেশে আমাদের কাজের অন্যান্য ক্ষেত্রের মতো নির্বাচনের ক্ষেত্রেও আমাদের লক্ষ্য থাকবে এখানকার প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বাধীনতা, দক্ষতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা।’
তিনি আরও বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশকে সম্ভাব্য ইইউ নির্বাচনী পর্যবেক্ষণ মিশনের জন্য অগ্রাধিকার দিচ্ছে। ‘এটি এমন একটি বিষয় যা আমরা আগামী মাসগুলোতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাব,’ তিনি উল্লেখ করেন।
আরেকটি প্রশ্নের জবাবে মাইকেল মিলার বলেন, আগামী মাসে ইউরোপীয় ইউনিয়নের একটি কারিগরি বিশেষজ্ঞ দল বাংলাদেশে আসবে এ বিষয়টি বিবেচনা করতে যে এখানে নির্বাচনী পর্যবেক্ষণ মিশন পাঠানোর মতো প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছে কিনা।
তিনি বলেন, ‘সুতরাং, আমরা সম্ভাব্যতা ও যৌক্তিকতা বিবেচনা করছি। তবে আমি আপনাদের যা বলতে পারি তা হলো রাজনৈতিকভাবে বাংলাদেশ ইউরোপীয় ইউনিয়নের কাছে একটি অগ্রাধিকার, বিশেষ করে নির্বাচনী পর্যবেক্ষণ মিশন মোতায়েনের ক্ষেত্রে।’
আরেক প্রশ্নের জবাবে ইইউ রাষ্ট্রদূত বলেন, তিনি মনে করেন বেশ কিছু বিষয় সমাধান করা প্রয়োজন, কারণ বাংলাদেশ এখন একটি গভীর রাজনৈতিক রূপান্তরের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, অবশ্যই নির্বাচনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে গণতান্ত্রিক নির্বাচন আয়োজনের অভিজ্ঞতা রাখে, তবে সাম্প্রতিক সময়ে সেই নির্বাচনগুলো পরিচালনা ও ফলাফলের দিক থেকে অত্যন্ত প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে।
জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ খতিয়ে দেখতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের শীর্ষ ১৭ কর্মকর্তার সম্পদের হিসাব চেয়ে চিঠি দিতে যাচ্ছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর সেগুন বাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে সংস্থাটির মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানান।
তিনি জানান, দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ২০০৪-এর ২৬ (১) ধারা এবং দুর্নীতি দমন কমিশন বিধিমালা ২০০৭-এর ১৭নং বিধির আলোকে নির্ধারিত ছক অনুযায়ী তাদের সম্পদ ও দায়-দেনার হিসাব বিবরণী দাখিলের আদেশ জারির প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কমিশন কর্তৃক সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।
যে ১৭ কর্মকর্তার হিসাব চাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে তারা হলেন- কর কমিশনার (কর অঞ্চল-৩) এম এম ফজলুল হক, কর আপিল ট্রাইব্যুনালের কমিশনার লোকমান আহমেদ, আয়কর গোয়েন্দা ইউনিটের অতিরিক্ত কর কমিশনার সাহেলা সিদ্দিক, অতিরিক্ত কর কমিশনার মো. মামুন মিয়া, ভ্যাট গোয়েন্দা বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার হাছান তারিক রিকাবদার, যুগ্ম কর কমিশনার মোনালিসা সাহরিন সুস্মিতা, কর একাডেমির যুগ্ম-কর কমিশনার মো. মোরশেদ উদ্দিন খান, কর অঞ্চল ৮-এর অতিরিক্ত কর কমিশনার মির্জা আশিক রানা, কর অঞ্চল ১৬-এর উপকর কমিশনার মো. শিহাবুল ইসলাম, অতিরিক্ত কমিশনার আব্দুল রশিদ মিয়া, রেলওয়ে কাস্টমসের কমিশনার মো. কামরুজ্জামান, কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট পূর্বাঞ্চলের কমিশনার কাজী মোহাম্মদ জিয়া উদ্দিন, কাস্টমসের অতিরিক্ত কমিশনার সাধন কুমার কুন্ডু, এনবিআরের যুগ্ম কমিশনার মো. তারিক হাছান, এনবিআরের সিআইসির সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক মো. আলমগীর হোসেন, এনবিআরের সদস্য মো. লুৎফুল আজিম ও সদস্য (আয়কর নীতি) এ কে এম বদিউল আলম।
এর আগে গত জুলাই মাসে এই কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছিল দুদক। ওই সময়ে দুদকে জমাকৃত অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, কিছু অসাধু কর্মকর্তারা কর ও শুল্ক আদায়ের ক্ষেত্রে মোটা অঙ্কের ঘুষের বিনিময়ে করদাতাদের কর ফাঁকি দেওয়ার সুযোগ করে দিচ্ছেন এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মালিক ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কর্মকর্তারা নিজেরা লাভবান হওয়ার জন্য নির্ধারিত পরিমাণ কর আদায় না করে তাদের করের পরিমাণ কমিয়ে দিতেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ক্ষেত্রে, প্রতি বছর সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেছেন, ‘এখন নির্বাচনের দিকে যাচ্ছে দেশ। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে সরকারকে সহযোগিতা করার জন্য সেনাবাহিনী সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে। দীর্ঘসময় ধরে সেনারা মাঠে দায়িত্ব পালন করছেন। আগে এত দীর্ঘসময় মাঠে থাকতে হয়নি। তাই সবার সঙ্গে ভালো সম্পর্ক বজায় রাখতে হবে। দূরত্ব থাকলে তা দূর করতে হবে।’
গতকাল মঙ্গলবার ঢাকা সেনানিবাসে ‘অফিসার্স অ্যাড্রেস’ অনুষ্ঠানে সেনাসদস্যদের উদ্দেশে দেওয়া বক্তব্যে এ কথা বলেন সেনাপ্রধান। এতে পদস্থ কর্মকর্তারা সরাসরি উপস্থিত ছিলেন। এ সময় সব সেনা স্থাপনার কর্মকর্তারা ভার্চুয়ালি যুক্ত হন।
সেনাপ্রধান জোর দিয়ে বলেন, ‘দেশের মানুষ এখন সেনাসদস্যদের দিকে তাকিয়ে আছে। তোমরাই দেশের ভবিষ্যৎ। তাই দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হতে হবে এবং বাহিনীর চেইন অব কমান্ড অক্ষুণ্ন রাখতে হবে। সেনাবাহিনী একটি পেশাদার সংগঠন। মাঠে দায়িত্ব পালনের সময় পেশাদারত্ব দেখাতে হবে। প্রতিশোধমূলক কোনো কাজে জড়ানো যাবে না।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ইস্যুতে নানা কটূক্তির জবাবে তিনি বলেছেন, ‘এসব মন্তব্যে অখুশি হওয়ার কিছু নেই। যারা এসব করছে, তাদের বয়স কম। তারা আমাদের সন্তানের বয়সি। তারা বড় হলে নিজেদের ভুল বোঝতে পারবে। তখন নিজেরাই লজ্জিত হবে।’
নাম উল্লেখ না করে সেনাপ্রধান বলেন, ‘একজন সেনাসদস্যের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থাকার অভিযোগ তদন্তাধীন। অভিযোগ প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সেনাবাহিনীর কোনো সদস্য রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়াতে পারবেন না। আরেক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নারী নির্যাতনের অভিযোগ নিয়েও তদন্ত চলছে। নৈতিক স্খলনের বিষয়ে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। তবে মিডিয়া ট্রায়ালের ভিত্তিতে কাউকে সাজা দেওয়া হবে না, অভিযোগ প্রমাণিত হলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেন, ‘একজন সেনা কর্মকর্তাকে গড়ে তুলতে রাষ্ট্র বিপুল অর্থ ব্যয় করে। তাই কেউ যাতে অপরাধে জড়াতে না পারে, সে বিষয়ে আগেভাগেই খেয়াল রাখতে হবে। অপরাধে জড়িয়ে পড়ার পর তাকে বাড়ি পাঠিয়ে দিলে সেটি রাষ্ট্রের অর্থের অপচয় ছাড়া কিছুই নয়।’