আক্রান্ত ১১ জেলা থেকে ধীরে ধীরে নামছে বন্যার পানি। তবে পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ফুটে উঠছে ক্ষয়ক্ষতির চিহ্ন। দুর্গম যেসব এলাকায় এত দিন যাওয়া সম্ভব হয়নি সরকারি-বেসরকারি ত্রাণকর্মী ও স্বেচ্ছাসেবীদের, এখন সেসব এলাকায় পৌঁছাচ্ছেন তারা। তবে ত্রাণের জন্য হাহাকার সবখানে। আশার কথা, নতুন বাংলাদেশে বন্যা মোকাবিলায় সব মানুষ দাঁড়িয়েছেন একসঙ্গে। তাই গত ৫ দিনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের আহ্বানে রাজধানীসহ সারা দেশের মানুষ সাড়া দিচ্ছেন, প্রধান উপদেষ্টার আহ্বানে তার ত্রাণ তহবিলেও মিলছে বিপুল সাড়া। তবে উপদ্রুত এলাকার মানুষ চাইছেন নগদ সহায়তা-ত্রাণের খাবার, বিশুদ্ধ পানি, ওষুধের পাশাপাশি ঘরবাড়ি মেরামত এবং ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড ও কৃষিতে সহায়তা। তবে সব মহলের একটা লক্ষ্য, যত দ্রুত সম্ভব পানিবন্দি মানুষের কাছে ত্রাণ হিসেবে খাবার ও পানি পৌঁছে দেওয়া। এদিকে, জলমগ্ন এলাকাগুলোতে বারবার পানিতে নামতে বাধ্য হওয়ায় অনেক মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন পানিবাহিত রোগে। উপদ্রুত জেলাগুলোতে ডায়রিয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এসব এলাকার হাসপাতালগুলোসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিকে একযোগে কাজ করছেন চিকিৎসক-নার্সদের পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবীরা।
এদিকে, বন্যার পানি নামতে শুরু করায় বোঝা যাচ্ছে ক্ষয়-ক্ষতির মাত্রা। ফেনী শহরের বাসিন্দা ষাটোর্ধ্ব মো. সাখাওয়াত হোসেন দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘গত শুক্রবার আসরের নামাজের পরেও তার এলাকাতে বন্যার লেশমাত্র ছিল না। তবে কোথা থেকে হঠাৎ এত দ্রুত গতিতে ঢলের পানি আসা শুরু করে যে মাগরিবের নামাজের আগেই কোমরসমান পানিতে ভরে যায় চারপাশ। প্রাণে বাঁচতে তার চার তলা বাসায় মুহূর্তে প্রতিবেশীদের অনেকে ভিড় করেন। এ কয় দিন বাসার দোতলা থেকে চতুর্থ তলায় বাসিন্দারাসহ ৪০ জন মানুষ আশ্রয় নিয়েছিলেন। এমন প্রতিবেশীও প্রাণ বাঁচাতে আশ্রয়ে ছিলেন যাদের তিনি আগে চিনতেনও না। পানি ছিল ভীষণ ঠাণ্ডা। এখন পানি মোটামুটি নেমে গেছে। তবে নিচতলার ভাড়াটিয়া কোনো কিছুই সরাতে পারেননি। তার সব সম্পদ পানিতে ভিজে নষ্ট হয়ে গেছে। এমন অবস্থা শহরের একতলা বা টিনশেডসহ সাধারণ ঘরে যারা ছিলেন তাদের সবার। এসব মানুষ সব হারিয়েছেন। তারা এখন কীভাবে বাঁচবেন তা আল্লাহ জানেন। এমন ঢল আমার জীবনে কখনো দেখিনি।’
বন্যায় ক্ষতির এমন চেহারা প্রায় সবখানে। পুকুরসহ মাছের ঘেরগুলো ভেসে গেছে, নষ্ট হয়েছে কৃষকের মাঠের ফসল, ব্যবসায়ীদের দোকানে পানি ঢুকে নষ্ট হয়েছে সব মালপত্র, ঘরের কোনো আসবাবপত্র আর ব্যবহারযোগ্য নেই। এই পরিস্থিতি এখন ফেনী, নোয়াখালীসহ আশপাশের সবগুলো জেলায়।
এদিকে, চলমান বন্যায় ১১ জেলায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ২৩ জনে দাঁড়িয়েছে। অন্যদিকে বন্যায় মোট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ৫৭ লাখ ১ হাজার ২০৪ জন। এছাড়া, ফেনী ও কুমিল্লা জেলার নিম্নাঞ্চলে বিদ্যমান বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি অব্যাহত রয়েছে। সব নদ-নদীর পানি কমতে শুরু করেছে।
আজ সোমবার বন্যা পরিস্থিতির সর্বশেষ তথ্য তুলে ধরে এই তথ্য জানান দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব কামরুল হাসান।
মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব জানান, বন্যা আক্রান্ত জেলার সংখ্যা ১১টি। এগুলো হচ্ছে ফেনী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সিলেট, লক্ষ্মীপুর ও কক্সবাজার। আক্রান্ত এসব জেলায় ৭৪টি উপজেলার মোট ১২ লাখ ৩৮ হাজার ৪৮টি পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে এবং ক্ষতিগ্রস্ত লোকসংখ্যা ৫৭ লাখ ১ হাজার ২০৪ জন।
তিনি জানান, পানিবন্দি-ক্ষতিগ্রস্ত লোকদের আশ্রয় প্রদানের জন্য মোট ৩ হাজার ৮৩৪ টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে এবং আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে মোট ৪ লাখ ৬৯ হাজার ৫২৩ জন মানুষ এবং ২৮ হাজার ৯০৭ টি গবাদি পশুকে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। ১১ জেলার ক্ষতিগ্রস্তদের চিকিৎসা সেবা সেবায় মোট ৬৪৫টি মেডিকেল টিম চালু রয়েছে।
কামরুল হাসান বলেন, এ পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ২৩ জন। এর মধ্যে কুমিল্লায় ৬ জন, ফেনীতে একজন, চট্টগ্রামে ৫ জন, খাগড়াছড়িতে একজন, নোয়াখালীতে ৫ জন, ব্রাহ্মণবাড়ীয়ায় একজন, লক্ষ্মীপুরে একজন ও কক্সবাজারে ৩ জন বন্যার কারণে মারা গেছেন ৷ এছাড়াও মৌলভীবাজারে ২ জন নিখোঁজ রয়েছেন।
এদিকে, পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের সোমবারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় পূর্বাঞ্চলীয় কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও ফেনী জেলার ভারতীয় ত্রিপুরা সীমান্তবর্তী অঞ্চলে এবং ত্রিপুরা প্রদেশের অভ্যন্তরীণ অববাহিকায় উল্লেখযোগ্য বৃষ্টিপাত হয়নি। উজানে নদ-নদীর পানি কমার ধারা অব্যাহত আছে। ফলে বর্তমানে ফেনী ও কুমিল্লা জেলার নিম্নাঞ্চলের বিদ্যমান বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি অব্যাহত রয়েছে।
একই সঙ্গে মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলার নদীগুলোর পানি বিপৎসীমার নিচে নেমে এসেছে। তবে এখনও কুশিয়ারা, গোমতি ও মুহুরী নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় দেশের পূর্বাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন উজানে হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টিপাত হতে পারে। এ সময়ে এ অঞ্চলের কুমিল্লা জেলার গোমতী নদীর পানি কমতে পারে এবং এ অঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে। একই সঙ্গে আগামী ২৪ ঘণ্টায় ফেনী জেলার নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি হতে পারে। তবে কোনও কোনও স্থানে স্থিতিশীল থাকতে পারে।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানায়, আজ দেশের তিনটি নদীর তিন স্টেশনের পানি বিপৎসীমার ওপরে দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। রোববার ৪ নদীর ৬টি স্টেশনের পানি বিপদসীমার ওপরে ছিল। এরমধ্যে গোমতির নদীর কুমিল্লা স্টেশনের পানি ৭৮ থেকে নেমে আজ ৪৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছে।
এছাড়া মুহুরী নদীর পরশুরাম স্টেশনের পানি আজ বিপৎসীমার ওপরে আছে। তবে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় পানির উচ্চতা সম্পর্কে জানা যায়নি। এদিকে রোববার কুশিয়ারা নদীর পানি তিন স্টেশনে বিপৎসীমার ওপরে থাকলেও আজ তা নেমে শুধু অমলশীদ পয়েন্টের পানি বিপৎসীমার ৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছে। রবিবার বিপৎসীমার ওপরে থাকা মনু নদীর মৌলভীবাজার স্টেশনের পানি আজ বিপৎসীমার নিচে নেমে গেছে।
আবহাওয়া সংস্থাগুলোর তথ্য অনুযায়ী, আগামী ৪৮ ঘণ্টায় দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও উজানে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা নেই। এ সময় উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলার মনু, খোয়াই, ধলাই নদীর পানি আরও কমতে পারে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় ফেনী জেলার নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে, তবে কোনও কোনও স্থানে স্থিতিশীল থাকতে পারে।
আবহাওয়া সংস্থাগুলোর তথ্যমতে, আগামী ২৪ ঘণ্টায় দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল ও উজানে মাঝারি বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা আছে। এ সময় এ অঞ্চলের বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম জেলার সাঙ্গু, মাতামুহুরি, কর্ণফুলী, হালদা ও অন্যান্য প্রধান নদীগুলোর পানি সময় বিশেষে বাড়তে পারে।
এছাড়াও ব্রহ্মপুত্র-যমুনা এবং দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সুরমা-কুশিয়ারা নদীর পানি কমছে, গঙ্গা-পদ্মা নদীর পানি স্থিতিশীল আছে, উত্তরাঞ্চলের তিস্তা-ধরলা-দুধকুমার নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ বিরাজমান আছে, যা আগামী ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে।
দেশে সোমবার সকাল পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ বৃষ্টি হয়েছে যশোরে ২২২ মিলিমিটার। এছাড়া বরগুনায় ১২০, বরিশালে ১০৪, টেকনাফে ১০১, পটুয়াখালী ৮৮, নোয়াখালী ৮৭, গোপালগঞ্জের হরিদাশপুরে ৮৫, কক্সবাজারে ৮২ এবং বান্দরবানের লামায় ৭০ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। এদিকে উজানে আসামের তেজপুরে ১৯, ত্রিপুরায় ১২ এবং চেরাপুঞ্জিতে ২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।
এদিকে, আজ রাতে একসঙ্গে ফারাক্কা বাঁধের ১০৯টি জলকপাট খুলে দেওয়ায় দেশের উত্তরাঞ্চলের রাজশাহী, চাঁপাই নবাবগঞ্জসহ আশেপাশের জেলাগুলোর নিম্নাঞ্চলে নতুন করে বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। যদিও এ বিষয়ে নতুন কোনও তথ্য বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র থেকে পাওয়া যায়নি।
বন্যা উপদ্রুত এলাকায় সরকারি-বেসরকারিসহ সব পর্যায় থেকে ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত আছে জানিয়ে মন্ত্রণালয় বলছে, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে বিতরণের জন্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে ১১ জেলায় মোট ৩ কোটি ৫২ লাখ টাকা, ২০ হাজার ৬৫০ মেট্রিক টন চাল, ১৫ হাজার প্যাকেট শুকনা ও অন্যান্য খাবার, ৩৫ লাখ টাকার শিশুখাদ্য এবং ৩৫ লাখ টাকার গো-খাদ্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া দেশের সব জেলায় পর্যাপ্ত ত্রাণসামগ্রী মজুত রয়েছে।
কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টের জিওসির তথ্যের বরাত দিয়ে ত্রাণ সচিব জানান, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মাধ্যমে কুমিল্লা জেলার সব উপজেলায় সড়ক পথে পর্যাপ্ত পরিমাণ খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে। এছাড়া সেনাবাহিনীর ৪টি মেডিকেল টিম প্রয়োজনীয় ওষুধসহ কুমিল্লা জেলার ৪ উপজেলায় নিয়োজিত করা হয়েছে।
ফেনীতে স্বাস্থ্য সেবা দিতে ফিল্ড হাসপাতাল প্রস্তুত করা হয়েছে জানিয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সচিব বলেন, সেনাবাহিনী ও জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের চিকিৎসকরা সেবা দিচ্ছন। পাশাপাশি স্থানীয় ক্লিনিক, হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠানগুলোকে বন্যার্তদের প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করার জন্য সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকগণ নির্দেশনা দিয়েছেন।
কামরুল হাসান বলেন, বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পানিবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিতে পারে। সে ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সচেতন হতে হবে এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিলে সহায়তা দেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে সচিব কামরুল হাসান বলেন, যারা ব্যক্তিগতভাবে উপস্থিত হয়ে প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ তহবিলে সহায়তা (চেক/পে-অর্ডার/ব্যাংক ড্রাফটের মাধ্যমে) দিতে চান তারা প্রধান উপদেষ্টার পক্ষে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার কাছেও তা দিতে পারেন। সরকারি ছুটি ছাড়া প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে ৪টা পর্যন্ত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে উপদেষ্টার কার্যালয়ে এই সহায়তা নেওয়া হবে।
যারা ত্রাণ তহবিলে সহায়তা (চেক/পে-অর্ডার/ব্যাংক ড্রাফট এর মাধ্যমে) দিতে ইচ্ছুক তাদের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব অঞ্জন চন্দ্র পাল (মোবাইল ০১৭১৮-০৬৬৭২৫) এবং সিনিয়র সহকারী সচিব শরিফুল ইসলামের (মোবাইল-০১৮১৯২৮১২০৮) সঙ্গে যোগাযোগ করার অনুরোধ জানিয়েছেন ত্রাণ সচিব।
নোয়াখালীতে আবারও বেড়েছে পানি
নোয়াখালী প্রতিনিধি জানান, বন্যা ও জলাবদ্ধতায় বিপর্যস্ত নোয়াখালীতে থেমে থেমে বৃষ্টিপাতের কারণে আবারও বাড়ছে পানি। আবহাওয়া কিছুটা ভালো থাকায় বৃহস্পতিবার থেকে গত শনিবার বিকেল পর্যন্ত পানি কিছুটা কমলেও সেদিন রাত ১০টার পর থেকে থেমে থেমে বৃষ্টির কারণে আবারও কোথাও কোথাও এক ফুট থেকে দুই ফুট পানি বেড়েছে বলে দাবি করেছেন স্থানীয়রা। জেলা প্রশাসনের হিসাবে জেলায় ২০ লাখের বেশি মানুষ পানিবন্দি আছেন।
বন্যার কারণে জেলায় এখন পর্যন্ত পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। তারা হলেন, সেনবাগ উপজেলার ইয়ারপুর গ্রামের জিলহাজুল ইসলাম (১০), কেশারপাড় ইউনিয়নের বীরকোট পশ্চিম পাড়ার দুই বছর বয়সী শিশু আবদুর রহমান এবং সদর উপজেলার কালাদরপ ইউনিয়নের পূর্ব শুল্লকিয়া গ্রামের আড়াই বছরের রিয়ান। এরমধ্যে শিশু রিয়ান বন্যার পানিতে ডুবে মারা গেছে। এছাড়াও বন্যার পানির কারণে ঘরের ভেতর বিদ্যুৎস্পৃষ্টে মারা যান সেনবাগ উপজেলার দক্ষিণ মোহাম্মদপুর গ্রামের কাকন কর্মকার (৩০) ও বেগমগঞ্জের চৌমুহনী পৌরসভার আলীপুর গ্রামের আবুল কালাম আজাদ (৫০)।
এদিকে ফেনী থেকে বন্যার পানি ডাকাতিয়া নদী দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার কারণে সেনবাগ, সোনাইমুড়ি, চাটখিল ও বেগমগঞ্জ উপজেলায় পানির চাপ বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে নোয়াখালী বন্যা পরিস্থিতি আরো অবনতি ও জনদুর্ভোগ বাড়ার আশংকা রয়েছে।
বন্যাকবলিত বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, জেলার ৮টি উপজেলার প্রায় ৯০ ভাগ মানুষ পানিবন্দি হয়ে আছেন। প্রতিটি বাড়িতে ৩ থেকে ৫ ফুট জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। নিচু এলাকাগুলোতে জলাবদ্ধতা দেখা গেছে ৬ থেকে ৭ ফুট। বসতঘরে পানি প্রবেশ করায় বুধবার রাত পর্যন্ত অনেকে খাটের ওপর অবস্থান করলেও বৃহস্পতিবার সকাল থেকে তারা নিকটস্থ আশ্রয় কেন্দ্র, প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে অবস্থান নিয়েছেন। বসত ও রান্নাঘরে পানি ঢুকে পড়ায় খাবার সংকটে রয়েছে বেশির ভাগ মানুষ। জেলার প্রধান সড়কসহ প্রায় ৮০ ভাগ সড়ক কয়েক ফুট পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। বন্যার পানি ঢুকে পড়ায় বেশিরভাগ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়েছে। সড়কগুলোতে যান চলাচল অনেকটাই কম।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, জেলার আট উপজেলার ৮৭ ইউনিয়ন ও সাতটি পৌরসভার ২০ লাখ ৩৬ হাজার সাতশ মানুষ পানিবন্দী রয়েছেন। এরমধ্যে আটশ ২৬টি কেন্দ্রে একলক্ষ ৫৩ হাজার চারশ ৫৬ জন মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। পানিবন্দী মানুষের জন্য নগদ ৪৫ লক্ষ টাকা ও ১৮শ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ করা হয়েছে। পাশাপাশি স্বাস্থ্যসেবায় ৮৮টি মেডিকেল টিম কাজ করছে।
ফেনীর তিন উপজেলায় বেড়েছে বন্যার পানি
ফেনী প্রতিনিধি জানান, ফেনীতে বন্যার পানি নামতে শুরু করেছে ফুলগাজী, পরশুরাম ও ছাগলনাইয়া উপজেলায়। বিপৎসীমার নিচে প্রবাহিত হচ্ছে মুহুরি কহুয়া ও ছিলোনিয়া নদীর পানি ৷ তবে পানিবন্দি রয়েছেন এসব এলাকার লক্ষ লক্ষ মানুষ ৷ ফেনী পৌর শহরের দু-তিনটি সড়ক ও বাসা বাড়িতে পানি কমলেও এখনো অনেক সড়ক ও বিভিন্ন ভবনের নিচতলা পানিতে সয়লাব।
ইতোমধ্যে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে ফেনী সদর, সোনাগাজী এবং দাগনভূঞা উপজেলায়। বন্যা এখানে প্রকট আকার ধারণ করেছে । এখানে এখনও পানিবন্দি কয়েক লাখ মানুষ৷ বন্যার পানি দ্রুত নেমে যাওয়ার জন্য ফেনীর মুহুরী রেগুলেটরের ৪০টি স্লুইসগেট ও নোয়াখালীর মুছাপুরের ১৭ টি স্লুইসগেট খুলে দেয়া হয়েছে।
গত রবিবার থেকে ফেনী শহরের বিদ্যুতের ৯টি লাইন সচল হয়েছে, তবে দুই-তৃতীয়াংশ বিদ্যুৎ সংযোগ এখনও বিচ্ছিন্ন রয়েছে। গত ৪দিন ধরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ থাকার পর রবিবার বিকেল থেকে যান চলাচল কিছুটা স্বাভাবিক হয়েছে। জেলার অধিকাংশ এলাকায় মোবাইল নেটওয়ার্ক অচল রয়েছে।
ফেনীতে বন্যা শুরু হওয়ার পর থেকে সেনাবাহিনী, নৌ-বাহিনী, বিমান বাহিনী, বিজিবি, কোস্ট গার্ড, ফায়ার সার্ভিস, বিভিন্ন স্থান থেকে আসা ডুবুরি দলসহ বেশ কয়েকটি স্বেচ্ছাসেবী টিম পরশুরাম ছাগলনাইয়া, সোনাগাজী এবং দাগনভূঞা এলাকায় নৌকা, স্পিডবোট নিয়ে উদ্ধার কাজ ও ত্রাণ তৎপরতা চলমান রেখেছে ৷ এসব প্রতিষ্ঠান ছাড়াও স্থানীয়ভাবে এবং বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা হতে আগত সরকারি সংস্থা, বিশ্ববিদ্যালয়, সামাজিক সংগঠন, মানবিক সংগঠন তথা বেসরকারি বিভিন্ন সংগঠন জনগণের মাঝে ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত রেখেছে।
জরুরি স্বাস্থ্যসেবায় জেলার ১টি এবং ছয়টি উপজেলায় ছয়টি মেডিকেল ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়াও বেসরকারি ৬টি হাসপাতালে মেডিকেল ক্যাম্প চালু রয়েছে। জেলা শহরে এসব বেসরকারি হাসপাতালসমূহ হল: কনসেপ্ট হাসপাতাল, মেডিনোভা হাসপাতাল মেডিল্যাব, আল আকসা হাসপাতাল, জেড ইউ মডেল হাসপাতাল, মিশন হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার।
জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, প্রতিটি উপজেলায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্যাকবলিত মানুষজনদের আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে খিচুড়ি ও শুকনা খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন শাখা সূত্র জানায়, এখন পর্যন্ত জেলায় ৮ লাখ মানুষ বন্যায় আক্রান্ত। এপর্যন্ত ১ লক্ষ ৫০ হাজার মানুষকে উদ্ধার করে বিভিন্ন আস্রয়কেন্দ্রে রাখা হয়েছে। অবশিষ্ট লোকজন উঁচু ভবনে বা ছাদে আশ্রয় নিয়েছেন।
একই সূত্র জানায়, ইতোমধ্যে সরকারি বেসরকারি উদ্যোগে ৬০ হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার বিতরণ করা হয়েছে। সেনাবাহিনী কর্তৃক হেলিকপ্টারের মাধ্যমে ৩৮ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসক মুছাম্মত শাহীনা আক্তার বলেন, প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে সেনাবাহিনী, বিমান বাহিনী, নৌ বাহিনী, বিজিবি, কোস্টগার্ড, ফায়ার সার্ভিস, বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এবং ছাত্র-জনতার সমন্বয়ে কন্যা কবলিত এলাকায় ত্রাণ বিতরণের সহযোগিতা ও উদ্ধার কাজ চলমান রয়েছে।
তিনি আরো বলেন, দেশের রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ, সুশীল সমাজ ও আপামর জনগণের সহযোগিতা পেলে সুন্দরভাবে ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করা সম্ভব হবে।
এই দুর্যোগময় মুহূর্তে ব্যবসায়ীদের প্রতি মানবিক হতে আহ্বান জানিয়ে জেলা প্রশাসক বলেন, বন্যাকে অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করে আপনার দ্রব্যমূল্যের দাম বাড়াবেন না।
বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ফুটে উঠছে ক্ষয়ক্ষতির চিত্র। মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন পানিবাহিত রোগে। এই মুহূর্তে ফেনীতে বিশুদ্ধ পানি, খাদ্য ও ওষুধ সংকট দেখা দিয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারি-বেসরকারি ত্রাণ সহায়তা অব্যাহত রয়েছে। তবে তা চাহিদার তুলনায় এখনও অপ্রতুল। স্থানীয়রা জানান, এসব বিষয় জরুরিভাবে ব্যবস্থা না হলে এখানে গুরুতর মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
উল্লেখ্য, চলতি মাসের ২০ আগস্ট থেকে অতি ভারী বৃষ্টি ও ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পানির তোড়ে ফেনী জেলায় ভয়াবহ বন্যার সৃষ্টি হয়। এ অঞ্চলের মুহুরী কহুয়া সিলোনিয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে অন্তত ৩০ স্থান ভেঙে পানি ঢুকে বন্যার সৃষ্টি হয়। গত জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহের প্রথম দফা এবং চলতি আগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহের দ্বিতীয় দফা এবং ২০ আগস্ট থেকে তৃতীয় দফা বন্যাকবলিত হয় এসব উপজেলার মানুষজন।
ঢাকার মেট্রো রেলের স্থায়ী কার্ড এখন থেকে যাত্রীরা ঘরে বসেই রিচার্জ করতে পারবেন। ২৫ নভেম্বর থেকে চালু হতে যাওয়া এই সেবা ব্যবহার করে ব্যাংকের ক্রেডিট/ডেবিট কার্ড, বিকাশ, নগদ, রকেটসহ অনলাইন ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে সহজেই টাকা ভরা যাবে।
প্রধান উপদেষ্টা (সড়ক, সেতু ও রেল মন্ত্রণালয়)-এর বিশেষ সহকারী শেখ মইনউদ্দিন এই সেবা উদ্বোধন করবেন। শুরুতে ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ) ওয়েবসাইটের লিঙ্কের মাধ্যমে রিচার্জ করা যাবে, পরবর্তী সময় একটি অ্যাপের মাধ্যমে একই সেবা পাওয়া যাবে।
ডিটিসিএর নির্বাহী পরিচালক নীলিমা আখতার জানিয়েছেন, এই ব্যবস্থা চালু হলে যাত্রীদের স্টেশনে লাইন ধরে কার্ড রিচার্জ করতে হবে না। সময় বাঁচবে এবং ভোগান্তি কমবে।
অনলাইনে রিচার্জের পর কার্ডটি স্টেশনে থাকা ‘অ্যাড ভ্যালু মেশিন’ (এভিএম) এ স্পর্শ করিয়ে হালনাগাদ করতে হবে। একবার স্পর্শ করানোর পর, কার্ডের টাকা শেষ না হওয়া পর্যন্ত আর স্পর্শের প্রয়োজন নেই।
বর্তমানে মেট্রো রেলে দুই ধরনের স্থায়ী কার্ড ব্যবহার হচ্ছে—ডিএমটিসিএলের এমআরটি পাস এবং ডিটিসিএর র্যাপিড পাস। নতুন ব্যবস্থায় উভয় কার্ডের জন্যই অনলাইন রিচার্জ করা সম্ভব।
ডিটিসিএর তথ্য অনুযায়ী, প্রতিটি স্টেশনের দুটি স্থানে এভিএম যন্ত্র বসানো হবে। উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ১৬টি স্টেশনে মোট ৩২টি যন্ত্র বসানো হবে।
মেট্রো রেলের যাত্রী সুবিধা সম্প্রসারণে এই উদ্যোগ বড় ধাপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। বর্তমানে ৫৫ শতাংশ যাত্রী র্যাপিড বা এমআরটি কার্ড ব্যবহার করেন। অনলাইনে রিচার্জের সুবিধা চালু হলে দৈনিক যাত্রী চলাচলের গতি আরও বাড়বে।
বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দামে টানা অস্থিরতার পর অবশেষে মূল্যবান ধাতুটির দামে দেখা গেল স্বস্তির ছোঁয়া। দেশের বাজারে আরেক দফা কমেছে স্বর্ণের দাম। দেশের বাজারে সবশেষ ৫ দফা দাম সমন্বয়ে ৩ বারই বেড়েছে স্বর্ণের দাম। তবে সবশেষ টানা ২ দফায় কমানো হয়েছে মোট ৬ হাজার ৮১১ টাকা। এ দফায় ভরিতে ১ হাজার ৩৬৪ টাকা কমিয়ে ২২ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম ২ লাখ ৬ হাজার ৯০৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। আজ বুধবার (১৯ নভেম্বর) থেকে স্বর্ণ বিক্রি হচ্ছে নতুন দামে। তবে আগের দামেই বিক্রি হবে রুপা।
গতকাল মঙ্গলবার রাতে এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস)। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, স্থানীয় বাজারে তেজাবি স্বর্ণের (পিওর গোল্ড) দাম কমায় সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় স্বর্ণের নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে।
নতুন দাম অনুযায়ী, দেশের বাজারে প্রতি ভরি (১১.৬৬৪ গ্রাম) ২২ ক্যারেটের স্বর্ণের দাম ২ লাখ ৬ হাজার ৯০৮ টাকা। এ ছাড়া ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি ১ লাখ ৯৭ হাজার ৪৯৫ টাকা, ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি ১ লাখ ৬৯ হাজার ২৯১ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ১ লাখ ৪০ হাজার ৭৬১ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বাজুস জানায়, স্বর্ণের বিক্রয়মূল্যের সঙ্গে আবশ্যিকভাবে সরকার-নির্ধারিত ৫ শতাংশ ভ্যাট ও বাজুস-নির্ধারিত ন্যূনতম মজুরি ৬ শতাংশ যুক্ত করতে হবে। তবে গহনার ডিজাইন ও মানভেদে মজুরির তারতম্য হতে পারে।
সবশেষ গত ১৫ নভেম্বর দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম সমন্বয় করেছিল বাজুস। সেদিন ভরিতে ৫ হাজার ৪৪৭ টাকা কমিয়ে ২২ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম ২ লাখ ৮ হাজার ২৭২ টাকা নির্ধারণ করেছিল সংগঠনটি।
এ ছাড়া ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি ১ লাখ ৯৮ হাজার ৮০১ টাকা, ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি ১ লাখ ৭০ হাজার ৩৯৯ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ১ লাখ ৪১ হাজার ৭১৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল। যা ১৬ নভেম্বর থেকে কার্যকর হয়।
এ নিয়ে চলতি বছর মোট ৭৮ বার দেশের বাজারে সমন্বয় করা হলো স্বর্ণের দাম। যেখানে দাম বাড়ানো হয়েছে ৫৩ বার, আর কমেছে মাত্র ২৫ বার। আর ২০২৪ সালে দেশের বাজারে মোট ৬২ বার স্বর্ণের দাম সমন্বয় করা হয়। যেখানে ৩৫ বার দাম বাড়ানো হয়েছিল, আর কমানো হয়েছিল ২৭ বার।
বাংলাদেশে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডের রায় দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। ভারতের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা বিবিসিকে আভাস দিয়েছেন, এই রায়ের ফলে শেখ হাসিনাকে নিয়ে দিল্লির অবস্থান আদৌ বদলাচ্ছে না এবং তাকে বাংলাদেশের হাতে তুলে দেওয়ারও প্রশ্ন উঠছে না।
বস্তুত শেখ হাসিনা এই পর্বে যখন থেকে ভারতে পা রেখেছেন, মানে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট থেকে আজ পর্যন্ত তাকে আশ্রয় দেওয়া নিয়ে ভারতের অবস্থান একই রয়েছে। সেটি হলো – একটি বিশেষ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সুরক্ষা ও নিরাপত্তার কথা ভেবে তাকে ভারতে ‘সাময়িক’ (ফর দ্য টাইম বিয়িং) আশ্রয় দেওয়া হয়েছে, এর বেশি কিছু নয়।
গতকাল বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে সাজা ঘোষণার পরেও ভারতের সেই অবস্থান অপরিবর্তিতই থাকছে। এর অর্থ, তাকে আশ্রয় দেওয়ার সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করা হতে পারে, এমন সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না।
হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায়: প্রতিক্রিয়ায় যা বলল ভারত
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে গত বছর ৫ আগস্ট দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে গেছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে তার মৃত্যুদণ্ডের রায় দিয়েছেন আদালত। এ নিয়ে এবার আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানাল ভারত। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে এ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক ঘোষিত রায়টি ভারতের নজরে এসেছে (নোটেড)। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ভারতের নিকটতম প্রতিবেশী বাংলাদেশ এবং দেশটির জনগণের শান্তি, গণতন্ত্র, অংশগ্রহণমূলক রাজনীতি ও স্থিতিশীলতাকে ভারত সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেখে।
এ অঞ্চলে দীর্ঘদিনের অভিন্ন ইতিহাস ও সম্পর্কের কথা উল্লেখ করে ভারত জানিয়েছে, বাংলাদেশের জনগণের সর্বোত্তম স্বার্থ নিশ্চিত করতে তারা সবসময় গঠনমূলক ভূমিকা পালন করতে ইচ্ছুক।
ভারতের বিবৃতিতে আরও জোর দিয়ে বলা হয়, দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি যাই হোক, ভারতের লক্ষ্য হবে বাংলাদেশের সব স্টেকহোল্ডারের সঙ্গে ইতিবাচক ও কার্যকর যোগাযোগ বজায় রাখা—যাতে দেশটির স্থিতিশীলতা ও শান্তিপূর্ণ ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করা যায়।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে গণভোট হবে একই দিনে। গত ১৩ নভেম্বর (বৃহস্পতিবার) জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে এ ঘোষণা দেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
ভাষণের আগে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে ‘জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ, ২০২৫’ অনুমোদন করা হয়। পরে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এ আদেশ জারি করেন।
চারটি বিষয়ের ওপর একটি প্রশ্নে হবে গণভোট। গণভোটের দিন এই চারটি বিষয়ের ওপর একটিমাত্র প্রশ্নে ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ ভোট দিয়ে জনগণ মতামত জানাবেন। গণভোটে ‘হ্যাঁ’ জয়ী হলে আগামী সংসদ হবে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট। সংসদ নির্বাচনে দলগুলোর প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে (পিআর পদ্ধতি) ১০০ সদস্য নিয়ে উচ্চকক্ষ গঠিত হবে।
চারটি বিষয়ে অনুষ্ঠিত হওয়া গণভোটের ব্যালটে কী ধরনের প্রশ্ন থাকছে—এ নিয়ে প্রস্তাব তৈরি করা হয়েছে। মঙ্গলবার (১৮ নভেম্বর) বেলা ১১টার প্রধান উপদেষ্টার অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে একটি প্রশ্ন প্রকাশ করা হয়।
‘জুলাই সনদের আলোকে গণভোটের ব্যালটে উপস্থাপনীয় প্রশ্নে’ উল্লেখ করে বলা হয়, আপনি কি জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ, ২০২৫ এবং জুলাই জাতীয় সনদে লিপিবদ্ধ সংবিধান সংস্কার সম্পর্কিত নিম্নলিখিত প্রস্তাবগুলোর প্রতি আপনার সম্মতি জ্ঞাপন করছেন?
ক. নির্বাচনকালীন সময়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার, নির্বাচন কমিশন এবং অন্যান্য সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান জুলাই সনদে বর্ণিত প্রক্রিয়ার আলোকে গঠন করা হবে।
খ. আগামী সংসদ হবে দুই কক্ষ বিশিষ্ট। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলগুলোর প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে ১০০ সদস্য বিশিষ্ট একটি উচ্চকক্ষ গঠিত হবে এবং সংবিধান সংশোধন করতে হলে উচ্চকক্ষের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের অনুমোদন দরকার হবে।
গ. সংসদে নারীর প্রতিনিধি বৃদ্ধি, বিরোধী দল থেকে ডেপুটি স্পিকার ও সংসদীয় কমিটির সভাপতি নির্বাচন, প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ সীমিতকরণ, রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বৃদ্ধি, মৌলিক অধিকার সম্প্রসারণ, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও স্থানীয় সরকার-সহ বিভিন্ন বিষয়ে যে ৩০টি প্রস্তাবে জুলাই জাতীয় সনদে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্যমত হয়েছে সেগুলো বাস্তবায়নে আগামী নির্বাচনে বিজয়ী দলগুলো বাধ্য থাকবে।
ঘ. জুলাই সনদে বর্ণিত অন্যান্য সংস্কার রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিশ্রুতি অনুসারে বাস্তবায়ন করা হবে।
কোনো দণ্ডিত ব্যক্তির বক্তব্য প্রচার না করতে গণমাধ্যমগুলোর প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে জাতীয় সাইবার নিরাপত্তা এজেন্সি (এনসিএসএ)।
সোমবার রাতে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মুহম্মদ জসীম উদ্দিন।
এতে বলা হয়, এনসিএসএ অত্যন্ত উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছে, দেশে কিছু প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া এবং অনলাইন নিউজ পোর্টাল দণ্ডপ্রাপ্ত এবং পলাতক আসামি শেখ হাসিনার বক্তব্য ও বিবৃতি প্রচার করছে। প্রচারিত এসব বক্তব্যে সামাজিক স্থিতিশীলতা (সোশ্যাল হারমনি) বিঘ্নিত করার পাশাপাশি সরাসরি সহিংসতা, বিশৃঙ্খলা ও অপরাধমূলক কার্যকলাপ সৃষ্টির আহ্বান বা নির্দেশনা রয়েছে।
দণ্ডপ্রাপ্ত এবং পলাতক আসামিদের বক্তব্য প্রচার সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর নিয়মাবলীর পরিপন্থী। বিশেষত অধ্যাদেশের ধারা ৮(২) অনুযায়ী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ডিজিটাল বা ইলেকট্রনিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত এমন তথ্য, যেগুলো দেশের অখণ্ডতা, নিরাপত্তা বা জনশৃঙ্খলা বিঘ্নিত করে, জাতিগত/ধর্মীয় বিদ্বেষ ছড়ায় কিংবা সহিংসতার আহ্বান জানায়, সেসব তথ্য অপসারণ বা ব্লক করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে।
আরও স্পষ্টভাবে, অধ্যাদেশের ধারা ২৬ (১) অনুযায়ী, ‘ছদ্ম পরিচয়’ বা অবৈধ প্রবেশের মাধ্যমে যদি কেউ ঘৃণা, জাতিগত বিদ্বেষ বা সহিংসতা প্ররোচনাকারী বক্তব্য প্রকাশ বা প্রচার করেন, তা অপরাধ এবং দণ্ডনীয়। ধারা ২৬ (২) অনুযায়ী, অপরাধীদের সর্বোচ্চ দুই বছরের কারাদণ্ড অথবা সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা জরিমানা আরোপ করা যেতে পারে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও উল্লেখ করা হয়, এনসিএসএ সাংবাদিকতা ও অভিব্যক্তির স্বাধীনতাকে সম্মান করে। তাই দণ্ডপ্রাপ্ত আসামির সহিংসতা, বিশৃঙ্খলা, অপরাধমূলক, উসকানিমূলক বা আহ্বানমূলক যেকোনো বিবৃতি প্রচার করা থেকে বিরত থাকতে এবং আইনি দায়বদ্ধতা বিবেচনায় রাখতে গণমাধ্যমকে অনুরোধ করা হলো।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আজ মঙ্গলবার (১৮ নভেম্বর) চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। খসড়া তালিকা অনুযায়ী ১২ কোটি ৭৬ লাখ ১২ হাজার ৩৮৪ জন নাগরিক ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন। আজকের চূড়ান্ত ভোটার তালিকায় ভোটার সংখ্যা কিছুটা বাড়তে পারে বলে জানা গেছে। চূড়ান্ত ভোটার তালিকার ভোটাররা আসন্ন নির্বাচনে ভোট দেওয়ার সুযোগ পাবেন।
ইসির দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
গত ৩ নভেম্বর হালনাগাদ খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করেছিল ইসি। সেই খসড়া অনুযায়ী, মোট ভোটারের মধ্যে পুরুষ ভোটার রয়েছেন ৬ কোটি ৪৭ লাখ ৬০ হাজার ৩৮২ জন, নারী ভোটারের সংখ্যা ৬ কোটি ২৮ লাখ ৫০ হাজার ৭৭২ জন, এবং ১ হাজার ২৩০ জন হিজড়া ভোটার রয়েছেন।
নতুন প্রকাশিতব্য চূড়ান্ত তালিকায় যারা ২০২৫ সালের ৩১ অক্টোবরের মধ্যে ১৮ বছর পূর্ণ করেছেন, তারা অন্তর্ভুক্ত হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছেন। এর ফলে, তারা আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে প্রথমবারের মতো ভোট দিতে পারবেন।
ইসি সচিব আখতার আহমেদ জানান, যারা ২০২৫ সালের ৩১ অক্টোবরের মধ্যে ১৮ বছর পূর্ণ করেছেন, তারা এই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছেন। ফলে তারা আগামী জাতীয় নির্বাচনে ভোট দিতে পারবেন। চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের পর নির্বাচন কমিশন নির্বাচন আয়োজনের পরবর্তী ধাপের কাজ শুরু করবে বলেও জানান তিনি।
প্রবাসে থাকা বাংলাদেশি ভোটারদের ভোটাধিকার প্রয়োগের পথ সুগম করতে মঙ্গলবার (১৮ নভেম্বর) সন্ধ্যায় ‘পোস্টাল ভোট বিডি’ নামের একটি মোবাইল অ্যাপ উদ্বোধন করতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এই অ্যাপের মাধ্যমে প্রবাসীরা আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আইটি সাপোর্টেড পোস্টাল ব্যালটে ভোট দিতে পারবেন।
নির্বাচন কমিশনের (ইসি) পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, মঙ্গলবার বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৬টায় নির্বাচন ভবনের অডিটোরিয়ামে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘পোস্টাল ভোট বিডি’ অ্যাপটির উদ্বোধন করা হবে।
ইসির জনসংযোগ শাখার সহকারী পরিচালক মো. আশাদুল হক সাংবাদিকদের কাছে এই তথ্য নিশ্চিত করেন।
উদ্বোধনের পরপরই অ্যাপটি ব্যবহার করে প্রবাসে অবস্থানরত বাংলাদেশি ভোটাররা তাদের নাম, ঠিকানা এবং জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) নম্বর দিয়ে নিবন্ধন করতে পারবেন এবং ভোটার তালিকায় নিজেদের নাম ওঠাতে পারবেন।
এই অ্যাপটি শুধুমাত্র প্রবাসীরা নন, আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিভিন্ন ক্যাটাগরির ভোটাররাও ভোট দেওয়ার সুযোগ পাবে। প্রবাসে অবস্থানরত বাংলাদেশি ভোটাররা। নির্বাচনী দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তিরা। নিজ ভোটার এলাকার বাইরে কর্মরত সরকারি চাকরিজীবীরা এবং আইনি হেফাজতে থাকা ভোটাররা।
আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম)-এর সহায়তায় লিবিয়ার বেনগাজীর গানফুদা ডিটেনশন সেন্টার থেকে ১৭০ জন বাংলাদেশি দেশে ফিরেছেন।
মঙ্গলবার (১৮ নভেম্বর) সকালে তারা বুরাক এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট ইউজেড২২২-এর মাধ্যমে দেশে ফিরেছেন।
বিমানবন্দরের একটি সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। সূত্র জানায়, সব আনুষ্ঠানিকতা শেষে এরইমধ্যে বিমানবন্দর ত্যাগ করেছেন প্রত্যাবাসিতরা।
আইওএম-এর সহায়তায় সোমবার (১৭ নভেম্বর) বেনগাজীর গানফুদা ডিটেনশন সেন্টার থেকে ১৭০ জন বাংলাদেশি নাগরিককে আইওএম-এর সহায়তায় দেশে প্রত্যাবাসন করা হয়।
উল্লেখ্য, লিবিয়ার বিভিন্ন ডিটেনশন সেন্টারে আটক বাংলাদেশি নাগরিকদের নিরাপদ প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে বাংলাদেশ দূতাবাস, লিবিয়া স্থানীয় কর্তৃপক্ষ ও আইওএম নিবিড়ভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
স্বর্ণ ও হীরা চোরাচালানের মাধ্যমে ৬৭৮ কোটি টাকা বিদেশে পাচারের অভিযোগে ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক দিলীপ কুমার আগারওয়ালের বিরুদ্ধে মামলা করেছে সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট। মঙ্গলবার সকালে এ মামলা দায়ের করা হয়।
স্বর্ণ ও হীরা চোরাচালানের অভিযোগে ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড এবং এর স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে গত বছরের ৩ সেপ্টেম্বর থেকে অনুসন্ধান শুরু করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ফিন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট।
তিনি প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে বিভিন্ন জেলায় নামমাত্র শোরুমের মাধ্যমে প্রকৃত ডায়মন্ডের বদলে উন্নত মানের কাচের টুকরোকে প্রকৃত ডায়মন্ড হিসেবে বিক্রি, দুবাই ও সিংগাপুরে সোনা চোরাচালান সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ, ভারতের কলকাতায় তিনটি জুয়েলারি দোকান ও ১১টি বাড়ি এবং মালয়েশিয়া, দুবাই ও কানাডায় বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন বলে তথ্য রয়েছে।
এছাড়াও বিভিন্নভাবে প্রতারণার মাধ্যমে ৪০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে অবৈধভাবে একটি ব্যাংকের পরিচালক হওয়ার অভিযোগ পাওয়ায় সিআইডির ফিন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট তার এবং এর স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং আইনে অনুসন্ধান শুরু করে।
নভেম্বরের প্রথম ১৬ দিনে রেমিট্যান্স প্রবাহ ৩৫.২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ১ হাজার ৬৯৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে। প্রবাসীদের রেমিট্যান্স পাঠানোর এই সুখবরটি সোমবার (১৭ নভেম্বর) দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, নভেম্বরের প্রথম ১৬ দিনে রেমিট্যান্স প্রবাহ ৩৫ দশমিক ২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ১ হাজার ৬৯৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। গত বছর একই সময়ে দেশে রেমিট্যান্স প্রবাহ ছিল ১ হাজার ২৫৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে ১৬ নভেম্বর পর্যন্ত প্রবাসীরা ১১ হাজার ৮৪৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ১০ হাজার ১৯৩ মিলিয়ন ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান জানিয়েছেন, গত ৫ নভেম্বর এক দিনে প্রবাসীরা দেশে ১২ কোটি ৩০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে ৫ নভেম্বর পর্যন্ত দেশে এসেছে ১ হাজার ৭৩ কোটি ৩০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স। বছর ব্যবধানে যা বেড়েছে ১৪ দশমিক ৭০ শতাংশ।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ডের সাজা দিয়ে রায় ঘোষণা করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। সোমবার ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল এ রায় দেন। ট্রাইব্যুনালের অন্য দুই সদস্য হলেন-বিচারপতি শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারপতি মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী। এদিকে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও সোমবার শেখ হাসিনার মামলার রায় ঘোষণার খবরকে গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ করা হয়েছে।
বার্তা সংস্থা এএফপির শিরোনামে বলা হয়েছে, মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ড দিল আদালত। বিবিসি শিরোনাম করেছে, বিক্ষোভ দমনে নৃশংসতার দায়ে বাংলাদেশের সাবেক নেত্রী শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ড।
আল জাজিরার শিরোনামে বলা হয়েছে, মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে হাসিনার মৃত্যুদণ্ড। সিএনএন শিরোনাম করেছে, মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত নেত্রী শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ড।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের শিরোনামে বলা হয়েছে, শিক্ষার্থীদের ওপর নির্যাতনের দায়ে বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী হাসিনার মৃত্যুদণ্ড। ব্রিটিশভিত্তিক গণমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান শিরোনাম করেছে, মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ড।
ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভির শিরোনামে বলা হয়েছে, ‘মানবতাবিরোধী অপরাধের’ জন্য বাংলাদেশে শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ড। অপরদিকে পাকিস্তানি গণমাধ্যম ডন শিরোনাম করেছে, শিক্ষার্থীদের ওপর নির্যাতনের দায়ে বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী হাসিনার মৃত্যুদণ্ড।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার এ মামলার রায়ের জন্য ১৭ নভেম্বর দিন ঠিক করেছিলেন ট্রাইব্যুনাল। মামলায় শেখ হাসিনার সঙ্গে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মামুনও আসামি। তাদের মধ্যে মামুন আসামি থেকে রাজসাক্ষী বনে যান এবং দায় স্বীকার করে ট্রাইব্যুনালে জবানবন্দি দেন।
এ মামলায় শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মোট পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়। সেগুলো হলো—গত বছরের ১৪ জুলাই গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনার ‘উসকানিমূলক বক্তব্য’ দেওয়া; হেলিকপ্টার, ড্রোন ও প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করে আন্দোলনকারীদের নির্মূল করার নির্দেশ দেওয়া; রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদকে গুলি করে হত্যার নির্দেশ; রাজধানীর চানখাঁরপুল এলাকায় ছয় আন্দোলনকারীকে গুলি করে হত্যার নির্দেশ এবং আশুলিয়ায় ছয়জনকে পুড়িয়ে হত্যার নির্দেশ দেওয়া।
মামলার তিন আসামির মধ্যে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামাল পলাতক। দুজনই এখন ভারতে অবস্থান করছেন। এ মামলায় গ্রেপ্তার একমাত্র আসামি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন নিজের দোষ স্বীকার করে ‘অ্যাপ্রুভার’বা রাজসাক্ষী হিসেবে ট্রাইব্যুনালে জবানবন্দি দেন।
ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেওয়া মৃত্যুদণ্ডের রায়কে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আরেকটি বিজয়’ বলে উল্লেখ করেছেন আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল। তিনি বলেন, বাংলাদেশে ন্যায়বিচারের ইতিহাসে এ রায় একটি স্মরণীয় ও ঐতিহাসিক মাইলফলক।
সোমবার সচিবালয়ে সংবাদ ব্রিফিংয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে আইন উপদেষ্টা বলেন, আজকের রায় কোনো প্রকার রাজনৈতিক প্রতিহিংসা নয়, বরং অকাট্য ও প্রত্যক্ষ প্রমাণের ভিত্তিতে প্রদত্ত ন্যায়বিচারের ফলাফল। তিনি বলেন, শেখ হাসিনা ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে যে তাজা, জোরালো ও বিস্তৃত প্রমাণ আদালতে উপস্থাপিত হয়েছে, তাতে পৃথিবীর যে কোনো আদালতেই তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি হতো।
তিনি বলেন, চব্বিশের জুলাই-আগস্টে সংঘটিত সহিংসতা, গুলিবর্ষণ, অপহরণ, আটক, নির্যাতন ও গণহত্যার ধারাবাহিকতার বিষয়গুলো বিচার প্রক্রিয়ায় অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচিত হয়েছে। এসব ঘটনার নৃশংসতায় যে বিপুল প্রাণহানি ও স্থায়ী শারীরিক ক্ষত সৃষ্টি হয়েছিল, তা দেশের গণতান্ত্রিক সুরক্ষা ব্যবস্থার ওপর ভয়াবহ আঘাত হেনেছিল।
ব্রিফিংয়ের সময় আবেগাপ্লুত হয়ে আইন উপদেষ্টা বলেন, জুলাই আন্দোলনে যারা প্রাণ দিয়েছেন-আবু সাঈদ, মুগ্ধ, ওয়াসিম, ইয়ামিন, আনাস, রিয়াগোপসহ অসংখ্য শহীদের কথা আজ বিশেষভাবে স্মরণ করছি। তিনি বলেন, আজকের রায়ে হয়তো তাদের বিদেহী আত্মা সামান্য হলেও শান্তি পাবে এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারগুলোর জন্য এটি দীর্ঘ প্রতীক্ষিত সান্ত্বনা এনে দেবে।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনাকে দেশে প্রত্যর্পণের জন্য ভারতকে আবারও আনুষ্ঠানিক চিঠি পাঠানো হবে। ভারত যদি মানবতা বিরোধী অপরাধে দণ্ডিত ব্যক্তিকে আশ্রয়দান অব্যাহত রাখে, তবে তা বাংলাদেশের প্রতি শত্রুতামূলক ও নিন্দনীয় আচরণ হিসেবে বিবেচিত হবে। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক আইনি কাঠামোর মধ্যেই সরকার প্রত্যর্পণ প্রক্রিয়া এগিয়ে নিচ্ছে এবং আইনি আনুষ্ঠানিকতা জোরদার করা হচ্ছে।
বিচারকার্য অব্যাহত রাখার প্রত্যয় ব্যক্ত করে আইন উপদেষ্টা বলেন, বর্তমান সরকার যতদিন দায়িত্বে আছে, বিচার পূর্ণ উদ্যমে এগিয়ে চলবে। তিনি আরও বলেন, আগামী সরকার যেই হোক, জাতির প্রত্যাশা-এই গুরুদায়িত্ব থেকে তারা যেন কোনো অবস্থাতেই পিছিয়ে না যায়।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মো. তাজুল ইসলাম বলেছেন, ‘শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে রায়ের মাধ্যমে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় জাতির প্রতিজ্ঞা পূরণ হয়েছে। এতে প্রমাণ হয়েছে অপরাধী যতই ক্ষমতাশালী হোক, সে আইনের ঊর্ধ্বে নয়।’
সোমবার ট্রাইব্যুনালে রায় ঘোষণার পর সাংবাদিকদের কাছে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তিনি এসব কথা বলেন।
এই রায়ে জুলাই আন্দোলনের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। একই সঙ্গে দোষ স্বীকার করে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে পাঁচ বছরের সাজা দেওয়া হয়।
চিফ প্রসিকিউটর বলেন, ‘বাংলাদেশ এমন একটি রাষ্ট্র, যেখানে যত বড় অপরাধী হোক, অপরাধের জন্য তাকে জবাবদিহির মুখোমুখি হতে হবে। এটাও প্রমাণিত হয়েছে, বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক মানদণ্ড বজায় রেখে মানবতাবিরোধী অপরাধের মতো জটিল অপরাধের বিচার করতে সক্ষম।’
তিনি বলেন, ‘এ রায়ের ফলে যে ১ হাজার ৪০০ তরতাজা তরুণ জীবন দিয়েছেন, তাদের পরিবারে কিছুটা স্বস্তিই প্রসিকিউশনের প্রাপ্তি। একটি বিচারিক প্রক্রিয়াকে সম্পন্ন করার মাধ্যমে এই জাতিকে বিচারহীনতার কলঙ্ক থেকে মুক্ত করার আমাদের যে ক্ষুদ্র প্রয়াস, সেটা যদি সফল হয় সেটাতেই আমাদের সাফল্য।’
তাজুল ইসলাম আরও বলেন, ‘যে ধরনের সাক্ষ্য-প্রমাণ এখানে দেখানো হয়েছে, বিশ্বের যেকোনো আদালতের মানে এই সাক্ষ্য-প্রমাণ উৎরে যাবে।’
তিনি বলেন, ‘পৃথিবীর যেকোনো আদালতে এই সাক্ষ্য-প্রমাণ উপস্থাপন করা হলে আজ (সোমবার) যেসব আসামিকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে, তারা একই শাস্তি পাবে।’