আক্রান্ত ১১ জেলা থেকে ধীরে ধীরে নামছে বন্যার পানি। তবে পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ফুটে উঠছে ক্ষয়ক্ষতির চিহ্ন। দুর্গম যেসব এলাকায় এত দিন যাওয়া সম্ভব হয়নি সরকারি-বেসরকারি ত্রাণকর্মী ও স্বেচ্ছাসেবীদের, এখন সেসব এলাকায় পৌঁছাচ্ছেন তারা। তবে ত্রাণের জন্য হাহাকার সবখানে। আশার কথা, নতুন বাংলাদেশে বন্যা মোকাবিলায় সব মানুষ দাঁড়িয়েছেন একসঙ্গে। তাই গত ৫ দিনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের আহ্বানে রাজধানীসহ সারা দেশের মানুষ সাড়া দিচ্ছেন, প্রধান উপদেষ্টার আহ্বানে তার ত্রাণ তহবিলেও মিলছে বিপুল সাড়া। তবে উপদ্রুত এলাকার মানুষ চাইছেন নগদ সহায়তা-ত্রাণের খাবার, বিশুদ্ধ পানি, ওষুধের পাশাপাশি ঘরবাড়ি মেরামত এবং ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড ও কৃষিতে সহায়তা। তবে সব মহলের একটা লক্ষ্য, যত দ্রুত সম্ভব পানিবন্দি মানুষের কাছে ত্রাণ হিসেবে খাবার ও পানি পৌঁছে দেওয়া। এদিকে, জলমগ্ন এলাকাগুলোতে বারবার পানিতে নামতে বাধ্য হওয়ায় অনেক মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন পানিবাহিত রোগে। উপদ্রুত জেলাগুলোতে ডায়রিয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এসব এলাকার হাসপাতালগুলোসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিকে একযোগে কাজ করছেন চিকিৎসক-নার্সদের পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবীরা।
এদিকে, বন্যার পানি নামতে শুরু করায় বোঝা যাচ্ছে ক্ষয়-ক্ষতির মাত্রা। ফেনী শহরের বাসিন্দা ষাটোর্ধ্ব মো. সাখাওয়াত হোসেন দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘গত শুক্রবার আসরের নামাজের পরেও তার এলাকাতে বন্যার লেশমাত্র ছিল না। তবে কোথা থেকে হঠাৎ এত দ্রুত গতিতে ঢলের পানি আসা শুরু করে যে মাগরিবের নামাজের আগেই কোমরসমান পানিতে ভরে যায় চারপাশ। প্রাণে বাঁচতে তার চার তলা বাসায় মুহূর্তে প্রতিবেশীদের অনেকে ভিড় করেন। এ কয় দিন বাসার দোতলা থেকে চতুর্থ তলায় বাসিন্দারাসহ ৪০ জন মানুষ আশ্রয় নিয়েছিলেন। এমন প্রতিবেশীও প্রাণ বাঁচাতে আশ্রয়ে ছিলেন যাদের তিনি আগে চিনতেনও না। পানি ছিল ভীষণ ঠাণ্ডা। এখন পানি মোটামুটি নেমে গেছে। তবে নিচতলার ভাড়াটিয়া কোনো কিছুই সরাতে পারেননি। তার সব সম্পদ পানিতে ভিজে নষ্ট হয়ে গেছে। এমন অবস্থা শহরের একতলা বা টিনশেডসহ সাধারণ ঘরে যারা ছিলেন তাদের সবার। এসব মানুষ সব হারিয়েছেন। তারা এখন কীভাবে বাঁচবেন তা আল্লাহ জানেন। এমন ঢল আমার জীবনে কখনো দেখিনি।’
বন্যায় ক্ষতির এমন চেহারা প্রায় সবখানে। পুকুরসহ মাছের ঘেরগুলো ভেসে গেছে, নষ্ট হয়েছে কৃষকের মাঠের ফসল, ব্যবসায়ীদের দোকানে পানি ঢুকে নষ্ট হয়েছে সব মালপত্র, ঘরের কোনো আসবাবপত্র আর ব্যবহারযোগ্য নেই। এই পরিস্থিতি এখন ফেনী, নোয়াখালীসহ আশপাশের সবগুলো জেলায়।
এদিকে, চলমান বন্যায় ১১ জেলায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ২৩ জনে দাঁড়িয়েছে। অন্যদিকে বন্যায় মোট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ৫৭ লাখ ১ হাজার ২০৪ জন। এছাড়া, ফেনী ও কুমিল্লা জেলার নিম্নাঞ্চলে বিদ্যমান বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি অব্যাহত রয়েছে। সব নদ-নদীর পানি কমতে শুরু করেছে।
আজ সোমবার বন্যা পরিস্থিতির সর্বশেষ তথ্য তুলে ধরে এই তথ্য জানান দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব কামরুল হাসান।
মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব জানান, বন্যা আক্রান্ত জেলার সংখ্যা ১১টি। এগুলো হচ্ছে ফেনী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সিলেট, লক্ষ্মীপুর ও কক্সবাজার। আক্রান্ত এসব জেলায় ৭৪টি উপজেলার মোট ১২ লাখ ৩৮ হাজার ৪৮টি পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে এবং ক্ষতিগ্রস্ত লোকসংখ্যা ৫৭ লাখ ১ হাজার ২০৪ জন।
তিনি জানান, পানিবন্দি-ক্ষতিগ্রস্ত লোকদের আশ্রয় প্রদানের জন্য মোট ৩ হাজার ৮৩৪ টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে এবং আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে মোট ৪ লাখ ৬৯ হাজার ৫২৩ জন মানুষ এবং ২৮ হাজার ৯০৭ টি গবাদি পশুকে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। ১১ জেলার ক্ষতিগ্রস্তদের চিকিৎসা সেবা সেবায় মোট ৬৪৫টি মেডিকেল টিম চালু রয়েছে।
কামরুল হাসান বলেন, এ পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ২৩ জন। এর মধ্যে কুমিল্লায় ৬ জন, ফেনীতে একজন, চট্টগ্রামে ৫ জন, খাগড়াছড়িতে একজন, নোয়াখালীতে ৫ জন, ব্রাহ্মণবাড়ীয়ায় একজন, লক্ষ্মীপুরে একজন ও কক্সবাজারে ৩ জন বন্যার কারণে মারা গেছেন ৷ এছাড়াও মৌলভীবাজারে ২ জন নিখোঁজ রয়েছেন।
এদিকে, পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের সোমবারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় পূর্বাঞ্চলীয় কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও ফেনী জেলার ভারতীয় ত্রিপুরা সীমান্তবর্তী অঞ্চলে এবং ত্রিপুরা প্রদেশের অভ্যন্তরীণ অববাহিকায় উল্লেখযোগ্য বৃষ্টিপাত হয়নি। উজানে নদ-নদীর পানি কমার ধারা অব্যাহত আছে। ফলে বর্তমানে ফেনী ও কুমিল্লা জেলার নিম্নাঞ্চলের বিদ্যমান বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি অব্যাহত রয়েছে।
একই সঙ্গে মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলার নদীগুলোর পানি বিপৎসীমার নিচে নেমে এসেছে। তবে এখনও কুশিয়ারা, গোমতি ও মুহুরী নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় দেশের পূর্বাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন উজানে হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টিপাত হতে পারে। এ সময়ে এ অঞ্চলের কুমিল্লা জেলার গোমতী নদীর পানি কমতে পারে এবং এ অঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে। একই সঙ্গে আগামী ২৪ ঘণ্টায় ফেনী জেলার নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি হতে পারে। তবে কোনও কোনও স্থানে স্থিতিশীল থাকতে পারে।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানায়, আজ দেশের তিনটি নদীর তিন স্টেশনের পানি বিপৎসীমার ওপরে দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। রোববার ৪ নদীর ৬টি স্টেশনের পানি বিপদসীমার ওপরে ছিল। এরমধ্যে গোমতির নদীর কুমিল্লা স্টেশনের পানি ৭৮ থেকে নেমে আজ ৪৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছে।
এছাড়া মুহুরী নদীর পরশুরাম স্টেশনের পানি আজ বিপৎসীমার ওপরে আছে। তবে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় পানির উচ্চতা সম্পর্কে জানা যায়নি। এদিকে রোববার কুশিয়ারা নদীর পানি তিন স্টেশনে বিপৎসীমার ওপরে থাকলেও আজ তা নেমে শুধু অমলশীদ পয়েন্টের পানি বিপৎসীমার ৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছে। রবিবার বিপৎসীমার ওপরে থাকা মনু নদীর মৌলভীবাজার স্টেশনের পানি আজ বিপৎসীমার নিচে নেমে গেছে।
আবহাওয়া সংস্থাগুলোর তথ্য অনুযায়ী, আগামী ৪৮ ঘণ্টায় দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও উজানে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা নেই। এ সময় উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলার মনু, খোয়াই, ধলাই নদীর পানি আরও কমতে পারে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় ফেনী জেলার নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে, তবে কোনও কোনও স্থানে স্থিতিশীল থাকতে পারে।
আবহাওয়া সংস্থাগুলোর তথ্যমতে, আগামী ২৪ ঘণ্টায় দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল ও উজানে মাঝারি বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা আছে। এ সময় এ অঞ্চলের বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম জেলার সাঙ্গু, মাতামুহুরি, কর্ণফুলী, হালদা ও অন্যান্য প্রধান নদীগুলোর পানি সময় বিশেষে বাড়তে পারে।
এছাড়াও ব্রহ্মপুত্র-যমুনা এবং দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সুরমা-কুশিয়ারা নদীর পানি কমছে, গঙ্গা-পদ্মা নদীর পানি স্থিতিশীল আছে, উত্তরাঞ্চলের তিস্তা-ধরলা-দুধকুমার নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ বিরাজমান আছে, যা আগামী ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে।
দেশে সোমবার সকাল পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ বৃষ্টি হয়েছে যশোরে ২২২ মিলিমিটার। এছাড়া বরগুনায় ১২০, বরিশালে ১০৪, টেকনাফে ১০১, পটুয়াখালী ৮৮, নোয়াখালী ৮৭, গোপালগঞ্জের হরিদাশপুরে ৮৫, কক্সবাজারে ৮২ এবং বান্দরবানের লামায় ৭০ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। এদিকে উজানে আসামের তেজপুরে ১৯, ত্রিপুরায় ১২ এবং চেরাপুঞ্জিতে ২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।
এদিকে, আজ রাতে একসঙ্গে ফারাক্কা বাঁধের ১০৯টি জলকপাট খুলে দেওয়ায় দেশের উত্তরাঞ্চলের রাজশাহী, চাঁপাই নবাবগঞ্জসহ আশেপাশের জেলাগুলোর নিম্নাঞ্চলে নতুন করে বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। যদিও এ বিষয়ে নতুন কোনও তথ্য বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র থেকে পাওয়া যায়নি।
বন্যা উপদ্রুত এলাকায় সরকারি-বেসরকারিসহ সব পর্যায় থেকে ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত আছে জানিয়ে মন্ত্রণালয় বলছে, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে বিতরণের জন্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে ১১ জেলায় মোট ৩ কোটি ৫২ লাখ টাকা, ২০ হাজার ৬৫০ মেট্রিক টন চাল, ১৫ হাজার প্যাকেট শুকনা ও অন্যান্য খাবার, ৩৫ লাখ টাকার শিশুখাদ্য এবং ৩৫ লাখ টাকার গো-খাদ্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া দেশের সব জেলায় পর্যাপ্ত ত্রাণসামগ্রী মজুত রয়েছে।
কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টের জিওসির তথ্যের বরাত দিয়ে ত্রাণ সচিব জানান, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মাধ্যমে কুমিল্লা জেলার সব উপজেলায় সড়ক পথে পর্যাপ্ত পরিমাণ খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে। এছাড়া সেনাবাহিনীর ৪টি মেডিকেল টিম প্রয়োজনীয় ওষুধসহ কুমিল্লা জেলার ৪ উপজেলায় নিয়োজিত করা হয়েছে।
ফেনীতে স্বাস্থ্য সেবা দিতে ফিল্ড হাসপাতাল প্রস্তুত করা হয়েছে জানিয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সচিব বলেন, সেনাবাহিনী ও জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের চিকিৎসকরা সেবা দিচ্ছন। পাশাপাশি স্থানীয় ক্লিনিক, হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠানগুলোকে বন্যার্তদের প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করার জন্য সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকগণ নির্দেশনা দিয়েছেন।
কামরুল হাসান বলেন, বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পানিবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিতে পারে। সে ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সচেতন হতে হবে এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিলে সহায়তা দেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে সচিব কামরুল হাসান বলেন, যারা ব্যক্তিগতভাবে উপস্থিত হয়ে প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ তহবিলে সহায়তা (চেক/পে-অর্ডার/ব্যাংক ড্রাফটের মাধ্যমে) দিতে চান তারা প্রধান উপদেষ্টার পক্ষে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার কাছেও তা দিতে পারেন। সরকারি ছুটি ছাড়া প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে ৪টা পর্যন্ত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে উপদেষ্টার কার্যালয়ে এই সহায়তা নেওয়া হবে।
যারা ত্রাণ তহবিলে সহায়তা (চেক/পে-অর্ডার/ব্যাংক ড্রাফট এর মাধ্যমে) দিতে ইচ্ছুক তাদের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব অঞ্জন চন্দ্র পাল (মোবাইল ০১৭১৮-০৬৬৭২৫) এবং সিনিয়র সহকারী সচিব শরিফুল ইসলামের (মোবাইল-০১৮১৯২৮১২০৮) সঙ্গে যোগাযোগ করার অনুরোধ জানিয়েছেন ত্রাণ সচিব।
নোয়াখালীতে আবারও বেড়েছে পানি
নোয়াখালী প্রতিনিধি জানান, বন্যা ও জলাবদ্ধতায় বিপর্যস্ত নোয়াখালীতে থেমে থেমে বৃষ্টিপাতের কারণে আবারও বাড়ছে পানি। আবহাওয়া কিছুটা ভালো থাকায় বৃহস্পতিবার থেকে গত শনিবার বিকেল পর্যন্ত পানি কিছুটা কমলেও সেদিন রাত ১০টার পর থেকে থেমে থেমে বৃষ্টির কারণে আবারও কোথাও কোথাও এক ফুট থেকে দুই ফুট পানি বেড়েছে বলে দাবি করেছেন স্থানীয়রা। জেলা প্রশাসনের হিসাবে জেলায় ২০ লাখের বেশি মানুষ পানিবন্দি আছেন।
বন্যার কারণে জেলায় এখন পর্যন্ত পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। তারা হলেন, সেনবাগ উপজেলার ইয়ারপুর গ্রামের জিলহাজুল ইসলাম (১০), কেশারপাড় ইউনিয়নের বীরকোট পশ্চিম পাড়ার দুই বছর বয়সী শিশু আবদুর রহমান এবং সদর উপজেলার কালাদরপ ইউনিয়নের পূর্ব শুল্লকিয়া গ্রামের আড়াই বছরের রিয়ান। এরমধ্যে শিশু রিয়ান বন্যার পানিতে ডুবে মারা গেছে। এছাড়াও বন্যার পানির কারণে ঘরের ভেতর বিদ্যুৎস্পৃষ্টে মারা যান সেনবাগ উপজেলার দক্ষিণ মোহাম্মদপুর গ্রামের কাকন কর্মকার (৩০) ও বেগমগঞ্জের চৌমুহনী পৌরসভার আলীপুর গ্রামের আবুল কালাম আজাদ (৫০)।
এদিকে ফেনী থেকে বন্যার পানি ডাকাতিয়া নদী দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার কারণে সেনবাগ, সোনাইমুড়ি, চাটখিল ও বেগমগঞ্জ উপজেলায় পানির চাপ বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে নোয়াখালী বন্যা পরিস্থিতি আরো অবনতি ও জনদুর্ভোগ বাড়ার আশংকা রয়েছে।
বন্যাকবলিত বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, জেলার ৮টি উপজেলার প্রায় ৯০ ভাগ মানুষ পানিবন্দি হয়ে আছেন। প্রতিটি বাড়িতে ৩ থেকে ৫ ফুট জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। নিচু এলাকাগুলোতে জলাবদ্ধতা দেখা গেছে ৬ থেকে ৭ ফুট। বসতঘরে পানি প্রবেশ করায় বুধবার রাত পর্যন্ত অনেকে খাটের ওপর অবস্থান করলেও বৃহস্পতিবার সকাল থেকে তারা নিকটস্থ আশ্রয় কেন্দ্র, প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে অবস্থান নিয়েছেন। বসত ও রান্নাঘরে পানি ঢুকে পড়ায় খাবার সংকটে রয়েছে বেশির ভাগ মানুষ। জেলার প্রধান সড়কসহ প্রায় ৮০ ভাগ সড়ক কয়েক ফুট পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। বন্যার পানি ঢুকে পড়ায় বেশিরভাগ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়েছে। সড়কগুলোতে যান চলাচল অনেকটাই কম।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, জেলার আট উপজেলার ৮৭ ইউনিয়ন ও সাতটি পৌরসভার ২০ লাখ ৩৬ হাজার সাতশ মানুষ পানিবন্দী রয়েছেন। এরমধ্যে আটশ ২৬টি কেন্দ্রে একলক্ষ ৫৩ হাজার চারশ ৫৬ জন মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। পানিবন্দী মানুষের জন্য নগদ ৪৫ লক্ষ টাকা ও ১৮শ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ করা হয়েছে। পাশাপাশি স্বাস্থ্যসেবায় ৮৮টি মেডিকেল টিম কাজ করছে।
ফেনীর তিন উপজেলায় বেড়েছে বন্যার পানি
ফেনী প্রতিনিধি জানান, ফেনীতে বন্যার পানি নামতে শুরু করেছে ফুলগাজী, পরশুরাম ও ছাগলনাইয়া উপজেলায়। বিপৎসীমার নিচে প্রবাহিত হচ্ছে মুহুরি কহুয়া ও ছিলোনিয়া নদীর পানি ৷ তবে পানিবন্দি রয়েছেন এসব এলাকার লক্ষ লক্ষ মানুষ ৷ ফেনী পৌর শহরের দু-তিনটি সড়ক ও বাসা বাড়িতে পানি কমলেও এখনো অনেক সড়ক ও বিভিন্ন ভবনের নিচতলা পানিতে সয়লাব।
ইতোমধ্যে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে ফেনী সদর, সোনাগাজী এবং দাগনভূঞা উপজেলায়। বন্যা এখানে প্রকট আকার ধারণ করেছে । এখানে এখনও পানিবন্দি কয়েক লাখ মানুষ৷ বন্যার পানি দ্রুত নেমে যাওয়ার জন্য ফেনীর মুহুরী রেগুলেটরের ৪০টি স্লুইসগেট ও নোয়াখালীর মুছাপুরের ১৭ টি স্লুইসগেট খুলে দেয়া হয়েছে।
গত রবিবার থেকে ফেনী শহরের বিদ্যুতের ৯টি লাইন সচল হয়েছে, তবে দুই-তৃতীয়াংশ বিদ্যুৎ সংযোগ এখনও বিচ্ছিন্ন রয়েছে। গত ৪দিন ধরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ থাকার পর রবিবার বিকেল থেকে যান চলাচল কিছুটা স্বাভাবিক হয়েছে। জেলার অধিকাংশ এলাকায় মোবাইল নেটওয়ার্ক অচল রয়েছে।
ফেনীতে বন্যা শুরু হওয়ার পর থেকে সেনাবাহিনী, নৌ-বাহিনী, বিমান বাহিনী, বিজিবি, কোস্ট গার্ড, ফায়ার সার্ভিস, বিভিন্ন স্থান থেকে আসা ডুবুরি দলসহ বেশ কয়েকটি স্বেচ্ছাসেবী টিম পরশুরাম ছাগলনাইয়া, সোনাগাজী এবং দাগনভূঞা এলাকায় নৌকা, স্পিডবোট নিয়ে উদ্ধার কাজ ও ত্রাণ তৎপরতা চলমান রেখেছে ৷ এসব প্রতিষ্ঠান ছাড়াও স্থানীয়ভাবে এবং বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা হতে আগত সরকারি সংস্থা, বিশ্ববিদ্যালয়, সামাজিক সংগঠন, মানবিক সংগঠন তথা বেসরকারি বিভিন্ন সংগঠন জনগণের মাঝে ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত রেখেছে।
জরুরি স্বাস্থ্যসেবায় জেলার ১টি এবং ছয়টি উপজেলায় ছয়টি মেডিকেল ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়াও বেসরকারি ৬টি হাসপাতালে মেডিকেল ক্যাম্প চালু রয়েছে। জেলা শহরে এসব বেসরকারি হাসপাতালসমূহ হল: কনসেপ্ট হাসপাতাল, মেডিনোভা হাসপাতাল মেডিল্যাব, আল আকসা হাসপাতাল, জেড ইউ মডেল হাসপাতাল, মিশন হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার।
জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, প্রতিটি উপজেলায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্যাকবলিত মানুষজনদের আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে খিচুড়ি ও শুকনা খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন শাখা সূত্র জানায়, এখন পর্যন্ত জেলায় ৮ লাখ মানুষ বন্যায় আক্রান্ত। এপর্যন্ত ১ লক্ষ ৫০ হাজার মানুষকে উদ্ধার করে বিভিন্ন আস্রয়কেন্দ্রে রাখা হয়েছে। অবশিষ্ট লোকজন উঁচু ভবনে বা ছাদে আশ্রয় নিয়েছেন।
একই সূত্র জানায়, ইতোমধ্যে সরকারি বেসরকারি উদ্যোগে ৬০ হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার বিতরণ করা হয়েছে। সেনাবাহিনী কর্তৃক হেলিকপ্টারের মাধ্যমে ৩৮ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসক মুছাম্মত শাহীনা আক্তার বলেন, প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে সেনাবাহিনী, বিমান বাহিনী, নৌ বাহিনী, বিজিবি, কোস্টগার্ড, ফায়ার সার্ভিস, বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এবং ছাত্র-জনতার সমন্বয়ে কন্যা কবলিত এলাকায় ত্রাণ বিতরণের সহযোগিতা ও উদ্ধার কাজ চলমান রয়েছে।
তিনি আরো বলেন, দেশের রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ, সুশীল সমাজ ও আপামর জনগণের সহযোগিতা পেলে সুন্দরভাবে ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করা সম্ভব হবে।
এই দুর্যোগময় মুহূর্তে ব্যবসায়ীদের প্রতি মানবিক হতে আহ্বান জানিয়ে জেলা প্রশাসক বলেন, বন্যাকে অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করে আপনার দ্রব্যমূল্যের দাম বাড়াবেন না।
বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ফুটে উঠছে ক্ষয়ক্ষতির চিত্র। মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন পানিবাহিত রোগে। এই মুহূর্তে ফেনীতে বিশুদ্ধ পানি, খাদ্য ও ওষুধ সংকট দেখা দিয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারি-বেসরকারি ত্রাণ সহায়তা অব্যাহত রয়েছে। তবে তা চাহিদার তুলনায় এখনও অপ্রতুল। স্থানীয়রা জানান, এসব বিষয় জরুরিভাবে ব্যবস্থা না হলে এখানে গুরুতর মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
উল্লেখ্য, চলতি মাসের ২০ আগস্ট থেকে অতি ভারী বৃষ্টি ও ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পানির তোড়ে ফেনী জেলায় ভয়াবহ বন্যার সৃষ্টি হয়। এ অঞ্চলের মুহুরী কহুয়া সিলোনিয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে অন্তত ৩০ স্থান ভেঙে পানি ঢুকে বন্যার সৃষ্টি হয়। গত জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহের প্রথম দফা এবং চলতি আগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহের দ্বিতীয় দফা এবং ২০ আগস্ট থেকে তৃতীয় দফা বন্যাকবলিত হয় এসব উপজেলার মানুষজন।
দেশে দীর্ঘদিন ধরেই সাধারণ মানুষের কাছে নিরাপদ বিনিয়োগ মাধ্যম হিসেবে সঞ্চয়পত্র অত্যন্ত জনপ্রিয়। অনেক নিম্ন মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত সঞ্চয়পত্রের মুনাফার টাকায় পরিবারের খরচ চালান। গত সপ্তাহে সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে বেশি ঋণ নিতে মুনাফার হার বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। সঞ্চয়পত্রের ধরন অনুযায়ী এ হার বেড়ে হতে যাচ্ছে ১২ দশমিক ২৫ থেকে ১২ দশমিক ৫৫ শতাংশ পর্যন্ত। তাই এখনই সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের উপযুক্ত সময় বলে মনে করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা।
জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের চালু সঞ্চয় কর্মসূচির (স্কিম) সংখ্যা ১১। এগুলোর মধ্যে ৪টি সঞ্চয়পত্র, ২টি ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংক হিসাব, ১টি ডাক জীবন বীমা, ১টি প্রাইজবন্ড এবং ৩টি প্রবাসীদের জন্য বন্ড। সব কর্মসূচিতে বিনিয়োগের বিপরীতে সুদ বা মুনাফার হার ভিন্ন। সুদ বা মুনাফার ওপর উৎসে কর কর্তনের হারও ভিন্ন।
বর্তমানে চার ধরনের সঞ্চয়পত্র চালু রয়েছে। এগুলো হলো পাঁচ বছরমেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র, পরিবার সঞ্চয়পত্র, তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র ও পেনশনার সঞ্চয়পত্র। বর্তমানে সঞ্চয়পত্র কেনা ও মুনাফা উত্তোলনের ব্যবস্থা ডিজিটাল হয়েছে। জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের ৭১টি সঞ্চয় ব্যুরো কার্যালয়, বাংলাদেশ ব্যাংকের সব কার্যালয়, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক, ডাকঘর ছাড়াও বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে সঞ্চয়পত্র কেনা ও ভাঙানো যায়।
জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের আওতায় পরিচালিত সঞ্চয় কর্মসূচিগুলোর (স্কিম) মুনাফার হার বাড়ছে। বর্ধিত হার নির্ধারণের আদেশ জারি করতে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগকে (আইআরডি) গত ৮ জানুয়ারি অনুরোধ জানিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ। চিঠির সঙ্গে অর্থ বিভাগ দুটি সংযুক্তিও দিয়েছে, যাতে সঞ্চয়পত্রের ধরন ও মেয়াদ অনুযায়ী মুনাফার হারের কথা উল্লেখ করেছে। বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, কোনো সঞ্চয়পত্রের মুনাফাই ১২ শতাংশের কম হবে না। সবচেয়ে কম মুনাফা পাওয়া যাবে ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংকের বিপরীতে। এর হার ১২ দশমিক ২৫ শতাংশ। আর সবচেয়ে বেশি মুনাফা পাওয়া যাবে পেনশনার সঞ্চয়পত্রে, যে হার হবে ১২ দশমিক ৫৫ শতাংশ। ৭ লাখ ৫০ হাজার টাকার নিচের বিনিয়োগকারীদের জন্য আরও বেশি হার রাখারও সুপারিশ করেছে অর্থ বিভাগ।
বিনিয়োগকারীদের দুটি ধাপ হচ্ছে
শুধু সুদের হারের পরিবর্তন নয়, বিনিয়োগকারীদের ধাপেও পরিবর্তন আনার কথা বলেছে অর্থ বিভাগ। বর্তমানে ধাপ রয়েছে তিনটি- ১৫ লাখ টাকা; ১৫ লাখ ১ টাকা থেকে ৩০ লাখ টাকা এবং ৩০ লাখ ১ টাকার বেশি। প্রতিটি ধাপে রয়েছে আলাদা মুনাফার হার। বিদ্যমান নিয়ম অনুযায়ী, পাঁচ বছরমেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রে বর্তমানে মেয়াদ শেষে ১১ দশমিক ২৮ শতাংশ মুনাফা পাওয়া যায়। এই সঞ্চয়পত্রে ১৫ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগকারীরা মেয়াদ শেষে মুনাফা পাবেন ১০ দশমিক ৩০ শতাংশ হারে। আর ৩০ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগ থাকলে মুনাফার হার হবে সাড়ে ৯ শতাংশ।
নতুন নিয়মে দুটি ধাপের কথা বলা হয়েছে। একটি ধাপে থাকবেন ৭ লাখ ৫০ হাজার টাকার নিচের বিনিয়োগকারীরা। আরেকটি ধাপে থাকবেন এর ওপরের বিনিয়োগকারীরা।
পাঁচ বছরমেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রের উদাহরণ দিয়েই বলা যায়, নতুন হারে ৭ লাখ ৫০ হাজার টাকার নিচের বিনিয়োগকারীরা পাবেন ১২ দশমিক ৪০ শতাংশ। আর ৭ লাখ ৫০ হাজার টাকার বেশি বিনিয়োগকারীরা পাবেন সামান্য কম অর্থাৎ ১২ দশমিক ৩৭ শতাংশ।
অন্যগুলোর ক্ষেত্রেও এভাবে দুটি করে হার হবে। বরাবরের মতো নতুন হারেও সবচেয়ে বেশি সুবিধা পাবেন পেনশনার সঞ্চয়পত্রের বিপরীতে বিনিয়োগকারীরা। ৭ লাখ ৫০ হাজার টাকার নিচের বিনিয়োগকারীরা পাবেন ১২ দশমিক ৫৫ শতাংশ। এর বেশি বিনিয়োগকারীরা পাবেন ১২ দশমিক ৩৭ শতাংশ। তবে মেয়াদপূর্তির আগে ভাঙালে সব সঞ্চয়পত্রের বিপরীতেই মুনাফার হার কমবে।
কোন সঞ্চয়পত্রের কত মেয়াদ
নামের মধ্যেই রয়েছে পাঁচ বছরমেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র পাঁচ বছরের মেয়াদের। পরিবার সঞ্চয়পত্র ও পেনশনার সঞ্চয়পত্রের নামের মধ্যে মেয়াদ উল্লেখ না থাকলেও দুটি সঞ্চয়পত্রই পাঁচ বছর মেয়াদের। এ ছাড়া রয়েছে তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র। পরিবার সঞ্চয়পত্রের সুদ মাসিক ভিত্তিতে এবং তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র ও পেনশনার সঞ্চয়পত্রের সুদ ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে তোলা যায়।
কারা কোন সঞ্চয়পত্র কিনতে পারবেন
সবাই সব ধরনের সঞ্চয়পত্র কিনতে পারেন না। এ ব্যাপারে সরকার কিছু শর্ত ঠিক করে দিয়েছে। যেমন ১৮ বছর ও তার চেয়ে বেশি বয়সের যেকোনো বাংলাদেশি নারী, যেকোনো বাংলাদেশি শারীরিক প্রতিবন্ধী নারী ও পুরুষ এবং ৬৫ বছর ও তার চেয়ে বেশি বয়সি বাংলাদেশি নারী ও পুরুষেরা শুধু একক নামে পরিবার সঞ্চয়পত্র কিনতে পারবেন।
পেনশনার সঞ্চয়পত্রও কিনতে পারেন না সবাই। অবসরভোগী সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আধা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ও কর্মচারী, সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি, সশস্ত্র বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সদস্য এবং মৃত সরকারি চাকরিজীবীর পারিবারিক পেনশন সুবিধাভোগী স্বামী, স্ত্রী ও সন্তানেরা এ সঞ্চয়পত্র কিনতে পারেন।
পাঁচ বছরমেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র এবং তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র সবার জন্য উন্মুক্ত। ১৮ বছর বা তার বেশি বয়সি যেকোনো শ্রেণি-পেশার মানুষ একক বা যুগ্ম নামে এ দুই ধরনের সঞ্চয়পত্র কিনতে পারেন। তবে নাবালকের পক্ষে সঞ্চয়পত্র কেনার এখন আর সুযোগ নেই।
সঞ্চয়পত্রের গ্রাহক কোনো কারণে মারা গেলে টাকা পাবেন তার মনোনীত ব্যক্তি বা নমিনি। সঞ্চয়পত্রে এক বা একাধিক নমিনি করার সুযোগ রয়েছে। যদিও নমিনি মনোনয়ন বাধ্যতামূলক নয়। তবে ভবিষ্যতে নগদায়ন ঝামেলা এড়াতে গ্রাহকরা সাধারণত নমিনি মনোনয়ন করে থাকেন। নাবালককেও নমিনি করা যায়। গ্রাহকের মৃত্যুর তিন মাসের মধ্যে আদালত থেকে উত্তরাধিকার সনদ নিয়ে সঞ্চয়পত্রের নগদায়ন করতে হয়। গ্রাহক ও নমিনি উভয়ই মারা গেলে সঞ্চয়পত্র ভাঙাতে পারেন আইনানুগ উত্তরাধিকারীরা।
ব্যক্তি সঞ্চয়পত্র কিনতে যা যা লাগে
কোনো ব্যক্তি সঞ্চয়পত্র কিনতে গেলে তাকে ৮ থেকে ৯ ধরনের কাগজ জোগাড় করতে হয়। প্রথমেই লাগবে তার জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) ফটোকপি। দুই লাখ বা তারও বেশি টাকার সঞ্চয়পত্র কিনতে লাগবে করদাতা শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) সনদের ফটোকপি।
বিনিয়োগের পরিমাণ দুই লাখ টাকার মধ্যে হলে নগদে পরিশোধ করা যাবে, তবে দুই লাখ টাকার বেশি হলেই তা পরিশোধ করতে হবে ব্যাংকের চেকের মাধ্যমে। যে নামে সঞ্চয়পত্র কিনতে ইচ্ছুক, চেক দিতে হবে সেই নামের ব্যাংক হিসাবেরই। একক নামে সঞ্চয়পত্র কেনার ক্ষেত্রে একক নামে ব্যাংক হিসাবের চেক এবং যুগ্ম নামে সঞ্চয়পত্র কেনার ক্ষেত্রে যুগ্ম নামে ব্যাংক হিসাবের চেক দিতে হবে।
আবেদনের সঙ্গে নমিনির এনআইডির ফটোকপিও দিতে হবে। নমিনি নাবালকও হতে পারবে। সে ক্ষেত্রে নমিনির জন্মনিবন্ধন সনদ বা পাসপোর্টের ফটোকপি দিতে হবে। নাবালক নমিনির পক্ষে দিতে হবে মনোনীত অভিভাবকের এনআইডির ফটোকপিও। ব্যক্তি ছাড়া প্রতিষ্ঠানও নমিনি হতে পারবে। সে ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধনের সনদ বা স্থানীয় সরকারের (ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা বা সিটি করপোরেশন) প্রত্যয়নপত্র লাগবে। সঞ্চয়পত্রের ক্রেতা বা গ্রাহকের এবং নমিনির দুই কপি করে পাসপোর্ট আকারের ছবি লাগবে। গ্রাহকের ছবি সত্যায়ন করবেন ইস্যুকারী কর্মকর্তা এবং নমিনির ছবি সত্যায়ন করবেন সঞ্চয়পত্রের গ্রাহক।
প্রভিডেন্ট ফান্ড
ভবিষ্য তহবিলের (প্রভিডেন্ট ফান্ড) অর্থ সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করা যায়। এ বিনিয়োগ করে প্রতিষ্ঠানগুলো। এ ক্ষেত্রেও কিছু নিয়ম-কানুন রয়েছে। প্রথমেই সংশ্লিষ্ট কর কমিশনারের কার্যালয় থেকে স্বীকৃতপত্র নিতে হবে। আবেদনের সঙ্গে দিতে হবে প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের ভবিষ্য তহবিল সংরক্ষণবিষয়ক সরকারি গেজেট বা প্রজ্ঞাপনের কপি।
ভবিষ্য তহবিলের নামে যে টিআইএন সনদ আছে সেটা এবং ব্যাংক হিসাবের চেক ও হিসাব বিবরণী জমা দিতে হবে। যে প্রতিষ্ঠান সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সে প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদের কার্যবিবরণী এবং আবেদনকারীদের নাম, পদবি ও স্বাক্ষরসংক্রান্ত প্রত্যয়নপত্র দাখিল করতে হবে। সবশেষে লাগবে একটি ফরওয়ার্ড লেটার।
অটিস্টিকদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান
যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অটিস্টিকদের জন্য গড়ে উঠেছে, এখন সেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক তিন বছরমেয়াদি সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করতে পারে। তবে ২০২০ সালের ডিসেম্বরের আগে এ ধরনের কোনো প্রতিষ্ঠান এ সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করতে পারত না।
অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের (আইআরডি) জারি করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, শুধু অটিস্টিকদের জন্য গড়ে ওঠা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নয়, যেসব প্রতিষ্ঠান অটিস্টিকদের সহায়তায় কাজ করে, তারাও এ সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করতে পারবে। ব্যক্তির ক্ষেত্রে একক নামে ৫০ লাখ বা যৌথ নামে এক কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র কেনার সুযোগ থাকলেও অটিস্টিকদের জন্য গড়ে ওঠা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য বিনিয়োগের কোনো সীমা বেঁধে দেওয়া হয়নি।
তবে যে প্রতিষ্ঠানই এই সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করতে যাবে, তার আগে সেই প্রতিষ্ঠানকে জেলা সমাজসেবা কার্যালয় থেকে প্রত্যয়নপত্র নিতে হবে। জমা দিতে হবে টিআইএন সনদ এবং ব্যাংক হিসাবের চেক ও হিসাব বিবরণী। যে প্রতিষ্ঠান সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সে প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদের কার্যবিবরণী এবং আবেদনকারীদের নাম, পদবি ও স্বাক্ষরসংক্রান্ত প্রত্যয়নপত্র দাখিল করতে হবে। সবশেষে লাগবে একটি ফরওয়ার্ড লেটার।
পেনশনার
এ সঞ্চয়পত্র যেখান থেকে কেনা হয়, সেখানে ভবিষ্য তহবিলের চূড়ান্ত মঞ্জুরিপত্র দাখিল করতে হবে। এ ছাড়া লাগবে প্রাপ্ত আনুতোষিকের মঞ্জুরিপত্র এবং পেনশন বইয়ের ফটোকপি। নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের একটি সনদও দাখিল করতে হয় এ সঞ্চয়পত্র কেনার আবেদনের সঙ্গে।
জানুয়ারি মাসের প্রথম ১১ দিনে ৭৩ কোটি ৬৬ লাখ ১০ হাজার ডলারের রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় পাঠিয়েছেন বিভিন্ন দেশে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিরা। বাংলাদেশি মুদ্রায় (প্রতি ডলার ১২২ টাকা ধরে) যার পরিমাণ ৮ হাজার ৯৮৬ কোটি ৫২ লাখ টাকা। সে হিসাবে প্রতিদিন আসছে ৮১৬ কোটি টাকার বেশি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইট সূত্রে রোববার এ তথ্য জানা গেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, জানুয়ারি মাসের প্রথম ১১ দিনে এসেছে ৭৩ কোটি ৬৬ লাখ ১০ হাজার ডলারের রেমিট্যান্স। এভাবে রেমিট্যান্স আসার গতি অব্যাহত থাকলে চলতি মাসেও দুই বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে রেমিট্যান্স। আলোচিত সময়ে সরকারি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে রেমিট্যান্স এসেছে ২০ কোটি ১৯ লাখ ৩০ হাজার ডলার, বিশেষায়িত দুই ব্যাংকের মধ্যে এক ব্যাংকের (কৃষি ব্যাংক) মাধ্যমে এসেছে ২ কোটি ৪৮ লাখ ৫০ হাজার ডলার। বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ৫০ কোটি ৭৩ লাখ ৩০ হাজার ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে। আর বিদেশি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ২৫ লাখ ডলারের বেশি।
এর আগে সদ্যবিদায়ী ডিসেম্বর মাসে দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ২ দশমিক ৬৪ বিলিয়ন ডলার বা ২৬৩ কোটি ৯০ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে। দেশীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ ৩১ হাজার ৬৬৮ কোটি টাকার বেশি।
একক মাস হিসাবে আগে কখনই এত পরিমাণ রেমিট্যান্স আসেনি। এর আগে করোনাকালীন ২০২০ সালের জুলাই ২ দশমিক ৫৯ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল। এবার সেই রেকর্ড ভাঙলো ২০২৪ সালের বিজয়ের মাস ডিসেম্বর।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২৪ সালের শেষ মাস ডিসেম্বরের পুরো সময়ে রেমিট্যান্স এসেছে প্রায় ২৬৪ কোটি ডলার। যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৬৪ কোটি ৮০ লাখ ডলার বেশি। গত বছরের ডিসেম্বরে এসেছিল ১৯৯ কোটি ১০ লাখ ডলার। ২০২৪ সালের জুলাই মাস বাদে বাকি ১১ মাসই দুই বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিট্যান্স এসেছে।
তথ্য বলছে, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথমার্ধের (জুলাই-ডিসেম্বরে) এক হাজার ৩৭৭ কোটি ৭০ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন বিভিন্ন দেশে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিরা। যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ২৯৭ কোটি ৭০ লাখ ডলার বেশি এসেছে। গত অর্থবছরের প্রথমার্ধের (জুলাই-ডিসেম্বর) রেমিট্যান্স এসেছিল এক হাজার ৮০ কোটি ডলার।
রাজধানীর পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে ক্ষমতার অপব্যবহার ও অনিয়মের মধ্য দিয়ে ১০ কাঠা করে ৬০ কাঠার ছয়টি প্লট নিজেদের নামে করিয়ে নেওয়ার অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এ ছাড়া এ অনিয়মে সহযোগিতার অভিযোগে মামলায় আরও ১৪ জনকে আসামি করা হয়েছে।
এদিন শুধু শেখ হাসিনার মেয়ে পুতুলের নামে ১০ কাঠা প্লট বরাদ্দে অনিয়মের অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়েছে। অনুসন্ধানে বাকিদের বিরুদ্ধেও প্লট বরাদ্দের প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে জানা গেছে। শিগগিরই বাকিদের বিরুদ্ধে পর্যায়ক্রমে মামলা দায়ের হতে পারে।
রোববার দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে সংস্থাটির সহকারী পরিচালক আফনান জান্নাত কেয়া বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন।
এর আগে দুদকের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) আক্তার হোসেন রাজধানীর সেগুনবাগিচা এলাকায় সংস্থাটির প্রধান কার্যালয়ে সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, ক্ষমতার অপব্যবহার করে শেখ হাসিনা নিজের ও পরিবারের সদস্যদের নামে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের কূটনৈতিক এলাকায় ৬০ কাঠার ৬টি প্লট বরাদ্দ নিয়েছেন।
মূল অভিযোগে রাজনৈতিক বিবেচনায় সরকারের বিশেষ ক্ষমতাবলে শেখ হাসিনা ক্ষমতার অপব্যবহার করে অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের যোগসাজশে নিজের ও ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, বোন শেখ রেহানা, বোনের ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি ও মেয়ে আজমিনা সিদ্দিক রূপান্তির নামে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের ২৭ সেক্টরের কূটনৈতিক জোনের ২০৩ নম্বর রোড থেকে ১০ কাঠা করে মোট ৬০ কাঠার ছয়টি প্লট বরাদ্দের কথা বলা হয়েছে।
মামলার আসামিরা হলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ (পুতুল), জাতীয় গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. শহীদ উল্লা খন্দকার, অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) কাজী ওয়াছি উদ্দিন, প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম সরকার, সিনিয়র সহকারী সচিব পূরবী গোলদার, রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান মো. আনিছুর রহমান মিঞা, সাবেক সদস্য (এস্টেট ও ভূমি) মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, সদস্য (প্রশাসন ও অর্থ) কবির আল আসাদ, সদস্য (উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ) তন্ময় দাস, সদস্য (এস্টেট ও ভূমি) মো. নুরুল ইসলাম, সাবেক সদস্য (পরিকল্পনা) মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন, সাবেক সদস্য মেজর (ইঞ্জি.) সামসুদ্দীন আহমদ চৌধুরী (অব.), পরিচালক (এস্টেট ও ভূমি-২) শেখ শাহিনুল ইসলাম, উপপরিচালক মো. হাফিজুর রহমান ও হাবিবুর রহমান।
অভিযোগে বলা হয়, রাজনৈতিক বিবেচনায় সরকারের বিশেষ ক্ষমতাবলে শেখ হাসিনা ক্ষমতার অপব্যবহার করে অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের যোগসাজশে নিজের ও ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, বোন শেখ রেহানা, বোনের ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি ও মেয়ে আজমিনা সিদ্দিক রূপান্তির নামে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের ২৭ সেক্টরের কূটনৈতিক জোনের ২০০৩ নম্বর রোড থেকে ১০ কাঠা করে মোট ৬০ কাঠার ছয়টি প্লট বরাদ্দ নিয়েছেন।
দেড় দশক দেশ শাসনের পর ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট দেশত্যাগ করে ভারতে আশ্রয় নেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এরপর থেকে সেখানেই রয়েছেন তিনি।
ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসা মাঠের বদলে কেরানীগঞ্জে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার সংশ্লিষ্ট অস্থায়ী আদালতে বিডিআর হত্যাকাণ্ডের বিচার হবে বলে জানিয়েছে আইন মন্ত্রণালয়।
আজ রোববার আইন ও বিচার বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
এতে বলা হয়, ঢাকার বকশীবাজার এলাকার সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা ও ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার সংলগ্ন মাঠে অবস্থিত অস্থায়ী আদালতের পরিবর্কেতে রানীগঞ্জে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার সংশ্লিষ্ট অস্থায়ী আদালতে বিডিআর হত্যাকাণ্ডের বিচার হবে।
এর আগে, গত ৯ জানুয়ারি পুরান ঢাকার বকশীবাজারের আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে অস্থায়ী আদালত বসানোর প্রতিবাদে সড়কে নামেন শিক্ষার্থীরা। তখন মাদ্রাসা মাঠে স্থাপিত অস্থায়ী আদালতের এজলাসও পুড়িয়ে দেওয়া হয়।
শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘আমাদের মাঠ দীর্ঘদিন ধরে সিটি করপোরেশন দখল করে রেখেছিল। আমরা বিশ্বাস করি, জুলাই বিপ্লবের পর এই মাঠ আমাদেরই থেকে যাবে।’
২০২৩ সালের ডিসেম্বরে সংস্কার কাজ শেষে আলিয়া মাদ্রাসার মাঠকে ‘বকশীবাজার কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ’ হিসেবে উদ্বোধন করতে গিয়ে তোপের মুখে পড়েন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) তৎকালীন মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস। মাঠটি সিটি করপোরেশন দখল করছে—অভিযোগ তুলে উদ্বোধনের আগেই বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা।
২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার পিলখানায় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদর দপ্তরে বিদ্রোহের ঘটনায় ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন নিহত হন। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আলোড়ন তোলে ওই ঘটনা।
এই বছরের মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন হওয়া জরুরি বলে ঢাকায় নিযুক্ত ইউরোপী ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলারকে জানিয়েছে বিএনপি। এমনকি একটি নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখা জরুরি বলেও মনে করে দলটি।
রোববার গুলশানে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে বৈঠকে ইইউ রাষ্ট্রদূতকে অবহিত করেন বিএনপির নেতারা।
বৈঠকে বিএনপির চার সদস্যের প্রতিনিধির মধ্যে চেয়ারপারসনের ফরেন অ্যাফেয়ার্স অ্যাডভাইজারি কমিটি সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী এবং পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক বিশেষ সহযোগী উপদেষ্টা কমিটির সদস্য শামা ওবায়েদ উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকের বিষয় নিয়ে আমির খসরু বলেন, ‘বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে যে বিষয়টা গুরুত্বপূর্ণ, সবার মনে প্রশ্ন আছে, সেই বিষয়গুলো বিশেষভাবে আলোচনা হয়েছে। এর মধ্যে একটা হচ্ছে নির্বাচন। কবে নির্বাচন হতে যাচ্ছে? নির্বাচন নিয়ে আমাদের ভাবনা কী? মূলত, নির্বাচনের রোডম্যাপ- এই প্রশ্নটা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।’
‘অগণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় আসলে দেশ বেশি দিন চলতে পারে না। সুতরাং অগণতান্ত্রিক সরকারের রাজনৈতিক ওয়েট থাকে না, রাজনৈতিক মবিলাইজেশন থাকে না, জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক থাকে না এবং জনগণের ফিডব্যাক থাকে না। সেদিকে আমরা গুরুত্ব দিয়েছি’- বলেন আমির খসরু।
তিনি আরও বলেন, ‘তারা (ইইউ) জানতে চেয়েছেন- আগামী দিনে বিএনপি ক্ষমতায় গেলে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড অব্যাহত থাকবে কি না? আমাদের পক্ষ থেকে বিএনপির অর্থনৈতিক সফলতা সম্পর্কে পরিষ্কাভাবে বলেছি। অর্থনীতিকে গর্ত থেকে তুলে আনার জন্য যে প্রোগ্রাম বিএনপি এরই মধ্যে দিয়েছে, সেগুলো বাস্তবায়ন করব। এই সরকারের আমলে যদি কোনো অর্থনৈতিক উদ্যোগ নেওয়া হয়, সেটা আমরা অবশ্যই সমর্থন করব এবং বাংলাদেশের স্বার্থে সেই কাজ অব্যহাত থাকবে।’
তিনি বলেন, ‘অর্থনীতির ক্ষেত্রে বিএনপির নিজস্ব প্রোগ্রাম আছে। নির্বাচিত হলে সেগুলো আমরা অবশ্যই বাস্তবায়ন করব। ওদের বিনিয়োগকারীরা এখানে আসছে, জানতে চাচ্ছে আগামী দিনে স্বাভাবিকভাবে কাজ করা যাবে কি না? এ ব্যাপারে আমরা বলেছি, আমরা বিনিয়োগকারীদের স্বাগত জানাই। বাংলাদেশে বিনিয়োগের প্রয়োজনীয়তা আছে।’
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, সীমান্তে বিজিবি সতর্কাবস্থায় আছে। বিজিবি ও স্থানীয় বাসিন্দাদের শক্ত অবস্থানের কারণে ভারত সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছে।
আজ রোববার সকালে রাজধানীর সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ কথা বলেন উপদেষ্টা।
উপদেষ্টা বলেন, সম্প্রতি সীমান্তের পাঁচটি জায়গায় ভারত কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ কাজ শুরু করলেও বিজিবির ও স্থানীয় মানুষের শক্ত অবস্থানের কারণে ভারত ওই সব স্থানে কাজ বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে।
বিজিবির সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সীমান্তে বেড়া দেওয়ার প্রতিবাদ করায় তিনি সীমান্তবর্তী জেলার অধিবাসীদের ধন্যবাদ জানান।
লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) এর সাথে বিজিবির যোগাযোগ হচ্ছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কেও এ বিষয়ে ইতিমধ্যে জানানো হয়েছে। তারা কূটনৈতিকভাবে এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেবে।
তিনি বলেন, বিগত সরকারের সময়ে সীমান্তে বেড়া দেওয়া নিয়ে যে সব অসম সমঝোতা চুক্তি হয়েছে সেগুলো বাতিলের বিষয়ে চিঠি দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আগামী ফেব্রুয়ারিতে বিজিবি ও বিএসএফ এর মধ্যে ডিজি পর্যায়ে বৈঠক হবে বলেও জানান উপদেষ্টা।
উপদেষ্টা জানান, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার সীমানা নির্ধারণ এবং উভয় দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর দায়িত্ব পালন সংক্রান্ত বিষয়ে বিভিন্ন সময়ে উভয় দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত মোট ৪টি চুক্তি আছে।
তিনি আরও জানান, বাংলাদেশ-ভারত যুগ্ম সীমান্ত নির্দেশাবলী-১৯৭৫ অনুযায়ী উভয় দেশের শূন্য লাইনের ১৫০ গজের মধ্যে প্রতিরক্ষার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট যেকোন কাজ সম্পন্ন করার বিষয়ে সুস্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
এ ছাড়াও উভয় দেশের প্রয়োজনে শূন্য লাইন থেকে ১৫০ গজের মধ্যে যেকোনো উন্নয়নমূলক কাজ সম্পন্নের ক্ষেত্রে একে-অপরের সম্মতি গ্রহণের বাধ্য-বাধকতা রয়েছে।
বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে বিদ্যমান ৪,১৫৬ কিলোমিটার সীমান্তের মধ্যে ৩,২৭১ কিলোমিটার স্থানে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ কাঁটাতারের বেড়া স্থাপন করেছে এবং ৮৮৫ কিলোমিটার স্থানে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ করা হয়নি বলে সংবাদ সম্মেলনে উপদেষ্টা জানান।
সাংবাদিককদের এক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, সীমান্তে আমাদের প্রচুর শক্তি রয়েছে। বিজিবির সাথে জনগণও কঠোরভাবে প্রতিহত করছে। কোনো বিরূপ ঘটনা যাতে না ঘটে সেজন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ভারতীয় হাইকমিশনকে বিষয়টি জানানো হবে।
প্রেস ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মো. খোদা বখস চৌধুরী, পুলিশ মহাপরিদর্শক বাহারুল আলম ও বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, বাংলাদেশের আগামী নির্বাচনকে সরকার এযাবৎকালের সেরা করার পরিকল্পনা করছে, যাতে এটি গণতন্ত্রের একটি ঐতিহাসিক দৃষ্টান্ত হয়ে থাকে।
আজ রোববার ঢাকায় নিযুক্ত নরওয়ের রাষ্ট্রদূত হ্যাকন অ্যারাল্ড গুলব্র্যান্ডসন প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অধ্যাপক ড. ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেলে তিনি একথা বলেন।
প্রধান উপদেষ্টা নরওয়ের প্রতি বাংলাদেশকে এশিয়ায় নরওয়েজিয়ান পণ্যের আঞ্চলিক বিতরণ কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করার এবং বাংলাদেশের যুবশক্তিকে কাজে লাগিয়ে এদেশে আরও বিনিয়োগ করার আহ্বান জানান।
তিনি নরওয়ের রাষ্ট্রদূতকে বলেন, ‘নরওয়ের পণ্য এশিয়ায় বিতরণের জন্য বাংলাদেশকে একটি কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করুন, যাতে আপনাদের নরওয়ে থেকে লোক আনতে না হয় এবং আমাদের তরুণ জনগোষ্ঠীকে কাজে লাগানো যায়।’
অধ্যাপক ইউনুস উদাহরণ হিসেবে বিদেশে নরওয়েজিয়ান টেলিকম জায়ান্ট টেলিনরের প্রথম উদ্যোগ গ্রামীণফোনের কথা উল্লেখ করেন, যা বিগত বছরগুলোতে টেলিনর পরিবারের সবচেয়ে লাভজনক উদ্যোগে পরিণত হয়েছে।
রাষ্ট্রদূত গুলব্রান্ডসেন নরওয়ের প্রধানমন্ত্রী জোনাস গার স্টোরের একটি চিঠি হস্তান্তর করেন, যেখানে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি নরওয়ের দৃঢ় সমর্থন প্রকাশ করা হয়েছে।
রাষ্ট্রদূত বলেন, 'প্রধানমন্ত্রী আপনার প্রয়োজনীয় সংস্কার উদ্যোগ এবং অবাধ ও সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রচেষ্টার প্রতি দৃঢ় সমর্থন জানিয়েছেন।'
রাষ্ট্রদূত জানান, নরওয়ের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের মানবাধিকার রক্ষা এবং পরিবেশগত টেকসই উন্নয়নের অঙ্গীকারের প্রশংসা করেছেন।
রাষ্ট্রদূত গুলব্র্যান্ডসন বলেন, নরওয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে জাহাজ নির্মাণ শিল্প এবং সবুজ জ্বালানি রূপান্তর খাতে নিবিড়ভাবে কাজ করতে আগ্রহী।
প্রধান উপদেষ্টা মিয়ানমারের পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে নরওয়ের সহায়তা কামনা করেন।
তিনি বলেন, ‘শান্তি প্রতিষ্ঠায় নরওয়ে বড় ভূমিকা পালন করেছে। তাই, রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে আপনাদের সহায়তা প্রয়োজন।’
রাষ্ট্রদূত গুলব্র্যান্ডসেন আরও বলেন, ফিলিস্তিন ইস্যু, আন্তর্জাতিক কর এবং প্লাস্টিক দূষণ নিয়ে বৈশ্বিক ফোরামগুলোতে নরওয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে আগ্রহী।
ঢাকায় নরওয়ে দূতাবাসের ডেপুটি হেড অবি মিশন মারিয়ানে রাবে নেভেলস্রুদ ফিলিস্তিনে মানবিক সহায়তা পৌঁছানোর বিষয়ে নরওয়ের নেতৃত্বাধীন জাতিসংঘ প্রস্তাবে পৃষ্ঠপোষকতার জন্য বাংলাদেশের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
সীমান্তে অপরাধ দমনে দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে যে সমঝোতা রয়েছে, সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে তা বাস্তবায়ন করা হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় কুমার ভার্মা।
আজ রোববার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পররাষ্ট্র সচিব জসীম উদ্দিনের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবদিকদের এমন কথা বলেন তিনি।
এ সময়ে অপরাধমুক্ত সীমান্ত নিশ্চিতে ভারতের অঙ্গীকারের বিষয়ে আলোচনা করেন হাইকমিশনার। তিনি বলেন, ‘এতে দুই দেশের সীমান্তে থাকা প্রতিকূলতাগুলো কার্যকরভাবেই সমাধান হবে।’
সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া নিয়ে একটি সমঝোতার কথা উল্লেখ করে এই কূটনীতিক বলেন, ‘দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ ও বিজিবির মধ্যে যোগাযোগ অব্যাহত আছে।’
এছাড়া সীমান্তে চোরাচালানের সংকট নিরসনের প্রতিকূলতাগুলোও নিয়েও কথা বলেন ভারতীয় হাইকমিশনার।
কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ ঘিরে সীমান্তে যে উত্তেজনা চলছে, তা নিরসনে পররাষ্ট্র সচিব জসীম উদ্দিনের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। বিকাল ৩টায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ঢুকতে দেখা গেছে তাকে।
এর আগে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ‘কোনো বিরূপ ঘটনা যাতে না ঘটে, সেজন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ভারতীয় হাইকমিশনকে বিষয়টি জানানো হবে।’
তিনি বলেন, সীমান্তে বিজিবি সতর্কাবস্থায় আছে। বিজিবি ও স্থানীয় বাসিন্দাদের শক্ত অবস্থানের কারণে ভারত সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছে।
‘উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবেলায় ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) সাথে বিজিবির যোগাযোগ হচ্ছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কেও এ বিষয়ে এরইমধ্যে জানানো হয়েছে। তারা কূটনৈতিকভাবে এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেবে।’
তিনি বলেন, বিগত সরকারের সময়ে সীমান্তে বেড়া দেয়া নিয়ে যে সব অসম সমঝোতা চুক্তি হয়েছে সেগুলো বাতিলের বিষয়ে পত্র দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। পরবর্তী মাসে (ফেব্রুয়ারিতে) বিজিবি ও বিএসএফ এর মধ্যে ডিজি পর্যায়ে বৈঠক হবে বলেও উপদেষ্টা জানান।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খানের নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের একটি প্রতিনিধিদল গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় সাক্ষাৎ করেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক বিষয় নিয়মিত অবহিতকরণের অংশ হিসেবে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে উপাচার্য এই সাক্ষাৎ করেন।
প্রধান উপদেষ্টা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণার উন্নয়নসহ সার্বিক পরিস্থিতিতে সন্তোষ প্রকাশ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে বিশেষ মর্যাদা প্রদান, আবাসিক হল নির্মাণ, ‘বিশেষ এন্ডাওমেন্ট ফান্ড’ গঠনসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণার উন্নয়নে তিনি সম্ভাব্য সহযোগিতা প্রদানের আশ্বাস দেন।
সাক্ষাৎকালে প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. সায়মা হক বিদিশা, প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদ, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. এম. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী এবং প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক সাইফুদ্দীন আহমদ উপস্থিত ছিলেন।
এসময় তাঁরা দেশের শিক্ষা ও গবেষণার প্রসার, আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, মহান ভাষা আন্দোলন, স্বাধীনতা সংগ্রাম, ২৪-এর ছাত্র আন্দোলনসহ বাংলাদেশের নবজাগরণের ইতিহাসে অনন্য অবদান রাখায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান শিক্ষার্থীদের আবাসন সংকট নিরসনে দ্রুততম সময়ের মধ্যে কয়েকটি ছাত্রী ও ছাত্র হল নির্মাণ, প্রথম বর্ষ আন্ডারর্গ্যাজুয়েট প্রোগ্রামের সকল অসচ্ছল শিক্ষার্থীকে বৃত্তির আওতায় আনতে ‘বিশেষ এন্ডাওমেন্ট ফান্ড’ গঠন এবং শিক্ষার্থীদের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রের আধুনিকায়নের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন।
এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক পরিস্থিতি, শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রম, বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের অগ্রগতি, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আন্তঃসম্পর্ক উন্নয়ন এবং শিক্ষার্থীদের কল্যাণে সাম্প্রতিক সময়ে গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপ সম্পর্কে প্রধান উপদেষ্টাকে অবহিত করা হয়।
লক্ষ্য অনুযায়ী রাজস্ব আহরণে ব্যর্থ হওয়ায় ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার শেষের বছরগুলোতে অতিমাত্রায় ঋণ নির্ভর হয়ে পড়ে। বাজেট ঘাটতি মেটাতে স্থানীয় ও বিদেশী উৎস থেকে সমান তালে ঋণ নিতে হয়েছে বিগত সরকারকে। শুধুমাত্র শেষের তিন বছরে ঋণ নিতে হয়েছে পৌনে ৭ লাখ কোটি টাকার বেশি। এ ঋণ স্থিতি দেশের শেষ তিন বছরের গড় বাজেটের প্রায় দেড় গুণ। অর্থাৎ ঋণের অর্থ দিয়েই প্রায় দেড় বছরের বাজেট বাস্তবায়ন সম্ভব ছিল। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ থেকে প্রকাশিত সরকারের ঋণসংক্রান্ত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের শেষ ত্রৈমাসিক বুলেটিনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
তথ্যানুসারে, ২০২৪ সালের ৩০ জুন শেষে বাংলাদেশের ঘাড়ে দেশি-বিদেশি ঋণের স্থিতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮ লাখ ৩২ হাজার ২৮২ কোটি টাকা। ২০২১ সালের ৩০ জুন শেষে সরকারের মোট ঋণের পরিমাণ ছিল ১১ লাখ ৪৪ হাজার ২৯৬ কোটি টাকা। অর্থাৎ আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ তিন অর্থবছরে দেশের মোট ঋণের স্থিতি বেড়েছে ৬ লাখ ৮৭ হাজার ৯৮৬ কোটি টাকা। আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি যখন সরকারের দায়িত্ব নেয়, তখন দেশি-বিদেশি ঋণের স্থিতি ছিল ২ লাখ ৭৬ হাজার ৮৩০ কোটি টাকা। সে হিসেবে ক্ষমতাচ্যুত সরকারের শাসন আমলে গত ১৫ বছরে দেশে ঋণ স্থিতি বেড়েছে ১৫ লাখ ৫৫ হাজার ৪৫২ কোটি টাকা।
অর্থ বিভাগের প্রকাশিত ঋণসংক্রান্ত বুলেটিনের তথ্য বলছে, ২০২৪ সালের জুন শেষে দেশি-বিদেশি মোট ঋণের মধ্যে অভ্যন্তরীণ ঋণের পরিমাণ এই প্রথম ১০ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। গত জুন শেষে অভ্যন্তরীণ ঋণের স্থিতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০ লাখ ২০ হাজার ২০৫ কোটি টাকায়। ২০২১ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত যার পরিমাণ ছিল ৭ লাখ ২৩ হাজার ৯৩৯ কোটি টাকা। অথাৎ শেষ তিন বছরে অভ্যন্তরীণ ঋণের পরিমাণ বেড়েছে ২ লাখ ৯৬ হাজার ২৬৬ কোটি টাকা। অন্যদিকে গত বছরের জুন শেষে বিদেশি ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৮ লাখ ১২ হাজার ৭৭ কোটি টাকায়, ৩ বছর আগে যার পরিমাণ ছিল ৪ লাখ ২০ হাজার ৩৫৭ কোটি টাকা। সেই হিসাবে ৩ বছরের ব্যবধানে বিদেশি ঋণ বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ বা ৩ লাখ ৯১ হাজার ৭২০ কোটি টাকা।
বিশ্লেষকরা বলছেন, বিগত সরকারের সময়ে নেয়া বেশিরভাগ বিদেশি ঋণই দর-কষাকষি ও বাছবিচারহীনভাবে নেয়া হয়েছে, যা সরকারের দায়দেনা পরিশোধে চাপ বাড়িয়ে দিয়েছে। তাদের মতে, বিদেশি ঋণ সস্তা, সুদও কম এবং পরিশোধের সময়ও পাওয়া যায় বেশি। তা সত্বেও বিগত সরকার দর-কষাকষি না করে বেশি হারে ঋণে নিয়েছে।
এ বিষয়ে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘শুধু অভ্যন্তরীণ নয়, বৈদেশিক ঋণও উচ্চ সুদে নেওয়া হয়েছে। এখন ঋণ পরিশোধের চাপ বেড়েছে অথচ আছে সক্ষমতার ঘাটতি। ঋণ নিয়ে দুর্নীতি হয়েছে এবং বিদেশে পাচার হয়েছে এই অর্থ। সরকারকে ভবিষ্যতে সতর্ক থাকতে হবে এবং ঋণ ব্যবস্থাপনায় দক্ষতা আনতে হবে। কারণ, ঋণের অর্থ পরিশোধের চূড়ান্ত দায় পড়ে জনগণের ঘাড়ে।’
দেশি–বিদেশি এসব ঋণ সরকারি ও সার্বভৌম নিরাপত্তাপ্রাপ্ত ঋণ হিসেবে পরিচিত। ঋণ নেওয়া, ঋণের সুদ দেওয়া, আসল পরিশোধ করা, আবার ঋণ নেওয়া—বিষয়টি এভাবে চলতে থাকে। স্থিতি হিসেবে উল্লেখ থাকা অর্থ ভবিষ্যতে পরিশোধযোগ্য। সরকার স্থানীয় উৎসের মধ্যে সাধারণত ট্রেজারি বিল, বন্ড ও সুকুকের মাধ্যমে ব্যাংক খাত থেকে ঋণ নিয়ে থাকে। অবশ্য ব্যাংক খাতের মধ্যে ট্রেজারি বিল ও বন্ডের মাধ্যমেই সবচেয়ে বেশি ঋণ নেয়া হয়। এর বাইরে সঞ্চয়পত্র ও সরকারি কর্মচারীদের প্রভিডেন্ট ফান্ডের মাধ্যমে ব্যাংক-বহির্ভূত উৎস থেকেও ঋণ নেয় সরকার। অন্যদিকে বিদেশি ঋণের মধ্যে সরকার বিশ্বব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) মতো সংস্থা এবং জাপান, চীন, রাশিয়া ও ভারতের মতো দেশের কাছ থেকে সবচেয়ে বেশি ঋণ নিয়েছে। এসব ঋণ নেওয়া হয় মূলত প্রকল্প বাস্তবায়নের অর্থায়ন ও বাজেট–সহায়তা হিসেবে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের ঋণ পরিস্থিতি
অর্থ বিভাগের বুলেটিনে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রকৃত (নিট) ঋণের পরিমাণও উল্লেখ করা হয়েছে। গত অর্থবছরে সরকার প্রকৃত ঋণ নিয়েছে ১ লাখ ৫৭ হাজার ৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ ঋণ ৭৩ হাজার ১০৮ কোটি টাকা এবং বিদেশি ঋণ ৮৩ হাজার ৮৯৬ কোটি টাকা। অভ্যন্তরীণ ঋণের মধ্যে ব্যাংক খাত নেওয়া হয় ৮৯ হাজার ১০০ কোটি টাকা। আর সাধারণ ভবিষ্য তহবিল (জিপিএফ) থেকে নেওয়া হয় ৫ হাজার ১৩২ কোটি টাকা। ব্যাংকবহির্ভূত খাত ও সঞ্চয়পত্র থেকে এই ঋণ ৩৭ হাজার ১১৬ কোটি টাকা ঋণাত্মক ছিল।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে ঋণের সুদ পরিশোধ করতে ১ লাখ ১১ হাজার ৮২৪ কোটি টাকা গুনতে হয়েছে সরকারকে। সুদের এই অঙ্ক প্রথমবারের মতো শিক্ষা বাজেটকে ছাড়িয়ে গেছে। চলতি ২০২৪–২৫ অর্থবছরের শিক্ষা বাজেটের আকার ৯৪ হাজার ৭১০ কোটি টাকা। এর আগে ২০২২–২৩ অর্থবছরে ঋণের সুদ ব্যয়ের পরিমাণ ছিল ৯২ হাজার ৪৭৯ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে সুদ ব্যয় বেড়েছে ১৯ হাজার ৩৪৫ কোটি টাকা বা ১৯ শতাংশ।
জিডিপি অনুপাতে সরকারের ঋণ কতটা ঝুঁকিপূর্ণ
অর্থ বিভাগের হিসাবে গত বছরের ৩০ জুন শেষে দেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) আকার ছিল ৫০ লাখ ৪৮ হাজার ২৭ কোটি টাকা। সেই হিসাবে জিডিপির তুলনায় ঋণ দাঁড়িয়েছে ৩৬ দশমিক ৩০ শতাংশে। তিন বছর আগে এই হার ছিল ৩২ দশমিক ৪১ শতাংশ। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ঋণ-জিডিপির হার ৫৫ শতাংশ পর্যন্ত গ্রহণযোগ্য বলে বিবেচনা করে থাকে।
সিপিডির সম্মানীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘যে দেশে কর-জিডিপি হার ৮ দশমিক ২ শতাংশ এবং যে দেশে দুই বছরের ব্যবধানে রিজার্ভ ৪২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে ২১ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে, সে দেশের জন্য ৩৬ দশমিক ৩০ শতাংশ ঋণ-জিডিপি ঝুঁকিপূর্ণ ও দুশ্চিন্তার কারণ।
কিছুতেই নিয়ন্ত্রণে আসছে না চালের বাজার। আমদানি বৃদ্ধি, ভর্তুকি মূল্যে বিক্রি, অভিযানসহ কোনো উদ্যোগই বাড়তি দামের লাগাম টানতে কাজে লাগছে না। সম্প্রতি ভরা মৌসুমেও হঠাৎ করেই দফায় দফায় চালের দাম সর্বনিম্ন ৫ টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ১০ টাকার বেশি বেড়েছে। যার প্রভাব পড়েছে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রায়। শুধু গত এক বছরেই চালভেদে দাম ১৪-১৯ শতাংশ বেড়েছে।
রাজধানী এবং এর আশপাশের বিভিন্ন এলাকার খুচরা বাজার ও দোকানগুলো ঘুরে দেখা গেছে, মানভেদে কেজিপ্রতি নাজিরশাইল চাল বিক্রি হচ্ছে কেজিতে ৮০ থেকে ৯০ টাকায়। দোকানিরা বলছেন, গত সপ্তাহেও এসব চালের দাম ছিল ৭৮ থেকে ৮৫ টাকার মধ্যে। আবার অন্যান্য চালের মধ্যে ‘স্বর্ণা’ ৫৪ থেকে ৫৫ টাকা, ‘শম্পা’ ৭৩ থেকে ৭৪ টাকা এবং মিনিকেট বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৮০ টাকা দামে।
খোদ সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) বলছে, চিকন চালের মধ্যে নাজির ও মিনিকেট বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে সর্বনিম্ন ৭০ থেকে সর্বোচ্চ ৮৪ টাকা কেজি। ১ মাস আগে যার দাম ছিল সর্বনিম্ন ৬৮ থেকে সর্বোচ্চ ৮০ টাকা কেজি। সেই হিসাবে ১ মাসেই দাম বেড়েছে ৪ দশমিক ০৫ শতাংশ। আর ১ বছর আগে এই দুটি চালের দাম ছিল সর্বনিম্ন ৬০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৭৫ টাকা কেজি। সে অনুযায়ী ১ বছরে দাম বেড়েছে ১৪ দশমিক ০৭ শতাংশ।
আবার পাইজাম ও আঠাশ (মাঝারি মানের মোটা চাল) রাজধানীর বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৬০-৬৫ টাকা কেজি দরে। ১ মাস আগে যা বিক্রি হতো ৫৯-৬৩ টাকায়। মাস ঘুরতেই এই চাল বাজারে দাম বেড়েছে ২ দশমিক ৪৬ শতাংশ। আর এক বছর আগে এই দুই জাতের চাল ৫০-৫৫ টাকায় পাওয়া যেত। সে অনুযায়ী বছর ঘুরতেই দাম বেড়েছে ১৯ দশমিক ০৫ শতাংশ।
বাড়ন্ত দামে পিছিয়ে নেই মোটা চালও। স্বর্ণা, চায়না, ইরি জাতের চালও বছর ঘুরতেই দাম বেড়েছে প্রায় ১২ শতাংশ।
বাজার-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ধানের উৎপাদনে ঘাটতি নেই, ব্যবসায়ীদের কাছে যথেষ্ট মজুতও আছে। তবুও দাম বাড়ছে। দাম নিয়ন্ত্রণে সরকারের কঠোর পদক্ষেপের অভাব রয়েছে। আগে সরকার দাম নির্ধারণ করে দিত। মিলারদের চাপে রাখত। এবার তেমন কোনো পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না। তাই দামও বাড়ছে।
বাজারে সবচেয়ে বেশি চাহিদা মাঝারি আকারের বিআর-২৮ ও পাইজাম জাতের চালের। এ ধরনের চালের ভোক্তা সাধারণত মধ্যবিত্ত। সরকারি সংস্থা টিসিবির তথ্যমতে, ১১ জানুয়ারি (শনিবার) মোটা চালের কেজি ৫০-৫৫, মাঝারি চাল ৫৮-৬৫ এবং চিকন চাল ৭৫-৮৪ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। টিসিবির হিসাবে গত এক মাসে সরু চালের দর প্রায় ৪ শতাংশ, মাঝারি চালের ৮ ও মোটা চালের দর ২ শতাংশ বেড়েছে। তবে এক বছরের ব্যবধানে দাম বৃদ্ধির এই হার আরও বেশি। এ সময় সব ধরনের চালের দর বেড়েছে গড়ে ৭ থেকে ১৪ শতাংশ।
দাম কমাতে আমদানি শুল্ক কমানোসহ নানা উদ্যোগ নেওয়া সত্ত্বেও চালের বাজারে এর প্রভাব পড়েনি। এর মূল কারণও সিন্ডিকেটের অপতৎপরতা। মিলারদের কারসাজিতে চালের বাজারে অস্থিরতা বিরাজ করছে। যারা চালের বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি করছে, তাদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা না হলে সিন্ডিকেটের সদস্যরা দাম আর বাড়াবে।
এ বিষয়ে বাজার বিশ্লেষক এস এম রাহাদুজ্জামান রাজীব বলেন, ভরা মৌসুমে চালের দাম বৃদ্ধিতে মনে হচ্ছে বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের আন্তরিকতা থাকলেও সক্ষমতায় ঘাটতি রয়েছে। নিজেদের সুনামের স্বার্থেই এ বিষয়ে সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। মূল্যবৃদ্ধির সিন্ডিকেটে আঘাত হানতে হবে শক্তভাবে। ধান ও চালের দাম নির্ধারণ করে দিতে হবে। চালের মজুত করে যারা বাজার অস্থিতিশীল করেছে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।
তিনি বলেন, শুল্ক কমানোর পরও ব্যবসায়ীরা আমদানি কম করছে। এর অন্যতম কারণ বিশ্ববাজারে এখন চালের দর অনেক বেশি। ভারত থেকে আমদানি করলে চালের দর বাংলাদেশের চেয়ে বেশি পড়বে। এ জন্য আমদানিতে আগ্রহ কম। তিনি আরও বলেন, ডলার সংকটের কারণে ভারত থেকে আমদানির জন্য এলসি করলে এখনো খরচ বেশি পড়ে। ভারত থেকে যদি সাশ্রয়ী মূল্যে সরু চাল আমদানি করা যায়, তাহলে দেশের বাজারে চালের দাম নিয়ন্ত্রণে আসতে পারে।
এদিকে নিউমার্কেট, রামপুরা বাজার, মোহাম্মদপুর টাউনহল বাজার, কচুক্ষেত বাজার, হাতিরপুল বাজারের দাম অনুযায়ী টিসিবি বলছে, সম্প্রতি চালের দাম বাড়ার সঙ্গে সয়াবিন তেল (লুজ), সয়াবিন তেল (বোতল), রাইস ব্রান তেল (১ লিটার বোতল), পাম-অয়েল (লুজ), পাম-অয়েল সুপার, দেশি রসুন, দেশি শুকনা মরিচ, শুকনা মরিচ (আমদানি), দেশি আদা, লবঙ্গ, এলাচ, ধনে, তেজপাতা, ডিপ্লোমা গুঁড়াদুধ, আয়োডিনযুক্ত লবণ, ডিম, লেখার কাগজ, লম্বা বেগুন এবং কাঁচামরিচের দামও বেড়েছে।
বিদেশে টাকা পাচারকারীরা এখনো প্রোপাগাণ্ডা ছড়াচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। তিনি বলেছেন, আওয়ামী লীগের আমলে বিশ্বের ইতিহাসে বড় ধরনের লুটপাট হয়েছে বাংলাদেশে। শেখ হাসিনা দেশে চোরতন্ত্র কায়েম করেছিলেন। বড় বড় কোম্পানিকে তখন অর্থের বিনিময়ে কাজ পাইয়ে দেওয়া ছিল তার কাজ। সে সময়ে বিদেশে টাকা পাচারকারীরা এখন সেই টাকায় প্রোপাগাণ্ডা ছড়াচ্ছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
শনিবার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘জুলাই বিপ্লবে গণমাধ্যমের ভূমিকা ও পরবর্তী প্রত্যাশা’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় শফিকুল আলম একথা বলেন। প্রেস সচিব বলেন, ‘প্রোপাগাণ্ডার মাধ্যমে তারা প্রাতষ্ঠিত করতে চায় যে, এখানে এখন মৌলবাদী শক্তির উত্থান ঘটেছে, কোনো গণঅভ্যুত্থান হয়নি। পরাজিত শক্তি আবার আপনাদের জঙ্গি বানাতে চায়।’
জুলাই বিপ্লবে গণমাধ্যমের ভূমিকা নিয়ে তিনি বলেন, অনেক গণমাধ্যম আন্দোলনকারীদের ‘জাতির শত্রু’ হিসেবে তুলে ধরেছিল। গণমাধ্যমের ভাষা ব্যবহার করে তখন শাসকদের কাছে বার্তা দেয়া হচ্ছিল এই আন্দোলনকারীদের দমন করা উচিত। যদি ফ্যাসিস্ট শক্তি জয়ী হত, তাহলে দুই লাখ মানুষকে জেলে যেতে হত, আর তখন ন্যারেটিভ হতো যে কিছু ‘দুর্বৃত্ত’ দেশজুড়ে অরাজকতা সৃষ্টি করেছে। সাংবাদিকতা শুধু পেশা নয়, এটি একটি দায়িত্ব উল্লেখ করে শফিকুল আলম বলেন, জুলাই বিপ্লবে কারা কী ভূমিকা রেখেছে তা আমরা আরও ভালোভাবে বিশ্লেষণ করব। এজন্য তিনি সবাইকে তাদের অভিজ্ঞতা এবং পর্যবেক্ষণ লিখে রাখার আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন পিআইবির মহাপরিচালক ফারুক ওয়াসিফ। তিনি বলেন, ফ্যাসিস্ট সরকার যদি আরও এক মাস সময় পেত তাহলে ২৫ মার্চের মতো আরও একটি কালরাত দেখতে হতো। যেখানে টার্গেট হতো শিক্ষক-সাংবাদিকরা। ফ্যাসিস্ট সরকার থাকলে যুবকদের চাকরির অধিকার হরণ করত।
৪৩তম বিসিএসের ২৬৭ জন কর্মকর্তাকে বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারে সহকারী কমিশনার হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে অন্তবর্তী সরকার।
শুক্রবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
এতে বলা হয়, ৪৩তম বিসিএস পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নবনিয়োগ শাখার ৩০ ডিসেম্বরের প্রজ্ঞাপনে ২৬৭ জন কর্মকর্তাকে বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারে সহকারী কমিশনার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
প্রজ্ঞাপন জানানো হয়, নিয়োগ পাওয়া সহকারী কমিশনারদের চাকরি শিক্ষানবিশ সহকারী কমিশনার হিসেবে যথোপযুক্ত পদে পদায়নের জন্য তাদেরকে বিভাগীয় কমিশনারের অধীনে ন্যস্ত করা হলো। এসব কর্মকর্তাকে আগামী ১৫ জানুয়ারির মধ্যে বিভাগীয় কমিশনারের কাছে যোগদানের নির্দেশ করা হলো।
নতুন যোগদান করা সহকারী কমিশনারদেরকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে বলে প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়েছে।
২০২০ সালের ৩০ নভেম্বর ৪৩তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে পিএসসি। এরপর আবেদন, প্রিলিমিনারি, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষাসহ বিভিন্ন প্রক্রিয়া শেষে ২০২৩ সালের ২৬ ডিসেম্বর ২ হাজার ১৬৩ জনকে নিয়োগের সুপারিশ করে কমিশন। পরে যাচাই-বাছাই শেষে ৯৯ জনকে বাদ দিয়ে গত বছরের ১৫ অক্টোবর ২ হাজার ৬৪ জনকে চূড়ান্তভাবে নিয়োগ দিয়ে প্রথম গেজেট প্রকাশ করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
এরপর ৩০ ডিসেম্বর ওই প্রজ্ঞাপন বাতিল করে প্রথম সুপারিশকৃত ২ হাজার ১৬৩ জন প্রার্থীর মধ্যে থেকে স্বাস্থ্য পরীক্ষায় অনুপস্থিত ৪০ জন এবং গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদন বিবেচনায় সাময়িকভাবে অনুপযুক্ত ২২৭ জনসহ মোট ২৬৭ জনকে বাদ দিয়ে ১ হাজার ৮৯৬ জনকে নিয়োগের দ্বিতীয় প্রজ্ঞাপন জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।