শনিবার, ১৯ জুলাই ২০২৫
৩ শ্রাবণ ১৪৩২

নামছে বন্যার পানি, ভেসে উঠছে ক্ষয়-ক্ষতির চিহ্ন

ছবি: সংগৃহীত
দৈনিক বাংলা ডেস্ক
প্রকাশিত
দৈনিক বাংলা ডেস্ক
প্রকাশিত : ২৬ আগস্ট, ২০২৪ ২১:৪৪

আক্রান্ত ১১ জেলা থেকে ধীরে ধীরে নামছে বন্যার পানি। তবে পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ফুটে উঠছে ক্ষয়ক্ষতির চিহ্ন। দুর্গম যেসব এলাকায় এত দিন যাওয়া সম্ভব হয়নি সরকারি-বেসরকারি ত্রাণকর্মী ও স্বেচ্ছাসেবীদের, এখন সেসব এলাকায় পৌঁছাচ্ছেন তারা। তবে ত্রাণের জন্য হাহাকার সবখানে। আশার কথা, নতুন বাংলাদেশে বন্যা মোকাবিলায় সব মানুষ দাঁড়িয়েছেন একসঙ্গে। তাই গত ৫ দিনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের আহ্বানে রাজধানীসহ সারা দেশের মানুষ সাড়া দিচ্ছেন, প্রধান উপদেষ্টার আহ্বানে তার ত্রাণ তহবিলেও মিলছে বিপুল সাড়া। তবে উপদ্রুত এলাকার মানুষ চাইছেন নগদ সহায়তা-ত্রাণের খাবার, বিশুদ্ধ পানি, ওষুধের পাশাপাশি ঘরবাড়ি মেরামত এবং ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড ও কৃষিতে সহায়তা। তবে সব মহলের একটা লক্ষ্য, যত দ্রুত সম্ভব পানিবন্দি মানুষের কাছে ত্রাণ হিসেবে খাবার ও পানি পৌঁছে দেওয়া। এদিকে, জলমগ্ন এলাকাগুলোতে বারবার পানিতে নামতে বাধ্য হওয়ায় অনেক মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন পানিবাহিত রোগে। উপদ্রুত জেলাগুলোতে ডায়রিয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এসব এলাকার হাসপাতালগুলোসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিকে একযোগে কাজ করছেন চিকিৎসক-নার্সদের পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবীরা।

এদিকে, বন্যার পানি নামতে শুরু করায় বোঝা যাচ্ছে ক্ষয়-ক্ষতির মাত্রা। ফেনী শহরের বাসিন্দা ষাটোর্ধ্ব মো. সাখাওয়াত হোসেন দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘গত শুক্রবার আসরের নামাজের পরেও তার এলাকাতে বন্যার লেশমাত্র ছিল না। তবে কোথা থেকে হঠাৎ এত দ্রুত গতিতে ঢলের পানি আসা শুরু করে যে মাগরিবের নামাজের আগেই কোমরসমান পানিতে ভরে যায় চারপাশ। প্রাণে বাঁচতে তার চার তলা বাসায় মুহূর্তে প্রতিবেশীদের অনেকে ভিড় করেন। এ কয় দিন বাসার দোতলা থেকে চতুর্থ তলায় বাসিন্দারাসহ ৪০ জন মানুষ আশ্রয় নিয়েছিলেন। এমন প্রতিবেশীও প্রাণ বাঁচাতে আশ্রয়ে ছিলেন যাদের তিনি আগে চিনতেনও না। পানি ছিল ভীষণ ঠাণ্ডা। এখন পানি মোটামুটি নেমে গেছে। তবে নিচতলার ভাড়াটিয়া কোনো কিছুই সরাতে পারেননি। তার সব সম্পদ পানিতে ভিজে নষ্ট হয়ে গেছে। এমন অবস্থা শহরের একতলা বা টিনশেডসহ সাধারণ ঘরে যারা ছিলেন তাদের সবার। এসব মানুষ সব হারিয়েছেন। তারা এখন কীভাবে বাঁচবেন তা আল্লাহ জানেন। এমন ঢল আমার জীবনে কখনো দেখিনি।’

বন্যায় ক্ষতির এমন চেহারা প্রায় সবখানে। পুকুরসহ মাছের ঘেরগুলো ভেসে গেছে, নষ্ট হয়েছে কৃষকের মাঠের ফসল, ব্যবসায়ীদের দোকানে পানি ঢুকে নষ্ট হয়েছে সব মালপত্র, ঘরের কোনো আসবাবপত্র আর ব্যবহারযোগ্য নেই। এই পরিস্থিতি এখন ফেনী, নোয়াখালীসহ আশপাশের সবগুলো জেলায়।

এদিকে, চলমান বন্যায় ১১ জেলায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ২৩ জনে দাঁড়িয়েছে। অন্যদিকে বন্যায় মোট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ৫৭ লাখ ১ হাজার ২০৪ জন। এছাড়া, ফেনী ও কুমিল্লা জেলার নিম্নাঞ্চলে বিদ্যমান বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি অব্যাহত রয়েছে। সব নদ-নদীর পানি কমতে শুরু করেছে।

আজ সোমবার বন্যা পরিস্থিতির সর্বশেষ তথ্য তুলে ধরে এই তথ্য জানান দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব কামরুল হাসান।

মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব জানান, বন্যা আক্রান্ত জেলার সংখ্যা ১১টি। এগুলো হচ্ছে ফেনী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সিলেট, লক্ষ্মীপুর ও কক্সবাজার। আক্রান্ত এসব জেলায় ৭৪টি উপজেলার মোট ১২ লাখ ৩৮ হাজার ৪৮টি পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে এবং ক্ষতিগ্রস্ত লোকসংখ্যা ৫৭ লাখ ১ হাজার ২০৪ জন।

তিনি জানান, পানিবন্দি-ক্ষতিগ্রস্ত লোকদের আশ্রয় প্রদানের জন্য মোট ৩ হাজার ৮৩৪ টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে এবং আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে মোট ৪ লাখ ৬৯ হাজার ৫২৩ জন মানুষ এবং ২৮ হাজার ৯০৭ টি গবাদি পশুকে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। ১১ জেলার ক্ষতিগ্রস্তদের চিকিৎসা সেবা সেবায় মোট ৬৪৫টি মেডিকেল টিম চালু রয়েছে।

কামরুল হাসান বলেন, এ পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ২৩ জন। এর মধ্যে কুমিল্লায় ৬ জন, ফেনীতে একজন, চট্টগ্রামে ৫ জন, খাগড়াছড়িতে একজন, নোয়াখালীতে ৫ জন, ব্রাহ্মণবাড়ীয়ায় একজন, লক্ষ্মীপুরে একজন ও কক্সবাজারে ৩ জন বন্যার কারণে মারা গেছেন ৷ এছাড়াও মৌলভীবাজারে ২ জন নিখোঁজ রয়েছেন।

এদিকে, পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের সোমবারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় পূর্বাঞ্চলীয় কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও ফেনী জেলার ভারতীয় ত্রিপুরা সীমান্তবর্তী অঞ্চলে এবং ত্রিপুরা প্রদেশের অভ্যন্তরীণ অববাহিকায় উল্লেখযোগ্য বৃষ্টিপাত হয়নি। উজানে নদ-নদীর পানি কমার ধারা অব্যাহত আছে। ফলে বর্তমানে ফেনী ও কুমিল্লা জেলার নিম্নাঞ্চলের বিদ্যমান বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি অব্যাহত রয়েছে।

একই সঙ্গে মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলার নদীগুলোর পানি বিপৎসীমার নিচে নেমে এসেছে। তবে এখনও কুশিয়ারা, গোমতি ও মুহুরী নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় দেশের পূর্বাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন উজানে হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টিপাত হতে পারে। এ সময়ে এ অঞ্চলের কুমিল্লা জেলার গোমতী নদীর পানি কমতে পারে এবং এ অঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে। একই সঙ্গে আগামী ২৪ ঘণ্টায় ফেনী জেলার নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি হতে পারে। তবে কোনও কোনও স্থানে স্থিতিশীল থাকতে পারে।

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানায়, আজ দেশের তিনটি নদীর তিন স্টেশনের পানি বিপৎসীমার ওপরে দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। রোববার ৪ নদীর ৬টি স্টেশনের পানি বিপদসীমার ওপরে ছিল। এরমধ্যে গোমতির নদীর কুমিল্লা স্টেশনের পানি ৭৮ থেকে নেমে আজ ৪৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছে।

এছাড়া মুহুরী নদীর পরশুরাম স্টেশনের পানি আজ বিপৎসীমার ওপরে আছে। তবে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় পানির উচ্চতা সম্পর্কে জানা যায়নি। এদিকে রোববার কুশিয়ারা নদীর পানি তিন স্টেশনে বিপৎসীমার ওপরে থাকলেও আজ তা নেমে শুধু অমলশীদ পয়েন্টের পানি বিপৎসীমার ৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছে। রবিবার বিপৎসীমার ওপরে থাকা মনু নদীর মৌলভীবাজার স্টেশনের পানি আজ বিপৎসীমার নিচে নেমে গেছে।

আবহাওয়া সংস্থাগুলোর তথ্য অনুযায়ী, আগামী ৪৮ ঘণ্টায় দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও উজানে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা নেই। এ সময় উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলার মনু, খোয়াই, ধলাই নদীর পানি আরও কমতে পারে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় ফেনী জেলার নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে, তবে কোনও কোনও স্থানে স্থিতিশীল থাকতে পারে।

আবহাওয়া সংস্থাগুলোর তথ্যমতে, আগামী ২৪ ঘণ্টায় দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল ও উজানে মাঝারি বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা আছে। এ সময় এ অঞ্চলের বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম জেলার সাঙ্গু, মাতামুহুরি, কর্ণফুলী, হালদা ও অন্যান্য প্রধান নদীগুলোর পানি সময় বিশেষে বাড়তে পারে।

এছাড়াও ব্রহ্মপুত্র-যমুনা এবং দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সুরমা-কুশিয়ারা নদীর পানি কমছে, গঙ্গা-পদ্মা নদীর পানি স্থিতিশীল আছে, উত্তরাঞ্চলের তিস্তা-ধরলা-দুধকুমার নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ বিরাজমান আছে, যা আগামী ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে।

দেশে সোমবার সকাল পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ বৃষ্টি হয়েছে যশোরে ২২২ মিলিমিটার। এছাড়া বরগুনায় ১২০, বরিশালে ১০৪, টেকনাফে ১০১, পটুয়াখালী ৮৮, নোয়াখালী ৮৭, গোপালগঞ্জের হরিদাশপুরে ৮৫, কক্সবাজারে ৮২ এবং বান্দরবানের লামায় ৭০ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। এদিকে উজানে আসামের তেজপুরে ১৯, ত্রিপুরায় ১২ এবং চেরাপুঞ্জিতে ২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।

এদিকে, আজ রাতে একসঙ্গে ফারাক্কা বাঁধের ১০৯টি জলকপাট খুলে দেওয়ায় দেশের উত্তরাঞ্চলের রাজশাহী, চাঁপাই নবাবগঞ্জসহ আশেপাশের জেলাগুলোর নিম্নাঞ্চলে নতুন করে বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। যদিও এ বিষয়ে নতুন কোনও তথ্য বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র থেকে পাওয়া যায়নি।

বন্যা উপদ্রুত এলাকায় সরকারি-বেসরকারিসহ সব পর্যায় থেকে ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত আছে জানিয়ে মন্ত্রণালয় বলছে, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে বিতরণের জন্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে ১১ জেলায় মোট ৩ কোটি ৫২ লাখ টাকা, ২০ হাজার ৬৫০ মেট্রিক টন চাল, ১৫ হাজার প্যাকেট শুকনা ও অন্যান্য খাবার, ৩৫ লাখ টাকার শিশুখাদ্য এবং ৩৫ লাখ টাকার গো-খাদ্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া দেশের সব জেলায় পর্যাপ্ত ত্রাণসামগ্রী মজুত রয়েছে।

কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টের জিওসির তথ্যের বরাত দিয়ে ত্রাণ সচিব জানান, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মাধ্যমে কুমিল্লা জেলার সব উপজেলায় সড়ক পথে পর্যাপ্ত পরিমাণ খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে। এছাড়া সেনাবাহিনীর ৪টি মেডিকেল টিম প্রয়োজনীয় ওষুধসহ কুমিল্লা জেলার ৪ উপজেলায় নিয়োজিত করা হয়েছে।

ফেনীতে স্বাস্থ্য সেবা দিতে ফিল্ড হাসপাতাল প্রস্তুত করা হয়েছে জানিয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সচিব বলেন, সেনাবাহিনী ও জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের চিকিৎসকরা সেবা দিচ্ছন। পাশাপাশি স্থানীয় ক্লিনিক, হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠানগুলোকে বন্যার্তদের প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করার জন্য সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকগণ নির্দেশনা দিয়েছেন।

কামরুল হাসান বলেন, বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পানিবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিতে পারে। সে ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সচেতন হতে হবে এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিলে সহায়তা দেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে সচিব কামরুল হাসান বলেন, যারা ব্যক্তিগতভাবে উপস্থিত হয়ে প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ তহবিলে সহায়তা (চেক/পে-অর্ডার/ব্যাংক ড্রাফটের মাধ্যমে) দিতে চান তারা প্রধান উপদেষ্টার পক্ষে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার কাছেও তা দিতে পারেন। সরকারি ছুটি ছাড়া প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে ৪টা পর্যন্ত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে উপদেষ্টার কার্যালয়ে এই সহায়তা নেওয়া হবে।

যারা ত্রাণ তহবিলে সহায়তা (চেক/পে-অর্ডার/ব্যাংক ড্রাফট এর মাধ্যমে) দিতে ইচ্ছুক তাদের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব অঞ্জন চন্দ্র পাল (মোবাইল ০১৭১৮-০৬৬৭২৫) এবং সিনিয়র সহকারী সচিব শরিফুল ইসলামের (মোবাইল-০১৮১৯২৮১২০৮) সঙ্গে যোগাযোগ করার অনুরোধ জানিয়েছেন ত্রাণ সচিব।

নোয়াখালীতে আবারও বেড়েছে পানি

নোয়াখালী প্রতিনিধি জানান, বন্যা ও জলাবদ্ধতায় বিপর্যস্ত নোয়াখালীতে থেমে থেমে বৃষ্টিপাতের কারণে আবারও বাড়ছে পানি। আবহাওয়া কিছুটা ভালো থাকায় বৃহস্পতিবার থেকে গত শনিবার বিকেল পর্যন্ত পানি কিছুটা কমলেও সেদিন রাত ১০টার পর থেকে থেমে থেমে বৃষ্টির কারণে আবারও কোথাও কোথাও এক ফুট থেকে দুই ফুট পানি বেড়েছে বলে দাবি করেছেন স্থানীয়রা। জেলা প্রশাসনের হিসাবে জেলায় ২০ লাখের বেশি মানুষ পানিবন্দি আছেন।

বন্যার কারণে জেলায় এখন পর্যন্ত পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। তারা হলেন, সেনবাগ উপজেলার ইয়ারপুর গ্রামের জিলহাজুল ইসলাম (১০), কেশারপাড় ইউনিয়নের বীরকোট পশ্চিম পাড়ার দুই বছর বয়সী শিশু আবদুর রহমান এবং সদর উপজেলার কালাদরপ ইউনিয়নের পূর্ব শুল্লকিয়া গ্রামের আড়াই বছরের রিয়ান। এরমধ্যে শিশু রিয়ান বন্যার পানিতে ডুবে মারা গেছে। এছাড়াও বন্যার পানির কারণে ঘরের ভেতর বিদ্যুৎস্পৃষ্টে মারা যান সেনবাগ উপজেলার দক্ষিণ মোহাম্মদপুর গ্রামের কাকন কর্মকার (৩০) ও বেগমগঞ্জের চৌমুহনী পৌরসভার আলীপুর গ্রামের আবুল কালাম আজাদ (৫০)।

এদিকে ফেনী থেকে বন্যার পানি ডাকাতিয়া নদী দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার কারণে সেনবাগ, সোনাইমুড়ি, চাটখিল ও বেগমগঞ্জ উপজেলায় পানির চাপ বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে নোয়াখালী বন্যা পরিস্থিতি আরো অবনতি ও জনদুর্ভোগ বাড়ার আশংকা রয়েছে।

বন্যাকবলিত বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, জেলার ৮টি উপজেলার প্রায় ৯০ ভাগ মানুষ পানিবন্দি হয়ে আছেন। প্রতিটি বাড়িতে ৩ থেকে ৫ ফুট জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। নিচু এলাকাগুলোতে জলাবদ্ধতা দেখা গেছে ৬ থেকে ৭ ফুট। বসতঘরে পানি প্রবেশ করায় বুধবার রাত পর্যন্ত অনেকে খাটের ওপর অবস্থান করলেও বৃহস্পতিবার সকাল থেকে তারা নিকটস্থ আশ্রয় কেন্দ্র, প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে অবস্থান নিয়েছেন। বসত ও রান্নাঘরে পানি ঢুকে পড়ায় খাবার সংকটে রয়েছে বেশির ভাগ মানুষ। জেলার প্রধান সড়কসহ প্রায় ৮০ ভাগ সড়ক কয়েক ফুট পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। বন্যার পানি ঢুকে পড়ায় বেশিরভাগ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়েছে। সড়কগুলোতে যান চলাচল অনেকটাই কম।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, জেলার আট উপজেলার ৮৭ ইউনিয়ন ও সাতটি পৌরসভার ২০ লাখ ৩৬ হাজার সাতশ মানুষ পানিবন্দী রয়েছেন। এরমধ্যে আটশ ২৬টি কেন্দ্রে একলক্ষ ৫৩ হাজার চারশ ৫৬ জন মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। পানিবন্দী মানুষের জন্য নগদ ৪৫ লক্ষ টাকা ও ১৮শ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ করা হয়েছে। পাশাপাশি স্বাস্থ্যসেবায় ৮৮টি মেডিকেল টিম কাজ করছে।

ফেনীর তিন উপজেলায় বেড়েছে বন্যার পানি

ফেনী প্রতিনিধি জানান, ফেনীতে বন্যার পানি নামতে শুরু করেছে ফুলগাজী, পরশুরাম ও ছাগলনাইয়া উপজেলায়। বিপৎসীমার নিচে প্রবাহিত হচ্ছে মুহুরি কহুয়া ও ছিলোনিয়া নদীর পানি ৷ তবে পানিবন্দি রয়েছেন এসব এলাকার লক্ষ লক্ষ মানুষ ৷ ফেনী পৌর শহরের দু-তিনটি সড়ক ও বাসা বাড়িতে পানি কমলেও এখনো অনেক সড়ক ও বিভিন্ন ভবনের নিচতলা পানিতে সয়লাব।

ইতোমধ্যে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে ফেনী সদর, সোনাগাজী এবং দাগনভূঞা উপজেলায়। বন্যা এখানে প্রকট আকার ধারণ করেছে । এখানে এখনও পানিবন্দি কয়েক লাখ মানুষ৷ বন্যার পানি দ্রুত নেমে যাওয়ার জন্য ফেনীর মুহুরী রেগুলেটরের ৪০টি স্লুইসগেট ও নোয়াখালীর মুছাপুরের ১৭ টি স্লুইসগেট খুলে দেয়া হয়েছে।

গত রবিবার থেকে ফেনী শহরের বিদ্যুতের ৯টি লাইন সচল হয়েছে, তবে দুই-তৃতীয়াংশ বিদ্যুৎ সংযোগ এখনও বিচ্ছিন্ন রয়েছে। গত ৪দিন ধরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ থাকার পর রবিবার বিকেল থেকে যান চলাচল কিছুটা স্বাভাবিক হয়েছে। জেলার অধিকাংশ এলাকায় মোবাইল নেটওয়ার্ক অচল রয়েছে।

ফেনীতে বন্যা শুরু হওয়ার পর থেকে সেনাবাহিনী, নৌ-বাহিনী, বিমান বাহিনী, বিজিবি, কোস্ট গার্ড, ফায়ার সার্ভিস, বিভিন্ন স্থান থেকে আসা ডুবুরি দলসহ বেশ কয়েকটি স্বেচ্ছাসেবী টিম পরশুরাম ছাগলনাইয়া, সোনাগাজী এবং দাগনভূঞা এলাকায় নৌকা, স্পিডবোট নিয়ে উদ্ধার কাজ ও ত্রাণ তৎপরতা চলমান রেখেছে ৷ এসব প্রতিষ্ঠান ছাড়াও স্থানীয়ভাবে এবং বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা হতে আগত সরকারি সংস্থা, বিশ্ববিদ্যালয়, সামাজিক সংগঠন, মানবিক সংগঠন তথা বেসরকারি বিভিন্ন সংগঠন জনগণের মাঝে ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত রেখেছে।

জরুরি স্বাস্থ্যসেবায় জেলার ১টি এবং ছয়টি উপজেলায় ছয়টি মেডিকেল ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়াও বেসরকারি ৬টি হাসপাতালে মেডিকেল ক্যাম্প চালু রয়েছে। জেলা শহরে এসব বেসরকারি হাসপাতালসমূহ হল: কনসেপ্ট হাসপাতাল, মেডিনোভা হাসপাতাল মেডিল্যাব, আল আকসা হাসপাতাল, জেড ইউ মডেল হাসপাতাল, মিশন হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার।

জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, প্রতিটি উপজেলায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্যাকবলিত মানুষজনদের আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে খিচুড়ি ও শুকনা খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন শাখা সূত্র জানায়, এখন পর্যন্ত জেলায় ৮ লাখ মানুষ বন্যায় আক্রান্ত। এপর্যন্ত ১ লক্ষ ৫০ হাজার মানুষকে উদ্ধার করে বিভিন্ন আস্রয়কেন্দ্রে রাখা হয়েছে। অবশিষ্ট লোকজন উঁচু ভবনে বা ছাদে আশ্রয় নিয়েছেন।

একই সূত্র জানায়, ইতোমধ্যে সরকারি বেসরকারি উদ্যোগে ৬০ হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার বিতরণ করা হয়েছে। সেনাবাহিনী কর্তৃক হেলিকপ্টারের মাধ্যমে ৩৮ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে।

জেলা প্রশাসক মুছাম্মত শাহীনা আক্তার বলেন, প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে সেনাবাহিনী, বিমান বাহিনী, নৌ বাহিনী, বিজিবি, কোস্টগার্ড, ফায়ার সার্ভিস, বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এবং ছাত্র-জনতার সমন্বয়ে কন্যা কবলিত এলাকায় ত্রাণ বিতরণের সহযোগিতা ও উদ্ধার কাজ চলমান রয়েছে।

তিনি আরো বলেন, দেশের রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ, সুশীল সমাজ ও আপামর জনগণের সহযোগিতা পেলে সুন্দরভাবে ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করা সম্ভব হবে।

এই দুর্যোগময় মুহূর্তে ব্যবসায়ীদের প্রতি মানবিক হতে আহ্বান জানিয়ে জেলা প্রশাসক বলেন, বন্যাকে অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করে আপনার দ্রব্যমূল্যের দাম বাড়াবেন না।

বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ফুটে উঠছে ক্ষয়ক্ষতির চিত্র। মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন পানিবাহিত রোগে। এই মুহূর্তে ফেনীতে বিশুদ্ধ পানি, খাদ্য ও ওষুধ সংকট দেখা দিয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারি-বেসরকারি ত্রাণ সহায়তা অব্যাহত রয়েছে। তবে তা চাহিদার তুলনায় এখনও অপ্রতুল। স্থানীয়রা জানান, এসব বিষয় জরুরিভাবে ব্যবস্থা না হলে এখানে গুরুতর মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

উল্লেখ্য, চলতি মাসের ২০ আগস্ট থেকে অতি ভারী বৃষ্টি ও ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পানির তোড়ে ফেনী জেলায় ভয়াবহ বন্যার সৃষ্টি হয়। এ অঞ্চলের মুহুরী কহুয়া সিলোনিয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে অন্তত ৩০ স্থান ভেঙে পানি ঢুকে বন্যার সৃষ্টি হয়। গত জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহের প্রথম দফা এবং চলতি আগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহের দ্বিতীয় দফা এবং ২০ আগস্ট থেকে তৃতীয় দফা বন্যাকবলিত হয় এসব উপজেলার মানুষজন।

বিষয়:

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে প্রতীকী ম্যারাথনে উপদেষ্টা আসিফ

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
বাসস

ছাত্র-জনতার জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এবং জুলাই শহিদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে জুলাই-যোদ্ধাসহ আন্দোলনে আহত ও নিহত পরিবারের সদস্যদের অংশগ্রহণে এক প্রতীকী ম্যারাথনের আয়োজন করা হয়েছে।

শুক্রবার (১৮ জুলাই) আয়োজিত এই বিশেষ কর্মসূচিতে বিভিন্ন বয়সের প্রতিযোগীদের সঙ্গে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নেন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।

গণঅভ্যুত্থানের চেতনা ধারণ করে আয়োজিত এ প্রতীকী ম্যারাথন ছিল এবারের গণঅভ্যুত্থান দিবস উদযাপনের অন্যতম অংশ।

আজ সকাল ৭টায় এই ম্যারাথনের উদ্বোধন করেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ। শুরুতে নিহতদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

ম্যারাথন শেষে উপদেষ্টা বলেন, ‘ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান আমাদের ইতিহাসের এক গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়। এই অভ্যুত্থান দেশের গণতন্ত্র ও জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠায় এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। আজকের এই প্রতীকী ম্যারাথনে অংশ নিয়ে আমরা অভ্যুত্থানের সেই মহান আত্মত্যাগীদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করছি এবং তরুণ প্রজন্মকে সেই চেতনায় উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করছি।’

এক হাজার প্রতিযোগী নিয়ে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দীর্ঘ এই প্রতীকী ম্যারাথনটি বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্র থেকে শুরু হয়ে গণভবন, সংসদ ভবন, খামারবাড়ি হয়ে আবারও চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে এসে শেষ হয়।


ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সাহসিকতার সঙ্গে মোকাবিলা করতে হবে : নাহিদ ইসলাম

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
বাসস

জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)’র আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, মুজিববাদের বিরুদ্ধে, ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করছি, এই লড়াইয়ে আমরা জিতবো।

তিনি বলেন, ‘আমরা জানি, সামনে আরো একটি লড়াই আসছে। আমরা সে লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। সাহসিকতার সঙ্গে সে লড়াই মোকাবিলা করতে হবে।’

শুক্রবার(১৮ জুলাই) দুপুর ১২টায় বিচার, সংস্কার ও দেশ পুনর্গঠনের লক্ষ্যে জুলাই পদযাত্রায় অংশ নিয়ে, মুন্সীগঞ্জ শহরের কৃষি ব্যাংক চত্বরের পথসভায় নাহিদ ইসলাম একথা বলেন।

এনসিপি’র আহ্বায়ক বলেন, ‘গোপালগঞ্জে ফ্যাসিবাদীরা হামলা করেছে। আরো হামলা হবে। কিন্তু আমাদের দমন করা যাবে না। পাড়ায় পাড়ায় প্রতিবাদের সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে।’

তিনি সকলকে সরব হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘নতুন বাংলাদেশ নির্মাণে আমাদের আরো লড়াই করতে হবে। আমরা প্রতিবাদ করতে শিখেছি। আমরা আমাদের অধিকার ও মর্যাদা নিশ্চিত করেই ঘরে ফিরবো।

নাহিদ ইসলাম বলেন, দেশে চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী হচ্ছে। শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের বেহাল দশা। যাতায়াত ব্যবস্থা নাজুক, কর্মসংস্থান নেই। এসব বাধা ও সমস্যার সমাধান করে জনগণ এখন মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে চায়।

এনসিপি’র মুন্সীগঞ্জের প্রধান সমন্বয়কারী মাজেদুল ইসলামের সভাপতিত্বে পথসভায় আরো বক্তব্য রাখেন- উত্তারঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম ও দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ।

এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন- সদস্য সচিব আক্তার হোসেন, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন ও যুগ্ম আহ্বায়ক ডা. তাসনিম জারা।

সারজিস আলম বলেন, শোষণমুক্ত দেশ গড়তে এখনো অনেক পথ বাকী আছে। আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে সে পথ পাড়ি দিতে হবে। ফ্যাসিবাদীদের জায়গা করে দিলে, তারা আরো ভয়ংকর হয়ে উঠবে। সন্ত্রাসী আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। হাসিনাকে বিচারের আওতায় আনতে হবে।

তিনি বিদেশে থাকা নির্দেশদাতাদের গ্রেফতার করে জুলাই যোদ্ধাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানান।

পরে নেতৃবৃন্দ শহরের প্রধান জামে মসজিদে শহীদ ও আহত জুলাই যোদ্ধাদের জন্য দোয়ায় অংশগ্রহণ করেন।


বাংলাদেশে স্টারলিংক চালু, কার্যকর সহায়তা পাওয়ায় প্রশংসা করলেন স্পেসএক্সের ভাইস প্রেসিডেন্ট

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
বাসস

বাংলাদেশে স্টারলিংক সফলভাবে চালু করার ক্ষেত্রে সরকারি কর্মকর্তাদের সমন্বিত প্রচেষ্টার প্রশংসা করেছেন স্পেসএক্সের ভাইস প্রেসিডেন্ট লরেন ড্রেয়ার।

শুক্রবার(১৮ জুলাই) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনুসের সঙ্গে এক বৈঠকে তিনি এই মন্তব্য করেন।

লরেন ড্রেয়ার বলেন, ‘আমরা ১৫০টি দেশ ও অঞ্চলে কাজ করি। আমরা এত দক্ষতা ও দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ আগে কখনও দেখিনি। স্পেসএক্স-এর সব সহকর্মীর পক্ষ থেকে আপনাকে ধন্যবাদ জানাই। আমরা আপনার লোকজনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার অপেক্ষায় আছি।’

প্রধান উপদেষ্টা বাংলাদেশ সফরের জন্য ভাইস প্রেসিডেন্ট লরেন ড্রেয়ারকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘এখন বর্ষাকাল, দেশের এক মনোরম সময়। সুন্দর পরিবেশ। চারদিকে সবুজ আর পানি। কিন্তু বন্যা ও জলাবদ্ধতা পরিস্থিতির বাস্তবতাও আছে। সেজন্য আমাদের ভালো কানেক্টিভিটির স্বার্থে নির্ভরযোগ্য প্রযুক্তির প্রয়োজন।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের পার্বত্য অঞ্চলের দূরবর্তী এলাকাগুলোতে উন্নত কানেক্টিভিটির বিশেষ প্রয়োজন। এসব অঞ্চলে ভালো স্কুল শিক্ষক ও ডাক্তার নেই। আমরা ১০০টি স্কুলে অনলাইন শিক্ষা চালু করার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছি, যা বিচ্ছিন্ন এলাকার শিক্ষার্থীদের উপকারে আসবে।

অন্তর্ভুক্তিমূলক স্বাস্থ্যসেবার ওপর গুরুত্ব দিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা ডিজিটাল স্বাস্থ্যসেবাকে অগ্রাধিকার দিচ্ছি, যাতে দূরবর্তী এলাকার মানুষ অনলাইনে চিকিৎসকদের পরামর্শ নিতে পারে। তাদের চিকিৎসার ইতিহাস ডিজিটালি সংরক্ষিত থাকবে, এর ফলে ভবিষ্যতে পরামর্শ দেয়া সহজ হবে।’

তিনি বলেন, ‘এটি প্রেগনেন্সি পিরিয়ডে খুব কার্যকর ভূমিকা রাখে। নারীদের এ সময় ডাক্তারের কাছে যাওয়ার জন্য আরেকজন সহযোগীর প্রয়োজন হয়। ডিজিটাল হেলথ সেবা হলে তারা ঘরে বসেই ডাক্তার দেখাতে পারবেন।’

অধ্যাপক ইউনূস উল্লেখ করেন, প্রবাসী বাংলাদেশিরাও ডিজিটাল হেলথ সেবা থেকে উপকৃত হবেন। তিনি বলেন, ‘প্রবাসীরা ভাষার কারণে অনেক সময় ডাক্তারের কাছে যেতে অস্বস্তিতে ভোগেন। কী বলবেন-এটা নিয়ে ভাবেন। তবে ডিজিটাল হেলসথ সেবা হয়ে গেলে বিদেশ থেকেই বাংলাদেশের ডাক্তারের সাথে তারা স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিষয়ে পরামর্শের জন্য কথা বলতে পারবেন।’

প্রধান উপদেষ্টা লরেন ড্রেয়ারের উদ্দেশে বলেন, ‘আমরা এখানে ছোট ছোট যে উদ্যোগ নিচ্ছি, আপনারা এগুলোকে বৈশ্বিক পরিসরে নিয়ে যেতে পারেন।’

লরেন ড্রেয়ার অধ্যাপক ইউনুসের আইডিয়ার প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, ‘আপনি যে দৃষ্টান্ত তৈরি করছেন, তা নিয়ে অন্য নেতাদের সঙ্গে আমরা কথা বলতে পারি। আমরা বলবো-অধ্যাপক ইউনূস যদি নিজের দেশে এগুলো করতে পারেন, তাহলে আপনারাও আপনার দেশে করতে পারেন।’

তিনি দুর্নীতির বিরুদ্ধে অধ্যাপক ইউনূসের প্রচেষ্টার প্রশংসা করেন।

স্পেসএক্সের ভাইস প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘সরকারি সেবাগুলো দেশের মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে আপনি যে উদ্যোগ নিয়েছেন তা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। আমি প্রায়ই বিভিন্ন দেশে ভ্রমণ করি, তাই জানি দুর্নীতি কীভাবে একটি গুরুতর সমস্যা হতে পারে। প্রযুক্তির মাধ্যমে সেবা বিকেন্দ্রীকরণ এবং সুশাসন নিশ্চিত করা একটি অর্থবহ দৃষ্টিভঙ্গি।’

বৈঠকে স্পেসএক্সের গ্লোবাল এনগেজমেন্ট কনসালট্যান্ট রিচার্ড গ্রিফিথস, বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান, প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব এবং বিডা ও বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।


শহীদ পরিবার ও আহতদের নিয়ে আত্মপ্রকাশ করল ‘নাপুস’

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

শহীদ পরিবার ও আহতদের নিয়ে আত্মপ্রকাশ করল বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সংগঠন ন্যাশনাল অ্যালায়েন্স অব প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্টস (নাপুস)।

আজ শুক্রবার বেলা ১১টায় রাজধানীর মিরপুরে অবস্থিত ঋদ্ধি লাইব্রেরির অডিটোরিয়ামে এক মতবিনিময় সভার মধ্য দিয়ে সংগঠনটি আত্মপ্রকাশ করে। অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহিদ পরিবারের সদস্য ও আহত ছাত্ররা।

অনুষ্ঠানের শুরুতে এক মিনিট নীরবতা পালনের মধ্য দিয়ে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহীদদের শ্রদ্ধা জানানো হয়। শ্রদ্ধা জানানো শেষে মতবিনিময় সভায় নাপুসের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন সংগঠনটির সংগঠক শিপার মাহমুদ।

অনুষ্ঠানে শহীদ পরিবারের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন ক্রাউন ইন্সটিটিউট অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজির শিক্ষার্থী শহীদ মো. আকরাম খান রাব্বির পিতা মো. ফারুক খান ও ইউডার শিক্ষার্থী শহীদ জুলফিকার হাসান শাকিলের মা বিবি আয়েশা।

এ সময় বিবি আয়েশা বলেন, ‘আমার ছেলেকে যারা নির্মমভাবে হত্যা করেছে, আমি তাদের বিচার চাই। যদি মৃত্যুর আগেও আমি আমার ছেলের বিচার দেখে মরতে পারি, তাও আমার আত্মার শান্তি পাবে।’

শহীদ আকরামের বাবা ফারুক খান বলেন, ‘যে আওয়ামী লীগ আমার ছেলে এবং এদেশের হাজারো মানুষকে হত্যা করেছে, তারা যেন এই দেশের মাটিতে আর রাজনীতি করার সুযোগ না পায়— এটাই আমাদের শহীদ পরিবারের চাওয়া।’

আহত জুলাইযোদ্ধা কাদিউল হাসান তানিম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমি আহত হওয়ার পর থেকে নানা সংকট ও সীমাবদ্ধতার মধ্যে দিন কাটাচ্ছি। কোনো ধরনের সহযোগিতা পাইনি। ফলে আমার পড়াশোনা ও চিকিৎসা আজ অনিশ্চয়তার মুখে।’

ন্যাশনাল অ্যালায়েন্স অব প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির স্টুডেন্টসের সংগঠক আশরাফ জামানের সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভায় আরও বক্তব্য দেন- সংগঠনটির মুখ্য সংগঠক তৌফিক, সংগঠক হুমায়ুন শফিক ও সদস্য শেরিফ ফারুকী।

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন- নাপুসের সংগঠক আল মাহমুদ অপু, মো. ওমর ফারুক, মাহমুদুল হাসান আশিক ও আদিত্য চৌধুরী প্রমুখ।

আলোচনা সভা শেষে শহীদদের আত্মার মাগফিরাত ও আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনায় দোয়া করা হয়।


গোপালগঞ্জের ঘটনায় গোয়েন্দা ব্যর্থতা ছিল: সাবেক আইজিপি আশরাফুল হুদা

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
ইউএনবি

গোপালগঞ্জের ঘটনায় গোয়েন্দা ব্যর্থতা ছিল বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক আইজিপি মো. আশরাফুল হুদা। তিনি বলেন, গোয়েন্দা সংস্থা তৎপর থাকলে গোপালগঞ্জে এত বড় ঘটনা ঘটতো না। গোয়েন্দা ব্যর্থতাই গোপালগঞ্জের ঘটনার জন্য দায়ী।

‍শুক্রবার (১৮ জুলাই) রাজধানীর এফডিসিতে ‘মব সন্ত্রাস প্রতিরোধে করণীয়’ নিয়ে আয়োজিত ছায়া সংসদে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সাবেক আইজিপি মো. আশরাফুল হুদা এসব কথা বলেন। এতে সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।

আশরাফুল হুদা বলেন, জুলাই চেতনা নস্যাৎ করে পতিত প্রধানমন্ত্রীকে পুনর্বাসন করার জন্য চক্রান্ত চলছে, যাতে নির্বাচন পিছিয়ে যায়। গোপালগঞ্জের ঘটনা তারই উদাহরণ।

পুলিশের কার্যক্রমে হস্তক্ষেপ না করে যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করতে দিলে ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন আয়োজন সম্ভব বলেও মন্তব্য করেন সাবেক এই পুলিশ কর্মকর্তা।

তিনি বলেন, সোহাগ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় পুলিশের তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া উচিত ছিল। শহরের মাঝে ঘটনা ঘটে যাওয়ার দুই দিন পরে ভাইরাল হবার পর পুলিশের তৎপর হওয়াটা দুঃখজনক। এখানে পুলিশের কোনে গাফিলতি থাকলে তারও সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া উচিত।

আশরাফুল বলেন, মব ভায়োলেন্স শুধু ভুক্তভোগীরাই করে না। নৈরাজ্য সৃষ্টি ও রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের জন্য কেউ কেউ টার্গেট করে বিএনপির ওপর দোষ চাপিয়ে দেওয়ার জন্য এ ধরনের মব ভায়োলেন্স করছে।

সভাপতির বক্তব্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, মব সন্ত্রাস জাতীয় জীবনে এক নতুন আপদ হিসেবে পরিলক্ষিত হচ্ছে। দেশটা মবের মুল্লুকে পরিণত হচ্ছে। সমাজের ক্যান্সার মব সন্ত্রাস। মব কালচার গণতন্ত্রের অভিযাত্রাকে কলঙ্কিত করছে। এটা বন্ধ করা না গেলে জনজীবনে আতঙ্ক বাড়তে থাকবে। অফিস, আদালত, রাস্তা-ঘাট, বাসস্ট্যান্ড, লঞ্চঘাট, ট্রেন স্টেশন সর্বত্র ভীতিকর অবস্থা বিরাজ করবে।

১/১১’র সময় লগি—বৈঠা দিয়ে নির্মমভাবে পিটিয়ে মানুষ হত্যার মাধ্যমে মবের বীজ রোপিত হয়েছিল বলে মন্তব্য করেন কিরণ। তিনি বলেন, সেদিন রাজধানীর পল্টনে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সামনে প্রকাশ্য দিবালোকে সাপের মতো পিটিয়ে মানুষ হত্যা করা হয়েছিল। তার বিচার এখনো হয়নি।

বিদ্যমান পরিস্থিতিতে সর্বত্র মব জাস্টিসের নামে ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে। মব সন্ত্রাস নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে জুলাই অভ্যুত্থানের চেতনা বৃথা যাবে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।

মব জাস্টিস তথা মব সন্ত্রাস প্রতিকারে করণীয় নিয়ে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি ৭ দফা সুপারিশ করেছে- ১) মব সন্ত্রাস প্রতিরোধে রাজনৈতিক সদিচ্ছা পোষণ করা ২) বিচার ব্যবস্থার জটিলতা দূর করে বিচারহীনতার সংস্কৃতি পরিহারের মাধ্যমে দক্ষ, স্বচ্ছ ও ন্যায়বিচারভিত্তিক রাষ্ট্র কাঠামো তৈরি করা ৩) জনগণের মধ্যে নৈতিকতা ও মূল্যবোধ গড়ে তুলে সচেতনতা বৃদ্ধি করা ৪) গুজবের ওপর ভিত্তি করে কোনোভাবেই যাতে মব সন্ত্রাস ছড়াতে না পারে তার জন্য সোস্যাল মিডিয়ার ওপর সরকারের নজরদারি বাড়ানো। কাট পেস্ট করে ঘৃণা ছড়ানোর লক্ষ্যে তৈরি করা মিথ্যা কনটেন্টগুলো অপসারণে বিটিআরসিকে আরও তৎপর হওয়া ৫) আগামী জাতীয় নির্বাচনে নির্বাচনী ইশতেহারে মব সন্ত্রাসকে আশ্রয় প্রশ্রয় না দেওয়ার অঙ্গীকার করা ৬) মব সন্ত্রাস প্রতিরোধে সামাজিক ও অর্থনৈতিক ভারসাম্য তৈরির মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি, দারিদ্র্য দূরীকরণ এবং সুশিক্ষার মাধ্যমে অপরাধ প্রবণতা কমিয়ে আনা ৭) মব জাস্টিস প্রতিরোধে গণমাধ্যমকে আরও বেশি সম্পৃক্ত করা।

ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র আয়োজনে ‘বিচার ব্যবস্থার দীর্ঘসূত্রিতা মব সন্ত্রাস বৃদ্ধির প্রধান কারণ’ শীর্ষক ছায়া সংসদে সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটি’র বিতার্কিকদের পরাজিত করে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের বিতার্কিকরা বিজয়ী হয়। প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন অধ্যাপক আবু মুহাম্মদ রইস, অধ্যাপক ড. তাজুল ইসলাম চৌধুরী তুহিন, সাংবাদিক সাইদুর রহমান, সাংবাদিক আহমেদ সরওয়ার, সাংবাদিক এম এম বাদশাহ্ ও সাংবাদিক মনিরুজ্জামান মিশন। প্রতিযোগিতা শেষে অংশগ্রহণকারী দলকে ট্রফি, ক্রেস্ট ও সনদপত্র দেওয়া হয়।


ডেঙ্গুতে আরও একজনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১১৪

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
ইউএনবি

এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত ও মৃত্যু ঘটনা থামছে না। বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) সকাল ৮টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় রাজধানী ঢাকায় একজন একজনের মৃত্যু হয়েছে। আর এই সময়ে সারা দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরও ১১৪ জন রোগী।

বুধবার (১৬ জুলাই) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ অ্যান্ড ইমারজেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

গত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রাম বিভাগে সবচেয়ে বেশি আক্রান্তের ঘটনা ঘটেছে। এ সময়ে বিভাগটিতে নতুন আক্রান্তের সংখ্যা সর্বোচ্চ ৪৩ জন। বিজ্ঞপ্তি থেকে পাওয়া তথ্যানুসারে, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে দেশের বিভিন্ন সরকারি–বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১১৪ জন।

নতুন আক্রান্তের মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২৯ জন। আর ঢাকার বাইরের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরও ৮৫ জন। বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, চলতি বছর আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত ৬১ জনের মৃত্যু হয়েছে, যাদের মধ্যে ৫১ দশমিক ৫ শতাংশ পুরুষ এবং ৪৭ দশমিক ৫ শতাংশ নারী।

বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ১৮ জুলাই পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন মোট ১৬ হাজার ৩৯৫ জন। এর মধ্যে ৫৮ দশমিক ৭ শতাংশ পুরুষ এবং ৪১ দশমিক ৩ শতাংশ নারী।


জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস : গ্রাহকরা পাচ্ছেন ফ্রি ইন্টারনেট ডেটা

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
বাসস

১৮ জুলাই ২০২৪ এ ইন্টারনেট শাট ডাউনের প্রতিবাদে এবং জুলাই গণ-অভ্যুত্থান দিবস পালনের অংশ হিসেবে আজ শুক্রবার থেকে (১৮ জুলাই, ২০২৫) ৫ দিন মেয়াদে দেশের সব গ্রাহক বিনা মূল্যে ১ জিবি ইন্টারনেট ডেটা পাচ্ছেন।

১৮ জুলাই বিনা মূল্যে গ্রাহকদের ১ জিবি ইন্টারনেট দেওয়া যায় কি-না, সে বিষয়ে বিটিআরসি দেশের সব মোবাইল ফোন অপারেটরকে একটি প্রস্তাব দেয়।

দেশের সব মোবাইল অপারেটর স্বপ্রণোদিত হয়ে এই উদ্যোগে সাড়া দিয়ে নিজ নিজ গ্রাহকদের বিনা মূল্যে ৫ দিন মেয়াদে ১ জিবি ইন্টারনেট ডেটা ফ্রি দিচ্ছে।

বিটিআরসি’র নির্দেশনায় অপারেটররা গ্রাহকদের ফ্রি ডেটা দেওয়ার বিষয়টি আগেই এসএমএস-এর মাধ্যমে অবহিত করে।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে।

আজ থেকে ৫ দিন মেয়াদে ১ জিবি ফ্রি ইন্টারনেট ডাটা পেতে নিজ নিজ মোবাইল অপারেটরের নির্ধারিত কোড ডায়াল করতে হবে গ্রাহকদের।

ডায়াল কোড-

গ্রামীণফোন: *১২১*১৮০৭#

বাংলালিংক: *১২১*১৮০৭#

রবি: *৪*১৮০৭#

টেলিটক: *১১১*১৮০৭#

বিজ্ঞপ্তিতে প্রেস উইং আরও জানায়, সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে গত বছরের ১৭ জুলাই রাতে মুঠোফোনে ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়া হয়।

পরদিন ১৮ জুলাই রাতে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটও বন্ধ করে দেওয়া হয়। ফলে দেশ পুরোপুরি ইন্টারনেটবিহীন হয়ে পড়ে।

সেই বিষয়টিকে মাথায় রেখেই গণ-অভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তি উপলক্ষে গ্রাহকদের বিনা মূল্যে ১ জিবি ইন্টারনেট ডেটা দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।


‘বিশ্বাসযোগ্য’ সব এপস্টিন নথি প্রকাশ করা উচিত’ : ট্রাম্প

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
বাসস

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মঙ্গলবার বলেছেন, যৌন অপরাধী জেফ্রি এপস্টিনকে নিয়ে বিচার বিভাগের তদন্তে যেসব ‘বিশ্বাসযোগ্য’ তথ্য রয়েছে, তা প্রকাশ করা উচিত। এপস্টিন ইস্যুতে প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে ট্রাম্পের নিজের রক্ষণশীল সমর্থকদের ভেতরে তীব্র ক্ষোভ দানা বাঁধছে এমন সময় তার এই বক্তব্য এলো।

ট্রাম্পের প্রশাসনের বিরুদ্ধে ধনী ও প্রভাবশালীদের রক্ষায় এপস্টিন-সম্পর্কিত কেলেঙ্কারির তথ্য চাপা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে, যা নিয়ে ট্রাম্পের দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে এবারই সবচেয়ে বড় সমর্থন বিভাজনের মুখে পড়েছেন তিনি।

হোয়াইট হাউজে এপস্টিন মামলার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ট্রাম্প বলেন, ‘অ্যাটর্নি জেনারেল পাম বন্ডি বিষয়টি খুব ভালোভাবে সামলেছেন। এটা তার ওপর নির্ভর করছে। তিনি যা বিশ্বাসযোগ্য মনে করবেন, তা তিনি প্রকাশ করবেন।’

তবে একই সঙ্গে তিনি দাবি করেন, এপস্টিন-সংক্রান্ত এইসব নথি মূলত তার ডেমোক্র্যাটিক পূর্বসূরিদের ‘বানানো’। যদিও নির্বাচনের সময় একাধিকবার তিনি বলেছিলেন, এইসব নথি তিনি ‘সম্ভবত’ প্রকাশ করবেন।

ট্রাম্পের এই মন্তব্য তার পূর্ববর্তী অবস্থানের এক ধাপ নমনীয় রূপ। এর আগে তিনি ওভাল অফিসে ও অনলাইনে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছিলেন, এপস্টিন নিয়ে তার সমর্থকদের এই আগ্রহ তিনি বুঝতে পারছেন না এবং তারা যেন এই বিষয়টি থেকে এগিয়ে যায়।

তিনি বলেন, ‘আমি বুঝতে পারছি না, কেন জেফ্রি এপস্টিনের ঘটনা কারো আগ্রহের বিষয় হবে। এটা খুবই বিরক্তিকর বিষয়।’

ট্রাম্পের ‘মেক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন’ (মাগা) আন্দোলনের অনুগত অংশের বহুদিন ধরেই বিশ্বাস যে, ডিপ স্টেটের অভিজাতরা এপস্টিনের ডেমোক্র্যাট ঘনিষ্ঠ প্রভাবশালী বন্ধুদের রক্ষায় সক্রিয়ভাবে কাজ করছে।

এপস্টিন ইস্যুতে ষড়যন্ত্রমূলক নানা তত্ত্বকে তার প্রশাসন কার্যত নাকচ করে দেওয়ার পর থেকেই সমর্থকদের মধ্যে ক্ষোভ বাড়তে থাকে।

এফবিআই ও বিচার বিভাগ এ মাসের শুরুতে প্রকাশিত এক স্মারকে জানায়, তারা কোনো ‘ক্লায়েন্ট তালিকা’ বা ব্ল্যাকমেইল সংক্রান্ত প্রমাণ খুঁজে পায়নি। তারা আরও জানায়, এপস্টিনের মৃত্যুর কারণ ছিল আত্মহত্যা, এবং তদন্ত-সম্পর্কিত আর কোনো তথ্য প্রকাশ করা হবে না।

এই প্রথম ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে এপস্টিন-সম্পর্কিত বিভিন্ন ডানপন্থী ষড়যন্ত্র তত্ত্ব সরাসরি অস্বীকার করা হলো। অথচ এর আগে, এমনকি ডানপন্থীদের নিয়োগ করা শীর্ষ এফবিআই কর্মকর্তারাও এসব তত্ত্ব উসকে দিয়েছিলেন।

এই ইস্যুতে প্রশাসনের অভ্যন্তরেও বিভাজন দেখা গেছে। পাম বন্ডি ও এফবিআই’র ডেপুটি ডিরেক্টর ড্যান বংগিনোর মধ্যে বিস্ফোরক বাক-বিতণ্ডা হয়েছে বলে জানা গেছে। বংগিনো পদত্যাগের কথাও ভাবছেন।

ট্রাম্পের নিরুত্তাপ প্রতিক্রিয়া সমর্থকদের ক্ষোভ প্রশমনে ব্যর্থ হয়েছে। ডানপন্থী বহু প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব এখনো তাঁকে তীব্র সমালোচনায় বিদ্ধ করছেন।

এমনকি ফক্স নিউজ উপস্থাপক ও ট্রাম্পের পুত্রবধূ লারা ট্রাম্পও প্রশাসনের কাছ থেকে ‘আরও স্বচ্ছতা’ দাবি করেছেন।

মার্কিন কংগ্রেসে ট্রাম্পের সবচেয়ে বড় মিত্র, স্পিকার মাইক জনসনও মঙ্গলবার এপস্টিন ইস্যুতে প্রশাসনের তথ্য প্রকাশের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। বেনি জনসনের ইন্টারনেট শোতে তিনি বলেন, ‘সবকিছু প্রকাশ করা হোক, জনগণ সিদ্ধান্ত নিক।’

তিনি পাম বন্ডি যেন তার বক্তব্যে অসঙ্গতির কারণ ‘ব্যাখ্যা দিতে এগিয়ে আসেন’।

বন্ডি গত ফেব্রুয়ারিতে ফক্স নিউজকে বলেছিলেন, তার ডেস্কে এপস্টিনের ‘ক্লায়েন্ট তালিকা’ রয়েছে পর্যালোচনার জন্য, কিন্তু পরে তিনি আবার বলেন, এমন কোনো তালিকা আসলে নেই।

২০১৯ সালে নিউইয়র্কের এক কারাগারে এপস্টিন আত্মহত্যা করেন। তার বিরুদ্ধে নাবালিকাদের যৌন উদ্দেশ্যে পাচারের অভিযোগ ছিল।

নির্বাচনের আগে ট্রাম্প বলেছিলেন, তিনি এপস্টিন-সম্পর্কিত নথি প্রকাশে ‘কোনো সমস্যা’ দেখেন না।

জিজ্ঞেস করা হলে যে, এপস্টিনুসংক্রান্ত কোনো নথিতে তাঁর নাম আছে কি না, ট্রাম্প বলেন, ‘না’, এবং যোগ করেন, বন্ডি তাকে ‘খুব সংক্ষিপ্তভাবে অবহিত করেছেন।


তফসিল ঘোষণার আগ পর্যন্ত ভোটার হওয়ার সুযোগ পাবেন নাগরিকেরা

আপডেটেড ১৭ জুলাই, ২০২৫ ২০:১৮
বাসস

ভোটার তালিকা (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’-এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন করেছে উপদেষ্টা পরিষদ। এর মাধ্যমে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগ পর্যন্ত ভোটার হওয়ার সুযোগ পাবেন যোগ্য নাগরিকেরা অর্থাৎ বয়স ১৮ বছর পূর্ণ হলেই তিনি এই সুযোগ পাবেন।

বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) উপদেষ্টা পরিষদে খসড়াটি অনুমোদন দেওয়া হয়। পরে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সংবাদ সম্মেলন করে বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানান প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম ও সিনিয়র সহকারী প্রেস সচিব ফয়েজ আহম্মদ।

বর্তমানে প্রতি বছর ডিসেম্বরের মধ্যে যাদের বয়স ১৮ বছর হয় তাঁরা পরবর্তী জানুয়ারি মাসে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হতে পারেন।

ফয়েজ আহম্মদ বলেন, ‘বিদ্যমান যে ব্যবস্থা, তাতে বাংলাদেশের নাগরিকদের মধ্যে যেসব ব্যক্তি ভোটার হওয়ার উপযোগী—যারা শুধুমাত্র ভোটার তালিকা হালনাগাদ করার আগের বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে বয়স ১৮ বছর হয়,তারা সেই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হন। প্রতি বছর ২ জানুয়ারি এ খসড়া তালিকা নির্বাচন কমিশন প্রকাশ করে এবং ২ মার্চ চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করে। তাহলে দেখা যায়, পরবর্তী সময়ে যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, সেটি অনুষ্ঠিত হওয়ার আগে যেসব নাগরিক ১৮ বছর বয়সে পৌঁছান, তারা ওই নির্বাচনে ভোট দিতে পারেন না। তারা এ তালিকা থেকে বাদ পড়ে যান। তাদেরকে পরবর্তী নির্বাচনের জন্য আবার অপেক্ষা করতে হয়। এই বাস্তবতায় নির্বাচন কমিশন মনে করে— নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে যে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রস্তুত রাখতে হয়, সেক্ষেত্রে তফসিল ঘোষণার আগে যৌক্তিক সময়ের মধ্যে যারা ভোটার হবার উপযোগী হন, তাদেরকে ভোটার তালিকায় নিয়ে আসা’।

তিনি বলেন, ভোটার তালিকা (সংশোধন) অধ্যাদেশ অনুমোদন হওয়ায়-নির্বাচনি তফসিল ঘোষণার অন্তত এক মাস আগ পর্যন্ত যেসব ব্যক্তির বয়স ১৮ বছর হবেন,তারা ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার সুযোগ পাবেন।

এছাড়া উপদেষ্টা পরিষদের সভায় ‘মানবদেহে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজন অধ্যাদেশ, ২০২৫’-এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন করা হয়েছে। এতে করে অঙ্গ দানের ক্ষেত্রে দাতার পরিধি বাড়ানো হয়েছে বলে জানান প্রেস সচিব শফিকুল আলম।

তিনি বলেন, এর ফলে কিডনি প্রতিস্থাপনের কাজ দেশে আরও সহজ হবে। আন্তর্জাতিক আইন মেনে এটি করা হয়েছে। এছাড়া মৃত্যুর পর মরদেহ থেকে কীভাবে অঙ্গ সংগ্রহ করা যাবে এবং কীভাবে প্রতিস্থাপন করা যাবে, সে বিষয়েও বলা হয়েছে অধ্যাদেশে।

এদিকে, ‘বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সংশোধন)অধ্যাদেশ ২০২৫’ এর খসড়া লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের ভেটিং-সাপেক্ষে চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ।

এক প্রশ্নের জবাবে শফিকুল আলম জানান,গোপালগঞ্জে সংঘটিত সহিংসতা ও প্রাণহানির ঘটনা তদন্তে গঠিত কমিটি পুরো ঘটনা তদন্ত করবে। ঘটনা কেন হলো, কীভাবে মৃত্যুগুলো হলো-সব বিষয় দেখবে তদন্ত কমিটি। সহিংসতা কারা করলো সেটিও দেখা হবে।

সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব অপূর্ব জাহাঙ্গীর উপস্থিত ছিলেন।


প্রধান উপদেষ্টাকে তাজউদ্দিনের জন্মশত বার্ষিকীর অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানালেন সোহেল তাজ

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
ইউএনবি

বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী ও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক তাজউদ্দিন আহমেদের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন অনুষ্ঠানে যোগদানের জন্য প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূসকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন সোহেল তাজ ও তার বোন শারমিন।

বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় তার সঙ্গে দেখা করে আনুষ্ঠানিকভাবে এই আমন্ত্রণ জানান তাজউদ্দিনের জ্যেষ্ঠ কন্যা শারমিন আহমেদ ও একমাত্র ছেলে তানজিম আহমেদ সোহেল তাজ।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

সাক্ষাৎকালে শারমিন আহমেদ প্রধান উপদেষ্টাকে তার লেখা বই 'তাজউদ্দিন আহমেদ: নেতা ও পিতা' (নেতা ও বাবা)-এর একটি কপি উপহার দেন। বইটিতে তার পিতার জীবন ও রাজনৈতিক উত্তরাধিকারের বিশদ বর্ণনা রয়েছে।

১৯২৫ সালের ২৩ জুলাই জন্মগ্রহণকারী তাজউদ্দিন আহমেদ ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের প্রথম সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।


গোপালগঞ্জের পরিস্থিতি এখন শান্ত ও নিয়ন্ত্রণে, গ্রেপ্তার ২৫: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
ইউএনবি

গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি)'র পদযাত্রাকে ঘিরে উদ্ভূত পরিস্থিতি এখন অনেকটা শান্ত ও নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।

বৃহস্পতিবার (১৭ ‍জুলাই) দুপুরে বাংলাদেশ সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ কথা জানান তিনি।

উপদেষ্টা বলেন, গতকাল এনসিপির সমাবেশে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনার পর গতকাল রাত ৮টা থেকে আজ সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত গোপালগঞ্জে কারফিউ জারি করা হয়েছে। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।

তিনি বলেন, গোপালগঞ্জের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ২৫ জনকে আটক করে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। এ ঘটনায় আমাদের ১০ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে ২ জনকে ইতোমধ্যে কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে। আহত আরও ৩ জন পুলিশ সদস্যকেও রাজারবাগ হাসপাতালে নিয়ে আসা হচ্ছে।

এ ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে এনসিপি নেতাদের অভিযোগের বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে এ বিষয়ে সঠিক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে এবং তারা সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছে।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ভবিষ্যতে আর যেন এ ধরনের ঘটনা না ঘটে এজন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হবে। যারা অন্যায় করেছে তাদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে এবং হবে। কাউকে কোনো রকম ছাড় দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।

তিনি বলেন, যতদিন পর্যন্ত সব অপরাধীরা ধরা না পড়বে ততদিন পর্যন্ত অভিযান অব্যাহত থাকবে। উপদেষ্টা এসময় গোপালগঞ্জের ঘটনা লাইভ করায় সাংবাদিকসহ সংশ্লিষ্ট টিভি চ্যানেলগুলোকে ধন্যবাদ জানান।

এর আগে উপদেষ্টা রাজধানীর রাজারবাগে কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে গোপালগঞ্জের ঘটনায় আহত পুলিশ সদস্যদের দেখতে যান।


‘‘গ্যাসের অবৈধ সংযোগ উচ্ছেদে তিতাস গ্যাস কর্তৃক সাঁড়াশি অভিযান, জরিমানা আদায়’’

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
প্রতিবেদক, দৈনিক বাংলা

তিতাস গ্যাস কর্তৃক গ্যাসের অবৈধ ব্যবহার শনাক্তকরণ এবং উচ্ছেদ অভিযান কার্যক্রম চলমান রয়েছে। নিয়মিত অভিযানের অংশ হিসেবে গত ১৬ জুলাই (বুধবার) ২০২৫ তারিখে জনাব হাসিবুর রহমান, বিজ্ঞ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, জ্বালানি খনিজ বিভাগ-এর নেতৃত্বে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিসন এন্ড ডিষ্ট্রিবিউশন পিএলসি -এর আঞ্চলিক বিক্রয় বিভাগ-সাভার, জোবিঅ-আশুলিয়া -এর আওতাধীন ইউসুফ মার্কেট (জেনারেশন নেক্সট সংলগ্ন), রংপুর মার্কেট (সিগমা ফ্যাশন সংলগ্ন), ধনাইদ মাল্টি মডার্ন রোড, আশুলিয়া, সাভার, ঢাকা এলাকার ৩টি স্পটে অভিযান পরিচালিত হয়েছে। অভিযানে ১.৫ কি:মি: অবৈধ বিতরণ লাইনের আনুমানিক ৬০০ টি অবৈধ আবাসিক গ্যাস বার্নারের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। এ সময় বিভিন্ন ব্যাসের আনুমানিক ৪০০ মিটার লাইন পাইপ অপসারণ/জব্দ করা হয়েছে। এতে মাসিক ১৫,৪১,৩৪০ টাকার গ্যাস চুরি রোধ করা সম্ভব হয়েছে।

একই দিনে, জনাব মিল্টন রায়, সিনিয়র সহকারী সচিব ও বিজ্ঞ এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট, জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ বিভাগ -এর নেতৃত্বে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিসন এন্ড ডিষ্ট্রিবিউশন পিএলসি -এর জোবিঅ-বন্দর -এর আওতাধীন কলাবাড়ী, দেওয়ানবাগ, মালিবাগ (ক্যাসেল রিসোর্ট এর পাশে), বন্দর, নারায়ণগঞ্জ এলাকার ২টি স্পটে অভিযান পরিচালিত হয়েছে। অভিযানে ১টি চুন ফ্যাক্টরি ও আনুমানিক ৩০০ চুলার সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। এ সময় ২" পানির হোস পাইপ প্রায় ২০০ফুট, বিভিন্ন ব্যাসের লাইন পাইপ ৮০ফুট, বার্নার ৪ টি ও বেলচা-৩ টি অপসারণ/জব্দ করা হয়েছে। চুন কারখানা মালিক‘কে স্পটে না পাওয়ায় বিজ্ঞ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এর মৌখিক নির্দেশনার প্রেক্ষিতে চুন ফ্যাক্টরির মালিক ও জায়গার মালিক এর বিরুদ্ধে আঞ্চলিক লিগ্যাল বিভাগ-নারায়ণগঞ্জ কর্তৃক থানায় FIR এর উদ্দেশ্যে অভিযোগ দায়ের করা হবে । অবৈধ চুন কারখানার গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে স্থাপনা ভেঙ্গে দেয়া হয়েছে ও ফায়ার সার্ভিসের সহায়তায় চুন ভিজিয়ে নষ্ট করা হয়েছে। অবৈধ বিতরণ লাইনের সংযোগ উৎসে কিলিং করা হয়েছে।

এছাড়া, জনাব জান্নাতুল নাঈম বিনতে আজিজ, টাঙ্গাইল জেলা কর্তৃক নিয়োজিত বিজ্ঞ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট -এর নেতৃত্বে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিসন এন্ড ডিষ্ট্রিবিউশন পিএলসি -এর আঞ্চলিক বিক্রয় বিভাগ- চন্দ্রা, জোবিঅ- চন্দ্রা -এর আওতাধীন গ্রীন সিটি রোড, বালুর মাঠ, গোড়াই, মির্জাপুর, টাংগাইল এলাকার ২টি স্পটে অভিযান পরিচালিত হয়েছে। অভিযানে ০৭ টি বহুতল ভবনের ১৩৫ টি চুলা, ১৭৫ টি আধাপাকা বাড়ির ২৬৫ ডাবল চুলা ও ৭টি অবৈধ গ্যাস সরবরাহের উৎসমুখ এবং ১৬টি আবাসিক রাইজার স্থায়ীভাবে বিচ্ছিন্ন (কিলিং) করা হয়েছে, যার ফলে উক্ত স্থানের ৩৫টি বাড়ির অবৈধ সংযোগ স্হায়ীভাবে বিচ্ছিন্ন হয়েছে। এ সময় ৯১টি ডাবল চুলা, ৩টি উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন আবাসিক বার্নার অপসারণ/জব্দ করা হয়েছে। এ সময় ৯ জনের বিরুদ্ধে মোট ০৯টি মামলায় ৪,৫০,০০০/- (চার লক্ষ পঞ্চাশ হাজার) টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে।


গোপালগঞ্জের প্রতিটি উপজেলায় ও গ্রামে গিয়ে কর্মসূচি করবো: নাহিদ ইসলাম

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
ইউএনবি

গোপালগঞ্জ মুজিববাদীদের হবে না বরং বাংলাদেশপন্থীদের হবে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। আবারও গোপালগঞ্জে গিয়ে প্রতিটি এলাকায় কর্মসূচি পালন করারও ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।

বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ থেকে দেওয়া এক পোস্টে এসব বলেন নাহিদ।

তিনি বলেন, ‘আমরা আবারও গোপালগঞ্জে যাব। আমরা জীবিত থাকলে গোপালগঞ্জের প্রত্যেকটা উপজেলার প্রত্যেকটা গ্রামে কর্মসূচি করব। গোপালগঞ্জের প্রতিটা ঘরে ঘরে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পতাকা উড়বে। গোপালগঞ্জ মুজিববাদীদের হবে না, বাংলাদেশপন্থীদের হবে।’

নাহিদ বলেন, ‘আমরা কথা দিয়েছিলাম (কমিট করেছিলাম) আমরা গোপালগঞ্জে যাব। আমরা গিয়েছি এবং শহীদের রক্তের শপথ নিয়ে ঘোষণা করেছি, মুজিববাদকে গোপালগঞ্জ ও বাংলাদেশের মাটিতে দাঁড়াতে দেব না।’

তবে গোপালগঞ্জের অধিবাসীদের প্রতি এনসিপির কোনো রাজনৈতিক বৈষম্য নেই বলেও জানান তিনি।

নাহিদ বলেন, ‘গোপালগঞ্জের অধিবাসীদের প্রতি রাজনৈতিক বৈষম্যের আমরা বিরোধিতা করি। গোপালগঞ্জ ও পুরো বাংলাদেশকে আমরা মুজিববাদী সন্ত্রাস ও ফ্যাসিবাদ থেকে মুক্ত করব। আওয়ামী লীগ যুগের পর যুগ ধরে গোপালগঞ্জের মানুষের জীবনকে বিপন্ন করেছে, মুক্তিযুদ্ধকে কলুষিত করেছে এবং সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে বেইনসাফি করেছে। আমরা বলেছি, আমরা এ পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটাব।’

এ সময় ‘রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ’ নিয়ে এনসিপির এই নেতা বলেন, ‘গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগের এত হত্যাযজ্ঞের পরেও ৫ আগস্টের পরে অনেকে রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ আনতে চেয়েছিল। তাদের মনে রাখা উচিত, আওয়ামী লীগ আর কোনো রাজনৈতিক দল নয়, এটা একটা সন্ত্রাসবাদী সংগঠন।’

তিনি আরও বলেন, ‘প্রশাসন ও নিরাপত্তা বাহিনী যেভাবে নির্দেশনা (ইনস্ট্রাকশন) দিয়েছে, সকালের নাশকতার পরেও নিরাপত্তা ছাড়পত্র (সিকিউরিটি ক্লিয়ারেন্স) পেয়েই আমরা গোপালগঞ্জে প্রবেশ করেছি। পদযাত্রা করিনি, পথসভা করেছি শুধু। গোপালগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলা থেকে আমাদের লোকজনকে আসতে দেওয়া হয়নি। বিভিন্ন জায়গায় বাস আটকে দেওয়া হয়েছে। এরপরও আমরা শান্তিপূর্ণভাবে পথসভা শেষ করেছি। যাওয়ার পথে সশস্ত্র আক্রমণ চালিয়েছে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা। নিরাপত্তা বাহিনী যেভাবে নির্দেশনা দিয়েছে আমরা সেভাবেই সেখান থেকে বের হয়েছি।

এ সময় গোপালগঞ্জে এনসিপির পদযাত্রাকে ঘিরে গতকালের হামলা ও হতাহতের বিষয়ে সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের দাবি জানান নাহিদ। ফেসবুক পোস্টে তিনি বলেন, ‘আমরা চারজনের মৃত্যুর কথা শুনেছি। কোনো বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডকে আমরা সমর্থন করি না, প্রত্যাশাও করি না। সন্ত্রাসীদের বিচারিক প্রক্রিয়ায় ব্যবস্থা নিতে হবে।’

নাহিদ অভিযোগ করে বলেন, ‘প্রশাসন ও গোয়েন্দা সংস্থা যদি সঠিক সময়ে সঠিক পদক্ষেপ নিত তাহলে এ পরিস্থিতি তৈরি হতো না। এ দায়ভার সরকার ও প্রশাসনকে নিতে হবে। আমরা পুরো ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও সন্ত্রাসীদের বিচার দাবি করছি।’


banner close