আক্রান্ত ১১ জেলা থেকে ধীরে ধীরে নামছে বন্যার পানি। তবে পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ফুটে উঠছে ক্ষয়ক্ষতির চিহ্ন। দুর্গম যেসব এলাকায় এত দিন যাওয়া সম্ভব হয়নি সরকারি-বেসরকারি ত্রাণকর্মী ও স্বেচ্ছাসেবীদের, এখন সেসব এলাকায় পৌঁছাচ্ছেন তারা। তবে ত্রাণের জন্য হাহাকার সবখানে। আশার কথা, নতুন বাংলাদেশে বন্যা মোকাবিলায় সব মানুষ দাঁড়িয়েছেন একসঙ্গে। তাই গত ৫ দিনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের আহ্বানে রাজধানীসহ সারা দেশের মানুষ সাড়া দিচ্ছেন, প্রধান উপদেষ্টার আহ্বানে তার ত্রাণ তহবিলেও মিলছে বিপুল সাড়া। তবে উপদ্রুত এলাকার মানুষ চাইছেন নগদ সহায়তা-ত্রাণের খাবার, বিশুদ্ধ পানি, ওষুধের পাশাপাশি ঘরবাড়ি মেরামত এবং ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড ও কৃষিতে সহায়তা। তবে সব মহলের একটা লক্ষ্য, যত দ্রুত সম্ভব পানিবন্দি মানুষের কাছে ত্রাণ হিসেবে খাবার ও পানি পৌঁছে দেওয়া। এদিকে, জলমগ্ন এলাকাগুলোতে বারবার পানিতে নামতে বাধ্য হওয়ায় অনেক মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন পানিবাহিত রোগে। উপদ্রুত জেলাগুলোতে ডায়রিয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এসব এলাকার হাসপাতালগুলোসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিকে একযোগে কাজ করছেন চিকিৎসক-নার্সদের পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবীরা।
এদিকে, বন্যার পানি নামতে শুরু করায় বোঝা যাচ্ছে ক্ষয়-ক্ষতির মাত্রা। ফেনী শহরের বাসিন্দা ষাটোর্ধ্ব মো. সাখাওয়াত হোসেন দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘গত শুক্রবার আসরের নামাজের পরেও তার এলাকাতে বন্যার লেশমাত্র ছিল না। তবে কোথা থেকে হঠাৎ এত দ্রুত গতিতে ঢলের পানি আসা শুরু করে যে মাগরিবের নামাজের আগেই কোমরসমান পানিতে ভরে যায় চারপাশ। প্রাণে বাঁচতে তার চার তলা বাসায় মুহূর্তে প্রতিবেশীদের অনেকে ভিড় করেন। এ কয় দিন বাসার দোতলা থেকে চতুর্থ তলায় বাসিন্দারাসহ ৪০ জন মানুষ আশ্রয় নিয়েছিলেন। এমন প্রতিবেশীও প্রাণ বাঁচাতে আশ্রয়ে ছিলেন যাদের তিনি আগে চিনতেনও না। পানি ছিল ভীষণ ঠাণ্ডা। এখন পানি মোটামুটি নেমে গেছে। তবে নিচতলার ভাড়াটিয়া কোনো কিছুই সরাতে পারেননি। তার সব সম্পদ পানিতে ভিজে নষ্ট হয়ে গেছে। এমন অবস্থা শহরের একতলা বা টিনশেডসহ সাধারণ ঘরে যারা ছিলেন তাদের সবার। এসব মানুষ সব হারিয়েছেন। তারা এখন কীভাবে বাঁচবেন তা আল্লাহ জানেন। এমন ঢল আমার জীবনে কখনো দেখিনি।’
বন্যায় ক্ষতির এমন চেহারা প্রায় সবখানে। পুকুরসহ মাছের ঘেরগুলো ভেসে গেছে, নষ্ট হয়েছে কৃষকের মাঠের ফসল, ব্যবসায়ীদের দোকানে পানি ঢুকে নষ্ট হয়েছে সব মালপত্র, ঘরের কোনো আসবাবপত্র আর ব্যবহারযোগ্য নেই। এই পরিস্থিতি এখন ফেনী, নোয়াখালীসহ আশপাশের সবগুলো জেলায়।
এদিকে, চলমান বন্যায় ১১ জেলায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ২৩ জনে দাঁড়িয়েছে। অন্যদিকে বন্যায় মোট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ৫৭ লাখ ১ হাজার ২০৪ জন। এছাড়া, ফেনী ও কুমিল্লা জেলার নিম্নাঞ্চলে বিদ্যমান বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি অব্যাহত রয়েছে। সব নদ-নদীর পানি কমতে শুরু করেছে।
আজ সোমবার বন্যা পরিস্থিতির সর্বশেষ তথ্য তুলে ধরে এই তথ্য জানান দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব কামরুল হাসান।
মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব জানান, বন্যা আক্রান্ত জেলার সংখ্যা ১১টি। এগুলো হচ্ছে ফেনী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সিলেট, লক্ষ্মীপুর ও কক্সবাজার। আক্রান্ত এসব জেলায় ৭৪টি উপজেলার মোট ১২ লাখ ৩৮ হাজার ৪৮টি পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে এবং ক্ষতিগ্রস্ত লোকসংখ্যা ৫৭ লাখ ১ হাজার ২০৪ জন।
তিনি জানান, পানিবন্দি-ক্ষতিগ্রস্ত লোকদের আশ্রয় প্রদানের জন্য মোট ৩ হাজার ৮৩৪ টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে এবং আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে মোট ৪ লাখ ৬৯ হাজার ৫২৩ জন মানুষ এবং ২৮ হাজার ৯০৭ টি গবাদি পশুকে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। ১১ জেলার ক্ষতিগ্রস্তদের চিকিৎসা সেবা সেবায় মোট ৬৪৫টি মেডিকেল টিম চালু রয়েছে।
কামরুল হাসান বলেন, এ পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ২৩ জন। এর মধ্যে কুমিল্লায় ৬ জন, ফেনীতে একজন, চট্টগ্রামে ৫ জন, খাগড়াছড়িতে একজন, নোয়াখালীতে ৫ জন, ব্রাহ্মণবাড়ীয়ায় একজন, লক্ষ্মীপুরে একজন ও কক্সবাজারে ৩ জন বন্যার কারণে মারা গেছেন ৷ এছাড়াও মৌলভীবাজারে ২ জন নিখোঁজ রয়েছেন।
এদিকে, পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের সোমবারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় পূর্বাঞ্চলীয় কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও ফেনী জেলার ভারতীয় ত্রিপুরা সীমান্তবর্তী অঞ্চলে এবং ত্রিপুরা প্রদেশের অভ্যন্তরীণ অববাহিকায় উল্লেখযোগ্য বৃষ্টিপাত হয়নি। উজানে নদ-নদীর পানি কমার ধারা অব্যাহত আছে। ফলে বর্তমানে ফেনী ও কুমিল্লা জেলার নিম্নাঞ্চলের বিদ্যমান বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি অব্যাহত রয়েছে।
একই সঙ্গে মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলার নদীগুলোর পানি বিপৎসীমার নিচে নেমে এসেছে। তবে এখনও কুশিয়ারা, গোমতি ও মুহুরী নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় দেশের পূর্বাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন উজানে হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টিপাত হতে পারে। এ সময়ে এ অঞ্চলের কুমিল্লা জেলার গোমতী নদীর পানি কমতে পারে এবং এ অঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে। একই সঙ্গে আগামী ২৪ ঘণ্টায় ফেনী জেলার নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি হতে পারে। তবে কোনও কোনও স্থানে স্থিতিশীল থাকতে পারে।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানায়, আজ দেশের তিনটি নদীর তিন স্টেশনের পানি বিপৎসীমার ওপরে দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। রোববার ৪ নদীর ৬টি স্টেশনের পানি বিপদসীমার ওপরে ছিল। এরমধ্যে গোমতির নদীর কুমিল্লা স্টেশনের পানি ৭৮ থেকে নেমে আজ ৪৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছে।
এছাড়া মুহুরী নদীর পরশুরাম স্টেশনের পানি আজ বিপৎসীমার ওপরে আছে। তবে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় পানির উচ্চতা সম্পর্কে জানা যায়নি। এদিকে রোববার কুশিয়ারা নদীর পানি তিন স্টেশনে বিপৎসীমার ওপরে থাকলেও আজ তা নেমে শুধু অমলশীদ পয়েন্টের পানি বিপৎসীমার ৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছে। রবিবার বিপৎসীমার ওপরে থাকা মনু নদীর মৌলভীবাজার স্টেশনের পানি আজ বিপৎসীমার নিচে নেমে গেছে।
আবহাওয়া সংস্থাগুলোর তথ্য অনুযায়ী, আগামী ৪৮ ঘণ্টায় দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও উজানে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা নেই। এ সময় উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলার মনু, খোয়াই, ধলাই নদীর পানি আরও কমতে পারে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় ফেনী জেলার নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে, তবে কোনও কোনও স্থানে স্থিতিশীল থাকতে পারে।
আবহাওয়া সংস্থাগুলোর তথ্যমতে, আগামী ২৪ ঘণ্টায় দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল ও উজানে মাঝারি বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা আছে। এ সময় এ অঞ্চলের বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম জেলার সাঙ্গু, মাতামুহুরি, কর্ণফুলী, হালদা ও অন্যান্য প্রধান নদীগুলোর পানি সময় বিশেষে বাড়তে পারে।
এছাড়াও ব্রহ্মপুত্র-যমুনা এবং দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সুরমা-কুশিয়ারা নদীর পানি কমছে, গঙ্গা-পদ্মা নদীর পানি স্থিতিশীল আছে, উত্তরাঞ্চলের তিস্তা-ধরলা-দুধকুমার নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ বিরাজমান আছে, যা আগামী ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে।
দেশে সোমবার সকাল পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ বৃষ্টি হয়েছে যশোরে ২২২ মিলিমিটার। এছাড়া বরগুনায় ১২০, বরিশালে ১০৪, টেকনাফে ১০১, পটুয়াখালী ৮৮, নোয়াখালী ৮৭, গোপালগঞ্জের হরিদাশপুরে ৮৫, কক্সবাজারে ৮২ এবং বান্দরবানের লামায় ৭০ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। এদিকে উজানে আসামের তেজপুরে ১৯, ত্রিপুরায় ১২ এবং চেরাপুঞ্জিতে ২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।
এদিকে, আজ রাতে একসঙ্গে ফারাক্কা বাঁধের ১০৯টি জলকপাট খুলে দেওয়ায় দেশের উত্তরাঞ্চলের রাজশাহী, চাঁপাই নবাবগঞ্জসহ আশেপাশের জেলাগুলোর নিম্নাঞ্চলে নতুন করে বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। যদিও এ বিষয়ে নতুন কোনও তথ্য বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র থেকে পাওয়া যায়নি।
বন্যা উপদ্রুত এলাকায় সরকারি-বেসরকারিসহ সব পর্যায় থেকে ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত আছে জানিয়ে মন্ত্রণালয় বলছে, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে বিতরণের জন্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে ১১ জেলায় মোট ৩ কোটি ৫২ লাখ টাকা, ২০ হাজার ৬৫০ মেট্রিক টন চাল, ১৫ হাজার প্যাকেট শুকনা ও অন্যান্য খাবার, ৩৫ লাখ টাকার শিশুখাদ্য এবং ৩৫ লাখ টাকার গো-খাদ্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া দেশের সব জেলায় পর্যাপ্ত ত্রাণসামগ্রী মজুত রয়েছে।
কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টের জিওসির তথ্যের বরাত দিয়ে ত্রাণ সচিব জানান, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মাধ্যমে কুমিল্লা জেলার সব উপজেলায় সড়ক পথে পর্যাপ্ত পরিমাণ খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে। এছাড়া সেনাবাহিনীর ৪টি মেডিকেল টিম প্রয়োজনীয় ওষুধসহ কুমিল্লা জেলার ৪ উপজেলায় নিয়োজিত করা হয়েছে।
ফেনীতে স্বাস্থ্য সেবা দিতে ফিল্ড হাসপাতাল প্রস্তুত করা হয়েছে জানিয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সচিব বলেন, সেনাবাহিনী ও জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের চিকিৎসকরা সেবা দিচ্ছন। পাশাপাশি স্থানীয় ক্লিনিক, হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠানগুলোকে বন্যার্তদের প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করার জন্য সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকগণ নির্দেশনা দিয়েছেন।
কামরুল হাসান বলেন, বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পানিবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিতে পারে। সে ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সচেতন হতে হবে এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিলে সহায়তা দেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে সচিব কামরুল হাসান বলেন, যারা ব্যক্তিগতভাবে উপস্থিত হয়ে প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ তহবিলে সহায়তা (চেক/পে-অর্ডার/ব্যাংক ড্রাফটের মাধ্যমে) দিতে চান তারা প্রধান উপদেষ্টার পক্ষে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার কাছেও তা দিতে পারেন। সরকারি ছুটি ছাড়া প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে ৪টা পর্যন্ত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে উপদেষ্টার কার্যালয়ে এই সহায়তা নেওয়া হবে।
যারা ত্রাণ তহবিলে সহায়তা (চেক/পে-অর্ডার/ব্যাংক ড্রাফট এর মাধ্যমে) দিতে ইচ্ছুক তাদের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব অঞ্জন চন্দ্র পাল (মোবাইল ০১৭১৮-০৬৬৭২৫) এবং সিনিয়র সহকারী সচিব শরিফুল ইসলামের (মোবাইল-০১৮১৯২৮১২০৮) সঙ্গে যোগাযোগ করার অনুরোধ জানিয়েছেন ত্রাণ সচিব।
নোয়াখালীতে আবারও বেড়েছে পানি
নোয়াখালী প্রতিনিধি জানান, বন্যা ও জলাবদ্ধতায় বিপর্যস্ত নোয়াখালীতে থেমে থেমে বৃষ্টিপাতের কারণে আবারও বাড়ছে পানি। আবহাওয়া কিছুটা ভালো থাকায় বৃহস্পতিবার থেকে গত শনিবার বিকেল পর্যন্ত পানি কিছুটা কমলেও সেদিন রাত ১০টার পর থেকে থেমে থেমে বৃষ্টির কারণে আবারও কোথাও কোথাও এক ফুট থেকে দুই ফুট পানি বেড়েছে বলে দাবি করেছেন স্থানীয়রা। জেলা প্রশাসনের হিসাবে জেলায় ২০ লাখের বেশি মানুষ পানিবন্দি আছেন।
বন্যার কারণে জেলায় এখন পর্যন্ত পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। তারা হলেন, সেনবাগ উপজেলার ইয়ারপুর গ্রামের জিলহাজুল ইসলাম (১০), কেশারপাড় ইউনিয়নের বীরকোট পশ্চিম পাড়ার দুই বছর বয়সী শিশু আবদুর রহমান এবং সদর উপজেলার কালাদরপ ইউনিয়নের পূর্ব শুল্লকিয়া গ্রামের আড়াই বছরের রিয়ান। এরমধ্যে শিশু রিয়ান বন্যার পানিতে ডুবে মারা গেছে। এছাড়াও বন্যার পানির কারণে ঘরের ভেতর বিদ্যুৎস্পৃষ্টে মারা যান সেনবাগ উপজেলার দক্ষিণ মোহাম্মদপুর গ্রামের কাকন কর্মকার (৩০) ও বেগমগঞ্জের চৌমুহনী পৌরসভার আলীপুর গ্রামের আবুল কালাম আজাদ (৫০)।
এদিকে ফেনী থেকে বন্যার পানি ডাকাতিয়া নদী দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার কারণে সেনবাগ, সোনাইমুড়ি, চাটখিল ও বেগমগঞ্জ উপজেলায় পানির চাপ বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে নোয়াখালী বন্যা পরিস্থিতি আরো অবনতি ও জনদুর্ভোগ বাড়ার আশংকা রয়েছে।
বন্যাকবলিত বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, জেলার ৮টি উপজেলার প্রায় ৯০ ভাগ মানুষ পানিবন্দি হয়ে আছেন। প্রতিটি বাড়িতে ৩ থেকে ৫ ফুট জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। নিচু এলাকাগুলোতে জলাবদ্ধতা দেখা গেছে ৬ থেকে ৭ ফুট। বসতঘরে পানি প্রবেশ করায় বুধবার রাত পর্যন্ত অনেকে খাটের ওপর অবস্থান করলেও বৃহস্পতিবার সকাল থেকে তারা নিকটস্থ আশ্রয় কেন্দ্র, প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে অবস্থান নিয়েছেন। বসত ও রান্নাঘরে পানি ঢুকে পড়ায় খাবার সংকটে রয়েছে বেশির ভাগ মানুষ। জেলার প্রধান সড়কসহ প্রায় ৮০ ভাগ সড়ক কয়েক ফুট পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। বন্যার পানি ঢুকে পড়ায় বেশিরভাগ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়েছে। সড়কগুলোতে যান চলাচল অনেকটাই কম।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, জেলার আট উপজেলার ৮৭ ইউনিয়ন ও সাতটি পৌরসভার ২০ লাখ ৩৬ হাজার সাতশ মানুষ পানিবন্দী রয়েছেন। এরমধ্যে আটশ ২৬টি কেন্দ্রে একলক্ষ ৫৩ হাজার চারশ ৫৬ জন মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। পানিবন্দী মানুষের জন্য নগদ ৪৫ লক্ষ টাকা ও ১৮শ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ করা হয়েছে। পাশাপাশি স্বাস্থ্যসেবায় ৮৮টি মেডিকেল টিম কাজ করছে।
ফেনীর তিন উপজেলায় বেড়েছে বন্যার পানি
ফেনী প্রতিনিধি জানান, ফেনীতে বন্যার পানি নামতে শুরু করেছে ফুলগাজী, পরশুরাম ও ছাগলনাইয়া উপজেলায়। বিপৎসীমার নিচে প্রবাহিত হচ্ছে মুহুরি কহুয়া ও ছিলোনিয়া নদীর পানি ৷ তবে পানিবন্দি রয়েছেন এসব এলাকার লক্ষ লক্ষ মানুষ ৷ ফেনী পৌর শহরের দু-তিনটি সড়ক ও বাসা বাড়িতে পানি কমলেও এখনো অনেক সড়ক ও বিভিন্ন ভবনের নিচতলা পানিতে সয়লাব।
ইতোমধ্যে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে ফেনী সদর, সোনাগাজী এবং দাগনভূঞা উপজেলায়। বন্যা এখানে প্রকট আকার ধারণ করেছে । এখানে এখনও পানিবন্দি কয়েক লাখ মানুষ৷ বন্যার পানি দ্রুত নেমে যাওয়ার জন্য ফেনীর মুহুরী রেগুলেটরের ৪০টি স্লুইসগেট ও নোয়াখালীর মুছাপুরের ১৭ টি স্লুইসগেট খুলে দেয়া হয়েছে।
গত রবিবার থেকে ফেনী শহরের বিদ্যুতের ৯টি লাইন সচল হয়েছে, তবে দুই-তৃতীয়াংশ বিদ্যুৎ সংযোগ এখনও বিচ্ছিন্ন রয়েছে। গত ৪দিন ধরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ থাকার পর রবিবার বিকেল থেকে যান চলাচল কিছুটা স্বাভাবিক হয়েছে। জেলার অধিকাংশ এলাকায় মোবাইল নেটওয়ার্ক অচল রয়েছে।
ফেনীতে বন্যা শুরু হওয়ার পর থেকে সেনাবাহিনী, নৌ-বাহিনী, বিমান বাহিনী, বিজিবি, কোস্ট গার্ড, ফায়ার সার্ভিস, বিভিন্ন স্থান থেকে আসা ডুবুরি দলসহ বেশ কয়েকটি স্বেচ্ছাসেবী টিম পরশুরাম ছাগলনাইয়া, সোনাগাজী এবং দাগনভূঞা এলাকায় নৌকা, স্পিডবোট নিয়ে উদ্ধার কাজ ও ত্রাণ তৎপরতা চলমান রেখেছে ৷ এসব প্রতিষ্ঠান ছাড়াও স্থানীয়ভাবে এবং বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা হতে আগত সরকারি সংস্থা, বিশ্ববিদ্যালয়, সামাজিক সংগঠন, মানবিক সংগঠন তথা বেসরকারি বিভিন্ন সংগঠন জনগণের মাঝে ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত রেখেছে।
জরুরি স্বাস্থ্যসেবায় জেলার ১টি এবং ছয়টি উপজেলায় ছয়টি মেডিকেল ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়াও বেসরকারি ৬টি হাসপাতালে মেডিকেল ক্যাম্প চালু রয়েছে। জেলা শহরে এসব বেসরকারি হাসপাতালসমূহ হল: কনসেপ্ট হাসপাতাল, মেডিনোভা হাসপাতাল মেডিল্যাব, আল আকসা হাসপাতাল, জেড ইউ মডেল হাসপাতাল, মিশন হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার।
জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, প্রতিটি উপজেলায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্যাকবলিত মানুষজনদের আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে খিচুড়ি ও শুকনা খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন শাখা সূত্র জানায়, এখন পর্যন্ত জেলায় ৮ লাখ মানুষ বন্যায় আক্রান্ত। এপর্যন্ত ১ লক্ষ ৫০ হাজার মানুষকে উদ্ধার করে বিভিন্ন আস্রয়কেন্দ্রে রাখা হয়েছে। অবশিষ্ট লোকজন উঁচু ভবনে বা ছাদে আশ্রয় নিয়েছেন।
একই সূত্র জানায়, ইতোমধ্যে সরকারি বেসরকারি উদ্যোগে ৬০ হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার বিতরণ করা হয়েছে। সেনাবাহিনী কর্তৃক হেলিকপ্টারের মাধ্যমে ৩৮ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসক মুছাম্মত শাহীনা আক্তার বলেন, প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে সেনাবাহিনী, বিমান বাহিনী, নৌ বাহিনী, বিজিবি, কোস্টগার্ড, ফায়ার সার্ভিস, বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এবং ছাত্র-জনতার সমন্বয়ে কন্যা কবলিত এলাকায় ত্রাণ বিতরণের সহযোগিতা ও উদ্ধার কাজ চলমান রয়েছে।
তিনি আরো বলেন, দেশের রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ, সুশীল সমাজ ও আপামর জনগণের সহযোগিতা পেলে সুন্দরভাবে ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করা সম্ভব হবে।
এই দুর্যোগময় মুহূর্তে ব্যবসায়ীদের প্রতি মানবিক হতে আহ্বান জানিয়ে জেলা প্রশাসক বলেন, বন্যাকে অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করে আপনার দ্রব্যমূল্যের দাম বাড়াবেন না।
বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ফুটে উঠছে ক্ষয়ক্ষতির চিত্র। মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন পানিবাহিত রোগে। এই মুহূর্তে ফেনীতে বিশুদ্ধ পানি, খাদ্য ও ওষুধ সংকট দেখা দিয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারি-বেসরকারি ত্রাণ সহায়তা অব্যাহত রয়েছে। তবে তা চাহিদার তুলনায় এখনও অপ্রতুল। স্থানীয়রা জানান, এসব বিষয় জরুরিভাবে ব্যবস্থা না হলে এখানে গুরুতর মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
উল্লেখ্য, চলতি মাসের ২০ আগস্ট থেকে অতি ভারী বৃষ্টি ও ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পানির তোড়ে ফেনী জেলায় ভয়াবহ বন্যার সৃষ্টি হয়। এ অঞ্চলের মুহুরী কহুয়া সিলোনিয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে অন্তত ৩০ স্থান ভেঙে পানি ঢুকে বন্যার সৃষ্টি হয়। গত জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহের প্রথম দফা এবং চলতি আগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহের দ্বিতীয় দফা এবং ২০ আগস্ট থেকে তৃতীয় দফা বন্যাকবলিত হয় এসব উপজেলার মানুষজন।
ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে একটিতে চাষ করা হচ্ছে হলুদ,অন্যটিতে শুকানো হচ্ছে পাট,রাতে মাদক সেবীর আড্ডা
বাংলাদেশ সরকার ১৯৮৬ সালে সুবিধাবঞ্চিত মানুষের দৌড়গোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষে মেহেরপুর গাংনী উপজেলায় তিনটি ইউনিয়ন ষোলটাকা, কাজিপুর ও ধানখোলা চালু করে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র।
গত সাত মাস যাবৎ কোনো ওষুধ বরাদ্দ না থাকায় সাধারণ মানুষের চিকিৎসা সেবায় মারাত্মক প্রভাব পড়েছে। আর কেরামতি বেড়েছে গ্রামের হাতুড়ে ডাক্তারদের।
ষোলটাকা ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের ভিতরে চাষ করা হয়েছে হলুদ। আর এই উপজেলার সবচেয়ে বড় ইউনিয়ন কাজিপুর। সেই কেন্দ্রটিতে দিনের বেলায় শুকানো হয় পাট। আর সন্ধ্যা লাগলেই পরিণত হয় মাদক সেবীদের আকড়া হিসেবে। আর ধানখোলায় ঝুলছে তালা।
কাঙ্খিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে তিনটি ইউনিয়নের কয়েক লাখ সাধারণ মানুষ। বর্তমানে স্বাস্থ্যকেন্দ্রের বেহাল দশা।
মেডিকেল অফিসারসহ চারটি পদের মধ্যে রয়েছে মাত্র একজন উপসহকারী কমিউিনিটি মেডিকেল অফিসার।
তা ছাড়া ওষুধ ও জনবল সংকটে নরমাল ডেলিভারি, প্রসূতি সেবা, কিশোর-কিশোরী স্বাস্থ্যসেবা, সাধারণ স্বাস্থ্যসেবাসহ নানা সেবা বন্ধ রয়েছে। ফলে কাঙ্খিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে তিনটি ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষ।
একেকটি উপ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে একজন মেডিকেল অফিসার, একজন উপসহকারী কমিউিনিটি মেডিকেল অফিসার, একজন ফার্মাসিস্ট ও একজন পিয়নের পদ থাকলেও সেখানে নামমাত্র একজন উপসহকারী কমিউিনিটি মেডিকেল অফিসার দিয়ে চলছে এই সব উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র।
এদিকে স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোর ভবন ও বাসভবন দুটিই একেবারই ব্যবহার অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে। ছাদ থেকে ঢালায় খসে খসে পড়ছে। নিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকায় সন্ধ্যার পর পরিত্যক্ত ভবনে বসছে নিয়মিত মাদকের আড্ডা।
সেবা প্রার্থী ষাট বছর উধ্বো জমেলা খাতুন বলেন,আমার বয়স হয়েছে আর রোগেও পাল্লা দিয়েছে। গরীব মানুষ ঔষধ কিনতে টাকা থাকে না। এই হাপানি রোগ নিয়ে দির্ঘদিন ভুগছি। এই হাসপাতালে এসে ঔষধ নিয়ে খেলে কম থাকে। একটু আরাম পাই। অথচ গত ৫/৬ মাস যাবৎ কোনো ওষুধ নেই। জরুরি চিকিৎসার জন্য গাংনী, মেহেরপুর কিংবা কুষ্টিয়া যেতে হয়। কিছু দিন আগে সহড়াবাড়িয়া গ্রামের এক কৃষক হঠাৎ অসুস্থ হলে গাংনী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে মারা যায়।
কাজিপুর গ্রামের বাসিন্দা জুয়াদ আলী বলেন, আমরা সিমান্ত এলাকার মানুষ হওয়াই বড় পাপ করে ফেলেছি। আমরা রাষ্ট্রের নাগরিক সেবার অনেক কিছু থেকেই বঞ্চিত হয়ে আছি। আমাদের ইউনিয়ন পারিবারিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র খাতা কলমে আছে। আর সেবার ক্ষেত্রে শূন্য।
ষোলটাকা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান মনি বলেন, স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলো নামেই আছে, এখানে ডাক্তার ও নার্স নেই। প্রয়োজনীয় ওষুধ সময় মতো পাওয়া যায় না। বেশির ভাগ সময় স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলো বন্ধ থাকে।বতর্মান হাসপাতালের ভিতরে হলুদ চাষ হচ্ছে। আর অন্য সময় মাদকসেবীদের দখলে। তাই জরুরি ভিত্তিতে ডাক্তার এবং নার্সের প্রয়োজন।
ধানখোলা ইউনিয়নের সাবেক প্যানেল চেয়ারম্যান ফিরোজ বলেন, স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোর কোয়ার্টার ভবনগুলো পরিত্যক্ত অবস্থায় থাকায় সেখানে কোনো ডাক্তার থাকতে পারেন না। তাই রাতের আঁধারে চিকিৎসার জন্য রোগীদের শহরে নিয়ে যেতে হয়। এ ছাড়া, নিয়মিত ওষুধ পাওয়া যায় না।এতে গ্রামের মানুষের চিকিৎসাসেবা পেতে ব্যহত হচ্ছে।
ষোলটাকা ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের উপসহকারী মেডিকেল অফিসার মো. শরিফুল ইসলাম বলেন, জনবল ও ওষুধ সংকট রয়েছে। জনবল ও ওষুধ দিলে কিছুটা হলেও স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া সম্ভব হবে। তা ছাড়া চারজনের কাজ একাই করতে হয়।
কাজিপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলম হুসাইন বলেন, আমার ইউনিয়ন পরিষদের কাছেই অবস্থিত ইউনিয়ন পরিবার ও স্বাস্থ্য কেন্দ্র। এটির অধিকাংশ ভবন পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকে। সন্ধ্যায় পর যখন এলাকা ফাকা থাকে তখন মাদকসেবীরা আড্ডায় বসে। অনেক ভবনের জ্বানালা দরজা খুলে বিক্রি করে দিয়েছে মাদক সেবীরা। আমারা সিমান্ত এলাকার মানুষ উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসা নিতে হলে ১৫ কিলো যাওয়া লাগে। তাই এটি দ্রুত চালু করা দরকার।
এদিকে মেহেরপুর সিভিল সার্জন ডা. এ.কে.এম. আবু সাঈদ বলেন, দ্রুত ওষুধ সরবরাহ করা হবে এবং শিগগিরই জনবল নিয়োগ দেওয়া হবে। সপ্তাহে দুই কিংবা তিন দিন ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র কিছু সময়ের জন্য খোলা থাকলেও বাকি সময় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দায়িত্ব পালন করতে হয় ওই সব উপসহকারী কমিউিনিটি মেডিকেল অফিসারদের।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস শারদীয় দুর্গোৎসব উপলক্ষে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করতে রাজধানীর ঢাকেশ্বরী মন্দির পরিদর্শন করেছেন।
আজ মঙ্গলবার সকাল ১১টার দিকে তিনি সেখানে উপস্থিত হন।
মন্দির পরিদর্শন শেষে প্রধান উপদেষ্টা সনাতন হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে এক শুভেচ্ছা বিনিময় সভায় যোগ দিয়েছেন।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, ওজোনস্তর রক্ষায় রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা অপরিহার্য। তিনি বলেন, ওজোনস্তর ক্ষয়ের ফলে মানবস্বাস্থ্য, কৃষি উৎপাদন ও প্রাণিজগৎ ঝুঁকির মুখে পড়েছে। তবে মন্ট্রিয়ল প্রটোকলের মতো কার্যকর আন্তর্জাতিক আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের কারণে পৃথিবী আজ ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ নিয়ন্ত্রণে সফল হয়েছে। এটি একটি দৃষ্টান্ত যে, রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকলে আন্তর্জাতিক আইনও কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করা যায়, বলেন পরিবেশ উপদেষ্টা।
মঙ্গলবার বিশ্ব ওজোন দিবস উপলক্ষ্যে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিবেশ উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান আরও বলেন, উন্নত দেশগুলো অর্থ ও প্রযুক্তিগত সহায়তার মাধ্যমে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে সহায়তা করায় ওজোনস্তর রক্ষায় বৈশ্বিক সাফল্য এসেছে। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায়ও একইভাবে উন্নত দেশগুলোর প্রতিশ্রুতি ও সহযোগিতা অপরিহার্য। আমরা চাই, সমালোচনাকে ইতিবাচক দৃষ্টিতে নিয়ে কার্যকর পদক্ষেপে রূপান্তরিত করা হোক। ব্যক্তিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক আচরণে পরিবর্তন আনলেই টেকসই ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করা সম্ভব, তিনি যোগ করেন।
আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো. কামরুজ্জামান। বক্তব্য রাখেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (জলবায়ু পরিবর্তন) মোহাম্মদ নাভিদ শফিউল্লাহ, পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক মো. জিয়াউল হক এবং ইউএনডিপির প্রতিনিধি প্রমুখ । মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রকল্প পরিচালক মহিউদ্দিন মানিক,
অনুষ্ঠানে বিশ্ব ওজোন দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করা হয়।
সারা দেশে আগামী পাঁচ দিন টানা বৃষ্টি ঝরতে পারে। সেই সঙ্গে কোথাও কোথাও অতিভারি বর্ষণ হওয়ার আশঙ্কা করছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। সংস্থাটি বলছে, মৌসুমি বায়ুর অক্ষের বর্ধিতাংশ রাজস্থান, হরিয়ানা, উত্তর প্রদেশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল হয়ে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারি অবস্থায় রয়েছে— এ অবস্থায় আগামী ২৪ ঘণ্টায় রাজশাহী, রংপুর, ময়মনসিংহ, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।
পাশাপাশি সারা দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারি থেকে অতিভারি বর্ষণ হতে পারে। এ ছাড়া সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ১২০ ঘণ্টার জন্য দেওয়া পূর্বাভাসে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এতে আরো বলা হয়েছে, আগামীকাল বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টায় রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং ঢাকা, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।
সেই সঙ্গে রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারি থেকে ভারি বর্ষণ হতে পারে। এ ছাড়া সারা দেশে দিনের ও রাতের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে।
আগামী শুক্রবার (১৯ সেপ্টেম্বর) সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের অনেক জায়গায় এবং ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারি থেকে ভারি বর্ষণ হতে পারে।
এ সময় সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
এ ছাড়া আগামী শনিবার (২০ সেপ্টেম্বর) সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং ঢাকা, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে সারা দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারি বর্ষণ হতে পারে। এ সময়ের মধ্যে সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
বর্ধিত পাঁচ দিনের আবহাওয়ার অবস্থা সম্পর্কে বলা হয়েছে, এ সময়ের মধ্যে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন নেই।
ভারতের শীর্ষ আদালত মুসলিমদের সম্পত্তি নিয়ে একটি বিতর্কিত আইনের মূল ধারাগুলো স্থগিত করেছে। তবে আইনটিকে সম্পূর্ণরূপে বাতিল করতে অস্বীকৃতি জানানো হয়েছে।
গত এপ্রিল মাসে ভারতের পার্লামেন্ট প্রণীত ওয়াকফ (সংশোধনী) আইনটিতে মুসলিমদের দান করা এবং কোটি কোটি ডলার মূল্যের সম্পত্তি পরিচালনার পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনা হয়। এর বিরুদ্ধে মুসলিম সংগঠন এবং বিরোধী দলগুলোর আনা আবেদনের শুনানি করেছে দেশটির সুপ্রিম কোর্ট।
আবেদনকারীরা বলছেন, আইনটি মুসলিম সম্প্রদায়ের অধিকার লঙ্ঘন করে। কিন্তু সরকারের যুক্তি হলো, এর লক্ষ্য মুসলিমদের সম্পত্তির ব্যবস্থাপনা আরও স্বচ্ছ করা। ইসলামী ঐতিহ্যে ওয়াকফ হলো সম্প্রদায়ের কল্যাণের জন্য মুসলমানদের প্রদত্ত একটি দাতব্য বা ধর্মীয় দান। এই ধরনের সম্পত্তি বিক্রি বা অন্য কোনো উদ্দেশে ব্যবহার করা যাবে না।
মসজিদ, মাদ্রাসা, কবরস্থান এবং এতিমখানার জন্য এগুলো ব্যবহার করা হয় বলে ভারতের ২০ কোটি মুসলমানের কাছে এগুলো গুরুত্বপূর্ণ।
ঐতিহাসিকভাবে এই সম্পত্তিগুলো ১৯৯৫ সালের ওয়াকফ আইনের মাধ্যমে পরিচালিত হয়ে এসেছে। এগুলো পরিচালনার জন্য রাজ্য-স্তরের ওয়াকফ বোর্ড গঠন বাধ্যতামূলক করা হয়েছিল।
কিন্তু এই বছরের শুরুর দিকে ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) নেতৃত্বাধীন সরকার আইনটি সংশোধন করে এতে নতুন বিধান যুক্ত করে। ওয়াকফ সম্পত্তি কীভাবে নির্ধারণ এবং পরিচালনা করা হবে, তাতে পরিবর্তন আনা হয়েছিল। ভারতে মুসলিমদের দান করা জমি নিয়ে অবিরাম আইনি লড়াই।
গতকাল সোমবার ভারতের প্রধান বিচারপতি বিআর গাভাই এবং বিচারপতি এজি মাসিহের একটি বেঞ্চ পুরো আইনটি বাতিল করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। তবে তারা একটি বিতর্কিত বিধান স্থগিত করেছে, যে বিধান সরকারকে সিদ্ধান্ত নিতে দেয় যে, বিতর্কিত সম্পত্তি ওয়াকফ কিনা।
ঐতিহাসিকভাবে মৌখিক ঘোষণা বা সম্প্রদায়ের রীতিনীতির মাধ্যমে দান করা অনেক সম্পত্তি মুসলিম সম্প্রদায়ের ক্রমাগত ব্যবহারের কারণে ওয়াকফ সম্পত্তি হিসাবে বৈধতা পেয়েছে।
সরকারি তথ্য থেকে জানা যায়, ভারতে (কাগজে) ৮৭২৮৫২টি ওয়াকফ সম্পত্তির মধ্যে কমপক্ষে ১৩২০০টি আইনি লড়াইয়ে জড়িয়ে আছে। ৫৮ হাজার ৮৮৯টি দখল করা হয়েছে এবং ৪৩৬০০০টিরও বেশি সম্পত্তির অবস্থা অস্পষ্ট।
নতুন আইনের অধীনে, ওয়াকফ বোর্ডগুলোকে কোনো সম্পত্তি ওয়াকফ হিসেবে দাবি করার জন্য বৈধ নথি সরবরাহ করতে হবে। বিরোধের ক্ষেত্রে, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত সরকারের ওপর নির্ভর করবে।
আদালত বলেছে, সরকারকে নাগরিকের অধিকার নির্ধারণের অনুমতি দেওয়া ভারতীয় সংবিধানের অধীনে নির্বাহী ও বিচার বিভাগের মধ্যে ক্ষমতা পৃথকীকরণের পরিপন্থি।
আরেকটি বিতর্কিত ধারা বাতিল করা হয়েছে, যেটির অধীনে ওয়াকফ দাতাকে কমপক্ষে পাঁচ বছর ধরে একজন ‘ধর্মপ্রাণ মুসলিম’ হতে হবে।
বর্তমানে ওয়াকফ সম্পত্তিগুলো রাজ্য-স্তরের বোর্ড এবং একটি কেন্দ্রীয় কাউন্সিলের মাধ্যমে পরিচালিত হয়, যেখানে রাজ্য সরকারের মনোনীত সদস্য, মুসলিম আইনপ্রণেতা, রাজ্য বার কাউন্সিলের সদস্য ও ইসলামী পণ্ডিতরা এই সম্পত্তিগুলোর ব্যবস্থাপকরা থাকেন।
বিচারকরা ওয়াকফ বোর্ডে অমুসলিমদের যুক্ত করার বিধান স্থগিত রাখতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। তবে তারা ২২ সদস্যের ফেডারেল বোর্ডে অমুসলিম সদস্যের সংখ্যা চার জন এবং ১১ সদস্যের রাজ্য বোর্ডে তিন জনের মধ্যে সীমাবদ্ধ রেখেছেন।
আদালত আরও বলেছে, ‘মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্য থেকে বোর্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগের চেষ্টা করা উচিত।’
মুসলিম গোষ্ঠী এবং বিরোধী দলগুলোর ব্যাপক সমালোচনার মধ্যে পার্লামেন্টে আইনটি পাস হওয়ার পরপরই এপ্রিলের গোড়ার দিকে মামলাটি শীর্ষ আদালতে গড়ায়।
তথ্য: বিবিসি
গত আগস্ট মাসে সারাদেশে মোট ৪৫১টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৪২৮ জন নিহত ও ৭৯১ জন আহত হয়েছেন। সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ও হতাহতের ঘটনা ঘটেছে মোটরসাইকেলকে ঘিরে।
গতকাল সোমবার সংবাদমাধ্যমে পাঠানো রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের মাসিক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়।
সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমানের পাঠানো প্রতিবেদনে বলা হয়, নিহতদের মধ্যে ৬৮ জন নারী এবং শিশু ৩৪ জন।
আগস্ট মাসে ১৪৪টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ১৩২ জন চালক ও আরোহী। এটি মোট দুর্ঘটনার ৩১ দশমিক ৯২ শতাংশ এবং মোট নিহতের ৩০ দশমিক ৮৪ শতাংশ। পথচারী নিহত হয়েছেন ৮৩ জন (১৯ দশমিক ৩৯ শতাংশ) এবং যানবাহনের চালক-সহকারী নিহত হয়েছেন ৫২ জন (১২ দশমিক ১৪ শতাংশ)।
এ সময় ১৯টি নৌদুর্ঘটনায় ২৩ জন নিহত, ১৭ জন আহত ও নয় জন নিখোঁজ রয়েছেন। ৩৭টি রেল দুর্ঘটনায় ৩১ জন নিহত এবং ১১ জন আহত হয়েছেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বাস দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৩০ যাত্রী; ট্রাক, কাভার্ডভ্যান, পিকআপ, ট্রলি ও লরিতে ২৭ জন; প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস ও অ্যাম্বুলেন্সে ২১ জন; তিন চাকার যানে ৯৭ জন; নসিমন, ভটভটি, টমটম ও মাহিন্দ্রার মতো শ্যালো ইঞ্জিনচালিত যানবাহনে ৩৩ জন এবং বাইসাইকেলের পাঁচ জন আরোহী নিহত হয়েছেন।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের পর্যবেক্ষণ বলছে, দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে ২১৪টি জাতীয় মহাসড়কে, ১৩৫টি আঞ্চলিক সড়কে, ৪২টি গ্রামীণ সড়কে এবং ৬০টি শহরের সড়কে ঘটেছে। দুর্ঘটনার ধরন অনুযায়ী ৯০টি মুখোমুখি সংঘর্ষ, ২০৭টি নিয়ন্ত্রণ হারানো, ৮৫টি পথচারীকে চাপা বা ধাক্কা, ৬২টি পেছন থেকে আঘাত করা এবং সাতটি অন্যান্য কারণে সংঘটিত হয়েছে।
ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি ১১৯টি দুর্ঘটনায় ১১৭ জন নিহত হয়েছেন। বরিশাল বিভাগে সবচেয়ে কম ১৮টি দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ১৬ জন। একক জেলা হিসেবে ঢাকায় ৩৬টি দুর্ঘটনায় ৩২ জন নিহত হয়েছেন এবং সবচেয়ে কম চাঁপাইনবাবগঞ্জে ছয়টি দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন একজন। রাজধানী ঢাকায় ৩৭টি দুর্ঘটনায় ১৫ জন নিহত এবং ৪৬ জন আহত হয়েছেন।
দুর্ঘটনার মূল কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন ও সড়ক, বেপরোয়া গতি, অদক্ষ চালক, শারীরিক-মানসিক অসুস্থতা, বেতন-কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট না থাকা, মহাসড়কে স্বল্পগতির যান চলাচল, তরুণদের বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানো, ট্রাফিক আইন না জানা বা না মানা, দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, বিআরটিএর সক্ষমতার ঘাটতি এবং গণপরিবহন খাতে চাঁদাবাজি।
সংস্থাটি সুপারিশ করেছে- দক্ষ চালক তৈরির উদ্যোগ বৃদ্ধি, চালকদের বেতন-কর্মঘণ্টা নির্দিষ্টকরণ, বিআরটিএর সক্ষমতা বৃদ্ধি, ট্রাফিক আইন কঠোরভাবে প্রয়োগ, মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন বন্ধ ও সার্ভিস রোড তৈরি করা, সব মহাসড়কে রোড ডিভাইডার নির্মাণ করা, গণপরিবহন থেকে চাঁদাবাজি বন্ধ করা, রেল ও নৌপথ সংস্কারের মাধ্যমে সড়ক পরিবহনের চাপ কমানো, টেকসই পরিবহন কৌশল প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা, সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে।
বাগেরহাটের রামপাল তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রে আউটসোর্সিং কর্মচারী নিয়োগ ও টেন্ডার প্রক্রিয়ায় অনিয়ম এবং বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালামাল অবৈধভাবে বিক্রয় করে অর্থ আত্মসাতের একটি অভিযোগ অনুসন্ধান শুরুর তথ্য দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
গতকাল সোমবার দুদকের রাজধানীর সেগুন বাগিচায় সংস্থাটির মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এই তথ্য জানান।
তিনি বলেন, ‘এনফোর্সমেন্ট দল অভিযোগের সত্যতা পাওয়ার পর অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’
দুদকের এক সূত্রে জানা যায়, গত ২৮ অগাস্ট অভিযোগটি অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন।
এনফোর্সমেন্ট দলের অভিযানের প্রতিবেদনের বরাতে আরও জানা যায়, স্টাফ প্যাটার্ন পর্যালোচনায় দেখা গেছে, রামপাল তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের রামপাল অফিস (মৈত্রী সুপার থার্মাল পাওয়ার প্লান্ট) ও ঢাকা অফিসে মোট ৫২৪ জন কর্মকর্তা কর্মরত আছেন। এর মধ্যে ভারতীয় প্রতিষ্ঠান এনটিপিসি কর্তৃক নিয়োজিত কর্মকর্তা রামপাল অফিসে ৩০ জন এবং ঢাকা অফিসে ৬ জন মোট ৩৬ জন।
নিয়ম অনুযায়ী একজন বিদেশি কর্মকর্তার বিপরীতে ২০ জন দেশি কর্মকর্তা থাকার কথা থাকলেও সক্ষমতার অজুহাতে এ নিয়ম মানা হয়নি বলে জানা গেছে।
এদিকে গত ২৭ জুন যন্ত্রপাতি লুটপাট, বাংলাদেশি ও ভারতীয় কর্মচারীদের মধ্যে বেতন বৈষম্যসহ আরও কয়েকটি অভিযোগ খতিয়ে দেখতে বাগেরহাটে রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কার্যালয়ে অভিযান চালায় দুদকের এনফোর্সমেন্ট টিম।
বাগেরহাট জেলা দুদক কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. সাইদুর রহমানের নেতৃত্বে এ অভিযান চালানো হয়।
সে সময় তিনি বলেছিলেন, দুই দেশের নাগরিকদের বেতন বৈষম্য, কর মওকুফে অনিয়ম, কয়লা ক্রয়ে নয়-ছয়সহ বিভিন্ন অনিয়মের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে। অনিয়ম সংক্রান্ত তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করা হয়েছে, যা প্রধান কার্যালয়ে পাঠানো হবে।
প্রসঙ্গত, ভারত ও বাংলাদেশের যৌথ বিনিয়োগে ২০১০ সালে রামপাল তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়।
বিআইএফপিসিএল ও বিপিডিবির মধ্যে বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি সই হয় ২০১৩ সালে। ওই বছরই জমি অধিগ্রহণ, ভরাট ও সড়ক নির্মাণকাজ শুরু হয়। ২০২২ সালের ২৩ ডিসেম্বর বিদ্যুৎকেন্দ্রটির প্রথম ইউনিট বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন শুরু করে।
চীনের সহায়তায় তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে চায় বাংলাদেশ। এ জন্য দেশটির কাছে ঋণও চেয়েছে ঢাকা। এ প্রকল্পে বেইজিংয়েরও আগ্রহ আছে। আগামী কয়েক মাসের মধ্যে সরেজমিনে তিস্তা প্রকল্প যাচাইয়ের জন্য বাংলাদেশে আসছে চীনের একটি কারিগরি বিশেষজ্ঞ দল। গতকাল সোমবার পররাষ্ট্র সচিব আসাদ আলম সিয়ামের সঙ্গে আলোচনায় এ তথ্য জানান ঢাকায় চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন।
জানা গেছে, তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে চীনের কাছে প্রায় ৫৫ কোটি ডলার ঋণ চেয়েছে বাংলাদেশ। আর এ ঋণের বিষয়ে ইতিবাচক দেশটি। তার পরিপ্রেক্ষিতে এ প্রকল্পের বিষয়ে চীন যে তীব্র আগ্রহী, তা আসাদ আলম সিয়ামকে জানিয়েছেন ইয়াও ওয়েন। বাংলাদেশও বিষয়টি ইতিবাচকভাবে নিয়েছে।
চীনের রাস্ট্রদূত জানান, তিস্তা প্রকল্পের বিষয়টিতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সঙ্গে তারা কাজ করছেন।
এছাড়া বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের চীন সফরে নেওয়া সিদ্ধান্তগুলোর হালনাগাদ পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। পাশাপাশি চীনের অর্থায়নে বাংলাদেশে হাসপাতাল নির্মাণসহ অন্যান্য প্রকল্পের বিষয়েও আলোচনা হয়।
এছাড়া চীনের প্রেসিডেন্ট শী চিন পিংয়ের নেওয়া বৈশ্বিক সুশাসন উদ্যোগে (জিজিআই) যোগ দিতে বাংলাদেশকে আগেই আমন্ত্রণ জানিয়েছিল চীন। পররাষ্ট্রসচিবের সঙ্গে বৈঠকে জিজিআইয়ের বিস্তারিত এবং এ উদ্যোগ নিয়ে চীনের প্রেসিডেন্টের আগ্রহের কথা জানানো হয়। আর জুলাই গণঅভুত্থ্যানের পর বাংলাদেশে চীনের বিনিয়োগ প্রায় ৮০ কোটি ডলারের ওপর এসেছে, যা সবচেয়ে বেশি বলেও জানিয়েছেন ইয়াও ওয়েন।
গত মার্চে প্রধান উপদেষ্টার চীন সফরের পর তিস্তা প্রকল্প এগিয়ে নিতে কাজ শুরু করে অন্তর্বর্তী সরকার। এর পরিপ্রেক্ষিতে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় পরিকল্পনা কমিশনে মে মাসে একটি চিঠি দেয়। তাতে তিস্তা প্রকল্প বাস্তবায়নে চীনের ঋণ নেওয়ার বিষয়টি জানানো হয়। পরে গত জুলাইয়ে চীনা দূতাবাসে চিঠি পাঠায় ইআরডি। চিঠিতে ‘কম্প্রিহেনসিভ ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড রেস্টোরেশন অব তিস্তা রিভার প্রজেক্ট’ বাস্তবায়নে চীনের কাছে ৫৫ কোটি ডলার চেয়েছে বাংলাদেশ। ঢাকা চলতি বছরের মধ্যেই এ প্রকল্পের আর্থিক চুক্তি সই করতে চায়। এ লক্ষ্যে কাজ এগিয়ে নিচ্ছে।
তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে অতীতে আগ্রহ দেখিয়েছিল চীন ও ভারত। ২০২৪ সালের মে মাসের শুরুতে বাংলাদেশ সফরে এসে ভারতের তৎকালীন পররাষ্ট্র সচিব বিনয় কোয়েত্রা তিস্তা প্রকল্পে ভারতের বিনিয়োগের আগ্রহের কথা জানিয়েছিলেন। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারও চেয়েছিল, প্রকল্পটিতে যেন ভারত অর্থায়ন করে।
তিস্তা প্রকল্পের প্রথম পর্যায় বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ৭৫ কোটি ডলার। এর মধ্যে চীন থেকে ঋণ চাওয়া হয়েছে ৫৫ কোটি ডলার। বাকিটা করা হবে সরকারি অর্থায়নে। ২০২৬ সালে এ প্রকল্পের কাজ শুরু করে ২০২৯ সালে শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) নির্বাচন পক্ষপাতদুষ্ট হয়েছে এবং গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছে বলে অভিযোগ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক। এর দায়ভার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ওপরই বর্তায় উল্লেখ করে তারা বলেছে, ‘জাকসু নির্বাচনে যেকোনো প্রকারে একটি দলকে জিতিয়ে নিয়ে আসার লক্ষ্যে সব মনোযোগ দেওয়া হয়েছে। আমরা এই নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করি এবং মনে করি, সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে এসব কারসাজি উন্মোচন হওয়া জরুরি।’
গতকাল সোমবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে দেশের বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষকদের একটি অংশের সংগঠন শিক্ষক নেটওয়ার্কের পক্ষ থেকে এ কথা বলা হয়েছে। এর আগে ১১ সেপ্টেম্বর জাকসুর নির্বাচন হয়। দুই দিন ধরে ভোট গণনার পর গত শনিবার বিকেলে ফল ঘোষণা করা হয়। ৩৩ বছর পর অনুষ্ঠিত জাকসু নির্বাচনে ২৫টি পদের মধ্যে জিএস ও দুটি এজিএসসহ ২০টি পদে জিতেছে ইসলামী ছাত্রশিবির–সমর্থিত প্যানেল সমন্বিত শিক্ষার্থী জোট।
জাকসু নির্বাচন নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের দাবির পর এই নির্বাচন ভীষণ আগ্রহ ও উদ্দীপনা তৈরি করেছিল। কিন্তু বাস্তবে অনুষ্ঠিত নির্বাচনটি একদিকে যেমন ছিল ত্রুটিপূর্ণ, তেমনি বিতর্কিত। অব্যবস্থাপনায় ভরা নির্বাচনটির এই প্রক্রিয়ায় মাশুল গুনতে হয়েছে আমাদের একজন তরুণ শিক্ষককে তার জীবন দিয়ে। নির্বাচন কমিশন গঠনের শুরু থেকেই এর অদক্ষতা, লোকবল বাড়াতে অনীহা, সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনার অভাব, প্রার্থীবিশেষের প্রতি বিরূপতা ইত্যাদি বিবেচনা করলে সহকর্মী জান্নাতুল ফেরদৌসের মৃত্যুর পটভূমিতে মারাত্মক অদক্ষতার একটা পরিবেশ আমরা দেখতে পাই। মরহুম জান্নাতুল ফেরদৌসের শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি আমরা সমবেদনা জানাই। একই সঙ্গে অদূরদর্শী কর্মপরিকল্পনারহিত নির্বাচন কমিশনের নিন্দা করি।’
জাকসু নির্বাচন প্রক্রিয়ার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ১৬টি গুরুতর সমস্যা চিহ্নিত করেছে শিক্ষক নেটওয়ার্ক। তাদের বিবৃতিতে এই সমস্যাগুলো তুলে ধরা হয়েছে। এর প্রথমটি হলো ত্রুটিপূর্ণ ভোটার তালিকা ও ত্রুটিপূর্ণ ব্যালট। দ্বিতীয় সমস্যা হিসেবে বলা হয়, ‘ভিপি প্রার্থী অমর্ত্য রায়কে চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা ঘোষণার পর ও নির্ধারিত সময় অতিবাহিত হওয়ার পর অনিয়মিত ছাত্র হিসেবে দেখিয়ে নির্বাচনের চার দিন আগে তার প্রার্থিতা বাতিল করা হয়। অমর্ত্যর বিরুদ্ধে এই সিদ্ধান্ত উচ্চতর আদালত স্থগিত করলেও চেম্বার আদালতে আপিল করে বিশ্ববিদ্যালয়, ব্যালট পেপার ছাপা হয়ে যাওয়ার যুক্তিতে ৯ সেপ্টেম্বর উচ্চতর আদালতের সিদ্ধান্ত স্থগিত করে দেওয়া হয়। প্রশাসন উচ্চতর আদালতের রায় মেনে নিয়ে অমর্ত্যর প্রার্থিতা ফিরিয়ে দিতে পারত, কিন্তু তারা সেটা করেনি। প্রশাসনের এই আচরণ এবং একজন প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিলের পুরো প্রক্রিয়াটিকে আমাদের কাছে প্রশাসনের পক্ষপাতদুষ্ট দুরভিসন্ধি বলে মনে হয়েছে।’
জাকসু নির্বাচনের তৃতীয় সমস্যা হিসেবে শিক্ষক নেটওয়ার্ক বলেছে, ৯ সেপ্টেম্বর প্রার্থীদের ডোপ টেস্টের দিন ধার্য করা হয়। ব্যালট পেপার ছাপানো হয়ে যাওয়ার পর ডোপ টেস্টের প্রাসঙ্গিকতা জানতে চাইলে বলা হয়, ব্যালট পেপার ছাপানো হয়নি। এ ধরনের পরস্পরবিরোধী কথা নির্বাচন কমিশনকে খেলো করে তোলে। চতুর্থ সমস্যা, নির্বাচনের আগের রাতে ব্যালট বাক্স হলে হলে পাঠানোর অভিযোগ উঠেছে, অথচ এই ক্যাম্পাসে ব্যালট বাক্স নির্বাচনের দিন সকালে পাঠানোয় কোনো অসুবিধা হওয়ার কথা নয়।
প্রথমে প্রার্থীদের পোলিং এজেন্ট রাখতে না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেও শেষ মুহূর্তে জাকসু নির্বাচনের আগের রাত আড়াইটার দিকে পোলিং এজেন্ট রাখা যাবে বলে ঘোষণা দেয় নির্বাচন কমিশন। এটি প্রার্থীদের মধ্যে বড় ধরনের বৈষম্যের সৃষ্টি করে। পাশাপাশি পোলিং এজেন্টদের পরিচয়পত্র দিতে গড়িমসি করা এবং সকালে কয়েক ঘণ্টা ধরে ভোট চললেও কোনো কোনো প্রার্থীর পোলিং এজেন্ট না থাকা নির্বাচনের স্বচ্ছতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। বিষয়টিকে নির্বাচনের পঞ্চম সমস্যা বলেছে শিক্ষক নেটওয়ার্ক। তাদের দৃষ্টিতে জাকসু নির্বাচনে ষষ্ঠ সমস্যা ছিল, ভোটকেন্দ্রে প্রার্থীদের ঢুকতে বাধা দেওয়া এবং ছাত্রীদের হল পরিদর্শনে প্রার্থী ও সাংবাদিকদের বাধা দেওয়া।
নির্ধারিত ভোটারের চেয়ে অতিরিক্ত ব্যালট পেপার সরবরাহ করার ঘটনা বড় রকমের সংশয় তৈরি করে বলে উল্লেখ করেছে শিক্ষক নেটওয়ার্ক। তারা বলেছে, কোনো কোনো হলে মাটিতে ব্যালট পেপার পড়ে থাকতে দেখা যায়। বিষয়টিকে শিক্ষক নেটওয়ার্ক জাকসু নির্বাচনের সপ্তম সমস্যা বলেছে। অষ্টম সমস্যা ছিল, অমোচনীয় কালির দাগ উঠে যাওয়ার ঘটনা, যা ভোট কারচুপির সুযোগ সৃষ্টি করে।
ভোটার তালিকায় নাম না থাকায় বৈধ শিক্ষার্থী হওয়া সত্ত্বেও অনেকে ভোট দিতে পারেননি ও জাল ভোটের প্রমাণ পাওয়া গেছে—শিক্ষক নেটওয়ার্কের দৃষ্টিতে এটি জাকসু নির্বাচনের নবম সমস্যা। দশম সমস্যা ছিল কোনো কোনো হলের একাধিক প্রার্থীর নাম ছাপা না হওয়া বা কয়েকজন সদস্যকে ভোট দিতে হবে সেই নির্দেশনায় ভুল অঙ্ক লেখা থাকা। নির্ধারিত সময়ে সব হলে ভোট দেওয়া শেষ না হওয়া ও নির্ধারিত সময়ের আড়াই ঘণ্টা পরও ভোট গ্রহণ চলতে থাকাকে শিক্ষক নেটওয়ার্ক বলেছে একাদশ সমস্যা।
জাকসু নির্বাচনের দ্বাদশ সমস্যা হিসেবে শিক্ষক নেটওয়ার্ক বলেছে, ওএমআর পদ্ধতিতে ভোট গণনায় প্রশ্ন ওঠায় হাতে ভোট গণনার সিদ্ধান্তের পর বাস্তব পদ্ধতি অনুসরণ না করা। এ ব্যাপারে তাদের পর্যবেক্ষণ হলো এতে ধীরগতিতে ভোট গণনা চলে এবং ৪৮ ঘণ্টা পর নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করা হয়। এত দীর্ঘ সময় ব্যালট বাক্সগুলো নিশ্ছিদ্র থাকা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। নির্বাচনে নানা দায়িত্বে থাকা তিনজন সহকর্মী (শিক্ষক) নির্বাচনের অতিরিক্ত ব্যালট পেপার সরবরাহ ও অমোচনীয় কালির দাগ উঠে যাওয়ার অভিযোগ তুলে দায়িত্ব থেকে সরে যান—বিষয়টিকে শিক্ষক নেটওয়ার্ক বলেছে নির্বাচনের ত্রয়োদশ সমস্যা। চতুর্দশ সমস্যা হিসেবে তারা নানা অভিযোগ তুলে নির্বাচনের দিন দুপুরের পর অংশগ্রহণকারী ৮টি প্যানেলের মধ্যে ৫টি প্যানেলের নির্বাচন বর্জনের কথা উল্লেখ করেছে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সব খাবারের দোকান ও চায়ের দোকান বন্ধ রেখে জাকসু নির্বাচনের উৎসবমুখর পরিবেশকে দমবদ্ধ দশায় পরিণত করা হয় বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করে শিক্ষক নেটওয়ার্ক। তাদের বিবৃতিতে বলা হয়, নির্বাচনের দিন দুপুরের পর থেকে জামায়াতে ইসলামীর নেতা-কর্মীদের বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ফটকে জড়ো হয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, শিক্ষার্থী, নির্বাচন কমিশন, তথা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব বাসিন্দার ওপর মানসিক চাপ প্রয়োগ করতে দেখা যায়। বিষয়টিকে তারা বলছে জাকসু নির্বাচনের পঞ্চদশ সমস্যা। শিক্ষক নেটওয়ার্কের দৃষ্টিতে এই নির্বাচনের ষোড়শ ও শেষ সমস্যাটি হলো পাঁচজন নির্বাচন কমিশনারের মধ্যে দুজনের নির্বাচনে পক্ষপাতের অভিযোগ তুলে পদত্যাগ সত্ত্বেও তিনজন কমিশনারের স্বাক্ষরে নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা।
১৬টি সমস্যার কথা উল্লেখ করার পর শিক্ষক নেটওয়ার্ক তাদের বিবৃতিতে বলেছে, ‘এসব থেকে প্রতীয়মান হয় যে যেকোনো প্রকারে একটি দলকে জিতিয়ে নিয়ে আসার লক্ষ্যে সব মনোযোগ দেওয়া হয়েছে এবং প্রার্থী, রিটার্নিং কর্মকর্তা ও নির্বাচন কমিশনারদের বর্জন, পদত্যাগ ও সব অভিযোগকে উপেক্ষা করা হয়েছে। দুজন কমিশন সদস্যের পদত্যাগকে আমরা নির্বাচন পরিচালনায় প্রশাসনের সর্বাত্মক ব্যর্থতা হিসেবে দেখি।’
নেটওয়ার্ক বলেছে, নির্বাচনের প্রাক্কালে ওএমআর যন্ত্রের দরপত্রবিষয়ক অভিযোগ ওঠে। একাধিক দল পরস্পরকে দোষারোপ করে। প্রশাসন সমস্যা সমাধানের রাস্তা হিসেবে ওএমআর ব্যবহার না করে সনাতনী ম্যানুয়েল পদ্ধতিতে গণনা শুরু করে। এ ধরনের কর্মকাণ্ড নেহাত প্রশাসনের দুর্বলতাকেই তুলে ধরে। এই বিপুল টাকা লগ্নির পর যন্ত্র ব্যবহার করতে না পারা নিছকই লজ্জাজনক। উপরন্তু সহকর্মীদের (শিক্ষক) ওপর অকথ্য পরিশ্রম চাপানোর কারণ তৈরি করেছে এটা। তখনই প্রশাসনের তাৎক্ষণিক জনবলবৃদ্ধি আবশ্যক ছিল।
বিবৃতির শেষাংশে শিক্ষক নেটওয়ার্কের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘এটা স্পষ্টত প্রতীয়মান হয় যে নির্বাচনটি পক্ষপাতদুষ্ট হয়েছে এবং গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছে। এর দায়ভার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ওপরই বর্তায়। একই কারণে আমরা এই নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করি এবং মনে করি, সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে এসব কারসাজি উন্মোচন হওয়া জরুরি।’
বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার বলেছেন, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণে সংস্কার সম্পন্ন করা জরুরি। আগামী বছর নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকার দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নেবে। আর নতুন সরকারের সঙ্গে কাজ করার অপেক্ষায় রয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন।
গতকাল সোমবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক মতবিনিময় অনুষ্ঠানে মাইকেল মিলার এ কথা বলেন। বাংলাদেশের সাবেক কূটনীতিকদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ফরমার অ্যাম্বাসেডরস (এওএফএ) বাংলাদেশের সঙ্গে ইইউর সম্পর্ক নিয়ে ওই মতবিনিময়ের আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এওএফএর সভাপতি আবদুল্লাহ আল হাসান।
ইইউ রাষ্ট্রদূত তার বক্তৃতায় বলেন, ‘আমি বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় ঘুরেছি। সেখানে তরুণ প্রজন্মের প্রত্যাশা এবং আকাঙ্ক্ষা লক্ষ্য করেছি। বাংলাদেশের সামনে এখন তরুণ প্রজন্মের স্বপ্ন পূরণের সময় এসেছে। তরুণদের আকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়নে রাজনৈতিক দল, নাগরিক সমাজ, উন্নয়ন সহযোগীসহ সব পক্ষের এক সঙ্গে কাজ করা উচিত।’
আগামী নির্বাচনের প্রসঙ্গ টেনে মাইকেল মিলার বলেন, বাংলাদেশ এখন রাজনৈতিক উত্তরণের দিকে এগোচ্ছে। আগামী ফেব্রুয়ারিতে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে অন্তর্বর্তী সরকারকে সব ধরনের সহযোগিতা অব্যাহত রাখতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন বদ্ধপরিকর। গণতন্ত্রে উত্তরণে অন্তর্বর্তী সরকারের নেওয়া সংস্কার কার্যক্রম দ্রুত সম্পন্ন হওয়া জরুরি। এক্ষেত্রে অবশ্যই রাজনৈতিক ঐকমত্য দরকার।
বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগের স্বার্থে স্থিতিশীলতার ওপর গুরুত্বারোপ করে ইইউ রাষ্ট্রদূত বলেন, ইউরোপীয় বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহী। যেকোনো বিনিয়োগকারী তার বিনিয়োগের সুরক্ষার পাশাপাশি একটি স্থিতিশীল পরিবেশ চায়।
বাংলাদেশ-ইইউ সম্পর্কের বিষয়ে মাইকেল মিলার বলেন, ‘আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের মূল ভিত্তি মানবাধিকার, উন্নয়ন, গণতন্ত্র ও বাক্স্বাধীনতা। ভবিষ্যতেও আমরা এই বিষয়গুলোতে আরও জোরালোভাবে কাজ করে যাব।’
ইইউ সব সময় বাংলাদেশ থেকে বৈধ অভিবাসন প্রত্যাশা করে উল্লেখ করে মাইকেল মিলার বলেন, বাংলাদেশ থেকে দক্ষ ও আধা দক্ষ শ্রমিক পাঠানোর বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে।
ইইউ রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘নিরাপত্তার ক্ষেত্রে আমরা বাংলাদেশের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছি। বিশেষ করে কোস্ট গার্ডের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে ইইউ বাংলাদেশকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দিচ্ছে। বাংলাদেশ ও ইইউর মধ্যে সামরিক ক্ষেত্রে আরও সহযোগিতা প্রয়োজন।’
রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে ইইউ তার সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে উল্লেখ করে মাইকেল মিলার বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যার একমাত্র সমাধান মিয়ানমারে তাদের প্রত্যাবাসন। তবে এই প্রত্যাবাসন হতে হবে স্বেচ্ছায় এবং শান্তিপূর্ণ পরিবেশে।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, সারা দেশে দেশীয় মাছের সংকট প্রকট হয়ে উঠছে। এই সংকট নিরসনে উন্মুক্ত জলাশয়ের কোন বিকল্প নাই। সরকার দেশের নদ-নদীতে মাছের অভয়ারণ্য তৈরি করতে কার্যক্রম গ্রহণ করছে।
উপদেষ্টা আজ সকালে কুড়িগ্রামে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা, জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান,নারী কৃষক এবং স্হানীয় এনজিও প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন। জেলা প্রশাসন, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর আলোচনা সভার আয়োজন করে।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা বলেন, বন্যায় নদীগুলোতে পলি পরার কারণে নাব্যতা হ্রাস, পানি দূষণ, চায়না জাল ব্যবহার ও ইলেকট্রিক শর্ট দিয়ে মাছ কারণে দিনদিন মাছের পরিমাণ কমছে। জোরালো অভিযান চালিয়ে এসব অবৈধ মাছ ধরার যন্ত্রপাতি উদ্ধার করতে হবে। অভিযান চলমান রাখতে নদীগুলোতে স্পীড বোটের ব্যবহার করা হবে।
চরাঞ্চলের মানুষের জীবনমান প্রসঙ্গে তিনি উল্লেখ করেন, যোগাযোগ ব্যবস্থার অপ্রতুলতার কারণে তারা সরকারি অনেক সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এছাড়া তিনি প্রতিটি মন্ত্রণালয়কে এই অঞ্চলের মানুষের জন্য বিশেষ কর্মপরিকল্পনা গ্রহণের আহ্বান জানান।
খামারিদের উৎপাদিত দুধ সংরক্ষণ বিষয়ে প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা বলেন, যথাযথ সংগ্রহ ও সংরক্ষণের অভাবে খামারিরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তাই এই অঞ্চলে চিলিং সেন্টার স্থাপনের প্রকল্প গ্রহণ করা হবে।
জুলাই যোদ্ধাদের আত্মত্যাগ প্রসঙ্গে বলেন, জুলাই যোদ্ধাগণ অনেকে জীবন উৎসর্গ করেছেন আবার অনেকে পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন। তাদের এই ঋণ ভুলবার নয়। এজন্য তিনি সরকারি ও এনজিওর উদ্যোগে তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে আহ্বান জানান।
কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক সিফাত মেহনাজের সভাপতিত্বে আরো উপস্হিত ছিলেন সিভিল সার্জন ডা. স্বপন কুমার বিশ্বাস, জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোক্তাদির খান, জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. হাবিবুর রহমান, কৃষি সম্প্রসারণের অতিরিক্ত উপপরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাসুদ রানাসহ জেলা প্রশাসনের অন্যান্য কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।
এরপর উপদেষ্টা কুড়িগ্রাম সদরের পাঁচগাছি ইউনিয়নের ছড়ারপাড় গ্রামে নারী কৃষকের বাড়ি পরিদর্শন করেন।
আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সংস্কার বাস্তবায়নের জন্য টিম হিসেবে কাজ করছে। এরই মধ্যে সুপারিশের প্রায় অর্ধেক বাস্তবায়ন করা হয়েছে।
রোববার বিকেলে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশনের সভায় এসব কথা বলেন তিনি।
আইন উপদেষ্টা বলেন, ছয়টি সংস্কার কমিশনের তাৎক্ষণিক কার্যকর করার মতো প্রায় ৭০ ভাগ সুপারিশ ডিসেম্বরের মধ্যে বাস্তবায়ন করা সম্ভব।
ড. আসিফ নজরুল বলেন, প্রথম যে ছয়টি কমিশন গঠিত হয়, তাদের প্রস্তাবিত সুপারিশের মধ্যে থেকে আশু বাস্তবায়নযোগ্যগুলো বাছাই করে ইতোমধ্যেই অর্ধেকের মত বাস্তবায়ন করেছি। আমাদের ইচ্ছা, ডিসেম্বরের মধ্যেই অন্তত ৭০ শতাংশ সম্পন্ন করে যেতে পারব।
তিনি আরও বলেন, যে সকল সংস্কার প্রস্তাব সংবিধান সংশ্লিষ্ট, সেসব বিষয়ে বৃহত্তর রাজনৈতিক ঐকমত্য প্রয়োজন। অধ্যাদেশ বা নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে আমরা সংবিধান পরিবর্তন করতে পারি না।
উপদেষ্টা জানান, কিছু প্রস্তাব সংবিধান সংশ্লিষ্ট হিসেবে উপস্থাপিত হলেও বাস্তবে তা তেমন নয়। তিনি বলেন, এ বিষয়ে কমিশনের সভাপতির সঙ্গেও আলোচনা করেছি। উদাহরণস্বরূপ, সংসদীয় স্থায়ী কমিটির প্রধান কে হবেন, তা কেবল কার্যপ্রণালীর বিধি পরিবর্তনের মাধ্যমে সমাধান করা সম্ভব; সংবিধান সংশোধনের দরকার নেই।
ড. আসিফ নজরুল বলেন, কিছু প্রস্তাবের পুনরাবৃত্তি ছিল, কিছু তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয় বলে মনে হয়েছে।
আবার কিছু প্রস্তাবে নিয়মিত কার্যক্রমের কথা উল্লেখ রয়েছে, যেমন দুর্নীতি দমন বিষয়ক কৌশলপত্র তৈরি।
আইন উপদেষ্টা জানান, বাকি পাঁচটি কমিশনের কোন সুপারিশগুলো বাস্তবায়নযোগ্য তা নিরূপণে বিদ্যুৎ,
জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান এবং পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদের নেতৃত্বে কাজ চলছে। কিছু সুপারিশের বাস্তবায়ন ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে।
সরকার আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথম দিকে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের সিদ্ধান্তে অবিচল রয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। উপদেষ্টা বলেন, একবার নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হয়ে গেলে আর কোন আইনি সংশোধন আনা যাবে না, কারণ তা নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় প্রভাব ফেলতে পারে। সে কারণেই প্রয়োজনীয় সব আইনি সংস্কার ৩০ নভেম্বরের মধ্যেই সম্পন্ন করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, আপনাদের কথা আমাকে খুব আশাবাদী করেছে। সবাই ঐক্যমত্যের ওপর ভিত্তি করে একটি ভালো সমাধান চায়। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল মানুষের নিয়ত। আমাদের নিয়ত যদি গণভ্যুত্থানের ঐক্য সংরক্ষণ করা, দেশে ফ্যাসিবাদ ফিরে আসার সুযোগ না দেওয়া এবং নিজেদের বিপদমুক্ত রাখা হয়, তাহলে সমাধান কঠিন হবে না, ইনশাআল্লাহ।
‘জুলাই জাতীয় সনদ, ২০২৫’ বাস্তবায়নের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করতে রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরাও সভায় অংশ নেন।
জাতীয় ঐকমত্য গঠন প্রক্রিয়ায় জড়িত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার সভাটি পরিচালনা করেন।
সভায় কমিশনের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ, সদস্য ড. বদিউল আলম মজুমদার, বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ড. ইফতেখারুজ্জামান ও ড. মো. আইয়ুব মিয়া।
বিএনপি, এনসিপি, জামায়াত ইসলামী, গণসংহতি আন্দোলনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরাও সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস তরুণদের মেধা, শক্তি এবং সৃজনশীলতা দিয়ে সমাজ ও দেশের উন্নয়নে অবদান রাখার আহ্বান জানিয়েছেন।
তরুণদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘আমি যুবসমাজের প্রত্যেক সদস্যকে আহ্বান জানাই, তোমাদের মেধা, শক্তি এবং সৃজনশীলতা দিয়ে সমাজের ও দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখো।
তোমাদের সাফল্য কেবল ব্যক্তিগত অর্জনে সীমাবদ্ধ না রেখে অন্যদের জন্যও অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হোক। আমি বিশ্বাস করি, তরুণরা সক্রিয় থাকলে দেশের কোনো সমস্যাই আর অমীমাংসিত থাকতে পারবে না।’
আজ সোমবার প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের শাপলা হলে আয়োজিত ‘ইয়ুথ ভলান্টিয়ার অ্যাওয়ার্ড ২০২৫’ প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজ ও তরুণ প্রজন্মের অনুপ্রেরণামূলক অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ এই পুরস্কার প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা ১২ তরুণের হাতে পুরস্কার তুলে দেন।
তিনি বলেন, ‘আজ আমরা তারুণ্যের শক্তিকে উদযাপন করছি। এটিই আমাদের জাতির চালিকাশক্তি। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, যখন একটি দেশের যুবসমাজ সক্রিয় থাকে, উদ্যমী এবং উদ্ভাবনী শক্তিতে বলীয়ান হয়, তখন কোনো প্রতিবন্ধকতাই তাদের অগ্রযাত্রাকে থামিয়ে রাখতে পারে না।’
তরুণদের ভূমিকার প্রসঙ্গ টেনে তিনি উল্লেখ করেন, ‘আমাদের তরুণদের উদ্ভাবনী শক্তি আজ কেবল শিক্ষাক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ নেই। তারা স্বাস্থ্যসেবা, পরিবেশ সুরক্ষা, দারিদ্র্য বিমোচন এবং সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায়ও অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। এই তরুণরাই চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দিয়েছে, তরুণরাই যুগে যুগে এ দেশের ইতিহাস রচনা করেছে।’
চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় তরুণদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের চলার পথে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ আসবে—কখনো তা জনস্বাস্থ্যের সংকট, কখনো শিক্ষার অপর্যাপ্ত সুযোগ, আবার কখনো পরিবেশগত বিপর্যয়। কিন্তু এই চ্যালেঞ্জগুলো নিয়ে হতাশ না হয়ে বরং আমাদের নিজস্ব শক্তি দিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবিলা করতে হবে।
আমি আশা করি, এ কাজেও আমাদের তরুণরা নেতৃত্ব দেবে।’
স্বেচ্ছাসেবার গুরুত্ব তুলে ধরে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘স্বেচ্ছাসেবা কেবল আর্তমানবতার কল্যাণেই সীমাবদ্ধ নয়, এটি আত্ম-উন্নয়ন, চরিত্র গঠন এবং নেতৃত্বের গুণাবলি বিকাশের এক আদর্শ মাধ্যম। আমরা চাই, আমাদের তরুণেরা কেবল স্বেচ্ছাসেবক হিসেবেই থেমে থাকবে না; সমাজের নীতি নির্ধারক, উদ্ভাবক এবং পরিবর্তনের স্থপতি হিসেবেও নিজেদের গড়ে তুলবে।’
পুরস্কারপ্রাপ্তদের উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, ‘আজকের এই পুরস্কার কেবল একটি স্বীকৃতি নয়, এটি তোমাদের জন্য একটি উদাত্ত আহ্বান। তোমরা আরও সাহসী হও, আরও নেতৃত্ব দাও এবং সমাজের কল্যাণে নতুন ধারণা ও উদ্ভাবন নিয়ে কাজ করো।’
তরুণদের সক্রিয় অংশগ্রহণের ইতিবাচক প্রভাব উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে তোমাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ অনেক পরিবর্তন আনতে পারে। স্বাস্থ্যখাতে তোমাদের একটি ক্ষুদ্র উদ্যোগ হাজারো শিশুকে রোগমুক্ত রাখতে পারে। শিক্ষা ক্ষেত্রে সামান্য প্রচেষ্টা দেশের শিক্ষার মানকে বহুদূর এগিয়ে নিতে পারে। পরিবেশ রক্ষায় তোমাদের সম্মিলিত প্রয়াস আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি নিরাপদ ও সবুজ পৃথিবী নিশ্চিত করতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘আমি জানি, স্বেচ্ছাসেবা বা যে কোনো মহৎ উদ্যোগের পথ মসৃণ নয়। সময়, অর্থ এবং মানসিক চাপের নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়। এর মধ্য দিয়েই আমাদের ধৈর্য, সহনশীলতা এবং নেতৃত্বের মতো মহৎ গুণাবলি অর্জন করতে হবে।’
অধ্যাপক ইউনূস আরও বলেন, ‘আমরা তোমাদের নতুন নীতি, যুগান্তকারী ধারণা এবং সামাজিক পরিবর্তনের অগ্রদূত হিসেবে দেখতে চাই। তোমাদের সম্মিলিত প্রয়াসেই বাংলাদেশ একটি উন্নত, মানবিক এবং উদ্ভাবনী রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্বে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবে।’
অনুষ্ঠানে যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মাহবুব-উল-আলম এবং পুরস্কার বিজয়ী সুরাইয়া ফারহানা রেশমা বক্তব্য রাখেন।