দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের ১১ জেলার চলমান বন্যা পরিস্থিতি অনেকটা উন্নতির দিকে। কয়েকটি জেলা ও কিছু অঞ্চল ছাড়া বেশির ভাগ জায়গার পানি নেমে যাচ্ছে বলে খবর পাওয়া গেছে। অতি বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের এ বন্যায় এখন পর্যন্ত ৩১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর আগে গতকাল মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) এ সংখ্যা ছিল ২৭ জন।
এদিকে এ বন্যায় সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় থাকা জেলা ফেনীর পরশুরাম ও ফুলগাজীতে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। তবে ছাগলনাইয়া, ফেনী সদর, সোনাগাজী ও দাগনভূঞা উপজেলায় বন্যার পানি নামছে অনেকটা ধীরগতিতে। এখনো জেলার অনেক এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হয়নি, নেই মুঠোফোনের নেটওয়ার্ক। বন্যার্ত মানুষকে সহায়তায় সরকারি-বেসরকারি ত্রাণসহায়তা অব্যাহত রয়েছে বলে জানা গেছে। ফুলগাজী উপজেলার বেশির ভাগ এলাকায় বন্যার পানি নেমে গেছে। তাই আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়ে ঘরে ফিরেছেন বেশির ভাগ মানুষ। তবে উপজেলার মুন্সিরহাট, আনন্দপুর ও জিএম হাট ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রামের সড়ক ও বাড়ি এখনো পানিবন্দি।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কে এম আলী রেজা জানিয়েছেন, দেশের চলমান বন্যা পরিস্থিতি উন্নতির দিকে। ইতোমধ্যে দেশের সব নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় ভারী বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা নেই। বুধবার দুপুরে সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত সচিব এ সব কথা বলেন।
চলমান বন্যায় ৩১ জনের মৃত্যু হয়েছে জানিয়ে কে এম আলী রেজা বলেন, ‘দেশের পূর্বাঞ্চল এবং দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে বন্যায় এখন পর্যন্ত ৩১ জনের মৃত্যু হয়েছে। যার মধ্যে কুমিল্লায় ১২ জন, ফেনী-২, চট্টগ্রামে-৫, খাগড়াছড়ি-১, নোয়াখালী-৬, ব্রাহ্মণবাড়ীয়া-১, লক্ষ্মীপুর-১ ও কক্সবাজারে ৩ জন মারা গেছে। তবে মৌলভীবাজারে দুই ব্যক্তি এখনও নিখোঁজ রয়েছেন।
তিনি জানান, আক্রান্ত ১১ জেলার ৭৩ উপজেলার ক্ষতিগ্রস্ত ইউনিয়ন/পৌরসভা ৫২৮টি। পানিবন্দি ও ক্ষতিগ্রস্ত লোকদের আশ্রয় প্রদানের জন্য মোট ৪ হাজার তিনটি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। অশ্রয়কেন্দ্র গুলোয় মোট ৫ লাখ ৪০ হাজার ৫১০ ব্যক্তি ও ৩৯ হাজার ৫৩১ গবাদি পশুকে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে।
আলী রেজা জানান, ১১ জেলায় মোট ১২ লাখ ২৭ হাজার ৫৫৪টি পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত লোকসংখ্যা ৫৮ লাখ ২২ হাজার ৭৩৪ জন। ক্ষতিগ্রস্তদের চিকিৎসা সেবা প্রদানের জন্য মোট ৬১৯টি মেডিকেল টিম সেবা দিয়ে যাচ্ছে।
অতিরিক্ত সচিব বলেন, ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য নগদ বরাদ্দ এক কোটি বাড়িয়ে ৪ কোটি ৫২ লাখ টাকা করা হয়েছে। বন্যাকবলিত এলাকায় সরকারি- বেসরকারিসহ সব পর্যায় থেকে ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত আছে।
তিনি জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক কর্তৃক সংগৃহীত মোট ৮৮ হাজার ৫০০ প্যাকেট শুকনা খাবার, কাপড় ও পানি, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের (ডিডিএম) মাধ্যমে বন্যা কবলিত এলাকায় পাঠানো হয়েছে। ডিডিএম ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের মধ্যে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে।
এদিকে দৈনিক বাংলার নোয়াখালী প্রতিনিধির তথ্যমতে, জেলায় টানা বৃষ্টি ও উজানের পানিতে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। এখনো জেলার ৮টি উপজেলার ৮৭ ইউনিয়নের ২১ লাখ ২৫ হাজার ৫শত মানুষ পানিবন্দি রয়েছে। ১৩০৩টি আশ্রয়কেন্দ্রে ২ লাখ ৬৪ হাজার ৭৪৩ জন মানুষ আশ্রিত রয়েছে। এখন নতুন করে অনেক মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রমুখী হচ্ছেন। তবে কয়েকটি আশ্রয়কেন্দ্রে কথা বলে জানা গেছে প্রত্যন্ত অঞ্চলের আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে নুতন করে মানুষ উঠার জায়গা নেই। তাই অনেকেই বাধ্য হয়ে নিজ বাড়িতে ঝুঁকি নিয়ে দিন কাটাচ্ছেন।
গতকাল মঙ্গলবার রাতের বৃষ্টিতে জেলা শহর মাইজদীসহ সদর উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। অপরদিকে, জেলার দুর্গম অনেক এলাকায় ঠিকমতো ত্রাণ পৌঁছাচ্ছে না বলে জানান বাসিন্দারা। ত্রাণ পেতে হাহাকার করছে বন্যার্তরা।
স্থানীয়রা জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় জেলার সেনবাগ, কবিরহাট ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। বেগমগঞ্জ, সোনাইমুড়ী ও চাটখিল উপজেলার বন্যা কার্যত অপরিবর্তিত রয়েছে। আর জেলা শহর মাইজদীসহ সদর উপজেলার বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। জেলায় এ পর্যন্ত জেলায় বন্যায় ৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। সরকারি ১২৪টি ও বেসরকারি ১৬টি মেডিকেল টিম মাঠে কাজ করছে। জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, জেলার পানিবন্দি মানুষের মধ্যে সরকারিভাবে নগদ ৪৫ লাখ টাকা, ৮৮২ টন চাল, ১ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার, ৫ লাখ টাকার শিশু খাদ্য ও ৫ লাখ টাকার পশুখাদ্য বিতরণ করা হয়েছে।
নোয়াখালীর জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান বলেন, বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় জেলা প্রশাসন কাজ করছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রত্যন্ত অঞ্চলে শুকনো খাবার বিতরণ করা হচ্ছে।
বিপৎসীমার নিচে গোমতীর পানি
ভারত থেকে নেমে আসা ঢলে গত আটদিন ধরে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল গোমতী নদীর পানি। তবে মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) রাতে বিপৎসীমার নিচে নেমে আসে পানির স্তর। এতে কিছুটা ঝুঁকিমুক্ত হয়েছে গোমতী। তবে নদীর পানি অব্যাহত প্রবেশ করছে বুড়িচং উপজেলায়। এতে প্রতিনিয়ত বাড়ছে বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়ায় বন্যার পানি। বুধবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত গোমতীর বিপৎসীমার ২৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে পানি। এতে কিছুটা হলে গোমতী সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দাদের মাঝে স্বস্তি ফিরেছে। কুমিল্লা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী খান মো. ওয়ালিউজ্জামান এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, ২২ আগস্ট রাতে বুড়িচং এলাকায় গোমতীর বাঁধ ভাঙার ফলে শুক্রবার সকাল থেকে নদীতে পানি কমতে শুরু করে। বর্তমানে বিপৎসীমার ২৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এর আগে ১৩৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে গোমতী পানি। উজানে বৃষ্টি না হলে অনেকটাই ঝুঁকিমুক্ত বলতে পারেন।
ফেনীতে ধ্বংসস্তূপের ওপর দাঁড়িয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা
দৈনিক বাংলার ফেনী প্রতিনিধি জানায়, জেলার সবকটি উপজেলায় প্রায় ১১ লাখ ৫০ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছিল। তবে বন্যার পানি কমে যাওয়ার পর জনজীবনে সমস্যা আরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। এখানকার মানুষ ধ্বংসস্তূপের ওপর দাঁড়িয়ে আবার ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জেলার ফুলগাজী, পরশুরাম, ছাগলনাইয়া উপজেলায় ফুটে উঠছে ক্ষয়ক্ষতির চিত্র। মনুষ আক্রান্ত হচ্ছেন পানিবাহিত বিভিন্ন রোগে। এই মুহূর্তে ফেনীতে খাদ্য, পানি ও ওষুধ সংকট দেখা দিয়েছে। ভেজা ও নষ্ট হওয়া আসবাবপত্রাদি, দুর্গন্ধময় পরিবেশ তছনছ সাজানো গুছানো সংসার-এমন মানবিক বিপর্যয়ে এখন বেঁচে থাকাই দায়। এসব বিষয় জরুরিভাবে ব্যবস্থা না হলে এখানে মানবিক বিপর্যয় আরও গুরুতর হবে।
ফেনী জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, বন্যায় দুই জনের মৃত্যু হলেও নিখোঁজ-মৃত্যু সংখ্যা আরও বেশি হবে। তবে এখন পর্যন্ত এসবের সঠিক তথ্য পাওয়া যায়নি।
স্থানীয় সূত্র জানায়, এবারের বন্যায় জেলার ছয়টি উপজেলায় রোপা আমান, সবজি ক্ষেত, বিজতলা সম্পূর্ণভাবে বিনষ্ট হয়েছে। মানুষের বাড়ি-ঘরে চালা পর্যন্ত পানি উঠায় তাদের ঘরে থাকা আসবাবপত্র, কাথা- বালিশ, গৃহস্থালিসহ সকল প্রকার মালামাল সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়েছে।উপজেলাব্যাপী মাছের ঘের এবং পুকুরের মাছ সম্পূর্ণ ভেসে গেছে। কোনো কোনো স্থানে কৃষকের গবাদি পশু কিছু কিছু রক্ষা করা গেলেও এখন গো-খাদ্যের সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। উপজেলায় মুরগির খামার একটিও নেই। গরুর খামার ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
উপজেলায় গ্রামীণ সড়ক, শাখা পাকা রাস্তা সম্পূর্ণ ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে। মানুষের যোগাযোগের ব্যবস্থা নেই। যোগাযোগ ব্যবস্থায় সমস্যার কারণে ত্রাণসামগ্রী নিয়ে বিভিন্ন জেলা থেকে আসা বিভিন্ন মানবিক সংগঠন প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত অসহায় মানুষের কাছে ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে যেতে পারছে না।
সাত দিন বন্ধ থাকার পর জেলা হেডকোয়ার্টার এর সঙ্গে ফেনী-পরশুরাম ও ফেনী-ছাগলনাইয়া এবং ফেনী-সোনাগাজী আঞ্চলিক সড়কে পরশুরাম, ফুলগাজী ও ছাগলনাইয়া ও সোনাগাজী উপজেলার যোগাযোগ কিছুটা স্বাভাবিক হয়েছে। রাস্তার ওপরের অংশ পানির তোড়ে ভেসে গেছে। সৃষ্টি হয়েছে খানাখন্দ। জেলার কিছু কিছু এলাকায় মোবাইল নেটওয়ার্ক সচল হয়েছে, বিদ্যুৎ সংযোগ এখনো দুই-তৃতীয়াংশ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। তবে ধীরে ধীরে এসব কিছুতে স্বাভাবিক গতি ফিরে পাচ্ছে। সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমান বাহিনী, র্যাব, বিজিবি, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র সংগঠন, বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, ছাত্র-জনতার চেষ্টায় উদ্ধার করা হয়েছে দেড় লাখ মানুষকে। এ ছাড়া বন্যা পরিস্থিতিতে নিজ উদ্যোগে মানুষ নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ভেসে গেছে সাড়ে ১৮ কোটি টাকার মাছ
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় চলমান বন্যায় ৪ উপজেলার ৮৬০টি পুকুরের অন্তত ৭৫৬ টন মাছ পানিতে ভেসে গেছে বলে জানা গেছে। এতে সাড়ে ১৮ থেকে ১৯ কোটি টাকার বেশি লোকসান হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন আখাউড়া উপজেলার খামারিসহ মাছ ব্যবসায়ীরা। তবে ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
আখাউড়া উপজেলা মৎস্য কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় পুকুর, দিঘি ও খামারের সংখ্যা ২ হাজার ৩৪৮। এগুলোর মোট আয়তন ৬২১ হেক্টর। এসব জলাশয়ে প্রায় ৫০০ ব্যবসায়ী মাছ চাষ করেন। আর চাষির সংখ্যা ২ হাজার ১০৭। বন্যায় ১২১ দশমিক ৮৬ হেক্টর আয়তনের ৪৩০টি দিঘি, খামার ও পুকুরের সব মাছ পানিতে ভেসে গেছে। ৯ কোটি ১৩ লাখ টাকা মূল্যের মোট ৪৫৬ টন মাছ পানিতে ভেসে গেছে। আর ১ কোটি ১৫ লাখ পোনা পানিতে ভেসে গেছে, যার বাজারমূল্য ৩ কোটি টাকা। এ ছাড়া বিভিন্ন ব্যবসায়ীর ১০ লাখ টাকার অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
আখাউড়ার মোগড়া ইউনিয়নের নিলাখাদ গ্রামের খামারি নাইম আহমেদ বলেন, ‘বন্যায় যে ক্ষতি হয়েছে, তা সামলে ওঠা অনেক কঠিন হয়ে পড়বে। বন্যার পানিতে পাঁচ কোটি টাকার মাছ পানিতে ভেসে গেছে। এই ক্ষতি কীভাবে পূরণ করব, বুঝতে পারছি না।’
বন্যার পানিতে প্রায় দেড় কোটি টাকার মাছ ভেসে যাওয়ার দাবি করেছেন কর্নেল বাজারের বাসিন্দা বাছির মিয়া। তিনি বলেন, পুকুরে মাছ মাত্র বড় হয়েছিল। কয়েক দিনের মধ্যেই বাজারে বিক্রি করতেন। কিন্তু বন্যার পানিতে সব মাছ ভেসে দেড় কোটি টাকার লোকসান হয়েছে।
উপজেলার মৎস্য সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম বলেন, বড় ব্যবসায়ীরা অনেক বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ইউনিয়ন পর্যায়ে খামারিদের ক্ষতির তালিকা করা হচ্ছে। তবে ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে।
এদিকে কসবা উপজেলা মৎস্য কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় বন্যার পানিতে ২০০ পুকুর, দিঘি ও খামারের মাছ ভেসে গেছে। এগুলোর আয়তন ৩৮ হেক্টর। ১ কোটি ৪০ লাখ টাকার বড় মাছ ও ১০ লাখ টাকার পোনা পানিতে ভেসে গেছে। বন্যার পানিতে মাছ ভেসে যাওয়ার পাশাপাশি অবকাঠামো ভেঙে মোট ১ কোটি ৫৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
২০ আগস্ট রাতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া ইমিগ্রেশন–সংলগ্ন খাল দিয়ে ভারতে থেকে পাহাড়ি ঢলের পানি আসতে শুরু করে। এরপর আখাউড়া উপজেলাসহ পর্যায়ক্রমে কসবা উপজেলায় বন্যা দেখা দেয়।
এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক এবং গবেষণা সংস্থা সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আমরা সবাই যে সহানুভূতি, ভালোবাসা ও ভক্তি নিয়ে ছিলাম, সেখানে কোথায় যেন একটা মোহভঙ্গ হয়েছে। এই মোহভঙ্গ সংস্কার প্রক্রিয়াকে অনুধাবন করার জন্য বড় ধরণের শিক্ষা দিয়েছে। সাধারণভাবে সব জায়গায় এমন ধারণা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
গতকাল সোমবার রাজধানীর হোটেল লেকশোরে এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্মের উদ্যোগে ‘বাংলাদেশ রিফর্ম ওয়াচ’ নামে নতুন উদ্যোগের আনুষ্ঠানিক সূচনা অনুষ্ঠানে আলোচনার এক পর্যায়ে তিনি এমন মন্তব্য করেন। দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন।
অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার উদ্যোগের বিষয়ে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, কোনটা হয়, কোনটা হয় না এবং এ রকম একটি সরকার পেলেও কেন হয় না– সেগুলো আগামী দিনে বড় আলোচ্য বিষয় হয়ে দাঁড়াবে। তিনি বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারকে আমি ভুলে অনেক সময় ‘অন্তরীণ’ সরকার বলি। মাঝে মাঝে মনে হয়, কে যেন সরকারকে ‘দখল’ করে নিয়েছে।’
স্বাগত বক্তব্যে ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, বাংলাদেশের ওপর দিয়ে এখন একটি ঝড় বয়ে যাচ্ছে। ঝড়ের আঘাত সর্বক্ষেত্রে অনুভূত হচ্ছে। ঝড়ের সময় মানুষ সব সময় তার বড় সম্পদ রক্ষার চেষ্টা করে। জুলাই অভ্যুত্থানের ভিতর দিয়ে বৈষম্যবিরোধী চেতনা মানুষের সবচেয়ে বড় সম্পদ। পরিবর্তনের চেতনা ধরে রাখা এখন বড় কাজ।
তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার সংস্কারের জন্য ডজন খানেক কমিশন ও টাস্কফোর্স গঠন করে। তিনি নিজেও অর্থনীতির শ্বেতপত্র প্রণয়নের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। কিন্তু যে উচ্ছ্বাস প্রথম দিকে ছিল, তা এখন স্তিমিত হয়ে গেছে। দু’একটি ব্যতিক্রম বাদে কমিটি ও কমিশনে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব রাখা হয়নি। রাজনীতিবিদদের সঙ্গে সরকার সংস্কার নিয়ে আলোচনা করছে। কিন্তু সংস্কার প্রক্রিয়া কোথায় গিয়ে যেন আর এগোতে পারছে না। এটি কি আকাঙ্খার অভাব না–কি সক্ষমতার অভাব, না–কি কোথাও স্বার্থের সংঘাত লুকিয়ে ছিল। এখন এসে প্রশ্ন জাগছে, অন্তর্বর্তী সরকার কি পথ হারিয়েছে?
‘বাংলাদেশ রিফর্ম ওয়াচ’ উদ্যোগ সম্পর্কে তিনি জানান, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অবশিষ্ট সময়কালে গৃহীত কর্মসূচি, নির্বাচনকালীন সময়ে রাজনৈতিক দলগুলোর ইশতেহার ও নির্বাচনী আলোচনা-বিতর্ক এবং নির্বাচিত সরকারের প্রাধিকার ও কর্মসূচি–এই তিনটি পর্যায়ে এ উদ্যোগের কার্যক্রম পরিচালিত হবে। রূপান্তরকালীন এ নাগরিক প্রয়াস বাস্তবায়ন করবে প্ল্যাটফর্মের জাতীয় ও তৃণমূল পর্যায়ের ১৫০টিরও বেশি সহযোগী সংগঠনসহ ব্যক্তিখাতের নেতারা, বিশেষজ্ঞ, পেশাজীবী প্রতিষ্ঠান ও গোষ্ঠী। এ উদ্যোগ বিভিন্ন নেটওয়ার্কের নেটওয়ার্ক হিসেবে কাজ করবে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সিপিডির চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহান। বক্তব্য রাখেন সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক রওনক জাহান, পিপিআরসির নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. হোসেন জিল্লুর রহমান, স্থানীয় সরকার বিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রধান তোফায়েল আহমেদ, নির্বাচন কমিশনবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার, শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রধান সুলতান আহমেদ, নাগরিক প্ল্যাটফর্মের কোরগ্রপ সদস্য শাহীন আনাম, রাশেদা কে চৌধুরী, আসিফ ইব্রাহীম ও অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান, বিকেএমইএর সাবেক সভাপতি ফজলুল হক, অর্থনীতিবিদ আনু মুহাম্মদ, এম.এম. আকাশ ও সেলিম রায়হান প্রমুখ।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আজ মঙ্গলবার আরও সাতটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক করবেন।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং গতকাল সোমবার জানিয়েছে, রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এতে সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতারা অংশ নেবেন।
গত রোববার বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টা। আলাদা আলাদা বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা দলগুলোকে আশ্বস্ত করে বলেন, আগামী ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝিই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
তবে সংস্কার ও জাতীয় নির্বাচন প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর মতভিন্নতা কাটেনি। এসব নিয়ে নিজেদের আগের অবস্থানই তুলে ধরেছে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপি। তবে প্রধান উপদেষ্টা স্পষ্ট করে বলেছেন, ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচন ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। কেউ যদি নির্বাচন ছাড়া অন্য কোনো বিকল্প নিয়ে ভাবে, সেটা হবে জাতির জন্য গভীর বিপজ্জনক।
গত শুক্রবার রাতে জাতীয় পার্টি ও গণঅধিকার পরিষদের কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষকে ঘিরে সেনাবাহিনী ও পুলিশের লাঠিপেটায় নুরুল হকের আহত হওয়ার ঘটনায় উত্তপ্ত পরিস্থিতি তৈরি হয়। অন্তর্বর্তী সরকারসহ দেশের প্রায় সব দল এ ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে গত শনিবার প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকারের এক সভায় গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হকের ওপর হামলার ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্তের সিদ্ধান্ত হয়।
৩৮ লাখ টাকা ঘুষের বিনিময়ে আয়কর নথির কাগজপত্র হস্তান্তর করায় আয়কর বিভাগের সহকারী কর কমিশনার জান্নাতুল ফেরদৌসকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। গতকাল সোমবার অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের (আইআরডি) এক আদেশে তাকে বরখাস্ত করা হয়। আইআরডি সচিব ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান এতে সই করেন।
বরখাস্তের আদেশে বলা হয়, ঢাকার কর অঞ্চল-৫–এর সহকারী কর কমিশনার জান্নাতুল ফেরদৌস ৩৮ লাখ টাকা গ্রহণের বিনিময়ে একই কর অঞ্চলের ৯৩ নম্বর সার্কেলের করদাতা সালাহ উদ্দিন আহমেদের মনোনীত প্রতিনিধিকে (আয়কর আইনজীবী) আয়কর নথির অধিকাংশ পূর্ববর্তী রেকর্ড হস্তান্তর করেন। এগুলো হলো পুরোনো আয়কর রিটার্ন, অর্ডার শিট, কর নির্ধারণী আদেশ, আপিল-ট্রাইব্যুনাল আদেশসমূহ এবং অন্যান্য দলিল। এ জন্য জান্নাতুল ফেরদৌসের বিরুদ্ধে বিভাগীয় কার্যধারা গ্রহণের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
আদেশে আরও বলা হয়, সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮–এর বিধি-১২ অনুযায়ী জান্নাতুল ফেরদৌসকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ করে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হলো। তিনি সাময়িক বরখাস্তকালীন বিধি মোতাবেক খোরপোষ ভাতা প্রাপ্য হবেন। এ আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে।
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) বাইরে অন্য কোনো লেখক ও প্রকাশকের বই পাঠ্যভুক্ত করলে সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) সচিব অধ্যাপক সাহতাব উদ্দিন স্বাক্ষরিত এক গণবিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়, সংশ্লিষ্ট সবাইকে জানানো যাচ্ছে যে, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) কর্তৃক প্রণীত ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষের একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির সাহিত্যপাঠ (গদ্য ও কবিতা), বাংলা সহপাঠ (উপন্যাস ও নাটক), তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (বাংলা ও ইংরেজি ভার্সন) এবং English For Today পাঠ্যপুস্তকগুলো প্রচ্ছদ পরিবর্তন, বিষয়বস্তু সংযোজন, বিয়োজনসহ পরিমার্জনপূর্বক নতুন আঙ্গিকে এনসিটিবির জলছাপযুক্ত নিরাপত্তা কাগজসমেত মুদ্রণ ও বাঁধাই করে ১৪ সেপ্টেম্বর থেকে বাজারজাত করা হবে।
এ পরিপ্রেক্ষিতে অভিভাবকরা এবং শিক্ষার্থীদের এনসিটিবি কর্তৃক প্রদত্ত জলছাপসহ সিকিউরিটি পেপারযুক্ত নতুন সংস্করণের পাঠ্যপুস্তকগুলো ক্রয় করার অনুরোধ করা হলো।
উল্লেখ্য, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডগুলোর অধীনে পরিচালিত মূল্যায়ন (পরীক্ষা) প্রক্রিয়ায় কেবল এনসিটিবির পাঠ্যপুস্তকের বিষয়বস্তু বিবেচনায় নেওয়া হবে। পাঠ্যপুস্তকগুলো সারাদেশের লাইব্রেরিগুলো থেকে এনসিটিবি কর্তৃক নির্ধারিত মূল্যে বিক্রয় করা হবে।
এতে আরও বলা হয়, যদি কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এনসিটিবি কর্তৃক প্রকাশিত তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি পাঠ্যপুস্তক ব্যতীত অন্য কোনো লেখক ও প্রকাশকের পুস্তক পাঠ্যভুক্ত করে, তাহলে সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এনসিটিবি আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
নকলমুক্ত পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ ও বাজারজাতকরণ এবং শিক্ষার্থীদের হাতে নির্ধারিত সময়ে পাঠ্যপুস্তক পৌঁছে দেওয়ার সরকারি উদ্যোগকে সহযোগিতা করার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে অনুরোধ করা হয় ওই গণবিজ্ঞপ্তিতে।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান আজ সোমবার প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন। বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা বর্তমান পরিস্থিতিতে বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তায় সেনাবাহিনীর ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করেন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় তাদের অবদান অব্যাহত রাখার জন্য কৃতজ্ঞতা জানান।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে সেনাবাহিনীর এই ভূমিকা আরও সুসংগঠিত করা জরুরি। এর মধ্যে স্পষ্ট কমান্ড কাঠামো ও সকল বাহিনীর মধ্যে ঘনিষ্ঠ সমন্বয় নিশ্চিত করার ওপর তিনি গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, ‘আমি জাতির প্রতি অঙ্গীকার করেছি— এমন একটি নির্বাচন উপহার দেওয়ার জন্য যা ভোটার উপস্থিতি, নতুন ও নারী ভোটারের অংশগ্রহণ, নিরাপত্তা ও সুরক্ষার বিষয়ে বৈশ্বিক আস্থা এবং গণতন্ত্র ও আইনের শাসনের উৎসবমুখর পরিবেশের দিক থেকে আলাদা করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে।’
সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান প্রধান উপদেষ্টাকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি পূর্ণ সহযোগিতার আশ্বাস দেন। একই সঙ্গে তিনি গুজবের প্রতি মনোযোগ না দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘পুরো সেনাবাহিনী সরকারের সব উদ্যোগ ও কর্মসূচি সফল করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
সকলের সহযোগিতায় আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠান সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র ও কৃষি উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
জাহাঙ্গীর চৌধুরী আজ সিলেট জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানে জনগণই মুখ্য ভূমিকা রাখবে।
মতবিনিময় সভায় সিলেট বিভাগের সকল জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব), বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি), আনসার-ভিডিপি, কারা অধিদপ্তর, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর, ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর এবং কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সিলেট জেলার বিভিন্ন দপ্তর ও সংস্থার কর্মকর্তাবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন।
তিনি বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু করতে মাঠ প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য শুধু নির্বাচন কমিশনের প্রস্তুতিই যথেষ্ট নয়, মাঠ প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে যথাযথ প্রস্তুতি নিতে হবে। জনগণ যেন নির্ভয়ে নির্বাচন কেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে ভোট প্রদান করতে পারে সেরকম পরিবেশ তৈরি করতে প্রশাসন এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে একযোগে কাজ করতে হবে। সকলের সহযোগিতায় সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভবপর হবে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের মাধ্যমে রাজনৈতিক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে জনগণের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নই বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান লক্ষ্য।
পুলিশসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়োগ ও পদায়ন সম্পর্কে উপদেষ্টা বলেন, এবার বিভিন্ন বাহিনীর নিয়োগ প্রক্রিয়া ও পদায়ন অনেক স্বচ্ছ হয়েছে।
মাদককে দেশের সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থার জন্য অন্যতম হুমকি উল্লেখ করে তিনি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে মাদক ব্যবসায়ীদের প্রতি ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি দেখানোর নির্দেশনা দেন। এছাড়া পরিবেশ রক্ষায় সিলেটের পাথর খেকোদের বিরুদ্ধে সবসময় সজাগ থাকার কথা বলেন।
দেশের সার্বিক অর্থনীতিতে কৃষির গুরুত্ব তুলে ধরে জাহাঙ্গীর চৌধুরী বলেন, কৃষকরাই এদেশের খাদ্য নিরাপত্তার মূল কারিগর। তাই উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি কৃষক যেন তাদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য পায় সেটি নিশ্চিত করতে হবে। উপদেষ্টা এ সময় পতিত কৃষিজমিগুলো আবাদের আওতায় আনার জন্য সংশ্লিষ্টদের আহ্বান জানান।
সভায় উপস্থিত কর্মকর্তারা সিলেটের সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও এর চ্যালেঞ্জগুলো তুলে ধরে বিভিন্ন মতামত বিনিময় করেন।
উপদেষ্টা সকল চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় যৌক্তিক পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস প্রদান করেন।
এরআগে উপদেষ্টা বিজিবি’র সিলেট সেক্টর হেডকোয়ার্টার্স এবং সিলেট পুলিশ লাইন পরিদর্শন করেন।
অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানে জনগণই মুখ্য ভূমিকা রাখবে বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্র ও কৃষি উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মোঃ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.)।
উপদেষ্টা আজ সিলেট জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে এক মতবিনিময় সভায় এ কথা বলেন।
মতবিনিময় সভায় সিলেট বিভাগের সকল জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব), বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজিবি), আনসার-ভিডিপি, কারা অধিদপ্তর, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর, ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর এবং কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সিলেট জেলার বিভিন্ন দপ্তর ও সংস্থার কর্মকর্তাবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন।
উপদেষ্টা বলেন, একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের মাধ্যমে রাজনৈতিক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে জনগণের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নই বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান লক্ষ্য। তিনি বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু করতে মাঠ প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য শুধু নির্বাচন কমিশনের প্রস্তুতি যথেষ্ট নয়, মাঠ প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে যথাযথ প্রস্তুতি নিতে হবে। জনগণ যেন নির্ভয়ে নির্বাচন কেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে ভোট প্রদান করতে পারে সেরকম পরিবেশ তৈরি করতে প্রশাসন এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে একযোগে কাজ করতে হবে। সকলের সহযোগিতায় সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভবপর হবে।
পুলিশসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়োগ ও পদায়ন সম্পর্কে উপদেষ্টা বলেন, এবার বিভিন্ন বাহিনীর নিয়োগ প্রক্রিয়া ও পদায়ন অনেক স্বচ্ছ হয়েছে। তাই সবাইকে নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে। মাদককে দেশের সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থার জন্য অন্যতম হুমকি উল্লেখ করে তিনি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে মাদক ব্যবসায়ীদের প্রতি জিরো টলারেন্স দেখানোর নির্দেশনা দেন। এছাড়া পরিবেশ রক্ষায় সিলেটের পাথরখেকোদের বিরুদ্ধে সবসময় সজাগ থাকার কথা বলেন।
দেশের সার্বিক অর্থনীতিতে কৃষির গুরুত্ব তুলে ধরে লেফটেন্যান্ট জেনারেল মোঃ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.) বলেন, কৃষকরাই এদেশের খাদ্য নিরাপত্তার মূল কারিগর। তাই উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি কৃষকেরা যেন তাদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য পায় সেটি নিশ্চিত করতে হবে। উপদেষ্টা এসময় পতিত কৃষিজমিগুলো আবাদের আওতায় আনার জন্য সংশ্লিষ্টদের আহ্বান জানান।
সভায় উপস্থিত কর্মকর্তাবৃন্দ সিলেটের সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও এর চ্যালেঞ্জগুলো তুলে ধরে বিভিন্ন মতামত প্রদান করেন। উপদেষ্টা সকল চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় যৌক্তিক পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস প্রদান করেন। মতবিনিময় সভা শেষে উপদেষ্টা উপস্থিত সাংবাদিকদের ব্রিফিং করেন।
উপদেষ্টা এর আগে বিজিবি'র সিলেট সেক্টর হেডকোয়ার্টার্স এবং সিলেট পুলিশ লাইন পরিদর্শন করেন।
বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেছেন,বাণিজ্য সম্পর্কিত অপ্রয়োজনীয় প্রবিধানগুলোকে খুঁজে বের করে এবং বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণকারী নিয়ম কানুন পর্যালোচনার মাধ্যমে বাণিজ্য সহজীকরণ নিশ্চিত করা হবে।
সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ঢাকার বিয়াম ফাউন্ডেশন মাল্টিপারপাস হলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আয়োজিত ন্যাশনাল ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন কমিটির (এনটিএফসি) নবম সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা জানান।
তিনি বলেন, বাণিজ্য সহজীকরণের মাধ্যমে আমরা ন্যায় প্রতিষ্ঠা করবো এবং লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করবো যার মাধ্যমে আমাদের বাণিজ্যের পরিমান এবং অর্থনৈতিক সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে।
উপদেষ্টা বলেন,আমরা একটি দক্ষ ট্রেড রেজিম চাই, যার মাধ্যমে আমাদের জাতীয় অর্থনীতির ব্যাপক উন্নতি ঘটবে এবং যা সম্পদের সুষম বন্টনের ক্ষেত্রেও বড় প্লাটফরম হিসেবে কাজ করবে।
আমরা অবশ্যই ট্যাক্স ফাঁকি কমাতে চাই একই সাথে আমরা দক্ষতার বিকাশ চাই। কাস্টমস কর্তৃপক্ষের কার্যক্রম অটোমেশন হচ্ছে এতে আমদানি রপ্তানি সহজতর হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
সভায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান খান , বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মাহবুবুর রহমান ,বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মইনুল খান, জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. নাজনীন কাওসার,এফবিসিসিআইয়ের প্রশাসক মো: হাফিজুর রহমান, ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান মো: আবদুর রহিম খান , বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (এফটিএ) আয়েশা আক্তারসহ কমিটির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের স্মৃতিবিজড়িত জন্মভূমি যশোরের কেশবপুর উপজেলার সাগরদাঁড়ীতে অবস্থিত ঐতিহাসিক মধু পল্লী আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের চরম অবহেলা ও সংস্কার বাজেটের অভাবে দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ধুঁকছে অস্তিত্ব সংকটে। অথচ এই স্থানটি বাংলাদেশের সাহিত্য, ইতিহাস এবং পর্যটনের এক অনন্য নিদর্শন। চরম অব্যবস্থাপনা ও ঝুঁকিপূর্ণ অবকাঠামো মধু পল্লীতে প্রবেশ করলেই চোখে পড়ে চরম অব্যবস্থাপনার চিত্র। মহাকবির স্মৃতিবাহী ‘দত্তপুকুর’ দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না হওয়ায় পাড় ধসে পড়েছে, চারপাশের বাঁধ ভেঙে পড়ে আছে। কবির জন্মভিটার মূল ভবন ও পার্শ্ববর্তী কাকার বাড়ি চরম জীর্ণ। ভবনের দেয়ালে ফাটল, জানালা-দরজার কাঠামো নড়বড়ে, ভবনে বড় ধরনের ধস নামার শংকা প্রকট। সরকারি বাজেটে নেই মধু পল্লীর জন্য বরাদ্দ ২০২৫-২৬ অর্থবছরে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর সংস্কারের জন্য প্রায় আড়াই কোটি টাকার বাজেট পেলেও মধু পল্লীর জন্য কোনো বরাদ্দ রাখা হয়নি- যা দুঃখজনক ও উদ্বেগজনক। এ নিয়ে স্থানীয় পর্যটক, সংস্কৃতিপ্রেমী ও সাধারণ মানুষ তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তারা অবিলম্বে জরুরি বরাদ্দ ও কার্যকর পদক্ষেপ দাবি করেছেন।
স্থানীয় পর্যটক সোহেল মণ্ডল বলেন, মধু পল্লী শুধু কেশবপুর নয়, গোটা দেশের গর্ব। এটি সংরক্ষণ না করলে আমাদের সাহিত্য-ইতিহাসের অপূরণীয় ক্ষতি হবে। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের কাঠামোগত দুর্বলতা প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠার ৫৭ বছর পেরিয়ে গেলেও প্রতিষ্ঠানটি আজও কাঠামোগতভাবে দুর্বল। সারাদেশে মাত্র চারটি আঞ্চলিক কার্যালয় রয়েছে, যার প্রতিটিকে একাধিক বিভাগ তদারকি করতে হয়। ফলে দেশের ২ হাজারের বেশি প্রত্নস্থাপনা পর্যাপ্ত সংরক্ষণ পাচ্ছে না। নিয়োগবিধি না থাকায় নতুন জনবল নিয়োগও সম্ভব হচ্ছে না। অধিদপ্তরের নিজস্ব বাজেটও অত্যন্ত সীমিত, ফলে নিয়মিত খনন, সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণ ব্যাহত হচ্ছে। দেশের ৬৪টি জেলার কোনোটিতেই স্থায়ী প্রত্নতত্ত্ব অফিস নেই, যা স্থানীয় সম্পদের সংরক্ষণে বড় বাধা দাঁড়িয়েছে।
প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের ব্যর্থতা স্পষ্ট। যেখানে পরিবেশ অধিদপ্তর, শিল্পকলা একাডেমি কিংবা দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)-এর মতো সংস্থাগুলো জেলা-উপজেলা পর্যায়ে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে, সেখানে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর এখনও স্থানীয় পর্যায়ে উপস্থিতি নিশ্চিত করতে ব্যর্থ। এটি একদিকে প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা, অন্যদিকে সরকারি অবহেলারই প্রমাণ। কর্তৃপক্ষের বক্তব্য মধু পল্লীর কাস্টোডিয়ান হাসানুজ্জামান বলেন, ‘মধু পল্লীর সংস্কার বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। তবে বাজেট বরাদ্দ হয়েছে কিনা, সে বিষয়ে আমি নিশ্চিত না।’
খুলনা আঞ্চলিক কার্যালয়ের পরিচালক লাভলী ইয়াসমিন বলেন, ‘মধু পল্লীর সংস্কারে এ বছর কোনো বরাদ্দ নেই। তবে আমি চেষ্টা ব্যক্তিগত উদ্যোগে প্রায় ২০ লাখ টাকার সংস্কারকাজ করানোর।’
তবে প্রশ্ন থেকে যায়-প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের নিজস্ব বাজেটে মধু পল্লীর মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থানের নাম না থাকলে, সেটিকে জাতীয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার তাৎপর্যই বা কোথায়?
শুধু স্মারক হিসেবে নয়, জাতির সাহিত্যিক শিকড় রক্ষার জন্য মধু পল্লীর মতো স্থাপনাগুলোকে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে টিকিয়ে রাখতে হবে, তা না হলে ইতিহাস আমাদের ক্ষমা করবে না।
চব্বিশের জুলাই গণঅভ্যুত্থানে মানবতাবিরোধী অপরাধে আনা মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে ৩৫ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ আজ শেষ হচ্ছে।
প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম বলেন, আজ দশম দিনের মতো সাক্ষ্যগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। নবম দিন পর্যন্ত ২৯ জনের সাক্ষ্য জেরা শেষ হয়। আজ ৬ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হচ্ছে।
তিনি জানান, কমবেশি ৪০ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করা হতে পারে এ মামলায়।
প্রসিকিউটর গাজী এম এইচ তামিম জানান, চব্বিশের জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এখন পর্যন্ত ৫ শতাধিক অভিযোগ জমা পড়েছে। যেখানে আইসিটি বিডি কেস হিসেবে ৫ মামলায় বিচার চলছে। বিচারাধীন ৫ মামলায় আসামি সংখ্যা ৬২ জন। তিনি বলেন, আরও ২৬ টি মামলা মিস কেস রয়েছে।
এ প্রসিকিউটর জানান, তিনটি মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণ চলছে। মামলা তিনটি হলো- শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে একটি, চানখাঁরপুলে ৬ জনকে হত্যা মামলা এবং রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদকে গুলি করে হত্যা মামলা।
চব্বিশের জুলাই গণঅভ্যুত্থানে দেশ ছেড়ে যাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন একই মামলার আসামি। তাদের মধ্যে আবদুল্লাহ আল মামুন কারাগারে, অন্য দুজন পলাতক।
এছাড়া আশুলিয়ায় লাশ পোড়ানোর মামলার অভিযোগ আমলে নেয়া হয়েছে।
১৪ সেপ্টেম্বর সূচনা বক্তব্য ও সাক্ষ্য গ্রহণ শুরুর দিন ধার্য রয়েছে।
রামপুরায় কার্নিশে ঝুলে থাকা ছাত্রকে গুলির মামলায় ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে।
এ মামলায় আগামী ১১ সেপ্টেম্বর অভিযোগ গঠনে শুনানির দিন ধার্য রয়েছে।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় রাজধানীর চানখাঁরপুল এলাকায় ছয় জনকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমানসহ আট আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। এখন সাক্ষ্য গ্রহণ চলছে।
চব্বিশের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করা হয়। পুনর্গঠিত ট্রাইব্যুনালে গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে প্রথম মামলাটি (মিস কেস বা বিবিধ মামলা) হয় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে। এছাড়া শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা রয়েছে। যার মধ্যে একটি আওয়ামী লীগ শাসনামলের সাড়ে ১৫ বছরে গুম-খুনের ঘটনায় তাকে আসামি করা হয়েছে। অন্যটি রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ডের মামলা।
এসব অপরাধের বিচার অনুষ্ঠিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে।
পৃথক দুটি ট্রাইব্যুনালে বিচার চলছে
মামলা ও বিচারের অগ্রগতি প্রসঙ্গে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বাসসকে বলেন, বিচারপ্রার্থীর প্রত্যাশা, আইন, আন্তর্জাতিক স্ট্যান্ডার্ড, আসামির অধিকার, যথাযথ তদন্ত ও সাক্ষ্যপ্রমাণ, আইনি প্রসিডিউর অনুসরণসহ সার্বিক বিষয়গুলো সমন্বয় করতে হয় প্রসিকিউশনকে। তিনি বলেন, চব্বিশের জুলাই গণঅভ্যুত্থানে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার নিয়ে যেন পৃথিবীর কোথাও কেউ কোন প্রশ্ন তুলতে না পারে, সে বিষয়ে আমরা বদ্ধপরিকর। প্রথমবারের মতো ইতিহাসে বিচার কার্যক্রম টেলিভিশনে লাইভ করা হচ্ছে।
চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, মানবতাবিরোধী অপরাধে যেটা হয়েছে, সেটা হলো সাধারণ মার্ডার থেকে আকাশ-পাতাল তফাত। একজন মানুষ খুন করে, সেটা অনুসন্ধান করে। আর এখানে দেড় হাজার লোক খুন হয়েছে। পোস্টমর্টেম রিপোর্ট হয়নি। ফ্যামিলি মেম্বারদের খবর দেওয়ার সুযোগ তারা দেয়নি। বলেছে, কেউ যদি নিয়ে যাওয়ার মতো থাকে, নিয়ে যাক। অজ্ঞাত পরিচয়ে লাশ হিসেবে দাফন করে ফেলতে হবে। সেখানে শহীদের সহযোগী ও পরিবারের সদস্যদের রাতে মানুষের অজান্তে কবর দিতে হয়েছে। তাই এসব মামলার তদন্ত অত্যন্ত জটিল। ইতোমধ্যে অকাট্য প্রমাণ হাতে এসেছে। আন্তর্জাতিক প্রধান প্রধান গণমাধ্যমে অপরাধের প্রমাণ উঠে এসেছে।
চিফ প্রসিকিউটর বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন-১৯৭৩ সংশোধন করা হয়েছে।
গত ১০ ফেব্রুয়ারি ও ১০ মে ২০২৫ তারিখে দুটি পৃথক অধ্যাদেশের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭৩ সংশোধন করে যুগোপযোগী ও আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন করা হয়েছে।
তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করা হয়েছে। ১৪ অক্টোবর ২০২৪ তারিখে এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করা হয়েছে। এর আগে গত ৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন টিম ও ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখে তদন্ত সংস্থা পুনর্গঠন করা হয়। এরপর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে প্রাপ্ত অভিযোগ ও অভিযুক্তের সংখ্যা, দ্রুত বিচার-নিষ্পত্তির প্রয়োজন, কাজের চাপ ইত্যাদি বিবেচনায় গত ৮ মে ২০২৫ তারিখে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ গঠন করে প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার এবং একই প্রজ্ঞাপনে ১৪ অক্টোবর ২০২৪ তারিখে গঠিত ট্রাইব্যুনালকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
চিফ প্রসিকিউটর বলেন, বিচারিক কার্যক্রম শুরুর পূর্বে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ভবন সংস্কার ও আধুনিকায়ন সম্পন্ন করা হয়েছে। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় দ্রুততম সময়ের মধ্যে পুরাতন হাইকোর্ট বিল্ডিং তথা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ভবন সংস্কার ও আধুনিকায়ন করা হয়।
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলায় ‘রাজসাক্ষী’ সাবেক আইজিপি
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের এক মামলায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের পর সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়েছে। ওই মামলার অন্যতম আসামি পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে ট্রাইব্যুনালে বক্তব্য দিয়েছেন। সেই সঙ্গে তিনি ‘অ্যাপ্রুভার’ (দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্য বিবরণ প্রকাশ করেন যে আসামি; সাধারণত তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে পরিচিত) হিসেবেও ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন গত ১০ জুলাই। সাবেক আইজিপি’র এমন বক্তব্যের পর আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। একই সঙ্গে সাবেক আইজিপি মামুন নিজেকে ‘অ্যাপ্রুভার’ হিসেবে যে আবেদন করেছেন, তা মঞ্জুর করেন ট্রাইব্যুনাল।
চব্বিশের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গ্রেফতার হয়ে বর্তমানে কারাগারে থাকা আসামিদের মধ্যে রয়েছেন- ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেকমন্ত্রী আনিসুল হক, আমির হোসেন আমু, মো. আব্দুর রাজ্জাক, কামরুল ইসলাম, মুহাম্মদ ফারুক খান, ডা. দীপু মনি, গোলাম দস্তগীর গাজী, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, সাবেক মন্ত্রী ও বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, সাবেক মন্ত্রী ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের সভাপতি হাসানুল হক ইনু, সাবেক প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার ও জুনাইদ আহমেদ পলক, সাবেক সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম ও অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক এবং ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (বরখাস্ত) জিয়াউল আহসান।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ (ডাকসু) নির্বাচন স্থগিত করেছেন হাইকোর্ট। ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত এ নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে।
ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদের (ডাকসু) কেন্দ্রীয় কমিটি ও হল সংসদগুলোর নির্বাচন আগামী ৯ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আগামীকাল মঙ্গলবার আরও সাতটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক করবেন।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং সোমবার জানিয়েছে, রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এতে সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতারা অংশ নেবেন।
এর আগে গতকাল রোববার প্রধান উপদেষ্টা বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।
ধারাবাহিক এ সংলাপকে আসন্ন নির্বাচনের প্রস্তুতিতে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হিসেবে দেখা হচ্ছে।
সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী দেশের মোট ভোটার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১২ কোটি ৬৩ লাখ ৭ হাজার ৫০৪ জনে। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৬ কোটি ৪১ লাখ ৪৫৫ জন, নারী ভোটার ৬ কোটি ২২ লাখ ৫ হাজার ৮১৯ জন এবং তৃতীয় লিঙ্গের (হিজড়া) ভোটার রয়েছেন ১ হাজার ২৩০ জন। নির্বাচন কমিশন (ইসি) গতকাল রোববার ২০২৫ সালের সম্পূরক ভোটার তালিকা প্রকাশ করেছে।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে নিজ কার্যালয়ে ইসি সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ এই তথ্য জানান। তিনি বলেন, হালনাগাদ খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশের পরবর্তী সময়ে উপজেলা ও থানা নির্বাচন অফিসারদের মাধ্যমে নতুন ভোটার অন্তর্ভুক্তি এবং মৃত বা অযোগ্য ভোটার কর্তন কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়েছে।
ইসি সচিব জানান, এই সময়ে মোট ১ লাখ ৩৭ হাজার ৬৪২ নতুন ভোটার তালিকাভুক্ত হয়েছেন। এর মধ্যে পুরুষ ৯৪ হাজার ১৯২ জন, নারী ৪৩ হাজার ৪৪৪ জন এবং হিজড়া ৬ জন।
অন্যদিকে কর্তন করা হয়েছে ১ হাজার ৩৮ জন ভোটারকে। এর মধ্যে পুরুষ ৬৫৩ জন এবং নারী ৩৮৫ জন।
নির্বাচন কমিশন আশা করছে, নতুন অন্তর্ভুক্তি ও কর্তন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ভোটার তালিকা আরও নির্ভুল ও হালনাগাদ হবে।