দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের ১১ জেলার চলমান বন্যা পরিস্থিতি অনেকটা উন্নতির দিকে। কয়েকটি জেলা ও কিছু অঞ্চল ছাড়া বেশির ভাগ জায়গার পানি নেমে যাচ্ছে বলে খবর পাওয়া গেছে। অতি বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের এ বন্যায় এখন পর্যন্ত ৩১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর আগে গতকাল মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) এ সংখ্যা ছিল ২৭ জন।
এদিকে এ বন্যায় সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় থাকা জেলা ফেনীর পরশুরাম ও ফুলগাজীতে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। তবে ছাগলনাইয়া, ফেনী সদর, সোনাগাজী ও দাগনভূঞা উপজেলায় বন্যার পানি নামছে অনেকটা ধীরগতিতে। এখনো জেলার অনেক এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হয়নি, নেই মুঠোফোনের নেটওয়ার্ক। বন্যার্ত মানুষকে সহায়তায় সরকারি-বেসরকারি ত্রাণসহায়তা অব্যাহত রয়েছে বলে জানা গেছে। ফুলগাজী উপজেলার বেশির ভাগ এলাকায় বন্যার পানি নেমে গেছে। তাই আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়ে ঘরে ফিরেছেন বেশির ভাগ মানুষ। তবে উপজেলার মুন্সিরহাট, আনন্দপুর ও জিএম হাট ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রামের সড়ক ও বাড়ি এখনো পানিবন্দি।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কে এম আলী রেজা জানিয়েছেন, দেশের চলমান বন্যা পরিস্থিতি উন্নতির দিকে। ইতোমধ্যে দেশের সব নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় ভারী বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা নেই। বুধবার দুপুরে সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত সচিব এ সব কথা বলেন।
চলমান বন্যায় ৩১ জনের মৃত্যু হয়েছে জানিয়ে কে এম আলী রেজা বলেন, ‘দেশের পূর্বাঞ্চল এবং দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে বন্যায় এখন পর্যন্ত ৩১ জনের মৃত্যু হয়েছে। যার মধ্যে কুমিল্লায় ১২ জন, ফেনী-২, চট্টগ্রামে-৫, খাগড়াছড়ি-১, নোয়াখালী-৬, ব্রাহ্মণবাড়ীয়া-১, লক্ষ্মীপুর-১ ও কক্সবাজারে ৩ জন মারা গেছে। তবে মৌলভীবাজারে দুই ব্যক্তি এখনও নিখোঁজ রয়েছেন।
তিনি জানান, আক্রান্ত ১১ জেলার ৭৩ উপজেলার ক্ষতিগ্রস্ত ইউনিয়ন/পৌরসভা ৫২৮টি। পানিবন্দি ও ক্ষতিগ্রস্ত লোকদের আশ্রয় প্রদানের জন্য মোট ৪ হাজার তিনটি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। অশ্রয়কেন্দ্র গুলোয় মোট ৫ লাখ ৪০ হাজার ৫১০ ব্যক্তি ও ৩৯ হাজার ৫৩১ গবাদি পশুকে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে।
আলী রেজা জানান, ১১ জেলায় মোট ১২ লাখ ২৭ হাজার ৫৫৪টি পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত লোকসংখ্যা ৫৮ লাখ ২২ হাজার ৭৩৪ জন। ক্ষতিগ্রস্তদের চিকিৎসা সেবা প্রদানের জন্য মোট ৬১৯টি মেডিকেল টিম সেবা দিয়ে যাচ্ছে।
অতিরিক্ত সচিব বলেন, ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য নগদ বরাদ্দ এক কোটি বাড়িয়ে ৪ কোটি ৫২ লাখ টাকা করা হয়েছে। বন্যাকবলিত এলাকায় সরকারি- বেসরকারিসহ সব পর্যায় থেকে ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত আছে।
তিনি জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক কর্তৃক সংগৃহীত মোট ৮৮ হাজার ৫০০ প্যাকেট শুকনা খাবার, কাপড় ও পানি, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের (ডিডিএম) মাধ্যমে বন্যা কবলিত এলাকায় পাঠানো হয়েছে। ডিডিএম ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের মধ্যে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে।
এদিকে দৈনিক বাংলার নোয়াখালী প্রতিনিধির তথ্যমতে, জেলায় টানা বৃষ্টি ও উজানের পানিতে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। এখনো জেলার ৮টি উপজেলার ৮৭ ইউনিয়নের ২১ লাখ ২৫ হাজার ৫শত মানুষ পানিবন্দি রয়েছে। ১৩০৩টি আশ্রয়কেন্দ্রে ২ লাখ ৬৪ হাজার ৭৪৩ জন মানুষ আশ্রিত রয়েছে। এখন নতুন করে অনেক মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রমুখী হচ্ছেন। তবে কয়েকটি আশ্রয়কেন্দ্রে কথা বলে জানা গেছে প্রত্যন্ত অঞ্চলের আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে নুতন করে মানুষ উঠার জায়গা নেই। তাই অনেকেই বাধ্য হয়ে নিজ বাড়িতে ঝুঁকি নিয়ে দিন কাটাচ্ছেন।
গতকাল মঙ্গলবার রাতের বৃষ্টিতে জেলা শহর মাইজদীসহ সদর উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। অপরদিকে, জেলার দুর্গম অনেক এলাকায় ঠিকমতো ত্রাণ পৌঁছাচ্ছে না বলে জানান বাসিন্দারা। ত্রাণ পেতে হাহাকার করছে বন্যার্তরা।
স্থানীয়রা জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় জেলার সেনবাগ, কবিরহাট ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। বেগমগঞ্জ, সোনাইমুড়ী ও চাটখিল উপজেলার বন্যা কার্যত অপরিবর্তিত রয়েছে। আর জেলা শহর মাইজদীসহ সদর উপজেলার বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। জেলায় এ পর্যন্ত জেলায় বন্যায় ৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। সরকারি ১২৪টি ও বেসরকারি ১৬টি মেডিকেল টিম মাঠে কাজ করছে। জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, জেলার পানিবন্দি মানুষের মধ্যে সরকারিভাবে নগদ ৪৫ লাখ টাকা, ৮৮২ টন চাল, ১ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার, ৫ লাখ টাকার শিশু খাদ্য ও ৫ লাখ টাকার পশুখাদ্য বিতরণ করা হয়েছে।
নোয়াখালীর জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান বলেন, বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় জেলা প্রশাসন কাজ করছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রত্যন্ত অঞ্চলে শুকনো খাবার বিতরণ করা হচ্ছে।
বিপৎসীমার নিচে গোমতীর পানি
ভারত থেকে নেমে আসা ঢলে গত আটদিন ধরে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল গোমতী নদীর পানি। তবে মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) রাতে বিপৎসীমার নিচে নেমে আসে পানির স্তর। এতে কিছুটা ঝুঁকিমুক্ত হয়েছে গোমতী। তবে নদীর পানি অব্যাহত প্রবেশ করছে বুড়িচং উপজেলায়। এতে প্রতিনিয়ত বাড়ছে বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়ায় বন্যার পানি। বুধবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত গোমতীর বিপৎসীমার ২৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে পানি। এতে কিছুটা হলে গোমতী সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দাদের মাঝে স্বস্তি ফিরেছে। কুমিল্লা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী খান মো. ওয়ালিউজ্জামান এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, ২২ আগস্ট রাতে বুড়িচং এলাকায় গোমতীর বাঁধ ভাঙার ফলে শুক্রবার সকাল থেকে নদীতে পানি কমতে শুরু করে। বর্তমানে বিপৎসীমার ২৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এর আগে ১৩৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে গোমতী পানি। উজানে বৃষ্টি না হলে অনেকটাই ঝুঁকিমুক্ত বলতে পারেন।
ফেনীতে ধ্বংসস্তূপের ওপর দাঁড়িয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা
দৈনিক বাংলার ফেনী প্রতিনিধি জানায়, জেলার সবকটি উপজেলায় প্রায় ১১ লাখ ৫০ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছিল। তবে বন্যার পানি কমে যাওয়ার পর জনজীবনে সমস্যা আরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। এখানকার মানুষ ধ্বংসস্তূপের ওপর দাঁড়িয়ে আবার ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জেলার ফুলগাজী, পরশুরাম, ছাগলনাইয়া উপজেলায় ফুটে উঠছে ক্ষয়ক্ষতির চিত্র। মনুষ আক্রান্ত হচ্ছেন পানিবাহিত বিভিন্ন রোগে। এই মুহূর্তে ফেনীতে খাদ্য, পানি ও ওষুধ সংকট দেখা দিয়েছে। ভেজা ও নষ্ট হওয়া আসবাবপত্রাদি, দুর্গন্ধময় পরিবেশ তছনছ সাজানো গুছানো সংসার-এমন মানবিক বিপর্যয়ে এখন বেঁচে থাকাই দায়। এসব বিষয় জরুরিভাবে ব্যবস্থা না হলে এখানে মানবিক বিপর্যয় আরও গুরুতর হবে।
ফেনী জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, বন্যায় দুই জনের মৃত্যু হলেও নিখোঁজ-মৃত্যু সংখ্যা আরও বেশি হবে। তবে এখন পর্যন্ত এসবের সঠিক তথ্য পাওয়া যায়নি।
স্থানীয় সূত্র জানায়, এবারের বন্যায় জেলার ছয়টি উপজেলায় রোপা আমান, সবজি ক্ষেত, বিজতলা সম্পূর্ণভাবে বিনষ্ট হয়েছে। মানুষের বাড়ি-ঘরে চালা পর্যন্ত পানি উঠায় তাদের ঘরে থাকা আসবাবপত্র, কাথা- বালিশ, গৃহস্থালিসহ সকল প্রকার মালামাল সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়েছে।উপজেলাব্যাপী মাছের ঘের এবং পুকুরের মাছ সম্পূর্ণ ভেসে গেছে। কোনো কোনো স্থানে কৃষকের গবাদি পশু কিছু কিছু রক্ষা করা গেলেও এখন গো-খাদ্যের সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। উপজেলায় মুরগির খামার একটিও নেই। গরুর খামার ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
উপজেলায় গ্রামীণ সড়ক, শাখা পাকা রাস্তা সম্পূর্ণ ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে। মানুষের যোগাযোগের ব্যবস্থা নেই। যোগাযোগ ব্যবস্থায় সমস্যার কারণে ত্রাণসামগ্রী নিয়ে বিভিন্ন জেলা থেকে আসা বিভিন্ন মানবিক সংগঠন প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত অসহায় মানুষের কাছে ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে যেতে পারছে না।
সাত দিন বন্ধ থাকার পর জেলা হেডকোয়ার্টার এর সঙ্গে ফেনী-পরশুরাম ও ফেনী-ছাগলনাইয়া এবং ফেনী-সোনাগাজী আঞ্চলিক সড়কে পরশুরাম, ফুলগাজী ও ছাগলনাইয়া ও সোনাগাজী উপজেলার যোগাযোগ কিছুটা স্বাভাবিক হয়েছে। রাস্তার ওপরের অংশ পানির তোড়ে ভেসে গেছে। সৃষ্টি হয়েছে খানাখন্দ। জেলার কিছু কিছু এলাকায় মোবাইল নেটওয়ার্ক সচল হয়েছে, বিদ্যুৎ সংযোগ এখনো দুই-তৃতীয়াংশ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। তবে ধীরে ধীরে এসব কিছুতে স্বাভাবিক গতি ফিরে পাচ্ছে। সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমান বাহিনী, র্যাব, বিজিবি, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র সংগঠন, বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, ছাত্র-জনতার চেষ্টায় উদ্ধার করা হয়েছে দেড় লাখ মানুষকে। এ ছাড়া বন্যা পরিস্থিতিতে নিজ উদ্যোগে মানুষ নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ভেসে গেছে সাড়ে ১৮ কোটি টাকার মাছ
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় চলমান বন্যায় ৪ উপজেলার ৮৬০টি পুকুরের অন্তত ৭৫৬ টন মাছ পানিতে ভেসে গেছে বলে জানা গেছে। এতে সাড়ে ১৮ থেকে ১৯ কোটি টাকার বেশি লোকসান হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন আখাউড়া উপজেলার খামারিসহ মাছ ব্যবসায়ীরা। তবে ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
আখাউড়া উপজেলা মৎস্য কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় পুকুর, দিঘি ও খামারের সংখ্যা ২ হাজার ৩৪৮। এগুলোর মোট আয়তন ৬২১ হেক্টর। এসব জলাশয়ে প্রায় ৫০০ ব্যবসায়ী মাছ চাষ করেন। আর চাষির সংখ্যা ২ হাজার ১০৭। বন্যায় ১২১ দশমিক ৮৬ হেক্টর আয়তনের ৪৩০টি দিঘি, খামার ও পুকুরের সব মাছ পানিতে ভেসে গেছে। ৯ কোটি ১৩ লাখ টাকা মূল্যের মোট ৪৫৬ টন মাছ পানিতে ভেসে গেছে। আর ১ কোটি ১৫ লাখ পোনা পানিতে ভেসে গেছে, যার বাজারমূল্য ৩ কোটি টাকা। এ ছাড়া বিভিন্ন ব্যবসায়ীর ১০ লাখ টাকার অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
আখাউড়ার মোগড়া ইউনিয়নের নিলাখাদ গ্রামের খামারি নাইম আহমেদ বলেন, ‘বন্যায় যে ক্ষতি হয়েছে, তা সামলে ওঠা অনেক কঠিন হয়ে পড়বে। বন্যার পানিতে পাঁচ কোটি টাকার মাছ পানিতে ভেসে গেছে। এই ক্ষতি কীভাবে পূরণ করব, বুঝতে পারছি না।’
বন্যার পানিতে প্রায় দেড় কোটি টাকার মাছ ভেসে যাওয়ার দাবি করেছেন কর্নেল বাজারের বাসিন্দা বাছির মিয়া। তিনি বলেন, পুকুরে মাছ মাত্র বড় হয়েছিল। কয়েক দিনের মধ্যেই বাজারে বিক্রি করতেন। কিন্তু বন্যার পানিতে সব মাছ ভেসে দেড় কোটি টাকার লোকসান হয়েছে।
উপজেলার মৎস্য সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম বলেন, বড় ব্যবসায়ীরা অনেক বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ইউনিয়ন পর্যায়ে খামারিদের ক্ষতির তালিকা করা হচ্ছে। তবে ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে।
এদিকে কসবা উপজেলা মৎস্য কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় বন্যার পানিতে ২০০ পুকুর, দিঘি ও খামারের মাছ ভেসে গেছে। এগুলোর আয়তন ৩৮ হেক্টর। ১ কোটি ৪০ লাখ টাকার বড় মাছ ও ১০ লাখ টাকার পোনা পানিতে ভেসে গেছে। বন্যার পানিতে মাছ ভেসে যাওয়ার পাশাপাশি অবকাঠামো ভেঙে মোট ১ কোটি ৫৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
২০ আগস্ট রাতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া ইমিগ্রেশন–সংলগ্ন খাল দিয়ে ভারতে থেকে পাহাড়ি ঢলের পানি আসতে শুরু করে। এরপর আখাউড়া উপজেলাসহ পর্যায়ক্রমে কসবা উপজেলায় বন্যা দেখা দেয়।
নয়াদিল্লি থেকে পাঠানো প্রেস নোটকে ‘সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাখ্যান’ করেছে বাংলাদেশ। আজ রোববার (২১ ডিসেম্বর) বিকেলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত এক ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন এই কঠোর অবস্থানের কথা জানান। তিনি বলেন, ভারতের দাবি অনুযায়ী নয়াদিল্লিতে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের নিরাপত্তা বেষ্টনী ভাঙার কোনো চেষ্টা করা হয়নি। প্রকৃতপক্ষে, ময়মনসিংহে দিপু চন্দ্র দাসের হত্যার প্রতিবাদে ২০-২৫ জন যুবক সেখানে গিয়ে স্লোগান দিয়েছে মাত্র। এই ঘটনাকে ভারত যেভাবে উপস্থাপন করেছে, তা বাংলাদেশ পুরোপুরি গ্রহণ করছে না।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা প্রশ্ন তোলেন যে, কড়া নিরাপত্তা বেষ্টিত একটি কূটনৈতিক এলাকায় একটি ক্ষুদ্র দল এত গভীরে প্রবেশ করতে পারল কীভাবে? তিনি এটিকে কূটনৈতিক শিষ্টাচারের স্পষ্ট লঙ্ঘন হিসেবে অভিহিত করেন। এছাড়া একজন বাংলাদেশি নাগরিক হত্যার ঘটনাকে কেন ভারতের পক্ষ থেকে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার বিষয় হিসেবে উপস্থাপন করা হচ্ছে, সেটিকে অপ্রাসঙ্গিক বলে মন্তব্য করেন তিনি। তৌহিদ হোসেন জানান, ময়মনসিংহের সেই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার পর বাংলাদেশ সরকার তাৎক্ষণিকভাবে প্রয়োজনীয় আইনি পদক্ষেপ নিয়েছে।
দূতাবাসের ভেতরে থাকা কর্মকর্তাদের নিরাপত্তার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ঘটনার সময় কর্মকর্তারা প্রচণ্ড নিরাপত্তা শঙ্কা অনুভব করেছেন এবং সেখানে পর্যাপ্ত সুরক্ষা ব্যবস্থা ছিল না। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, যদি পরিস্থিতির উন্নতি না হয় এবং কর্মকর্তাদের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব না হয়, তবে বাংলাদেশ সরকার নয়াদিল্লিতে দূতাবাসের কার্যক্রম বা জনবল সীমিত করার কথা বিবেচনা করতে পারে।
উল্লেখ্য, এর আগে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছিল যে, বিক্ষোভ শুরুর কয়েক মিনিটের মধ্যেই পুলিশ বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দিয়েছে এবং ভিয়েনা কনভেনশন অনুযায়ী বিদেশি দূতাবাসের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা তাদের অগ্রাধিকারের তালিকায় রয়েছে। তবে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ভারতের এই দাবি ও ব্যাখ্যাকে অগ্রহণযোগ্য বলে নাকচ করে দেওয়া হয়েছে।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সাবেক সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ ১৭ জন উচ্চপদস্থ ব্যক্তির দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন আদালত। আজ রোববার (২১ ডিসেম্বর) ঢাকার জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালতের অবকাশকালীন বিচারক মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এই আদেশ দেন। দুদকের সহকারী পরিচালক তানজিল হাসান এই আবেদনটি আদালতে জমা দেন।
দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞার এই তালিকায় আরও রয়েছেন সাবেক মন্ত্রী আমির হোসেন আমু, আনিসুল হক, তোফায়েল আহমেদ, খন্দকার মোশাররফ হোসেন, সাবেক প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান এবং সরকারের সাবেক সচিব এম এ এন ছিদ্দিকসহ বেশ কয়েকজন অতিরিক্ত সচিব ও প্রকৌশলী। এছাড়াও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সিএনএস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুনীর উজ জামান চৌধুরী ও দুইজন পরিচালকের বিদেশ গমনেও এই নিষেধাজ্ঞা প্রযোজ্য হবে।
দুদকের মামলার এজাহার ও আবেদন সূত্রে জানা যায়, ২০১৬ সালে কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সিস্টেম লিমিটেডকে (সিএনএস) কোনো প্রকার বৈধ টেন্ডার প্রক্রিয়া ছাড়াই একক উৎসভিত্তিক চুক্তির মাধ্যমে টোল আদায়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। প্রতিষ্ঠানটিকে মোট আদায়কৃত টোলের ১৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ সার্ভিস চার্জ দেওয়ার চুক্তি করা হয়, যার ফলে তারা ৪৮৯ কোটি টাকারও বেশি বিল গ্রহণ করে। অথচ এর আগে ২০১০ থেকে ২০১৫ মেয়াদে একই কাজে ব্যয় হয়েছিল মাত্র ১৫ কোটি টাকার কিছু বেশি। এ ঘটনায় ভয়াবহ দুর্নীতির অভিযোগে গত ১২ অক্টোবর দুদক শেখ হাসিনাসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে।
আদালতে দেওয়া আবেদনে বলা হয়, বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে যে মামলার আসামিরা দেশত্যাগ করার পরিকল্পনা করছেন। তারা বিদেশে পালিয়ে গেলে মামলার তদন্ত কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ আলামত বিনষ্ট হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। তাই মামলার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের স্বার্থে অভিযুক্তদের বিদেশ যাত্রা রহিত করা জরুরি বলে মনে করেন আদালত। এই আদেশের ফলে আইনি প্রক্রিয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত অভিযুক্তদের কেউই দেশের বাইরে যেতে পারবেন না।
মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম রূপকার, মুক্তিবাহিনীর ডেপুটি চিফ অব স্টাফ এবং স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আবদুল করিম খন্দকারের (এ কে খন্দকার) জানাজা ও শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন অনুষ্ঠান আজ রবিবার (২১ ডিসেম্বর) রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সম্পন্ন হয়েছে। রাজধানীর বিমান বাহিনী ঘাঁটি বাশারে আয়োজিত এই জানাজায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস অংশ নেন। জানাজার পূর্বে এই বীর মুক্তিযোদ্ধার সম্মানে একটি সুসজ্জিত ফিউনারেল প্যারেড অনুষ্ঠিত হয় এবং জানাজা শেষে বিমান বাহিনীর একটি ফ্লাই পাস্টের মাধ্যমে তাঁর প্রতি বিশেষ সামরিক সম্মান প্রদর্শন করা হয়।
শ্রদ্ধা নিবেদন পর্বে প্রথমে রাষ্ট্রপতির পক্ষে তাঁর সামরিক সচিব এবং এরপর প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস মরহুমের কফিনে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। একে একে শ্রদ্ধা জানান মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম, সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ নাজমুল হাসান এবং বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন। এ সময় সরকারের অন্যান্য উপদেষ্টা এবং উচ্চপদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তারা এই বীর সেনানীর শেষ বিদায়ে উপস্থিত ছিলেন। জানাজার আগে এ কে খন্দকারের ছেলে জাফরুল করিম খন্দকার তাঁর বাবার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন।
উল্লেখ্য, বীর-উত্তম খেতাবপ্রাপ্ত কিংবদন্তি মুক্তিযোদ্ধা এ কে খন্দকার বার্ধক্যজনিত কারণে গতকাল শনিবার সকালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে তাঁর বলিষ্ঠ নেতৃত্ব, রণকৌশল এবং সাহসিকতা বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে এক অবিস্মরণীয় ভূমিকা পালন করেছিল। ডেপুটি চিফ অব স্টাফ হিসেবে তিনি মুক্তিবাহিনীর সাংগঠনিক ভিত্তি সুসংহত করতে এবং যুদ্ধজয়ে অনন্য অবদান রাখেন। তাঁর মৃত্যুতে দেশ এক বীর সেনানী এবং জাতির ইতিহাসের এক জীবন্ত কিংবদন্তিকে হারাল।
সুত্রঃ বাসস
লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম-আঙ্গরপোতা সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে অনুপ্রবেশের দায়ে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) এক সদস্যকে আটক করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। আজ রোববার (২১ ডিসেম্বর) ভোর আনুমানিক সাড়ে ৫টার দিকে আঙ্গরপোতা বিওপির আওতাধীন ডাঙ্গাপাড়া এলাকা থেকে তাকে আটক করা হয়। আটক বিএসএফ সদস্যের নাম বেদ প্রকাশ (বডি নম্বর ২১৩৬০০১৭৮)। তিনি পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার-১৭৪ বিএসএফ ব্যাটালিয়নের অর্জুন ক্যাম্পে কনস্টেবল হিসেবে কর্মরত।
বিজিবি ও স্থানীয় সূত্র জানায়, ভোররাতে সীমান্ত পিলার ডিএএমপি ১/৭ এস-এর নিকটবর্তী এলাকা দিয়ে ভারতীয় গরু পাচারকারীদের ধাওয়া করছিল বিএসএফের একটি টহল দল। ধাওয়া করার একপর্যায়ে কনস্টেবল বেদ প্রকাশ জিরো লাইন অতিক্রম করে বাংলাদেশের প্রায় ২০০ গজ ভেতরে ঢুকে পড়েন। সে সময় ওই এলাকায় দায়িত্বরত বিজিবির টহল দল তাকে দেখতে পেয়ে তাৎক্ষণিক আটক করে ক্যাম্পে নিয়ে আসে। তল্লাশি চালিয়ে তার কাছ থেকে একটি শর্টগান, দুই রাউন্ড গুলি, একটি ওয়্যারলেস সেট এবং একটি মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়।
রংপুর-৫১ বিজিবি ব্যাটালিয়নের পরিচালক লে. কর্নেল সেলিম আল দীন এবং দহগ্রাম ফাঁড়ির ইনচার্জ তাজিরুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে ঘন কুয়াশার কারণে পথ ভুল করে ওই বিএসএফ সদস্য অনিচ্ছাকৃতভাবে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ঢুকে পড়েছিলেন। বিষয়টি জানার পরপরই দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর ব্যাটালিয়ন কমান্ডার পর্যায়ে যোগাযোগ শুরু হয়েছে। আন্তর্জাতিক নিয়ম ও বিদ্যমান প্রটোকল অনুসরণ করে তিনবিঘা করিডোর এলাকায় একটি পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে তাকে বিএসএফের কাছে হস্তান্তর করার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সীমান্তে সাময়িক উত্তেজনা দেখা দিলেও বর্তমানে পরিস্থিতি বিজিবির নিয়ন্ত্রণে এবং স্বাভাবিক রয়েছে।
লন্ডনে দীর্ঘ প্রবাস জীবন কাটিয়ে আগামী ২৫ ডিসেম্বর দেশে ফিরছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তবে তাঁর ঢাকা ফেরার নির্ধারিত ফ্লাইটের দায়িত্ব থেকে দুইজন কেবিন ক্রুকে সরিয়ে নিয়েছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। মূলত গোয়েন্দা সংস্থার নেতিবাচক প্রতিবেদন এবং ভিআইপি যাত্রীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে বিমান সূত্রে জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া ওই দুই কেবিন ক্রুর সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতাদের বেশ কিছু ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বিষয়টি কর্তৃপক্ষের নজরে আসে। তাঁদের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা এবং সম্ভাব্য নিরাপত্তা ঝুঁকির কথা বিবেচনা করে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স তাঁদের পরিবর্তে নতুন দুজনকে ওই ফ্লাইটে দায়িত্ব দিয়েছে। এর আগেও গত মে মাসে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার একটি ফ্লাইটের ক্ষেত্রেও একই ধরনের গোয়েন্দা প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ক্রু পরিবর্তনের ঘটনা ঘটেছিল।
আগামী ২৪ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দর থেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিজি-২০২ ফ্লাইটটি ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করার কথা রয়েছে। এই বিশেষ ফ্লাইটে তারেক রহমানের সঙ্গে তাঁর পরিবারের সদস্য এবং বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের বেশ কয়েকজন নেতাও সফরসঙ্গী হিসেবে থাকবেন। তাঁর আগমনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক প্রস্তুতির মাঝেই নিরাপত্তাজনিত এই সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করল বিমান কর্তৃপক্ষ।
আগামী ১২ ফেব্রুয়ারির ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং গণভোটকে কেন্দ্র করে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পর্যালোচনা করতে তিন বাহিনী প্রধানের সঙ্গে বৈঠকে বসেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আজ রোববার (২১ ডিসেম্বর) দুপুর ১২টায় রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিনের সভাপতিত্বে এই গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকটি শুরু হয়। ভোটের তফসিল ঘোষণার পর তিন বাহিনী প্রধানের সঙ্গে এটিই নির্বাচন কমিশনের প্রথম আনুষ্ঠানিক সাক্ষাৎ।
বৈঠকে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ নাজমুল হাসান এবং বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খান উপস্থিত রয়েছেন। নির্বাচন কমিশনের পক্ষে সিইসির পাশাপাশি চারজন নির্বাচন কমিশনার এবং ইসির সিনিয়র সচিবও এই আলোচনায় অংশ নিচ্ছেন। তিন বাহিনী প্রধান নির্বাচন ভবনে পৌঁছালে ইসি সচিব তাঁদের আলাদাভাবে অভ্যর্থনা জানান। মূলত নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করা এবং সশস্ত্র বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে এই বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা হচ্ছে।
এদিকে, দুপুর ১২টার এই বৈঠকের পর আজ দুপুর আড়াইটায় নির্বাচন ভবনের সম্মেলন কক্ষে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত আরেকটি বড় সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। সিইসির সভাপতিত্বে ওই সভায় প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এবং এনএসআই, ডিজিএফআই, বিজিবি, র্যাব, কোস্টগার্ড ও আনসারসহ সকল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন। সেখানে নির্বাচনের আগে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার, সন্ত্রাসী কার্যক্রম রোধ এবং প্রার্থী ও রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য নির্ধারিত আচরণ বিধিমালা ২০২৫-এর যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করার বিষয়ে কৌশল নির্ধারণ করা হবে।
ইসি সূত্রে জানা গেছে, আজকের এই ধারাবাহিক সভাগুলোর মূল উদ্দেশ্য হলো নির্বাচনের একটি শান্তিপূর্ণ ও নিরপেক্ষ পরিবেশ বজায় রাখা। আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত এই বিশেষ সভা শেষে আজ বিকেলেই গণমাধ্যমকে ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে সভার সিদ্ধান্ত ও গৃহীত পদক্ষেপগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জানানো হবে। দীর্ঘ প্রতীক্ষিত এই জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সশস্ত্র বাহিনী ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সমন্বিত এই তৎপরতা রাজনৈতিক অঙ্গনেও বিশেষ গুরুত্ব বহন করছে।
চট্টগ্রামের ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনে উদ্ভূত নিরাপত্তা পরিস্থিতির কারণে বন্দরনগরীতে অবস্থিত ভারতীয় ভিসা আবেদন কেন্দ্রের (আইভ্যাক) কার্যক্রম আজ রোববার (২১ ডিসেম্বর) থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করা হয়েছে। বাংলাদেশে অবস্থিত আইভ্যাক তাদের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এই তথ্য নিশ্চিত করেছে। বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, পরবর্তী ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত চট্টগ্রামের এই কেন্দ্রে ভিসার আবেদন গ্রহণসহ অন্যান্য সব কার্যক্রম বন্ধ থাকবে।
আইভ্যাক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, চট্টগ্রামের বর্তমান পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে এবং নিরাপত্তা পরিস্থিতি সন্তোষজনক মনে হলে পুনরায় কার্যক্রম চালুর বিষয়ে জানিয়ে দেওয়া হবে। এর আগে গত বুধবার একই ধরনের নিরাপত্তা উদ্বেগের কারণে রাজধানীর যমুনা ফিউচার পার্কে অবস্থিত ভারতীয় ভিসা কেন্দ্রের কার্যক্রম দুপুর থেকে সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছিল। যদিও পরদিন বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ঢাকার সেই কেন্দ্রটি পুনরায় সচল হয়। মূলত সাম্প্রতিক নানা কর্মসূচি ও নিরাপত্তা ঝুঁকি বিবেচনায় নিয়েই চট্টগ্রামে এই নতুন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ। এই স্থগিতাদেশের ফলে চট্টগ্রাম ও পার্শ্ববর্তী এলাকার ভিসা প্রত্যাশীদের পরবর্তী ঘোষণা না আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
রাজধানীর ধানমন্ডিতে অবস্থিত বাংলা সংস্কৃতি চর্চার ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ছায়ানটে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ৩০০ থেকে ৩৫০ জন অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। ছায়ানটের প্রধান ব্যবস্থাপক দুলাল ঘোষ বাদী হয়ে শনিবার (২০ ডিসেম্বর) রাতে ধানমন্ডি মডেল থানায় এই মামলাটি করেন। ধানমন্ডি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল ইসলাম আজ রোববার মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মামলার এজাহার ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদির মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার পর গত বৃহস্পতিবার রাতে একদল দুর্বৃত্ত ছায়ানট ভবনে ঢুকে তাণ্ডব চালায়। তারা ভবনের সিসি ক্যামেরা ও আসবাবপত্র ভাঙচুরের পাশাপাশি সংগীতচর্চায় ব্যবহৃত মূল্যবান বাদ্যযন্ত্র যেমন—তবলা, হারমোনিয়াম ও বেহালা ভেঙে ফেলে এবং বিভিন্ন কক্ষে আগুন ধরিয়ে দেয়। এই ন্যাক্কারজনক হামলায় প্রতিষ্ঠানের অপূরণীয় ক্ষতি হলেও ক্ষয়ক্ষতির সঠিক আর্থিক পরিমাণ এখনও নিরূপণ করা সম্ভব হয়নি।
ঘটনার পর অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সারোয়ার ফারুকী ক্ষতিগ্রস্ত ছায়ানট ভবন পরিদর্শন করেছেন। পরিদর্শনকালে তিনি এই ন্যাক্কারজনক ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান এবং সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে হামলাকারীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার প্রতিশ্রুতি দেন। উল্লেখ্য, শরীফ ওসমান হাদির মৃত্যুর পর একই রাতে ঢাকার তেজগাঁও ও কারওয়ান বাজার এলাকায় ইংরেজি দৈনিক ‘দ্য ডেইলি স্টার’ ও ‘প্রথম আলো’ কার্যালয়েও হামলার ঘটনা ঘটেছিল। ছায়ানট কর্তৃপক্ষ এবং সাংস্কৃতিক কর্মীরা এই হামলার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ও জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম সংগঠক শরীফ ওসমান বিন হাদিকে গুলি করে হত্যার ঘটনার তদন্তে পাওয়া তথ্য ও গ্রেফতারদের বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে আজ রোববার (২১ ডিসেম্বর) একটি সমন্বিত সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। রাজধানী এই সংবাদ সম্মেলনে র্যাব, বিজিবি ও পুলিশের সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে। তদন্তকারী সংস্থাগুলো এখন পর্যন্ত এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচনে কতটুকু এগিয়েছে এবং মূল অভিযুক্তকে আইনের আওতায় আনতে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তা এই সম্মেলনে তুলে ধরা হবে।
এদিকে, ওসমান হাদিকে লক্ষ্য করে গুলির ঘটনায় গত ১৪ ডিসেম্বর পল্টন থানায় দায়ের করা হত্যাচেষ্টা মামলাটিকে গতকাল শনিবার (২০ ডিসেম্বর) আদালত পূর্ণাঙ্গ হত্যা মামলা হিসেবে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। গত ১২ ডিসেম্বর দুপুরে রাজধানীর পুরানা পল্টনে রিকশায় থাকাকালীন সন্ত্রাসীরা তাকে মাথায় গুলি করে। এর ছয় দিন পর গত বৃহস্পতিবার সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন। নিহতের ভাই আবু বকর সিদ্দিকের ইমামতিতে গতকাল জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় তার জানাজা শেষে তাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সমাধির পাশে দাফন করা হয়েছে।
হত্যাকাণ্ডের এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত মোট ১১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে, যার মধ্যে র্যাব ৮ জনকে এবং পুলিশ ৩ জনকে গ্রেফতার করেছে। র্যাবের হাতে গ্রেফতারদের মধ্যে প্রধান সন্দেহভাজন নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতা ফয়সাল করিম মাসুদের বাবা, মা, স্ত্রী, শ্যালক ও সহযোগীরা রয়েছেন। অন্যদিকে, পুলিশ গ্রেফতার করেছে সীমান্ত দিয়ে ফয়সালকে অবৈধভাবে পালিয়ে যেতে সহায়তা করা মানবপাচারকারী ও অন্য এক সহযোগীকে। র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক উইং কমান্ডার এম জেড এম ইন্তেখাব চৌধুরী জানিয়েছেন, দেশের সব প্রধান আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা সম্মিলিতভাবে তদন্তের সার্বিক চিত্র এই সংবাদ সম্মেলনে উপস্থাপন করবে।
উল্লেখ্য, শরীফ ওসমান বিন হাদি ঢাকা-৮ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রচারণার পাশাপাশি ‘ইনকিলাব মঞ্চ’ এবং ‘ইনকিলাব কালচারাল সেন্টার’ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে নতুন এক রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। তার এই মর্মান্তিক মৃত্যু দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক অঙ্গনে গভীর শোক ও ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। আজকের সংবাদ সম্মেলন থেকে এই স্পর্শকাতর মামলার পরবর্তী আইনি পদক্ষেপ ও পলাতক আসামিদের অবস্থান সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়ার আশা করা হচ্ছে।
সুদানে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে দায়িত্ব পালনকালে সন্ত্রাসী হামলায় শহীদ হওয়া বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ছয় সদস্যের নামাজে জানাজা সম্পন্ন হয়েছে। আজ রোববার (২১ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ঢাকা সেনানিবাসের কেন্দ্রীয় সেনা মসজিদ প্রাঙ্গণে এই জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা শেষে রাষ্ট্রপতি, প্রধান উপদেষ্টা এবং তিন বাহিনীর প্রধানদের পক্ষ থেকে নিহতদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়।
মর্যাদাপূর্ণ এই জানাজায় অংশ নেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল এম নাজমুল হাসান এবং বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন। সশস্ত্র বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের পাশাপাশি নিহতদের পরিবারের সদস্যরাও অশ্রুসিক্ত নয়নে সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে, গতকাল শনিবার বেলা ১১টার দিকে বিশেষ বিমানে করে শহীদ শান্তিরক্ষীদের মরদেহ দেশে আনা হয়। গত ১৩ ডিসেম্বর সুদানের আবেই এলাকায় কাদুগলি লজিস্টিকস বেইসে বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র গোষ্ঠীর একটি ড্রোন হামলায় তারা শাহাদতবরণ করেন। মর্মান্তিক এই ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন নাটোরের করপোরাল মো. মাসুদ রানা, কুড়িগ্রামের সৈনিক মো. মমিনুল ইসলাম ও সৈনিক শান্ত মন্ডল, রাজবাড়ীর সৈনিক শামীম রেজা, কিশোরগঞ্জের মেস ওয়েটার মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম এবং গাইবান্ধার লন্ড্রি কর্মচারী মো. সবুজ মিয়া।
একই হামলায় আরও নয়জন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী আহত হয়েছিলেন, যাদের মধ্যে লেফটেন্যান্ট কর্নেল খোন্দকার খালেকুজ্জামান ও নারী সদস্যসহ আরও বেশ কয়েকজন রয়েছেন। বর্তমানে তারা সবাই শঙ্কামুক্ত এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নিচ্ছেন। দেশের মান রক্ষায় ও বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশি এই সেনাদের এমন আত্মত্যাগ দেশ ও জাতির জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি ও গভীর গর্বের বিষয় হিসেবে গণ্য হচ্ছে।
ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদি হত্যাকাণ্ড এবং এর পরের সহিংসতার ঘটনায় দ্রুত, পূর্ণাঙ্গ, স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্ত নিশ্চিত করার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে শনিবার (২০ ডিসেম্বর) দেওয়া এক পোস্টে এ আহ্বান জানায় লন্ডনভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থাটির দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক আঞ্চলিক অফিস।
পোস্টে উল্লেখ করা হয়, সহিংসতার অংশ হিসেবে প্রথম আলো, দ্য ডেইলি স্টার ও ছায়ানটের কার্যালয়ে আগুন দেওয়া হয় এবং নিউ এজ সম্পাদক নূরুল কবীরকে হেনস্তা করা হয়।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এসব সহিংসতার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেছে, এসব ঘটনায় মানুষ আহত হয়েছেন, সম্পত্তি ধ্বংস হয়েছে, এমনকি প্রাণহানিও ঘটেছে। অন্তর্বর্তী সরকারকে অবিলম্বে পদক্ষেপ নিয়ে সহিংসতা ও হত্যাকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তিদের ন্যায়বিচারের আওতায় আনতে হবে।
এ ছাড়া ধর্ম অবমাননার অভিযোগের পর হিন্দু পোশাক শ্রমিক দীপু চন্দ্র দাসকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায়ও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে অ্যামনেস্টি।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এসব সহিংসতার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেছে, এসব ঘটনায় মানুষ আহত হয়েছেন, সম্পত্তি ধ্বংস হয়েছে, এমনকি প্রাণহানিও ঘটেছে। অন্তর্বর্তী সরকারকে অবিলম্বে পদক্ষেপ নিয়ে সহিংসতা ও হত্যাকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তিদের ন্যায়বিচারের আওতায় আনতে হবে।
সহকর্মীসহ লাখো ছাত্র-জনতার ভালোবাসায় চির বিদায় নিলেন ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শহীদ শরিফ ওসমান হাদি।
শনিবার (২০ ডিসেম্বর) ৪টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদসংলগ্ন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবরের পাশেই তাকে সমাহিত করা হয়।
এর আগে এদিন বেলা ২টায় জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় বড় ভাই আবু বকর সিদ্দিকের ইমামতিতে হাদির জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতা ও লাখো মানুষ অংশগ্রহণ করেন।
জানাজা শেষে কফিনবাহী অ্যাম্বুলেন্সের সঙ্গে মিছিল নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ পর্যন্ত আসেন তার অনুসারীরা।
এ সময় তার সহকর্মীরা অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়েন। শপথ নেন হাদির স্বপ্ন পূরণ না হওয়া পর্যন্ত লড়াই অব্যাহত রাখবেন। তারা বলেন, লাখো মানুষের ভালোবাসা প্রমাণ করে জীবিত হাদির চেয়ে শহীদ হাদি অনেক বেশি শক্তিশালী।
আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘আজকে আমি সাধারণ মানুষের সঙ্গে হাদির জানাজা পড়েছি। আমাকে আজকে প্রধান উপদেষ্টা ডেকেছেন, আমি যাইনি। আল্লাহ হাদিকে শাহাদাতের জজবা হিসেবে কবুল করে নিয়েছেন। ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত তৃতীয় শহীদ হিসেবে আল্লাহ কবুল করেছেন।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমদ খান বলেন, ‘শহীদ শরিফ ওসমান হাদি ইতিহাসের অংশ হয়ে গেছে। দেশের জন্য তার যে ত্যাগ আল্লাহ তা কবুল করুক।’
তিনি বলেন, ‘তার পরিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্প্রসারিত পরিবারের অংশ। আমরা তার চূড়ান্তভাবে সম্মান জানাতে আমাদের এ জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের পাশে কবরস্থ করা হয়েছে। আমরা মনে করি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তার সন্তানকে বুকে নিয়েছে। মা তার ছেলেকে বা বিশ্ববিদ্যালয় তাকে গ্রহণ করেছে।’
বক্তব্য শেষে দোয়া পরিচালনা করেন হাদির বড় ভাই। এ সময়, হাদীর পরিবারের লোকজন এবং আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. নিয়াজ আহমেদ খান ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা, জাতীয় নাগরিক পার্টির সদস্য সচিব আখতার হোসেন ও অন্যান্য নেতারা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা, ডাকসু নেতারা, এবং ইনকিলাব মঞ্চের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত, গত ১২ ডিসেম্বর নির্বাচনী প্রচারণার সময় রাজধানীর বিজয়নগর এলাকায় গেলে চলন্ত মোটরসাইকেল থেকে হাদিকে গুলি করে দুর্বৃত্তরা। গুলিটি তার মাথায় লাগে। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে অস্ত্রোপচারের পর তাকে এভারকেয়ার হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে ১৮ ডিসেম্বর রাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
পরদিন ১৯ ডিসেম্বর বাংলাদেশ সময় দুপুর ২টা ৩ মিনিটে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে শহীদ হাদির মরদেহবাহী এয়ার অ্যাম্বুলেন্স চাঙ্গি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করে। সন্ধ্যা পৌনে ৬টায় রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে হাদির মরদেহ বহনকারী ফ্লাইটটি অবতরণ করে। পরে এয়ারপোর্ট থেকে হাদির মরদেহ জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের হিমাঘারে রাখা হয়। সেখান থেকে গতকাল শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে তার ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়।
শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যুতে শনিবার একদিনের রাষ্ট্রীয় শোক পালন করা হয়। এ উপলক্ষে দেশের সব সরকারি, আধা-সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সরকারি ও বেসরকারি ভবন এবং বিদেশে বাংলাদেশ মিশনগুলোতে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়েছে।
এর আগে, গত বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) রাতে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যুতে একদিনের রাষ্ট্রীয় শোক পালনের ঘোষণা দেন।
মহান মুক্তিযুদ্ধের ডেপুটি চিফ অব স্টাফ এবং সাবেক বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) এ কে খন্দকার, বীর উত্তমের জানাজা আগামীকাল রবিবার দুপুরে অনুষ্ঠিত হবে। এদিন দুপুর ১টা ৪৫ মিনিটে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী ঘাঁটি বাশারের প্যারেড গ্রাউন্ডে মরহুমের জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। এ সময় জাতির এই শ্রেষ্ঠ সন্তানকে যথাযথ সামরিক মর্যাদায় গার্ড অব অনার প্রদান করা হবে।
এর আগে শনিবার সকাল ১০টা ৩৫ মিনিটে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় বার্ধক্যজনিত কারণে ইন্তেকাল করেন এ কে খন্দকার। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৯৫ বছর। তিনি এক কন্যা, দুই পুত্র এবং অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
এ কে খন্দকারের জন্ম ১৯৩০ সালের ১ জানুয়ারি। বাবার কর্মসূত্রে রংপুরে জন্ম হলেও তার পৈতৃক নিবাস পাবনা জেলার বেড়া উপজেলার ভারেঙ্গা গ্রামে। তার বাবা খন্দকার আব্দুল লতিফ ছিলেন ব্রিটিশ আমলের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট এবং মা আরেফা খাতুন ছিলেন একজন আদর্শ গৃহিণী। চার ভাই ও এক বোনের মধ্যে এ কে খন্দকার ছিলেন তৃতীয়। বাবার চাকরির সুবাদে বগুড়া করোনেশন স্কুলে তার শিক্ষাজীবন শুরু হয় এবং পরবর্তীতে ১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময় তিনি মালদা জেলা স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করেন।
বর্ণাঢ্য সামরিক জীবনের অধিকারী এ কে খন্দকার ১৯৫২ সালের সেপ্টেম্বরে পাকিস্তান বিমান বাহিনীতে (পিএএফ) পাইলট অফিসার হিসেবে কমিশন লাভ করেন। কর্মজীবনে ১৯৫৫ সাল পর্যন্ত ফাইটার পাইলট হিসেবে এবং পরবর্তীতে ফ্লাইং ইন্সট্রাক্টর, ফ্লাইট কমান্ডার ও স্কোয়াড্রন কমান্ডার হিসেবে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত তিনি পিএএফ প্ল্যানিং বোর্ডের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং একই বছর ঢাকায় পাকিস্তান বিমান বাহিনী ঘাঁটির সেকেন্ড ইন কমান্ড হিসেবে নিয়োগ পান।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে এ কে খন্দকার উইং কমান্ডার হিসেবেই মুক্তিবাহিনীতে যোগ দেন এবং ডেপুটি চিফ অব স্টাফ বা উপ-সর্বাধিনায়কের গুরুদায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন। ১৯৭১ সালের ২১ নভেম্বর তৎকালীন প্রবাসী সরকার তাকে গ্রুপ ক্যাপ্টেন পদে পদোন্নতি দেয়। তিনি মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল এম এ জি ওসমানীর ব্যক্তিগত উপ-প্রধান সেনাপতি হিসেবে রণাঙ্গনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। মহান মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সুসংগঠিত করতে তার অসামান্য অবদান জাতি চিরদিন শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে।