বুধবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫
৯ পৌষ ১৪৩২

কেউ আইন নিজের হাতে তুলে নিবেন না: প্রধান উপদেষ্টা

বুধবার সন্ধ্যায় অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের এক মাস পূর্তি উপলক্ষ্যে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি: সংগৃহীত
বাসস
প্রকাশিত
বাসস
প্রকাশিত : ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ২১:২৭

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, কেউ আইন নিজের হাতে তুলে নিবেন না। আইন নিজের হাতে তুলে নিয়ে কেউ সমাজে বিশৃঙ্খল পরিবেশ সৃষ্টি করলে আমরা তাকে অবশ্যই শাস্তির আওতায় নিয়ে আসবো। আজ বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের এক মাস পূর্তি উপলক্ষ্যে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।

প্রধান উপদেষ্টা আর যেন কোনো স্বৈরাচারের হাতে পড়তে না হয় উল্লেখ করে বলেন, আমাদের সন্তানদের জন্য একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের রূপরেখা তৈরি করতে আমরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। আমরা যাতে বলতে পারি আমরা একটি গণতান্ত্রিক দেশে বসবাস করি, আমরা যাতে সকলেই দাবি করতে পারি যে এই দেশটি আমাদের- আমরা সেই লক্ষ্যেই কাজ করছি।

গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে ড. ইউনূস তার ভাষণে বলেন, আমরা সংস্কার চাই। আমাদের একান্ত অনুরোধ, আমাদের ওপর যে সংস্কারের গুরু দায়িত্ব দিয়েছেন, সেই দায়িত্ব দিয়ে আপনারা দর্শকের গ্যালারিতে চলে যাবেন না। আপনারা আমাদের সঙ্গে থাকুন। আমরা একসঙ্গে সংস্কার করবো। এটা আমাদের সবার দায়িত্ব।

দেশবাসীকে নিজ নিজ ক্ষেত্রে সংস্কার আনার আহ্বান জানিয়ে সরকার প্রধান বলেন, আপনারা নিজ নিজ জগতে সংস্কার আনুন। একটা জাতির সংস্কার শুধুমাত্র সরকারের সংস্কার হলে হয় না। আপনি ব্যবসায়ী হলে আপনার ব্যবসায় সংস্কার আনুন। ব্যবসায়ী গোষ্ঠিরা তাদের নিজ নিজ সমিতির মাধ্যমে সংস্কার আনুন। সমিতিতে সংস্কার আনুন। নতুন করে সমিতির গঠনতন্ত্র সংশোধন করুন।

তিনি আরও বলেন, আপনি শ্রমিক হলে আপনার ক্ষেত্রে আপনি সংস্কার করুন। আপনি রাজনৈতিক নেতা-কর্মী হলে আপনার ক্ষেত্রে সংস্কার করুন। আপনি প্রতিষ্ঠান প্রধান হলে আপনার প্রতিষ্ঠানে সংস্কার আনুন। আমি এটাকে সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করার জন্য সবাইকে আহ্বান জানাচ্ছি।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, এই সংস্কারের মাধ্যমে আমরা জাতি হিসেবে নতুনভাবে যাত্রা শুরু করতে চাই। আমাদের এই যাত্রা আমাদের পৃথিবীর একটি সম্মানিত জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করুক এটাই আমাদের সবার কাম্য।

রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে অন্তর্র্বতী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বিগত মাসে আমি বেশ কিছু রাজনৈতিক দলের সঙ্গে পৃথকভাবে বসেছি। তাদের সঙ্গে মতামত বিনিময় করেছি। তারা আমাদের উৎসাহিত করেছেন। ছাত্র, শ্রমিক জনতার বিপ্লবের লক্ষ্যের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। সংস্কারের কাজে পূর্ণ সহযোগতিা দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।

ব্যবসায়ীদের সঙ্গে পৃথক বৈঠকের কথা উল্লেখ করে ড. ইউনূস বলেন, ব্যবসায়ীদের কাছে আমাদের সরকারের লক্ষ্যগুলি ব্যাখ্যা করেছি। তারাও আমাদের লক্ষের সঙ্গে একমত প্রকাশ করেছেন।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ছাত্র শ্রমিক জনতার ঐতিহাসিক জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মুখে এবং হাজারো মানুষের আত্মদানের বিনিময়ে বাংলাদেশে ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন হয়েছে। এই গণঅভ্যুত্থানের বার্তা ও আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের জন্য একটি অভূতপূর্ব সময় ও সুযোগ আমরা এর মধ্যে দিয়ে অর্জন করেছি। এখন বাংলাদেশে স্বৈরতান্ত্রিক শাসন পুনরাবৃত্তির আশঙ্কা রোধ এবং জনমালিকানা ভিত্তিক, কল্যাণমুখী ও জনস্বার্থে নিবেদিত একটি রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রবর্তনের লক্ষ্যে কিছু জাতীয়ভিত্তিক সংস্কার সম্পন্ন করা জরুরি হয়ে পড়েছে। এসব সংস্কার ভাবনার অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে সুষ্ঠু নির্বাচন ব্যবস্থা ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা।

তিনি বলেন, আমরা যেহেতু জনগণের ভোটাধিকার ও জনগণের মালিকানায় বিশ্বাস করি, সেহেতু নির্বাচন ব্যবস্থার উন্নয়নে আমাদের সংস্কার ভাবনায় গুরুত্ব পেয়েছে। আমরা মনে করি নির্বাচনের নামে সংখ্যাগরিষ্ঠতার একাধিপত্য ও দুঃশাসন মানুষের ওপর চাপিয়ে দেয়া বা এর মাধ্যমে এক ব্যক্তি বা পরিবার বা কোনো গোষ্ঠীর কাছে সকল ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখা কোনোক্রমেই গ্রহণযোগ্য নয়। এসব আশঙ্কা রোধ করার জন্য নির্বাচনের সাথে সম্পর্কিত নির্বাচন কমিশনসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলোর সংস্কারের কথা আমরা ভাবছি।

ড. ইউনূস বলেন, নির্বাচনব্যবস্থার সাথে সম্পর্কিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে পুলিশ প্রশাসন, জনপ্রশাসন, বিচার প্রশাসন, দুর্নীতি দমন কমিশন এই চারটি প্রতিষ্ঠানের সংস্কার করা সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের জন্য অপরিহার্য। এসব প্রতিষ্ঠানের সংস্কার জনমালিকানা ভিত্তিক, জবাবদিহিমূলক ও কল্যাণমূলক রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায়ও অবদান রাখবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

এর পাশাপাশি করে সমাজের সকল স্তরের মানুষের প্রতিনিধিত্ব ও স্বার্থ নিশ্চিত করার জন্য এবং জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বার্তাকে প্রতিফলিত করার জন্য সাংবিধানিক সংস্কারের প্রয়োজন আমরা অনুভব করছি বলে তিনি উল্লেখ করেন।

প্রধান উপদেষ্টা তার ভাষণে উল্লেখ করেন, এসব বিষয়ে সংস্কার করার প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসাবে সরকার প্রাথমিকভাবে ছয়টি কমিশন গঠন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এসব কমিশনের কাজ পরিচালনার জন্য বিষয়ভিত্তিক অভিজ্ঞতা বিবেচনা করে ছয়জন বিশিষ্ট নাগরিককেএই কমিশনগুলো পরিচালিনা করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এর পর আরও বিভিন্ন বিষয়ে কমিশন গঠন প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে বলে তিনি জানান।

এসব কমিশনের অন্য সদস্যদের নাম কমিশন প্রধানদের সঙ্গে আলোচনা করে ঠিক করা হবে। কমিশনগুলোর আলোচনা ও পরামর্শসভায় উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, ছাত্র, শ্রমিক, জনতা আন্দোলনের প্রতিনিধি, নাগরিক সমাজ ও রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকবেন।

পূর্ণাঙ্গভাবে গঠিত হওয়ার পর কমিশন আনুষ্ঠানিকভাবে তার কাজ আগামী পহেলা অক্টোবর থেকে শুরু করতে পারবে বলে প্রধান উপদেষ্টা উল্লেখ করেন এবং এটি পরবর্তী তিন মাসের মধ্যে সম্পন্ন হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

তিনি বলেন, কমিশনের রিপোর্টের ভিত্তিতে সরকার পরবর্তী পর্যায়ে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে পরামর্শসভার আয়োজন করবে।

চূড়ান্ত পর্যায়ে ছাত্র সমাজ, নাগরিক সমাজ, রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি, সরকারের প্রতিনিধি নিয়ে ব্যাপকভিত্তিক তিন থেকে সাত দিনব্যাপী একটি পরামর্শসভার ভিত্তিতে সংস্কার ভাবনার রূপরেখা চূড়ান্ত করা হবে। এতে এই রূপরেখা কীভাবে বাস্তবায়ন হবে তার একটি ধারণাও দেওয়া হবে।

ড. ইউনূস বলেন, এই আয়োজন জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বার্তা বাস্তবায়ন এবং রাষ্ট্র পুনঃনির্মাণ তাগিদের ঐক্যবন্ধনে গোটা জাতিকে শক্তিশালী ও আশাবাদী করে তুলবে বলে আমাদের বিশ্বাস।

গত ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর দ্বিতীয় বারের মতো জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিলেন ড. ইউনূস। এর আগে ২৫ আগস্ট তিনি জাতির উদ্দেশে প্রথমবারের মত ভাষণ দেন।


ওসমান হাদি হত্যা: অস্ত্র ও বিস্ফোরকসহ ঘাতকের সহযোগী হিমন গ্রেপ্তার

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সম্মুখসারির যোদ্ধা শরিফ ওসমান হাদি হত্যাকাণ্ডের তদন্তে বড় ধরনের সাফল্য পেয়েছে পুলিশ। হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের চালক আলমগীরের ঘনিষ্ঠ বন্ধু এবং আদাবর থানা যুবলীগ কর্মী হিমনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আজ বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) বিকেলে রাজধানীর আদাবর এলাকার একটি আবাসিক হোটেল থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার হিমনের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পরবর্তীতে অভিযান চালিয়ে পুলিশ একটি বিদেশি পিস্তল, গুলি এবং বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক দ্রব্য উদ্ধার করেছে।

তেজগাঁও বিভাগের মোহাম্মদপুর জোনের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) মো. জুয়েল রানা এই গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পুলিশ জানতে পারে আদাবরের রাজ্জাক হোটেলে হিমন অবস্থান করছে। সেখানে অভিযান চালিয়ে তাকে আটকের পর নিবিড় জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। পরে তার দেওয়া স্বীকারোক্তি অনুযায়ী আদাবরের ১৭/বি এলাকায় জনৈক মেহেদীর বাসায় তল্লাশি চালিয়ে অবৈধ অস্ত্র ও বিস্ফোরকের মজুত উদ্ধার করা হয়।

পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, ওসমান হাদি হত্যাকাণ্ডের প্রধান আসামি ফয়সাল এবং মোটরসাইকেল চালক আলমগীরের সঙ্গে হিমনের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। হিমন প্রায় দুই মাস আগে দুবাই থেকে বাংলাদেশে ফিরেছিলেন। হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা বা পরবর্তী কার্যক্রমে তার কী ধরনের ভূমিকা ছিল, তা খতিয়ে দেখছে প্রশাসন। এডিসি জুয়েল রানা আরও জানান, হিমন ইতোমধ্যে জিজ্ঞাসাবাদে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদান করেছে, যা মামলার রহস্য উদঘাটনে সহায়ক হবে। এই জঘন্য হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে থাকা অন্যান্য মদদদাতাদের খুঁজে বের করতে এবং উদ্ধারকৃত অস্ত্রের উৎস নিশ্চিত করতে তাকে আরও বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। মূলত ঘাতক চক্রের এই সহযোগীকে গ্রেপ্তারের মধ্য দিয়ে হাদি হত্যা মামলার তদন্তে নতুন গতির সঞ্চার হলো।


সরকারের অবস্থান স্পষ্ট, আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না: প্রেস সচিব

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণের কোনো সুযোগ নেই বলে সরকারের পক্ষ থেকে পুনরায় স্পষ্ট জানানো হয়েছে। আজ বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) বিকেলে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এই তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, নির্বাচন কমিশন ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগের দলীয় নিবন্ধন বাতিল করেছে, যার ফলে আইনিভাবেই দলটি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না। এ বিষয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অবস্থান অত্যন্ত পরিষ্কার এবং অনড় বলে তিনি উল্লেখ করেন।

ব্রিফিংয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দীর্ঘ ১৭ বছর পর দেশে ফেরার প্রসঙ্গটিও গুরুত্বের সাথে আলোচিত হয়। প্রেস সচিব বলেন, সরকার তারেক রহমানের বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তনকে আন্তরিকভাবে স্বাগত জানায়। তাঁর প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়ে বিএনপির সাথে সরকারের নিয়মিত আলোচনা চলছে। দলটির পক্ষ থেকে যে ধরনের নিরাপত্তা সহযোগিতা চাওয়া হচ্ছে, প্রশাসন তা প্রদানে সম্পূর্ণ সচেষ্ট রয়েছে এবং পুরো বিষয়টি নিবিড়ভাবে তদারকি করা হচ্ছে।

সাম্প্রতিক বিভিন্ন চাঞ্চল্যকর ঘটনার তদন্ত ও বিচার সম্পর্কেও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদান করেন শফিকুল আলম। ময়মনসিংহে দীপু চন্দ্র দাস হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, ভিডিও ফুটেজ দেখে এই ঘটনায় জড়িত অন্তত ১২ জনকে ইতোমধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে। আইন উপদেষ্টার ঘোষণা অনুযায়ী, এই মামলার বিচার কাজ দ্রুত বিচার আইনের আওতায় সম্পন্ন করা হবে। তিনি আরও বলেন, বর্তমান সরকার দেশের সকল সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছে, যার প্রমাণ পূর্ববর্তী ধর্মীয় উৎসবগুলোতে দেওয়া নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা।

এ ছাড়াও, সংবাদমাধ্যম প্রথম আলো ও দ্য ডেইলি স্টার কার্যালয়ে হামলার ঘটনায় গৃহীত পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে প্রেস সচিব জানান, ভিডিও এবং ভিজ্যুয়াল তথ্য বিশ্লেষণ করে এই ন্যাক্কারজনক ঘটনায় জড়িত ৩১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃত অনেকের কাছ থেকে অপরাধের সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ আলামতও উদ্ধার করা হয়েছে। মূলত যেকোনো ধরনের সহিংসতা দমনে এবং অপরাধীদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনতে সরকার সব ধরনের গোয়েন্দা ও আইনি সক্ষমতা ব্যবহার করছে বলে তিনি ব্রিফিংয়ে আশ্বস্ত করেন। দেশের সামগ্রিক স্থিতিশীলতা ও আইনের শাসন বজায় রাখতে প্রশাসনের এই কঠোর অবস্থান অব্যাহত থাকবে বলে তাঁর বক্তব্যে প্রতিফলিত হয়েছে।


মানসম্মত শিক্ষা ও স্বনির্ভরতাকে গুরুত্ব দিয়ে বাজেট প্রণয়নের নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার

আপডেটেড ২৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১৮:২২
নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস মানসম্মত শিক্ষা, গ্রামীণ উন্নয়ন, যুব ও নারীর ক্ষমতায়ন এবং স্থানীয় উৎপাদন বৃদ্ধিকে অগ্রাধিকার দিয়ে একটি স্বনির্ভর বাজেট প্রণয়নের নির্দেশ দিয়েছেন। আজ বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) রাজধানীর তেজগাঁওয়ে তাঁর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের সাপ্তাহিক বৈঠকে আগামী ১ ফেব্রুয়ারি থেকে কার্যকর হতে যাওয়া সংশোধিত বাজেট পর্যালোচনার সময় তিনি এই গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা প্রদান করেন। বৈঠক শেষে বিকেলে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম সরকারের এই নতুন অর্থনৈতিক পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন।

প্রেস সচিব জানান, সংশোধিত বাজেটের রূপরেখা নির্ধারণে প্রধান উপদেষ্টা অপ্রয়োজনীয় বৈদেশিক ঋণের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে দেশীয় অর্থায়নে বেশি প্রকল্প বাস্তবায়নের ওপর জোর দিয়েছেন। তিনি মনে করেন, বিদেশি ঋণের বোঝা কমিয়ে দেশীয় সম্পদের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করলেই বাংলাদেশকে প্রকৃত অর্থে স্বনির্ভর করা সম্ভব হবে। বিশেষ করে শিক্ষা খাতের উন্নয়নে অধ্যাপক ইউনূস একটি ভিন্নধর্মী দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেন। তিনি উল্লেখ করেন, বিগত কর্তৃত্ববাদী শাসনামলে কেবল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বৃদ্ধিতে জোর দেওয়া হয়েছিল, যার ফলে শিক্ষার মান মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই সংকট উত্তরণে আগামী বাজেটে শিক্ষার মানোন্নয়নকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।

দেশের অর্থনীতির প্রাণশক্তি কৃষকদের জীবনমান উন্নয়নেও প্রধান উপদেষ্টা বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। তিনি বলেন, চলতি বছর কৃষকরা রেকর্ড পরিমাণ খাদ্যশস্য উৎপাদন করে দেশের খাদ্য নিরাপত্তায় বড় অবদান রেখেছেন, তাই তাঁদের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধিতে বাজেটে বিশেষ বরাদ্দ থাকা প্রয়োজন। একই সঙ্গে তিনি বাংলাদেশের বিশাল তরুণ সমাজকে ‘যুবসম্পদের খনি’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন এবং নির্দেশ দেন যেন বাজেটের প্রতিটি স্তরে তরুণদের উদ্ভাবনী শক্তি ও চাহিদার প্রতিফলন থাকে। জাতীয় উন্নয়নের অন্যতম চাবিকাঠি হিসেবে নারীর ক্ষমতায়ন খাতেও বাজেট বরাদ্দ বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তা তিনি জোরালোভাবে ব্যক্ত করেন।

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস স্থানীয় শিল্প ও কৃষিপণ্য উৎপাদন বাড়িয়ে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের পাশাপাশি স্বাস্থ্য খাতে জনসেবার মান বাড়াতে বাজেট সম্প্রসারণের কথা বলেন। তাঁর এই নির্দেশনাগুলো মূলত একটি জনবান্ধব ও টেকসই অর্থনীতি গড়ে তোলার অঙ্গীকার হিসেবে দেখা হচ্ছে। আসন্ন ১ ফেব্রুয়ারি থেকে কার্যকর হতে যাওয়া এই সংশোধিত বাজেটটি দেশের প্রান্তিক মানুষের জীবনযাত্রায় ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে এবং বিদেশি সাহায্যের বদলে দেশীয় সক্ষমতাকে প্রধান্য দেবে বলে আশা করছে অন্তর্বর্তী সরকার। মূলত মেধা, তারুণ্য ও কৃষি উৎপাদনকে এক সুতোয় গেঁথে আগামীর সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়াই হবে এই বাজেটের মূল লক্ষ্য।


নির্বাচন ও গণভোটের প্রচার কার্যক্রমের মুখ্য সমন্বয়ক হলেন অধ্যাপক আলী রীয়াজ

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং আসন্ন গণভোট সম্পর্কে দেশব্যাপী জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে পরিচালিত প্রচার কার্যক্রমের মুখ্য সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক আলী রীয়াজ। আজ বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে এ সংক্রান্ত একটি আনুষ্ঠানিক নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। এই নির্দেশনার ফলে এখন থেকে নির্বাচন ও গণভোট সংক্রান্ত সকল প্রকার প্রচার ও সচেতনতামূলক কর্মকাণ্ডের মূল তদারকি ও সমন্বয়ের গুরুদায়িত্ব তিনি পালন করবেন।

অধ্যাপক আলী রীয়াজ বর্তমানে উপদেষ্টা পদমর্যাদায় প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী হিসেবে কর্মরত আছেন। এর আগে তিনি জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। তাঁর দীর্ঘ অ্যাকাডেমিক অভিজ্ঞতা এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষণ ক্ষমতা নির্বাচনের আগে সাধারণ মানুষের মাঝে সঠিক তথ্য পৌঁছে দিতে এবং স্বচ্ছ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় জনসম্পৃক্ততা বাড়াতে বিশেষ সহায়ক হবে বলে মনে করা হচ্ছে। মূলত একটি অংশগ্রহণমূলক ও সুশৃঙ্খল নির্বাচনের পরিবেশ নিশ্চিত করতেই সরকার তাঁকে এই বিশেষ দায়িত্ব প্রদান করেছে।


ওসমান হাদির বিষয়ে সরকার সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে তদন্ত করছে: প্রেস সচিব

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম সক্রিয় যোদ্ধা ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদি হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি সরকার সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে তদন্ত করছে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। আজ বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) বিকেলে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে তিনি এ তথ্য নিশ্চিত করেন। শফিকুল আলম বলেন, দেশের সকল নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা সংস্থা এই মামলার রহস্য উন্মোচনে সমন্বিতভাবে কাজ করছে। তদন্তে ইতিমধ্যে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সূত্র বা ‘ক্লু’ পাওয়া গেছে এবং প্রধান সন্দেহভাজন সরাসরি ধরা না পড়লেও সংশ্লিষ্ট কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সরকার এই বিচার প্রক্রিয়ায় কোনো শিথিলতা দেখাবে না এবং আইন মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে এই হত্যাকাণ্ডের বিচার সম্পন্ন করা হবে।

ব্রিফিংয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দীর্ঘ ১৭ বছর পর দেশে ফেরার বিষয়টিকে সরকার স্বাগত জানিয়েছে। প্রেস সচিব বলেন, তারেক রহমানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিএনপি এবং সরকারের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। মূলত তাঁর দলই প্রাথমিক নিরাপত্তার বিষয়টি তদারকি করছে, তবে সরকারের কাছে তারা যে ধরনের সহযোগিতা বা সুরক্ষা চেয়েছে, প্রশাসন তা প্রদানে সম্পূর্ণ প্রস্তুত এবং ইতিমধ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। নেতার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনকে নির্বিঘ্ন করতে সব ধরনের রাষ্ট্রীয় সহযোগিতা বজায় থাকবে বলেও তিনি আশ্বস্ত করেন।

নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণ এবং মার্কিন ফরেন কমিটির কথিত চিঠি প্রসঙ্গে শফিকুল আলম সরকারের কঠোর ও স্পষ্ট অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি জানান, মার্কিন কমিটির চিঠিটি তিনি এখনও দেখেননি, তবে আওয়ামী লীগ বিষয়ে সরকারের অবস্থান অত্যন্ত পরিষ্কার। উচ্চ আদালতের আদেশে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম বর্তমানে স্থগিত রয়েছে এবং নির্বাচন কমিশন ইতিমধ্যে দলটির রাজনৈতিক নিবন্ধন বাতিল করেছে। এই আইনি ও প্রশাসনিক বাস্তবতায় আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণের কোনো সুযোগ নেই। মূলত একটি স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করতেই এই পদক্ষেপগুলো নেওয়া হয়েছে বলে তিনি ইঙ্গিত দেন।

প্রেস সচিবের এই বক্তব্যের মাধ্যমে এটি স্পষ্ট হয়েছে যে, সরকার একদিকে যেমন সংবেদনশীল হত্যাকাণ্ডগুলোর দ্রুত বিচার নিশ্চিতে বদ্ধপরিকর, অন্যদিকে দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি’র শীর্ষ নেতার প্রত্যাবর্তন এবং আওয়ামী লীগের নির্বাচনী অংশগ্রহণের বিষয়েও সুনির্দিষ্ট ও আপসহীন পথে হাঁটছে। নির্বাচনের প্রাক্কালে দেশের সামগ্রিক স্থিতিশীলতা রক্ষা এবং সংস্কার প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নেওয়াই বর্তমান প্রশাসনের মূল লক্ষ্য।


নতুন টেলিযোগাযোগ অধ্যাদেশের চূড়ান্ত অনুমোদন: ইন্টারনেট শাটডাউনে আসছে আইনি বাধা

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশ এক নতুন আধুনিক টেলিযোগাযোগ যুগে প্রবেশ করতে যাচ্ছে। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর আজ বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) দুপুরে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে ‘বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ অধ্যাদেশ–২০২৫’-এর খসড়ায় চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এই অধ্যাদেশটি কার্যকর হলে দেশের বিদ্যমান টেলিযোগাযোগ আইন ও নীতিমালায় আমূল পরিবর্তন আসবে এবং খাতটিতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত হবে বলে আশা করছে সরকার।

সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই নতুন অধ্যাদেশের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য হলো টেলিযোগাযোগ খাতকে আন্তর্জাতিক মানের সাথে সংগতি রেখে আধুনিকায়ন করা। এতে লাইসেন্সিং প্রক্রিয়া অনেক বেশি সহজ করা হয়েছে, যা নতুন বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করবে। এ ছাড়াও দেশজুড়ে ৫জি প্রযুক্তি এবং ক্লাউড সেবার প্রসারে এই অধ্যাদেশ বিশেষ ভূমিকা রাখবে। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, এতে ইন্টারনেট শাটডাউন বা সেবা বন্ধ করার ওপর কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে, যাতে ভবিষ্যতে যত্রতত্র ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে নাগরিকদের ভোগান্তিতে ফেলা না হয়। ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করার পাশাপাশি একটি আধুনিক নিয়ন্ত্রক কাঠামো গড়ে তোলাও এই উদ্যোগের একটি বড় অংশ।

উল্লেখ্য যে, এই গুরুত্বপূর্ণ অধ্যাদেশটি চূড়ান্ত অনুমোদনের আগে তিনবার উপদেষ্টা পরিষদ থেকে ফেরত পাঠানো হয়েছিল। এর আগে আড়িপাতার ধারা ও অনুমোদন প্রক্রিয়া নিয়ে বিটিআরসি এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কিছু আপত্তির কারণে এটি সংশোধনের জন্য পাঠানো হয়। সর্বশেষ বৃহস্পতিবারের বৈঠকেও কিছু কারিগরি মতামতের প্রয়োজনে এটি পুনরায় পর্যালোচনার জন্য রাখা হয়েছিল। সকল পক্ষ ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মতামতের সমন্বয় ঘটিয়ে অবশেষে আজ সেটিকে চূড়ান্ত রূপ দেওয়া হলো।

বর্তমানে অধ্যাদেশটির খসড়া জনসাধারণের মতামতের জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়েছে। খাত সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ ও সাধারণ নাগরিকরা মনে করছেন, নতুন এই আইনি কাঠামো বাস্তবায়িত হলে তথ্যপ্রযুক্তির অপব্যবহার রোধের পাশাপাশি ডিজিটাল সেবার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সক্ষমতা কয়েক গুণ বৃদ্ধি পাবে। মূলত প্রযুক্তির দ্রুত পরিবর্তনের সাথে সামঞ্জস্য রেখে একটি যুগোপযোগী ও বৈষম্যহীন টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতেই সরকার এই যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।


আতাউর রহমান বিক্রমপুরী কারাগারে

আপডেটেড ২৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১৪:২৫
নিজস্ব প্রতিবেদক

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) নরসিংদী এলাকা থেকে আতাউর রহমান বিক্রমপুরীকে গ্রেপ্তার করেছে। গতকাল মঙ্গলবার রাতে গাজীপুর মহানগর পুলিশের (জিএমপি) বিশেষ অনুরোধে অভিযান চালিয়ে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। আজ বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) দুপুরে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, আতাউর রহমান বিক্রমপুরীর বিরুদ্ধে তিন মাসের একটি বিশেষ ডিটেনশন বা আটকাদেশ রয়েছে এবং সেই আদেশ কার্যকর করতেই এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

গ্রেপ্তারের পর আইনি প্রক্রিয়া অনুযায়ী আতাউর রহমানকে গাজীপুর মহানগর পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এরপর আজ বুধবার সকালে তাঁকে টঙ্গী পূর্ব থানা থেকে কড়া পাহারায় কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়েছে। টঙ্গী পূর্ব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মেহেদী হাসান জানিয়েছেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় ডিবি পুলিশ তাঁকে আটক করার পর থানায় হস্তান্তর করেছিল। পরবর্তীতে প্রয়োজনীয় আইনি আনুষ্ঠানিকতা শেষে তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়।

কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ জেল সুপার মোহাম্মদ আবদুল্লা আল মামুন নিশ্চিত করেছেন যে, আতাউর রহমান বিক্রমপুরীকে বর্তমানে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-১-এ রাখা হয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, একটি সুনির্দিষ্ট আটকাদেশ কার্যকর করার লক্ষ্যেই এই দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে তিনি কারা কর্তৃপক্ষের নিবিড় তত্ত্বাবধানে রয়েছেন এবং তাঁর বিষয়ে পরবর্তী আইনি কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।


বায়ুদূষণে আবারও বিশ্ব তালিকায় শীর্ষে ঢাকা

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

বিশ্বের অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ মহানগরী ঢাকা আজ আবারও বায়ুদূষণের শীর্ষে অবস্থান করছে। সুইজারল্যান্ডভিত্তিক বায়ুমান পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা আইকিউএয়ারের তথ্য অনুযায়ী, বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) সকাল ৯টায় রাজধানীর বায়ুমান সূচক বা একিউআই স্কোর রেকর্ড করা হয়েছে ২৩৯। এই মানদণ্ড অনুযায়ী ঢাকার বাতাস বর্তমানে ‘খুবই অস্বাস্থ্যকর’ পর্যায়ে রয়েছে, যা নগরবাসীর জনস্বাস্থ্যের জন্য চরম হুমকি স্বরূপ। দূষণের এই আন্তর্জাতিক তালিকায় ঢাকার পরেই অবস্থান করছে কায়রো, তেহরান, দিল্লি ও সারায়েভোর মতো শহরগুলো, তবে সেগুলোর স্কোর ঢাকার চেয়ে বেশ নিচে।

বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, প্রতি বছর শীতের আগমনের সাথে সাথে অর্থাৎ নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ঢাকার বাতাসের গুণমান দ্রুত কমতে থাকে। এর প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে যত্রতত্র নির্মাণাধীন স্থাপনা, সংস্কারহীন ভাঙাচোরা রাস্তা থেকে ওড়া ধুলোবালি, ইটভাটার ধোঁয়া এবং যানবাহনের নির্গত কালো ধোঁয়া। বৃষ্টিহীন শীতের দিনে এসব দূষিত কণা বাতাসের নিম্নস্তরে আটকে থাকে, ফলে দূষণের মাত্রা বহুগুণ বেড়ে যায়। আইকিউএয়ারের মানদণ্ড অনুযায়ী, সূচক ১০১ থেকে ১৫০ হলে তা সংবেদনশীল মানুষের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ ধরা হয়, আর ২০১ পার করলে তা মারাত্মক অস্বাস্থ্যকর হিসেবে বিবেচিত হয়।

এই ভয়াবহ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিশেষজ্ঞরা জরুরি ভিত্তিতে বিশেষ কর্মপরিকল্পনা গ্রহণের তাগিদ দিয়েছেন। তাঁরা পরামর্শ দিয়েছেন যে, ধুলোবালি নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত শহরের প্রধান সড়কগুলোতে পানি ছিটানো এবং নির্মাণাধীন এলাকাগুলো যথাযথভাবে ঢেকে রাখা বাধ্যতামূলক করতে হবে। একইসাথে শহরের বায়ুমান উন্নত করতে অযোগ্য ও পুরোনো মোটরযান চলাচল বন্ধ করা এখন সময়ের দাবি। এমন বিষাক্ত বাতাস শিশু ও বৃদ্ধদের শ্বাসকষ্টসহ দীর্ঘমেয়াদী ফুসফুসের রোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছে বিধায় নগরবাসীকে সচেতন থাকারও পরামর্শ দিচ্ছেন স্বাস্থ্যবিদরা। মূলত সমন্বিত উদ্যোগ ছাড়া ঢাকার বাতাসের এই বিপজ্জনক অবস্থা থেকে মুক্তি পাওয়া কঠিন বলে মনে করছেন পরিবেশবাদীরা।


দুদক সংস্কারে নতুন অধ্যাদেশ জারি: বাড়ছে ক্ষমতা ও সদস্য সংখ্যা

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) আইন-২০০৪-এর সংশোধিত অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছে, যার মাধ্যমে সংস্থাটির কাঠামো এবং ক্ষমতায় আমূল পরিবর্তন আনা হয়েছে। আজ বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের অনুমোদনক্রমে এই অধ্যাদেশটি কার্যকর করা হয়েছে। নতুন এই বিধানে কমিশনের সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধি, তদন্তের পরিধি বাড়ানো এবং নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আনার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

অধ্যাদেশ অনুযায়ী, এখন থেকে দুর্নীতি দমন কমিশন অনধিক পাঁচজন কমিশনারের সমন্বয়ে গঠিত হবে, যা আগে ছিল তিনজন। এই পাঁচজনের মধ্যে অন্তত একজন নারী এবং একজন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিষয়ে অভিজ্ঞ বিশেষজ্ঞ থাকা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। রাষ্ট্রপতি এই কমিশনারদের মধ্য থেকে একজনকে চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ প্রদান করবেন। আইটি বিশেষজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত করার মূল উদ্দেশ্য হলো আধুনিক ও ডিজিটাল দুর্নীতির রহস্য উন্মোচন এবং প্রযুক্তিগত তদন্ত কার্যক্রমকে আরও শক্তিশালী করা।

কমিশনার নিয়োগের জন্য গঠিত কমিটি প্রক্রিয়ায় বড় পরিবর্তন আনা হয়েছে। আগের ‘সার্চ কমিটি’র নাম পরিবর্তন করে এখন রাখা হয়েছে ‘যাচাই-বাছাই কমিটি’। এই কমিটির নেতৃত্বে থাকবেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের একজন জ্যেষ্ঠ বিচারক, যা আগে ছিল প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব। কমিটির অন্যান্য সদস্যদের মধ্যে থাকবেন প্রধান বিচারপতি কর্তৃক মনোনীত হাইকোর্ট বিভাগের একজন বিচারক, মহা হিসাব-নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক (সিএজি), সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান এবং জাতীয় সংসদের স্পিকার কর্তৃক মনোনীত সরকারি ও বিরোধী দলের দুইজন সংসদ সদস্য। তবে সংসদ ভেঙে যাওয়া অবস্থায় সংসদ সদস্যদের ছাড়াই এই কমিটি গঠন করা যাবে।

দুদকের তদন্ত ও অভিযানের ক্ষমতাও উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করা হয়েছে। প্রথমবারের মতো এনফোর্সমেন্ট ও গোয়েন্দা কার্যক্রম পরিচালনার বিষয়টি সরাসরি আইনের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যা আগে কেবল বিধির ওপর নির্ভরশীল ছিল। এ ছাড়া মানিলন্ডারিং সংক্রান্ত অপরাধের অনুসন্ধানে দুদককে ব্যাপক ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। এখন থেকে কেবল ঘুষ ও দুর্নীতি নয়, বরং দলিল জালকরণ, প্রতারণা, মুদ্রা পাচার, চোরাচালান, শুল্ক ও কর সংক্রান্ত অপরাধ এমনকি পুঁজিবাজারে ইনসাইডার ট্রেডিং বা মূল্য সংবেদনশীল তথ্য ব্যবহার করে জালিয়াতির মতো অপরাধগুলোও দুদকের তদন্তের আওতায় আসবে।

উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের ৩ অক্টোবর টিআইবি-র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামানকে প্রধান করে গঠিত দুদক সংস্কার কমিশনের সুপারিশের ভিত্তিতে এই পরিবর্তনগুলো আনা হয়েছে। যদিও টিআইবি কিছু কৌশলগত সুপারিশ বাদ পড়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছিল, তবে সরকার মনে করছে এই নতুন অধ্যাদেশের মাধ্যমে দুদক আরও বেশি কার্যকর ও স্বাধীন প্রতিষ্ঠানে পরিণত হবে। বিশেষ করে আর্থিক অপরাধ ও অর্থ পাচার রোধে দুদকের এই বর্ধিত ক্ষমতা দুর্নীতি দমনে এক নতুন মাত্রা যোগ করবে।


টিএফআই সেলে গুম ও নির্যাতন: শেখ হাসিনাসহ ১৭ জনের আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

র‍্যাবের টাস্কফোর্স ফর ইন্টারোগেশন (টিএফআই) সেলে দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে চলা গুম ও ভয়াবহ নির্যাতনের ঘটনায় দায়ের করা মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আজ মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এই ঐতিহাসিক আদেশ প্রদান করেন। এর মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের বহুল আলোচিত গুম ও টিএফআই সেলে নির্যাতনের বিচারিক কার্যক্রম দাপ্তরিকভাবে শুরু হলো।

বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল আজ শুনানির শুরুতে আসামিপক্ষের আইনজীবীদের করা অব্যাহতির আবেদনগুলো খারিজ করে দেন। এরপর কারাগারে থাকা ১০ সাবেক ও বর্তমান সেনা কর্মকর্তাকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে তাঁদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো পড়ে শোনানো হয়। প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম টিএফআই সেলের অভ্যন্তরে সংঘটিত বীভৎসতার বিবরণ তুলে ধরে জানান, সেখানে গুম হওয়া ব্যক্তিদের ভাগ্য ছিল অনিশ্চিত; কাউকে বছরের পর বছর আটকে রেখে পরে কারাগারে পাঠানো হতো, আবার কাউকে দীর্ঘ সময় পর অজ্ঞাত কোনো স্থানে ফেলে আসা হতো।

এই মামলায় বর্তমানে কারাগারে থাকা ১০ আসামি হলেন— র‍্যাবের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তোফায়েল মোস্তফা সারোয়ার, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. কামরুল হাসান, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাহাবুব আলম, কর্নেল কেএম আজাদ, কর্নেল আবদুল্লাহ আল মোমেন, কর্নেল আনোয়ার লতিফ খান, কর্নেল মো. মশিউর রহমান, লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাইফুল ইসলাম সুমন এবং লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. সারওয়ার বিন কাশেম। তাঁদের আজ কড়া নিরাপত্তায় সেনানিবাসের বিশেষ কারাগার থেকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।

অন্যদিকে, মামলার প্রধান আসামি শেখ হাসিনাসহ সাতজন বর্তমানে পলাতক রয়েছেন। পলাতক অন্য আসামিদের মধ্যে রয়েছেন তাঁর সাবেক প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক আইজিপি বেনজির আহমেদ, র‍্যাবের সাবেক দুই মহাপরিচালক এম খুরশিদ হোসেন ও ব্যারিস্টার হারুন অর রশিদ এবং সাবেক পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) মো. খায়রুল ইসলাম। পলাতক এসব আসামিদের অনুপস্থিতিতেই বিচার কাজ চালানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে এবং তাঁদের জন্য রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী (স্টেট ডিফেন্স) নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য, গত ৮ অক্টোবর এই মামলায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করা হয়েছিল এবং ২২ অক্টোবর ১০ কর্মকর্তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়। আজ অভিযোগ গঠনের আদেশের পর ট্রাইব্যুনাল খুব শিগগিরই সাক্ষ্যগ্রহণের তারিখ নির্ধারণ করবেন। এই বিচার কাজকে কেন্দ্র করে ট্রাইব্যুনাল এলাকায় আজ নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হয়। দীর্ঘ প্রতীক্ষিত এই বিচার প্রক্রিয়া বাংলাদেশের মানবাধিকার রক্ষা এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে এক নতুন মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।


একনেকে ৪৬ হাজার কোটি টাকার ২২ প্রকল্প অনুমোদন

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় ৪৬ হাজার ৪১৯ কোটি টাকা ব্যয়ে মোট ২২টি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত এই সভায় সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের ১৪টি নতুন প্রকল্প ছাড়াও ৫টি সংশোধিত এবং ৩টি মেয়াদ বৃদ্ধিকৃত প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রকল্প বাস্তবায়নের মোট ব্যয়ের মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে যোগান দেওয়া হবে ৩০ হাজার ৪৮২ কোটি টাকা এবং অবশিষ্ট অর্থ প্রকল্প ঋণ ও সংস্থার নিজস্ব তহবিল থেকে আসবে।

সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের অধীনে তিনটি বড় প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে যার মধ্যে রয়েছে কর্ণফুলী টানেলের সংযোগ সড়ক উন্নয়ন এবং ঢাকা-সিলেট-তামাবিল মহাসড়ক চারলেনে উন্নীতকরণে ভূমি অধিগ্রহণ প্রকল্প। এছাড়াও দিনাজপুর সড়ক বিভাগাধীন হিলি-ঘোড়াঘাট জাতীয় মহাসড়ককে যথাযথ মানে উন্নীত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীনে নারায়ণগঞ্জের আলীগঞ্জে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য ৮টি ১৫ তলা ভবন নির্মাণের সংশোধিত প্রকল্পটিও সভায় অনুমোদন পেয়েছে।

স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ের পাঁচটি প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে ঢাকা ওয়াসা প্রশিক্ষণ একাডেমি স্থাপন, সিলেটের জলাবদ্ধতা নিরসন ও বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ এবং পটুয়াখালী জেলার গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন। জ্বালানি খাতের উন্নয়নে ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেডের (ইআরএল) আধুনিকীকরণ ও সম্প্রসারণের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীনে রাঙ্গামাটি জেলার কর্ণফুলী ও সংশ্লিষ্ট নদীসমূহের পানি ব্যবস্থাপনা এবং সুরমা-কুশিয়ারা নদী অববাহিকার উন্নয়ন সংক্রান্ত চারটি বড় প্রকল্পের সবুজ সংকেত দেওয়া হয়েছে।

প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে মোংলা ও সাভারে দুটি বড় উন্নয়ন প্রকল্প এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে নার্সিং শিক্ষা ও গবেষণার সক্ষমতা বৃদ্ধির প্রকল্প অনুমোদন পেয়েছে। শিক্ষা খাতে হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিইউপি-এর উন্নয়নে পৃথক প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে গাজীপুরের কোনাবাড়িতে দুস্থ শিশুদের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র পুনর্নির্মাণ এবং ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অধীনে দারুল আরকাম ইসলামী শিক্ষা পরিচালনার দ্বিতীয় পর্যায়ের প্রকল্পটিও চূড়ান্ত করা হয়েছে।

বৈঠকে পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনসহ সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টাবৃন্দ এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও পরিকল্পনা উপদেষ্টার নিজস্ব ক্ষমতাবলে অনুমোদিত ৫০ কোটি টাকার কম ব্যয় সম্বলিত ১০টি ছোট প্রকল্প সম্পর্কে সভায় অবহিত করা হয়, যার মধ্যে অর্থনৈতিক শুমারি ২০২৩ এবং র‍্যাবের আভিযানিক সক্ষমতা বৃদ্ধির মতো প্রকল্পগুলো রয়েছে। সামগ্রিকভাবে এই প্রকল্পগুলো দেশের অবকাঠামো, শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং গ্রামীণ অর্থনীতির উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।


তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তন: শাহজালাল বিমানবন্দরে ২৪ ঘণ্টা ভিজিটর প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যাত্রী ছাড়া সর্বসাধারণ ও সহযাত্রীদের প্রবেশের ওপর ২৪ ঘণ্টার নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আগামীকাল বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা ৬টা থেকে বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত এই বিধিনিষেধ কার্যকর থাকবে। বেবিচকের মুখপাত্র কাওছার মাহমুদ জানিয়েছেন, বিমানবন্দরের নিরাপত্তা, যাত্রীসেবা ও অপারেশনাল শৃঙ্খলা বজায় রাখার স্বার্থে বিশেষ নিরাপত্তাজনিত কারণে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

বেবিচক সূত্রে জানা গেছে, মূলত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের লন্ডন থেকে দেশে ফেরার মাহেন্দ্রক্ষণকে কেন্দ্র করেই এই কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে তাঁর বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিজি-২০২ ফ্লাইটটি ঢাকায় অবতরণ করার কথা রয়েছে। তারেক রহমানের এই আগমনকে সম্পূর্ণ নিরাপদ ও সুশৃঙ্খল রাখতে বিমানবন্দর এলাকায় সাধারণ মানুষের চলাচল সীমিত করা হয়েছে। ওই সময়ে বৈধ টিকিট ও পাসপোর্ট ছাড়া কাউকে বিমানবন্দর এলাকায় প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। তবে তারেক রহমানকে অভ্যর্থনা জানাতে নির্ধারিত একটি বিশেষ প্রতিনিধি দল বিমানবন্দরের ভেতরে থাকার অনুমতি পাবে।

এদিকে, তারেক রহমান লন্ডন থেকেই সংশ্লিষ্টদের প্রতি বিশেষ অনুরোধ জানিয়েছেন যেন তাঁর দেশে ফেরা উপলক্ষে সাধারণ বিমানযাত্রীরা কোনো ধরনের হয়রানি বা সমস্যার শিকার না হন। তাঁর নিরাপত্তার বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্ট ফ্লাইটের দায়িত্ব থেকে বিতর্কিত দুই কেবিন ক্রুকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। বিমানবন্দরের ভিআইপি ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স এবং বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা দফায় দফায় বৈঠক করেছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে যে, তারেক রহমান বিমানবন্দর ত্যাগ না করা পর্যন্ত পুরো এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি নিশ্ছিদ্র ও কঠোর নিরাপত্তা বলয় সক্রিয় থাকবে। মূলত যাত্রী সাধারণের স্বাচ্ছন্দ্য এবং ভিআইপি প্রটোকল বজায় রাখাই এই নিষেধাজ্ঞার মূল লক্ষ্য।


উৎসবমুখর নির্বাচনের পূর্ণ সক্ষমতা পুলিশের রয়েছে: আইজিপি

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

আসন্ন জাতীয় নির্বাচন ও গণভোটকে সামনে রেখে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম দৃঢ়তার সঙ্গে জানিয়েছেন যে, একটি সুষ্ঠু, সুন্দর ও উৎসবমুখর নির্বাচন উপহার দেওয়ার মতো পূর্ণ সক্ষমতা বাংলাদেশ পুলিশের রয়েছে। আজ মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে রিটার্নিং অফিসার ও মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আয়োজিত এক গুরুত্বপূর্ণ মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন। আইজিপি স্পষ্ট করে জানান, জুলাই-পরবর্তী অস্থিরতা ও প্রতিকূল পরিস্থিতি কাটিয়ে পুলিশ এখন আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সম্পূর্ণ প্রস্তুত এবং যেকোনো বিশৃঙ্খলা দমনে বাহিনী কঠোর প্রশাসনিক পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।

পুলিশ প্রধান বলেন, সম্প্রতি তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাস্তা বা মহাসড়ক অবরোধ করে জনদুর্ভোগ সৃষ্টির একটি প্রবণতা দেখা যাচ্ছে, যা কঠোরভাবে বন্ধ করার সময় এসেছে। তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেন, যদি সর্বত্র শৃঙ্খলা বা ‘অর্ডার’ প্রতিষ্ঠিত করা না যায়, তবে নির্বাচন কমিশনকে সর্বাত্মক সহায়তা দেওয়া কঠিন হয়ে পড়বে। তাই মহাসড়ক বা জনপদে অস্থিরতা সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেওয়ার ইঙ্গিত দেন তিনি। এছাড়া, তিনি নির্বাচন কমিশনের নেওয়া সময়োপযোগী পদক্ষেপগুলোর প্রশংসা করেন, বিশেষ করে ইলেক্টরাল ইনকোয়ারি কমিটিকে সংক্ষিপ্ত বিচারের (সামারি ট্রায়াল) মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে সাজার ক্ষমতা দেওয়া এবং ম্যাজিস্ট্রেটদের প্রয়োজনে যেকোনো বাহিনীর সহায়তা নেওয়ার সুযোগ দেওয়ার বিষয়টিকে তিনি অত্যন্ত কার্যকর বলে অভিহিত করেন।

মাঠ পর্যায়ের প্রশাসনিক পরিবর্তনের বিষয়ে আইজিপি নির্বাচন কমিশনের কাছে একটি সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যা চান। তিনি উল্লেখ করেন, এসপি বা তদূর্ধ্ব কর্মকর্তাদের বদলির ক্ষেত্রে কমিশনের সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা থাকলেও কনস্টেবল বা সাব-ইন্সপেক্টরের মতো সর্বনিম্ন পদের রদবদলের ক্ষেত্রেও কমিশনের পূর্বানুমতি প্রয়োজন কি না, সে বিষয়ে একটি স্পষ্ট নির্দেশিকা থাকা প্রয়োজন। পরিশেষে তিনি দেশবাসী ও নির্বাচন কমিশনকে আশ্বস্ত করে বলেন যে, পুলিশ তার সর্বশক্তি দিয়ে এবারের নির্বাচনকে সফল ও শান্তিপূর্ণ করতে বদ্ধপরিকর। প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সভায় অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।


banner close