ঢাকায় পৌঁছেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল। আজ শনিবার দেশটির রাজস্ব দপ্তরের ডেপুটি আন্ডার সেক্রেটারি ব্রেন্ট নেইম্যানের নেতৃত্বে দলটি ঢাকা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। তাদের স্বাগত জানান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আমেরিকা অনুবিভাগের মহাপরিচালক খন্দকার মাসুদুল আলম।
তবে দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু আজ বিকেলে দিল্লি হয়ে আলাদাভাবে ঢাকায় আসবেন। শনিবার প্রতিনিধিদলটি ঢাকায় এলেও মূলত বৈঠকগুলো হবে কাল থেকে। আগামীকাল রোববার অন্তর্বর্তী সরকার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন এবং অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবে প্রতিনিধি দলটি।
এদিন দুপুরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দলটির সদস্যরা পররাষ্ট্রসচিব এম জসীম উদ্দিনের সঙ্গে মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেবেন। বিকেলে প্রতিনিধিদলের নেতা যুক্তরাষ্ট্রের রাজস্ব দপ্তরের ডেপুটি আন্ডার সেক্রেটারি ব্রেন্ট নেইম্যান বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুরের সঙ্গে বৈঠক করবেন।
প্রতিনিধিদলে আরও রয়েছেন ইউএসএইডের এশিয়াবিষয়ক উপ-সহকারী প্রশাসক অঞ্জলি কৌর।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর জানিয়েছে, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারকে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, আর্থিক স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের চাহিদা মেটাতে যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে সহায়তা করতে পারে, তা নিয়ে আলোচনার জন্য ওয়াশিংটন থেকে একটি প্রতিনিধিদল ঢাকায় আসছে। ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের অংশীদারদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও স্থিতিশীলতার বিকাশে সহায়তা করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করবেন।
সূত্র জানায়, অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা নির্ধারণের জন্য আলোচনা করতে চায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এজন্যই মার্কিন প্রতিনিধি দল ঢাকায় এসেছে।
পররাষ্ট্র সচিব এম জসীম উদ্দিন জানিয়েছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদলের আসন্ন ঢাকা সফরে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের আলোচনা বহুমাত্রিক হবে।
ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়ার দুই মাস ২৭ দিন পর চালু হতে যাচ্ছে মেট্রোরেলের মিরপুর-১০ নম্বর স্টেশন। আজ মঙ্গলবার এই স্টেশনটি চালু হবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আবদুর রউফ। গতকাল সোমবার রাজধানীর উত্তরায় ডিএমটিসিএল কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান।
এর আগে গত ১২ অক্টোবর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিল, মিরপুর ১০ স্টেশনে চূড়ান্ত পরীক্ষার প্রতিটি ধাপ সফলভাবে শেষ হয়েছে। প্রস্তুত করা হয়েছে ক্ষতিগ্রস্ত টিকিট কাটার মেশিন, ইলেকট্রনিক সরঞ্জামসহ পুরো অবকাঠামো। সব কিছুই সন্তোষজনক।
ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আবদুর রউফ সেদিন জানিয়েছিলেন, ‘নিরাপত্তা নিশ্চিতে যে বিষয়গুলো দরকার তা দেখছি। বিষয়গুলো সচিব থেকে উপদেষ্টাকে জানানো হয়েছে। আশা করছি খুব শিগগির চালু করে দিতে পারব।’
এরপরে গত দুদিন সকালে এই স্টেশনে মেট্রোরেলের ট্রায়াল রান সম্পন্ন করে কর্তৃপক্ষ সন্তুষ্ট হওয়ার পর গতকাল সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, আজ মঙ্গলবার থেকে মিরপুর ১০ স্টেশন চালু করা হবে।
উল্লেখ্য, গত ১৮ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি চলাকালে রাজধানীর মিরপুরের ১০ নম্বর গোলচত্বরে থাকা পুলিশ বক্সে আগুন ধরিয়ে দেয় বিক্ষুব্ধ আন্দোলনকারীরা। আগুনের কালো ধোঁয়া মেট্রোরেল পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে । জননিরাপত্তার স্বার্থে ওইদিন বিকেল সাড়ে ৫টায় মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরদিন ১৯ জুলাই শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিনে মেট্রোরেল বন্ধ ছিল। ওই দিন বিকালে ভাঙচুরের শিকার হয় মেট্রোরেলের কাজীপাড়া ও মিরপুর ১০ নম্বর স্টেশন। এতে স্টেশন দুটির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয় এবং ব্যবহার বন্ধ রাখতে হয়।
এই দুটি মেট্রোরেল স্টেশন সংস্কারে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার এক বছর সময় লাগবে বললেও বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তিন মাসের মধ্যেই দুটি স্টেশন চালুর উদ্যোগ নেয়। এর মধ্যে গত ২০ সেপ্টেম্বর কাজীপাড়া স্টেশন চালু করা হয়েছে।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে দায়ের করা সব মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম।
সুপ্রিম কোর্টে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে আজ সোমবার এ দাবি জানায় সংগঠনটির সদস্যরা। সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনের সভাপতি সিনিয়র অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন।
তিনি বলেন, ‘অবিলম্বে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে দায়ের করা সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করার দাবি জানাচ্ছি। অন্যথায় আইনজীবী সমাজ আবারও রাস্তায় নামতে বাধ্য হবে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং ছাত্র-জনতা দীর্ঘ ১৭ বছর গণতন্ত্রের জন্য ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে এই সংগ্রামে বিরামহীনভাবে নেতৃত্ব দিয়েছে বিএনপি এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন বলেন, তার বিরুদ্ধে দায়ের করা সব মামলাই রাজনৈতিক। ফ্যাসিস্ট রেজিমের প্রধান পলাতক শেখ হাসিনার নির্দেশে কয়েকটি মিথ্যা মামলার ফরমায়েশি রায়ও ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের সঙ্গে আমরা লক্ষ্য করছি, তারেক রহমানের বিরুদ্ধে দায়ের করা এসব রাজনৈতিক মামলার ব্যাপারে যথাযথ কর্তৃপক্ষ এখন পর্যন্ত কোনো ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছে না। আমরা অবিলম্বে তার বিরুদ্ধে দায়ের করা সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি।
জয়নুল আবেদীন হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘তারেক রহমানের বিরুদ্ধে দায়ের করা সব মামলা প্রত্যাহার না করলে আইনজীবী সমাজ আবারও রাস্তায় নামতে বাধ্য হবে। একইসঙ্গে জুলাই গণহত্যার আসামি পলাতক শেখ হাসিনাসহ অন্যদের দেশে ফেরত এনে বিচারে মুখোমুখি করতে হবে। পাশাপাশি আমাদের দাবি বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অতি দ্রুততার সঙ্গে প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পন্ন করে দেশে গণতন্ত্র প্রত্যাবর্তন তথা নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা করবেন।’
সংবাদ সম্মেলনে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের মহাসচিব ব্যারিস্টার কায়সার কামাল সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘উচ্চ আদালতের অনেক বিচারক কোড অব কন্ডাক্ট ভঙ্গ করেছেন। শপথ ভঙ্গকারী দলবাজ ওই বিচারপতিদের অপসারণের দাবি অব্যাহত রয়েছে।’ সুপ্রিম কোর্ট বার সভাপতি এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, ‘দলবাজ বিচারপতিদের অপসারণে বিএনপি দাবি জানিয়েছে। আমরাও এ দাবির সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করেছি।’
সংবাদ সম্মেলনে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব ও বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের এনরোলমেন্ট কমিটির সদস্য সিনিয়র অ্যাডভোকেট ব্যারিস্টার মো. রুহুল কুদ্দুস কাজল, অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আলীসহ সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশে তুরস্ককে বিনিয়োগ বাড়ানোর আহ্বান জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ‘ঢাকা এখন ব্যবসার জন্য প্রস্তুত এবং উভয় দেশকে (বাংলাদেশ-তুরস্ক) তাদের সম্পর্কের পূর্ণ সম্ভাবনা কাজে লাগানো উচিত।’
রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে আজ সোমবার তুরস্কের রাষ্ট্রদূত রামিস সেন প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে এলে এ আহ্বান জানান ড. ইউনূস।বৈঠকে তিনি অর্থনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নে উভয় দেশকে আরও জোরালো প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার ওপর গুরুত্ব দেন।
বৈঠকে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দুই দেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য, অর্থনৈতিক ও প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়ানোর উপায়, রোহিঙ্গা সংকট নিরসন এবং শিক্ষার্থী বিনিময় বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা করা হয়।
বাংলাদেশের সাম্প্রতিক বন্যায় তুরস্কের মানবিক সহায়তা এবং রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রতি অব্যাহত সহায়তা প্রদানের জন্য তুরস্কের প্রশংসা করেন প্রধান উপদেষ্টা এবং দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক বাড়ানোর লক্ষ্যে তুরস্কের একটি অফিসিয়াল প্রতিনিধিদলের সফরের কথা উল্লেখ করেন।
প্রধান উপদেষ্টা তুরস্কের প্রেসিডেন্ট ও ফার্স্ট লেডিকে সুবিধাজনক সময়ে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান। তুর্কি রাষ্ট্রদূত গত বছর তুরস্কে ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতি সংহতি জানিয়ে দশ হাজার তাঁবু পাঠানোর জন্য বাংলাদেশের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
তিনি বলেন, ‘আসন্ন ওয়ার্ল্ড হালাল সামিট এবং ইস্তাম্বুলে মন্ত্রী পর্যায়ের একটি সম্মেলনে যোগদানের জন্য তুরস্ক বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে।
রাষ্ট্রদূত আরও জানান, তুরস্কের একটি অফিসিয়াল প্রতিনিধিদল বর্তমানে বাংলাদেশ সফর করছে, যারা মূলত নতুন ব্যবসা ও বাণিজ্যিক সুযোগ খুঁজে বের করতে এবং অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার উদ্যোগে সহায়তা করার চেষ্টা করছে। তিনি বলেন, ‘আমরা অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও নিবিড় করতে চাই।’
রাষ্ট্রদূত আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব এলাকায় সাম্প্রতিক বন্যার সময় তুরস্কের আরেকটি দল দেশটি সফর করেছে। তারা ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর ও কুমিল্লায় বন্যার্তদের জন্য মানবিক সহায়তা প্রদান করেছে।’
তিনি জানান, দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বর্তমানে ১.১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে, তবে উভয় দেশ থেকে রপ্তানি বাড়ানোর অনেক সুযোগ এখনও রয়ে গেছে। রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘তুরস্কের ব্যবসায়ী ও কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানোর জন্য বাংলাদেশের একটি উচ্চ পর্যায়ের ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদল দেশটি সফর করার প্রয়োজন রয়েছে।’
তিনি জানান, তুরস্কের বাণিজ্যমন্ত্রী এই বছরের ডিসেম্বর মাসে বাংলাদেশ সফর করবেন।
২০৩০ সালের মধ্যে ‘টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট’ অর্জনে এবং সুষ্ঠু স্যানিটেশন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও উন্নয়ন সহযোগীসংস্থাসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে সক্রিয় ভূমিকা পালনের আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন।
আগামীকাল ১৫ অক্টোবর ‘বিশ্ব হাত ধোয়া দিবস-২০২৪’ উপলক্ষ্যে আজ সোমবার দেওয়া এক বাণীতে তিনি একথা বলেন।
রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জনে সরকার দেশব্যাপী বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করছে। এই অভীষ্ট অর্জনে সুষ্ঠু স্যানিটেশন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে।’
তিনি বলেন, স্বাস্থ্যসম্মত ও টেকসই স্যানিটেশন ব্যবস্থা এবং ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা জনস্বাস্থ্য উন্নয়নের পূর্বশর্ত। ডায়রিয়া ও পানিবাহিত নানা রোগ থেকে রক্ষা পেতে স্যানিটেশন ব্যবস্থা ও সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার অভ্যাস গড়ে তোলার বিকল্প নেই। খাওয়ার আগে ও পরে, টয়লেট ব্যবহারের পর এবং অন্যান্য সময়ে শিশুদের হাত ধোয়ার অভ্যাস গড়তে পরিবার ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের দায়িত্ব অত্যধিক।
রাষ্ট্রপ্রধান বলেন, সকলের জন্য স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশন নিশ্চিত করতে উন্নত স্যানিটারি ল্যাট্রিন নির্মাণ, সকল শ্রেণির মানুষের ব্যবহার উপযোগী পাবলিক ও কমিউনিটি টয়লেট স্থাপনসহ কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে পরিচ্ছন্নতা ও স্বাস্থ্য সুরক্ষার অভ্যাস গড়তে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে ওয়াশ ব্লক ও হাত ধোয়ার বেসিন নির্মাণ করা হচ্ছে। দেশে বর্তমানে বেসিক স্যানিটেশন কাভারেজপ্রাপ্ত বিদ্যালয়ের হার ৮৭ শতাংশ এবং পানি ও সাবানের মাধ্যমে হাইজিন সুবিধাপ্রাপ্ত বিদ্যালয়ের হার ৯২ শতাংশ। এই হার শতভাগে উন্নীতকরণের পাশাপাশি স্যানিটেশন বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
তিনি বলেন, স্যানিটেশন একটি চলমান প্রক্রিয়া যা মানুষের অভ্যাস ও আচরণ পরিবর্তনের মাধ্যমে অর্জন ও বজায় রাখা সম্ভব। স্যানিটেশন ও হাত ধোয়া কর্মসূচির সফল বাস্তবায়নে স্কুলকলেজের শিক্ষার্থীসহ সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।
তিনি স্থানীয় সরকার, পল্লি উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে স্যানিটেশন ও হাইজিন তথা স্বাস্থ্যবিধি বিষয়ে জনসচেতনতা গড়ে তোলার লক্ষ্যে প্রতি বছরের মত এবারও ‘বিশ্ব হাত ধোয়া দিবস’ পালনের উদ্যোগকে স্বাগত জানান। রাষ্ট্রপতি ‘বিশ্ব হাত ধোয়া দিবস-২০২৪’ উপলক্ষ্যে গৃহীত সকল কর্মসূচির সফলতা কামনা করে আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে আগামী দিনে টেকসই স্যানিটেশন ব্যবস্থাপনা, পরিচ্ছন্নতা ও সঠিক স্বাস্থ্যবিধি অনুশীলনে বাংলাদেশ আরও এগিয়ে যাবে।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান নির্মাতাদের টেকসই ইলেকট্রনিক পণ্য উৎপাদনের মাধ্যমে দায়িত্বশীল উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি শুধুমাত্র সাময়িক ট্রেনডিং-এর কারণে ইলেকট্রনিক পণ্য কম সময়ের মধ্যে বাতিল না করার জন্য ভোক্তাদের প্রতি অনুরোধ করেছেন।
আজ সোমবার আন্তর্জাতিক ই-বর্জ্য দিবস উপলক্ষে ঢাকার হোটেল ওয়েস্টিনে আয়োজিত ‘ফরমাল ই-ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট’ শীর্ষক সেমিনারে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে পরিবেশ উপদেষ্টা এ সব কথা বলেন।
সেমিনারে রিজওয়ানা হাসান সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে ই-ওয়েস্ট ব্যবস্থাপনা বিধিমালা বাস্তবায়নে মন্ত্রণালয়কে সহায়তা এবং পরামর্শ প্রদান করার আহ্বান জানান। উপদেষ্টা জানান, সরকার ই-ওয়েস্ট বিধিমালা-২০২১ বাস্তবায়ন করবে, যা ইলেকট্রনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
তিনি বলেন, ইলেকট্রনিক বর্জ্য কমানোর ওপর জোর দেয়া হচ্ছে এবং রিসাইক্লিং শিল্পকে নিয়মিত ও উৎসাহিত করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। দেশব্যাপী একটি ব্যাপক ই-ওয়েস্ট ব্যবস্থাপনা ব্যবস্থা গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, সরকার, বেসরকারি খাত ও সাধারণ নাগরিকদের একত্রিত হয়ে এ বিষয়ে কাজ করা উচিত। তিনি সতর্ক করেন যে, অনানুষ্ঠানিকভাবে ক্ষতিকর বর্জ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি সৃষ্টি করতে পারে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- বিটিআরসি’র চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) মো. এমদাদ উল বারী। এছাড়াও ডব্লিউইইই সোসাইটি-বাংলাদেশের চেয়ারম্যান সুমন আহমেদ সাবির বক্তব্য রাখেন। বুয়েটের রাসায়নিক প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. শাহিনুর ইসলাম মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
সেমিনারে নীতিনির্ধারক, পরিবেশ বিশেষজ্ঞ এবং শিল্প নেতৃবৃন্দ ই-ওয়েস্ট ব্যবস্থাপনার চ্যালেঞ্জ এবং সম্ভাব্য সমাধান নিয়ে আলোচনা করেন। বক্তারা অনানুষ্ঠানিক রিসাইক্লিং প্রক্রিয়া, যেমন উন্মুক্ত স্থানে পোড়ানোর মাধ্যমে বর্জ্য প্রক্রিয়াজাতকরণের কারণে সৃষ্ট দূষণ ও স্বাস্থ্য ঝুঁকি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
গত ১৫ জুলাই থেকে ৮ আগস্ট পর্যন্ত ‘জুলাই গণ–অভ্যুত্থান’ সংশ্লিষ্ট ঘটনার জন্য কোনো মামলা, গ্রেপ্তার বা হয়রানি করা হবে না বলে জানিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
আজ সোমবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়, গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে স্বৈরাচারী ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের মাধ্যমে বৈষম্যমুক্ত নতুন বাংলাদেশ গড়ার পথে এক নবযাত্রা সূচিত হয়েছে।
এই গণ–অভ্যুত্থানকে সাফল্যমণ্ডিত করতে ছাত্র-জনতা সক্রিয়ভাবে আন্দোলনের মাঠে থেকে কাজ করেছেন। তাঁদের বিরুদ্ধে ১৫ জুলাই থেকে ৮ আগস্ট পর্যন্ত সংঘটিত জুলাই গণ–অভ্যুত্থানসংশ্লিষ্ট ঘটনার জন্য কোনো মামলা, গ্রেপ্তার বা হয়রানি করা হবে না।
মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আরও জানানো হয়, এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে নির্দেশনা দেওয়া হলো। এ বিষয়ে অসত্য তথ্য দিয়ে কোনো সুবিধা আদায়ের বিরুদ্ধেও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সতর্ক করেছে মন্ত্রণালয়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে বাড্ডা থানা এলাকায় স্বেচ্ছাসেবক দলনেতা আলামিন হত্যার অভিযোগে করা মামলায় সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের দুদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। কারাগার থেকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আজ সোমবার তাকে হাজির করা হয়।
এরপর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা তাকে গ্রেপ্তার দেখানোসহ সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন। আসামিপক্ষের আইনজীবী রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিনের আবেদন করেন। রাষ্ট্রপক্ষ জামিনের বিরোধিতা করেন। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ নুরুল হুদা চৌধুরী তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
গত ১৩ আগস্ট গোপন তথ্যের ভিত্তিতে নৌপথে পলায়নরত অবস্থায় রাজধানীর সদরঘাট এলাকা থেকে আইনমন্ত্রী আনিসুল হককে গ্রেপ্তার করা হয়। নিউমার্কেট এলাকায় দোকান কর্মচারী শাহজাহান আলীকে (২৪) হত্যার অভিযোগে করা মামলায় পরের দিন ১৪ আগস্ট তার ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মামুনুর রশীদ।
মামলার সূত্রে জানা গেছে গত ৫ আগস্ট রাজধানীর বাড্ডা থানা এলাকায় ছাত্র-জনতার মিছিলে গুলি চালায় পুলিশ। এ সময় স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা আলামিন গুরুতর আহত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এ ঘটনায় রাজধানীর বাড্ডা থানায় আলামিনের মা মনিহার বেগম একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আজ সারা দেশের আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। আবহাওয়ার ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে আজ সোমবার একথা বলা হয়েছে।
এ ছাড়া দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। আবহাওয়ার সিনপটিক অবস্থায় বলা হয়েছে, দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশ থেকে বিদায় নিয়েছে। এ ছাড়া দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগর এবং তৎসংলগ্ন এলাকায় একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়েছে।
গতকাল রোববার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল খুলনার মংলায় ৩৫ দশমিক ২ ডিগ্রি এবং সর্বনিম্ন রংপুরের ডিমলায় ২৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আজ ঢাকায় বাতাসের গতিবেগ উত্তর ও উত্তরপূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় ০৮-১২ কি. মি.।
সকাল ৬টায় ঢাকায় বাতাসের আপেক্ষিক আর্দ্রতা ছিল ৯৭ শতাংশ। ঢাকায় আজ সূর্যাস্ত সন্ধ্যা ৫টা ৩৩ মিনিটে এবং আগামীকাল ঢাকায় সূর্যোদয় ভোর ৫টা ৫৬ মিনিটে।
বাংলাদেশে আরও বেশি সংখ্যক নারীর কাজের সুযোগ হলে পণ্য, সেবা ও কৃষি খাতে উৎপাদন ২৯ শতাংশ পর্যন্ত বাড়াতে পারে বলে ধারণা করছে বিশ্বব্যাংক। সংস্থাটির মতে, বাংলাদেশে শ্রমিকদের উৎপাদনশীলতা বেশি হওয়ায় দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে এই দেশে প্রবৃদ্ধি সবচেয়ে বেশি হবে। গত সপ্তাহে প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া উন্নয়ন হালনাগাদ তথ্যে বলা হয়েছে, যদি শুধু উৎপাদন খাতে আরও বেশি সংখ্যক নারী কাজ পান, তাহলে বাংলাদেশে উৎপাদন ২১ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে।
বাংলাদেশে পোশাক শিল্পে অগ্রগতি সত্ত্বেও বৃহত্তর উৎপাদন খাতে নারী-পুরুষের ব্যবধান অনেক বেশি বলে প্রতিবেদনটিতে উল্লেখ করা হয়েছে। এতে আরও বলা হয়, ২০২২ ও ২০২৩ সালে বাংলাদেশে শ্রমবাজারে নারীর অংশগ্রহণের হার ৩৭ শতাংশেই স্থির হয়ে আছে। সরবরাহের সীমাবদ্ধতা, নিয়ন্ত্রণমূলক আইন ও রক্ষণশীল সামাজিক রীতিনীতিকে আরও বেশি নারীর কাজে যোগ দেওয়ার পেছনে বাধা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
অর্থনীতিবিদরা বিশ্বব্যাংকের এই প্রক্ষেপণের সঙ্গে একমত পোষণ করে বলেছেন, দেশের পোশাক শিল্পে মূল শক্তি নারী। তবে, তারা আরও কিছু কারণকে চিহ্নিত করেছেন যা বেশি সংখ্যক নারীকে কাজে যোগ দিতে নিরুৎসাহিত করে। সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক সেলিম রায়হান বলেন, ‘নিয়োগকর্তারা প্রায়ই নারীদের কাজে নিতে দ্বিধায় থাকেন। অনেক প্রতিষ্ঠানে এখনো নারীবান্ধব কর্মপরিবেশ নেই।’
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশে যদি আরও বেশি সংখ্যক নারী কৃষি খাতে যোগ দেন, তবে শ্রম উৎপাদনশীলতা বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি কর্মস্থলে লিঙ্গ বৈষম্য কমবে। লিঙ্গ বৈষম্য দূর করতে পারলে সেবা খাতে লাভের সম্ভাবনা ৮ দশমিক ১২ শতাংশ।
সেলিম রায়হান বলেন, ‘শিশু ও বয়স্কদের যত্ন নেওয়ার কাজটি অসামঞ্জস্যপূর্ণভাবে নারীদের দেওয়া হয়। এটি কর্মসংস্থানের সুযোগকে সীমাবদ্ধ করে। কর্মসংস্থানে নারীর অংশগ্রহণ বাড়াতে হলে সব ধরনের প্রতিবন্ধকতা দূর করতে হবে।’
‘সুরক্ষার বিষয়গুলো কর্মক্ষেত্রে নারীর কম অংশগ্রহণের কারণ,’ উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘পরিবহন ব্যবস্থাও গুরুত্বপূর্ণ। সরকারের উচিত এসব বিষয় খেয়াল রাখা।’ বিশ্বব্যাংক বলেছে, বাংলাদেশে নারী সুরক্ষা আইন দুর্বল। ফলে নিরাপত্তার ক্ষেত্রে মারাত্মক ঘাটতি দেখা দেয়। বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের সমাজ নারীদের প্রতি সবচেয়ে রক্ষণশীল। প্রতিবেদন অনুসারে, উদীয়মান ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ার বেশিরভাগ দেশে শ্রমশক্তিতে নারীর অংশগ্রহণের হার সবচেয়ে নিচের দিকে। পুরুষের হারের তুলনায় অনেক কম।
বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়ার প্রধান অর্থনীতিবিদ ফ্রান্সিসকা ওনসোর্গ বলেন, ‘উদীয়মান বাজার ও উন্নয়নশীল অর্থনীতির দেশগুলোর গড় ৫৪ শতাংশের তুলনায় দক্ষিণ এশিয়ায় শ্রমশক্তিতে নারীর অংশগ্রহণের হার ৩২ শতাংশের অনেক কম।’ তবে দক্ষিণ এশিয়াজুড়ে রপ্তানি খাতের সঙ্গে এর বৈপরীত্য আছে। যেমন, বাংলাদেশে তৈরি পোশাক, ভারতে কল সেন্টার ও শ্রীলঙ্কায় টেক্সটাইল শিল্পে নারীর অংশগ্রহণ বেশি। বিশ্বব্যাংক বলেছে, শ্রমশক্তিতে নারীর অংশগ্রহণ বাড়ালে ভারতের উৎপাদন ২৩ শতাংশ, পাকিস্তানের ২১ শতাংশ, নেপালের ২২ শতাংশ ও শ্রীলঙ্কার ২৮ শতাংশ বাড়বে। বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের প্রধান অর্থনীতিবিদ ফ্রানজিস্কা ওনসোর্গ বলেন, ‘নারীর কর্মসংস্থান বাড়াতে সব পক্ষের উদ্যোগ প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে সরকার, বেসরকারি খাত, সমাজ ও পরিবারের ভূমিকা আছে।’
প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে রোববার শেষ হয়েছে হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। সকালে দর্পণ-বিসর্জনের মাধ্যমে বিদায় জানানো হয় দেবী দুর্গাকে। পরে বিকেল ৪টা থেকে শুরু হয় প্রতিমা বিসর্জন।
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, মানুষের মনের আসুরিক প্রবৃত্তি, কাম, ক্রোধ, হিংসা, লালসা বিসর্জন দেওয়াই মূলত বিজয়া দশমীর মূল তাৎপর্য। এ প্রবৃত্তিগুলোকে বিসর্জন দিয়ে একে অন্যের সঙ্গে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠা করাই এ আয়োজনের উদ্দেশ্য।
চণ্ডীপাঠ, বোধন ও অধিবাসের মধ্য দিয়ে ষষ্ঠী তিথিতে ‘আনন্দময়ীর’ আগমনে গত ৯ অক্টোবর থেকে দেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসবের সূচনা হয়। পরবর্তী ৫ দিন রাজধানীসহ দেশব্যাপী পূজামণ্ডপগুলোতে পূজা-অর্চনার মধ্য দিয়ে ভক্তরা দেবী দুর্গার প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করেন। দশমী তিথিতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে উৎসবের শেষ হয়।
এ বছর দেবী দুর্গার আগমন হয় দোলায় বা পালকিতে। দেবীর এই আগমনের ফলাফল হবে মড়ক। যা শুভ ইঙ্গিত নয়। এ ছাড়াও দেবী স্বর্গে গমন করবেন ঘোটকে বা ঘোড়ায়। শাস্ত্রমতে দেবীর গমন বা আগমন ঘোটকে হলে ফলাফল ছত্রভঙ্গ হয়। শাস্ত্রমতে এই ঘোটকে গমনের ফলে সামাজিক ও রাজনৈতিক বিশৃঙ্খল অবস্থাকে ইঙ্গিত করে। এটি যুদ্ধ, বিগ্রহ, আশান্তি, বিপ্লবের ইঙ্গিত দিয়ে থাকে।
সনাতন ধর্মের বিশ্বাস অনুযায়ী, বিসর্জনের মধ্য দিয়ে দেবী ফিরে গেলেন স্বর্গলোকের কৈলাসে স্বামীর ঘরে। পরের বছর শরতে আবার তিনি আসবেন এই ধরণীতে, যা তার বাবার গৃহ। প্রতিমা বিসর্জনের জন্য সব ধরনের নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
বিদায়ের করুণ ছোঁয়ায় সারিবদ্ধভাবে একে একে বুড়িগঙ্গা নদীতে বিসর্জন দেওয়া হয় প্রতিমা।
একই সময় রাজধানীর উপকণ্ঠে তুরাগ নদীতে চলে বিসর্জন। সড়কে পুলিশের টহল ও নদীতে ছিল নৌপুলিশের টহল। ফায়ার সার্ভিসের টিমও দায়িত্ব পালন করে।
এদিকে দুপুরে পূজা উদযাপন পরিষদ এবং মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটির যৌথ উদ্যোগে বের হয় বর্ণাঢ্য বিজয়া শোভাযাত্রা। বিজয়া শোভাযাত্রা ও প্রতিমা বিসর্জনে অংশ নিতে দুপুর গড়াতেই ভক্তরা রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার পূজামণ্ডপ থেকে ট্রাকে করে প্রতিমা নিয়ে সমবেত হতে শুরু করেন পলাশীর মোড়ে।
পরে শত শত ট্রাক প্রতিমা নিয়ে সদরঘাটের উদ্দেশে রওনা দেয়। ঢাকেশ্বরী থেকে শুরু করে বিজয়া শোভা যাত্রাটি শহীদ মিনার, হাইকোর্ট, পুলিশ হেড কোয়ার্টার, গোলাপ শাহ মাজার, কোর্ট এলাকা হয়ে সদরঘাট পৌঁছে। রাস্তায়, বিভিন্ন ভবনে পুলিশ ছিল সতর্কাবস্থায়। রাস্তার পাশে দর্শনার্থীদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো।
অধিকাংশ মণ্ডপের প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হলেও ঢাকেশ্বরী মন্দিরের প্রতিমাটি রেখে দেওয়া হয়। কিন্তু পূজার কাজে ব্যবহৃত দেবীর ফুল, বেলপাতা ও ঘট বিসর্জন দেওয়া হয়।
প্রথা অনুযায়ী প্রতিমা বিসর্জনের পর সেখান থেকে জল এনে (শান্তিজল) মঙ্গলঘটে নিয়ে তা আবার হৃদয়ে ধারণ করা হয়। আগামী বছর আবার এ শান্তিজল হৃদয় থেকে ঘটে, ঘট থেকে প্রতিমায় রেখে পূজা করা হবে। রামকৃষ্ণ মিশনে সন্ধ্যা আরতির পর মিশনের পুকুরে প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়। এরপর ভক্তরা শান্তিজল গ্রহণ করেন ও মিষ্টিমুখ করেন।
সারা দেশে এ বছর ৩১ হাজার ৪৬১টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়। ঢাকা মহানগরে পূজার সংখ্যা ২৫২ টি। এসব মণ্ডপে শারদীয় উৎসব নির্বিঘ্নে উদযাপন করার জন্য প্রশাসনের পাশাপাশি প্রতিটি পূজা উদযাপন কমিটিও নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করে। প্রতিটি মণ্ডপে মণ্ডপে লাগানো হয় সিসিটিভি ক্যামেরা এবং স্বেচ্ছাসেবক দলের কমিটি করা হয় মণ্ডপ পাহারার জন্য।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। রোববার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)।
আইএসপিআর জানায়, গতকাল অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। সাক্ষাৎকালে সেনাবাহিনী প্রধান কুশলাদি বিনিময়ের পাশাপাশি সেনাবাহিনীর চলমান কার্যক্রম সম্পর্কে প্রধান উপদেষ্টাকে অবহিত করেন।
এ সময় প্রধান উপদেষ্টা সেনাবাহিনী প্রধানকে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেন।
সাংবাদিকদের মধ্যে যারা সরাসরি ফ্যাসিস্ট সরকারের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল, উস্কানিদাতা ছিল এবং গণহত্যার সমর্থন করেছে তাদের বিচারের আওতায় আনা হবে বলে জানিয়েছেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম।
রোববার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আন্দোলনে আহতদের অনুদানের চেক হস্তান্তরের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান।
এ সময় নাহিদ ইসলাম বলেন, 'শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন থেকে আন্দোলনে আহত-নিহতদের আর্থিক অনুদান দেওয়া হচ্ছে।'
আহতদের বিদেশে চিকিৎসার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'সংশ্লিষ্ট ডাক্তারদের পরামর্শ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'
নাহিদ ইসলাম বলেন, 'ঢাকা মেডিকেলে আসার আগে অনেকে বিভিন্ন জায়গায় চিকিৎসা নিয়েছেন, তাদের সেই খরচ আমরা দিয়ে দেবো।'
সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নাহিদ বলেন, 'যারা সরাসরি ফ্যাসিস্ট সরকারের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল, উস্কানিদাতা ছিল এবং গণহত্যার সমর্থন করেছে তাদের বিচারের আওতায় আনা হবে। এর বাইরে অন্যায়ভাবে কারও বিরুদ্ধে কোনো মামলা করা হলে, তা খতিয়ে দেখতে তথ্য মন্ত্রণালয়ে কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়েছে।'
তিনি আরও বলেন, ‘যদি কোনো সাংবাদিক বা তার পরিবার মনে করে যে মামলার মাধ্যমে ভোগান্তির শিকার হচ্ছে, তাহলে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে আমরা তাদের সহযোগিতা করব।'
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা আন্দোলনে ১৭৬ জন হতাহতকে মোট ১ কোটি ৭১ লাখ ৪২ হাজার টাকা সহায়তা করেছে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন। রোববার দুপুরে আহতদের দেখতে ও আর্থিক সহায়তা দিতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে যান তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম, ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ ও ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ। ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালের পুরাতন বার্ন ইউনিটে ভর্তি থাকা মোট ৩০ জনকে ৩০ লাখ টাকার অনুদান দেওয়া হয়েছে। প্রতি জনকে চেকের মাধ্যমে এক লাখ টাকা করে দেওয়া হয়েছে। জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে তাদের আর্থিক সহযোগিতা করা হয়। এ পর্যন্ত ১ কোটি ৭১ লাখ ৪২ হাজারের বেশি টাকা সহযোগিতা করা হয়েছে।
রোববার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি থাকা আহতদের আর্থিক অনুদান দিতে দুই উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ ও নাহিদ ইসলাম উপস্থিত হন। হাসপাতালে ভর্তি থাকা প্রতি রোগীর চিকিৎসার খোঁজখবর নেন এবং তাদের হাতে ১ লাখ টাকার চেক তুলে দেন। পরে হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় দুই উপদেষ্টার মাঝে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র জনতা আন্দোলনে শহীদ মুগ্ধর ভাই মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ সাংবাদিকদের বলেন, প্রতি শহিদ পরিবারকে ৫ লাখ টাকা ও সব আহত ব্যক্তিদের একলাখ টাকা করে দেওয়া হয়েছে। এটি শেষ নয়, এ সাহায্য চলমান থাকবে বিভিন্নভাবে।
আমরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৩০ জনকে ৩০ লাখ টাকার চেক দেওয়া হয়েছে। এছাড়া জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট সর্বমোট ৩৩ জনকে ৩৩ লাখ টাকার বেশি ও এবং পঙ্গু হাসপাতালে আহত ৫৯ জনের জন্য ৫৯ লাখ ৪১ হাজার টাকার বেশি। এ টাকাটা তাদের বিকাশের মাধ্যমে চলে যাবে। এ পর্যন্ত আমরা আমাদের ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে আহত ও শহিদ পরিবারকে ১ কোটি ৭১ লাখ ৪২ হাজার ৫০ টাকা প্রদান করা হয়েছে। এ পর্যন্ত ১৭৬ জন পরিবারকে এ আর্থিক সহযোগিতা করা হয়েছে যেটা চলমান থাকবে বলে জানান স্নিগ্ধ। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান এ সময় উপস্থিত ছিলেন।