সম্পাদক পরিষদ বলেছে, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ঢালাও হত্যা মামলা অন্তর্বর্তী সরকারের স্বাধীন সাংবাদিকতার প্রতিশ্রুতির লঙ্ঘন। শনিবার সম্পাদক পরিষদের সভাপতি মাহফুজ আনাম ও সাধারণ সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদের সই করা এক বিবৃতিতে এ কথা বলা হয়।
এতে বলা হয়, ঢালাও অভিযোগের ভিত্তিতে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলার ঘটনা এখনো অব্যাহত রয়েছে। এ ধরনের মামলা প্রচলিত আইনের অপব্যবহারের শামিল। একই সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের স্বাধীন সাংবাদিকতার প্রতিশ্রুতিরও লঙ্ঘন।
বিবৃতিতে বলা হয়, সাংবাদিকরা কোনো অপরাধ করে থাকলে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে যথাযথ ধারা অনুসরণ করে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। সম্পাদক পরিষদ আরও জোর দিয়ে বলতে চায়, পেশাদারিত্ব বাদ দিয়ে নীতিবিবর্জিত ও লেজুড়বৃত্তির সাংবাদিকতা বর্জনীয়। যেসব সাংবাদিক বিগত সরকারের নানা নিপীড়নমূলক কর্মকাণ্ডে সাংবাদিকতার নামে সমর্থন দিয়েছেন, প্রেস কাউন্সিলে একটি কমিটি গঠন করে তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত ও অনুসন্ধান হতে পারে। সেখানে দোষী সাব্যস্ত হলে প্রেস কাউন্সিল আইনে তাদের সাজা হতে পারে। তাদের অন্যান্য অপরাধের ক্ষেত্রে প্রেস কাউন্সিলের সুপারিশের ভিত্তিতে প্রচলিত আইনে তাদের বিচার চলতে পারে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, বিগত সরকারের সময়ে ডিএসএ/সিএসএসহ নিবর্তনমূলক বিভিন্ন আইন ও হয়রানিমূলক আটক-গ্রেপ্তারের মাধ্যমে সাংবাদিকদের কণ্ঠরোধের যে প্রয়াস চালানো হয়েছিল, তা বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে অত্যন্ত নিন্দিত ও সমালোচিত হয়েছিল। আর বর্তমানে সাংবাদিকদের নামে এভাবে ক্রমাগত হত্যা মামলা দেওয়ার প্রবণতাও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অন্তর্বর্তী সরকারের ভাবমূর্তিকে ক্ষুণ্ন করছে।
এ অবস্থায় যথাযথভাবে যাচাই-বাছাই করে অভিযুক্ত সাংবাদিকদের কোনো সংশ্লিষ্টতা না পাওয়া গেলে এসব মামলা থেকে দ্রুত তাদের অব্যাহতি দেওয়ার জন্য বিবৃতিতে আহ্বান জানিয়েছে সম্পাদক পরিষদ।
বাসে আগুন দিয়ে পালানোর সময় জনতার ধাওয়া খেয়ে তুরাগ নদে ঝাঁপ দিয়ে মারা যাওয়া তরুণকে পাঁচ হাজার টাকার প্রলোভন দেখানো হয়েছিল বলে জানিয়েছে পুলিশ। গত বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে চিড়িয়াখানা এলাকায় বেড়িবাঁধ সড়কে থেমে থাকা একটি বাসে আগুন দিয়ে পালানোর সময় এই ঘটনা ঘটে।
মারা যাওয়া তরুণের নাম আব্দুল্লাহ আল সায়াদ (১৮)। তিনি কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। এই ঘটনায় তার সঙ্গে থাকা বন্ধু ‘ও’ লেভেলের শিক্ষার্থী রুদ্র মোহাম্মদ আমির সানিকে (১৮) আটক করে পুলিশে দেয় স্থানীয় লোকজন। এই ঘটনায় তৃতীয় আরেকজন তরুণ যুক্ত ছিল বলে জানিয়েছে পুলিশ।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) দারুসসালাম জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার এমদাদ হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, টাকার প্রলোভন দেখিয়ে তাদেরকে বাসে আগুন দেওয়ার কাজে ব্যবহার করা হয়।
তিনি বলেন, ‘গ্রেপ্তার রুদ্র মোহাম্মদ আমির সানিকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা যায়, স্থানীয় একজন আওয়ামী লীগ নেতা তাদেরকে পাঁচ হাজার টাকার প্রলোভন দেখান। তাদেরকে ঢাকা ১৪ নির্বাচনী এলাকায় যেকোনো একটি গাড়িতে আগুন দেওয়ার জন্য ভাড়া করা হয়।’
এই ঘটনায় আমির সানির নাম উল্লেখ করে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, বৃহস্পতিবার রাতে মিরপুর বেড়িবাঁধে থেমে থাকা কিরণমালা পরিবহনের একটি বাসে আগুন দেওয়া হয়। এ সময় স্থানীয় জনতা তাদের ধাওয়া দিয়ে রুদ্রকে আটক করে। তবে আবদুল্লাহ আল সায়াদ ধাওয়া খেয়ে বেড়িবাঁধ থেকে তুরাগ নদে ঝাঁপ দেন। পরে রাত সাড়ে ১০টার দিকে নদী থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
নিহত আবদুল্লাহ আল সায়াদের মরদেহের ময়নাতদন্ত শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের মর্গে সম্পন্ন হয়েছে। হাসপাতাল সূত্র জানায়, পরিবারের সদস্যরা গতকাল শুক্রবার মরদেহ নিয়ে গেছেন। তাদের বাড়ি ঢাকার উত্তরা এলাকায় বলে জানা গেছে।
আগামী জাতীয় নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক করার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। একই সঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, সন্ত্রাসবিরোধী আইনে কার্যক্রম স্থগিত থাকায়, পরে নির্বাচন কমিশন নিবন্ধন বাতিল (স্থগিত) করায় আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না।
সফররত যুক্তরাজ্যের আন্তর্জাতিক উন্নয়নবিষয়ক মন্ত্রী ব্যারোনেস জেনি চ্যাপম্যানের সঙ্গে বৈঠকে এসব কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা।
বৈঠকে আসন্ন নির্বাচন, অবৈধ অভিবাসন, বাণিজ্য সম্প্রসারণ, রোহিঙ্গা সংকটসহ বিমান ও নৌ খাতে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা সম্প্রসারণের ইস্যু নিয়ে আলোচনা হয়।
মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে সময়মতোই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এবং তা হবে অন্তর্ভুক্তিমূলক ও অংশগ্রহণমূলক।
প্রধান উপদেষ্টা আশা প্রকাশ করেন, এই নির্বাচনে বিপুলসংখ্যক নতুন ভোটার প্রথমবারের মতো ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। গত ১৬ বছরের স্বৈরতন্ত্রের সময়ে টানা তিনটি ‘কাটাছেঁড়া’ নির্বাচনের কারণে তাঁরা ভোট দিতে পারেননি বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
মুহাম্মদ ইউনূস জানান, সন্ত্রাসবিরোধী আইনের আওতায় কার্যক্রম স্থগিত থাকায় এবং পরে নির্বাচন কমিশন নিবন্ধন বাতিল (স্থগিত) করায় আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না।
বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানে লাখো মানুষের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটিয়ে ‘জুলাই সনদ’ বাংলাদেশে একটি ‘নতুন সূচনা’ করেছে।
মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের ভূমিকার প্রশংসা করেন যুক্তরাজ্যের সফররত মন্ত্রী ব্যারোনেস জেনি চ্যাপম্যান। তিনি জুলাই সনদ নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ও রাজনৈতিক দলগুলোর চলমান সংলাপকে ইতিবাচক হিসেবে তুলে ধরেন।
ব্যারোনেস জেনি চ্যাপম্যান বলেন, বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের অভিবাসীদের মাধ্যমে যুক্তরাজ্যে আশ্রয়ের অপব্যবহার উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে। তিনি নিরাপদ ও বৈধ অভিবাসন নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্ব দেন।
এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, তার সরকার নিরাপদ অভিবাসন নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আরও বেশি বাংলাদেশিকে বৈধ পথে বিদেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ নিতে উৎসাহিত করছে তার সরকার।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে দুই নেতা মানবিক সহায়তা অব্যাহত রাখার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন। মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পের তরুণেরা আশা-আকাঙ্ক্ষা হারিয়ে ক্রমে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠছেন। তাদের শিক্ষার সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে।
বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও সহযোগিতা বাড়ানোর সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা হয়। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বঙ্গোপসাগরে গবেষণার জন্য যুক্তরাজ্যের একটি গবেষণা জাহাজ কিনছে বাংলাদেশ।
ব্যারোনেস জেনি চ্যাপম্যান দুই দেশের উড়োজাহাজ যোগাযোগ আরও জোরদারের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, এয়ারবাস ইন্টারন্যাশনালের প্রধান শিগগিরই বাংলাদেশ সফর করবেন।
বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের এসডিজিবিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ ও বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার সারা কুক।সূত্র: বাসস
আগামী জাতীয় নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক করার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
গতকাল (বৃহস্পতিবার) সন্ধ্যায় ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় যুক্তরাজ্যের আন্তর্জাতিক উন্নয়নবিষয়ক মন্ত্রী ব্যারোনেস জেনি চ্যাপম্যানের সঙ্গে বৈঠকে তিনি এ কথা বলেন।
বৈঠকে আসন্ন নির্বাচন, অবৈধ অভিবাসন, বাণিজ্য সম্প্রসারণ, রোহিঙ্গা সংকটসহ বিমান ও নৌ খাতে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা সম্প্রসারণের ইস্যু বিষয়ে আলোচনা হয়।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে সময়মতোই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এবং তা হবে অন্তর্ভুক্তিমূলক ও অংশগ্রহণমূলক। তিনি আশা প্রকাশ করেন, এই নির্বাচনে বিপুলসংখ্যক নতুন ভোটার প্রথমবারের মতো ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। গত ১৬ বছরের স্বৈরতন্ত্রের সময়ে টানা তিনটি ‘কাটাছেঁড়া’ নির্বাচনের কারণে তারা ভোট দিতে পারেননি বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
অধ্যাপক ইউনূস জানান, সন্ত্রাসবিরোধী আইনের আওতায় কার্যক্রম স্থগিত থাকায় এবং পরে নির্বাচন কমিশন দলটির নিবন্ধন বাতিল করায় আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না।
বৈঠকে তিনি আরও বলেন, জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে লাখো মানুষের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটিয়ে ‘জুলাই সনদ’ বাংলাদেশে একটি ‘নতুন সূচনা’ করেছে।
ব্রিটিশ মন্ত্রী চ্যাপম্যান অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের ভূমিকার প্রশংসা করেন। তিনি জুলাই সনদ নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ও রাজনৈতিক দলগুলোর চলমান সংলাপকেও ইতিবাচক হিসেবে তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের অভিবাসীদের মাধ্যমে যুক্তরাজ্যে আশ্রয়ের অপব্যবহার উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে। তিনি নিরাপদ ও বৈধ অভিবাসন নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্ব দেন।
জবাবে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, তাঁর সরকার নিরাপদ অভিবাসন নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং আরও বেশি বাংলাদেশিকে বৈধ পথে বিদেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ নিতে উৎসাহিত করছে।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে দুই নেতা মানবিক সহায়তা অব্যাহত রাখার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন। অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ক্যাম্পের তরুণেরা আশা-আকাঙ্ক্ষা হারিয়ে ক্রমশ ক্ষুব্ধ হয়ে উঠছে। তিনি বলেন, তাদের শিক্ষার সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে।
এ ছাড়া দুদেশের মধ্যে বাণিজ্য ও সহযোগিতা বাড়ানোর সম্ভাবনা নিয়েও আলোচনা হয়। প্রধান উপদেষ্টা জানান, বঙ্গোপসাগরে গবেষণার জন্য বাংলাদেশ যুক্তরাজ্যের একটি গবেষণা জাহাজ কিনছে।
মন্ত্রী চ্যাপম্যান দুদেশের বিমান যোগাযোগ আরও জোরদারের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, এয়ারবাস ইন্টারন্যাশনালের প্রধান শিগগিরই বাংলাদেশ সফর করবেন।
বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার সারা কুক। সূত্র: বাসস
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন, তার বোন শাহানা হানিফ ও তাদের এক কর্মচারীর বিরুদ্ধে ৫৪ কোটি টাকার মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর সেগুন বাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে সংস্থাটির মহাপরিচালক আক্তার হোসেন গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানান।
দুদকের অভিযোগপত্র থেকে জানা যায়, শাহানা হানিফ ও সাঈদ খোকন ‘সাইদ খোকন প্রোপার্টিজ লিমিটেড’-এর বিভিন্ন ব্যাংক হিসাব ব্যবহার করে লেনদেনের মাধ্যমে লেয়ারিং প্রক্রিয়ায় অবৈধ অর্থ ছদ্মবৃত্ত করেন। সিটি ব্যাংক পিএলসি, এক্সিম ব্যাংক পিএলসি এবং প্রিমিয়ার ব্যাংক পিএলসি—এই তিন ব্যাংকের মোট সাতটি অপারেটিভ ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে ৫৪ কোটি ৭৮ লাখ ৮৪ হাজার ৩০৪ টাকা স্থানান্তর ও লেনদেন করা হয়।
দুদকের ভাষ্য, শাহানা হানিফ ব্যাংক হিসাব খোলার সময় নিজের পেশা, আয় এবং পরিচয় সম্পর্কে বিভ্রান্তিকর ও মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন। তার ভাই সাঈদ খোকন, যিনি সরকারি কর্মচারী হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন, তার ম্যানেজার মো. রাজু আহমেদের সঙ্গে যোগসাজশে এই অর্থ লেনদেনের মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন।
তদন্তে জানা যায়, সিটি ব্যাংক পিএলসির বনানী লেকভিউ শাখা, এক্সিম ব্যাংক লিমিটেড ও প্রিমিয়ার ব্যাংকের বনানী শাখায় শাহানা হানিফ ও সাইদ খোকন প্রোপার্টিজ লিমিটেডের নামে একাধিক সঞ্চয়ী, এসএনডি ও এফডিআর হিসাব খোলা হয়। এসব হিসাবের মাধ্যমে বারবার অর্থ স্থানান্তর করে মানি লন্ডারিং সংঘটিত হয়।
দুদক জানিয়েছে, এই কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে সাঈদ খোকন, শাহানা হানিফ ও সাঈদ খোকন প্রোপার্টিজের ম্যানেজার মো. রাজু আহমেদের নামে দণ্ডবিধির ৪০৯, ৪২০ ও ১০৯ ধারাসহ দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭-এর ৫(২) ধারা এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২-এর ৪(২) ও ৪(৩) ধারায় অপরাধ করেছেন।
জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫ বাস্তবায়ন বিষয়ে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জানিয়েছেন, জাতীয় নির্বাচনের দিন আয়োজিত গণভোটে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট ‘হ্যাঁ’ সূচক হলে আগামী সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত প্রতিনিধি নিয়ে একটি সংবিধান সংস্কার পরিষদ গঠিত হবে। এই প্রতিনিধিগণ একইসঙ্গে জাতীয় সংসদের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার জাতির উদ্দেশে ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, পরিষদ তার প্রথম অধিবেশন শুরুর তারিখ হতে ১৮০ কার্যদিবসের মধ্যে সংবিধান সংস্কার করবে। সংবিধান সংস্কার সম্পন্ন হবার পর ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে সংসদ নির্বাচনে প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যানুপাতে উচ্চকক্ষ গঠন করা হবে। এর মেয়াদ হবে নিম্নকক্ষের শেষ কার্যদিবস পর্যন্ত।
গণভোটে যে প্রশ্ন থাকবে: প্রশ্নটি হবে এরকম: ‘আপনি কি জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ, ২০২৫ এবং জুলাই জাতীয় সনদে লিপিবদ্ধ সংবিধান সংস্কার সম্পর্কিত নিম্নলিখিত প্রস্তাবগুলোর প্রতি আপনার সম্মতি জ্ঞাপন করছেন?’
ক. নির্বাচনকালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার, নির্বাচন কমিশন এবং অন্য সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান জুলাই সনদে বর্ণিত প্রক্রিয়ার আলোকে গঠন করা হবে।
খ. আগামী সংসদ হবে দুই কক্ষ বিশিষ্ট। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলগুলোর প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে ১০০ জন সদস্য বিশিষ্ট একটি উচ্চকক্ষ গঠিত হবে এবং সংবিধান সংশোধন করতে হলে উচ্চকক্ষের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের অনুমোদন দরকার হবে।
গ. সংসদে নারীর প্রতিনিধি বৃদ্ধি, বিরোধী দল থেকে ডেপুটি স্পিকার ও সংসদীয় কমিটির সভাপতি নির্বাচন, প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ সীমিতকরণ, রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বৃদ্ধি, মৌলিক অধিকার সম্প্রসারণ, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও স্থানীয় সরকারসহ বিভিন্ন বিষয়ে যে ৩০টি প্রস্তাবে জুলাই জাতীয় সনদে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্য হয়েছে সেগুলো বাস্তবায়নে আগামী নির্বাচনে বিজয়ী দলগুলো বাধ্য থাকবে।
ঘ. জুলাই সনদে বর্ণিত অন্য সংস্কার রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিশ্রুতি অনুসারে বাস্তবায়ন করা হবে। গণভোটের দিন এই চারটি বিষয়ের ওপর একটিমাত্র প্রশ্নে আপনি ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ ভোট দিয়ে আপনার মতামত জানাবেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়নের অঙ্গীকারনামা অনুসারে সংবিধানে জুলাই জাতীয় সনদ অন্তর্ভুক্ত করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এটিও অনুমোদিত আদেশে উল্লেখ করা হয়েছে।
মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠানোর নামে চুক্তি বহির্ভূত কর্মকাণ্ড করে মোট ৩১৪ কোটি ৩৪ লাখ ৭২ হাজার ৫০০ টাকা নিয়ে আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া যাওয়ায় পাঁচ রিক্রুটিং এজেন্সির ২৬ মালিক ও কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে পৃথক পাঁচটি মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে মামলাগুলো দায়ের করা হয়েছে বলে জানান সংস্থাটির মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন।
প্রথম মামলার আসামিরা হলেন, জিএমজি লিমিটেডের চেয়ারম্যান মোছা. মনিহার, ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. গোলাম মাওলা, পরিচালক মোজাম্মেল হোসেন, মোজ্জাম্মেল হোসেন, তাসফিয়া মাউন ও ইসলাইল হোসাইন। মামলার এজাহারে বলা হয়, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশ ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে বায়রার বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালনকালে সিন্ডিকেট করে বিএমইটি ও বায়রার রেজিস্ট্রেশনের শর্ত ভঙ্গ করে মালয়েশিয়া পাঠাতে সরকার কর্তৃক নির্ধারিত ৭৮ হাজার ৯৯০ টাকার চেয়ে অতিরিক্ত টাকা গ্রহণ করেছে। চুক্তি বহির্ভূত কর্মকাণ্ড করে সরকারের এজেন্ট হিসেবে অবৈধ পারিতোষিক গ্রহণ করে ২ হাজার ৮৩০ জনকে মালয়েশিয়ায় পাঠানোর নামে পাসপোর্ট, স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং প্রতি কর্মীর কাছ থেকে নির্ধারিত ফির অতিরিক্ত অর্থসহ মোট ৪৭ কোটি ৪০ লাখ ২৫ হাজার টাকা নিয়ে আত্মসাৎ করেছেন।
একই প্রক্রিয়ায় দ্বিতীয় মামলায ৩ হাজার ২৩৯ জন মালয়েশিয়ায় পাঠানো কর্মীর নিকট থেকে পাসপোর্ট, স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও নির্ধারিত ফির অতিরিক্ত অর্থসহ ৫৪ কোটি ২৫ লাখ ৩২ হাজার ৫০০ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে। এই মামলায় দি জিএমজি এসোশিয়েট লিমিটেডের চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হোসেন, পরিচালক আব্দুর রহিম, ওয়ালিদ হোসাইন হারুন, নরুল আমিন, মো. গোলাম মাওলা, ইসলাইল হোসাইন ও তাসফিয়া মাউদকে আসামি করা হয়েছে। যেখানে সরকার কর্তৃক নির্ধারিত ৭৮ হাজার ৯৯০ টাকার চেয়ে অতিরিক্ত টাকা গ্রহণ করে দণ্ডবিধির ১২০(বি)/১৬১/১৬২/১৬৩/১৬৪/১৬৫(ক)/৪২০/৪০৯ ধারা ও মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে অপরাধ করার অভিযোগ আনা হয়েছে মামলায়।
তৃতীয় মামলার আসামি হলেন, কিউকে কুইক এক্সপ্রেস লিমিটেডের চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম রবিন, এমডি মোহাম্মদ মুনছুর, পরিচালক রাশেদা আকতার, নিলূফা কুদ্দুস, আওরঙ্গজেব ও শাহিনা খান। তাদের বিরুদ্ধেও সরকার কর্তৃক নির্ধারিত ৭৮ হাজার ৯৯০ টাকার চেয়ে অতিরিক্ত টাকা গ্রহণ করে মালয়েশিয়ায় পাঠানোর নামে ৫ হাজার ২৭৫ জন শ্রমিকের কাছ থেকে চুক্তি বহির্ভূত কর্মকাণ্ড করে বিভিন্ন ফি বাবদ ৭১ কোটি ৬০ লাখ ৬২ হাজার ৫০০ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে।
অন্যদিকে চতুর্থ মামলায় এম ই এফ গ্লোবাল বাংলাদেশ লিমিটেডের চেয়ারম্যান মো. আলতাফ হোসেন, এমডি মকবুল হোসেন ও পরিচালক হাইদার আলীকে আসামি করা হয়েছে। একই প্রক্রিয়ায় আসামি চুক্তি বহির্ভূত কর্মকাণ্ড করে সরকারের এজেন্ট হিসেবে অবৈধ পারিতোষিক গ্রহণ করে ৪ হাজার ৫৬৬ জন মালয়েশিয়ায় প্রেরিত কর্মীর নিকট থেকে পাসপোর্ট, স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং নির্ধারিত ফির অতিরিক্ত অর্থসহ ৭৬ কোটি ৪৮ লাখ ৫ হাজার টাকা গ্রহণপূর্বক আত্মসাৎ করেছেন। ২০২১ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে আসামিরা এমন অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েছেন বলে মামলায় অভিযোগ আনা হয়েছে।
আর পঞ্চম মামলায় ধামাসি করপোরেশন লিমিটেডের চেয়ারম্যান ওসমান গনি, এমডি নোমান চৌধুরী ও পরিচালক আহমেদ চৌধুরীকে আসামি করা হয়েছে। একই প্রক্রিয়ায় আসামি চুক্তি বহির্ভূত কর্মকাণ্ড করে সরকারের এজেন্ট হিসেবে অবৈধ পারিতোষিক গ্রহণ করে ৩ হাজার ৮৫৭ জনকে মালয়েশিয়ায় পাঠিয়ে নির্ধারিত ফির অতিরিক্ত ৬৪ কোটি ৬০ লাখ ৪৭ হাজার ৫০০ টাকা গ্রহণপূর্বক আত্মসাৎ করেছেন। এর আগে এই ঘটনা ১২টি মামলা দায়ের করা হয়েছিল বলে জানিয়েছে দুদক।
স্বরাষ্ট্র ও কৃষি উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, ‘গণহত্যার রায় নিয়ে কোনো শঙ্কা নেই। সবার সহযোগিতা থাকলে শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে আনা সহজ হবে।’
বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে আনা সহজ হবে কিনা— জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আপনাদের সবার সহযোগিতা থাকলে অবশ্যই সহজ হবে।’
গণহত্যার রায় নিয়ে কোনো শঙ্কা আছে কিনা— সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, ‘না, কোনো শঙ্কা নেই, আল্লাহ দিলে কোনো শঙ্কা নেই।’
লকডাউন নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, ‘রাস্তা তো ওরকম ফাঁকা না। ফাঁকা থাকলে আপনারা আসলেন কীভাবে? আপনারা তো সবাই চলে আসছেন। রাস্তা ফাঁকা দেখে কি তাড়াতাড়ি চলে আসছেন?’
তিনি বলেন, ‘বড় ধরনের কোনো সমস্যা নেই। ছোটখাটো দুয়েকটা ঘটনা ঘটছে। এটা আপনারা মিডিয়ায় দেখছেন, আমিও দেখছি। এটার ক্ষেত্রে সঙ্গে সঙ্গে কিন্তু আমরা অ্যাকশনও নিচ্ছি।’
এসময় পেঁয়াজের দাম নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘এবার পেঁয়াজের দাম হঠাৎ বাজারে একটুখানি বেড়ে গেছে। বাট আপনারা জানেন যে আমরা পেঁয়াজের জন্য কিন্তু অনেকগুলো হাই-ফ্লো মেশিন দিছি। এজন্য এবার পেঁয়াজ আমদানি ও রকম করতে হয়নি। আমাদের মনে হয় আমদানি করতেও হবে না। তবে আমদানি করার জন্য দুই হাজারের ওপরে অ্যাপ্লিকেশন করছে লোকজন। আমদানিটা করলে কৃষকরা একটা বড় ধরনের সাফার করবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের পেঁয়াজের কোনো ঘাটতি হবে না। কিন্তু কিছু কিছু দুষ্কৃতিকারী দামটা বাড়ানোর চেষ্টা করতেছে। বাট তারা সফল হবে না। আমাদের আমদানি করার ওরকম ইচ্ছা নেই। আমাদের হয়তো আমদানির অনুমতি দিতে হবে না। কিন্তু আমাদের যে প্রোডাকশন হয়েছে, আমাদের কৃষকরা যে উৎপাদন করছে, সেটা দিয়ে ভোক্তাদের চাহিদা মিটে যাবে।’
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীন বলেছেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সহযোগিতা ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। তফসিল ঘোষণার পর কোথাও অনিয়ম দেখা গেলে নির্বাচন কমিশন (ইসি) সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেবে।’
বৃহস্পতিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনের সম্মেলনকক্ষে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে দেওয়া শুভেচ্ছা বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে প্রথমবারের মতো নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে বসে নির্বাচন কমিশন। সংলাপের প্রথম ধাপে উপস্থিত ছিলেন ছয়টি দলের প্রতিনিধিরা। দলগুলোর সঙ্গে ১১টি আলোচ্য নিয়ে আলোচনা করে কমিশন।
সিইসি বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনে খেলবে। ইসি নিরপেক্ষ রেফারির ভূমিকা পালন করতে চায়। কিন্তু খেলোয়াড়েরা সহযোগিতা না করলে কমিশন নিরপেক্ষতা হারাবে। পুরো নির্বাচনপ্রক্রিয়া প্রশ্নবিদ্ধ হবে।’
নির্বাচন কমিশন পোস্টার নিষিদ্ধ করলেও ঢাকা শহর এখনো পোস্টারে ছেয়ে আছে- এমন প্রশ্নের জবাবে এ এম এম নাসির উদ্দীন বলেন, ‘ইসি পোস্টার নিষিদ্ধ করার পরও শহরের যে চিত্র, তা অনভিপ্রেত। পোস্টারগুলো যদি দলগুলো নিজেরা সরিয়ে ফেলে, এটা হবে সবচেয়ে ভদ্র আচরণ। আচরণবিধি ভঙ্গের ক্ষেত্রে কমিশন কোনোভাবেই ছাড় দেবে না।’
বিশেষ পরিস্থিতিতে কমিশন চাপে রয়েছে বলেও জানান সিইসি। তিনি বলেন, একটি বিশেষ পরিস্থিতি ও বিশেষ সরকারের অধীন নির্বাচন করতে গিয়ে কমিশনের ওপর নানা ধরনের চাপ আসছে। এসব চাপের কারণে নির্বাচনে অংশীজনদের কাছে আগের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি সহযোগিতা চেয়েছেন সিইসি।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহার নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে সিইসি এই অপব্যবহারকে একটি ‘মুসিবত’ (বড় বিপদ) হিসেবে উল্লেখ করেন।
আলোচনার জন্য সকাল ১০ থেকে দুপুর ১২টার মধ্যে সংলাপে ডাকা হয় লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি), বাংলাদেশ কংগ্রেস, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশকে।
এদিন বেলা ২টা থেকে বিকেল ৪টার মধ্যে ডাকা হয়েছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট (বিএনএফ) ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনকে (বিএনএম)।
ইসির সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর যে ১১টি বিষয়ে আলোচনা হয় তা হলো- তফসিল ঘোষণার আগে প্রার্থী ও রাজনৈতিক দলগুলোর করণীয়। তফসিল ঘোষণার পর আচরণবিধি প্রতিপালন। আচরণবিধি অনুসারে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলের অঙ্গীকারনামা সম্পাদন। প্রার্থীদের সঙ্গে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের অঙ্গীকারনামা সম্পাদন এবং পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে প্রবাসী ভোট বাস্তবায়ন করা। একইসঙ্গে তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচনী এজেন্ট নিয়োগ ও ব্যবস্থাপনা। ভুল তথ্য ও অপতথ্য প্রতিরোধ করা, নির্বাচনে এআইয়ের অপব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করা এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ভঙ্গ না করা। লিঙ্গ, বর্ণ ও ধর্ম নিয়ে কোনো বৈষম্য ও ধর্মীয় উপসনালয়কে রাজনৈতিক প্রচারণায় ব্যবহার না করা এবং এআই সম্পাদিত ভিডিও দিয়ে প্রতিপক্ষ, লিঙ্গ ও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত না করা।
১৬ নভেম্বর আরও ১২ দলের সঙ্গে ইসির সংলাপ
আগামী রোববার (১৬ নভেম্বর) আরও ১২টি দলের সঙ্গে সংলাপে বসবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। বৃহস্পতিবার ইসির জনসংযোগ শাখার সহকারী পরিচালক মো. আশাদুল হক এ তথ্য জানান।
তিনি জানান, রোববার (১৬ নভেম্বর) সকাল ১০টা থেকে ১২টা পর্যন্ত গণফোরাম, গণফ্রন্ট, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ, ইসলামী ঐক্যজোট, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি- বিএসপি ও বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির সঙ্গে সংলাপ করবে ইসি।
এছাড়া, দুপুর ২টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বাংলাদেশ জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল- বাংলাদেশ জাসদ, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি- বাংলাদেশ ন্যাপ, তৃণমূল বিএনপি, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সঙ্গে সংলাপ হবে।
এদিকে বৃহস্পতিবার ১২ দলের সঙ্গে সংলাপে বসে ইসি।
ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত অর্থ স্থানান্তর ও রূপান্তরের মাধ্যমে মানিলন্ডারিংয়ের অভিযোগে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর এবং তার স্ত্রী সিতারা আলমগীরের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
গতকাল বুধবার রাজধানীর সেগুন বাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে সংস্থাটির মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন এক নিয়মিত মিডিয়া ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান। দুদকের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ শাহজাহান মিরাজ বাদী হয়ে সংস্থাটির সমন্বিত জেলা কার্যালয়, ঢাকা-১-এ মামলাটি দায়ের করেন।
মামলার এজাহারে বলা হয়, আসামি ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর (৮৩) ও তার স্ত্রী সিতারা আলমগীর (৮০) ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত অবৈধ অর্থের প্রকৃতি, উৎস, অবস্থান, মালিকানা ও নিয়ন্ত্রণ গোপন করার উদ্দেশে একাধিক ব্যাংক হিসাবে অর্থ স্থানান্তর ও রূপান্তর করেছেন।
দুদকের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ২০০৯ সাল থেকে ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত সময়ের মধ্যে আসামিদের নামে ও স্বার্থ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন হিসাবে মোট বাংলাদেশি ২১৬ কোটি ১ লাখ ৬৩ হাজার ৪৯ টাকা এবং ৬ হাজার ১৮৮ মার্কিন ডলার জমা হয়। পরবর্তীতে ওই সময়ের মধ্যে তা উত্তোলন করা হয়।
এজাহারে আরও বলা হয়, এসব অর্থ মাহবুবুল হক চিশতি, রাশেদুল হক চিশতি, মোহাম্মদ গোলাম রসুল ও মীর আল আমিনের নামীয় বা মালিকানাধীন বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে জমা ও স্থানান্তরিত হয়।
কিন্তু আসামিরা এবং উল্লিখিত ব্যক্তিদের মধ্যে কোনো ব্যবসায়িক সম্পর্ক বা বৈধ আর্থিক লেনদেনের প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
দুদক মনে করে, ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত অর্থকে বৈধতার ছদ্মাবরণ দিতে এক হিসাব থেকে অন্য হিসাবে স্থানান্তর ও রূপান্তরের মাধ্যমে মানিলন্ডারিং সংঘটিত হয়েছে, যা মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪(২) ও ৪(৩) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
ঘটনার সময়কাল ২০০৯ সাল থেকে ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত এবং ঘটনার স্থান হিসেবে পদ্মা ব্যাংক পিএলসি, যমুনা ব্যাংক পিএলসি, আইএফআইসি ব্যাংক পিএলসিসহ একাধিক ব্যাংকের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।
নতুন বেতন কাঠামো চূড়ান্ত করার কাজটা জাতীয় বেতন কমিশন স্বাধীনভাবে করছে বলে জানান, অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, কাজটা অনেক জটিল, তবে অন্তর্বর্তী সরকার সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য বেতন কমিশনের প্রতিবেদন (বেতন কাঠামো) চূড়ান্ত করে যাবে। আশা করা যায়, আগামী সরকার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নেবে।
গতকাল বুধবার সচিবালয়ে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সালেহউদ্দিন আহমেদ এ কথা বলেন।
রাজনৈতিক সরকার এলে ঝুলে যাওয়ার আশঙ্কা আছে বলে সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। ফলে অন্তর্বর্তী সরকার নতুন বেতন কাঠামো দিয়ে যেতে পারবে কি না, এটা ছিল সালেহউদ্দিন আহমেদের কাছে প্রশ্ন।
সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘সাত থেকে আট বছর কিছু হয়নি। আমরা তো একটা উদ্যোগ নিয়েছি। ক্ষোভের পরিবর্তে বরং আমাদের ধন্যবাদ দেওয়া উচিত। অনেক চিন্তা-ভাবনা করে কাজটি করা হচ্ছে। আগামী সরকার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নেবে না, তা আমার মনে হয় না।’
বেসামরিক, সামরিকসহ মোট তিনটা প্রতিবেদন (আরেকটা বিচার বিভাগ) পাওয়ার পর পারস্পরিক সামঞ্জস্য দেখা হবেও বলে জানান সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, ‘কাজগুলো করতে একটু সময় লাগে। প্রশাসনিক কিছু প্রক্রিয়া আছে। সচিব কমিটি দেখবে, জনপ্রশাসন দেখবে। অর্থ বিভাগের সম্পৃক্ততাও আছে। তারপর বাস্তবায়ন করা যাবে। সে জন্যেই বলেছি যে আমাদের সময়ে এটা বাস্তবায়ন করার ব্যাপারে কিছুটা অনিশ্চয়তা আছে।’
সরকারি কর্মচারীদের উদ্দেশে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ক্ষোভের সৃষ্টি হওয়া অপ্রত্যাশিত। একটু ধৈর্য ধরতে হবে।
হাইকোর্ট বিভাগে স্থায়ী নিয়োগ পাওয়া ২২ বিচারপতির মধ্যে ২১ জন শপথ নিয়েছেন। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ গতকাল বুধবার দুপুরে সুপ্রিম কোর্টের জাজেস লাউঞ্জে তাদের শপথ পাঠ করান।
শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতিরা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে গত মঙ্গলবার হাইকোর্ট বিভাগের ২২ জন অতিরিক্ত বিচারপতির চাকরি স্থায়ী করেন রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন। এ বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয় একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে। এতে বলা হয়, সংবিধান অনুযায়ী প্রধান বিচারপতির সঙ্গে পরামর্শক্রমে রাষ্ট্রপতি এই নিয়োগ চূড়ান্ত করেন। শপথ গ্রহণের তারিখ থেকে বিচারপতিদের নিয়োগ কার্যকর হবে।
গত বছরের ৮ অক্টোবর এই ২২ জনকে অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। তবে তাদের সঙ্গে নিয়োগ পাওয়া বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর চাকরি স্থায়ী করা হয়নি। সুপ্রিম কোর্টের একজন কর্মকর্তা জানান, ‘সুপ্রিম কোর্ট জাজেস অ্যাপয়েন্টমেন্ট অর্ডিন্যান্স, ২০২৫’ অনুযায়ী বিচারপতি হিসেবে নিয়োগের জন্য ন্যূনতম ৪৫ বছর বয়স পূর্ণ না হওয়ায় তার চাকরি স্থায়ী করা হয়নি। দেবাশীষ রায় চৌধুরী বিএনপি নেতা নিতাই রায় চৌধুরীর ছেলে।
এদিকে চাকরি স্থায়ী হলেও অসুস্থতার কারণে গতকাল বুধবার শপথ নিতে পারেননি বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেন। সুপ্রিম কোর্টের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলাম জানান, তিনি অসুস্থ থাকায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
যে ২২ বিচারপতির নিয়োগ স্থায়ী করা হয়েছে তারা হলেন—বিচারপতি মো. গোলাম মোর্তুজা মজুমদার, বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেন, বিচারপতি মো. মনসুর আলম, বিচারপতি সৈয়দ জাহেদ মনসুর, বিচারপতি কে এম রাশেদুজ্জামান রাজা, বিচারপতি মো. জাবিদ হোসেন, বিচারপতি মুবিনা আসাফ, বিচারপতি কাজী ওয়ালিউল ইসলাম, বিচারপতি আইনুন নাহার সিদ্দিকা, বিচারপতি মো. আবদুল মান্নান, বিচারপতি তামান্না রহমান খালিদী, বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ, বিচারপতি মো. হামিদুল রহমান, বিচারপতি নাসরিন আক্তার, বিচারপতি শাথিকা হোসেন, বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ তাজুল হোসেন, বিচারপতি মো. তৌফিক ইনাম, বিচারপতি ইউসুফ আবদুল্লাহ সুমন, বিচারপতি এস কে তাহসিন আলী, বিচারপতি ফায়েজ আহমেদ, বিচারপতি মো. সগির হোসেন এবং বিচারপতি সিকদার মাহমুদুর রাজি।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে স্বচ্ছ এবং স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় বিচার অনুষ্ঠিত হচ্ছে বলে উল্লেখ করেছেন প্রসিকিউটর মো. মিজানুল ইসলাম। তিনি বলেছেন, এখন দেশে যে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি করার অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দৃঢ়তার সঙ্গে এ ধরনের পদক্ষেপকে রুখে দেবে।
গতকাল বুধবার দুপুরে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মিজানুল ইসলাম এ কথা বলেন।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারপ্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে, এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে প্রসিকিউটর মিজানুল বলেন, তিনি নিঃসন্দেহে বলতে পারেন যে স্বচ্ছ এবং স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় বিচার হচ্ছে। সরকারের বিরুদ্ধে একটা প্রোপাগান্ডার অংশ হিসেবে তারা এটা বলছে।
আরেকজন সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, এখন বাইরে যেগুলো (বাসে আগুন, ককটেল বিস্ফোরিত প্রভৃতি) হচ্ছে, এগুলো কী থ্রেট টু জাস্টিস (ন্যায়বিচারের জন্য হুমকি)?
জবাবে প্রসিকিউটর মিজানুল বলেন, তিনি থ্রেট টু জাস্টিস মনে করেন না। তবে তারা এই বিচারকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য করছে, এটুকু বলতে পারেন।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এবং পুলিশের সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের (অ্যাপ্রুভার বা রাজসাক্ষী) বিরুদ্ধে করা মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার রায় কবে হবে, তা জানা যাবে আগামীকাল (বৃহস্পতিবার)।
একজন সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, বৃহস্পতিবার কি রায়ের তারিখ পাওয়া যাবে, নাকি আবার অপেক্ষায় থাকতে হবে? এ রকম একটা গুঞ্জন আছে।
এর জবাবে প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম বলেন, রায় দেওয়া, রায়ের দিন নির্ধারণ করার এখতিয়ার পুরোপুরি ট্রাইব্যুনালের। তবে তারা বিশ্বাস করেন যে বৃহস্পতিবার রায়ের তারিখ পাওয়া যাবে।
এই মামলার আসামি শেখ হাসিনার সাক্ষাৎকার বিভিন্ন বিদেশি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হচ্ছে। এটাকে প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম কীভাবে দেখছেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিদেশি কোনো গণমাধ্যমের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করার ক্ষমতা তাদের নেই। তবে তাদের (সাক্ষাৎকার নেওয়া বিদেশি গণমাধ্যম) উচিত এই প্রশ্ন করা যে এই গণহত্যা সংঘটিত হয়েছে, হত্যাকাণ্ডের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যেটা আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম প্রচার করেছে এবং তারা বিশ্লেষণ করেছে। এটা তারই (শেখ হাসিনা) কণ্ঠস্বর। কাজেই তাদের এই প্রশ্নগুলো করা উচিত এবং যারা এই প্রোপাগান্ডা চালাচ্ছে, তাদেরই উত্তরটা দেওয়া উচিত।
আরেক প্রশ্নের জবাবে প্রসিকিউটর মিজানুল বলেন, এ ট্রাইব্যুনাল কোনোভাবেই কোনো বৈদেশিক ট্রাইব্যুনাল বা সংস্থা বা সরকার কারও দ্বারা নিয়ন্ত্রিত নয়। বিচারের ক্ষেত্রে বিচারকরা স্বাধীন। এমনকি কোনো প্রসিকিউশনের কোনো বক্তব্য শুনতে বা প্রসিকিউশন যদি বলেন এটা করেন, তা করতে বিচারকরা করতে বাধ্য নন।
একজন সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, বৃহস্পতিবার শেখ হাসিনার মামলায় রায়ের দিন ধার্য হবে। দেখা যাচ্ছে, আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে একটা লবিস্ট ফার্ম নিয়োগ করা হয়েছে এবং জাতিসংঘে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে যে এই বিচারের প্রক্রিয়াটা ঠিকভাবে হচ্ছে না। সার্বিকভাবে তারা অর্থের খরচ করছে। এটা নিয়ে প্রসিকিউশনের কোনো বক্তব্য আছে কি না?
এর জবাবে প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম বলেন, প্রথম কথা হচ্ছে যে বিষয়টি তাদের রেকর্ডের বাইরে। তারপরও তারা যেহেতু এই সমাজেরই মানুষ, এই বিষয়গুলো তাদের নজরে আসে। জাতিসংঘে যে আবেদন করা হয়েছে, সেই বিষয় সম্পর্কে বক্তব্য দেওয়ার আগে তিনি আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সোহেল তাজের একটা বক্তব্য তুলে ধরেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সোহেল তাজ বলেছেন, (আওয়ামী লীগ সরকার) জনগণের টাকা লুট করে বিদেশে নিয়ে গেছে। জনগণকে হত্যা করে বিদেশে চলে গেছে। তারপর বিভিন্ন স্থাপনায় আগুন দিতে সেই টাকা দিয়ে জনগণকে লেলিয়ে দিচ্ছে। যে নেতা-কর্মীদের তারা ফেলে পালিয়ে গেছে, তাদের আবার নির্যাতনের শিকারে পরিণত করছে।
এরপর মিজানুল ইসলাম আরও বলেন, তারা (আওয়ামী লীগ) জাতিসংঘে একটা আবেদন করেছে। তাতে তারা অভিযোগ করেছে, এই আদালতের কার্যক্রম ঠিকভাবে পরিচালিত হচ্ছে না। কেন ঠিকভাবে পরিচালিত হচ্ছে না, তা তার (মিজানুল ইসলাম) কাছে বোধগম্য নয়।
বিলুপ্ত দ্বাদশ জাতীয় সংসদের সদস্যদের আমদানি করা ৩১টি শুল্কমুক্ত বিলাসবহুল গাড়ি সরকারি যানবাহন অধিদপ্তরে হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে গাড়িগুলো খালাস না হওয়ায় জনস্বার্থে সরকারি কাজে ব্যবহারের জন্য এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
গতকাল বুধবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, বিশেষ আদেশ জারির মাধ্যমে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসকে গাড়িগুলো জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অধীন সরকারি যানবাহন অধিদপ্তরে (ডিজিটি) হস্তান্তরের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের উপকমিশনার এইচ এম কবির বলেন, এ পদক্ষেপের ফলে নতুন গাড়ি কেনায় সরকারি ব্যয় কমবে এবং বন্দরে পড়ে থাকা গাড়িগুলো নষ্ট হওয়ার ঝুঁকিও দূর হবে।
কাস্টমস বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, গাড়িগুলো দীর্ঘদিন ধরে বন্দর এলাকায় পড়ে থেকে বাজারমূল্য হারাচ্ছিল। নিলামেও উচ্চক্ষমতার বিলাসবহুল গাড়িগুলোর প্রতি ক্রেতাদের আগ্রহ কম ছিল।
চলতি বছরের জানুয়ারিতে চট্টগ্রাম কাস্টমস এসব গাড়ি নিলামে তোলার উদ্যোগ নেয়। প্রতিটি গাড়ির জন্য প্রায় ৯ কোটি টাকার সংরক্ষিত মূল্য নির্ধারণ করা হয়। তবে নিলামকারীদের সর্বোচ্চ বিড ২ কোটি টাকার নিচে থাকায় ওই প্রক্রিয়া স্থগিত করা হয়।
পরবর্তীতে এক আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে গাড়িগুলো সরকারি পরিবহন পুলে হস্তান্তরের সুপারিশ করা হয়। পরে অর্থ বিভাগ ওই সুপারিশ অনুমোদন দেয়। সরকারি নথি অনুযায়ী, ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট থেকে বন্দরে সংরক্ষণ ও পরিবহন ব্যয় বহন করবে সরকারি যানবাহন অধিদপ্তর।
এর আগে এনবিআর স্পষ্ট জানায়, সংসদ ভেঙে যাওয়ার পর সাবেক এমপিদের জন্য শুল্কমুক্ত গাড়ি আমদানির সুবিধা আর প্রযোজ্য থাকে না। ফলে গাড়িগুলো খালাস করতে হলে আমদানিকারকদের প্রযোজ্য শুল্ক ও কর পরিশোধ করতে হবে।
এনবিআরের হিসাবে, ওই ৩১টি গাড়ির মোট শুল্ক ও করের পরিমাণ ২৬৯ কোটি ৬২ লাখ টাকা। এসব গাড়ির প্রতিটির শুল্ককর নির্ধারণ করা হয়েছিল ৮ কোটি ৬২ লাখ টাকা থেকে ৯ কোটি ৪৪ লাখ টাকা পর্যন্ত।
প্রযোজ্য শুল্ক ও কর পরিশোধ না করায় ২০২৩ সালের কাস্টমস আইনের ৯৪ (৩) ধারা অনুযায়ী গাড়িগুলো নিলামে তোলা হয়।
তবে এনবিআরের বিশেষ আদেশে বলা হয়েছে, ভবিষ্যতে যদি সংশ্লিষ্ট আমদানিকারক প্রযোজ্য শুল্ক ও কর পরিশোধ করতে চান, তাহলে আইন অনুযায়ী গাড়িগুলো তাদের অনুকূলে খালাস করা যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে সরকারি যানবাহন অধিদপ্তর গাড়িগুলো কাস্টমস কর্তৃপক্ষের কাছে ফেরত দেবে।
১৯৮৭ সালে তৎকালীন এরশাদ সরকারের সময় চালু হওয়া, সংসদ সদস্যদের জন্য শুল্কমুক্ত গাড়ি আমদানির সুযোগটি দীর্ঘদিন ধরেই সমালোচিত হয়ে আসছে।
এনবিআরের তথ্যানুযায়ী, গত ১৫ বছরে এই সুবিধার কারণে সরকারের রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে ৫ হাজার ১৪৭ কোটি টাকারও বেশি।