ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার মো. মাইনুল হাসান বলেছেন, থানায় মামলা রেকর্ড হলেই এজাহার নামীয় আসামি ধরতে হবে এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। তদন্ত সাপেক্ষে আসামি ধরা হবে। এছাড়া ঢাকায় পুলিশ হত্যা, থানায় অগ্নিসংযোগ ও অস্ত্র লুটের ঘটনায় মামলা হবে।
আজ রোববার সকালে ডিএমপি সদর দপ্তরে বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (ক্র্যাব) কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাৎ ও মতবিনিময়কালে তিনি এসব কথা বলেন।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, ক্রিমিনাল ইভেন্ট কখনো তামাদি হয় না। পুলিশ হত্যা এবং থানার লুটপাটের ঘটনায়ও মামলা হবে।
গণহারে মামলা ও এজাহারে সাংবাদিকদের নাম দেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এজাহারে নাম থাকলেই গ্রেপ্তার করতে হবে বিষয়টা এ রকম না। কালেকটিভ তদন্ত করে তারপর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সেভাবে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তদন্ত করে সব মামলায় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ডিএমপি কমিশনার আরও বলেন, পুলিশের ১৭৭টি যানবাহন ক্ষতি হয়েছে। অনেক স্থাপনা ক্ষতি হয়েছে। সেসব সারিয়ে তোলার কাজ চলছে। দুই এক সপ্তার ভেতরে সব থানা স্বাভাবিক কার্যক্রমে ফিরবে। ট্রাফিক ব্যবস্থার উন্নতি হয়েছে। ট্রাফিক পুলিশ এখন গভীর রাত পর্যন্ত কাজ করছে। ধীরে ধীরে আরো উন্নতি হবে। এছাড়া ছিনতাই প্রতিরোধে পুলিশ আরও সক্রিয় হবে। পুলিশের টহল ও চেকপোস্ট কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
পুলিশের মনোবল চাঙা করতে কাজ চলছে জানিয়ে তিনি বলেন, বিভিন্ন দাবি নিয়ে লোকজন রাস্তায় নেমে অবরোধ করে যানজট সৃষ্টি করছে। ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা প্রধান সড়কে উঠে যাচ্ছে। পুলিশ এসব নিয়ে কাজ করছে। রাস্তা ও ফুটপাত হকারমুক্ত করার চেষ্টা করছে পুলিশ। ধীরে ধীরে পুলিশ তার স্বাভাবিক কার্যক্রমে ফিরছে বলেও জানান তিনি। অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও অপরাধী গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। ধীরে ধীরে তা আরও জোরদার হবে।
ক্র্যাব সভাপতি কামরুজ্জামান খান, সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলামসহ কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য এবং ডিএমপি পদস্থ কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিতি ছিলেন। ডিএমপি কমিশনারের কাছে ক্র্যাব নেতারা সদস্যদের জন্য ওয়ার্কশপ ও মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড চালুসহ বিভিন্ন বিষয় উপস্থাপন করলে তিনি আশ্বস্ত করেন।
সুন্দরবনে ২০২৩-২৪ সালের জরিপে ১২৫টি বাঘ পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে মঙ্গলবার প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান তিনি।
ব্রিফিংয়ে উপদেষ্টা জানান, ২০২৩-২৪ সালে সুন্দরবনের জাতীয় পশু বাঘ জরিপে ১২৫টি বাঘ পাওয়া গেছে। প্রতি ১০০ বর্গকিলোমিটারে বাঘের ঘনত্ব ২.৬৪।
তিনি জানান, ২০১৮ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে বাঘের সংখ্যা বেড়েছে ১১টি। বৃদ্ধির এ হার ৯.৬৫ শতাংশ। ২০১৫ সালের তুলনায় বৃদ্ধির হার ১৭.৯২ শতাংশ।
রিজওয়ানা জানান, ২০১৫ সালে সুন্দরবনে ১০৬টি বাঘ ছিল। আর ঘনত্ব ছিল ২.১৭। ২০১৮ সালে ১১৪টি বাঘ পাওয়া যায়। আর ঘনত্ব ছিল ২.৫৫। ২০১৮ সালে বাঘের সংখ্যা আটটি বেড়েছিল এবং বৃদ্ধির হার ছিল প্রায় ৮ শতাংশ।
তিনি আরও জানান, ২০২৩-২৪ সালের জরিপে ২১টি বাঘ শাবকের ছবি পাওয়া গেছে, তবে শাবকদের সংখ্যা অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। কারণ ছোট বয়সে শাবকের মৃত্যুর হার অনেক বেশি। ২০১৫ ও ২০১৮ সালে মাত্র পাঁচটি শাবকের ছবি পাওয়া গিয়েছিল।
পরিবেশ উপদেষ্টা জানান, জরিপের ছবি ও তথ্য বিশ্লেষণ করে বাঘের সংখ্যা নির্ধারণ করা হয়। এ কাজে ভারত, নিউজিল্যান্ড ও যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষজ্ঞদের মতামতও নেয়া হয়।
ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, জরিপটি ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে শুরু হয়ে ২০২৪ সালের মার্চে শেষ হয়। সুন্দরবনের ৬০৫টি গ্রিডে ১ হাজার ২১০টি ক্যামেরা ৩১৮ দিন রেখে দেয়া হয়, যার মধ্যে ৩৬৮টি গ্রিডে বাঘের ছবি পাওয়া যায়।
ব্রিফিংয়ে উল্লেখ করা হয়, ১০ লক্ষাধিক ছবি ও ভিডিও থেকে সাত হাজার ২৯৭টি বাঘের ছবি পাওয়া যায়। এত বেশিসংখ্যক বাঘের ছবি এর আগে পাওয়া যায়নি।
চলতি ২০২৪ সালের জুলাই থেকে ৫ অক্টোবর পর্যন্ত প্রবাসী বাংলাদেশিরা প্রায় ৬,৯৬৭ মিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন, আগের বছরের একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল ৫,২৩২ মিলিয়ন ডলার। চলতি অক্টোবর মাসের প্রথম পাঁচ দিনে ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে প্রায় ৪২৫ মিলিয়ন (সাড়ে ৪২ কোটি) ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা।
গততাল রোববার বাংলাদেশ ব্যাংক এই তথ্য জানিয়েছে। আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে যা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে, গেল বছরের অক্টোবর মাসের প্রথম পাঁচ দিনে ৩২৫ মিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স আসে দেশে।
চলতি মাসে আনুষ্ঠানিক চ্যানেলে আসা রেমিট্যান্সের মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ও বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ১২৩.০৪ মিলিয়ন ডলার, অন্যদিকে বেসরকারি ব্যাংকগুলো ৩০০.২০ মিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স পেয়েছে।
চলতি ২০২৪ সালের জুলাই থেকে ৫ অক্টোবর পর্যন্ত প্রবাসী বাংলাদেশিরা প্রায় ৬,৯৬৭ মিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন, আগের বছরের একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল ৫,২৩২ মিলিয়ন ডলার।
বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী ৫০০ মুসলিম ব্যক্তিত্বের তালিকায় স্থান পেয়েছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি ওই তালিকায় ৫০তম অবস্থানে রয়েছেন। জর্ডানের রাজধানী আম্মানভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ‘দ্য রয়্যাল ইসলামিক স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ সেন্টার (আরআইএসএসসি)’ এই তালিকা প্রকাশ করেছে। ২০০৯ সাল থেকে প্রতিষ্ঠানটি প্রতি বছর এ তালিকা প্রকাশ করে আসছে।
এ তালিকায় প্রথম স্থানে রয়েছেন জর্ডানের রাজা দ্বিতীয় আব্দুল্লাহ ইবনে আল হোসাইন। অষ্টম অবস্থানে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ানের নাম রয়েছে। ১২তম অবস্থানে রয়েছেন সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান।
ধর্মীয় চিন্তা-ভাবনা এবং রাজনৈতিক নেতৃত্ব থেকে শুরু করে শিল্প ও সংস্কৃতি পর্যন্ত বিভিন্ন ক্ষেত্রে গভীরভাবে অবদান রাখছেন এবং নিজ দেশে ও দেশের বাইরে মুসলমান সম্প্রদায়কে উল্লেখযোগ্যভাবে প্রভাবিত করে যাচ্ছেন এমন ব্যক্তিরা ‘দ্য মুসলিম ৫০০: দ্য ওয়ার্ল্ডস মোস্ট ইনফ্লুয়েনশিয়াল মুসলিমস’ শিরোনামের এ তালিকায় স্থান পান। যুক্তরাষ্ট্রের জর্জটাউন ইউনিভার্সিটিতে প্রিন্স আলওয়ালিদ বিন তালাল সেন্টার ফর মুসলিম-ক্রিশ্চিয়ান আন্ডারস্ট্যান্ডিংয়ের সহযোগিতায় এ বছরের তালিকাটি প্রস্তুত করা হয়েছে।
এ তালিকায় বছরের সেরা মুসলমান নারী হিসেবে মনোনীত হয়েছেন জর্ডানের রানি রানিয়া আল আব্দুল্লাহ। অবশ্য প্রভাবশালী মুসলমানদের পুরুষ তালিকায়ও জর্ডানের রাজা ও নারী তালিকায়ও জর্ডানের রানি থাকায় জর্ডান থেকে প্রকাশিত এ তালিকা পুরোপুরি রাষ্ট্রীয় প্রভাবমুক্ত নয় বলেই মনে করছেন ইসলামী রাষ্ট্রচিন্তাবিদরা।
কারণ ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে ইরান, তুরস্কসহ মধ্যপ্রাচ্যের অন্য মুসলিম সরকারপ্রধানরা বর্তমানে বিশ্বজুড়ে মুসলমানদের ওপরে যে প্রভাব বিস্তার করেছেন সে তুলনায় জর্ডানের রাজা-রানির ভূমিকা খুবই গৌণ। এ তালিকায় বাংলাদেশের নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারপ্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূস জাতিসংঘে সম্প্রতি যে প্রভাব দেখিয়েছেন পারস্পরিক সম্পর্ক ও রাজনৈতিক দূরদর্শিতা বিবেচনায় নিলে মুসলিম বিশ্বের শীর্ষ ৫০০ নেতার মধ্যে ৫০তম অবস্থান তার প্রাপ্য নয়, তিনি সেরা ১০-এর প্রথম সারিতেই থাকবেন। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব নেন শান্তিতে নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
১৯৪০ সালের ২৮ জুন জন্মগ্রহণ করেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। কর্মজীবনে অসংখ্য পুরস্কার অর্জন করেছেন তিনি। গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠায় তার ভূমিকার জন্য ২০০৬ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার পান এ কিংবদন্তি। প্রতিষ্ঠানটি জামানত ছাড়াই ক্ষুদ্রঋণ প্রদানের মাধ্যমে লাখো সুবিধাবঞ্চিত মানুষের ক্ষমতায়ন করেছে। বিশ্বব্যাপী দারিদ্র্য দূরীকরণে তার ভূমিকা অভাবনীয়। নারীদের অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতায় তার ভূমিকা গোটা বিশ্বে সমাদৃত।
পাঁচ সংস্কার কমিশন গঠনের পর এবার ৮ সদস্যদের সমন্বয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘সংবিধান সংস্কার কমিশন’ গঠন করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এর মধ্য দিয়ে প্রধান উপদেষ্টা ঘোষিত ছয়টি কমিশন গঠন করে এর আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হলো। আজ সোমবার সংবিধান সংস্কার কমিশন গঠন করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে আগেই অধ্যাপক আলী রীয়াজের নাম ঘোষিত হয়েছিল। তাকে প্রধান করে আজ আটজন সদস্যের নাম ঘোষণা করা হয়েছে প্রজ্ঞাপনে।
তারা হলেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক সুমাইয়া খায়ের ও অধ্যাপক মুহাম্মদ ইকরামুল হক, ব্যারিস্টার ইমরান সিদ্দিকী, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শরীফ ভূঁইয়া, ব্যারিস্টার এম মঈন আলম ফিরোজী, লেখক ফিরোজ আহমেদ, লেখক ও মানবাধিকারকর্মী মো. মুস্তাইন বিল্লাহ এবং শিক্ষার্থী প্রতিনিধি হিসেবে আছেন মো. মাহফুজ আলম।
রাজধানীর পল্টনে বিএনপিকর্মী মকবুল হত্যা মামলায় সাবেক পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়কমন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরীর পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। এর আগে গতকাল রোববার (৬ অক্টোবর) সন্ধ্যায় রাজধানীর গুলশানের বাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক এই মন্ত্রীকে আজ সোমবার ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর তদন্ত কর্মকর্তা পল্টন মডেল থানার উপ-পরিদর্শক নাজমুল হাসান তাকে ১০ দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করেন। অন্যদিকে তার আইনজীবী রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিনের আবেদন জানান।
উভয়পক্ষের শুনানি শেষে ঢাকার অতিরিক্ত মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুবুল হক জামিন আবেদন না-মঞ্জুর করে সাবের চৌধুরীকে পাঁচ দিনের রিমান্ড নেওয়ার আবেদন মঞ্জুর করেন।
মামলার অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ২০২২ সালের ১০ ডিসেম্বর এক দফা দাবিতে বিএনপির আন্দোলন কর্মসূচি ঘিরে সারা দেশের নেতা-কর্মীরা নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জড়ো হতে থাকেন। তখন আসামিরা বিএনপির সমাবেশ বানচালের সিদ্ধান্ত নেন। এর অংশ হিসেবে ২০২২ সালের ৭ ডিসেম্বর অজ্ঞাতনামা ৫০০ থেকে ৬০০ জন আসামি বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেন। আসামিরা বিএনপি অফিসে প্রবেশ করে ভাঙচুর করেন।
হামলাকারীরা বিএনপি কার্যালয়ে থাকা নেতা-কর্মীদের ওপর লাঠিচার্জ ও গুলি করেন। এ সময় মকবুল নামে বিএনপির এক কর্মী আহত হন। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাসপাতালে মারা যান তিনি। এ ঘটনায় ২০২৪ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর রাজধানীর পল্টন থানায় একটি হত্যা মামলা করা হয়।
কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের কাজ পাচ্ছে জাপান। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। আজ সোমবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভা শেষে ব্রিফিংয়ে তিনি এ কথা জানান।
ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ জানিয়েছেন, মাতারবাড়ী সমুদ্রবন্দর নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সবচেয়ে বড় প্রকল্প। কোন দেশ এটি নির্মাণ করবে তা নিয়ে বহু বিতর্ক হয়েছে। সব যাচাই-বাছাই শেষে জাপানকে কাজ দেওয়া হচ্ছে। এতে ব্যয় হবে ২৪ হাজার কোটি টাকা। প্রকল্পে আংশিক ঋণ দেবে জাপান। তাদের ঋণের শর্ত ভালো। প্রকল্পে অনিয়ম হলে তা বিচারের জন্য দেশটিতে আইনি কাঠামোও বেশ শক্ত বলে জানান এ উপদেষ্টা। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আজ একনেক সভায় ২৪ হাজার ৪১২ কোটি টাকার চারটি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়।
পরিকল্পনা উপদেষ্টা জানান, আগে থেকে চলমান প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধির আগেও ব্যয় খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বড় বড় অবকাঠামো নির্মাণ কিংবা গাড়ি কেনার চেয়ে সিটি করপোরেশন ও পৌরসভায় নাগরিক সুবিধা বৃদ্ধি, পার্ক ও লাইব্রেরি নির্মাণ, জলাধার তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হবে। সরকারি প্রকল্পের আওতায় সারা দেশে কতগুলো গাড়ি কেনা হয়েছে, সেগুলো কোথায় আছে, কীভাবে ব্যবহার হচ্ছে সব খতিয়ে দেখবে সরকার।
৫০০ শিক্ষক ভিসি হতে চান, কেউ পড়াতে চান না
ব্রিফিংয়ে শিক্ষা বিষয়েও কথা বলেন পরিকল্পনা ও শিক্ষা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে উপাচার্য হওয়ার জন্য শিক্ষকদের তদবিরের প্রসঙ্গ তুলে ধরে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ৫০০ শিক্ষক ভিসি হতে চান। কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াতে চান না। সবাই ভিসি হওয়ার জন্য তদবির করেন। শত শত শিক্ষক ভিসি হতে চান। কেউ ভিসি, কেউ প্রো-ভিসি হতে চান।
উন্নয়ন প্রকল্পের সব গাড়ির হিসাব নেবে সরকার
একনেক বৈঠকে সরকারি কর্মকর্তাদের গাড়ি ব্যবহারের হিসাব নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলেও জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের পরিকল্পনা ও শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ। বৈঠক শেষে আয়োজিত ব্রিফিংয়ে তিনি এ বিষয়ে বলেছেন, উন্নয়ন প্রকল্পের গাড়ি কোথায় যায় এবং একজন কর্মকর্তা কয়টা জিপ গাড়ি ব্যবহার করেন এসব খুঁজে বের করা হবে।
তিনি বলেন, এত দিন সরকারি প্রকল্পের আওতায় সারা দেশে কতগুলো গাড়ি কেনা হয়েছে, সেগুলো কোথায় আছে, কিভাবে ব্যবহার হচ্ছে, সব খতিয়ে দেখবে সরকার। প্রকল্প শেষ হলে গাড়িগুলো কেন আর খুঁজে পাওয়া যায় না সব যাচাই করা হবে। এ জন্য জেলা উপজেলাসহ সারা দেশে সরকারি গাড়ি আছে তার একটি তালিকা করার সিদ্ধান্ত হয়েছে একনেক সভায়। কোন গাড়ি কোথায় আছে, কত দিন কার্যকর থাকে সব তথ্য দিতে বলা হয়েছে বলে জানান উপদেষ্টা।
দুর্নীতি কিছুটা কমলেও চাঁদাবাজি তেমন কমেনি
ব্রিফিংয়ে পরিকল্পনা উপদেষ্টা মন্তব্য করেন তাদের দুই মাসের শাসনামলে ‘দুর্নীতি কিছুটা কমেছে তবে চাঁদাবাজি তেমন কমেনি।’ উপদেষ্টা বলেন, চলতি প্রকল্পগুলো সংশোধন করা হচ্ছে। তাই সময় লাগছে। বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ কম হওয়ায় প্রকল্পগুলোর গতি ধীর, এগুলোর অর্থ প্রবাহ বাড়বে না। অর্থ প্রবাহ বাড়াতে আগের প্রকল্পের কাজ এগোতে হবে। নতুন কিছু প্রকল্প হাতে নিতে হবে। তবে আগে থেকে চলমান প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধির আগে সেগুলোর ব্যয় খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
তিনি বলেন, প্রকল্পের আওতায় বড় বড় অবকাঠামো নির্মাণ কিংবা গাড়ি কেনার চেয়ে সিটি করপোরেশন ও পৌরসভায় নাগরিক সুবিধা বৃদ্ধি, পার্ক ও লাইব্রেরি নির্মাণ, জলাধার তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হবে। উপদেষ্টা বলেন, ঢাকা-রংপুর মহাসড়কের কাজ টাঙ্গাইল পর্যন্ত হয়ে স্থবির হয়ে আছে। সেখানে যথেষ্ট বিদেশি অর্থায়ন আছে। সুদের হারও কম। এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। বর্তমান সরকার বিদেশি অর্থায়নের প্রকল্পগুলোকে বেশি অগ্রাধিকার দিচ্ছে।
এ ছাড়া ঢাকার বাইরে সিটি করপোরেশন ও পৌরসভায় নাগরিক সুযোগ-সুবিধা বাড়িয়ে রাজধানীকে বিকেন্দ্রীকরণ করা হবে বলেও জানান তিনি। আজ সোমবার প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে এই একনেক সভা অনুষ্ঠিত হয়। পরে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে পরিকল্পনা ও শিক্ষা উপদেষ্টা সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। এ সময় পরিকল্পনা কমিশনের সদস্যরা ও প্রকল্প সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিবেরা উপস্থিত ছিলেন।
সেপ্টেম্বরে দেশে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ৩৯২টি। এসব দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৪২৬ জন এবং আহত হয়েছেন ৮১৩ জন। তাদের মধ্যে ৬১ জন নারী, শিশু ৫৩টি। এ সময় ১৬৪টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত হন ১৭৯ জন, যা মোট নিহতের ৪২ শতাংশ। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার হার ৪১ দশমিক ৮৩ শতাংশ। দুর্ঘটনায় ৯৭ জন পথচারী নিহত হয়েছেন, যা মোট নিহতের ২২ দশমিক ৭৬ শতাংশ। যানবাহনের চালক ও সহকারী নিহত হয়েছেন ৫৪ জন, অর্থাৎ ১২ দশমিক ৬৭ শতাংশ। এ সময় নৌ-দুর্ঘটনা ঘটেছে ৮টি, এতে নিহত হয়েছেন ১১ জন, আহত হয়েছেন ৪ জন এবং ২ জন নিখোঁজ রয়েছেন। ১৭টি রেল ট্র্যাক দুর্ঘটনায় ১৩ জন নিহত হন এবং আহত হয়েছেন ৯ জন।
আজ সোমবার সকালে রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমানের গণমাধ্যমে পাঠানো সেপ্টেম্বর মাসে সংঘটিত দুর্ঘটনাবিষয়ক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানা যায়। ৯টি জাতীয় দৈনিক, ৭টি নিউজ পোর্টাল, বিভিন্ন ইলেকট্রনিক মিডিয়া এবং নিজস্ব তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে সংগঠনটি। সংগঠনটির পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণে বলছে, দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে ১৬২টি জাতীয় মহাসড়কে, ১৪৪টি আঞ্চলিক সড়কে, ৪৭টি গ্রামীণ সড়কে এবং ৩৪টি শহরের সড়কে এবং ৫টি অন্যান্য স্থানে সংঘটিত হয়েছে।
যানবাহনভিত্তিক নিহতের চিত্র
দুর্ঘটনায় যানবাহনভিত্তিক নিহতের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, মোটরসাইকেল চালক ও আরোহী ১৭৯ জন (৪২ শতাংশ), বাসের যাত্রী ২৫ জন (৫ দশমিক ৮৬ শতাংশ), ট্রাক-পিকআপ-ট্রাক্টর-ট্রলি আরোহী ২২ জন (৫ দশমিক ১৬ শতাংশ), প্রাইভেটকার-মাইক্রোবাস আরোহী ২৪ জন (৫ দশমিক ৬৩ শতাংশ), থ্রি-হুইলার যাত্রী (ইজিবাইক-সিএনজি-অটোরিকশা-অটোভ্যান) ৬৩ জন (১৪ দশমিক ৭৮ শতাংশ), স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহনের যাত্রী (নছিমন-ভটভটি-আলমসাধু) ৬ জন (১ দশমিক ৪০ শতাংশ) এবং বাইসাইকেল-প্যাডেল রিকশা আরোহী ১০ জন (২ দশমিক ৩৪ শতাংশ) নিহত হয়েছেন।
দুর্ঘটনা সংঘটিত সড়কের ধরন
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ বলছে, দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে ১৬২টি (৪১ দশমিক ৩২ শতাংশ) জাতীয় মহাসড়কে, ১৪৪টি (৩৬ দশমিক ৭৩ শতাংশ) আঞ্চলিক সড়কে, ৪৭টি (১১ দশমিক ৯৮ শতাংশ) গ্রামীণ সড়কে এবং ৩৪টি (৮ দশমিক ৬৭ শতাংশ) শহরের সড়কে এবং ৫টি (১ দশমিক ২৭ শতাংশ) অন্যান্য স্থানে সংঘটিত হয়েছে।
দুর্ঘটনার ধরন
দুর্ঘটনাগুলোর ৮২টি (২০ দশমিক ৯১ শতাংশ) মুখোমুখি সংঘর্ষ, ১৬৯টি (৪৩ দশমিক ১১ শতাংশ) নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে, ৯৪টি (২৩ দশমিক ৯৭ শতাংশ) পথচারীকে চাপা/ধাক্কা দেওয়া, ৪১টি (১০ দশমিক ৪৫ শতাংশ) যানবাহনের পেছনে আঘাত করা এবং ৬টি (১ দশমিক ৫৩ শতাংশ) অন্যান্য কারণে ঘটেছে।
দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহন
দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহনের মধ্যে ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান, পিকআপ, ট্রাক্টর, ট্রলি, লরি, ড্রামট্রাক, তেলবাহী লরি, রোড রোলার ২৮ দশমিক ৪৮ শতাংশ। মাইক্রোবাস, প্রাইভেটকার, অ্যাম্বুলেন্স, পাজেরো ৬ শতাংশ। যাত্রীবাহী বাস ১৫ দশমিক ৫০ শতাংশ। মোটরসাইকেল ২৭ দশমিক ৩৭ শতাংশ। থ্রি-হুইলার (ইজিবাইক, সিএনজি, অটোরিকশা, অটোভ্যান) ১৫ দশমিক ১৮ শতাংশ। স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহন (নছিমন, ভটভটি, আলমসাধু, চান্দের গাড়ি, মাহিন্দ্র, হ্যালোবাইক) ২ দশমিক ৮৪ শতাংশ। বাইসাইকেল, রিকশা, রিকশা ভ্যান ২ দশমিক ০৫ শতাংশ এবং অজ্ঞাত যানবাহন ২ দশমিক ৫৩ শতাংশ।
দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহনের সংখ্যা
দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহনের সংখ্যা ৬৩২। (বাস ৯৮, ট্রাক ১০৬, কাভার্ড ভ্যান ১৮, পিকআপ ২১, ট্রাক্টর ১১, ট্রলি ৪, লরি ১০, ড্রাম ট্রাক ৭, তেলবাহী লরি ২, রোড রোলার ১, মাইক্রোবাস ১৬, প্রাইভেটকার ১৫, অ্যাম্বুলেন্স ৫, পাজেরো ২, মোটরসাইকেল ১৭৩, থ্রি-হুইলার ৯৬ (ইজিবাইক, সিএনজি, অটোরিকশা, অটোভ্যান, লেগুনা), স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহন ১৮ (নছিমন, ভটভটি, আলমসাধু, চান্দের গাড়ি, মাহিন্দ্র, হ্যালোবাইক), বাইসাইকেল, রিকশা, রিকশা ভ্যান ১৩ এবং অজ্ঞাত যানবাহন ১৬টি।
দুর্ঘটনার সময় বিশ্লেষণ
সময় বিশ্লেষণে দেখা যায়, দুর্ঘটনাগুলো ঘটেছে ভোরে ৫ দশমিক ১০ শতাংশ, সকালে ২৬ শতাংশ, দুপুরে ১৮ দশমিক ৬২ শতাংশ, বিকালে ১৪ দশমিক ৭৯ শতাংশ, সন্ধ্যায় ৬ দশমিক ৬৩ শতাংশ এবং রাতে ২৮ দশমিক ৮২ শতাংশ।
দুর্ঘটনার বিভাগওয়ারি পরিসংখ্যান
দুর্ঘটনার বিভাগওয়ারি পরিসংখ্যান বলছে, ঢাকা বিভাগে দুর্ঘটনা ৩১ দশমিক ৬৩ শতাংশ, প্রাণহানি ৩০ দশমিক ০৪ শতাংশ, রাজশাহী বিভাগে দুর্ঘটনা ১০ দশমিক ৯৬ শতাংশ, প্রাণহানি ১২ দশমিক ২০ শতাংশ, চট্টগ্রাম বিভাগে দুর্ঘটনা ১৯ দশমিক ৮৯ শতাংশ, প্রাণহানি ১৯ শতাংশ, খুলনা বিভাগে দুর্ঘটনা ১২ দশমিক ২৪ শতাংশ, প্রাণহানি ১৪ দশমিক ৭৮ শতাংশ, বরিশাল বিভাগে দুর্ঘটনা ৩ দশমিক ৮২ শতাংশ, প্রাণহানি ৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ, সিলেট বিভাগে দুর্ঘটনা ৪ দশমিক ৮৪ শতাংশ, প্রাণহানি ৪ দশমিক ৬৯ শতাংশ, রংপুর বিভাগে দুর্ঘটনা ১০ দশমিক ৪৫ শতাংশ, প্রাণহানি ৯ দশমিক ১৫ শতাংশ এবং ময়মনসিংহ বিভাগে দুর্ঘটনা ৬ দশমিক ১২ শতাংশ, প্রাণহানি ৬ দশমিক ৩৩ শতাংশ ঘটেছে।
ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি ১২৪টি দুর্ঘটনায় ১২৮ জন নিহত হয়েছেন। বরিশাল বিভাগে সবচেয়ে কম ১৫টি দুর্ঘটনায় ১৬ জন নিহত হয়েছেন। একক জেলা হিসেবে চট্টগ্রাম জেলায় ৩১টি দুর্ঘটনায় ২৮ জন নিহত হয়েছে। সবচেয়ে কম শরীয়তপুর, পটুয়াখালী, সুনামগঞ্জ ও জামালপুরে। এই চারটি জেলায় কয়েকটি দুর্ঘটনা ঘটলেও প্রাণহানি ঘটেনি। রাজধানী ঢাকায় ২৬টি সড়ক দুর্ঘটনায় ১৯ জন নিহত ও ১৩ জন আহত হয়েছে।
নিহতদের পেশাগত পরিচয়
গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায়, পুলিশ সদস্য চার জন, বিভিন্ন স্কুল-কলেজ-মাদরাসার শিক্ষক ১২ জন, পল্লি চিকিৎসক একজন, সাংবাদিক তিন জন, প্রকৌশলী দুজন, বিভিন্ন ব্যাংক-বিমা কর্মকর্তা ও কর্মচারী ৫ জন, বিভিন্ন এনজিও কর্মকর্তা-কর্মচারী ১৪ জন, ওষুধ ও বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী বিক্রয় প্রতিনিধি ১৬ জন, স্থানীয় পর্যায়ের বিভিন্ন ব্যবসায়ী ১৯ জন, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা ১১ জন, পোশাক শ্রমিক সাত জন, নির্মাণশ্রমিক চার জন, চাল মিলের শ্রমিক দুজন, প্রতিবন্ধী দুজন এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন, কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন, ঢাকা কলেজের দুজন ছাত্রসহ দেশের বিভিন্ন স্কুল-মাদ্রাসা ও কলেজের ৫৪ জন শিক্ষার্থী নিহত হয়েছে।
সড়ক দুর্ঘটনার প্রধান কারণগুলোও চিহ্নিত করা হয়েছে রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের প্রতিবেদনে। এগুলো হচ্ছে- ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন; বেপরোয়া গতি; চালকদের বেপরোয়া মানসিকতা এবং অদক্ষতা ও শারীরিক-মানসিক অসুস্থতা; বেতন-কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট না থাকা; মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন চলাচলে হঠাৎ বাধা পাওয়া; তরুণ-যুবকদের বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানো; জনসাধারণের মধ্যে ট্রাফিক আইন না জানা ও না মানার প্রবণতা; দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা; বিআরটিএর সক্ষমতার ঘাটতি ও গণপরিবহন খাতে চাঁদাবাজি।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ৭৩৭ জন জীবন দিয়েছেন। ২৩ হাজারেরও বেশি মানুষ আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম। আজ সোমবার স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ তথ্য জানান।
উপদেষ্টা বলেন, আন্দোলনে ৭৩৭ জন নিহত হয়েছেন। তবে এটা ভেরিফায়েড নয়। ছাত্রদের একটা তালিকা আছে। সেখানে বলা হয়েছে, নিহত দেড় হাজারেরও বেশি। ছাত্ররা তাদের তালিকা আমাদের দিলে আমরা ক্রস চেক করে দেখব। তিনি বলেন, আন্দোলনে আহত হয়েছেন ২৩ হাজারেরও বেশি। এর মধ্যে ৪০০ জন চোখ হারিয়েছেন। দুই চোখই হারিয়েছেন ২০০ জন।
স্বাস্থ্য উপদেষ্টা বলেন, আজ পর্যন্ত যে তথ্য আমাদের কাছে আছে, সেখানে ৭৩৭ জন নিহত হয়েছেন। এগুলো যাচাই করা হয়নি। ছাত্রদের কিছু তথ্য আছে, প্রায় ১ হাজার ৫০০ জনের ওপরে। সেগুলো আমরা তাদের সঙ্গে সমন্বয় করছি। তাদের তালিকা আমাদের দিক। কারণ কোনো কোনোগুলো ওভারল্যাপ হতে পারে। কাজেই সেগুলো বাদ দিলে আসল তালিকা হবে।
তিনি বলেন, নিহতদের ক্ষেত্রে বেশ বড় রকমের একটা সমস্যা আমাদের ফেস করতে হয়েছে। কিছু আছে কেস করেনি, পোস্টমর্টেম হয়নি, সার্টিফিকেট পায়নি। আবার কিছু আসছে যখন ভর্তি হয়েছে, তখন তাদের সত্যিকারের ঠিকানা লুকিয়েছে। কারণ তারা ভয় পেয়েছেন, যদি ধরা পড়েন তাদের পরিবারের ওপর আক্রমণ চালাবে। কাজেই যখন মারা গেছে, আমাদের কাছে যেই ফলস ঠিকানা ছিল, সেটি নিয়েই কাজ শুরু করতে হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আহতের সংখ্যা প্রায় ২৩ হাজার। নানা ইনজুরড আছে। চোখের প্রায় ৪০০ ভাগ ইনজুরড। আবার কারও হাত-পা কাটা গেছে। যেগুলো হাসপাতালে ছিল সেগুলো সব আমাদের ভেরিফায়েড করা; কিন্তু প্রথমদিকে ভালো হয়ে গেছে, চলে গেছে তারা আসল ঠিকানা দেয়নি।
গুরুতর আহত কতজন, এমন প্রশ্নের জবাবে নূরজাহান বেগম বলেন, গুরুতর আহত ৭০০-৮০০ জন। গুরুতর আহতদের মধ্যে ৪০০ জন চোখের, তার মধ্যে দুই চোখ হারিয়েছেন ৩৫ জন। অঙ্গহানি হয়েছে ২২ জনের। এর মধ্যে হাত কাটা গেছে ৩ জনের, পা কাটা গেছে ১৯ জনের। এ সংখ্যাটা আরও একটু বাড়তে পারে।
তিনি বলেন, বর্তমানে হাসপাতালে ভর্তি আছেন ২০০ জনের মতো। এর মধ্যে ক্রিটিক্যাল মুসা। সে খুব ক্রিটিক্যাল রোগী, তাকে আমরা এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে সিঙ্গাপুর নেওয়ার চিন্তা করছি। বাকিদের মধ্যে একজনের স্পাইনাল কর্ড ইনজুরি আছে, তাকেও হয়তো আমাদের বাইরে পাঠাতে হতে পারে। তবে আমরা চেষ্টা করছি, সিঙ্গাপুরের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি, তাদের সঙ্গে পরামর্শ করে এখানে চিকিৎসা দিচ্ছি। আমরা চেষ্টা করছি। আগে সে হাত নাড়াতে পারত না, এখন সে হাত নাড়াতে পারছে। আশা করি, আমরা ক্রমেই তাকে সুস্থ করে তুলতে পারব। যদি না পারি তাহলে তাকে পাঠাতে হবে।
নূরজাহান বেগম বলেন, ‘আগামীকাল দুই মাস পূর্ণ হবে আমাদের অন্তর্বর্তী সরকারের। আমরা এতদিন কী কাজ করলাম; আমরা যখন দায়িত্ব আসলাম, তখন আমাদের হাসপাতালগুলোতে রোগীতে ভর্তি। চোখ অন্ধ হয়ে গেছে, এমন ছাত্র-জনতা আছে। হাত-পা কেটে ফেলতে হয়েছে, এমন ছাত্র আছে, জনতা আছে। আমরা চেষ্টা করলাম আন্দোলনে আহত ছাত্র-জনতার চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দেওয়ার। আর একটা ছিল কারা নিহত হলো, কারা আহত হলো, তাদের তথ্য সংরক্ষণ করা, তৈরি করা। আমরা একটি কমিটি গঠন করে দিলাম, সেই কমিটিকে কিছু নির্দেশনা দেওয়া হলো। যারা আহত হলো বা নিহত হলো তাদের পরিবারকে আমাদের সহায়তা করতে হবে। আমরা একটা নীতিমালা করেও দিলাম। তারা খুব শিগগিরই আমাদের একটা তালিকা দিলেন, তবে ওটাই সর্বশেষ তালিকা নয়।’
ছাত্রলীগের পিটুনিতে নিহত হওয়া বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে ‘এই শতাব্দীর শহীদ তিতুমীর’ বলে আখ্যায়িত করেছেন আমার দেশ পত্রিকার সাবেক সম্পাদক মাহমুদুর রহমান। আবরারের পঞ্চম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আজ সোমবার রাজধানীর পলাশির মোড়ে আয়োজিত এক স্মরণসভায় তিনি একথা বলেন। স্মরণসভার আয়োজন করে ‘আবরার ফাহাদ স্মৃতি সংসদ’।
মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে দীর্ঘ ৫৪ বছরের সংগ্রামে শহীদ আবরার ফাহাদ টার্নিং পয়েন্ট। শহীদ আবরার ফাহাদ আমাদের সার্বভৌমত্বের পক্ষে ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে আগ্রাসন বিরোধী প্রতীক। অন্যদিকে বঙ্গবন্ধু হলেন ফ্যাসিবাদের প্রতীক ও স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম স্বৈরশাসক।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের তরুণ সমাজ হাসিনার পতনের সংগ্রামে প্রথম ধাপে জয়লাভ করেছে। কিন্তু দ্বিতীয় ধাপে ভারতীয় অগ্রাসনের বিরুদ্ধে এখনো জয়লাভ করতে পারেনি। আমাদের জনগণকে সাথে নিয়ে এই আগ্রাসন রুখে দিতে হবে।’
সভায় জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসির উদ্দিন পাটোয়ারী বলেন, ‘গত ১৫ বছরে যে সংবিধান আমাদের উপর চেপে বসেছিল, যে সংবিধান আবরার ফাহাদের মৃত্যুর জন্য দায়ী, যে সংবিধান জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শত শত শহীদ হওয়ার জন্য দায়ী, যে সংবিধান হাজার হাজার মানুষের হাহাকারের জন্য দায়ী, সে সংবিধান এখনো বাংলাদেশ রাষ্ট্রে কীভাবে বিরাজমান? আমলারা জয় বাংলার স্টেটমেন্ট দিয়ে বেড়াচ্ছে। আমরা চাই এই সংবিধান অবিলম্বে বাতিল হোক।’
আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ বলেন, আবরার ফাহাদ দেশের জন্য জীবন দিয়েছে। প্রথম দুই বছর হত্যার বিচারের জন্য আমাদেরকে বিভিন্ন দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হয়েছে। রায়ের তিন বছর পার হলেও আমরা এখনও হত্যার বিচার পাইনি। যে আট স্তম্ভ নির্মাণ করা হচ্ছে সেটা যেন যেকোনো বাধা বিপত্তিতেও টিকে থাকে।
আবরার ফাহাদ নিহতের ঘটনায় ২০২০ সালে এই স্তম্ভ নির্মাণ করেন ডাকসুর সাবেক সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেন। সে সময় এটি ভেঙে গুড়িয়ে দেয় পুলিশ। আজ এই স্তম্ভের পুনর্নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে সংগঠনটির আহ্বায়ক ও জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন আবরার ফাহাদ হত্যার দিনকে রাষ্ট্রীয়ভাবে ‘আগ্রাসন বিরোধী দিবস’ ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন।
আবরার ফাহাদ স্মৃতি সংসদের আহ্বায়ক আখতার হোসেন বলেন, ‘আবরার ফাহাদ একক কোনো ব্যক্তি নয়, বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রতীক। আবরার ফাহাদের খুনীদের গ্রেপ্তার করলেও বিচার প্রক্রিয়ায় এখনো সম্পন্ন হয়নি, অতিদ্রুত বিচার সম্পন্ন করতে হবে। খুনীদের মধ্যে যারা বাইরে ঘুরে বেড়াচ্ছে তাদেরকেও গ্রেপ্তার হতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশে কোনো দেশের আগ্রাসন চলতে দেওয়া হবে না। ভারতীয় আগ্রাসনকে বাংলাদেশ মেনে নিবে না। ভারতের জনগণের সাথে আমাদের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। ৭ অক্টোবরকে রাষ্ট্রীয়ভাবে আগ্রাসন বিরোধী দিবস হিসেবে ঘোষণার দাবি জানাচ্ছি।’ স্মরণসভায় অন্যদের মধ্যে আবরার ফাহাদের সহপাঠী, ছোটভাই আবরার ফাইয়াজসহ অনেকেই বক্তব্য দেন।
গণঅভ্যুত্থানের শহীদ আবু সাঈদকে সন্ত্রাসী আখ্যা দেওয়ায় লালমনিরহাট জেলার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাপসী তাবাসসুম ঊর্মিকে এবার স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের দাবি জানিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ‘জাস্টিস ফর জুলাই’ নামক একটি প্ল্যাটফরম। বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে আজ সোমবার এ উপলক্ষ্যে অয়োজিত এক গণবিক্ষোভ কর্মসূচি থেকে এ দাবি তোলা হয়।
আয়োজকরা বলছেন, তাপসী তাবাসসুম ঊর্মির স্থায়ী বহিষ্কার দাবি করে আজ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা, রাজশাহী, খুলনা, সাতক্ষীরা, নোয়াখালী, ময়মনসিংহ, নারায়ণগঞ্জসহ দেশের ১৫টি জেলায় তাৎক্ষণিকভাবে গণবিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। শহীদদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি, আহতদের সুচিকিৎসা ও গণহত্যার বিচারের দাবিকে সামনে রেখে জাস্টিস ফর জুলাই সংগঠনটি গঠিত হয়েছে।
‘জাস্টিস ফর জুলাই’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা কর্তৃক আয়োজিত এই গণবিক্ষোভে সংগঠনটির নেতৃবৃন্দ আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ম্যাজিস্ট্রেট তাপসীর চাকরি থেকে স্থায়ী বহিষ্কারের দাবি জানান। তারা বলেছেন, জুলাই স্পিরিটের বিরুদ্ধে যারাই অবস্থান নিবে, তারা গণশত্রু। এমন কেউই প্রশাসনের কোনো পর্যায়ে দায়িত্ব পালন করতে পারবে না।
বিক্ষোভে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব আব্দুল্লাহ আল আমিন বলেন, আমরা ম্যাজিস্ট্রেট উর্মীকে বিচারের আওতায় দেখতে চাই। সেই সাথে ফ্যাসিবাদের দোসর যারা এখনো সরকারের মধ্যে থেকে শহীদের এবং জুলাই বিপ্লবকে অপমানিত করার ধৃষ্টতা দেখাচ্ছেন সকলকে চাকরিচ্যুত করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানাই।
তিনি আরও বলেন, সরকারের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে ফ্যাসিবাদের দোসররা যাতে নতুন কোনো ষড়যন্ত্র না করতে পারে এবং বিপ্লবকে ব্যর্থ প্রমাণ না করতে পারে, সে ব্যাপারে সরকারের বলিষ্ঠ ভূমিকা দেখতে চাই।
বিক্ষোভে অন্যদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন জাস্টিস ফর জুলাইয়ের কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়ক ফাইজা তাবাসসুম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল মুস্তাকিম, ইসরাত জাহান গয়না, ফাতিমা তাসনিম জুমা, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আম্মার বিন আসাদ প্রমুখ।
র্যাবের মহাপরিচালক এ কে এম শহিদুর রহমান বলেছেন, ‘গুম-খুনের সঙ্গে কোনোভাবেই জড়াবে না র্যাব। এ ছাড়া র্যাবে আয়নাঘর বলেও কিছু নেই।’ র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ানের (র্যাব) সদর দপ্তরে আজ সোমবার বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ক্র্যাব) নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
এ কে এম শহিদুর রহমান বলেন, ‘বিচার বহির্ভূত কোনো হত্যাকাণ্ডে র্যাব জড়াবে না। কাউকে একস্থান থেকে ধরে অন্য স্থানে নিয়ে আটকে রাখা হবে না। র্যাব আইনের মধ্যে থেকে কাজ করবে। গুম-খুন ফৌজদারি অপরাধ। বাহিনীর কোনো সদস্য এতে জড়ালে বরদাস্ত করা হবে। এমন অপরাধে জড়ানোর কোনো সুযোগ নেই।’
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে জাতিসংঘের তথ্য সংগ্রহের বিষয়ে র্যাব মহাপরিচালক বলেন, ‘জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটি ইতোমধ্যে র্যাবের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে, কার্যালয় পরিদর্শন করেছে। তাদের যাবতীয় তথ্য দেওয়া হয়েছে। চাহিদা মতো আরও তথ্য দেওয়া হবে।’
দুর্গাপূজার নিরাপত্তা নিয়ে তিনি বলেন, ‘দুর্গাপূজা নির্বিঘ্নে করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অন্যান্য ইউনিটের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করছে র্যাব। এ ছাড়া, জামিনে যেসব জঙ্গিরা বের হয়েছে তাদের মনিটরিং করা হচ্ছে। কেউ গুজব ছড়িয়ে নাশকতার অপচেষ্টা করলে তা প্রতিরোধ করা হবে।’
মতবিনিময় সভায় ক্র্যাবের সভাপতি কামরুজ্জামান খান, সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলামসহ সংগঠনের কার্যনির্বাহী কমিটি ও র্যাবের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তানরা উপস্থিত ছিলেন।
দুর্গাপূজায় নিরাপত্তার কথা ভেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ছয়টি প্রবেশমুখে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। আজ সোমবার থেকে আগামী সাতদিন চেকপোস্টগুলো সচল থাকবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তরের উপপরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে আজ বিষয়টি গণমাধ্যমকে জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘আজ দুপুর থেকে আগামী ১৪ অক্টোবর (সোমবার) দুপুর পর্যন্ত এ চেকপোস্টের কার্যক্রম চলমান থাকবে। চেকপোস্ট বসানোর স্থানগুলো হলো- নীলক্ষেত, পলাশী, শাহবাগ, বার্ন ইউনিট, দোয়েল চত্বর এবং শহীদ মিনার এলাকা। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রতি নিজ নিজ পরিচয়পত্র সঙ্গে রাখার অনুরোধ জানানো হচ্ছে।’
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ‘দুর্গোৎসব চলাকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় আতশবাজি না ফোটানোর জন্য বিশেষভাবে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে পূজা উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় আগত সকল পুণ্যার্থী এবং দর্শনার্থীর সার্বিক সহযোগিতা একান্তভাবে কাম্য।’
পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মো. ময়নুল ইসলাম বলেছেন, ‘দুর্গাপূজা নিয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো নিরাপত্তা শঙ্কা নেই, তবুও আমরা সতর্ক থাকতে চাই। দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে কেউ অপতৎপরতা চালানোর চেষ্টা করলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
রাজধানীর ঢাকেশ্বরী মন্দিরে দুর্গাপূজার নিরাপত্তা ব্যবস্থা পরিদর্শন শেষে আজ সোমবার সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি একথা বলেন।
আইজিপি বলেন, ‘শারদীয় দুর্গাপূজা উৎসাহ উদ্দীপনার সঙ্গে উৎসবমুখর পরিবেশে উদযাপনের লক্ষ্যে পরিপূর্ণ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। দেশে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েন রয়েছে। এ ছাড়া, র্যাব, আনসার, সীমান্ত এলাকায় বিজিবি, উপকূলীয় এলাকায় কোস্ট গার্ড, নৌ অঞ্চলে নৌ পুলিশ, হাইওয়েতে হাইওয়ে পুলিশ দায়িত্ব পালন করছে।’
পুলিশপ্রধান বলেন, গুজব প্রতিরোধে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে সাইবার পেট্রোলিং জোরদার করা হয়েছে। এ ছাড়া, ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন সেন্টারেও (এনটিএমসি) ব্যবস্থা রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ‘দুর্গাপূজা উপলক্ষে পুলিশ সদর দপ্তর এবং জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে কন্ট্রোল রুম স্থাপন করা হয়েছে।’ তিনি প্রয়োজনে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ তথ্য প্রদানের অনুরোধ জানিয়েছেন।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দেশে জঙ্গি তৎপরতার কোন সুযোগ নেই। বর্তমানে যেসব জঙ্গি ও অপরাধী জামিনে রয়েছে তাদের ওপর পুলিশের নজরদারি অব্যাহত আছে।
আইজিপি আশা প্রকাশ করে বলেন, ‘সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় নিরাপদে নির্বিঘ্নে দুর্গাপূজা উদযাপিত হবে।’ মন্দির পরিদর্শনের সময় ডিএমপি কমিশনার মো. মাইনুল হাসানসহ সনাতন ধর্মাবলম্বী নেতৃবৃন্দরা উপস্থিত ছিলেন