পৃথক মামলায় একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির, সাংবাদিক শ্যামল দত্ত ও মোজাম্মেল হক বাবুকে সাতদিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছেন আদালত। আজ মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে তাদের ১০ দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়। পরে আদালত তাদের সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
আদালত থেকে জানা যায়, রমনা মডেল থানায় দায়ের করা হত্যা মামলায় একাত্তর টেলিভিশনের সিইও মোজাম্মেল হক বাবু ও ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবিরের সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. ছানাউল্যাহ।
সকালে তাদের আদালতে হাজির করে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশের পরিদর্শক মো. পায়েল হোসেন সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে দুজনকে ১০ দিন করে রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন।
অন্যদিকে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ফজলু নামে এক যুবককে হত্যার অভিযোগে রাজধানীর ভাষানটেক থানার মামলায় ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্তের সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন একই আদালত।
সকালে তাকে আদালতে হাজির করে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশের উপ-পরিদর্শক মো. সাহিদুল বিশ্বাস সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে ১০ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন।
গতকাল সোমবার (১৬ সেপ্টেম্বর) ভোরে ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলা থেকে একাত্তর টেলিভিশনের সিইও মোজাম্মেল হক বাবু, দৈনিক ভোরের কাগজ পত্রিকার সম্পাদক শ্যামল দত্তকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে জনতা। তারা সীমান্ত দিয়ে ভারতে যেতে চেয়েছিলেন বলে জানায় লোকজন। এরপর রাতে রাজধানীর বনানীর বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় শাহরিয়ার কবিরকে।
চলতি বছর প্রাণের মেলায় এত দর্শনাথীদের আনাগোনা এবারই প্রথম। শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় এত উপচেপড়া ভিড় ছিল। মেলা শুরুর পর থেকে প্রতিদিনই পাঠক ও দর্শনার্থীদের ভিড়ে মুখর ছিল। তবে শুক্রবার এই ভিড়ের মাত্রা ছিল অত্যধিক। লোকে লোকারণ্য ছিল বইমেলার প্রতিটি প্রাঙ্গণ। তবে অন্যদিনের তুলনায় এদিন বিক্রি বাড়লেও অন্যান্য শুক্রবারের মতো বিক্রি হয়নি বলে অভিমত দিয়েছেন প্রকাশক তথা বিক্রেতারা।
আজ সন্ধ্যায় বইমেলায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, প্রচুর লোকসমাগম। প্রবেশমুখে অনেক অবৈধ ভ্রাম্যমাণ দোকান বসায় বইমেলায় প্রবেশে বেগ পেতে হয় দর্শনার্থীদের। পরে পুলিশের সহায়তায় একাডেমি কর্তৃপক্ষ এসব দোকান তুলে দিলে কিছুটা সহজ হয় যাতায়াত।
মেলার সোহরাওয়ার্দী প্রাঙ্গণে ঢুকে দেখা যায়, জনপ্রিয় স্টলগুলোর সামনে দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড়। কেউ বই দেখছেন আর কেউ ছবি তুলছেন। আবার অনেকেই জানতে চাচ্ছেন নতুন কোন বই এসেছে কি না।
বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অনেক দর্শনার্থীদের ভিড় হয়েছে। তবে আশানুরূপ বিক্রি হয়নি। অনন্যা প্রকাশনীর প্রোডাকশন ম্যানেজার প্রীতম আদনানন বলেন, অনেক বেশি ভিড়। প্রথম ছয়দিনের তুলনায় শুক্রবার ভালোই বিক্রি হয়েছে। তবে শুক্রবার হিসেবে যেরকম হওয়ার কথা সেরকম হয়নি। প্রতিবছর শুক্রবারে অনেক ভালো বিক্রি হয়। আজকে সেরকম হচ্ছে না। এটা আমার জন্য অন্যরকম অভিজ্ঞতা। এরকম সাধারণত হয় না।
অন্যপ্রকাশের বিক্রয় প্রতিনিধি ফরহাদ বলেন, বিক্রি ভালো হচ্ছে। কিন্তু অন্যান্য শুক্রবারের তুলনায় কম হয়েছে আজকে। হয়ত রাজনৈতিক কোন কারণ।
আবার কিছু বিক্রেতা বলছেন ভিন্ন কথাও। ঐতিহ্য প্রকাশনীর বিক্রয় প্রতিনিধি আল আমিন বলেন, হতাশ না। অনেক ভালো বিক্রি হচ্ছে।
আদর্শের বিক্রয় প্রতিনিধি মো. ফাইজুল্লাহ বলেন, বেচা বিক্রি ভালো হচ্ছে। এখন থেকে মেলা জমজমাট হচ্ছে। ফলে সামনের দিনগুলোতেও ভালো হবে আশা করা যায়।
ইকরি, হালুমদের ছাড়াই শিশুপ্রহর
শুক্রবার বইমেলায় ছিল প্রথম শিশু প্রহর। মেলার শিশুপ্রহরে অন্যান্য বছরের মতো সব আয়োজন থাকলেও দেখা মেলেনি সিসিমপুরের। এ নিয়ে আক্ষেপ প্রকাশ করেছেন অনেক শিশু ও অভিভাবক।
শিশুপ্রহর উপলক্ষে মেলা শুরু হয় সকাল ১১টায়। দুপুর ১টা পর্যন্ত চলে শিশুপ্রহর। মেলায় গিয়ে দেখা যায়, প্রতি বছর যেখানে সিসিমপুরের স্টেজ বানানো হতো সেই জায়গাটি এবার ফাঁকা পড়ে আছে। সেখানে বসেনি কোনও বইয়ের স্টলও। শুধু বই কিনেই ফিরে যেতে হয় শিশুদের।
রাজধানীর কমলাপুর থেকে আসা সাত বছরের শিশু সিতাংশা মজুমদার বলেন, আমি গতবছরও মায়ের সঙ্গে মেলায় এসেছিলাম। এবার বাবার সাথে এসেছি। কিন্তু এবার আমার প্রিয় ইকরি, হালুমকে পেলাম না। তাদের খুব মিস করছি। বাবাকে বলেছি তাদের এনে দিতে। বাবা বলেছে আরেকবার মেলায় আসলে ইকরি, হালুম থাকবে।
লাবিব ইসলাম নামে এক অভিভাবক বলেন, বইমেলায় অধীর আগ্রহে আমার সন্তান ইকরি ও হালুমদে দেখার জন্য আসছিল। কিন্তু এসে দেখি সিসিমপুর নেই। আমি আগে যদি জানতাম সিসিমপুর থাকবে না তাহলে এই জ্যাম ঠেলে আসতাম না। শুক্রবার বইমেলার ৭ম দিনে মেলা ১১টায় শুরু হয়ে চলে রাত নয়টা পর্যন্ত। এদিন নতুন বই এসেছে ১৮৪টি।
অমর একুশে উদ্যাপনের অংশ হিসেবে সকাল সাড়ে আটটায় বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয় শিশু-কিশোর চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা। প্রতিযোগিতা উদ্বোধন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের প্রাচ্যকলা বিভাগের অধ্যাপক ড. আবদুস সাত্তার। এতে ক-শাখায় ৩০৩, খ-শাখায় ৩২৫ এবং গ-শাখায় ১২২ জন সর্বমোট ৭৫০জন প্রতিযোগী অংশগ্রহণ করেন।
সকাল দশটায় বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে শিশু-কিশোর আবৃত্তি প্রতিযোগিতার প্রাথমিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এতে ক-শাখায় ১৪১ জন, খ-শাখায় ২০৭ জন এবং গ-শাখায় ৮৫ জন সর্বমোট ৪৩৩ জন প্রতিযোগী অংশগ্রহণ করেন। বিচারক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ড. তারিক মনজুর, অধ্যাপক শায়লা আহমেদ এবং বাচিকশিল্পী শফিকুর রহমান বাহার।
বিকেল চারটায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘সাংস্কৃতিক ইতিহাসের দর্পণে গোলাম মুরশিদ পাঠ’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সামজীর আহমেদ। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন স্বরোচিষ সরকার এবং গাজী মো. মাহবুব মুর্শিদ। সভাপতিত্ব করেন মোরশেদ শফিউল হাসান।
প্রাবন্ধিক বলেন, গোলাম মুরশিদের ইতিহাসভিত্তিক আলোচনা বাংলার সাংস্কৃতিক ইতিহাস-চর্চায় পথিকৃৎ সমতুল্য। বাংলাদেশে সাংস্কৃতিক ইতিহাস প্রাতিষ্ঠানিকতা পেলে গোলাম মুরশিদ হবেন তার পুরোধা ব্যক্তি। বাংলাদেশে প্রথাগত ইতিহাস-চর্চায় তাঁর নাম যতটা উজ্জ্বল, এর চেয়ে সাংস্কৃতিক ইতিহাসে তিনি দারুণ শক্তিমান। আলোচকদ্বয় বলেন, গোলাম মুরশিদের গবেষণা ও লেখালেখির জগৎ ছিল বিস্তৃত এবং বৈচিত্র্যময়। তিনি ছিলেন গভীর অন্তর্দৃষ্টিসম্পন্ন এবং প্রজ্ঞাময় একজন গবেষক।
সভাপতির বক্তব্যে মোরশেদ শফিউল হাসান বলেন, বৈচিত্র্যসন্ধানী, গভীরস্পর্শী ও পরিশ্রমী গবেষক গোলাম মুরশিদ বাংলাদেশের গবেষণা জগতে শ্রেষ্ঠ গবেষকদের একজন। বিদ্যাচর্চা ও গবেষণার ক্ষেত্রে তিনি আমাদের ও ভবিষ্যৎ গবেষকদের জন্য বাতিঘর হয়ে থাকবেন।
জুলাইয়ের গল্প মঞ্চ: জুলাই গণঅভ্যুত্থান ২০২৪-এর শহীদ স্মরণে অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে কথা বলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ। সঞ্চালানায় ছিলেন লেখক ও সাংবাদিক জুবায়ের ইবনে কামাল।
লেখক বলছি মঞ্চে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন কবি ও কথাসাহিত্যিক ইকতিজা আহসান ও কবি মৃদুল মাহবুব। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা আবৃত্তি করেন কবি মোসা. ইসমত আরা এবং কবি মুহাম্মদ ইসমাইল। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী আরিফুল হাসান এবং আফরোজা পারভীন।
আজকের পরিবর্তিত সময়সূচি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা জনিত কারণে আগামীকাল শনিবার সকাল ১১টার পরিবর্তে অমর একুশে বইমেলা শুরু হবে দুপুর দুইটায় এবং চলবে রাত নয়টা পর্যন্ত। মেলায় থাকবে না পূর্বঘোষিত শিশুপ্রহর।
এদিন চারটায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে ‘স্মরণ: মোহাম্মদ হারুন-উর-রশিদ’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন রফিক-উম-মুনীর চৌধুরী। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন আবদুস সেলিম এবং মোহাম্মদ হারুন রশিদ। সভাপতিত্ব করবেন খালিকুজ্জামান ইলিয়াস।
সকাল সাড়ে নয়টায় বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে শিশু-কিশোর সংগীত প্রতিযোগিতার প্রাথমিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
খুলনার দিঘলিয়ার নগরঘাট এলাকায় শেখ হাসিনার পৈতৃক সম্পত্তিতে ভাঙচুর ও লুটপাট চালিয়েছে একদল উত্তেজিত জনতা। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে এ হামলার ঘটনা ঘটে।
এ সময় তারা ‘আমার সোনার বাংলায় মুজিববাদের ঠাঁই নাই, জ্বালো-জ্বালো আগুন জ্বালো, আওয়ামী লীগের আস্তানা ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও, মুজিববাদের আস্তানা ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও’ ইত্যাদি স্লোগানও দেয়।
জানা গেছে, পাকিস্তান আমলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার স্ত্রী বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের নামে খুলনার দিঘলিয়ার ভৈরব নদের পাশে নগরঘাট এলাকায় ১ একর ৪৪ শতক (৪ বিঘা) জমিতে পাট গুদাম ও এক কক্ষের ঘরসহ জমি কেনেন। ওই জমিতে নির্মাণ করা হয় পাট গোডাউন, যা ওই এলাকায় ‘শেখ হাসিনার গোডাউন’ নামে পরিচিত।
এক সময় এই জমির কথা শেখ হাসিনা নিজেও জানতেন না। ২০০৭ সালে তার ব্যক্তিগত আইনজীবীর মাধ্যমে ওই জমির কথা জানতে পারেন তিনি।
এই পাট গুদাম দেখাশোনা করতেন বঙ্গবন্ধুর ছোটভাই শেখ আবু নাসের। এ ছাড়া বঙ্গবন্ধুর জীবদ্দশায় পাটের গুদাম ও এক কক্ষের আধাপাকা ঘর ছিল সেই জমিতে।
৩২ নম্বর থেকে ইট-রড, বিদ্যুতের তার নেওয়ার হিড়িক
এদিকে গুঁড়িয়ে দেওয়া ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর বাড়িটি ঘিরে তৃতীয় দিন শুক্রবারও ছিল উৎসুক জনতার ভিড়। বাড়িটি ভারী কোনো যন্ত্র দিয়ে ভাঙা না হলেও গতকাল যে যার মতো করে হাতুড়িপেটা করে ইট খুলে, হ্যাকসো ব্লেড দিয়ে রড কেটে নিয়ে যায়।
এর আগে বুধবার রাতে একটি ক্রেন ও দুটি এক্সক্যাভেটর দিয়ে বাড়িটি ভাঙা শুরু হয়। পরদিন বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত একটি এক্সক্যাভেটর দিয়ে চলে ভাঙার কাজ। এরপর এক্সক্যাভেটরটি সরিয়ে নেওয়ার পর আর কোনো ভারী যন্ত্রপাতি আনা হয়নি।
বৃহস্পতিবার দিনভর সেখানে লুটপাটের পর শুক্রবারও ভবন দুটির ভাঙা স্তূপ থেকে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে রড বের করে কেটে নিয়ে যেতে দেখা গেছে। কেউ কেউ ভবনের দাঁড়িয়ে থাকা অংশে রোডের খোঁজে চালান হাতুড়ি। আবার কেউ ফাঁকা অংশের মাটি খুঁড়ে বের করছেন বৈদ্যুতিক তার।
তবে বাড়িটির ধ্বংসস্তূপ থেকে অনেকেই রড, লোহালক্কড় ও ইট নিয়ে নিচ্ছিলেন তাদের বেশির ভাগই নিম্নবিত্তের। বাড়িটির পেছনের ছয়তলা ভবনের ধ্বংসস্তূপের ভেতর থেকে লোহালক্কড় খুঁজে বের করার কাজে ব্যস্ত এক নারী সাংবাদিকদের বলেন, এসব লোহালক্কড় তিনি ভাঙ্গারি দোকানে বিক্রি করে দেবেন।
রাজধানীর মোহাম্মদপুর থেকে এসে ভবনের ভাঙা স্তূপ থেকে রড কাটতে থাকা এক ব্যক্তি বলেন, ‘সবাই নিতাছে, আমিও নিই। কালকেও কিছু নিয়া রাখছি। আজকে যা পারি একলগে কইরা বেচমু।’
এ ছাড়া কয়েকজন যুবককে মাটি খুঁড়ে বিদ্যুতের তার বের করতে দেখা যায়। তাদের একজন বলেন, ‘মাটি খুঁড়ে কারেন্টের তার বাইর করমু। তারের মেলা দাম পাওন যায়।’
বৃহস্পতিবার দিনভর এ ভবনে ভাঙচুর ও লুটপাটের পর বিকাল বেলায় সেখানে গরু জবাই করে বিরিয়ানি রান্নার পর রাতে জেয়াফতের আয়োজন করে একদল ছাত্র-জনতা।
শেখ সেলিমের বনানীর বাসায় আগুন
অন্যদিকে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ সেলিমের বনানীর বাসায় রাত দেড়টার সময় অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ প্রটেকশনের অভাবে ২টা ৪৫ মিনিট পর্যন্ত আগুন নেভাতে স্পটে যেতে পারেনি ফায়ার সার্ভিস।
বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের ডিউটি অফিসার গণমাধ্যমকে এমন তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, উচ্ছৃঙ্খল জনতা রাজধানীর বনানীতে সেলিমের বাসায় আগুন দিয়েছে। নিরাপত্তাজনিত কারণে ফায়ার সার্ভিসে গাড়ি ঘটনাস্থলে যেতে পারেনি।
এর আগে বুধবার রাতে বঙ্গবন্ধুর ধানমণ্ডি ৩২ নম্বর বাসায় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে ছাত্র-জনতা। বুলডোজার দিয়ে বাড়িটির বেশির ভাগই মাটিতে মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগের নেতাদের বাসায় ও অফিসে ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে করা ৮ মামলার কার্যক্রম বাতিল করে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ করা হয়েছে। সম্প্রতি পৃথকভাবে এসব রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।
এর আগে গত বছরের অক্টোবরে বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রুল মঞ্জুর করে রায় দিয়েছিলেন।
আট মামলার মধ্যে বাস পোড়ানোর অভিযোগে দারুস সালাম থানায় ২০১৫ সালের ২৯ জানুয়ারি, ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০ ফেব্রুয়ারি, ১ মার্চ, ৩ মার্চ এবং যাত্রাবাড়ী থানায় ২৩ জানুয়ারি ও ২৪ জানুয়ারি এসব মামলা দায়ের করা হয়। পরে এসব মামলায় অভিযোগপত্র দেওয়া হয়।
২০১৭ সালে পৃথকভাবে মামলার কার্যক্রম বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেন খালেদা জিয়া। তখন হাইকোর্ট রুল জারি করে মামলার কার্যক্রমের ওপর স্থগিতাদেশ দেন। সেই রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে গত বছরের অক্টোবরে রুল মঞ্জুর করে রায় দেন হাইকোর্ট।
আদালতে খালেদা জিয়ার পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জমির উদ্দিন সরকার, জয়নুল আবেদীন, এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন, মো. রুহুল কুদ্দুস কাজল, কায়সার কামাল, গাজী কামরুল ইসলাম সজল, শেখ মোহাম্মদ আলী, মো. জাকির হোসেন ভূঁইয়া, কাজী আক্তার হোসেন, রাগীব রউফ চৌধুরী, এ আর রায়হান, গাজী তৌহিদুল ইসলাম, মো. মনিরুজ্জামান আসাদ প্রমুখ।
রায়ের পর জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন সাংবাদিকদের বলেছিলেন, আদালত ওই সব মামলায় রুল অ্যাসলিউট করেছেন। এর অর্থ হলো- মামলাগুলো বাতিল হয়ে গেল। এই মামলাগুলো আর থাকল না। অর্থাৎ খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে করা এসব মামলা থেকে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হলো।
অভিনেত্রী-গায়িকা মেহের আফরোজ শাওন ও অভিনেত্রী সোহানা সাবাকে জিজ্ঞাসাবাদের পর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্রের অভিযোগে দুজনকে ডিবি কার্যালয়ে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এরপর তাদের নিজ নিজ পরিবারের জিম্মায় দেওয়া হয়েছে।
আজ শুক্রবার বিকেলে ডিএমপি মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, ডিবি কার্যালয় থেকে মেহের আফরোজ শাওন এবং অভিনেত্রী সোহানা সাবাকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে নিজ নিজ পরিবারের জিম্মায় দেওয়া হয়েছে।
গত ১৫ জানুয়ারি কলকাতার হোটেল পার্কে অনুষ্ঠিত সভায় সরাসরি ও ভার্চুয়ালি যারা উপস্থিত ছিলেন তাদের মধ্যে শাওনের নাম উঠে আসে। এরপর তাকে গোয়েন্দা নজরদারিতে রাখা হয়।
গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে এ অভিনেত্রীকে রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্রের অভিযোগে হেফাজতে নেয় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। রাজধানীর ধানমন্ডির বাসা থেকে তাকে একটি মাইক্রোবাসে সরাসরি মিন্টো রোডের ডিবি কার্যালয়ে নেওয়া হয়।
একইদিন সন্ধ্যায় এ অভিনেত্রীর জামালপুরে নরুন্দি রেলওয়ে সংলগ্ন বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করার খবর পাওয়া যায়।
অন্যদিকে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকা থেকে অভিনেত্রী সোহানা সাবাকে আটক করে মিন্টো রোডের ডিবি কার্যালয়ে নেওয়া হয়।
ডিবি সূত্রে জানা গেছে, অভিনেত্রী শাওনের পর সোহানা সাবা তাদের নজরদারিতে ছিলেন। তার বিরুদ্ধে দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রের অভিযোগ রয়েছে।
জানা গেছে, আওয়ামী লীগপন্থি শিল্পীদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ ‘আলো আসবেই’ এর সক্রিয় সদস্য ছিলেন অভিনেত্রী সোহানা সাবা।
দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগ নেতাদের সম্পত্তিতে হামলা না চালানোর আহ্বান জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, তাদের সম্পত্তির ওপর হামলা চালালে তারা আন্তর্জাতিক মনোযোগ আকর্ষণের সুযোগ পাবে এবং তাদের সাজানো গল্প ছড়ানোর চেষ্টা করবে। আইনশৃঙ্খলার কোনো অবনতি হলে তা বিশ্বে ভুল বার্তা দেবে।
আজ শুক্রবার প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এক সরকারি বিবৃতিতে এসব কথা জানান।
বিবৃতিতে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, (শেখ হাসিনার এ কর্মকাণ্ড) দেশকে তার নিপীড়নের যুগ থেকে পুনরুদ্ধার হতে বাধাগ্রস্ত করছে। অবিলম্বে সম্পূর্ণ আইনশৃঙ্খলা পুনরুদ্ধার করতে হবে। কোনো অজুহাতে শেখ হাসিনার পরিবার ও ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ দলের রাজনীতিবিদদের সম্পত্তির বিরুদ্ধে বা কোনো নাগরিকের বিরুদ্ধে আর কোনো হামলা করা যাবে না।
তিনি বলেন, যারা (আওয়ামী লীগ নেতাদের) সম্পত্তির ওপর হামলা চালিয়েছে, এতে তাদের ক্ষোভ বোঝা যায়। কারণ তারা ও তাদের আত্মীয়-স্বজন শেখ হাসিনার শাসনামলে বছরের পর বছর নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। সরকার বুঝতে পারে যে, শেখ হাসিনা দিল্লিতে আশ্রয় নিয়েও তার সন্ত্রাসীদের সক্রিয় করার চেষ্টা করছেন। তবে এই বাস্তবতা বোঝার পরও, সরকার সব নাগরিকের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে যে, আমাদের অবশ্যই আইন মেনে চলতে হবে। বিশ্বকে দেখাতে হবে যে আমরা আইনের শাসনকে সম্মান করি। আইনের শাসন মেনে চলাই আমাদের নতুন বাংলাদেশের বৈশিষ্ট্য, যা পুরোনো ফ্যাসিবাদী শাসন থেকে আমাদের আলাদা করেছে। আমাদের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার ভিত্তিকে দুর্বল করা যাবে না। আইনের প্রতি কোনো অবজ্ঞা নাগরিকদের জীবন ও সম্পত্তিকে ঝুঁকির মুখে ফেলবে।
ড. ইউনূস বলেন, যেসব নাগরিক শেখ হাসিনার শাসনের বিরুদ্ধে জুলাই ও আগস্ট মাসে রুখে দাঁড়িয়েছিল, তাদের স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য নিজেদের ও বিশ্বের বন্ধুদের সামনে প্রমাণ করতে হবে যে, আমরা ন্যায়বিচারের পক্ষে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। পরস্পরের নাগরিক ও মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং আইন মেনে চলার বিষয়ে অবিচল। একটি ন্যায়সঙ্গত নতুন বাংলাদেশের পক্ষের সংগ্রামীদের এমন কিছু করা উচিত নয়, যা বর্তমান প্রতিষ্ঠানগুলোর আচরণকে আগের স্বৈরাচারী শাসনের সঙ্গে তুলনা করার সুযোগ তৈরি করে।
সরকারপ্রধান বলেন, আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী এ বিষয়ে সচেতন। সরকার আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে এবং সব বাংলাদেশির জীবন ও সম্পত্তির সুরক্ষা নিশ্চিত করতে কাজ করছে। যদি কেউ দেশে অস্থিরতা সৃষ্টি করার জন্য উসকানিমূলক কার্যকলাপে লিপ্ত হয়, তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাৎক্ষণিক কঠোর ব্যবস্থা নেবে। যে কোনো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টাকারীদের বিচারের আওতায় আনা হবে।
তিনি আরও বলেন, ফ্যাসিবাদী নেতারা দেশকে চরম দুর্দশার মধ্যে ফেলে গেছেন। যতদিন আমরা সজাগ থাকবো এবং নৈতিক উচ্চতা ধরে রাখবো, ততদিন তারা ফিরে আসার কোনো সুযোগ পাবে না। তাদের সম্পত্তির ওপর হামলা চালালে তারা আন্তর্জাতিক মনোযোগ আকর্ষণের সুযোগ পাবে এবং তাদের সাজানো গল্প ছড়ানোর চেষ্টা করবে। আমরা তাদের মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য বিচারের আওতায় আনছি। সারাবিশ্ব আমাদের সঙ্গে আছে। আইনশৃঙ্খলার কোনো অবনতি হলে তা বিশ্বে ভুল বার্তা দেবে।
দেশের সব নাগরিকের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমরা যেন এমন একটি দেশ গড়ে তুলি, যেখানে সব বাংলাদেশি নিরাপত্তা ও সম্মানের সঙ্গে বসবাস করতে পারে। এজন্য আমাদের আত্মনিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে হবে। ইতিবাচক পরিবর্তনের পক্ষে গঠনমূলক ও শান্তিপূর্ণ উদ্যোগে নিজেদের শক্তিকে কাজে লাগাতে হবে।
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন (এলজিআরডি) ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেছেন, রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার ব্যাপারে বর্তমান সরকার শিগগিরই পদক্ষেপ নেবে।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রথমত এটা অত্যন্ত ইতিবাচক যে, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার ব্যাপারে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেও এক ধরনের ‘ঐকমত্য’ তৈরি হচ্ছে। দেশের মানুষ তৎকালীন ক্ষমতাসীন ওই দলের অগণতান্ত্রিক এবং একগুয়েমী মনোভাব ও কার্যকলাপ মেনে নিতে পারেনি বলেই ৫ আগস্টের আগে ও পরে তাদের মধ্যে দলটি নিষিদ্ধ করার বিষয়ে ‘ঐকমত্য’ প্রতিষ্ঠিত হয়। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এমন ঐকমত্য তৈরি হলে সরকারের জন্য যে কোনো সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা সহজ হবে।
আসিফ মাহমুদ আজ শুক্রবার বার্তা সংস্থা বাসস’র সঙ্গে একান্ত সাক্ষাতকারে এসব কথা বলেন।
রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার ব্যাপারে সরকার সহসাই কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে কিনা? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, আমি মনে করি, সাধারণ মানুষ কিংবা রাজনৈতিক দল; যে বা যারাই হই না কেনো, আমরা এ দেশের জনগণকে ‘রিপ্রেজেন্ট’ করি। ফলে, ৫ আগস্টের পরে জনগণের যে আকাঙ্খা ও চাওয়ার জায়গা আছে, সেগুলোকে প্রাধান্য দেয়াটাই আমাদের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিৎ। সে জায়গা থেকে বিএনপি’র পক্ষ থেকে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের যে দাবি উঠেছে, আমি বিষয়টিকে সাধুবাদ জানাতে চাই।
অন্তর্বর্তী সরকারের যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বলেন, বিচারিক প্রক্রিয়া ছাড়াও ৪টি আইন রয়েছে, যেখানে সরকার নির্বাহী আদেশে যে কোনো দলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে। তবে, এটার লিগ্যাল ফ্রেমওয়ার্কটা (আইনি কাঠামো) কী হবে, এ বিষয়ে সরকার এখনো সিদ্ধান্ত নেয়নি।
তিনি বলেন, বিচারিক প্রক্রিয়ায় স্বাভাবিক ভাবেই জুলাই আগস্টের গণহত্যার সঙ্গে স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের সম্পৃক্ততা প্রমাণিত হওয়ার কথা। সেক্ষেত্রে আওয়ামী লীগকে দলীয় ভাবে নিষিদ্ধ করা, নিবন্ধন বাতিল করাসহ যে কোনো ব্যবস্থা সরকার গ্রহণ করতে পারে। তবে বিষয়টি যেহেতু আইনের বাস্তয়নের সঙ্গে যুক্ত, সেক্ষেত্রে সরকার প্রয়োজনীয় সকল প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই আওয়া লীগ নিষিদ্ধ করার বিষয়ে একটি চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে আসবে।
তিনি বলেন, আমি আশ্বস্ত করতে চাই, বাংলাদশের জনগণের চাওয়া প্রতিফলন ঘটাতে সরকার এ ব্যাপারে দ্রুতই পদক্ষেপ নেবে।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষার্থীদের নতুন রাজনৈতিক দল গঠন প্রসঙ্গে সরকারের এই উপদেষ্টা বলেন, ৫ আগস্টের পরিবর্তনের পরে আমরা একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করেছি। একটি গণঅভ্যুত্থান যারা ঘটায়, পরবর্তী প্রক্রিয়ার সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ততা না থাকার কারণে আমরা অতীতে দেখেছি যে, অভ্যুত্থানের অর্জনগুলো সব নষ্ট হয়ে যায়।
তিনি বলেন, নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থানের পরেও মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়নি। এ বিষয়গুলো বিবেচনা করেই যারা স্বৈরাচার হটানোর আন্দোলনে অগ্রভাগে নেতৃত্ব দিয়েছে তারা একটি দল গঠনের চিন্তা করেছে। তাছাড়া ৫ আগস্টের পর গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেয়া অনেকেই কোনো রাজনৈতিক ব্যানারে যায়নি।
আসিফ বলেন, ‘বর্তমানে তাদের ভেতরেও রাষ্ট্র গঠনের স্পৃহা তৈরি হয়েছে। এই শক্তিটাকে সংহত করার জন্য একটা রাজনৈতিক দলের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, দল গঠনের সিদ্ধান্ত হলেও এ দলের কোন নাম এখনো চূড়ান্ত হয়নি। ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয়ার্ধে নতুন দলটির আত্মপ্রকাশের বিষয়ে চিন্তা করা হচ্ছে বলে এখন পর্যন্ত জানতে পেরেছি।’
ছাত্রদের নতুন দলে সরকারের কোন প্রতিনিধি থাকবে কিনা? এমন প্রশ্নের জাবাবে আসিফ মাহমুদ বলেন, এ বিষয় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে আমাদের নীতিগত অবস্থান হলো- বর্তমান সরকারে ছাত্র প্রতিনিধি যারা আছেন তাদের মধ্যে থেকে কেউ যদি রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় অংশ গ্রহণ করেন, সেক্ষেত্রে তাদের সরকারে থাকাটা ঠিক হবে না। কেউ যদি সেই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যায় তো অবশ্যই সরকার থেকে পদত্যাগ করে তবেই সেখানে যাবে।
কারণ, এ সরকার একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন করার দায়িত্ব নিয়েছে। পাশাপাশি, দেশের সংস্কার এবং ফ্যাসিস্টদের বিচার কাজ শেষ করার দায়িত্বও তাদের উপর অর্পিত রয়েছে। সেক্ষেত্রে কোন ধরণের ‘কনফ্লিক্ট’ যেন তৈরি না হয় সে বিষয়ে সর্বোচ্চ সতর্ক থেকেই সকল সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষার্থীদের নতুন রাজনৈতিক দলে তিনি থাকবেন কি না এ বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেননি জানিয়ে আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি ভাবিনি। কিছু বিষয় পর্যালোচনা করছি। সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হলে সবাই জানতে পারবে।’
সরকার চায় সংস্কার, রাজনৈতিক দলগুলো চায় নির্বাচন, এক্ষেত্রে বিষয় দুইটি সাংঘর্ষিক হয়ে যাচ্ছে কিনা? এমন প্রশ্নের জবাবে এলজিআরডি উপদেষ্টা বলেন, না, মোটেই সাংঘর্ষিক নয়। এ বিষয়গুলোর পুরোটাই আমাদের সদিচ্ছার ওপর নির্ভর করে।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এই সরকার স্পষ্টই একটি ইতিবাচক রাজনৈতিক কাঠামো নির্মাণের দায়িত্ব নিয়ে ক্ষমতায় এসেছে। ৫ আগস্টের পরে মানুষের মধ্যে এই মনোভাবই ছিল যে- যে কোনো একটি রাজনৈতিক দলকে যদি ক্ষমতায় বসিয়ে দেয়া হয়, তবে সেও ওই একই গতানুগতিক ধারায় কাজ করবে। তবে এসব বিষয়ে অনেকগুলো চ্যালেঞ্জ এই সরকারও ফেইস করছে। কারণ, সমাজের প্রত্যেকটি কাঠামোতেই স্বৈরাচারের দোসররা রয়ে গেছে।
আসিফ মাহমুদ সংস্কার কমিশন যে ৬ রির্পোট দেয়া হয়েছে প্রসঙ্গটি উল্লেখ করে বলেন, এই রিপোর্টগুলো যথাযথ স্টেক হোল্ডারের কনসালটেশনের মাধ্যমে বাস্তবায়নের মধ্য দিয়েই একটি সুষ্ঠ নির্বাচনের মাঠ তৈরি হতে পারে।
তিনি আরও বলেন, ‘যে রাজনৈতিক দলগুলো শেখ হাসিনার সময় বলে আসছিল, বিদ্যামান কাঠামোতে নির্বাচন সম্ভব নয়, তারা এখন আবার একই বিদ্যমান কাঠামোতে নির্বাচনের কথা কোন গ্রাউন্ড থেকে বলছে এটা আমার কাছে স্পষ্ট নয়। সেটাও তাদেরকে স্পষ্ট করতে হবে। একই সংবিধান, আইনকানুন রেখে নির্বাচন করলে সেটা স্বৈরাচার শেখ হাসিনার আমলের নির্বাচন থেকে কতটা আলাদা হবে সেটা আমার বোধগম্য নয়।’
যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা যদি সংস্কার ছাড়া নির্বাচন করে কোনো দলের হাতে ক্ষমতা দিয়ে দিই, তাদের জন্য সরকার চালানো কঠিন হবে। এ কারণেই ছয়টা সংস্কার কমিশনকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। কারণ, এগুলো শাসনতান্ত্রিক। বাকি সংস্কারগুলো জনস্বার্থমূলক। সেগুলোও সমান গুরুত্বপূর্ণ সুতরাং আমরা মনে করি, এখানে মিনিংফুল সংস্কারের মাধ্যমেই নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত হতে পারে এবং সংস্কার কার্যক্রম ও আওয়ামী লীগের দৃশ্যমান বিচারের মাধ্যমেই নির্বাচনের ক্ষেত্র প্রস্তুত হবে।’
খবরের বাহন হিসাবে প্রচলিত গণমাধ্যমের চেয়ে মোবাইল সেটের ওপর মানুষের নির্ভরতা বেশি। সামগ্রিকভাবে গণমাধ্যমের ওপর মানুষ আস্থা হারাননি। তবে রাজনৈতিক, সরকারি ও প্রভাবশালীদের হস্তক্ষেপকে বস্তুনিষ্ঠ খবর প্রকাশের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় হিসাবে দেখা হচ্ছে। গতকাল গণমাধ্যম বিষয়ে জাতীয় জনমত জরিপের প্রকাশিত ফলে আপামর জনতার এ মনোভাব প্রকাশ করা হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের জন্য জরিপটি করেছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। গণমাধ্যমের ব্যবহার নিয়ে জাতীয় পর্যায়ে ব্যাপকভিত্তিক এ ধরনের জরিপ দেশে এটিই প্রথম।
বৃহস্পতিবার গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের সিনিয়র তথ্য অফিসার মোহাম্মদ সায়েম হোসেন স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ জরিপ প্রকাশ করা হয়।
এতে বলা হয়, জুলাই আন্দোলনে গণমাধ্যমের ভূমিকা নিয়ে পাঠক, দর্শক ও শ্রোতাদের মনোভাব জানার জন্য পরিচালিত এক জরিপে বিভিন্ন চিত্র উঠে এসেছে। এতে বলা হয়, খবরের বাহন হিসাবে প্রচলিত গণমাধ্যমের চেয়ে মোবাইল সেটের ওপর মানুষের নির্ভরতা বেশি। সামগ্রিকভাবে গণমাধ্যমের ওপর মানুষ আস্থা হারাননি। তবে রাজনৈতিক, সরকারি ও প্রভাবশালীদের হস্তক্ষেপকে বস্তুনিষ্ঠ খবর প্রকাশের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় হিসাবে দেখা হচ্ছে।
জরিপে বলা হয়, মানুষ মুদ্রিত খবরের কাগজ কম পড়লেও অনলাইন সংস্করণ পড়ছেন মোবাইলে। জাতীয় দুর্যোগ বা সংকটে তথ্য খোঁজার জন্য এখনো মানুষ চোখ রাখেন টেলিভিশনের পর্দায়। তবে তথ্য সংগ্রহের মাধ্যম হিসাবে রেডিওর প্রাসঙ্গিকতা তলানিতে। জরিপে গণমাধ্যমকে স্বাধীন, পক্ষপাতহীন, সরকারি ও রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত দেখার আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করা হয়েছে। তবে বেশির ভাগ উত্তরদাতাই মনে করেন, বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতার সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকা উচিত।
গণমাধ্যমবিষয়ক জাতীয় এ জনমত জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ৭৩ শতাংশ জানিয়েছেন, তারা মুদ্রিত সংবাদপত্র পড়েন না। কারণ, হিসাবে ৪৬ ভাগ অংশগ্রহণকারী জানিয়েছেন, খবরের কাগজ পড়ার প্রয়োজন মনে করেন না তারা। টেলিভিশনের ক্ষেত্রে এ হার ৫৩ শতাংশের বেশি। তবে জরিপে অংশ নেওয়া ৬৫ ভাগ মানুষ জানিয়েছেন তারা টেলিভিশন দেখেন।
জরিপে বলা হয়, পরিসংখ্যানে রেডিওর অবস্থা বেশি নাজুক। ৯৪ শতাংশ জানিয়েছেন তারা রেডিও শোনেন না। তাদের ৫৪ শতাংশ বলেছেন, তারা রেডিও শোনার প্রয়োজন মনে করেন না। প্রায় ৩৫ শতাংশ অংশগ্রহণকারী রেডিও সেটের অপ্রাপ্যতার কথা উল্লেখ করেছেন।
এ বছর পহেলা জানুয়ারি থেকে সাত জানুয়ারি দেশের ৬৪ জেলায় ৪৫ হাজার খানা (হাউসহোল্ড) থেকে ১০ বছরের বেশি বয়সের সদস্য থেকে উত্তর সংগ্রহ করা হয়েছে। এর মাধ্যমে গণমাধ্যমের বিস্তার, মানুষের সংবাদ গ্রহণের অভ্যাসের পরিবর্তন, গণমাধ্যমের ওপর মানুষের আস্থা, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ইত্যাদি বিষয় প্রতিফলিত হয়েছে। এতে দেখা গেছে, মুদ্রিত খবরের কাগজ না পড়লেও ৫৯ শতাংশ উত্তরদাতা মোবাইল ফোনে অনলাইন সংস্করণ দেখেন। কম্পিউটার, ল্যাপটপ বা ট্যাব-এ পত্রিকার অনলাইন সংস্করণ দেখেন বলে জানিয়েছেন আড়াই শতাংশ উত্তরদাতা। সামগ্রিকভাবে ৮৮ শতাংশ উত্তরদাতা জানান, তারা গণমাধ্যমের জন্য মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন।এক্ষেত্রে কম্পিউটার ব্যবহারের হার ৭ শতাংশ।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোর মধ্যে খবরের জন্য ৩১ শতাংশ উত্তরদাতার আস্থা রয়েছে ফেসবুকে। এরপর ইউটিউবে ১৬.৫ শতাংশ। কোনো কিছু শিখা বা জ্ঞানার্জনের জন্য প্রচলিত গণমাধ্যমের চেয়ে শিক্ষকের ওপরই ভরসা বেশি। এক্ষেত্রে ৪২ শতাংশ উত্তরদাতার কাছে শিক্ষকরাই সর্বাধিক বিশ্বাসযোগ্য।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস যত দ্রুত সম্ভব আয়নাঘর পরিদর্শনে যাবেন। এ সময় দেশি-বিদেশি মিডিয়া কর্মীরা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে থাকবেন। বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। সভায় রমজানে দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্যে টিসিবির মাধ্যমে পণ্য বিক্রয় কার্যক্রম এবং ব্যাপকহারে আমদানি ও সুষ্ঠু সরবরাহ নিশ্চিত করতে গৃহীত পদক্ষেপ সম্পর্কে আলোচনা হয়। সভায় রমজানে লোডশেডিং না রাখা এবং বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার বিষয়ে আলোচনা হয়।
রাষ্ট্রীয় শত শত কোটি কোটি টাকা অপচয় করে বিদেশ ভ্রমণ ও ভুয়া ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জনে সাবেক শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
বৃহস্পতিবার দুদকের প্রধান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন এসব তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, দুদকের গোয়েন্দা অনুসন্ধানে অভিযোগের প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়ার পর প্রকাশ্যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
দুদক জানায়, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিদেশ সফরে গেলে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের উড়োজাহাজ ভাড়া করতেন সরকারি টাকায়। নিয়ে যেতেন সফরসঙ্গীদের বিশাল বহর। টানা ১৬ বছর ক্ষমতায় থাকাকালে প্রায় প্রতি জাতিসংঘের অধিবেশনে সরকার প্রধান হিসেবে যোগ দিয়েছেন তিনি। প্রতিবারই নিউইয়র্ক নিয়ে যেতেন বিশাল বহর। শেখ হাসিনা ২০১৫ সালে ২২৭ জনের একটি দল নিয়ে নিউইয়র্কে ৭০তম সাধারণ অধিবেশন এবং টেকসই উন্নয়ন বিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে যান। ২০১৪ সালে ৬৯তম সাধারণ অধিবেশনে এই সংখ্যা ছিল ১৭৮ এবং ২০১৩ সালে এই সংখ্যা ছিল ১৩৪।
অভিযোগে বলা হয়েছে, ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন দেশে বিমানের বোয়িং ৭৭৭ ও ৭৮৭ সিরিজের অত্যাধুনিক উড়োজাহাজে যেতেন। ২০১৯ থেকে ২০২৪ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত গত পাঁচ বছরে রাষ্ট্রীয় উড়োজাহাজ সংস্থাটি ২৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৪৮টি ভিভিআইপি ফ্লাইট পরিচালনা করেছে। এসব সফরে শেখ হাসিনা ব্যয় করেছেন প্রায় ২০০ কোটি টাকা। ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২১ তারিখে স্থানীয় সময় বিকেলে হেলসিঙ্কি-ভান্তা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ভিভিআইপি ফ্লাইট বিজি-১৯০২ যোগে নিউইয়র্কের উদ্দেশে রওনা হন প্রধানমন্ত্রী। অন্যদিকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভুয়া ডক্টরেট সংগ্রহ করেছেন। দেশের সরকারি টাকা লবিস্ট এর পিছনে ব্যয় করে মানদন্ড ভংগ করে সংগ্রহকৃত উল্লেখযোগ্য কয়েকটি ভুয়া ডক্টরেট হলো-ভারতের ত্রিপুরা বিশ্ববিদ্যালয়, বেলজিয়ামের ক্যাথলিক বিশ্ববিদ্যালয় অব ব্রাসেলস, ভারতের বিশ্ব-ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়।
প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে দেশ টেলিভিশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরিফ হাসানসহ সিকদার পরিবারের বিরুদ্ধে ৪টি মামলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে দায়েরের অনুমোদন দিয়েছে সংস্থাটি।
বৃহস্পতিবার এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান দুদকের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. আক্তার হোসেন।
তিনি বলেন, সিকদার পরিবার ও দেশ টেলিভিশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরিফ হাসান পরস্পর যোগসাজশে চারটি প্রতিষ্ঠানের নামে এক হাজার ৪১৪ কোটি ৪৭ লাখ ৩৫ হাজার ৭৩৮ টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাৎ করেছেন বলে দুদকের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে।
মো. আক্তার হোসেন জানান, সিকদার পরিবার ও দেশ টেলিভিশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরিফ হাসান পূর্বপরিকল্পিতভাবে পরস্পর যোগসাজশে দেশ টেলিভিশন লিমিটেডের কতিপয় কর্মচারীর নামে ভুয়া তথ্য দিয়ে ব্রডওয়ে রিয়েল এস্টেট লিমিটেড নামের একটি কাগুজে ডেভেলপমেন্ট প্রতিষ্ঠান নিবন্ধিত করেন। এ কাগুজে প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব জমিতে ১৬ তলা বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণের জন্য ন্যাশনাল ব্যাংকের মহাখালী শাখায় ব্রডওয়ে রিয়েল এস্টেট লিমিটেডের নামে ৪৯০ কোটি টাকা ঋণের আবেদন করেন। প্রকল্পের জমি কোম্পানির নিজস্ব জমি না হওয়া সত্ত্বেও নিজস্ব জমি হিসেবে ঘোষণা দিয়ে একই ব্যাংকের শাখা থেকে হাসান টেলিকম লিমিটেডের নামে গৃহীত ঋণের মর্টগেজ করা সম্পত্তির তথ্য গোপন করে তা মর্টগেজ দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়। পরে ব্যাংকিং নীতিমালা সম্পূর্ণরূপে উপেক্ষা করে ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে ব্যাংকের নির্বাহী ও কিছু অসৎ কর্মকর্তার সহযোগিতায় অবৈধভাবে ৪৯০ কোটি টাকা ঋণ মঞ্জুর ও তা উত্তোলন করে ভিন্ন খাতে স্থানান্তর, রূপান্তর ও হস্তান্তরের মাধ্যমে ঋণের আসল ৪৯০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন। গত বছরের ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত অনাদায়ে সুদ ও অন্যান্য চার্জ বাবদ ১৭৮ কোটি ৮৯ লাখ ১১ হাজার ৪১২ টাকা প্রতিষ্ঠানের আর্থিক ক্ষতি সাধন করেন। এতে তারা দণ্ডবিধি, দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন এবং মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের সংশ্লিষ্ট ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন। এসব অপরাধে ১৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এ মামলার আসামিরা হলেন- ব্রডওয়ে রিয়েল এস্টেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ শরীফ উজ্জামান খান, চেয়ারম্যান মো. ইসমাইল, পরিচালক মোহাম্মদ ফজলে রাব্বি, পরিচালক তওসিফ সাইফুল্লাহ্, দেশ টেলিভিশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, হাসান টেলিকম লিমিটেডের চেয়ারম্যান ও ব্রডওয়ে রিয়েলে এস্টেটের শেয়ার হোল্ডার আরিফ হাসান, ন্যাশনাল ব্যাংকের সাবেক শাখা ব্যবস্থাপক ও ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর সৈয়দ রইস উদ্দিন, ন্যাশনাল ব্যাংকের কোম্পানি সেক্রেটারি ও সাবেক অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ এস এম বুলবুল, একই ব্যাংকের সাবেক অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ ওয়াদুদ, ন্যাশনাল ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক চৌধুরী মোসতাক আহমেদ (সি এম আহমেদ), ন্যাশনাল ব্যাংক পরিচালনা পর্ষদ পরিচালক মনোয়ারা সিকদার, সাবেক পরিচালক পারভীন হক সিকদার, পরিচালক মোয়াজ্জেম হোসেন, সাবেক পরিচালক খলিলুর রহমান, সাবেক পরিচালক মাবরুর হোসেন ও সাবেক সাব রেজিস্টার মো. রজব আলী।
অন্যদিকে আসামিরা পূর্ব-পরিকল্পিতভাবে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে পরস্পর যোগসাজশে ক্ষমতার অপব্যবহার করে ন্যাশনাল ব্যাংকের গুলশান শাখা থেকে মরিয়ম কনস্ট্রাকশন লিমিটেডের নামে অবৈধভাবে ৩০০ কোটি টাকা ঋণ মঞ্জুর করে। পরে সেই অর্থ উত্তোলনের মাধ্যমে সুদ-আসলসহ ৫৮৩ কোটি ১৩ লাখ ৩ হাজার ৮৪৮ টাকা আত্মসাৎ করে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন। এজন্য ১২ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের অনুমোদন দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
এ মামলার আসামিরা হলেন- মরিয়ম কনস্ট্রাকশন লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলম আহমেদ, পরিচালক বাবু হরিদাস বর্মন, ন্যাশনাল ব্যাংকের সাবেক ডিএমডি আরীফ মো. শহীদুল হক, ব্যাংকের সাবেক অতিরিক্ত পরিচালক এ এস এম বুলবুল, এম এ ওয়াদুদ, সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক চৌধুরী মোসতাক আহমেদ (সিএম আহমেদ), সাবেক পরিচালক রন হক সিকদার, রিক হক সিকদার, মোয়াজ্জেম হোসেন, সাবেক সতন্ত্র পরিচালক এ কে এম এনামুল হক শামীম, সাবেক পরিচালক আলহাজ্ব খলিলুর রহমান, সাবেক পরিচালক জাকারিয়া তাহের, এবং মাবরুর হোসেন।
তৃতীয় মামলাটি প্রকৃতি অ্যাসোসিয়েটস লিমিটেডের নামে ঋণ নিয়ে আত্মসাতের অভিযোগে। আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে ক্ষমতার অপব্যবহার করে অস্তিত্ববিহীন প্রতিষ্ঠানের নাম-ঠিকানা ব্যবহার করে ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে ন্যাশনাল ব্যাংকের মহাখালী শাখা থেকে ৮০ কোটি টাকা ঋণ মঞ্জুর ও বিতরণ দেখিয়ে ঋণের অর্থ স্থানান্তর, রূপান্তর ও হস্তান্তর করে আত্মসাৎ করেন। অনাদায়ে সুদসহ ২১ কোটি ২৪ লাখ ১৯৯ টাকা প্রতিষ্ঠানের আর্থিক ক্ষতি সাধন করায় ১৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
মামলার আসামিরা হচ্ছেন- প্রকৃতি অ্যাসোসিয়েটস-এর প্রোপাইটর মো. শরীফ-উজ্জামান খান, দেশ টেলিভিশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরিফ হাসান, ব্যাংকটির সাবেক ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর সৈয়দ রইস উদ্দিন, সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক চৌধুরী মোসতাক আহমেদ, সাবেক অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ ওয়াদুদ, সাবেক এডিশনাল ম্যানেজিং ডাইরেক্টর এ এস এম বুলবুল, সাবেক সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট জহিরুল ইসলাম, সাবেক-ভাইস প্রেসিডেন্ট ও ক্রেডিট কমিটির সদস্য মোহাম্মদ আবু রাশেদ নোয়াব, পরিচালনা পর্ষদের সাবেক পরিচালক মনোয়ারা সিকদার, সাবেক সংসদ সদস্য ও ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদের পরিচালক পারভীন হক সিকদার, সাবেক পরিচালক খলিলুর রহমান, সাবেক পরিচালক মোয়াজ্জেম হোসেন, রন হক শিকদার, এবং মো. মাবরুর হোসেন।
চতুর্থ মামলাটি দায়েরের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে ঋনের নামে ৬১ কোটি ২১ লাখ ২০ হাজার ২৭৯ টাকা আত্মসাতের জন্য। ভিউ হোটেল অ্যান্ড রিসোর্ট লিমিটেডের নামে পূর্বপরিকল্পিত ও প্রতারণামূলকভাবে পটুয়াখালীর ন্যাশনাল ব্যাংকের কুয়াকাটা শাখা থেকে ৪০ কোটি টাকা ঋণ মঞ্জুর করে সেটা উত্তোলন করা হয়। পরে সুদ ও আসলসহ মোট ৬১ কোটি ২১ লাখ ২০ হাজার ২৭৯ টাকা আত্মসাৎ করা হয়। এ ঘটনায় ১১ জনকে আসামি করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
আসামিরা হলেন, ভিউ হোটেল অ্যান্ড রিসোর্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাহিদ সারওয়ার, পরিচালক মোস্তফা মঈন সারওয়ার, ব্যাংকের প্রিন্সিপাল অফিসার রুমি ইমরোজ রশিদ, উপ ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহ্ সৈয়দ আব্দুল বারী, ব্যবস্থাপনা পরিচালক চৌধুরী মোসতাক আহমেদ, সাবেক পরিচালক মনোয়ারা সিকদার, খলিলুর রহমান, মোয়াজ্জেম হোসেন, রিক হক সিকদার, মাবরুর হোসেন, এবং সাবেক সতন্ত্র পরিচালক নাঈমুজ্জামান ভূইয়া।
রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে জড়িত অভিযোগে অভিনয়শিল্পী মেহের আফরোজ শাওনকে আটক করা হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর ধানমন্ডি থেকে তাঁকে আটক করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার রেজাউল করিম মল্লিক গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগের উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বলেন, রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকার অভিযোগের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাঁকে ডিবি হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।
ডিবি হেফাজতে তাকে রাষ্ট্রীয় ষড়যন্ত্রের ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে জানা গেছে। শাওনকে সুনির্দিষ্ট মামলায় আদালতে উত্থাপন করে রিমান্ড চাওয়া হবে বলেও জানা যায়।
এদিকে আজ সন্ধ্যায় মেহের আফরোজ শাওনের জামালপুর সদর উপজেলার নরুন্দি রেলওয়ে স্টেশন সংলগ্ন এলাকায় অবস্থিত বাড়িতে আগুন দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। সম্প্রতি শাওনের রাজনৈতিক অবস্থান ও কিছু মন্তব্যকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন মহলে আলোচনা-সমালোচনা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় স্থানীয় বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা তার পরিবারের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করে এবং বাড়িটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়।
বাংলাদেশ থেকে রাশিয়ায় মানবপাচারকারী চক্রের মূলহোতা ফাবিহা জেরিন তামান্নাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) রাতে নেপালে পালিয়ে যাওয়ার সময় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
আজ বৃহস্পতিবার সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (গণমাধ্যম) জসীম উদ্দিন খান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, মাসে ২ থেকে আড়াই লাখ টাকা বেতনে কাজের প্রলোভন দেখিয়ে রাশিয়ায় মানবপাচার করছে একটি চক্র। ওই দেশে যাওয়ার পর ভুক্তভোগীদের সামরিক প্রশিক্ষণ দিয়ে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশ নিতে বাধ্য করা হয়। এতে রাজি না হলে তাদের ওপর চালানো হয় শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতন। এ জন্য প্রশিক্ষণ ক্যাম্প থেকে অনেকেই পালিয়ে যান।
জসীম উদ্দিন খান জানান, গ্রেপ্তার তামান্না ড্রিম হোম ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস লিমিটেডের অংশীদার। তিনি মানব পাচারকারী চক্রের অন্যতম সদস্য। এই চক্রের সদস্যরা রাশিয়ায় মাসে ২ থেকে আড়াই লাখ টাকা বেতনে চকলেট ফ্যাক্টরি, ক্লিনার অথবা বাবুর্চির কাজের প্রলোভন দেখিয়ে ১০ জনকে প্রথমে সৌদি আরব ওমরাহ ভিসায় পাঠায়। সেখানে ওমরা হজ করানোর পর তাদের রাশিয়ায় নিয়ে গিয়ে এক সুলতানের কাছে বিক্রি করে দেয়। সুলতান তাদের দাস হিসেবে রাশিয়ান সৈন্যদের কাছে হস্তান্তর করে।
সেখানে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কাজ না দিয়ে ভুক্তভোগীদের সামরিক প্রশিক্ষণ দিয়ে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশ নিতে বাধ্য করা হয়। তারা অনিচ্ছা প্রকাশ করলে চালানো হয় নির্যাতন। খাবার বন্ধ করে দেওয়ার মাধ্যমে তাদের মানসিক শক্তি ভেঙে দেওয়া হয়। পরে তারা বাধ্য হয়ে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশ নেন।
সিআউডি প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছে, যুদ্ধে নাটোর সিংড়া থানার হুমায়ুন কবির নামে এক ব্যক্তি নিহত এবং ঢাকার কেরানীগঞ্জের আমিনুল নামে একজন গুরুতর আহত হয়েছেন।
সিআইডি কর্মকর্তা জানান, ওই ১০ জনের একজন নরসিংদীর পলাশ থানার বাসিন্দা মো. আকরাম হোসেন (২৪) প্রশিক্ষণ ক্যাম্প থেকে পালিয়ে যান। পরে তিনি নিজ ব্যবস্থাপনায় গত ২৬ জানুয়ারি দেশে ফিরে আসেন। ফিরে এসে তিনি অন্যান্য ভুক্তভোগী পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তার কাছ থেকে তথ্য পেয়ে আমিনুলের স্ত্রী গত ২ ফেব্রুয়ারি বনানী থানায় একটি মামলা করেন। পরবর্তীতে পাচারকারী চক্রের সদস্য তামান্নাকে বিমানবন্দর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গেপ্তার আসামিকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, ওই ঘটনায় নিজের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেছেন তামান্না। একইভাবে ১০ জনের আরেকটি দল সৌদি আরবে অবস্থান করছে। প্রতারণার বিষয়টি জানতে পেরে তারা রাশিয়া যেতে অস্বীকার করেছে। এতে তাদের পাসপোর্ট কেড়ে নেওয়া হয়েছে। তাই তারা সৌদি আরবে কাজ করতে পারছে না, দেশেও ফিরতে পারছে না। এ চক্রের আরেক সদস্য তামান্নার ভাই তুহিন ভুক্তভোগীদের রাশিয়ায় যেতে উদ্বুদ্ধ করে। তিনি রাশিয়ায় অবস্থান করছেন।
ভুক্তভোগীদের দেশে ফিরিয়ে আনতে সংশ্লিষ্ট সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে সিআইডি যোগাযোগ করছে বলেও জানা এ সিআইডি কর্মকর্তা।
২৯তম বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডার সার্ভিসের ২৩ সদস্য বিশিষ্ট কার্যনির্বাহী কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। গতকাল বুধবার ঘোষিত এ কমিটিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব তারিক হাসানকে সভাপতি ও ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টার একান্ত সচিব র. হ. ম. আলাওল কবিরকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়েছে। অন্যদিকে সহ-সভাপতি-১ নির্বাচিত হয়েছেন মো. নাজমুল ইসলাম সরকার, সচিব, অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ ও চেয়ারম্যান, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের একান্ত সচিব। আ.স.ম. জামশেদ খোন্দকার, পুলিশ সংস্কার কমিশন প্রধান মহোদয়ের একান্ত সচিব সহ-সভাপতি-২, ড. আশফিকুন নাহার, উপসচিব, স্থানীয় সরকার বিভাগ সহ-সভাপতি ৩ নির্বাচিত হয়েছেন। এছাড়া মো. ইকবাল হোসেন, উপপরিচালক (উপসচিব), স্থানীয় সরকার, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, ঢাকা কোষাধ্যক্ষ এবং মো. সিরাজুল ইসলাম, উপসচিব, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় দপ্তর সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন।
উল্লেখ্য, গত ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪ তারিখে সকলের সম্মতিতে ২৯তম বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডার সার্ভিস এর পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের নিমিত্ত ১৫ সদস্য বিশিষ্ট আহবায়ক কমিটি গঠন করা হয়। এই আহবায়ক কমিটি সুষ্ঠুভাবে ২৯তম বিসিএস প্রশাসন ক্যাডার সার্ভিস এর নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে মো. রাশেদুল হক কে- প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং আমিনুল ইসলাম ও সোহানা নাসরিন কে নির্বাচন কমিশনার করে নির্বাচন কমিশন ঘোষণা করে। আজ নির্বাচন কমিশন সম্পূর্ণ গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে প্রথমবারের মতো ২৯ তম বিসিএস (প্রশাসন) এর ২৩ সদস্য বিশিষ্ট দ্বিবার্ষিক কার্যনির্বাহী কমিটি ঘোষণা করে।
সদ্য নির্বাচিত সভাপতি তারিক হাসান বলেন, ‘ব্যাচের জন্য যুগোপযোগী গঠনতন্ত্র প্রণয়ন, সকল সদস্যদের ডাটাবেজ প্রস্তুত এবং সদস্যদের গুণগত উৎকর্ষ সাধনের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিবো যা যুগের চাহিদা মিটাতে সক্ষম হবে। এছাড়া আন্ত:ক্যাডার সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বৃদ্ধি করে জনকল্যাণমুখী বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।’