আশ্বিন মাস শেষের দিকে। আর তিন দিন পরই শীতের আগমনি বার্তা নিয়ে প্রকৃতিতে আসবে হেমন্তকাল। শরৎকালের আশ্বিনজুড়েই এবার সারা দেশে ভারী বৃষ্টিপাত হয়েছে। আকাশে থেমে থেমে মেঘের উপস্থিতি আর জমিনে ঝরেছে প্রচণ্ড বৃষ্টি। ফলে প্রকৃতিতে অনেকটা কমেছে তাপপ্রবাহ। এ বছর শীতের আগমন আগেভাগেই হবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এখন থেকেই মাঝরাতের পর উত্তরাঞ্চলের জেলার গ্রামগুলোতে কুয়াশার উপস্থিতি পাওয়া যাচ্ছে বলে জানা যায়। তাই তো কার্তিক মাস আসার আগেই আরেক দফায় প্রকৃতিতে ঝড়-বৃষ্টির আভাস দিয়েছে আবহাওয়া অফিস।
দুই জেলার ওপর দিয়ে সর্বোচ্চ ৬০ কিলোমিটার বেগে ঝড় হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। এ জন্য এসব অঞ্চলের নদীবন্দরেও সতর্কতা দেখাতে বলা হয়েছে।
রোববার ঝোড়ো হাওয়ার পাশাপাশি এসব অঞ্চলে বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে বলে সকাল সাড়ে ৫টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত দেশের অভ্যন্তরীণ নদীবন্দরের জন্য দেওয়া আবহাওয়ার পূর্বাভাসে জানানো হয়।
ওই পূর্বাভাসে বলা হয়- ময়মনসিংহ ও সিলেট অঞ্চল সমূহের ওপর দিয়ে পশ্চিম/দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৪৫ থেকে ৬০ কিলোমিটার বেগে বৃষ্টি/বজ্রবৃষ্টিসহ অস্থায়ীভাবে দমকা/ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। এসব এলাকার নদীবন্দরগুলোকে ১ নম্বর নৌ-হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
অন্যদিকে আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে একটি লঘুচাপ সৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে বলে আভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। রোববার সকালে দেওয়া আবহাওয়ার পূর্বাভাসে এমন তথ্য জানানো হয়। এতে বলা হয়, দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু চট্টগ্রাম অঞ্চল ব্যতীত বাংলাদেশ থেকে বিদায় নিয়েছে। পরিস্থিতি অনুকূলে থাকলে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বাংলাদেশের অবশিষ্টাংশ থেকে বিদায় নিতে পারে। আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে একটি লঘুচাপ সৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, বাংলাদেশে উদ্ভিদ প্রজাতির সংরক্ষণ ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে এক হাজার উদ্ভিদ প্রজাতির একটি লাল তালিকা তৈরি করেছে সরকার।
আজ সোমবার মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ‘বাংলাদেশে উদ্ভিদের লাল তালিকা বই’ প্রকাশনা অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি।
এসময় তিনি তালিকা তৈরির মাধ্যমে উদ্ভিদের বিপদগ্রস্ত প্রজাতির সঠিক মূল্যায়ন করা সম্ভব বলেও উল্লেখ করেন। রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘এই তালিকায় ২৭১ প্রজাতি ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত, ২৫৬ প্রজাতি তথ্য-অপ্রতুল, ৩৯৫ প্রজাতি বিপদাপন্ন, যার মধ্যে ৫টি মহাবিপন্ন, ১২৭টি বিপন্ন এবং ২৬৩টি সংকটাপন্ন। ৭০টি প্রজাতিকে প্রায় বিপদগ্রস্ত এবং ৭টি আঞ্চলিকভাবে বিলুপ্ত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।’
উপদেষ্টা বলেন, ‘এই উদ্যোগ উদ্ভিদ সংরক্ষণকে অগ্রাধিকার দিতে সহায়ক হবে এবং সরকারের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ লক্ষ্য অর্জনে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।’
‘এছাড়া ‘দ্য এনসাইক্লোপিডিয়া অব ফ্লোরা এন্ড ফাউনা অব বাংলাদেশ’ এর তথ্য অনুযায়ী ৩,৮১৩ উদ্ভিদ প্রজাতি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যেগুলোর ভবিষ্যতে মূল্যায়ন জরুরি। এই তালিকা নীতিনির্ধারক ও গবেষকদের জন্য একটি মূল্যবান সম্পদ হিসেবে কাজ করবে। এটি পরিবেশগত স্থিতিশীলতা অর্জনে এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে জীববৈচিত্র্য রক্ষায় অবদান রাখবে’- বললেন রিজওয়ানা হাসান।
তিনি বলেন, ‘উদ্ভিদ রেড লিস্ট সংরক্ষণবিদদের জন্য অপরিহার্য তথ্য ভাণ্ডার হবে, যা সংরক্ষণ প্রচেষ্টা ও সম্পদের কার্যকর বরাদ্দ নিশ্চিত করবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আগ্রাসী উদ্ভিদ প্রজাতির প্রভাব হ্রাসের জন্য আমরা পাঁচটি নির্বাচিত সংরক্ষিত বনাঞ্চলে বিশেষ ব্যবস্থাপনা কৌশল প্রণয়ন করেছি। গবেষণায় বাংলাদেশে ১৭টি আক্রমণাত্মক উদ্ভিদ প্রজাতি চিহ্নিত করা হয়েছে, যেমন কচুরিপানা ও আসাম লতা। এগুলো পরিবেশে বিপর্যয় ডেকে আনছে এবং প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। এই কৌশলগুলোর মধ্যে আক্রমণাত্মক প্রজাতির ওপর আমদানি নিষেধাজ্ঞা, বাণিজ্যিকীকরণ রোধ, এবং কার্যকর ব্যবস্থাপনা পদ্ধতির প্রয়োগ অন্তর্ভুক্ত থাকবে। এই উদ্যোগগুলো বন ও বনসম্পদ সংরক্ষণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক মানে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।’
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এএসএম হুমায়ুন কবির, অতিরিক্ত সচিব ফাহমিদা খানম, অতিরিক্ত সচিব তপন কুমার বিশ্বাস, প্রধান বন সংরক্ষক মো. আমীর হোসাইন চৌধুরী, বিশ্বব্যাংকের সিনিয়র এনভায়রনমেন্টাল স্পেশালিষ্ট ইশতিয়াক সোবহান ও আইই সিএনের প্রতিনিধি সরওয়ার আলম।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, প্রবাসীরা যেন বিমান বন্দরে অতিথির মত সম্মান ও সেবা পায় সরকার তার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।
আজ সোমবার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অভিবাসী কর্মীদের জন্য একটি ডেডিকেটেড লাউঞ্জ (প্রবাসী লাউঞ্জ) উদ্বোধনকালে তিনি এ কথা বলেন।
প্রবাসীদের উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, 'আপনাদের যে প্রাপ্য সম্মান, সেটি যেন জাতি দিতে পারে। সেই সম্মান দেয়ার জন্য আজকের প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে প্রবাসী লাউঞ্জ উদ্ধোধন করা হলো। আশা করি, আরো বহু রকমের পদক্ষেপ নেওয়া হবে। '
ড. ইউনূস বলেন, 'যাতে করে আপনারা এখানে এসে মনে করতে পারেন যে, আপনারা শান্তিতে আছেন, বাড়িতে আছেন, সবাই আপনাদের দেখভাল করছে, আপনাদের সেবা-শুশ্রুষা করছে৷ অর্থাৎ আপনি এখানে মেহমানের মতো থাকবেন। আপনি সম্মান নিয়ে থাকবেন।'
তিনি বলেন, আপনার প্রাপ্য বুঝিয়ে দেয়ার জন্য এই প্রচেষ্টা। আজকে যেটা শুরু করলাম বহুভাবে একে কাজ লাগানো যাবে।
প্রবাসীরা বিমান বন্দরে যথাযথ সম্মান ও সেবা পান না বলে আক্ষেপ প্রকাশ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, 'আপনাদের দিয়ে তো দেশ চলে। আপনাদের তো মাথার ওপর রাখার কথা। অপরাধী করে রাখবে কেনো? ভাবখানা এই যে, তোমরা নিজদের টাকা রোজগার করতেছ, তোমাদের ব্যাপার! আমাদের কী তাতে?'
প্রবাসীদের উপার্জিত অর্থ যথার্থভাবে দেশের কাজে লাগানোর ওপর গুরুত্বারোপ করে সরকার প্রধান বলেন, 'প্রবাসীরা টাকা যেটা রোজগার করছে, সেটা তো বাংলাদেশেই আসছে, বাংলাদেশের জন্য রোজগার করছে। প্রবাসীরা কষ্ট করে টাকা রোজগার করে আনছেন। আর এই কষ্টার্জিত টাকা আরকজনে বিদেশে পাচার করছে। এটা হলো আমাদের দুর্ভাগ্য। সেখান থেকে আমাদের ফিরে আসতে হবে, আমাদের দেশের টাকা যেন দেশে থাকে, দেশের কাজে লাগে।'
প্রবাসী কর্মীরা দেশ গড়ার কারিগর অভিহিত করে ড. ইউনূস বলেন, 'আমাদের প্রবাসী কর্মীরা দেশ গড়ার কারিগর। জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানে তারা বড় ভূমিকা পালন করেছে। আমরা তাদের কাছে সবসময় কৃতজ্ঞ। আমরা বিশ্বাস করি, এই লাউঞ্জ তাদের ভ্রমণকে সহজ করবে।'
মুহাম্মদ ইউনুস বলেন, আমরা সরকারে আসার তিন মাসের মাথায় এসে প্রবাসীদের জন্য নতুন যাত্রা শুরু করতে পারলাম। প্রবাসী কল্যাণ উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের নাম উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা দুজনেই বিদেশে আসা-যাওয়ার পথে এর প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছি।
তিনি বলেন, 'বিমানবন্দর আমাদের সবাইকে ব্যবহার করতে হয়। আমাকেও প্রায় আসা-যাওয়া করতে হয়। মনে খুব কষ্ট হয় যখন দেখি প্রবাসীদের যাওয়া আসায় কত কষ্ট হচ্ছে।'
প্রবাসীদের জন্য সরকারের সেবা সহজ করার ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, প্রবাসীদের জন্য এখন ই-পাসপোর্ট দিতে হবে। ছাপা পাসপোর্ট দরকার নেই। পাসপোর্ট আপনার ফোনে চলে আসবে সেই ব্যবস্থা করতে হবে। অফিসে যেন যেতে না হয়।
তিনি বলেন,আমার এখন আর সরকারি অফিসে যেতে চাই না। বাড়িতে যেন সেবা পৌঁছে দেওয়া যায়।
উল্লেখ্য, হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে এটিই প্রথম প্রবাসী লাউঞ্জ। এখানে বাংলাদেশী অভিবাসী কর্মীদের বিশ্রামের জন্য জায়গা এবং সুলভ মূল্যে খাবার পাওয়া যাবে। সুলভ মূল্যে খাবার পরিবেশনের জন্য এতে ভর্তুকি দেবে সরকার।
উদ্ধোধনী অনুষ্ঠানে আইন ও প্রবাসী কল্যাণ উপদেষ্টা আসিফ নজরুল এবং আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
অধ্যাপক আসিফ নজরুল জানান, বিমান বন্দরে প্রবাসীদের দেখভাল এবং তাদের সহায়তা করার জন্য ১০০ কর্মী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আইওএম এই কর্মীদের স্পন্সর করেছে।
বাংলাদেশে নিযুক্ত আইওএম মিশনের ডেপুটি চিফ ফাতিমা নুসরাত গাজালি জানান, জাতিসংঘ বাংলাদেশি অভিবাসী শ্রমিকদের সহায়তার জন্য লাউঞ্জটি স্পন্সর করেছে।
উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেওয়া নতুন তিনজনের মধ্যে দুজনকে দপ্তর বণ্টন এবং বর্তমান উপদেষ্টাদের মধ্যে সাতজনের দায়িত্ব পুনর্বণ্টন করা হয়েছে। তবে শপথ নেওয়া নতুন উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের বিষয়ে কোনো মন্ত্রণালয় বা বিভাগের কথা উল্লেখ করা হয়নি।
রোববার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের দেওয়া এক প্রজ্ঞাপন থেকে এ তথ্য জানা গেছে। নতুন উপদেষ্টাদের মধ্যে শেখ বশির উদ্দীনকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আর সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন চলচ্চিত্র নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। আর সালেহউদ্দিন আহমেদ অর্থ মন্ত্রণালয়; ড. আসিফ নজরুল আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়; হাসান আরিফ ভূমি মন্ত্রণালয় এবং বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়; আলী ইমাম মজুমদার খাদ্য মন্ত্রণালয়; আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়; ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকছেন।
নতুন তিন উপদেষ্টা কে কোন মন্ত্রণালয় পেলেন
এদিকে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের দপ্তর পুনর্বণ্টন করা হয়েছে। এর মধ্যে পুরোনোদের কয়েকজনের দায়িত্ব রদবদল হয়েছে। কারও কারও দায়িত্ব বেড়েছে। রোববার সন্ধ্যায় নতুন তিন উপদেষ্টার শপথ গ্রহণের পরপর মন্ত্রিপরিষদ থেকে এক প্রজ্ঞাপনে দায়িত্ব পুনর্বণ্টনের কথা জানানো হয়।
নতুনদের মধ্যে মোস্তফা সরওয়ার ফারুকীকে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এতদিন এই দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল।
সেখ বশির উদ্দিন পেয়েছেন বাণিজ্য, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব। এদিকে মাহফুজ আলমকে কোনো দপ্তর দেওয়া হয়নি।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর গত ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। প্রধান উপদেষ্টাসহ এই সরকারের সদস্য সংখ্যা ছিল ২১। নতুন তিন উপদেষ্টাসহ এখন সংখ্যা দাঁড়াল ২৪ জনে।
আজারবাইজানের বাকুতে অনুষ্ঠেয় কপ-২৯ জলবায়ু সম্মেলনে যোগ দিতে আজ সোমবার দেশটিতে তিন দিনের সফরে যাচ্ছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস। গতকাল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, আজারবাইজানের বাকুতে কপ-২৯ জলবায়ু সম্মেলন হবে আগামী ১১ নভেম্বর থেকে ২২ নভেম্বর পর্যন্ত। এই সম্মেলনে যোগ দেবেন প্রধান উপদেষ্টা। আজ সোমবার আজারবাইজানের উদ্দেশে রওনা হওয়ার কথা রয়েছে তার।
তিন দিনের সফরে ১১-১৪ নভেম্বর আজারবাইজানে রাষ্ট্রীয় সফর করবেন ড. ইউনূস।
জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম বাংলাদেশ বাকুতে নিজেদের দাবি-দাওয়া তুলে ধরবে। পাশাপাশি বাংলাদেশ যে বিশ্ব জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে, সেটিও তুলে ধরবে এই সম্মেলনে।
কূটনৈতিক সূত্র বলছে, প্রধান উপদেষ্টা জলবায়ু সম্মেলনে যোগ দেওয়ার পাশাপাশি বাকুতে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানদের সঙ্গে বৈঠক এবং সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেয়ার পর এটি ড. ইউনূসের দ্বিতীয় সফর। তার প্রথম সফর ছিল নিউইয়র্কে জাতিসংঘের ৭৯তম সাধারণ অধিবেশন।
নভেম্বরের প্রথম ৯ দিনে প্রবাসী আয় এলো ৬৫ কোটি ৫০ লাখ ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ প্রতি ডলার ১২০ টাকা হিসাবে সাত হাজার ৮৬০ কোটি টাকা। রোববার এ তথ্য জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানায়, নভেম্বরের শুরুর নয় দিন প্রতিদিন প্রবাসী আয় এসেছে সাত কোটি ২৭ লাখ ৭৭ হাজার ৭৭৮ ডলার।
তথ্য অনুযায়ী, আগের মাস অক্টোবরে প্রতিদিন প্রবাসী আয় আসে সাত কোটি ৯৮ লাখ ৩৬ হাজার ডলার। আগের বছরের নভেম্বর মাসে প্রতিদিন প্রবাসী আয় আসে ছয় কোটি ৪৩ লাখ ৪৬ হাজার ৬৬৭ ডলার।
আগের মাস অক্টোবরে সেপ্টেম্বর মাসের চেয়ে কম প্রবাসী আয় এসেছিল। অক্টোবর মাসে প্রবাসী আয় এসেছিল ২৩৯ কোটি ৫০ লাখ ৮০ হাজার ডলার। আর সেপ্টেম্বর মাসে আসে ২৪০ কোটি ৪১ লাখ ১০ হাজার ডলার।
তথ্য পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, নভেম্বর মাসের ৯ দিনে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে আসে ১৯ কোটি ৯৭ লাখ ৫০ হাজার ডলার। কৃষি ব্যাংকের মাধ্যমে আসে তিন কোটি ১৫ লাখ ৬০ হাজার ডলার।
বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ৪২ কোটি ১৯ লাখ ৪০ হাজার ডলার এবং বিদেশি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ১৭ লাখ ৫০ হাজার ডলার এসেছে।
একক ব্যাংক হিসেবে সর্বোচ্চ প্রবাসীয় আয় এসেছে ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে, ১০ কোটি ৯১ লাখ ৯০ হাজার ডলার।
বহুল আলোচিত জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের কোনো টাকা আত্মসাৎ হয়নি বলে সর্বোচ্চ আদালতকে জানিয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনজীবী মো. আসিফ হাসান। রোববার এই মামলায় খালেদা জিয়ার পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে করা লিভ টু আপিলের (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) শুনানিতে এ কথা বলেন তিনি। শুনানিতে দুদকের পক্ষে এই আইনজীবী আপিল বিভাগকে জানান, এই ট্রাস্টের টাকা মোটেও আত্মসাৎ হয়নি। জাস্ট ফান্ডটা মুভ হয়েছে। তবে সুদে আসলে অ্যাকাউন্টেই টাকাটা জমা আছে।
১/১১-এর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় দুর্নীতি দমন কমিশন জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের অর্থ আত্মসাৎ-সংক্রান্ত দুটি দুর্নীতি মামলা করেছিল সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর সে মামলাটির বিচার অব্যাহত রাখে। ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের মাত্র এক বছর আগে ২০১৭ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি মামলাটির রায় ঘোষণা করেন বিচারিক আদালত। রায়ে বিএনপির চেয়ারপারসন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ৫ বছরের কারাদণ্ড ঘোষণা করা হয়। আইনে তাৎক্ষণিক আপিল ও জামিনের সুযোগ না থাকায় সেদিনই কারাগারে যেতে হয় বিএনপি নেত্রীকে। বিশ্লেষকদের অভিমত ছিল, স্পষ্টভাবেই ওই নির্বাচন থেকে তাকে দূরে রাখার অভিপ্রায়ে সাবেক সরকারের অঙ্গুলি হেলনে রায়টি দিয়েছিলেন বিচারক আদালত। পরে উচ্চ আদালতে আসামি পক্ষে আবেদন করা হলে সেখানে উল্টো এ সাজা বাড়িয়ে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেন বিচারক।
ফলে টানা তিন বছর কারাগারে ও অসুস্থতার সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে কারা প্রকোষ্ঠে চিকিৎসাধীন থাকার পর ২০২০ সালের মার্চে দেশে করোনা সংক্রমণ শুরু হলে পরিবারের আবেদনের ভিত্তিতে তদানীন্তন সরকার নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়ার শাস্তি স্থগিত রেখে তাকে কারাগার থেকে গুলশানে তার নিজের বাসা ফিরোজায় দুটি শর্তে থাকার অনুমতি দেয়। ওই দুটি শর্ত ছিল তিনি রাজনীতি করতে পারবেন না এবং দেশের বাইরে যেতে পারবেন না। ফলে পরবর্তী সাড়ে তিন বছর তাকে বাসা ও হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েই সময় পার করতে হয়েছে।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ অভ্যুত্থানের দিনেও রাজধানীর এভার কেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন বিএনপি নেত্রী। সেদিন দুপুরে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বিকেলে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সেনাপ্রধানসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে সমঝোতার ভিত্তিতে বিএনপি চেয়ারপারসনের সাজা ও সরকারের নির্বাহী আদেশটি বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পরদিন তা প্রজ্ঞাপন আকারে জানায় বঙ্গ ভবন ও পরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ফলে মুক্ত খালেদা জিয়া এত দিন পর বিদেশে চিকিৎসা নিতে যাওয়ার জন্য শারীরিক ও মানসিক প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তার লন্ডনে যাওয়ার কথা গণমাধ্যমে চাউর হলেও এখনো দেশেই আছেন তিনি।
এদিকে, সেই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করেন খালেদা জিয়া। সে আপিলের শুনানি হয় রোববার। এত দিন পর শুনানিতে অংশ নেওয়া দুদকের এখনকার আইনজীবীরা বলছেন, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের টাকা আত্মসাৎ হয়নি, যদিও ফান্ডটা অন্য অ্যাকাউন্টে সরানো (মুভ) হয়েছে। অবশ্য এ কথা মূল মামলার শুনানির সময় খালেদা জিয়ার আইনজীবী অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া (প্রয়াত) জোরের সঙ্গে দাবি করলেও অ্যাকাউন্ট হস্তান্তরকেও অপরাধ হিসেবে গণ্য করেছিলেন সেই মামলার বিচারক।
রোববারের শুনানির সময় দুদক আইনজীবী মামলায় এজাহার, অভিযোগপত্র ও সাক্ষ্যের অংশ তুলে ধরেন। তিনি মামলার ডকুমেন্টস থেকে বেগম খালেদা জিয়া এ মামলার অভিযোগের সঙ্গে সম্পৃক্ত নন এমন উপাদান পেশ করেন।
একপর্যায়ে এই মামলার দুটি আবেদনের শুনানি শেষে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলামের নেতৃত্বে তিন বিচারপতির আপিল বিভাগ বিভাগে বিষয়টি নিয়ে দায়েরকৃত লিভ টু আপিলে আদেশের জন্য আগামীকাল সোমবার দিন ধার্য করেন।
আদালতে খালেদা জিয়ার পক্ষে শুনানিতে ছিলেন সিনিয়র আইনজীবী জয়নুল আবেদীন, ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন, ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল, ব্যারিস্টার মো. রুহুল কুদ্দুস কাজল, ব্যারিস্টার কায়সার কামাল। আর রাষ্ট্রের পক্ষে শুনানি করেন এটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান।
সিনিয়র অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন হাইকোর্ট রায়ের বিরুদ্ধে লিভ মঞ্জুরের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন। হাইকোর্ট রায়টি আদালতে পড়ে শোনান ব্যারিস্টার কায়সার কামাল।
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শহিদদের চূড়ান্ত তালিকা সংক্রান্ত গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে সরকার। গতকাল রবিবার তথ্য অধিদপ্তর থেকে পাঠানো এক তথ্যবিবরণীতে এ তথ্য জানানো হয়।
তথ্যবিবরণীতে বলা হয়েছে, ‘সরকার জুলাই-আগস্টের ঐতিহাসিক ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শহিদদের চূড়ান্ত তালিকা প্রণয়ন করতে “গণঅভ্যুত্থান সংক্রান্ত বিশেষ সেল” গঠন করেছে। ইতিমধ্যে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ কর্তৃক সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল ও জেলা কমিটির মাধ্যমে প্রাপ্ত শহিদদের নামের তালিকা www.hsd.gov.bd এবং www.dghs.gov.bd ওয়েব পেজ দুটিতে প্রকাশ করা হয়েছে।
এতে আরও বলা হয়, ‘গণঅভ্যুত্থানকালিন ১৫ জুলাই হতে ৫ আগস্ট ২০২৪ তারিখের মধ্যে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সম্পৃক্ত হয়ে নিহত বা নিখোঁজ হয়েছেন বা বেওয়ারিশ লাশ হিসেবে দাফন করা হয়েছে বা আহত হয়ে চিকিৎসাধীন থাকাবস্থায় মারা গেছেন বা আন্দোলনে সম্পৃক্ত থেকে অন্য কোনোভাবে মৃত্যুবরণ করেছেন কিন্তু উল্লিখিত তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত হয়নি এমন ব্যক্তির নাম তালিকাভুক্তির জন্য আবেদন আহ্বান করা যাচ্ছে।’
এতে জানানো হয়, সংশ্লিষ্ট মৃত ও নিখোঁজ ব্যক্তির জাতীয় পরিচয়পত্র বা জন্ম নিবন্ধন সনদ, স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানা এবং উপযুক্ত প্রমাণকসহ তাঁর পরিবারের সদস্য বা আত্মীয়কে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসক অথবা বিশেষ সেলের দলনেতা বরাবর আবেদন করতে হবে। আগামী ১২ নভেম্বর হতে ২৪ নভেম্বর পর্যন্ত আবেদন সরাসরি- ২য় তলা, ভবন নং-২, বিএসএল অফিস কমপ্লেক্স (হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল), ১ মিন্টু রোড, ঢাকা- ১০০০ ঠিকানায় পাঠানো যাবে। তবে, ই-মেইল আবেদন [email protected] ঠিকানায় পাঠাতে হবে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে যুক্ত হয়েছেন আরও তিন জন। সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার একটু পরে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন তাদের শপথ পাঠ করান। শপথ নেওয়া নতুন তিন উপদেষ্টা হলেন- ব্যবসায়ী সেখ বশির উদ্দিন, চলচ্চিত্র পরিচালক ও নাট্যকার মোস্তফা সরয়ার ফারুকী ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম।
আজ রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বঙ্গভবনের দরবার হলে তাদের শপথ পড়ান। শপথ গ্রহণ শেষে নতুন তিন উপদেষ্টা স্বাক্ষর বইয়ে স্বাক্ষর করেন।
বর্তমানে প্রধান উপদেষ্টাসহ উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ২১ জন। নতুন করে আরও তিনজন যুক্ত হয়ে সদস্য সংখ্যা বেড়ে হল ২৪ জন।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। ওইদিনই বিলুপ্ত হয় মন্ত্রিসভা। পরদিন ৬ আগস্ট দ্বাদশ জাতীয় সংসদ ভেঙে দেন রাষ্ট্রপতি। এরপর গত ৮ আগস্ট শপথ নেয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এ সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেন শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ওই সময় নিয়োগ পান ১৬ জন উপদেষ্টা। ঢাকা ও দেশের বাইরে থাকায় তিনজন উপদেষ্টা ওইদিন শপথ নিতে পারেননি। তারা পরে শপথ নেন। পরে আরও চারজন উপদেষ্টা অন্তর্বর্তী সরকারে যুক্ত হন।
তবে রোববার দিনভর চার থেকে পাঁচজন উপদেষ্টার শপথ নেয়ার গুঞ্জন শোনা গেলেও সন্ধ্যায় মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, তিনজন উপদেষ্টা শপথ নেবেন।
প্রধান উপদেষ্টাসহ এ সরকারের বর্তমান সদস্যসংখ্যা এখন পর্যন্ত ২১ জন। আরও বড় হচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ। নতুন করে উপদেষ্টা পরিষদে শপথ নিতে ডাক পেয়েছেন ব্যবসায়ী সেখ বশির উদ্দিন, চলচ্চিত্র পরিচালক মোস্তফা সরয়ার ফারুকী ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম।
আজ রোববার সন্ধ্যা ৭টায় বঙ্গভবনের দরবার হলে শপথগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। বঙ্গভবনের একটি সূত্র গণমাধ্যমকে বলেন, এখন পর্যন্ত সিদ্ধান্ত হলো তিনজন উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নিচ্ছেন।
এদিকে নতুন উপদেষ্টাদের জন্য গাড়ি প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এর আগে আজ দুপুরে অন্তর্বর্তী সরকারে দুজন নতুন উপদেষ্টা এবং একজন সহ-উপদেষ্টার যুক্ত হওয়ার খবর জানা যায়।
সেখ বশির উদ্দিন দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠী আকিজ–বশির গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। তিনি সেখ আকিজ উদ্দিনের সন্তান।
মোস্তফা সরয়ার ফারুকী খ্যাতিমান চলচ্চিত্র নির্মাতা। কয়েক দশক ধরে তিনি চলচ্চিত্র, নাটক নির্মাণ করে পরিচিত মুখ হয়ে উঠেছেন।
মাহফুজ আলম বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের বিশেষ সহকারী। তিনি ২০২৪ বাংলাদেশের কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালীন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সদস্য ছিলেন। মাহফুজ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের লিয়াজোঁ কমিটির একজন সমন্বয়ক। তিনি ছাত্র আন্দোলনে নেপথ্যে থেকে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণে অংশ নেওয়ার জন্য আলোচিত হন। এছাড়াও তিনি ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর গত ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়।
লিবিয়া দেশের উন্নয়নের জন্য চিকিৎসক ও প্রকৌশলীসহ বাংলাদেশ থেকে আরও জনশক্তি নিয়োগ করতে আগ্রহ প্রকাশ করে সেখানকার শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের ভর্তির আমন্ত্রণ জানিয়েছে।
বাংলাদেশে নিযুক্ত লিবিয়ার রাষ্ট্রদূত আব্দুল মুতালিব এস এম সালিমান আজ রোববার তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে এ আগ্রহের কথা জানান।
রাষ্ট্রদূত সালিমান লিবিয়ার সমাজে বাংলাদেশি কর্মীবাহিনীর অবদানের কথা স্বীকার করে বলেন, তার দেশে বিশেষ করে কৃষিক্ষেত্রে তাদের ভূমিকা অনেক বেশি।
তিনি স্বীকার করেন যে বর্তমানে লিবিয়ায় কর্মরত কিছু বাংলাদেশি চিকিৎসক বেতন সংক্রান্ত সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। তবে চলমান সংস্কার সম্পন্ন হলে দ্রুতই বিষয়টি সমাধান হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস জোর দিয়ে বলেন, অবৈধ অভিবাসন ও মানব পাচার বন্ধে বাংলাদেশ ও লিবিয়া একসঙ্গে কাজ করতে পারে।
তিনি বলেন, আমরা মানব পাচারকে সমর্থন করি না। এর জন্য অনেক মানুষ ভুগছে। এটি বন্ধ করতে আমাদের একসঙ্গে কাজ করা উচিত।
প্রধান উপদেষ্টা বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়াতে দুই দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক বৃদ্ধিতে কাজ করার জন্য রাষ্ট্রদূতকে আহ্বান জানান।
পারস্পরিক স্বার্থে বাংলাদেশ লিবিয়া থেকে তেল আমদানি করতে পারে কি না তারও খোঁজখবর নেন তিনি।
রাষ্ট্রদূত সালিমান এ লক্ষ্যে বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা কামনা করে দুই দেশের মধ্যে বিমান যোগাযোগ পুনরায় চালুর ওপর জোর দেন।
জুলাই-আগস্ট গণহত্যায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দায়ের করা মামলায় শেখ হাসিনাসহ পলাতক আসামিদের ফিরিয়ে আনতে সরকার সব ধরনের পদক্ষেপ নেবে বলে জানিয়েছেন আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল।
তিনি আরও বলেন, সব পলাতক আসামিকে বিচারের মুখোমুখি করতে ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেড নোটিশ জারি করতে যাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার।
আজ রোববার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সংস্কার কাজ পরিদর্শন শেষে আইন উপদেষ্টা সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।
উপদেষ্টা বলেন, ‘খুব দ্রুতই ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেড নোটিশ জারি করা হবে। পলাতক ফ্যাসিস্ট চক্র পৃথিবীর যে দেশেই থাকুক তাদের ধরে এনে বিচারের মুখোমুখি করা হবে। তাদের ফিরিয়ে আনতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হবে।’
চলতি বছরের অক্টোবর মাসে বাংলাদেশে ৪৪৩টি সড়ক দুর্ঘটনা ৪৬৯ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এসব দুর্ঘটনায় ৮৩৭ জন আহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে ৭৪ জন নারী এবং ৬৬ জন শিশু। মোট ২০৮টি মোটরবাইক দুর্ঘটনায় ১৯৬ জনের মৃত্যু হয়েছে, যা মোট মৃত্যুর ৪১.৭৯ শতাংশ এবং মোটরবাইক দুর্ঘটনার হার ৪৬.৯৫ শতাংশ।
এছাড়া, ১০২ জন পথচারী (২১.৭৪ শতাংশ) এবং ৬৭ জন যানবাহন চালক বা তাদের সহকারী (১৪.২৮ শতাংশ) নিহত হন। এ সময়, ৪টি নৌ দুর্ঘটনায় ৭ জনের মৃত্যু এবং ৩ জন আহত হন, আর ২১টি রেল দুর্ঘটনায় ১৮ জন মারা যান এবং ৬ জন আহত হন।
আজ রোববার রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়। সংগঠনটি জানায়, ৯টি জাতীয় দৈনিক, ৭টি অনলাইন সংবাদ পোর্টাল, বিভিন্ন ইলেকট্রনিক মিডিয়া এবং এর নিজস্ব রেকর্ডের ভিত্তিতে এ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।
যানবাহন অনুযায়ী মৃত্যুর হিসাব
যানবাহনের ধরন অনুযায়ী মৃত্যুর বিশ্লেষণে দেখা গেছে, মোটরবাইক চালক বা যাত্রীদের মধ্যে ১৯৬ জনের মৃত্যু হয়েছে (৪১.৭৯ শতাংশ)। বাস যাত্রীদের মধ্যে ৩১ জন (৬.৬০শতাংশ) মারা গেছেন এবং ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান, পিকআপ, ট্রলি বা লরির যাত্রীদের মধ্যে ২০ জন (৪.২৬ শতাংশ) নিহত হয়েছেন।
এছাড়া প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস ও অ্যাম্বুলেন্স যাত্রীদের মধ্যে ১২ জন (২.৫৫ শতাংশ) মারা গেছেন, আর তিন চাকার যান (যেমন অটো রিকশা, সিএনজি, টমটম) যাত্রীদের মধ্যে ৯৪ জন (২০.০৪ শতাংশ) প্রাণ হারিয়েছেন।
নসিমন ও করিমনের মতো স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহন দুর্ঘটনা ১০ জন (২.১৩ শতাংশ) এবং সাইকেল চালক ও রিকশা যাত্রীদের মধ্যে ৪ জন (০.৮৫ শতাংশ) নিহত হয়েছেন।
দুর্ঘটনার স্থান অনুযায়ী সড়কের ধরন
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১৭৩টি (৩৯.০৫ শতাংশ) দুর্ঘটনা জাতীয় মহাসড়কে ঘটেছে, ১৬২টি (৩৬.৫৬ শতাংশ) আঞ্চলিক সড়কে, ৬৪টি (১৪.৪৪ শতাংশ) গ্রামীণ সড়কে এবং ৩৮টি (৮.৫৭ শতাংশ) শহুরে এলাকায় এবং এছাড়া অন্যান্য অপ্রত্যাশিত স্থানে ৬টি (১.৩৫ শতাংশ) দুর্ঘটনা ঘটে।
দুর্ঘটনার ধরন
দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে ছিল ১১২টি (২৫.২৮ শতাংশ) মুখোমুখি সংঘর্ষ, ১৭১টি (৩৮.৬০ শতাংশ) নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে, ১০৪টি (২৩.৪৭ শতাংশ) পথচারীকে আঘাত, ৪২টি (৯.৪৮শতাংশ) পেছন থেকে ধাক্কা এবং ১৪টি (৩.১৬শতাংশ) অন্যান্য কারণে ঘটে।
দুর্ঘটনায় জড়িত যানবাহন
দুর্ঘটনায় জড়িত যানবাহনের মধ্যে ২৫.৪৮ শতাংশ ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান, পিকআপ, ট্র্যাক্টর, ট্রলি, লরি ও ড্রাম ট্রাক জড়িত ছিল।
মাইক্রোবাস, প্রাইভেট কার, অ্যাম্বুলেন্স ও জিপ দুর্ঘটনা ছিল ৪.৩৯ শতাংশ, যাত্রীবাহী বাস ছিল ১৪.৪৮ শতাংশ, মোটরবাইকের ছিল ২৮.০৭ শতাংশ এবং তিন চাকার যান (যেমন অটো-রিকশা) ছিল ১৭.৫৯ শতাংশ।
এছাড়া স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহন ছিল ৫.৪৩ শতাংশ, সাইকেল ও রিকশা ছিল ১.৮১ শতাংশ এবং অজ্ঞাত যানবাহন ছিল ২.৭১ শতাংশ।
যানবাহনের সংখ্যা
মোট ৭৭৩টি যানবাহন দুর্ঘটনায় জড়িত ছিল। এর মধ্যে ১১২টি বাস, ১১৯টি ট্রাক, ২২টি কাভার্ড ভ্যান, ২৫টি পিকআপ, ৭টি ট্র্যাক্টর, ৬টি ট্রলি, ৯টি লরি, ৮টি ড্রাম ট্রাক, ১টি ১৮-চাকার লরি, ১২টি মাইক্রোবাস, ১৪টি প্রাইভেট কার, ৫টি অ্যাম্বুলেন্স, ৩টি জিপ, ২১৭টি মোটরবাইক, ১৩৬টি তিন চাকার যান, ৪২টি স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহন, ১৪টি সাইকেল বা রিকশা এবং ২১টি অজ্ঞাত যানবাহন।
দুর্ঘটনার সময়
দুর্ঘটনার সময় বিশ্লেষণে দেখা যায়, ৫.৪১ শতাংশ দুর্ঘটনা হয়েছিল ভোরে, ২৬.৬৩ শতাংশ সকালে, ১৬.৯৩ শতাংশ দুপুরে, ১৫.৫৭ শতাংশ সন্ধ্যা, ৯.২৫ শতাংশ গোধূলি এবং ২৬.১৮ শতাংশ রাতে।
বিভাগ অনুযায়ী দুর্ঘটনার পরিসংখ্যান
বিভাগীয় পরিসংখ্যানে দেখা যায়, মোট দুর্ঘটনার ২৯.৫৭ শতাংশ এবং মৃত্যুর ৩০.৭০ শতাংশ গটেছে ঢাকা বিভাগে। মোট দুর্ঘটনার ১৫.৩৪ শতাংশ ও মৃত্যুর ১৩.৮৫ শতাংশ হয়েছে রাজশাহী বিভাগে। দুর্ঘটনার ১৭.৮৩ শতাংশ এবং মৃত্যুর ১৭.২৭ শতাংশ ঘটেছে চট্টগ্রাম বিভাগে। মোট দুর্ঘটনার ৯ শতাংশ ও মৃত্যুর ৮ দশমিক ১০ শতাংশ গয়েঠে খুলনা বিভাগে, বরিশাল, সিলেট, রংপুর ও ময়মনসিংহ বিভাগে দুর্ঘটনার ৪ দশমিক ০৬ শতাংশ থেকে ১০ দশমিক ৮৩ শতাংশ এবং মৃত্যুর ৫ দশমিক ৩৩ শতাংশ থেকে ১১ দশমিক ০৮ শতাংশ হয়েছে।
সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ঘটেছে ঢাকা বিভাগে। এ বিভাগে ১৩১টি ঘটনায় ১৪৪ জন নিহত হয়েছেন। সবচেয়ে কম দুর্ঘটনা ঘটেছে সিলেট। সেখানে ২২টি ঘটনা এবং ২৪ জন মারা গেছে।
বিভিন্ন জেলা অনুযায়ী, চট্টগ্রাম সর্বোচ্চ দুর্ঘটনা ও মৃত্যু হয়েছে। সেখানে ৩৪টি দুর্ঘটনায় ৩৯ জন প্রাণ হারিয়েছেন। অপরদিকে, মাগুরা, ঝালকাঠি, বরগুনা ও পঞ্চগড়ে দুর্ঘটনা ঘটলেও কোনো প্রাণহানি ঘটেনি।
রাজধানী ঢাকা শহরে ২৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২১ জনের মৃত্যু এবং ৩৪ জন আহত হয়েছেন।
মৃত্যুর পেশাগত বিশ্লেষণ
প্রকাশিত গণমাধ্যম তথ্য অনুযায়ী, নিহতদের মধ্যে তিনজন পুলিশ সদস্য, দুইজন আনসার সদস্য, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নয়জন শিক্ষক এবং চারজন সাংবাদিক ছিলেন।
দুর্ঘটনা ও হতাহতের এসব ঘটনা বিবেচনায় নিয়ে সড়ক নিরাপত্তা উন্নত করতে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন।
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান।
আজ রোববার তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে গিয়ে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন সেনা প্রধান।
বিষয়টি নিশ্চিত করে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানান, আজ রোববার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে তার কার্যালয়ে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান।
এর আগে গত ২৬ অক্টোবর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন সেনাপ্রধান। যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা সফরের পর দেশে ফিরে ওইদিন প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন তিনি।