বাংলাদেশে আরও বেশি সংখ্যক নারীর কাজের সুযোগ হলে পণ্য, সেবা ও কৃষি খাতে উৎপাদন ২৯ শতাংশ পর্যন্ত বাড়াতে পারে বলে ধারণা করছে বিশ্বব্যাংক। সংস্থাটির মতে, বাংলাদেশে শ্রমিকদের উৎপাদনশীলতা বেশি হওয়ায় দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে এই দেশে প্রবৃদ্ধি সবচেয়ে বেশি হবে। গত সপ্তাহে প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া উন্নয়ন হালনাগাদ তথ্যে বলা হয়েছে, যদি শুধু উৎপাদন খাতে আরও বেশি সংখ্যক নারী কাজ পান, তাহলে বাংলাদেশে উৎপাদন ২১ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে।
বাংলাদেশে পোশাক শিল্পে অগ্রগতি সত্ত্বেও বৃহত্তর উৎপাদন খাতে নারী-পুরুষের ব্যবধান অনেক বেশি বলে প্রতিবেদনটিতে উল্লেখ করা হয়েছে। এতে আরও বলা হয়, ২০২২ ও ২০২৩ সালে বাংলাদেশে শ্রমবাজারে নারীর অংশগ্রহণের হার ৩৭ শতাংশেই স্থির হয়ে আছে। সরবরাহের সীমাবদ্ধতা, নিয়ন্ত্রণমূলক আইন ও রক্ষণশীল সামাজিক রীতিনীতিকে আরও বেশি নারীর কাজে যোগ দেওয়ার পেছনে বাধা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
অর্থনীতিবিদরা বিশ্বব্যাংকের এই প্রক্ষেপণের সঙ্গে একমত পোষণ করে বলেছেন, দেশের পোশাক শিল্পে মূল শক্তি নারী। তবে, তারা আরও কিছু কারণকে চিহ্নিত করেছেন যা বেশি সংখ্যক নারীকে কাজে যোগ দিতে নিরুৎসাহিত করে। সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক সেলিম রায়হান বলেন, ‘নিয়োগকর্তারা প্রায়ই নারীদের কাজে নিতে দ্বিধায় থাকেন। অনেক প্রতিষ্ঠানে এখনো নারীবান্ধব কর্মপরিবেশ নেই।’
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশে যদি আরও বেশি সংখ্যক নারী কৃষি খাতে যোগ দেন, তবে শ্রম উৎপাদনশীলতা বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি কর্মস্থলে লিঙ্গ বৈষম্য কমবে। লিঙ্গ বৈষম্য দূর করতে পারলে সেবা খাতে লাভের সম্ভাবনা ৮ দশমিক ১২ শতাংশ।
সেলিম রায়হান বলেন, ‘শিশু ও বয়স্কদের যত্ন নেওয়ার কাজটি অসামঞ্জস্যপূর্ণভাবে নারীদের দেওয়া হয়। এটি কর্মসংস্থানের সুযোগকে সীমাবদ্ধ করে। কর্মসংস্থানে নারীর অংশগ্রহণ বাড়াতে হলে সব ধরনের প্রতিবন্ধকতা দূর করতে হবে।’
‘সুরক্ষার বিষয়গুলো কর্মক্ষেত্রে নারীর কম অংশগ্রহণের কারণ,’ উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘পরিবহন ব্যবস্থাও গুরুত্বপূর্ণ। সরকারের উচিত এসব বিষয় খেয়াল রাখা।’ বিশ্বব্যাংক বলেছে, বাংলাদেশে নারী সুরক্ষা আইন দুর্বল। ফলে নিরাপত্তার ক্ষেত্রে মারাত্মক ঘাটতি দেখা দেয়। বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের সমাজ নারীদের প্রতি সবচেয়ে রক্ষণশীল। প্রতিবেদন অনুসারে, উদীয়মান ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ার বেশিরভাগ দেশে শ্রমশক্তিতে নারীর অংশগ্রহণের হার সবচেয়ে নিচের দিকে। পুরুষের হারের তুলনায় অনেক কম।
বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়ার প্রধান অর্থনীতিবিদ ফ্রান্সিসকা ওনসোর্গ বলেন, ‘উদীয়মান বাজার ও উন্নয়নশীল অর্থনীতির দেশগুলোর গড় ৫৪ শতাংশের তুলনায় দক্ষিণ এশিয়ায় শ্রমশক্তিতে নারীর অংশগ্রহণের হার ৩২ শতাংশের অনেক কম।’ তবে দক্ষিণ এশিয়াজুড়ে রপ্তানি খাতের সঙ্গে এর বৈপরীত্য আছে। যেমন, বাংলাদেশে তৈরি পোশাক, ভারতে কল সেন্টার ও শ্রীলঙ্কায় টেক্সটাইল শিল্পে নারীর অংশগ্রহণ বেশি। বিশ্বব্যাংক বলেছে, শ্রমশক্তিতে নারীর অংশগ্রহণ বাড়ালে ভারতের উৎপাদন ২৩ শতাংশ, পাকিস্তানের ২১ শতাংশ, নেপালের ২২ শতাংশ ও শ্রীলঙ্কার ২৮ শতাংশ বাড়বে। বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের প্রধান অর্থনীতিবিদ ফ্রানজিস্কা ওনসোর্গ বলেন, ‘নারীর কর্মসংস্থান বাড়াতে সব পক্ষের উদ্যোগ প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে সরকার, বেসরকারি খাত, সমাজ ও পরিবারের ভূমিকা আছে।’
সদ্যসমাপ্ত অক্টোবর মাসে বৈধপথে ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে প্রায় ২.৪০ বিলিয়ন বা ২৪০ কোটি মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। গত বছরের একই মাসে এসেছিল ১.৯৭ বিলিয়ন বা ১৯৭ কোটি ডলার। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে একক মাস হিসেবে অক্টোবরে দেশে রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয়ের প্রবাহ বেড়েছে ৪৩ কোটি ডলার বা ২১ দশমিক ৮৩ শতাংশ। রোববার প্রকাশিত বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে তথ্য জানা গেছে।
তথ্য অনুসারে, অক্টোবরের শেষ দিন অথাৎ ৩১ তারিখ এক দিনেই ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে প্রবাসী বাংলাদেশিরা ৯ কোটি ৮০ লাখ ডলার পাঠিয়েছেন। আর পুরো মাসজুড়ে পাঠিয়েছেন ২৩৯ কোটি ৫০ লাখ ডলার। দেশীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ ২৮ হাজার ৭৪০ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ১২০ টাকা ধরে)। সে হিসাবে অক্টোবরে প্রতিদিন গড়ে রেমিট্যান্স এসেছে ৭ কোটি ৭৩ লাখ ডলার। এর আগের মাস সেপ্টেম্বরে রেমিট্যান্স এসেছিল ২৪০ কোটি ৪৭ লাখ ডলার। দেশীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ ছিল ২৮ হাজার ৮৫৭ কোটি টাকা।
ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, মূলত দুটি কারণে রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে। প্রথমত, আমদানি বিলের আন্ডার-ইনভয়েসিং উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। আগে এ প্রক্রিয়ায় বড় অঙ্কের অর্থ সরিয়ে নেওয়া হলেও সাম্প্রতিক মাসগুলোতে এটি নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। দ্বিতীয়ত, হুন্ডির মতো অনানুষ্ঠানিক মাধ্যমে অর্থপাচার অনেকটা কমেছে। ফলে হুন্ডিতে ডলারের চাহিদা কমে সরকারি চ্যানেলের মাধ্যমে বেশি ডলার আসতে শুরু করেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, অক্টোবর মাসে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ৭২ কোটি ৬১ লাখ ডলার, বিশেষায়িত একটি ব্যাংকের মাধ্যমে প্রায় ১২ কোটি মার্কিন ডলার, বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ১৫৪ কোটি ডলার এবং বিদেশি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ৭১ লাখ মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স।
তবে এই সময়ে ৯ ব্যাংকের মাধ্যমে কোনো রেমিট্যান্স পাঠাননি প্রবাসীরা। ব্যাংকগুলো হলো- রাষ্ট্র মালিকানাধীন বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক বা বিডিবিএল, বিশেষায়িত রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক বা রাবাক। বেসরকারি ব্যাংকের মধ্যে রয়েছে- কমিউনিটি ব্যাংক, সিটিজেন্স ব্যাংক, আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক ও পদ্মা ব্যাংক। আর বিদেশি খাতের মধ্যে রয়েছে- হাবিব ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান এবং স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া।
এদিকে চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ৮.৯৪ বিলিয়ন বা ৮৯৪ কোটি ডলার। দেশীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ ১ লাখ ৭ হাজার ২৫৬ কোটি টাকা। আগের বছরের একই সময়ে (চার মাসে) দেশে রেমিট্যান্স এসেছিল ৬.৮৮ বিলিয়ন বা ৬৮৮ কোটি ডলার। দেশীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ ৮২ হাজার ৫৩৬ কোটি টাকা। সে হিসেবে বছরের ব্যবধানে চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে দেশে রেমিট্যান্স বেশি এসেছে ২৪ হাজার ৭২০ কোটি টাকা বা ২৯.৯৫ শতাংশ।
২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই মাসে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ১৯১ কোটি ৩৭ লাখ ৭০ হাজার ডলার, আগস্টে এসেছে ২২২ কোটি ৪১ লাখ ৫০ হাজার ডলার, সেপ্টেম্বরে এসেছে ২৪০ কোটি ৪৭ লাখ ৯০ হাজার ডলার এবং সদ্য সমাপ্ত অক্টোবরে এসেছে ২৩৯ কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলারের রেমিট্যান্স।
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর রেমিট্যান্স প্রবাহের ঊর্ধ্বগতির ধারা বজায় রয়েছে সদ্য সমাপ্ত অক্টোবর মাসেও। চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাই ছাড়া প্রত্যেক মাসেই প্রবাসী বাংলাদেশিরা ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন। দেশ যখন বেসরকারি খাতের জন্য প্রয়োজনীয় জ্বালানি, সার এবং পণ্য ইত্যাদি আমদানির জন্য প্রয়োজনীয় বৈদেশিক মুদ্রার সংকটে রয়েছে, ঠিক রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধি দেশের অর্থনীতির জন্য ভালো দিক বলে মনে করছে বিশ্লেষকরা। গত ৩০ অক্টোবর শেষে বিপিএম৬ পদ্ধতিতেও দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়ে ১৯.৮৭ বিলিয়ন ডলারে রয়েছে, এটি বৈদেশিক ঋণের নিশ্চয়তা বাড়াবে বলে মনে করেন তারা।
প্রসঙ্গত, গত ৩০ জুন সমাপ্ত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ২ হাজার ৩৯২ কোটি মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা দেশে এসেছে। এটি এক অর্থবছরে এ যাবৎকালের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স আহরণ। দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রেকর্ড রেমিট্যান্স এসেছিল ২০২০-২১ অর্থবছরে ২ হাজার ৪৭৭ কোটি ডলার।
চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে (জানুয়ারি-জুন) পাঁচ লাখের বেশি কর্মী বিদেশে কর্মসংস্থানের জন্য গেছেন। এসব কর্মীদের মধ্যে ঢাকা জেলার এক লাখ ২১ হাজার ৫২০ জন অভিবাসী রয়েছেন। গতকাল রোববার ‘আমি প্রবাসী’ অ্যাপের পক্ষ থেকে এই তথ্য জানানো হয়েছে। সেখানে বলা হয়, অ্যাপের অর্ধবার্ষিক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত অভিবাসনে গতিশীলতা লক্ষ্য করা গেছে। যেখানে ৫ লাখেরও বেশি কর্মী বিদেশে কর্মসংস্থানের জন্য গেছেন। এর মধ্যে প্রায় দুই লাখ ৫০ হাজার অভিবাসী কর্মী সৌদি আরবকে তাদের পছন্দের গন্তব্য হিসেবে বেছে নিয়েছেন। সৌদি আরব বর্তমানে বেশিরভাগ অভিবাসী জনসংখ্যার প্রথম পছন্দে পরিণত হয়েছে।
সৌদি নীতিনির্ধারকদের স্থানীয় অবকাঠামো উন্নয়নে ব্যাপক মনোযোগ দেওয়ার কারণে সেখানে দক্ষ এবং অদক্ষ উভয় ধরনের কাজের সুযোগ বৃদ্ধি পেয়েছে, যার ফলে সৌদি আরবকে একটি সম্ভাবনাময় গন্তব্যে পরিণত করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
মালয়েশিয়া প্রায় ৯৩ হাজার কর্মরত অভিবাসী নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। কাতার তৃতীয় স্থানে রয়েছে, যেখানে এই সময়ে ৩৯ হাজার ৫১৭ জন অভিবাসী কর্মী কাজের জন্য গেছেন।
‘আমি প্রবাসীর’ প্রতিবেদনে এসব অভিবাসী কর্মীদের কাজের ধরন সম্পর্কেও বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রায় ৮০ শতাংশ অভিবাসী কর্মী ‘সাধারণ’ শ্রেণিতে পড়ে, সংখ্যায় যা এক লাখ ৫০ হাজারের মতো। সাধারণ শ্রেণিতে দক্ষ ও অদক্ষ উভয় ধরনের কাজ অন্তর্ভুক্ত।
দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে নির্মাণ কাজ; যেখানে ৬৩ হাজার ৪৬৯ জন অভিবাসী কর্মীর কর্মসংস্থান হয়েছে। ৩৩ হাজার ৭৪৮ জন কর্মী নিয়ে কারখানার কাজ তৃতীয় স্থানে রয়েছে।
প্রতিবেদনের প্রথমার্ধে আরও বলা হয়েছে, মোট অভিবাসী শ্রমিকের ১০.৪ শতাংশ দক্ষ, যার মধ্যে ৩.২ শতাংশ দক্ষ পেশাজীবী, যেমন- সফটওয়্যার ডেভেলপার। বাকি ৭ শতাংশ অদক্ষ অভিবাসী। অদক্ষ থেকে দক্ষ অভিবাসনের এই পরিবর্তন বৈশ্বিক শ্রমবাজারে বাংলাদেশের জন্য একটি ইতিবাচক অগ্রগতি।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, প্রতি বছর অভিবাসী শ্রমিকের সংখ্যা বাড়ছে, তবে এই শ্রমশক্তিতে নারীদের অংশগ্রহণ কম রয়েছে। এই ৬ মাসের সময়কালে মোট শ্রমশক্তির মাত্র ৬ শতাংশ নারী। এর মধ্যে বেশিরভাগই গৃহকর্মী, যার সংখ্যা ১৩ হাজার ১৯০।
জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত বিভিন্ন বিভাগের অভিবাসন প্রবণতা বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ঢাকা এক লাখ ২১ হাজার ৫২০ অভিবাসী নিয়ে শীর্ষে অবস্থান করছে। ৯১ হাজার ৫৩০ জন অভিবাসী নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে চট্টগ্রাম। খুলনা ও রাজশাহী থেকে যথাক্রমে ৩৭ হাজার ২৯০ ও ৩৫ হাজার ৬৬০ অভিবাসী কর্মী এবং ময়মনসিংহ থেকে ২৬ হাজার ১০ জন কর্মী বিদেশ গিয়েছে। সিলেট থেকে অভিবাসী হয়েছে ১৭ হাজার ৩৮০ জন।
রংপুর বিভাগ থেকে সবচেয়ে কম অভিবাসী
এই সময়কালে এক লাখ ৮৩ হাজার ২৭৪টি ব্যক্তিগত ভিসা ইস্যু করা হয়। গ্রুপ ভিসার সংখ্যা ছিল ২৮ হাজার ২২৩ এবং ২৪ হাজার ৬৩৮টি, ভিসা স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংগ্রহ করা হয়। পূর্ববর্তী মাসগুলোর তুলনায় স্বয়ংক্রিয় বা ওয়ান স্টপ ভিসার সংখ্যা নাটকীয়ভাবে বেড়েছে। সে সময় এ সংখ্যা মোট ভিসার ১ শতাংশেরও কম ছিল।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, চলতি বছরের প্রথমার্ধের অভিবাসন পরিস্থিতি ইতিবাচক ছিল। ইতালিতে ২০ হাজার নতুন ভিসা অনুমোদনের খবর এসেছে, যা ইউরোপীয় বাজার খোলার পথে একটি সম্ভাবনাময় অগ্রগতি।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশে রেমিটেন্স প্রবাহের গতি বেড়েছে। ফলে এখন বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভে হাত না দিয়েই আন্তর্জাতিক পেমেন্টগুলো করতে পারছি। ভারতের আদানী গ্রুপের বকেয়া পেমেন্ট দেওয়ার গতি বেড়েছে। সামনে আরও বাড়বে। সেই সক্ষমতা সরকারের আছে।
রোববার সন্ধ্যায় ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
প্রেস সচিব বলেন, বিদ্যুৎ আমদানির জন্য ভারতের আদানী গ্রুপ টাকা পায় এটা সত্য। তাদের পেমেন্ট দেওয়ার ক্ষেত্রে গতি বাড়িয়েছি। আগের যে বিল বকেয়া আছে সেটার জন্য মূলত দায়ী পূর্ববর্তী আওয়ামী লীগ সরকার। তারা বিশাল দেনা রেখে গেছেন।
আদানী গ্রুপকে গত মাসে আমরা ৯৭ মিলিয়ন ডলার পেমেন্ট করা হয়েছে। যেটা আগস্ট বা আগের মাসের চেয়ে দ্বিগুন। আমাদের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ পেমেন্ট আরও দ্রুত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দেশের রিজার্ভ বাড়া শুরু করেছে। আন্তজার্তিক পেমেন্টগুলো বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভে হাত না দিয়েই করতে পারছি।
তিনি বলেন, পেমেন্ট ৭০০ মিলিয়ন ডলার বাকি আছে। সেটিও দ্রুত সময়ের মধ্যে করে দিতে পারবো।
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ১৬ থেকে ১৮ বিলিয়ন ডলার বিদেশে পাচার হয়েছে টিআইবি নির্বাহী পরিচালকের এমন অভিযোগের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পতিত আওয়ামী লীগ সরকার টাকা পাচারের এক ধরনের প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছিল। সেই টাকা ফিরিয়ে আনতে সরকার কাজ করছে। কত টাকা পাচার হয়েছে তা বের করতে উচ্চ পর্যায়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে। সেই শ্বেতপত্র কমিটির প্রতিবেদনে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যাবে।
সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস আবুল কালাম আজাদ মজুমদার ও অপূর্ব জাহাঙ্গীর উপস্থিত ছিলেন।
প্রায় ৮৫ কোটি ডলারের বকেয়া নিষ্পত্তির সুরাহা না হলে আদানি পাওয়ার আগামী ৭ নভেম্বর থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করবে বলে খবর দিয়েছে টাইমস অব ইন্ডিয়া। ঝাড়খন্ড রাজ্যের গোড্ডায় কয়লাভিত্তিক ওই বিদ্যুৎকেন্দ্রের দুটি ইউনিট থেকে প্রতিদিন ১৪০০ থেকে ১৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ বাংলাদেশে আসছিল। বকেয়া না পাওয়ায় গত বৃহস্পতিবার একটি ইউনিটের বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ করে দেওয়ার কথা জানিয়েছে ভারতের বৃহত্তম বেসরকারি বিদ্যুৎ কোম্পানিটি।
বকেয়া অর্থ পরিশোধের জন্য ৩১ অক্টোবর সময়সীমা বেঁধে দিয়ে ১৭ কোটি ডলারের ঋণপত্র (এলসি) পরিশোধ করতে বলেছিল আদানি পাওয়ার। চুক্তি অনুযায়ী আদানিকে সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে অর্থ পরিশোধ করার কথা বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের। তবে ডলার সংকটের কারণে ব্যাংকটি অপারগতা প্রকাশ করায় সেই অর্থ কৃষি ব্যাংকের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা পাঠাতে চেয়েছিলেন বলে সূত্রের বরাতে লিখেছে টাইমস অব ইন্ডিয়া। তবে তা চুক্তির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ না হওয়ায় আদানি পাওয়ার তাতে সম্মতি দেয়নি।
এ পরিস্থিতিতে আদানি পাওয়ার একটি ইউনিট বন্ধ করে দেওয়ায় বাংলাদেশের চলমান লোড শেডিং আরও বেড়েছে। পাওয়ার গ্রিড বাংলাদেশের (পিজিবি) ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, শুক্রবার ৭২৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ দিয়েছে ভারতীয় ওই কোম্পানি। ওই বিদ্যুৎকেন্দ্রের সক্ষমতা ১৪৯৬ মেগাওয়াট। সক্ষমতার বিচারে এরপর আছে পায়রা (১২৪৪ মেগাওয়াট), রামপাল (১২৩৪ মেগাওয়াট) ও এসএস পাওয়ার ওয়ান (১২২৪ মেগাওয়াট) কেন্দ্র।
টাইমস অব ইন্ডিয়া লিখেছে, কয়লা সংকটের কারণে রামপাল ও এসএস পাওয়ার ওয়ান সক্ষমতার অর্ধেকেরও কম উৎপাদন করছে। শিল্প খাতের সূত্রের বরাতে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমটি লিখেছে, সময়মতো বিল না পেয়ে কয়েকটি বিদ্যুৎকেন্দ্র জ্বালানি কেনা কমিয়ে দিয়েছে। ঋণ পরিশোধে ধীরগতির কারণে বকেয়ার পরিমাণ বেড়েই চলেছে।
অক্টোবরে আদানি পাওয়ারকে প্রায় ৯ কোটি ডলার পরিশোধের কথা বলা হচ্ছে, যেখানে আগের মাসগুলোতে ৯-১০ কোটি ডলারের বিলের বিপরীতে ২-৫ কোটি ডলার পরিশোধ করা হতো। ইন্দোনেশিয়া ও অস্ট্রেলিয়া থেকে আনা কয়লার দাম ধরে আদানি পাওয়ারের ঝাড়খন্ড কেন্দ্র প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ বিক্রি করে ১০-১২ টাকায়। উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে আদানি টাইমস অব ইন্ডিয়ার কাছে কোনো মন্তব্য করেনি। তবে এর আগে কোম্পানিটির জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা বলেছিলেন, তারা সমস্যার সমাধানের বিষয়ে আশাবাদী।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান বলেন, ‘আমরা অক্টোবর মাসে ওদেরকে (আদানি পাওয়ার) প্রায় ৯৮ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করেছি; সেপ্টেম্বরের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। এ ছাড়া তাদের জন্য বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের মাধ্যমে ১৭ কোটি ডলারের এলসি করা হয়েছে। তার পরও তাদের এমন আচরণ খুব আশ্চর্যজনক, বিস্ময়কর এবং দুঃখজনক।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আদানি যদি সত্যিই বিদ্যুৎ বন্ধ করে দেয়, তাহলে আমরা এটা মোকাবিলা করার জন্য প্রস্তুত আছি। গ্রাহকরা যাতে ভোগান্তির মধ্যে না পড়ে, সে জন্য আমরা বিকল্প ব্যবস্থা নিচ্ছি।’
টাইমস অব ইন্ডিয়া লিখেছে, বিল পরিশোধে বিলম্ব, বিশেষ করে এ বিষয়ে ‘স্পষ্টতার অভাব’ ভারতের বৃহত্তম বেসরকারি বিদ্যুৎ কোম্পানিকে চরম পদক্ষেপ নিতে ‘প্রভাবিত’ করেছে। কারণ আদানি পাওয়ারকেও ঋণদাতাদের বকেয়া পরিশোধ করতে হবে।
বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধের সিদ্ধান্তের কারণে কেন্দ্রটির বাণিজ্যিক সফলতা নিয়েও শঙ্কা তৈরি হয়েছে। কারণ ওই কেন্দ্রের একমাত্র ক্রেতা বাংলাদেশ এবং ৮০০ মেগাওয়াটের দুই ইউনিটের মধ্যে একটিকে অলস ফেলে রাখতে হচ্ছে। মাসে ৯-১০ কোটি ডলারের বিল হলে বছরে ১১০ কোটি আয় করার সুযোগ আছে ওই বিদ্যুৎকেন্দ্রের।
টাইমস অব ইন্ডিয়া লিখেছে, বাংলাদেশে শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পরপরই চাহিদা ও অর্থপ্রাপ্তি নিশ্চিতে অভ্যন্তরীণ বাজারে নজর দিয়েছে আদানি। বিহারের লখিসরাই সাব-স্টেশনের মাধ্যমে স্থানীয় গ্রিডের সঙ্গে সংযোগ ঘটাতে বলা হয়েছে তাদের।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস দেশে একটি ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে তরুণদের মনস্থির করার ও স্বপ্ন দেখার আহ্বান জানিয়েছেন।
রোববার রাজধানীর তেজগাঁওয়ে তার কার্যালয়ে এনডিসি ও এফডব্লিউসি কোর্সের সদস্যদের উদ্দেশ্যে বক্তৃতাকালে তিনি বলেন, ‘আমি বিশেষ করে তরুণদের তাদের মনস্থির করতে, চিন্তা করতে ও স্বপ্ন দেখতে উৎসাহিত করি। স্বপ্ন হল পরিবর্তনের সূচনা। স্বপ্ন দেখলে পরিবর্তন হবে। আপনি যদি স্বপ্ন না দেখেন তবে এটি কখনোই হবে না।’
তরুণদের দিকে ইঙ্গিত করে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘নিজেকে প্রশ্ন করুন আমি বিশ্বের জন্য কী করতে পারি? একবার আপনি কী করতে চান তা বুঝতে পারলে আপনি তা করতে পারবেন, কারণ আপনার সেই ক্ষমতা রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘বিশ্বের তরুণ প্রজন্ম এখন সমগ্র মানব ইতিহাসের সবচেয়ে শক্তিশালী প্রজন্ম। ‘তারা যথেষ্ট স্মার্ট হওয়ার কারণে নয় বরং তাদের হাতে প্রচুর প্রযুক্তি রয়েছে বলে।’
প্রযুক্তিকে আলাদিনের চেরাগ উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আপনি যদি ছাত্র বিপ্লবের দিকে তাকান, তবে এটি প্রযুক্তির বিষয়। তারা একে অপরের সাথে খুব দ্রুত যোগাযোগ করতে পারত। তাদের কোন কমান্ড কাঠামো ছিল না।’
ছাত্র নেতৃত্বাধীন বিপ্লব সম্পর্কে তিনি বলেন, দেশের তরুণ যুবকরা একটি নতুন বাংলাদেশ দেখতে চায়।
তিনি বলেন, তরুণরা রাজনীতিবিদ নয় এবং কোনো রাজনৈতিক স্বার্ধ হাসিলের চেষ্টাও তারা করছে না। তবে তারা নিজেদের জন্য একটি নতুন দেশ চায়।
বিশ্ব শান্তির কথা উল্লেখ করে, ২০০৬ সালের নোবেল শান্তি বিজয়ী বলেন, বেশিরভাগ সময়, মানুষ শান্তির নামে একে অপরকে হত্যা করে।
তিনি বলেন, ‘...কিন্তু আমরা প্রতিদিন, আমাদের সমস্ত উচ্চারণ ও আমাদের সমস্ত দর্শনে নিজেদের প্রতিশ্রুতিবদ্ধ করি। আমরা শান্তি চাই। দেশের ভেতরে .শান্তি, সকল দেশের মধ্যে শান্তি এবং বিশ্বব্যাপী শান্তি।’
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, তারঁ কাছে অত্যন্ত হাস্যকর মনে হয় যে বিশ্বের প্রতিটি সরকারেরই একটি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় আছে, যা আক্ষরিক অর্থে এটি যুদ্ধ মন্ত্রণালয়, কিন্তু কোনো শান্তি মন্ত্রণালয় নেই।
তিনি প্রশ্ন করেন, ‘যদি আপনার লক্ষ্য শান্তি হয়, তাহলে আপনার কি শান্তি মন্ত্রণালয় থাকা উচিত নয়?’
আক্রমণের বিরুদ্ধে জনগণকে নিজেদের রক্ষা করতে হবে- এটি পর্যবেক্ষণ করে অধ্যাপক ইউনূস বিশ্বের সরকারগুলোতে শান্তি মন্ত্রণালয় ও যুদ্ধ মন্ত্রণালয় উভয় মন্ত্রণালয়ই রাখার ওপর জোর দেন।
তিনি প্রতিরক্ষা অ্যাটাশেসহ বৈদেশিক সম্পর্কে শান্তি অ্যাটাশে প্রবর্তনের পরামর্শ দেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন যে এটি আত্ম-ধ্বংসাত্মক গ্রহ। কেননা ‘আমরা শুধুমাত্র নিজেদের হত্যা করার জন্য প্রস্তুত সবকিছু করেছি।’
একটি উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, মানুষ গ্রহ ধ্বংস করতে পরিবেশ ধ্বংস করছে।
'প্রতিদিন মানুষ গ্রহকে ধ্বংস করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা একটি ভুল সভ্যতা তৈরি করেছি – আত্মবিধ্বংসী সভ্যতা।’
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস তার বক্তব্যে এনডিসি ও এএফডব্লিউসি কোর্সের সদস্যদের শুভেচ্ছা জানান এবং তাদের সাফল্য কামনা করেন।
নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনে আইন অনুযায়ী সৎ, নির্ভীক ও দক্ষ লোক নিয়োগ করা হবে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব শেখ আব্দুর রশিদ। রোববার সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান।
সচিব বলেন, ‘আইন অনুযায়ী সৎ, নির্ভীক ও দক্ষ লোক নিয়োগ করা হবে। আইনে তাই বলা হয়েছে। আমি সার্চ কমিটির মেম্বার নই। আমরা কমিটিকে সাচিবিক সহায়তা দেব।’
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘আজকে কমিটির মিটিং হবে এবং মিটিংয়ে নেওয়া সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপগুলো নেওয়া হবে। সার্চ কমিটি তাদের কর্মপদ্ধতি ঠিক করবে। অন্যান্য কাজগুলো কীভাবে হবে আজ সেটি তারা নির্ধারণ করবেন।’
কবে নাগাদ নির্বাচন কমিশন গঠন হবে- জানতে চাইলে আব্দুর রশিদ বলেন, ‘আইন অনুযায়ী এই কমিটি ১৫ কর্মদিবসের মধ্যে সুপারিশ দেবে। এরপর রাষ্ট্রপতি কবে নির্বাচন কমিশন গঠন করবেন, সেটা তো আমরা বলতে পারব না।’
গত ২৯ অক্টোবর অন্তর্বর্তী সরকার দেশের নির্বাচনি কাঠামোকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন তদারকির জন্য ছয় সদস্যের সার্চ কমিটি গঠন করে। কমিটির প্রধান করা হয়েছে আপিল বিভাগের বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরীকে।
কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি একেএম আসাদুজ্জামান, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক (সিএজি) নুরুল ইসলাম, সরকারি কর্ম-কমিশনের চেয়ারম্যান মো. মোবাশ্বের মোমেন, রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্ট রিসার্চ ইউনিটের নির্বাহী পরিচালক মো. আবরার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক ও পিএসসির সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. জীনাতুন নেসা তাহমিদা বেগম।
আইন অনুযায়ী, সার্চ কমিটি একবার গঠিত হলে নির্বাচন কমিশনের প্রতি সদস্যপদের জন্য দুজন করে ১০ জনের নাম রাষ্ট্রপতির কাছে প্রস্তাব করতে ১৫ কার্যদিবসের বেশি সময় লাগে না। এরপর রাষ্ট্রপতি প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও চারজন নির্বাচন কমিশনারকে বাছাই করে ইসি গঠন করেন।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের এক মাসের মাথায় গত ৫ সেপ্টেম্বর প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালসহ অন্য চার নির্বাচন কমিশনার পদত্যাগ করেন। পদত্যাগ করা অন্য কমিশনাররা হলেন- ব্রিগেডিয়ার জেনারেল অব আহসান হাবীব খান, বেগম রাশেদা সুলতানা, মোহাম্মদ আলমগীর ও আনিছুর রহমান। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে গঠিত এই কমিশনের অধীনে ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি বহুল বিতর্কিত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
অন্তর্বর্তী সরকার একটা পরিবর্তনকালীন সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। এই সময়টা সফলভাবে পার করতে পারলে দেশ ঘুরে দাঁড়াবে এবং সম্ভাবনার নতুন নতুন দরজা খুলে যাবে। আর যদি সেটা সম্ভব না হয় তাহলে দেশ পিঁছিয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি এবং তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম। এসময় তিনি জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নিহতদের পরিবারকে পুনর্বাসন এবং আহতদের চিকিৎসায় সহযোগিতার আহ্বানও জানান।
আজ রোববার ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের অফিস কক্ষে মোবাইল অপারেটর রবি এবং গ্রামীণফোন লিমিটেডের প্রতিনিধিদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত পৃথক বৈঠকে এসব কথা বলেন।
নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘যেহেতু আন্দোলন শুরু হয়েছিল কর্মসংস্থানকে কেন্দ্র করে, তাই কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা বর্তমান সরকারের প্রধান লক্ষ্য।’
যুব সমাজের আগ্রহ ও প্রত্যাশাকে অগ্রাধিকার দিয়ে মোবাইল কলরেট কমানো এবং ইন্টারনেটের মেয়াদবিহীন প্যাকেজ চালুর আহ্বান জানান উপদেষ্টা।
বাংলাদেশে এখন কাজ করার উপযুক্ত সময় উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, ‘যেহেতু অন্তর্বর্তী সরকার জনসমর্থিত তাই দেশ ও দেশের মানুষের উপকার হয় এমন যে কোনো কাজ করতে আমরা আগ্রহী।’
টেলিকমিউনিকেশন খাতে উন্নতির জন্য সরকার কর্মতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
গ্রামীনফোনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইয়াসির আজমান বলেন, ‘আগে টেলিযোগাযোগ খাতের কোন অফিসে গিয়ে কথা বলার মতো পরিবেশ ছিল না, কিন্তু বর্তমানে পরিবেশ পরিবর্তন হয়েছে। এখন কথা বলা যাচ্ছে এবং ফিডব্যাকও পাওয়া যাচ্ছে এটা টেলিকমিউনিকেশন খাতের জন্য খুবই ইতিবাচক।’
রবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রাজিব শেঠী বলেন, ‘গত ১৫ বছরে টেলিকমিউনিকেশন খাতে কমিশন বেইজড বিভিন্ন লেয়ার তৈরি হয়েছে, যার ফলে মোবাইল অপারেটররা মুনাফা বঞ্চিত হচ্ছে।’
বৈঠকে রবি আজিয়াটা পিএসসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং চিফ কর্পোরেট এন্ড রেগুলেটরি অফিসার মো. শাহেদুল আলম, গ্রামীণফোনের নতুন চিফ কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্স অফিসার (সিসিএও) তানভীর মোহাম্মদসহ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহত ৭ বাংলাদেশিকে বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা দেবে তুরস্ক। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আহতদের উন্নত চিকিৎসার জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে তুর্কি সরকার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা রাষ্ট্রদূত মো. তৌহিদ হোসেন ও পররাষ্ট্র সচিব রাষ্ট্রদূত মো. জসীম উদ্দিনের সঙ্গে তুরস্কের রাষ্ট্রদূত সাক্ষাৎকালে গণঅভ্যুত্থানে আহতদের উন্নত চিকিৎসা দেওয়ার অনুরোধ জানায় বাংলাদেশ।
আজ রোববার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
উল্লেখ্য, ২৭ আগস্ট প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে তুরস্কের রাষ্ট্রপতি রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের টেলিফোন সংলাপকালে এরদোয়ান অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার কার্যক্রমে সহযোগিতার আগ্রহ প্রকাশ করেন।
এর জন্য তুরস্কের একটি সরকারি প্রতিনিধিদল গত ১৩ অক্টোবর থেকে ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত বাংলাদেশ সফর করে। এ সময় নির্বাচন ব্যবস্থা, আর্থিক খাতসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের গৃহীত সংস্কার কার্যক্রমে সম্ভাব্য সহযোগিতার বিষয়ে তুর্কি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও সংস্থাসমূহের বৈঠক হয়।
সাবেক যুব ও ক্রীড়ামন্ত্রী, বিসিবির সভাপতি এবং কিশোরগঞ্জ-৬ আসনের সংসদ সদস্য নাজমুল হোসেন পাপনের পিএসসহ দুই জনকে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলার মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
গতকাল শনিবার রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকা থেকে র্যাব-১৪ ও র্যাব-১ এর যৌথ অভিযানে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তাররা হলেন- পাপনের পিএস সাখাওয়াত মোল্লা (৫২) ও আ. হেকিম রায়হান (৫২)।
আজ রোববার সকালে সংস্থাটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মুনীম ফেরদৌস এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, ১৯ জুলাই কিশোরগঞ্জের ভৈরব থানার লক্ষীপুর ও কমলপুর এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার গণমিছিল বের হয়। গণমিছিলে দুষ্কৃতকারীরা আন্দোলনরত ছাত্র-জনতার ওপর হামলা করে। এতে বেশ কিছু লোক আহত হয়। এ ঘটনায় মামুন মিয়া (৩১), রুবেল মিয়া (৩২) এবং আলম সরকার (৪২) বাদী হয়ে ভৈরব থানায় পৃথক তিনটি মামলা দায়ের করেন।
মামলা রুজু হওয়ার পরে আসামিরা গ্রেপ্তার এড়াতে পলাতক থাকে। তাদের গ্রেপ্তার করতে র্যাব-১৪ ছায়াতদন্ত শুরু করে এবং ঘটনায় জড়িত আসামিদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে দ্রুত কার্যক্রম শুরু করে। পরবর্তী সময়ে শনিবার রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
সেন্টমার্টিন দ্বীপ নিয়ে ‘সুশান্ত দাস গুপ্ত’ নামের একজন ফেসবুক ব্যবহারকারীর করা একটি পোস্টকে ‘গুজব’ বলে উড়িয়ে দিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং।
সুশান্ত দাস গুপ্ত নামে ওই ব্যক্তি তার পোস্টে ‘বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এবং যুক্তরাষ্ট্রের আর্মি প্যাসিফিকের মধ্যে ল্যান্ড ফোর্সেস টকস’ এর একটি ছবি শেয়ার করে প্রশ্ন করেন, ‘ডিল ডান?’ ‘সেন্ট মার্টিন গন?’
এ বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের ‘সিএ প্রেস উইং ফ্যাক্টস’ জানিয়েছে, সেন্ট মার্টিন কোনো দেশের কাছে লিজ দেওয়ার পরিকল্পনা নেই। সিএ প্রেস উইং ফ্যাক্টস আরও জানায়, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এবং যুক্তরাষ্ট্রের আর্মি প্যাসিফিকের মধ্যে ল্যান্ড ফোর্সেস টকস কয়েক বছর ধরে চলছে। এর সপ্তম আসর ২০২৩ সালের ১৪ থেকে ১৬ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াইয়ের ফোর্ট শ্যাফটারে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এই টকসের সঙ্গে সেন্ট মার্টিনকে জড়িয়ে কোনো ধরনের পোস্ট নিছক গুজব। অন্তর্বর্তী সরকার অনেকবার জানিয়েছে যে সেন্ট মার্টিন কোনো বিদেশি দেশের কাছে কোনো উদ্দেশে লিজ দেওয়ার পরিকল্পনা তাদের নেই।
এদিকে সেন্টমার্টিন দ্বীপ নিয়ে মোরশেদ মাহবুবুল নামে আরেক ফেসবুক ব্যবহারকারীর করা পোস্টেরও ব্যাখ্যা দিয়েছে সিএ প্রেস উইং।
মোরশেদ মাহবুবুল নামের ওই ব্যক্তি তার পোস্টে দাবি করেন, ‘সেন্ট মার্টিন দ্বীপের বর্তমান অবস্থা: ১. সাগরে মাছ ধরা বন্ধ; ২. পর্যটক আসা সম্পূর্ণ বন্ধ; ৩. হাসপাতালের কার্যক্রম বন্ধ তিন মাস; ৪. বিদ্যুৎ সরবরাহ সম্পূর্ণ শাটডাউন।’
এ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানায়, অনিয়ন্ত্রিত পর্যটনের কারণে দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিন কমপক্ষে ২০ ধরনের বিপদের মুখে পড়েছে। সম্প্রতি ‘এনভায়রনমেন্টাল অ্যাডভান্স’ নামের একটি বিজ্ঞান সাময়িকীতে প্রকাশিত এক গবেষণায় একথা বলা হয়েছে।
এদিকে, পর্যটনের কারণে সেন্ট মার্টিনে উচ্চ তাপমাত্রার পাশাপাশি লবণাক্ততা বৃদ্ধি, বন উজাড়, দূষণ, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, কচ্ছপের আবাস ধ্বংস, প্লাস্টিকের ব্যবহার, মিঠাপানির সংকট, জোয়ারে সমুদ্রভাঙনসহ নানা বিপদ দেখা দিয়েছে।
ক'মাস ধরে দ্বীপে আরেকটি নতুন বিপদ হাজির হয়েছে। সেখানে দেখা দিয়েছে মারাত্মক ক্ষতিকর সাদা মাছির উৎপাত। এই মাছি দ্বীপের গাছপালা ধ্বংস করছে। সাদা মাছির কারণে গত কয়েক মাসে ৩০০ নারকেল গাছ মারা গেছে বলে জানা যায়।
বিশেষজ্ঞরা সেন্ট মার্টিনের বর্তমান পরিস্থিতির জন্য অপরিকল্পিত পর্যটনকে দায়ী করছেন।
আন্তর্জাতিক ও জাতীয় গবেষণা অনুযায়ী, দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপটির ৪১ ভাগ প্রবাল ধ্বংস হয়েছে। এই ধ্বংসযজ্ঞ থামানো না গেলে ২০৪৫ সালের মধ্যে এই দ্বীপের সব প্রবল ধ্বংস হবে যাবে, আর দ্বীপটি ডুবে যাবে। সরকার এই দ্বীপ রক্ষায়, অনিয়ন্ত্রিত পর্যটন নিয়ন্ত্রণে, আর বেআইনি স্থাপনার বিষয়ে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা বৃহত্তর জনস্বার্থে। দেশের একমাত্র প্রবালের দ্বীপ সেন্ট মার্টিন বেঁচে থাকবে আগামী প্রজন্মের জন্যও।
জীববৈচিত্র্য সমৃদ্ধ ও স্বতন্ত্র দ্বীপ রক্ষায় বিভিন্ন দেশ নানা উদ্যোগ নেয়। কারণ, এ ধরনের দ্বীপ তৈরি হতে হাজার হাজার বছর লাগে। কিন্তু কিছু পর্যটকের কয়েক যুগের অত্যাচারে তা কয়েক বছরের মধ্যে ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। সুতরাং সেন্টমার্টিন রক্ষায় সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার থাকা উচিত।
বিশেষজ্ঞরা সেন্ট মার্টিনের বর্তমান পরিস্থিতির জন্য অপরিকল্পিত পর্যটনকে দায়ী করছেন। তাঁরা বলছেন, মৌসুমি পর্যটকদের অনিয়ন্ত্রিত আচরণ ও পরিবেশবিধ্বংসী বিনোদনের ফলে সংকট আরও ঘনীভূত হচ্ছে। গত এক যুগে দ্বীপটি রক্ষায় সরকার তিন দফায় পর্যটন নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ নিয়েছিল। সেন্টমার্টিন দ্বীপ রক্ষায় পরিবেশ অধিদপ্তর একটি প্রকল্প চালু করে। কিন্তু পর্যটন ব্যবসায়ীদের চাপে ওই অবস্থান থেকে সরে আসে সরকার।
এ ধরনের জীববৈচিত্র্য সমৃদ্ধ ও স্বতন্ত্র দ্বীপ রক্ষায় বিভিন্ন দেশ নানা উদ্যোগ নেয়। কারণ, এ ধরনের দ্বীপ তৈরি হতে হাজার হাজার বছর লাগে। কিন্তু কিছু পর্যটকের কয়েক যুগের অত্যাচারে তা কয়েক বছরের মধ্যে ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। সুতরাং সেন্ট মার্টিন রক্ষায় সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার থাকা উচিত বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
জীববৈচিত্র্য রক্ষায় পরিবেশ অধিদপ্তর ১৯৯৯ সালে সেন্ট মার্টিনকে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) ঘোষণা করে। সর্বশেষ ২০২৩ সালের ৪ জানুয়ারি বন্য প্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন অনুযায়ী, সেন্টমার্টিন সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরের ১ হাজার ৭৪৩ বর্গকিলোমিটার এলাকাকে সংরক্ষিত এলাকা হিসেবে ঘোষণা করে পরিবেশ মন্ত্রণালয়।
সেন্টমার্টিনের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সর্বশেষ ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে সেন্টমার্টিন নিয়ে আন্তর্জাতিক ওশান সায়েন্স জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণা নিবন্ধে বলা হয়, দুই দশকের মধ্যে দ্বীপটি পুরোপুরি প্রবালশূন্য হতে যেতে পারে। বিশ্বজুড়ে বিলুপ্তপ্রায় জলপাই রঙের কাছিম, চার প্রজাতির ডলফিন, বিপন্ন প্রজাতির পাখিসহ নানা বন্য প্রাণীর বাস এই দ্বীপে। এসব প্রাণীও দ্বীপটি ছেড়ে চলে যাবে।
এসব বিষয় মাথায় রেখে ২০২১ সালের ২ জানুয়ারি পরিবেশ অধিদপ্তর গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে। এতে সেন্টমার্টিনের সৈকতে আলো জ্বালিয়ে বারবিকিউ, দোকানপাটে বেচাকেনা, সৈকতের পাথরে সংগ্রহ, মোটরসাইকেলসহ যেকোনো ধরনের যানবাহনে চলাচল নিষিদ্ধসহ ১৪টি বিধিনিষেধ আরোপ করে। কিন্তু গণবিজ্ঞপ্তি কার্যকর কিংবা তদারক করা হয়নি।
সর্বশেষ ২০২৩ সালে জীববৈচিত্র্য সুরক্ষায় সেন্টমার্টিন দ্বীপে পর্যটক নিয়ন্ত্রণ, টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন নৌপথে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল সীমিত করাসহ ১৩টি বিষয়ে নীতিমালা তৈরি করে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। ওই বছরের ২৩ জুন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ‘সেন্টমার্টিন দ্বীপের পরিবেশ, প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সুরক্ষা এবং টেকসই পর্যটন নীতিমালা ২০২২’ শীর্ষক নীতিমালা প্রণয়ন কমিটির সর্বশেষ বৈঠক হয়।
বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, অনলাইন নিবন্ধনের মাধ্যমে দিনে ৯০০ পর্যটককে সেন্ট মার্টিন ভ্রমণের সুযোগ দেওয়া হবে। আগ্রহীদের মাথাপিছু সরকারকে এক হাজার টাকা করে রাজস্ব দিতে হবে। দ্বীপের হোটেলে রাতযাপন করতে হলে দিতে হবে দুই হাজার টাকা। আগামী পর্যটন মৌসুম অর্থাৎ নভেম্বর থেকে এই নির্দেশনা কার্যকরের কথা থাকলেও এখন কেউ সেন্টমার্টিন যেতে পারছেন না।
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর, সেন্টমার্টিন দ্বীপে পর্যটন নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগের বিষয়টি নিয়ে উল্টো প্রচার শুরু হয়। সেখানে মার্কিন ঘাঁটি তৈরিসহ নানা ধরনের প্রচার চলতে থাকে।
সর্বশেষ গত ২২ অক্টোবর অন্তর্বতী সরকারের উপদেষ্টামণ্ডলীর সভায় সেন্টমার্টিনে চার মাস পর্যটকদের যাতায়াত ও অবস্থান সীমিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এর মধ্যে নভেম্বরে পর্যটকেরা যেতে পারলেও রাতে থাকতে পারবেন না। আর ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে গিয়ে রাতেও থাকতে পারবেন। তবে ওই সময় দিনে দুই হাজারের বেশি পর্যটক যেতে পারবেন না। আর ফেব্রুয়ারিতে পর্যটকেরা সেখানে যেতে পারবেন না।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এ সম্পর্কে বলেছেন, ‘আমরা দ্বীপটি বাঁচাতে চাই। এটি দেশের সবার সম্পদ। পর্যটকেরা দায়িত্বশীল আচরণ করলে দেশের ওই সম্পদ রক্ষা পাবে।’
সরকারের ওই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে মাঠে নেমেছে ‘কক্সবাজারে সেন্ট মার্টিন দ্বীপে পরিবেশ ও পর্যটন উন্নয়ন জোট’নামের একটি সংগঠন। জোটের নেতৃত্বে থাকা অনেকের সেন্টমার্টিনে আবাসিক হোটেল রয়েছে। এসব হোটেল প্রতিবেশ সংকটাপন্ন এলাকায় অবৈধভাবে গড়ে তোলা হয়েছে বলে অভিযোগ আছে ।’
যুদ্ধবিধ্বস্ত লেবাননে ইসরায়েলি বিমান হামলায় এক প্রবাসী বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে লেবাননে বাংলাদেশের দূতাবাস।
নিহত মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন (৩১) ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার খাড়েরা ইউনিয়নের খাড়েরা গ্রামের মোহাম্মদ আবদুল কুদ্দুসের ছেলে। তিনি বৈরুতে একটি কফি শপে কর্মরত ছিলেন।
স্থানীয় সময় গতকাল শনিবার বিকেলে নিজাম উদ্দিন বৈরুতের হাজমিয়ে এলাকায় নিজ কর্মস্থলে যাওয়ার পথে এ ঘটনা ঘটে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে জানান, নিহতের স্ত্রী বর্তমানে লেবাননে অবস্থান করছেন। লেবাননে বাংলাদেশের দূতাবাস তার সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে।
যুদ্ধ পরিস্থিতিতে ফ্লাইট না থাকায় মরদেহ বাংলাদেশে আনা সম্ভব হবে না বলে জানান ওই কর্মকর্তা।
খাড়েরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মনিরুজ্জামান জানান, জীবিকার তাগিদে গত ১২ বছর আগে মোহাম্মদ নিজাম লেবাননে যান। শনিবার কর্মস্থলে যাওয়ার পথে বোমা বিস্ফোরিত হয়ে নিহত হয়েছেন বলে তার বড় ভাই আমাকে নিশ্চিত করেছেন। তার লাশ সেখানে হিমঘরে রাখা আছে।
নিজাম উদ্দিনের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করে বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করে শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন লেবাননে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এয়ার ভাইস মার্শাল জাভেদ তানভীর খান।
যুদ্ধবিধ্বস্ত লেবানন থেকে স্বেচ্ছায় দেশে ফিরে আসতে ইচ্ছুক আটকে পড়া বাংলাদেশিদের মধ্যে আরও ৭০ জন আজ রোববার দেশে ফিরবেন। শুক্রবার রাতে বৈরুতে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, রোববার রাত ১১টায় তারা দুবাই হয়ে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছাবেন।
এর আগে সবশেষ গত বৃহস্পতিবার রাতে ৫২ জনকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। সেদিন রাত ১১টায় এমিরেটসের একটি ফ্লাইটে তারা দুবাই হয়ে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছান। সম্পূর্ণ সরকারি খরচে এ পর্যন্ত মোট ২৬৮ জন বাংলাদেশিকে লেবানন থেকে বাংলাদেশে প্রত্যাবাসন করা হয়েছে বলে জানা গেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে। এর মধ্যে গত ২১ অক্টোবর প্রথম দফায় ফেরত এসেছেন ৫৪ জন, ২৩ অক্টোবর দুটি ফ্লাইটে ৯৬ জন, ২৮ অক্টোবর মধ্যরাতে ৩০ জন এবং ২৯ অক্টোবর রাতে ৩৬ জনকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে।
লেবাননে চলমান সাম্প্রতিক সময়ের যুদ্ধাবস্থায় যত জন প্রবাসী বাংলাদেশি দেশে ফিরে আসতে ইচ্ছুক তাদের সবাইকেই সরকার নিজ খরচে দেশে ফেরত আনবে। বাংলাদেশ দূতাবাস, বৈরুত থেকে দেশে ফিরে আসতে ইচ্ছুক বাংলাদেশিদের নিরাপদে প্রত্যাবর্তনের জন্য এবং যেসব প্রবাসী বাংলাদেশি ফিরে আসতে অনিচ্ছুক তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা নিয়েছে।
দূতাবাস জানায়, বৈরুতে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, লেবাননে চলমান যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে যারা স্বেচ্ছায় দেশে যেতে দূতাবাস বরাবর আবেদন করেছেন এবং যাদের পাসপোর্ট, আকামাসহ আবশ্যক ট্রাভেল ডকুমেন্টস প্রস্তুত রয়েছে, তাদের যাবতীয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে দূতাবাসের ব্যবস্থাপনায় দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ দূতাবাস- বৈরুত, লেবানন এবং আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) সহযোগিতায় এসব বাংলাদেশি দেশে ফিরে আসছেন।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দেশ থেকে প্রতি বছর ১২ থেকে ১৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার পাচার হয়েছে বলে দাবি করেছেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। তিনি বলেছেন, মূলত বাণিজ্যের আড়ালে হয়েছে এসব অর্থ পাচারের ঘটনা। পাচার হওয়া এসব অর্থ দেশে ফেরত আনা সম্ভব। তবে তা সময়সাপেক্ষ। গতকাল শনিবার রাজধানীর ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম কার্যালয়ে পাচার হওয়া অর্থ ও তা উদ্ধারের উপায় শীর্ষক সেমিনারে এসব মন্তব্য করেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক। সেমিনারের আয়োজন করে ইকোনোমিক রিপোর্টার্স ফোরাম ও সম্ভাবনার বাংলাদেশ।
আওয়ামী লীগ আমলে রাষ্ট্রীয় কাঠামো ব্যবহার করে অর্থ পাচার হয়েছে অভিযোগ করে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর ব্যাংক খাত থেকে যে ১৭ বিলিয়ন ডলার পাচার হওয়ার কথা বলেছেন, বাস্তবে তার পরিমাণ আরও বেশি। রাষ্ট্রীয় কাঠামো ব্যবহার করে সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ প্রভাবশালীরা ব্যাংক খাত ও বাণিজ্যের আড়ালে প্রতি বছরে ১২ থেকে ১৫ বিলিয়ন ডলার পাচার করেছে। যদিও শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতায় থাকাকালে কী পরিমাণ টাকা পাচার হয়েছে এর প্রকৃত হিসাব কোথাও নেই। তিনি বলেন, পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনা সম্ভব হলেও প্রক্রিয়াটি খুবই জটিল। যে দেশে অর্থ পাচার করা হয়েছে সেই দেশের সঙ্গে আইনি চুক্তি ও সমঝোতার মাধ্যমে ফিরিয়ে আনার পদক্ষেপ নিতে হবে। রাজনৈতিক, আমলাতান্ত্রিক ও ব্যবসায়িক সংস্কৃতি পরিবর্তন না হলে অর্থ পাচার ও দুর্নীতি বন্ধ হবে না।
ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, অর্থপাচার রোধে রাষ্ট্রকেই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। অর্থপাচার বন্ধে রাজনীতি, আমলাতন্ত্র ও ব্যবসাকে আরও দায়িত্বশীল হতে হবে। এ সময় সবাইকে সচেতন হওয়ার পাশাপাশি প্রতিবাদে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান তিনি। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোতে পাচার হওয়া অর্থ ফেরাতে ইতোমধ্যে কাজ শুরু হয়েছে। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের সঙ্গে বৈঠক করেছে সরকার। আগামী দুই বছরের মধ্যে যদি একটা পয়সাও ফেরত আসে তাহলে সেটাও বড় অর্জন হবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে ঋণ খেলাপির সংস্কৃতি যারা চালু করেছেন, সেই প্রভাবশালীরাই পাঁচ তারকা হোটেলে বসে ব্যাংক খাতের নীতি পলিসি তৈরি করত। আর বাংলাদেশ ব্যাংক সেসব পলিসি শুধু ঘোষণা করত। ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশ ব্যাংক ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা বিভাগ বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) দুর্নীতি ও অর্থপাচারে সহায়ক হিসেবে কাজ করেছে। দেশের ব্যাংক খাতকে যে খাদের কিনারায় ঠেলে দেওয়া হয়েছে, তার পেছনে মূল দায়ী হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বর্তমান পরিস্থিতিতে এসব প্রতিষ্ঠানের মৌলিক সংস্কার ও ঢেলে সাজানো ছাড়া বিকল্প নেই।
টিআইবি পরিচালক আরও বলেন, দুদক এখন যাদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান করছে, সেই তথ্য-উপাত্ত তাদের হাতে আগেই ছিল। দুদক প্রমাণ করল, যারা ক্ষমতায় আসছে বা আসবে তাদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান করা যাবে না। সে জন্য তাদের সংস্কার করা দরকার। গ্রিনওয়াচ ঢাকার এডিটর মোস্তফা কামাল মজুমদারের সঞ্চালনায় সেমিনারে আরও বক্তব্য রাখেন ওয়েস্ট সিডনি ইউনিভার্সিটির এমিরেটস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান চৌধুরী ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক জসিম উদ্দিন আহমেদ প্রমুখ।