বৃহস্পতিবার, ২৮ আগস্ট ২০২৫
১৩ ভাদ্র ১৪৩২

২০২৫ সালের সরকারি ছুটির তালিকা প্রকাশ

ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড
২১ অক্টোবর, ২০২৪ ২১:১২
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত : ২১ অক্টোবর, ২০২৪ ২১:১১

আগামী ২০২৫ সালে ২৬ দিন সরকারি ছুটি নির্ধারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। এর আগে ১৭ অক্টোবর উপদেষ্টা পরিষদের সভায় ২০২৫ সালের ছুটির তালিকা অনুমোদন দেওয়া হয়। তালিকা অনুযায়ী আগামী বছর সাধারণ ও নির্বাহী আদেশ মিলিয়ে ২৬ দিন ছুটি থাকবে। এর মধ্যে ৯ দিন পড়েছে সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্র ও শনিবার।

এ তালিকা অনুযায়ী, আগামী বছর সাধারণ ছুটি ১২ দিন ও নির্বাহী আদেশের ছুটি ১৪ দিন। তবে সাধারণ ছুটির মধ্যে পাঁচ দিন এবং নির্বাহী আদেশের ছুটির মধ্যে চার দিনই সাপ্তাহিক ছুটি থাকবে।

সরকারি ছুটি হিসেবে থাকছে ২১ ফেব্রুয়ারি শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, ২৬ মার্চ স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস, ২৮ মার্চ জুমাতুল বিদা, ৩১ মার্চ ঈদুল ফিতর, ১ মে মে-দিবস, ২১ মে বুদ্ধপূর্ণিমা (বৈশাখী পূর্ণিমা), ৭ জুন ঈদুল আজহা, ১৬ আগস্ট জন্মাষ্টমী, ৫ সেপ্টেম্বর ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.), ২ অক্টোবর দুর্গাপূজা (বিজয়া দশমী), ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস এবং ২৫ ডিসেম্বর যিশুখ্রিস্টের জন্মদিন (বড় দিন)।

নির্বাহী আদেশে ছুটি

শবেবরাত ১৫ ফেব্রুয়ারি, শবেকদর ২৮ মার্চ, ২৯ ও ৩০ মার্চ এবং ১ ও ২ এপ্রিল ঈদুল ফিতরের আগে দুই দিন ও পরে দুই দিনসহ মোট চার দিন, ১৪ এপ্রিল বাংলা নববর্ষ, ঈদুল আজহার আগে ৫ ও ৬ জুন দুদিন এবং পরে ৮ থেকে ১০ জুনসহ মোট পাঁচ দিন, ৬ জুলাই আশুরা এবং ১ অক্টোবর দুর্গাপূজার মহানবমীর দিন নির্বাহী আদেশে ছুটি থাকবে।

মুসলিমদের ঐচ্ছিক ছুটি

ঐচ্ছিক ছুটির মুসলিম পর্বের মধ্যে রয়েছে- ২৮ জানুয়ারি শবেমেরাজ, ৩ এপ্রিল ঈদুল ফিতরের পরের তৃতীয় দিন, ১১ জুন ঈদুল আজহার পরের চতুর্থ দিন, ২০ সেপ্টেম্বর আখেরি চাহার সোম্বা এবং ৪ অক্টোবর ফাতেহা-ই-ইয়াজদাহম।

সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ঐচ্ছিক ছুটি

হিন্দু পর্বের ঐচ্ছিক ছুটির দিনগুলোর মধ্যে রয়েছে- ৩ ফেব্রুয়ারি সরস্বতী পূজা, ২৬ ফেব্রুয়ারি শিবরাত্রি ব্রত, ১৪ মার্চ দোলযাত্রা, ২৭ মার্চ হরিচাঁদ ঠাকুরের আবির্ভাব, ২১ সেপ্টেম্বর মহালয়া, ২৯ ও ৩০ সেপ্টেম্বর দুর্গাপূজা (সপ্তমী ও অষ্টমী), ৬ অক্টোবর লক্ষ্মীপূজা এবং ৩১ অক্টোবর শ্যামাপূজা।

খ্রিস্টানদের ঐচ্ছিক ছুটি

খ্রিস্টান পর্বের ঐচ্ছিক ছুটির মধ্যে রয়েছে- ১ জানুয়ারি ইংরেজি নববর্ষ, ৫ মার্চ ভষ্ম বুধবার, ১৭ এপ্রিল পুণ্য বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল পুণ্য শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল পুণ্য শনিবার, ২০ এপ্রিল ইস্টার সানডে এবং ২৪ ও ২৬ ডিসেম্বর যিশুখ্রিস্টের জন্মোৎসব (বড় দিনের আগে ও পরের দিন)।

বৌদ্ধদের ঐচ্ছিক ছুটি

ঐচ্ছিক ছুটির বৌদ্ধ পর্বের মধ্যে রয়েছে- ১১ ফেব্রুয়ারি মাঘি পূর্ণিমা, ১৩ এপ্রিল চৈত্র সংক্রান্তি, ১০ ও ১২ মে বুদ্ধ পূর্ণিমা (পূর্বের ও পরের দিন), ৯ জুলাই আষাঢ়ি পূর্ণিমা, ৬ সেপ্টেম্বর মধু পূর্ণিমা এবং ৫ অক্টোবর প্রবারণা পূর্ণিমা (আশ্বিনী পূর্ণিমা)।

ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ঐচ্ছিক ছুটি

এ ছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকা ও এর বাইরে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত কর্মচারীদের জন্য ঐচ্ছিক ছুটির মধ্যে রয়েছে- ১২ ও ১৫ এপ্রিল বৈসাবি ও পার্বত্য চট্টগ্রামের অন্যান্য ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর অনুরূপ সামাজিক উৎসব।

ঐচ্ছিক ছুটিগুলো সংশ্লিষ্ট ধর্মাবলম্বী বা গোষ্ঠীর মানুষ নিজ নিজ কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদনের ভিত্তিতে গ্রহণ করতে পারবেন।


চলতি বছর ৩০ হাজারের কাছাকাছি ডেঙ্গুরোগী

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ৪৩০ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এ সময়ের মধ্যে কেউ মারা যাননি। চলতি বছর এখনো পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছে ১১৮ জনের এবং হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২৯ হাজার ৯৪৪ জন।

গতকাল বুধবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের দেওয়া তথ্য থেকে এসব জানা যায়।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, আগস্টে এখন পর্যন্ত ৮ হাজার ৯৬৪ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন এবং মারা গেছেন ৩৫ জন। সারাদেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে বর্তমানে ১ হাজার ৪২৬ জন ডেঙ্গুরোগী ভর্তি আছেন। তাদের মধ্যে ঢাকায় ৪৭৮ জন, বাকি ৯৪৮ জন ঢাকার বাইরে বিভিন্ন বিভাগের।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, চলতি বছরের জানুয়ারিতে ১ হাজার ১৬১ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৩৭৪ জন, মার্চে ৩৩৬ জন, এপ্রিলে ৭০১ জন, মে-তে ১ হাজার ৭৭৩ জন , জুনে ৫ হাজার ৯৫১ জন এবং জুলাইয়ে ১০ হাজার ৬৮৪ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে জানুয়ারিতে ১০ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৩ জন, এপ্রিলে ৭ জন, মে-তে ৩ জন, জুনে ১৯ জন এবং জুলাইয়ে ৪১ জন মারা গেছেন।

এদিকে সম্প্রতি আগামী সেপ্টেম্বরে উচ্চ আর্দ্রতা ও অবিরাম বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানা গেছে। রাজধানীর হাসপাতালগুলোতে রোগীর চাপ বাড়বে বলে আশঙ্কা জানানো হয়েছে ডেঙ্গু পরিস্থিতির পূর্বাভাস-সংক্রান্ত প্রতিবেদনে।

সম্প্রতি রাজধানীর গুলশানে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত ‘ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া সংলাপ আগস্ট ২০২৫: প্রতিরোধ, প্রস্তুতি ও নিরসন’ শীর্ষক সমন্বয় সভায় এই ডেঙ্গু পরিস্থিতির পূর্বাভাস প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, আগস্টে টানা বৃষ্টি হওয়ায় ও বিগত বছরের অভিজ্ঞতা অনুসারে সেপ্টেম্বরে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা দ্রুত বাড়তে পারে বলে সতর্ক করেছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। এতে হাসপাতালগুলোতে ভর্তির চাপও বাড়তে পারে। তবে অক্টোবরে বর্ষা শেষে সংক্রমণ কমার সম্ভাবনা রয়েছে। যদিও দ্বিতীয় দফায় প্রাদুর্ভাব চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে। এ সময়ও লার্ভিসাইডিং ও স্যানিটেশন কার্যক্রম জোরদার রাখার ওপর জোর দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

সভায় মশক নিয়ন্ত্রণে প্রতিবন্ধকতার বিষয়ে বলা হয়েছে, জনগণের সচেতনতার অভাব, সঠিকভাবে কীটনাশক প্রয়োগ না করা ও অপর্যাপ্ত সরকারি উদ্যোগ এ জন্য দায়ী। অপরিকল্পিত নগরায়ণ, পানি নিষ্কাশন সমস্যা ও আবহাওয়ার প্রভাবেও মশার বংশবিস্তার বাড়ছে। পাশাপাশি বিভিন্ন সংস্থার সমন্বয়হীনতা ও ফগিংনির্ভর ভ্রান্ত ধারণা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করছে।


চন্দ্রনাথ পাহাড় ঘিরে উসকানিমূলক কার্যক্রমের চিহ্ন দেখামাত্র ব্যবস্থার নির্দেশ

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের চন্দ্রনাথ পাহাড় ঘিরে উসকানিমূলক কার্যক্রমের চিহ্ন দেখামাত্র ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের তিন উপদেষ্টা।

গতকাল বুধবার রেলভবনে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ঐতিহ্যবাহী চন্দ্রনাথধাম (কাঞ্চননাথ-চন্দ্রনাথ-আদিনাথ) স্রাইন কমিটির নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে এই নির্দেশ দেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার এবং ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বৈঠকে স্রাইন কমিটির নেতারা জানান, পাঁচ বছর ধরে মন্দির ঘিরে বিভিন্ন ধরনের উসকানিমূলক কর্মকাণ্ড দেখা যাচ্ছে। সম্প্রীতির পরিবেশ নষ্টের অপচেষ্টা চলছে।

তাৎক্ষণিকভাবে বৈঠক থেকে তিন উপদেষ্টা মাঠ প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তাদের এ ব্যাপারে সজাগ থাকার নির্দেশ দেন। কোনো ধরনের উসকানির চিহ্ন দেখলে সঙ্গে সঙ্গে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন।

পাহাড়ে অবস্থিত মন্দিরে যাতায়াতের জন্য সিঁড়ির সংস্কার প্রয়োজন বলে জানান কমিটির সদস্যরা। স্রাইন কমিটির সভাপতি অপূর্ব কুমার ভট্টাচার্য বলেন, সিঁড়ি এখন খুব একটা ভালো অবস্থায় নেই। দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে।

এই অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে তাৎক্ষণিকভাবে চট্টগ্রামের স্থানীয় সরকার সচিব রেজাউল মাকছুদ জাহেদীকে ফোন করে সিঁড়ি সংস্কারের বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বলেন উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান।

বৈঠকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার বলেন, ধর্ম, বর্ণ, শ্রেণি নির্বিশেষে অন্তর্বর্তী সরকার সবার জন্য বৈষম্যহীন সমাজে নির্মাণে কাজ করছে।

ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেন, ‘অন্য ধর্মের স্থাপনার ওপর যারা আক্রমণ করে, তারা কোনোভাবেই ধার্মিক হতে পারে না। এটা অপরাধ। এ কাজে কোনো ধর্ম নেই, অধর্ম রয়েছে। ধর্মীয় সম্প্রীতি নষ্টের কোনো ধরনের চেষ্টা হলে আমরা কঠোর ব্যবস্থা নেব। আমি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের আহ্বান জানাই আপনারা নায্য দাবিদাওয়াগুলো মন্ত্রণালয়ে হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট বরাবর পাঠান, আমরা উপযুক্ত ব্যবস্থা নেব।’

রেল উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান বলেন, ‘চন্দ্রনাথ মন্দিরের সঙ্গে ইতিহাস, ঐতিহ্য জড়িত। আমাদের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট হয় এমন কোনো উসকানিমূলক কার্যক্রম বরদাশত করা হবে না। কোনো ধরনের উসকানির চিহ্ন দেখলে সঙ্গে সঙ্গে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’


নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সহিংসতা নয়, শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে হবে: শারমীন এস মুরশিদ

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নবীনগর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি

সমাজকল্যাণ এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ বলেছেন, "৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের কারণেই আমরা আজ স্বাধীন দেশের নাগরিক হয়েছি, আর ২৪ সালের নির্বাচনের মাধ্যমে আমাদের গণতান্ত্রিক ধারা আরও সুদৃঢ় হবে। কিন্তু দীর্ঘ ১৫ বছরের দুঃশাসন এক-দুই বছরে দূর করা সম্ভব নয়। আগামী নির্বাচন আমাদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ।"

তিনি আরও বলেন, "আমরা একটি নির্বাচনের দিকে এগোচ্ছি, তাই সকলের প্রতি অনুরোধ থাকবে—নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যেন কোনো ধরনের সহিংসতা না ঘটে। সহিংসতা হলে নির্বাচন প্রক্রিয়া ব্যাহত হবে, গণতন্ত্র বিপন্ন হবে। একটি শান্তিপূর্ণ, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজনই আমাদের মূল লক্ষ্য।"

আজ (২৭.০৮.২৬) বুধবার বিকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার নাসিরাবাদ গ্রামে নদীভাঙন এলাকা পরিদর্শন এবং স্থানীয়দের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

নদীভাঙন প্রসঙ্গে শারমীন এস মুরশিদ বলেন, "মেঘনা নদীর ভাঙনে শত শত পরিবার ঘরবাড়ি, ফসলি জমি ও জীবিকার সহায়-সম্বল হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছে। মসজিদ, মাদ্রাসা ও বাড়িঘর নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার পথে। এ পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রশাসনকে জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।"

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি মব জাস্টিস ও সাইবার অপরাধ নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, "মব জাস্টিসের পেছনে অন্যতম বড় কারণ হলো ভুল তথ্য ছড়ানো—আর এর জন্য মোবাইল এবং ইন্টারনেট ব্যবহারের অপব্যবহার দায়ী। সাইবার অপরাধ একটি নতুন চ্যালেঞ্জ, এটি সরকার একা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না। তরুণ সমাজকে আইটি সেক্টরে দক্ষ হতে হবে এবং এই অপরাধ রোধে এগিয়ে আসতে হবে।"

অবৈধ বালু উত্তোলন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, "প্রশাসনের একার পক্ষে এটি বন্ধ করা সম্ভব নয়। স্থানীয় জনগণকে বালুখেকোদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।"

সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন উপদেষ্টার একান্ত সচিব তারেক মোহাম্মদ জাকারিয়া, বাংলাদেশ হাইওয়ে পুলিশের ডিআইজি (পূর্ব বিভাগ) মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান খাঁন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক দিদারুল আলম, পুলিশ সুপার এহতেশামুল হক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আবু মোছা, পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মনজুর রহমান, নবীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাজিব চৌধুরী, সহকারী পুলিশ সুপার (নবীনগর সার্কেল) পিয়াস বসাক, সহকারী কমিশনার (ভূমি) খালেদ বিন মনসুর, নবীনগর থানার ওসি শাহিনুর ইসলাম এবং নবীনগর প্রেসক্লাব সভাপতি মোহাম্মদ হোসেন শান্তি।


জাতীয় নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করা হবে কাল: ইসি সচিব

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
বাসস

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কর্মপরিকল্পনা (রোডম্যাপ) আগামীকাল বৃহস্পতিবার ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ।
আজ বুধবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনের মিডিয়া সেন্টারে এক ব্রিফিংয়ে সচিব সাংবাদিকদের এ কথা জানান।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ইসি সচিব বলেন, ‘আমরা যে কর্মপরিকল্পনা (রোডম্যাপ) করেছি, সে কর্মপরিকল্পনাটা আপনাদের জানাবো। আমি ঢাকার বাইরে থাকায় একটু পিছিয়ে পড়েছি। এটা আমার টেবিলে এখন আছে। আগামীকাল পর্যন্ত একটু অপেক্ষা করেন।’
এদিকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনের সভাপতিত্বে চার নির্বাচন কমিশনার ও ইসি সচিব আজ এক বৈঠকে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কর্মপরিকল্পনা (রোডম্যাপ) অনুমোদন করেছে কমিশন।
এখন যেকোনো সময় নির্বাচনের এই রোডম্যাপ আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করা হতে পারে বলে ইসির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে একজন নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘কর্মপরিকল্পনার সবকিছু চূড়ান্ত হয়ে গেছে। অনুমোদন হয়েছে, এখন শুধু টাইপিং চলছে।’
উল্লেখ্য জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে ইসির পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে দল নিবন্ধন, সীমানা নির্ধারণ, নির্বাচন পর্যবেক্ষক, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংস্কার, বিধিমালা ও নীতিমালা জারি, প্রবাসীদের জন্য আইটি সাপোর্টেড নিবন্ধন ও পোষ্টাল ব্যালট পদ্ধতি ও নির্বাচনী সরঞ্জাম কেনাকাটা বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়েছে রোডম্যাপে।


দুই মসজিদ ও এক মন্দির বরাদ্দ পেলো রেলের জমি

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
সচিবালয় প্রতিবেদক

রাজধানীর জোয়ার সাহারা মৌজায় দুটি মসজিদ ও একটি মন্দিরের জন্য জমি বরাদ্দ প্রদান করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে।

বুধবার (২৭ আগস্ট) রেলভবনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে উক্ত মসজিদ ও মন্দিরের পরিচালনা কমিটির নিকট বরাদ্দপত্র তুলে দেন ঢাকার বিভাগীয় রেলওয়ে ম্যানেজার মো: মহিউদ্দিন আরিফ।

বরাদ্দপ্রাপ্ত মসজিদ ও মন্দিরের মধ্যে ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট থানাধীন জোয়ার সাহারা মৌজায় খিলক্ষেত রেলওয়ে জামে মসজিদের জন্য ০.২০১১ একর (৮৭৬০ বর্গফুট), একই মৌজায় আন-নূর-জামে মসজিদের জন্য ০.০৫৫২ একর (২৪০৫ বর্গফুট) এবং খিলক্ষেত থানাধীন একই মৌজায় খিলক্ষেত সার্বজনীন শ্রী শ্রী দূর্গা মন্দিরের জন্য ০.০৫৬২ একর (২৪৫০ বর্গফুট) জমি বরাদ্দ প্রদান করা হয়। বাংলাদেশ রেলওয়ের নির্ধারিত প্রতীকী মূল্যের বিনিময়ে এসব জমি বরাদ্দ প্রদান করা হয়।

বরাদ্দপত্র হস্তান্তরের জন্য আয়োজিত এ অনু্ষ্ঠানে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়, বিদ্যুৎ জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় এবং রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার, সড়ক পরিবহন ও সেতু এবং রেলপথ মন্ত্রণালয়ে নিযুক্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারি ড. শেখ মইনউদ্দিন, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব মোহাম্মদ শফিকুল আলম, রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো: ফাহিমুল ইসলাম, বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক মো: আফজাল হোসেন, বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোটের মহাসচিব এড. গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক, মসজিদ ও মন্দির সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ, খিলক্ষেত এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এবং রেলপথ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানে উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান বলেন, বাংলাদেশ ধর্মীয় সম্প্রীতির দেশ। ইসলাম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান সকল ধর্মেই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষার কথা বলা হয়েছে। কেউ এই সম্প্রীতি বিনষ্ট করার চেষ্টা করলে তাকে কোনো প্রকার ছাড় দেওয়া হবে না। তার বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

রেলওয়ের জমি মসজিদ ও মন্দিরকে বরাদ্দ দেওয়াকে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অনন্য নজির হিসেবে উল্লেখ করে ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেন, বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যের রোল মডেল। তারপরও বিভিন্ন সময়ে কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটে থাকে। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান কিংবা উপাসনালয়গুলোকে যারা অপবিত্র করতে চায় তাদের ধর্মীয় কোন পরিচয় নেই, তারা দুষ্কৃতকারী, ক্রিমিনাল। তিনি হিন্দু সম্প্রদায়ের বেহাত হয়ে যাওয়া দেবোত্তর সম্পত্তি যেগুলো নিয়ে আদালতে কোন মামলা-মোকদ্দমা নেই এরূপ সম্পত্তি উদ্ধারে সহযোগিতার আশ্বাস দেন।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বাংলাদেশ রেলওয়ের এই উদ্যোগের ভুয়সী প্রশংসা করেন। বরাদ্দপত্র হস্তান্তর শেষে একটি প্রেস ব্রিফিং অনুষ্ঠিত হয়। ব্রিফিং শেষে মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব মোহাম্মদ শফিকুল আলম উপস্থিত সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন।


জাতীয় নির্বাচনের রোডম্যাপ অনুমোদন

আপডেটেড ২৭ আগস্ট, ২০২৫ ১৬:৩০
বাসস

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কর্মপরিকল্পনা (রোডম্যাপ) অনুমোদন করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

যে কোনো সময় এই নির্বাচনের রোডম্যাপ আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করতে পারে ইসি।

আজ বুধবার দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন, চার নির্বাচন কমিশনার ও ইসি সচিব এ নিয়ে বৈঠকও করেছেন।

বৈঠকে কর্মপরিকল্পনার (রোডম্যাপ) অনুমোদন দিয়েছে কমিশন। এখন, যে কোনো সময় নির্বাচনের এই রোডম্যাপ আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করা হতে পারে বলে ইসি’র কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, ‘কর্মপরিকল্পনার সবকিছু চূড়ান্ত হয়ে গেছে। অনুমোদন হয়েছে, এখন শুধু টাইপিং চলছে।’

এদিকে সংসদীয় আসনের পুনঃনির্ধারিত সীমানার বিষয়ে ইসি’র শুনানি আজ বিকেলে শেষ হচ্ছে।

শুনানি শেষে বিকেলে সার্বিক বিষয় নিয়ে ইসি’র সিনিয়র সচিব আকতার আহমেদের ব্রিফিং করার কথা রয়েছে।

এ বিষয়ে ইসি সচিব আখতার আহমেদ বলেন, ‘আমরা ব্রিফিংয়ে আসব। তখন সীমানার শুনানির বিষয়টির পাশাপাশি এ বিষয়টিও (রোডম্যাপ) দেখা যাবে।’

এর আগে গত বৃহস্পতিবার ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের কর্মপরিকল্পনা নিয়ে চার নির্বাচন কমিশনার ও ইসি কর্মকর্তা বৈঠক করেন।

ওই দিন নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেছিলেন, বিস্তারিত কর্মপরিকল্পনার বিষয়ে ইসি সচিব ব্রিফ করবেন।

গত ১৮ আগস্ট ইসি’র সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ জানিয়ে ছিলেন, ‘একটা কর্মপরিকল্পনার (নির্বাচনী রোডম্যাপ) বিষয়ে বলেছিলাম, আমরা এই সপ্তাহে এটা করবো। কর্মপরিকল্পনার তো আমাদের আন্তঃঅনুবিভাগ সম্পর্কিত এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক বিষয়গুলো নিয়ে। কর্মপরিকল্পনার ড্রাফ্ট করা হয়েছে। ড্রাফ্টটি এখন কমিশনে দিয়ে আমরা অ্যাপ্রুভ করবো।’


জুলাই শহীদ পরিবারে অনুদান-ভাতা বণ্টনে নতুন বিধিমালা

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহীদদের পরিবারকে দেওয়া এককালীন অনুদান ও মাসিক ভাতা স্বামী বা স্ত্রী, সন্তান এবং বাবা-মায়ের মধ্যে সমান তিন ভাগে বণ্টনের বিধান রেখে নতুন বিধিমালা জারি করেছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়।

সরকারি সহায়তাকে কেন্দ্র করে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে অনেক শহীদ পরিবারের স্বামী-স্ত্রী, সন্তান ও বাবা-মায়ের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দেওয়ার প্রেক্ষাপটে সরকার বণ্টনের এই পদ্ধতি নির্ধারণ করে দিল।

সমস্যা সমাধানে ‌‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ পরিবার এবং জুলাইযোদ্ধাদের কল্যাণ ও পুনর্বাসন বিধিমালা, ২০২৫’ জারি করেছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়।

মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সহায়তা নিয়ে শহীদ পরিবারের‌ সদস্যদের মধ্যে বিভিন্ন দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। এসব দ্বন্দ্ব মেটাতে হয়রান মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা, সচিবসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। প্রতিনিয়তই এ বিষয়ে বিচার-সালিশ আসছে। এমনকি শহীদদের উত্তরাধীকারীদের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দেওয়ায় সহায়তা কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটার পাশাপাশি বিলম্ব হচ্ছে বলেও জানান তারা।

এই প্রেক্ষাপটে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় যার যার ধর্মীয় উত্তরাধিকার আইন মেনে সহায়তার এককালীন অর্থ পরিবারের সদস্যদের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া শুরু করেন। কিন্তু পরিবারের অনেক সদস্য এটি মানছিলেন না। যেহেতু অনুদান-ভাতার অর্থ উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া কোনো সম্পদ নয়, তাই এটি কেন ধর্মীয় উত্তরাধিকার আইন অনুযায়ী বণ্টন করা হচ্ছে— এমন প্রশ্ন ওঠে। এ পরিস্থিতিতে বিধিমালা করে সহায়তার অর্থ বণ্টন করার পদ্ধতি নির্ধারণের সিদ্ধান্ত নেয় মন্ত্রণালয়।

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নিহতদের ‘জুলাই শহীদ’ ও আহতদের ‘জুলাই যোদ্ধা’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে সরকার। সরকারিভাবে জুলাই শহীদ পরিবারকে সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে ৩০ লাখ টাকা দেওয়া হচ্ছে। গত অর্থবছরে (২০২৪-২০২৫) ১০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র দেওয়া হয়েছে। বাকি ২০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র চলতি (২০২৫-২০২৬) অর্থবছরে দেওয়া হচ্ছে। গত জুলাই থেকে শহীদ পরিবারকে মাসিক ২০ হাজার টাকা করে ভাতা দেওয়ার কথা জানায় সরকার। এ পর্যন্ত ৮৪৪ জন শহীদের গেজেট প্রকাশিত হয়েছে, পরে অবশ্য আটজনের গেজেট বাতিল করা হয়।

গত ৭ আগস্ট উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকেও সরকারি এসব সহায়তা নিয়ে শহীদ পরিবারের মধ্যে দ্বন্দ্বের বিষয়টি আলোচিত হয়। বৈঠকে এ বিষয়ে একটি বিধিমালা করে দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়।

বৈঠক শেষে ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম সাংবাদিকদের বলেন, ‘জুলাই শহীদদের পরিবারের মধ্যে একটা দ্বন্দ্ব দেখছি, শহীদদের জন্য যে সম্মানী দেওয়া হচ্ছে সেটা নিয়ে। কে টাকাটা পাবেন তা নিয়ে তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব হচ্ছে। এজন্য একটি বিধি করে দেওয়া হবে। কে কতটুকু অংশ পাবে সেটা বিধিতে উল্লেখ করা হবে। এ বিষয়ে এক সপ্তাহের মধ্যে জানতে পারবেন।’

এ বিষয়ে জুলাই গণঅভ্যুত্থান অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. মশিউর রহমান ইউএনবিকে বলেন, ‘শহীদ পরিবারের সদস্যদের মধ্যে সহায়তার অর্থ কীভাবে বণ্টন করা হবে সেটি বিধিমালয় উল্লেখ করা হয়েছে। আগে অনুদানের প্রথম কিস্তির যে অর্থ বণ্টন করা হয়েছে সেটি বিধিমালা অনুযায়ী সমন্বয়ের চেষ্টা করা হবে। অনুদানের বড় অংশটি চলতি অর্থবছরে বিতরণ করা হবে; এটি বিধিমালা অনুযায়ী হবে। এই অর্থ বিতরণের কাজটি করছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘নতুন বিধিমালা জারি হওয়ার মাধ্যমে জুলাই শহীদ পরিবার ও যোদ্ধাদের সহায়তা ও পুনর্বাসনের ক্ষেত্রে আমরা একটি গাইডলাইন পেলাম। প্রাথমিকভাবে কোনো বিধি-বিধান না থাকায় আমরা ধর্মীয় উত্তরাধিকার আইন অনুযায়ী শহীদ পরিবারকে সহযোগিতা দেওয়া শুরু করেছিলাম।‌ এখন বিধিমালা অনুযায়ী সহযোগিতার কার্যক্রম চলবে।’

জুলাই অভ্যুত্থানের শহীদ পরিবারের সদস্য হিসেবে শহীদদের স্বামী বা স্ত্রী, ঔরসজাত বা গর্ভজাত সন্তান এবং মাতা ও পিতার মধ্যে সরকারের দেওয়া আর্থিক সহায়তা তিন ভাগে বণ্টন করতে হবে বলে বিধিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে।

শহীদের স্বামী বা স্ত্রী আর্থিক সহায়তার এক-তৃতীয়াংশ পাবেন। তবে একাধিক স্ত্রী থাকলে আর্থিক সহায়তা সমানভাবে বণ্টন করতে হবে।

শহীদের ঔরসজাত বা গর্ভজাত সন্তানও আর্থিক সহায়তার এক-তৃতীয়াংশ পাবেন। তবে একাধিক সন্তান থাকলে আর্থিক সহায়তা সমানভাবে বণ্টন করতে হবে।

বিধিমালায় বলা হয়েছে, শহীদের বাবা-মা আর্থিক সহায়তার এক-তৃতীয়াংশ পাবেন। তবে মা ও বাবার অনুকূলে দেওয়া আর্থিক সহায়তা সমানভাবে বণ্টন করতে হবে। আবার মা ও বাবার মধ্যে কোনো একজনের অবর্তমানে অপরজন আর্থিক সহায়তা উভয়ের সম্মিলিত অংশ অর্থাৎ এক-তৃতীয়াংশই পাবেন। তবে যদি শহীদের স্বামী বা স্ত্রী না থাকে তবে স্বামী বা স্ত্রীর জন্য নির্ধারিত আর্থিক সহায়তার অংশটি শহীদের সন্তান ও বাবা মায়ের মধ্যে সমান ভাগে ভাগ হবে।

তবে সন্তান না থাকলে সন্তানের সহায়তার অংশটি স্বামী বা স্ত্রী এবং বাবা-মায়ের মধ্যে সমানভাবে ভাগ হবে। আর যদি বাবা-মা না থাকেন, তবে বাবা-মায়ের অংশ স্বামী বা স্ত্রী এবং সন্তানদের মধ্যে সমানভাগে ভাগ হবে।

এ ছাড়া কোনো অবিবাহিত ব্যক্তি শহীদ হলে তার জন্য প্রদত্ত আর্থিক সহায়তা তার বাবা-মায়ের মধ্যে সমানভাগে ভাগ করতে হবে। তবে বাবা ও মায়ের মধ্যে যেকোনো একজনের অবর্তমানে অপরজন সম্পূর্ণ আর্থিক সহায়তা পাবেন বলে বিধিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে।

বিধিমালায় বলা হয়েছে, জুলাই অভ্যুত্থানের শহীদ পরিবারের মাসিক ভাতা সহায়তাপ্রাপ্ত কোনো সদস্য মারা গেলে মারা যাওয়ার তারিখ থেকে ভাতার অবসান ঘটবে। পরবর্তী সময়ে এ ভাতা শহীদ পরিবারের অন্য কোনো সদস্য দাবি করতে পারবেন না।

শহীদের স্বামী বা স্ত্রী অন্যত্র বিয়ে করলে বিয়ে হওয়ার তারিখ থেকে তার মাসিক অনুদান বা ভাতার অংশের অবসান ঘটবে। পরিবারের অন্য কোনো সদস্য এই ভাতা পাবেন না।

এককালীন সহায়তা গ্রহণের আগে জুলাই যোদ্ধা মারা গেলে পরিবারের সদস্যদের মধ্যে তা তিন ভাগে ভাগ করতে হবে। শহীদ পরিবারের মতো এক্ষেত্রে একই নিয়ম অনুসরণ করতে হবে। একই সঙ্গে জুলাই যোদ্ধা মারা গেলে তার মাসিক ভাতার অংশের অবসান ঘটবে বলেও বিধিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে।

বিধিমালায় জানানো হয়েছে, যদি কোনো জুলাই যোদ্ধা অভ্যুত্থানের সময় এক বা একাধিক শারীরিক আঘাতজনিত কারণে অতি গুরুতর হয়ে অব্যাহতভাবে দেশে বা বিদেশে কোনো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় মারা যান, তিনি জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহীদ হিসেবে গণ্য হবেন এবং তার পরিবার সুযোগ-সুবিধা পাবে বলে বিধিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে।

এক্ষেত্রে পরিবারের সদস্যরা এককালীন ৩০ লাখ টাকা সমমূল্যের পরিবার সঞ্চয়পত্র পাওয়ার অধিকারী হবেন। তবে যদি তিনি আহত হিসেবে এককালীন আর্থিক সহায়তা নেন, সেই অংশ কেটে রাখা হবে। একই সঙ্গে তার পরিবার শহীদ পরিবারের মতো মাসে ২০ হাজার টাকা ভাতা পাবেন।

সব সরকারি হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সরকারি ক্লিনিক বা স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং সরকার নির্ধারিত বিশেষায়িত হাসপাতাল সব শ্রেণির আহত জুলাই যোদ্ধাদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা দেবে।

চিকিৎসা সহায়তা নিতে হাসপাতাল, ক্লিনিক বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কোনো লিখিত আবেদন করার প্রয়োজন হবে না। তবে সেবা গ্রহণের জন্য স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের দেওয়া পরিচিতিমূলক হেলথ কার্ডের মূল কপি দেখিয়ে জুলাইযোদ্ধার স্বাক্ষর সম্বলিত একটি ফটোকপি দাখিল করতে হবে।

বিধিমালায় বলা হয়েছে, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ পরিবার এবং জুলাই যোদ্ধাদের কল্যাণ ও পুনর্বাসনের জন্য তিনটি কমিটি থাকবে। এর মধ্যে রয়েছে কেন্দ্রীয় কমিটি, জেলা কমিটি ও উপজেলা কমিটি।

কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি হবেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বা উপদেষ্টা, জেলা কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক (ডিসি) এবং উপজেলা কমিটির সভাপতি হবেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)। বিধিমালায় তিনটি কমিটির গঠন ও কার্যাবলী উল্লেখ করা হয়েছে।

শহীদ পরিবার ও জুলাই যোদ্ধাদের পুনর্বাসনের জন্য গৃহীত পরিকল্পনা বা প্রকল্পের পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিধি দ্বারা নির্ধারণ করতে হবে। তবে বিধি না হওয়া পর্যন্ত প্রচলিত বিধি-বিধান ও পদ্ধতি অনুযায়ী পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন কাজ সম্পাদন করা যাবে বলে বিধিমালায় জানানো হয়েছে।

পুনর্বাসনের জন্য জুলাই গণঅভ্যুত্থান অধিদপ্তর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিবিষয়ক; ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক্স-বিষয়ক; ডিজিটাল মার্কেটিং, আইটি সাপোর্ট সার্ভিস, গ্রাফিক্স ডিজাইন এবং ওয়েব ডিজাইন ও ডেভেলপমেন্ট; ফ্রিল্যান্সিং, মোবাইল সার্ভিসিং, অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্ট, মেকানিক্যাল ও অটোমোবাইল-বিষয়ক; ড্রাইভিং, আধুনিক অফিস ব্যবস্থাপনা, নির্মাণ ও প্রকৌশলবিষয়ক; খাদ্য ও আতিথেয়তাবিষয়ক; বিউটিফিকেশন আর্টস অ্যান্ড ক্রাফটস; বস্ত্রশিল্পবিষয়ক; কৃষি, নার্সারি, গবাদি পশুপালন, মৎস্য হ্যাচারি ও মৎস্য চাষ এবং পোল্ট্রি ফার্মিং বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেবে।

উপার্জনমুখী কাজ বা আত্মকর্মসংস্থানের জন্য সহজ শর্তে ঋণ বা এমন সুবিধাদি দিতে অধিদপ্তর উদ্যোগ নিতে পারবে বলেও বিধিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে।

আর্থিক সহায়তা বা পুনর্বাসন-সংক্রান্ত বিষয়ে জুলাই অভ্যুত্থানের শহীদ পরিবারের সদস্যদের মধ্যে কোনো বিরোধ দেখা দিলে তা নিষ্পত্তিতে একটি সালিশ বোর্ড গঠন করা হবে বলে বিধিমালায় জানানো হয়েছে। শহীদ পরিবারের বিরোধ-সংশ্লিষ্ট সদস্য, গণঅভ্যুত্থান অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের মনোনীত কমপক্ষে সহকারী পরিচালক পদমর্যাদার একজন প্রতিনিধি, দুই পক্ষের ভিত্তিতে মনোনীত একজন সালিশকারীর সমন্বয়ের সালিশ বোর্ড গঠন করা হবে।

বিধিমালায় বলা হয়েছে, সালিশ বোর্ডের সিদ্ধান্তের কারণে কোনো ব্যক্তি সংক্ষুব্ধ হলে তিনি ৩০ দিনের মধ্যে অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে আপিল করতে পারবেন। এই ক্ষেত্রে মহাপরিচালকের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে।

সূত্র: ইউএনবি


বাংলাদেশ ব্যাংকের নিট মুনাফা সাড়ে ২২ হাজার কোটি টাকা

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

বিগত ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিট মুনাফা দাঁড়িয়েছে ২২ হাজার ৬০০ কোটি টাকা, যা গত বছরের তুলনায় প্রায় ৭,৩০০ কোটি টাকা বেশি। মূলত ট্রেজারি বিল, বন্ড এবং সরকারের কাছ থেকে প্রাপ্ত সুদের মাধ্যমে এই মুনাফা অর্জিত হয়েছে। সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরের মোট পরিচালন আয়ের পরিমাণ ছিল প্রায় ৩৩ হাজার কোটি টাকা। সেখান থেকে আনুষঙ্গিক ব্যয় ও কর পরিশোধের পর চূড়ান্ত নিট মুনাফা নির্ধারণ করা হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের এই মুনাফা প্রতি বছরই বাড়ছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে নিট মুনাফা ছিল ১৫ হাজার ৩০০ কোটি টাকা, আর ২০২২-২৩ অর্থবছরে তা ছিল ১০ হাজার ৭৪৮ কোটি টাকা। পরপর তিন অর্থবছরে মুনাফার এই প্রবৃদ্ধি দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আর্থিক সক্ষমতা বৃদ্ধির স্পষ্ট প্রমাণ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর ড. হাবিবুর রহমান বলেন, ‘গত অর্থবছরে বাংলাদেশ ব্যাংক আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি মুনাফা অর্জন করেছে। বিশেষ করে সরকারের কাছে ধার দেওয়া এবং ট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগ থেকে বড় অঙ্কের সুদ আয় হয়েছে, যা মুনাফা বৃদ্ধির মূল চালিকা শক্তি।’

গতকাল মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর-এর সভাপতিত্বে পরিচালনা পর্ষদের ৪৪৩তম সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় বাংলাদেশ ব্যাংকের ২০২৪-২৫ অর্থবছরের আর্থিক হিসাব বিবরণী অনুমোদন করা হয়। সভা শেষে জানানো হয়, নিট মুনাফার এই বিপুল অঙ্কের অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়া হবে, যা বাজেটসহ বিভিন্ন আর্থিক পরিকল্পনায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, একটি দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক যখন ধারাবাহিকভাবে মুনাফা বাড়াতে সক্ষম হয়, তখন তা দেশের আর্থিক ব্যবস্থার স্থিতিশীলতার প্রতিচ্ছবি হিসেবে বিবেচিত হয়। এতে সরকারের রাজস্ব আদায়ে সহায়তা যেমন বাড়ে, তেমনি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আর্থিক ব্যবস্থাপনায় স্বাধীনতা ও সক্ষমতাও বাড়ে।

এদিকে এ মুনাফার অংশ হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য আকর্ষণীয় বোনাস ঘোষণা করা হয়েছে। বোর্ড সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ব্যাংকের কর্মীদের নিজ নিজ বেসিক বেতনের ছয় গুন ইনসেনটিভ বোনাস দেওয়া হবে। বিষয়টি নিয়ে নানামুখী আলোচনা থাকলেও বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এটি ব্যাংকের নিজস্ব নীতিমালার আওতায় এবং মুনাফার অংশ হিসেবেই প্রদান করা হবে।

শুধুমাত্র গত অর্থবছরেই বাংলাদেশ ব্যাংক সরকারকে দিয়েছে ১০ হাজার ৬৫২ কোটি টাকা। এবারের মুনাফা এর চেয়েও দ্বিগুণের কাছাকাছি হওয়ায়, সরকারের রাজস্ব ব্যবস্থাপনাতেও তা ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন অর্থনীতি সংশ্লিষ্টরা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের এই মুনাফা বৃদ্ধি দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আর্থিক ও প্রশাসনিক দক্ষতা বৃদ্ধিরই একটি চিত্র তুলে ধরে। যদিও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং অভ্যন্তরীণ নানা চ্যালেঞ্জ ছিল, তবুও বাংলাদেশ ব্যাংক তার আয় বাড়াতে সক্ষম হয়েছে, যা দেশের অর্থনীতির জন্য একটি ইতিবাচক বার্তা।


ট্রাইবুনালে চিকিৎসকের জবানবন্দি

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

জুলাই অভ্যুত্থানের সময় নির্বিচারে গুলি চালিয়ে আন্দোলনকারীদের হতাহতের ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দিয়েছেন প্রসিকিউশনের আরো পাঁচ সাক্ষী। তারা হলেন মিটফোর্ড হাসপাতলের সহকারী পরিচালক মফিজুর রহমান, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের সহকারী রেজিস্ট্রার মনিরুল ইসলাম, একই হাসপাতালের একই বিভাগের চিকিৎসক মোস্তাক আহমেদ, ফেনীর ব্যবসায়ী গুলিবিদ্ধ নাসিরউদ্দিন ও শহীদ শাহরিয়ার খান আনাসের নানা সাইদুর রহমান খান।

গতকাল মঙ্গলবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ তারা সাক্ষ্য দেন। সাক্ষীরা হত্যাকাণ্ডের নির্দেশদাতা হিসেবে শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদের, আসাদুজ্জামান খান কামাল, চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনসহ জড়িতদের বিচার দাবি করেন ট্রাইব্যুনালের কাছে।

পরে তাদের জেরা করেন আসামিপক্ষের রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমীর হোসেন। এই মামলার ৮১ জন সাক্ষীর মধ্যে এখন পর‌্যন্ত ২৯ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন। আগামী ১ সেপ্টেম্বর পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহনের দিন ধার্য করা হয়েছে। এই মামলার তিন আসামির মধ্যে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান পলাতক।

সাক্ষ্য নেওয়ার আগে আসামির কাঠগড়ায় তোলা হয় সাবেক পুলিশ প্রধান (আইজিপি) চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনকে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ক্যাজুয়ালটি বিভাগের আবাসিক সার্জন মোস্তাক আহমেদ সাক্ষ্যে বলেন, ‘জুলাই আন্দোলনকারীদের গুলি করা হয়েছিল উঁচু জায়গা বা হেলিকপ্টার থেকে। এসব গুলি কারও কারও মাথায় লেগে পিঠ দিয়ে বেরিয়ে যায়। গুলিবিদ্ধদের চিকিৎসায় বাধা দেন তৎকালীন সরকার-সমর্থিত স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ তথা স্বাচিপের চিকিৎসকরা। এমনকি ‘সন্ত্রাসী’ আখ্যা দিয়ে জুলাই যোদ্ধাদের সেবা দিতে বারণও করা হয়।’

তিনি বলেন, গত বছর ১৯, ২০ ও ২১ জুলাই এবং ৪ ও ৫ আগস্ট সবচেয়ে বেশি সংখ্যক গুলিবিদ্ধকে চিকিৎসা দেওয়া আমাদের হাসাপাতাল থেকে। ক্যাজুয়ালটি বিভাগে চাকরির সুবাদে আগেও অনেক গুলিবিদ্ধের সেবা দিয়েছি। তবে জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে আহতদের ধরন ছিল কিছুটা ভিন্ন। তাদের গুলির নির্দেশনা ছিল ওপর থেকে নিচের দিকে। সাধারণত নির্দেশনা থাকে নিচ থেকে ওপরে বা সমান্তরাল।’

এ সাক্ষী বলেন, রোগীদের কোনো উঁচু জায়গা বা হেলিকপ্টার থেকে গুলি করা হয়েছে। কোনো কোনো আহতের মাথায় গুলি লেগে পিঠ দিয়ে বের হয়ে যায়। এছাড়া আন্দোলন চলাকালে একদিন একটি পরিবারের বাবা-ছেলে দুজন গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে আসেন।

তিনি আরো বলেন, ‘আহতদের বেশিরভাগের বয়স ছিল ২০-৩০ বছরের মধ্যে। আন্দোলন চলাকালে ঢাকা মেডিকেলের শহীদুল্লাহ হল-সংলগ্ন গেট দিয়ে রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্স থামিয়ে পরিচয় জানতে চাইতেন ছাত্রলীগের ছেলেরা। ছাত্র পরিচয় পেলে ঢুকতে বাধা দিতেন। এছাড়া চিকিৎসা চলাকালে ছাত্রলীগের সশস্ত্র কর্মীরা হাসপাতালে ঢুকে আহতদের বিষয়ে খোঁজখবর নিতেন। তখন গুলিবিদ্ধ ছাত্ররা নিজেদের পরিচয় গোপন রাখার জন্য আমাদের অনুরোধ করেন।

‘স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) চিকিৎসকদের নিয়ে ডা. মোস্তাক বলেন, ‘গুলিবিদ্ধ ছাত্রদের চিকিৎসা দিতে আমাদের অতিউৎসাহী হতে বারণ করেন আওয়ামী লীগ সরকার সমর্থিত স্বাচিপের কতিপয় চিকিৎসক। তারা বলেন, এরা সন্ত্রাসী। এদের চিকিৎসা দেওয়া যাবে না। এমনকি গুলিবিদ্ধ ছাত্রদের চিকিৎসা দেওয়ায় গত বছরের ২৫ জুলাই আমাদের পাঁচ ডাক্তারকে অন্যত্র বদলি করা হয়। আহতদের চিকিৎসায় বাধার উদ্দেশেই তাদের বদলি করা হয়েছে।’ এ সময় জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে নৃশংসতার জন্য ক্ষমতাচ্যূত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে দায়ী করেন এই চিকিৎসক। একই সঙ্গে সেই সময়ে আইন-শৃঙ্খলা কার্যক্রম পরিচালনায় নিয়োজিতদের বিচার ও শাস্তি দাবি করেন তিনি।

গত বছর ৫ আগস্ট রাজধানীর চানখাঁরপুল এলকায় পুলিশের গুলিতে নিহত শহীদ শাহারিয়ার খান আনাসের নানা সাইদুর রহমান খান তার সাক্ষ্যে শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক পুলিশ প্রধান চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনসহ দায়ীদের ফাঁসি দাবি করেন।


চলতি বছরের ৬ মাসে ধর্ষণের ঘটনা গত বছরের কাছাকাছি

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

নারী ও শিশু নির্যাতনের মধ্যে কিছু ধরনের অপরাধের ঘটনা গত বছর যা ছিল এবার চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসেই সেই সংখ্যার প্রায় কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে তা ছাড়িয়ে গেছে। যেমন এ বছরের প্রথম ছয় মাসেই ধর্ষণের ঘটনা সংখ্যাগত দিক দিয়ে গত বছরের প্রায় সমান। আবার যৌন নিপীড়ন ও উত্ত্যক্তকরণ, বাল্যবিবাহ এবং যৌতুকের জন্য নির্যাতনের ঘটনা গত বছরের চেয়ে এখনই বেশি।

গতকাল মঙ্গলবার বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ আয়োজিত ‘বাংলাদেশে নারী ও কন্যা নির্যাতন: ২০২৪ সমীক্ষা’ প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের আনোয়ারা বেগম মুনিরা খান মিলনায়তনে এ আয়োজন করা হয়।

১৪টি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে সমীক্ষাটি করা হয়েছে। ১৮ বছরের কম বয়সী মেয়েশিশু এবং ১৮ বছরের বেশি বয়সী নারী—এভাবে বয়সভিত্তিক তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে। এ সমীক্ষায় ধর্ষণ, দলবদ্ধ ধর্ষণ, ধর্ষণের চেষ্টা, যৌন হয়রানি, বাল্যবিবাহ, যৌতুক, গৃহকর্মী নির্যাতন ও সাইবার অপরাধ—এই আট অপরাধকে আলাদাভাবে তুলে ধরা হয়েছে।

সংখ্যার ভিত্তিতে মোট নির্যাতনের পরিসংখ্যান বলছে, ২০২৩ সালে ২ হাজার ৯৩৭টি, ২০২৪ সালে ২ হাজার ৫২৫টি এবং চলতি বছরের ৬ মাসে ১ হাজার ৫৫৫টি নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে।

অনুষ্ঠানে সমীক্ষার বিভিন্ন তথ্য উপস্থাপন করেন মহিলা পরিষদের জ্যেষ্ঠ প্রশিক্ষণ ও গবেষণা কর্মকর্তা আফরুজা আরমান। তিনি জানান, চলতি বছরের ছয় মাসে সাইবার অপরাধ এবং গৃহকর্মী নির্যাতনের সংখ্যা কিছুটা কমলেও অন্যগুলো বেড়েছে।

১৮ বছরের কম বয়সি কন্যাশিশুরা ধর্ষণ, যৌন হয়রানি, বাল্যবিবাহের মতো নির্যাতনের শিকার বেশি হচ্ছে বলে সমীক্ষার তথ্য বলছে। আরও বলা হয়, ১৬ থেকে ৩০ বছর বয়সীরাই বেশির ভাগ অপরাধ করছেন। অর্থাৎ কম বয়সীরাই ভুক্তভোগী হচ্ছে আবার অভিযুক্তদের বয়সও কম।

সমীক্ষায় উল্লেখ করা হয়েছে, ২০২৪ সালে জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত ৩৬৪ জন ধর্ষণের শিকার, এর মধ্যে ২২০ জন কন্যা ও ১৪৪ জন নারী। ১৪৮ জন দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার, যার মধ্যে ৪৯ জন কন্যা ও ৯৯ জন নারী। ১৩৪ জন কন্যা ও ৭৭ জন নারী ধর্ষণের পর হত্যার শিকার হয়েছেন। যৌন নিপীড়ন ও উত্ত্যক্তকরণের শিকার ২২৪ জনের মধ্যে ১২৫ জন কন্যা। বাল্যবিবাহের শিকার ২০ জন কন্যা। যৌতুকের শিকার ৬৬ জন নারী ও ২ কন্যাশিশু। গৃহকর্মী নির্যাতনের মধ্যে ১৬ জন কন্যা ও ৮ জন নারী এবং সাইবার অপরাধের শিকার হয়েছেন ২৬ জন কন্যা ও ৩ জন নারী।

সমীক্ষার তথ্য বলছে, ধর্ষণের ক্ষেত্রে ২৮ শতাংশ অভিযুক্ত ব্যক্তির বয়স ১১ থেকে ৩০ বছর, এর মধ্যে ২১ থেকে ২৫ বছর বয়সির সংখ্যা বেশি। সাইবার অপরাধের ২৯টি ঘটনার মধ্যে ১৪টি ঘটনায় অভিযুক্ত ব্যক্তিরা ১৬ থেকে ৩০ বছর বয়সের। ২৪ শতাংশ শিক্ষক এবং ৩১ শতাংশ চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও বখাটে নারী ও মেয়েশিশুদের উত্ত্যক্ত করেছে। দলবদ্ধ ধর্ষণের ক্ষেত্রে ৪২ শতাংশ অভিযুক্ত ব্যক্তিই থাকে ভুক্তভোগীর অপরিচিত। উপজেলা পর্যায়ের নারী ও কন্যাশিশুর নির্যাতনের ঘটনাগুলো গণমাধ্যমে বেশি প্রকাশ পায়।

সমীক্ষা বলছে, ঘটনা ঘটার পর মামলা করার প্রবণতা বেড়েছে। ধর্ষণের পর ৬২ শতাংশ ক্ষেত্রেই মামলা হচ্ছে। নারী নির্যাতন প্রতিরোধে সামাজিক নানা উদ্যোগও কিছুটা বেড়েছে।

সমীক্ষার সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে বলতে গিয়ে আফরুজা আরমান বলেন, গণমাধ্যমে নারী ও শিশু নির্যাতনের সব তথ্য প্রকাশ পায় না। নির্যাতনের মধ্যে পারিবারিক সহিংসতার খবরগুলো কম প্রকাশিত হয়। ভুক্তভোগী নারীর বয়স, পেশা সেভাবে উল্লেখ থাকে না। আইনগত পদক্ষেপ, মামলা নিষ্পত্তিসহ ঘটনার ফলোআপ সংবাদগুলোও গণমাধ্যমে পাওয়া যায় না।

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ফওজিয়া মোসলেম বলেন, দেশে নারী ও মেয়েশিশু নির্যাতনের ব্যাপ্তি ও ভয়াবহতা বেড়েছে। সমীক্ষার তথ্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, কম বয়সিরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছে আবার অভিযুক্তদের বয়সও কম। এটা উদ্বেগজনক। এছাড়া বিভিন্ন গবেষণায় এসেছে, একই অপরাধী বারবার অপরাধ করতেই থাকে। এর পেছনে অপরাধীদের রাজনৈতিক এবং ক্ষমতাসীনদের মদদ দেওয়ার বিষয়টি সম্পৃক্ত। ক্ষমতাসীনদেরও অনেকে অপরাধের সঙ্গে যুক্ত থাকে।

ফওজিয়া মোসলেম বলেন, বর্তমানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির পাশাপাশি সমাজে নারীবিদ্বেষী আবহ তৈরি হয়েছে। কেন টিপ পরছে, কেন এমন জামা পরছে—এমন প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছে। সমাজ থেকে নারীবিদ্বেষী আবহ বা সংস্কৃতি দূর করতে সামাজিক আন্দোলনের পাশাপাশি গণমাধ্যমকে সক্রিয় হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু বলেন, নারী নির্যাতনের মামলার দীর্ঘসূত্রতা কমাতে সমাজে সুশাসন নিশ্চিতের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। সমীক্ষা অনুযায়ী, ঘরে-বাইরে শিশুরা অনিরাপদ হয়ে যাচ্ছে—এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন তিনি।

অনুষ্ঠানে সঞ্চালকের দায়িত্ব পালন করেন প্রশিক্ষণ ও গবেষণা পরিচালক শাহজাদী শামীমা আফজালী। মহিলা পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সীমা মোসলেম, প্রশিক্ষণ, গবেষণা ও পাঠাগার উপপরিষদের সম্পাদক রীনা আহমেদ, লিগ্যাল এইড সম্পাদক রেখা সাহা, লিগ্যাল অ্যাডভোকেসি ও লবি পরিচালক দীপ্তি শিকদার প্রমুখ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ও বক্তব্য দেন।


ভিকারুননিসার শিক্ষিকা সাময়িক বরখাস্ত

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

হিজাব পরিহিত ছাত্রীদের ক্লাস থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ ওঠায় ভিকারুননিসা নূন স্কুল এন্ড কলেজের এক শিক্ষিকাকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে কর্তৃপক্ষ। অভিযুক্ত শিক্ষিকা ফজিলাতুন নাহারকে কেন স্থায়ীভাবে বরখাস্ত করা হবে না, তার কারণ দর্শানোর নোটিশও দেওয়া হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার স্কুল কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে জারি করা এক বিজ্ঞপ্তিতে এ সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়।

এতে বলা হয়, ভিকারুননিসা নূন স্কুল এন্ড কলেজের বসুন্ধরা শাখার প্রভাতী শাখার ষষ্ঠ শ্রেণির ২২ জন শিক্ষার্থীকে হিজাব পরার কারণে ক্লাস থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

ঘটনার সূত্রপাত হয় গত রোববার। ওই দিন স্কুলের বসুন্ধরা শাখায় ষষ্ঠ শ্রেণির কিছু ছাত্রী হিজাব পরে ক্লাসে আসে। অভিযোগ অনুযায়ী, ইংরেজি শিক্ষক ফজিলাতুন নাহার তাদের ‘মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের মতো’ হিজাব পরে আসার জন্য বকাঝকা করেন এবং ক্লাস থেকে বের করে দেন। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, তাদের সঙ্গে অত্যন্ত খারাপ ব্যবহার করা হয়।

ভুক্তভোগী ছাত্রীদের অভিভাবকরা জানান, তাদের সন্তানরা প্রতিদিনের মতোই হিজাব পরে স্কুলে গিয়েছিল। কিন্তু বাসায় ফিরে তারা জানায়, হিজাব পরার কারণে তাদের ক্লাস থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে।

তবে এ বিষয়ে অভিযুক্ত শিক্ষিকা ফজিলাতুন নাহার ভিন্ন ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তার দাবি, তিনি হিজাব পরতে নিষেধ করেননি। তিনি শুধুমাত্র সঠিকভাবে হিজাব পরার কথা বলেছিলেন এবং সে কারণে কয়েকজন শিক্ষার্থীকে ১০-১৫ মিনিটের জন্য ক্লাসের বাইরে দাঁড় করিয়েছিলেন। তিনি আরও দাবি করেন, ‘জঙ্গি’ শব্দটি ব্যবহার করেননি তিনি, বরং বলেছিলেন যে এ ধরনের ওড়না সাধারণত মাদ্রাসার মেয়েরা পরে থাকে।

এ ঘটনার পর স্কুল কর্তৃপক্ষ দ্রুত পদক্ষেপ নেয় এবং এডহক কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শিক্ষিকা ফজিলাতুন নাহারকে সাময়িক বরখাস্ত করে। একই সঙ্গে, আগামী সাত কার্যদিবসের মধ্যে তাকে কারণ দর্শানোর জন্য নোটিশ দেওয়া হয়েছে।


৯ জঙ্গিসহ এখনো ৭০০ আসামি পলাতক: কারা মহাপরিদর্শক

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় ২ হাজার ৭০০–এর বেশি বন্দি পালিয়ে গিয়েছিলেন। এর মধ্যে এখন পর্যন্ত সাত শতাধিক বন্দি পলাতক আছেন বলে জানিয়েছেন কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ মো. মোতাহের হোসেন। তিনি বলেন, পলাতকদের মধ্যে জঙ্গি আছেন ৯ জন। আর মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি ও যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি আছেন ৬০ জন।

গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর বকশীবাজার এলাকায় কারা অধিদপ্তরের সদর দপ্তরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন মোতাহের হোসেন।

কারা মহাপরিদর্শক আরও বলেন, সে সময় লুট হওয়া অস্ত্রের মধ্যে এখন পর্যন্ত ২৯টি অস্ত্র উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। অস্ত্র উদ্ধার ও পলাতক বন্দিদের গ্রেপ্তারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কাজ করছে।

কারাগারে বর্তমানে কতজন রাজনৈতিক বন্দি ও কতজন ভিআইপি বন্দি আছেন—এমন প্রশ্নের জবাবে কারা মহাপরিদর্শক বলেন, রাজনৈতিক বন্দি বলতে তাদের কাছে কেউ নেই। কারণ, রাজনৈতিক কোনো মামলায় গ্রেপ্তার কাউকে কারাগারে আনা হয়নি। কারাগারে যারা আছেন, তারা সবাই বন্দি হিসেবে আছেন। আর ভিআইপি বন্দি বলতেও কোনো শব্দ নেই।

কারা মহাপরিদর্শক বলেন, কারাগারে বর্তমানে ডিভিশনপ্রাপ্ত বন্দি আছেন ১৬৩ জন। আরও ২৮ জন ডিভিশন পাওয়ার আবেদন করেছেন। তবে তারা অনুমোদন পাননি।

সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের কাছে বক্তব্যের কপি লিখিত আকারে দেওয়া হয়। এতে বলা হয়, কারাগারকেন্দ্রিক সংশোধনের বিষয়টির ওপর অধিক গুরুত্বারোপের জন্য বাংলাদেশ জেলের নাম পরিবর্তন করে ‘কারেকশন সার্ভিসেস বাংলাদেশ’ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

এতে আরও উল্লেখ করা হয়, মাদকাসক্তির বিষয়ে জিরো টলারেন্স কঠোরনীতি গ্রহণ করা হয়েছে এবং গত এক বছরে মাদকসেবী ২৯ জন সদস্যকে মাদক বহন, গ্রহণ ও সরবরাহে জড়িত থাকার অপরাধে ফৌজদারি মামলায় কারাগারে পাঠানোসহ বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া এসংক্রান্ত সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কারা সদর দপ্তর নিজস্ব ডোপ টেস্টিং মেশিন সংগ্রহ করেছে।

কারা বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দুর্নীতি এবং সব নিয়মবহির্ভূত বিষয়েও অধিদপ্তরের অবস্থান অত্যন্ত কঠোর বলে জানান কারা মহাপরিদর্শক। তিনি বলেন, বিগত এক বছরে বিভিন্ন অনিয়মের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বাধ্যতামূলক অবসর, ৩৪ জনকে চাকরিচ্যুত, ৪৪০ জনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থাসহ ১৭২ জনকে প্রশাসনিক কারণে বিভাগের বাইরে বদলি করা হয়েছে।

লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, বন্দীদের খাবারের তালিকায় প্রোটিনের পরিমাণ স্বল্প পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে এবং তা যৌক্তিক পর্যায়ে বাড়ানোর প্রস্তাব পাঠানো হয়েছিল। ইতোমধ্যে তার অনুমোদন পাওয়া গেছে। এছাড়া সকালের নাশতা এবং বিশেষ দিবসের জন্যও খাদ্য বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে।

বন্দিদের উৎপাদনমুখী করার জন্য সুবিধাজনক স্থানে ‘কারেকশনাল ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক’ তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন কারা মহাপরিদর্শক।

মোতাহের হোসেন বলেন, প্রতি বছর ৫০ হাজারের মতো সক্ষম জনবল কারাগারে অবস্থান করে। এর মধ্যে ২০ থেকে ২৫ হাজার জনবলকে যদি উৎপাদনমুখী করা যায়, এতে একদিকে সরকারের যেমন রাজস্ব সাশ্রয় হবে, একইভাবে বন্দিদের মধ্যে অনেকেই পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তি, তারাও কারাগার থেকেই পরিবারকে আর্থিক সহযোগিতা দিতে পারবেন।

বড় দুর্নীতির জায়গা ছিল কারা অধিদপ্তর এই তথ্য জানিয়ে মোতাহের হোসেন বলেন, ইতোমধ্যে তারা এই বিষয় কাটিয়ে উঠতে পেরেছেন।

কারাগারে থেকেই গোপনে মুঠোফোন ব্যবহার, বন্দীদের চিকিৎসাসেবার অপ্রতুলতা এবং কারাগারে মাদকের ব্যবহারসহ নানা বিষয়ে কথা বলেন মোতাহের হোসেন। তিনি বলেন, গত বছরের ৫ আগস্টের পর তারা এক হাজারের বেশি অভিযান পরিচালনা করে বন্দিদের কাছ থেকে ৮০ লাখ টাকা উদ্ধার করেছেন।

কারাগারে বন্দিদের চিকিৎসাসেবায় নানা সমস্যার কথা তুলে ধরে কারা মহাপরিদর্শক বলেন, বর্তমানে কারাগারে ১৪১ জন চিকিৎসক আছেন। আর অস্থায়ী চিকিৎসা করেছেন ১০৩ জন। কারাবন্দি অবস্থায় কারও মৃত্যু হলে সে ঘটনার তদন্ত হয়, ময়নাতদন্ত হয়। অবশেষে বিচার বিভাগীয় তদন্ত পর্যন্ত হয়।

তিনি আরও বলেন, সব সেবাপ্রত্যাশী ও কারা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সেবার মান বৃদ্ধি পেলেও কারা হাসপাতালে প্রয়োজনীয়সংখ্যক চিকিৎসক নিয়োগ, কারাগারগুলোতে অ্যাম্বুলেন্স সরবরাহ, কারা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের শতভাগ আবাসন সমস্যা নিরসন, বেতন গ্রেড পরিবর্তন ইত্যাদি বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো আশাব্যঞ্জক প্রতিশ্রুতি পাওয়া যায়নি। তবে কারা বিভাগ ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় একত্র হয়ে এই যৌক্তিক চাহিদা পূরণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।


শ্রম আইন সংশোধনে ত্রিপক্ষীয় পরামর্শ পরিষদের ৮৯ তম সভা অনুষ্ঠিত

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

শ্রম আইন, ২০০৬ সংশোধনের লক্ষ্যে ত্রিপক্ষীয় পরামর্শ পরিষদ (টিসিসি)-এর ৮৯তম সভায় শ্রমিক, মালিক ও সরকারের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। গত এক বছরের পর্যালোচনা ও সকল পক্ষের মতামতের ভিত্তিতে শ্রম আইন ২০০৬ সংশোধনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

আজ মঙ্গলবার ঢাকার এক হোটেলে অনুষ্ঠিত এ সভায় সভাপতিত্ব করেন শ্রম ও কর্মসংস্থান এবং নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন। তিনি বলেন, "শ্রমিক ও মালিক পক্ষের পরামর্শের ভিত্তিতে শ্রম আইন যুগোপযোগী করা হবে। এটি বাংলাদেশের শ্রমখাতের জন্য একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ হবে এবং আন্তর্জাতিক মানের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হবে।’

সভায় শ্রমিক ও মালিক পক্ষের প্রতিনিধিরা তাদের মতামত তুলে ধরেন। একটি সুসমন্বিত ও আন্তর্জাতিক মানের শ্রম আইন প্রণয়নের প্রয়োজনীয়তা উপস্থিত সকলেই করেন। অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত এ সভায় সংশোধিত শ্রম আইন দ্রুত সম্পন্ন করার তাগিদ দেওয়া হয়।

সভায় বিশেষ পর্যবেক্ষক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মার্কিন দূতাবাস, কানাডা হাই কমিশন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও)-এর প্রতিনিধিরা। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশেষ দূত জনাব লুৎফে সিদ্দিকী।

এছাড়াও মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব, বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব লেবার স্টাডিজ (বিলস) এর নির্বাহী পরিচালক এবং শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রধান, বাংলাদেশ এমপ্লয়ার্স ফেডারেশন (বিইএফ)-এর সভাপতি, টিসিসি সদস্যবৃন্দের মধ্যে তাসলিমা আক্তার, কোহিনুর মাহমুদ, বাবুল আকতার , নাজমা আক্তার, রাজেকুজ্জামান রতন, এডভোকেট আতিকুর রহমান, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর এবং শ্রম অধিদপ্তরের কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

বিশ্লেষকদের মতে, এই সংশোধনী বাংলাদেশের শ্রমবাজারকে আরও গতিশীল ও আন্তর্জাতিক মানসম্মত করবে এবং শ্রমিক-মালিক সম্পর্কের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।


banner close