পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে অন্তর্বর্তী সরকার কাজ করবে বলে জানিয়েছেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। চলমান অস্থিরতা কাটিয়ে বাজারকে স্থিতিশীলতায় ফেরাতে এরই মধ্যে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করা হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বাজারে চলমান অস্থিরতার সব দিক বিবেচনায় নিয়ে কমিশনের সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। আমাদের সমস্ত পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে বাজারে শিগগিরই স্থিতিশীলতা ফিরে আসবে।’
বুধবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) ভবনে সংস্থার চেয়াম্যানসহ কমিশনারদের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন অর্থ উপদেষ্টা।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘পরিকল্পনার বিষয়ে এখনই বিস্তারিত বলতে চাই না। তবে দেশের পুঁজিবাজারকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতে সরকার কাজ করবে। এই প্রত্যাশায় আমাদের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘পুঁজিবাজারের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আজকের বৈঠকে আলোচনা হয়েছে এবং পুঁজিবাজারের বিদ্যমান সংকটের কিছু তাৎক্ষণিক সমাধানের ব্যবস্থা করতে কাজ চলছে। এছাড়া দেশের মিউচ্যুয়াল ফান্ড খাতের উন্নয়ন এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থা বৃদ্ধির বিষয়টিও বৈঠকে আলোচনা করা হয়েছে।’
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, প্রথমবারের মতো পুঁজিবাজারের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে গতকাল বিএসইসিতে গেছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। প্রায় ঘণ্টাব্যাপী বিএসইসি নের্তৃবৃন্দের সঙ্গে বৈঠক করেন উপদেষ্টা। এসময় বিএসইসি চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ, কমিশনার মু. মোহসিন চৌধুরী, মো. আলী আকবর, ফারজানা লালারুখ, অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব অমল কৃষ্ণ মন্ডল এবং বিএসইসির নির্বাহী পরিচালকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
আলোচনার মধ্যে যেসব বিষয়গুলোকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে, সেগুলো হলো- বাজারে তারল্য সরবরাহ বাড়াতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ, রাষ্ট্রায়ত্ত বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) বিনিয়োগ সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য তহবিল জোগানে সহায়তা, জরিমানার মাধ্যমে বিএসইসির আদায় করা অর্থ বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষায় কাজে লাগাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ, সরকারি-বেসরকারি ভালো ও লাভজনক কোম্পানিগুলোকে দ্রুত বাজারে আনতে আইপিও আইন সংস্কার ও কর প্রণোদনার ব্যবস্থা করা এবং শেয়ারবাজারে লেনদেন নিষ্পত্তির সময় কমিয়ে এক দিনে নামিয়ে আনা।
এছাড়া ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোতে যে পরিমাণ অনাদায়ি পুঞ্জীভূত ঋণাত্মক ঋণ (নেগেটিভ ইক্যুইটি) রয়েছে চূড়ান্তভাবে সেগুলোর নিষ্পত্তি করা, উচ্চ সম্পদশালী ব্যক্তিদের বিনিয়োগে উৎসাহিত করতে মূলধনি মুনাফার করহার কমানো, শেয়ার পুনঃক্রয়ব্যবস্থা চালুর বিষয়ে করণীয় নির্ধারণ, বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে ভবিষ্যতে আর কখনো ফ্লোর প্রাইস আরোপ না করা এবং সুশাসন ও আইনের যথাযথ পরিপালন নিশ্চিত করার বিষয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে।
বৈঠক শেষে বিএসইসি চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ বলেন, ‘দেশের পুঁজিবাজারের বিদ্যমান অবস্থা এবং সংশ্লিষ্ট নানা বিষয়সমূহ তথ্য সহকারে অর্থ উপদেষ্টার কাছে তুলে ধরা হয়েছে। একইসাথে পুঁজিবাজারের বিদ্যমান সংকট নিরসনে এবং পুঁজিবাজারের সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে বিএসইসির সদিচ্ছার কথা ব্যক্ত করা হয়েছে। এছাড়া পুঁজিবাজারের উন্নয়ন ও সংস্কারে সরকারের সদয় দৃষ্টি এবং নীতি সহায়তার অনুরোধ জানানো হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘গতকাল (মঙ্গলবার) সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় যেসব নীতিগত বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে, সেগুলো আজকে অর্থ উপদেষ্টার কাছে তুলে ধরেছি। এখন অর্থমন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে। আশা করি দ্রুত ফলাফল পাওয়া যাবে।’
বিএসইসি চেয়ারম্যান আরো বলেন, ‘অর্থ উপদেষ্টা শুধু আমাদের সঙ্গে নয়, তদন্ত কমিটির সঙ্গেও আলোচনা করেছেন। সেখানে নেগেটিভ ইক্যুইটি, তারল্য সাপোর্ট, ট্যাক্সের রিফর্ম, বাইব্যাক, ব্যাংকের রিফর্মসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে।’
এর আগে মঙ্গলবার সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় খন্দকার রাশেদ মাকসুদ বলেন, ‘ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের কীভাবে প্রণোদনা দেওয়া যায়, সে বিষয়ে আলোচনা করতে শিগগিরই অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসতে যাচ্ছে বিএসইসি। সেখানে বাজারে সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। বিশেষ করে ভালো ভালো কোম্পানিকে কিভাবে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত করা যায় সে বিষয়ে আলোচনা করা হবে।’
ওই বৈঠকে মার্কেটের ডেপথ কীভাবে বাড়ানো যায়, সেটা নিয়ে আলোচনা হয়। এদিন বিএসইসি চেয়ারম্যান আরও বলেন, ‘আমরা কমপ্লায়েন্সের ক্ষেত্রে কোনো ছাড় দেব না। শুধু পুঁজিবাজার নয়, পুরো রাষ্ট্র সংস্কারের কাজ চলছে। পুঁজিবাজার আগের বাজারের চেয়ে অনেক বেশি সমৃদ্ধ হবে।’