দেশে ফিরেছেন আন্তর্জাতিক হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হাফেজ মুয়াজ মাহমুদ। শুক্রবার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অতরণের পর তাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমান, বিভিন্ন মাদ্রাসার শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।
দেশে ফিরে হাফেজ মুয়াজ মাহমুদ বলেন, ‘সবার কৃতজ্ঞতা আদায় করছি। এটা আমার মর্যাদা নয়, এটা মহান আল্লাহর কোরআনের মর্যাদা। মহান আল্লাহ আমাকে সাহায্য করেছেন বলে আমার জন্য সহজ হয়েছে। সবার কাছে দোয়া চাই, দুনিয়াতে যেভাবে প্রথম হয়েছি এভাবে জান্নাতুল ফিরদাউসে এক সঙ্গে থাকতে পারি।’
ভবিষ্যতে কী হতে চায় জানতে চাইলে বলেন, ‘আমার স্বপ্ন আমি ভবিষ্যতে আল্লাহর দ্বীন শিখে যোগ্য আলেম হয়ে ব্যাপকভাবে পবিত্র কোরআনের খেদমত করা।’
প্রসঙ্গত, তুরস্কে অনুষ্ঠিত নবম আন্তর্জাতিক হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অর্জন করেন হাফেজ মুয়াজ মাহমুদ। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের হাত থেকে মুয়াজ মাহমুদ সম্মাননা ক্রেস্ট ও পুরস্কার গ্রহণ করেন।
গত ২৮ মার্চ জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের তত্ত্বাবধানে এ প্রতিযোগিতার বাছাই পর্বে দেশের শত শত মেধাবী হাফেজদের পেছনে ফেলে প্রথম স্থান অর্জন করে তুরস্ক আন্তর্জাতিক হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতার জন্য বাংলাদেশের একমাত্র প্রতিনিধি নির্বাচিত হন মুয়াজ মাহমুদ। এ ছাড়া চলতি বছরের ২১ আগস্ট মক্কায় ৪৪তম আন্তর্জাতিক কোরআন প্রতিযোগিতায় ১২৩টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ প্রথম স্থান অর্জন করে। সে সময় হাফেজ মুয়াজ মাহমুদ ১৫ পারা গ্রুপে প্রথম স্থান অর্জন করেন।
বেসরকারি ঋণের প্রবৃদ্ধি আবারও কমেছে। অক্টোবরে দেশে বিনিয়োগ বৃদ্ধির অন্যতম প্রধান নিয়ামক বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধি কমে ৮ দশমিক ৩০ শতাংশে নেমে এসেছে; যা তিন বছর তিন মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। আগের মাস সেপ্টেম্বরে এই হার ছিল ৯ দশমিক ২০ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংক প্রকাশিত ‘উইকলি সিলেক্টেড ইকোনমিক ইন্ডিকেটরস’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। তাতে দেখা যায়, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের চতুর্থ মাস অক্টোবরে বেসরকারি খাতে ঋণ বিতরণের পরিমাণ আগের বছর একই সময়ের তুলনায় ৮ দশমিক ৩০ শতাংশ বেড়েছে।
২০২১ সালের জুলাইয়ে এ খাতে ৮ দশমিক ৩৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছিল। এরপর আর কখনো তা ৯ শতাংশের নিচে নামেনি। অর্থবছরের দ্বিতীয় মাস আগস্টে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৯ দশমিক ৮৬ শতাংশ; প্রথম মাস জুলাইয়ে এই প্রবৃদ্ধি ছিল দুই অঙ্কের ঘরে (ডাবল ডিজিট) ১০ দশমিক ১৩ শতাংশ।
রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ব্যবসায় পরিবেশে অনিশ্চয়তা আর ব্যাংক ঋণে উচ্চ সুদহারের প্রভাবে গত কয়েক মাস ধরে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধি কমছে বলে জানিয়েছেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকাররা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধের (জুলাই-ডিসেম্বর) মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা আছে ৯ দশমিক ৮০ শতাংশ। সে হিসাবে অক্টোবরের প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১ দশমিক ৫০ শতাংশীয় পয়েন্ট কম।
কিন্তু যে মূল্যস্ফীতি কমানোর জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদহার বাড়িয়ে বেসরকারি ঋণে লাগাম দিয়েছে, সেই মূল্যস্ফীতি নভেম্বরে আরও চড়েছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) বৃহস্পতিবার মূল্যস্ফীতির হালানাগাদ যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যায়, নভেম্বর মাসে দেশে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছে ১১ দশমিক ৩৮ শতাংশ। আগের মাস অক্টোবরে এই হার ছিল ১০ দশমিক ৮৭ শতাংশ।
সেপ্টেম্বরে এই হার ছিল এক অঙ্কের ঘরে (সিঙ্গেল ডিজিট) ৯ দশমিক ৯২ শতাংশ। তার আগের মাস আগস্টে মূল্যস্ফীতি ছিল ১০ দশমিক ৪৯ শতাংশ। তারও আগে জুলাই মাসে দেশে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ১১ দশমিক ৬৬ শতাংশ, যা ছিল এক যুগের মধ্যে সর্বোচ্চ।
অর্থনীতিতে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ কমে যাওয়ার মানে হলো, ব্যবসা ক্ষেত্রে বিনিয়োগ কমে যাবে। সেই সঙ্গে কমবে নতুন শিল্প স্থাপন বা শিল্প সম্প্রসারণের গতি। অবধারিতভাবে তার প্রভাব পড়বে বিনিয়োগে ও কর্মসংস্থানে।
২০২৪-২৫ অর্থবছরের শুরু থেকেই অর্থাৎ ১ জুলাই থেকে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে সারা দেশ উত্তাল হতে শুরু করে। ছাত্রদের আন্দোলনে সহিংস ঘটনায় দেশে চরম অস্থিরতা দেখা দেয়। ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনে ক্ষমতার পালাবদলের পর সেই অস্থিরতা আরও বেড়ে যায়। দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়।
৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর ৮ আগস্ট থেকে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের যাত্রা শুরু হয়েছে। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। বাজারে জিনিসপত্রের দাম আগের চেয়েও বেড়ে গেছে। সারা দেশে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে; স্বস্তি ফিরছে না মানুষের মধ্যে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য ঘেঁটে দেখা যায়, ২০২২ সালের আগস্টে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি ১৪ দশমিক শূন্য সাত শতাংশে উঠেছিল। এরপর থেকে কমছেই।
২০২৩ সালের মে মাসে এই প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ১১ দশমিক ১০ শতাংশ। তার আগের মাস এপ্রিলে ছিল ১১ দশমিক ২৮ শতাংশ। মার্চে ছিল ১২ দশমিক শূন্য তিন শতাংশ। ফেব্রুয়ারিতে এই প্রবৃদ্ধি ছিল ১২ দশমিক ১৪ শতাংশ। জানুয়ারিতে বেসরকারি খাতের ঋণের প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ১২ দশমিক ৬২ শতাংশ।
২০২২ সালের ডিসেম্বরে এই প্রবৃদ্ধি ছিল ১২ দশমিক ৮৯ শতাংশ। নভেম্বরে ছিল ১৩ দশমিক ৯৭ শতাংশ। অক্টোবর, সেপ্টেম্বর ও আগস্টে ছিল যথাক্রমে ১৩ দশমিক ৯১ শতাংশ, ১৩ দশমিক ৯৩ শতাংশ ও ১৪ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ।
২০২১ সালের শেষ মাস ডিসেম্বরে বেসরকারি খাতের ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ১০ দশমিক ৬৮ শতাংশ। তার আগের মাস নভেম্বরে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ১০ দশমিক ১১ শতাংশ; অক্টোবরে ৯ দশমিক ৪৪ শতাংশ আর সেপ্টেম্বরে হয়েছিল ৮ দশমিক ৭৭ শতাংশ। আগস্ট ও জুলাইয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল যথাক্রমে ৮ দশমিক ৪২ শতাংশ ও ৮ দশমিক ৩৮ শতাংশ।
করোনা মহামারির ধাক্কায় কমতে কমতে ওই বছরের মে মাসে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৫৫ শতাংশে নেমে এসেছিল।
বেসরকারি মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও ব্যাংকের নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) সাবেক সভাপতি সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, মূল্যস্ফীতি সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আনতে বাংলাদেশ ব্যাংক ধারাবাহিকভাবে সংকোচনমুখী মুদ্রানীতি গ্রহণ করছে। ফলে সব ধরনের ঋণের সুদহার বেড়ে যাওয়ায় বেসরকারি খাতের ঋণের প্রবৃদ্ধিও কমে গেছে।
এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনেরও একটা প্রভাব পড়েছে বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, ‘দেশে অস্থির পরিস্থিতি বিরাজ করছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। দিন যত যাচ্ছে, অবস্থা ততোই খারাপের দিকে যাচ্ছে। কি হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছি না। সংঘাত-নৈরাজ্যকর পরিস্থিতিতে সবার মধ্যে ভয়-আতঙ্ক বিরাজ করছে। এমন পরিস্থিতিতে ছোট ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে- বড় ব্যবসায়ী কেউই ঠিকমতো ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে পারছেন না।’
‘অন্যদিকে মূল্যস্ফীতি কমাতে বাংলাদেশ ব্যাংক সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি অনুসরণ করছে। এর অংশ হিসেবে নীতি সুদহার বাড়ানো হচ্ছে। এর ফলে ব্যাংক ঋণের সুদের হার বাড়বে- এটাই স্বাভাবিক। সব মিলিয়ে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি কমে যাচ্ছে।’
দেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি বাংলাদেশ চেম্বারের বর্তমান সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী পারভেজ বলেন, ‘দেশে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। সবার মধ্যে ভয়-আতঙ্ক বিরাজ করছে। সর্বত্র অনিশ্চয়তা-অস্থিরতা; কোথাও স্বস্তি নেই। এ অবস্থায় বিনিয়োগ করবে কে? ঋণ নেবে কে?’
তিনি বলেন, ‘করোনা মহামারি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, ডলারের দর বৃদ্ধি, মধ্যপাচ্যের যুদ্ধ- একের পর এক ধাক্কায় বেশ কিছুদিন ধরেই আমাদের অর্থনীতি চাপের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল। এরই মধ্যে ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর লেগেছে আরেক ধাক্কা। পোশাকশিল্পের অস্থিরতা আমাদের আরেক চিন্তার মধ্যে ফেলে দিয়েছে। ব্যাংক ঋণের সুদের হার বেড়েই চলেছে। মূল্যস্ফীতি বাড়ায় মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে গেছে।
‘এমনটা চলতে থাকলে আমাদের কপালে কি আছে কে জানে।’
আগস্ট, সেপ্টেম্বর, অক্টোবর ও নভেম্বরের পর চলতি বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরেও বেশি রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন প্রবাসীরা। চলতি মাসের প্রথম সাত দিনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থানকারী প্রবাসীরা ব্যাংকিং চ্যানেলে ৬১ কোটি ৬৪ লাখ ৫০ হাজার (১.৭২ বিলিয়ন) ডলার দেশে পাঠিয়েছেন। বর্তমান বিনিময় হার (প্রতি ডলার ১২০ টাকা) হিসাবে টাকার অঙ্কে এই অর্থের পরিমাণ ৭ হাজার ৩৯৭ কোটি টাকা। প্রতিদিনের গড় হিসাবে এসেছে ৮ কোটি ৮০ লাখ ডলার; টাকার অঙ্কে যা এক হাজার ৫৬ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংক প্রকাশিত রেমিট্যান্স প্রবাহের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। চলতি মাসের বাকি ২৪ দিনে (৮ থেকে ৩১ ডিসেম্বর) এই হারে এলে মাস শেষে গত চার মাসের মতো ডিসেম্বরেও ২ বিলিয়ন (২০০ কোটি) ডলারের বেশি রেমিট্যান্স দেশে আসবে।
গত বছরের ডিসেম্বরে ১৯৯ কোটি ১২ লাখ (১.৯৯ বিলিয়ন) ডলার পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা।
চলতি অর্থবছরের চতুর্থ মাস অক্টোবরে ২৩৯ কোটি ৫১ লাখ (২.৩৯ বিলিয়ন) ডলার রেমিট্যান্স এসেছে দেশে। যা ছিল গত বছরের অক্টোবরের চেয়ে ২১ দশমিক ৫০ শতাংশ বেশি।
চলতি অর্থবছরের পঞ্চম মাস নভেম্বরে ২১৯ কোটি ৯৫ লাখ (২ বিলিয়ন) ডলার রেমিট্যান্স এসেছে দেশে। যা ছিল গত বছরের নভেম্বরের চেয়ে ১৪ শতাংশ বেশি।
চতুর্থ মাস অক্টোবরে ২৩৯ কোটি ৫১ লাখ (২.৩৯ বিলিয়ন) ডলার রেমিট্যান্স এসেছে দেশে; প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ২১ দশমিক ৫০ শতাংশ বেশি।
তৃতীয় মাস সেপ্টেম্বরে এসেছিল ২৪০ কোটি ৪৮ লাখ (২.৪০ বিলিয়ন) ডলার। দ্বিতীয় মাস আগস্টে এসেছিল ২২২ কোটি ৪১ লাখ (২.২২ বিলিয়ন) ডলার। প্রথম মাস জুলাইয়ে এসেছিল ১৯১ কোটি ৩৭ লাখ (১.৯১ বিলিয়ন)।
অর্থবছরের পাঁচ মাসের (জুলাই-নভেম্বর) হিসাবে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে এক হাজার ১১৩ কোটি ৭৩ লাখ (১১.১৪ বিলিয়ন) ডলার রেমিট্যান্স এসেছে দেশে। যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ২৬ দশমিক ৪৪ শতাংশ বেশি।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বর সময়ে ৮৮০ কোটি ৮৪ লাখ (৮.৮১ বিলিয়ন) প্রবাসী আয় এসেছিল দেশে।
সব মিলিয়ে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের পাঁচ মাস ৭ দিনে (১ জুলাই থেকে ৭ ডিসেম্বর) ১ হাজার ১৭৫ কোটি ৩৭ লাখ (১১.৭৫ বিলিয়ন) ডলার রেমিট্যান্স এসেছে দেশে।
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে দেশজুড়ে সহিংসতা, মৃত্যু, ইন্টারনেট বন্ধ, কারফিউ, মামলা, গ্রেপ্তার ও প্রবাসীদের উৎকণ্ঠার প্রেক্ষাপটে জুলাই মাসে রেমিট্যান্স কমেছিল বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকাররা।
ওই সময় আন্দোলনকে ঘিরে সংঘাত-সহিংসতার জন্য সরকারকে দায়ী করে দেশে রেমিট্যান্স না পাঠাতে সোশাল মিডিয়ায় কেউ কেউ প্রবাসীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন।
১৯ থেকে ২৪ জুলাই পর্যন্ত ব্যাংকিং কার্যক্রম চলে মাত্র এক দিন। শিক্ষার্থীদের কোটা আন্দোলনের মধ্যে দেশজুড়ে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল, তা নিয়ন্ত্রণে ১৯ জুলাই রাত থেকে কারফিউ জারি করে বিদায়ী সরকার। এরপর ২৩ জুলাই পর্যন্ত ব্যাংক বন্ধ ছিল।
ইন্টারনেট সংযোগ না থাকায় ব্যাংকের অনলাইন লেনদেনও বন্ধ ছিল। কয়েক দিন লেনদেন বন্ধের পর ২৪ জুলাই ব্যাংক চালু হয়। ব্যাংকিং কার্যক্রম বন্ধ থাকায় ১৯ জুলাই থেকে ২৩ জুলাই বৈধ পথে তথা ব্যাংকের মাধ্যমে দেশে কোনো প্রবাসী আয় আসেনি।
৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগের পর রেমিট্যান্স প্রবাহে আরও ধীরগতি লক্ষ্য করা যায়। ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে যাত্রা শুরু হয় অন্তর্বর্তী সরকারের; রেমিট্যান্স প্রবাহেও গতি ফেরে।
দেশে দীর্ঘদিন ধরে বিদেশি মুদ্রার সংকট চলছে। কোভিড মহামারির সময়ে আমদানি তলানিতে নামায় একপর্যায়ে দেশে রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গিয়েছিল। কিন্তু রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর বিশ্ববাজারে সব ধরনের পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে আমদানি খরচ অনেক বেড়ে যায়। একই সঙ্গে প্রবাসী আয় ও রপ্তানিতে যথেষ্ট প্রবৃদ্ধি না হওয়ায় রিজার্ভ দ্রুত কমতে থাকে।
সংকট কাটাতে ও রিজার্ভ বাড়াতে প্রবাসী আয়সহ বিদেশ থেকে অর্থ আনতে নানা ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গত কয়েক মাসে এসব পদক্ষেপের ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে প্রবাসী আয়ে।
গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ২৩ দশমিক ৯১ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল দেশে, যা ছিল আগের অর্থবছরের (২০২২-২৩) চেয়ে ১০ দশমিক ৬৫ শতাংশ বেশি।
রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সহিংস পরিস্থিতি, কোভিড মহামারির দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগে দেশের প্রাথমিক স্তরের ৫৫.২ শতাংশ শিশু ‘ভীত বা আতঙ্কগ্রস্ত ‘হয়ে পড়েছে বলে গণসাক্ষরতা অভিযান ও ব্র্যাক শিক্ষা উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের গবেষণায় জানা গেছে।
ওই গবেষণায় বলা হয়েছে, ৩৬.৯ শতাংশ শিশু শিক্ষার্থীর মধ্যে স্কুল ‘বিমুখতা’ তৈরি হয়েছে।
গতকাল সোমবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত 'প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়ন আমাদের করণীয়' শীর্ষক মতবিনিময় সভায় এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
সভায় বলা হয়েছে, জরিপে উঠে এসেছে ৩৬.৫ শতাংশ শিশু শিক্ষার্থী পড়ালেখায় অমনোযোগী হয়ে পড়েছে, ২৮.৬ শতাংশ মানসিক ক্ষতির শিকার হয়েছে এবং ৭.৯ শতাংশ শিশুর মেজাজ হয়েছে খিটখিটে।
গণসাক্ষরতা অভিযান ও ব্র্যাক শিক্ষা উন্নয়ন ইনস্টিটিউট আয়োজিত সভায় প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়নে সম্মিলিত উদ্যোগ গ্রহণে মত দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট অংশীজনরা।
জরিপের প্রক্রিয়া ব্যাখ্যা করে প্রতিষ্ঠান দুটি বলছে, প্রশ্নপত্রের মাধ্যমে দেশের ৮টি বিভাগের সর্বমোট ২০৩টি সহয়তা সংগঠনের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট অংশীজনের মতামত নিয়ে এ জরিপ পরিচালনা করা হয়েছে।
একই সঙ্গে ১২টি আলোচনা, মতামত সংগ্রহ এবং বিভাগীয় ও জাতীয় পর্যায়ে মোট ৪টি সভার মাধ্যমে এ মতামত নেওয়া হয়।
অনুষ্ঠানে জরিপের ফল তুলে ধরেন টিচার ডেভেলপমেন্ট ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক নাজমুল হক ও গণসাক্ষরতা অভিযানের কার্যক্রম ব্যবস্থপক আব্দুর রউফ।
জরিপ বলছে, সাম্প্রতিক সময়ে শিক্ষার্থীদের স্কুল ছেড়ে রাস্তায় নামা, মিছিল, সহিংসতা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, মারামারি দেখা, রাজপথে শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি ছোড়ার দৃশ্য দেখা বা শোনা, স্কুল বন্ধ হয়ে যাওয়া এবং কারফিউ-অবরোধ কর্মসূচির কারণে ঘরে থাকার ফলে শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব পড়েছে। এর ফলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে এক ধরনের 'ট্রমা' দেখা দিয়েছে।
জরিপে দেখা গেছে, প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যের পরিবর্তনের ফলে স্কুলে না যাওয়ার প্রবণতা ও পড়ালেখার প্রতি অনীহা বেড়েছে।
এছাড়া ভয়-ভীতিতে থাকা, ঘুমের সমস্যা হওয়া ও দুঃস্বপ্ন দেখা, বিষণ্ণতা ও হতাশাগ্রস্ত হওয়া, মোবাইল ফোনে আসক্ত হওয়া, মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাওয়া, উচ্ছৃঙ্খলতা দেখা দেওয়া বা সহিংস আচরণ করা, পাঠ্যবই বা কারিকুলামে পরিবর্তন নিয়ে ভীত হওয়ার মত প্রভাবও লক্ষ্য করা গেছে।
শিশুদের মধ্যে বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে ছবি ও খবর দেখে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়েছে।তাদের মধ্যে শিশুসুলভ চঞ্চলতা হারিয়েছে বা একাকীত্ববোধ সৃষ্টি হয়েছে এবং বন্যার কারণে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ায় বিদ্যালয়ে অনুপস্থিতি বেড়ে যাওয়ার হার বেড়েছে বলে জরিপে উঠে এসেছে।
সভায় জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ প্রণয়ন কমিটির সদস্য এবং শিক্ষক নেতা অধ্যক্ষ কাজী ফারুক আহমেদ বলেন, “কোভিডের আগে যে শিক্ষাক্রম সংস্কার করা হয়েছে, তাতে শিক্ষার অংশীজনদের মতামত নেওয়া হয়নি। এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপর পড়েছে।“
শিক্ষায় দ্রুত পরিবর্তন ‘সম্ভব নয়’ জানিয়ে তিনি বলেন, “এখন শিক্ষার্থীদের মায়েরাও শিক্ষক। সেজন্য শিশুর সঠিক শিক্ষা নিশ্চিতে প্রয়োজনে অভিভাবকদেরও প্রশিক্ষণ দিতে হবে।“
এসব সংকট কাটাতে 'স্কুলে স্কুলে সাংস্কৃতিক চর্চা' বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছেন প্রাথমিকের শিক্ষক নেতা শাহিনূর আল আমিন।
আরেক শিক্ষক নেতা আবুল কাশেম স্কুলগুলোতে খেলার মাঠের ব্যবস্থা করার কথা তুলে ধরে বলেন, “যেসব স্কুলে খেলার মাঠ নাই, কিন্তু জমি আছে সেগুলো সংস্কার করে খেলার মাঠ স্থাপনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি।“
এছাড়াও জরিপে আরও কিছু ফলাফল ও সমস্যা সমাধান বেশকিছু সুপারিশ তুলে ধরা হয়েছে।
মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন গণস্বাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে. চৌধুরী। সমাপনী বক্তব্যে তিনি বলেন, “শিশুদের শিক্ষা নিশ্চিতের জন্য তাদের মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে হবে। সেজন্য আমরা মতবিনিময় সভা থেকে প্রাপ্ত প্রস্তাবগুলো সরকারের কাছে তুলে ধরব, যাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।“
সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার সামাজিক পরিবর্তনের তাগিদ দিয়েছেন।
চলতি মাসেই ১০টি দৃষ্টিনন্দন বিদ্যালয় উদ্বোধন করা হবে জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, “এ স্কুলগুলো আলাদা আলাদাভাবে সাজানো হয়েছে। এছাড়াও আমরা বিদ্যালয়গুলো সাজানোর কাজও আমরা করছি। এগুলো শিশুর মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে কাজ করবে।“
সভায় বক্তব্য রাখেন গণস্বাক্ষরতা অভিযানের উপ-পরিচালক তপন কুমার দাশ, ব্র্যাক শিক্ষা ইন্সটিটিউটের সিনিয়র এডভাইজার ড. মুহাম্মদ মুসা। এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন এডুকেশন ওয়াচের আহ্বায়ক ড. আহমদ মোশতাক রাজা চৌধুরী।
সাম্প্রতিক সময়ে যেভাবে বিভিন্ন ব্যক্তির ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ বা স্থগিত করা হচ্ছে, তা আইনসিদ্ধ হচ্ছে না বলে মন্তব্য করেছেন ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি এবং বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু। তিনি বলেন, ‘আদালতের প্রক্রিয়ার বাইরে অন্যায়ভাবে (ব্যাংক হিসাব) ফ্রিজ করাটা আমি নিজেও পছন্দ করি না।’
সোমবার রাজধানীর পল্টনে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) সদস্যদের সঙ্গে এক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন তিনি। সভায় দেশের বর্তমান ব্যবসা, অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ও করণীয় বিষয়ে নিজের মতামত তুলে ধরেন এই ব্যবসায়ী নেতা। অনুষ্ঠানে ইআরএফের সভাপতি রেফায়েত উল্লাহ মীরধা, সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেমসহ সংগঠনটির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সাবেক সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রী, সংসদ সদস্যসহ বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ীর ব্যাংক হিসাব স্থগিতের নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিআইএফইউ)। এ বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, ‘এখন যেটা ঘটছে, ইচ্ছা হলেই আরেকজনের ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ করে দেওয়া হচ্ছে। এটা আইনসিদ্ধ নয়। বিষয়টি আদালতের প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে হওয়া উচিত। যদি উপযুক্ত প্রমাণ থাকে, তাহলে অনুসন্ধান করে যথাযথ প্রক্রিয়া মেনে ফ্রিজ করা যেতে পারে। আমার ব্যাংক হিসাবও ফ্রিজ করতে পারে, আপত্তি নেই। কিন্তু যা–ই করুক আইন অনুযায়ী করুক।’
সভায় বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি ও বিনিয়োগ পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেন আবদুল আউয়াল মিন্টু। তিনি বলেন, শুধু সুদের হার বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করায় অর্থনীতির অন্য ভিত্তিগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, সুদহার বাড়িয়ে টাকার সরবরাহ কমালে ঋণপত্র খোলার পরিমাণ কমে যাবে। এতে পণ্যের সরবরাহ কমবে। অর্থাৎ মুদ্রা সরবরাহ কমাতে গিয়ে পণ্যের সরবরাহ কমিয়ে মূল্যস্ফীতিকে উসকে দেওয়া হবে। আর পণ্য সরবরাহের ঘাটতি থেকে তৈরি মূল্যস্ফীতি দীর্ঘস্থায়ী হয়। সুতরাং মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টার পাশাপাশি দেশের বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের দিকেও খেয়াল রাখতে হবে।
তবে দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি আগের তুলনায় উন্নত হচ্ছে বলে মনে করেন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক এ সভাপতি। তিনি বলেন, তবে ব্যাংক খাতে যে সমস্যা তৈরি হয়েছে, তা এক দিনে ঠিক হবে না। সরকার একদিকে খেলাপি ঋণ পুনরুদ্ধার এবং অন্যদিকে গ্রাহকের আস্থা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে। ফলে যেসব ব্যাংককে দুর্বল বলা হয়, তারা ক্রমেই ভালো করছে।
পরিস্থিতির পুরোপুরি উন্নতি করতে হলে গণতান্ত্রিক সরকার প্রয়োজন বলে উল্লেখ করেন আবদুল আউয়াল মিন্টু। বলেন, একজন উপদেষ্টা বলেছেন যে তারা দায়িত্বে আছেন, ক্ষমতায় নেই। এটা তো ভয়ংকর কথা। গণতান্ত্রিক সরকারের জনগণের কাছে দায়বদ্ধতা থাকে। তাই অতিসত্বর নির্বাচন দেওয়া, অন্তত নির্বাচন নিয়ে একটা রোডম্যাপ দেওয়া অত্যন্ত জরুরি।
সব ক্ষেত্রে সংস্কার দরকার নেই উল্লেখ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, যেগুলো প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার, সেগুলো তারা (সরকার) এখনই করতে পারে। তবে সাংবিধানিক সংস্কারগুলোর বিষয়ে সবার সঙ্গে ঐকমত্যের ভিত্তিতে একটি প্রস্তাব তৈরি করে দিতে পারে। তাতে ভবিষ্যতে যে-ই সরকারে আসুক, তারা ওই সংস্কারগুলো বাস্তবায়ন করবেন।
সম্প্রতি বেক্সিমকো গ্রুপের পোশাক খাতের ১৬টি কোম্পানির মালিকানা বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে সরকারের উপদেষ্টা কমিটির এক সভায়। এর বাইরে এই গ্রুপের বেশ কয়েকটি কোম্পানি বন্ধ করে দেওয়া হতে পারে বলে জানানো হয়েছে। এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, ‘কারা বিক্রি করবে, কেন করবে? কোনো ব্যবসা-বাণিজ্য বা প্রতিষ্ঠান নৈতিকও না, অনৈতিকও না। এসব প্রতিষ্ঠান যারা চালায়, তারা যদি অনৈতিক হয়, আইন মেনে তাদের বিচার হওয়া উচিত। এ নিয়ে আমি কিছু বলব না। মালিকদের শাস্তি হোক, কিন্তু কোনো প্রতিষ্ঠান যেন বন্ধ না হয়।’
তিনি বলেন, ‘বেক্সিমকো গ্রুপের শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোতে ৮২ হাজার লোক কাজ করেন। কোনো উৎপাদনশীল খাতে সরকারের এমন পদক্ষেপ নেওয়া উচিত হবে না, যাতে উৎপাদন ও কর্মসংস্থান ব্যাহত হয়।’
পুঁজিবাজারে নতুন কোনো দরবেশের আবির্ভাব হয়েছে কিনা- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘আমি কখনো পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করিনি এবং পুঁজিবাজার থেকে কোনো মুনাফাও করিনি। আমি কখনো দরবেশ হব না। আমার এক সময় বেক্সিমকো গ্রুপের স্বত্বাধিকারী সালমান এফ রহমানের চেয়ে অনেক বেশি পাওয়ার ছিল। কিন্তু আমি এর অপব্যবহার করিনি। আমি কখনো সরকারের সঙ্গে কোনো ব্যবসা করিনি। টুকটাক যেটুকু ব্যবসা করেছি, নিজে নিজেই করেছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘কিছু কিছু লোক পুঁজিবাজারকে লটারিতে পরিণত করেছে। তারা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ না করে শেয়ার কেনা-বেচা করছে। তারা মনে করে আজ যে শেয়ার কিনব, কয়েক দিন পরেই তার দাম বাড়বে। তখন বিক্রি করে মুনাফা করব।’
ভারত-বাংলাদেশ বাণিজ্য সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্ন করা হলে আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, ‘এটা অস্বীকার করার উপায় নেই যে বর্তমানে ভারতের সঙ্গে আমাদের একটা মন–কষাকষি চলছে। এর কারণ, ভারত দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক ভুলে গিয়ে শুধু একটি দলের সঙ্গে বন্ধুত্ব করেছে। এখন সেই সরকার আর ক্ষমতায় নেই, এটা ভারতের জন্য মেনে নেওয়া কষ্টকর। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের গঠিত নীতি হচ্ছে, আগে আপনি (ভারত) ৫ আগস্ট এর নীতিগত স্বীকৃতি ঠিকমতো দেন। এরপর আমরা ভবিষ্যতের দিকে আগাই। আমিও মনে করি, এটা যথাযথ চিন্তাধারা।’
ভারতকে বৃহৎ প্রতিবেশী দেশ উল্লেখ করে এই ব্যবসায়ী নেতা আরও বলেন, দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক ভালো হওয়া উচিত। তবে একই সঙ্গে আত্মসম্মান যেন বজায় থাকে।
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন এবং ভূমি উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ বলেছেন, বাংলাদেশ পর্যটন ক্ষেত্রে হতে পারে অমিত সম্ভাবনার উৎস। কিন্তু পর্যাপ্ত বিনিয়োগের অভাবে পর্যটনশিল্পের বিকাশ হচ্ছে না। সোমবার আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন (বিপিসি) পরিদর্শন শেষে কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
পর্যটন উপদেষ্টা বলেন, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির ক্ষেত্রে পর্যটনশিল্প গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। বাংলাদেশের পার্শ্ববর্তী দেশগুলো পর্যটনশিল্প থেকে বিপুল পরিমাণ আয় করতে পারলেও বাংলাদেশের আয় অতি সামান্য। এ সমস্যা উত্তরণে বর্তমান সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
বিপিসি চেয়ারম্যান সায়েমা শাহীন সুলতানার সভাপতিত্বে সভায় বক্তৃতা করেন, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন সচিব নাসরীন জাহান, বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের সিইও আবু তাহের মুহাম্মদ জাবের, মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ফাতেমা রহিম ভীনা প্রমুখ।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী বলেছেন, চৌদ্দগোষ্ঠীর রাজনৈতিক পরিচয় খুঁজে গত ১৫ বছরে পুলিশ বাহিনীতে ৮০ থেকে ৯০ হাজার সদস্যকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
আজ সোমবার মিন্টো রোডে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, গত ১৫ বছরে পুলিশ বাহিনীতে নিয়োগের আগে নানাভাবে তাদের তথ্য যাচাই করা হয়েছে। নিয়োগ পার্থী কোন দলের, তার বাবা কোন দলের, দাদা কোন দলের এবং আরও পূর্বপুরুষ কোন দলের তা খবর নেওয়া হয়েছে। দুই লাখ পুলিশের মধ্যে ৮০ থেকে ৯০ হাজার পুলিশ সদস্য এভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছেন।
তিনি বলেন, এই ৮০ থেকে ৯০ হাজার পুলিশ সদস্যকে তো বলতে পারি না গো হোম (বাসায় ফিরে যাও)। তবে যারা দুষ্টু, যারা পেশাদারত্বের বাইরে গিয়ে নানা অপকর্মে লিপ্ত হয়েছিলেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
ডিএমপির এই শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে যখন পুলিশ ইনঅ্যাক্টিভ হয়ে পড়ে, তখন ঢাকা শহরে ডাকাতি, লুটপাট শুরু হয়। তখন ৮০ বছরের বৃদ্ধও লাঠি নিয়ে পাহাড়া দিয়েছেন। তখন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ ট্রমার মধ্যে পড়ে যায়। এরপর সদ্যবিদায়ী ডিএমপি কমিশনারসহ অন্যরা পুলিশকে সক্রিয় করতে কাজ শুরু করেন।
চাঁদাবাজির বিষয়ে ডিএমপি কমিশনার বলেন, চাঁদাবাজ যেই হোক, বাদী হোক আর আমার লোক (পুলিশ) হোক, কেউ চাঁদা দেবেন না। যারাই আসামির কাছে চাঁদাবাজি করছেন তাদের বিরুদ্ধে মামলা হবে। শিগগিরই তাদের বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নেব। নগরবাসীর প্রতি অনুরোধ, কেউ আপনারা চাঁদা দেবেন না। নগরবাসীর সহযোগিতা ছাড়া আমরা কিছু করতে পারব না।
মিথ্যা মামলা ও মামলা দিয়ে চাঁদাবাজি এবং হয়নারি করা পুলিশ সদস্য ও মামলার বাদীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানিয়ে তিনি বলেন, জুলাই-আগস্টের ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজধানীসহ সারা দেশে মিথ্যা মামলা দিয়ে নিরপরাধ মানুষকে হয়রানির ঘটনা বেড়েছে। তথাকথিত ব্যক্তিদের আসামি করে যারা চাঁদাবাজি করছে, তাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা হবে। যেসব লোকের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা হচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত না হওয়া পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা হবে না। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পরে অধিকাংশ মামলা হয়েছে কোর্টের নির্দেশে। আসামি সংখ্যা ছিল ২০০ প্লাস। দেখা যাচ্ছে এসব মামলায় অনেকে জড়িত ছিল না, গুটি কয়েক লোক জড়িত ছিল। কিন্তু এখন যেটা ঘটেছে ওই মামলার বাদী একশ লোকের কাছে গিয়ে টাকা দাবি করছে। তদন্তে যাদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্টতা আসবে আমরা শুধু তাদের গ্রেপ্তার করব।
এসব মামলার বাদী ছাড়াও পুলিশেরও কিছু লোক কাজ করছে জানিয়ে ডিএমপি কমিশনার বলেন, আমার সব লোকও যে সব ভালো তা বলব না। আমার কাছে যাদের বিরুদ্ধে রিপোর্ট এসেছে আমি তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছি। আমি গতকাল অলরেডি একজনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছি, যিনি আমার লোক, এই কাজে লিপ্ত ছিল।
ঢাকার ট্রফিক ব্যবস্থাপনার ওপরে জোর দেওয়া হয়েছে জানিয়ে ডিএমপি কমিশনার বলেন, ঢাকা শহরের প্রধান সমস্যা ট্রাফিক। এই শহরে বিপুল সংখ্যক ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলাচল করছে। অটোরিকশা যদি বন্ধ না হয় তাহলে ঢাকা শহরের ঘর থেকে বের হলে আর হাঁটার জায়গা থাকবে না। মানুষের মুভমেন্ট বন্ধ হয়ে যাবে।
তিনি আরও বলেন, ‘ঢাকার ট্রাফিক ব্যবস্থা বিশৃঙ্খল অবস্থায় আছে। তবে ট্রাফিকে শৃঙ্খলা ফেরাতে ইতোমধ্যে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এর জন্য নগরবাসীর সহযোগিতা প্রয়োজন। বিগত সরকার অটোরিকশার অনুমতি দেওয়ার কারণেই বাড়ছে অটোর সংখ্যা। অচিরেই এটি কমানো না গেলে ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখে পড়তে হবে নগরবাসীকে। এ বিষয়ে সরকারের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করেছি।
ইদানিং ছিনতাইয়ের ঘটনা বেড়েছে উল্লেখ করে ডিএমপি কমিশনার বলেন, নগরবাসীর কাছ থেকে ছিনতাইয়ের অনেক অভিযোগ আসছে। ছিনতাই প্রতিরোধে ডিবি ও থানা পুলিশকে সক্রিয় করা হয়েছে যাতে রোধ করা সম্ভব হয়।
এক প্রশ্নের জবাবে ডিএমপি কমিশনার বলেন, থানার ওসিদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, কোনো ঘটনা যেন লুকানো না হয়। যে ঘটনায় জিডি হওয়া দরকার জিডি হবে, যে ঘটনায় মামলা হওয়া দরকার মামলা হবে। এছাড়া আমি পদক্ষেপ নিচ্ছি, জিডি হলে এক ঘণ্টার মধ্যে পুলিশ অভিযোগকারীর কাছে যাবে। যদি মামলা হওয়ার মতো ঘটনা হয়, তাহলে অভিযোগকারীকে থানায় এনে মামলা নেওয়া হবে। আগামী ১০-১৫ দিনের মধ্যে এই কাজটি শুরু করবো।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ঢাকা মহানগর পুলিশ পেশাদারিত্বের বাইরে গিয়ে কাজ করেছে বলে মন্তব্য করে ডিএমপি কমিশনার বলেন, এ ঘটনায় আমি ঢাকাসহ দেশবাসীর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি। ওই সময়ের অপেশাদার আচরণের কারণে বদলি ও দোষী সদস্যদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ সম্পর্কে ব্যাপক অপতথ্য ছড়ানো হচ্ছে উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এই মিসইনফরমেশন ঠেকাতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের কূটনীতিকদের সহযোগিতা কামনা করেছেন।
আজ সোমবার দুপুরে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের কূটনীতিকদের সঙ্গে এক বৈঠক প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘আমরা এই মিসইনফরমেশন ঠেকাতে আপনাদের সহযোগিতা কামনা করি।’
১৯ সদস্যের প্রতিনিধি দলটির নেতৃত্বে দেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের হেড অব ডেলিগেশন মাইকেল মিলার। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে অংশ নেন।
প্রায় আড়াই ঘণ্টাব্যাপী এ বৈঠকে ১৫ জন প্রতিনিধি তাদের মতামত তুলে ধরেন। বৈঠকে শ্রম অধিকার, বাণিজ্য সুবিধা, জলবায়ু পরিবর্তন, মানবাধিকার, ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইম ট্রাইবুনাল অ্যাক্ট, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বাস্তবায়ন ও টেকসই ভবিষ্যৎ নির্মাণে উভয়ের অঙ্গীকার ও করণীয় সম্পর্কে আলোচনা হয়।
প্রধান উপদেষ্টা বৈঠকে বলেন, ‘ডিসেম্বরে গোটা মাসজুড়ে আমরা বিজয় উদযাপন করি। বিজয়ের মাসে আপনাদের সঙ্গে এমন একটি ইনটার্যাক্টিভ আলোচনায় অংশ নিতে পেরে আমি খুব আনন্দিত।’
বাংলাদেশে জুলাই-আগস্টে গণঅভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করেন তিনি। এ সময় তিনি গত ১৬ বছর ধরে অত্যাচার, শোষণ, বলপূর্বক গুম, মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয় সংক্ষেপে তুলে ধরেন। অধ্যাপক ইউনূস অর্থনৈতিক শ্বেতপত্রের বিষয় উল্লেখ করে দুর্নীতি, অর্থপাচার এবং ব্যাংকিং সিস্টেমকে কীভাবে বিপর্যস্ত করা হয়েছিল সে সব কথা জানান।
বাংলাদেশ সম্পর্কে ব্যাপক আকারে অপতথ্য ছড়ানো হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা এই মিসইনফরমেশন ঠেকাতে আপনাদের সহযোগিতা কামনা করি।’
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে দেশ থেকে পালিয়ে যেতে বাধ্য হওয়া স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা ও তার সহযোগীরা যে ব্যাপক টাকা পাচার করে নিয়ে গেছে তা দিয়ে তারা দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে বলেও জানান তিনি।
সম্প্রতি জাতীয় ঐক্যের লক্ষ্যে বাংলাদেশের সকল রাজনৈতিক দল ও ধর্মীয় জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময়ের কথা উল্লেখ করেন প্রধান উপদেষ্টা।
অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার ও নির্বাচন প্রক্রিয়া সম্পর্কে ইইউ প্রতিনিধিদের বিশদভাবে জানান অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা উপস্থিত রাষ্ট্রদূতদের বাংলাদেশিদের জন্য তাদের ভিসা সেন্টার দিল্লি থেকে সরিয়ে ঢাকায় অথবা প্রতিবেশী অন্য কোনো দেশে স্থানান্তরের অনুরোধ জানান।
তিনি বলেন, ‘ভারত বাংলাদেশিদের জন্য ভিসা সীমিত করায় অনেক শিক্ষার্থী দিল্লি গিয়ে ইউরোপের ভিসা নিতে পারছেন না। ফলে তাদের শিক্ষাজীবন নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। ইউরোপের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বাংলাদেশের শিক্ষার্থী পাচ্ছে না। ভিসা অফিস ঢাকা অথবা প্রতিবেশী কোনো দেশে স্থানান্তর হলে বাংলাদেশ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন উভয়ই উপকৃত হবে।’
বৈঠকে উপস্থিত পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন জানান, ইতোমধ্যে বুলগেরিয়া বাংলাদেশিদের জন্য তাদের ভিসা সেন্টার ইন্দোনেশিয়া ও ভিয়েতনামে স্থানান্তর করেছে। তিনি অন্য দেশগুলোকেও একই প্রক্রিয়া অনুসরণের আহ্বান জানান।
সংস্কার প্রক্রিয়ায় প্রধান উপদেষ্টাকে পূর্ণ সমর্থন জানান ইইউ প্রতিনিধিরা। বেশ কিছু পরামর্শ ও সুপারিশ তুলে ধরে নতুন বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দেন তারা।
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) দেশের সীমান্ত এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে গত নভেম্বর মাসে ১৭২ কোটি ২ লাখ ৮ হাজার টাকা মূল্যের বিভিন্ন প্রকারের চোরাচালান পণ্যসামগ্রী জব্দ করেছেন।
আজ সোমবার বিজিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরিফুল ইসলাম এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
এতে বলা হয়, জব্দ করা জব্দকৃত চোরাচালান দ্রব্যের মধ্যে রয়েছে- ৮ কেজি ৫৭০ গ্রাম স্বর্ণ, ১৬ কেজি ৭৯৫ গ্রাম রুপা, ১৫ হাজার ৭০৩টি শাড়ী, ২২ হাজার ৮৪০টি থ্রিপিস/শার্টপিস/চাদর/কম্বল, ১৪ হাজার ৪০৬টি তৈরী পোশাক, ২৯ হাজার ৫২৯ মিটার থান কাপড়, ২ লাখ ৯০ হাজার ৯০০টি কসমেটিক্স সামগ্রী, ৭ হাজার ৬৬১টি ইমিটেশন সামগ্রী, ১৫ হাজার ৬৮৯ ঘনফুট কাঠ, ৬ হাজার ৮২৮ কেজি চা পাতা, ৪ লাখ ১৬ হাজার ৭২৭ কেজি চিনি, ৫ হাজার ৭১৩ কেজি সার, ১ লাখ ৩৩ হাজার ৩৭০ কেজি কয়লা, ৭২০ ঘনফুট পাথর, ১ হাজার ঘনফুট বালু, ৫৯৩টি মোবাইল ডিসপ্লে, ৩৬ হাজার ২২৩টি চশমা, ৮ হাজার ৬২৩ কেজি বিভিন্ন প্রকার ফল, ৪৯ হাজার ৭৫৪ কেজি বাংলাদেশী রসুন, ২২ হাজার ৯১৬ কেজি জিরা, ১টি কষ্টি পাথরের মূর্তি, ১০টি ট্রাক, ১টি বাস, ৭টি পিকআপ, ৬টি প্রাইভেটকার/মাইক্রোবাস, ৭টি ট্রলি, ১৬২টি নৌকা, ৫০ টিসিএনজি/ইজিবাইক, ৭৮টি মোটরসাইকেল, ১১টি ভ্যান গাড়ি এবং ২৩টি বাইসাইকেল।
উদ্ধার করা অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে- ৬টি পিস্তল, ৮টি গান জাতীয় অস্ত্র, ১টি রাইফেল, ১টি রিভলবার, ৭টি ককটেইল, ৪টি ম্যাগাজিন এবং ৪২১ রাউন্ড গুলি।
এছাড়া, জব্দ করা মাদক ও নেশাজাতীয় দ্রব্যের মধ্যে রয়েছে- ৯ লাখ ৬৬ হাজার ৬৯৬ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট, ১ কেজি ২৫ গ্রাম ক্রিস্টাল মেথ (আইস), ৬ কেজি ৭৩৭ গ্রাম হেরোইন, ২৩ হাজার ৪৪৯ বোতল ফেনসিডিল, ১৫ হাজার ৫৪৯ বোতল বিদেশী মদ, ৩৯৩ লিটার বাংলা মদ, ৮০৫ ক্যান বিয়ার, ১ হাজার ৩০৯ কেজি গাঁজা, ১ লাখ ২৫ হাজার ১১৪ প্যাকেট বিড়ি ও সিগারেট, ১ লাখ ৫০ হাজার ৯২২টি নেশাজাতীয় ট্যাবলেট/ইনজেকশন, ৩ হাজার ২৩৯ বোতল ইস্কাফ সিরাপ, ১৮ কেজি ৮৯৮ গ্রাম কোকেন, ৫৯০ বোতল এমকেডিল/কফিডিল, ১১ লাখ ৪৫ হাজার ৯৮ পিস বিভিন্ন প্রকার ওষুধ ও ট্যাবলেট, ১৪ হাজার ৪৩৬ টি এ্যানগ্রো/সেনেগ্রা ট্যাবলেট, এবং ২৩ বোতল এলএসডি ।
সীমান্তে বিজিবির অভিযানে ইয়াবাসহ বিভিন্ন প্রকার মাদক পাচার ও অন্যান্য চোরাচালানে জড়িত থাকার অভিযোগে ২০৯ জন চোরাচালানী এবং অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রমের দায়ে ৪৯২ জন বাংলাদেশী নাগরিক ও ১১ জন ভারতীয় নাগরিককে আটকের পর তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া ২ হাজার ৫৯৭ জন মায়ানমার নাগরিককে আটকের পর তাদেরকে নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, দুদক ও বিচার বিভাগ বিগত সরকারের দাসে পরিণত হয়েছিল, যে কারণে দুর্নীতি লাগাম ছাড়ালেও এর কোন বিচার হয়নি।
আজ সোমবার সকালে রাজধানীর কাকরাইলস্থ ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশনে ‘আন্তর্জাতিক দুর্নীতি বিরোধী দিবস ২০২৪’ উপলক্ষে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘তার পিয়ন ৪০০ কোটি টাকার মালিক হয়েছে -এটা হাসতে হাসতে তিনি জাতির সামনে বলেছেন। বিগত সরকারের আমলে দুর্নীতি স্বীকৃত আদর্শে পরিণত হয়েছিল। কোন বিচার তো হতোই না, বরং দুর্নীতি যে একটা খারাপ বা নেতিবাচক বিষয় সেটা ভাবার সংস্কৃতি পর্যন্ত চলে গিয়েছিল’।
এসময় তিনি আরও বলেন, ‘বিভিন্ন সময়ে দুদক সংস্কার হয়েছে, বারবার সংস্কারের মাধ্যমে এটিকে ক্ষমতায়িত করা হয়েছে। কিন্ত গত ১৫ বছরে শুধু দুর্নীতিই দেখা গেছে। দুদক তো ছিল, উচ্চ আদালতও ছিল, তাহলে কোন দুর্নীতির বিচার কেন হয়নি? কারণ, কেউ তার (শেখ হাসিনা) সামনে কিছু বলতে পারে নাই এবং দুদক, বিচার বিভাগ তার দাসে পরিণত হয়েছিল’।
বক্তব্যের এক পর্যায়ে তিনি বলেন, ‘বিচার হতো শুধু খালেদা জিয়ার। শুধুমাত্র মামলায় প্রক্রিয়াগত ভুলের কারণে তাঁকে দশবছরের জেল দেওয়া হয়েছে।’
এসময় উপস্থিত দুদক কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘এখন তো সময় পরিবর্তিত হয়েছে, কেউ কোন রকম হস্তক্ষেপ করছে না। প্রায় শতাধিক মন্ত্রী, ব্যবসায়ী গত আমলে চুরি করে হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছে। আপনারা এখন সেগুলোর তদন্ত করে দেখিয়ে দিন, যে ভালো পরিবেশ পেলে আপনারা কাজ করতে পারেন। দেখিয়ে দিন, যে তাদের দুর্নীতি আপনাদের হৃদয় ও বিবেককে দূষিত করতে পারেনি, আর এটাই আপনাদের কাছে এখন সারাদেশের মানুষের আকাঙ্ক্ষা।’
একাত্তরের ও জুলাই-আগস্টের শহীদদের আত্নত্যাগের মহিমা সমুন্নত রাখার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের সন্তানেরা নিজেদের রক্ত দিয়ে নতুন সময় আমাদের উপহার দিয়ে গেছে, আসুন, আমরা তাদের কাছ থেকে শিখি, বিবেককে কাজে লাগিয়ে দুর্নীতি থেকে দূরে থাকি ও তাদের প্রত্যাশার প্রতি শ্রদ্ধাবান থাকি।’
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন দুদক সচিব খোরশেদা ইয়াসমিন এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ও দুদক সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. ইফতেখারুজ্জামান।
আগের মাসের ধারাবাহিকতায় সর্বশেষ সমাপ্ত নভেম্বর মাসেও দেশের অর্থনীতি সম্প্রসারণের ধারায় রয়েছে। প্রধানত, তিনটি খাতে ভর করে অর্থনীতির এই সম্প্রসারণ হয়েছে। সেগুলো হলো- কৃষি, উৎপাদন ও সেবা খাত। এ কারণে বেড়েছে নভেম্বর মাসের পারচেজিং ম্যানেজার্স ইনডেক্স বা পিএমআইয়ের সার্বিক মান। গত নভেম্বরে এ সূচকের মান সাড়ে ৬ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬২ দশমিক ২ পয়েন্ট। অক্টোবরে সূচকটির সার্বিক মান ছিল ৫৫ দশমিক ৭ পয়েন্ট।
গতকাল রোববার নভেম্বর মাসের পিএমআই স্কোর প্রকাশ করা হয়েছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই) এবং গবেষণাপ্রতিষ্ঠান পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশ (পিইবি) যৌথভাবে এ সূচক প্রকাশ করেছে। অর্থনীতির মূল চারটি খাতের কার্যক্রমের ভিত্তিতে পিএমআই তৈরি করা হয়েছে। খাতগুলো হচ্ছে কৃষি, উৎপাদন, নির্মাণ ও সেবা। পিএমআই সূচকের মান ৫০ পয়েন্টের বেশি থাকা মানে অর্থনীতি সম্প্রসারণের ধারায় রয়েছে।
অর্থনীতি সম্প্রসারণের ধারায় থাকলেও এখনো কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে বলে পিএমআই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বলা হয়, অর্থনীতির নীতি সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে এখনো রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা রয়েছে। এ ছাড়া শিল্প খাতসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে আন্দোলনের কারণে ব্যবসায়িক কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
নভেম্বরের পিএমআই প্রতিবেদন অনুসারে, নির্মাণ খাত ছাড়া অন্য তিন খাতের সম্প্রসারণের হার অক্টোবরের চেয়ে বেশি ছিল। বিশেষ করে কৃষি খাত সম্প্রসারণের গতি ছিল সবচেয়ে বেশি। এ খাতে নতুন ব্যবসা ও ব্যবসায়িক কার্যক্রমের দ্রুত সম্প্রসারণ হয়েছে। যদিও এই খাতে কর্মসংস্থানের গতি কম। নভেম্বরে কৃষি খাতের পিএমআই সূচকের মান বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৭ দশমিক ২। অক্টোবরে এ সূচকের মান ছিল ৫৩ দশমিক ১।
টানা তিন মাস সম্প্রসারণের ধারায় রয়েছে উৎপাদন খাত। নভেম্বরে এ খাতের পিএমআই সূচকের মান বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬০ দশমিক ৯ পয়েন্ট। অক্টোবরে যা ছিল ৫৬ দশমিক ৬ পয়েন্ট। এ খাতের নতুন ক্রয়াদেশ, রপ্তানি, কারখানায় উৎপাদন-সব ক্ষেত্রেই গতি আগের চেয়ে বেড়েছে। এমনকি এই খাতের আমদানি, কর্মসংস্থান, সরবরাহের ক্ষেত্রেও প্রথমবারের মতো সম্প্রসারণ হয়েছে। এতে অর্ডার ব্যাকলগ সূচক ধীর সংকোচন হার দেখিয়েছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, অক্টোবরের পর নভেম্বরেও দ্বিতীয় মাসের মতো সম্প্রসারণের ধারায় রয়েছে সেবা খাত। নভেম্বরে এ খাতের সূচকের মান বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৪ পয়েন্ট। অক্টোবরে এই সূচকের মান ছিল ৫৬ দশমিক ৯ পয়েন্ট। সেবা খাতে কর্মসংস্থানেও গতি ফিরেছে গত মাসে। সেই সঙ্গে নতুন ব্যবসা ও ব্যবসায়িক কার্যক্রম গতি রয়েছে।
কৃষি, উৎপাদন ও সেবা খাত সম্প্রসারণ ধারায় থাকলেও সংকোচনে রয়েছে নির্মাণ খাত। আগের মাসে সামান্য সম্প্রসারণে ফিরলে নভেম্বর মাসে সংকোচনে ফিরে গেছে। মূলত এ খাতে ইনপুট খরচ এবং অর্ডার ব্যাকলগ সূচকের জন্য সংকোচন রেকর্ড করা হয়েছে। তবে নতুন ব্যবসা, নির্মাণ কার্যক্রম এবং কর্মসংস্থান সূচকের জন্য সম্প্রসারণ রেকর্ড করা হয়েছে।
দেশে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর থেকে পিএমআই সূচকের মান নির্ণয় করা হচ্ছে। তবে চলতি বছরের মে মাস থেকে যৌথভাবে এই সূচক প্রকাশ করে আসছে এমসিসিআই ও পিইবি। চার খাতের উদ্যোক্তা ও প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহীদের মতামতের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট খাতের সূচকের মান নির্ধারণ করা হয়। মোট ১০০ নম্বরের মধ্যে পিএমআইয়ের মান নির্ণয় করা হয়।
আগামী বছরের শুরুতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ নির্বাচন হতে পারে। এ সম্ভাবনার কথা জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও সহযোগী অধ্যাপক সাইফুদ্দিন আহমেদ। গতকাল রবিবার প্রক্টর কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জানুয়ারি অথবা ফেব্রুয়ারির মধ্যে ডাকসু নির্বাচন আয়োজন করার কথা ভাবছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
সাইফুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘ডাকসু নির্বাচন আমাদের জন্য খুবই জরুরি। কারণ শিক্ষার্থীদের মতামত আমাদের জানতে বেশ বেগ পেতে হয়। ডাকসু নির্বাচন হলে এই প্রক্রিয়াটি আমাদের জন্য আরো সহজ হবে।’
প্রক্টর এ-ও বলেন, ‘তবে এখানে বেশ কিছু সমস্যা আছে। ডাকসুর রিফরমেশনের প্রয়োজন আছে। গঠনতন্ত্র নিয়ে বেশ কিছু আপত্তি জানিয়েছে ছাত্রসংগঠনগুলো।
উল্লেখ্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ডাকসু নির্বাচনের দাবি বেশ পুরনো। প্রতিবছরই এই দাবি জানিয়ে আসছে ছাত্র সংগঠনগুলো। ১৯৯০ সালে এরশাদ সরকারের পতনে ডাকসু নেতারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখলেও দেশে সংসদীয় সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তনের পর শাসক দলগুলোর প্রভাবে এই নির্বাচন প্রায় তিন দশক বন্ধ ছিল।
তবে ২০১২ সালের ১১ই মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৫ শিক্ষার্থী ডাকসু নির্বাচনের দাবিতে উচ্চ আদালতে একটি রিট আবেদন করেন। ২০১৭ সালের ৪ঠা মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫০তম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে ডাকসু নির্বাচনের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে তদানীন্তন রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ বলেন, ডাকসু নির্বাচন অত্যাবশ্যক, 'তা না হলে ভবিষ্যৎ নেতৃত্বশূন্য হয়ে যাবে।’এরপর ছাত্রদের অনশন এবং আগে দায়ের করা রিটটি পুনরুজ্জীবিত হলে ২০১৮ সালের ১৭ই জানুয়ারি উচ্চ আদালত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে ডাকসু নির্বাচনের নির্দেশ দেয়। তবে ঢাবি কর্তৃপক্ষ তাতেও ব্যবস্থা না নেওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে উকিল নোটিস পাঠান রিটকারী আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। এর জবাব না পেয়ে ১২ সেপ্টেম্বর উপাচার্যসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে হাই কোর্টে আদালত অবমাননার অভিযোগ আনেন তিনি। এরপর উচ্চ আদালতের আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৮'র ১৬ই সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ছাত্র সংগঠনগুলোর সঙ্গে বৈঠক করে ঘোষণা দেয় যে ২০১৯ সালের মার্চের মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে ডাকসুর নির্বাচন।
ওই বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে তদানীন্তন ক্ষমতাসীন দলের ভ্রাতৃপ্রতীম ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের প্রার্থী ও সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনকে পরাজিত করে ভিপি (ভাইস প্রেসিডেন্ট বা সহসভাপতি) নির্বাচিত হন বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের সভাপতি ও ওই প্যানেলের প্রার্থী নুরুল হক নুর। ওই নির্বাচনের পর আবারও বন্ধ হয়ে যায় ডাকসু নির্বাচন। গত ৫ বছরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আর কোন ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নেতারা আবারও ডাকসু নির্বাচনের দাবি তুলেছেন। তবে এবার ইস্যু গঠণতন্ত্র সংশোধন।
ভারতের সঙ্গে প্রত্যার্পণ চুক্তি অনুযায়ী কিছু আইনি প্রক্রিয়ার পর শেখ হাসিনাকে ফেরত চাওয়া হবে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
রোববার সন্ধ্যায় ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি একথা বলেন।
শফিকুল আলমকে উদ্ধৃত করে বাসস জানায়,‘শেখ হাসিনার প্রত্যাবর্তনের বিষয়ে আমাদের সরকারের অবস্থান খুব স্পষ্ট। আমরা তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে আইনের সম্মুখীন করতে চাই। যে গণহত্যা হলো, জুলাই-আগস্টে যে ১৫০০ মানুষকে হত্যা করা হলো, এর নির্দেশদাতা তিনি।’
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব বলেন, ‘এর আগে যত গুম হয়েছে, তিনি ( শেখ হাসিনা) তো সরকার প্রধান ছিলেন। প্রতি বছর ১৬ বিলিয়ন ডলার করে পাচার হয়েছে, যা দেশের জনগণের টাকা। এটা চুরি করে বাইরে চলে গেছে। এসবের জন্য তাকে আইনের আওতায় আনা আমাদের প্রতিশ্রুতি।’
শফিকুল আলম আরও বলেন, ‘শেখ হাসিনাকে ভারত থেকে ফিরিয়ে আনতে, যেহেতু ভারতের সঙ্গে আমাদের একটা প্রত্যার্পণ চুক্তি আছে, সেই চুক্তি অনুযায়ী কিছু আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে প্রত্যার্পণের জন্য চাওয়া যায়।’
তিনি বলেন, ‘আমরা সেই প্রক্রিয়াগুলো সম্পন্ন করছি। এটা শেষ করে আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতের কাছে তার প্রত্যার্পণ চাইব।’
আরেক প্রশ্নের জবাবে প্রেস সচিব বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের বিষয়ে আমরা আশাবাদী। বাংলাদেশ ভারতের সঙ্গে ‘ন্যায় ও মর্যাদার’ সম্পর্ক চায়।’
ভারতের পররাষ্ট্র সচিবের সফর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমরা পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করব।’
এদিকে, রোববার সকালে ‘নতুন বাংলাদেশ : অর্জন, চ্যালেঞ্জ এবং উত্তরণ’ শীর্ষক এক আলোচনায় অংশ নেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব। সেখানে ভারতীয় মিডিয়াসহ যারা গুজব ছড়াচ্ছে সত্যতা যাচাইয়ে তাদের বাংলাদেশে আসার আমন্ত্রণ জানান তিনি।
প্রেসসচিব বলেন, বাংলাদেশ আফগানিস্তান হয়ে যাচ্ছে বলে অনেকেই প্রপাগান্ডা চালাচ্ছে। তাদের এ দেশের মানুষের সঙ্গে কথা বলে বিভ্রান্তি দূর করা উচিত।
গণ-অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা পূরণে অন্তর্বর্তী সরকার কাজ করছে জানিয়ে শফিকুল আলম বলেন, ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে সংস্কার কমিশন প্রসস্তাবনা জমা দেবে, যা নিয়ে রাজনৈতিক দলসহ সবার সঙ্গে আলোচনা করা হবে। সংস্কার শেষেই নির্বাচন হবে।
সরকার সঠিক মানুষের হাতে সঠিক দায়িত্ব তুলে দেওয়ার কাজ করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, অর্থনৈতিক অবস্থা, ব্যাংকিংব্যবস্থা এবং আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে।
বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ভারতের পাশাপাশি চীন ও রাশিয়া থেকেও গুজব ছড়ানো হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম।
উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে ইতোমধ্যে দুটি দেশের ভিসা পেয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। ভিসা পাওয়া দেশগুলো হলো সৌদি আরব ও যুক্তরাজ্য। এদিকে যেকোনো সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা হাতে পাবেন তিনি।
বিএনপি সূত্র বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা পাওয়ার পর সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে কয়েক দিনের মধ্যে তিনি চিকিৎসার উদ্দেশ্যে দেশের বাইরে যেতে পারেন।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া চিকিৎসার জন্য লন্ডন যাওয়ার আগে বা পরে ওমরাহ করার জন্য সৌদি আরব যেতে পারেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। এ জন্য তিনি সৌদি আরবের ভিসা নিয়েছেন। এর আগে তিনি লন্ডনের ভিসা নিয়েছেন।
সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা ও ছেলে তারেক রহমানসহ স্বজনদের সঙ্গে কিছুদিন সময় কাটানো ও বিশ্রাম শেষে তিনি লিভারের জটিল চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে যাবেন।
চিকিৎসার জন্য প্রথমে খালেদা জিয়াকে লন্ডনে নেওয়া হলেও সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসার পর যুক্তরাষ্ট্রের মাল্টিডিসিপ্লিনারি মেডিক্যাল সেন্টারে নেওয়া হবে। সেখানে তার লিভারের জটিল চিকিৎসা করানো হবে।
৭৯ বছর বয়সী সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া লিভার সিরোসিস, হৃদরোগ, ফুসফুস, আর্থ্রাইটিস, কিডনি, ডায়াবেটিস, চোখের সমস্যাসহ বিভিন্ন জটিল রোগে ভুগছেন।
রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে বিভিন্ন সময়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সমন্বয়ে মেডিক্যাল বোর্ডের পরামর্শে তাকে দীর্ঘদিন চিকিৎসা নিতে হয়েছে।