শুক্রবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৫
২৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

কেমন গেল অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ৩ মাস

৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড
৯ নভেম্বর, ২০২৪ ০০:০২
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত : ৯ নভেম্বর, ২০২৪ ০০:০২

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বয়স ৩ মাস পূর্ণ হয়েছে গতকাল শুক্রবার। দায়িত্ব নেওয়ার বহুমুখী চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে তিন মাস পার করেছে এ সরকার। এর মধ্যে কোনোটি দৃশ্যমান, আবার কোনোটি অদৃশ্য চ্যালেঞ্জ। প্রথমত দেশের মানুষের নজিরবিহীন সমর্থন এবং দ্বিতীয়ত উন্নয়ন সহযোগীসহ বহির্বিশ্বের সমর্থন ও স্বতঃস্ফূর্ত সহযোগিতার আশ্বাস।

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়। পরে ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হয়। কেমন গেল সরকারের এ তিন মাস। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্বগ্রহণের পর থেকে দেশের অর্থনীতি সচল ও বিভিন্ন সেক্টরের সংস্কারে মনোযোগ দিয়েছে এ সরকার। পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে গণহত্যার বিচারকাজ শুরু, সহিংসতায় অচল মেট্রোরেলের মিরপুর ১০ ও কাজীপাড়া স্টেশন চালু, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা ও আটটি জাতীয় দিবস বাদ দেওয়াসহ নানা কাজে ব্যস্ত ছিল অন্তর্বর্তী সরকার।

তবে প্রথম দিকে নানা চাপে ছিল ড. মুহাম্মদ ইউনূস নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। নতুন সরকারের কাছে একের পর এক দাবি-দাওয়া নিয়ে হাজির হতে থাকেন বিভিন্ন মহলের মানুষ। কেউ আসেন চাকরি জাতীয়করণের জন্য, কেউ গুম হওয়া ব্যক্তিদের সন্ধানে। এ ছাড়া ঘটেছিল শিক্ষকদের পদত্যাগ, সচিবালয়ে আনসারের অবরোধ কর্মসূচি। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের পদত্যাগ নিয়েও বেশকয়েক দিন আন্দোলন চলছিল। শেষমেশ সেটা রুখতেও সফল হয় সরকার। সবই সামাল দিতে হয়েছে এ সরকারকে।

এদিকে নির্বাচন ও সংস্কার নিয়ে টানাপড়েন এরই মধ্য শুরু হয়ে গেছে। প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে রাজনৈতিক দলের সর্বশেষ সংলাপে নির্বাচনই প্রাধান্য পেয়েছে। তারা এ সরকারের কাছে নির্বাচন ও সংস্কারের একটি রোডম্যাপ চেয়েছে। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার এখনো কোনো রোডম্যাপ দেয়নি। বিশ্লেষক ও রাজনৈতিক দলের নেতারা অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য দুটি কমন চ্যালেঞ্জের কথা বলেছেন তা হলো- দ্রব্যমূল্য এবং সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা। এর বাইরে সংস্কার, নির্বাচন ও রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জের কথাও বলেছেন তারা।

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে ভারতে চলে যেতে বাধ্য হন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর থেকে আত্মগোপনে চলে যান আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী-এমপিরা। অনেকে আবার গ্রেপ্তারও হয়েছেন। দলীয় নেতা ও আওয়ামী সরকারের ঘনিষ্ঠ ও উচ্চপর্যায়ের আমলারাও গা-ঢাকা দেন।

হাসিনা সরকারের নৃশংস দমন-পীড়নে প্রাণ হারান শিশু-কিশোর-শিক্ষার্থী-নারীসহ হাজারো মুক্তিকামী মানুষ। রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত বাংলাদেশে জনতার এ বিজয়কে দ্বিতীয় স্বাধীনতা হিসেবে উল্লেখ করেন আন্দোলনকারীরা। আওয়ামী সরকারের অবসানের পর মানুষের মধ্যে জেগে ওঠে রাষ্ট্র সংস্কার ও অর্থনীতি পুনর্গঠন করে একটি বৈষম্যহীন গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গঠনের ব্যাপারে বিপুল আশা ও উদ্দীপনা। দীর্ঘ স্বৈরশাসনে দেশের প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংসপ্রায়, আইনশৃঙ্খলা ও বিচারব্যবস্থা ভেঙে পড়ে, রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতায় লুণ্ঠনে অর্থনীতিও বিপর্যস্ত। সেই জায়গাগুলো সংস্কারের জোরদার করা হয়েছে। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে পুনর্গঠন করতে নেওয়া হচ্ছে উদ্যোগ। এরই মধ্যে রাষ্ট্রের বিভিন্ন খাতে সংস্কারের লক্ষ্যে ১০টি সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়েছে। তা হলো- সংবিধান সংস্কার কমিশন, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন, পুলিশ সংস্কার কমিশন, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশন, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন, স্বাস্থ্যবিষয়ক সংস্কার কমিশন, গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন, শ্রমিক অধিকারবিষয়ক সংস্কার কমিশন ও নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন। এছাড়া গুম সংক্রান্ত কমিশন অব ইনকোয়ারির কমিশন গঠন করা হয়েছে। প্রতিটি সংস্কার কমিশন এরই মধ্যে কাজ শুরু করে দিয়েছে।

জাতীয় ৮ দিবস বাদ

অন্তর্বর্তী সরকার আওয়ামী লীগের দলীয় দিবস বলে পরিচিত আটটি জাতীয় দিবস বাদ দিয়েছে। দিবসগুলো হলো- ঐতিহাসিক ৭ মার্চ, ১৭ মার্চ জাতির পিতার জন্ম দিবস ও জাতীয় শিশু দিবস, ৫ আগস্ট শহীদ ক্যাপ্টেন শেখ কামালের জন্মবার্ষিকী, ৮ আগস্ট বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের জন্মবার্ষিকী, ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস, ১৮ অক্টোবর শেখ রাসেল দিবস, ৪ নভেম্বর জাতীয় সংবিধান দিবস ও ১২ ডিসেম্বর স্মার্ট বাংলাদেশ দিবস।

দিবসগুলো বাতিলের পক্ষে যুক্তি দেখিয়ে তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেন, আওয়ামী লীগের দলীয় দিবসগুলো জাতীয় দিবস হিসেবে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। এগুলো জাতীয় দিবস হওয়ার মতো নয়।

ছাত্র আন্দোলনে গণহত্যার বিচারে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল

এদিকে জুলাই-আগস্ট গণহত্যা নিয়ে বিচারকাজ শুরু করে দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। গণহত্যার মামলায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। এ ছাড়া পৃথক অভিযোগে শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, সাবেক মন্ত্রী-ওবায়দুল কাদের, আসাদুজ্জামান খান কামাল, আনিসুল হক, ডা. দীপু মনি, আ ক ম মোজাম্মেল হকসহ ৪৫ জনের বিরুদ্ধেও একই আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অর্ধশতাধিক অভিযোগ জমা পড়ে। সেখানে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, ১৪ দলীয় জোটের শরিক দলের নেতা, পুলিশের তৎকালীন আইজিসহ বেশ কয়েকজন সদস্য, র‍্যাবের তৎকালীন ডিজি, আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ নেতাদের আসামি করা হয়।

যেসব বিষয়ে গুরুত্ব দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার

অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর থেকে বেশ কয়েকটি বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে- জুলাই ও আগস্টের হত্যাকাণ্ডের বিচারে জাতিসংঘের নেতৃত্বে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্ত পরিচালনা করার জন্য জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তরকে আমন্ত্রণ, শহীদ ও আহত ব্যক্তিদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরি, সে সঙ্গে আহত ব্যক্তিদের দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা এবং শহীদদের পরিবারের দেখাশোনার জন্য ‘জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন’ গঠন। এ ছাড়া ব্যাংকগুলোকে বড় বড় ঋণখেলাপি ও লুটেরা ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর দখল থেকে মুক্ত করে পরিচালনা পরিষদ পুনর্গঠন; দুর্নীতি ও অর্থ পাচারে অভিযুক্ত প্রভাবশালী দেড়শ ব্যক্তির তালিকা তৈরি ও ৭৯ জনের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু; ১৫ শতাংশ হারে আয়কর পরিশোধ করে অপ্রদর্শিত পরিসম্পদ অর্থাৎ কালো টাকা সাদা করার বিধান বাতিল; দায়মুক্তি আইন নামে পরিচিত বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন, ২০১০ (সংশোধিত ২০২১)-এর অধীন চলমান সব কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণা; গণশুনানি ছাড়া নির্বাহী আদেশে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি না করার সিদ্ধান্ত; রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে নেওয়া প্রকল্প কিংবা জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) যাওয়ার প্রক্রিয়াধীন আছে- এমন প্রকল্প পুনরায় যাচাই-বাছাই করার সিদ্ধান্ত।

এ ছাড়া বলপূর্বক গুম হওয়া থেকে সব ব্যক্তির সুরক্ষার জন্য আন্তর্জাতিক সনদে স্বাক্ষর ও বিগত সরকারের আমলে সংগঠিত গুমের ঘটনা তদন্ত করার জন্য একটি কমিশন গঠন করা হয়েছে। দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক অবস্থা তুলে ধরতে একটি শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি গঠন; আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন, ২০১০ (সংশোধিত ২০২১)-এর অধীন সম্পাদিত চুক্তিগুলো পর্যালোচনা জন্য একটি জাতীয় কমিটি গঠন; মৌলভীবাজারের কুলাউড়া সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে বাংলাদেশি কিশোরী স্বর্ণা দাশ নিহত হওয়ার ঘটনায় ভারতের কাছে তীব্র প্রতিবাদ জানানো ও দীর্ঘদিন ধরে অমীমাংসিত তিস্তা নদীর পানিবণ্টন চুক্তিসহ আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে আন্তঃসীমান্ত নদীর পানিবণ্টন বিষয়ে ভারতের সঙ্গে আলোচনার তাগিদ দেওয়া হয়েছে।

রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার সংলাপ

প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলীয় জোট ছাড়া অন্যান্য সব রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধিরা প্রতিনিয়ত বৈঠক করছেন। সেখানে বিএনপি, জামায়াত ইসলামীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতারা সাক্ষাৎ করেন। দলগুলোর প্রতিনিধিরা বৈঠকে রাজনীতিতে সংস্কার ও নির্বাচন নিয়ে তাদের বিভিন্ন প্রস্তাব তুলে ধরেন। দেশের সার্বিক পরিস্থিতি, সংস্কার এবং আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়েও আলোচনা চলছে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে। সম্পাদকমণ্ডলীর সঙ্গেও বৈঠক করেছেন প্রধান উপদেষ্টা। এছাড়া প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে গত ৪ সেপ্টেম্বর সচিব সভা হয়। ওই সভায় তিনি সিনিয়র সচিবদের উদ্দেশে গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দেন।


ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন ও গণভোট ১২ ফেব্রুয়ারি

* মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ সময় ২৯ ডিসেম্বর * বাছাই ৩০ ডিসেম্বর থেকে ৪ জানুয়ারি * আপিল ১১ জানুয়ারি, নিষ্পত্তি ১২-১৮ জানুয়ারি * প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ২০ জানুয়ারি * চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা ও প্রতীক বরাদ্দ ২১ জানুয়ারি * নির্বাচনের প্রচার শুরু হবে ২২ জানুয়ারি * শেষ হবে ১০ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে সাতটায়   
আপডেটেড ১১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ২৩:৪৩
নিজস্ব প্রতিবেদক 

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট গ্রহণ করা হবে আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি। জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে গণভোটও হবে একই দিন। ওই দিন সকাল সাড়ে সাতটা থেকে বিকেল সাড়ে চারটা পর্যন্ত টানা ভোট গ্রহণ চলবে।

বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীন। সন্ধ্যা ছয়টায় বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতার ও বিভিন্ন বেসরকারি টেলিভিশন সিইসির ভাষণ সম্প্রচার করে।

ভাষণের শুরুতে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা ও তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা এবং একইসঙ্গে জুলাই আগস্ট ২০২৪ এর ছাত্র-জনতা গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা এবং তাদের আত্মার শান্তি কামনা করেন সিইসি। তিনি বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে ২০২৪ এর ছাত্র গণঅভ্যুত্থানা পর্যন্ত সার্বভৌমত্ব এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও রক্ষার সব আন্দোলনে যারা আহত, নির্যাতিত ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাদের প্রতি জানাই আমার আন্তরিক সমবেদনা। আহতদের দ্রুত আরোগ্য এবং স্বাভাবিক জীবনের জন্য প্রার্থনা করছি।
তিনি আরও বলেন, জাতি হিসেবে আমাদের অমূল্য শক্তি হচ্ছে স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব এবং গণতন্ত্রের জন্য আমাদের ভালোবাসা ও আত্মত্যাগ। জাতির প্রত্যাশাকে ধারণ করে আমাদের সংবিধান রাষ্ট্রের ওপর জনগণের একচ্ছত্র মালিকানা নিশ্চিত করেছে। জনগণের প্রতিনিধিত্বশীল মালিকানা প্রতিষ্ঠার একমাত্র পথ হচ্ছে নির্বাচন। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, মানসম্মত নির্বাচনের অনুপস্থিতি প্রায়শই আমাদের ঐতিহ্য এবং সামষ্টির প্রত্যাশাকে নিরাশ করেছে। এমনিই এক প্রেক্ষাপটে ২০২৪ এর গণঅভ্যুত্থান সংঘটিত হয়েছে। আমাদের ভাইবোন সন্তানদের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে আমাদের অঙ্গীকার হচ্ছে একটি সুষ্ঠু ও সুন্দর নির্বাচন অনুষ্ঠান যা জাতি হিসেবে আমাদের প্রত্যাশা পূরণ করবে এবং বিশ্বদরবারে আমাদের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করবে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস আপনারা একই প্রত্যাশা ধারণ করেন এবং একই অঙ্গীকারে অঙ্গীকারাবদ্ধ।

ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ সময় ২৯ ডিসেম্বর। মনোনয়নপত্র বাছাই ৩০ ডিসেম্বর থেকে ৪ জানুয়ারি। রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল দায়ের ১১ জানুয়ারি এবং আপিল নিষ্পত্তি হবে ১২ থেকে ১৮ জানুয়ারি। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ২০ জানুয়ারি। চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ ও প্রতীক বরাদ্দ করা হবে ২১ জানুয়ারি। নির্বাচনী প্রচার শুরু হবে ২২ জানুয়ারি, প্রচার শেষ হবে ১০ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে সাতটায়। ১২ ফেব্রুয়ারি সারাদেশে ৩০০ সংসদীয় আসনে ভোট গ্রহণ করা হবে।

এবারের নির্বাচনে মোট ভোটার ১২ কোটি ৭৬ লাখের বেশি। প্রবাসী বাংলাদেশি ভোটাররাও পোস্টাল ব্যালটে ভোট দেওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। এখন পর্যন্ত তিন লাখের বেশি প্রবাসী ভোটার ভোট দেওয়ার জন্য নিবন্ধন করেছেন।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। ৮ আগস্ট অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার শপথ নেয়। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার ১৬ মাসের মাথায় জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করল ইসি।

শুরুতে গত বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন দেওয়ার দাবি জানিয়েছিল বিএনপিসহ কিছু দল। গত ৬ জুন জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছিলেন, ২০২৬ সালের এপ্রিলের প্রথমার্ধে নির্বাচন হবে। এরপর ১৩ জুন যুক্তরাজ্যের লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ওই বৈঠকে ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে জাতীয় নির্বাচনের বিষয়ে দুজন একমত হন।

এর পর থেকে সরকার বারবার বলে আসছে, ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধেই জাতীয় নির্বাচন হবে। ইসিও সে লক্ষ্যে প্রস্তুতি এগিয়ে নেয়। এর মধ্যে গত ১৩ নভেম্বর প্রধান উপদেষ্টা ঘোষণা দেন, জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে গণভোট ও জাতীয় সংসদ নির্বাচন ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে একই দিনে অনুষ্ঠিত হবে। আজ জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে এ দুটি ভোটের দিনক্ষণ ঘোষণা করলেন সিইসি।

ইসিতে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোই কেবল দলীয় প্রতীকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে পারে। এখন ইসিতে নিবন্ধিত দল আছে ৫৬টি। এর মধ্যে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ থাকায় আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত আছে। নিবন্ধন স্থগিত থাকা দল নির্বাচনে অংশ নিতে পারে না। নিবন্ধিত অন্য দলগুলো এই নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ পাবে। এর বাইরে প্রার্থী হওয়ার যোগ্য যেকোনো ব্যক্তি স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে পারেন।

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত বছরের ২১ নভেম্বর এ এম এম নাসির উদ্দীনের নেতৃত্বে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়। আগামী নির্বাচনই হবে এই কমিশনের অধীনে প্রথম কোনো নির্বাচন। এবার জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট একই দিনে হচ্ছে। দুটি ভোটের সময় ব্যবস্থাপনাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছে ইসি।

সময় ব্যবস্থাপনার জন্য এবার ভোট গ্রহণের সময় এক ঘণ্টা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি। সকাল সাড়ে সাতটা থেকে বিকেল সাড়ে চারটা পর্যন্ত টানা ভোট গ্রহণ চলবে। এ ছাড়া ভোটকেন্দ্রে গোপন কক্ষের সংখ্যাও বাড়ানো হবে।

অন্যদিকে নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখাকেও চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা হচ্ছে। ইতোমধ্যে সরকার জানিয়েছে, তফসিল ঘোষণার পর সশস্ত্র বাহিনীসহ দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত সব বাহিনী নির্বাচনী পরিবেশ যাতে নিশ্চিত হয়, সে লক্ষ্যে কাজ করবে। দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সশস্ত্র বাহিনীসহ অন্যান্য বাহিনীর প্রায় ৯ লাখ সদস্য নিয়োজিত থাকবেন, যা এযাবৎকালের মধ্যে সর্বোচ্চ। সুষ্ঠু নির্বাচন পরিচালনার জন্য ইতোমধ্যে রেকর্ডসংখ্যক দেড় লাখ পুলিশ সদস্যকে নির্বাচনী প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।


বাংলাদেশ আজ নতুন ভবিষ্যতের দ্বারপ্রান্তে

আপডেটেড ১১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ২৩:৪৯
নিজস্ব প্রতিবেদক

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫ বাস্তবায়ন আদেশের ওপর গণভোটের তফসিল ঘোষণা করায় নির্বাচন কমিশনকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, তফসিল ঘোষণার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক অতিক্রম করল। ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানের পর দেশ এখন যে নতুন পথে অগ্রসর হচ্ছে—এই নির্বাচন ও গণভোট সেই পথরেখাকে দৃঢ় করবে, গণমানুষের মতকে প্রাধান্য দেবে এবং নতুন বাংলাদেশের ভিত্তি আরও সুসংহত করবে।’

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশ আজ নতুন ভবিষ্যতের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে। আপনাদের সবার সক্রিয় অংশগ্রহণ ও দায়িত্বশীল আচরণের মধ্য দিয়ে আমরা একটি আধুনিক, ন্যায়ভিত্তিক ও সমৃদ্ধ রাষ্ট্র নির্মাণে সফল হব—এই আমার দৃঢ় বিশ্বাস।

বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন তফসিল ঘোষণার পর প্রধান উপদেষ্টা এই শুভেচ্ছা জানান বলে প্রেস উইং থেকে জানানো হয়েছে।

এক শুভেচ্ছা বার্তায় প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এই তফসিল ঘোষণার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক অতিক্রম করল। ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানের পর দেশ এখন যে নতুন পথে অগ্রসর হচ্ছে—এই নির্বাচন ও গণভোট সেই পথরেখাকে দৃঢ় করবে, গণমানুষের মতকে প্রাধান্য দেবে এবং নতুন বাংলাদেশের ভিত্তি আরও সুসংহত করবে।’

তিনি বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, নির্বাচন কমিশন তাদের সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন করবে স্বাধীনভাবে, নিরপেক্ষভাবে এবং সর্বোচ্চ পেশাদারিত্বের সঙ্গে। নির্বাচন ও গণভোটকে উৎসবমুখর, অংশগ্রহণমূলক ও সম্পূর্ণ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচন কমিশনকে সব ধরনের প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করবে।’

দেশের রাজনৈতিক সব দল, প্রার্থী, গণমাধ্যম, সুশীল সমাজ এবং সর্বোপরি দেশের জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এই নির্বাচন ও গণভোটকে একটি জাতীয় ঐক্যের উদ্যোগ হিসেবে গ্রহণ করুন। ভিন্নমতের প্রতি শ্রদ্ধা, শান্তিপূর্ণ পরিবেশ এবং গণতান্ত্রিক আচরণ আমাদের সামনের দিনগুলোকে আরও স্থিতিশীল করবে।


ইবিআর সদস্যদের সক্ষমতা বৃদ্ধির আহ্বান সেনাপ্রধানের

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

নিষ্ঠা, একাগ্রতা এবং পেশাদারিত্বের সঙ্গে আধুনিক ও যুগোপযোগী প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সক্ষমতা অর্জন করে একবিংশ শতাব্দীর কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকার জন্য ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সব সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান।

বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) চট্টগ্রাম সেনানিবাসে দি ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টাল সেন্টারে (ইবিআরসি) ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের (ইবিআর) ৩৮তম বাৎসরিক অধিনায়ক সম্মেলন-২০২৫ এ প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ আহ্বান জানান।

এ ছাড়াও, ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে সেনাবাহিনী প্রধান এ রেজিমেন্টের প্রযুক্তিগত উন্নয়ন, গবেষণা, পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধি ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোকপাত করেন।

বাৎসরিক অধিনায়ক সম্মেলনের শুরুতেই সেনাবাহিনী প্রধান ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসের কথা স্মরণ করে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সব বীর শহীদদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন।

সেনাবাহিনী প্রধান ইবিআরসিতে পৌঁছালে আর্মি ট্রেনিং অ্যান্ড ডকট্রিন কমান্ডের জিওসি, ২৪ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি ও চট্টগ্রাম এরিয়ার এরিয়া কমান্ডার এবং দি ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টাল সেন্টারের কমান্ড্যান্ট তাকে অভ্যর্থনা জানান।

অনুষ্ঠানে আর্মি ট্রেনিং অ্যান্ড ডকট্রিন কমান্ডের জিওসি, জিওসি, ২৪ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি ও চট্টগ্রাম এরিয়ার এরিয়া কমান্ডার, কমান্ড্যান্ট ও পাপা টাইগার, ইবিআরসি; মিলিটারি সেক্রেটারি; অ্যাডজুটেন্ট জেনারেল; কমান্ড্যান্ট, বিআইআরসি; চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ চা বোর্ড; সেনাসদর ও চট্টগ্রাম এরিয়ার ঊর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তা, সব পদাতিক ব্রিগেডের ব্রিগেড কমান্ডার ও ইউনিটসমূহের অধিনায়ক এবং গণমাধ্যমের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।


বাংলাদেশ-নেদারল্যান্ডস নৌ-প্রতিরক্ষা সহযোগিতায় নতুন এমওইউ স্বাক্ষর

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের (এএফডি) সার্বিক তত্ত্বাবধানে ঢাকা সেনানিবাসে বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ, বাংলাদেশ সরকার এবং কিংডম অব নেদারল্যান্ডস-এর মধ্যে নৌ-প্রতিরক্ষা সামগ্রির সহযোগিতা বিষয়ক সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষরিত হয়েছে।

বাংলাদেশের পক্ষে স্মারকটি স্বাক্ষর করেন সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার লেফটেন্যান্ট জেনারেল এস এম কামরুল হাসান এবং নেদারল্যান্ডসের পক্ষে স্বাক্ষর করেন ঢাকায় নিযুক্ত দেশটির রাষ্ট্রদূত জোরিস ভ্যান বোমেল।

স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন নেদারল্যান্ডস প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের নন-রেসিডেন্ট ডিফেন্স অ্যাটাচে ক্যাপ্টেন (আরএনএলএন) জি. (জর্ডি) ক্লেইন, নেদারল্যান্ডস দূতাবাসের অর্থ-বাণিজ্য ও বেসরকারি খাত উন্নয়ন বিষয়ক সিনিয়র উপদেষ্টা, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের মহাপরিচালকগণ, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বাংলাদেশ-এর পশ্চিম ইউরোপ ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন শাখার মহাপরিচালক এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বাংলাদেশ-এর নৌ-উপদেষ্টা।

ভ্রাতৃত্ব ও পারস্পরিক শ্রদ্ধার চেতনায় প্রতিরক্ষা সম্পর্ক বৃদ্ধির জন্য স্বাক্ষরিত এ সমঝোতা স্মারকটি নৌ-প্রতিরক্ষা সামগ্রি সম্পর্কিত সহযোগিতার একটি যুগান্তকারী কাঠামো স্থাপন করেছে, যা নৌ-প্রতিরক্ষা শিল্পে পারস্পরিক সহযোগিতা, তথ্য ও অভিজ্ঞতা বিনিময়, শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ বিনিময়, প্রযুক্তি হস্তান্তর, শিল্প সুরক্ষা নীতি অনুযায়ী তথ্য বিনিময় এবং প্রয়োজন অনুযায়ী লজিস্টিক সহায়তা প্রদানের সুযোগ আরও বিস্তৃত করবে।

এই ঐতিহাসিক স্মারকটি স্বাক্ষরের ফলে দুই দেশের মধ্যে সামরিক বিশেষজ্ঞ বিনিময় বাড়বে, যা নৌ-প্রতিরক্ষা সক্ষমতা বৃদ্ধি ও ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।

এ ছাড়াও বাংলাদেশের নৌ-প্রতিরক্ষা আধুনিকায়ন এবং নেদারল্যান্ডসের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি কৌশলগত সহযোগিতা আরো জোরদার করবে, এজন্য দ্বিপক্ষীয় প্রতিরক্ষা সম্পর্কের ধারাবাহিক অগ্রগতিতে এ স্মারকটি একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।


জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট ১২ ফেব্রুয়ারি

আপডেটেড ১১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১৮:২৩
নিজস্ব প্রতিবেদক

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি একইদিন দেশে সংসদ নির্বাচন ও গণভোট অনুষ্ঠিত হবে।

বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীন জাতির উদ্দেশে ভাষণে এই তফসিল ঘোষণা করেন।


থামছেই না রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ: এক মাসেই নতুন করে এলো আরও ২,৭৩৮ জন

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশে রোহিঙ্গা সংকট যেন কোনোভাবেই কাটছে না; বরং দিন দিন তা আরও প্রকট হচ্ছে। জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর-এর সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গত এক মাসেই দেশে নতুন করে আরও ২ হাজার ৭৩৮ জন রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করেছে। বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) প্রকাশিত সংস্থাটির মাসিক প্রতিবেদনে এই উদ্বেগজনক চিত্র উঠে এসেছে।

প্রতিবেদনে জানানো হয়, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে চলমান সহিংসতার জেরে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের আসার স্রোত অব্যাহত রয়েছে। গত এক বছরে (ডিসেম্বর ২০২৪ থেকে নভেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত) নতুন করে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৩৯ হাজার ৩৭৮ জনে। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত কয়েক মাসে এই সংখ্যা ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। গত সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ১ লাখ ৩৩ হাজার ৬৫১ এবং ১ লাখ ৩৬ হাজার ৬৪০ জন। বর্তমানে কক্সবাজার ও ভাসানচরের বিভিন্ন ক্যাম্পে সব মিলিয়ে ১১ লাখ ৭৩ হাজার ১৭১ জন রোহিঙ্গাকে চিহ্নিত করা সম্ভব হয়েছে।

ইউএনএইচসিআর জানায়, ২০১৭ সালের আগস্ট থেকে শুরু হওয়া মানবিক বিপর্যয়ের পর থেকে এখন পর্যন্ত মোট ৯ লাখ ৯৪ হাজার ৯৩৭ জন রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। ২০২৪ সাল থেকে রাখাইনে সহিংসতা তীব্র আকার ধারণ করায় নতুন করে এই ঢল নামে। ক্যাম্পগুলোতে সদ্য আগতদের বায়োমেট্রিক নিবন্ধনের কাজ বর্তমানে চলমান রয়েছে।

সংস্থাটির তথ্যানুযায়ী, নতুন করে আশ্রয় নেওয়া এই জনগোষ্ঠীর বড় অংশই নারী ও শিশু, যা মোট সংখ্যার ৭৮ শতাংশ। এদের মধ্যে ১২ শতাংশ অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছেন—যাদের মধ্যে প্রতিবন্ধী, গুরুতর অসুস্থ রোগী, একক অভিভাবক, সঙ্গীহীন অপ্রাপ্তবয়স্ক এবং বয়স্ক ব্যক্তিরা অন্তর্ভুক্ত। বর্তমানে বাংলাদেশে অবস্থানরত সামগ্রিক রোহিঙ্গা জনসংখ্যার ৫২ শতাংশ নারী এবং ৪৮ শতাংশ পুরুষ।


পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধির আহ্বান সেনাপ্রধানের

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

সেনাবাহিনীর পুষ্টি ও খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে রিমাউন্ট ভেটেরিনারি অ্যান্ড ফার্ম (আরভিঅ্যান্ডএফ) কোরের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মন্তব্য করেছেন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। তিনি প্রযুক্তির উন্নয়ন, গবেষণা ও পেশাগত দক্ষতা বাড়ানোর মাধ্যমে একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কোরের সদস্যদের সর্বদা প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানান।

সাভারের আরভিঅ্যান্ডএফ ডিপোতে অনুষ্ঠিত কোরের ‘বার্ষিক অধিনায়ক সম্মেলন-২০২৫’-এ প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। আন্তবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানায়, সেনাপ্রধান তার বক্তব্যের শুরুতে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে আত্মত্যাগকারী বীর শহীদদের শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন। তিনি আরভিঅ্যান্ডএফ কোরের গৌরবময় ঐতিহ্য ও দেশসেবায় তাদের অবদানের প্রশংসা করেন এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় আরও অগ্রসর হওয়ার নির্দেশনা দেন।

এর আগে সেনাপ্রধান সাভারের ডিপোতে পৌঁছালে তাকে অভ্যর্থনা জানান আরভিঅ্যান্ডএফ কোরের নবনিযুক্ত কর্নেল কমান্ড্যান্ট এবং ৯ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি ও সাভারের এরিয়া কমান্ডার। সম্মেলনে আর্মি ট্রেনিং অ্যান্ড ডকট্রিন কমান্ডের জিওসি, সেনাবাহিনীর অ্যাডজুটেন্ট জেনারেলসহ সেনাসদর ও সাভার এরিয়ার ঊর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তা, জুনিয়র কমিশন্ড অফিসার ও অন্য পদবির সেনাসদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, গত ৯ ডিসেম্বর আরভিঅ্যান্ডএফ কোরের তৃতীয় কর্নেল কমান্ড্যান্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন মেজর জেনারেল এস এম আসাদুল হক। সাভার আরভিঅ্যান্ডএফ ডিপোর প্যারেড গ্রাউন্ডে সামরিক রীতি ও ঐতিহ্য মেনে তাকে এই মর্যাদাপূর্ণ পদের ব্যাজ পরিয়ে দেওয়া হয়।


আজ সন্ধ্যায় তফসিল ঘোষণা, থামছে নতুন প্রকল্প অনুমোদন ও বদলি কার্যক্রম

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টায় ঘোষণা করা হচ্ছে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের তফসিল। তফসিল ঘোষণার পরপরই বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের ওপর বেশ কিছু বিধিনিষেধ কার্যকর হবে। এর মধ্যে অন্যতম হলো—উপদেষ্টা পরিষদ এখন থেকে আর নতুন কোনো প্রকল্প অনুমোদন দিতে পারবে না।

তফসিল ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে নির্বাচনী আচরণবিধি ও প্রশাসনিক কার্যক্রমেও ব্যাপক পরিবর্তন আসবে। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) এর ৪৪ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, আজ তফসিল জারি হওয়ার পর থেকে নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পরবর্তী ১৫ দিন পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনের অনুমতি ছাড়া প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তাদের বদলি করা যাবে না। এই কর্মকর্তাদের তালিকায় রয়েছেন বিভাগীয় কমিশনার, মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার, জেলা প্রশাসক (ডিসি), পুলিশ সুপার (এসপি) এবং তাদের অধীনস্থ কর্মকর্তারা। এছাড়া সংবিধানের ১২৬ অনুচ্ছেদ ও আরপিওর ৫ অনুচ্ছেদ অনুসারে, তফসিল ঘোষণার পর থেকে নির্বাচন কমিশনকে সহায়তা করা নির্বাহী বিভাগের বাধ্যতামূলক কর্তব্যের মধ্যে পড়ে।

সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ নিশ্চিত করতে আচরণবিধি প্রতিপালনের ওপর জোর দিয়েছে কমিশন। তফসিল ঘোষণার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রাজনৈতিক দল ও সম্ভাব্য প্রার্থীদের সব ধরনের প্রচারসামগ্রী, যেমন—পোস্টার ও ব্যানার সরিয়ে ফেলতে হবে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তা না সরানো হলে আচরণবিধি ভঙ্গের দায়ে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আচরণবিধি তদারকির জন্য আগামীকাল থেকেই প্রতিটি উপজেলা ও থানায় দুজন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করবেন। নির্বাচনের আগের তিন দিন, নির্বাচনের দিন এবং পরের দিন—অর্থাৎ শেষ পাঁচ দিন ম্যাজিস্ট্রেটের সংখ্যা আরও বাড়ানো হবে।

পাশাপাশি নির্বাচনী এলাকায় প্রভাব বিস্তার রোধে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী (সোশ্যাল সেফটি নেটওয়ার্ক) কার্যক্রম ছাড়া সব ধরনের অনুদান ও ত্রাণ বিতরণের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। গত ৭ ডিসেম্বর নির্বাচন কমিশনের এক সভা শেষে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ এসব সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছিলেন।


‘খালেদা জিয়া চিকিৎসায় সম্পূর্ন সাড়া দিচ্ছেন’

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০

রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালের করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) চিকিৎসাধীন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে সর্বোচ্চ চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে। সংকটাপন্ন অবস্থায় তাঁকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হলেও তিনি চিকিৎসায় সাড়া দিচ্ছেন। বুধবার রাতে হাসপাতাল গেটে এক ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন। তিনি খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য নিয়ে কোনো প্রকার গুজবে কান না দেওয়ার জন্য সবার প্রতি অনুরোধ জানান।

ডা. জাহিদ হোসেন জানান, গত শুক্রবার খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেওয়ার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু সে সময় এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের কারিগরি ত্রুটি এবং তাঁর শারীরিক অবস্থা ভ্রমণের অনুকূলে না থাকায় তা সম্ভব হয়নি। বর্তমানে দেশি-বিদেশি চিকিৎসকদের সমন্বয়ে গঠিত মেডিকেল বোর্ডের পরামর্শে তাঁকে দেশেই সর্বোত্তম সেবা দেওয়া হচ্ছে। চিকিৎসকরা আশা প্রকাশ করেছেন যে, তাঁর শারীরিক অবস্থার উন্নতি হলে পরবর্তীতে তাঁকে বিদেশে নেওয়া হতে পারে।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সার্বক্ষণিক তত্ত্বাবধানে মেডিকেল বোর্ড খালেদা জিয়ার চিকিৎসা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বিশেষ করে ডা. জোবাইদা রহমান লন্ডন থেকে গত ৫ ডিসেম্বর দেশে ফিরে সার্বক্ষণিকভাবে চিকিৎসার তদারকি করছেন। অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বাধীন এই বোর্ডে যুক্ত রয়েছেন দেশের বাইরের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরাও।

উল্লেখ্য, ৮০ বছর বয়সী সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে লিভার সিরোসিস, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস ও কিডনি জটিলতায় ভুগছেন। গত ২৩ নভেম্বর তিনি এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন এবং ২৭ নভেম্বর ফুসফুসে সংক্রমণ দেখা দিলে তাঁর অবস্থার অবনতি ঘটে। এরপর থেকেই তাঁকে বিশেষ ব্যবস্থায় নিবিড় চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

এদিকে, বুধবার বিকেলে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার খোঁজ নিতে হাসপাতালে যান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম। তিনি সেখানে এক ঘণ্টারও বেশি সময় অবস্থান করেন এবং চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে চিকিৎসার খুঁটিনাটি ও পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে খোঁজখবর নেন।


বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র প্রতিরক্ষা সংলাপ শুরু

দ্বিপক্ষীয় সামরিক সহযোগিতা বৃদ্ধির আশা
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সামরিক সহযোগিতা জোরদারে ১২তম বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র প্রতিরক্ষা সংলাপ বুধবার (১০ ডিসেম্বর) শুরু হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার পর্যন্ত এই সংলাপ রাজধানী ঢাকার বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী বিভাগে চলবে।

২০১২ সাল থেকে দুই দেশের মধ্যে এই প্রতিরক্ষা সংলাপ হয়ে আসছে। এর ধারাবাহিকতায় চলমান বৈঠকে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক প্রতিনিধিদল অংশ নিচ্ছে।

বুধবার (১০ ডিসেম্বর) আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এই তথ্য জানানো হয়।

আইএসপিআর জানিয়েছে, ওই প্রতিরক্ষা সংলাপ দুই দেশের পারস্পরিক সামরিক সহযোগিতার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ ছাড়াও এই সংলাপে উভয় দেশের সামরিক সহযোগিতার বিভিন্ন বিষয় আলোচিত হবে। উল্লিখিত সংলাপ বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক নিরাপত্তা, প্রযুক্তি, প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম, দুর্যোগ মোকাবিলা, শান্তি রক্ষা কার্যক্রম, প্রশিক্ষণ, পরিদর্শন, যৌথ অনুশীলন ও মহড়া, কর্মশালা ইত্যাদি ক্ষেত্রে দ্বিপক্ষীয় সামরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করবে।

এই প্রতিরক্ষা সংলাপে বাংলাদেশের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ, অপারেশনস ও পরিকল্পনা পরিদপ্তরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহাম্মদ আলী হায়দার সিদ্দিকী। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সারাহ রুস। এ ছাড়া সংলাপে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের পাশাপাশি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ, বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডসহ বিভিন্ন সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অংশ নিচ্ছেন।

দুই দিনের এই প্রতিরক্ষা সংলাপের মাধ্যমে দুই দেশের সামরিক সম্পর্ক আরও উন্নত হবে এবং পারস্পরিক আস্থা ও বন্ধুত্ব আরও গভীর হবে বলে আশা করা হচ্ছে।


শ্রমিক পাঠিয়ে সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা লুট

* অর্থ আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগ * ৬০ রিক্রুটিং এজেন্সির ১২৪ জনের বিরুদ্ধে মামলার সিদ্ধান্ত দুদকের
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

মালয়েশিয়ার শ্রম বাজারে জনশক্তি রপ্তানির ক্ষেত্রে সরকার নির্ধারিত অর্থের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি অর্থ আদায়ের মাধ্যমে সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগে ৬০ রিক্রুটিং এজেন্সির মালিক ও কর্মকর্তাসহ ১২৪ জনের বিরুদ্ধে পৃথক ৬০ মামলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

বুধবার (১০ ডিসেম্বর) রাজধানীর সেগুন বাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে মামলার সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সংস্থাটির মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন।

মামলায় ৬০ রিক্রুটিং এজেন্সির ১২৪ মালিকদের বিরুদ্ধে ২ লাখ ৬৭ হাজার ২৭৬ জনের কাছ থেকে ৪ হাজার ৫৪৫ কোটি ২০ লাখ ৮২ হাজার ৫০০ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে।

অনুসন্ধান প্রতিবেদন সূত্রে জানা, মালয়েশিয়া রিক্রুটমেন্ট প্রক্রিয়ায় ব্যাপক অনিয়ম, অতিরিক্ত অর্থ আদায় এবং অর্থপাচারের অভিযোগে ৬০টি ওভারসিজ কোম্পানির সত্ত্বাধিকারী, চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, পরিচালক ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলার সিদ্ধান্ত হয়েছে। অভিযোগে বায়রার বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালনকালে তারা সংঘবদ্ধ সিন্ডিকেট গড়ে চুক্তিভঙ্গ এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে শ্রমিকদের কাছ থেকে সরকারের নির্ধারিত ফি’র কয়েকগুণ অতিরিক্ত অর্থ আদায় করেছেন। সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী একজন কর্মীর মালয়েশিয়া যাওয়ার ব্যয় ছিল ৭৮ হাজার ৯৯০ টাকা। কিন্তু অভিযোগ অনুযায়ী অভিযুক্ত ব্যক্তিরা রাজনৈতিক প্রভাব ও বায়রার অভ্যন্তরীণ ক্ষমতাচক্র ব্যবহার করে এই খরচকে বহুগুণ বাড়িয়ে দেন। শ্রমিক বাছাই, অর্থসংক্রান্ত প্রক্রিয়া ও চুক্তিভিত্তিক শর্তাবলি উপেক্ষা করা হয়েছে। মামলাগুলোতে আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ১২০(বি), ১৬১, ১৬২, ১৬৩, ১৬৪, ১৬৫(ক), ৪২০ ও ৪০৯ ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।

এর আগে ৪০টি ওভারসিজ কোম্পানির সত্ত্বাধিকারী, চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, পরিচালকসহ ১০৮ জনের বিরুদ্ধে ৩ হাজার ৪৩৮ কোটি ৯৪ লাখ ২৫ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ৪০টি পৃথক মামলা দায়ের করা হয়েছে। যা বর্তমানে তদন্তাধীন রয়েছে বলে জানা গেছে। সব মিলিয়ে ওই ঘটনায় ১০০টি পৃথক মামলা দায়ের হয়েছে যার মধ্যে আসামি ২৩২ জন। আর আত্মসাৎ করা অর্থের পরিমাণ ৭ হাজার ৯৮৪ কোটি ১৫ লাখ ৭ হাজার ৫০০ টাকা।


আর কোনো নাগরিককে রাষ্ট্রের ভয়ে বাঁচতে হবে না : তারেক রহমান  

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, বিএনপি প্রতিশোধের রাজনীতি প্রত্যাখ্যান করছে, আমরা সমাধানের পথে বিশ্বাসী। আমরা এই প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, কোনো বাংলাদেশিকে রাষ্ট্রের ভয়ে বাঁচতে হবে না, তা সে সরকারের সমর্থক হোক বা বিরোধী। মানবাধিকার দিবস আমাদের মনে করিয়ে দেয়, মানবাধিকারই মানুষের দৈনন্দিন বেঁচে থাকার মৌলিক শর্ত। বুধবার (১০ ডিসেম্বর) আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসে তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে তারেক রহমান এ কথা বলেন।

তারেক রহমান উল্লেখ করেন, আজ বাংলাদেশের প্রয়োজন রাজনীতির চেয়েও বড় কিছু- একটি ঐক্যবদ্ধ দেশ, যেখানে সবার জন্য মানবাধিকারের নিশ্চয়তা থাকবে, যেখানে কথা বলার স্বাধীনতা থাকবে, বিরোধী মত যেখানে হুমকি না হয়ে বরং গণতন্ত্রের অংশ হবে। যেখানে ভিন্ন মতের কারণে কাউকে নিপীড়িত হতে হবে না বা গুম হয়ে যেতে হবে না।

স্ট্যাটাসে তিনি লেখেন, আমরা আবরার ফাহাদ, মুশতাক আহমেদ, ইলিয়াস আলী, সাজেদুল ইসলাম সুমন, সাগর-রুনি আর অসংখ্য শহীদের গল্প মনে রাখি। যেন ভবিষ্যতে এমন নিপীড়ন আর দায়মুক্তি আর কখনও ফিরে না আসে।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, বিএনপি মারাত্মক ক্ষতি সহ্য করেছে, কিন্তু ভেঙে যায়নি। বরং সত্য, ন্যায়, জবাবদিহি, পুনর্মিলন আর আইনের শাসনে বিশ্বাস রেখে আরও দৃঢ় হয়েছে। আমরা এমন একটি বাংলাদেশ গড়তে চাই, যেখানে প্রতিটি মানুষের কণ্ঠ, অধিকার ও জীবন মূল্যবান; যেখানে মানবাধিকার আমাদের ভবিষ্যতের ভিত্তি।

তারেক রহমান শুরু করেন, ‘১৬টা বছর ধরে বাংলাদেশ যেন একটা কালো মেঘের নিচে চাপা পড়ে ছিল। কেউ সেই অন্ধকারকে খুব তীব্রভাবে টের পেয়েছে, কেউ চুপচাপ বয়ে বেড়িয়েছে। কিন্তু যাদের রাজনৈতিক অবস্থান তখনকার পতিত সরকারের বিপরীতে ছিল, তাদের জন্য এই অন্ধকার ছিল নিত্যদিনের বাস্তবতা। রাতের বেলা দরজায় কড়া নাড়া, মিথ্যা মামলা, নির্যাতন, ভয়কে সংস্কৃতি বানিয়ে ফেলা, আর অসংখ্য পরিবার অপেক্ষা করেছে সেই প্রিয়জনদের জন্য, যারা আর কোনোদিন ঘরে ফিরে আসেনি। এই বোঝা বিএনপির চেয়ে বেশি আর কেউ বহন করেনি। বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম, হেফাজতে মৃত্যু, মিথ্যা মামলা সব জায়গায় বিএনপির নেতাকর্মীরাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানেও সবচেয়ে বেশি রক্ত ঝরেছে বিএনপির ঘরেই।

কিন্তু অত্যাচারের শিকার শুধু বিএনপি ছিল না; ছাত্র, সাংবাদিক, লেখক, পথচারী, সাধারণ মানুষ– সবাই সেই ভয়ঙ্কর পরিবেশের ক্ষত বয়ে বেড়িয়েছে, ন্যূনতম মানবাধিকার হিসেবে বিবেচিত মর্যাদা, নিরাপত্তা, মত প্রকাশের অধিকারের মতো মৌলিক সব বিষয়গুলো ছিল হুমকির মুখে।

তিনি উল্লেখ করেন, এই বছরগুলোতে আমাকেও কথা বলার মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছিল। ২০১৫ সাল থেকে আমার কথা বলার অধিকার সম্পূর্ণভাবে কেড়ে নেওয়া হয়। দেশের কোনও পত্রিকা, টিভি বা সোশ্যাল মিডিয়া যেন আমার কোনও বক্তব্য প্রকাশ না করা হয়, এমন নির্দেশনা জারি ছিল। তবুও এই চাপিয়ে দেওয়া নীরবতার মধ্যেও আমি অধিকার, গণতন্ত্র আর মানুষের ন্যায্য দাবির পক্ষে লড়াই চালিয়ে গেছি, কারণ সত্যের স্পিরিটকে আদেশ দিয়ে থামানো যায় না।

তারেক রহমান লিখেন, এই পুরো অন্ধকার সময়টায় খালেদা জিয়া ছিলেন আমাদের ধৈর্য ও প্রতিরোধের সবচেয়ে বড় প্রতীক। মিথ্যা মামলা, কারাবাস, তাকে রাজনৈতিকভাবে নিঃশেষ করে দেওয়ার চেষ্টা এসবই পুরো দেশের ওপর চাপিয়ে দেওয়া এক কর্তৃত্ববাদী শাসনের প্রতিফলন। তবুও তিনি তার গণতান্ত্রিক আদর্শ থেকে কখনও সরে যাননি।

কিন্তু ইতিহাসের একটা সত্য আছে কষ্ট মানুষকে সবসময় তিক্ত করে না। কখনও কখনও কষ্ট মানুষকে আরও মহান করে তোলে। দেশনেত্রী, আমার মা এটাই প্রমাণ করেছেন। তিনি শিখিয়েছেন, যে অন্যায় আমরা সহ্য করেছি, তা যেন আর কারও জীবনে না আসে। দেশকে বদলাতে হলে, ঘৃণার পথ নয়– ন্যায়, নৈতিকতা আর ক্ষমাশীলতার পথই ভবিষ্যৎ গড়ে, যোগ করেন তারেক রহমান।


আদায় হওয়া ভ্যাট অনেক সময় সরকারের কোষাগারে পৌঁছায় না : অর্থ উপদেষ্টা

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজেস্ব প্রতিবেদক

দেশের ভ্যাট ব্যবস্থাকে আরও সহজ ও স্বচ্ছ করার ওপর জোর দিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, আদায় হওয়া ভ্যাটের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ অনেক সময় সরকারের কোষাগারে পৌঁছায় না।

বুধবার (১০ ডিসেম্বর) আগারগাঁওয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) আয়োজিত ‘ভ্যাট দিবস ও ভ্যাট সপ্তাহ-২০২৫’ উপলক্ষে সেমিনারে তিনি এ মন্তব্য করেন।

ড. সালেহউদ্দিন বলেন, ভ্যাট ব্যবস্থা এমন হওয়া উচিত, যা সবার কাছে সহজবোধ্য। প্রক্রিয়া জটিল হলে কারচুপির সুযোগ বেড়ে যায়। ব্যবসায়ী বা ক্রেতা ভ্যাট পরিশোধ করলে সেটি যেন নির্ভুলভাবে কোষাগারে জমা হয়— এটাই সবার প্রত্যাশা। কিন্তু বাস্তবে অনেক সময় তা হয় না।

তিনি আরও বলেন, দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য অভ্যন্তরীণ সম্পদ সংগ্রহ বাড়ানো অত্যন্ত জরুরি। ঋণ বা অনুদান নির্ভরতায় উন্নয়ন কার্যক্রম দীর্ঘমেয়াদে টেকসই হয় না। ট্যাক্স-জিডিপি অনুপাত না বাড়ালে স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও সামাজিক খাতে প্রয়োজনীয় ব্যয় নির্বাহে চাপ সৃষ্টি হবে।

সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য দেন এনবিআর সদস্য (মূসক বাস্তবায়ন ও আইটি) মো. আজিজুর রহমান। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সদস্য (মূসক নিরীক্ষা) সৈয়দ মুসফিকুর রহমান। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এফআইসিসিআইয়ের ভাইস প্রেসিডেন্ট ইয়াসির আজমান, অর্থ মন্ত্রণালয় ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সংশ্লিষ্ট সচিবরা।

সভাপতির বক্তৃতায় এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান ব্যবসাবান্ধব ভ্যাট ব্যবস্থা গড়ে তোলার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, ভ্যাট হবে সহজ। ব্যবসায়ীরা শুধু বিক্রয়মূল্যের ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট দেবেন। আর কোনও জটিল আইন বা বিশাল বইয়ের প্রয়োজন হবে না। আমরা এমন সফটওয়্যার তৈরি করছি, যা স্বয়ংক্রিয়ভাবে হিসাব করে ভ্যাট আদায় সম্পন্ন করবে। কনসালটেন্ট রাখারও দরকার হবে না।

সেমিনারে ভ্যাট ব্যবস্থার সংস্কার, স্বচ্ছতা বাড়ানো এবং ব্যবসায়ীদের জবাবদিহি নিশ্চিত করার বিষয়ে নানা প্রস্তাব উঠে আসে।


banner close