৫ আগস্ট ক্ষমতা হারানোর পর টানা প্রায় আড়াই মাস একেবারে নিশ্চুপ ছিল সাবেক ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। তবে গত ১৫ দিনে বেশ কয়েকবার দলের ফেসবুক পেজে স্ট্যাটাস দিয়ে ও রাজধানীর দুয়েকটি এলাকায় ঝটিকা মিছিল করে নিজেদের উপস্থিতি জানান দিচ্ছে টানা ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকার পর ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে পতিত দলটির নেতা-কর্মীরা। এর মধ্যে ১০ ডিসেম্বর শহীদ নূর হোসেন দিবসকে সামনে রেখে গতকাল আবারও দলীয় ফেসবুক পেজে স্ট্যাটাস দিয়ে আজ রোববার রাজধানীর জিরো পয়েন্টে মাঠে নামার ঘোষণা দিয়েছে দলটি। এদিকে, এ ঘোষণা বিক্ষুব্ধ করেছে অন্তর্বর্তী সরকারকে। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দেওয়া ওই স্ট্যাটাসের পরপরই নিজেদের ফেসবুক পেজে পাল্টা স্ট্যাটাস দিয়ে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন শ্রম ও কর্মসংস্থান এবং যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ও প্রধান উপদেষ্টার ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রেস সচিব শফিকুল আলম। আসিফ মাহমুদ জানিয়েছেন, গণহত্যাকারী বা নিষিদ্ধ সংগঠনের কেউ কর্মসূচি করার চেষ্টা করলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কঠোর ব্যবস্থা নেবে। আর শফিকুল আলম তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে আওয়ামী লীগকে ‘ফ্যাসিবাদী দল’ হিসেবে উল্লেখ করে লিখেছেন, এই ফ্যাসিবাদী দলের বাংলাদেশে প্রতিবাদ করার কোনো সুযোগ নেই। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভঙ্গের কোনো প্রচেষ্টাকে তারা বরদাশত করবে না।
এদিকে আওয়ামী লীগের কর্মসূচি ঘোষণার প্রতিবাদে পাল্টা কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। আজ দুপুর ১২টায় ওই জিরো পয়েন্টেই ‘পতিত স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের বিচারের দাবিতে’ গণজমায়েত করার ঘোষণা দিয়েছে ছাত্রদের সংগঠনটি।
১৯৯০ সালে সাবেক প্রেসিডেন্ট হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য করার আন্দোলনে বুকে-পিঠে ‘গণতন্ত্র মুক্তি পাক স্বৈরাচার নিপাত যাক’ লিখে প্রতিবাদ জানানোর সময় ১০ ডিসেম্বর পুলিশের গুলিতে নিহত হন নূর হোসেন। সেই থেকে দিবসটিকে ‘গণতন্ত্র মুক্ত করার দিবস’ হিসেবে পালন করে আসছে রাজনৈতিক দলগুলো। সেই দিনটিকে স্মরণ করে গতকাল ‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে’ আজ রোববার (১০ ডিসেম্বর) বিকেল ৩টায় রাজধানী ঢাকার জিরো পয়েন্টে নেতাকর্মীসহ সাধারণ জনগণকে আসার ডাক দিয়েছে আওয়ামী লীগ। অগণতান্ত্রিক শক্তির অপসারণ এবং গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠার দাবিতে গতকাল শনিবার দলটির ফেসবুক পেজে এ-সংক্রান্ত দুটি পোস্ট সংবাদ বিজ্ঞপ্তি হিসেবে দেওয়া হয়।
আওয়ামী লীগের পোস্টে বলা হয়, ‘১০ নভেম্বর আসুন- নূর হোসেন চত্বরে জিরো পয়েন্ট, গুলিস্তান, ঢাকায়। আমাদের প্রতিবাদ দেশের মানুষের অধিকার হরণের বিরুদ্ধে, আমাদের প্রতিবাদ মৌলবাদী শক্তির উত্থানের বিরুদ্ধে, আমাদের প্রতিবাদ সাধারণ মানুষের জীবন যাত্রাকে ব্যাহত করার চক্রান্তের বিরুদ্ধে। অপশাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে আপনিও অংশ নিন।’
দেশব্যাপী সব জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে কর্মসূচি পালনেরও আহ্বান জানানো হয় আওয়ামী লীগের ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আওয়ামী লীগের মাঠে নামার ঘোষণা শুনেই ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলমসহ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখ্য সংগঠক আবদুল হান্নান মাসউদসহ অন্য নেতারা। পরে রাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে আওয়ামী লীগকে ঠেকাতে কর্মসূচিও ঘোষণা করা হয়।
শ্রম ও কর্মসংস্থান এবং যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ তার স্ট্যাটাসে বলেন, গণহত্যাকারী ও নিষিদ্ধ সংগঠনের কেউ কর্মসূচি করার চেষ্টা করলে কঠোর ব্যবস্থা নেবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
অন্যদিকে, প্রেস সচিব শফিকুল আলম তাঁর ফেসবুক পোস্টে লেখেন, আওয়ামী লীগ বর্তমানে একটি ফ্যাসিবাদী দল। এই ফ্যাসিবাদী দলের দেশের ভেতর আওয়ামী লীগের সভা-সমাবেশ এমনকি কোনো ধরনের মিছিল করার কোনো সুযোগ নেই। গণহত্যাকারী ও স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার নির্দেশে কেউ সভা-সমাবেশ ও মিছিলের চেষ্টা করলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তা কঠোরভাবে মোকাবিলা করবে। অন্তর্বর্তী সরকার কোনো সহিংসতা বা দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভঙ্গের কোনো প্রচেষ্টাকে বরদাশত করবে না।
পরে রাতে আওয়ামী লীগের মাঠে নামা প্রতিহত করতে পাল্টা কর্মসূচি ঘোষণা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। ‘পতিত স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের বিচারের দাবিতে’ আজ রোববার দুপুর ১২টায় জিরো পয়েন্টে গণজমায়েত করার ঘোষণা দিয়েছে সংগঠনটি।
গতকাল শনিবার রাত আটটার দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ফেসবুক পেজে এই কর্মসূচি ঘোষণা দেওয়া হয়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী তারিকুল ইসলাম আজ রোববার জিরো পয়েন্টে তাঁদের সংগঠনের কর্মসূচি ঘোষণার বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে, গতকাল নোয়াখালীতে একটি কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখ্য সংগঠক আবদুল হান্নান মাসউদ বলেছেন, ‘আজ ফ্যাসিস্টদের প্রতি অনেকে দরদ ও মায়া দেখাচ্ছে। অনেকে বলছে, আওয়ামী লীগ একটি রাজনৈতিক দল, তাদের রাজনীতি করার অধিকার ও ভোটাধিকার দিতে হবে। আওয়ামী লীগ যদি রাজনৈতিক দল হয় তবে গত ১৬ বছর কেন এ দেশের মানুষকে ভোটের অধিকার দেয়নি? তারা রাজনৈতিক দল হয়ে থাকলে কেন আমার দুই হাজারের বেশি ভাইবোনকে হত্যা করেছে? কেন গত ১৬ বছর ধরে ক্যাম্পাসে সাধারণ ছাত্ররা নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে? সন্ত্রাসী এবং রাজনৈতিক দলের মধ্যে পার্থক্য ধরতে না পারলে আমরা বুঝে নেব আপনারাও রাজনৈতিক দলের কাতারে পড়েন না। সন্ত্রাসীরা আজীবনের জন্য সন্ত্রাসী। কোনো সন্ত্রাসী ভবিষ্যতে এ দেশের মেম্বার, চেয়ারম্যান, এমপি ও মন্ত্রী হতে পারবে না। সন্ত্রাসী আর রাজনৈতিক দল কখনও এক হতে পারে না।’
গতকাল শনিবার দুপুরে নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলার জয়াগ কলেজ মাঠে একটি ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে জুলাইয়ের বিপ্লবে নিহত ও আহতদের পরিবারকে অর্থ ও সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
মাসউদ বলেন, ‘ফ্যাসিস্ট হাসিনা পালানোর পর তরুণরা যে স্বপ্ন দেখছে, সে স্বপ্ন বাস্তবায়নে আজ একটি পক্ষ বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। ইতিহাসের পাতায় যদি শহীদদের নাম লিপিবদ্ধ করে রাখতে হয়, তবে আগে তাদের স্বপ্ন পূরণ করতে হবে। বইয়ের কাগজে আমরা শহীদদের নাম যেভাবে দেখতে চাই, যেভাবে পত্রিকার পাতায় দেখতে চাই ঠিক একইভাবে আমরা দেখতে চাই- দুই যুগ পর যেন দেশের মানুষ বলতে পারে চব্বিশের শহীদদের রক্তের বিনিময়ে আমরা সুন্দর এই বাংলাদেশ পেয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ যদি রাজনৈতিক দল হয়ে থাকে, তাহলে এতদিন কেন জনগণের ভোটাধিকার দেয়নি। আমাদের ভোটের, গণতন্ত্রের অধিকার নিয়ে আন্দোলন করতে হয়েছে। তাই অবিলম্বে মুজিববাদ ও ফ্যাসিবাদের সংবিধান মুছে ফেলতে হবে।’
এই সমন্বয়ক বলেন, ‘ফ্যাসিস্ট হাসিনা বার বার সংবিধানকে কাটাছেঁড়া করে এ দেশের মানুষের ভাতের, ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছে। এ দেশের মানুষের বেঁচে থাকার অধিকার কেড়ে নিয়েছে। সেই সংবিধানকে ছুড়ে ফেলে দিয়ে চব্বিশের তরুণদের হাত ধরে বিজ্ঞজনের পরামর্শ নিয়ে নতুন সংবিধান রচনা করা হবে।’
অন্যদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলও ৩ দফা দাবিতে একই দিন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুলকে হেনস্তার প্রতিবাদ ও ১৫ বছরে বিভিন্ন হামলায় জড়িতদের বিচারসহ ৩ দফা দাবিতে রোববার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিবাদ মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা পালন করবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল।
মিছিলটি কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার প্রাঙ্গণ থেকে শুরু হয়ে পুরো ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাষ্কর্যে অবস্থান কর্মসূচির মাধ্যমে শেষ হবে।
ছাত্রদলের তিন দাবিগুলো হলো- বিদেশের মাটিতে ড. আসিফ নজরুলের ওপর মাটিতে হামলা ও হেনস্তা করার অপচেষ্টাকারী বিদেশে পলাতক ফ্যাসিবাদী আওয়ামী দুষ্কৃতকারীদের দ্রুত আইনের আওতায় নিয়ে আসা।
বিগত ১৫ বছর ধরে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর নির্যাতনকারী ও ছাত্র রাজনীতিকে কলুষিত করা নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অপরাধীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও বিচারের আওতায় নিয়ে আসা এবং আওয়ামী সরকারের আমলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের নৃশংস হামলার ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার আসামীদের দ্রুত গ্রেফতার ও বিচারের আওতায় আনা।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, দেশের জনগণ যখন নির্বাচনমুখী হয়ে যাবে তখন কেউ বাধা দিয়ে নির্বাচন আটকে রাখতে পারবে না। নির্বাচন ভালোভাবেই হয়ে যাবে।
বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) মুন্সীগঞ্জের সিরাজদীখান উপজেলার ৫টি বিদ্যালয়ের নতুন ভবন ও এবং ভবন ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন শেষে রাজদিয়া আব্দুল জব্বার পাইলট বালিকা উচ্চবিদ্যালয় প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এ কথা বলেন।
এ সময় তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলো যদি প্রতিযোগিতায় লিপ্ত না হয়ে সহাবস্থানে থাকে তাহলে দেশ ও জনগণের জন্য ভালো হবে।’
এ সময় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা গণমাধ্যম কর্মীদের বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনের পাশাপাশি দেশের জনগণকে উদ্বুদ্ধ করার আহ্বান জানান।
এদিকে গুলিবিদ্ধ হয়ে চিকিৎসাধীন ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ওসমান হাদির দ্রুত সুস্থতার জন্য সকলের কাছে দোয়া চেয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। এ সময় ওই ঘটনার মূলহোতা গ্রেপ্তারের বিষয়ে জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, ‘মূল আসামি গ্রেপ্তার হয়নি সত্যি। তবে তার সহযোগী যারা ছিল তারা গ্রেপ্তার হয়েছে।’
এর আগে তিনি সিরাজদীখান কুসুমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নতুন ভবন, কুসুমপুর উচ্চবিদ্যালযের চার তলা একাডেমিক ভবন, ইছাপুরা সরকারি মডেল উচ্চবিদ্যালয়ের বিদ্যমান একাডেমিক ভবনের ওপর দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলার ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ, বিক্রমপুর কুঞ্জবিহারী সরকারি কলেজের একাডেমিক ভবন ও রাজদিয়া আব্দুল জাব্বার পাইলট বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের চারতলা বিশিষ্ট একাডেমিক ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
এ সময় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রশাসক সৈয়দা নুরমহল আশরাফী ও পুলিশ সুপার মো. মেনহাজুল আলম উপস্থিত ছিলেন।
রাজধানীর জিগাতলার একটি ছাত্রী হোস্টেল থেকে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) এক নেত্রীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। তার নাম জান্নাত আরা রুমি (৩০)। তিনি ধানমন্ডি থানা এনসিপির যুগ্ম সমন্বয়কারী ছিলেন। বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) সকালে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তার বাড়ি নওগাঁর পত্নীতলায়। তার বাবা জাকির হোসেন।
এনসিপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম সদস্য সচিব তারেক রেজা ফেসবুক পোস্টে জানান, কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের হুমকি ও সাইবার বুলিংয়ের কারণে জান্নাত আরা রুমি আত্মহত্যা করেছেন। ওই পোস্টে তিনি লেখেন, এটি আত্মহত্যা নয় খুন।
হাজারীবাগ থানার ওসি মো. হাফিজুর রহমান বলেন, ‘এনসিপির নেত্রী জান্নাত আরা বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন। তিনি জিগাতলার ওই ছাত্রী হোস্টেলের একটি কক্ষে একা থাকতেন।’
বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) সকালে খবর পেয়ে পুলিশ ওই হোস্টেলে যায়। ওসি বলেন, ‘পরিচারিকা ডাকাডাকির পর দরজায় ধাক্কাধাক্কি করেন। এ সময় হার্ডবোর্ডের দরজার ছিটকানি খুলে যায়। পরে পুলিশ সিলিং ফ্যানের সঙ্গে গলায় ওড়না প্যাঁচানো অবস্থায় জান্নাত আরার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে। তার মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়।’
একই থানার উপপরিদর্শক মো. কামরুজ্জামান জানান, রুমীর বাড়ি নওগাঁর পত্নীতলা উপজেলার নজিপুর বাসস্ট্যান্ডে। বাবার জাকির হোসেন। রুমী ধানমন্ডি গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতাল থেকে নার্সিংয়ে পড়ালেখা শেষ করেছেন। এরপর বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে চাকরি করছিলেন। তবে বর্তমানে কোথায় চাকরি করতেন, নাকি বেকার ছিলেন তা জানাতে পারেননি তিনি।
তবে রুমীর চাচাতো ভাই মেহেদী হাসান জানান, জিগাতলার ওই বাসার ছাত্রী হোস্টেলে থাকতেন রুমী। তার দুবার বিয়ে হয়েছিল। দুই সংসারই ভেঙে গেছে। দুই সংসারে দুটি সন্তানও রয়েছে রুমীর। দুই সন্তান বাবার কাছে থাকে।
তিনি আরও বলেন, ‘শুনেছি রুমীর রুমমেট বাড়িতে গিয়েছে। গতকাল বুধবার রাতে একাই ছিলেন রুমী। তবে একই ফ্ল্যাটে পাশের রুমে অন্য রুমমেটরা ছিলেন। রাতে গৃহকর্মী পঞ্চম তলায় তাদের ফ্ল্যাটের সামনে গেলে দরজা খোলা দেখতে পান এবং ভেতরে আলো জ্বলতে দেখেন। এরপর উঁকি দিলে রুমীকে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পান। পরে তিনিই সবাইকে ডেকে তোলেন বলে শুনেছি।’
রুমীর মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে তার স্বজনরা বলেন, ‘সাংসারিক বা পারিবারিক বিষয়ে হতাশা থেকে এমন ঘটনা ঘটিয়ে থাকতে পারেন রুমী। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বিস্তারিত তদন্ত করে দেখার আহ্বান জানান তারা।
এদিকে জান্নাত আরার মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভেরিফায়েড পেজে পোস্ট দেন এনসিপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম সদস্য সচিব তারেক রেজা। সেখানে তিনি জানান, গত মাসে ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রায়ের দিন ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে জিয়ার কবর খুঁড়তে চাওয়া রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের একজনকে পিটিয়ে পুলিশের কাছে দিয়েছিলেন জান্নাত আরা। এর পর থেকে আওয়ামী লীগ জান্নাত আরাকে সাইবার বুলিং, হত্যা ও ধর্ষণের হুমকি দিচ্ছিলেন বলে তারেক রেজা তার পোস্টে জানান। ওই পোস্টে তারেক রেজা আরও লেখেন, এ কারণে জান্নাত আরা রাতে আত্মহত্যা করেছে।
ফেসবুকে দেওয়া ওই পোস্টে তারেক রেজা আরও লিখেছেন, ‘এটাকে আমরা আত্মহত্যা হিসেবে দেখতে রাজি নই। এটা খুন। যারা আমার বোনের জীবনকে তছনছ করে দিয়েছে, তাদের জীবন আমরা শান্তিতে কাটাতে দেব না।’
সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, তার স্ত্রী ও দুই সন্তানের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও মানি লন্ডারিংয়ের মামলায় চার্জশিট দাখিল করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) দুদকের প্রধান কার্যালয়ে এক নিয়মিত মিডিয়া ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান সংস্থাটির মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন। দুদকের ঢাকা-১ সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের ২০২৪ সালের ৯ অক্টোবর মামলাটি দায়ের করা হয়েছিল।
অভিযোগ অনুযায়ী, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল তার দায়িত্বকালীন সময়ে অসাধু উপায় ও ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ প্রায় ২২ কোটি ৫৮ লাখ টাকা মূল্যের সম্পদ অর্জন করেন ও দখলে রাখেন।
এছাড়া তদন্তে দেখা যায়, তিনি নিজের নামে পরিচালিত ৯টি ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে মোট ৮৭ কোটি ৪৬ লাখ ২৬ হাজার ৯৩৩ টাকা লেনদেন করেছেন।
এ সব অর্থকে মানি লন্ডারিংয়ের মাধ্যমে অবৈধ উৎস গোপন ও রূপান্তরের অভিযোগ আনা হয়েছে।
মামলায় তার স্ত্রী লুৎফুল তাহমিনা খান, ছেলে শাফি মোদ্দাছির খান জ্যোতি এবং মেয়ে শাফিয়া তাসনিম খানকেও আসামি করা হয়েছে।
তদন্ত অনুযায়ী, তারা প্রত্যেকে নিজ নিজ নামে বাড়ি নির্মাণ ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে প্রায় ১৫ কোটি ৪৫ লাখ টাকার সমপরিমাণ অপরাধলব্ধ অর্থের অবৈধ উৎস গোপনে সহায়তা করেন।
দুদকের তদন্তে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মোট নীট সম্পদের পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়েছে ২৮ কোটি ১৭ লাখ ২১ হাজার ৫৪৮ টাকা, যার বিপরীতে বৈধ আয়ের উৎস পাওয়া গেছে মাত্র ৫ কোটি ৫৮ লাখ ৮১ হাজার ৩৮৬ টাকা।
এ ঘটনায় আসাদুজ্জামান খান কামাল ও অন্যান্য আসামিদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪-এর ২৭ (১) ধারা, দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭-এর ৫ (২) ধারা এবং মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২-এর ৪ (২) ও ৪ (৩) ধারায় চার্জশিট দাখিল করেছে কমিশন।
আওয়ামী লীগের শাসনামলে জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেলে (জেআইসি) গুম করে নির্যাতনের অভিযোগে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সেনা কর্মকর্তাসহ ১৩ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। সেই সঙ্গে এই মামলার সূচনা বক্তব্য ও সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য আগামী ১৯ জানুয়ারি দিন ধার্য করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ অভিযোগ গঠন করার আদেশ দেন।
এই মামলার আসামিদের বিরুদ্ধে ৫টি অভিযোগ এনে প্রসিকিউসন পক্ষে অভিযোগ গঠনের আবেদন করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার ৩ সেনা কর্মকর্তাসহ আসামিদের নির্দোষ দাবি করে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি চান তাদের আইনজীবীরা।
আসামিদের মধ্যে গ্রেপ্তার যে তিন সেনা কর্মকর্তাকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়, তারা হলেন— প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তরের (ডিজিএফআই) সাবেক পরিচালক মেজর জেনারেল শেখ মো. সরওয়ার হোসেন, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাহবুবুর রহমান সিদ্দিকী ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহমেদ তানভির মাজাহার সিদ্দিকী।
ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দিকসহ এ মামলায় পলাতক অপর আসামিরা হলেন— ডিজিএফআইয়ের সাবেক পাঁচ মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. আকবর হোসেন, মেজর জেনারেল (অব.) মো. সাইফুল আবেদিন, লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. সাইফুল আলম, লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) আহমেদ তাবরেজ শামস চৌধুরী ও মেজর জেনারেল (অব.) হামিদুল হক।
অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল তারিক আহমেদ সিদ্দিকী ও ডিজিএফআইয়ের সাবেক পাঁচ মহাপরিচালসহ ৩০ জনের বিরুদ্ধে গত ৮ অক্টোবর গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। এরপর ১১ অক্টোবর এক সংবাদ সম্মেলনে ১৫ জন কর্মরত সেনা কর্মকর্তাকে হেফাজতে নেওয়ার কথা জানায় সেনাবাহিনী। আর্মি অফিসার্স মেসে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সেনাবাহিনীর অ্যাডজুট্যান্ট জেনারেল মেজর জেনারেল মো. হাকিমুজ্জামান বলেন, দুটি মামলার ৩০ জন আসামির মধ্যে ২৫ জনই সেনাবাহিনীর বিভিন্ন পর্যায়ের সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তা। তাদের মধ্যে ৯ জন অবসরপ্রাপ্ত, একজন এলপিআরে গেছেন এবং বর্তমানে কর্মরত রয়েছেন ১৫ জন।
ঢাকা সেনানিবাসের একটি ভবনকে সাময়িকভাবে কারাগার ঘোষণা করে গত ১২ অক্টোবর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের উপসচিব মো. হাফিজ সাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, বাংলাদেশ ফৌজদারি কার্যবিধি, ১৮৯৮-এর ধারা ৫৪১ (১)-এর ক্ষমতাবলে এবং দ্য প্রিজন অ্যাক্টের ধারা ৩-এর বি অনুসারে ঢাকা সেনানিবাসের বাশার রোড-সংলগ্ন উত্তর দিকে অবস্থিত এমইএস বিল্ডিং নং-৫৪-কে সাময়িকভাবে কারাগার হিসেবে ঘোষণা করা হলো। গ্রেপ্তার সেনা কর্মকর্তাদের পরবর্তীতে এই কারাগারে রাখা হয়।
না ফেরার দেশে চলে গেলেন জুলাই বিপ্লবী ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ওসমান হাদি। আজ বৃহস্পতিবার সিঙ্গাপুরে ওসমান হাদির চিকিৎসা দেখভালের সঙ্গে যুক্ত থাকা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা রাত ১০টার দিকে গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। অন্যদিকে ইনকিলাব মঞ্চের ফেসবুক পেজেও ওসমান হাদির মৃত্যুর খবরটি জানানো হয়।
পোস্টে লেখা হয়েছে, ‘ভারতীয় আধিপত্যবাদের মোকাবেলায় মহান বিপ্লবী ওসমান হাদিকে আল্লাহ শহীদ হিসেবে কবুল করেছেন।’
গত ১২ ডিসেম্বর মতিঝিলে জুমার নামাজ পড়ে নির্বাচনী প্রচারণা শেষ করেন হাদি।
এরপর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যাওয়ার পথে ওই দিন দুপুর ২টা ২০ মিনিটের দিকে হাদিকে বহনকারী অটোরিকশা পল্টন মডেল থানাধীন বক্স কালভার্ট এলাকায় পৌঁছালে মোটরসাইকেলে থাকা দুষ্কৃতকারীরা হত্যার উদ্দেশ্যে তাকে গুলি করে পালিয়ে যায়। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে অপারেশন শেষে এভারকেয়ার হাসপাতালে পাঠানো হয়।
পরবর্তীতে উন্নত চিকিৎসার জন্য গত সোমবার তাকে সিঙ্গাপুরে পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
এর আগে বৃহস্পতিবার বিকেলে ওসমান হাদি জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছেন বলে জানা যায়। তার পরিবারের পক্ষ থেকে সিঙ্গাপুরেই অপারেশন করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এদিন হাদির শারীরিক অবস্থার সর্বশেষ তথ্যের এক বিবৃতিতে এ কথা জানানো হয়।
ওই সময়ে বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ওসমান হাদি যদি রবের ডাকে সাড়া দিয়ে শহীদের কাতারে শামিল হয় সে ক্ষেত্রে পুরো বাংলাদেশের স্বাধীনতাকামী মজলুম জনতাকে সার্বভৌমত্ব নিশ্চিতকরণে শাহবাগে জড়ো হওয়ার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে।
ইনকিলাব মঞ্চ বলেছে, খুনিরা গ্রেপ্তার না হওয়া পর্যন্ত আমরা শাহবাগে অবস্থান করব এবং পুরো বাংলাদেশকে অচল করে দেওয়া হবে। খুনি যদি ভারতে পালিয়ে যায় সে ক্ষেত্রে ভারত সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে যেকোনো মূল্যে তাকে গ্রেপ্তারপূর্বক ফেরত আনতে হবে।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম সম্মুখযোদ্ধা, ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র এবং ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদির শারীরিক অবস্থা অত্যন্ত সংকটাপন্ন। জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে থাকা এই নেতার জরুরি অস্ত্রোপচারের জন্য তার পরিবারের পক্ষ থেকে অনুমতি দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে তিনি সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) হাদির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক বার্তার মাধ্যমে এসব তথ্য জানানো হয়।
ফেসবুক পোস্টে দেশবাসীর কাছে তার সুস্থতার জন্য দোয়া চেয়ে বলা হয়েছে, আল্লাহ যেন তাকে হায়াতে তাইয়্যেবা নসিব করেন। একইসঙ্গে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলা হয়, যদি ওসমান হাদি মারা যান বা শহীদের কাতারে শামিল হন, তবে দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় স্বাধীনতাকামী জনতাকে শাহবাগে জড়ো হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। হামলাকারীরা গ্রেপ্তার না হওয়া পর্যন্ত শাহবাগ অবরোধসহ প্রয়োজনে পুরো দেশ অচল করে দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয় ওই পোস্টে। এছাড়া খুনিরা যদি ভারতে পালিয়ে গিয়ে থাকে, তবে ভারত সরকারের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে তাদের ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করার দাবিও জানানো হয়েছে।
এর আগে বুধবার রাতে প্রধান উপদেষ্টার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ থেকেও হাদির শারীরিক অবস্থা অত্যন্ত সংকটাপন্ন বলে নিশ্চিত করা হয়েছিল। প্রসঙ্গত, গত ১২ ডিসেম্বর (শুক্রবার) দুপুরে রাজধানীর পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট রোডে ব্যাটারিচালিত রিকশায় যাওয়ার সময় মোটরসাইকেল আরোহী দুর্বৃত্তদের গুলিতে গুরুতর আহত হন তিনি। প্রথমে তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল এবং পরে এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে সিঙ্গাপুরে স্থানান্তর করা হয়।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা অপরিবর্তিত ও স্থিতিশীল রয়েছে। তিনি চিকিৎসকদের দেওয়া চিকিৎসা ঠিকমতো গ্রহণ করতে পারছেন, যা নিয়ে আশাবাদী তার মেডিকেল বোর্ড। বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালের সামনে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে এসব তথ্য জানান তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন।
ডা. জাহিদ জানান, বাংলাদেশ, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়ার চিকিৎসকদের সমন্বয়ে গঠিত একটি মেডিকেল বোর্ড প্রতিনিয়ত তার শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করছে। প্রতিদিন সন্ধ্যায় পরীক্ষার রিপোর্ট পর্যালোচনা করে চিকিৎসার পরবর্তী ধাপ নির্ধারণ করা হচ্ছে। তিনি বলেন, আলহামদুলিল্লাহ, এখন পর্যন্ত ম্যাডামকে যে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে, তা তিনি গ্রহণ করতে পারছেন এবং গত কয়েকদিনের শারীরিক অবস্থা ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছেন। চিকিৎসকরা আশা করছেন, তিনি ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠবেন।
খালেদা জিয়ার বর্তমান অসুস্থতার প্রেক্ষাপট তুলে ধরে ডা. জাহিদ অভিযোগ করেন, বিগত সরকারের আমলে পরিকল্পিতভাবে তাকে যথাযথ চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। এর ফলেই তার শারীরিক জটিলতা মারাত্মক আকার ধারণ করেছে এবং বর্তমানে তিনি বেশ কঠিন সময় পার করছেন। তবে তার বয়স ও অসুস্থতার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়েই সর্বোচ্চ সতর্কতার সঙ্গে চিকিৎসা কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।
উল্লেখ্য, গত ২৩ নভেম্বর থেকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী এবং ২৭ নভেম্বর থেকে তিনি ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) চিকিৎসাধীন। ডা. জাহিদ দেশবাসীর কাছে খালেদা জিয়ার আশু রোগমুক্তি ও সুস্থতার জন্য দোয়া চেয়েছেন, যাতে তিনি আবারও বাংলাদেশের রাজনীতিতে যথাযথ ভূমিকা রাখতে পারেন।
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সর্বশেষ শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে গণমাধ্যমকে অবহিত করতে যাচ্ছেন তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন।
বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালের সামনে এই প্রেস ব্রিফিং অনুষ্ঠিত হবে বলে বিএনপির মিডিয়া সেল থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, দীর্ঘস্থায়ী বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী গত ২৩ নভেম্বর রাতে হঠাৎ শ্বাসকষ্ট অনুভব করলে তাকে দ্রুত এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর থেকেই তিনি হাসপাতালটিতে চিকিৎসকদের নিবিড় পর্যবেক্ষণে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থান চলাকালে সংঘটিত হত্যাযজ্ঞের ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এবং ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেনসহ মোট সাতজন নেতার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) সকালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২-এর রেজিস্ট্রারের দপ্তরে প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে এই অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয় বলে নিশ্চিত করেছেন প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম।
মামলায় অভিযুক্ত অন্য নেতারা হলেন—আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাবেক তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত, যুবলীগের সভাপতি শেখ ফজলে শামস পরশ, সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল এবং ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ওয়ালি আসিফ ইনান। এর আগে গত ৮ ডিসেম্বর প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল যে, এই সাতজনের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের তদন্ত কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে। তদন্ত শেষের ১০ দিনের মাথায় তাদের বিরুদ্ধে এই আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করা হলো।
আওয়ামী লীগের পক্ষে কথিত ‘অপপ্রচার’ চালানোর অভিযোগে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে গ্রেপ্তার সাংবাদিক আনিস আলমগীরকে অবিলম্বে মুক্তি দেওয়ার দাবি জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। সংস্থাটি এই গ্রেপ্তারকে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর আঘাত এবং একটি ‘উদ্বেগজনক প্রবণতা’ হিসেবে অভিহিত করেছে।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক গবেষক রেহাব মাহমুদ এক বিবৃতিতে বলেন, আনিস আলমগীরের গ্রেপ্তার ভিন্নমত দমনের চলমান প্রক্রিয়ারই অংশ। নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগের কার্যক্রমের সমর্থক সন্দেহে বর্তমানে অনেককেই লক্ষ্যবস্তু করা হচ্ছে। তিনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের অপব্যবহার বন্ধ করে নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার বিষয়ক আন্তর্জাতিক চুক্তির (আইসিসিপিআর) বাধ্যবাধকতা মেনে চলার আহ্বান জানান। একইসঙ্গে ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠব্য নির্বাচনের আগে ভীতিমুক্ত পরিবেশ তৈরি এবং বাক-স্বাধীনতা ও সমাবেশের অধিকার নিশ্চিত করার তাগিদ দেন।
গত ১৪ ডিসেম্বর রাতে ধানমন্ডি থেকে আনিস আলমগীরকে ডিবি হেফাজতে নেওয়া হয় এবং পরদিন উত্তরা পশ্চিম থানার একটি মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে তোলা হয়। আদালত তার ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। আদালতে আত্মপক্ষ সমর্থন করে আনিস আলমগীর বলেন, ‘আমি একজন সাংবাদিক। যারা ক্ষমতায় থাকে আমি তাদের প্রশ্ন করি। দুই দশক ধরে আমি এটাই করে আসছি। কারও কাছে মাথা নত করা আমার কাজ নয়।’
উল্লেখ্য, এই মামলায় আনিস আলমগীর ছাড়াও অভিনেত্রী মেহের আফরোজ শাওন, মডেল মারিয়া কিসপট্টা ও উপস্থাপক ইমতু রাতিশ ইমতিয়াজকে আসামি করা হয়েছে। অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, গত ৫ আগস্টের পর থেকে অভিযুক্তরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও টকশোতে অংশ নিয়ে নিষিদ্ধ সংগঠন আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের লক্ষ্যে রাষ্ট্রবিরোধী গুজব ও প্রচারণায় লিপ্ত রয়েছেন। তাদের এসব কর্মকাণ্ডের ফলে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ ও যুবলীগের কর্মীরা উসকানি পাচ্ছে এবং রাষ্ট্রকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্র করছে বলে অভিযোগ করা হয়।
রাজধানীর হাজারীবাগের জিগাতলা কাঁচাবাজার সংলগ্ন একটি ছাত্রীনিবাস থেকে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেত্রী জান্নাতারা রুমীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) সকালে তার মরদেহটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
নিহত ৩০ বছর বয়সী জান্নাতারা রুমী এনসিপির ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখার ধানমন্ডি থানা সমন্বয় কমিটির যুগ্ম সমন্বয়কারী হিসেবে দায়িত্বরত ছিলেন। তার গ্রামের বাড়ি নওগাঁ জেলার পত্নীতলা উপজেলার নাজিরপুর এলাকায়। তার বাবার নাম মো. জাকির হোসেন এবং মায়ের নাম নুরজাহান বেগম।
হাজারীবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, জান্নাতারা ওই এলাকায় অবস্থানকালীন সময়ে সক্রিয়ভাবে এনসিপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তার মৃত্যুর বিষয়টি আত্মহত্যা নাকি হত্যাকাণ্ড, তা খতিয়ে দেখতে পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পাওয়ার পরই মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে।
নিরাপত্তাজনিত কারণে গতকাল দুপুরের পর সাময়িকভাবে বন্ধ রাখার পর আজ বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) সকাল থেকে আবারও স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে রাজধানীর যমুনা ফিউচার পার্কে অবস্থিত ভারতীয় ভিসা আবেদন কেন্দ্রের (আইভ্যাক)। আইভ্যাক কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে কার্যক্রম চালুর বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।
এর আগে চলমান পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করে গতকাল বুধবার (১৭ ডিসেম্বর) দুপুর ২টার পর থেকে ভিসা সেন্টারের সব কার্যক্রম বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। এ বিষয়ে আইভ্যাক বাংলাদেশের ওয়েবসাইটে একটি জরুরি নোটিশও প্রকাশ করা হয়। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছিল, উদ্ভূত নিরাপত্তা পরিস্থিতির কারণে বুধবার দুপুরের পর আর কোনো কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে না।
ওই বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, যেসব আবেদনকারীর বুধবার স্লট বা অ্যাপয়েন্টমেন্ট নির্ধারিত ছিল, তাদের পরবর্তীতে নতুন তারিখ ও সময় নির্ধারণ করে জানিয়ে দেওয়া হবে। আজ সকাল থেকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকায় সেবা প্রত্যাশীরা আবারও যথারীতি সেবা পাচ্ছেন।
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য সংসদ সদস্য প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদিকে গুলি করে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত ফয়সাল করিম মাসুদকে পালাতে সহায়তা করার অভিযোগে গ্রেপ্তারকৃত মো. নুরুজ্জামান নোমানী ওরফে উজ্জ্বলকে তিন দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছেন আদালত। বুধবার (১৭ ডিসেম্বর) মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক ফয়সাল আহমেদ আসামিকে আদালতে হাজির করে পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। শুনানি শেষে ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জশিতা ইসলাম তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। শুনানিকালে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী রিমান্ডের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরলেও আসামিপক্ষে কোনো আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন না।
অভিযোগ রয়েছে, গ্রেপ্তারকৃত নুরুজ্জামান নোমানী মূল হামলাকারী ফয়সাল করিম মাসুদকে পালিয়ে যেতে একটি মাইক্রোবাস ভাড়া দিয়ে সহযোগিতা করেছিলেন।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, গত ১২ ডিসেম্বর জুমার নামাজের পর নির্বাচনী প্রচারণা শেষে ফেরার পথে রাজধানীর পল্টন এলাকার বক্স কালভার্ট রোডে মোটরসাইকেলে আসা দুর্বৃত্তরা হাদিকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে প্রথমে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল এবং পরে এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। বর্তমানে তিনি উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে অবস্থান করছেন। গত ১৪ ডিসেম্বর ইনকিলাব মঞ্চের সদস্যসচিব আব্দুল্লাহ আল জাবের বাদী হয়ে এই মামলাটি দায়ের করেন। এজাহারে অভিযোগ করা হয়, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বানচাল করা এবং দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে আওয়ামী লীগের পলাতক নেতাকর্মীদের ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবেই এই হামলা চালানো হয়েছে।