অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস ‘বে অব বেঙ্গল কনভারসেশন-২৪’ এর আলোচনায় সবার চিন্তাভাবনা ভাগাভাগি করার ওপর জোর দিয়েছেন। এ সময় তিনি বলেন, ‘আমি আপনাদের অনুরোধ করব কীভাবে একটি নতুন বিশ্ব গড়া যায় তা নিয়ে ভাবতে। যুবসমাজই আমাদের নতুন বাংলাদেশ তৈরির পথে পরিচালিত করেছে।’ শনিবার সকালে রাজধানীর একটি হোটেলে সেন্টার ফর গভর্নেন্স স্টাডিজের (সিজিএস) আয়োজনে অনুষ্ঠিত হওয়া তিন দিনব্যাপী বে অব বেঙ্গল সংলাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দেওয়া ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন।
এ সময় প্রধান উপদেষ্টা তার বক্তব্যে এমন সম্মেলন আয়োজন করায় বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিজিএসের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘এ সম্মেলন শুধু মতবিনিময়ের স্থান নয়, এটি আমাদের অভিন্ন সহনশীলতার প্রমাণ।’ অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন, সিজিএসের চেয়ার মুনিরা খান ও নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমান বক্তব্য রাখেন। এছাড়া অনুষ্ঠানে মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহাথির বিন মোহাম্মদ ও বলিভিয়ার সাবেক রাষ্ট্রপতি জর্জ ফার্নান্দো কুইরোগা রামিরেজ ভিডিও বার্তা প্রদান করেন। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস এমন একটি অর্থনীতি গড়ার ওপর জোর দিয়েছেন যেখানে প্রযুক্তি ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সুফল সব মানুষের মধ্যে ভাগ করে নেওয়ার বিষয়ে জোর দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আসুন আমরা একে অপরকে চ্যালেঞ্জ করি, একে অপরের কথা শুনি এবং একটি নতুন পৃথিবী কল্পনা করার সাহস করি, যা পরিবেশগতভাবে নিরাপদ পৃথিবীর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং এমন একটি অর্থনীতি গড়ে তুলি যেখানে প্রযুক্তি ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ফল সবার মধ্যে সমানভাবে ভাগ করা হবে, শুধু কিছু বিশেষ সুবিধাভোগীর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না।’ তিনি বলেন, ‘যদি আমরা একসঙ্গে কল্পনা করতে পারি, তাহলে সেটি অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠে। আসুন আমরা এটি করি।’
‘বিদ্যমান সভ্যতা আমাদের ব্যর্থ করেছে। শুধু পরিবেশগত দৃষ্টিকোণ থেকে এটি একটি আত্মধ্বংসী সভ্যতা হয়ে উঠেছে। আর্থিক দৃষ্টিকোণ থেকে এটি সম্পদের চরম সঞ্চয়ের দিকে পরিচালিত করেছে’- বললেন অধ্যাপক ইউনূস। তিনি কল্যাণমূলক দেশ গড়ে তুলতে তিন শূন্যের ধারণার ওপর ভিত্তি করে একটি পৃথিবী তৈরির ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। এই ধারণা হলো-শূন্য কার্বন নির্গমন, শূন্য সম্পদের কেন্দ্রীকরণ এবং শূন্য বেকারত্ব। এর জন্য, তিনি সামাজিক ব্যবসা প্রচলনের কথা বলেন, যা মানুষের সমস্যার সমাধানে মনোযোগ দেয়, শুধু মুনাফা করা যার মূল উদ্দেশ্য নয়। একই সঙ্গে যুবকদের চাকরিপ্রার্থী না বানিয়ে উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তোলার ওপরও জোর দেন প্রধান উপদেষ্টা। অধ্যাপক ইউনূস উপকূলীয় জনগোষ্ঠীকে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব থেকে রক্ষার জন্য দ্রুত ঐক্যবদ্ধ পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান এবং এমন একটি অর্থনীতি গড়ার ওপর জোর দেন যেখানে সবাই উপকৃত হবে। তিনি বলেন, ‘আমাদের অঞ্চল জলবায়ু পরিবর্তনের ফ্রন্টলাইনে রয়েছে। প্রতি বছর, আমাদের উপকূলীয় জনগোষ্ঠী বর্ধিত পানি এবং পরিবর্তিত আবহাওয়ার প্রভাবে জীবন, ঘরবাড়ি এবং জীবিকা হুমকির মুখে পড়ে। এই সংকট এমন যা পরবর্তী সময়ের জন্য ফেলে রাখা যায় না; এটি অবিলম্বে এবং ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার দাবি রাখে।’
দেশের তরুণদের নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা একই সঙ্গে অপরিসীম সম্ভাবনার একটি অঞ্চল। আমাদের দেশ তরুণদের দেশ। ১৭১ মিলিয়ন মানুষের মধ্যে অর্ধেকের বয়স ২৭ বছরের নিচে। এটি আমাদের দেশকে সৃজনশীলতায় অত্যন্ত শক্তিশালী করে তুলেছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ সবসময় স্বপ্ন, কঠোর পরিশ্রম এবং অবিচ্ছেদ্য ইচ্ছা পূরণের দেশ হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করেছে। এটি এখন আরও বেশি প্রাসঙ্গিক, কারণ বিপ্লবের আকাঙ্ক্ষাগুলো এখনো সবার মনে সতেজ।’ প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘এই আকাঙ্ক্ষা লাখো কণ্ঠের আওয়াজ, প্রায় পুরো জাতির আওয়াজ, তারা পরিবর্তনের দাবি তুলেছে। আমাদের সকলকে মানবাধিকার, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, ন্যায়বিচার এবং অন্তর্ভুক্তির ওপর ভিত্তি করে ভবিষ্যত গড়ার জন্য চাপ দিয়ে যাচ্ছে।’ এ সময় তিনি এ বছর সম্মেলনের বিষয়বস্তু ‘একটি বিভক্ত বিশ্ব’- তা গভীরভাবে প্রাসঙ্গিক বলে মনে করেছেন। তিনি বলেন, ‘কারণ আমরা বর্তমানে এমন এক সময়ে বাস করছি যা চ্যালেঞ্জ ও জটিলতায় পরিপূর্ণ।’ ‘হোক তা অর্থনৈতিক বৈষম্য, সামাজিক অন্যায়, বা জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকি, আমরা এমন সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছি যা অত্যধিক। তবুও বাংলাদেশে আমরা সহনশীলতা সম্পর্কে কিছু জানি, প্রতিকূলতার মুখোমুখি হওয়া এবং তা থেকে সুযোগ তৈরি করা সম্পর্কে কিছু জানি। এটি আমি কয়েক দশক আগে গ্রামবাসীর সঙ্গে কাজ করার সময় শিখেছি, তাদের সাহস দেখে অনুপ্রাণিত হয়েছি’- যোগ করে বললেন ড. ইউনূস।
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের দেশ তরুণদের দেশ। ১৭ কোটি ১০ লাখ মানুষের মধ্যে অর্ধেকের বয়স ২৭ বছরের নিচে। এটি দেশকে সৃজনশীলতায় খুব শক্তিশালী করে তোলে। অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘আমাদের তরুণদের টেকসই উন্নয়নে বিশ্বকে নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে, সবুজ প্রবৃদ্ধির মডেল তৈরি এবং আমাদের পরিবেশের প্রচার করার ক্ষমতা রয়েছে।’ তবে এর জন্য সহযোগিতা, সাহস ও অভিন্ন ভবিষ্যতের প্রতি অবিচল বিশ্বাস প্রয়োজন বলে উল্লেখ করেন।
প্রধান উপদেষ্টা সংলাপে অংশ নেওয়া বিদেশি অতিথিদের বাংলাদেশের তরুণ বিপ্লবীদের আবেগ ও আকাঙ্ক্ষার প্রতীক গ্রাফিতি ও চিত্রকর্মগুলো ঘুরে দেখার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘বিদেশি অতিথিদের প্রতি আমার আহ্বান: ঢাকার রাস্তায় হাঁটার সময় রাস্তার দেয়ালে আঁকা বর্ণিল চিত্রকর্মগুলো দেখার ঐতিহাসিক সুযোগ আপনারা মিস করবেন না। এই চিত্রকর্মগুলো তরুণদের আবেগ ও আকাঙ্ক্ষার প্রকাশ, যা হত্যাযজ্ঞের সময় আঁকা হয়েছিল। এগুলো দেখলে যে কেউ বিস্মিত হবেন, কী গভীর শক্তিশালী চিত্রকর্ম হত্যার সময় তরুণরা তুলে ধরেছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এখানে আপনাদের সঙ্গে থাকতে পারা সত্যিই আনন্দের। এ শহরটি মাত্র ১০০ দিন আগে এক অনন্য রাজনৈতিক উত্থানের সাক্ষী হয়েছে।’
২০০৬ সালে শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ইউনূস স্মরণ করিয়ে দেন, এটি ছিল একটি ছাত্র-নেতৃত্বাধীন বিপ্লব, যা গত ১৬ বছর ধরে দেশ শাসনকারী এক ফ্যাসিবাদী শাসকের পতন ঘটিয়েছে। তিনি বিদেশি অতিথিদের ‘নতুন বাংলাদেশ’-এ স্বাগত জানিয়ে বলেন, এটি পুরাতন বাংলাদেশের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা এক বাংলাদেশ। তিনি জানান, ১০০ দিন আগে প্রায় ১,৫০০ ছাত্র, শ্রমিক ও অন্যান্য বিক্ষোভকারী স্বৈরশাসকের হাতে নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছিলেন প্রায় ১০ হাজার। এ সময় তিনি বাংলাদেশকে নতুন সভ্যতা গড়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, শুধু পরিবেশগত দৃষ্টিকোণ থেকে এটি আত্মবিধ্বংসী সভ্যতায় পরিণত হয়েছে। অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে এটি অতিরিক্ত সম্পদ আহরণের দিকে ঠেলে দিয়েছে। তাদের থ্রি জিরো, নিট জিরো কার্বন নিঃসরণ, জিরো ওয়েলথ কনসেন্ট্রেশন-বিশ্ব তৈরি করতে হবে। মানুষের সমস্যাগুলো সমাধান করতে সামাজিক ব্যবসা চালু করে, মুনাফা বৃদ্ধি না করে এবং শূন্য বেকারত্ব, যেখানে যুবকদের চাকরিপ্রার্থী না হয়ে উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তোলা হবে। তিনি বলেন, ‘মানুষের জন্য কোনো কিছুই অসম্ভব নয়, যদি আমরা সেটাকে কঠোরভাবে অনুসরণ করি।’
অনুষ্ঠানে সিজিএসের চেয়ার মুনিরা খান বলেন, ‘এই সম্মেলন থেকে আমরা গণতন্ত্র, শান্তি ও মানবাধিকারসহ বৈশ্বিক বিষয়ে জানতে চাই, কথা বলতে চাই। এই সম্মেলনের এজেন্ডা জনগণের জন্য, কোনো রাজনৈতিক দলের নয়। সব ধরনের সমস্যা ও তার ভবিষ্যৎ নিয়ে কথা বলতে চাই। পৃথিবীব্যাপী জনগণ, গণতন্ত্র, মানবাধিকার, নির্বাচন, দারিদ্র্য নিয়ে কথা বলার জন্যই আমাদের এই সম্মেলন।’ সেন্টার ফর গভর্নেন্স স্টাডিজের (সিজিএস) আয়োজনে ঢাকায় শনিবার থেকে শুরু হওয়া আন্তর্জাতিক ভূরাজনৈতিক সম্মেলন ‘বে অব বেঙ্গল কনভারসেশন (বিওবিসি) ২০২৪’ এর তৃতীয় আসরটি চলবে সোমবার পর্যন্ত।
এবারের আয়োজনে কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশসহ বেশকিছু প্রতিষ্ঠান পার্টনার হিসেবে সম্পৃক্ত হয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে ইউএসএএইড, ইউনাইটেড ন্যাশনস বাংলাদেশ, ইউএনডিপি, ম্যাক্স গ্রুপ, এয়ার এশিয়া, দ্য এশিয়া ফাউন্ডেশন, সিটি ব্যাংক, অস্ট্রেলিয়ান হাই কমিশন বাংলাদেশসহ আরও কিছু প্রতিষ্ঠান।
নানা বিষয় সমাধানের জন্য আমাদের আরও ধৈর্যের প্রয়োজন: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
অনুষ্ঠানে অন্তর্বর্তী সরকারকে নিয়ে দেশের মানুষের প্রত্যাশা অনেক উঁচুতে বলে মন্তব্য করেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। কিন্তু ধৈর্য একেবারেই কম বলেন তিনি। উপদেষ্টা বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, নানা বিষয়ের সমাধানের জন্য আমাদের আরও কিছুটা ধৈর্যের প্রয়োজন। রাজনীতিবিদ, তরুণ প্রজন্মসহ সমাজের সবাই অংশের এই ধৈর্যের প্রয়োজন।’ পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেছেন, বঙ্গোপসাগরকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের আলাদা আলাদা স্বার্থ রয়েছে। অন্যান্য নানা ইস্যুর পাশাপাশি রোহিঙ্গা ইস্যুর পরিপ্রেক্ষিতে বঙ্গোপসাগর বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গত আট বছরে এই সংকট নিরসনে বড় প্রতিবেশীর কাছ থেকে সহযোগিতা প্রত্যাশার চেয়ে কম।
তিনি বলেন, ‘প্রতিবেশীদের বিষয়টিকে আমি এভাবে দেখি যে, তাদের নিজেদের স্বার্থ আছে বলে আমাদের পাশে এসে সমস্যার সমাধান তারা করেনি। ফলে এই সমস্যা আমাদের জন্য বড় ধরনের বোঝা তৈরি করেছে। এটা শুধু বাংলাদেশের জন্যই হুমকি হয়ে থাকবে না, তা ছড়িয়ে পড়বে অন্যখানেও।’ গত ১০০ দিনে অন্তর্বর্তী সরকারের অর্জনের প্রসঙ্গ টেনে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘আমরা কি আসলেই কিছু অর্জন করিনি? আমি আগে পত্রিকায় লিখতাম, টিভিতে কথা বলতাম। আমার সীমারেখা কতটা, সেটা আমি জানতাম। আমি সেই সীমারেখার কাছাকাছি যেতাম। কিন্তু সীমা অতিক্রমের সাহস দেখাতে পারতাম না। পশ্চিমে যারা অবস্থান করেন, তারাই স্বাধীনভাবে কথা বলতে পারতেন। দেশের বাইরে যারা থাকতেন। দেশের ভেতরে যারা থাকতেন, তাদের সরকারের পদক্ষেপের সমালোচনা করতে পারতেন না। এখন দেশের ভেতরে যারা আছেন, তারাও অবাধে অন্তর্বর্তী সরকারের পদক্ষেপের সমালোচনা করছেন। এটা দেখে আমি অত্যন্ত খুশি। এই একটি বিষয় আমরা এরই মধ্যে অর্জন করেছি। আমি আশা করব, ধৈর্য ধারণ করলে, দেশে এবং দেশের বাইরের সব বন্ধুর সহায়তায় সব কটি না হলে তরুণ জনগোষ্ঠীর অধিকাংশ প্রত্যাশা আমরা পূরণ করতে পারব।’
এ যাবৎকালের সবচেয়ে বড় আয়োজন এবারের সম্মেলন: জিল্লুর রহমান
অনুষ্ঠানে সিজিএসের নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে উদ্বোধনী বক্তা হিসেবে পেয়ে আমরা সম্মানিত বোধ করছি।’তিনি বলেন, ‘সিজিএস আয়োজিত এ যাবৎকালের সবচেয়ে বড় আয়োজন এবারের সম্মেলন। সম্মেলনে ৮০ টিরও বেশি দেশ থেকে ২০০ জনের বেশি আলোচক, ৩০০ জন প্রতিনিধি এবং ৮০০ জন অংশগ্রহণকারী একত্রিত হয়েছেন। এর আগে শুক্রবার সিজিএসের নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমান বলেন, ‘ভূ-রাজনীতি বিষয়ক এ সম্মেলন ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে ট্র্যাক-২ ডিপ্লোম্যাসিকে সহজতর করার একটি প্ল্যাটফর্ম।
ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে শান্তি, স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধির জন্য হুমকি হিসেবে বিবেচিত হয়, এমন সমস্যাগুলো চিহ্নিত করার ওপর গুরুত্বারোপ করা হবে এ সম্মেলনে। জিল্লুর রহমান বলেন, ‘সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ গত দুই বছর ধরে বার্ষিক বে অব বেঙ্গল কনভারসেশনের আয়োজন করে আসছে। বিগত বছরগুলোতে এ সম্মেলন আয়োজন করতে সরকারের পক্ষ থেকে নানা বাধা দেওয়া হয়েছিল। তবে এ বছর আমরা অনেক সহযোগিতা পাচ্ছি। এটি আমাদের তৃতীয় বছর এবং আমাদের সবচেয়ে বড় আয়োজন করতে যাচ্ছি।’ এবারের সংলাপে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা এবং ভুল তথ্যের ক্রমবর্ধমান বিস্তার, সবুজ শক্তি ও জলবায়ু পরিবর্তন, বিশ্ববাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সমস্যা, বৈশ্বিক সংঘাত ও ভূরাজনীতির ল্যান্ডস্কেপ এবং মানবাধিকারের বিষয়গুলোর আলোচনায় জোর দেওয়া হয়েছে। আয়োজনে ৭৭টি সেশন হবে। গবেষক, শিক্ষক, লেখক, সমরবিদ, সাংবাদিক, ব্যবসায়ী, রাজনীতিকসহ বিভিন্ন পেশার আট শতাধিক ব্যক্তি এতে অংশ নেবেন। উদ্যোগটির মূল লক্ষ্য এই অঞ্চলে দ্রুত বিকাশমান পরিস্থিতিকে বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে জানা ও বোঝা।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চাকরিকে অত্যাবশ্যকীয় সেবা আখ্যায়িত করে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কর্মস্থলে ফিরে যেতে বলা হয়েছে। অন্যতায় সরকার কঠোর পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে। রবিবার (২৯ জুন) অন্তর্বর্তী সরকারের এক বিবৃতিতে এমন কথা বলা হয়েছে।
এতে বলা হয়, বাংলাদেশের বাজেট ব্যবস্থাপনায় উন্নয়নমুখী কার্যক্রম পরিচালনার সবচেয়ে বড় সীমাবদ্ধতা হলো দুর্বল রাজস্ব সংগ্রহ ব্যবস্থা। রাষ্ট্রের প্রয়োজনের তুলনায় আমাদের রাজস্ব সংগ্রহ অনেক কম। এর মূল কারণ হলো আমাদের রাজস্ব আহরণ ব্যবস্থাপনার নানা দুর্বলতা, অনিয়ম ও দুর্নীতি।
এমন পরিপ্রেক্ষিতে অন্তর্বর্তী সরকার সব অংশীজনের পরামর্শ অনুযায়ী জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) পুনর্গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে বিবৃতি জানানো হয়েছে।
এতে আরও বলা হয়, সরকার গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছে যে, রাজস্ব সংস্কারের কাজকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারী নজিরবিহীনভাবে গত ২ মাস ধরে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য, আমদানি-রপ্তানি এবং রাজস্ব আদায় কার্যক্রম অন্যায় ও অনৈতিকভাবে ব্যাহত করে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করে আন্দোলনের নামে চরম দুর্ভোগ তৈরি করেছে, যা সম্পূর্ণভাবে অগ্রহণযোগ্য।
সরকার জানিয়েছে, সংস্কারের বিরোধিতা ছাড়াও অর্থ বছরের শেষ ২ মাসে তারা রাজস্ব আদায় কার্যক্রম মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত করেছে। এই তথাকথিত আন্দোলন পরিকল্পিত ও দুরভিসন্ধিমূলক, যা জাতীয় স্বার্থ এবং নাগরিক অধিকারের চরম পরিপন্থি।
‘সরকারের পক্ষ থেকে রাজস্ব বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দাবি বিবেচনায় নেওয়ার সুস্পষ্ট ঘোষণা দেয়া হয় এবং আলোচনায় আসার আহ্বান জানালেও তারা তা অগ্রাহ্য করে।’
বিবৃতিতে বলা হয়, আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার গ্রহণযোগ্য সমাধান না করে তারা আন্দোলনের নামে অনমনীয় অবস্থান নিয়ে ক্রমাগত দেশের অর্থনীতির ক্ষতি করে চলেছে।
‘এ পরিস্থিতিতে, অতি জরুরি আমদানি-রপ্তানি ও বৈদেশিক বাণিজ্যের কার্যক্রম চলমান রাখার জাতীয় স্বার্থে সরকার জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের আওতাধীন সব কাস্টমস হাউস, আইসিডি, বন্ড কমিশনারেট এবং শুল্ক স্টেশনের সর শ্রেণির চাকরিকে অত্যাবশ্যকীয় সার্ভিস ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’
অন্তর্বর্তী সরকার জানিয়েছে, আমরা আশা করি, অনতিবিলম্বে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কর্মস্থলে ফিরে যাবেন এবং আইনবিরোধী ও জাতীয় স্বার্থ বিধ্বংসী কর্মকাণ্ড থেকে সরে আসবেন। অন্যথায় দেশের জনগণ ও অর্থনীতির সুরক্ষায় সরকার কঠোর হতে বাধ্য হবে।
দীর্ঘদিন ধরে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকায় পুলিশের ১৪ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে। সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত আলাদা প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮-এর বিধি ৩(গ) অনুসারে ‘পলায়নের অপরাধে’ অভিযুক্ত হওয়ায় বিধি ১২ উপবিধি (১) অনুযায়ী সংশ্লিষ্টদের সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। বরখাস্তকালীন সময়ে তারা খোরপোষ ভাতা প্রাপ্য হবেন। জনস্বার্থে এ আদেশ জারি করা হয়েছে বলেও প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়।
এসব কর্মকর্তার মধ্যে তিনজন পুলিশ সুপার, আটজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও দুজন সহকারী পুলিশ সুপার পদমর্যাদার কর্মকর্তা রয়েছেন।
বরখাস্ত হওয়া ১৪ কর্মকর্তা হলেন, বরিশালে র্যাব-৮ এর সিপিএসসির ভারপ্রাপ্ত কোম্পানি কমান্ডার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাসুদুর রহমান মনির, ডিএমপির সাবেক অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার এস. এম. শামীম, সুনামগঞ্জের ইন-সার্ভিস ট্রেনিং সেন্টারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রুবাইয়াত জামান, উখিয়ায় ৮ এপিবিএনের সহকারী পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ইমরুল, রাঙ্গামাটির ডিআইজি এপিবিএনের (পার্বত্য জেলাসমূহ) কার্যালয়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হাসানুজ্জামান মোল্ল্যা, নারায়ণগঞ্জের সাবেক পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেল, রংপুর জেলার সাবেক পুলিশ সুপার মো. শাহজাহান, রাজারবাগের পুলিশ টেলিকম সংস্থার টেলিকম অফিসার (এএসপি) মাহমুদুল হাসান, কক্সবাজার ১৬ এপিবিএনের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইফতেখারুল ইসলাম, ঢাকার সাবেক পুলিশ সুপার এটিইউ মোহাম্মদ ছানোয়ার হোসেন, সিলেটের ইন-সার্ভিস ট্রেনিং সেন্টারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আখতারুল ইসলাম, টাঙ্গাইলের নৌপুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এস. এম জাহাঙ্গীর হাছান, জামালপুরের ইন-সার্ভিস ট্রেনিং সেন্টারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিশু বিশ্বাস ও রংপুর মেট্টোপলিটন পুলিশের সহকারী পুলিশ কমিশনার আল ইমরান হোসেন।
রাষ্ট্র সংস্কারের বিভিন্ন বিষয়ে একমত হয়ে জুলাই সনদ তৈরির লক্ষ্যে আজ দ্বিতীয় দফায় সপ্তম দিনের মত দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।
আজ (রোববার) সকাল সাড়ে দশটায় রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমির দোয়েল হলে এ আলোচনার আনুষ্ঠানিক সূচনা হয়।
আলোচনায় সভাপতিত্ব করছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ।
এছাড়া, কমিশনের সদস্য হিসেবে উপস্থিত রয়েছেন- বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ড. বদিউল আলম মজুমদার, সফর রাজ হোসেন, ড. ইফতেখারুজ্জামান, ড. মো. আইয়ুব মিয়া ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আজকের আলোচনায় অংশ গ্রহণ করছে- বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), গণঅধিকার পরিষদ, গণসংহতি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি ও আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টিসহ ৩০টি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা।
আজ আলোচনার শুরুতে সূচনা বক্তব্য দেওয়ার সময় কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ বলেন, কমিশন আপনাদের প্রতিপক্ষ নয়। আমরা রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য সরকারের অর্পিত গুরুত্বপূর্ণ একটি দায়িত্ব পালন করছি মাত্র।
তিনি বলেন, বিভিন্ন সংস্কার কমিশনের দেওয়া প্রস্তাব নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করার পরিপ্রেক্ষিতে দলগুলোর মতামতের ভিত্তিতে কমিশনকে বিভিন্ন বিষয়ে নমনীয় হতে হয়েছে। এর একটা অন্যতম কারণ হচ্ছে এই যে, আপনারাই আসলে জনগণের একটা বিরাট অংশকে প্রতিনিধিত্ব করেন। আর আপনাদের মধ্য দিয়েই এক সময় দেশ শাসিত হবে।
ড. আলী রীয়াজ বলেন, আলোচনার মধ্য দিয়ে বিভিন্ন ধরনের প্রস্তাব আমাদের কাছে এসেছে এবং সেগুলো আমরা ধারণ করার চেষ্টা করেছি। কেননা আলোচনার মধ্যে আমাদের একটা নির্দিষ্ট জায়গায় যেতে হবে। আর একদিন পরই জুলাই এবং জুলাই মাসের মধ্যেই জাতীয় সনদে উপনীত হওয়ার জন্য কমিশন প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
তিনি বলেন, আমরা আশা করেছিলাম, শহীদ আবু সাঈদের শাহাদাত বার্ষিকীতেই আমরা সকলে মিলে জুলাই সনদে স্বাক্ষর করব। কিন্তু কাজটি সম্ভব হবে কি-না, সেটা নির্ভর করছে আপনাদের ওপর। তবে এই জুলাই মাসের মধ্যেই আমাদের জুলাই সনদ তৈরির প্রক্রিয়ার একটি পরিণতির মধ্যে যেতে হবে।
অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, রাষ্ট্র সংস্কারের বিষয়টি একটি বিশাল ব্যাপার। ভবিষ্যতে আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে যে, জনগণের আকাঙ্ক্ষার বিপরীতে গিয়ে যেন কোনো রকম সংবিধান সংস্কার না হয়। বিষয়টিকে সাংবিধানিকভাবে নিশ্চিত করা দরকার। বর্তমানে ব্যক্তির ক্ষমতা সীমিত করার প্রয়োজন দেখা দিয়েছে, কারণ এর আগে শেষ পর্যন্ত শাসনের ক্ষেত্রে একটি ব্যক্তিতান্ত্রিকতা সৃষ্টি হয়েছিল এবং ভবিষ্যতেও সে আশঙ্কা আমরা উড়িয়ে দিতে পারছি না। তাই সাংবিধানিকভাবে, আইনি ব্যবস্থার ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতার মাধ্যমে এ রক্ষাকবচগুলো আমাদের তৈরি করতে হবে।
জুলাই শহীদ ও আহতদের আত্মত্যাগ ও বীরত্বের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, কত নিপীড়ন, কত প্রাণ, আপনাদের নিজেদের কত কর্মীর নির্যাতনের মধ্য দিয়ে আমরা আজ এখানে এসেছি। আমাদের একটি পর্যায়ে পৌঁছাতে হবে। এটি আমাদের দায়, আমাদের দায়িত্ব।
সকলের ওপরে যে দায়িত্ব অর্পিত হয়েছে, সেটি পালন করতে কেউ যেন কুণ্ঠিত না হয়- সে আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের সেই শহীদ, আহত ও নির্যাতিত মানুষগুলোর প্রতি শ্রদ্ধা প্রকাশ করার এটাই একমাত্র উপায়।
কমিশন সূত্রে জানা গেছে আজকের আলোচনায় প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ, রাষ্ট্রপতি নির্বাচন পদ্ধতি, রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি ও সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণকল্পে স্বতন্ত্র কমিটি গঠনসহ বিভিন্ন অমীমাংসিত বিষয়ে অধিকতর আলোচনা হবার কথা রয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ২৫ জুন (বুধবার) কমিশনের সাথে রাজনৈতিক দলগুলোর আলোচনার শেষে দলগুলোকে নিজেদের মধ্যে মতানৈক্যর বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করতে তিন দিন বিরতি দেওয়া হয়।
দ্রুততম সময়ের মধ্যে ছাড় দিয়ে, এগিয়ে এসে রাষ্ট্রকল্যাণের স্বার্থে নূন্যতম বিষয়গুলোতে ঐকমত্য গড়ে জনগণের বহুল আকাঙ্ক্ষিত জুলাই সনদ তৈরির জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে কমিশন।
ফেনীতে ট্রেনের ধাক্কায় সিএনজিচালিত অটোরিকশার যাত্রী মা ও ছেলের মৃত্যু হয়েছে। সিগন্যাল না মেনে অটোরিকশাটি রেললাইনে উঠে গেলে এ দুর্ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
শনিবার (২৮ জুন) রাতে ফেনী শহরের গোডাউন কোয়ার্টার রেলগেট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন— ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলার পাঠাননগর ইউনিয়নের হাফেজুল ইসলাম (৪০) ও তার মা ফাতেমাতুজ্জোহরা (৬৩)।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রামগামী চট্টলা এক্সপ্রেস ট্রেনটি ফেনী রেলস্টেশনের কাছাকাছি পৌঁছালে একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা সিগন্যাল অমান্য করে রেললাইনে উঠে পড়ে। এ সময় ট্রেনটি এসে অটোরিকশাটিকে সজোরে ধাক্কা দিলে সেটি দুমড়ে-মুচড়ে যায়। এতে অটোরিকশায় থাকা দুই যাত্রী গুরুতর আহত হন।
প্রায় সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয়রা তাদের ফেনী ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে হাফেজুল ইসলামকে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। পরে তার মাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়। ঢামেকে নেওয়ার পথে ফাতেমাতুজ্জোহরাও মারা যান বলে জানান তাদের আত্মীয় মাসুম বিল্লাহ।
প্রত্যক্ষদর্শী দিদারুল ইসলাম বলেন, ‘অটোরিকশাটি হাসপাতাল থেকে ট্রাংক রোডের দিকে যাচ্ছিল। সিগন্যাল অমান্য করে রেললাইনে উঠলে ট্রেন এসে ধাক্কা দেয়।’
তিনি আরও জানান, অটোরিকশায় চালকসহ পাঁচজন ছিলেন। দুর্ঘটনার মুহূর্তে তিনজন নেমে পড়ায় তারা রক্ষা পান।
ফেনী রেলস্টেশন মাস্টার মো. হারুন জানান, চট্টলা এক্সপ্রেস ট্রেনটি ফেনীর প্ল্যাটফর্মে প্রবেশের আগমুহূর্তে, সন্ধ্যা ৭টা ৪০ মিনিটে এ দুর্ঘটনা ঘটে। তবে দুর্ঘটনার পরও রেল চলাচলে কোনো বিঘ্ন ঘটেনি।
এ বিষয়ে ফেনী রেলস্টেশনে দায়িত্বপ্রাপ্ত রেলওয়ে পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) ইকবাল হোসেন বলেন, ‘নিহতদের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় লাকসাম জিআরপি থানায় একটি অপমৃত্যু মামলার প্রক্রিয়া চলছে।’
এনবিআর সংস্কার ও চেয়ারম্যানের অপসারণের দাবিতে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের 'শাটডাউন' কর্মসূচির কারণে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। গতকালের আন্দোলনে চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দরের কার্যক্রম প্রায় অচল হয়ে পড়ে।
এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের আহ্বানে কর্মকর্তারা রাজধানীতে 'মার্চ টু এনববিআর' কর্মসূচি পালন করেন। আন্দোলনকারীরা দাবি করেন, বর্তমান চেয়ারম্যানকে অপসারণ ছাড়া সংস্কার সম্ভব নয়। তবে ১২টি ব্যবসায়ী সংগঠন চেয়ারম্যানের অপসারণের বিরোধিতা করে বিবৃতি দিয়েছে।
চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্য খালাস ও শুল্কায়ন কার্যক্রম বন্ধ থাকায় পণ্যবাহী ট্রাকের দীর্ঘ সারি তৈরি হয়েছে। বন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, আগে নিবন্ধন হওয়া জাহাজ থেকে পণ্য ওঠানামা চললেও নতুন জাহাজের ক্ষেত্রে সমস্যা হচ্ছে।
মোংলা, সোনামসজিদ, বেনাপোল ও বাংলাবান্ধা বন্দরেও একই অবস্থা। তবে আখাউড়া বন্দরে কার্যক্রম স্বাভাবিক ছিল বলে জানা গেছে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মকর্তাদের আন্দোলনের কারণে প্রতিদিন ২,৫০০ কোটি টাকার আমদানি-রপ্তানি ব্যাহত হচ্ছে উল্লেখ করে চলমান অচলাবস্থা নিরসনে আলোচনা করে এর সমাধান চেয়েছেন ব্যবসায়ী নেতারা।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যানের অপসারণের দাবিতে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচির ফলে আমদানি ও রপ্তানিকারকদের ওপর বিপর্যয় নিয়ে আসবে, যা হবে দেশের অর্থনীতির জন্য একটি অশনিসংকেত। গতকাল শনিবার রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন ব্যবসায়ীরা।
কমপ্লিট শাটডাউনের ঘোষণায় দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী ও শিল্প উদ্যোক্তারা চরম উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তারা সমস্যা নিরসনে আর সময় ব্যয় না করে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের নেতৃত্বে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগ যথা অর্থ মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও বিডা যৌথভাবে আন্দোলনরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসা অতীব জরুরি বলে মনে করেন। একই সঙ্গে দেশের অর্থনীতির স্বার্থে এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কলম বিরতি/কমপ্লিট শাটডাউনের মতো কর্মসূচি প্রত্যাহার করে কাজে যোগদান করার আহ্বান জানিয়েছেন।
‘জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) বর্তমান অচলাবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের ব্যবসায়ী ও শিল্প উদ্যোক্তাদের সংবাদ সম্মেলন’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে লিখিত বক্তব্য পড়েন বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের (বিসিআই) সভাপতি আনোয়ার-উল-আলম চৌধুরী (পারভেজ)।
আনোয়ার-উল-আলম চৌধুরী বলেন, এনবিআরের অন্তর্ভুক্ত দপ্তরগুলোর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কলম বিরতির পরিপ্রেক্ষিতে দেশের আমদানি-রপ্তানি ব্যবসা মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। উক্ত দপ্তরগুলোর কার্যক্রম সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত চালু থাকায় প্রস্তুত/রপ্তানিকারকরো যথা সময়ে আমদানি করা কাঁচামাল খালাস করতে পারছেন না। ফলে দেশের রপ্তানিতে বর্ধিত লিড টাইম আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাছাড়া পোর্টে/বিমানবন্দরে আমদানি-রপ্তানিযোগ্য পণ্য পড়ে থাকার দরুন বৃষ্টি/রোদে নষ্ট হচ্ছে। আংশিক কর্মঘণ্টার কারণে এক কর্মদিবসের মধ্যে প্রত্যাশিত ইউপি পেতে ১০-১৫ দিন সময় লেগে যাচ্ছে। যাতে রপ্তানি বিলম্বিত হচ্ছে। সৃষ্ট জটিলতার কারণে কিছু কিছু বায়ার ইতোমধ্যে এয়ার শিপমেন্ট ও রপ্তানি আদেশ বাতিলের হুমকি দিয়েছেন। পাশাপাশি পোর্ট ড্যামারেজ নির্ধারিত রেটের চারগুণ হারে পরিশোধ করতে হচ্ছে, যা ‘কস্ট অব ড্রইং বিজনেস’ বাড়িয়ে দিচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বর্তমান জুন-জুলাই মাসে তৈরি পোশাক, চামড়াজাত পণ্য, পাদুকা, সিরামিক, ফার্মাসিউটিক্যাল, এগ্রো প্রসেসিং, প্লাস্টিকসহ সব রপ্তানিমুখী শিল্পের অধিকাংশ কারখানায়ই আগামী শীত মৌসুমের পণ্য তৈরির জন্য চাপ রয়েছে। এই পিক সিজনে কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট ও কাস্টমস হাউজের মতো গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরগুলোর অচলাবস্থার কারণে সঠিক সময়ে পণ্য রপ্তানি করতে না পারলে বায়াররা ক্রয়াদেশ বাতিল ও ভবিষ্যতে নতুন ক্রয়াদেশ প্রদানে অনাগ্রহী হতে পারেন। আন্তর্জাতিক রপ্তানি বাজার কখনো বাংলাদেশের জন্য অপেক্ষা করবে না। এসব অর্ডার পার্শ্ববর্তী দেশে চলে যাবে, যা হবে বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য একটি অপূরণীয় ক্ষতি। এছাড়া উৎপাদিত পণ্য সঠিক সময়ে না পাঠাতে পারলে প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যবসায়িক ও আর্থিকভাবে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হবে।
আনোয়ার-উল-আলম চৌধুরী বলেন, জুন মাসেই ব্যবসায়ীদের ওপর বার্ষিক ব্যাংক ঋণের মুনাফা জমা দেওয়ার একটি চাপ থাকে। এই সময়ে এসব বিরোধের কারণে পণ্য রপ্তানি করতে না পারলে বায়ার কর্তৃক পেমেন্ট রিয়ালাইজেশন হবে না। ফলে ব্যবসায়ীরা একটি কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হচ্ছে। বর্তমানে দেশের রপ্তানিকারী শিল্প নানাবিধ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। এমতাবস্থায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের গৃহীত আন্দোলন বায়ারদের মধ্যে পুনরায় ইমেজ সংকট সৃষ্টি করবে, যা দেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন তথা অর্থনৈতিক উন্নয়নে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, আজ থেকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের অন্তর্ভুক্ত সব দপ্তরের কমর্কর্তা-কর্মচারীরা কমপ্লিট শাটডাউনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। এই সময়ে ওই দপ্তরগুলোর কার্যক্রম বন্ধ হলে তা আমদানি ও রপ্তানিকারকদের ওপর বিপর্যয় নিয়ে আসবে, যা হবে দেশের অর্থনীতির জন্য একটি অশনিসংকেত। সুতরাং ওই আন্দোলন ঘিরে সৃষ্ট স্থবিরতা ও চলমান সংকট দ্রুততার সঙ্গে সমাধান করা অতীব জরুরি।
ব্যবসায়ীরা বলেন, বাংলাদেশের ব্যবসায়ী সম্প্রদায় একটি দক্ষ, হয়রানিমুক্ত জাতীয় রাজস্ব বোর্ড গড়ার লক্ষ্যে এ সার্বিক সংস্কার বা আধুনিকায়নকে সমর্থ করে, যা দেশের অভ্যন্তরীণ ব্যবসা ও আমদানি-রপ্তানিতে যথাযথ সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে রপ্তানি আয় বৃদ্ধি ও রাজস্ব আহরণে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা যায়। তবে সে ক্ষেত্রে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যানের অপসারণ কোনো মতেই কাম্য নয় এবং তা কোনো প্রকার সফলতা নিয়ে আসবে বলে আমরা মনে করি না।
উল্লিখিত পরিস্থিতিতে নিম্নরূপ পদক্ষেপ নিতে সরকারের শীর্ষ কর্তৃপক্ষকে বিশেষভাবে অনুরোধ করেন ব্যবসায়ীরা।
১. জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের আন্দোলনকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে আলোচনা করে ওই প্রতিষ্ঠানের বিবিধ সেবা বিশেষত আমদানি ও রপ্তানি সংশ্লিষ্ট সেবা বন্ধে ঘোষিত কর্মসূচি থেকে অবিলম্বে তাদের সরিয়ে এনে ওই সেবার অব্যাহত প্রবাহ নিশ্চিত করা হোক।
২. উত্তম কর তথা রাজস্ব নীতি প্রণয়ন ও প্রণীত নীতি যথাযথভাবে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের রাজস্ব নীতি প্রণয়ন ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম আলাদাকরণ সংক্রান্ত তর্কিত অধ্যাদেশ সংশ্লিষ্ট সব অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা করে স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর প্রভাবমুক্ত করে আন্তর্জাতিক উত্তম চর্চা ও আমাদের জাতীয় বাস্তবতার আলোকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সামগ্রিক আধুনিকায়নের অংশ হিসেবে পরস্পরের পরিপূরক করে বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান হিসেবে বাস্তবায়ন করা হোক।
৩. জাতীয় রাজস্ব বোর্ডসহ ব্যবসা-বাণিজ্যের সার্বিক উন্নয়নে সংশ্লিষ্ট সব জাতীয় প্রতিষ্ঠানে হয়রানিমুক্ত সেবা প্রদানের লক্ষ্যে এর স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হোক।
৪. বিনিযোগ, ব্যবসাবাণিজ্য, পণ্য সরবরাহ তথা সাপ্লাই চেইনের উন্নয়নে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট অন্য রেগুলেটরি ও ফ্যাসিলিটেটিং প্রতিষ্ঠানগুলোর সামগ্রিক এবং সমন্বিত উন্নয়নের লক্ষ্যে অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করে অনতিবিলম্বে সংস্কার বা আধুনিকায়ন কর্মসূচি গ্রহণ করে সময়াবদ্ধ পরিকল্পনায় বাস্তবায়ন করা হোক।
৫. উপরোক্ত উদ্দেশে অর্থ মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, শিল্প মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো সমন্বিত উদ্যোগ নিতে সরকারের সর্বোচ্চ মহল থেকে নির্দেশ দেওয়া হোক।
সংবাদ সম্মেলনে ব্যবসায়ীরা বলেন, আমরা মনে করি উদ্ভূত সমস্যা নিরসনে মোটেও সময় ব্যয় না করে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের নেতৃত্বে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগ যথা অর্থ মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও বিডা যৌথভাবে আন্দোলনরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসা অতীব জরুরি। আন্দোলনরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ভবিষ্যৎ ন্যায়সঙ্গত সুরক্ষা ও দেশের অর্থনীতি যাতে আর ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সে লক্ষ্যে এখনই জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।
সেই সঙ্গে আন্দোলনরত কর্মকর্তা-কর্মচারী ভাই-বোনদের দেশের অর্থনীতির স্বার্থে কলম বিরতি/কমপ্লিট শাটডাউনের মতো কর্মসূচি প্রত্যাহার করে কোনো প্রকার পূর্বশর্ত ছাড়া অনতি বিলম্বে কাজে যোগদান করার আহ্বান জানাচ্ছি। আমরা বিশ্বাস করি একটি ইনক্লুসিভ আলোচনার মাধ্যমে এ সংকট নিরসন করা সম্ভব। যেখানে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে যৌক্তিক সংস্কার করে সৎ ও দক্ষ কর্মকর্তারা নির্দ্বিধায় আগের মতো জাতির সেবা এবং বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারবেন।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন আইসিসি বাংলাদেশের সভাপতি মাহবুবুর রহমান, বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি মাহমুদ হাসান খান, বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল, লেদারগুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (এলএফএমইএবি) সভাপতি সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর, এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি মীর নাসির হোসেন, বাংলাদেশ সিরামিক ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিসিএমইএ) সভাপতি মঈনুল ইসলাম, বাংলাদেশ ফিনিশড লেদার, লেদার গুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফএলএলএফইএ) চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন আহমেদ মাহিন, বাংলাদেশ প্লাস্টিক গুডস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিজিএমইএ) সভাপতি শামীম আহমেদ, এমসিসিআইর সহ-সভাপতি সিমিন রহমান প্রমুখ।
দেশে মাদকবিরোধী অভিযানে প্রতিনিয়ত লাল রঙের ইয়াবা ট্যাবলেট ধরা পড়লেও এবার ভিন্ন চিত্র দেখা গেল বন্দর নগরী চট্টগ্রামে। ইতিহাসে এই প্রথমবারের মতো ‘সবুজ’ রঙের ইয়াবা উদ্ধার করেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখে ধুলা দিতে মাদক কারবারিরা নতুন এই কৌশল নিয়েছে বলে ধারণা সংশ্লিষ্টদের।
গত ১৯ জুন রাতে চট্টগ্রাম মহানগরীর বায়েজিদ বোস্তামী থানাধীন আতুরার ডিপো এলাকার এবি সিদ্দিক কলোনীতে অভিযান চালায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। উপপরিচালক হুমায়ুন কবির খোন্দকারের সার্বিক তত্ত্বাবধানে অভিযান পরিচালনা করেন পরিদর্শক লোকাশীস চাকমা। অভিযানে সবুজ রঙের ২০০ পিস ইয়াবাসহ ডালিম প্রকাশ বাবু (২৬) নামে এক যুবককে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি ওই এলাকার মৃত আবুল হোসেনের ছেলে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম মেট্রো কার্যালয়ের উপপরিচালক হুমায়ুন কবির খোন্দকার জানান, ‘এটি দেশে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অভিযানে প্রথমবারের মতো সবুজ রঙের ইয়াবা উদ্ধারের ঘটনা। মাদক চক্র নতুন রঙের ইয়াবা ট্যাবলেট তৈরি করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। বিষয়টি আমরা অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করে দেখছি।’
জানা গেছে, বাংলাদেশে বেশির ভাগ ইয়াবা থাকে লাল রঙের। তবে সম্প্রতি বেশ কিছু সাদা রঙের ইয়াবার চালান ধরা পড়েছে। এমনকি হলুদ ও কালো রঙের ট্যাবলেটও মিলেছে। এবার সবুজ রঙের ইয়াবার আবির্ভাব নতুনভাবে চিন্তায় ফেলেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই রঙ পরিবর্তনের কৌশল নিয়েছে মিয়ানমারভিত্তিক মাদক সিন্ডিকেট। তাদের উদ্দেশ্য মাদকের বাজারে নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখা ও নিরাপত্তা বাহিনীকে ধোঁকা দেওয়া।
সীমান্তের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, মিয়ানমারভিত্তিক সিন্ডিকেট এখন লাল রঙ ছাড়াও সাদা, কালো, হলুদ ও সবুজ রঙের ইয়াবা বাজারে ছাড়ছে। এসব নতুন রঙের ইয়াবার চালান তুলনামূলক কম হলেও এর দাম বেশি। কারণ এসব ট্যাবলেটকে ভিন্নমাত্রার ও উচ্চমানের মাদক হিসেবে চালিয়ে দিচ্ছে পাচারকারীরা। এসব ইয়াবা বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের টেকনাফ, উখিয়া, নাইক্ষ্যংছড়ি, রুমা, থানচি, লামা, রামু ইত্যাদি পয়েন্ট দিয়ে দেশে প্রবেশ করছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে আরও জানা যায়, বর্তমানে ইয়াবা শুধু সীমান্তপথে ঢুকেই থেমে নেই, এটি দেশের অভ্যন্তরে সামাজিকভাবে বিস্তার লাভ করছে। কিছু পরিবার এখন এ ব্যবসাকে ‘পেশা’ হিসেবে নিয়েছে। ফলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কৌশলী অভিযান থাকা সত্ত্বেও মাদক ব্যবসা শেকড় গেড়ে ফেলছে সমাজে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রঙ পরিবর্তনের পাশাপাশি ইয়াবার গায়ে ছাপানো থাকে বিভিন্ন কোড বা প্রতীক, যার মাধ্যমে চিহ্নিত করা হয় কোন চক্রের তৈরি এবং কোন বাজারে চালান যাবে। এ ধরনের সাংকেতিক ব্যবস্থাও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারির বাইরে রাখতে চেষ্টা চালায় পাচারকারিরা।
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ জানিয়েছেন, ট্রাফিক পুলিশের সহায়ক হিসেবে শিক্ষার্থীদের যেভাবে পার্টটাইম নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, সেভাবেই তাদের সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে নিয়োগের কথা ভাবছে সরকার।
গতকাল শনিবার ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের নগর ভবনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি।
আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘বিভিন্ন উন্নত দেশের মতো ৫ আগস্টের পরে ট্রাফিক পুলিশের সহায়ক হিসেবে প্রায় এক হাজার শিক্ষার্থীদের পার্টটাইম হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। অনুরূপভাবে আমরা সরকারের বিভিন্ন অফিসে পার্টটাইম চাকরিতে নিয়োগ দিতে চাই শিক্ষার্থীদের।
বিভিন্ন দপ্তরে কিছু পদে ফুল টাইমে স্থায়ী নিয়োগ দরকার হয় না। তাই পার্টটাইমে নিয়োগ দিলে সরকারের ব্যয়ও কমবে, একইসঙ্গে শিক্ষার্থীদেরও আর্থিক সচ্ছলতা আসবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা বিষয়টি নিয়ে কাজ করছি এবং কীভাবে তাদেরকে নিয়োগ দেওয়া যায় সে বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে।’
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব মোহাম্মদ শফিকুল আলম বলেছেন, ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার কোনো গোপন বৈঠক হয়নি। এটা জাস্ট সৌজন্য সাক্ষাৎ। আর গোপন বৈঠক হলে তো প্রেস রিলিজ দিতাম না। আমরাতো সৌজন্য সাক্ষাৎ হয়েছে সেটি জানিয়েই প্রেস রিলিজ দিয়েছি।’
গতকাল শনিবার বিকালে খুলনার সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এসব কথা বলেন।
সাংবাদিকদের উদ্দেশে শফিকুল আলম বলেছেন, ‘আপনারা প্রতিটি মন্ত্রণালয় ভিত্তিক দপ্তরগুলো ধরে ধরে রিপোর্ট করুন। কোথায় কি সংস্কার প্রয়োজন দেখিয়ে দিন।’
আগামী নির্বাচন সম্পর্কে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আগামী নির্বাচনই শুধু নয়, ভবিষ্যতের সব নির্বাচন হবে উৎসবমুখর।’
জনগণ যাতে স্বাচ্ছন্দ্যে ভোট দিতে পারে সেজন্য বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কাজ করছে। ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশনসহ বেশ কয়েকটি জায়গায় সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছে।
খুলনার ক্রীড়াঙ্গনের উন্নয়নের কথা তুলে ধরে প্রেস সচিব বলেন, খুলনাকে বাদ দিয়ে দেশের ক্রীড়াঙ্গনকে এগিয়ে নেওয়া সম্ভব নয়। স্টেডিয়ামের উন্নয়ন সাপেক্ষে খুলনায় যাতে আবারো আন্তর্জাতিক মানের খেলা শুরু করা যায় সে ব্যাপারেও সরকারের পরিকল্পনা রয়েছে।
কোরবানির ঈদে টানা ১০ দিনের ছুটি শেষে জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে আবারও তিন দিনের ছুটি পাচ্ছেন সরকারি চাকরিজীবীরা। সাপ্তাহিক দুদিন ছুটি মিলিয়ে টানা তিন দিনের ছুটি থাকছে জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে। এটি সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য সুখবর।
জানা গেছে, আগামী ৬ জুলাই রোববার পবিত্র আশুরা পালিত হবে। এদিন সরকারি ছুটি থাকবে। এর আগের দুদিন অর্থাৎ ৪ ও ৫ জুলাই (শুক্র ও শনিবার) সাপ্তাহিক ছুটি মিলিয়ে তিন দিন টানা ছুটি পাবেন তারা। সোমবার (৭ জুলাই) কাজে ফিরবেন তারা।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশের আকাশে বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) ১৪৪৭ হিজরি সনের পবিত্র মহররম মাসের চাঁদ দেখা গেছে। ফলে ২৭ জুন শুক্রবার থেকে পবিত্র মহররম মাস গণনা করা হয়েছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে আগামী ৬ জুলাই (রোববার) পবিত্র আশুরা পালিত হবে।
উল্লেখ্য, এবার পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে টানা ১০ দিন ছুটি ভোগ করেছেন সরকারি চাকরিজীবীরা। এর আগে গত পবিত্র ঈদুল ফিতরে সরকারি ছুটি ছিল ৯ দিন।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মুখপাত্র মাওলানা গাজী আতাউর রহমান দলের ১৬ দফা ঘোষণা করেছেন। শনিবার (২৩ জুন) রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মহাসমাবেশ থেকে এই ঘোষণাপত্র পাঠ করা হয়।
১৬ দফা ঘোষণাপত্রে রাষ্ট্রীয় সংস্কার, বিচার ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বমূলক(পিআর) নির্বাচন গ্রহণকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে।
সংবিধানের নির্দেশিকা নীতিগুলোর মধ্যে ‘আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস’ পুনঃস্থাপন, সংসদের উভয় প্রস্তাবিত কক্ষে আনুপাতিক ভোটদান (পিআর) পদ্ধতি চালু এবং বৈষম্যহীন শোষণ নিপীড়ন ও দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ বিনির্মাণে আগামী মাসে ‘জুলাই সনদ’ ঘোষণার আহ্বান জানানো হয়েছে।
ভবিষ্যতের স্বৈরতন্ত্রকে রোধ করতে দলটি দ্রুত, মৌলিক সংস্কার, জনপ্রশাসন পুনর্গঠন, নির্বাচনে সমান সুযোগ নিশ্চিত করার জন্য এবং ‘পতিত ফ্যাসিবাদের’ সহযোগী হিসেবে চিহ্নিত কর্মকর্তাদের অপসারণের আহ্বান জানিয়েছে।
দুর্নীতির বিচার, পলাতকদের ফিরিয়ে আনা, পাচার করা অর্থ পুনরুদ্ধার এবং চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসবাদ এবং হত্যার বিরুদ্ধে কঠোর প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্যও জোর দেওয়া হয়েছে ঘোষণাপত্রে।
ঘোষণাপত্রে ভারতের সঙ্গে সকল চুক্তি প্রকাশ এবং যেকোনো ‘রাষ্ট্রবিরোধী’ চুক্তি বাতিলের দাবি জানানো হয়েছে। এটি পরবর্তী জাতীয় নির্বাচনের আগে সকল স্তরের স্থানীয় নির্বাচন সম্পন্ন করার এবং একটি নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে এই ধরনের নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য আইন প্রণয়নের দাবি জানিয়েছে।
দলটি চিহ্নিত দুর্নীতিবাজ ব্যক্তি, ঋণ খেলাপি এবং অপরাধীদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে অযোগ্য ঘোষণা করার দাবি জানিয়েছে। একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনী পরিবেশ, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা প্রত্যাহার এবং ধর্ম ও রাষ্ট্রের প্রতি বিরূপ ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে জাতীয় ঐক্যেরও আহ্বান জানিয়েছেন দলটি।
ইসলামী আন্দোলন সার্বভৌমত্ব রক্ষা, নাগরিকদের জীবন ও সম্পত্তি রক্ষা, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখা এবং টেকসই শান্তি ও অগ্রগতি নিশ্চিত করার জন্য নির্বাচনসহ শাসনব্যবস্থার প্রতিটি স্তরে ইসলামী মূল্যবোধ অনুশীলনের আহ্বান জানানো হয়েছে ঘোষণায়।
এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তের ঊর্ধ্বগতির মধ্যে বরিশালে একজনের মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) সকাল থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় এই মৃত্যু হয়। আর এই সময়ের মধ্যে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে সারা দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরও ২৬২ জন।
শনিবার (২৮ জুন) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ অ্যান্ড ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্তের হারেও সর্বোচ্চ অবস্থানে রয়েছে বরিশাল বিভাগ। এই সময়ের মধ্যে বিভাগটিতে নতুন করে মশাবাহিত রোগটিতে আক্রান্ত হয়েছেন ১৪১ জন।
বিজ্ঞপ্তি থেকে পাওয়া তথ্যানুসারে, নতুন আক্রান্তের মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৪৮ জন। আর ঢাকার বাইরের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরও ২১৪ জন।
বিজ্ঞপ্তি থেকে পাওয়া তথ্য অনুসারে, চলতি বছর আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত ৪১ জনের মৃত্যু হয়েছে, যাদের মধ্যে ৫৬ দশমিক ১০ শতাংশ পুরুষ এবং ৪৩ দশমিক ৯০ শতাংশ নারী।
একই সময়ে (১ জানুয়ারি থেকে ২৮ জুন) পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন মোট ৯ হাজার ৪৮৪ জন। এর মধ্যে ৫৮ দশমিক ৯০ শতাংশ পুরুষ এবং ৪১ দশমিক ১০ শতাংশ নারী।
নারী শিক্ষার্থীকে মানসিক নিপীড়ন ও যৌন হেনস্তার অভিযোগে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পবিপ্রবি) ডিজাস্টার রিস্ক ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অধ্যাপক ড. এ. কে. এম. আবদুল আহাদ বিশ্বাসকে তিন বছরের জন্য সহযোগী অধ্যাপক পদে অবনমিত করা হয়েছে।
সম্প্রতি প্রকাশিত বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মো. ইকতিয়ার উদ্দিনের স্বাক্ষরিত ১৯ জুনের এক অফিস আদেশে এ তথ্য জানানো হয়।
চাকরি সংক্রান্ত একটি তদন্ত কমিটির সুপারিশ পর্যালোচনা করে ৩০ এপ্রিল ২০২৫ তারিখে অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের রিজেন্ট বোর্ডের ৫৫তম সভায় সর্বসম্মতিক্রমে এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় বলে আদেশে উল্লেখ করা হয়েছে।
আদেশ অনুযায়ী, অবনমনকালীন তিন বছর ড. আহাদ বিশ্বাস কোনো ক্লাস নিতে পারবেন না। পরীক্ষার দায়িত্ব, শিক্ষার্থীদের গবেষণার তত্ত্বাবধান কিংবা শিক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ থেকেও তাকে বিরত থাকতে হবে। এছাড়া, এ সময় কোনো অসৌজন্যমূলক আচরণ বা পূর্বের অভিযোগের পুনরাবৃত্তি ঘটলে উপাচার্য তাকে কোনো কারণ দর্শানো ছাড়াই চাকরিচ্যুত করতে পারবেন। এই বিষয়ে তার আপিল করার সুযোগও রাখা হয়নি।
তবে তিন বছর পর নির্ধারিত শর্ত পূরণ সাপেক্ষে তিনি পূর্বের পদ ও স্কেলে পশু বিজ্ঞান বিভাগে যোগ দিতে পারবেন। উল্লেখযোগ্য যে, অবনমনকালীন এই সময়সীমা তার সক্রিয় চাকরিকাল হিসেবে গণ্য হবে না।
গত বছরের ১২ ডিসেম্বর এক নারী শিক্ষার্থীকে হেনস্তার অভিযোগ ওঠার পর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ড. আহাদ বিশ্বাসকে তাৎক্ষণিকভাবে সব শিক্ষা ও পরীক্ষা কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দেয় এবং সাময়িকভাবে বরখাস্ত করে।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অনুষদের ২০১৮-১৯ সেশনের শিক্ষার্থী। তার অভিযোগে বলা হয়, ওই শিক্ষক দীর্ঘদিন ধরে তাকে মানসিকভাবে নিপীড়ন করতেন, ব্যক্তিগতভাবে আক্রমণ ও অপমানজনক মন্তব্য করতেন এবং একাধিকবার যৌন হেনস্তার চেষ্টা করেন। এ অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তদন্ত কমিটি গঠন করে।
এছাড়াও ড. আহাদ বিশ্বাসের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের নাম্বার আটকিয়ে দেওয়া, পরীক্ষায় অনৈতিকভাবে নম্বর কেটে দেওয়া এবং টানা ৪-৫ ঘণ্টা ধরে অনলাইন ক্লাস নেওয়ার অভিযোগও পাওয়া গেছে। গত বছরের ১৮ নভেম্বর, ২০১৮-১৯ বর্ষের শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে এসব অভিযোগ নিয়ে রেজিস্ট্রার বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে ড. আহাদ বিশ্বাসের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।