আলোচিত ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার আপিল ও ডেথ রেফারেন্সের ওপর আজ রোববার রায় ঘোষণা করবেন হাইকোর্ট। বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করবেন।
গতকাল শনিবার আসামিপক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে এ মামলায় ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর বিচারিক আদালত সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর ও বিএনপি নেতা আবদুস সালাম পিন্টুসহ ১৯ জনের মৃত্যুদণ্ড দেন। একইসঙ্গে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান (বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান) তারেক রহমানসহ ১৯ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয় অপর ১১ আসামিকে। পরে ওই বছরের ২৭ নভেম্বর মামলার বিচারিক আদালতের রায় প্রয়োজনীয় নথিসহ হাইকোর্টের ডেথ রেফারেন্স শাখায় পৌঁছে। পাশাপাশি কারাবন্দি আসামিরা আপিল করেন।
২০২২ সালের ডিসেম্বরে এ মামলার আপিল শুনানি বিচারপতি সহিদুল করিমের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে শুরু হয়। এর মধ্যে ওই বেঞ্চ পুর্নগঠন হয়। এ কারণে নতুন বেঞ্চে আবার শুনানি শুরু হয়েছে।
বিচারিক আদালতের রায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন— লুৎফুজ্জামান বাবর, আব্দুস সালাম পিন্টু, তার ভাই মাওলানা তাজউদ্দিন, হুজির সাবেক আমির ও ইসলামিক ডেমোক্রেটিক পার্টির আহ্বায়ক মাওলানা শেখ আবদুস সালাম (কারাগারে মারা যান), কাশ্মীরি জঙ্গি আব্দুল মাজেদ ভাট, আবদুল মালেক ওরফে গোলাম মোস্তফা, মাওলানা শওকত ওসমান, মহিবুল্লাহ ওরফে মফিজুর রহমান, মাওলানা আবু সাঈদ ওরফে ডা. জাফর, আবুল কালাম আজাদ ওরফে বুলবুল, মো. জাহাঙ্গীর আলম, হাফেজ মাওলানা আবু তাহের, হোসাইন আহমেদ তামিম, মঈন উদ্দিন শেখ ওরফে মুফতি মঈন, মো. রফিকুল ইসলাম, মো. উজ্জ্বল, এনএসআই’র সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুর রহিম (কারাগারে মারা যান), হানিফ পরিবহনের মালিক বিএনপি নেতা মোহাম্মদ হানিফ।
পরিকল্পনা ও অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে হত্যা করার অভিযোগে দণ্ডবিধির ৩০২/১২০খ/৩৪ ধারায় দোষী সাব্যস্ত করে তাদের মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত ফাঁসিতে ঝুলিয়ে রাখার নির্দেশ দেওয়ার পাশাপাশি প্রত্যেককে এক লাখ টাকা করে জরিমানা করেন আদালত।
যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন— তারেক রহমান, খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক উপদেষ্টা হারিছ চৌধুরী, বিএনপি নেতা কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ, হুজি সদস্য হাফেজ মাওলানা ইয়াহিয়া, শাহাদাৎ উল্লাহ ওরফে জুয়েল, মাওলানা আবদুর রউফ (কারাগারে মারা যান), মাওলানা সাব্বির আহমেদ, আরিফ হাসান ওরফে সুমন, আবু বকর ওরফে হাফেজ সেলিম মাওলাদার, মো. আরিফুল ইসলাম, মহিবুল মুত্তাকিন ওরফে মুত্তাকিন, আনিসুল মুরছালিন ওরফে মুরছালিন, মো. খলিল ওরফে খলিলুর রহমান, জাহাঙ্গীর আলম বদর, মো. ইকবাল ওরফে ইকবাল হোসেন, লিটন ওরফে মাওলানা লিটন, মুফতি শফিকুর রহমান, মুফতি আব্দুল হাই, রাতুল আহমেদ ওরফে রাতুল বাবু।
তাদের দণ্ডবিধির ৩০২/১২০খ/৩৪ ধারায় দোষী সাব্যস্ত করে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়ার পাশাপাশি প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক বছর সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
এছাড়া পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজি) মো. আশরাফুল হুদা ও শহুদুল হক, বিএনপি চেয়ারপারসন ও তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ভাগনে লেফটেন্যান্ট কমান্ডার (অব.) সাইফুল ইসলাম ডিউক, লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) সাইফুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার, ডিজিএফআই’র মেজর জেনারেল (অব.) এটিএম আমিন, ডিএমপির সাবেক উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) খান সাঈদ হাসান, আরেক সাবেক উপ-কমিশনার (পূর্ব) ওবায়দুর রহমান খান, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক খোদা বক্স চৌধুরী, সিআইডির সাবেক বিশেষ সুপার মো. রুহুল আমিন, সাবেক এএসপি আবদুর রশিদ, সাবেক এএসপি মুন্সি আতিকুর রহমানকে দুই বছর করে কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ছয় মাস করে সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
আরেকটি ধারায় খোদা বক্স চৌধুরী, রুহুল আমিন, আবদুর রশিদ ও মুন্সি আতিকুর রহমানকে তিন বছর করে কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ছয় মাস করে কারাদণ্ড দেন আদালত।
পরে ওই রায়ের বিরুদ্ধে ডেথ রেফারেন্স ও জেল আপিল শুনানির জন্য হাইকোর্টে আসে। এরপর আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকারের আমলে মামলাটির শুনানি শেষ পর্যায়ে গেলেও সরকার পরিবর্তনের পর গত ৩১ অক্টোবর মামলাটির পুনরায় শুনানি শুরু হয়। তবে শুনানি শেষে গত ২১ নভেম্বর মামলাটির রায় ঘোষণার জন্য অপেক্ষমান (সিএভি) রাখেন হাইকোর্ট।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো.জসিম সরকার। অপরদিকে আসামি পক্ষে ছিলেন আইনজীবী এস এম শাহজাহান ও শিশির মনির।
প্রসঙ্গত, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগের সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলাটি চালানো হয়। অল্পের জন্য ওই হামলা থেকে প্রাণে বেঁচে যান আওয়ামী লীগ সভাপতি ও তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা। তবে হামলায় আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক, সাবেক রাষ্ট্রপতি (প্রয়াত) জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভী রহমানসহ ২৪ জন নিহত হন। আহত হন দলের তিন শতাধিক নেতাকর্মী। ঘটনার পরদিন মতিঝিল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ফারুক আহমেদ বাদী হয়ে মামলা করেন।
তদন্ত শেষে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ২০০৮ সালের ১১ জুন দেওয়া অভিযোগপত্রে বিএনপি নেতা আবদুস সালাম পিন্টু, তার ভাই মাওলানা তাজউদ্দিন ও হুজি নেতা মুফতি আব্দুল হান্নানসহ ২২ জনকে আসামি করা হয়।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পর অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেন আদালত। দুই বছর তদন্তের পর ২০১১ সালের ৩ জুলাই ৩০ জনকে আসামি করে সম্পূরক অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। এর ফলে এ মামলায় মোট আসামির সংখ্যা হয় ৫২।
মোট ৫২ আসামির মধ্যে আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও মুফতি হান্নান এবং তার সহযোগী শাহেদুল ইসলাম বিপুলের মৃত্যুদণ্ড অন্য মামলায় কার্যকর হয়। তিনজনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ায় এ মামলার আসামির সংখ্যা দাঁড়ায় ৪৯ জনে।
৪৯ জন আসামির মধ্যে রায় দেওয়ার সময় ৩১ জন কারাগারে ছিলেন। পলাতক ছিলেন বাকি ১৮ জন। তারা হলেন— তারেক রহমান, হারিছ চৌধুরী, কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ, এটিএম আমিন, সাইফুল ইসলাম জোয়ার্দার, খান সাঈদ হাসান, ওবায়দুর রহমান, মুফতি শফিকুর রহমান, মুফতি আবদুল হাই, রাতুল বাবু, মোহাম্মদ হানিফ, আবদুল মালেক, শওকত ওসমান, মাওলানা তাজউদ্দিন, ইকবাল হোসেন, মাওলানা আবু বকর, খলিলুর রহমান ও জাহাঙ্গীর আলম।
ফ্যাসিবাদ ও আধিপত্যবাদবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় থেকে শাহাদতবরণকারী শরিফ ওসমান হাদির পরিবারের জন্য বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে হাদির এক বোনকে ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য অস্ত্রের লাইসেন্স এবং একজন গানম্যান প্রদান করা হচ্ছে। একই সঙ্গে তাঁর পরিবারের অন্য সদস্যদের সুরক্ষায় সার্বক্ষণিক পুলিশি পাহারার ব্যবস্থা থাকবে। মূলত জুলাই আন্দোলনের সম্মুখসারির যোদ্ধা, সমন্বয়ক এবং গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক নেতাদের ওপর বাড়তে থাকা নিরাপত্তা ঝুঁকির কথা মাথায় রেখেই সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
সরকারি সূত্র এবং গোয়েন্দা প্রতিবেদন অনুযায়ী, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর থেকেই আন্দোলনের শীর্ষ নেতৃত্বের অনেকেই দেশি-বিদেশি বিভিন্ন নম্বর থেকে প্রাণনাশের হুমকি পেয়ে আসছেন। বিশেষ করে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ওসমান হাদিকে হত্যার আগে যেভাবে হুমকি দেওয়া হয়েছিল, সেই অভিজ্ঞতা থেকে সরকার এখন ঝুঁকিগ্রস্ত ব্যক্তিদের নিরাপত্তা জোরদার করাকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। ইতিমধ্যেই অন্তর্বর্তী সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, হাসনাত আবদুল্লাহ, সারজিস আলম এবং তাসনিম জারাকে গানম্যান প্রদান করা হয়েছে। পাশাপাশি তাঁদের অস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়ার প্রক্রিয়াটিও চলমান রয়েছে।
নিরাপত্তা চেয়ে আবেদনের তালিকায় রয়েছেন দেশের বেশ কয়েকজন শীর্ষ রাজনীতিক ও সম্ভাব্য সংসদ সদস্য প্রার্থী। গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জুনায়েদ সাকি, এলডিপির সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমদ, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু এবং বিএনপির কয়েকজন প্রার্থীর আবেদন গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। পুলিশ জানিয়েছে, যাঁদের নিরাপত্তা ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি, তাঁদের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গানম্যান নিয়োগ করা হচ্ছে। তবে অনেক সমন্বয়ক শিক্ষার্থী হওয়ায় এবং যাতায়াতের জন্য রিকশা বা পাবলিক বাস ব্যবহার করায় তাঁদের গানম্যান দেওয়া কিছুটা জটিল হয়ে পড়ছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, নিরাপত্তার জন্য কোনো মৌখিক অনুরোধ গ্রহণ করা হচ্ছে না। লিখিত আবেদনের ভিত্তিতেই কেবল প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। গত রোববার পর্যন্ত এ বিষয়ে ১২টি লিখিত আবেদন জমা পড়েছে। খুব শিগগিরই একটি উচ্চপর্যায়ের বৈঠকের মাধ্যমে আবেদনকারীদের ঝুঁকি পর্যালোচনা করে গানম্যান ও অস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়ার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। ফ্যাসিবাদী শক্তির যেকোনো ধরনের ষড়যন্ত্র মোকাবিলা এবং আন্দোলনের নেতৃত্বের জীবন রক্ষায় প্রশাসন এখন সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।
নিজের পদত্যাগের খবরকে পুরোপুরি ভিত্তিহীন এবং গুজব বলে উড়িয়ে দিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। আজ সোমবার সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “পদত্যাগ করলে তো এখানে থাকতাম না।” এই মন্তব্যের মাধ্যমে তিনি তাঁর দায়িত্ব পালনের বিষয়ে ছড়িয়ে পড়া সকল জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটান।
বৈঠক শেষে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সম্মুখসারির যোদ্ধা শরীফ ওসমান হাদি হত্যাকাণ্ডের তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে বিস্তারিত জানান। তিনি বলেন, হত্যাকাণ্ডের মূল হোতা ফয়সালের অবস্থান সম্পর্কে এখনো সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি, তবে তাঁর অবস্থান জানা মাত্রই তাকে গ্রেফতার করা হবে। এ ঘটনায় ইতোমধ্যে ফয়সালের বাবা, মা, স্ত্রী ও শ্যালকসহ হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের চালককে গ্রেফতার করা হয়েছে। এছাড়া ফয়সালকে সীমান্ত পার হতে সাহায্য করা দালাল চক্রের সদস্যদেরও আটক করা হয়েছে। সরকার এই হত্যাকাণ্ডের বিচার নিশ্চিত করতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে বলে তিনি পুনর্ব্যক্ত করেন।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে চলমান ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেজ-২’ সম্পর্কে তিনি জানান, এই অভিযানের মাধ্যমে সন্ত্রাসী ও দুষ্কৃতকারীদের কঠোরভাবে দমনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে এবং এ পর্যন্ত মোট ৬ হাজার ৯৯৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পাশাপাশি দেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নিরাপত্তা নিশ্চিতেও সরকার বিশেষ পদক্ষেপ নিয়েছে। প্রথম আলো ও দ্য ডেইলি স্টারের সম্পাদকসহ প্রায় ২০ জন ব্যক্তিকে ইতোমধ্যে গানম্যান দেওয়া হয়েছে এবং তাঁদের বাসভবনের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। এমনকি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ২৫ ডিসেম্বর দেশে ফিরলে তাঁকেও সরকারের পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দেওয়া হবে বলে উপদেষ্টা নিশ্চিত করেন।
মন্ত্রণালয় সূত্রে আরও জানা গেছে, আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির ১৮তম সভায় আসন্ন জাতীয় নির্বাচন ও গণভোটের প্রস্তুতি, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জকসু) নির্বাচন, বড়দিন এবং থার্টি ফার্স্ট নাইটের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। বিশেষ করে জকসু নির্বাচনটি দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো শান্তিপূর্ণ ও গ্রহণযোগ্যভাবে সম্পন্ন করার আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে। এছাড়া সভায় উসকানিমূলক সাইবার প্রচারণা প্রতিরোধ, শ্রমিকদের বকেয়া বেতন-বোনাস পরিশোধ নিশ্চিত করা, মাদকবিরোধী অভিযান এবং রোহিঙ্গা ক্যাম্প ও পার্বত্য অঞ্চলের নিরাপত্তা পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সামগ্রিকভাবে দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে প্রশাসনকে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর এবং সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খাঁনের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নিশ্চিতে গানম্যান দিচ্ছে সরকার। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে বিষয়টি রাশেদ খাঁনকে নিশ্চিত করা হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে। মূলত সাম্প্রতিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি এবং সম্ভাব্য ঝুঁকি বিবেচনা করে দেশের ২০ জন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিকে গানম্যান দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যার তালিকায় এই দুই শীর্ষ নেতার নাম অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
তালিকায় থাকা অন্য ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন দেশের শীর্ষ দুই জাতীয় দৈনিক ‘প্রথম আলো’ ও ‘দ্য ডেইলি স্টার’-এর সম্পাদক এবং জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) ছয়জন শীর্ষ নেতা। এ ছাড়াও সম্প্রতি সন্ত্রাসী হামলায় নিহত ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদির বোনকেও ব্যক্তিগত গানম্যান ও অস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটকে সামনে রেখে সকল রাজনৈতিক দলের নেতা এবং সম্ভাব্য প্রার্থীদের জন্য বিশেষ নিরাপত্তা প্রটোকল সরবরাহের অংশ হিসেবেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এর আগে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে জানানো হয়েছিল যে, গণঅভ্যুত্থানের সম্মুখসারির নেতৃত্ব এবং গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক নেতাদের বাসস্থান, কার্যালয় ও চলাচলের ক্ষেত্রে বিশেষ সুরক্ষা প্রদান করা হবে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে এবং ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তিদের জীবন রক্ষা করতেই প্রশাসনের পক্ষ থেকে এই বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। মূলত আন্দোলনের সম্মুখসারির নেতাদের লক্ষ্য করে বিভিন্ন মাধ্যম থেকে হুমকি আসার বিষয়টি মাথায় রেখেই সরকার এই তড়িৎ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারে ‘প্রথম আলো’ ও ‘ডেইলি স্টার’ কার্যালয়ে বর্বরোচিত হামলার কড়া সমালোচনা করে সম্পাদক পরিষদের সভাপতি ও নিউ এজ সম্পাদক নুরুল কবীর বলেছেন, হামলাকারীদের মূল উদ্দেশ্য ছিল সংবাদপত্রের ভেতরে থাকা কর্মীদের হত্যা করা। আজ সোমবার (২২ ডিসেম্বর) সকালে রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে আয়োজিত ‘মব ভায়োলেন্সে আক্রান্ত বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক যৌথ প্রতিবাদ সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন। সম্পাদক পরিষদ এবং নিউজপেপার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (নোয়াব) এই সভার আয়োজন করে।
নুরুল কবীর তাঁর বক্তব্যে হামলার ভয়াবহতা বর্ণনা করে বলেন, যখন সংবাদকর্মীরা অফিসের ভেতরে কাজ করছিলেন, তখন চারপাশ থেকে পরিকল্পিতভাবে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। এমনকি আগুন নেভাতে আসা ফায়ার সার্ভিসকেও বাধা দেওয়া হয়েছে। তিনি একে ‘মধ্যযুগীয় কায়দায় পুড়িয়ে মারার চেষ্টা’ হিসেবে অভিহিত করেন। তিনি আরও বলেন, প্রতিটি গণমাধ্যমের নিজস্ব সম্পাদকীয় নীতি থাকে, যা কারো অপছন্দ হতেই পারে। কিন্তু সেই বিরোধের জেরে প্রতিষ্ঠানে আগুন দেওয়া কোনোভাবেই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া হতে পারে না।
প্রতিবাদ সভায় নুরুল কবীর সতর্ক করে বলেন, এই ধরনের মব ভায়োলেন্স বা গণসহিংসতা যদি অবিলম্বে রোধ করা না যায়, তবে শুধু সংবাদপত্র নয়, পুরো সমাজব্যবস্থা এবং দেশের উন্নতির সব সম্ভাবনা ধূলিসাৎ হয়ে যাবে। তিনি এই হামলাকে সরাসরি গণতন্ত্র, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং নাগরিক অধিকারের ওপর একটি বড় আঘাত হিসেবে চিহ্নিত করেন।
উক্ত প্রতিবাদ সভায় দেশের বরেণ্য নাগরিক, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা উপস্থিত থেকে সংহতি প্রকাশ করেন। তাঁরা সবাই একমত হন যে, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষায় এখন সব পেশাজীবী মানুষের ঐক্যবদ্ধ হওয়া সময়ের দাবি। সভা শেষে হোটেলের সামনে একটি মানববন্ধন কর্মসূচিও পালন করা হয়, যেখান থেকে সাংবাদিক ও গণতন্ত্রকামী মানুষের ওপর এমন হামলা বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানানো হয়। মূলত সংবাদমাধ্যমের ওপর এমন নজিরবিহীন আক্রমণের বিরুদ্ধে নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে এক শক্তিশালী বার্তা দেওয়া হয়েছে এই সভার মাধ্যমে।
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদি হত্যাকাণ্ডের বিচার প্রক্রিয়া ‘দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল’-এ সম্পন্ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। আজ সোমবার (২২ ডিসেম্বর) আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল নিজের ফেসবুক পেজে এক স্ট্যাটাসের মাধ্যমে এই গুরুত্বপূর্ণ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, এই চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ডের বিচার কাজ অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে শেষ করতে সরকার বদ্ধপরিকর।
আইন উপদেষ্টা তাঁর বক্তব্যে উল্লেখ করেন যে, ‘দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল আইন, ২০০২’-এর ১০ ধারা অনুযায়ী এই মামলার বিচার কাজ পরিচালিত হবে। এই আইনের বিধান অনুযায়ী, পুলিশের পক্ষ থেকে তদন্ত প্রতিবেদন বা চার্জশিট দাখিল করার পর সর্বোচ্চ ৯০ কার্যদিবসের মধ্যেই বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে। এর ফলে দীর্ঘসূত্রতা এড়িয়ে এই বীর মুক্তিযোদ্ধার উত্তরসূরি ও জুলাই যোদ্ধার হত্যার ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
এর আগে আজ সোমবার সকালেই ইনকিলাব মঞ্চের পক্ষ থেকে একটি সংবাদ সম্মেলনে হাদি হত্যার বিচারে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন এবং পেশাদার গোয়েন্দা সংস্থার সহায়তা নেওয়ার জোর দাবি জানানো হয়েছিল। সংগঠনের নেতারা হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন যে, খুনিদের গ্রেফতার ও বিচার নিশ্চিত না করে কোনোভাবেই নির্বাচনকে স্থিতিশীল করা সম্ভব নয়। ইনকিলাব মঞ্চের সেই দাবির কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সরকারের পক্ষ থেকে আইন উপদেষ্টা এই ইতিবাচক ঘোষণা দিলেন।
গত ১২ ডিসেম্বর রাজধানীর পল্টনে গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর ১৮ ডিসেম্বর সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান শরীফ ওসমান হাদি। এই হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই সারাদেশে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে এবং দ্রুত বিচারের দাবি জোরালো হয়। আইন উপদেষ্টার আজকের এই ঘোষণার ফলে এই মামলার বিচার প্রক্রিয়া একটি নির্দিষ্ট আইনি কাঠামো ও সময়সীমার মধ্যে চলে এল, যা আন্দোলনকারীদের আশ্বস্ত করার পাশাপাশি খুনিদের বিরুদ্ধে কঠোর বার্তা হিসেবে কাজ করবে।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো কার্যালয়ে হামলা, ভয়াবহ ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় অজ্ঞাতপরিচয় ৪০০ থেকে ৫০০ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়েছে। তেজগাঁও বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার ইবনে মিজান আজ সোমবার (২২ ডিসেম্বর) দুপুরে মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। সন্ত্রাসবিরোধী আইন, বিশেষ ক্ষমতা আইন এবং সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশের বিভিন্ন কঠোর ধারায় এই মামলাটি নথিভুক্ত করা হয়েছে।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার রাত সোয়া ১১টার দিকে সশস্ত্র একদল দুষ্কৃতকারী প্রথম আলো কার্যালয়ের সামনে জড়ো হয়ে উসকানিমূলক স্লোগান দিতে থাকে। তারা মোবাইল ফোন এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উসকানি ছড়িয়ে মুহূর্তের মধ্যে ৪০০-৫০০ জনের একটি বড় দাঙ্গাবাজ দল একত্রিত করে। রাত ১১টা ৫০ মিনিটের দিকে তারা ভবনের প্রধান ফটক ও শাটার ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে তাণ্ডব শুরু করে। হামলাকারীরা ভবনের ভেতরে থাকা আসবাবপত্র ও গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র নিচে ফেলে সেগুলোতে আগুন ধরিয়ে দেয় এবং অফিসের দেড় শতাধিক কম্পিউটার ও ল্যাপটপসহ লকারে থাকা বিপুল পরিমাণ নগদ অর্থ ও প্রথমা প্রকাশনের বইপত্র লুট করে নিয়ে যায়।
এজাহারে আরও অভিযোগ করা হয়েছে যে, দুষ্কৃতকারীরা অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে ভবনের অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা ধ্বংস করে দেয় এবং ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের আগুন নেভানোর কাজে বাধা প্রদান করে। এছাড়া অপরাধের সাক্ষ্যপ্রমাণ নষ্ট করার উদ্দেশ্যে তারা ভবনের সিসিটিভি ক্যামেরাগুলোও ভেঙে ফেলে। প্রথম আলো কর্তৃপক্ষের দাবি অনুযায়ী, কেবল লুণ্ঠিত সম্পদের মূল্য প্রায় ২ কোটি ৫০ লাখ টাকা এবং ভবন ও সরঞ্জামের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ সব মিলিয়ে প্রায় ৩২ কোটি টাকা। বর্তমানে পুলিশ এই মামলায় জড়িতদের শনাক্ত করতে কাজ করছে এবং ইতোমধ্যে কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মূলত সংবাদপত্রের ওপর এমন বর্বরোচিত হামলা ও বিপুল আর্থিক ক্ষতির ঘটনায় দেশজুড়ে তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দার সৃষ্টি হয়েছে।
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদি হত্যার সুষ্ঠু ও দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে ‘দ্রুত বিচারিক ট্রাইব্যুনাল’ গঠনের দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি। আজ সোমবার (২২ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে আয়োজিত এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের সদস্য সচিব আব্দুল্লাহ আল জাবের এই দাবি জানান। তিনি এই হত্যাকাণ্ড ও এর নেপথ্য পরিকল্পনাকারীদের খুঁজে বের করতে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই এবং ব্রিটিশ সংস্থা স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডকে তদন্ত প্রক্রিয়ায় যুক্ত করার জোর আহ্বান জানিয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে আব্দুল্লাহ আল জাবের বর্তমান সরকারকে উদ্দেশ্য করে এক কঠোর আল্টিমেটাম দেন। তিনি স্পষ্ট ভাষায় বলেন যে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই ওসমান হাদি হত্যাকাণ্ডের বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে। খুনি এবং তাদের মদদদাতাদের পরিচয় জনসমক্ষে প্রকাশ না করে কোনো ধরনের তড়িঘড়ি নির্বাচন মেনে নেওয়া হবে না। জাবের হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, আজ বিকেল ৩টায় ইনকিলাব মঞ্চের পক্ষ থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হবে। সেই মিছিল শেষে তারা পরবর্তী চূড়ান্ত কর্মসূচি ঘোষণা করবেন—যেখানে নির্ধারণ করা হবে তারা বর্তমান সরকারের সঙ্গে থাকবে, নাকি সরকার পতনের এক দফা আন্দোলন শুরু করবে।
সংগঠনের সদস্য সচিব আরও মন্তব্য করেন যে, ওসমান হাদি এমন কোনো টিম বা আদর্শ রেখে যাননি যারা কেবল দেশের স্থিতিশীলতা রক্ষার অজুহাতে সরকারের সঙ্গে গোপনে সমঝোতা বা লিয়াজো করবে। তিনি বলেন, ইনকিলাব মঞ্চের কর্মীরা রাজপথ ছাড়বে না যতক্ষণ না এই জঘন্য হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত প্রতিটি অপরাধীকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনা হচ্ছে। খুনিদের আড়াল করে পার পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই উল্লেখ করে তিনি দ্রুততম সময়ের মধ্যে কার্যকর আইনি পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান। হাদি হত্যার বিচার ঘিরে এই কঠোর অবস্থান রাজনৈতিক মহলে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
রাজধানীর শীর্ষ দুই সংবাদমাধ্যম দৈনিক প্রথম আলো ও দ্য ডেইলি স্টার কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে এ পর্যন্ত ১৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আজ সোমবার (২২ ডিসেম্বর) দুপুরে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) এক বিশেষ ব্রিফিংয়ে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার এস এন মো. নজরুল ইসলাম এই তথ্য নিশ্চিত করেন। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে ১৩ জনকে নিয়মিত থানা পুলিশ, ৩ জনকে কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট এবং একজনকে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) গ্রেফতার করেছে।
গত ১৮ ডিসেম্বর রাতে একদল সন্ত্রাসী কারওয়ান বাজারে অবস্থিত প্রথম আলো এবং কাজী নজরুল ইসলাম অ্যাভিনিউয়ের ডেইলি স্টার কার্যালয়ে অতর্কিত হামলা চালায়। হামলাকারীরা ভবন দুটিতে ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাট চালানোর পর সেখানে অগ্নিসংযোগ করে। একই রাতে ধানমন্ডির ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ছায়ানটেও হামলা চালানো হয়। এর রেশ কাটতে না কাটতেই গত শুক্রবার রাতে তোপখানা রোডে উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর কেন্দ্রীয় কার্যালয়েও আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে। উদীচীর পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, এই হামলাগুলো অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে করা হয়েছে।
এই ন্যাক্কারজনক ঘটনায় জড়িতদের শাস্তির আওতায় আনতে গত রোববার রাতে রাজধানীর তেজগাঁও থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলায় অজ্ঞাতনামা ৪০০ থেকে ৫০০ জনকে আসামি করা হয়েছে এবং এতে সন্ত্রাসবিরোধী আইন, বিশেষ ক্ষমতা আইন ও সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশের মতো কঠোর ধারাগুলো যুক্ত করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, সিসিটিভি ফুটেজ এবং অন্যান্য প্রযুক্তিগত তথ্য বিশ্লেষণ করে অপরাধীদের শনাক্ত করা হচ্ছে এবং বাকি আসামিদের গ্রেফতারে সাঁড়াশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে। সংবাদমাধ্যম ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানে এমন হামলার ঘটনায় দেশজুড়ে নিন্দা ও প্রতিবাদের ঝড় বইছে।
সোমবার (২২ ডিসেম্বর) রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁওয়ে সম্পাদক পরিষদ এবং নিউজপেপার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (নোয়াব) আয়োজিত ‘মব ভায়োলেন্সে আক্রান্ত বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক যৌথ প্রতিবাদ সভায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তাঁর গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারের ওপর যে হামলা হয়েছে, তা কেবল দুটি সংবাদপত্রের ওপর আঘাত নয়, বরং এটি দেশের সামগ্রিক গণতন্ত্রের ওপর একটি বড় আঘাত। আটাত্তর বছর বয়সে এসে এমন এক বাংলাদেশ দেখছেন যা তাঁর সারা জীবনের সংগ্রামের স্বপ্নের পরিপন্থি বলে তিনি মন্তব্য করেন। ফখরুল আহ্বান জানান, জুলাই যুদ্ধের চেতনা এবং মানুষের অধিকার রক্ষায় এখন কোনো রাজনৈতিক বিভাজন নয়, বরং সব গণতন্ত্রকামী মানুষের এক হয়ে এই অপশক্তিকে রুখে দেওয়ার সময় এসেছে।
সভায় এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম এক গুরুত্বপূর্ণ অভিযোগ তুলে বলেন, ওসমান হাদির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে যে মব ভায়োলেন্স বা গণসহিংসতা ঘটেছে, তার পেছনে সরকারের একটি অংশের রাজনৈতিক সমর্থন থাকতে পারে। তা না হলে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি করা সম্ভব হতো না বলে তিনি মনে করেন। অন্যদিকে নিউ এজ সম্পাদক নুরুল কবির তাঁর বক্তব্যে উল্লেখ করেন যে, প্রতিটি সংবাদমাধ্যমের নিজস্ব সম্পাদকীয় নীতি থাকে এবং সেই নীতির সঙ্গে একমত না হওয়ার অধিকার সবার থাকলেও প্রতিষ্ঠানে আগুন দেওয়া কোনোভাবেই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া হতে পারে না।
ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনাম হামলার রাতের ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরে জানান, ওই দিন ভবনের ভেতরে ২৬-২৭ জন কর্মী আটকা পড়েছিলেন এবং সন্ত্রাসীরা ফায়ার সার্ভিসকে ভেতরে ঢুকতে বাধা দিয়েছিল। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, হামলাকারীদের উদ্দেশ্য কেবল ভবনে আগুন দেওয়া ছিল না, বরং সেখানে থাকা সাংবাদিকদের হত্যা করাই ছিল তাদের মূল লক্ষ্য। বর্তমানে ওই দুটি প্রতিষ্ঠানের সাংবাদিকদের হত্যার হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলেও তিনি সভায় জানান।
প্রতিবাদ সভায় উপস্থিত নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা একযোগে মব ভায়োলেন্সের বিরুদ্ধে তাঁদের শক্ত অবস্থানের কথা জানান এবং ঐক্যবদ্ধভাবে এই অরাজকতা মোকাবিলার প্রতিশ্রুতি দেন। সভায় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন নোয়াব সভাপতি এ কে আজাদ, সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সারা হোসেন এবং গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি। বক্তারা সবাই সংহতি প্রকাশের পাশাপাশি এই সহিংস সংস্কৃতির মূলোৎপাটন করার ওপর বিশেষ জোর দেন।
জুলাই আন্দোলনের সম্মুখসারির যোদ্ধা, সমন্বয়ক এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতাদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। সম্প্রতি ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও জুলাই যোদ্ধা শরীফ ওসমান হাদির নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর এই উদ্যোগ আরও জোরদার করা হয়েছে। সরকারের এই পদক্ষেপের অংশ হিসেবে ইতোমধ্যে আন্দোলনের পরিচিত মুখ ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, দক্ষিণ অঞ্চলের মুখ্য সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ, সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব তাসনিম জারা এবং উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সমন্বয়ক সারজিস আলমকে ব্যক্তিগত গানম্যান প্রদান করা হয়েছে। পাশাপাশি তাদের ব্যক্তিগত অস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়ার প্রক্রিয়াটিও বর্তমানে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সক্রিয় বিবেচনায় রয়েছে।
জুলাই যোদ্ধাদের পাশাপাশি দেশের শীর্ষস্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের নিরাপত্তা ঝুঁকি পর্যালোচনার ভিত্তিতে গানম্যান ও অস্ত্র দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান এবং বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) প্রধান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ ইতোমধ্যে ঢাকা মহানগর পুলিশের কাছে গানম্যান চেয়ে আবেদন করেছেন। এছাড়া গণসংহতি আন্দোলনের জুনায়েদ সাকি, বিএনপি মনোনীত সংসদ-সদস্য প্রার্থী তানভির আহমেদ রবিন ও জাফির তুহিন, জাতীয় পার্টির (জেপি) চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু এবং এলডিপি সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমদসহ বেশ কয়েকজন নেতার গানম্যান ও অস্ত্রের লাইসেন্স পাওয়ার বিষয়টি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। বিশেষ বিবেচনায় শহীদ ওসমান হাদির পরিবারকেও সার্বক্ষণিক পুলিশি নিরাপত্তার আওতায় আনা হয়েছে এবং হাদির এক বোনকে ব্যক্তিগত অস্ত্রের লাইসেন্স ও গানম্যান প্রদান করা হচ্ছে।
সরকারের গোয়েন্দা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন বানচাল করতে এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করতে পরাজিত শক্তিরা নানা ষড়যন্ত্র লিপ্ত রয়েছে। গত ৫ আগস্টের পর থেকেই জুলাই আন্দোলনের সমন্বয়ক এবং আধিপত্যবাদবিরোধী নেতারা নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ও দেশের বাইরে পলাতক থাকা ষড়যন্ত্রকারীদের পক্ষ থেকে প্রাণনাশের হুমকির সম্মুখীন হচ্ছেন। ওসমান হাদির ওপর ড্রোন হামলার মতো অত্যাধুনিক হামলা এবং শেষ পর্যন্ত তার শাহাদাতবরণের ঘটনাটি সরকারের উচ্চপর্যায়ে জুলাই যোদ্ধাদের নিরাপত্তার বিষয়ে গভীর উপলব্ধির জন্ম দিয়েছে। বিশেষ করে হাসনাত আবদুল্লাহ ও ব্যারিস্টার ফুয়াদের মতো ব্যক্তিত্বরা বর্তমানে উচ্চমাত্রার নিরাপত্তা ঝুঁকিতে রয়েছেন বলে গোয়েন্দা তথ্যে উঠে এসেছে।
পুলিশ সদর দপ্তর ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গানম্যান ও অস্ত্রের লাইসেন্সের জন্য অসংখ্য আবেদন জমা পড়লেও অগ্রাধিকার এবং ঝুঁকির মাত্রা বিশ্লেষণ করে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। পুলিশের আইজিপি বাহারুল আলম জানিয়েছেন, যারা সবচাইতে বেশি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন তাদের সশস্ত্র দেহরক্ষী দেওয়া হয়েছে এবং অন্যদের চলাফেরার ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্কতা ও পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে। তবে গানম্যান প্রদানের ক্ষেত্রে একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে যাতায়াত ব্যবস্থা। আবেদনকারীদের অনেকে শিক্ষার্থী হওয়ার কারণে তারা রিকশা বা পাবলিক বাসে যাতায়াত করেন, যা গানম্যান নিয়ে চলার ক্ষেত্রে প্রতিকূলতা তৈরি করছে। এ বিষয়টির বিকল্প সমাধানের উপায় নিয়ে পুলিশ বিভাগ চিন্তাভাবনা করছে।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সম্ভাব্য প্রার্থীদের নিরাপত্তাও এই পরিকল্পনার অন্তর্ভুক্ত। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জমা পড়া লিখিত আবেদনগুলোর বিষয়ে আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই একটি উচ্চপর্যায়ের সভা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। অতিরিক্ত আইজিপি খোন্দকার রফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, সংশ্লিষ্ট জেলার এসপি, রেঞ্জ ডিআইজি এবং মেট্রোপলিটন কমিশনারদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যাতে তারা ঝুঁকি বিশ্লেষণ করে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করেন। মিটিং-মিছিলসহ যেকোনো কর্মসূচিতে অতিরিক্ত ফোর্স মোতায়েনের পাশাপাশি উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তিদের গতিবিধির ওপর সার্বক্ষণিক নজরদারি রাখছে পুলিশ। মূলত একটি সুষ্ঠু নির্বাচন ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতেই সরকার এই সমন্বিত নিরাপত্তা বলয় তৈরির চেষ্টা করছে।
রাজধানীর শীর্ষ দুই জাতীয় দৈনিক প্রথম আলো ও দ্য ডেইলি স্টার এবং দুটি সাংস্কৃতিক সংগঠনের কার্যালয়ে হামলার ঘটনায় জড়িত সন্দেহে এখন পর্যন্ত নয়জনকে গ্রেফতার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। সোমবার (২২ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত পরিচালিত অভিযানে তাদের গ্রেফতারের বিষয়টি প্রধান উপদেষ্টার ভেরিফাইড ফেসবুক পেজ থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে মো. নাঈম নামে একজনের বিষয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে। রাজধানীর তেজগাঁওয়ের কুনিপাড়া এলাকার এই বাসিন্দা হামলার সময় এক লাখ ২৩ হাজার টাকা লুট করেছিলেন। সেই টাকা দিয়ে তিনি মোহাম্মদপুর থেকে একটি টেলিভিশন ও একটি ফ্রিজ কেনেন। পরে তাকে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থেকে লুণ্ঠিত ৫০ হাজার টাকাসহ গ্রেফতার করা হয় এবং তার কেনা টিভি ও ফ্রিজ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
অভিযানে গ্রেফতার হওয়া অন্য ছয়জন হলেন— মো. কাশেম ফারুকি, মো. সাইদুর রহমান, রাকিব হোসেন, ফয়সাল আহমেদ প্রান্ত, মো. সোহেল রানা এবং মো. শফিকুল ইসলাম। এছাড়া আরও দুইজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে যাদের পরিচয় যাচাই করা হচ্ছে। গ্রেফতারকৃত রাকিব হোসেন ভিডিও ফুটেজে সরাসরি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগে অংশ নিতে শনাক্ত হয়েছেন। তিনি নিজের ফেসবুক আইডি থেকে ধ্বংসস্তূপের ছবি পোস্ট করার পাশাপাশি বিভিন্ন উসকানিমূলক তথ্য প্রচার করেছিলেন। অন্যদিকে কারওয়ান বাজার এলাকা থেকে গ্রেফতার হওয়া সোহেল রানার বিরুদ্ধে মাদকসহ বিভিন্ন আইনে ১৩টি এবং শফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে অগ্নিসংযোগ ও ককটেল বিস্ফোরণের দুটি মামলা আগে থেকেই রয়েছে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জানিয়েছে, সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে এই হামলায় জড়িত আরও ৩১ জনকে প্রাথমিকভাবে শনাক্ত করা হয়েছে। একইসাথে চট্টগ্রামে ভারতের সহকারী হাইকমিশনারের বাসভবনের সামনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টাকারী তিনজনের পরিচয়ও ভিডিও ফুটেজের মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া গেছে। বর্তমানে গ্রেফতারকৃতদের ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে এবং শনাক্ত হওয়া বাকি আসামিদের ধরতে সাঁড়াশি অভিযান অব্যাহত রেখেছে পুলিশ। মূলত প্রযুক্তির সহায়তায় অপরাধীদের চিহ্নিত করে দ্রুত বিচারের আওতায় আনার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং ২০২৬ সালের গণভোটকে সামনে রেখে সাধারণ ভোটারদের সচেতন ও উদ্বুদ্ধ করার লক্ষ্যে আজ সোমবার (২২ ডিসেম্বর) থেকে শুরু হচ্ছে বিশেষ প্রচার কার্যক্রম ‘ভোটের গাড়ি’। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস আজ বিকেল ৪টায় জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ভিডিও বার্তার মাধ্যমে এই প্রচারণামূলক কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন। মূলত নির্বাচনের গুরুত্ব ও ভোটাধিকার প্রয়োগে জনসচেতনতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যেই এই বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
গতকাল রোববার সরকারি এক সংশোধিত তথ্য বিবরণীতে এই কর্মসূচির বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টার পাশাপাশি উপস্থিত থাকবেন তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী এবং নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশজুড়ে নির্বাচনি আমেজ ও জনসচেতনতা তৈরির লক্ষ্যে এই ‘ভোটের গাড়ি’র প্রচারণা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে এই প্রচার কার্যক্রম পরবর্তীতে সারা দেশে ছড়িয়ে দেওয়া হবে।
সম্প্রতি দেশের শীর্ষ দুই জাতীয় দৈনিক প্রথম আলো ও দ্য ডেইলি স্টার এবং দুটি সাংস্কৃতিক সংগঠনের কার্যালয়ে হামলার ঘটনায় জড়িত সন্দেহে এখন পর্যন্ত ৯ জনকে গ্রেফতার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। সোমবার (২২ ডিসেম্বর) সকাল পর্যন্ত পরিচালিত বিভিন্ন অভিযানে তাদের গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে সাতজনের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে, তারা হলেন— মো. কাশেম ফারুক, মো. সাইদুর রহমান, রাকিব হোসেন, মো. নাইম, ফয়সাল আহমেদ প্রান্ত, মো. সোহেল রানা এবং মো. শফিকুল ইসলাম। এছাড়া কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট ও গোয়েন্দা পুলিশ আরও দুইজনকে গ্রেফতার করেছে যাদের পরিচয় যাচাই করা হচ্ছে।
গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে রাকিব হোসেনকে ভিডিও ফুটেজে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগে সরাসরি অংশ নিতে দেখা গেছে এবং তিনি হামলার পর ধ্বংসস্তূপের ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উসকানিমূলক পোস্ট দিয়েছিলেন। মো. নাইম নামে একজনকে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থেকে লুট করা ৫০ হাজার টাকাসহ গ্রেফতার করা হয়। তিনি প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন যে, ওই দিন মোট ১ লাখ ২৩ হাজার টাকা লুট করে তিনি একটি টেলিভিশন ও ফ্রিজ কিনেছিলেন, যা ইতোমধ্যে উদ্ধার করা হয়েছে। অন্যদিকে কারওয়ান বাজার এলাকা থেকে গ্রেফতারকৃত সোহেল রানার বিরুদ্ধে মাদকসহ বিভিন্ন অভিযোগে ১৩টি এবং শফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে অগ্নিসংযোগ ও ককটেল বিস্ফোরণের অভিযোগে দুটি পুরনো মামলা রয়েছে।
এর আগে গত রোববার প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয় যে, সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে এই হামলায় জড়িত ৩১ জনকে প্রাথমিকভাবে শনাক্ত করা হয়েছে। একই সাথে চট্টগ্রামে ভারতের সহকারী হাইকমিশনারের বাসভবনের সামনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির দায়ে আরও তিনজনকে শনাক্ত করা হয়েছে। শনাক্ত হওয়া বাকি আসামিদের ধরতেও সাঁড়াশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে এবং গ্রেফতারকৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলে পুলিশ নিশ্চিত করেছে। মূলত ভিডিও ফুটেজ ও প্রযুক্তির সহায়তায় অপরাধীদের চিহ্নিত করে দ্রুত আইনের আওতায় আনার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।