জ্বালানি খাতের অন্যতম বৃহৎ প্রতিষ্ঠান শেভরন জ্বালানি নিরাপত্তা জোরদার করার প্রয়াসে বাংলাদেশে নতুন গ্যাস অনুসন্ধান কার্যক্রমে বিনিয়োগ করার পরিকল্পনা করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক কোম্পানিটির সিনিয়র কর্মকর্তাবৃন্দ আজ মঙ্গলবার এ খবর জানান।
শেভরনের কর্মকর্তারা বলেন, তারা খুশি যে বিগত শেখ হাসিনা সরকার গত দুই বছরে কোম্পানিটিকে অর্থ প্রদান বন্ধ করার পর, অন্তর্বর্তী সরকার শত শত মিলিয়ন ডলারের বকেয়া পরিশোধ শুরু করেছে।
কোম্পানির ভাইস প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্ক ক্যাসুলোর নেতৃত্বে শেভরনের কর্মকর্তারা রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
ক্যাসুলো বলেন, ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ও উৎকৃস্ট ব্যবসায়িক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে ক্রমবর্ধমান গ্যাসের চাহিদা শেভরনকে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে নতুন খনন কার্যক্রমে বিনিয়োগ করতে উৎসাহিত করেছে। তিনি বলেন, ‘আমরা নতুন উপকূলীয় গ্যাস অনুসন্ধানেও বিনিয়োগ করব।’ নতুন গ্যাস মজুদ দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়াবে।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস নতুন গ্যাস মজুদ অন্বেষণে শেভরনের পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি পাওয়ায় স্থানীয় কোম্পানিগুলোয় গ্যাস সরবরাহ বাড়ানোর পরিকল্পনা করেছে। তিনি বলেন, ‘আমরা এখন ব্যবসার জন্য প্রস্তুত। আমরা দেশে আরও বিদেশি প্রত্যক্ষ বিনিয়োগকে স্বাগত জানাই। বড় বড় বহুজাতিক কোম্পানিগুলো ইতোমধ্যে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ইউনূস দেশে একটি ভাল বিনিয়োগের পরিবেশ নিশ্চিত করতে অন্তর্বর্তী সরকার গৃহীত মূল সংস্কারগুলো তুলে ধরে স্থানীয় সম্প্রদায়ের জন্য শেভরনের সামাজিক দায়বদ্ধতামূলক কার্যক্রমের প্রশংসা করেন।
বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, সরকার আগামী বছরের এপ্রিলের মধ্যে শেভরনের বকেয়া পরিশোধ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পরপরই শেভরন ও পেট্রোবাংলা ছয় মাসের ঋণ পরিশোধের চুক্তিতে পৌঁছেছে।
সুদানে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশন ঘাঁটিতে সন্ত্রাসীদের ড্রোন হামলায় নিহত ছয় বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীর মরদেহ দেশে পৌঁছেছে। শনিবার (২০ ডিসেম্বর) বেলা ১১টা ৫ মিনিটে নিহতদের মরদেহ বহনকারী ফ্লাইটটি ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক এস এম রাগিব সামাদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে গত ১৩ ডিসেম্বর সুদানের আবেই এলাকায় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের আওতাধীন কাদুগলি লজিস্টিকস বেইসে বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র গোষ্ঠী বর্বরোচিত ড্রোন হামলা চালায়। এতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ছয় সদস্য নিহত হন এবং আহত হন আরও ৯ জন।
নিহত বীর শান্তিরক্ষীরা হলেন– নাটোরের করপোরাল মো. মাসুদ রানা, কুড়িগ্রামের সৈনিক মো. মমিনুল ইসলাম ও সৈনিক শান্ত মন্ডল, রাজবাড়ীর সৈনিক শামীম রেজা, কিশোরগঞ্জের মেস ওয়েটার মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম এবং গাইবান্ধার লন্ড্রি কর্মচারী মো. সবুজ মিয়া।
হামলায় আহত শান্তিরক্ষীদের বর্তমানে কেনিয়ার রাজধানী নাইরোবির আগা খান ইউনিভার্সিটি হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তাদের মধ্যে কয়েকজন চিকিৎসা শেষে হাসপাতাল ছেড়েছেন এবং বাকিরাও শঙ্কামুক্ত রয়েছেন বলে জানা গেছে। আহতদের মধ্যে তিনজন নারী সদস্যও রয়েছেন।
উল্লেখ্য, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশের অবদান বিশ্বজুড়ে স্বীকৃত। সুদানের সংঘাতপূর্ণ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যদের পেশাদারিত্ব, সাহস ও এই সর্বোচ্চ আত্মত্যাগ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করা হচ্ছে।
বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, মুক্তিবাহিনীর ডেপুটি চিফ অব স্টাফ এবং স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) এ কে খন্দকার, বীর উত্তমের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। শনিবার এক শোকবার্তায় তিনি এই বীর মুক্তিযোদ্ধার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন।
শোকবার্তায় প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এ কে খন্দকার ছিলেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের এক অবিস্মরণীয় সৈনিক। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে সাহসিকতা, দূরদর্শিতা ও নেতৃত্বগুণ দিয়ে তিনি দেশের স্বাধীনতা অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিবাহিনীর ডেপুটি চিফ অব স্টাফ হিসেবে তার কৌশলগত সিদ্ধান্ত ও সাংগঠনিক দক্ষতা স্বাধীনতা সংগ্রামকে আরও সুসংহত করেছিল। স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী গঠনেও তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন এবং দেশের প্রথম বিমান বাহিনী প্রধান হিসেবে এই বাহিনীকে একটি সুসংগঠিত ও কার্যকর প্রতিষ্ঠানে রূপ দিতে অসামান্য অবদান রাখেন।
এ কে খন্দকারের সততা ও সাহসিকতার প্রশংসা করে ড. ইউনূস উল্লেখ করেন, রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তিনি দেশের স্বাধীনতার ইতিহাস নিয়ে গ্রন্থ রচনা করেছিলেন। তবে পতিত ফ্যাসিবাদী শাসনামলে সেই গ্রন্থের কারণে তিনি ব্যাপক রোষানলে পড়েন। প্রধান উপদেষ্টা মন্তব্য করেন, মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস তুলে ধরাই ছিল সেই শাসনের দৃষ্টিতে তার অপরাধ।
প্রধান উপদেষ্টা এ কে খন্দকারকে একজন দৃঢ়চেতা মুক্তিযোদ্ধা ও আদর্শনিষ্ঠ দেশপ্রেমিক হিসেবে অভিহিত করে বলেন, তার কর্ম ও চিন্তা নতুন প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে। এই বীর সন্তানের মৃত্যুতে দেশ তার এক শ্রেষ্ঠ সন্তানকে হারালো। শোকবার্তায় তিনি মরহুমের শোকসন্তপ্ত পরিবার-পরিজন, আত্মীয়স্বজন ও সহযোদ্ধাদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
জুলাই যোদ্ধা ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির দাফনকে কেন্দ্র করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশের কবরস্থান এলাকায় নজিরবিহীন নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। শনিবার (২০ ডিসেম্বর) দুপুরে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় জানাজা শেষে মরদেহ দাফনের জন্য এই স্থানে নিয়ে আসার কথা রয়েছে। এ উপলক্ষে কবরস্থানের ভেতরে ও বাইরের এলাকায় বিপুলসংখ্যক পুলিশ ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, দাফনের জন্য কবর খোঁড়াসহ আনুষঙ্গিক সব প্রস্তুতি প্রায় শেষ পর্যায়ে। যেকোনো ধরণের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে কবরস্থানের মূল ফটক এবং আশপাশের এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন। পুলিশের পাশাপাশি বিজিবি সদস্যদেরও সারিবদ্ধভাবে দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) রমনা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মাসুদ আলমসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সশরীরে উপস্থিত থেকে নিরাপত্তা ব্যবস্থা তদারকি করছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সূত্রে জানা গেছে, জানাজা ও দাফন ঘিরে প্রচুর জনসমাগমের সম্ভাবনা থাকায় সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে এবং পরিস্থিতি বিবেচনায় অতিরিক্ত ফোর্স প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক অঙ্গনে। তার জানাজায় অংশ নিতে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় সাধারণ মানুষের ঢল নেমেছে।
উল্লেখ্য, গত ১২ ডিসেম্বর দুপুরে ঢাকা-৮ আসনে নির্বাচনী প্রচারণা শেষে ফেরার পথে দুর্বৃত্তদের গুলিতে গুরুতর আহত হন স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদি। প্রথমে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও পরে এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। অবস্থার অবনতি হলে গত ১৫ ডিসেম্বর উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে সিঙ্গাপুর জেনারেল হসপিটালে স্থানান্তর করা হয়, সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
মহান মুক্তিযুদ্ধের ডেপুটি চিফ অব স্টাফ (উপ-সর্বাধিনায়ক) এবং সাবেক বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) এ কে খন্দকার, বীর উত্তম ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না-লিল্লাহ ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। শনিবার (২০ ডিসেম্বর) সকাল ১০টা ৩৫ মিনিটে বার্ধক্যজনিত কারণে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)।
এ কে খন্দকারের জন্ম ১৯৩০ সালের ১ জানুয়ারি। বাবার তৎকালীন কর্মস্থলের সুবাদে রংপুরে তার জন্ম হলেও তার পৈত্রিক নিবাস পাবনা জেলার বেড়া উপজেলার ভারেঙ্গা গ্রামে। তার বাবা খন্দকার আব্দুল লতিফ ব্রিটিশ আমলের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন এবং মা আরেফা খাতুন ছিলেন একজন আদর্শ গৃহিণী। চার ভাই ও এক বোনের মধ্যে এ কে খন্দকার ছিলেন তৃতীয়। বাবার চাকরির সুবাদে বগুড়া করোনেশন স্কুলে তার শিক্ষাজীবন শুরু হয়। পরবর্তীতে ১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময় তিনি মালদা জেলা স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করেন।
বর্ণাঢ্য সামরিক জীবনের অধিকারী এ কে খন্দকার ১৯৫২ সালের সেপ্টেম্বরে পাকিস্তান বিমান বাহিনীতে (পিএএফ) পাইলট অফিসার হিসেবে কমিশন লাভ করেন। ১৯৫৫ সাল পর্যন্ত তিনি ফাইটার পাইলট হিসেবে কাজ করেন এবং পরবর্তীতে ফ্লাইং ইন্সট্রাক্টর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বিভিন্ন সময়ে তিনি ফ্লাইট কমান্ডার, জেট ফাইটার কনভারশন স্কোয়াড্রনের স্কোয়াড্রন কমান্ডার এবং পিএএফ একাডেমির ট্রেনিং উইং-এর অফিসার কমান্ডিং হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৯ সালে তিনি ঢাকায় পাকিস্তান বিমান বাহিনী ঘাঁটির সেকেন্ড ইন কমান্ড হিসেবে দায়িত্ব পান।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি মুক্তিবাহিনীতে যোগ দেন এবং ডেপুটি চিফ অফ স্টাফের গুরুদায়িত্ব গ্রহণ করেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় ১৯৭১ সালের ২১ নভেম্বর তৎকালীন অন্তর্বতীকালীন সরকার তাকে গ্রুপ ক্যাপ্টেন হিসেবে পদোন্নতি দেয়। তিনি মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল এম এ জি ওসমানীর ব্যক্তিগত ডেপুটি ইন চার্জ বা উপ-প্রধান সেনাপতি হিসেবে যুদ্ধের ময়দানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান হাদির জানাজায় অংশ নিতে ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন জড়ো হতে শুরু করেছে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে। ছোটবড় মিছিল নিয়ে শত শত মানুষ সংসদ ভবন এলাকায় আসছেন।
শনিবার (২০ ডিসেম্বর) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ‘হাদি মরল কেন’, ‘ইউনূস সরকার বিচার চাই’, ‘আমার ভাই, আমার ভাই-হাদি ভাই, হাদি ভাই’, ‘নারায়ে তাকবির, আল্লাহু আকবর’, ‘হাদি ভাইয়ের হত্যার বিচার চাই’, ‘বিচার চাই’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে দিতে সেখানে জড়ো হচ্ছে জনতা।
কুমিল্লা থেকে হাদির জানাজায় অংশ নিতে এসেছেন মশিউর রহমান নামের এক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক। তিনি বলেন, আমরা এমন একটি সমাজ চাই যেখানে কোনো অন্যায় বরদাশত করা হবে না। হাদির জানাজায় অংশ নেওয়া আমার জীবনের বেদনাদায়ক ঘটনাগুলোর একটি। তিনি মারা গেলেও বিপ্লবী কণ্ঠস্বরের মধ্য দিয়ে বিপ্লবী তরুণদের হৃদয়ে যুগ যুগ ধরে বেঁচে থাকবেন।
দুপুরে ২টায় ওসমান হাদির জানাজা পড়াবেন তার বড় ভাই আবু বকর সিদ্দিক। এরপর জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবরের পাশে তার দাফন হবে।
হাদির জানাজা ঘিরে জাতীয় সংসদ ভবনসহ রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে, নেওয়া হয়েছে ব্যাপক প্রস্তুতি। পুলিশ, বিজিবি, র্যাব মোতায়েন করা হয়েছে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ এবং আশেপাশে এলাকাজুড়ে। সেনাবাহিনীর সদস্যদের টহল দিতে দেখা গেছে।
এ বিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া ও পাবলিক রিলেশনস বিভাগের উপকমিশনার তালেবুর রহমান বলেন, সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে এক হাজার বডি-ওর্ন ক্যামেরাসহ পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করেছে ডিএমপি।
বিজিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা শরীফুল ইসলাম জানান, সার্বিক আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে জাতীয় সংসদ ভবন ও রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় বডি-ওর্ন ক্যামেরা ও রায়োট কন্ট্রোল গিয়ারসহ ২০ প্লাটুন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) মোতায়েন করা হয়েছে।
এ ছাড়া জানাজায় যারা অংশগ্রহণ করবেন, তাদের কোনো ধরনের ব্যাগ বা ভারি বস্তু বহন না করার জন্য অনুরোধ জানিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর। পাশাপাশি জানাজা চলাকালে সংসদ ভবন এলাকায় ও আশপাশে ড্রোন ওড়ানো কঠোরভাবে নিষিদ্ধ থাকবে বলেও জানানো হয়েছে।
ইনকিলাব মঞ্চ এক ফেইসবুক পোস্টে লিখেছে, পরিবারের দাবির ভিত্তিতে তাদের সংগঠনের আহ্বায়ককে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের পাশে সমাহিত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
হাদির মৃত্যুর ঘটনায় আজ জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখাসহ নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রীয় শোক পালিত হচ্ছে।
গত ১২ ডিসেম্বর দুপুর সোয়া ২টার দিকে রাজধানীর বিজয়নগর পানির ট্যাংকির সামনে রিকশায় করে যাওয়ার সময় ওসমান হাদির উপর আক্রমণ হয়। ওই সময় মোটরসাইকেলে করে এসে দুজন তাকে খুব কাছ থেকে গুলি করে পালিয়ে যায়।
পরে আশঙ্কাজনক অবস্থায় দ্রুত তাকে ঢাকা মেডিকেলের জরুরি বিভাগে নেওয়া হয়। একপর্যায়ে পরিবারের ইচ্ছায় তাকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। এরপর সেখানে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) তার চিকিৎসা চলে।
পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য সোমবার এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে হাদিকে সিঙ্গাপুর নিয়ে যাওয়া হয়েছিল; সেখানেই বৃহস্পতিবার তার মৃত্যু হয়।সূত্র : ইউএনবি
আজ বেলা দুইটায় জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় শহীদ ওসমান হাদির নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানিয়েছে, শহীদ ওসমান হাদির নামাজে জানাজায় অংশগ্রহণে আগ্রহীদের কোনো প্রকার ব্যাগ বা ভারী বস্তু বহন না করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
একই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকলের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে এসময় সংসদ ভবন ও এর আশপাশের এলাকায় ড্রোন ওড়ানো সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদি হত্যার প্রতিবাদ ও বিচার দাবিতে রাজধানীর শাহবাগে বিক্ষোভ সমাবেশ করে ছাত্র ও সর্বস্তরের জনতা।
শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) ভোর থেকেই শাহবাগ এলাকায় মানুষ জড়ো হতে শুরু করে। সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের উপস্থিতি বাড়তে থাকে। দুপুরের দিকে সেখানে ছাত্র-জনতার ঢল নামে।
বিক্ষোভের মধ্যেই মুসল্লিদের শাহবাগ মোড়ে জুমার নামাজ আদায় করতে দেখা যায়। নামাজ শেষে মোড়ের নাম পরিবর্তন করে ‘শহীদ ওসমান হাদি চত্বর’ ঘোষণা করা হয়। আন্দোলনের কারণে শাহবাগ মোড়ে গণপরিবহন চলাচল বন্ধ থাকে।
এদিন বিকেল ৩টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সহ-সভাপতি (ভিপি) সাদিক কায়েমের ঘোষণায় শাহবাগে শুরু হয় আধিপত্যবাদবিরোধী সমাবেশ। মৎস্য ভবনমুখী সড়কে ডাকসু সদস্যরা একটি ট্রাকের ওপর অবস্থান নিয়ে নানা প্রতিবাদী স্লোগান দেন। পাশাপাশি জুলাই ভাস্কর্যের পাদদেশে জুলাই আন্দোলনে অংশ নেওয়া বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মের সদস্যদেরও বিশাল অবস্থান নিতে দেখা গেছে। এসময় আন্দোলনকারীদের ‘আর নয় প্রতিরোধ, এবার হবে প্রতিশোধ’, ‘এক হাদি লোকান্তরে, লক্ষ হাদি ঘরে ঘরে’, ‘এক হাদি লোকান্তরে, লক্ষ হাদি লড়াই করে’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে দেখা যায়।
সমাবেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি নানা সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতাকর্মী এবং সাধারণ মানুষ অংশ নিয়েছেন। তারা হাদি হত্যার বিচার এবং ফ্যাসিবাদ ও আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের আহ্বান জানান।
বিক্ষোভকারীদের দাবির মধ্যে রয়েছে হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের দ্রুত শনাক্ত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা এবং স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগ। তারা ঘোষণা দিয়েছেন, ওসমান হাদির লাশ ঢাকায় পৌঁছানো পর্যন্ত তারা শাহবাগ মোড়ে অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন।
এর আগে জুমার নামাজের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে শহীদ হাদির রুহের মাগফিরাত কামনায় বিশেষ দোয়া অনুষ্ঠিত হয়। দোয়া শেষে শিক্ষার্থীরা মিছিল সহকারে শাহবাগে এসে সমাবেশে যোগ দেন।
গত ১২ ডিসেম্বর রিকশা আরোহী হাদি মোটরসাইকেলে থাকা দুর্বৃত্তদের গুলিতে আহত হন। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে ওই দিন রাতেই তাকে এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখান থেকে ১৫ ডিসেম্বর সিঙ্গাপুর পাঠানো হয়। গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টার পর সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। তার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার পরপরই সর্বস্তরের ছাত্র-জনতা শাহবাগে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করে।
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির জানাজা নামাজের যে সময় নির্ধারণ করা হয়েছিল, তাতে পরিবর্তন আনা হয়েছে। শনিবার (২০ ডিসেম্বর) দুপুর আড়াইটার পরিবর্তে আধাঘন্টা এগিয়ে এনে দুপুর দুইটায় মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে অনুষ্ঠিত হবে।
শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রেস উইং থেকে বলা হয়, ‘আগামীকাল (শনিবার, ২০ ডিসেম্বর) দুপুর দুইটায় জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় শহীদ ওসমান হাদির জানাজা অনুষ্ঠিত হবে।
ওসমান হাদির জানাজায় অংশগ্রহণের জন্য বেশ কিছু শর্তও জুড়ে দিয়েছে সরকার। যারা জানাজায় অংশগ্রহণ করবে তারা কোনো ধরনের ভারী ব্যাগ বা ভারী বস্তু বহন না করার অনুরোধ জানানো হয়েছে।
এছাড়া, জানাজার সময় সংসদ ভবন ও এর আশপাশের এলাকায় ড্রোন ওড়ানো সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ বলে ঘোষণা করেছে সরকার।
উল্লেখ্য, শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা পৌঁনে ছয়টায় ঢাকায় পৌঁছে ওসমান হাদির মরদেহ। বিমানবন্দর থেকে মরদেহ হিমাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। শনিবার জানাজা শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কবি কাজী নজরুল ইসলামের পাশে সমাহিত করা হবে বলে জানিয়েছে ইনকিলাব মঞ্চ।
রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার একটি চিকিৎসা প্রক্রিয়া শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ও তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন।
শুক্রবার বিকেলে এভারকেয়ার হাসপাতালের সামনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।
সাবেক প্রধানমন্ত্রীর শারীরিক অবস্থা বর্তমানে স্থিতিশীল রয়েছে জানিয়ে জাহিদ হোসেন বলেন, খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটেনি।
জাহিদ হোসেন বলেন, ‘২৩ নভেম্বর থেকে টানা প্রায় এক মাস ধরে খালেদা জিয়া এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। আল্লাহর অশেষ মেহেরবানিতে এবং দেশবাসীর দোয়ায় তার শারীরিক অবস্থা বর্তমানে গত এক মাসের তুলনায় স্থিতিশীল রয়েছে। শুক্রবার খালেদা জিয়ার শরীরে একটি ছোট চিকিৎসা প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে। এটি সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে এবং তিনি তা ভালোভাবে সহ্য করতে পেরেছেন।’
বিএনপি চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত চিকিৎসক বলেন, বর্তমানে খালেদা জিয়া ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) চিকিৎসাধীন। এখানে ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটের (আইসিইউ) সব ধরনের সুবিধা রয়েছে। সাধারণভাবে বুঝতে চাইলে বলা যায়, তিনি আইসিইউ ব্যবস্থাসম্পন্ন একটি কেবিনে চিকিৎসাধীন।
জাহিদ হোসেন জানান, দেশি-বিদেশি চিকিৎসকদের সমন্বয়ে গঠিত মেডিকেল বোর্ডের অধীনে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা চলছে। এ চিকিৎসা প্রক্রিয়া যেন আল্লাহ অব্যাহত রাখেন, সে জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চাওয়া হয়েছে।
এসময় খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়েছে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বর্তমানে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটেনি। আজ যে চিকিৎসা প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে, সেটি সফলভাবে হওয়া প্রমাণ করে যে তার অবস্থা স্থিতিশীল রয়েছে।’
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শহীদ শরিফ ওসমান হাদির জানাজা শনিবার (২০ ডিসেম্বর) দুপুর আড়াইটায় জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় অনুষ্ঠিত হবে।
শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, জানাজায় অংশগ্রহণে আগ্রহীদের কোনো প্রকার ব্যাগ বা ভারী বস্তু বহন না করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ জানানো হচ্ছে।
একই সঙ্গে এসময় সংসদ ভবন ও আশপাশের এলাকায় ড্রোন ওড়ানো সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ থাকবে বলে জানান উপ-প্রেস সচিব।
গত ১২ ডিসেম্বর রাজধানীর পুরানা পল্টনে নির্বাচনি প্রচারণার সময় সন্ত্রাসীদের গুলিতে মাথায় গুরুতর আহত হন ওসমান হাদি। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (ঢামেক) নেওয়া হয়, যেখানে প্রাথমিক অস্ত্রোপচার করা হয়। পরে তাকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) স্থানান্তর করা হয়।
সেখানে তিন দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) দুপুরে উন্নত চিকিৎসার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে তাকে সিঙ্গাপুরে পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার রাতে তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। তার মরদেহ নিয়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট বিজি-৩৮৫ শুক্রবার সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার অবস্থা গত এক মাসের মধ্যে এখন বেশ স্থিতিশীল বলে জানিয়েছেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন।
শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালের সামনে বিএনপির চেয়ারপারসনের সর্বশেষ স্বাস্থ্য পরিস্থিতি নিয়ে এক ব্রিফিংয়ে তিনি এ কথা জানান।
ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, আপনারা জানেন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের চেয়ারপারসন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া, তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী আজকে এক মাস প্রায় হয়ে যাচ্ছে, গত ২৩ নভেম্বর আজ ১৯ ডিসেম্বর যাবৎ এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। এবং আলহামদুলিল্লাহ, কালকে আপনাদেরকে আমি বলেছিলাম আপনাদের প্রশ্নের উত্তরে যে উনার শারীরিক অবস্থা আপনাদের দোয়ায় আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের রহমতে উনার শারীরিক অবস্থা গত এক মাসের মধ্যে এখন বেশ স্থিতিশীল আছে। এবং আজকেও উনার একটা ছোট প্রসিডিউর করা হয়েছে ওটিতে নিয়ে এবং সেটিও উনি অত্যন্ত সফলভাবে গ্রহণ করতে পেরেছেন, অর্থাৎ প্রসিডিউরটা সুন্দরভাবে করা হয়েছে। এবং উনি এখন উনার সিসিইউতে যে ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট ওখানে উনি আইসিইউ এর যে ব্যবস্থা, সে ব্যবস্থা সম্বলিত কেবিনে চিকিৎসাধীন আছেন।
তিনি বলেন, আমরা আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবং আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সহধর্মিণী ডাক্তার জুবাইদা রহমানসহ পরিবারের সকলের পক্ষ থেকে এবং দলের পক্ষ থেকে আপনাদের মাধ্যমে দেশবাসীর কাছে আমরা দোয়া চাই যেন একইভাবে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া মেডিকেল বোর্ডের অধীনে যে চিকিৎসা, দেশি-বিদেশি চিকিৎসকদের সমন্বয়ে গঠিত যে মেডিকেল বোর্ড, সেই মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসা যেভাবে উনি নিতে পারছেন সেটি যেন আল্লাহ রাব্বুল আলামিন উনাকে অব্যাহত রাখার তৌফিক দান করেন। এবং এখনকার যে অবস্থা আছে এ অবস্থা যাতে আরও সুস্থতার দিকে উনাকে নিয়ে যেতে পারে সেই দোয়া চাচ্ছি।
সামগ্রিকভাবে উনার শারীরিক অবস্থা কি উন্নতির দিকে বলা যায়? সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের জবাবে ডা. জাহিদ বলেন, আমি তো আপনাদের বলেছি, আমি দুইটি শব্দ উচ্চারণ করেছি একটি বলেছি আলহামদুলিল্লাহ। দ্বিতীয়টি বলেছি, গতকালকেও আপনাদেরকে বলেছি সেই তুলনায় উনি আজকে উনার শরীরের ওপর একটা প্রসিডিউর করা হয়েছে সেটি উনি অত্যন্ত সফলভাবে গ্রহণ করতে পেরেছেন এবং উনি এখন এই মুহূর্তে উনার অবস্থা স্থিতিশীল আছে। অর্থাৎ উনার অবস্থা অবনতি ঘটে নাই।
ঢাকায় পৌঁছেছে জুলাই জজবার প্রাণ, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষার অকুতোভয় বীর শহীদ শরিফ ওসমান হাদির মরদেহ। শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে তার মরদেহ বহনকারী বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট বিজি-৩৮৫ ফ্লাইটটি ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে।
এর আগে বাংলাদেশ সময় দুপুর ২টা ৩ মিনিটে সিঙ্গাপুরের চাঙ্গি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ফ্লাইটটি ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হয়।
শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) দুপুর আড়াইটার দিকে ইনকিলাব মঞ্চের ফেসবুক পেজে জানানো হয়, শহীদ ওসমান হাদিকে বহনকারী বিমানটি সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করবে।
আমাদের জুলাই জজবার প্রাণ, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষার অকুতোভয় বীরকে নিতে সবাই এয়ারপোর্ট থেকে শাহবাগগামী রাস্তার দুপাশে সুশৃঙ্খলভাবে অবস্থান নেবো। সেখান থেকে শহীদ ওসমান হাদিকে সর্বসাধারণের সাক্ষাতের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদে আনা হবে।
গত ১২ ডিসেম্বর রাজধানীর পুরানা পল্টনে নির্বাচনি প্রচারণার সময় সন্ত্রাসীদের গুলিতে মাথায় গুরুতর আহত হন ওসমান হাদি। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (ঢামেক) নেওয়া হয়, যেখানে প্রাথমিক অস্ত্রোপচার করা হয়। পরে তাকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) স্থানান্তর করা হয়।
সেখানে তিন দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) দুপুরে উন্নত চিকিৎসার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে তাকে সিঙ্গাপুরে পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার রাতে তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, দেশের ভৌগলিক অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্ব অক্ষুণ্ন রাখার পাশাপাশি সীমান্ত সুরক্ষা, চোরাচালান রোধ, মাদক ও নারী-শিশু পাচার রোধে বিজিবি ‘সীমান্তের অতন্দ্র প্রহরী’ হিসেবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, দেশের সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ যেকোন জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলা করে জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিধানেও বিজিবি প্রশংসনীয় ভূমিকা রাখছে।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বিশেষ করে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর দেশের সার্বভৌমত্ব ও সীমান্তের নিরাপত্তা রক্ষায় বিজিবি সীমান্ত উত্তেজনা ও পুশইন রোধসহ বিভিন্ন নিরাপত্তা ঝুঁকি মোকাবিলায় পেশাদারিত্ব বজায় রেখে কাজ করে যাচ্ছে।
শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) ড. মুহাম্মদ ইউনূস আগামীকাল (শনিবার) ‘বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) দিবস-২০২৫ উদযাপন’ উপলক্ষ্যে দেওয়া বাণীতে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধান উপদেষ্টা বিজিবি দিবস উপলক্ষ্যে বাহিনীর সকল সদস্যকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ এই অঞ্চলের সুদীর্ঘ ইতিহাস ও গৌরবময় ঐতিহ্যের উত্তরাধিকারী।
তিনি আরও জানান, ১৯৭১ সালে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে দু’জন বীরশ্রেষ্ঠসহ ১১৯ জনের খেতাবপ্রাপ্তি এবং ৮১৭ শহীদের আত্মত্যাগ বিজিবির ইতিহাসকে মহিমান্বিত করেছে।
মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে দেশমাতৃকার বৃহত্তর কল্যাণে এ বাহিনীর যে সকল সদস্য বিভিন্ন সময়ে আত্মোৎসর্গ করেছেন তাদের আত্মার শান্তি কামনা করেন তিনি।
ড. ইউনূস বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ দিবস-২০২৫ উপলক্ষ্যে আয়োজিত সকল কর্মসূচির সার্বিক সাফল্য কামনা করেন।
সূত্র : বাসস