মঙ্গলবার, ৯ ডিসেম্বর ২০২৫
২৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

বাংলাদেশ বিমান বাহিনী একাডেমিতে রাষ্ট্রপতি কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত

বাসস
প্রকাশিত
বাসস
প্রকাশিত : ১২ ডিসেম্বর, ২০২৪ ২৩:১৪

বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর ৮৫তম বাফা কোর্স, ডিরেক্ট এন্ট্রি-২০২৪ বি এবং এসপিএসএসসি-২০২৪ বি কোর্স এর কমিশন প্রাপ্তি উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি কুচকাওয়াজ (শীতকালীন)-২০২৪ আজ বৃহস্পতিবার যশোরস্থ বিমান বাহিনী একাডেমি প্যারেড গ্রাউন্ডে অনুষ্ঠিত হয়।

বাংলাদেশ বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে কুচকাওয়াজ পরিদর্শন ও সালাম গ্রহণ করেন। তিনি গ্র্যাজুয়েটিং অফিসারদের মাঝে পদক এবং ফ্লাইং ব্যাজ বিতরণ করেন।

অফিসার ক্যাডেট জান্নাতুল ফেরদৌস মোহনা ৮৫তম বাফা কোর্সের প্রশিক্ষণে সার্বিক কৃতিত্বের জন্য ‘সোর্ড অব অনার’, অফিসার ক্যাডেট মো. রহমত উল্লাহ শিশির উড্ডয়ন প্রশিক্ষণে সেরা কৃতিত্বের জন্য ‘বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান ট্রফি’ এবং অফিসার ক্যাডেট মো. ফাহিম মোর্শেদ রাতুল জেনারেল সার্ভিস প্রশিক্ষণে কৃতিত্বের জন্য ‘কমান্ড্যান্টস্ ট্রফি’লাভ করেন।

এছাড়াও ৮৫তম বাফা কোর্স (গ্রাউন্ড ব্রাঞ্চ) এ সেরা কৃতিত্বের জন্য অফিসার ক্যাডেট মো. ফাহিম মোর্শেদ রাতুল ‘বিমান বাহিনী প্রধানের ট্রফি’ লাভ করেন।

উল্লেখ্য, এই শীতকালীন সেমিস্টারে বীর উত্তম বদরুল আলম স্কোয়াড্রন চ্যাম্পিয়ন বিবেচিত হয়ে একাডেমি পতাকা লাভ করে।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি বিমান বাহিনী প্রধান বক্তব্যের শুরুতে বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য সর্বোচ্চ আত্মত্যাগকারী বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। সেই সাথে দুঃসাহসিক আকাশ যুদ্ধ পরিচালনাকারী কিলো ফ্লাইটের সদস্যদের স্মরণ করেন, যাদের দৃপ্ত প্রত্যয়ে স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পথ প্রশস্ত হয়েছে।

তিনি বলেন, ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত অন্তর্বর্তী সরকার একটি বৈষম্যহীন নতুন বাংলাদেশ গড়তে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। তিনি বলেন, বিভিন্ন জটিল সমস্যা মোকাবেলা করে আমরা আমাদের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের গতি সচল রাখতে সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছি। দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী তথা সশস্ত্র বাহিনী জনগণের পাশে দাঁড়িয়ে ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেছে।

বিমান বাহিনী প্রধান বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে সংঘটিত বিভিন্ন জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বিমান বাহিনীর দেশপ্রেমিক সদস্যরা দেশের আপামর জনগণের স্বার্থে যে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে তা অবিস্মরণীয়। বিশেষ করে গত আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসে বাংলাদেশের দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলে ভয়াবহ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর অকুতোভয় বিমানসেনারা যেভাবে পেশাদারিত্ব ও মানবিকতার সাথে বন্যার্তদের পাশে দাঁড়িয়েছে তা নির্ভেজাল দেশপ্রেমের বহিঃপ্রকাশ।

তিনি বলেন, বর্তমান সরকার বাংলাদেশ বিমান বাহিনীকে আরও শক্তিশালী ও যুগোপযোগী করে গড়ে তোলার জন্য নিরলস কাজ করে যাচ্ছে; বাহিনীতে সংযোজিত হচ্ছে নতুন নতুন সব সর্বাধুনিক বিমান, র‌্যাডার, সিমুলেটর এবং সরঞ্জামাদি।

এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন বলেন, বিশ্ব শান্তিরক্ষাসহ দেশের অভ্যন্তরে শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখা, দূর্যোগ মোকাবেলা এবং অন্যান্য দেশে মানবিক সাহায্য প্রেরণ বাংলাদেশ বিমান বাহিনী দক্ষতা ও পেশাদারিত্বের পরিচয় বহন করে।

তিনি বিমান বাহিনী একাডেমির প্রশিক্ষণকে বিশ্বমানের বলে অভিহিত করেন, যার কারণে বিশ্বের বিভিন্ন বন্ধুপ্রতিম দেশের অফিসার ক্যাডেটরা এ একাডেমিতে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করছে। তিনি সদ্য কমিশনপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের সাফল্য কামনা করেন এবং বাংলাদেশ বিমান বাহিনী একাডেমির সকল সদস্যদেরকে ধন্যবাদ জানান।

এ কুচকাওয়াজের মাধ্যমে ১২ জন মহিলা অফিসার ক্যাডেটসহ মোট ৭৪ জন অফিসার ক্যাডেট কমিশন লাভ করেন। অফিসার ক্যাডেট একাডেমি সিনিয়র আন্ডার অফিসার আসিফ মাহমুদ আনুষ্ঠানিক কুচকাওয়াজের নেতৃত্ব দেন। কুচকাওয়াজ শেষে বিমান বাহিনী একাডেমির বিভিন্ন প্রকার বিমানের মনোজ্ঞ ফ্লাইপাস্ট, আকর্ষণীয় এ্যারোবেটিক ডিসপ্লে এবং বিমান বাহিনীর চৌকশ প্যারাট্রুপারদের হেলিকপ্টার থেকে দৃষ্টিনন্দন প্যারা জাম্পিং অনুষ্ঠিত হয়।

অনুষ্ঠানে সামরিক ও অসামরিক উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা ছাড়াও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এবং সদ্য কমিশনপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের অভিভাবকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।


বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার কাঙ্ক্ষিত উন্নতি না হওয়ায় আপাতত লন্ডন যাত্রা স্থগিত

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার কাঙ্ক্ষিত উন্নতি না হওয়ায় আপাতত তাঁর লন্ডন যাত্রা স্থগিত থাকছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তাঁর যকৃৎ বা লিভারের জটিলতা কিছুটা নিয়ন্ত্রণে থাকলেও কিডনি সংক্রান্ত সমস্যা নিয়ে তাঁরা বেশ উদ্বিগ্ন। ৮০ বছর বয়সী সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল না হওয়া পর্যন্ত তাঁকে বিদেশে নেওয়ার ঝুঁকি নিতে চাইছেন না বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দল।

গত ২৩ নভেম্বর থেকে রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন তিনি। শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে ২৭ নভেম্বর তাঁকে নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে (সিসিইউ) স্থানান্তর করা হয়। তিনি দীর্ঘদিন ধরে বাত, বহুমূত্র, যকৃৎ, বৃক্ক, ফুসফুস, হৃদরোগ ও চোখের সমস্যায় ভুগছেন। তাঁর চিকিৎসায় দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে গঠিত চিকিৎসক দল নিয়মিত বৈঠক করে চিকিৎসার ধরন পরিবর্তন করছেন।

চিকিৎসক দলের একজন সদস্য জানিয়েছেন, বয়োজ্যেষ্ঠ এই নেত্রীর শারীরিক উন্নতি হচ্ছে অত্যন্ত ধীরগতিতে। একটি রোগের জটিলতা কমলে আরেকটি নতুন করে দেখা দিচ্ছে। বর্তমানে কিডনি জটিলতা ভোগাচ্ছে বেশি। রক্তে ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে অনেক আগেই, যা নিয়ন্ত্রণে রাখতে নিয়মিত ডায়ালাইসিস করতে হচ্ছে। ডায়ালাইসিস বন্ধ করলেই অবস্থার অবনতি ঘটছে। নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে তাঁকে সর্বাধুনিক চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে এবং বিভিন্ন পরীক্ষার ফলাফল বা শারীরিক নির্দেশকগুলো খুব একটা খারাপ না এলেও তিনি পুরোপুরি ঝুঁকিমুক্ত নন।

চিকিৎসকদের পরামর্শে গুলশানের বাসা থেকে তাঁর জন্য প্রতিদিন খাবার পাঠানো হচ্ছে। হাসপাতেলে শাশুড়ির শয্যাপাশে দিনের অধিকাংশ সময় কাটাচ্ছেন পুত্রবধূ ডা. জোবাইদা রহমান, যিনি চিকিৎসাসংক্রান্ত বিষয়গুলো সমন্বয় করছেন। এছাড়াও ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী এবং গৃহকর্মী ও ব্যক্তিগত সহায়করা সার্বক্ষণিক তাঁর সঙ্গে রয়েছেন। ভাই শামীম এস্কান্দার ও তাঁর স্ত্রীও নিয়মিত খোঁজখবর রাখছেন।

উন্নত চিকিৎসার জন্য সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে যুক্তরাজ্যে নিয়ে যেতে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স আজ মঙ্গলবার আসছে না। বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের কাছে বিমান পরিচালনাকারী সংস্থাটি মঙ্গলবারের নির্ধারিত সময়সূচি বাতিলের আবেদন করেছে। এ নিয়ে পঞ্চমবারের মতো পেছাল তাঁর বিদেশ যাত্রা। বিএনপি নেতারা জানিয়েছেন, যাত্রার বিষয়টি সম্পূর্ণ নির্ভর করছে তাঁর শারীরিক অবস্থার ওপর এবং এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দল।


অবহেলা ঘুচিয়ে সংরক্ষণের পথে রোকেয়ার স্মৃতিধন্য আঁতুড়ঘর

আপডেটেড ৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১০:১৬
নিজস্ব প্রতিবেদক

বাঙালি নারী জাগরণের অগ্রদূত মহীয়সী নারী বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ১৮৮০ সালের ৯ ডিসেম্বর রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার পায়রাবন্দ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। আবার ১৯৩২ সালের এই একই দিনে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। নারীমুক্তির এই পথিকৃৎকে শ্রদ্ধা জানাতে আজ পায়রাবন্দে তাঁর স্মৃতিবিজড়িত পৈতৃক ভিটায় বিশেষ আয়োজন করা হয়েছে।

দিবসটি উপলক্ষে এবার এক ঐতিহাসিক উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বেগম রোকেয়ার জন্মভিটা ও আঁতুড়ঘরের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রহণ করতে যাচ্ছে রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়। আজ মঙ্গলবার বাংলা একাডেমি ও বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে এ-সংক্রান্ত একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে। বাংলা একাডেমির মহাপরিচালকের উপস্থিতিতে এই দায়িত্ব হস্তান্তরের ফলে রোকেয়ার আঁতুড়ঘরের সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ এবং তাঁকে নিয়ে গবেষণার নতুন দ্বার উন্মোচিত হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শওকাত আলী। এতে দেশ-বিদেশের পর্যটক ও গবেষকরা নতুন সুযোগ পাবেন।

তৎকালীন রক্ষণশীল সমাজের হাজারো বাধা ডিঙিয়ে বেগম রোকেয়া নারীর জন্য শিক্ষার আলো জ্বালিয়েছিলেন। ভাই ইব্রাহীমের সহায়তায় গভীর রাতে মোমের আলোয় তিনি অক্ষরজ্ঞান লাভ করেন, যা তাঁর মনোজগতের দুয়ার খুলে দেয়। তাঁর লেখা ‘সুলতানার স্বপ্ন’ আজও নারী স্বাধীনতার এক অনন্য দলিল। পায়রাবন্দ বেগম রোকেয়া স্মৃতি মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ আবু আল বাকেরের মতে, রোকেয়া পায়রাবন্দের মানুষের কাছে শুধু গর্ব নন, তিনি এক ধরনের স্বপ্ন। স্থানীয় গবেষক ও শিক্ষাবিদদের দাবি, পায়রাবন্দকে নারী ক্ষমতায়নের ‘আদর্শ গ্রাম’ ঘোষণা করা হোক, কারণ এখান থেকেই নারী জাগরণের সূচনা হয়েছিল।

তবে স্থানীয়দের মনে দীর্ঘদিনের ক্ষোভ ও হতাশা রয়েছে রোকেয়ার জন্মস্থানের অবহেলা নিয়ে। রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. তুহিন ওয়াদুদ আক্ষেপ করে জানান, নারী মুক্তির দিশারি হয়ে জন্মালেও রোকেয়ার জন্মভিটা দীর্ঘকাল অবহেলার অন্ধকারে ঢাকা ছিল। এছাড়া রোকেয়ার দেহাবশেষ ভারত থেকে দেশে ফিরিয়ে আনার দাবিটিও দীর্ঘদিনের। ১৯৩২ সালে কলকাতায় মৃত্যুর পর সোদপুর পানিহাটিতে তাঁকে দাফন করা হয়। ২০০৯ সালে পায়রাবন্দে এক আলোচনা সভায় তাঁর ভাইয়ের মেয়ে রনজিনা সাবের ফুপুর দেহাবশেষ ফিরিয়ে আনার দাবি জানিয়েছিলেন। তৎকালীন জেলা প্রশাসক এ বিষয়ে উদ্যোগ নিলেও কাগজে-কলমে তার কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি হয়নি। রোকেয়া অনুরাগীদের আক্ষেপ, পায়রাবন্দে তাঁর বাবার সম্পদ ও কবর থাকলেও তিনি নিজে শুয়ে আছেন ভিনদেশে।

বেগম রোকেয়া দিবস উপলক্ষে রংপুর জেলা প্রশাসন ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দিনব্যাপী পৃথক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে সকালে রোকেয়ার আঁতুড়ঘরে শ্রদ্ধা নিবেদন, আলোচনা সভা, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এ ছাড়া আয়োজন করা হয়েছে চার দিনব্যাপী ‘রোকেয়া মেলা’। শীতের হিমেল ভোরে কুয়াশা ভেদ করে পায়রাবন্দে আজ জ্বলে উঠেছে রোকেয়ার স্মৃতির আলো, যে আলোয় উদ্ভাসিত হতে চায় আগামীর বাংলাদেশ।


ঐক্যবদ্ধ না হলে ভয়াবহ কিছু অপেক্ষা করছে: তারেক রহমান

লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন তারেক রহমান। ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ২৩:৪২
নিজস্ব প্রতিবেদক

নির্বাচনের মনোনয়নকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিএনপির মধ্যে চরম অন্তঃকোন্দল দেখা দিয়েছে। সে দিকে ইঙ্গিত করে দলের নেতাকর্মীদের সতর্ক করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সামনে কঠিন যুদ্ধ উল্লেখ করে বিভেদ মিটিয়ে ঐক্যবদ্ধ না হলে ভয়াবহ কিছু অপেক্ষা করছে বলে সতর্ক করেছেন তিনি।

সোমবার (৮ ডিসেম্বর) বিকেলে রাজধানীর খামারবাড়ির কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে বিএনপি আয়োজিত ‘বাংলাদেশ গড়ার পরিকল্পনা’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। তারেক রহমান লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন।

মনোনয়ন নিয়ে বিরোধের দিকে ইঙ্গিত করে তারেক রহমান বলেন, ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দ নয়, মুখ্য ধানের শীষ, দল এবং দেশের উন্নয়ন পরিকল্পনা। ঐক্যবদ্ধ না হলে সামনে ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, কম-বেশি যেটা ভালো মনে হয়েছে, সেই সিদ্ধান্তই নেওয়া হয়েছে। তোমার এলাকায় প্রার্থী ঘোষণা হয়েছে; হয়তো তুমি যাকে পছন্দ করতে, সে মনোনয়ন পায়নি—যে পেয়েছে তার সঙ্গে তোমার যোগাযোগ কম। কিন্তু আরে ভাই, তুমি তো প্রার্থীর জন্য নয়, তুমি ধানের শীষের জন্য, দলের জন্য! এখানে প্রার্থী মুখ্য নয়, মুখ্য তোমার দল, দেশের উন্নয়ন পরিকল্পনা, মুখ্য ধানের শীষ।

তারেক রহমান বলেন, সামনের যুদ্ধটা অনেক কঠিন। ঐক্যবদ্ধ না হতে পারলে সামনে ভয়াবহ কিছু অপেক্ষা করছে। আন্দোলনের সময় যেমন জনগণকে বুঝিয়েছিলে, তেমনি দেশ গড়ার পরিকল্পনা সম্পর্কেও তাদের বোঝাতে হবে, সম্পৃক্ত করতে হবে। জনগণের অংশগ্রহণ ছাড়া কোনো কিছুই বাস্তবায়ন সম্ভব নয়।

এ সময় তিনি জামায়াতে ইসলামীর দিকে ইঙ্গিত করে দলটির কিছু বক্তব্যের সমালোচনাও করেন। তিনি বলেন, এখন দেশে এক ধরনের প্রচারণা চলছে- একজন বিশেষ কেউ ভালো, আর বাকি সবাই খারাপ এটা গণতন্ত্রের জন্য ডেঞ্জেরাস ব্যাপার।

তারেক রহমান বলেন, গত ১৬ বছর একটা দল প্রচার করত শুধু তারাই ভালো আর বাকি সবাই খারাপ। ৫ তারিখের পর সেটির বোধহয় কোনো পরিবর্তন হয়নি।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, এখনো আবার এক ধরনের প্রচারণা চলছে যে, একজন ভালো আর বাকি সবাই খারাপ। এসব প্রচারণা পরিবর্তন অত্যন্ত জরুরি।

বর্তমান দেশের অর্থনৈতিক দুরবস্থা চলছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ধ্বংস। সেই অবস্থা পরিবর্তন করতে হলে জনগণের অংশগ্রহণ ছাড়া আমরা পারব না।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর সভাপতিত্বে ও যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেলের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন- চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জিয়াউদ্দিন হায়দার, ডা. মাহদী আমিন, ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমিনুল হক, যুবদল সভাপতি আবদুল মোনায়েম মুন্না, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এসএম জিলানী, কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুল, ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নিপুন রায় চৌধুরী, ছাত্রদল সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব প্রমুখ।


আমরা ইতোমধ্যে ঋণের ফাঁদে পড়ে গেছি

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
প্রতিবেদক, দৈনিক বাংলা

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান বলেছেন, ‘আমরা ইতিমধ্যেই ঋণের ফাঁদে পড়েছি; এ সত্য স্বীকার না করলে সামনে এগোনো সম্ভব নয়।’

এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ‘কয়েক বছর আগেও আমাদের কর-জিডিপি অনুপাত ১০ শতাংশের বেশি ছিল, এখন তা ৭ শতাংশের ঘরে ঘোরাফেরা করছে। সমস্যাটি কোথায়, তা স্পষ্টভাবে চিহ্নিত করতে হবে। কর-জিডিপি অনুপাত কমার একটি বড় কারণ হলো, জিডিপির সব খাত থেকে রাজস্ব সংগ্রহ সম্ভব হচ্ছে না।

সোমবার (৮ ডিসেম্বর) রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত সেমিনারে এসব কথা বলেন এনবিআর চেয়ারম্যান।

বাংলাদেশ পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি) ‘বাংলাদেশ স্টেট অব দ্য ইকোনমি ২০২৫’ ও ‘টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এসডিজি) অগ্রগতি প্রতিবেদন ২০২৫’ প্রকাশ ও উপস্থাপন উপলক্ষে এ সেমিনার আয়োজন করে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন, প্রধান উপদেষ্টার অর্থবিষয়ক বিশেষ সহকারী আনিসুজ্জামান চৌধুরী। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের এসডিজিবিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ, অর্থ বিভাগের সচিব মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদার ও পরিকল্পনা বিভাগের সচিব এস এম শাকিল আখতার।

এতে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন, পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) সদস্য মঞ্জুর হোসেন। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জিইডির অতিরিক্ত সচিব মনিরা বেগম।

অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেই এনবিআর দুই ভাগ হয়ে দুজন সচিবের নেতৃত্বে কাজ শুরু করবে বলে জানান এনবিআর চেয়ারম্যান।

অনুষ্ঠানে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘প্রয়োজনীয় সংস্কার ও আর্থিক শৃঙ্খলা নিশ্চিত করে রাজস্ব আদায় বাড়াতে না পারলে বাংলাদেশ গুরুতর ঋণের ফাঁদে পড়ে যেতে পারে, এম আশঙ্কা আছে।’

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘ঋণের ফাঁদে পড়া আমাদের দেশের জন্য ভালো হবে না। তখন ঋণ নিয়ে আবার ঋণ পরিশোধ করতে হবে। ইতোমধ্যে রাজস্ব বাজেটে ব্যয়ের প্রধান খাতের মধ্যে ছিল সরকারি কর্মচারীদের বেতন ও পেনশন। এরপর দ্বিতীয় স্থানে ছিল কৃষি ও শিক্ষা। কিন্তু কৃষি ও শিক্ষার মতো খাত পেছনে ফেলে এখন জায়গা এখন নিয়েছে ঋণের সুদ পরিশোধ।’


অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের আশাব্যঞ্জক লক্ষণ দেখা দিয়েছে: জিইডি

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

২০২৫ অর্থবছরের শেষ ছয় মাসে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে পুনরুদ্ধারের আশাব্যঞ্জক লক্ষণ দেখা গেছে।

সোমবার (৮ ডিসেম্বর) পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) প্রকাশিত ‘বাংলাদেশ স্টেট অব দ্য ইকোনমি ২০২৫’ প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।

রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বিভিন্ন পূর্বাভাসে প্রবৃদ্ধি শ্লথ হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করা হলেও বর্তমানে প্রধান সূচকগুলো ধীরে ধীরে পুনরুদ্ধারের দিকেই ইঙ্গিত করছে।

জিইডির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ২০২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি আগের বছরের তুলনায় কম থাকবে বলে বড় উন্নয়ন সহযোগীরা ধারণা করছে।

বিশ্বব্যাংক ৩.৩ শতাংশ থেকে ৪.১ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছে, আর এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) পূর্বাভাস দিয়েছে ৩.৯ শতাংশ। তবে ২০২৬ অর্থবছরে অর্থনীতি গতি সঞ্চার করবে এবং প্রবৃদ্ধি ৫.১ শতাংশ থেকে ৫.৩ শতাংশে উন্নীত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

প্রতিবেদনটিতে বাংলাদেশের বহিঃখাতের উল্লেখযোগ্য স্থিতিশীলতার কথা বলা হয়েছে। শক্তিশালী রেমিট্যান্স প্রবাহ, আমদানি স্থিতিশীলতা এবং মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানির পুনরুদ্ধার অভ্যন্তরীণ চাহিদা বৃদ্ধির পাশাপাশি বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরার ইঙ্গিত দিচ্ছে।

রপ্তানি আয়ও শক্তিশালী রয়েছে, যা তৈরি পোশাক (আরএমজি) খাতের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বৃদ্ধি, নীতি মেনে চলা এবং বাজার বহুমুখীকরণের মাধ্যমে সম্ভব হয়েছে।

বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ তিন মাসের বেশি আমদানি ব্যয় মেটাতে সক্ষম অবস্থায় স্থিতিশীল রয়েছে, যা বিচক্ষণ সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার প্রতিফলন।

প্রতিবেদনটিতে আরও বলা হয়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) দুই বিভাগে ভাগ করার সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে এনবিআর কর্মকর্তাদের কর্মবিরতির কারণে জুন মাসে রাজস্ব সংগ্রহ মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হয়। পরে কর্মসূচি প্রত্যাহারের ফলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয় এবং রাজস্ব আদায় পুনরায় শুরু হয়।

জিইডি জোর দিয়ে বলেছে, মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, বিনিয়োগকারীদের আস্থা পুনরুদ্ধার এবং আর্থিক খাত স্থিতিশীল করা ২০২৫-২৬ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি বাড়ানোর জন্য অপরিহার্য। যদিও অনেক পূর্বাভাস পুনরুদ্ধারের ইঙ্গিত দিচ্ছে, তবে প্রবৃদ্ধি কতটা কর্মসংস্থান সৃষ্টি, দারিদ্র্য হ্রাস এবং জীবনমান উন্নয়নে রূপান্তরিত হবে তা কার্যকর নীতি, শক্তিশালী আর্থিক খাতের শাসন এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন কৌশলের ওপর নির্ভর করবে।

প্রতিবেদনটিতে দুর্বল বেসরকারি বিনিয়োগ ও শিল্প কার্যক্রমকে প্রবৃদ্ধির বড় বাধা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। বিপরীতে, রেমিট্যান্স প্রবাহ, রপ্তানি কার্যকারিতা এবং উৎপাদন খাতের আউটপুট-বিশেষ করে তৈরি পোশাক শিল্প-প্রবৃদ্ধির প্রধান চালিকা শক্তি হিসেবে কাজ করছে এবং ২০২৬ অর্থবছরেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।

তবে বাংলাদেশকে সীমিত রিজার্ভ, বিনিয়োগকারীদের আস্থার সংকট, ক্রেতাদের পরিবর্তিত পছন্দ এবং বৈশ্বিক বাণিজ্য উত্তেজনা ও ভূরাজনৈতিক অনিশ্চয়তার মতো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে।

প্রতিবেদনটিতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশ এখন একটি গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে। বৃহৎ ও ক্রমবর্ধমান শ্রমবাজারের চাহিদা মোকাবিলা, উৎপাদনশীলতা বাড়ানো-বিশেষত পোশাক ও এসএমই খাতে রেমিট্যান্স বৃদ্ধি এবং মানবসম্পদ উন্নয়নে বিনিয়োগকে জাতীয় অগ্রাধিকার দিতে হবে।

উদীয়মান দুর্বলতাগুলো- বিশেষ করে মূল্যস্ফীতি, আর্থিক খাতের অস্থিরতা, দুর্বল বিনিয়োগ পরিবেশ, সুশাসন সংকট এবং বৈদেশিক ঝুঁকি সমাধান করতে ব্যর্থ হলে প্রবৃদ্ধি মন্থর হতে পারে, জীবনমান খারাপ হতে পারে, দারিদ্র্য বাড়তে পারে এবং বৈষম্য দেখা দিতে পারে।

অন্যদিকে, সময়োপযোগী ও সমন্বিত নীতি সংস্কার, শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান এবং স্পষ্ট নীতিগত বার্তা প্রদান নিশ্চিত করতে পারলে বাংলাদেশ পুনরায় গতি ফিরে পাবে এবং আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি অর্জনের সুযোগ তৈরি হবে।

জিইডি উপসংহারে বলেছে, কাঠামোগত সংস্কার ও উদ্ভাবননির্ভর অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি দ্বারা সমর্থিত একটি সুপরিকল্পিত জাতীয় টেকসই উন্নয়ন কৌশল ভবিষ্যৎ উন্নয়ন পরিকল্পনাকে পরিচালিত করবে, যা স্থিতিস্থাপকতা ও দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক শক্তি বাড়াবে।

সূত্র : বাসস


জাতীয় নির্বাচন স্থগিত চেয়ে করা রিট খারিজ

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের সব কার্যক্রম স্থগিত চেয়ে দায়ের করা রিট আবেদনটি খারিজ করে দিয়েছেন হাইকোর্ট। সোমবার বিচারপতি শিকদার মাহমুদুর রাজী ও বিচারপতি রিয়াজউদ্দিন আহমেদের হাইকোর্ট বেঞ্চ রিটটি ‘উত্থাপিত হয়নি’ বা ‘নট প্রেসড’ মর্মে খারিজের এই আদেশ দেন।

রিটকারী আইনজীবী ও বাংলাদেশ কংগ্রেসের মহাসচিব মো. ইয়ারুল ইসলাম জানান, শুনানির সময় আদালত পর্যবেক্ষণ দেন যে দেশ বর্তমানে নির্বাচনমুখী। নির্বাচনের এই সময়ে এমন রিট আবেদন উপযোগী নয়। আদালতের এমন পর্যবেক্ষণ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থ বিবেচনায় নিয়ে তিনি রিট আবেদনটি আর শুনানির জন্য উপস্থাপন করেননি। ফলে আদালত সেটি মেরিটে বা বিষয়বস্তুর গভীরে না গিয়ে ‘উত্থাপিত হয়নি’ মর্মে খারিজ করে দেন।

এর আগে গত ৩ ডিসেম্বর নির্বাচন স্থগিত চেয়ে এই রিটটি দায়ের করা হয়েছিল। রিটে মূল যুক্তি হিসেবে বলা হয়, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন স্বাধীনভাবে নির্বাচন পরিচালনা করার কথা। কিন্তু বিদ্যমান ব্যবস্থায় কমিশনের নিজস্ব জেলা ও উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা থাকার পরও জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) রিটার্নিং ও সহকারী রিটার্নিং অফিসার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। রিটকারীর মতে, ডিসি ও ইউএনওরা নির্বাহী বিভাগের কর্মকর্তা। তাদের দিয়ে নির্বাচন পরিচালনা করলে কমিশন কার্যত নির্বাহী বিভাগের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে, যা সংবিধানের ও কমিশনের স্বাধীনতার পরিপন্থী।

আবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, বিচার বিভাগের স্বাধীনতার জন্য যেমন জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশন ও স্বতন্ত্র সচিবালয় রয়েছে, তেমনি নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনতা নিশ্চিতে একটি ‘ইলেকটোরাল সার্ভিস কমিশন’ গঠন করা আবশ্যক। নির্বাহী বিভাগ থেকে প্রেষণে সচিব নিয়োগ না দিয়ে কমিশনের নিজস্ব দক্ষ ও অভিজ্ঞ জনবল তৈরির মাধ্যমে সচিব নিয়োগের দাবি জানানো হয়। এসব আইনি ও কাঠামোগত সংস্কারের বিষয়ে রুল জারির আর্জি জানানোর পাশাপাশি রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সব কার্যক্রম স্থগিত রাখার নির্দেশনা চাওয়া হয়েছিল ওই রিটে।


জাতীয় সংগীত গাইতে গাইতে ট্রাইব্যুনাল ছাড়লেন পলকসহ অন্য আসামিরা

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সংঘটিত হত্যা ও গণহত্যার অভিযোগে দায়ের করা মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপদেষ্টাসহ ১৬ জনকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। সোমবার (৮ ডিসেম্বর) আদালতের কার্যক্রম শেষে দুপুরে প্রিজনভ্যানে ওঠার সময় এক নাটকীয় দৃশ্যের অবতারণা হয়। সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক ভ্যানে উঠেই জাতীয় সংগীত গাইতে শুরু করেন। এ সময় তার সঙ্গে ভ্যানে থাকা অন্য আসামিদেরও সুর মেলাতে শোনা যায়।

এর আগে সকালে কেরানীগঞ্জ ও কাশিমপুরসহ বিভিন্ন কারাগার থেকে কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে হেভিওয়েট এই ১৬ আসামিকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। ট্রাইব্যুনালে মামলার অগ্রগতি তুলে ধরে প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম তদন্ত শেষ করতে আরও দুই মাসের সময় প্রার্থনা করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল আগামী বছরের ৯ ফেব্রুয়ারি প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন।

আজ আদালতে হাজির করা আসামিদের মধ্যে ছিলেন সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, সাবেক মন্ত্রী ও ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু, সাবেক মন্ত্রী আমির হোসেন আমু, কামরুল ইসলাম, আব্দুর রাজ্জাক, শাজাহান খান, গোলাম দস্তগীর গাজী এবং সাবেক বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক। অসুস্থতার কারণে সাবেক মন্ত্রী ফারুক খানকে আদালতে আনা হয়নি।

ইতোমধ্যে সালমান এফ রহমান, আনিসুল হক, হাসানুল হক ইনু ও জুনাইদ আহমেদ পলকের বিরুদ্ধে পৃথক ফরমাল চার্জ দাখিল করেছে প্রসিকিউশন। এর মধ্যে জুলাই অভ্যুত্থানে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে গণহত্যার দায়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় এবং পলকের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আমলে নিয়ে জয়ের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। এছাড়া কারফিউ জারির মাধ্যমে ছাত্র-জনতা হত্যার অভিযোগে আনিসুল হক ও সালমান এফ রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নিয়ে শুনানির দিন ধার্য করেছেন আদালত।

অন্যদিকে, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এবং যুবলীগ সভাপতিসহ সাতজনের বিরুদ্ধে তদন্ত শেষ হয়েছে বলে জানিয়েছে প্রসিকিউশন। ওবায়দুল কাদেরসহ ৪৫ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের দিন ধার্য থাকলেও চারজনের বিরুদ্ধে আগেই অভিযোগ দাখিল হওয়ায় তাদের অব্যাহতি চাওয়া হয়েছে। বাকিদের বিরুদ্ধে শিগগিরই আনুষ্ঠানিক অভিযোগ বা ফরমাল চার্জ দাখিল করা হবে।


অবাধ ও উৎসবমুখর নির্বাচনের জন্য সর্বাত্মক প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও উৎসবমুখর করে তুলতে সরকার সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণ করছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। সোমবার সচিবালয়ে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদের সভা শেষে এক ব্রিফিংয়ে তিনি এ কথা জানান।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, নির্বাচনের প্রস্তুতি অত্যন্ত সন্তোষজনকভাবে এগিয়ে চলছে। একটি নিরপেক্ষ ও আনন্দঘন পরিবেশে ভোটগ্রহণ নিশ্চিত করতে যা যা করণীয়, তার সবই করা হচ্ছে। এর অংশ হিসেবে পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট সব বাহিনীকে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে, যা আগামী জানুয়ারির মধ্যেই সম্পন্ন হবে। নির্বাচনের স্বচ্ছতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে এবার বিশেষ প্রযুক্তির ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে। ভোটের সময় দায়িত্বপালনরত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের শরীরে ‘বডি ওর্ন ক্যামেরা’ থাকবে। পাশাপাশি ভোট চলাকালীন প্রতিটি কেন্দ্রে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করার কথাও জানান তিনি।

ব্রিফিংয়ে নির্বাচনের প্রস্তুতির পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির সাম্প্রতিক একটি ঘটনা নিয়েও কথা বলেন উপদেষ্টা। রংপুরে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তার স্ত্রীকে নির্মমভাবে হত্যার ঘটনায় তিনি তীব্র নিন্দা জানান। একই সঙ্গে এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত অপরাধীদের দ্রুততম সময়ের মধ্যে খুঁজে বের করে কঠোর শাস্তির মুখোমুখি করার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দেন তিনি।


বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি: তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের তারিখ পিছিয়ে ১৩ জানুয়ারি

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনায় দায়ের করা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের তারিখ আবারও পিছিয়েছে। তদন্তকারী সংস্থা প্রতিবেদন জমা না দেওয়ায় আদালত আগামী ১৩ জানুয়ারি প্রতিবেদন দাখিলের নতুন দিন ধার্য করেছেন।

সোমবার (৮ ডিসেম্বর) মামলাটির তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের দিন ধার্য ছিল। কিন্তু মামলার তদন্তকারী সংস্থা পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) এদিনও প্রতিবেদন জমা দিতে পারেনি। এর পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জশিতা ইসলাম প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আগামী ১৩ জানুয়ারি পরবর্তী দিন ঠিক করে আদেশ দেন।

আলোচিত এই চুরির ঘটনাটি ঘটেছিল ২০১৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি। যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক থেকে সুইফট কোড জালিয়াতির মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার হাতিয়ে নেয় হ্যাকাররা। পরে চুরিকৃত সেই অর্থ ফিলিপাইনে পাচার করা হয়। সংশ্লিষ্টদের ধারণা, দেশের অভ্যন্তরের একটি চক্রের সহায়তায় হ্যাকার গ্রুপ রিজার্ভের এই বিশাল অর্থ চুরির ঘটনাটি ঘটিয়েছে।

ঘটনার এক মাস পর, ২০১৬ সালের ১৫ মার্চ মতিঝিল থানায় মামলা দায়ের করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাকাউন্টস অ্যান্ড বাজেটিং ডিপার্টমেন্টের উপ-পরিচালক জোবায়ের বিন হুদা। মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ও তথ্য-প্রযুক্তি আইনে অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে মামলাটি করা হয়। বর্তমানে মামলাটির তদন্তভার সিআইডির হাতে রয়েছে।


নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে অব্যাহতি পেলেন বিএনপি নেতা ফজলুর রহমান

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করায় আদালত অবমাননার অভিযোগ থেকে রেহাই পেলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান। আদালতের কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করায় সোমবার (৮ ডিসেম্বর) তাকে এই অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল-১।

বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল এই আদেশ দেন। আদালতের নির্দেশ মেনে এদিন সকালেই সশরীরে ট্রাইব্যুনালে হাজির হন কিশোরগঞ্জ-৪ আসনের এই বিএনপি দলীয় প্রার্থী। এ সময় তার পক্ষে শুনানিতে অংশ নিতে আদালতে উপস্থিত ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন, ব্যারিস্টার কায়সার কামাল ও ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজলসহ জ্যেষ্ঠ আইনজীবীরা।

ঘটনার সূত্রপাত হয় একটি টকশোতে ফজলুর রহমানের দেওয়া বক্তব্যকে কেন্দ্র করে। সেখানে তিনি ট্রাইব্যুনালের গঠনপ্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তোলার পাশাপাশি মন্তব্য করেছিলেন যে, ‘এই কোর্টে বিচার হতে পারে না’ এবং বিচারকদের নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন। এই বক্তব্যের জেরে গত ২৬ নভেম্বর প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার হুসাইন তামীম তার বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ দায়ের করেন।

অভিযোগটি আমলে নিয়ে গত ৩০ নভেম্বর ট্রাইব্যুনাল কঠোর ভর্ৎসনা করে বলেন, ট্রাইব্যুনাল না মানার মতো বক্তব্য রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল। এমনকি আদালত ফজলুর রহমানের ওকালতির লাইসেন্স আছে কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন এবং ৮ ডিসেম্বর তাকে সশরীরে হাজির হয়ে ব্যাখ্যা দেওয়ার নির্দেশ দেন। আদালতের প্রতি সম্মান দেখিয়ে গত ৩ ডিসেম্বরই নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে লিখিত আবেদন জমা দিয়েছিলেন ফজলুর রহমান। সেই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এবং আজ সশরীরে হাজির হয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করায় আদালত তাকে এই অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দিয়ে বিষয়টি নিষ্পত্তি করেন।


ওবায়দুল কাদেরসহ ৭ জনের তদন্ত শেষ

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় সংঘটিত হত্যাযজ্ঞের ঘটনায় করা মামলায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও যুবলীগ সভাপতিসহ মোট সাতজনের বিরুদ্ধে তদন্ত কার্যক্রম শেষ হয়েছে। সোমবার (৮ ডিসেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল সূত্রে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে। একই দিন মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে করা মামলায় শেখ হাসিনা সরকারের আমলের সাবেক মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপদেষ্টাসহ ১৭ জন হেভিওয়েট আসামিকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়েছে।

সোমবার সকাল পৌনে ১০টার দিকে কেরানীগঞ্জ ও কাশিমপুরসহ বিভিন্ন কারাগার থেকে প্রিজনভ্যানে করে কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে আসামিদের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে আনা হয়। এরপর একে একে তাদের নামিয়ে হাজতখানায় নেওয়া হয়। আজ ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন বিচারিক প্যানেলে এসব মামলার অগ্রগতি নিয়ে শুনানি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।

ট্রাইব্যুনালে হাজির করা আসামিদের তালিকায় রয়েছেন সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, সাবেক শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, সাবেক খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, সাবেক কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক, সাবেক নৌপরিবহনমন্ত্রী শাহজাহান খান, সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী এবং সাবেক মন্ত্রী ফারুক খান। এছাড়াও শরিক দলের নেতাদের মধ্যে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন ও জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনুকেও হাজির করা হয়েছে।

হাজির করা অন্যদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, জ্বালানি উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, সাবেক স্বরাষ্ট্র সচিব জাহাঙ্গীর আলম, সাবেক প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার, সাবেক এমপি সোলায়মান সেলিম এবং সাবেক বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক। চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান দমনে নির্বিচার হত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে এসব প্রভাবশালী নেতাদের বিরুদ্ধে বিচারিক কার্যক্রম চলছে।


দুর্নীতির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলছে দখল ও চাঁদাবাজি: টিআইবি

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশে ক্ষমতার পালাবদল হলেও দুর্নীতি থামেনি, বরং এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে দখলদারত্ব ও চাঁদাবাজি। রাজনৈতিক ও সরকারি ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিভিন্ন মহল এসব অপকর্মে লিপ্ত রয়েছে। এমনকি বর্তমান সরকারের অভ্যন্তরেও কোনো কোনো ক্ষেত্রে দুর্নীতির ঘটনা ঘটছে, যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। রোববার রাজধানীর ধানমন্ডিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান এসব কথা বলেন।

‘সুশাসিত, বৈষম্যহীন ও দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশের অঙ্গীকার: ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দলের ইশতেহার প্রণয়নে টিআইবির সুপারিশ’ শীর্ষক এই সংবাদ সম্মেলনে ড. ইফতেখারুজ্জামান দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করেন। তিনি মন্তব্য করেন, বর্তমান সরকারের সময়ে দুর্নীতির বিরুদ্ধে আরও কঠোর অবস্থান নেওয়ার সুযোগ ও সম্ভাবনা থাকলেও তারা সে ক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়েছে। তবে তিনি এও স্বীকার করেন, গত ১৫ বছরের পুঞ্জীভূত জঞ্জাল কোনো জাদুর কাঠির ছোঁয়ায় মুহূর্তের মধ্যে দূর করা সম্ভব নয়। এটি একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া। তবে সুশাসিত ও দুর্নীতিমুক্ত দেশ গড়ার যে সুযোগ তৈরি হয়েছে, রাজনৈতিক দলগুলো তা কতটা কাজে লাগাবে এবং নির্বাচনে অর্থ ও পেশিশক্তির প্রভাব কতটা নিয়ন্ত্রণ করা যাবে, তার ওপরই আগামীর ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে।

ব্যবসা খাতের সংস্কার প্রসঙ্গে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, এই সংস্কার রাজনৈতিক দলের মতোই ভেতর থেকে আসতে হবে। তিনি উল্লেখ করেন, গত দেড় দশকে ব্যবসা খাতের একাংশ কর্তৃত্ববাদের অন্যতম স্তম্ভ হিসেবে কাজ করেছে এবং রাষ্ট্রকাঠামো দখলে ভূমিকা রেখেছে। ব্যবসায় স্বচ্ছতা, উন্মুক্ত প্রতিযোগিতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা গেলে শেষ পর্যন্ত ব্যবসায়ীরাই লাভবান হবেন, অন্যথায় গুটিকয়েক সুবিধাভোগী ছাড়া বাকিরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।

প্রতিবেশী দেশ ভারত প্রসঙ্গে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সাম্প্রতিক ঘটনাবলী ভারতের ইতিহাসের সবচেয়ে বিব্রতকর কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক পরাজয়, যদিও তারা এখনও তা স্বীকার করতে ব্যর্থ হয়েছে। তিনি মনে করেন, ভারত যদি কর্তৃত্ববাদের পক্ষ থেকে সরে এসে আরও বস্তুনিষ্ঠ অবস্থান নিত, তবে দুই দেশের সম্পর্কের উন্নয়ন সহজতর হতো। তবে এখনো পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে সম্পর্কের উন্নতির সুযোগ রয়েছে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির পক্ষ থেকে আগামী নির্বাচনের ইশতেহারে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য ৫২টি প্রস্তাব তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন, সংস্কার কমিশনের সুপারিশ কার্যকর রাখা এবং জুলাই গণঅভ্যুত্থানসহ বিগত আমলের সব হত্যা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার নিশ্চিত করার অঙ্গীকারের ওপর বিশেষ জোর দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানে টিআইবির উপদেষ্টা অধ্যাপক সুমাইয়া খায়ের এবং পরিচালক মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।


‘মোবাইল ফোন’ নিয়ে বিভ্রান্তি: প্রবাসীদের জন্য আইন উপদেষ্টার স্পষ্ট বার্তা

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

বিদেশ থেকে মোবাইল ফোন আনা এবং নিবন্ধন প্রক্রিয়া নিয়ে প্রবাসীদের মধ্যে সৃষ্ট ধোঁয়াশা ও বিভ্রান্তি দূর করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল। সোমবার (৮ ডিসেম্বর) নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে তিনি এ বিষয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা তুলে ধরে অপপ্রচারের জবাব দেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া বিভিন্ন গুজব খণ্ডন করে আইন উপদেষ্টা জানান, প্রবাসীদের প্রতি অন্যায় বা বৈষম্য করা হচ্ছে—এমন অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। বরং শেখ হাসিনা সরকারের আমলে প্রবাসী কর্মীরা তাদের ব্যবহৃত ফোনের সঙ্গে মাত্র একটি নতুন ফোন আনতে পারতেন। কিন্তু বর্তমান সরকার প্রবাসীদের সুবিধার্থে সেই নিয়ম পরিবর্তন করে নিজের ব্যবহৃত ফোনের পাশাপাশি আরও দুটি নতুন ফোন আনার অনুমতি দিয়েছে। অর্থাৎ বিএমইটি থেকে ছাড়পত্র নিয়ে বিদেশে যাওয়া কর্মীরা এখন শুল্ক ছাড়াই মোট তিনটি ফোন আনতে পারবেন। তবে দুটির বেশি নতুন ফোন আনলে সেক্ষেত্রে নির্ধারিত শুল্ক প্রযোজ্য হবে। অন্যদের ক্ষেত্রে আগের নিয়মই বলবৎ থাকবে।

ফোন নিবন্ধনের বিষয়ে ছড়িয়ে পড়া বিভ্রান্তি সম্পর্কে আসিফ নজরুল স্পষ্ট করেন যে, শুধুমাত্র প্রবাসীদের ফোন নিবন্ধন করতে হবে—এমন তথ্য সঠিক নয়। প্রকৃত সত্য হলো, আগামী ১৬ ডিসেম্বর থেকে দেশে অবস্থানরত নাগরিক কিংবা বিদেশফেরত প্রবাসী, সবার জন্যই নতুন ফোন ব্যবহারের ৬০ দিনের মধ্যে নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। মূলত অবৈধ সেট ব্যবহার করে অপহরণ, চাঁদাবাজি, জুয়া ও হুমকির মতো অপরাধ নিয়ন্ত্রণ এবং নাগরিকদের হয়রানি থেকে রক্ষা করতেই সরকার এই উদ্যোগ নিয়েছে।

ফেসবুক পোস্টে তিনি আরেকটি ‘জঘন্য মিথ্যাচার’ এর বিষয়ে সতর্ক করেন। প্রবাসীরা দেশে এসে মাত্র ৬০ দিন থাকতে পারবেন—এমন একটি গুজব ছড়ানো হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, মিথ্যা গুজব ছড়ানো ও গীবত করা ইসলামের দৃষ্টিতে বড় পাপ। তাই প্রবাসীদের এসব গুজবে কান না দেওয়ার অনুরোধ জানান তিনি। পাশাপাশি প্রবাসীদের মনের অন্যান্য প্রশ্ন বা বিভ্রান্তিও দ্রুততম সময়ে নিরসনের আশ্বাস দেন আইন উপদেষ্টা।


banner close