বিদেশে টাকা পাচারকারীরা এখনো প্রোপাগাণ্ডা ছড়াচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। তিনি বলেছেন, আওয়ামী লীগের আমলে বিশ্বের ইতিহাসে বড় ধরনের লুটপাট হয়েছে বাংলাদেশে। শেখ হাসিনা দেশে চোরতন্ত্র কায়েম করেছিলেন। বড় বড় কোম্পানিকে তখন অর্থের বিনিময়ে কাজ পাইয়ে দেওয়া ছিল তার কাজ। সে সময়ে বিদেশে টাকা পাচারকারীরা এখন সেই টাকায় প্রোপাগাণ্ডা ছড়াচ্ছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
শনিবার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘জুলাই বিপ্লবে গণমাধ্যমের ভূমিকা ও পরবর্তী প্রত্যাশা’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় শফিকুল আলম একথা বলেন। প্রেস সচিব বলেন, ‘প্রোপাগাণ্ডার মাধ্যমে তারা প্রাতষ্ঠিত করতে চায় যে, এখানে এখন মৌলবাদী শক্তির উত্থান ঘটেছে, কোনো গণঅভ্যুত্থান হয়নি। পরাজিত শক্তি আবার আপনাদের জঙ্গি বানাতে চায়।’
জুলাই বিপ্লবে গণমাধ্যমের ভূমিকা নিয়ে তিনি বলেন, অনেক গণমাধ্যম আন্দোলনকারীদের ‘জাতির শত্রু’ হিসেবে তুলে ধরেছিল। গণমাধ্যমের ভাষা ব্যবহার করে তখন শাসকদের কাছে বার্তা দেয়া হচ্ছিল এই আন্দোলনকারীদের দমন করা উচিত। যদি ফ্যাসিস্ট শক্তি জয়ী হত, তাহলে দুই লাখ মানুষকে জেলে যেতে হত, আর তখন ন্যারেটিভ হতো যে কিছু ‘দুর্বৃত্ত’ দেশজুড়ে অরাজকতা সৃষ্টি করেছে। সাংবাদিকতা শুধু পেশা নয়, এটি একটি দায়িত্ব উল্লেখ করে শফিকুল আলম বলেন, জুলাই বিপ্লবে কারা কী ভূমিকা রেখেছে তা আমরা আরও ভালোভাবে বিশ্লেষণ করব। এজন্য তিনি সবাইকে তাদের অভিজ্ঞতা এবং পর্যবেক্ষণ লিখে রাখার আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন পিআইবির মহাপরিচালক ফারুক ওয়াসিফ। তিনি বলেন, ফ্যাসিস্ট সরকার যদি আরও এক মাস সময় পেত তাহলে ২৫ মার্চের মতো আরও একটি কালরাত দেখতে হতো। যেখানে টার্গেট হতো শিক্ষক-সাংবাদিকরা। ফ্যাসিস্ট সরকার থাকলে যুবকদের চাকরির অধিকার হরণ করত।
নবনিযুক্ত জার্মান রাষ্ট্রদূত ড. রুডিগার লোটজ গত ২১ অক্টোবর ২০২৫ তারিখে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় বাংলাদেশ সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন।
সাক্ষাৎকালে প্রধান উপদেষ্টা রাষ্ট্রদূতকে বাংলাদেশে দায়িত্ব গ্রহণের জন্য আন্তরিক শুভেচ্ছা জানান এবং আশা প্রকাশ করেন যে তার কর্মকালীন সময়ে বাংলাদেশ ও জার্মানির মধ্যে বিদ্যমান বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরও দৃঢ় ও বিস্তৃত হবে।
আলোচনায় রাষ্ট্রদূত অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করেন এবং আগামি ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে প্রস্তুতি সম্পর্কে আগ্রহ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের জনগণ ক্রমবর্ধমান হারে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত হচ্ছে, যা অত্যন্ত ইতিবাচক ও উৎসাহব্যঞ্জক।
রাষ্ট্রদূত সরকারের সংস্কারমূলক পদক্ষেপ, বিশেষ করে সদ্য ঘোষিত জাতীয় সনদ এবং রাজনৈতিক দলসমূহের মধ্যে পারস্পরিক সংলাপের প্রশংসা করেন। তিনি আশা প্রকাশ করেন যে, এই ধরনের সংলাপ ও উদ্যোগ নির্বাচনের পরেও অব্যাহত থাকবে।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলগুলোকে একত্রিত করে জাতীয় সনদে স্বাক্ষরের যে ঐতিহাসিক উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তা দেশে গণতান্ত্রিক ঐক্য ও আস্থার পরিবেশ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
উভয়পক্ষ দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য, বিনিয়োগ এবং শিক্ষা খাতে সহযোগিতার সম্প্রসারণের বিষয়ে আলোচনা করেন। রাষ্ট্রদূত জার্মানিতে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের ক্রমবর্ধমান আগ্রহের কথা উল্লেখ করেন। প্রধান উপদেষ্টা জানান, ইউরোপে জার্মানি বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ বাণিজ্যিক অংশীদার, এবং তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, নবনিযুক্ত রাষ্ট্রদূত এই অংশীদারত্ব আরও জোরদার করতে কার্যকর ভূমিকা রাখবেন।
সাক্ষাতে রোহিঙ্গা সংকট নিয়েও আলোচনা হয়, যেখানে রাষ্ট্রদূত জার্মানির পক্ষ থেকে মানবিক ও রাজনৈতিক সহায়তা অব্যাহত রাখার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
সাক্ষাৎ শেষে উভয়পক্ষ আগামী দিনে বাংলাদেশ ও জার্মানির মধ্যকার সম্পর্ক আরও গভীর ও বহুমাত্রিক হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
মাছের প্রজনন ও প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় মা মাছ ধরা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার।
তিনি বলেন, ‘আমাদের নদী ও সাগরে জেলেরা যেসব মাছ ধরেন, তা প্রাকৃতিক সম্পদ। এই মাছগুলো রক্ষা করতে না পারলে ভবিষ্যতে মাছশূন্য হয়ে পড়ব। তাই মাছ ধরা নিষিদ্ধ সময়ে সবাইকে আইন মেনে চলতে হবে। আইন মানলে প্রকৃতপক্ষে জেলেরা নিজেরাই লাভবান হবেন।’
গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবের আব্দুস সালাম হলে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ ক্ষুদ্র মৎস্যজীবী জেলে সমিতির ১২তম জাতীয় সম্মেলন-২০২৫-এর প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ফরিদা আখতার বলেন, ‘আপনারাই এই দেশের মানুষকে মাছ খাইয়ে বাঁচিয়ে রাখছেন। আপনারা ক্ষুদ্র নন, বরং দেশের এক বৃহৎ জনগোষ্ঠী। আমরা শুধু ভাত খাই না- মাছ, শাক-তরকারিও খাই। মৎস্যজীবীরা যদি মাছ না ধরেন, কেউই মাছ খেতে পারব না। আপনারা পরিশ্রম করে সবার খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করছেন- এটিকে ছোট করে দেখার কোনো সুযোগ নেই।’
তিনি বলেন, ভারত যাতে আমাদের জলসীমায় প্রবেশ করে মাছ শিকার করতে না পারে, সে জন্য কোস্ট গার্ড, নৌবাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরও সক্রিয় ভূমিকা রাখতে হবে। মাছ ধরা নিষিদ্ধ সময়ে জেলেদের সহায়তা হিসেবে ভিজিএফের চালের পরিমাণ বাড়াতে খাদ্য ও অর্থ মন্ত্রণালয়ে অনুরোধ করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ‘আমি সরকারে যতদিন আছি, ততদিন জেলেদের জন্য কাজ করে যাব। আগামীতে অন্তত ৫০ কেজি করে চাল দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ভিজিএফের সঙ্গে আর্থিক সহায়তা যুক্ত করার বিষয়েও আলোচনা চলছে।’
দীর্ঘদিনের সমস্যা দাদন প্রথা নিয়ে উপদেষ্টা বলেন, ‘দাদন জেলেদের দারিদ্র্যের চক্রে আবদ্ধ করে রাখে। এ সমস্যা নিরসনে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ ব্যাংক প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব করা হলে বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, তারা বিকল্পভাবে স্বল্পসুদে ঋণ প্রদানের ব্যবস্থা করবে, যাতে জেলেরা দাদনের ওপর নির্ভরশীল না থাকেন।’
প্রতিটি দুর্যোগে বহু জেলে নিখোঁজ হন বা প্রাণ হারান, এ বিষয়েও তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
তিনি বলেন, ‘নিখোঁজ জেলেদের পরিবারের সদস্যরা জানতেও পারেন না- তারা জীবিত না মৃত। ফলে কোনো সরকারি সহায়তাও পান না। এ সমস্যা সমাধানে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা চলছে, যাতে এমন পরিবারগুলোর জন্য কার্যকর সহায়তা ব্যবস্থা গড়ে তোলা যায়।’
নদীতে চর জেগে ওঠা ও প্রজনন বাধাগ্রস্ত হওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘নদীতে চর জেগে ওঠায় মাছের চলাচল ও প্রজননে সমস্যা হচ্ছে। আমাদের নিজস্ব ড্রেজিং সক্ষমতা সীমিত হলেও নৌপরিবহন ও পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করেছি। তারা শুষ্ক মৌসুমে প্রয়োজনীয় ড্রেজিং কার্যক্রম সম্পন্ন করবে বলে আশ্বস্ত করেছে।’
সম্মেলনে বক্তারা মৎস্যজীবীদের ন্যায্য অধিকার ও কল্যাণ নিশ্চিতের লক্ষ্যে ছয় দফা দাবি উত্থাপন করেন। দাবিগুলো হলো-
*২০১৩ সালের পরিপত্র বাতিল করে ২০০৮ সালের পরিপত্র পুনর্বহাল করা।
*খাদ্য ও অন্যান্য ত্রাণ বিতরণের ক্ষেত্রে মৎস্যজীবী প্রতিনিধির স্বাক্ষর নিশ্চিত করা।
*মৎস্যজীবীদের নামে একটি বিশেষায়িত ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করা।
*ভিজিএফ সহায়তা ৪০ কেজি থেকে বাড়িয়ে ৬০ কেজি চাল ও ২ হাজার টাকা নগদ বরাদ্দ দেওয়া।
*নিষেধাজ্ঞাকালীন সময়ে নদীতে মাছ ধরতে গিয়ে কোনো জেলে মৃত্যুবরণ করলে তার পরিবারকে এককালীন পাঁচ লাখ টাকা পুনর্বাসন সহায়তা প্রদান।
*কোস্ট গার্ড, নৌপুলিশ ও মৎস্য বিভাগের অভিযানে মৎস্যজীবী সমিতির মনোনীত মাঝিকে অন্তর্ভুক্ত করা।
বক্তারা বলেন, এসব দাবি বাস্তবায়িত হলে জেলে সম্প্রদায়ের জীবনমান উন্নত হবে এবং তাদের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
সম্মেলনের সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ ক্ষুদ্র মৎস্যজীবী জেলে সমিতির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ইসরাইল খলিল পণ্ডিত। এ সময় আরও বক্তব্য রাখেন মৎস্য অধিদপ্তরের পরিচালক ড. মো. মোতালেব হোসেন, বিজিবি ট্রাইব্যুনালের সহকারি অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট এম হেলাল উদ্দিন, বরিশাল জজ কোর্টের অতিরিক্ত পিপি অ্যাডভোকেট মো. হুমায়ুন কবির, বাংলাদেশ সংযুক্ত শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি মোসাদেক হোসেন স্বপন, সাধারণ সম্পাদক মোকাদ্দেম হোসেন, জেলে সমিতির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মো. বাবুল মীর এবং সদস্য তাছলিমা বেগম।
সম্মেলনে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আগত ক্ষুদ্র মৎস্যজীবী জেলে সমিতির শতাধিক প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করেন। আলোচনায় বক্তারা সরকারের কাছে জেলে সম্প্রদায়ের সামাজিক নিরাপত্তা, জীবিকা রক্ষা এবং প্রজননকালীন সময়ের সহায়তা বৃদ্ধির দাবি পুনর্ব্যক্ত করেন।
সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রে মামলায় গ্রেপ্তার বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক এনায়েত করিম চৌধুরীর তৃতীয় দফায় পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
বুধবার দুপুরে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জি এম ফারহান ইসতিয়াকের আদালত এ আদেশ দেন। এর আগে এই মামলায় দুই দফায় সাত দিনের রিমান্ডে নিয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় ।
এদিন কারাগার থেকে তাকে আদালতে হাজির করা হয়। এরপর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশেরে রমনা জোনাল টিমের পরিদর্শক মো. আখতার মোর্শেদ তার সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে শুনানি করেন। এসময় আসামিপক্ষে আইনজীবী শাহিনুর ইসলাম রিমান্ড বাতিল ও জামিন চেয়ে আবেদন করেন।
পরে ঢাকা মহানগর আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী রিমান্ডের পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করেন। দুই পক্ষের শুনানি শেষে আদালত তার জামিন নামঞ্জুর করে রিমান্ডে নেয়ার আদেশ দেন।
মামলার সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আমেরিকান নাগরিক এনায়েত করিম চৌধুরী ১৯৮৮ সালে আমেরিকায় যান ও ২০০৪ সালে আমেরিকান পাসপোর্ট পান। বর্তমানে বাংলাদেশের বৈধ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে উৎখাত করার জন্য অন্যদেশের গোয়েন্দা সংস্থার এজেন্ট হিসেবে ৬ সেপ্টেম্বর তিনি নিউইয়র্ক থেকে বাংলাদেশে আসেন।
মামলায় অভিযোগ করা হয়, ১৩ সেপ্টেম্বর বেলা সাড়ে ১০টার দিকে মিন্টো রোড এলাকায় গাড়িতে করে ‘সন্দেহজনকভাবে’ ঘুরতে থাকেন এনায়েত করিম। তাকে দেখে সন্দেহ হলে পুলিশ তার গাড়ি থামায়। কেন তিনি ঘোরাঘুরি করছেন, জানতে চাইলে তিনি পুলিশকে কোনো উত্তর দিতে পারেননি। এজন্য তাকে পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয় এবং তার কাছে থেকে দুটি আইফোন জব্দ করা হয়। পরে তার বিরুদ্ধে রমনা মডেল থানায় সন্ত্রাস বিরোধ আইনে মামলা দায়ের হয়।
এ মামলায় দুই দফায় এনায়েত করিমকে সাত দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে ডিবি পুলিশ। পরবর্তী সময় গ্রেপ্তারের পর তার সহযোগী এসএম গোলাম মোস্তফা আজাদ, জাতীয় পার্টির রওশনপন্থি অংশের মহাসচিব কাজী মো. মামুনূর রশীদ ও যুব সংহতির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব রিফাতুল ইসলাম পাভেলকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, আমাদের বিরুদ্ধে সবদলই অভিযোগ করে। একদল বলে ওই দলের লোক আছে, আরেক দল বলে এই দলের লোক আছে। যেহেতু সবদলই অভিযোগ করে অন্য দলের লোক আছে, তার মানে হচ্ছে আমরা নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করছি।
বুধবার (২২ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানীর সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকার চায়, এটা বলেনি। বলেছে অন্তর্বর্তী সরকারকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ভূমিকা পালন করতে। আমাদের নিরপেক্ষ ভূমিকা চেয়েছে। সে বিষয়ে তাদের নিশ্চয়তা দেয়া হয়েছে।
আইন উপদেষ্টা বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এখনও অনৈক্য দেখা দেয়ার কারণে আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে কিনা তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। তবে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ার দিকে গেলে এই সংশয় কেটে যাবে।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস চলমান রাজনৈতিক সংলাপের অংশ হিসেবে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকে বসছেন।
আজ বিকেল সোয়া ৫টায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
এরপর সন্ধ্যা ৬টায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর প্রতিনিধিদলের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার সংলাপ অনুষ্ঠিত হবে।
প্রধান উপদেষ্টার সিনিয়র সহকারী প্রেস সচিব ফয়েজ আহম্মেদ বাসসকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে গতকাল মঙ্গলবার প্রধান উপদেষ্টা বিএনপির প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক করেন।
উল্লেখ্য, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকারের সঙ্গে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের এই ধারাবাহিক সংলাপ অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
ঢাকা শহরের অতি সন্নিকটে রূপগঞ্জ, অথচ রূপগঞ্জ থেকে ঢাকা শহরে যাতায়াতের নাই কোন গণপরিবহন। এমনকি জেলা সদরে যেতেও সিএনজি আর অটোই ভরসা। ঢাকা শহরে যাতায়াত করতে অনেকে নৌকা বা ট্রলার ব্যবহার করে থাকেন। মামলা সংক্রান্ত কাজে আদালতে যেতে হয়, যা নারায়ণগঞ্জ জেলা সদরে অবস্থিত। সরাসরি গণপরিবহন না থাকায় রূপগঞ্জের মানুষ অটো বা সিএনজিতে যাতায়াত করতে হয়। রূপগঞ্জ থেকে ঢাকা শহরে অনেকেই চাকরি ব্যবসা বাণিজ্য করেন। কিন্তু পরিবহন সংকটের কারণে প্রায় সঠিক সময় গন্তব্যে পৌঁছাতে পারেন না।
শিল্পাঞ্চল খ্যাত রূপগঞ্জ। কয়েক হাজার শিল্প কারখানা,পূর্বাচল উপশহর সহ বিভিন্ন আবাসন প্রকল্পের কারণে রূপগঞ্জ হয়ে উঠেছে নারায়ণগঞ্জ জেলার অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা। তবে জেলার সঙ্গে এই উপজেলায় যোগাযোগের সরাসরি কোনো গণপরিবহন ব্যবস্থা নেই। ফলে দুর্ভোগ নিয়েই প্রতিনিয়ত চলাচল করতে হচ্ছে এই অঞ্চলের বাসিন্দাদের।
নগরায়ণের এ যুগে সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থায় বাস পরিবহনের কোনো বিকল্প নেই বলে মনে করেন স্থানীয়রা।
নারায়ণগঞ্জ আদালতে কর্মরত নারায়ণ সরকার বলেন, প্রতিদিনই আমাকে ভেঙে ভেঙে বিভিন্ন গাড়ি পরিবর্তন করে আসা-যাওয়া করতে হয়। যদি রূপগঞ্জ থেকে সরাসরি একটি বাস সার্ভিস নারায়ণগঞ্জে চলাচল করতো তাহলে আমাদের জন্য ভালো হতো। এখন সময় যেমন বেশি লাগে, তেমনি অতিরিক্ত খরচও হয়।
ব্যবসায়ী মিজান মিয়া জানান, রূপগঞ্জের মানুষকে শহরে যেতে হলে একাধিক গাড়ি বদল করে যেতে হয়। যে কারণে কর্মজীবী যাত্রী সাধারণকে ভেঙে ভেঙে অথবা অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে যানবাহন রিজার্ভ নিয়ে কর্মস্থলে যোগ দিতে হয়। সরাসরি গণপরিবহণ চালু না হওয়াটা খুবই দুঃখজনক।
তারাব পৌর এলাকার বাসিন্দা রাহুল পরাজী আমাদের প্রতিনিধিকে বলেন, জমি জমা নিয়ে বিরোধের জেরে নারায়ণগঞ্জ জেলা আদালতে তার একটি মামলা চলমান রয়েছে। এ কারণে মাসে একাধিকবার তাকে জেলা সদরে যেতে হয়।
তিনি বলেন, গণপরিবহণের ব্যবস্থা করা হলে সাধারণ মানুষ নির্বিঘ্নে নারায়ণগঞ্জের অফিস আদালতের কাজ করতে পারবে।
এডভোকেট আবুল বাশার রুবেল জানান, তিনি নারায়ণগঞ্জ জেলা আদালতে আইনজীবী হিসেবে কাজ করছেন। প্রতিদিনই তাকে সিএনজি রিজার্ভ করে আর না হয় বিভিন্ন গাড়ি বদল করে যাতায়াত করতে হয়। বৃষ্টির দিনে ঝামেলা পোহাতে হয় অনেক বেশি। এ বিরম্ভনা থেকে মুক্তি পেতে নারায়ণগঞ্জেই বাসা বাড়া করে থাকেন এখন।
রূপগঞ্জ থেকে নারায়ণগঞ্জ জেলা সদরের সরাসরি পরিবহন সেবা চালু হওয়া জরুরি বলে মনে করেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
পরিবহন ব্যবসায়ী ও শুভসংঘ বাস সার্ভিসের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক মকবুল হোসেন বলেন, রূপগঞ্জের মানুষের সরকারি সব নাগরিক সুযোগ-সুবিধা, ব্যবসা-বাণিজ্য ও নানাবিধ কাজে, প্রতিনিয়তই নারায়ণগঞ্জ শহরে যাতায়াত করতে হয়। কিন্তু রূপগঞ্জ থেকে নারায়ণগঞ্জ শহরে সরাসরি কোনো গণপরিবহন চালু না থাকায় এ জনপদের বাসিন্দাদের ভোগান্তি নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, শুভসংঘ বাস সার্ভিস থেকে ভৈরব রোডে আমাদের বেশ কিছু গাড়ি চলাচল করছে। শুভসংঘ বাস সার্ভিসের পক্ষ থেকে ভুলতা গাউছিয়া থেকে নারায়ণগঞ্জ শহরে সরাসরি বাস সার্ভিস চালু করার বিষয়ে কাজ চলছে।
রূপগঞ্জের বর্তমান অভিভাবক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম জয় বলেন, এই উপজেলায় যাত্রীবাহী বাস চালু করতে হলে স্থানীয় উদ্যোক্তাদেরই উদ্যোগ নিতে হবে। আমাদের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে।
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে ‘কনসিকন্সিয়াল’ (গুরুত্বপূর্ণ পরিণতিযুক্ত) উল্লেখ করে উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের (ইউএনও) প্রস্তুত থাকার এবং কারো পক্ষে কাজ না করার কঠোর নির্দেশ দিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার (ইসি)। এছাড়া অস্তিত্বের প্রশ্নে হিম্মতের সঙ্গে কাজ করতেও তিনি ইউএনওদের নির্দেশনা দিয়েছেন। বুধবার (২২ অক্টোবর) আগারগাঁওয়ে নির্বাচন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে নির্বাচন ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠানে ইউএনওদের এ কথা বলেন নির্বাচন কমিশনার আনোয়ারুল ইসলাম সরকার ও আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ।
এ সময় অস্তিত্বের প্রশ্নে হিম্মত ও সততার সঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান ইসি আনোয়ারুল ইসলাম সরকার।
ইসি সানাউল্লাহ মনে করেন, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরির স্বার্থে ইউএনওদের এখনই প্রস্তুত থাকতে হবে। সরকারের পক্ষ থেকে এই সুযোগ কাজে লাগানোরও আহ্বান জানানো হয়েছে।
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ‘বাংলাদেশের ইতিহাসে কনসিকন্সিয়াল নির্বাচন’ হিসেবে উল্লেখ করেন ইসি সানাউল্লাহ। তিনি বলেন, পরিবেশ তৈরির স্বার্থে আগে থেকেই ইউএনওদের প্রস্তুত থাকতে হবে, কারো পক্ষে কাজ করা যাবে না। এ সরকার এই সুযোগ কাজে লাগানোর আহ্বান জানাচ্ছে বলেও জানান তিনি।
অন্যদিকে, ইসি আনোয়ারুল ইসলাম সরকার সরকারি কর্মকর্তাদের মনোবল ও সততার বিষয়ে জোর দেন। তিনি স্বীকার করেন, ৫ আগস্টের পর কিছুদিন অস্থিতিশীল ছিল, অমুক তমুক এর কথায় অনেক কিছু হয়েছে। কর্মকর্তাদের এখন আর সে ভয় নেই।
তিনি বলেন, দুইটা কেয়ারটেকার সরকারের সময় সবচেয়ে বেশি ক্ষমতায় স্বাধীনতা পেয়েছি। তত্ত্বাবধায়ক সরকার তৈরির আবহ হচ্ছে দেখছি। আপনাদের ভয় নেই, আমরা পাশে আছি।
সরকারি কর্মকর্তাদের মান ভূলুণ্ঠিত হয়েছে মন্তব্য করে তিনি এই নির্বাচনকে ‘এই সরকারের অধীনে সততা নিষ্ঠা দেখানোর সুযোগ’ হিসেবে দেখেন। আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, ভয় পাওয়া যাবে না, হিম্মতের সঙ্গে কাজ করতে হবে অস্তিত্বের প্রশ্নে।’
তিনি ইউএনওদের উদ্দেশ্যে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, শিডিউল ঘোষণার পর দেখবেন আশেপাশে কেউ নেই।
নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়ে কঠোর হওয়ার নির্দেশ দিয়ে আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, দু'পক্ষ থেকে ধরতে হবে, ধরলে ছাড়া যাবে না নির্বাচনের আগে। মোবাইল কোর্ট স্বচ্ছ হতে হবে। মোবাইল কোর্ট নিয়মিত করতে হবে।
আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে সেনা কর্মকর্তারা আদালতে আত্মসমর্পণ করেছেন বলে মন্তব্য করেছেন আসামিপক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার এম সারোয়ার হোসেন।
বুধবার (২২ অক্টোবর) সকালে সেনা হেফাজতে থাকা ১৫ কর্মকর্তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি এ মন্তব্য করেন।
সারোয়ার বলেন, গত ৮ অক্টোবর তিনটি মামলায় ট্রাইব্যুনালে তিনটি আদেশ হয়েছে। সেই তিনটি মামলায় সাবেক-বর্তমান সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়। এরপর এসব কর্মকর্তাকে এটাচ (হেফাজতে নেওয়া) করে সেনা কর্তৃপক্ষ। অর্থাৎ সেনা সদরের হেফাজতে রাখা হয়। আজ ওই তিনটি মামলার নির্ধারিত তারিখ ছিল।
তিনি আরও বলেন, এই তারিখে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে আদালতে আত্মসমর্পণ করেছেন তারা। আমাদের ওকালতনামা স্বাক্ষর করার অনুমতি দিয়েছেন আদালত। আমরা তিনটি আবেদন করেছি। আবেদনগুলা পরবর্তী তারিখে শুনানি হবে। এর মধ্যে একটি জামিনের আবেদন রয়েছে। এছাড়া প্রিভিলেজ কমিউনিকেশন ও তাদের যেন সাবজেলে রাখা হয়।
সাবজেল নিয়ে এই আইনজীবী বলেন, এ ব্যাপারটি জেল কর্তৃপক্ষ দেখবেন। যারা পলাতক রয়েছেন তাদের জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তির জন্য একটা তারিখ আছে। শুনানির জন্য তারিখ নির্ধারণ করেছে ২০ নভেম্বর। এখন তাদের সেনানিবাসে যে সাব জেল (উপ কারাগার) ঘোষণা করা হয়েছে সেখানে নেওয়া হবে।
তিনি আরও বলেন, টেকনিক্যালি প্রসিকিউশন বলেছে গ্রেপ্তার। তবে আমরা বলি আত্মসমর্পণ। কারণ তারা আজ সকালে স্বেচ্ছায় এখানে এসেছেন। পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করেনি। অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সুবিধার জন্য তাদের একটা গাড়িতে আনা হয়েছে। নিরাপত্তা এবং প্রশাসনিক সুবিধার কারণে এই ফ্যাসিলিটিটা ব্যবহার করা হয়েছে। তারা প্রকৃতপক্ষে আত্মসমর্পণ করেছে।
এদিন সকাল ৮টার পর তিন মামলার ওপর শুনানি হয়। প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানি করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। পরে আদালতে হাজির হওয়া ১৫ জনকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল।
এ বিষয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বলেন, আজ তিনটি মামলার মোট ১৫ আসামিকে গ্রেপ্তারের মাধ্যমে ট্রাইব্যুনালে হাজির করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এর মধ্যে র্যাবের টিএফআই সেলে গুম-নির্যাতনের অভিযোগে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ১৭ আসামির ১০ জনকে আনা হয়। পরে তাদের গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। এছাড়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ পলাতক আসামিদের হাজির হওয়ার জন্য দুটি জাতীয় পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আগামী সাতদিন তথা ২৯ অক্টোবরের মধ্যে এ বিজ্ঞাপন দেওয়া হবে। একইসঙ্গে আগামী ২০ নভেম্বর পরবর্তী শুনানির জন্য দিন ধার্য করা হয়।
জেআইসি বা জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেলে গুমের অভিযোগে আরেকটি মামলায় ১৩ আসামির তিনজনকে হাজির করা হয়। তাদের বিরুদ্ধেও একই আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। একইসঙ্গে পলাতকদের হাজিরে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তির নির্দেশ দেওয়া হয়। এ মামলায় পরবর্তী শুনানিও একই দিন ঠিক করা হয়।
এছাড়া জুলাই-আগস্ট আন্দোলন ঘিরে রাজধানীর রামপুরায় ২৮ জনকে হত্যার দায়ে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় হাজির হওয়া দুজনকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১। তবে পলাতক দুই আসামি হাজির না হওয়ায় পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দেওয়া হয়। পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী ৫ নভেম্বর দিন নির্ধারণ করা হয়েছে।
এর আগে, ৮ অক্টোবর পৃথক এ তিন মামলায় মোট ৩৪ আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে প্রসিকিউশন। পরে অভিযোগ আমলে নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পাশাপাশি শুনানির জন্য আজকের দিন ধার্য করেন ট্রাইব্যুনাল-১। এর একটিতে ১৭, আরেকটিতে ১৩ ও অন্যটিতে ৪ জনকে আসামি করা হয়। তবে দুটিতেই শেখ হাসিনার নাম রয়েছে। এর মধ্যে সেনা কর্মকর্তা রয়েছেন ২৫ জন। আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আমলে নেওয়ার পর ১১ অক্টোবর ১৫ সেনা কর্মকর্তাকে হেফাজতে নেওয়া হয় বলে জানিয়েছে সেনাসদর।
১৫ সেনা কর্মকর্তা হলেন- র্যাবের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তোফায়েল মোস্তফা সারোয়ার, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. কামরুল হাসান, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাহাবুব আলম, ব্রিগেডিয়ার কেএম আজাদ, কর্নেল আবদুল্লাহ আল মোমেন, কর্নেল আনোয়ার লতিফ খান (অবসরকালীন ছুটিতে), র্যাবের গোয়েন্দা শাখার সাবেক পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মশিউর রহমান, লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাইফুল ইসলাম সুমন, লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. সারওয়ার বিন কাশেম, লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ রেদোয়ানুল ইসলাম ও বিজিবির সাবেক কর্মকর্তা মেজর মো. রাফাত বিন আলম। ডিজিএফআইয়ের সাবেক পরিচালক মেজর জেনারেল শেখ মো. সরওয়ার হোসেন, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাহবুবুর রহমান সিদ্দিকী ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহমেদ তানভির মাজাহার সিদ্দিকী।
এদিকে, সেনা কর্মকর্তাদের ট্রাইব্যুনালে হাজির করা উপলক্ষ্যে রাজধানীর কাকরাইল, মৎস্য ভবন, পল্টনসহ বিভিন্ন পয়েন্টে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ভোর থেকেই নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে ট্রাইব্যুনালসহ হাইকোর্টের মাজারগেট এলাকা। এখানে পুলিশ-র্যাবের পাশাপাশি বিজিবি-সেনাবাহিনীর সদস্যদেরও দেখা গেছে। সবমিলিয়ে বাড়ানো হয় ব্যাপক নিরাপত্তা।
মানবতাবিরোধী গুমের অপরাধের মামলায় হেফাজতে থাকা ১৫ সেনা কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
বুধবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন বিচারিক প্যানেল এ আদেশ দেন।
কারাগারে পাঠানো সেনা কর্মকর্তারা হলেন- র্যাবের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তোফায়েল মোস্তফা সারোয়ার, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. কামরুল হাসান, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাহাবুব আলম, ব্রিগেডিয়ার কে এম আজাদ, কর্নেল আবদুল্লাহ আল মোমেন ও কর্নেল আনোয়ার লতিফ খান (এখন অবসরকালীন ছুটিতে); র্যাবের গোয়েন্দা শাখার সাবেক পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মশিউর রহমান, লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাইফুল ইসলাম সুমন, লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. সারওয়ার বিন কাশেম, লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ রেদোয়ানুল ইসলাম, বিজিবির সাবেক কর্মকর্তা মেজর মো. রাফাত-বিন-আলম। ডিজিএফআইয়ের সাবেক তিনজন পরিচালক মেজর জেনারেল শেখ মো. সরওয়ার হোসেন, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাহবুবুর রহমান সিদ্দিকী ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহমেদ তানভির মাজাহার সিদ্দিকী।
গুমের অভিযোগে করা দুটি মামলার পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী ২০ নভেম্বর দিন ধার্য করেছেন ট্রাইব্যুনাল। আর গত বছরের ১৮ ও ১৯ জুলাই রামপুরায় গণহত্যা চালানোর অভিযোগে করা মামলায় শুনানির জন্য ৫ নভেম্বর দিন ধার্য করেছেন ট্রাইব্যুনাল।
এর আগে সকাল সোয়া ৭টার দিকে কড়া নিরাপত্তায় প্রিজনভ্যানে করে তাদের ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। সাড়ে ৭টার দিকে প্রিজনভ্যান থেকে নামিয়ে তাদের ট্রাইব্যুনালের হাজতখানায় নিয়ে যায় পুলিশ।
আওয়ামী লীগের দীর্ঘ শাসনামলে টিএফআই-জেআইসি সেলে গুম-খুন ও জুলাই-আগস্টে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের আলাদা তিনটি মামলায় হেফাজতে থাকা সেনা কর্মকর্তাদের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আনা হয়েছে।
তিন মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আসামি রয়েছেন ৩৪ জন। এর মধ্যে একটিতে ১৭, আরেকটিতে ১৩ ও একটিতে চার জনকে আসামি করা হয়। আর দুটিতে রয়েছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নাম। তবে ২৫ সেনা কর্মকর্তার মধ্যে ১৫ জন হেফাজতে রয়েছেন।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই-এর অপব্যবহার এখন একটি বৈশ্বিক মাথা ব্যথা হয়ে দাঁড়িয়েছে। একজন ডাক্তার যেমন এটি ব্যবহার করতে পারেন, তেমনি একজন ছিনতাইকারীও ব্যবহার করতে পারে। আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে এআইয়ের অপব্যবহার রোধ করতে এটিকে নির্বাচনী প্রক্রিয়ার সঙ্গে একীভূত করার চেষ্টা চলছে।
গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অবস্থিত নির্বাচনী প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে নির্বাচন কমিশন আয়োজিত ‘নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় এআই অপব্যবহার প্রতিরোধ’ শীর্ষক এক কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন।
এ সময় তিনি বলেন, ‘আমরা সবাই মিলে একত্রে চিন্তা করলে আরো অনেক ভালো কিছু বেরিয়ে আসবে। তাই এই কর্মশালাটি একত্রে চিন্তা করে একটি সুনির্দিষ্ট সমাধান নিয়ে আসার একটি সুযোগ। নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় এআইয়ের অপব্যবহার মোকাবিলায় একটি শক্তিশালী অবকাঠামো তৈরির জন্য কর্মশালায় উপস্থিত বিশেষজ্ঞ ও কর্মকর্তাদের কাছ থেকে সুনির্দিষ্ট কয়েকটি বিষয়ে মৌলিক সুপারিশ চাই। শুধুমাত্র নীতিগত নির্দেশিকা নয়, বরং বাস্তবায়নযোগ্য খুটিনাটি জানতে চাই। আমি এই কর্মশালা থেকে সুনির্দিষ্ট কিছু পরামর্শ চাই।’
২৪ ঘণ্টার নজরদারি ও ফ্যাক্ট চেকিংয়ের বিষয়ে তিনি আরো বলেন, ‘নির্বাচন চলাকালীন, বিশেষ করে গভীর রাতেও বহু কিছু ঘটে যেতে পারে। তাই ভুল তথ্য বা মিথ্যা তথ্যের দ্রুত মোকাবিলায় গঠিত সেলকে অবশ্যই ২৪ ঘণ্টা কাজ করতে হবে। এই কাজের জন্য কী ধরনের লোকবল নিয়োগ দিতে হবে তা নিশ্চিত করতে হবে।’
ফ্যাক্ট চেকিংয়ের বিষয়ে এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেন, ‘ফ্যাক্ট চেকিংয়ের পদ্ধতি কেমন হবে, কত দ্রুত তথ্য যাচাই করা যাবে এবং কোন কোন সংস্থাকে এর জন্য কাজে লাগানো হবে—এই বিষয়ে সুনির্দিষ্ট সমাধান দরকার। ফ্যাক্ট চেকিংয়ের জন্য প্রয়োজনীয় জনবল সংখ্যা কত হবে, তারও ধারণা দিতে হবে।’
পাহাড়ি অঞ্চল বা প্রত্যন্ত এলাকা থেকে ভুল তথ্য ছড়ানোর চ্যালেঞ্জের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ধরুন পাহাড়ের দুর্গম অঞ্চল বা সমুদ্র উপকূলের অফশোর আইল্যান্ডগুলো থেকে অস্বাভাবিক বা মিথ্যা তথ্য আসতে পারে। সেই তথ্য বা মিথ্যা তথ্যের কাছে পৌঁছানো এবং সেগুলোকে মোকাবিলা করার উপায় কী? এ জন্য প্রত্যন্ত অঞ্চলের সঙ্গে কেন্দ্রীয় সেলের সংযোগ স্থাপন করা অত্যন্ত জরুরি। প্রয়োজনে প্রতি শিফটে কতজন কর্মী নিয়োগ করতে হবে এবং তাদের শিক্ষাগত পটভূমি বা অভিজ্ঞতা কেমন হতে হবে, সে বিষয়ে বিস্তারিত সুপারিশ দিতে হবে।’
স্থানীয় সংযোগের বিষয়ে সিইসি বলেন, ‘প্রত্যন্ত অঞ্চলে কারা আমাদের হয়ে কাজ করবে এবং এই মিথ্যা তথ্যগুলো সম্পর্কে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করবে—এই সব খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ে পরামর্শ দিতে হবে। এই কর্মশালাটি অত্যন্ত কার্যকর হবে এবং আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনকে তার যাত্রাপথে এগিয়ে যেতে সাহায্য করবে।’
বিগত এক যুগে সড়কে ৬৭ হাজার ৮৯০টি দুর্ঘটনায় এক লাখ ১৬ হাজার ৭২৬ জন নিহত ও এক লাখ ৬৫ হাজার ২১ জন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস-২০২৫ উপলক্ষে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী এই তথ্য তুলে ধরেন।
মোজাম্মেল হক বলেন, স্বাধীনতার আগে দেশে নিরাপদ ও সাশ্রয়ী যোগাযোগ পথ হিসেবে নৌ ও রেলপথে ৮০ শতাংশ এবং সড়কে ২০ শতাংশ মানুষের যাতায়াত ছিল। তাই সড়কে দুর্ঘটনা ২০ শতাংশে সীমিত ছিল। স্বাধীনতার পরে দাতা সংস্থার পরামর্শে একের পর এক সড়ক উন্নয়ন ও সংস্কারের নামে বেহিসেবি লুটপাট, সড়কে বেপরোয়া চাঁদাবাজি, বহুমাত্রিক পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তোলার পরিবর্তে একের পর এক নতুন নতুন সড়ক নির্মাণ করে ৮০ শতাংশ মানুষের যাতায়াত সড়কে নিয়ে আসার কারণে সড়ক দুর্ঘটনাও ৮০ শতাংশ বেড়েছে। ‘সড়কে এই গণহত্যার’ জন্য সরকারের দুর্নীতি ও ভুলনীতি দায়ী।
তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর দেশ নানা খাতে অগ্রসর হলেও দাতা সংস্থার পরামর্শে নৌ ও রেলপথ অবহেলিত থেকে গেছে। বরং একের পর এক সড়ক সম্প্রসারণে সমন্বিত গণপরিবহন ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। পথচারী অবকাঠামোর অভাব ও উন্নত গণপরিবহনের সংকটে মানুষের ভোগান্তি বেড়েছে।
সড়ক দুর্ঘটনা ও যানজট নিয়ন্ত্রণে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠানগুলোতে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা না গেলে এই সেক্টরে দৃশ্যমান অগ্রগতি সম্ভব নয় উল্লেখ করে মোজাম্মেল হক বলেন, জরুরি জনগুরুত্বপূর্ণ খাত হিসেবে পরিবহন সেক্টর সংস্কারের উদ্যোগ না নিলে দেশের সাধারণ মানুষের যাতায়াতের ভোগান্তি আরও বাড়বে। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার উন্নত গণপরিবহন নামানোর পরিবর্তে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা নিবন্ধন দিয়ে রাস্তায় নামানোর যে উদ্যোগ নিয়েছে এই প্রক্রিয়ায় অজ্ঞতা, অনভিজ্ঞতা ও নানাবিধ গলদ থাকায় এই কার্যক্রম শুরু করা হলে এক বছরের মধ্যে ঢাকা ও চট্টগ্রাম শহর অটোরিকশার কারণে অচল হয়ে যাবে। তাই এহেন সিদ্ধান্ত থেকে ফেরত এসে ঢাকা-চট্টগ্রামসহ প্রতিটি বিভাগীয় শহরে সরকারি উদ্যোগে ম্যাস ট্রানজিট (পাতাল মেট্রোরেল) এর ব্যবস্থা করার দাবি জানান তিনি।
দুর্ঘটনা বেড়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে বলা হয়, সড়ক পরিবহন খাতে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সীমাহীন অনিয়ম-দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা, পরিবহন মালিক-শ্রমিক ও কতিপয় দুর্নীতিবাজ পুলিশ কর্মকর্তাদের চাঁদাবাজি ও নৈরাজ্যের কারণে সড়কের বিশৃঙ্খলা, ফিটনেসবিহীন যানবাহনের অবাধে চলাচল, লাইসেন্সবিহীন চালক, অপ্রাপ্তবয়স্ক চালক, সড়কে ত্রুটি, চালকের মাদক গ্রহণ, বেপরোয়া গতি, অযোগ্য চালকের হাতে লাইসেন্স প্রদান, লাইসেন্সবিহীন-প্রশিক্ষণহীন চালকের হাতে যানবাহন তুলে দেওয়াসহ নানা কারণে দুর্ঘটনা বেড়েছে।
এ পরিস্থিতিতে আজ বুধবার নিরাপদ সড়ক দিবস সামনে রেখে সড়ক দুর্ঘটনায় দেশের হাজার হাজার মানুষের জীবন-সম্পদ রক্ষায়, যাতায়াতের ভোগান্তি লাঘবে জরুরিভিত্তিতে ১২ দফা সুপারিশ পেশ করেন তিনি।
সুপারিশগুলো হলো: ১. হারিয়ে যাওয়া নৌ ও রেলপথ সড়কের সঙ্গে সমন্বয় করে সমন্বিত যাতায়াত নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে হবে।
২. চাঁদাবাজি ও অনিয়ম-দুর্নীতি, মালিক-শ্রমিকদের দৌরাত্ম্য বন্ধে পরিবহনখাত আপাদমস্তক সংস্কার করতে হবে।
৩. ঢাকা-চট্টগ্রামসহ প্রতিটি বিভাগীয় শহরে সরকারি উদ্যোগে ম্যাস ট্রানজিট (পাতাল মেট্রোরেল) এর ব্যবস্থা করতে হবে।
৪. ঢাকা-চট্টগ্রামসহ প্রতিটি বিভাগীয় শহরে সরকারি উদ্যোগে ডিজিটাল লেনদেনের ভিত্তিতে কমপক্ষে দুটি বাস র্যাপিড ট্রানজিট (আলাদা উন্নতমানের বাস লেন) লেন চালু করতে হবে।
৫. সারাদেশে জেলা শহর থেকে উপজেলায় মানসম্পন্ন বাস নামিয়ে যাতায়াতে শক্তিশালী বাস নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে হবে।
৬. মোটরসাইকেল ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, সিএনজিচালিত অটোরিকশা আমদানি ও বিপণন বন্ধে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।
৭. উন্নত কারিকুলাম তৈরি করে পরিবহন চালকদের রাষ্ট্রের খরচে প্রশিক্ষণ দিতে হবে।
৮. উন্নত দেশের আদলে ট্রাফিক পুলিশের কার্যক্রম ডিজিটাল করতে হবে। ট্রাফিক ট্রেনিং একাডেমি গড়ে তুলতে হবে।
৯. সড়ক দুর্ঘটনার মামলা সরকারি উদ্যোগে আমলে নিতে হবে। প্রতিটি হতাহত ব্যক্তিকে ক্ষতিপূরণের আওতায় আনতে হবে।
১০. পরিবহন সেক্টরে যাত্রীস্বার্থে সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রতিটি ফোরামে যাত্রী প্রতিনিধি তথা ভুক্তভোগীর মতামত ও অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।
১১. সড়ক সেক্টরে আইনের সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে। দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।
১২. সারাদেশে সাইক্লিস্ট ও পথচারীদের জন্য পৃথক লেন ও নিরাপদ ফুটপাতের ব্যবস্থা করতে হবে।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন যাত্রী কল্যাণ সমিতির সভাপতি শরীফ রফিকুজ্জামান, বারভিডার সভাপতি আবদুল হক, ড্রাইভার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান বাদল আহমেদ প্রমুখ।
বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা আন্দোলন প্রত্যাহার করেছেন। বাড়ি ভাড়া ভাতা মূল বেতনের ১৫ শতাংশ বাড়ানোর বিষয়ে সরকারের সিদ্ধান্তের পর শিক্ষক-কর্মচারীরা গতকাল মঙ্গলবার বেলা ২টার দিকে রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আন্দোলন প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন।
এর আগে গতকাল অর্থ মন্ত্রণালয় বাড়িভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয়। এরপর বাড়ি ভাড়া বাড়ানোর আদেশের কপি আন্দোলনকারী শিক্ষক নেতাদের হাতে তুলে দেন শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আবরার।
বর্ধিত অর্থ দুই ধাপে পাবেন শিক্ষক-কর্মচারীরা। ১৫ শতাংশের মধ্য ৭ দশমিক ৫ শতাংশ (ন্যূনতম ২ হাজার টাকা) কার্যকর হবে এ বছরের ১ নভেম্বর থেকে। আরও ৭ শতাংশ ৫ কার্যকর হবে আগামী বছরের ১ জুলাই থেকে।
এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, আজকের এই মুহূর্তটা শিক্ষা বিভাগের জন্য সত্যিই ঐতিহাসিক। এমপিওভুক্ত শিক্ষক–কর্মচারীদের জন্য চলতি বছরের ১ নভেম্বর থেকে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ বাড়িভাড়া (ন্যূনতম ২ হাজার টাকা) এবং ২০২৬ সালের জুলাই থেকে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ মোট ১৫ শতাংশ বাড়িভাড়া কার্যকর হবে।
শিক্ষকদের দাবি অনুযায়ী শতাংশ হারে এই ভাতা নিশ্চিত করতে পেরে একজন শিক্ষক হিসেবে শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক সি আর আবরার নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করেন। তিনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন, শিক্ষকেরা আরও অধিক সম্মানের দাবিদার এবং তাদের জীবনমান উন্নয়নে রাষ্ট্রের সচেষ্ট থাকা দরকার।
উপদেষ্টা আরও বলেন, এই পথ সহজ ছিল না। নানা মতভেদ, বিতর্ক, অভিযোগ—সবকিছুই ছিল। কোনো বিতর্কের উত্তর না দিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ক্রমাগত একটা ন্যায্য, টেকসই সমাধানের লক্ষ্যে কাজ করে গেছে। শিক্ষা উপদেষ্টা ও মন্ত্রণালয় নিরলসভাবে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, উপদেষ্টা পরিষদ, প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে কাজ করে গেছে, যেন শিক্ষকদের দাবি শোনা হয়, বোঝা হয়।
মন্ত্রণালয় মনে করে, ‘এটি কারও একার জয় নয়; এটি যৌথ সাফল্য। শিক্ষকদের আন্দোলন তাদের বাস্তবতা বুঝিয়েছে, সরকার দায়িত্বশীলভাবে সাড়া দিয়েছে। আর সবাই মিলে আজ এমন এক অবস্থানে এসেছি, যেখানে সম্মান, সংলাপ আর সমঝোতাই জিতেছে। এখন সময় ক্লাসে ফিরে যাওয়ার, শিক্ষার্থীদের কাছে, আসল কাজের জায়গায়। এই সমঝোতা হোক নতুন সূচনা পারস্পরিক শ্রদ্ধা, বোঝাপড়া ও শিক্ষাকে শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড় করানোর প্রতিশ্রুতি নিয়ে। পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধা আর গুণগত মানসম্মত শিক্ষার বিস্তার ঘটিয়ে বাংলাদেশকে আমরা একটি মর্যাদাসম্পন্ন জায়গায় নিয়ে যেতে পারব।’
সরকারের এই সিদ্ধান্তের পর বেলা দুইটার দিকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণ–প্রত্যাশী জোটের সদস্যসচিব দেলাওয়ার হোসেন আজিজী বলেন, ‘আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, এখন থেকে আমাদের সব আন্দোলন ও কর্মসূচি প্রত্যাহার করা হলো। আগামীকাল (বুধবার) থেকে আমরা শ্রেণিকক্ষে ফিরছি।’
দেলাওয়ার হোসেন বলেন, সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বাড়িভাড়া ১৫ শতাংশ বাড়ানো হবে। এ সিদ্ধান্ত নিয়ে সরকার আদেশ জারি করেছে। বাড়িভাড়া আগামী নভেম্বর থেকে সাড়ে ৭ শতাংশ (দুই হাজারের নিচে নয়), বাকি সাড়ে ৭ শতাংশ ২০২৬ সালের জুলাই থেকে কার্যকর হবে।
আজিজী বলেন, আমাদের বড় দাবি পূরণ হয়েছে। এটা আমাদের বড় বিজয়। আন্দোলন করে প্রজ্ঞাপন নিয়ে বাড়ি ফিরছি। আমাদের আন্দোলন প্রত্যাহার করছি। আগামীকাল থেকে শ্রেণিকক্ষে ফিরছি।
তিনি বলেন, গত ৮ দিন শিক্ষকরা শ্রেণিকক্ষে যেতে পারেননি। এটা আমাদের ন্যায্য দাবি ছিল। বার্ষিক পরীক্ষার আগ পর্যন্ত শনিবার স্কুল খোলা রাখবো। যে আট দিন শ্রেণিকক্ষে যেতে পারিনি, সেই আট দিন পুষিয়ে দেব।
আন্দোলনে সংহতি জানানোয় বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি, ইসলামী আন্দোলনসহ দেশের সব রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান দেলাওয়ার হোসেন আজিজী।
বাড়িভাড়া বাড়ানোসহ তিন দফা দাবিতে গত ১২ অক্টোবর থেকে টানা আন্দোলন করে আসছিলেন এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা।
ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনকে অর্থবহ, নিরপেক্ষ ও সবার কাছে গ্রহণযোগ্য করে তোলার জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে এখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ভূমিকায় যেতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ২১ অক্টোবর, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকের পর প্রেস ব্রিফিংয়ে এই মন্তব্য করেন তিনি।
মির্জা ফখরুল বলেন, 'আমরা আজকে প্রধান উপদেষ্টা মহোদয়ের কাছে এসেছিলাম, আমাদের কতগুলো রাজনৈতিক কনসার্ন নিয়ে কথা বলার জন্য। বিশেষ করে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, সেই জাতীয় সংসদ অনুষ্ঠানকে অর্থবহ নিরপেক্ষ সবার কাছে গ্রহণযোগ্য করে তোলার জন্য এই মুহূর্ত থেকে যেটা প্রয়োজন সেটা হচ্ছে— অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে এখন কেয়ারটেকার গভর্নমেন্টের আদলে নিতে হবে।'
'অর্থাৎ কেয়ারটেকার গভর্নমেন্ট বলতে আমরা যা বুঝি— তত্ত্বাবধায়ক সরকারের যে ভূমিকা, সেই ভূমিকায় তাদেরকে যেতে হবে। সেজন্য প্রথমেই যে বিষয়টির প্রয়োজন হবে তা হচ্ছে— প্রশাসনকে পুরোপুরিভাবে নিরপেক্ষভাবে তৈরি করতে হবে।'
তিনি বলেন, ‘বিশেষ করে সেক্রেটারিয়েটে যারা এখনও আছেন, যাদেরকে চিহ্নিত ফ্যাসিস্টদের দোসর বলা হয়, তাদেরকে সরিয়ে সেখানে নিরপেক্ষ কর্মকর্তা দেওয়ার জন্য আমরা বলেছি।'
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে নিরপেক্ষতা বজায় রাখার কথাও আমরা বলেছি। সরকারের মধ্যে যদি কোনও দলীয় লোক থেকে থাকেন, তাকে অপসারণ করার জন্য আমরা দাবি জানিয়ে এসেছি—এটাই ছিল প্রধান মূল কথা।'
কোনও উপদেষ্টার বিষয়ে সুনির্দিষ্টভাবে বলেছেন কিনা, প্রশ্ন করা হলে বিএনপি মহাসচিব এই বিষয়ে ‘না’ সূচক জবাব দেন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমরা বলেছি যে, জেলা প্রশাসন বিশেষ করে সেখানেও একইভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে এবং আমরা কিছু কিছু কথা বলে এসেছি— যেগুলো আমরা মনে করি, তারা এখনও সেই ফ্যাস্টিস সরকারের স্বার্থ পূরণ করছে। সেজন্য তাদেরকে অপসারণের কথা আমরা বলেছি।'
তিনি বলেন, ‘আমরা পুলিশের নিয়োগের ক্ষেত্রে বিশেষ করে যেসব পদে নতুন করে নিয়োগ দেওয়া হবে বা যাদেরকে পদোন্নতি দেওয়া হবে, সেই ক্ষেত্রে নিরপেক্ষ ব্যবস্থা নেওয়ার কথা আমরা বলে এসেছি।'
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ‘পাশাপাশি আমরা বলে এসেছি—বিচার বিভাগে বিশেষ করে হায়ার জুডিশিয়ারিতে এখনও ফ্যাসিস্টদের যেসব দোসর আছেন, তাদেরকে সরিয়ে সেখানে নিরপেক্ষ বিচারকদের নিয়োগ দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। যদিও এটা জুডিশিয়ারি ব্যাপার। তারপরেও প্রধান উপদেষ্টা যেহেতু সব সবকিছুর দায়িত্বে আছেন, তার কাছে আমরা আমাদের সেই কনসার্নগুলো জানিয়ে এসেছি।'
এর পাশাপাশি সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন স্থাপনায় একাধিক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ জানিয়েছেন বিএনপি নেতৃবৃন্দ। এসব ঘটনা অন্তর্ঘাতমূলক কি না, এ বিষয়ে অনুসন্ধানেরও আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
যমুনায় প্রবেশের আগে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছিলেন, ‘আমরা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য সময় চেয়েছিলাম। সেই অনুযায়ী উনি সময় দিয়েছেন। আমরা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছি। ফেব্রুয়ারির জাতীয় নির্বাচন, প্রশাসনের কিছু বিষয়সহ দেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আমরা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে কথা বলব।’
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও সালাহউদ্দিন আহমদ। পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল ও শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খানও বৈঠকে অংশ নেন।
চলমান রাজনৈতিক সংলাপের অংশ হিসেবে আজ বুধবার বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী প্রতিনিধিদলের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।