দেশে দীর্ঘদিন ধরেই সাধারণ মানুষের কাছে নিরাপদ বিনিয়োগ মাধ্যম হিসেবে সঞ্চয়পত্র অত্যন্ত জনপ্রিয়। অনেক নিম্ন মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত সঞ্চয়পত্রের মুনাফার টাকায় পরিবারের খরচ চালান। গত সপ্তাহে সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে বেশি ঋণ নিতে মুনাফার হার বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। সঞ্চয়পত্রের ধরন অনুযায়ী এ হার বেড়ে হতে যাচ্ছে ১২ দশমিক ২৫ থেকে ১২ দশমিক ৫৫ শতাংশ পর্যন্ত। তাই এখনই সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের উপযুক্ত সময় বলে মনে করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা।
জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের চালু সঞ্চয় কর্মসূচির (স্কিম) সংখ্যা ১১। এগুলোর মধ্যে ৪টি সঞ্চয়পত্র, ২টি ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংক হিসাব, ১টি ডাক জীবন বীমা, ১টি প্রাইজবন্ড এবং ৩টি প্রবাসীদের জন্য বন্ড। সব কর্মসূচিতে বিনিয়োগের বিপরীতে সুদ বা মুনাফার হার ভিন্ন। সুদ বা মুনাফার ওপর উৎসে কর কর্তনের হারও ভিন্ন।
বর্তমানে চার ধরনের সঞ্চয়পত্র চালু রয়েছে। এগুলো হলো পাঁচ বছরমেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র, পরিবার সঞ্চয়পত্র, তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র ও পেনশনার সঞ্চয়পত্র। বর্তমানে সঞ্চয়পত্র কেনা ও মুনাফা উত্তোলনের ব্যবস্থা ডিজিটাল হয়েছে। জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের ৭১টি সঞ্চয় ব্যুরো কার্যালয়, বাংলাদেশ ব্যাংকের সব কার্যালয়, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক, ডাকঘর ছাড়াও বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে সঞ্চয়পত্র কেনা ও ভাঙানো যায়।
জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের আওতায় পরিচালিত সঞ্চয় কর্মসূচিগুলোর (স্কিম) মুনাফার হার বাড়ছে। বর্ধিত হার নির্ধারণের আদেশ জারি করতে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগকে (আইআরডি) গত ৮ জানুয়ারি অনুরোধ জানিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ। চিঠির সঙ্গে অর্থ বিভাগ দুটি সংযুক্তিও দিয়েছে, যাতে সঞ্চয়পত্রের ধরন ও মেয়াদ অনুযায়ী মুনাফার হারের কথা উল্লেখ করেছে। বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, কোনো সঞ্চয়পত্রের মুনাফাই ১২ শতাংশের কম হবে না। সবচেয়ে কম মুনাফা পাওয়া যাবে ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংকের বিপরীতে। এর হার ১২ দশমিক ২৫ শতাংশ। আর সবচেয়ে বেশি মুনাফা পাওয়া যাবে পেনশনার সঞ্চয়পত্রে, যে হার হবে ১২ দশমিক ৫৫ শতাংশ। ৭ লাখ ৫০ হাজার টাকার নিচের বিনিয়োগকারীদের জন্য আরও বেশি হার রাখারও সুপারিশ করেছে অর্থ বিভাগ।
বিনিয়োগকারীদের দুটি ধাপ হচ্ছে
শুধু সুদের হারের পরিবর্তন নয়, বিনিয়োগকারীদের ধাপেও পরিবর্তন আনার কথা বলেছে অর্থ বিভাগ। বর্তমানে ধাপ রয়েছে তিনটি- ১৫ লাখ টাকা; ১৫ লাখ ১ টাকা থেকে ৩০ লাখ টাকা এবং ৩০ লাখ ১ টাকার বেশি। প্রতিটি ধাপে রয়েছে আলাদা মুনাফার হার। বিদ্যমান নিয়ম অনুযায়ী, পাঁচ বছরমেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রে বর্তমানে মেয়াদ শেষে ১১ দশমিক ২৮ শতাংশ মুনাফা পাওয়া যায়। এই সঞ্চয়পত্রে ১৫ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগকারীরা মেয়াদ শেষে মুনাফা পাবেন ১০ দশমিক ৩০ শতাংশ হারে। আর ৩০ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগ থাকলে মুনাফার হার হবে সাড়ে ৯ শতাংশ।
নতুন নিয়মে দুটি ধাপের কথা বলা হয়েছে। একটি ধাপে থাকবেন ৭ লাখ ৫০ হাজার টাকার নিচের বিনিয়োগকারীরা। আরেকটি ধাপে থাকবেন এর ওপরের বিনিয়োগকারীরা।
পাঁচ বছরমেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রের উদাহরণ দিয়েই বলা যায়, নতুন হারে ৭ লাখ ৫০ হাজার টাকার নিচের বিনিয়োগকারীরা পাবেন ১২ দশমিক ৪০ শতাংশ। আর ৭ লাখ ৫০ হাজার টাকার বেশি বিনিয়োগকারীরা পাবেন সামান্য কম অর্থাৎ ১২ দশমিক ৩৭ শতাংশ।
অন্যগুলোর ক্ষেত্রেও এভাবে দুটি করে হার হবে। বরাবরের মতো নতুন হারেও সবচেয়ে বেশি সুবিধা পাবেন পেনশনার সঞ্চয়পত্রের বিপরীতে বিনিয়োগকারীরা। ৭ লাখ ৫০ হাজার টাকার নিচের বিনিয়োগকারীরা পাবেন ১২ দশমিক ৫৫ শতাংশ। এর বেশি বিনিয়োগকারীরা পাবেন ১২ দশমিক ৩৭ শতাংশ। তবে মেয়াদপূর্তির আগে ভাঙালে সব সঞ্চয়পত্রের বিপরীতেই মুনাফার হার কমবে।
কোন সঞ্চয়পত্রের কত মেয়াদ
নামের মধ্যেই রয়েছে পাঁচ বছরমেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র পাঁচ বছরের মেয়াদের। পরিবার সঞ্চয়পত্র ও পেনশনার সঞ্চয়পত্রের নামের মধ্যে মেয়াদ উল্লেখ না থাকলেও দুটি সঞ্চয়পত্রই পাঁচ বছর মেয়াদের। এ ছাড়া রয়েছে তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র। পরিবার সঞ্চয়পত্রের সুদ মাসিক ভিত্তিতে এবং তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র ও পেনশনার সঞ্চয়পত্রের সুদ ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে তোলা যায়।
কারা কোন সঞ্চয়পত্র কিনতে পারবেন
সবাই সব ধরনের সঞ্চয়পত্র কিনতে পারেন না। এ ব্যাপারে সরকার কিছু শর্ত ঠিক করে দিয়েছে। যেমন ১৮ বছর ও তার চেয়ে বেশি বয়সের যেকোনো বাংলাদেশি নারী, যেকোনো বাংলাদেশি শারীরিক প্রতিবন্ধী নারী ও পুরুষ এবং ৬৫ বছর ও তার চেয়ে বেশি বয়সি বাংলাদেশি নারী ও পুরুষেরা শুধু একক নামে পরিবার সঞ্চয়পত্র কিনতে পারবেন।
পেনশনার সঞ্চয়পত্রও কিনতে পারেন না সবাই। অবসরভোগী সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আধা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ও কর্মচারী, সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি, সশস্ত্র বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সদস্য এবং মৃত সরকারি চাকরিজীবীর পারিবারিক পেনশন সুবিধাভোগী স্বামী, স্ত্রী ও সন্তানেরা এ সঞ্চয়পত্র কিনতে পারেন।
পাঁচ বছরমেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র এবং তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র সবার জন্য উন্মুক্ত। ১৮ বছর বা তার বেশি বয়সি যেকোনো শ্রেণি-পেশার মানুষ একক বা যুগ্ম নামে এ দুই ধরনের সঞ্চয়পত্র কিনতে পারেন। তবে নাবালকের পক্ষে সঞ্চয়পত্র কেনার এখন আর সুযোগ নেই।
সঞ্চয়পত্রের গ্রাহক কোনো কারণে মারা গেলে টাকা পাবেন তার মনোনীত ব্যক্তি বা নমিনি। সঞ্চয়পত্রে এক বা একাধিক নমিনি করার সুযোগ রয়েছে। যদিও নমিনি মনোনয়ন বাধ্যতামূলক নয়। তবে ভবিষ্যতে নগদায়ন ঝামেলা এড়াতে গ্রাহকরা সাধারণত নমিনি মনোনয়ন করে থাকেন। নাবালককেও নমিনি করা যায়। গ্রাহকের মৃত্যুর তিন মাসের মধ্যে আদালত থেকে উত্তরাধিকার সনদ নিয়ে সঞ্চয়পত্রের নগদায়ন করতে হয়। গ্রাহক ও নমিনি উভয়ই মারা গেলে সঞ্চয়পত্র ভাঙাতে পারেন আইনানুগ উত্তরাধিকারীরা।
ব্যক্তি সঞ্চয়পত্র কিনতে যা যা লাগে
কোনো ব্যক্তি সঞ্চয়পত্র কিনতে গেলে তাকে ৮ থেকে ৯ ধরনের কাগজ জোগাড় করতে হয়। প্রথমেই লাগবে তার জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) ফটোকপি। দুই লাখ বা তারও বেশি টাকার সঞ্চয়পত্র কিনতে লাগবে করদাতা শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) সনদের ফটোকপি।
বিনিয়োগের পরিমাণ দুই লাখ টাকার মধ্যে হলে নগদে পরিশোধ করা যাবে, তবে দুই লাখ টাকার বেশি হলেই তা পরিশোধ করতে হবে ব্যাংকের চেকের মাধ্যমে। যে নামে সঞ্চয়পত্র কিনতে ইচ্ছুক, চেক দিতে হবে সেই নামের ব্যাংক হিসাবেরই। একক নামে সঞ্চয়পত্র কেনার ক্ষেত্রে একক নামে ব্যাংক হিসাবের চেক এবং যুগ্ম নামে সঞ্চয়পত্র কেনার ক্ষেত্রে যুগ্ম নামে ব্যাংক হিসাবের চেক দিতে হবে।
আবেদনের সঙ্গে নমিনির এনআইডির ফটোকপিও দিতে হবে। নমিনি নাবালকও হতে পারবে। সে ক্ষেত্রে নমিনির জন্মনিবন্ধন সনদ বা পাসপোর্টের ফটোকপি দিতে হবে। নাবালক নমিনির পক্ষে দিতে হবে মনোনীত অভিভাবকের এনআইডির ফটোকপিও। ব্যক্তি ছাড়া প্রতিষ্ঠানও নমিনি হতে পারবে। সে ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধনের সনদ বা স্থানীয় সরকারের (ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা বা সিটি করপোরেশন) প্রত্যয়নপত্র লাগবে। সঞ্চয়পত্রের ক্রেতা বা গ্রাহকের এবং নমিনির দুই কপি করে পাসপোর্ট আকারের ছবি লাগবে। গ্রাহকের ছবি সত্যায়ন করবেন ইস্যুকারী কর্মকর্তা এবং নমিনির ছবি সত্যায়ন করবেন সঞ্চয়পত্রের গ্রাহক।
প্রভিডেন্ট ফান্ড
ভবিষ্য তহবিলের (প্রভিডেন্ট ফান্ড) অর্থ সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করা যায়। এ বিনিয়োগ করে প্রতিষ্ঠানগুলো। এ ক্ষেত্রেও কিছু নিয়ম-কানুন রয়েছে। প্রথমেই সংশ্লিষ্ট কর কমিশনারের কার্যালয় থেকে স্বীকৃতপত্র নিতে হবে। আবেদনের সঙ্গে দিতে হবে প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের ভবিষ্য তহবিল সংরক্ষণবিষয়ক সরকারি গেজেট বা প্রজ্ঞাপনের কপি।
ভবিষ্য তহবিলের নামে যে টিআইএন সনদ আছে সেটা এবং ব্যাংক হিসাবের চেক ও হিসাব বিবরণী জমা দিতে হবে। যে প্রতিষ্ঠান সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সে প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদের কার্যবিবরণী এবং আবেদনকারীদের নাম, পদবি ও স্বাক্ষরসংক্রান্ত প্রত্যয়নপত্র দাখিল করতে হবে। সবশেষে লাগবে একটি ফরওয়ার্ড লেটার।
অটিস্টিকদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান
যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অটিস্টিকদের জন্য গড়ে উঠেছে, এখন সেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক তিন বছরমেয়াদি সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করতে পারে। তবে ২০২০ সালের ডিসেম্বরের আগে এ ধরনের কোনো প্রতিষ্ঠান এ সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করতে পারত না।
অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের (আইআরডি) জারি করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, শুধু অটিস্টিকদের জন্য গড়ে ওঠা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নয়, যেসব প্রতিষ্ঠান অটিস্টিকদের সহায়তায় কাজ করে, তারাও এ সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করতে পারবে। ব্যক্তির ক্ষেত্রে একক নামে ৫০ লাখ বা যৌথ নামে এক কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র কেনার সুযোগ থাকলেও অটিস্টিকদের জন্য গড়ে ওঠা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য বিনিয়োগের কোনো সীমা বেঁধে দেওয়া হয়নি।
তবে যে প্রতিষ্ঠানই এই সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করতে যাবে, তার আগে সেই প্রতিষ্ঠানকে জেলা সমাজসেবা কার্যালয় থেকে প্রত্যয়নপত্র নিতে হবে। জমা দিতে হবে টিআইএন সনদ এবং ব্যাংক হিসাবের চেক ও হিসাব বিবরণী। যে প্রতিষ্ঠান সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সে প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদের কার্যবিবরণী এবং আবেদনকারীদের নাম, পদবি ও স্বাক্ষরসংক্রান্ত প্রত্যয়নপত্র দাখিল করতে হবে। সবশেষে লাগবে একটি ফরওয়ার্ড লেটার।
পেনশনার
এ সঞ্চয়পত্র যেখান থেকে কেনা হয়, সেখানে ভবিষ্য তহবিলের চূড়ান্ত মঞ্জুরিপত্র দাখিল করতে হবে। এ ছাড়া লাগবে প্রাপ্ত আনুতোষিকের মঞ্জুরিপত্র এবং পেনশন বইয়ের ফটোকপি। নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের একটি সনদও দাখিল করতে হয় এ সঞ্চয়পত্র কেনার আবেদনের সঙ্গে।
সাংবাদিক আনিস আলমগীর ও অভিনেত্রী মেহের আফরোজ শাওনসহ চারজনের বিরুদ্ধে রাজধানীর উত্তরা পশ্চিম থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে দায়ের করা অভিযোগটি মামলায় রূপান্তর করা হয়েছে। এই মামলায় বর্তমানে ডিবি হেফাজতে থাকা সাংবাদিক আনিস আলমগীরকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) শফিকুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
ডিবি প্রধান জানান, উত্তরা পশ্চিম থানায় দায়েরকৃত এই মামলায় আনিস আলমগীরকে গ্রেপ্তার দেখানোর প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। থানা থেকে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আসার পর তার মাধ্যমেই গ্রেপ্তারকৃত সাংবাদিককে আদালতে সোপর্দ করা হবে।
এর আগে রবিবার (১৪ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ধানমন্ডি এলাকার একটি ব্যায়ামাগার থেকে বের হওয়ার সময় আনিস আলমগীরকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডিবি কার্যালয়ে নেওয়া হয়েছিল। উল্লেখ্য, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর রাজনীতি নিষিদ্ধ দলটির পক্ষে বিভিন্ন টেলিভিশন টকশোতে অবস্থান নেওয়াকে কেন্দ্র করে তিনি বেশ কিছুদিন ধরেই সমালোচিত ছিলেন।
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য সংসদ সদস্য প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদিকে গুলি করে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় পল্টন মডেল থানায় দায়েরকৃত মামলাটি তদন্তের জন্য ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) দুপুরে বিষয়টি নিশ্চিত করে ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার শফিকুল ইসলাম জানান, এখন থেকে মামলাটির তদন্ত কার্যক্রম ডিবি মতিঝিল বিভাগ পরিচালনা করবে।
এর আগে রবিবার রাতে পল্টন মডেল থানায় হত্যাচেষ্টার অভিযোগে এই মামলাটি (মামলা নং-১৯) দায়ের করা হয়। মামলার প্রাথমিক তদন্তকারী কর্মকর্তা ও পল্টন থানার পরিদর্শক (অপারেশন) ইয়াসিন মিয়া জানিয়েছেন, দায়েরকৃত মামলার এজাহারে একজনকে আসামি করা হয়েছে। মামলাটি ডিবিতে হস্তান্তরের ফলে এখন তারাই পরবর্তী আইনি পদক্ষেপ ও তদন্ত এগিয়ে নেবে।
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) গৃহীত পদক্ষেপ ও সার্বিক প্রস্তুতিতে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি মনে করেন, কমিশন তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব, বিশেষ করে ভোটার তালিকা হালনাগাদ এবং সময়মতো তফসিল ঘোষণার কাজ অত্যন্ত সুচারুভাবে সম্পন্ন করেছে। সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) দুপুরে সচিবালয়ে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত ও অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।
দেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, দেশে নির্বাচনের জন্য একটি সুস্থ ও স্বাভাবিক পরিবেশ বিরাজ করছে। এর বড় প্রমাণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন যে, রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত তফসিলকে মেনে নিয়েছে এবং কোনো দলই নির্বাচনের তারিখ বা সময়সূচি নিয়ে কোনো ধরনের আপত্তি তোলেনি। দলগুলোর এই ইতিবাচক মনোভাব এবং নির্বাচনে অংশগ্রহণের আগ্রহই প্রমাণ করে যে, প্রস্তুতি সঠিক পথেই এগোচ্ছে এবং এখন মূল চ্যালেঞ্জ হলো ঘোষিত তফসিলের সুষ্ঠু বাস্তবায়ন।
এবারের নির্বাচনের সঙ্গে গণভোট আয়োজনের বিষয়টি যুক্ত থাকায় স্বাভাবিকভাবেই নির্বাচনী ব্যয় বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে। এ প্রসঙ্গে ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ জানান, নির্বাচন কমিশন এখন পর্যন্ত বাড়তি কোনো অর্থের আনুষ্ঠানিক চাহিদাপত্র অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠায়নি। তবে তিনি আশ্বস্ত করেন যে, নির্বাচন ও গণভোট সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে লজিস্টিক সাপোর্ট, বিপুল সংখ্যক জনবল ও আনুষঙ্গিক যা কিছু প্রয়োজন, তার জন্য সরকার প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ দিতে সম্পূর্ণ প্রস্তুত। কমিশন যখনই চাহিদাপত্র পাঠাবে, তা যাচাই-বাছাই করে দ্রুততার সঙ্গে অর্থ ছাড় করা হবে এবং এ ক্ষেত্রে সরকারের কোনো ধরনের কার্পণ্য বা সীমাবদ্ধতা থাকবে না। গণভোটের জন্য ব্যয় ২০ শতাংশ বাড়তে পারে—এমন গুঞ্জন শোনা গেলেও উপদেষ্টা জানান, কোনো নির্দিষ্ট অংক নিয়ে এখনো প্রস্তাব আসেনি।
নির্বাচনকালীন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে তিনি বলেন, বর্তমানে দেশের পরিস্থিতি মোটামুটি সন্তোষজনক পর্যায়ে রয়েছে। তবে নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসবে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা ততটাই বাড়ানো হবে। ভোটের আগে ও পরে জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ ভোটগ্রহণের স্বার্থে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আরও কঠোর থেকে কঠোরতর করা হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন। সরকার নির্বাচন কমিশনকে একটি সুন্দর ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দেওয়ার ক্ষেত্রে সব ধরনের প্রশাসনিক ও আর্থিক সহযোগিতা প্রদান করবে বলে তিনি পুনর্ব্যক্ত করেন।
উন্নত চিকিৎসার জন্য ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদিকে নিয়ে সিঙ্গাপুরের উদ্দেশ্যে ঢাকা ছেড়েছে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স। সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) দুপুর ১টা ৫৫ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিশেষ এই অ্যাম্বুলেন্সটি উড্ডয়ন করে। হাদির সঙ্গে তার দুই ভাইও সিঙ্গাপুরে গিয়েছেন। এর আগে তাকে বহনকারী এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি বেলা ১১টা ২২ মিনিটে ঢাকায় অবতরণ করে।
গত শুক্রবার জুমার নামাজের পর রাজধানীর পুরানা পল্টনের বক্স-কালভার্ট রোডে রিকশায় যাওয়ার সময় মোটরসাইকেলে আসা দুর্বৃত্তরা হাদির মাথায় গুলি করে। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং পরে এভারকেয়ার হাসপাতালের আইসিইউতে রাখা হয়। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তার শারীরিক অবস্থা বেশ সংকটাপন্ন। হামলার ঘটনায় সন্দেহভাজন হিসেবে ফয়সাল করিম নামের এক ব্যক্তির নাম উঠে এসেছে, যিনি নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের সাবেক নেতা এবং সম্প্রতি হাদির নির্বাচনী প্রচারণায় যুক্ত ছিলেন।
এই ঘটনায় পল্টন থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং এখন পর্যন্ত ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে রয়েছেন হামলায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের মালিক, সীমান্ত দিয়ে মানুষ পাচারকারী চক্রের সদস্য এবং মূল অভিযুক্ত ফয়সালের আত্মীয়রা। হামলাকারীরা ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট সীমান্ত দিয়ে পালিয়ে গেছে বলে গুঞ্জন থাকলেও পুলিশ জানিয়েছে, এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য না থাকলেও সীমান্তে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। উল্লেখ্য, গত নভেম্বরে হাদি জানিয়েছিলেন যে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন নম্বর থেকে তাকে ও তার পরিবারকে হত্যাসহ নানা ধরনের হুমকি দেওয়া হচ্ছিল।
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য সংসদ সদস্য প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদিকে গুলি করে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় রাজধানীর পল্টন থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) সকালে পল্টন থানার ডিউটি অফিসার উপ-সহকারী পরিদর্শক (এএসআই) রকিবুল হাসান মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, মামলাটির তদন্তভার দেওয়া হয়েছে পল্টন থানার পরিদর্শক (অপারেশন) ইয়াসিন মিয়াকে।
এদিকে, এই হামলার ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এখন পর্যন্ত ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে রয়েছেন হামলায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের মালিক, সীমান্ত দিয়ে মানুষ পাচারকারী চক্রের দুজন সদস্য এবং অভিযুক্ত ফয়সালের স্ত্রী, শ্যালক ও অন্য এক নারী।
উল্লেখ্য, গত ১২ ডিসেম্বর জুমার নামাজের পর রাজধানীর পুরানা পল্টনের বক্স-কালভার্ট রোডে রিকশায় যাওয়ার সময় মোটরসাইকেলে আসা দুর্বৃত্তরা ওসমান হাদির মাথায় গুলি করে পালিয়ে যায়। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে প্রথমে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এবং পরে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে তিনি আইসিইউতে চিকিৎসাধীন এবং তার অবস্থা সংকটাপন্ন। উন্নত চিকিৎসার জন্য আজ সোমবার দুপুরেই তাকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে সিঙ্গাপুরে পাঠানো হচ্ছে।
গুলিবিদ্ধ ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান বিন হাদিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে নেওয়া হচ্ছে। তাকে বহন করতে সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) বেলা ১১টা ২০ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে একটি এয়ার অ্যাম্বুলেন্স অবতরণ করেছে। সবকিছু ঠিক থাকলে অসপ্রে এভিয়েশনের এই এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি আজ দুপুরেই হাদিকে নিয়ে সিঙ্গাপুরের উদ্দেশ্যে রওনা হবে। সেখানে তাকে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালের অ্যাক্সিডেন্ট ইমার্জেন্সি বিভাগে ভর্তি করা হবে।
হাদির চিকিৎসার যাবতীয় ব্যয় রাষ্ট্রীয়ভাবে বহন করা হবে বলে জানিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং। তার চিকিৎসা প্রক্রিয়া সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে রাখার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। গত দুই দিন ধরে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ার একাধিক হাসপাতালের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। বর্তমানে হাদির শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল ও অপরিবর্তিত রয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার স্বাস্থ্য বিষয়ক বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান।
উল্লেখ্য, গত শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) রাজধানীর বিজয়নগর বক্স কালভার্ট এলাকায় রিকশায় যাওয়ার পথে সন্ত্রাসীদের হামলার শিকার হন শরিফ ওসমান হাদি। এ সময় মোটরসাইকেলে আসা দুর্বৃত্তরা তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে মাথায় গুলি করে পালিয়ে যায়। এরপর থেকে তিনি রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। প্রধান উপদেষ্টা তার দ্রুত সুস্থতা কামনায় দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন।
জুলাই গণহত্যার দায়ে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে একটি অভিযোগে দেওয়া আমৃত্যু কারাদণ্ডের সাজা বাড়িয়ে মৃত্যুদণ্ড চেয়ে আজ আপিল বিভাগে আবেদন করতে যাচ্ছে প্রসিকিউশন। সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, শেখ হাসিনার আমৃত্যু কারাদণ্ডের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ড চেয়ে আজই আপিল দায়ের করা হবে এবং এরপর ব্রিফিংয়ে বিস্তারিত তথ্য জানানো হবে।
এর আগে, গত ১৭ নভেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে একটি অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড এবং অন্য একটি অভিযোগে আমৃত্যু কারাদণ্ড প্রদান করেন। একইসঙ্গে দেশে থাকা তাদের সব সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশ দেন আদালত। প্রসিকিউশন জানিয়েছে, তারা রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি পর্যালোচনা করে আমৃত্যু কারাদণ্ডের সাজাটিকে মৃত্যুদণ্ডে উন্নীত করার জন্য আপিল করার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। আইন অনুযায়ী রায় ঘোষণার ৩০ দিনের মধ্যেই এই আপিল দায়েরের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
ট্রাইব্যুনালের রায়ে প্রথম অভিযোগে বলা হয়, ২০২৪ সালের ১৪ জুলাই গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ভিসি মাকসুদ কামালের সঙ্গে কথোপকথনে শেখ হাসিনা আন্দোলনকারীদের ‘রাজাকার’ আখ্যা দিয়ে উসকানিমূলক বক্তব্য দেন। এছাড়া আসামিরা অপরাধ দমনে অধীনস্থদের বাধা দেননি, যার পরিপ্রেক্ষিতে রংপুরে আবু সাঈদ পুলিশের গুলিতে নিহত হন। এসব অপরাধে শেখ হাসিনা ও কামালকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেওয়া হয়, যার বিরুদ্ধেই আজ আপিল করছে প্রসিকিউশন।
অন্যদিকে, দ্বিতীয় অভিযোগে শেখ হাসিনা ও কামালকে আগেই মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এই অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, সাবেক মেয়র ফজলে নূর তাপস ও জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনুর সঙ্গে ফোনালাপে শেখ হাসিনা ড্রোন, হেলিকপ্টার ও মারণাস্ত্র ব্যবহার করে হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন। এর ফলে ৫ আগস্ট চানখারপুলে ছয়জন এবং সাভারের আশুলিয়ায় ছয়জনকে হত্যা করে লাশ পুড়িয়ে ফেলার মতো নৃশংস ঘটনা ঘটে। উল্লেখ্য, এই মামলায় রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে উভয় অভিযোগে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। বাজেয়াপ্তকৃত সম্পদ জুলাই আন্দোলনে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে বিতরণের নির্দেশও দিয়েছেন আদালত।
সাংবাদিক আনিস আলমগীর, অভিনেত্রী মেহের আফরোজ শাওন, মারিয়া কিশপট্ট এবং ইমতু রাতিশ ইমতিয়াজ—এই চারজনের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। গত রবিবার (১৪ ডিসেম্বর) রাতে রাজধানীর উত্তরা পশ্চিম থানায় জুলাই রেভ্যুলশনারি অ্যালায়েন্সের কেন্দ্রীয় সংগঠক আরিয়ান আহমেদ বাদী হয়ে এই অভিযোগটি দায়ের করেন। এদিকে একই রাতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাংবাদিক আনিস আলমগীরকে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি) কার্যালয়ে নেওয়া হয়েছে।
উত্তরা পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী মোহাম্মদ রফিক আহমেদ অভিযোগ দায়েরের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, অভিযোগটি গ্রহণ করা হয়েছে এবং এটি মূলত ‘সাইবার রিলেটেড ইস্যু’। তাই প্রাথমিক সত্যতা যাচাই ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশনার সাপেক্ষে এটিকে মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করার বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের জুলাই মাসে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পর রাজনৈতিক পটপরিবর্তন হলেও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুসারীরা বিভিন্ন কৌশলে দেশে অবস্থান করে রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতা নষ্টের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছেন। অভিযোগকারীর দাবি, গত ৫ আগস্টের পর থেকে অভিযুক্তরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও বিভিন্ন টেলিভিশন টক শোতে অংশ নিয়ে নিষিদ্ধ সংগঠনকে পুনরুজ্জীবিত করার প্রচারণা চালাচ্ছেন, যার মূল উদ্দেশ্য আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন করা। অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, তাদের এসব বক্তব্য ও অনলাইন কার্যক্রমের ফলে নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগ ও যুবলীগের কর্মীরা উসকানি পাচ্ছে এবং রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্র, সহিংসতা ও অবকাঠামো ধ্বংসের মতো কর্মকাণ্ডে জড়িত হচ্ছে।
অন্যদিকে, অভিযোগ দায়েরের রাতেই ধানমন্ডি এলাকার একটি জিম থেকে ব্যায়াম শেষে বের হওয়ার সময় সাংবাদিক আনিস আলমগীরকে ডিবি হেফাজতে নেওয়া হয়। ডিবির প্রধান বিষয়টি নিশ্চিত করে জানিয়েছেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে ডিবি কার্যালয়ে আনা হয়েছে এবং এ বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত পরে জানানো হবে। উল্লেখ্য, সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন টেলিভিশন টক শোতে দেওয়া বক্তব্যের কারণে সাংবাদিক আনিস আলমগীর বেশ আলোচনায় ছিলেন।
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র এবং ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য সংসদ সদস্য প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদিকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি চালানোর ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে অভিযুক্ত সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর একটি সেলফি তুলেছেন, যা সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশ করেছেন।
জুলকারনাইন সায়েরের পোস্ট অনুযায়ী, হামলাকারী ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান এবং তার সহযোগী মোটরসাইকেল চালক আলমগীর হোসেন গত ১২ ডিসেম্বর (শুক্রবার) সন্ধ্যায় ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে প্রবেশ করে। এরপর তাদের জাহাঙ্গীর কবির নানকের পিএস মো. মাসুদুর রহমান বিপ্লব এই ভারতীয় মোবাইল নম্বরটি (+৯১৬০০১৩৯৪০**) ফয়সাল করিম মাসুদকে জোগাড় করে দেন বলে বিশেষ গোয়েন্দা সূত্রের বরাত দিয়ে তিনি জানান।
ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান এই ভারতীয় নম্বর ব্যবহার করে গত রাতে কয়েকটি নম্বরে নিজেদের সেলফি পাঠান, যার মধ্যে একটি ইন্টারসেপ্ট করে ছবিটি পাওয়া যায়। ছবিটি ভারতের আসাম রাজ্যের গুয়াহাটিতে তোলা হয়েছে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
উল্লেখ্য, গত ১২ ডিসেম্বর জুমার নামাজের পর রাজধানীর পুরানা পল্টনের বক্স-কালভার্ট রোডে মোটরসাইকেলে করে এসে চলন্ত রিকশায় থাকা ওসমান হাদির মাথায় গুলি করা হয়। এই হত্যাচেষ্টার ঘটনায় তাঁর পরিবার মামলা দায়ের করেছে। এই হামলার ঘটনায় এখন পর্যন্ত মোট ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন— হামলায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের মালিক, মানবপাচার চক্রের দুজন সহযোগী, সন্দেহভাজন শুটার ফয়সালের স্ত্রী, শ্যালক এবং বান্ধবী।
১৫ ডিসেম্বরের নাটকীয় মুহূর্ত: ভুট্টোর জাতিসংঘ ত্যাগ
১৯৭১ সালের ১৫ ডিসেম্বর, নিউইয়র্কের জাতিসংঘ সদরদপ্তর থেকে পাকিস্তানের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টো এক আবেগঘন বিদায় নেন। সেদিন গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির মধ্যে কুয়াশাচ্ছন্ন আবহাওয়া ছিল। নিরাপত্তা পরিষদের অধিবেশন থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় তাঁর চোখে জল ছিল বলে মার্কিন গণমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে উঠে আসে। ভুট্টো সেদিন অধিবেশনে জাতিসংঘের বিরুদ্ধে আগ্রাসনকে বৈধতা দেওয়ার অভিযোগ তুলে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং বলেন, “রাখুন আপনাদের নিরাপত্তা পরিষদ। লজ্জাজনক আত্মসমর্পণের সঙ্গে আমি যুক্ত হবো না। আমি কোনো ইঁদুর নই। পালাচ্ছি না, পরিষদ ছেড়ে চলে যাচ্ছি।” ভুট্টোর এই নাটকীয় প্রস্থান পরদিন নিউইয়র্ক টাইমসের পাতায় স্থান পায়। এই সময়ে ফ্রান্স ও ব্রিটেনের যৌথ প্রস্তাব এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের উত্থাপিত প্রস্তাবে যুদ্ধবিরতি ও পূর্ব পাকিস্তানের কথিত ‘বিদ্রোহী’দের সাথে রাজনৈতিক সমঝোতার আহ্বান জানানো হয়, যা কূটনীতিকদের কাছে ঢাকার আসন্ন পতনের ইঙ্গিত দেয়।
ষোলো ঘণ্টার আলটিমেটাম এবং আত্মসমর্পণের বার্তা চালাচালি
গুরুত্বপূর্ণ শহর ও ঘাঁটি হারানোর পর পাকিস্তানের শাসকরা পরাজয় নিশ্চিত হয়ে পড়েন। এর আগে ১৪ ডিসেম্বর প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান জেনারেল আমির আবদুল্লাহ খান নিয়াজিকে চিঠি পাঠিয়ে অবিলম্বে যুদ্ধ বন্ধ এবং সৈন্যদের জীবন রক্ষার্থে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন। ইয়াহিয়া খান উল্লেখ করেন যে তিনি ইতিমধ্যেই জাতিসংঘে পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তৎপরতা শুরু করেছেন।
এই বার্তা পাওয়ার পর জেনারেল নিয়াজি ও গভর্নর সামরিক উপদেষ্টা ফরমান আলী যুক্তরাষ্ট্রের কনসাল জেনারেল হার্বার্ট স্পিভ্যাকের সাথে দেখা করে 'সম্মানজনক শর্তসাপেক্ষে যুদ্ধবিরতি'র একটি বার্তা ভারতের কাছে পাঠানোর অনুরোধ জানান। স্পিভ্যাক বার্তাটি দিল্লির বদলে ওয়াশিংটনে পাঠান, যেখান থেকে তা ভারতের তৎকালীন সেনাপ্রধান শ্যাম মানেকশর কাছে পৌঁছায় ১৫ ডিসেম্বর দুপুরে।
জেনারেল মানেকশ সেই বার্তার জবাবে স্পষ্ট জানিয়ে দেন যে, বাংলাদেশে অবস্থানরত পাকিস্তানি সামরিক ও আধা সামরিক বাহিনী আত্মসমর্পণ করলেই কেবল তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে এবং ভারতের পক্ষ থেকে কোনো প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না। তিনি ঢাকায় বিমান হামলা বন্ধের নির্দেশও দেন। আত্মসমর্পণের জন্য তিনি পরদিন সকাল ৯টা পর্যন্ত সময়সীমা বেঁধে দেন, যদিও পরে জে এফ আর জ্যাকবের লেখা অনুযায়ী এই সময়সীমা আরও কয়েক ঘণ্টা বাড়ানো হয়েছিল।
যুদ্ধের শেষ দিনের চিত্র
যুদ্ধের শেষ এই দিনে একদিকে আত্মসমর্পণের বার্তা চালাচালি চলছিল, অন্যদিকে ভারতীয় যুদ্ধবিমান দিনভর পাকিস্তানি বাঙ্কার, আবাসস্থল ও কমান্ড-কেন্দ্রগুলোর ওপর বোমা বর্ষণ করতে থাকে। পাকিস্তানি সেনারা আত্মরক্ষার জন্য কিছু বাঙ্কারের ছাদে হাত-পা বেঁধে স্থানীয়দের শুইয়ে রেখেছিল, যার ফলে ভারতীয় বিমান হামলা মাঝে মাঝে ব্যর্থ হয়। একই সময়ে স্থলপথে মুক্তি ও ভারতীয় সেনারা ঢাকার দিকে দ্রুত অগ্রসর হচ্ছিলেন। নিউইয়র্ক টাইমসের বর্ণনা অনুযায়ী, সেদিন মুক্তিবাহিনীর ঢাকামুখী যাত্রা ছিল বিজয়ীর মতো, পথে সাধারণ মানুষ তাদের শুভেচ্ছা জানাচ্ছিল, তবে নদীতে তখন লাশের স্তূপ ভাসছিল।
১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবসে ৫৪ জন প্যারাট্রুপার বাংলাদেশের পতাকা নিয়ে বিশ্ব রেকর্ড গড়তে যাচ্ছেন। এই ৫৪ জনের মধ্যে একজন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী। তিনি ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদির ছবি আঁকা হেলমেট পরে জাম্প করবেন। রোববার (১৪ ডিসেম্বর) প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে এই তথ্য জানানো হয়।
সেখানে বলা হয়, ‘১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবসে ৫৪ জন প্যারাট্রুপার বাংলাদেশের পতাকা নিয়ে বিশ্ব রেকর্ড গড়তে যাচ্ছেন। এই ৫৪ জনের একজন আশিক চৌধুরী জাম্প করবেন ওসমান হাদির ছবি আঁকা হেলমেট পরে। বিজয়ের দিনে স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের ভ্যানগার্ড ওসমান হাদির দ্রুত আরোগ্য কামনায় সবাইকে দোয়া ও প্রার্থনার আহ্বান জানাই।’
উল্লেখ্য, আগামী ১৬ ডিসেম্বর সকাল ১১টা থেকে ঢাকার তেজগাঁওয়ে পুরনো বিমানবন্দরে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনী পৃথকভাবে ফ্লাই পাস্ট মহড়া পরিচালনা করবে।
চলবে বিজয় দিবসের বিশেষ ব্যান্ড-শো। পরে সকাল ১১টা ৪০ মিনিট থেকে ‘টিম বাংলাদেশ’-এর ৫৪ জন প্যারাট্রুপার স্বাধীনতার ৫৪ বছর উদযাপনে পতাকা হাতে প্যারাস্যুটিং করবেন। জনসাধারণের জন্য এই বিশেষ আয়োজন উন্মুক্ত থাকবে।
এর আগে গত শুক্রবার দুপুরে ঢাকায় গুলিবিদ্ধ হন ওসমান হাদি।
তিনি জাতীয় সংসদের ঢাকা-৮ আসনে সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছিলেন। সেদিন রাত থেকে তিনি এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি আছেন।
ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী এবং ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদিকে গুলি করে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের মালিক মো. আব্দুল হান্নানকে তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
আজ রবিবার (১৪ ডিসেম্বর) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট দিদারুল আলমের আদালতে শুনানি শেষে এই আদেশ দেওয়া হয়। পল্টন থানার উপপুলিশ পরিদর্শক সামিম হাসান হান্নানকে ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে হাজির করেন এবং পরবর্তীতে সাত দিনের রিমান্ড চান।
পুলিশের রিমান্ড আবেদনে উল্লেখ করা হয় যে, আসামির কাছ থেকে ঘটনায় ব্যবহৃত আগ্নেয়াস্ত্র ও মোটর সাইকেল উদ্ধার, জড়িত অজ্ঞাত পরিচয়ের পলাতক আসামিদের নাম, ঠিকানা সংগ্রহ, অবস্থান ও গ্রেপ্তারের জন্য, মূল রহস্য উদঘাটন এবং অবৈধ অস্ত্র সংগ্রহের উৎস জানার জন্য রিমান্ড প্রয়োজন।
জানা যায়, র্যাব-২ হান্নানকে আটক করে পল্টন মডেল থানায় সোপর্দ করে। গত ১২ ডিসেম্বর দুপুর ২টা ২৪ মিনিটে পল্টন মডেল থানাধীন বক্স কালভার্ট এলাকায় শরীফ ওসমান হাদিকে লক্ষ্য করে অজ্ঞাত পরিচয় দুই সন্ত্রাসী একটি মোটরসাইকেলে এসে গুলি করে। গুলিবিদ্ধ হয়ে তিনি গুরুতর আহত হন এবং বর্তমানে এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে র্যাব-২ সন্ত্রাসীদের ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের রেজিস্ট্রেশন নম্বর (ঢাকা মেট্রো ল-৫৪-৬৩৭৫) শনাক্ত করে এবং বিআরটিএ থেকে মালিক হিসেবে মো. আব্দুল হান্নানকে চিহ্নিত করে। এই ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান বলেন, ১৯৫২, ১৯৬৯, ১৯৭১, ১৯৯০ ও ২০২৪-এর ঐতিহাসিক ঘটনাগুলো পরস্পরবিরোধী নয় বরং এগুলো বাংলাদেশের জাতীয় সত্তা ও ইতিহাস নির্মাণ করেছে। এসব ঘটনাকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে বিভাজন সৃষ্টির যে রাজনৈতিক অপচেষ্টা চলছে, সে ব্যাপারে জাতিকে সচেতন ও ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষ্যে আজ ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫ রবিবার ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র মিলনায়তনে আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদ, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. এম. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, শহিদ গিয়াস উদ্দিন আহমদের ছোট বোন অধ্যাপক সাজেদা বানু, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের আহ্বায়ক কমিটির আহ্বায়ক শামসুজ্জামান দুদু, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) ভিপি আবু সাদিক কায়েমসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অফিসার্স এসোসিয়েশন, তৃতীয় শ্রেণি কর্মচারী সমিতি ও কারিগরি কর্মচারী সমিতির নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন। রেজিস্ট্রার মুনসী শামস উদ্দিন আহম্মদ অনুষ্ঠান সঞ্চালন করেন।
এসময় বিভিন্ন অনুষদের ডিন, বিভিন্ন বিভাগের চেয়ারম্যান, ইনস্টিটিউটের পরিচালক, প্রক্টর, প্রভোস্ট, শিক্ষক, বিভিন্ন দফতরের প্রধান, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন। আলোচনা সভার শুরুতে শহিদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের লক্ষ্যে দাঁড়িয়ে ১মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান বলেন, শহিদ বুদ্ধিজীবীদের আত্মত্যাগ শুধু স্মরণীয় কোনো ইতিহাস নয় বরং আমাদের জাতীয় ঐক্য, পরিচয় ও অস্তিত্বের ভিত্তি। এই আত্মত্যাগ যতদিন আমাদের স্মৃতিতে জীবিত থাকবে, ততদিন জাতি হিসেবে আমাদের ঐক্য অটুট থাকবে।
উপাচার্য বলেন, শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস কেবল আনুষ্ঠানিক কোনো দিবস নয়; এটি আত্মত্যাগের দায় স্বীকার করার উপলক্ষ।
তিনি আরও বলেন, বর্তমান সময়ে বাংলাদেশ একটি কঠিন ও ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। এই সময়ে শহিদদের স্মৃতি আমাদের জন্য ঐক্যবদ্ধ থাকার সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা। শিক্ষক, চিকিৎসক, সাংবাদিকসহ প্রত্যেকে নিজ নিজ দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করার মধ্য দিয়েই শহিদদের প্রতি আমাদের ঋণের কিছুটা হলেও শোধ করা সম্ভব।
শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত বিভিন্ন কর্মসূচিতে সর্বস্তরের মানুষের আরও বেশি অংশগ্রহণের উপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, এসব আয়োজন শুধু স্মরণ নয় বরং ঋণ স্বীকার ও দায়িত্ব পালনের একটি সম্মিলিত অঙ্গীকার।
দিবসটি উপলক্ষ্যে উপাচার্য ভবনসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ ভবনসমূহে কালো পতাকা উত্তোলন করা হয়। উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খানের নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদ প্রাঙ্গণস্থ কবরস্থান, জগন্নাথ হল প্রাঙ্গণস্থ স্মৃতিসৌধ, বিভিন্ন আবাসিক এলাকার স্মৃতিসৌধ এবং মিরপুর ও রায়ের বাজার শহিদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। এছাড়া, বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদসহ বিভিন্ন হল মসজিদে শহিদ বুদ্ধিজীবীদের রুহের মাগফেরাত কামনা করে দোয়া করা হয় এবং বিভিন্ন উপাসনালয়ে বিশেষ প্রার্থনা করা হয়।