কিশোরগঞ্জে সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ১২৪ জনের নামে মামলা হয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানায় মামলাটি দায়ের করেন সদর উপজেলার উত্তর লতিবাবাদ গ্রামের আবু তাহের ভূইয়ার ছেলে তহমুল ইসলাম মাজহারুল।
কিশোরগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল্লাহ আল মামুন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মামলায় সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও আসামি করা হয়েছে শেখ রেহানা, সজীব ওয়াজেদ জয়, সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, রাদওয়ান সিদ্দিক ববি, তারিক আহমেদ সিদ্দিক, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, জাহাঙ্গীর কবীর নানক, হাসান মাহমুদ, মোহাম্মদ আলী আরাফাত, মুরাদ হাসান, আব্দুল কাহার আকন্দ, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী মসিউর রহমান হুমায়ুন, অজয় কর খোকন, কবির বিন আনোয়ার, নারায়ণগঞ্জের সাবেক এমপি শামীম ওসমান, শেখ ফজলে নূর তাপস, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, কিশোরগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট জিল্লুর রহমান, কিশোরগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক এমপি রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক, সৈয়দ সাফায়েতুল ইসলাম, কিশোরগঞ্জ-১ আসনের সাবেক এমপি ডা. সৈয়দা জাকিয়া নূর লিপি, কিশোরগঞ্জ-৬ আসনের সাবেক এমপি নাজমুল হাসান পাপন, কিশোরগঞ্জ-২ আসনের সাবেক এমপি এডভোকেট সোহরাব উদ্দিন, কিশোরগঞ্জ-৫ আসনের সাবেক এমপি আফজাল হোসেন, কিশোরগঞ্জ জেলা বিএমএর সেক্রেটারি ডা. আব্দুল ওয়াহাব বাদলসহ মোট ১২৪ জনের নাম রয়েছে।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, শেখ হাসিনার পতনে ছাত্র-জনতার গড়ে ওঠা আন্দোলনকে দমন করতে দেশ-বিদেশে অবস্থানরত আসামিরা সারা দেশে গণহত্যার পরিকল্পনা করে। কিশোরগঞ্জে অবস্থানরত আসামিরা আন্দোলন দমাতে আগ্নেয়াস্ত্র, দেশীয় অস্ত্র এবং অর্থ সরবরাহ করে এবং গণহত্যার নির্দেশ প্রদান করে।
গত বছরের ৪ আগস্ট দুপুর ১২টার দিকে মামলার বাদী ও তার কয়েকজন সঙ্গী ছাত্র-জনতার মিছিলে অংশ নিলে আসামিরা আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে হামলা চালিয়ে তাদেরকে আহত করে। আহতদেরকে পরে বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে নিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হয়। বাদী চিকিৎসার কাজে ব্যস্ত থাকায় মামলা করতে বিলম্ব হয়েছে বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়।
মামলার বাদী তহমুল ইসলাম জানান, তিনি বিএনপির একজন কর্মী। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আহত ব্যক্তিদের তালিকায় তার নাম রয়েছে। আহত অবস্থায় দীর্ঘদিন চিকিৎসা নেওয়ার পর তিনি এখন কিছুটা সুস্থ হওয়ায় মামলা করেছেন।
শরীফ ওসমান হাদি হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবিতে চলমান আন্দোলনে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো সাড়া না পাওয়ায় এবার আরও কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দিয়েছে ইনকিলাব মঞ্চ। আজ শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) বিকেলে রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে সংগঠনটির সদস্য সচিব আবদুল্লাহ আল জাবের জানিয়েছেন, দাবি আদায় না হলে যেকোনো মুহূর্তে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন ‘যমুনা’ এবং ‘জাতীয় সংসদ ভবন’ ঘেরাও করা হবে। হাদির খুনিদের গ্রেপ্তার এবং এই হত্যাকাণ্ডের নেপথ্য পরিকল্পনাকারীদের দ্রুত চিহ্নিত করার দাবিতে ইনকিলাব মঞ্চের নেতাকর্মীরা দ্বিতীয় দিনের মতো শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে অবস্থান নিয়ে এই প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করছেন।
বিক্ষোভ সমাবেশে আবদুল্লাহ আল জাবের অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের উদ্দেশ্যে চরম হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, যারা ভাবছেন ক্ষমতায় মাত্র এক মাস আছেন এবং এরপর বিদেশে পাড়ি জমাবেন, তাঁদের কাউকেই ‘সেফ এক্সিট’ বা নিরাপদ প্রস্থানের সুযোগ দেওয়া হবে না। তিনি দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে বলেন, রক্তের সঙ্গে বেইমানি করে কেউ বিদেশে পালাতে পারবেন না; বরং এই বাংলার মাটিতেই জনতা তাঁদের বিচার করবে। সরকারের নীরবতায় ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি জানান, গত দুদিন ধরে রাজপথে অবস্থান করলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ বা আশ্বাস মেলেনি। ফলে আন্দোলনকে আরও বেগবান করতে সংসদ ভবন ও যমুনার মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ঘেরাওয়ের পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে।
ন্যায়বিচার নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত রাজপথ ছাড়বেন না বলে ঘোষণা দিয়েছে সংগঠনটি। উল্লেখ্য, গত ১২ ডিসেম্বর দুর্বৃত্তদের গুলিতে আহত হওয়ার পর গত ১৮ ডিসেম্বর সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদি। এই হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে তীব্র উত্তেজনা বিরাজ করছে। শাহবাগ এলাকায় আন্দোলনকারীদের অবস্থানের কারণে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেখানে বিপুল সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েন রাখা হয়েছে। তবে ইনকিলাব মঞ্চ স্পষ্ট জানিয়েছে, খুনিদের আড়াল করার কোনো চেষ্টা সফল হতে দেওয়া হবে না এবং রাজপথের এই লড়াই তারা শেষ পর্যন্ত চালিয়ে যাবে।
বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যদের দীর্ঘদিনের নিষ্ঠা ও আত্মত্যাগের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এবং তাঁদের ও তাঁদের পরিবারবর্গের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে বিশেষ ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পেইন শুরু হয়েছে। বাহিনীর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবদুল মোতালেব সাজ্জাদ মাহমুদের নির্দেশনায় আজ শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) বগুড়া জেলার গাবতলী সরকারি কলেজ প্রাঙ্গণে এই মহতী কর্মসূচির প্রথম পর্যায়ের উদ্বোধন করা হয়। বগুড়া জেলা কমান্ড্যান্ট মোঃ সাদ্দাম হোসেন এই ক্যাম্পেইনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করেন। এই বিশেষ স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রমের আওতায় আগামী ১৩ জানুয়ারি ২০২৬ পর্যন্ত বগুড়া ছাড়াও পর্যায়ক্রমে জামালপুর, ভোলা ও লালমনিরহাট জেলায় তিন দিনব্যাপী এই মানবিক কর্মসূচি পরিচালিত হবে।
এই মহতী উদ্যোগের আওতায় আনসার ও ভিডিপি সদস্য এবং তাঁদের পরিবারের জন্য আধুনিক চিকিৎসার এক বিশাল সুযোগ তৈরি করা হয়েছে। বিশেষ করে চক্ষু ও দন্ত চিকিৎসার ওপর এই ক্যাম্পেইনে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। চক্ষু বিশেষজ্ঞরা উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে চোখের যাবতীয় পরীক্ষা সম্পন্ন করছেন এবং যাঁদের প্রয়োজন তাঁদের জন্য সম্পূর্ণ বিনামূল্যে ছানি অপারেশনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। পাশাপাশি অভিজ্ঞ দন্ত চিকিৎসকরা প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ও পরামর্শ প্রদান করছেন। এছাড়াও সাধারণ রোগে আক্রান্তদের জন্য স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও পরামর্শের পাশাপাশি প্রয়োজনীয় ওষুধ বিনামূল্যে বিতরণ করা হচ্ছে। বাহিনীর এই দায়িত্বশীল ও মানবিক উদ্যোগ সরাসরি তৃণমূল পর্যায়ের সদস্যদের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে বড় ভূমিকা রাখছে।
আনসার–ভিডিপি সদর দপ্তর থেকে জানানো হয়েছে যে, দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা এবং জাতীয় উন্নয়নে বাহিনীর সদস্যরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। তাঁদের এবং তাঁদের পরিবারের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করা বাহিনীর জন্য কেবল একটি কল্যাণমূলক কাজই নয়, বরং এটি একটি নৈতিক ও সামাজিক দায়বদ্ধতা। এ ধরনের কার্যক্রমের ফলে বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে পারস্পরিক আস্থা বৃদ্ধি পাওয়ার পাশাপাশি তাঁদের মনোবল ও কাজের উদ্যম আরও বাড়বে বলে কর্তৃপক্ষ আশাবাদী। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের পাশাপাশি বাহিনীর বিভিন্ন পদমর্যাদার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সরাসরি উন্নত স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ করতে পেরে আনসার ও ভিডিপির সদস্য এবং তাঁদের স্বজনরা বাহিনীর এই সময়োপযোগী পদক্ষেপের প্রতি বিশেষ কৃতজ্ঞতা ও সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। মূলত বাহিনীর অভ্যন্তরীণ সংহতি এবং ইতিবাচক ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করাই এই মেডিকেল ক্যাম্পেইনের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন স্পষ্ট করে জানিয়েছেন যে, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ এবং এটি কোনো বিশেষ রাজনৈতিক দলের পক্ষে কাজ করছে না। আজ শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) দুপুরে ভোলার সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে আয়োজিত ‘ভোটের গাড়ি’ বা ক্যারাভান কর্মসূচির উদ্বোধনকালে তিনি এই গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করেন। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সাধারণ ভোটারদের সচেতন ও উদ্বুদ্ধ করার লক্ষ্যেই এই বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে তৌহিদ হোসেন বলেন, আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি দেশে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে এবং সরকার আশা করছে এই নির্বাচন অত্যন্ত উৎসবমুখর ও আনন্দঘন পরিবেশের মধ্য দিয়ে সম্পন্ন হবে। তিনি নির্বাচনের গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, বিগত ১৫ বছর ধরে দেশে সত্যিকার অর্থে কোনো অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি। ২০০৮ সালের পর এই প্রথম দেশবাসী একটি প্রকৃত নির্বাচনের স্বাদ পেতে যাচ্ছে। বিশেষ করে ৩০ বছরের কম বয়সী তরুণরা, যারা আজ পর্যন্ত কোনো জাতীয় নির্বাচনে ভোট দেওয়ার সুযোগ পাননি, তাঁদের জন্য এবারের নির্বাচন অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা আরও উল্লেখ করেন যে, প্রতিটি নাগরিক যাতে নির্ভয়ে ও নির্বিঘ্নে তাঁদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন, তা নিশ্চিত করাই বর্তমান সরকারের প্রধান লক্ষ্য। দীর্ঘ এক যুগেরও বেশি সময় ধরে চলা রাজনৈতিক অচলাবস্থা কাটিয়ে একটি সুন্দর গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে প্রশাসন নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ভোলার জেলা প্রশাসক ডা. শামীম রহমান এবং পুলিশ সুপার মো. শহিদুল্লাহ কাওছারসহ স্থানীয় প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। ‘ভোটের গাড়ি’ ক্যারাভানটি ভোলার বিভিন্ন উপজেলা প্রদক্ষিণ করে ভোটারদের সচেতন করার কাজ চালিয়ে যাবে বলে আয়োজক সূত্রে জানা গেছে।
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদি হত্যার বিচারের দাবিতে রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে পুনরায় অবস্থান নিয়েছেন সংগঠনটির নেতাকর্মীরা। আজ শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তারা ফের প্রধান সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। এর আগে সকালে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কবর জিয়ারত কর্মসূচি ও নিরাপত্তার স্বার্থে আন্দোলনকারীরা সাময়িকভাবে শাহবাগ মোড় ছেড়ে দিয়ে পার্শ্ববর্তী আজিজ সুপার মার্কেটের সামনে অবস্থান নিয়েছিলেন। তবে তারেক রহমানের গাড়িবহর এলাকা ত্যাগ করার পরপরই নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে পুনরায় শাহবাগে জড়ো হন এবং যান চলাচল বন্ধ করে দেন।
ইনকিলাব মঞ্চের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, হাদি হত্যার বিচার নিশ্চিতের দাবিতে তারা ‘অনির্দিষ্টকালের’ জন্য এই কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন। গত শুক্রবার জুমার নামাজের পর থেকেই তারা রাজপথে অবস্থান করছেন এবং কনকনে শীত উপেক্ষা করে গতরাতও তারা শাহবাগ মোড়েই কাটিয়েছেন। আন্দোলনের মুখে শাহবাগ ও এর আশপাশের এলাকায় বিপুল সংখ্যক পুলিশ ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে প্রশাসন সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।
সংগঠনটির সদস্য সচিব আবদুল্লাহ আল জাবের সংবাদমাধ্যমকে জানান, শরীফ ওসমান হাদি হত্যাকাণ্ডের নেপথ্য হোতাদের গ্রেপ্তার এবং দৃষ্টান্তমূলক বিচার না হওয়া পর্যন্ত তাদের এই লড়াই চলবে। বিচার নিশ্চিত না করে তারা কোনোভাবেই রাজপথ ছাড়বেন না এবং ঘরে ফিরবেন না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। উল্লেখ্য, গত ১২ ডিসেম্বর রাজধানীর পল্টনে সন্ত্রাসীদের গুলিতে গুরুতর আহত হয়েছিলেন হাদি। পরবর্তীতে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে সিঙ্গাপুরে পাঠানো হলেও গত বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) সেখানে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে দেশজুড়ে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে এবং ইনকিলাব মঞ্চ ধারাবাহিকভাবে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে শাহবাগ এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে এবং বিকল্প পথে যানবাহন চলাচলের চেষ্টা করছে ট্রাফিক পুলিশ।
জাতির বীর সন্তানদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে যান বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) রাত ১০টা ৪ মিনিটে তিনি জাতীয় স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণে প্রবেশ করেন।
এর আগে নিয়ম অনুযায়ী বিকেলে তারেক রহমানের পক্ষে ফুলেল শ্রদ্ধা নিবেদন করেন বিএনপির নেতারা। তারেক রহমানের আগমনকে কেন্দ্র করে সাভার-আশুলিয়াসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বিএনপির নেতাকর্মীরা জাতীয় স্মৃতিসৌধ এলাকায় জড়ো হন। সারাদিন তারা সেখানে উপস্থিত থেকে তারেক রহমানের জন্য অপেক্ষা করেন।
যেকোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা এড়াতে এবং তারেক রহমানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে স্মৃতিসৌধ এলাকায় পুলিশ, বিজিবি, আনসারসহ সাদা পোশাকের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্য মোতায়েন করা হয়।
জাতীয় স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণে আগে থেকেই উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-পরিবার কল্যাণবিষয়ক সম্পাদক ডা. দেওয়ান মোহাম্মদ সালাউদ্দিন বাবুসহ স্থায়ী কমিটির অন্যান্য সদস্য এবং দলের কেন্দ্রীয় নেতারা।
গত বৃহস্পতিবার দীর্ঘ ১৭ বছরের নির্বাসিত জীবন শেষে দেশে ফেরেন তারেক রহমান। ফেরার দিন রাজধানীর পূর্বাচলের ৩০০ ফিট এলাকায় বিএনপির পক্ষ থেকে আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অংশ নেন তিনি। পরে অসুস্থ মা ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে দেখতে এভারকেয়ার হাসপাতালে যান এবং সেখান থেকে গুলশানের বাসভবনে ফেরেন।
শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) বিকেল ৪টা ৪০ মিনিটের দিকে তারেক রহমান তার বাবা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এরপর তিনি সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধের উদ্দেশে রওনা হন।
দীর্ঘ ১৭ বছরের নির্বাসিত জীবন শেষে স্বদেশে ফেরার পরদিন নিজের পিতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। আজ শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) বিকেল ৪টা ৪০ মিনিটের দিকে তিনি রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে অবস্থিত সমাধি প্রাঙ্গণে পৌঁছালে সেখানে এক অভূতপূর্ব আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়।
এর আগে ২০০৬ সালের ১লা সেপ্টেম্বরের পর অর্থাৎ দীর্ঘ ১৯ বছরেরও বেশি সময় পর বাবার কবরের পাশে দাঁড়িয়ে শ্রদ্ধা জানালেন তার জ্যেষ্ঠ পুত্র তারেক রহমান। আনুষ্ঠানিক দোয়া ও মোনাজাত শেষ হওয়ার পর তিনি পাশে থাকা নেতাকর্মীদের কিছুটা সরে যাওয়ার অনুরোধ করেন এবং কিছুক্ষণ একান্তে বাবার কবরের পাশে দাঁড়িয়ে থাকেন।
মাতৃভূমিতে ফিরে বাবার সমাধির সামনে দাঁড়ানোর এই বিশেষ মুহূর্তে নিজেকে ধরে রাখতে পারেননি তারেক রহমান। দীর্ঘক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকার সময় তাকে অঝোরে কাঁদতে এবং বারবার অশ্রুসিক্ত চোখ মুছতে দেখা যায়। তার এই ব্যক্তিগত শোক ও আবেগ দেখে উপস্থিত হাজারো নেতাকর্মী এবং সাধারণ মানুষও আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। বছরের পর বছর দেশের বাইরে থাকার পর প্রিয় জন্মভূমিতে ফিরে পিতার স্মৃতির প্রতি এমন শ্রদ্ধা নিবেদন উপস্থিত সবার মাঝে এক শোকাতুর পরিবেশের সৃষ্টি করে।
এর আগে দুপুর ২টা ৫০ মিনিটে গুলশানের বাসভবন থেকে একটি বিশেষ বাসে চড়ে তিনি সমাধিস্থলের উদ্দেশ্যে রওনা হন। বিজয় সরণি মোড়ে নেতাকর্মীদের বিশাল ভিড়ে তার গাড়ি বহরটি সাময়িকভাবে আটকে পড়লে সেনাবাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনে বহরটি এগিয়ে দেন। জিয়ারত শেষে বিকেল ৫টা ৪ মিনিটে তিনি পুনরায় বাসে চড়ে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধের উদ্দেশ্যে রওনা হন, যেখানে তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের প্রতি জাতীয় শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। উল্লেখ্য, গত ২৫ ডিসেম্বর দেশে ফেরার পর থেকেই তাকে ঘিরে রাজধানী ঢাকা এক অভূতপূর্ব জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছে।
সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে স্বাগত জানাতে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি গণপূর্ত অধিদফতরের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে বিভিন্ন উদ্যোগ।
ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের সাভারের আমিনবাজার থেকে নবীনগরের স্মৃতিসৌধ এলাকা পর্যন্ত বিভিন্ন ব্যানার ও পোস্টারে ছেয়ে গেছে পুরো এলাকা।
তারেক রহমানের আগমন উপলক্ষ্যে জাতীয় স্মৃতিসৌধ এলাকাকে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলা হয়েছে। কয়েক স্তরের নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলার পাশাপাশি স্মৃতিসৌধের মূল ফটক বন্ধ করে জনসাধারণের প্রবেশে সাময়িক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক আলোকুর রহমান বলেন, তারেক রহমানকে স্বাগত জানাতে ছাত্রদল প্রস্তুত। আমরা এখন নেতার আগমনের অপেক্ষায় রয়েছি।
সাভার পৌর বিএনপির সভাপতি খন্দকার শাহ মাইনুল হোসেন বিল্টু জানান, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে স্বাগত জানাতে নেতা-কর্মীরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন। স্থানীয় নেতৃবৃন্দ ব্যাপক জনসমাগমের প্রস্তুতি নিয়েছেন।
জাতীয় স্মৃতিসৌধের ইনচার্জ আনোয়ার হোসেন আনু বলেন, তারেক রহমানকে স্বাগত জানাতে সকাল থেকেই পুরো স্মৃতিসৌধ এলাকা ঝেড়ে-মুছে পরিষ্কার করা হচ্ছে।
ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান জানান, তারেক রহমানের আগমন উপলক্ষ্যে ঢাকা জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহস্রাধিক সদস্যের সমন্বয়ে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হয়েছে। পুরো এলাকা নিরাপত্তার আওতায় রাখা হয়েছে।
এদিকে সকাল থেকেই শীত উপেক্ষা করে সাভার, আশুলিয়া ও ঢাকার ধামরাই থেকে বিএনপির নেতা-কর্মীদের স্মৃতিসৌধ এলাকায় জড়ো হতে দেখা গেছে। ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা কাজ করছেন।
দীর্ঘ ১৭ বছরের প্রবাস জীবন শেষে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশে ফিরে রাজধানীর গুলশান-২ এর গুলশান নর্থ অ্যাভিনিউর ১৯৬ নম্বর বাড়িতে যান। ফলে বাড়িটির আশেপাশের সড়কসহ পুরো এলাকা নিরাপত্তা চাদরে ঢাকা। চারপাশে বাড়তি নিরাপত্তা, সিসিটিভি ক্যামেরা ও অস্থায়ী ছাউনি জানান দিচ্ছে বাড়িটির গুরুত্ব।
বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) গুলশান নর্থ অ্যাভিনিউ এলাকা ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, গত বুধবার রাত থেকেই বাড়িটির সামনের সড়কে সাধারণ মানুষের চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হয়। এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল জোরদার করা হয়েছে এবং একাধিক চেকপোস্ট বসানো হয়। নিরাপত্তায় রয়েছে পুলিশ, বিজিবি, সিএসএফ (চেয়ারপারসন সিকিউরিটিসহ) এবং বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা। পুরো এলাকা কর্ডন করে রাখা হয়েছে। নির্দিষ্ট পরিচয় ছাড়া কাউকে ঢুকতে দেওয়া হয় না বলে জানা গেছে।
জানা গেছে, সরকারি নিরাপত্তার পাশাপাশি বিএনপির নিজস্ব ব্যবস্থাপনাতেও আলাদা নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হয়েছে। শুধু বাসভবন নয়, গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়েও তারেক রহমানের জন্য আলাদা কক্ষ প্রস্তুত করা হয়েছে। এ ছাড়া গুলশানের ৯০ নম্বর সড়কের ১০/সি নম্বর বাড়িতে নতুন চারতলা রাজনৈতিক কার্যালয়ে কার্যক্রম শুরু করেছে বিএনপি।
এখান থেকেই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালিত হবে।
নতুন কার্যালয়ের দোতলায় রয়েছে আধুনিক ব্রিফিং কক্ষ। অন্যান্য তলায় গড়ে তোলা হয়েছে গবেষণা সেল ও বিভাগভিত্তিক দপ্তর, যেখানে নির্বাচন, নীতি ও রাষ্ট্রীয় সংস্কার বিষয়ে প্রস্তুতি চলছে। একইসঙ্গে আশেপাশের গলিতে টাঙানো হয়েছে তারেক রহমানের ছবি সংবলিত ব্যানার ও ফেস্টুন।
দীর্ঘ ১৭ বছরের নির্বাসিত জীবন কাটানোর পর বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) দেশের মাটিতে পা রাখেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। দেশে এসে বিমানবন্দর থেকে তিনশ ফুট এলাকায় সংবর্ধনা মঞ্চে বক্তব্য দেন তিনি।
এরপর তিনি এভারকেয়ার হাসপাতালে গিয়ে তার মা ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে দেখতে যান। সেখান থেকে গুলশানের ১৯৬ নম্বর বাড়িতে যান। গুলশানের এই বাড়িটি জিয়া পরিবারের রাজনৈতিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান শহীদ হওয়ার পর তৎকালীন সরকার বাড়িটি খালেদা জিয়াকে বরাদ্দ দেয়। বছরের পর বছর ধরে এখানে অনুষ্ঠিত হয় গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক বৈঠক ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ।
কয়েক মাস আগে আনুষ্ঠানিকভাবে বাড়িটির মালিকানা দলিল বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নামে হস্তান্তর করা হয়। পাশেই রয়েছে ‘ফিরোজা’, খালেদা জিয়ার দীর্ঘদিনের বাসভবন। বর্তমানে তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকলেও পাশের বাড়িটি প্রস্তুত হয় আরেক ঐতিহাসিক প্রত্যাবর্তনের জন্য।
এদিকে তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তন ঘিরে বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উচ্ছ্বাস দেখা যায়। দলীয় নেতাদের মতে, এটি শুধু একজন রাজনৈতিক নেতার দেশে ফেরা নয়, বরং বাংলাদেশে বিএনপির আরেক রাজনৈতিক অধ্যায়ের শুরু।
মা’ বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে দেখতে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে গিয়েছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা ৫টা ৫৭ মিনিটের দিকে তিনি হাসপাতাল প্রাঙ্গণে পৌঁছান এবং ভেতরে প্রবেশ করেন।
এর আগে, এদিন বিকেল ৩টা ৫০ মিনিটের দিকে রাজধানীর পূর্বাচলে আয়োজিত এক গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত হন তারেক রহমান। সেখানে উপস্থিত নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি সংক্ষিপ্ত বক্তব্য প্রদান করেন। বক্তব্যে তিনি দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করেন।
তারেক রহমান বলেন, "যেকোনো মূল্যে দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা করতে হবে। আমরা শান্তি চাই। সবাইকে মিলে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে এবং কারও উস্কানিতে পা দেওয়া যাবে না।"
দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে নিজের পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, "আমি আপনাদের সামনে বলতে চাই, আমার একটি পরিকল্পনা (আই হ্যাভ এ প্ল্যান)। আমি সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে চাই।"
পূর্বাচলের সমাবেশ শেষ করেই তিনি সরাসরি এভারকেয়ার হাসপাতালের উদ্দেশে রওনা হন এবং সেখানে চিকিৎসাধীন মা বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নেন।
খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব ‘বড়দিন’ উপলক্ষে দেশের বিশিষ্ট নাগরিক এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। আজ বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) বঙ্গভবনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এই শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। বঙ্গভবনের প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এই তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, হাইকমিশনার এবং আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। এ সময় তিনি বাংলাদেশের খ্রিস্টান সম্প্রদায়সহ বিশ্বের সকল মানুষকে বড়দিনের আন্তরিক শুভেচ্ছা ও উষ্ণ অভিনন্দন জানান। যিশু খ্রিস্টের মহিমান্বিত জীবনের আদর্শ তুলে ধরে তিনি সমাজের সকল স্তরে শান্তি ও মানবতা প্রতিষ্ঠার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
শুভেচ্ছা বিনিময়কালে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, বাংলাদেশ ঐতিহ্যগতভাবেই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। তিনি জাতি, ধর্ম ও বর্ণ নির্বিশেষে এ দেশের দীর্ঘদিনের চমৎকার সম্প্রীতি চিরকাল অটুট এবং অক্ষুণ্ন রাখার জন্য সকলের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান। তিনি বিশ্বাস করেন, সকল ধর্মের মানুষের এই সম্মিলিত উৎসব ও ভ্রাতৃত্ববোধ বাংলাদেশকে একটি সুখী ও সমৃদ্ধ রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলতে বিশেষ ভূমিকা রাখবে।
অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতির পরিবারের সদস্যবৃন্দ এবং বঙ্গভবনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। উৎসবমুখর পরিবেশে আয়োজিত এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে আসা অতিথিরাও বাংলাদেশের উন্নয়ন ও ধর্মীয় সম্প্রীতির প্রশংসা করেন। মূলত বড়দিনের আনন্দ সবার মাঝে ভাগ করে নিতেই প্রতি বছরের মতো এবারও এই বিশেষ রাজকীয় অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
রাজধানীর গুলশানের এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে প্রায় আড়াই কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া এবং জুলাই আন্দোলনের নাম ভাঙিয়ে ‘মামলা বাণিজ্য’ ও ব্ল্যাকমেইলিংয়ের অভিযোগে আলোচিত তাহরিমা জান্নাত সুরভীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) দিবাগত গভীর রাতে গাজীপুরের টঙ্গীর টেকপাড়া এলাকার নিজ বাসভবন থেকে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। সুরভী গাজীপুরের ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘জুলাইযোদ্ধা’ হিসেবে ভাইরাল পরিচিতি পেয়েছিলেন।
টঙ্গী পূর্ব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মেহেদী হাসান জানিয়েছেন, একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের নেতৃত্বে ছিলেন এই সুরভী। সম্প্রতি গুলশানের এক ব্যবসায়ী অভিযোগ করেন যে, জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের সময় গুলশান ও বাড্ডা এলাকায় সংঘটিত বিভিন্ন হত্যা মামলায় তাঁর নাম জড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে সুরভী ও তাঁর সহযোগীরা ধাপে ধাপে প্রায় আড়াই কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। মামলার আসামি বানানো, পুলিশি হয়রানি ও গ্রেফতারের ভয় দেখিয়ে এবং পরবর্তীতে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ‘মীমাংসা’ করে দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে এই বিপুল পরিমাণ অর্থ দাবি করা হয়েছিল।
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ আরও জানতে পেরেছে যে, এই চক্রটি কেবল ওই ব্যবসায়ীই নয়, বরং বিভিন্ন প্রভাবশালী ও বিত্তবান ব্যক্তিদের টার্গেট করে ব্ল্যাকমেইলিং ও চাঁদাবাজির মাধ্যমে মোট প্রায় ৫০ কোটি টাকা আদায় করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। সুরভী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিজের ভাইরাল পরিচিতি ব্যবহার করে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সাথে সখ্য গড়ে তুলতেন এবং পরবর্তীতে সেটিকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে ভয়ভীতি প্রদর্শন করতেন। জুলাই আন্দোলনের শহীদদের আবেগ ও স্মৃতিকে পুঁজি করে এমন নজিরবিহীন অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। পুলিশ বর্তমানে এই চক্রের সাথে জড়িত অন্যান্য সদস্যদের শনাক্ত ও গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রেখেছে। মূলত আন্দোলনের চেতনাকে কলঙ্কিত করে ব্যক্তিস্বার্থ উদ্ধারের অপরাধেই তাঁর বিরুদ্ধে এই আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ও সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) খোদা বকস চৌধুরী পদত্যাগ করেছেন। বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) রাতে তাঁর পদত্যাগপত্র রাষ্ট্রপতি গ্রহণ করেছেন বলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়েছে।
গত বছরের নভেম্বরে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস প্রশাসনকে আরও কার্যকর করতে স্বরাষ্ট্র, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টাদের সহযোগিতার জন্য প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদায় তিনজনকে বিশেষ সহকারী নিয়োগ দিয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে খোদা বকস চৌধুরীকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্বাহী ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল। নিয়োগপ্রাপ্ত তিন বিশেষ সহকারীর মধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত অধ্যাপক এম আমিনুল ইসলাম আগেই পদত্যাগ করেছেন। এখন পদত্যাগ করলেন খোদা বকস চৌধুরী।
সম্প্রতি ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান বিন হাদি হত্যাকাণ্ডের পর দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে জনমনে ব্যাপক অসন্তোষ তৈরি হয়। বিশেষ করে হাদি হত্যার বিচার ও নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবিতে রাজনৈতিক বিভিন্ন মহল ও সাধারণ মানুষের পক্ষ থেকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী এবং বিশেষ সহকারী খোদা বকস চৌধুরীর পদত্যাগের দাবি জোরালো হয়ে ওঠে। মূলত দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে চলমান অস্থিরতা ও জনচাপের মুখেই তাঁর এই পদত্যাগ বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে তাঁর পদত্যাগের সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়নি।
বর্তমানে ওই সময় নিয়োগ পাওয়া তিন বিশেষ সহকারীর মধ্যে কেবল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা অধ্যাপক সায়েদুর রহমান স্বপদে বহাল রয়েছেন। খোদা বকস চৌধুরীর এই প্রস্থানকে বর্তমান প্রশাসনিক কাঠামোয় এক বড় পরিবর্তন হিসেবে দেখা হচ্ছে।
চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ২৪ হাজার কোটি টাকা বাড়িয়েছে সরকার। একই সঙ্গে বাজেটে মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা ৭ শতাংশ এবং জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে।
বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) উপদেষ্টা পরিষদের সাপ্তাহিক বৈঠকে সংশোধিত বাজেট অনুমোদন দেওয়া হয়। রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। আগামী ১ ফেব্রুয়ারি থেকে চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট বাস্তবায়ন শুরু হবে।
বৈঠক শেষে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
ব্রিফিংয়ে রাজস্ব আদায়ের চিত্র তুলে ধরে শফিকুল আলম বলেন, চলতি অর্থবছরে রাজস্ব আহরণের গতি বেড়েছে। জুলাই-অক্টোবর সময়ে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের প্রবৃদ্ধি ছিল ২৪ দশমিক ১ শতাংশ।
চলতি অর্থবছরের একই সময়ে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৬ দশমিক ৪ শতাংশে।
এই প্রেক্ষাপটে চলতি অর্থবছরের মোট রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ৫ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকা থেকে ২৪ হাজার কোটি টাকা বাড়িয়ে সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ লাখ ৮৮ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) থেকে আহরিত হবে ৫ লাখ ৩ হাজার কোটি টাকা, কর-বহির্ভূত রাজস্ব থেকে আসবে ৬৫ হাজার কোটি টাকা এবং এনবিআর-বহির্ভূত অন্যান্য উৎস থেকে সংগ্রহ করা হবে ২০ হাজার কোটি টাকা।
প্রেস সচিব বলেন, গত বছরের শেষের দিকে খাদ্য মূল্যস্ফীতি প্রায় ১৪ শতাংশে পৌঁছেছিল। বর্তমানে তা কমে ৭ শতাংশের কাছাকাছি এসেছে। শীতকালে সবজির উৎপাদন ও সরবরাহ বাড়ায় মূল্যস্ফীতি আরও কমবে বলে সরকার আশা করছে। চলতি অর্থবছর শেষে সামগ্রিক মূল্যস্ফীতি ৭ শতাংশে নামবে এবং জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৫ শতাংশ অর্জিত হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
সংশোধিত বাজেটে মোট সরকারি ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ৭ লাখ ৮৮ হাজার কোটি টাকা। মূল বাজেটে ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা, যা সংশোধিত বাজেটে ২ হাজার কোটি টাকা কমানো হয়েছে।
বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকার সংশোধিত বাজেটে ধরা হয়েছে ২ লাখ কোটি টাকা, যা জিডিপির ৩ দশমিক ৩ শতাংশ। মূল বাজেটে এডিপির আকার ছিল ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা, যা জিডিপির ৩ দশমিক ৭ শতাংশ ছিল। ফলে উন্নয়ন ব্যয় মূল বাজেটের তুলনায় ৩০ হাজার কোটি টাকা কমানো হয়েছে।
সংশোধিত এডিপিতে বৈদেশিক অর্থায়ন ধরা হয়েছে ৭২ হাজার কোটি টাকা এবং দেশীয় অর্থায়ন হবে ১ লাখ ২৮ হাজার কোটি টাকা। পরিচালনসহ বাজেটের অন্যান্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৮৮ হাজার কোটি টাকা।
সংশোধিত বাজেটে মোট ঘাটতির পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়েছে ২ লাখ কোটি টাকা, যা জিডিপির ৩ দশমিক ৩ শতাংশ। এই ঘাটতির মধ্যে বৈদেশিক উৎস থেকে সংগ্রহ করা হবে ৬৩ হাজার কোটি টাকা এবং অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে নেওয়া হবে ১ লাখ ৩৭ হাজার কোটি টাকা।
সূত্র: বাসস