ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানটি শুরুতে ছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা কোটা সংষ্কার আন্দোলন। সরকারি চাকরিতে ৫৬ শতাংশ সংরক্ষিত কোটা সংস্কার করে কমানোর দাবিতে গত বছরের ১ জুলাই রাজধানীর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকা ও পরে শাহবাগে এ কর্মসূচির শুরু। ওই মাসের প্রথম ১৪ দিন ওই এলাকাতেই ছিল আন্দোলন। এতে সড়ক অবরোধের কারণে শহরজুড়ে তীব্র যানজট দেখা দিলেও কোন হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। তবে ১৫ জুলাই চীন থেকে ফিরে এসেই সংবাদ সম্মেলন করার সময় এক প্রশ্নের জবাবে এই ইস্যু নিয়ে মুখ খোলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ‘কোটা মুক্তিযোদ্ধার নাতিপুতি পাবে নাকি রাজাকারের নাতিপুতিরা পাবে’বলে বিস্ফোরক মন্তব্য করায় তাতে ভীষণ ক্ষুব্ধ হয় আন্দোলনকারী সাধারণ ছাত্ররা। সে রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে ও পরে টিএসসিতে ‘চেয়েছিলাম অধিকার হয়ে গেলাম রাজাকার’জাতীয় স্লোগানে তাদের প্রতিবাদ অব্যাহত থাকলে তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী ক্ষুব্ধ হন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এ ঘটনায় ছাত্রলীগকে লেলিয়ে দিলে পরদিন থেকেই ক্যাম্পাসে ও শাহবাগে পুলিশের উপস্থিতিতে সাধারণ ছাত্রদের ওপর নির্মম হামলা চালায় ছাত্রলীগ ও যুবলীগের ক্যাডাররা। সেইদিন আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে রাজধানীসহ সারাদেশে। ১৬ জুলাই রংপুরে পুলিশের গুলিতে নিহত হন আবু সাঈদ। ঢাকাতেও নিহত হন দুজন। ১৭ জুলাই ছিল আশুরা। সেদিন টিএসসিতে আবু সাইদের প্রতীকী জানাজা পড়তে চাইলে ছাত্রলীগের ক্যাডাররা পুলিশের সহযোগিতায় আন্দোলনরত ছাত্রদের বেধড়ক পেটায়। সাধারণ ছাত্রদের বিরুদ্ধে পুলিশ ও ছাত্রলীগের উন্মুক্ত হওয়া অস্ত্র আর বন্ধ হয়নি। ১৮ জুলাই শতাধিক ছাত্র-পথচারী সাধারণ মানুষ হত্যার ঘটনা ঘটে।
তবে এ আন্দোলনে সবচেয়ে বেশি হত্যার ঘটনা ঘটে ১৯ জুলাই। সেদিন রাজধানীসহ সারাদেশে ১৪৮ জন মানুষ হত্যার শিকার হন। হত্যাকারীরা এতটাই নির্মম ছিল যে তাদের ছোড়া গুলিতে ৫৪ জন মাথায় বা গলায় গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন। এদের অধিকাংশেরই বয়স ৪০ বছরের মধ্যে। হতাহতের মাত্রা এত বেশি ছিল যে ঢাকায় একটি হাসপাতালে আক্ষরিক অর্থে গজ এবং ব্যান্ডেজ ফুরিয়ে যায়। ঢাকা একটি যুদ্ধক্ষেত্রের মতো হয়ে ওঠে। ‘ব্লাডশেড ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
বুধবার বাংলা একাডেমির আব্দুল করিম সাহিত্য বিশারদ মিলনায়তনে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে ইন্টারন্যাশনাল ট্রুথ অ্যান্ড জাস্টিস প্রজেক্ট (আইটিজেপি) এবং টেক গ্লোবাল ইনস্টিটিউট (টিজিআই)। তারা হাসিনা সরকার পতনের কয়েকদিন পর থেকে প্রমাণ সংগ্রহ করতে মাঠে নামে এবং পরিবারগুলো ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষাৎকার নেয়।
প্রতিবেদনের পাশাপাশি আইটিজেপি, টেক গ্লোবাল ইনস্টিটিউট এবং আউটসাইডার মুভি কোম্পানি দুটি প্রামাণ্যচিত্র প্রকাশ করে। এতে সামাজিক মাধ্যমে প্রাপ্ত পুলিশি অত্যাচারের ভিডিও প্রমাণগুলো একত্রিত করে কী ঘটেছিল তা পুনর্নির্মাণ করা হয়েছে। একটিতে দেখা যায়, যাত্রাবাড়ীতে পুলিশ বিপুল সংখ্যক তরুণ আন্দোলনকারীদের ঠান্ডা মাথায় হত্যা করছে। অন্যটিতে মোহাম্মাদ হৃদয় নামে এক তরুণকে ৫ আগস্ট গাজীপুরে পুলিশ ধরে এনে পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জে গুলি করে হত্যা করে।
অনুষ্ঠানে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম, শহীদ হৃদয়ের বোন জেসমিন ও শহীদ মুনতাসীর রহমান আলিফের বাবা গাজীউর রহমান, আলোকচিত্রী শহিদুল আলম, সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যান, আইটিজেপির নির্বাহী পরিচালক ইয়াসমিন সুকা, টেক গ্লোবাল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক সাবহানাজ রশিদ দিয়া বক্তব্য রাখেন।
৬০ পৃষ্ঠার এই প্রতিবেদনে উঠে আসে, নিহতদের পরিবারগুলোর একটি যন্ত্রণাদায়ক পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। যেখানে তারা ‘পা রক্তে ভিজিয়ে’ পুলিশের গুলিতে আহত সন্তানদের খুঁজতে হাসপাতালের মর্গে ঘুরে বেড়িয়েছেন। আহত কিংবা শহীদ পরিবারগুলোর কাছে অপরিচিত লোকজন ফোন করে গুলিবিদ্ধ সন্তান কিংবা ভাইবোনের খবর দিতেন। এরপর টালমাটাল অবস্থায় এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে ছোটাছুটি করা অথবা গুরুতর আহত অবস্থায় কোনোমতে বেঁচে নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার মতো হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রবল মানসিক আঘাতের মধ্যেও শোকাহত পরিবারগুলোকে ক্ষমতাসীনদের বৈরিতা মোকাবিলা করতে হয়েছে। প্রিয়জনের মৃতদেহ দাফনের জন্য মৃত্যুসনদ ও পোস্টমর্টেম রিপোর্ট সংগ্রহ করতেও নানা ঝুঁকি-ঝামেলায় পড়তে হয়েছে। ভয় ও আতঙ্কে আচ্ছন্ন ছিল দাফনের আয়োজন, যেখানে কিছু পরিবার বাধা এড়াতে ভোরের আলো ফোটার আগেই গোপনে দাফন সম্পন্ন করেছে, যেন আওয়ামী লীগের স্থানীয় কর্মীদের কোনো বাধার মুখে পড়তে না হয়।
এতে আরও বলা হয়, নিরাপত্তা বাহিনীগুলো জনতাকে নিয়ন্ত্রণ করতে কোনো অহিংস উপায় গ্রহণ করেনি ও কোনো সতর্কতা জারি করেনি। পুলিশ আহতদের চিকিৎসায় কোনো সহায়তা তো করেইনি বরং প্রায়শই চিকিৎসার ক্ষেত্রে বাধা দিয়েছে।
এ প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন নিহতদের স্বজনরাও। নিহত হৃদয়ের বোন জেসমিন বলেন, আমার ভাই ৫ আগস্ট মিছিলে পুলিশের ধাওয়া খেয়ে গোলাগুলি থেকে জীবন বাঁচাতে একটি জায়গায় আশ্রয় নিয়েছিল। ভিডিওতে দেখছেন- কীভাবে ধরে নিয়ে আমার ভাইকে গুলি করে হত্যা করেছে। লাশটা নিয়ে গেছে। লাশটা আর দেয়নি। লাশ কোথায় গুম করল, লাশটা কই গুম করল। আমি ওত কথা বলতে পারি না, আমি শিক্ষিত না। বড় বড় আইনজীবীরা এখানে আছে আমার ভাইরে যারা নির্মমভাবে হত্যা করছে, আমার ভাইয়ের হত্যার বিচার চাই।
কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন জেসমিন। বলেন, পাঁচ-ছয় মাসেও আমার ভাইয়ের বিচার পাইনি, সরকারের কোনো সহায়তা পাইনি। সরকারের কেউ বাবা-মায়ের খোঁজ নিতে যায়নি। আমার বাবা খুব অসহায়, একটা ভাই ছিল খুব আদরের। কত কষ্ট করে বড় করছি, রোজগারের জন্য ঢাকায় আসছে। মরার আগে কথা বলছে, আপা আমি রাতে কথা বলমু। সেই ভাই আর ফিরে আসল না।
তিনি আরও বলেন, মাইরা আবার পুলিশ লাশটা নিয়ে গেছে, লাশটারে দেয়ও নাই। ভাইয়ের খোঁজ পাইনি। কোথায় রাখল, কোন জায়গায় রাখছে, খুঁজেই পাইলাম না। আপনা-গো কাছে একটাই দাবি আমার ভাইয়ের লাশটা কোন জায়গায় কী করছে তদন্ত কইরা খুঁজে আইনা দেন। হাড্ডিটা পাইলেও দেশের বাড়িতে ভাইরে মাটি দিমু। অন্তত দেখমু ভাই বাড়ির পাশে আছে।
শহীদ মুনতাসিরের বাবা গাজীউর রহমান বলেন, আজ পর্যন্ত যত মামলা হয়েছে যাত্রাবাড়ী ছাড়া আর কোথাও কেউ গ্রেপ্তার হয়েছে দেখি নাই। তাহলে কী হইতেছে, আজ পাঁচ-ছয় মাস হয়ে গেল কোনো পুলিশ হেলমেট বাহিনী অন্তত আমার মামলায় কেউ গ্রেপ্তার হয়নি। এদের যদি বিচার না হয় তাহলে আমাদের কী হবে, আমরা প্রত্যেকে তাদের টার্গেটে পরিণত হয়েছি।
তিনি বলেন, আমরা জানি না, আমাদের আর কত কাল রক্ত দিতে হবে। আমরা সন্তান সবই দিয়েছি। আর কী দেব। আমাদের জীবন বিপন্ন, অনেকে বাড়িতে থাকতে পারছে না। এগুলো দেখার কেউ নাই। এ জাতির জন্য দেশের জন্য সবই দিয়েছি, কিন্তু আমরা ঘরে থাকতে পারি না।
আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, যখনই অত্যাচারে মৃত্যুর দৃশ্য দেখি মনে হয় বিচার নিশ্চিত করতে না পারলে আমাদের বেঁচে থাকার অধিকার নাই। আমাদের প্রসিকিউশন টিম তদন্ত টিম কাজ করছে, আমি কথা দিচ্ছি এটার সুবিচার নিশ্চিত করবই। এ সরকারের সবচেয়ে বড় দায়িত্ব জুলাই অভ্যুত্থানে সুবিচার নিশ্চিত করা। ফ্যাসিস্ট হাসিনার বিচার চেয়ে আমাদের বিচার যে ভিন্ন সেটা নিশ্চিত করতে হবে।
তিনি বলেন, আপনাদের মতো আমাদের তাড়না থাকে। কালকেই যদি বিচার হয় খুশি হতাম। কিন্তু আমাদের তো প্রসেস মেইনটেইন করতে হবে। আমাদের এত অকাট্য প্রমাণ এত সাক্ষী আছে, ডিউ প্রসেস মেইনটেইন করে বিচার করতে পারব।
চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বলেন, তারা যে নিষ্ঠুরতা প্রদর্শন করেছে, তাদের শনাক্ত করার পাশাপাশি এটা বের করা জরুরি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কেন এমন নিষ্ঠুর হয়ে উঠল? কেন রাষ্ট্র এ পর্যায়ে গিয়েছিল, কার নির্দেশে তারা এ কাজ করেছিল? এগুলো নিয়েও আমরা কাজ করছি। এভাবে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা সর্বত্র হয়েছে, একই মাত্রায় একই পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীকে হত্যার গায়েবি নির্দেশ কোথা থেকে এসেছে সেটা যদি বের করা যায় তাহলে বোঝা যাবে সুপিরিয়র কমান্ড কতটুকু সম্পৃক্ত হয়েছিল।
তিনি বলেন, শহীদ পরিবারের পর্বতসম বেদনা আমরা বুঝি। তাদের ন্যায়বিচার দিতে হবে পাশাপাশি জাস্টিস প্রক্রিয়া যেন আন্তর্জাতিক এবং জাতীয়ভাবে গ্রহণযোগ্য করা যায় সেটা নিশ্চিত করতে হবে। তা না হলে অতীতের মত ট্রাইব্যুনালকে কলঙ্কিত করা হবে।
তাজুল ইসলাম বলেন, কারা পেছন থেকে এ কাজটা করেছিল, কার নির্দেশে এটা হয়েছিল। এটার সঙ্গে কমান্ডারের কীভাবে হুকুম করা হয়েছিল এই সূক্ষ্ম কাজ উদঘাটন না করা হলে পুরোপুরি জাস্টিস নিশ্চিত করতে পারব না। শহীদ পরিবারদের দ্রুত বিচার চাওয়ার প্রক্রিয়াকে আমরা শ্রদ্ধা করি। তবে বিচার প্রক্রিয়া যথাযথ প্রক্রিয়ায় তদন্ত হওয়ার জন্য ধৈর্য ধরার অনুরোধ করব। সেটা যেন অপ্রয়োজনীয়ভাবে অনেক সময় না হয় সেজন্য আমরা সক্রিয় এবং সচেতন আছি।
চিফ প্রসিকিউটর আরও বলেন, হেলিকপ্টার দিয়ে অপারেশন চালানো হয়েছে। অস্ত্র ব্যবহার হয়েছে কিনা তা প্রমাণের আগেই তদানীন্তন নির্বাহী প্রধান বলেছিলেন হেলিকপ্টার দিয়ে পানি ছিটিয়েছি। তার মানে নির্দেশনা তার থেকে এসেছিল। এখন হেলিকপ্টার থেকে গুলি চালানো হয়েছিল সেটা তদন্তে প্রমাণ করার বিষয় আছে। শহীদ পরিবার, আন্তর্জাতিক মহল জাতির কাছে এটা আমাদের অঙ্গীকার, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় আমরা প্রাণপণ চেষ্টা করব।
তিনি বলেন, একটা ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার পরে একটা রিকনসিলিয়েশনের (পুনর্মিলন) মাধ্যমে নতুন যাত্রা শুরু করবে। আমরা কখনও এই দিন দেখব না শাসকরা রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে ক্রিমিনালাইজ করে সিভিলিয়ানদের হত্যা করবে এমন বাংলাদেশ যেন আর ফিরে না আসে সেজন্য আমাদের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা থাকবে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করায় আদালত অবমাননার অভিযোগ থেকে রেহাই পেলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান। আদালতের কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করায় সোমবার (৮ ডিসেম্বর) তাকে এই অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল-১।
বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল এই আদেশ দেন। আদালতের নির্দেশ মেনে এদিন সকালেই সশরীরে ট্রাইব্যুনালে হাজির হন কিশোরগঞ্জ-৪ আসনের এই বিএনপি দলীয় প্রার্থী। এ সময় তার পক্ষে শুনানিতে অংশ নিতে আদালতে উপস্থিত ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন, ব্যারিস্টার কায়সার কামাল ও ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজলসহ জ্যেষ্ঠ আইনজীবীরা।
ঘটনার সূত্রপাত হয় একটি টকশোতে ফজলুর রহমানের দেওয়া বক্তব্যকে কেন্দ্র করে। সেখানে তিনি ট্রাইব্যুনালের গঠনপ্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তোলার পাশাপাশি মন্তব্য করেছিলেন যে, ‘এই কোর্টে বিচার হতে পারে না’ এবং বিচারকদের নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন। এই বক্তব্যের জেরে গত ২৬ নভেম্বর প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার হুসাইন তামীম তার বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ দায়ের করেন।
অভিযোগটি আমলে নিয়ে গত ৩০ নভেম্বর ট্রাইব্যুনাল কঠোর ভর্ৎসনা করে বলেন, ট্রাইব্যুনাল না মানার মতো বক্তব্য রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল। এমনকি আদালত ফজলুর রহমানের ওকালতির লাইসেন্স আছে কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন এবং ৮ ডিসেম্বর তাকে সশরীরে হাজির হয়ে ব্যাখ্যা দেওয়ার নির্দেশ দেন। আদালতের প্রতি সম্মান দেখিয়ে গত ৩ ডিসেম্বরই নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে লিখিত আবেদন জমা দিয়েছিলেন ফজলুর রহমান। সেই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এবং আজ সশরীরে হাজির হয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করায় আদালত তাকে এই অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দিয়ে বিষয়টি নিষ্পত্তি করেন।
২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় সংঘটিত হত্যাযজ্ঞের ঘটনায় করা মামলায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও যুবলীগ সভাপতিসহ মোট সাতজনের বিরুদ্ধে তদন্ত কার্যক্রম শেষ হয়েছে। সোমবার (৮ ডিসেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল সূত্রে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে। একই দিন মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে করা মামলায় শেখ হাসিনা সরকারের আমলের সাবেক মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপদেষ্টাসহ ১৭ জন হেভিওয়েট আসামিকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়েছে।
সোমবার সকাল পৌনে ১০টার দিকে কেরানীগঞ্জ ও কাশিমপুরসহ বিভিন্ন কারাগার থেকে প্রিজনভ্যানে করে কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে আসামিদের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে আনা হয়। এরপর একে একে তাদের নামিয়ে হাজতখানায় নেওয়া হয়। আজ ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন বিচারিক প্যানেলে এসব মামলার অগ্রগতি নিয়ে শুনানি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
ট্রাইব্যুনালে হাজির করা আসামিদের তালিকায় রয়েছেন সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, সাবেক শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, সাবেক খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, সাবেক কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক, সাবেক নৌপরিবহনমন্ত্রী শাহজাহান খান, সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী এবং সাবেক মন্ত্রী ফারুক খান। এছাড়াও শরিক দলের নেতাদের মধ্যে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন ও জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনুকেও হাজির করা হয়েছে।
হাজির করা অন্যদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, জ্বালানি উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, সাবেক স্বরাষ্ট্র সচিব জাহাঙ্গীর আলম, সাবেক প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার, সাবেক এমপি সোলায়মান সেলিম এবং সাবেক বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক। চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান দমনে নির্বিচার হত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে এসব প্রভাবশালী নেতাদের বিরুদ্ধে বিচারিক কার্যক্রম চলছে।
দেশে ক্ষমতার পালাবদল হলেও দুর্নীতি থামেনি, বরং এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে দখলদারত্ব ও চাঁদাবাজি। রাজনৈতিক ও সরকারি ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিভিন্ন মহল এসব অপকর্মে লিপ্ত রয়েছে। এমনকি বর্তমান সরকারের অভ্যন্তরেও কোনো কোনো ক্ষেত্রে দুর্নীতির ঘটনা ঘটছে, যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। রোববার রাজধানীর ধানমন্ডিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান এসব কথা বলেন।
‘সুশাসিত, বৈষম্যহীন ও দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশের অঙ্গীকার: ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দলের ইশতেহার প্রণয়নে টিআইবির সুপারিশ’ শীর্ষক এই সংবাদ সম্মেলনে ড. ইফতেখারুজ্জামান দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করেন। তিনি মন্তব্য করেন, বর্তমান সরকারের সময়ে দুর্নীতির বিরুদ্ধে আরও কঠোর অবস্থান নেওয়ার সুযোগ ও সম্ভাবনা থাকলেও তারা সে ক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়েছে। তবে তিনি এও স্বীকার করেন, গত ১৫ বছরের পুঞ্জীভূত জঞ্জাল কোনো জাদুর কাঠির ছোঁয়ায় মুহূর্তের মধ্যে দূর করা সম্ভব নয়। এটি একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া। তবে সুশাসিত ও দুর্নীতিমুক্ত দেশ গড়ার যে সুযোগ তৈরি হয়েছে, রাজনৈতিক দলগুলো তা কতটা কাজে লাগাবে এবং নির্বাচনে অর্থ ও পেশিশক্তির প্রভাব কতটা নিয়ন্ত্রণ করা যাবে, তার ওপরই আগামীর ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে।
ব্যবসা খাতের সংস্কার প্রসঙ্গে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, এই সংস্কার রাজনৈতিক দলের মতোই ভেতর থেকে আসতে হবে। তিনি উল্লেখ করেন, গত দেড় দশকে ব্যবসা খাতের একাংশ কর্তৃত্ববাদের অন্যতম স্তম্ভ হিসেবে কাজ করেছে এবং রাষ্ট্রকাঠামো দখলে ভূমিকা রেখেছে। ব্যবসায় স্বচ্ছতা, উন্মুক্ত প্রতিযোগিতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা গেলে শেষ পর্যন্ত ব্যবসায়ীরাই লাভবান হবেন, অন্যথায় গুটিকয়েক সুবিধাভোগী ছাড়া বাকিরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।
প্রতিবেশী দেশ ভারত প্রসঙ্গে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সাম্প্রতিক ঘটনাবলী ভারতের ইতিহাসের সবচেয়ে বিব্রতকর কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক পরাজয়, যদিও তারা এখনও তা স্বীকার করতে ব্যর্থ হয়েছে। তিনি মনে করেন, ভারত যদি কর্তৃত্ববাদের পক্ষ থেকে সরে এসে আরও বস্তুনিষ্ঠ অবস্থান নিত, তবে দুই দেশের সম্পর্কের উন্নয়ন সহজতর হতো। তবে এখনো পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে সম্পর্কের উন্নতির সুযোগ রয়েছে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির পক্ষ থেকে আগামী নির্বাচনের ইশতেহারে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য ৫২টি প্রস্তাব তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন, সংস্কার কমিশনের সুপারিশ কার্যকর রাখা এবং জুলাই গণঅভ্যুত্থানসহ বিগত আমলের সব হত্যা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার নিশ্চিত করার অঙ্গীকারের ওপর বিশেষ জোর দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানে টিআইবির উপদেষ্টা অধ্যাপক সুমাইয়া খায়ের এবং পরিচালক মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।
বিদেশ থেকে মোবাইল ফোন আনা এবং নিবন্ধন প্রক্রিয়া নিয়ে প্রবাসীদের মধ্যে সৃষ্ট ধোঁয়াশা ও বিভ্রান্তি দূর করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল। সোমবার (৮ ডিসেম্বর) নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে তিনি এ বিষয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা তুলে ধরে অপপ্রচারের জবাব দেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া বিভিন্ন গুজব খণ্ডন করে আইন উপদেষ্টা জানান, প্রবাসীদের প্রতি অন্যায় বা বৈষম্য করা হচ্ছে—এমন অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। বরং শেখ হাসিনা সরকারের আমলে প্রবাসী কর্মীরা তাদের ব্যবহৃত ফোনের সঙ্গে মাত্র একটি নতুন ফোন আনতে পারতেন। কিন্তু বর্তমান সরকার প্রবাসীদের সুবিধার্থে সেই নিয়ম পরিবর্তন করে নিজের ব্যবহৃত ফোনের পাশাপাশি আরও দুটি নতুন ফোন আনার অনুমতি দিয়েছে। অর্থাৎ বিএমইটি থেকে ছাড়পত্র নিয়ে বিদেশে যাওয়া কর্মীরা এখন শুল্ক ছাড়াই মোট তিনটি ফোন আনতে পারবেন। তবে দুটির বেশি নতুন ফোন আনলে সেক্ষেত্রে নির্ধারিত শুল্ক প্রযোজ্য হবে। অন্যদের ক্ষেত্রে আগের নিয়মই বলবৎ থাকবে।
ফোন নিবন্ধনের বিষয়ে ছড়িয়ে পড়া বিভ্রান্তি সম্পর্কে আসিফ নজরুল স্পষ্ট করেন যে, শুধুমাত্র প্রবাসীদের ফোন নিবন্ধন করতে হবে—এমন তথ্য সঠিক নয়। প্রকৃত সত্য হলো, আগামী ১৬ ডিসেম্বর থেকে দেশে অবস্থানরত নাগরিক কিংবা বিদেশফেরত প্রবাসী, সবার জন্যই নতুন ফোন ব্যবহারের ৬০ দিনের মধ্যে নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। মূলত অবৈধ সেট ব্যবহার করে অপহরণ, চাঁদাবাজি, জুয়া ও হুমকির মতো অপরাধ নিয়ন্ত্রণ এবং নাগরিকদের হয়রানি থেকে রক্ষা করতেই সরকার এই উদ্যোগ নিয়েছে।
ফেসবুক পোস্টে তিনি আরেকটি ‘জঘন্য মিথ্যাচার’ এর বিষয়ে সতর্ক করেন। প্রবাসীরা দেশে এসে মাত্র ৬০ দিন থাকতে পারবেন—এমন একটি গুজব ছড়ানো হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, মিথ্যা গুজব ছড়ানো ও গীবত করা ইসলামের দৃষ্টিতে বড় পাপ। তাই প্রবাসীদের এসব গুজবে কান না দেওয়ার অনুরোধ জানান তিনি। পাশাপাশি প্রবাসীদের মনের অন্যান্য প্রশ্ন বা বিভ্রান্তিও দ্রুততম সময়ে নিরসনের আশ্বাস দেন আইন উপদেষ্টা।
টেলিযোগাযোগ খাতে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং অবৈধ বা অনিবন্ধিত মোবাইল ফোনের ব্যবহার বন্ধে আগামী ১৬ ডিসেম্বর থেকে ‘ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেনটিটি রেজিস্টার’ (এনইআইআর) ব্যবস্থা কার্যকর করার সিদ্ধান্তে অটল রয়েছে সরকার। সরকারের লক্ষ্য, নির্বাচনের আগে অবৈধ ডিভাইসকেন্দ্রিক অপরাধ দমন, অভ্যন্তরীণ বাজার নিয়ন্ত্রণ এবং রাজস্ব বৃদ্ধি। তবে সরকারের এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে এবং এনইআইআর সংস্কারের দাবিতে রোববার বিটিআরসি ভবন ঘেরাও করে বিক্ষোভ করেছেন সাধারণ মোবাইল ব্যবসায়ীরা।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিটিআরসি ভবনের সামনে ‘মোবাইল বিজনেস কমিউনিটি বাংলাদেশ’ (এমবিসিবি)-এর ব্যানারে শত শত ব্যবসায়ী অবস্থান নিলে তীব্র যানজট ও জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হয় এবং বিটিআরসি চেয়ারম্যানসহ কর্মকর্তারা অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, এনইআইআর বাস্তবায়ন হলে লাখো ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ক্ষতিগ্রস্ত হবেন এবং একটি বিশেষ সিন্ডিকেট লাভবান হবে। তাদের দাবি, বিদ্যমান কর কাঠামোর কারণে ২০ হাজার টাকার একটি ফোনে প্রায় ৫৭ শতাংশ ভ্যাট যুক্ত হয়ে দাম ৫০ হাজার টাকা ছাড়িয়ে যাচ্ছে, যা সাধারণ শিক্ষার্থী ও যুবকদের নাগালের বাইরে। তাই তারা সিন্ডিকেট প্রথা বাতিল, এনইআইআর সংস্কার এবং আমদানির সুযোগ উন্মুক্ত করার দাবি জানান।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে রোববার রাতে বিটিআরসি চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মো. এমদাদ উল বারী ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করেন। তিনি আশ্বাস দেন যে, এনইআইআর-সংক্রান্ত জটিলতা নিরসনে অর্থ উপদেষ্টা, এনবিআর চেয়ারম্যান, বাণিজ্য সচিব এবং মোবাইল ফোন সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলোর প্রতিনিধিদের নিয়ে শিগগিরই একটি যৌথ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এই আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে আন্দোলনরত ব্যবসায়ীরা সোমবার পর্যন্ত তাদের অবরোধ কর্মসূচি স্থগিত করেছেন।
অন্যদিকে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য-প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমেদ তৈয়্যব সরকারের কঠোর অবস্থানের কথা পুনর্ব্যক্ত করেছেন। তিনি জানান, দেশে সংঘটিত ডিজিটাল প্রতারণার ৭৩ শতাংশই অবৈধ স্মার্টফোন ব্যবহার করে করা হয়। এই অপরাধচক্র ভাঙতে এবং নির্বাচনের আগে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার ১৬ ডিসেম্বর থেকেই এনইআইআর চালু করতে বদ্ধপরিকর। তার দাবি, মোবাইল ফোন চোরাচালান চক্রের স্বার্থে আঘাত লাগায় একটি গোষ্ঠী সরকারের এই উদ্যোগে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করছে।
এদিকে অনিবন্ধিত ফোন বন্ধ হয়ে যাওয়ার আতঙ্কে এবং ভবিষ্যতে দাম বাড়ার আশঙ্কায় ক্রেতারা এখন মোবাইল ফোনের দোকানগুলোতে ভিড় করছেন। সরকারের আইসিটি বিভাগ অবশ্য আশ্বস্ত করেছে যে, ১৬ ডিসেম্বর চালুর আগ মুহূর্ত পর্যন্ত দেশের নেটওয়ার্কে সচল থাকা সব ফোন স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিবন্ধিত হয়ে যাবে। এছাড়া বিদেশ থেকে আনা ফোন পরবর্তীতে অনলাইনে নিবন্ধনের সুযোগও রাখা হবে।
চব্বিশের জুলাই-আগস্টের আন্দোলনের সময় সংঘটিত হত্যা ও গণহত্যার অভিযোগে শেখ হাসিনা সরকারের প্রভাবশালী ১৭ জন সাবেক মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপদেষ্টাকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়েছে। সোমবার (৮ ডিসেম্বর) সকাল পৌনে ১০টার দিকে কেরানীগঞ্জ ও কাশিমপুরসহ বিভিন্ন কারাগার থেকে কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে প্রিজনভ্যানে করে তাদের ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে আনা হয় এবং হাজতখানায় রাখা হয়।
ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন বিচারিক প্যানেলে এসব হেভিওয়েট আসামিদের মামলার অগ্রগতি ও শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে। ট্রাইব্যুনালে হাজির করা আসামিদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু, সাবেক বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক এবং সাবেক স্বরাষ্ট্রসচিব জাহাঙ্গীর আলমসহ আরও অনেকে।
ইতোমধ্যে প্রসিকিউশন পক্ষ সালমান এফ রহমান, আনিসুল হক, হাসানুল হক ইনু ও জুনাইদ আহমেদ পলকের বিরুদ্ধে পৃথকভাবে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ বা ‘ফরমাল চার্জ’ দাখিল করেছে। এর মধ্যে ইনুর মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণও চলছে। এছাড়া জুলাই আন্দোলনে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে গণহত্যার দায়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় এবং পলকের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আমলে নিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে জয়ের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও জারি করা হয়েছে। পাশাপাশি কারফিউ দিয়ে হত্যার অভিযোগে আনিসুল ও সালমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নিয়ে শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে।
অন্যদিকে, সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ ৪৫ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আজকের দিনটি পূর্বনির্ধারিত ছিল। এর আগে প্রসিকিউশন তদন্তের জন্য সময় চাইলে আদালত আজকের মধ্যে প্রতিবেদন জমার নির্দেশ দিয়েছিলেন। এদিকে আলোচিত এই বিচারিক কার্যক্রমকে কেন্দ্র করে আজ সকাল থেকেই ট্রাইব্যুনাল এলাকায় নজিরবিহীন নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। কড়া তল্লাশি ছাড়া কাউকেই আদালত চত্বরে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না।
ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির চূড়ান্ত অধ্যাদেশ জারির দাবিতে আন্দোলন আরও বেগবান করার ঘোষণা দিয়েছেন রাজধানীর সরকারি সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। দাবি আদায়ে সোমবার (৮ ডিসেম্বর) আবারও তারা সড়ক অবরোধ বা ‘ব্লকেড’ কর্মসূচিতে নামছেন। অধ্যাদেশ হাতে না পাওয়া পর্যন্ত এই আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার কঠোর হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন তারা।
এর আগে রবিবার (৭ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় শিক্ষা ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি চলাকালে শিক্ষার্থীরা এই নতুন কর্মসূচির ঘোষণা দেন। তাদের অভিযোগ, শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ের খসড়া আইন প্রকাশ করলেও চূড়ান্ত অধ্যাদেশ জারির প্রক্রিয়াটি দীর্ঘদিন ধরে স্থবির হয়ে আছে। মন্ত্রণালয়ের এমন ধীরগতির কারণে সাত কলেজের প্রায় দেড় লক্ষাধিক শিক্ষার্থী চরম পরিচয় সংকট, একাডেমিক অনিশ্চয়তা এবং ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ার নিয়ে হতাশায় ভুগছেন।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানান, জনদুর্ভোগ এড়াতে তারা এতদিন শিক্ষা ভবনের পাশে অবস্থান নিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে দাবি জানিয়ে আসছিলেন। কিন্তু দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় তারা বাধ্য হয়েই কঠোর কর্মসূচির পথ বেছে নিয়েছেন। তাদের স্পষ্ট কথা, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা রাজপথ ছাড়বেন না।
সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। রাষ্ট্রপতি থাকা অবস্থায় ব্যক্তিগত সুখ বিলাসের জন্য রাষ্ট্রীয় সম্পদের ক্ষতির অভিযোগ অনুসন্ধানে নেমেছে সংস্থাটি। রোববার (৭ ডিসেম্বর) বিকেলে দুদক প্রধান কার্যালয়ে এক নিয়মিত মিডিয়া ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান দুদকের মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন। গত ১৮ নভেম্বর এ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত হয়।
দুদক জানায়, সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও অন্যান্যের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপতি থাকাকালে ব্যক্তিগত সুখ বিলাসের জন্য ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে নিকুঞ্জ-১ আবাসিক এলাকায় সাজসজ্জা এবং সৌন্দর্য বর্ধন প্রকল্প বাবদ রাষ্ট্রের ২৪ কোটি টাকা ক্ষতি ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুদক।
এ বিষয়টি অনুসন্ধানের জন্য একটি সমন্বিত অনুসন্ধান টিম গঠন এবং পরিচালক (বিশেষ অনুসন্ধান ও তদন্তু-২)-কে তদারককারী কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে কমিশন।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, ‘দেশের মানুষ ১৯৭১ সালেই দেখেছে, নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থ রক্ষার্থে তারা শুধু লাখ লাখ মানুষকে হত্যাই করেনি, তাদের সহকর্মীরা মা-বোনদের ইজ্জত পর্যন্ত লুট করেছিল। এই কথাটি আমাদেরকে মনে রাখতে হবে।’
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘কিছু কিছু মানুষ বা কোনো কোনো গোষ্ঠী ইদানীং বলতে শুনেছি বা বিভিন্ন জায়গায় কেউ কেউ সোশ্যাল মিডিয়ায় বলে যে, অমুককে দেখলাম, তমুককে দেখলাম, এবার অমুককে দেখুন। যাদের কথা বলে অমুককে দেখুন, তাদের তো দেশের মানুষ ১৯৭১ সালেই দেখেছে। ১৯৭১ সালে তারা তাদের নিজেদের স্বার্থ রক্ষার্থে কীভাবে লাখ লাখ মানুষকে হত্যা করেছে। ঠিক যেভাবে পতিত স্বৈরাচার পালিয়ে যাওয়ার আগে হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করেছিল ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য।
রোববার (৭ ডিসেম্বর) বিকেলে রাজধানীর ফার্মগেটের খামারবাড়ি কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে এক অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তারেক রহমান এ কথা বলেন। বিজয়ের মাস উপলক্ষে ‘দেশ গড়ার পরিকল্পনা’ শীর্ষক এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বিএনপি। এতে ছাত্রদলের সারাদেশের জেলা পর্যায়ের বিভিন্ন ইউনিটের হাজারের বেশি নেতা-কমী অংশ নেয়।
তারেক রহমান বলেন, ‘বিএনপি বাংলাদেশকে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, কানাডা, আমেরিকা বানাতে চায় না, স্বনির্ভর বাংলাদেশ গড়তে চায়।’
সামনে বিএনপির জন্য অনেক কঠিন সময় অপেক্ষা করছে উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, ‘বিগত ফ্যাসিস্ট সরকার যেভাবে বিএনপির বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রোপাগান্ডা ছড়িয়েছিল, এখন একইভাবে কিছু ব্যক্তি বা দল একই চেষ্টা করছে।’
বিএনপির জোট সরকারের সময় জামায়াতে ইসলামীর দুইজন নেতা মন্ত্রী ছিলেন। সেই সময়ের উদ্ধৃতি দিয়ে তারেক রহমান বলেন, ‘কিছু কিছু ব্যক্তি বা দল ঠিক একই সুরে গান গাইছে বা একই সুরে কতগুলো কথা বলার চেষ্টা করছে। প্রশ্ন হচ্ছে, তাদেরও তো দুইজন ব্যক্তি আমাদের সঙ্গে সেই সময় সরকারে ছিল। সেই দুইজন ব্যক্তি বিএনপি সরকারে শেষদিন পর্যন্ত থাকা প্রমাণ করে দেয় যে, তাদের পূর্ণ আস্থা ছিল খালেদা জিয়ার উপর। কারণ, তিনি দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছেন। সেজন্যই তারা শেষদিন পর্যন্ত ছিল। এখন তাদের দলের অন্য যে যত বড় বড় কথা বলুক না কেন, খালেদা জিয়া শেষ দিন পর্যন্ত দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছেন এবং দুর্নীতির অবস্থার পরিবর্তন ঘটেছে, এই আত্মবিশ্বাস তাদের মধ্যে ছিল।
তারেক রহমান বলেন, বিভিন্নভাবে বিভিন্ন রকম ষড়যন্ত্র বিভিন্ন জায়গায় হচ্ছে। এই ষড়যন্ত্র রুখে দিতে পারে এ দেশের জনগণ এবং এই ষড়যন্ত্র জনগণকে সঙ্গে নিয়ে রুখে দিতে পারে বিএনপি। এই ষড়যন্ত্র রুখে দেওয়ার একমাত্র উপায় হচ্ছে গণতন্ত্র। যেকোনো মূল্যে যদি জনগণের মতামতকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারি, তাহলে অবশ্যই অনেক ষড়যন্ত্রকে আমরা রুখে দিতে পারব। কিন্তু ষড়যন্ত্রকে রুখে দিতে পারলেও সামনে অনেক কঠিন সময়।
তারেক রহমান আরো বলেন, একটি রাজনৈতিক দলের কিছু ব্যক্তি বিভিন্ন জিনিসের টিকিট বিক্রি করে বেড়াচ্ছে। বিভিন্ন জিনিসের নিশ্চয়তা দিয়ে বেড়াচ্ছে। এখন আমি যতটুকু বুঝি—অনেক মুরুব্বি ব্যক্তি আছেন, এটি ধর্মীয় বিষয়—যা আমার না, আমি যদি সেটা দেওয়ার কথা বলি, অর্থাৎ ওয়াদা যদি করি, তাহলে আমি তার (আল্লাহর) সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছি। অর্থাৎ দোজখ-বেহেশত, দুনিয়ার সবকিছুর মালিক আল্লাহ। যেটা একমাত্র আল্লাহ বলতে পারেন, সেখানে যদি আমি কিছু বলতে চাই, আমার নরমাল দৃষ্টিকোণ থেকে আমি বুঝি, সেটি হচ্ছে শিরিক।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছাত্রদলের নেতাদের উদ্দেশে তারেক রহমান বলেন, ঘরে ঘরে গিয়ে মানুষকে বোঝাতে হবে যারা এসব কথা বলে, তারা শিরক করছে। যারা শুনবেন, তারাও শিরকের পর্যায়ে পড়ে যাবেন।
এর আগে সকালে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। সঞ্চালনা করেন আরেক যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান (সোহেল)।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইসমাইল জবিউল্লাহ, ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নিপুণ রায় চৌধুরী, ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমিনুল হক, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মাহদী আমিন, বিএনপি মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক মওদুদ হোসেন আলমগীর পাভেল, মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান প্রমুখ।
জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের সৌন্দর্যবর্ধন ও আধুনিকায়নে ১৯৯ কোটি টাকার প্রকল্প নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ধর্মবিষয়ক উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন। রোববার (৭ ডিসেম্বর) ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বায়তুল মোকাররম সভাকক্ষে ব্রিফিংয়ে তিনি এ তথ্য জানান।
উপদেষ্টা বলেন, জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের উন্নয়নে সবচেয়ে বড় যে উদ্যোগটি গ্রহণ করা হয়েছে, সেটি হলো বায়তুল মোকাররমের আধুনিকায়ন, সৌন্দর্যবর্ধন ও উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্প। এ প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৯৯ কোটি টাকা। এরইমধ্যে এ অর্থায়নের সম্মতি পাওয়া গেছে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে মসজিদের মূল কাঠামো ঠিক রেখে অভ্যন্তরীণ সৌন্দর্যবর্ধন ও আধুনিকায়ন করা হবে, আধুনিক স্যানিটেশন ব্যবস্থা এবং বহিরাঙ্গণে আচ্ছাদিত করা হবে, অফিস ভবন ও মিনার নির্মাণসহ অন্য উন্নয়নমূলক কাজ বাস্তবায়ন করা হবে।
উপদেষ্টা বলেন, আমরা যথা দ্রুত সম্ভব এ প্রকল্পের কাজ শুরু করতে পারব, ইনশাআল্লাহ। সরকার তথা ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় মসজিদটিতে ইবাদতের যথোপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য সচেষ্ট রয়েছে। আমরা সবার সহযোগিতা চাই, পরামর্শ চাই। বিশেষ করে মসজিদের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে সবার দায়িত্বশীল আচরণ প্রত্যাশা করব।
উপদেষ্টা আরও বলেন, আমরা যত্রতত্র নোংরা-আবর্জনা ফেলব না, আমরা ডাস্টবিন ব্যবহার করব। মসজিদের ওযুখানা ও টয়লেট নিজে ব্যবহার করব এবং অন্যের ব্যবহার উপযোগী রাখতে যত্নশীল হব।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের প্রস্তুতি সম্পর্কে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসকে অবহিত করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন।
রোববার (০৭ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার নাসির উদ্দিনের নেতৃত্বে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কমিশনারগণ রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে নির্বাচন আয়োজনের অগ্রগতি সম্পর্কে জানান।
বৈঠকে নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমান মাছউদ, তাহমিদা আহমদ, মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ এবং নির্বাচন কমিশন সচিব আখতার আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।
জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান এবং প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব এম সিরাজ উদ্দিন মিয়াও বৈঠকে যোগ দেন।
বৈঠকে সিইসি নাসির উদ্দিন জানান, নির্বাচন আয়োজনের ক্ষেত্রে সব ধরনের প্রস্তুতি সঠিক ও সুন্দরভাবে এগোচ্ছে এবং ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে জাতীয় নির্বাচন ও একই দিনে গণভোট আয়োজনের জন্য কমিশন সম্পূর্ণ প্রস্তুত।
প্রস্তুতিকালে ইসিকে পূর্ণ সহযোগিতা প্রদানের জন্য প্রধান উপদেষ্টাকে ধন্যবাদ জানান সিইসি ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনাররা।
নির্বাচনের প্রস্তুতিকালে সর্বাত্মক সহযোগিতা করায় তিনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সেনাবাহিনীর সদস্যদেরও প্রধান উপদেষ্টার মাধ্যমে ধন্যবাদ জানান।
তিনি বলেন, ইতোমধ্যে নাগরিকরা নির্বাচনী কর্মকাণ্ডে নিজেদের সম্পৃক্ত করেছেন, যা দেশে নির্বাচনী আমেজ সৃষ্টি করেছে।
এ সময় নির্বাচন কমিশনের প্রস্তুতিতে সন্তোষ প্রকাশ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের স্বার্থে নির্বাচন কমিশনকে সব ধরনের সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে সরকার।’
তিনি বলেন, ‘জাতির জন্য প্রতীক্ষিত এই নির্বাচনে আপনারা (ইসি) চালকের আসনে আছেন। আমাদেরকে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতেই হবে।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, জাতিকে একটি সুন্দর নির্বাচন দিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে জাতিকে আমরা ইতিহাসের সেরা নির্বাচন উপহার দেওয়ার প্রত্যয়ে এগিয়ে চলছি।
সূত্র : বাসস
আজ ৭ ডিসেম্বর সাতক্ষীরাবাসীর জীবনে এক মহিমান্বিত দিন। ১৯৭১ সালের এই দিনে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর কবল থেকে সাতক্ষীরা সম্পূর্ণ মুক্ত ঘোষণা করা হয়। দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ, অসংখ্য ত্যাগ, মুক্তিযোদ্ধার আত্মোৎসর্গ এবং সাহসিকতার ফলেই অর্জিত হয় এই গৌরবময় বিজয়।
১৯৭১ সালের এই দিনে সাতক্ষীরার দামাল ছেলেরা থ্রি নট থ্রি আর এসএলআরের ফাঁকা গুলি ছুড়তে ছুড়তে সাতক্ষীরা শহরে প্রবেশ করেন। ওড়ানো হয় স্বাধীন বাংলার পতাকা।
৯নং সেক্টরের অধীনে মুক্তিযুদ্ধের শুরু থেকেই সাতক্ষীরা ছিল প্রতিরোধ সংগ্রামের প্রধান ক্ষেত্র। পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের দোসর রাজাকার-আলবদররা এ অঞ্চলে ভয়াবহ নির্যাতন, লুটপাট ও হত্যাযজ্ঞ চালায়। তবে বীর মুক্তিযোদ্ধারা জীবনবাজি রেখে প্রতিটি আক্রমণের জবাব দেন। সংগঠিত প্রতিরোধের মাধ্যমে ক্রমান্বয়ে সাতক্ষীরার বিভিন্ন এলাকা টাউনশ্রীপুর, ভোমরা, সাতক্ষীরা সদর শত্রুমুক্ত হতে থাকে।
১৯৭১ সালের ৭ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা সমন্বিত আক্রমণে পাকিস্তানি বাহিনীকে পরাজিত করে সাতক্ষীরা জেলার নিয়ন্ত্রণ নেন। এদিন সাতক্ষীরার আকাশে উড়েছিল স্বাধীন বাংলার পতাকা। মানুষের মুখে ফুটে ওঠে আনন্দের উচ্ছ্বাস-হানাদারমুক্ত স্বভূমিতে ফিরে আসার উষ্ণতার অনুভূতি।
সাতক্ষীরাকে মুক্ত করতে শহীদ নাজমুল, শহীদ কাজলদের মতো যারা আত্মোৎসর্গ করেছেন, তারা জাতির ইতিহাসে চিরস্মরণীয়। তাদের মহান ত্যাগের বিনিময়েই আজকের এই স্বাধীন মাটি, স্বাধীন দেশ।
মুক্তিযোদ্ধা মিজানুর রহমান জানান, মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার জন্য সাতক্ষীরা ট্রেজারি থেকে অস্ত্র লুট আর ন্যাশনাল ব্যাংক থেকে অলঙ্কার ও টাকা-পয়সা লুটের মধ্য দিয়ে শুরু মুক্তির সংগ্রাম। অষ্টম ও নবম সেক্টরের অধীনে ভারতের বিভিন্ন এলাকায় ট্রেনিং শেষে ২৯ এপ্রিল সাতক্ষীরার ভোমরা সীমান্তে প্রথম সম্মুখযুদ্ধ শুরু হয়। এ সময় পাকসেনাদের ২ শতাধিক সৈন্য নিহত হয়। ১৭ ঘণ্টাব্যাপী এ যুদ্ধে শহীদ হন মাত্র ৩ জন মুক্তিযোদ্ধা। আহত হন ২ জন। এরপর থেমে থেমে চলতে থাকে সাতক্ষীরার বিভিন্ন এলাকায় মুক্তিযোদ্ধাদের গুপ্ত হামলা। এসব যুদ্ধের মধ্যে ভোমরার যুদ্ধ, টাউনশ্রীপুর যুদ্ধ, বৈকারী যুদ্ধ, খানজিয়া যুদ্ধ উল্লেখযোগ্য। এ সব যুদ্ধে শহীদ হন সাতক্ষীরার ৩৩ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা। সন্তান হারানোর বেদনা ভুলে সেদিন মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে রাস্তায় নেমে আসেন সাতক্ষীরার মুক্তিপাগল আপামর জনতা।
বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সাতক্ষীরা ইউনিটের আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা সম শহিদুল ইসলাম জানান, ১৯৭১ সালের ২ মার্চ সাতক্ষীরা শহরে পাকিস্তানবিরোধী মিছিলে রাজাকাররা চাপড়া লজের সামনে গুলি করে হত্যা করে শহীদ আব্দুর রাজ্জাককে। আর সেখান থেকে শুরু হয় সাতক্ষীরার দামাল ছেলেদের মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়া। ২৯ এপ্রিল সাতক্ষীরার ভোমরা সীমান্তে প্রথম সম্মুখযুদ্ধ শুরু হয়।
মুক্তিযোদ্ধারা ওয়্যার হাউস উড়িয়ে দেন। এতে ব্যাপক ভীত-সন্ত্রস্ত হয় পাকসেনারা। রাতের আঁধারে বেড়ে যায় গুপ্ত হামলা। পিছু হটতে শুরু করে পাকসেনারা। ৬ ডিসেম্বর রাতে মুক্তিযোদ্ধাদের হামলায় টিকতে না পেরে বাঁকাল, কদমতলা ও বিনেরপোতা ব্রিজ উড়িয়ে দিয়ে পাকবাহিনী সাতক্ষীরা থেকে পালিয়ে যায়। ৭ ডিসেম্বর জয়ের উন্মাদনায় মেতে ওঠেন সাতক্ষীরার দামাল ছেলেরা।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শাহাদাত বরণকারী ১১৪ জনের পরিচয় শনাক্ত করতে, রায়েরবাজার কবরস্থান থেকে লাশ উত্তোলন করা শুরু করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। রবিবার (৭ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে সিআইডির প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মো. ছিবগাত উল্লাহ এ তথ্য জানান।
রবিবার সকাল থেকে মরদেহ উত্তোলনের কাজ শুরু করেছে সংস্থাটি। মরদেহগুলো তোলার পর ময়নাতদন্ত ও ডিএনএ নমুনা নিয়ে আবার যথাযথ প্রক্রিয়ায় দাফন করা হবে।
ছিবগাত উল্লাহ বলেন, ‘এই কবরস্থানে যারা নাম-পরিচয়হীন অবস্থায় শুয়ে আছেন, তাদের পরিচয় তখন যাচাই-বাছাই করা হয়নি। তাদের পরিচয় উদঘাটন করা জাতির প্রতি আমাদের একটি দায়িত্ব। আজ সেই মহান কাজের সূচনা হলো।’
জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থার (ওএইচসিএইচআর) মাধ্যমে আর্জেন্টিনা থেকে ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ লুইস ফন্ডিব্রাইডার ঢাকায় এসে পুরো কার্যক্রমে নেতৃত্ব দিচ্ছেন বলে জানান তিনি।
তিনি আরো বলেন, ‘এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে একাধিক বৈঠক হয়েছে। এ ব্যাপারে অজ্ঞাত শহীদদের পরিবার আবেদন করেছে। বিজ্ঞ আদালতের নির্দেশে এসব কাজ পরিচালিত হচ্ছে। আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুসরণ করে কবরস্থান থেকে ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য লাশ উত্তোলন করা হচ্ছে।’
সিআইডি প্রধান বলেন, ‘লাশ শনাক্তের জন্য ইতিমধ্যে ১০ জন আবেদন করেছেন। তবে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, এখানে শহীদের সংখ্যা ১১৪ জনের বেশি। প্রকৃত সংখ্যা লাশ উত্তোলনের পর জানা যাবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘লাশগুলোর পোস্টমর্টেম করা হবে এবং ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হবে। পরে ডিএনএ প্রোফাইল তৈরি করে ধর্মীয় সম্মান বজায় রেখে পুনঃদাফন করা হবে।’
মো. ছিবগাত উল্লাহ বলেন, ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদদের পরিচয় শনাক্ত হলে, পরিবার চাইলে লাশ তাদের কাছে হস্তান্তর করা হবে। ডিএনএ সংগ্রহের পর, যে কেউ আবেদন করলে সহজেই শনাক্ত করা যাবে। সিআইডির হটলাইন নম্বরগুলো জানিয়ে দেওয়া হবে, যাতে যে কেউ যোগাযোগ করতে পারেন।’
গত ৪ আগস্ট মোহাম্মদপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মাহিদুল ইসলামের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান ১১৪টি মরদেহ উত্তোলনের নির্দেশ দেন। আদালতের আদেশ অনুযায়ী, ২০২৪ সালের জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানে নিহত অজ্ঞাত ব্যক্তিদের পরিচয় শনাক্তের জন্যই এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। গত বছর বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় নিহত ১১৪ জন শহিদকে অজ্ঞাত পরিচয়ে মোহাম্মদপুরের রায়েরবাজার কবরস্থানে দাফন করা হয়।