স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন (এলজিআরডি) ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেছেন, রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার ব্যাপারে বর্তমান সরকার শিগগিরই পদক্ষেপ নেবে।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রথমত এটা অত্যন্ত ইতিবাচক যে, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার ব্যাপারে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেও এক ধরনের ‘ঐকমত্য’ তৈরি হচ্ছে। দেশের মানুষ তৎকালীন ক্ষমতাসীন ওই দলের অগণতান্ত্রিক এবং একগুয়েমী মনোভাব ও কার্যকলাপ মেনে নিতে পারেনি বলেই ৫ আগস্টের আগে ও পরে তাদের মধ্যে দলটি নিষিদ্ধ করার বিষয়ে ‘ঐকমত্য’ প্রতিষ্ঠিত হয়। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এমন ঐকমত্য তৈরি হলে সরকারের জন্য যে কোনো সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা সহজ হবে।
আসিফ মাহমুদ আজ শুক্রবার বার্তা সংস্থা বাসস’র সঙ্গে একান্ত সাক্ষাতকারে এসব কথা বলেন।
রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার ব্যাপারে সরকার সহসাই কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে কিনা? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, আমি মনে করি, সাধারণ মানুষ কিংবা রাজনৈতিক দল; যে বা যারাই হই না কেনো, আমরা এ দেশের জনগণকে ‘রিপ্রেজেন্ট’ করি। ফলে, ৫ আগস্টের পরে জনগণের যে আকাঙ্খা ও চাওয়ার জায়গা আছে, সেগুলোকে প্রাধান্য দেয়াটাই আমাদের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিৎ। সে জায়গা থেকে বিএনপি’র পক্ষ থেকে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের যে দাবি উঠেছে, আমি বিষয়টিকে সাধুবাদ জানাতে চাই।
অন্তর্বর্তী সরকারের যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বলেন, বিচারিক প্রক্রিয়া ছাড়াও ৪টি আইন রয়েছে, যেখানে সরকার নির্বাহী আদেশে যে কোনো দলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে। তবে, এটার লিগ্যাল ফ্রেমওয়ার্কটা (আইনি কাঠামো) কী হবে, এ বিষয়ে সরকার এখনো সিদ্ধান্ত নেয়নি।
তিনি বলেন, বিচারিক প্রক্রিয়ায় স্বাভাবিক ভাবেই জুলাই আগস্টের গণহত্যার সঙ্গে স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের সম্পৃক্ততা প্রমাণিত হওয়ার কথা। সেক্ষেত্রে আওয়ামী লীগকে দলীয় ভাবে নিষিদ্ধ করা, নিবন্ধন বাতিল করাসহ যে কোনো ব্যবস্থা সরকার গ্রহণ করতে পারে। তবে বিষয়টি যেহেতু আইনের বাস্তয়নের সঙ্গে যুক্ত, সেক্ষেত্রে সরকার প্রয়োজনীয় সকল প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই আওয়া লীগ নিষিদ্ধ করার বিষয়ে একটি চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে আসবে।
তিনি বলেন, আমি আশ্বস্ত করতে চাই, বাংলাদশের জনগণের চাওয়া প্রতিফলন ঘটাতে সরকার এ ব্যাপারে দ্রুতই পদক্ষেপ নেবে।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষার্থীদের নতুন রাজনৈতিক দল গঠন প্রসঙ্গে সরকারের এই উপদেষ্টা বলেন, ৫ আগস্টের পরিবর্তনের পরে আমরা একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করেছি। একটি গণঅভ্যুত্থান যারা ঘটায়, পরবর্তী প্রক্রিয়ার সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ততা না থাকার কারণে আমরা অতীতে দেখেছি যে, অভ্যুত্থানের অর্জনগুলো সব নষ্ট হয়ে যায়।
তিনি বলেন, নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থানের পরেও মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়নি। এ বিষয়গুলো বিবেচনা করেই যারা স্বৈরাচার হটানোর আন্দোলনে অগ্রভাগে নেতৃত্ব দিয়েছে তারা একটি দল গঠনের চিন্তা করেছে। তাছাড়া ৫ আগস্টের পর গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেয়া অনেকেই কোনো রাজনৈতিক ব্যানারে যায়নি।
আসিফ বলেন, ‘বর্তমানে তাদের ভেতরেও রাষ্ট্র গঠনের স্পৃহা তৈরি হয়েছে। এই শক্তিটাকে সংহত করার জন্য একটা রাজনৈতিক দলের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, দল গঠনের সিদ্ধান্ত হলেও এ দলের কোন নাম এখনো চূড়ান্ত হয়নি। ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয়ার্ধে নতুন দলটির আত্মপ্রকাশের বিষয়ে চিন্তা করা হচ্ছে বলে এখন পর্যন্ত জানতে পেরেছি।’
ছাত্রদের নতুন দলে সরকারের কোন প্রতিনিধি থাকবে কিনা? এমন প্রশ্নের জাবাবে আসিফ মাহমুদ বলেন, এ বিষয় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে আমাদের নীতিগত অবস্থান হলো- বর্তমান সরকারে ছাত্র প্রতিনিধি যারা আছেন তাদের মধ্যে থেকে কেউ যদি রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় অংশ গ্রহণ করেন, সেক্ষেত্রে তাদের সরকারে থাকাটা ঠিক হবে না। কেউ যদি সেই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যায় তো অবশ্যই সরকার থেকে পদত্যাগ করে তবেই সেখানে যাবে।
কারণ, এ সরকার একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন করার দায়িত্ব নিয়েছে। পাশাপাশি, দেশের সংস্কার এবং ফ্যাসিস্টদের বিচার কাজ শেষ করার দায়িত্বও তাদের উপর অর্পিত রয়েছে। সেক্ষেত্রে কোন ধরণের ‘কনফ্লিক্ট’ যেন তৈরি না হয় সে বিষয়ে সর্বোচ্চ সতর্ক থেকেই সকল সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষার্থীদের নতুন রাজনৈতিক দলে তিনি থাকবেন কি না এ বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেননি জানিয়ে আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি ভাবিনি। কিছু বিষয় পর্যালোচনা করছি। সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হলে সবাই জানতে পারবে।’
সরকার চায় সংস্কার, রাজনৈতিক দলগুলো চায় নির্বাচন, এক্ষেত্রে বিষয় দুইটি সাংঘর্ষিক হয়ে যাচ্ছে কিনা? এমন প্রশ্নের জবাবে এলজিআরডি উপদেষ্টা বলেন, না, মোটেই সাংঘর্ষিক নয়। এ বিষয়গুলোর পুরোটাই আমাদের সদিচ্ছার ওপর নির্ভর করে।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এই সরকার স্পষ্টই একটি ইতিবাচক রাজনৈতিক কাঠামো নির্মাণের দায়িত্ব নিয়ে ক্ষমতায় এসেছে। ৫ আগস্টের পরে মানুষের মধ্যে এই মনোভাবই ছিল যে- যে কোনো একটি রাজনৈতিক দলকে যদি ক্ষমতায় বসিয়ে দেয়া হয়, তবে সেও ওই একই গতানুগতিক ধারায় কাজ করবে। তবে এসব বিষয়ে অনেকগুলো চ্যালেঞ্জ এই সরকারও ফেইস করছে। কারণ, সমাজের প্রত্যেকটি কাঠামোতেই স্বৈরাচারের দোসররা রয়ে গেছে।
আসিফ মাহমুদ সংস্কার কমিশন যে ৬ রির্পোট দেয়া হয়েছে প্রসঙ্গটি উল্লেখ করে বলেন, এই রিপোর্টগুলো যথাযথ স্টেক হোল্ডারের কনসালটেশনের মাধ্যমে বাস্তবায়নের মধ্য দিয়েই একটি সুষ্ঠ নির্বাচনের মাঠ তৈরি হতে পারে।
তিনি আরও বলেন, ‘যে রাজনৈতিক দলগুলো শেখ হাসিনার সময় বলে আসছিল, বিদ্যামান কাঠামোতে নির্বাচন সম্ভব নয়, তারা এখন আবার একই বিদ্যমান কাঠামোতে নির্বাচনের কথা কোন গ্রাউন্ড থেকে বলছে এটা আমার কাছে স্পষ্ট নয়। সেটাও তাদেরকে স্পষ্ট করতে হবে। একই সংবিধান, আইনকানুন রেখে নির্বাচন করলে সেটা স্বৈরাচার শেখ হাসিনার আমলের নির্বাচন থেকে কতটা আলাদা হবে সেটা আমার বোধগম্য নয়।’
যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা যদি সংস্কার ছাড়া নির্বাচন করে কোনো দলের হাতে ক্ষমতা দিয়ে দিই, তাদের জন্য সরকার চালানো কঠিন হবে। এ কারণেই ছয়টা সংস্কার কমিশনকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। কারণ, এগুলো শাসনতান্ত্রিক। বাকি সংস্কারগুলো জনস্বার্থমূলক। সেগুলোও সমান গুরুত্বপূর্ণ সুতরাং আমরা মনে করি, এখানে মিনিংফুল সংস্কারের মাধ্যমেই নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত হতে পারে এবং সংস্কার কার্যক্রম ও আওয়ামী লীগের দৃশ্যমান বিচারের মাধ্যমেই নির্বাচনের ক্ষেত্র প্রস্তুত হবে।’
জীবদ্দশায় জনসমক্ষে মাত্র তিনবার কেঁদেছিলেন তিনি। প্রথমবার, যেদিন চট্টগ্রাম থেকে স্বামী শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মরদেহ আনা হয়েছিল ঢাকায়। দ্বিতীয়বার, সেনানিবাসের বাড়ি থেকে উচ্ছেদ হওয়ার পর। সেদিন দেশবাসী দেখেছিল তার অশ্রুসিক্ত চোখ। এরপর ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যুতে অশ্রুসজল হয়েছিলেন তিনি। এরপর আর কোনো দিন কেউ তাকে কাঁদতে দেখেনি। জেল-জুলুম, নির্যাতন, হিংসা-বিদ্বেষ, শত লাঞ্ছনাতেও তিনি ছিলেন অটল, অবিচল। সেই আপসহীন নেত্রী, বিএনপি চেয়ারপারসন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া জীবনের পরম সত্যের কাছে সঁপে দিলেন নিজেকে। এবার আর তিনি নিজে কাঁদলেন না; কোটি কোটি মানুষকে কাঁদিয়ে চলে গেলেন অসীমশূন্যে; রেখে গেলেন আপসহীন নেতৃত্বের জলন্ত উদাহরণ। তিনি মিশে থাকবেন সবুজ-শ্যামল বাংলার ধানের শীষে।
দীর্ঘদিনের বন্দিদশায় মনে ও শরীরে ভেঙে পড়েছিলেন আপসহীন নেত্রী। কারাগারে থাকার সময় বিগত সরকার তাকে চিকিৎসার ন্যূনতম সুযোগও দেয়নি। জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানে স্বৈরাচারের বিদায়ের পর সেই বন্দিদশা থেকে মুক্ত হন তিনি। এরপর চিকিৎসা নিতে লন্ডনে যান চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি। লন্ডনে চিকিৎসায় তার অনেকটা শারীরিক উন্নতি হয়। সেখানে বড় ছেলে তারেক রহমানের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করেন। দেশে ফিরে আসেন ৬ মে। সেদিন লাখো মানুষ তাদের প্রিয় নেত্রীর প্রত্যাবর্তন উদযাপন করছিলেন। বিমানবন্দর থেকে গুলশানের বাসভবন ফিরোজায় তাকে পৌঁছতে লেগে যায় দীর্ঘ সময়। তবে ফিরে আসার পর থেকে প্রায়ই গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়তেন তিনি। বয়সও ছিল অনেকটা প্রতিকূল। সর্বশেষ গত ২৩ নভেম্বর, রোববার, শেষবারের মতো এভারকেয়ার হাসপাতালে যান চিকিৎসা নিতে। এরপর ৩৮ দিন লড়াই করে গত মঙ্গলবার ভোরে মেনে নিলেন পরম সত্য। দেশবাসীর কাছ থেকে চিরবিদায় নিলেন আপসহীন নেত্রী। আর গতকাল বুধবার স্বামী শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের পাশে নিলেন চিরআশ্রয়।
এত দিন ধরে খালেদা জিয়াকে বাঁচিয়ে রাখতে পরিবার, দল ও সরকারের পক্ষ থেকে এমন কোনো প্রচেষ্টা ছিল না, যা করা হয়নি। তাকে ঘিরে চলছিল উন্নত চিকিৎসা, নিরবচ্ছিন্ন পর্যবেক্ষণ আর দেশ-বিদেশের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সমন্বিত পরামর্শ। এর বাইরে পরিবারের সদস্যরা প্রতিদিন চোখ ভিজিয়েছেন প্রার্থনায়।
সমর্থকরা হাসপাতালের বাইরে অশ্রুসিক্ত হয়ে অপেক্ষায় থেকেছেন তার সুস্থতা কামনায়। সারাদেশে সাধারণ মানুষ প্রিয় নেত্রীর দীর্ঘায়ু কামনা করেছেন মসজিদ-মন্দির-গির্জায়। দেশীয় চিকিৎসকদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও চীনের চিকিৎসকরা সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে গেছেন, যেন সংকটের এই গভীর অন্ধকার ভেদ করে তিনি ফিরতে পারেন জীবনের আলোয়। সবার আকুতি ছিল একটাই- খালেদা জিয়া বেঁচে থাকুক, সুস্থ হয়ে আবার উঠে দাঁড়ান।
হাসপাতালে ভর্তির পর খালেদা জিয়াকে অতিগুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির মর্যাদা দিয়ে সম্মানিত করেছিল সরকার। তার নিরাপত্তায় নিয়োগ করা হয়েছিল এসএসএফ। কিন্তু পৃথিবীর কোনো পাহারার কি সাধ্য আছে মৃত্যুদূতকে ঠেকানোর? হয়তো রোগশয্যায় শুয়ে তিনিও লড়াই করে যাচ্ছিলেন মৃত্যুর সঙ্গে। যে লড়াইয়ে মানুষের হারই হয় অনিবার্য।
খালেদা জিয়ার মৃত্যুসংবাদ ছড়িয়ে পড়ার পর শোকে স্তব্ধ হয়ে পড়ে পুরো দেশ। শোক জানায় খালেদা জিয়ার নিজের দল বিএনপিসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন। দেশ-বিদেশের রাষ্ট্রনায়ক এবং গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরাও শোক জানান।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক এবং গতকাল বুধবার খালেদা জিয়ার জানাজা ও দাফনের দিনে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেন।
মায়ের মৃত্যুর পর বড় ছেলে তারেক রহমান বলেছেন, ‘আমার কাছে খালেদা জিয়া একজন মমতাময়ী মা, যিনি নিজের সমগ্র জীবন উৎসর্গ করেছেন দেশ ও মানুষের জন্য।’
রাজনীতিবিদদের দীর্ঘ যাত্রাপথে উত্থান-পতন ছায়াসঙ্গী হয়ে থাকে। মামলা-মোকদ্দমা, কারাবাস, জিঘাংসা কিংবা অন্ধ বিদ্বেষের সবই রাজনীতিকদের জীবনে বারবার ফিরে আসে। খালেদা জিয়ার জীবন এসব ঝড়ঝাপটার মাঝে কঠিন এক পথরেখা এঁকে দিয়েছিল। ব্যক্তিগত জীবনে স্বামী-সন্তান হারানোর অসহনীয় শোক, অকারণ অপবাদ, দীর্ঘ রোগযন্ত্রণা—এসবের ভারও তাকে বয়ে বেড়াতে হয়েছে নিঃশব্দ দৃঢ়তায়।
মুক্তিযুদ্ধের দিনগুলোতে খালেদা জিয়ার জীবনে নেমে এসেছিল এক গভীর অন্ধকার। মেজর জিয়াউর রহমান যুদ্ধের অত্যন্ত সংকটময় মুহূর্তে প্রায় ৩০০ সৈনিক নিয়ে বাসভবনের পাশ দিয়ে চলে যান। স্ত্রী-সন্তানের মুখ দেখার সুযোগটুকুও পাননি। ছোট দুই ছেলেকে বুকে নিয়ে বিপন্ন সময়ের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে নিঃসীম অপেক্ষায় থেকেছেন খালেদা জিয়া। এরপর চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় পালিয়ে আসা, ঠিকানা বদলে আত্মগোপন করা আর অদৃশ্য আতঙ্কের সঙ্গে ছিল তার প্রতিদিনের লড়াই। সবই তার পিছু নিয়েছিল। ১৯৭১ সালের ২ জুলাই ঢাকার সিদ্ধেশ্বরীর একটি বাড়ি থেকে পাকিস্তানি সেনারা তাকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়। এরপর বন্দি অবস্থায় একাকী কাটাতে হয় যুদ্ধের ভয়াবহ দিনগুলো। সময় স্বয়ং যেন তার সহনশীলতার পরীক্ষা নিচ্ছিল।
স্বাধীনতার পরও খালেদা জিয়ার পথ ছিল অনাবৃত কণ্টকময়। মতাদর্শের দ্বন্দ্ব, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের ব্যক্তিগত বিদ্বেষ, অসংখ্য দুর্বিনীত মন্তব্য—সবই তাকে বারবার আহত করেছে অন্তরে-বাইরে।
বহু স্মৃতিবিজড়িত সেনানিবাসের বাড়ি থেকে ২০১৩ সালের ১৩ নভেম্বর উচ্ছেদের মুহূর্তে সংবাদমাধ্যমের সামনে তাকে দেখা গিয়েছিল অশ্রুসিক্ত চোখে, অবিচলচিত্তে দাঁড়িয়ে থাকা এক দৃঢ়মানবী হিসেবে। এমন অজস্র ক্ষত-বিক্ষত ঘটনার ভিড়েও তিনি কখনো ভেঙে পড়েননি। সময়ের নির্মম আঘাত ও মানবিক নিষ্ঠুরতার বিরুদ্ধে তার নীরব প্রতিরোধ ছিল ধৈর্যের, মর্যাদার এবং নিজের ওপর অনিঃশেষ আস্থার। অনমনীয় দৃঢ়তায় তিনি বারবার প্রমাণ করেছেন, মানুষ যখন অন্তর্দীপ জ্বালিয়ে রাখে, তখন বাইরের ঝড় তাকে নত করতে পারে না।
খালেদা জিয়ার বাবা এস্কান্দার মজুমদারের আদিবাস ছিল ফেনী জেলার পরশুরাম থানার শ্রীপুর গ্রামে। পেশায় চা ব্যবসায়ী। ১৯৪৭ সালের দেশভাগের পর পূর্ব ভারতের জলপাইগুড়ি থেকে চায়ের ব্যবসা বন্ধ করে তিনি স্থায়ীভাবে চলে আসেন বাংলাদেশের দিনাজপুরে। তার আগে জলপাইগুড়িতেই ১৯৪৬ সালে জন্ম হয় খালেদার। মা ছিলেন তৈয়বা বেগম।
১৯৬০ সালের ৫ আগস্ট দিনাজপুরের মুদিপাড়ার পৈতৃক বাড়িতে তাদের বিয়ে হয়। বিয়ের পর তিনি ‘বেগম খালেদা জিয়া’ নামে পরিচিতি পান।
জিয়াউর রহমান ও খালেদা জিয়া দম্পতির দুই ছেলে—জ্যেষ্ঠ তারেক রহমানের জন্ম ১৯৬৫ সালের ২০ নভেম্বর এবং কনিষ্ঠ আরাফাত রহমান কোকোর জন্ম ১৯৭০ সালের ১২ আগস্ট। কোকো ২০১৫ সালের ২৪ জানুয়ারি হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে মালয়েশিয়ায় মারা যান। সেদিন কান্না ভুলে শোকে পাথর হয়ে ছিলেন খালেদা জিয়া।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিনি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে খালেদা জিয়াকে দৃঢ় সংকল্প ও বিশ্বাসের বিরল এক নেতা হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
চিঠিতে তিনি খালেদা জিয়ার অবদান স্মরণ করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানান।
বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনের ফেসবুকে চিঠিটি প্রকাশ করা হয়।
চিঠিতে বলা হয়, ‘তারেক রহমানের নেতৃত্ব দুই দেশের গভীর ও ঐতিহাসিক অংশীদারত্বের নতুন সূচনা ও সমৃদ্ধি নিশ্চিত করবে বলে প্রত্যাশা করেন নরেন্দ্র মোদি।’
বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) দুপুরে জাতীয় সংসদ ভবনে সাক্ষাতের সময় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের হাতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ওই চিঠি তুলে দেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। খালেদা জিয়ার প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানাতে ঢাকায় এসেছিলেন তিনি।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছে ৩০ ডিসেম্বর লিখা চিঠিতে খালেদা জিয়ার সঙ্গে তার বৈঠকের স্মৃতিচারণ করেছেন।
চিঠিতে নরেন্দ্র মোদি লেখেন, ‘আপনার মা, বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মৃত্যুর সংবাদে আমি গভীর শোক প্রকাশ করছি। আপনার ব্যক্তিগত এই গভীর ক্ষতির জন্য আমার আন্তরিক সমবেদনা গ্রহণ করুন। তার আত্মা চিরশান্তিতে শান্তি লাভ করুক।’
তারেক রহমানকে দেওয়া চিঠিতে শোক প্রকাশ করে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি প্রয়াত বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে তার বৈঠকের স্মৃতিচারণ করেছেন।
তিনি লেখেন, ‘২০১৫ সালের জুনে ঢাকায় বেগম সাহেবার সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ এবং আলোচনার কথা আমি আন্তরিকভাবে স্মরণ করছি। তিনি ছিলেন দৃঢ় সংকল্প ও বিশ্বাসের বিরল এক নেত্রী এবং বাংলাদেশের প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী হওয়ার গৌরব অর্জন করেছিলেন। বাংলাদেশের উন্নয়নে, সেই সঙ্গে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ককে শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে তিনি অনেক গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিলেন। তার মৃত্যুতে এক অপূরণীয় শূন্যতা তৈরি হলেও তার দৃষ্টিভঙ্গি এবং উত্তরাধিকার অক্ষুণ্ণ থাকবে। আমি নিশ্চিত যে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল আপনার দক্ষ নেতৃত্বে তার আদর্শ এগিয়ে নিয়ে যাবে এবং ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে গভীর ও ঐতিহাসিক অংশীদারত্বের একটি নতুন সূচনা এবং সমৃদ্ধি নিশ্চিত করার জন্য একটি পথপ্রদর্শক আলো হিসেবে কাজ করবে।’
চিঠিতে তিনি আরও লেখেন, ‘জাতীয় শোকের এই মুহূর্তে আমার ভাবনাও বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে আছে, যারা তাদের ইতিহাসে অসাধারণ শক্তি ও মর্যাদা প্রদর্শন করেছেন। আমি নিশ্চিত, তারা তাদের যৌথ মূল্যবোধ, গণতান্ত্রিক ঐতিহ্য এবং গভীর জাতীয় ঐক্যের ভিত্তিতে শান্তি ও সম্প্রীতির সঙ্গে এগিয়ে যাবে। আবারও আমার আন্তরিক সমবেদনা গ্রহণ করুন। আমি সর্বশক্তিমানের কাছে প্রার্থনা করি যেন তিনি আপনাকে এবং আপনার পরিবারকে এই কঠিন সময় অতিক্রম করার শক্তি ও সহিষ্ণুতা দিন। আমি আপনার ভবিষ্যৎ কর্মকাণ্ডের জন্যও শুভকামনা জানাই।’
একটি দীর্ঘ রাজনৈতিক মহাকাব্যের শেষ পাতাটি উল্টে গেল। বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) বাদ জোহর রাজধানী মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে হয়েছে দেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার জানাজা। এরপর জিয়া উদ্যানে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের পাশেই চিরঘুমে শায়িত হন তিনি। তাকে পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করা হয়েছে। জীবনের দীর্ঘ লড়াই, কারাবাস, একাকিত্ব আর অসুস্থতার সব গ্লানি মুছে দিয়ে তিনি ফিরে গেলেন তার জীবনসঙ্গীর পাশে।
দাফনের প্রতিটি ধাপে নিশ্চিত করা হয় পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদা। দেশনেত্রীর শেষ বিদায় যেন সুশৃঙ্খল হয়, সে জন্য মোতায়েন ছিল ১০ হাজারেরও বেশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য। সেনাবাহিনীর সদস্যরাও ছিলেন নিরাপত্তার দায়িত্বে। তবে এই কঠোর নিরাপত্তার চেয়েও বড় হয়ে দেখা দেয় মানুষের আবেগ। মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষও বিশেষ সার্ভিস চালু করেছে, যেন দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ এসে জানাজায় শরিক হতে পারেন।
বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যু কেবল একটি দলের নেত্রীর বিদায় নয়, এটি একটি আপসহীন সংগ্রামের সমাপ্তি। যিনি কখনো মাথা নত করেননি, যিনি কারাগারের নির্জন প্রকোষ্ঠেও গণতন্ত্রের প্রদীপ জ্বালিয়ে রাখার স্বপ্ন দেখতেন, আজ তিনি সব পিছুটান ছিঁড়ে চলে গেলেন অন্য আলোকে।
দল-মত নির্বিশেষে সাধারণ মানুষ স্বীকার করছেন, বাংলার রাজনীতিতে খালেদা জিয়া ছিলেন এমন এক স্তম্ভ, যার অভাব পূরণ হওয়ার নয়। তার মায়াভরা সেই চিরচেনা হাসি আর জনসভায় ‘খোদা হাফেজ, বাংলাদেশ জিন্দাবাদ’ বলে বিদায় নেওয়া সেই দৃশ্য এখন কেবলই স্মৃতি।
বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) যখন জিয়া উদ্যানের মাটি তার গায়ে দেওয়া হয়, তখন একটি অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটে ঠিকই, কিন্তু তার রেখে যাওয়া আদর্শ আর সাহসিকতার গল্পগুলো কোটি মানুষের হৃদয়ে অম্লান হয়ে থাকবে। বাংলার আকাশ-বাতাস যেন এক করুণ সুরে গাইছে- ‘বিদায় দেশনেত্রী, বিদায় মা’।
এর আগে, জাতীয় সংসদ ভবন ও মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে বিপুল মানুষের অংশগ্রহণে তার জানাজা হয়। এ সময় ঢাকার বিভিন্ন রাস্তা লোকে লোকারণ্য হয়ে ওঠে। পরে সংসদ ভবন থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কড়া নিরাপত্তায় পতাকায় মোড়া লাশবাহী গাড়িতে করে খালেদা জিয়ার মরদেহ জিয়া উদ্যানে নেওয়া হয়। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে বিশেষ একটি বাহনে করে খালেদা জিয়ার মরদেহ জিয়াউর রহমানের সমাধির কাছে নেওয়া হয়।
সমাধির কাছাকাছি নেওয়ার পর খালেদা জিয়ার মরদেহবাহী কফিন কাঁধে নিয়ে যান সেনা ও নৌবাহিনীর সদস্যরা।
দাফনের প্রক্রিয়া চলার সময় তারেক রহমান, স্ত্রী জুবাইদা রহমান, মেয়ে জাইমা রহমান, ছোট ভাই আরাফাত রহমানের স্ত্রী শামিলা রহমান, তার ছোট মেয়ে জাফিরা রহমানসহ পরিবারের সদস্যরা, বিএনপির নেতা-কর্মী, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা দাঁড়িয়ে শোক ও শ্রদ্ধা জানান।
বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানিয়ে ঢাকা ত্যাগ করেছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) সন্ধ্যার আগে ভারতীয় বিমানবাহিনীর একটি বিশেষ ফ্লাইটে তিনি ঢাকা ছাড়েন।
মাত্র কয়েক ঘণ্টার সংক্ষিপ্ত সফরে তিনি সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ বার্তা পৌঁছে দেন।
ঢাকার ভারতীয় হাইকমিশনের এক কর্মকর্তা জানান, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিকেল ৫টায় ঢাকা ত্যাগ করেছেন।
খালেদা জিয়াকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে কয়েক ঘণ্টার সংক্ষিপ্ত সফরে আজ দুপুরেই তিনি ঢাকায় আসেন।
সফরকালে জয়শঙ্কর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
এ সময় তিনি খালেদা জিয়ার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও সমবেদনা জানিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির একটি ব্যক্তিগত চিঠি হস্তান্তর করেন। ভারত সরকার এবং জনগণের পক্ষ থেকেও গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেন তিনি।
উপদেষ্টাদের সঙ্গে বৈঠক ও কুশল বিনিময় সংক্ষিপ্ত এই সফরে জয়শঙ্কর অন্তর্বর্তী সরকারের আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল এবং প্রধান উপদেষ্টার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
এ ছাড়া খালেদা জিয়াকে শ্রদ্ধা জানাতে ঢাকায় আসা পাকিস্তানের পার্লামেন্টের স্পিকার সরদার আইয়াজ সাদিকসহ দক্ষিণ এশিয়ার কয়েকজন মন্ত্রীর সঙ্গেও তিনি কুশল বিনিময় করেন।
উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এস জয়শঙ্করই প্রথম ভারতীয় মন্ত্রী, যিনি ঢাকা সফরে এলেন।
বিএনপি চেয়ারপারসন ও তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জানাজায় অংশ নিতে এসে আজ বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) ঢাকায় এক বিরল ও তাৎপর্যপূর্ণ সাক্ষাতে মিলিত হয়েছেন পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের স্পিকার সরদার আয়াজ সাদিক এবং ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এস জয়শঙ্কর। পাকিস্তানের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম জিও টিভির বরাতে জানা গেছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর প্রতি শেষ শ্রদ্ধা নিবেদনের সময় এই দুই শীর্ষ নেতার দেখা হয়। সাক্ষাতকালে তাঁরা একে অপরের সাথে অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণভাবে করমর্দন করেন এবং সংক্ষিপ্ত কুশল বিনিময় করেন। দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনীতিতে দীর্ঘদিনের টানাপোড়েনের মাঝে দুই প্রতিবেশী দেশের এমন উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদের সৌজন্যমূলক সাক্ষাৎ কূটনৈতিক মহলে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
দেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার প্রয়াণে আজ রাজধানী জুড়ে এক গভীর শোকাতুর পরিবেশ বিরাজ করছে। ৮০ বছর বয়সে না ফেরার দেশে পাড়ি জমানো এই বরেণ্য নেত্রীর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে আসা ভারত ও পাকিস্তানের এই দুই প্রতিনিধির অংশগ্রহণ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তাঁর নেতৃত্বের গুরুত্বকেই পুনরায় ফুটিয়ে তুলেছে। জানাজা ও দাফন প্রক্রিয়াকে কেন্দ্র করে পুরো ঢাকায় নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলার পাশাপাশি শোকের প্রতীক হিসেবে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়েছে। জয়শঙ্কর ও সাদিক ছাড়াও আরও অনেক দেশের প্রতিনিধিরা এই ঐতিহাসিক শোকাবহ অনুষ্ঠানে শরিক হতে বর্তমানে ঢাকায় অবস্থান করছেন।
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পাকিস্তানের স্পিকারের এই আকস্মিক কুশল বিনিময় বিশেষ গুরুত্ব বহন করছে কারণ ২০২৫ সালের মে মাসে দুই দেশের মধ্যে একটি সংক্ষিপ্ত অথচ অত্যন্ত তীব্র সামরিক সংঘাত সংঘটিত হয়েছিল। ওই সংঘাতের পর এই প্রথম নেতৃত্ব পর্যায়ে দুই দেশের প্রতিনিধিদের মধ্যে এমন কোনো সরাসরি ও প্রকাশ্যে সৌজন্যমূলক মোলাকাত ঘটল। বেগম খালেদা জিয়ার চিরবিদায়ের লগ্নটি যেন এক মুহূর্তের জন্য হলেও দুই বৈরী দেশের প্রতিনিধিদের একই কাতারে নিয়ে এল। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এক শোকাবহ প্রেক্ষাপটে ভারত ও পাকিস্তানের এই কূটনৈতিক শিষ্টাচার আগামীর দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়নের ক্ষেত্রে একটি ইতিবাচক ও তাৎপর্যপূর্ণ সংকেত হতে পারে। মূলত এক মহান নেত্রীর বিদায়বেলাকে কেন্দ্র করে ঢাকায় আজ দেশি-বিদেশি বিশিষ্ট ব্যক্তিদের এক অনন্য মিলনমেলা পরিলক্ষিত হয়েছে।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার জানাজায় অংশ নিতে এবং তাঁর প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানাতে ঢাকায় আসা বিভিন্ন দেশের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের একাধিক উপদেষ্টা। আজ বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) জাতীয় সংসদ ভবন চত্বরে এই বিশেষ সাক্ষাৎ ও মতবিনিময় অনুষ্ঠিত হয়। অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান আগত বিদেশি অতিথিদের স্বাগত জানান এবং তাঁদের সাথে আনুষ্ঠানিক আলোচনায় মিলিত হন।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক বার্তায় জানানো হয়েছে, উপদেষ্টাদ্বয় সফররত ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এস জয়শঙ্কর, পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের স্পিকার সরদার আয়াজ সাদিক, নেপালের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বালা নন্দ শর্মা এবং ভুটানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডি. এন. ধুঙ্গেলের সঙ্গে আলাদাভাবে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। শোকের এই কঠিন সময়ে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের সাথে সংহতি প্রকাশ করতে এবং বরেণ্য এই নেত্রীকে শেষ বিদায় জানাতে সশরীরে উপস্থিত হওয়ার জন্য উপদেষ্টারা সকল বিদেশি অতিথির প্রতি সরকারের পক্ষ থেকে গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
সাক্ষাৎকালে উপদেষ্টারা উল্লেখ করেন যে, বেগম খালেদা জিয়ার প্রয়াণে আন্তর্জাতিক মহলের এই স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ তাঁর মহানুভবতা ও নেতৃত্বের বিশ্বব্যাপী গ্রহণযোগ্যতারই বহিঃপ্রকাশ। বৈঠকে বিদেশি অতিথিরাও বাংলাদেশের জনগণের প্রতি তাঁদের সমবেদনা জানান এবং মরহুমার বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করেন। রাষ্ট্রীয় এই শোকাবহ আবহে জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত এই উচ্চপর্যায়ের সৌজন্য সাক্ষাৎটি কূটনৈতিকভাবে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। বরেণ্য এই নেত্রীর বিদায়বেলাকে মর্যাদাপূর্ণ করতে প্রতিবেশী দেশগুলোর এমন সংহতি প্রদর্শনকে উপদেষ্টারা বিশেষ গুরুত্বের সাথে মূল্যায়ন করেছেন। মূলত এক কিংবদন্তি নেত্রীর চিরবিদায়বেলাকে কেন্দ্র করে আজ ঢাকায় দেশি-বিদেশি বিশিষ্ট ব্যক্তিদের এক মিলনমেলা পরিলক্ষিত হয়েছে।
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এস জয়শঙ্কর আজ এক তাৎপর্যপূর্ণ বক্তব্যে আশা প্রকাশ করেছেন যে, বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক আদর্শ এবং মূল্যবোধ আগামী দিনে ঢাকা ও দিল্লির মধ্যকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উন্নয়নে একটি শক্তিশালী দিকনির্দেশক হিসেবে কাজ করবে। বুধবার বিকেলে জাতীয় সংসদ ভবনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সাথে এক বিশেষ সাক্ষাৎ শেষে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে তিনি এই মন্তব্য করেন। জয়শঙ্কর তাঁর পোস্টে উল্লেখ করেন যে, দুই দেশের অংশীদারত্বকে আরও উচ্চতায় নিয়ে যেতে বেগম জিয়ার জীবনদর্শন ও মূল্যবোধ আগামীর পথ দেখাবে।
এই সাক্ষাতের সময় ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির পক্ষ থেকে একটি বিশেষ ব্যক্তিগত চিঠি এবং ভারত সরকারের আনুষ্ঠানিক শোকবার্তা তারেক রহমানের হাতে তুলে দেন। তিনি ভারত সরকার ও সেদেশের জনগণের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের মানুষের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেন। দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক সম্পর্কের প্রেক্ষাপটে ভারতের এই উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি পাঠিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করাকে বিশ্লেষকরা অত্যন্ত ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন।
বৈঠক পরবর্তী এক প্রতিক্রিয়ায় বিএনপি তাদের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে জানিয়েছে, প্রতিবেশী দেশ ভারত বেগম খালেদা জিয়ার প্রয়াণে গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে যে শোকবার্তা পাঠিয়েছে, সেখানে তাঁকে ‘গণতন্ত্রের জননী’ এবং ‘সাহস ও সংগ্রামের এক অনন্য প্রতীক’ হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে। ভারত সরকারের শোকবার্তায় বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে খালেদা জিয়ার আজীবনের আপসহীন ভূমিকার বিশেষ প্রশংসা করা হয়েছে বলে দলটি নিশ্চিত করেছে।
উল্লেখ্য, বেগম খালেদা জিয়ার জানাজায় সশরীরে অংশ নিতে এবং ভারত সরকারের পক্ষ থেকে অন্তিম শ্রদ্ধা জানাতে আজ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে একটি বিশেষ বিমানে ঢাকা পৌঁছান ড. এস জয়শঙ্কর। বিমানবন্দরে আনুষ্ঠানিকতা শেষে তিনি সরাসরি তারেক রহমানের সাথে সৌজন্য সাক্ষাতে মিলিত হন এবং পরবর্তীতে ভারত সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে মরহুমার জানাজায় শরিক হয়ে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। বরেণ্য এই নেত্রীর বিদায়ে ভারতের এই জোরালো সহমর্মিতা ও কূটনৈতিক শিষ্টাচার রাজনৈতিক মহলে এক নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। মূলত একটি ঐতিহাসিক রাজনৈতিক অধ্যায়ের পরিসমাপ্তিতে দুই দেশের সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার বার্তাই দিলেন ভারতের এই শীর্ষ কূটনীতিক।
দক্ষিণী চলচ্চিত্রের প্রবাদপ্রতিম অভিনেতা মোহনলালের মা শান্তাকুমারী আর নেই। গত মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) কোচির এলামাক্কারায় অভিনেতার নিজস্ব বাসভবনে তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৯০ বছর। পরিবার সূত্রে জানা গেছে, তিনি দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত ও মস্তিষ্কজনিত বিভিন্ন শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন। পেশাগত জীবনে অত্যন্ত সফল শান্তাকুমারী কেরালা সরকারের আইন সচিব হিসেবে দীর্ঘ সময় দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
এই মহীয়সী নারীর প্রয়াণের খবর ছড়িয়ে পড়লে পুরো দক্ষিণী চলচ্চিত্র অঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে আসে। প্রিয় অভিনেতার শোকাতুর সময়ে সমবেদনা জানাতে এবং শান্তাকুমারী দেবীকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে এলামাক্কারার বাড়িতে ভিড় করেন মোহনলালের ঘনিষ্ঠ বন্ধু, চলচ্চিত্র জগতের সহকর্মী ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা। মূল নিবাস পাঠানামথিট্টা জেলার এলান্থুর গ্রামে হলেও জীবনের দীর্ঘ সময় তিনি তিরুবনন্তপুরমের ‘হিল ভিউ’ বাসভবনে কাটিয়েছেন। আজ বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) তিরুবনন্তপুরমে তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন করার কথা রয়েছে। মূলত এক বর্ণাঢ্য কর্মজীবন আর সফল মাতৃত্বের ইতি টেনে না ফেরার দেশে পাড়ি জমালেন তিনি।
তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার দাফন আজ বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) বিকেলে পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সম্পন্ন হয়েছে। শেরেবাংলা নগরের জিয়া উদ্যানে তাঁর দীর্ঘ রাজনৈতিক সহযাত্রী ও স্বামী স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবরের পাশেই তাঁকে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়েছে। দাফনের আনুষ্ঠানিকতা শেষে এখন মরহুমার কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ এবং শেষ সময়ের ধর্মীয় মোনাজাত ও শ্রদ্ধা নিবেদন চলছে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের রাজনীতির এক বর্ণাঢ্য ও ঐতিহাসিক অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি ঘটল।
দাফন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার সময় কবরের পাশে উপস্থিত ছিলেন মরহুমার জ্যেষ্ঠ পুত্র ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, পুত্রবধূ ডা. জুবাইদা রহমান, নাতনি ব্যারিস্টার জাইমা রহমান এবং প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শামীলা রহমানসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যবৃন্দ। এ সময় বিএনপি ও এর অঙ্গ-সংগঠনের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ ছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা অশ্রুসিক্ত নয়নে দাঁড়িয়ে থেকে তাঁদের প্রিয় নেত্রীর প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানান। দাফন পরবর্তী আনুষ্ঠানিকতা হিসেবে মরহুমার স্মৃতির প্রতি সম্মান জানিয়ে এক মিনিটের নীরবতা পালন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাঁর দল।
এর আগে বেলা ১১টা ৪৮ মিনিটে কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে জাতীয় পতাকায় মোড়ানো বেগম জিয়ার মরদেহ জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় আনা হয়। এরপর বিকেল ৩টা ৩ মিনিটে রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে এক নজিরবিহীন ও বিশাল নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়, যা মাত্র ২ মিনিটের মধ্যে সম্পন্ন হলেও সেখানে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা লাখো মানুষের ঢল নামে। জানাজার সময় পুরো রাজধানী যেন এক শোকের নগরীতে পরিণত হয়েছিল এবং প্রতিটি সংযোগ সড়ক লোকে লোকারণ্য হয়ে পড়েছিল। জানাজা শেষে বিকেল সাড়ে চারটার দিকে বিশেষ প্রটোকলে মরদেহ জিয়া উদ্যানে নেওয়া হয় এবং সেখানে ধর্মীয় বিধি মোতাবেক সমাহিত করা হয়।
লিভার সিরোসিসসহ নানা শারীরিক জটিলতায় দীর্ঘ লড়াই শেষে গতকাল মঙ্গলবার ভোরে ৭৯ বছর বয়সে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান এ দেশের মানুষের কাছে ‘আপসহীন নেত্রী’ হিসেবে পরিচিত বেগম খালেদা জিয়া। তাঁর এই প্রয়াণে আজ দেশজুড়ে সাধারণ ছুটি এবং তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক চলছে। এক মহাকাব্যিক রাজনৈতিক জীবন এবং দীর্ঘ সংগ্রামের পর প্রিয়তম পতির পাশেই আজ তাঁর চিরস্থায়ী ঠিকানা নিশ্চিত হলো। দাফন সম্পন্ন হওয়ার পরও শেরেবাংলা নগর ও সংসদ ভবন এলাকায় শোকাতুর মানুষের ভিড় এবং এক গম্ভীর নিস্তব্ধতা বিরাজ করছে। মূলত এক মহান অভিভাবকের বিদায়ে আজ পুরো দেশ শোকে মুহ্যমান।
তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার জানাজার আনুষ্ঠানিকতা শেষে তাঁর মরদেহ এখন রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের জিয়া উদ্যানে নেওয়া হয়েছে। আজ বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) বিকেল সোয়া ৪টার দিকে শোকাতুর পরিবেশে তাঁর মরদেহবাহী গাড়িটি জিয়া উদ্যানে পৌঁছায়। সেখানেই পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় স্বামী ও স্বাধীনতার ঘোষক সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবরের পাশে তাঁকে সমাহিত করার কাজ চলছে। ফ্রিজার ভ্যান থেকে মরদেহ নামানোর পর বিশেষ সামরিক ও দলীয় প্রটোকলে তা সমাধি চত্বরে নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময় মরহুমার দুই পুত্রবধূ ও নাতনিসহ পরিবারের সদস্যরা সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে বিকেল ৩টার দিকে রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে এক ঐতিহাসিক ও নজিরবিহীন নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা লাখো মানুষের উপস্থিতিতে পুরো এলাকা এক বিশাল জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছিল। জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের খতিব মুফতি আবদুল মালেকের ইমামতিতে সম্পন্ন হওয়া এই জানাজায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস, প্রধান বিচারপতি, তিন বাহিনীর প্রধানগণ এবং উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরা শরিক হন। এ ছাড়াও জানাজায় যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, চীন, ভারত ও কাতারসহ অন্তত ৩২টি দেশের রাষ্ট্রদূত ও কূটনীতিকরা উপস্থিত থেকে এই মহীয়সী নেত্রীর প্রতি শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। জানাজার প্রাক্কালে বড় ছেলে তারেক রহমান তাঁর মায়ের আত্মার মাগফিরাত কামনায় দেশবাসীর কাছে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে দোয়া প্রার্থনা করেন।
আজকের এই চিরবিদায়ের যাত্রা শুরু হয়েছিল সকালে গুলশানের বাসভবন থেকে। সকাল ১১টা ৪৮ মিনিটের দিকে লাল-সবুজ জাতীয় পতাকায় মোড়ানো ফ্রিজার ভ্যানে করে বেগম জিয়ার মরদেহ জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় আনা হয়। এর আগে গতকাল মঙ্গলবার ভোর ৬টায় রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৭৯ বছর বয়সে (মতান্তরে ৮০) শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। দীর্ঘ সময় ধরে লিভার সিরোসিস, হৃদরোগ, ফুসফুস ও কিডনির জটিলতায় ভুগে অবশেষে না ফেরার দেশে পাড়ি জমালেন এ দেশের মানুষের কাছে ‘আপসহীন নেত্রী’ হিসেবে পরিচিত এই ব্যক্তিত্ব। তাঁর প্রয়াণে আজ দেশজুড়ে সাধারণ ছুটি এবং তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক চলছে। এক বর্ণাঢ্য ও সংগ্রামমুখর রাজনৈতিক জীবনের সমাপ্তি ঘটিয়ে আজ প্রিয়তমা পতির পাশেই তাঁর চিরস্থায়ী ঠিকানা নিশ্চিত করা হচ্ছে। দাফন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়া পর্যন্ত শেরেবাংলা নগর এলাকায় কঠোর নিরাপত্তা ও শোকাবহ নীরবতা বিরাজ করছে।
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থিতা যাচাই-বাছাইয়ের প্রথম দিনেই খুলনা-৩ আসনে তিন স্বতন্ত্র প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে। আজ বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) দুপুরে খুলনার আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং অফিসার ফয়সল কাদের এই ঘোষণা দেন। একই সাথে এই আসনের অন্য ৯ জন প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বৈধ বলে ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন।
খুলনা আঞ্চলিক নির্বাচন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, খুলনা-৩ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য মোট ১২ জন প্রার্থী তাঁদের মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। আজ বেলা ১১টা থেকে শুরু হওয়া যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়ায় তিনজনের আবেদনে ত্রুটি ধরা পড়ায় তা বাতিল করা হয়। মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়া প্রার্থীরা হলেন—স্বতন্ত্র প্রার্থী এসএম আরিফুর রহমান মিঠু, মো. আবুল হাসনাত সিদ্দিক এবং আব্দুর রউফ মোল্ল্যা।
বাতিল হওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে রিটার্নিং অফিসার ফয়সল কাদির জানান, স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট আসনের মোট ভোটারের ১ শতাংশের স্বাক্ষর সম্বলিত তালিকা জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক। খুলনা-৩ আসনের জন্য ২ হাজার ৫৪৪ জন ভোটারের স্বাক্ষরের প্রয়োজন ছিল। তদন্তকালে দেখা গেছে, আব্দুর রউফ মোল্ল্যা ও মো. আবুল হাসনাত সিদ্দিকের দেওয়া ১ শতাংশ ভোটারের তথ্যে গরমিল রয়েছে। অন্যদিকে, এসএম আরিফুর রহমান মিঠুর মনোনয়নপত্র বাতিলের পেছনে তথ্যের অসংগতির পাশাপাশি ঋণখেলাপির বিষয়টিও অন্যতম কারণ হিসেবে কাজ করেছে।
অন্যদিকে, যে ৯ জন প্রার্থীর প্রার্থিতা বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে তাঁরা হলেন—রকিবুল ইসলাম (বিএনপি), মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান (জামায়াতে ইসলামী), মো. আব্দুল আউয়াল (ইসলামী আন্দোলন), জনার্দন দত্ত (বাসদ), শেখ আরমান হোসেন (এনডিএম), মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন (জাতীয় পার্টি), এফ এম হারুন অর রশীদ (বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস) এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. মুরাদ খান লিটন ও মঈন মোহাম্মদ মায়াজ।
রিটার্নিং অফিসার আরও জানান, যেসব প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে, তাঁদের জন্য নির্বাচন কমিশনে আপিল করার সুযোগ রয়েছে। সংক্ষুব্ধ প্রার্থীরা আগামী ৯ জানুয়ারি পর্যন্ত এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করতে পারবেন। এ ছাড়াও তফশিল অনুযায়ী আগামী ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। বর্তমানে খুলনার নির্বাচনী এলাকায় যাচাই-বাছাইকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক তৎপরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। মূলত স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতেই কঠোরভাবে এই যাচাই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করছে প্রশাসন।
রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার প্রথম জানাজার ঠিক আগমুহূর্তে পরিবারের পক্ষ থেকে দেশবাসীর কাছে দোয়া ও ক্ষমা চেয়েছেন তাঁর জ্যেষ্ঠ পুত্র এবং দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। আজ বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) বিকেল ৩টার দিকে জানাজার প্রাক্কালে সমবেত লাখো জনতার উদ্দেশ্যে দেওয়া এক সংক্ষিপ্ত ও আবেগঘন বক্তব্যে তিনি এই আহ্বান জানান।
তারেক রহমান তাঁর বক্তব্যে বলেন, তাঁর মা দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে এবং দীর্ঘ পথচলায় যদি নিজের অজান্তেও কাউকে কোনোভাবে কষ্ট দিয়ে থাকেন, তবে মহান আল্লাহর ওয়াস্তে যেন তাঁকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়। তিনি আরও বলেন, “আমার মা বেগম খালেদা জিয়া জীবিত থাকাকালীন যদি কারো কাছ থেকে কোনো ঋণ নিয়ে থাকেন, তবে দয়া করে আমার সাথে যোগাযোগ করবেন। আমি ব্যক্তিগতভাবে সেই ঋণ পরিশোধ করার পূর্ণ দায়িত্ব নিচ্ছি।” পরিশেষে তিনি তাঁর মায়ের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনায় উপস্থিত সকলের কাছে আন্তরিকভাবে দোয়া প্রার্থনা করেন।
উল্লেখ্য, বার্ধক্যজনিত নানা শারীরিক জটিলতা ও দীর্ঘ অসুস্থতার পর গতকাল মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) ভোর ৬টায় রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৭৯ বছর বয়সে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন বেগম খালেদা জিয়া। বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী এবং বিএনপি প্রধানের এই চিরবিদায়ে সারা দেশে গভীর শোকের ছায়া নেমে এসেছে। গণতান্ত্রিক আন্দোলন ও জাতীয় সার্বভৌমত্ব রক্ষার সংগ্রামে তাঁর আপসহীন নেতৃত্ব তাঁকে এ দেশের ইতিহাসে এক অনন্য উচ্চতায় আসীন করেছে। আজ জানাজার ময়দানে তারেক রহমানের এই বিনম্র ও দায়িত্বশীল আহ্বান উপস্থিত শোকাতুর জনতাকে গভীরভাবে স্পর্শ করেছে এবং এক হৃদয়বিদারক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। জানাজা শেষে তাঁকে পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় শেরেবাংলা নগরে তাঁর স্বামী শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবরের পাশেই চিরনিদ্রায় শায়িত করার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।
তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে অশ্রুসিক্ত নয়নে শেষ বিদায় জানাল লাখ লাখ মানুষ। আজ বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) বিকেল ৩টা ৫ মিনিটে রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ ও জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজা সংলগ্ন এলাকায় এক ঐতিহাসিক ও বিশাল নামাজে জানাজার মধ্য দিয়ে অসীম অনন্ত লোকে পাড়ি দিলেন এই বরেণ্য নেত্রী। যেখান থেকে আর কোনোদিন ফেরা হবে না, সেই চিরস্থায়ী যাত্রায় খালেদা জিয়ার সঙ্গী হলো কোটি মানুষের অকৃত্রিম শ্রদ্ধা, ভালোবাসা আর তপ্ত চোখের জল। জানাজায় অংশ নেওয়া হাজারো মানুষকে দেখা গেছে প্রিয় নেত্রীকে হারানোর বেদনায় কান্নায় ভেঙে পড়তে। রাজধানী ঢাকার রাজপথ আজ যেন এক বিশাল শোকের মিছিলে পরিণত হয়েছে, যেখানে দলীয় পরিচয় ছাপিয়ে বেগম জিয়া আবির্ভূত হয়েছিলেন জাতীয় ঐক্যের এক অনন্য প্রতীক হিসেবে।
প্রায় অর্ধশতাব্দী ধরে বাংলাদেশের রাজনীতির কক্ষপথে ধ্রুবতারার মতো জ্বলে থাকা এই নেত্রীর প্রস্থান পুরো জাতিকে শোকে মুহ্যমান করে তুলেছে। টানা ৪১ বছর বিএনপির হাল ধরে রাখা বেগম খালেদা জিয়া গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার এবং দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় যে আপসহীন সংগ্রামের নজির স্থাপন করেছেন, তা এ দেশের ইতিহাসে বিরল। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে তিনি বারবার জেল-জুলুম ও অমানবিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, কিন্তু জীবনের চরম ঝুঁকিতেও কখনো নিজ মাতৃভূমি ছেড়ে যাননি। তাঁর এই অদম্য দেশপ্রেম এবং দুর্দিনের অকুতোভয় নেতৃত্ব তাঁকে নিয়ে গেছে এক অনন্য উচ্চতায়। জীবনের শেষ পর্যায়ে এসেও ফ্যাসিবাদের যাতাকলে পিষ্ট হয়ে ঘরবন্দী ও কারাবরণ করতে হলেও মানুষের প্রতি তাঁর ভালোবাসা ছিল অটুট, যার প্রতিদান আজ এই বিপুল জনসমুদ্রের মাধ্যমে দেশবাসী ফিরিয়ে দিল।
আজকের এই জানাজায় ইমামতি করেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব মাওলানা আবদুল মালেক। বরেণ্য এই নেত্রীর শেষ বিদায়ে শরিক হয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস, প্রধান বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী এবং মরহুমার জ্যেষ্ঠ পুত্র ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এ সময় সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যবৃন্দ, তিন বাহিনীর প্রধানগণ, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও উচ্চপর্যায়ের বিদেশি প্রতিনিধিরা উপস্থিত থেকে বিনম্র শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ ও সংসদ ভবনের বিশাল প্রাঙ্গণ ছাপিয়ে মানুষের এই ভিড় ফার্মগেট, বিজয় সরণি ও আসাদ গেট পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছিল। নির্ধারিত স্থানে জায়গা না পেয়ে হাজার হাজার মানুষকে রাস্তার ওপর দাঁড়িয়েই জানাজায় অংশ নিতে দেখা গেছে।
এর আগে আজ বেলা ১১টা ৪৮ মিনিটে রাষ্ট্রীয় প্রোটোকলে লাল-সবুজ জাতীয় পতাকায় মোড়ানো ফ্রিজার ভ্যানে করে বেগম জিয়ার মরদেহ জানাজাস্থলে আনা হয়। জানাজার আনুষ্ঠানিকতা পরিচালনা করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। জানাজা শেষে মরদেহ নিয়ে যাওয়া হচ্ছে শেরেবাংলা নগরের জিয়া উদ্যানে। সেখানে পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় বীর মুক্তিযোদ্ধা ও স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবরের পাশেই তাঁকে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হবে। বরেণ্য এই নেত্রীর বিদায়ে ভারত, পাকিস্তান ও নেপালসহ দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা সশরীরে উপস্থিত হয়ে আন্তর্জাতিক শ্রদ্ধাবোধের স্বাক্ষর রেখেছেন। দাফন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়া পর্যন্ত শেরেবাংলা নগর এলাকায় কড়া নিরাপত্তা ও সাধারণের চলাচল সীমিত রাখা হয়েছে। এক মহাকাব্যিক রাজনৈতিক অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি ঘটিয়ে বেগম খালেদা জিয়া আজ তাঁর প্রিয়তম পতির পাশেই খুঁজে নিচ্ছেন তাঁর চিরস্থায়ী ঠিকানা। তাঁর এই প্রস্থান বাংলাদেশের ইতিহাসে এক অপূরণীয় শূন্যতা রেখে গেল।