বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে করা ৮ মামলার কার্যক্রম বাতিল করে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ করা হয়েছে। সম্প্রতি পৃথকভাবে এসব রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।
এর আগে গত বছরের অক্টোবরে বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রুল মঞ্জুর করে রায় দিয়েছিলেন।
আট মামলার মধ্যে বাস পোড়ানোর অভিযোগে দারুস সালাম থানায় ২০১৫ সালের ২৯ জানুয়ারি, ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০ ফেব্রুয়ারি, ১ মার্চ, ৩ মার্চ এবং যাত্রাবাড়ী থানায় ২৩ জানুয়ারি ও ২৪ জানুয়ারি এসব মামলা দায়ের করা হয়। পরে এসব মামলায় অভিযোগপত্র দেওয়া হয়।
২০১৭ সালে পৃথকভাবে মামলার কার্যক্রম বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেন খালেদা জিয়া। তখন হাইকোর্ট রুল জারি করে মামলার কার্যক্রমের ওপর স্থগিতাদেশ দেন। সেই রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে গত বছরের অক্টোবরে রুল মঞ্জুর করে রায় দেন হাইকোর্ট।
আদালতে খালেদা জিয়ার পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জমির উদ্দিন সরকার, জয়নুল আবেদীন, এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন, মো. রুহুল কুদ্দুস কাজল, কায়সার কামাল, গাজী কামরুল ইসলাম সজল, শেখ মোহাম্মদ আলী, মো. জাকির হোসেন ভূঁইয়া, কাজী আক্তার হোসেন, রাগীব রউফ চৌধুরী, এ আর রায়হান, গাজী তৌহিদুল ইসলাম, মো. মনিরুজ্জামান আসাদ প্রমুখ।
রায়ের পর জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন সাংবাদিকদের বলেছিলেন, আদালত ওই সব মামলায় রুল অ্যাসলিউট করেছেন। এর অর্থ হলো- মামলাগুলো বাতিল হয়ে গেল। এই মামলাগুলো আর থাকল না। অর্থাৎ খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে করা এসব মামলা থেকে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হলো।
বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসার জন্য চীনের ৪ সদস্যের একটি বিশেষজ্ঞ মেডিকেল টিম রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালের সিসিইউতে প্রবেশ করেছে।
৪ ডিসেম্বর (বৃহস্পতিবার) সকালে চীনের এই বিশেষজ্ঞ মেডিকেল টিম এভারকেয়ার হাসপাতালে পৌঁছায়।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ডা. কাই জিয়ানফাং (Cai Jianfang)-এর নেতৃত্বে টিমটি আজ সকালে এভারকেয়ার হাসপাতালে পৌঁছে সিসিইউতে প্রবেশ করে খালেদা জিয়ার সর্বশেষ শারীরিক অবস্থা মূল্যায়ন করবেন।
এর আগে চার সদস্যের একটি চীনা দল হাসপাতালে প্রবেশ করলেও পরবর্তীতে আরও চিকিৎসক যোগ হয়ে দলটি ছয় সদস্যে পরিণত হয়। বিশেষজ্ঞরা খালেদা জিয়ার বর্তমান চিকিৎসা প্রক্রিয়া পর্যালোচনা করছেন এবং স্থানীয় চিকিৎসকদের সঙ্গে সমন্বয় করে পরবর্তী চিকিৎসা পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করছেন।
বিএনপি সূত্র জানিয়েছে, উন্নত চিকিৎসা নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।
রাজধানী ঢাকাসহ পাশ্ববর্তী এলাকায় আবারো মৃদু ভূ-কম্পন অনুভূত হয়েছে। এসময় আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ে নগরবাসী।
৪ ডিসেম্বর (বৃহস্পতিবার) আবহাওয়া অধিদফতর থেকে জানানো হয়, ভূমিকম্পটি হালকা মাত্রার ছিল। ভোর ৬টা ১৪ মিনিট ৪৫ সেকেন্ডে হওয়া এ ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল নরসিংদীর শিবপুরে। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৪ দশমিক ১। ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ ও গবেষণাকেন্দ্র থেকে ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থলের দূরত্ব ছিল ৩৮ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে।
ইউরো-মেডিটেরিয়ান সিসমোলজিক্যাল সেন্টার জানিয়েছে, ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল ছিল গাজীপুরের টঙ্গী থেকে ৩৩ কিলোমিটার পূর্ব-উত্তরপূর্বে, আর নরসিংদী থেকে ৩ কিলোমিটার উত্তরে। ভূপৃষ্ঠ থেকে এর গভীরতা ছিল ৩০ কিলোমিটার।
এর আগে ১ ডিসেম্বর মধ্যরাত ১২টা ৫৫ মিনিট ১৬ সেকেন্ডে ভূমিকম্প অনুভূত হয়। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৪ দশমিক ৯। কেন্দ্রস্থল ছিল মিয়ানমারের মিনজিনে। চট্টগ্রামসহ দেশের কিছু অংশে এই ভূমিকম্প অনুভূত হয়।
তার আগে গত ২৭ নভেম্বর রাজধানী ঢাকায় বিকেল ৪টা ১৫ মিনিট ২০ সেকেন্ডে ভূমিকম্প হয়।
আবহাওয়া অধিদফতর জানায়, রিখটার স্কেলে সেটির মাত্রা ছিল ৩ দশমিক ৬। এর উৎপত্তিস্থল ছিল নরসিংদীর পলাশ উপজেলার ঘোড়াশালে। ওই দিন ভোরের দিকে সিলেটে ও কক্সবাজারের টেকনাফে দুই দফা ভূ-কম্পন অনুভূত হয়।
এর আগে ২১ নভেম্বর, শুক্রবার এবং পরদিন শনিবার প্রায় ৩১ ঘণ্টার মধ্যে ঢাকা ও এর আশপাশে চারবার ভূমিকম্প হয়।
এর মধ্যে ২১ নভেম্বর সকালে ঢাকা থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে রিখটার স্কেলে ৫ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্পটির উৎস ছিল নরসিংদীর মাধবদী। উৎপত্তিস্থলের গভীরতা ছিল ভূপৃষ্ঠ থেকে ১০ কিলোমিটার গভীরে। ওইদিন ভূমিকম্পে দেশে ১০ জন নিহত হন। আহত হন ৫ শতাধিক মানুষ।
এখন বেশির ভাগ ভূমিকম্পেরই উৎপত্তিস্থল নরসিংদী।
তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী, সাবেক রাষ্ট্রপতির স্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার আশু রোগমুক্তি কামনা করে আগামী শুক্রবার বাদ জুমা দেশের সকল মসজিদে দোয়ার আহ্বান জানিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
পাশাপাশি মন্দির, গির্জা ও প্যাগোডাসহ অন্যান্য ধর্মের উপাসনালয়ে সংশ্লিষ্ট ধর্মের রীতি ও আচার অনুযায়ী প্রার্থনারও আহ্বান জানানো হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও উল্লেখ করা হয়, দেশের সর্বস্তরের মানুষকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে বেগম খালেদা জিয়ার রোগমুক্তির জন্য দোয়া ও প্রার্থনার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের কয়েকটি সংগঠনের কর্মবিরতি ও পরীক্ষা বর্জনের কর্মসূচি প্রত্যাহার করে কাজে যোগদানের নির্দেশনা নিয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ‘কোমলমতি শিক্ষার্থীদের শিক্ষা জীবনকে ঝুঁকির মধ্যে ঠেলে দিয়ে এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত কর্মসূচি গ্রহণ সরকারি চাকরি আইন, আচরণ বিধিমালার পরিপন্থি’। এ অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি আইনে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে মন্ত্রণালয়। বুধবার (৩ ডিসেম্বর) মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য কর্মকর্তা আবদুল্লাহ শিবলী সাদিক স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক উপযুক্ত ব্যবস্থাসমূহ গ্রহণ করার পরেও দেখা যাচ্ছে সহকারী শিক্ষকদের কয়েকটি সংগঠন চলমান বার্ষিক পরীক্ষা গ্রহণ না করে বিভিন্নভাবে উক্ত পরীক্ষা গ্রহণে বাধা বিঘ্ন সৃষ্টি করেছেন এবং কোথাও কোথাও পরীক্ষা গ্রহণে ইচ্ছুক শিক্ষকদের ওপর হামলা ও শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেছেন।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকবৃন্দের কয়েকটি সংগঠনের কর্মসূচির বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, তাদের তথাকথিত কমপ্লিট শাট ডাউন’ কর্মসূচির বিষয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় অবহিত রয়েছে। সহকারী শিক্ষকদের ১১তম গ্রেডে বেতন প্রদানের দাবিসহ অন্য আরো দুটি দাবি, যথা ১০ ও ১৬ বছর চাকরি সমাপনান্তে উচ্চতর গ্রেড প্রাপ্তির জটিলতা নিরসন এবং প্রধান শিক্ষক পদে সহকারী শিক্ষকদের মধ্য হতে শতভাগ বিভাগীয় পদোন্নতির বিষয়ে ইতোমধ্যে অর্থ মন্ত্রণালয় এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পত্র প্রেরণ করা হয়েছে। উক্ত দাবিসমূহ বাস্তবায়নের বিষয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা, অর্থ উপদেষ্টা এবং বেতন-কমিশনের সম্মানিত সভাপতির সঙ্গে উল্লিখিত দাবিসমূহ বাস্তবায়নের বিষয়ে ব্যক্তিগতভাবে আলোচনা করেছেন।
এতে আরও বলা হয়েছে, এর আগে এ মন্ত্রণালয় হতে গত ৭ আগস্ট থেকে ৩৬৪ সংখ্যক স্মারকে সহকারী শিক্ষকদের বেতন স্কেল ১৩তম গ্রেড হতে ১১তম গ্রেড এ উন্নীতকরণের বিষয়টি বিবেচনার জন্য জাতীয় বেতন কমিশন-২০২৫-কে অনুরোধ জানিয়ে পত্র প্রেরণ করা হয়েছে। সহকারী শিক্ষকদের বেতন স্কেল উন্নীতকরণের বিষয়টি পে-কমিশনের প্রতিবেদন পাওয়ার পরপরই অর্থ বিভাগ কর্তৃক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে মর্মে গত ১০ নভেম্বর অর্থ বিভাগের সঙ্গে বৈঠকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়কে অবহিত করা হয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এ পরিস্থিতিতে দেশের সকল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকগণকে অবিলম্বে কাজে যোগদান করে শিক্ষার্থীদের ৩য় প্রান্তিকের পরীক্ষা গ্রহণ সংক্রান্ত বিদ্যালয়ের যাবতীয় কার্যক্রম যথাযথভাবে সম্পন্নের জন্য নির্দেশনা দেওয়া যাচ্ছে। অন্যথায় এ ধরনের শৃঙ্খলা-বিরোধী কার্যক্রমে সম্পৃক্ত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে চাকরি আইন, আচরণ বিধিমালা ও ফৌজদারি আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অন্তর্বর্তী সরকার গঠন ও শপথের বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের মতামত নেওয়া প্রক্রিয়া নিয়ে রিট খারিজের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিলের ওপর শুনানি শেষ হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে আদেশ দেবেন সর্বোচ্চ আদালত।
গতকাল বুধবার প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন সাত বিচারপতির আপিল বেঞ্চে এ বিষয়ে শুনানি হয়। আদালতে লিভ টু আপিলের পক্ষে আবেদনকারী জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মোহাম্মদ মহসিন রশিদ নিজেই শুনানি করেন।
ইন্টারভেনার হিসেবে লিভ টু আপিলে যুক্ত হন লেখক ফিরোজ আহমেদ। তার পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী শরীফ ভূঁইয়া। নওগাঁর বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মোফাজ্জল হোসেন ইন্টারভেনার (পক্ষ) হন এ মামলায়। তার পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী এ এস এম শাহরিয়ার কবির।
রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান ও অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ অনীক রুশদ হক। এ ছাড়া ইন্টারভেনার হিসেবে শুনানি করেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো. রুহুল কুদ্দুস ও জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির।
ছাত্র-জনতার তীব্র আন্দোলনের মুখে গত বছর ৫ আগস্ট পতন ঘটে আওয়ামী লীগ সরকারের। প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে শেখ হাসিনা সেদিন ভারতে পালিয়ে যান।
এমন পরিস্থিতিতে ৬ আগস্ট সংসদ ভেঙে দেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। এরপর সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুসারে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের কাছে মতামত চান রাষ্ট্রপ্রধান। এই মতামত চাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন সাত বিচারপতির আপিল বেঞ্চ ৮ আগস্ট মতামত দিলে তার ভিত্তিতে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হয়।
সুপ্রিম কোর্টের কাছ থেকে এই মতামত নেওয়ার প্রক্রিয়ার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মোহাম্মদ মহসিন রশিদ।
রিট আবেদনে বলা হয়, সংবিধানে নেই, এমন বিষয়ে রেফারেন্স (মতামত) চাওয়া যায় না।
তাছাড়া সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুসারে মতামত দেওয়ার ক্ষেত্রে আপিল বিভাগকে সুপ্রিম কোর্টের রুলস অনুসরণ করে অ্যাটর্নি জেনারেল ও অন্যদের নোটিশ দিয়ে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে শুনানি করতে হবে। অন্তর্বর্তী সরকার গঠন এবং শপথ নিয়ে শুনানির জন্য নোটিশ দেওয়া হয়নি।
প্রাথমিক শুনানির পর গত ১৩ জানুয়ারি রিটটি সরাসরি খারিজ করে দেন বিচারপতি ফাতেমা নজীব ও বিচারপতি শিকদার মাহমুদুর রাজীর হাইকোর্ট বেঞ্চ। পরে ৯ ফেব্রুয়ারি পূর্ণাঙ্গ আদেশটি প্রকাশ করা হয়।
৯ পৃষ্ঠার আদেশে বলা হয়, রিট আবেদনটি কেবল ভুল ধারণার ওপর ভিত্তি করেই করা হয়নি, আবেদনটি উসকানিমূলকও।
এতে আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশের সংবিধান এখনো কার্যকর এবং সম্পূর্ণভাবে সক্রিয়। তবে রিট আবেদনকারীর অবস্থান স্ববিরোধী। কারণ একদিকে বলছেন, গত ৫ আগস্টের পর বিদ্যমান সংবিধান চাপা পড়েছে, অন্যদিকে বিদ্যমান সংবিধানের ১০২ অনুচ্ছেদের অধীন এই রিট আবেদন করেছেন। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের অধীনে সাংবিধানিক আদালত হিসেবে এই ধরনের অসাংবিধানিক আবেদন বিবেচনা করার কোনো সুযোগ নেই। ফলে রিট আবেদনটি পর্যবেক্ষণসহ সরাসরি খারিজ করা হলো।
টেলিগ্রাম ও হোয়াটসঅ্যাপে পরিকল্পনা করে ঢাকায় অগ্নিসন্ত্রাস ও ককটেল বিস্ফোরণের মাধ্যমে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টির চেষ্টা করে আসছিল কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বাসে অগ্নিসংযোগসহ একাধিক নাশকতার ঘটনায় তাদের সম্পৃক্ততা শনাক্ত করার পর বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা হয়। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের রমনা বিভাগের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা অভিযান চালিয়ে মঙ্গলবার চারজনকে গ্রেপ্তার করেছেন।
গতকাল বুধবার ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের রমনা বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার ডিসি মো. মাসুদ আলম গণমাধ্যমকে এসব তথ্য জানান।
গত ৩০ অক্টোবর বিকেলে ধানমন্ডিতে ২৮ নম্বর সড়কের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইনস্টিটিউটের গলির মুখে নিষিদ্ধ সংগঠনের ব্যানারে মিছিলের প্রস্তুতি চলছিল। ওই সময় ধানমন্ডি থানা পুলিশ আকস্মিক অভিযান চালিয়ে দুজনকে হাতেনাতে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন— হাজারীবাগ-ধানমন্ডি এলাকার পরিচিত যুবলীগ নেতা শওকত ওসমান বাবু ও মিলন খান। গ্রেপ্তার বাবু ধানমন্ডি ২২ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং মিলন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুল্লাহ মুসলিম হল শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি।
পুলিশ জানায়, শওকত ওসমান বাবু দীর্ঘদিন ধরে এলাকাবাসীর ওপর দমন-পীড়ন চালানোর অভিযোগে কুখ্যাত। ২০২৪ সালের জুলাই আন্দোলনে ছাত্রদের ওপর সশস্ত্র হামলাকারীদের অন্যতম ছিলেন তিনি। পরবর্তীতে সরকার পতনের সময় বিদেশে পালিয়ে গেলেও সম্প্রতি মালয়েশিয়া থেকে দেশে ফিরে আসেন বহু মামলার এই আসামি। দেশে ফিরে তিনি নতুন করে নাশকতার পরিকল্পনা করেন। এ সংক্রান্ত বিভিন্ন ভিডিও, ককটেল বিস্ফোরণের ছবি, বাসে অগ্নিসংযোগের লাইভ ফুটেজসহ নাশকতার নির্দেশনা তার মোবাইল থেকে উদ্ধার করা হয়েছে।
হাজারীবাগ বেড়িবাঁধ এলাকায় ১৬ নভেম্বর বাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনাও শওকত ওসমান বাবুর প্রত্যক্ষ নির্দেশনা ও অর্থায়নে সংঘটিত হয়েছে বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে।
গ্রেপ্তার হওয়া আরেক আসামি মিলন খান নড়াইলের জয়নগর ইউনিয়নের বাসিন্দা এবং ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় নাশকতা সংগঠনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন বলে তদন্তে জানা গেছে। তিনি ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি স্বপন ও যুগ্ম আহ্বায়ক সাব্বির শেখের ঘনিষ্ঠ সহযোগী। মিলন নড়াইল ও গোপালগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলা থেকে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের এনে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা এলাকার লায়ন টাওয়ারের পেছনের একটি টিনশেড বাড়িতে থাকার ব্যবস্থা করে দিতেন আর সেখান থেকেই তারা ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় নাশকতা ও ঝটিকা মিছিল পরিচালনা করতেন।
গ্রেপ্তার হওয়া আরেক ব্যক্তি সাব্বির শেখ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক। সাব্বির মহানগর যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি স্বপনের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে পরিচিত। সাব্বির শেখ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে যুবলীগ-ছাত্রলীগ কর্মীদের ডেকে এনে ঢাকায় নাশকতায় যুক্ত করতেন। বিভিন্ন টেলিগ্রাম ও হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে সক্রিয় থেকে বাসে অগ্নিসংযোগ ও ককটেল বিস্ফোরণের নির্দেশনা দিতেন। গত ২৮ নভেম্বর ধানমন্ডিতে নিষিদ্ধ সংগঠনের ব্যানারে মিছিলের প্রস্তুতিতেও তিনি নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। যদিও সেদিন পালিয়ে যান। পরে পুলিশ ও রমনা বিভাগের টেকনিক্যাল টিম যৌথ অভিযান চালিয়ে কামরাঙ্গীরচর কোম্পানি ঘাট ব্রিজ এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মোবাইল ফোন বিশ্লেষণ করে পুলিশ ‘আস্থায় শেখ হাসিনার যুবলীগ ঢাকা দক্ষিণ’, ‘দরবার হল গ্রুপ’, ‘বাঙালি বাংলাদেশ’, ‘২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউ’সহ বিভিন্ন অনলাইন গ্রুপে নাশকতার পরিকল্পনা, ককটেলের ছবি, বিস্ফোরকের তথ্য, অর্থ লেনদেনের প্রমাণ এবং ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় বাসে আগুন দেওয়ার ভিডিও উদ্ধার করেছে। রাজধানীর রূপনগর, হাজারীবাগ, ধানমন্ডিসহ কয়েকটি এলাকায় অগ্নিসংযোগ ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনাতেও তাদের সরাসরি সম্পৃক্ততার তথ্য মিলেছে।
বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে দেখতে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে গেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। বুধবার সন্ধ্যা ৭টার পর হাসপাতালে পৌঁছান তিনি। তাকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, বেগম খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এ. জে. এম. জাহিদ হোসেন, অধ্যাপক ডা. শাহাবুদ্দিন তালুকদার, খালেদা জিয়ার ছোট ছেলের স্ত্রী সৈয়দা শর্মিলা রহমান এবং ছোট ভাই শামীম এসকান্দার অভ্যর্থনা জানান। প্রায় আধা ঘণ্টা হাসপাতালে অবস্থান করে বিএনপি নেত্রীর চিকিৎসার খোঁজ–খবর নেন প্রধান উপদেষ্টা।
১১ দিন ধরে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা এখনও উদ্বেগজনক। তাকে হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সমন্বয়ে গঠিত মেডিকেল বোর্ডের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা চলছে। বিএনপির চেয়ারপারসনের চিকিৎসা সহায়তায় যুক্তরাজ্যের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রিচার্ড বিয়েল সকালে ঢাকায় এসেছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার রাতে বিএনপির চেয়ারপারসনকে দেখতে এভারকেয়ার হাসপাতালে গিয়েছিলেন সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, নৌবাহিনীর প্রধান অ্যাডমিরাল এম নাজমুল হাসান ও বিমানবাহিনীর প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন।
বুধবার সন্ধ্যায় প্রধান উপদেষ্টার আগমন উপলক্ষে হাসপাতাল এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স (এসএসএফ), প্রেসিডেন্ট গার্ড রেজিমেন্ট (পিজিআর), বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি), পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা নিরাপত্তা জোরদার করেন। এ সময় কাঁটাতারের ব্যারিকেড দিয়ে ঘিরে ফেলা হয় হাসপাতালের প্রধান ফটক।
এ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার ফেসবুক পেজে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, প্রধান উপদেষ্টা হাসপাতালে পৌঁছালে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, অধ্যাপক ডা. শাহাবুদ্দিন তালুকদার, খালেদা জিয়ার ছোট ছেলের স্ত্রী সৈয়দা শর্মিলা রহমান এবং ছোট ভাই শামীম এসকান্দার প্রধান উপদেষ্টাকে ভেতরে নিয়ে যান।
প্রধান উপদেষ্টা প্রায় আধা ঘণ্টা হাসপাতালে অবস্থান করেন। এ সময় তিনি খালেদা জিয়ার পরিবার ও দলের নেতা–কর্মীদের ধৈর্য ধারণের আহ্বান জানান। খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে তার চিকিৎসক দল প্রধান উপদেষ্টাকে ব্রিফ করেন। তারা জানান, যুক্তরাষ্ট্রের মাউন্ট সিনাই ও জনস হপকিনস এবং যুক্তরাজ্য, চীনসহ বিভিন্ন দেশের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধান ও সহায়তায় খালেদা জিয়ার চিকিৎসা চলছে।
এ সময় সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস পুনর্ব্যক্ত করেন প্রধান উপদেষ্টা। একই সঙ্গে তিনি দেশবাসীর কাছে খালেদা জিয়ার আরোগ্য কামনায় দোয়া ও প্রার্থনার আহ্বান জানান। হাসপাতাল পরিদর্শনকালে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।
৮০ বছর বয়সি খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে হৃদ্রোগ, ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিস, লিভার সিরোসিস, কিডনির জটিলতাসহ নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছেন। শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে গত ২৩ নভেম্বর দ্রুত তাকে এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর চিকিৎসকরা জানান, তার হৃদ্যন্ত্র ও ফুসফুসে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে।
চিকিৎসকরা এখনো খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের অবস্থাকে ‘গুরুতর’ হিসেবে বিবেচনা করছেন। তাদের পর্যবেক্ষণ হচ্ছে, আগামী কয়েকটি দিন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিডনি কার্যক্ষমতায় স্থিতিশীলতা ছাড়া তার সামগ্রিক শারীরিক অবস্থায় স্থায়ী উন্নতি আসা কঠিন।
খালেদা জিয়ার অসুস্থতার খবরে এভারকেয়ার হাসপাতালের সামনে ভিড় করছেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা। এতে ওই এলাকায় যান চলাচলে ব্যাঘাত সৃষ্টি করছে। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নেতা-কর্মীদের সেখানে ভিড় না করার অনুরোধ জানিয়েছেন।
এদিকে, খালেদা জিয়াকে ‘অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি’ঘোষণা করার পর এসএসএফ নিরাপত্তা দেওয়া শুরু করেছে। গত মঙ্গলবার বেলা ২টা ২০ মিনিটের দিকে এসএসএফ সদস্যরা খালেদা জিয়াকে নিরাপত্তা দেওয়া শুরু করেন।
এরপর প্রধান উপদেষ্টার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এসএসএফের নিরাপত্তা প্রটোকল অনুযায়ী আজ বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা থেকে বিকাল ৪টার মধ্যে এভারকেয়ার হাসপাতালের কাছের দুটি উন্মুক্ত মাঠে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও বিমানবাহিনীর হেলিকপ্টার পরীক্ষামূলকভাবে অবতরণ ও উড্ডয়ন করবে। এ বিষয়ে কোনো ধরনের অপপ্রচার বা বিভ্রান্তি থেকে বিরত থাকার জন্য অনুরোধ করা হলো।
অন্যদিকে, দায়িত্বরত বিজিবি কর্মকর্তা আলতাফ হোসেন বলেন, ‘সার্বিক নিরাপত্তার জন্য এভারকেয়ার হাসপাতালের সামনে দুই প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। এক প্লাটুন হাসপাতালের গেটে দায়িত্ব পালন করছে। আরেক প্লাটুন টহলে রয়েছে।’
এর আগে গত সোমবার রাতে বিশেষ নিরাপত্তার জন্য ও দলীয় নেতা-কর্মীদের ভিড় সামলাতে এভারকেয়ার হাসপাতালের সামনে ব্যারিকেড বসায় পুলিশ।
অন্য দিনের মতো সকাল থেকে এভারকেয়ার হাসপাতালে সামনে ভিড় করতে থাকেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা। পুলিশের যে ব্যারিকেড দেওয়া রয়েছে, তার বাইরে তারা অবস্থান করছেন।
এভারকেয়ার হাসপাতালে সামনে আসা নেতা-কর্মীদের অনেকে বলছেন, এখানে ভিড় না করতে কেন্দ্রীয় নেতাদের নির্দেশনা আছে। তারপরও তাদের মন মানছে না। তাই সবকিছু উপেক্ষা করে হাসপাতালে সামনের ছুটে এসেছেন তারা।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস আগামী ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় জাতীয় নির্বাচন ও গণভোটে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের ঐতিহাসিক ভূমিকা পালনের আহ্বান জানিয়েছেন।
একইসঙ্গে তিনি জাতীয় নিরাপত্তা, অগ্রগতি, জাতি গঠন এবং সংকটকালে জনগণের পাশে দাঁড়ানোয় সশস্ত্র বাহিনীর অবদানের প্রশংসা করেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘বাংলাদেশের নিরাপত্তা, অগ্রগতি ও জাতি গঠনে সশস্ত্র বাহিনীর অবদান সত্যিই প্রশংসনীয়। দেশের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে আপনারা যে ত্যাগ ও নিষ্ঠা প্রদর্শন করেছেন, তা দৃষ্টান্তমূলক।’
আজ রাজধানীর মিরপুর সেনানিবাসে ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজে অনুষ্ঠিত ন্যাশনাল ডিফেন্স কোর্স (এনডিসি) ও আর্মড ফোর্সেস ওয়ার কোর্স (এএফডব্লিউসি)-২০২৫-এর সমাপনী অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘প্রাকৃতিক দুর্যোগ, রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং মহামারীর মতো সংকটে সশস্ত্র বাহিনীর অব্যাহত প্রচেষ্টা দেশের জনগণের কল্যাণে তাদের প্রস্তুতি ও অটল নিষ্ঠার প্রমাণ বহন করে।’
তিনি বাহিনীর সদস্যদের জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে অংশগ্রহণের মাধ্যমে বৈশ্বিক শান্তিতে অবদান রাখার জন্যও ধন্যবাদ জানান, যা বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক খ্যাতি বাড়িয়েছে।
আগামী নির্বাচনে ঐতিহাসিক ভূমিকা পালনের আহ্বান জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আগামী ফেব্রুয়ারিতে আমাদের জাতীয় নির্বাচন ও গণভোটে সত্যিই একটি ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করতে হবে। এটি শুধু একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত হবে না, বরং শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে ভোটগ্রহণ নিশ্চিত করবে। ভোটাররা যখন ভোট দিতে বের হবেন, তা উৎসবমুখর হবে এবং জাতি গর্বের সঙ্গে স্মরণ করবে যে তারা দেশের ভাগ্য পরিবর্তনের একটি ঐতিহাসিক মুহূর্তে অংশ নিয়েছেন।’
প্রধান উপদেষ্টা বক্তব্যের শুরুতে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে বলেন, ‘এটি একটি বিশেষ মাস। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহাসিক বিজয়ের মাস। আমরা সকলেই গর্বের সঙ্গে স্মরণ করি সেই সব বীরদের, যারা আমাদের মুক্তিযুদ্ধে জীবন উৎসর্গ করেছেন। এছাড়াও সকল শ্রেণিপেশার মানুষের আত্মত্যাগকে আমরা স্মরণ করি, যারা দেশের মুক্তির সংগ্রামে অবদান রেখেছেন।’
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে জীবন উৎসর্গ করা সকল শহীদ ও আহতের প্রতি সম্মান জানান তিনি। অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থানকে সম্ভব করা সকল শিক্ষার্থী ও দেশবাসীর প্রতি আমার গভীর শ্রদ্ধা, যারা নতুন বাংলাদেশের স্বপ্নের সঙ্গে জীবন উৎসর্গ করেছেন ও আহত হয়েছেন।’
বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার আরোগ্য কামনায় তিনি দেশবাসীকে দোয়া ও প্রার্থনা করার আহ্বান জানান।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘গ্র্যাজুয়েশন অনুষ্ঠানের এই আনন্দময় মুহূর্তে আসুন আমরা সকল বাংলাদেশীর সঙ্গে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি আমাদের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ও জাতীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া যেন দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠেন।’
স্নাতক সম্পন্ন করা অফিসারদের অভিনন্দন জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আজকের গ্র্যাজুয়েশন আপনার জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। ন্যাশনাল ডিফেন্স কোর্স এবং আর্মড ফোর্সেস ওয়ার কোর্স সফলভাবে সম্পন্ন করা সত্যিই একটি বড় অর্জন।’
তিনি আরও বলেন, ‘এটি আপনার জীবনের স্মরণীয় মুহূর্ত। এই অর্জন বছরের পর বছর কঠোর পরিশ্রম, নিষ্ঠা ও অধ্যবসায়ের প্রতিফলন। এখন আপনি উচ্চতর দায়িত্ব নেওয়ার জন্য প্রস্তুত, যা আপনাকে জাতীয় নিরাপত্তা, রাষ্ট্র পরিচালনা, নীতি নির্ধারণ, কৌশল প্রণয়ন এবং জাতীয় উন্নয়নের জটিলতাগুলো বোঝার ক্ষমতা প্রদান করবে।’
ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য নিয়ে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, কলেজটি এমন নেতৃবন্দ গড়ে তোলার জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, যারা জটিল ও ক্রমবর্ধমান ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে নিজেকে নিবেদিত করতে সক্ষম হবেন।
তিনি উল্লেখ করেন, ‘আমরা এমন এক এক সময়ে আছি যখন অর্থনৈতিক কেন্দ্রীকরণের গুরুত্ব এশিয়ার দিকে স্থানান্তরিত হচ্ছে, বাংলাদেশ এমন একটি কৌশলগত অবস্থানে রয়েছে যা অসাধারণ সুযোগ প্রদান করে। ভবিষ্যৎ নেতৃত্বের জন্য এই অনন্য ভূ-রাজনৈতিক সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে দেশের টেকসই প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়ন নিশ্চিত করা একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব।’
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘ন্যাশনাল ডিফেন্স কোর্স একটি কৌশলগত স্তরের কোর্স, যা অংশগ্রহণকারীদের জাতীয় নিরাপত্তা বোঝার, বিশ্লেষণ এবং কৌশলগত সিদ্ধান্ত গ্রহণে সক্ষম এবং নেতৃত্বের দক্ষতা বৃদ্ধি করে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আর্মড ফোর্সেস ওয়ার কোর্স কৌশলগত ও অপারেশনাল স্তরের ওপর কাজ করে এবং কৌশলগত ও ট্যাকটিক্যাল স্তরের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করতে সহায়ক। এই কোর্স চলাকালীন, আপনি বর্তমান বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ যেমন সন্ত্রাসবাদ, জলবায়ু পরিবর্তন এবং সাইবার হুমকি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা ও বিশ্লেষণে যুক্ত হয়ে পড়েছেন।’
বিদেশি গ্রাজুয়েটদের অভিনন্দন জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমি আশা করি, এখানে আপনার সময়কালে আপনি এমন বন্ধুত্ব গড়ে তুলেছেন যা দিগন্ত বিস্তারী যা আমাদের সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের গভীরতর বোঝাপড়া তৈরি করে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আপনাদের উপস্থিতি আমাদের প্রতিষ্ঠানকে সমৃদ্ধ করেছে এবং আমি বিশ্বাস করি, আপনারা আপনার নিজ নিজ দেশে বাংলাদেশের শুভেচ্ছা দূত হিসেবে কাজ করবেন। বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার সম্পর্ককে আরও মজবুত করবেন। আমি আপনাদের আগামীর জন্য সফলতা কামনা করছি।’
এনডিসির অবদানের প্রশংসা করে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজ প্রতিষ্ঠার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জন করেছে। ‘এটি স্বীকার করা গুরুত্বপূর্ণ যে এনডিসি কেবল সামরিক ক্ষেত্রে নয়, ভবিষ্যত নেতৃত্ব গঠনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। প্রতি বছর বেসরকারি প্রশাসন,পররাষ্ট্র ক্যাডার, পুলিশ, আর্মি ও বিডিপির উঁচু পর্যায়ের কর্মকর্তাদের এনডিসি কোর্সে অংশগ্রহণ করা আমাকে অত্যন্ত আনন্দ দেয়।’
তিনি আরও বলেন, বিদেশি কর্মকর্তাসহ কোর্সটি চিন্তাধারা বিনিময়, বন্ধুত্ব সৃষ্টি এবং বোঝাপড়া সঙ্গতিপূর্ণ করার জন্য অসাধারণ সুযোগ প্রদান করে।
‘আমি কমান্ড্যান্ট, শিক্ষক ও স্টাফদের আন্তরিক প্রশংসা জানাই, যারা ২০২৫ সালের এনডিসি কোর্স এবং সশস্ত্র বাহিনী যুদ্ধ কোর্সটি উৎকর্ষতার সঙ্গে পরিচালনা করেছেন,’ প্রধান উপদেষ্টা বলেন।
অধ্যাপক ইউনূস কোর্সে অবদান রাখার জন্য রাষ্ট্রদূত, হাইকমিশনার, দেশ-বিদেশের গুরুত্বপূর্ণ রিসোর্স পার্সন এবং বিশেষ বক্তাদের প্রশংসা জানিয়ে বলেন, ‘আমি সেই দেশের সমর্থনকেও কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্বীকার করি, যারা স্টাডি ট্যুরের আয়োজন করেছে, যা এই কোর্সের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ।’
তিনি আরো বলেন,‘ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে আমি আত্মবিশ্বাসী যে ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজ তার মূলমন্ত্র ‘সুরক্ষা থেকে জ্ঞান’ বজায় রাখবে। এই প্রচেষ্টা আপনাদের নতুন ভূমিকা গ্রহণের সময় প্রয়োজনীয় জ্ঞান ও দক্ষতা নির্ধারণে পথ দেখাবে, যা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার জটিলতা মোকাবিলায় সহায়ক হবে।’ সূত্র: বাসস
বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে ‘অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি’ (ভিভিআইপি) ঘোষণা করেছে সরকার। এরই ধারাবাহিকতায় তাকে স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স (এসএসএফ) নিরাপত্তা দেওয়া শুরু করেছে।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে পৌঁছেছেন এসএসএফ সদস্যরা। এভারকেয়ার হাসপাতালের সামনে থাকা প্রতিবেদক এ তথ্য জানিয়েছেন।
১ ডিসেম্বর রাতে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে খালেদা জিয়াকে ‘অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি’ (ভিভিআইপি) ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, সরকার ‘বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনী (স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স) আইন, ২০২১’-এর ধারা ২(ক)-এর ক্ষমতাবলে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে ‘অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি’ হিসেবে ঘোষণা করছে। প্রজ্ঞাপন অবিলম্বে কার্যকর হবে।
বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতায় গত কয়েকদিন ধরে খালেদা জিয়া রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, খালেদা জিয়া ‘খুব ক্রিটিক্যাল কন্ডিশনে’ চলে গেছেন।
গত ২৩ নভেম্বর হঠাৎ শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে খালেদা জিয়াকে দ্রুত রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। তিনি বর্তমানে ওই হাসপাতালের করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রয়েছেন। মেডিকেল বোর্ডের দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে সাবেক এ প্রধানমন্ত্রীর চিকিৎসা চলছে।
খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য পরিস্থিতির সর্বশেষ তথ্য জানিয়ে মঙ্গলবার দুপুরে এভারকেয়ার হাসপাতালের সামনে ব্রিফ করেন তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন। খালেদা জিয়া চিকিৎসা নিতে পারছেন বলে তিনি জানান।
ডা. জাহিদ বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী গত ২৭ নভেম্বর থেকে এভারকেয়ার হাসপাতালের সিসিইউতে চিকিৎসাধীন। সেখানে চিকিৎসকরা যে চিকিৎসা দিচ্ছেন তা তিনি গ্রহণ করতে পারছেন।
৮০ বছর বয়সি খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিস, লিভার সিরোসিস ও কিডনির সমস্যাসহ নানান শারীরিক জটিলতায় ভুগছেন।
গুমের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড রেখে ‘গুম প্রতিরোধ ও প্রতিকার অধ্যাদেশ, ২০২৫’ জারি করেছে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়।
গত সোমবার এই অধ্যাদেশটির গেজেট প্রকাশ করা হয়। এর আগে গত ৬ নভেম্বর এ অধ্যাদেশের খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দেয় উপদেষ্টা পরিষদ।
অধ্যাদেশ অনুযায়ী জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে গুম প্রতিরোধ ও প্রতিকার ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হবে। এই অধ্যাদেশের অধীনে অপরাধ হবে জামিন ও আপস অযোগ্য।
অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, কোনো সরকারি কর্মচারী বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো সদস্য যদি কোনো ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার, আটক, অপহরণ বা স্বাধীনতা হরণ করার পর বিষয়টি অস্বীকার করে অথবা ওই ব্যক্তির অবস্থান, অবস্থা বা পরিণতি গোপন রাখেন এবং এ কাজের ফলে ওই ব্যক্তি আইনগত সুরক্ষা থেকে বঞ্চিত হন তাহলে কাজটি গুম বা শাস্তিযোগ্য ফৌজদারি অপরাধ বলে গণ্য হবে। দায়ী ব্যক্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা অনধিক ১০ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
গুমের সাজার ধারায় বলা হয়, গুমের ফলে কোনো ব্যক্তির মৃত্যু ঘটলে বা গুমের পাঁচ বছর পরও তাকে জীবিত বা মৃত অবস্থায় উদ্ধার করা সম্ভব না হলে দায়ী ব্যক্তির মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হতে পারে। যদি কোনো ব্যক্তি গুমের সাক্ষ্য-প্রমাণ নষ্ট করেন বা গুমের উদ্দেশে গোপন আটককেন্দ্র নির্মাণ, স্থাপন বা ব্যবহার করেন, তাহলে সাত বছরের কারাদণ্ড হতে পারে বলে অধ্যাদেশে জানানো হয়েছে।
এতে আরও বলা হয়, যদি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বা কমান্ডার বা দলনেতা এ ধরনের অপরাধ সংঘটনে অধস্তনদের আদেশ, অনুমতি, সম্মতি, অনুমোদন বা প্ররোচনা দেন, কিংবা নিজেই অংশ নেন, তাহলেও তিনি মূল অপরাধের জন্য নির্ধারিত দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বা কমান্ডারের অবহেলা বা অদক্ষতার কারণে অধস্তনরা এমন কোনো কর্মকাণ্ডে জড়ালেও সাজা পাবেন সেই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।
শৃঙ্খলা বজায় রাখা বা অধস্তনদের নিয়ন্ত্রণ বা তত্ত্বাবধান করার ব্যর্থতার ফলে অধস্তনরা যদি এ ধরনের অপরাধ করেন তাহলেও তিনি মূল অপরাধের দায়ে দণ্ডিত হবেন বলে অধ্যাদেশে উল্লেখ করা হয়েছে।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, মেরিন ফিশারিজ একাডেমি হতে প্রশিক্ষিত হয়ে ক্যাডেটরা হতে চলছে গভীর সমুদ্রের অকুতোভয় কাণ্ডারি। মঙ্গলবার সকালে মেরিন ফিশারিজ একাডেমি প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত ৪৪তম পাসিং আউট প্যারেড অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব আবু তাহের মুহাম্মদ জাবের বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। সভাপতিত্ব করেন মেরিন ফিশারিজ একাডেমির অধ্যক্ষ ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ হাসান।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা বলেন, কঠোর অধ্যবসায় এবং প্রগাঢ় প্রশিক্ষণের মাধ্যমে অর্জিত এই জ্ঞান ক্যাডেটদের ভবিষ্যৎ কর্মক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা রাখবে। ক্যাডেটরা একাডেমির সীমিত বলয় ছেড়ে পেশাগত জীবনের বৃহত্তর অঙ্গণে প্রবেশ করতে যাচ্ছে। তাদের কর্মজীবনে উন্নতির প্রধান ভিত্তি কঠোর পরিশ্রম, সময়ানুবর্তিতা, সততা, কর্মদক্ষতা, মূল্যবোধ এবং দেশ ও জাতির প্রতি কর্তব্য নিষ্ঠা। এই বোধগুলো আত্মস্থ করে ভবিষ্যৎ কর্মক্ষেত্রে নিজ নিজ দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে ক্যাডেটরা দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ক্যাডেটদের মধ্যে পদক বিতরণ করেন। বিশেষভাবে, খন্দকার তানভীর ইসলাম (মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং) ‘বেস্ট অল রাউন্ডার গোল্ড মেডেল’অর্জন করেন। অন্যান্য বিভাগে ‘বেস্ট ইন প্রফেশনাল ট্রেনিং সিলভার মেডেল’পায় জাবের শাহরিয়ার (নটিক্যাল সায়েন্স), মাইনুল ইসলাম (মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং) ও সাকিবুর রহমান (মেরিন ফিশারিজ) এবং মহিলা ক্যাডেটদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হিসেবে নুসরাত হোসাইন আনিকা (মেরিন ফিশারিজ) পদক অর্জন করেন। মেরিন ফিশারিজ একাডেমি থেকে ৪৪তম ব্যাচের পাসিং আউট প্যারেড-২০২৫-এ ১১০ জন ক্যাডেট পাসিং আউট হয়েছেন, যাদের মধ্যে ১৭ জন নারী অন্তর্ভুক্ত ছিল।
পরে উপদেষ্টা পাসিং আউট প্যারেডের ৪৪তম ব্যাচের সার্টিফিকেট প্রদান অনুষ্ঠানে অংশ নেন এবং সফলভাবে কোর্স সম্পন্নকারী ক্যাডেটদের হাতে সার্টিফিকেট তুলে দেন।
পাসিং আউট প্যারেডে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ নৌবাহিনী, বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তর, মৎস্য অধিদপ্তর, তথ্য অধিদপ্তর, মেরিন ডিপার্টমেন্ট, শিপিং অফিস এবং অন্যান্য মেরিটাইম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, বাংলাদেশে কারও কোনও নিরাপত্তা ঝুঁকি বা শঙ্কা নেই।
তিনি বলেন, ‘সরকার সকলকে সুরক্ষিত রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
বাংলাদেশে ফিরে আসার পর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নিরাপত্তা ঝুঁকি সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
আজ মঙ্গলবার সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত কোর কমিটির সভা শেষে তিনি এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন,‘বাংলাদেশে কারও জন্য কোনও নিরাপত্তা ঝুঁকি নেই। সরকার সকলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সম্পূর্ণ প্রস্তুত।’ সূত্র: বাসস
বিএনপি চেয়ারপার্সন ও তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বর্তমান শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় তাঁর নির্বিঘ্ন চিকিৎসা, নিরাপত্তা ও যাতায়াত-সুবিধা নিশ্চিত করতে এবং তাঁর উচ্চ মর্যাদা বিবেচনায় তাঁকে রাষ্ট্রের অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি (ভিভিআইপি) ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এই সিদ্ধান্ত অবিলম্বে কার্যকর করতে সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বিশেষ বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পরে সরকারের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়। পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ যমুনার সামনে গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে বিবৃতিটি পড়ে শোনান।
বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, বৈঠকে তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী, সাবেক রাষ্ট্রপতির স্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার আশু রোগমুক্তি কামনা করে দোয়া ও প্রার্থনা করা হয়। জাতির কাছে তাঁর আরোগ্য কামনায় দোয়া ও প্রার্থনারও আহ্বান জানানো হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, সভায় বেগম খালেদা জিয়ার বর্তমান শারীরিক পরিস্থিতি বিবেচনায় হাসপাতালে তাঁর নির্বিঘ্ন চিকিৎসা, প্রয়োজনে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা, তাঁর নিরাপত্তা ও যাতায়াতের সুবিধা এবং উচ্চ মর্যাদা বিবেচনায় তাঁকে রাষ্ট্রের অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি (ভিভিআইপি) ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এই সিদ্ধান্ত অবিলম্বে কার্যকর করতে সংশ্লিষ্ট সব সংস্থাকে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।
বিবৃতিতে আরও জানানো হয়, এ বিষয়ে বেগম খালেদা জিয়ার পরিবার এবং দল অবগত রয়েছে।সূত্র - বাসস