ঢাকাসহ সারা দেশে শুরু হওয়া অপারেশন ডেভিল হান্টে রোববার দুপুর পর্যন্ত ১ হাজার ৩০৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে দেশের সব মেট্রোপলিটন পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে ২৭৪ জনকে। অন্যদিকে সারা দেশের রেঞ্জ পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে ১ হাজার ৩৪ জনকে। রোববার পুলিশ সদর দপ্তর এ তথ্য জানিয়েছে।
অপারেশন ডেভিল হান্ট একটি বিশেষ অভিযান, যা শনিবার থেকে সারা দেশে একযোগে শুরু হয়েছে। গত ৭ ফেব্রুয়ারি গাজীপুরে ছাত্র-জনতার ওপর সন্ত্রাসী হামলা ঘটনা ঘটে। এই হামলায় নেতৃত্ব দেন ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। হামলার ফলে বেশ কয়েকজন হতাহত হন এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটে।
ঘটনার পরপরই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও অন্যান্য নিরাপত্তা সংস্থার উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকের মাধ্যমে দেশের সামগ্রিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার সিদ্ধান্ত হয়। এরই ধারাবাহিকতায় অপারেশন ডেভিল হান্ট নামক বিশেষ অভিযান শুরু হয়।
এদিকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, দুষ্কৃতকারীদের গ্রেপ্তারের পর বিচারের মুখোমুখি না করা পর্যন্ত ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ চলবে।
রোববার রাজধানীর ফার্মগেট এলাকায় মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের নতুন মৃত্তিকা ভবন উদ্বোধনের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, যারা দেশকে অস্থিতিশীল করবে তাদের বিরুদ্ধে এই অভিযান অব্যাহত থাকবে।
কারা দুষ্কৃতকারী জানতে চাইলে তিনি বলেন, দেশকে অস্থিতিশীল করে তোলার সঙ্গে যারা জড়িত, আইন অমান্যকারী এবং নৈরাজ্যবাদীরা দুষ্কৃতকারী।
গাজীপুরে ছাত্র-জনতার ওপর হামলায় জড়িতদের বিরুদ্ধে গৃহীত ব্যবস্থা সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘গাজীপুরে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাকারীদের অনেককেই আইনের আওতায় আনা হয়েছে। বাকিদের শিগগিরই বিচারের মুখোমুখি করা হবে।’
পাঁচজন ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন, যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাদের অপরাধ দেশবাসীর জানা।
এ ছাড়া গতকাল দুপুরে সচিবালয়ে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি বলেছেন, যারা দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করবে তাদের বিরুদ্ধে অভিযান ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’।
তিনি বলেন, দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টাকারীদের আটক করে আইনের আওতায় আনা হবে।
সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি বলেন, ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’-এ মূলত পুলিশ বাহিনী নেতৃত্ব দিচ্ছে, সেনাবাহিনী তাদের সাহায্য করছে।
তিনি বলেন, ছয় মাস আগে ছাত্র-জনতার বিপ্লবের মাধ্যমে স্বৈরাচারী সরকারের পতনের পর দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সারা দেশে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়। সে সময় আমাদের পুলিশ বাহিনীর বেশকিছু ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তাদের নীতিগত ও মানসিক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, থানা পুড়ে গেছে, যে কারণে ‘ইন এইড টু সিভিল পাওয়ার’ সারা দেশে সেনা মোতায়েন রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, এ পরিস্থিতিতে কাজ করতে গিয়ে আমরা অনেকগুলো পরিকল্পনা নিই। এর অনেকগুলো চলমান আছে এবং অনেকগুলো প্রয়োগ করতে যাচ্ছি। তার একটা ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’।
পুলিশ বাহিনীর বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে নাসিমুল গনি বলেন, পৃথিবীর যেসব দেশে বিপ্লব হয়েছে, সেসব দেশ পরাজিত শক্তিকে রাখেনি। কিন্তু আমরা অতটা অমানবিক হতে পারিনি।
তিনি বলেন, আমরা বাহিনীটিকে সংস্কার করতে চেয়েছি। পুলিশের কেউ ভয়ে এবং চাপে পড়ে অন্যায় করেছে, কিছু যারা ডাই-হার্ড ছিল, তারা পালিয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
জানা গেছে, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণের লক্ষ্যে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নির্দেশনায় রোববার সন্ধ্যা ৬টা থেকে যাত্রা শুরু করছে ‘কমান্ড সেন্টার’।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে এ কমান্ড সেন্টারটি পরিচালিত হবে। সেন্টারটির সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বিভিন্ন বাহিনী-পুলিশ, বিজিবি, র্যাব, কোস্টগার্ড, আর্মডফোর্স ব্যাটালিয়নের সদস্যরা যুক্ত থাকবেন।
রোববার রাজধানীর হেয়ার রোডের ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, রাজধানীসহ দেশের কোথাও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হলে কমান্ড সেন্টার থেকে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।