অন্তর্বর্তীকালীন সরকার চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তার বাসভবন যমুনায় বৈঠক শেষে গণমাধ্যমকে এ কথা বলেন তিনি।
মির্জা ফখরুল বলেন, ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনে অন্তর্বর্তী সরকার কাজ করছে বলে জানিয়েছে। এছাড়া জাতীয় নির্বাচনের আগে কোনো স্থানীয় নির্বাচন বিএনপি মেনে নেবে না বলেও জানান তিনি। এ সময় দেশে বিভিন্ন বিশৃঙ্খল ঘটনা ও অস্থিতিশীলতা নিয়ন্ত্রণ না করতে পারার দায়ও সরকারকে নিতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমরা এই সরকারকে বার বার বলে আসছি যে, তারা একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। দ্রুত নির্বাচনের জন্য আমরা তাদের তাগাদা দিয়েছি। ন্যূনতম যে সংস্কারগুলো সম্পন্ন করে…, রিফর্ম কমিশন করেছেন তাদের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে কনসেনসাস হওয়ার প্রেক্ষিতে দ্রুত নির্বাচন দেওয়ার বিষয়ে আমরা তাদের সঙ্গে কথা বলেছি।’
তিনি বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা এবং তার সঙ্গে বৈঠকে যারা ছিলেন, তারা আমাদের আশ্বস্ত করেছেন যে, অতি দ্রুত নির্বাচনের ব্যবস্থা করছেন। এবং তিনি (প্রধান উপদেষ্টা) বলেছেন যে, তারা নির্বাচনের ব্যবস্থা করছেন, ডিসেম্বরের মধ্যে তারা নির্বাচনের ব্যবস্থা করার জন্য কাজ করছেন।’
ফখরুল বলেন, ‘আমরা যেটা বিশ্বাস করি, গণতান্ত্রিক সরকারের যে ট্রান্সজিশন হবে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায়, সেটা অনেক সহজ হয়ে যাবে যদি একটা নির্বাচন হয়।’
সেই রোডম্যাপ কবে নাগাদ ঘোষণা হতে পারে প্রশ্ন করলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এটা উনারা ঠিক করবেন। তবে সম্ভবত ১৫ তারিখের মধ্যে উনারা কিছু একটা বলতে যাবেন।’
প্রায় দেড় ঘণ্টার বৈঠকে অর্থ উপদেষ্টা সালেহ উদ্দিন আহমেদ, আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল এবং গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ছিলেন।
বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের আরও বলেন, ‘বিএনপির স্থায়ী কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছিল যে সার্বিক বিষয়ে দলের উদ্বেগের বিষয়গুলো প্রধান উপদেষ্টার কাছে তুলে ধরা হবে। একটি দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল হিসেবে এটা বিএনপির দায়িত্ব। বিএনপি সেই দায়িত্ব পালন করেছে।’
তিনি বলেন, ‘যে ঘটনাগুলো ঘটেছে, তার দায় সরকার এড়াতে পারে না। কারণ, সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন বাহিনীর সামনেই একের পর এক ঘটনা ঘটেছে, যার ফলে সার্বিকভাবে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যথেষ্ট বিপন্ন হয়েছে। ফ্যাসিবাদীরা এসব বিষয়ে কথা বলার সুযোগ পেয়েছে।’
প্রশাসনে যারা ‘ফ্যাসিবাদের দোসর’ ছিলেন, যারা দেশের সম্পদ লুট করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া ও পাচার হওয়া টাকা ফিরিয়ে আনার দাবি জানানো হয়েছে বলে উল্লেখ করেন মির্জা ফখরুল। তারা বিগত ১৫-১৬ বছরে রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিও তুলেছেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা দ্রব্যমূল্যের ব্যাপারে কথা বলেছি। এ সরকারের অন্যতম বড় ব্যর্থতা দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে না পারা। তারা কাজ করছে বলে আমাদের জানিয়েছে।’ তিনি বলেন, বৈঠকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার বিষয়টি এসেছে। বিএনপি বলেছে, বিশেষ অভিযান ‘ডেভিল হান্টে’ যেন কোনো নিরপরাধ ব্যক্তি হয়রানির শিকার না হন।
তিনি বলেন, ‘ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের আয়োজন করার জন্য সরকার কাজ করছে বলে আমাদের জানিয়েছেন (প্রধান উপদেষ্টা)। আমরা আশা করব, জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী দ্রুত নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হবে এবং একটি রোডম্যাপ (রূপরেখা) দেওয়া হবে।’
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের বিষয়ে কোনোভাবেই একমত হব না। আগে জাতীয় নির্বাচন দিতে হবে। এর আগে কোনো নির্বাচন হবে না। এটা আগেও পরিষ্কার করে বলেছি।’
মির্জা ফখরুলের নেতৃত্বে বিএনপির তিন সদস্যের প্রতিনিধিদলে ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমেদ ও অবসরপ্রাপ্ত মেজর হাফিজ উদ্দিন আহমেদ।