আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সরকারি দলের প্রভাবশালী অনেক মন্ত্রী, এমপি, ব্যবসায়ী ও সরকারি কর্মকর্তাকে দুর্নীতির অভিযোগ থেকে দায়মুক্তি দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে যেসব তদন্ত ও অনুসন্ধান বন্ধ করা হয় এবং অভিযুক্তদের মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়, তা আবারও নতুন করে তদন্ত ও অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সূত্র জানায়, এখন আবার নতুন করে তাদের অনেকের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানসহ মামলা হচ্ছে।
বিগত সরকারের দীর্ঘ ১৫ বছরের শাসনামলে নেতারা তাদের রাজনৈতিক ভাষণ ও বিভিন্ন ফোরামে দেওয়া বক্তব্যে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সের কথা বলতেন। কিন্তু বাস্তবে দলের বেশিরভাগ নেতাকর্মীই ছিলেন আকণ্ঠ দুর্নীতিতে নিমজ্জিত। বিশেষ করে সরকারে থাকা মন্ত্রী ও নির্বাচিত এমপি, সরকারি দলের বিভিন্ন স্তরের নেতা-কর্মী এবং তাদের পরিবার সদস্য ও স্বজনরা সরকারের নানা বরাদ্দে অনিয়মের পাশাপাশি বিভিন্ন প্রকল্পে যুক্ত হয়ে যথেচ্ছ দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন। সরকার-ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ীরাও এ ধরনের কাজে জড়িয়ে পড়েন। আর দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকায় সরকারের বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তারাও নানা ধরনের কাজ পাইয়ে দেওয়ার বিষয়ে সহযোগিতা করে শত শত কোটি টাকার দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন। সে সময়ে এসব দুর্নীতির তথ্য উদ্ঘাটনে স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা হওয়ার পরেও দুদকের ভূমিকা ছিল বিতর্কিত ও প্রশ্নবিদ্ধ। বলা হয়ে থাকে, কর্তৃত্ববাদী সরকার প্রভাব বিস্তার করে শেকল পরানোয় স্বাধীন কোনো কাজ করতে পারেনি স্বায়ত্তশাসিত সংস্থাটি। ফলে সে সময়ে দুদকের কাজে ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় যেমন নানা বাধার সৃষ্টি হয়েছিল, তেমনই প্রভাবশালীদের বলয়ে থেকে দুর্নীতিতে নিমজ্জিত হন সংস্থাটির অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারীও। ফলে আওয়ামী লীগ শাসনামলে দুদক নিয়ে সব সময়েই ছিল তুমুল সমালোচনা।
এরপরেও দুদকের কাছে আওয়ামী লীগ সরকারের একাধিক মন্ত্রী, এমপি, নেতা, ব্যবসায়ী ও সরকারের কিছু কর্মকর্তার বিরুদ্ধে প্রচুর অভিযোগ জমা পড়ে। এগুলোর কিছু অভিযোগ নিয়ে লোক দেখানো অনুসন্ধান, তদন্ত ও মামলা দায়ের করেছিল দুদক। তবে অভিযোগ রয়েছে, এমন বেশিরভাগ মামলাতেই অভিযুক্তরা চাপ প্রয়োগ, ভয় দেখানো কিংবা দুদক কর্মকর্তাদের সঙ্গে নানা রকম যোগসাজশ করে রেহাই পেয়ে যান। তারা প্রকাশ্যে নিজেদের নির্দোষ দাবি করেন। অনিয়মে ভরা সেসব তদন্তের শেষে দুদক থেকে তাদের ‘ক্লিনচিট’ বা অনুসন্ধান, তদন্ত ও মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছিল। এ নিয়ে অবশ্য সংস্থাটি বেশ সমালোচিত হয়। এ জন্য দুদকের কার্যক্রম নিয়ে নানা প্রশ্ন ওঠে বিগত কমিশনগুলোর আমলে।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী সরকারের পতনের পর দুদক বেশ সক্রিয় হয়ে ওঠে। নতুন করে সংস্কার কমিশন গঠনের মধ্য দিয়ে সংস্থাটির কার্যকর ভূমিকা ইতিবাচক হিসেবেই দেখছেন অনেকে।
একসময় অবৈধ আর রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করে যারা নিজেদের ‘ক্লিনচিট’ নেয় এবং দায়মুক্তি দেওয়া হয় ‘নতুন পরিস্থিতিতে’ দেখা যাচ্ছে তারা আবারও দুদকের জালে ধরে পড়ছেন। পরিবর্তিত এই সময়ে এসে তাদের বিরুদ্ধে নতুন করে অভিযোগ গঠনসহ অনুসন্ধান করে মামলাও হচ্ছে।
দুদকের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, তখনকার সময়ে অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তির বিরুদ্ধে দুদকের অনুসন্ধানে দুর্নীতির সত্যতা পাওয়ার পর মামলা হলেও তদন্তের পর ফাইনাল রিপোর্ট ট্রু (এফআরটি)-এর মাধ্যমে তাদের দায়মুক্তি দেওয়া হয়েছিল।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত ১৫-১৬ বছরে প্রায় তিন হাজার ব্যক্তিকে দায়মুক্তি দিয়েছিল দুদক। তাদের মধ্যে পতিত সরকারের সাবেক মন্ত্রী-এমপি, সরকারি কর্মকর্তা, পুলিশ, ব্যাংকারসহ ব্যবসায়ীরা ছিলেন।
তথ্যমতে, সবচেয়ে বেশি দায়মুক্তির ঘটনা ঘটেছে ইকবাল মাহমুদ কমিশনের সময়ে। তার সময়ে অবৈধ লেনদেনের মাধ্যমে ‘ক্লিনচিট’ দেওয়া হতো বলে জানা যায়।
দেশের ব্যাংকিং সেক্টরে দুর্নীতির সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারি। গত কয়েক বছর ধরে বেসিক ব্যাংকের অনিয়ম-দুর্নীতির সংবাদ গণমাধ্যমে শিরোনাম হয়েছে। ২০২৩ সালের ১২ জুন বেসিক ব্যাংকের আলোচিত সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল হাই বাচ্চুসহ ১৪৭ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট অনুমোদন দেয় দুদক। সংস্থাটির দায়ের করা মোট ৫৯ মামলার চার্জশিটের মধ্যে ৫৮টি মামলার তদন্তে নতুন আসামি হিসেবে আব্দুল হাই বাচ্চু ও কোম্পানি সচিব শাহ আলম ভূঁইয়াকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। অথচ ২০১৫ সালে দায়ের করা কোনো মামলাতেই বাচ্চুকে আসামি করা হয়নি। যে কারণে দুদককে বারবার বিভিন্ন প্রশ্নের মুখেও পড়তে হয়েছে।
পরিবর্তিত সময়ে এসে অবশেষে গত ৯ ফেব্রুয়ারি ২৪৮ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অর্থপাচারের অভিযোগে বেসিক ব্যাংক লিমিটেডের আলোচিত সাবেক চেয়ারম্যান শেখ আব্দুল হাই বাচ্চু ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে ৪ মামলা দায়ের করেছে দুদক। মামলায় অবৈধ সম্পদ অর্জনের পাশাপাশি ৫৮ কোটি টাকা কানাডায় পাচারের অভিযোগ আনা হয়েছে। পৃথক চারটি মামলায় শেখ আব্দুল হাই বাচ্চুর সঙ্গে তার স্ত্রী মিসেস শিরিন আকতার, ছেলে শেখ ছাবিদ হাই অনিক এবং তার মেয়ে শেখ রাফা হাইকে আসামি করা হয়েছে বলে জানায় দুদক।
ঢাকা ওয়াসার বহুল আলোচিত-সমালোচিত সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খান। ২০২৩ সালের এপ্রিলে তার বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের সুপারিশ সংবলিত অনুসন্ধান প্রতিবেদন কমিশনে জমা দেওয়া হলেও সে বিষয়ে কোনো অগ্রগতি হয়নি। গত ৮ জানুয়ারি ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে জনবল কাঠামোবহির্ভূত নিয়োগ দিয়ে দুর্নীতি করার অভিযোগে ঢাকা ওয়াসার পরিচালনা পর্ষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. হাবিবুর রহমান, সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী তাকসিম এ খানসহ বোর্ডের ১০ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে দুদক।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ওয়াসার সাবেক পরিচালক আবুল কাশেম ও এ কে এম সহিদ উদ্দিনের নিয়োগ প্রস্তাবের সঙ্গে একমত পোষণ করেন আসামিরা। পাশাপাশি তাদের বেতন-ভাতা বাবদ উত্তোলিত ১ কোটি ৯৮ লাখ ৬৫ হাজার ৯৮০ টাকা আত্মসাতের সহযোগিতা করেছেন।
২০০৯ সালে ঢাকা ওয়াসার এমডি হিসেবে নিয়োগ পান প্রকৌশলী তাকসিম এ খান। এরপর কয়েক ধাপে মেয়াদ বাড়ে তার। আওয়ামী লীগ সরকারের পতন পর্যন্ত ওই পদে বহাল ছিলেন তিনি। সরকার পতনের পর ঢাকা ওয়াসার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একটি অংশ তাকসিম এ খানসহ কয়েকজন কর্মকর্তার ওয়াসা ভবনে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেয়। সে কারণে তারা ওয়াসা ভবনে যাচ্ছিলেন না। পরে গত বছরের ১৪ আগস্ট তিনি স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিবের কাছে পদত্যাগপত্র দেন।
এক সময় জাতীয় সংসদের সাবেক হুইপ ও চট্টগ্রাম-১২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শামসুল হক চৌধুরীর বিরুদ্ধেও দুদকে অভিযোগ ছিল। ক্যাসিনোকাণ্ড থেকে শুরু করে সরকারের শুদ্ধি অভিযান- সব জায়গায় নাম আসে এই হুইপের। ২০১৯ সালের ক্যাসিনো অভিযানের পর ওই বছরের ২৩ অক্টোবর মানি লন্ডারিংয়ের মাধ্যমে বিদেশে অর্থপাচারের অভিযোগ এনে এমপি সামশুল হক চৌধুরীসহ ২২ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিতে এসবির বিশেষ পুলিশ সুপার (ইমিগ্রেশন) বরাবর চিঠি পাঠায় দুদক। নানা কারণে ওই সময়ের সকল অভিযোগ সুষ্ঠু তদন্তের মুখ দেখেনি বলে জানা যায়। অবশেষে গত বছরের ২৩ ডিসেম্বর সামশুল হক চৌধুরী ও তার পরিবারের সদস্যদের ব্যাংক হিসাব তলবের কথা জানিয়েছে দুদক। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির তদন্ত নতুন করে সংস্থাটি করছে বলেও জানা গেছে।
দিলীপ কুমার আগরওয়ালা ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের কর্ণধার। নানা অপকর্ম আর সোনা চোরাচালানের মূল হোতা হিসেবে যার নাম উঠে এসেছে একাধিকবার। দুর্নীতি দমন কমিশনে তার বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনসহ নানা অভিযোগ পড়ে। কিন্তু ক্ষমতা আর অর্থের প্রভাবে দুদককে ফাঁকি দিয়ে পেয়ে যান ক্লিন সার্টিফিকেট। তবে এবার নতুন করে আবার অনুসন্ধান হচ্ছে এই ব্যবসায়ীর।
জানা গেছে, ২০২০ সালের ২৩ নভেম্বর অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগসহ বিভিন্ন অভিযোগ থেকে দিলীপ কুমার আগারওয়ালকে অব্যাহতি দেয় দুদক। দীর্ঘ প্রায় তিন বছর তদন্ত শেষে আগারওয়ালকে দায়মুক্তি দেয়া হয় তখন।
দুদক সূত্রে জানা যায়, ২০১৭ সালের ১০ অক্টোবর দিলীপ কুমার আগারওয়ালের বিরুদ্ধে সংস্থাটির প্রধান কার্যালয়ে একটি অভিযোগ জমা পড়ে। এতে অভিযোগ ছিল, স্বর্ণ ও হীরা চোরাচালানের মাধ্যমে দিলীপ আগারওয়াল রাজস্ব ফাঁকিসহ শত শত কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন।
গত বছরের ৩ সেপ্টেম্বর মধ্যরাতে রাজধানীর গুলশান থেকে দিলীপ কুমার আগরওয়ালাকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-১-এর একটি দল। বর্তমানে তিনি কারাগারে রয়েছেন।
ভোলা-৪ আসনের সাবেক এমপি আব্দুল্লাহ আল জ্যাকব। তার বিরুদ্ধে ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে দুদকে অভিযোগ জমা হয়। অভিযোগ অনুসন্ধান শেষে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। জানা গেছে, গত বছরের এপ্রিল ও মে মাসে আরও দুটি অভিযোগ জমা হয় দুদকে। বর্তমানে অভিযোগ যাচাই-বাছাই পর্যায়ে আছে বলে জানা গেছে।
এদিকে আওয়ামী সরকার পতনে পর গত বছরের ১ অক্টোবর জ্যাকবকে গুলশান এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ২০১২ সালে বিএনপির মিছিলে নেতা-কর্মীদের ওপর গুলি করে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ জ্যাকবের বিরুদ্ধে গত বছরের ১২ সেপ্টেম্বর ঢাকার জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এস এম সাইফুল ইসলামের আদালতে মামলার আবেদন করেন ভোলা-৪ আসনের সাবেক এমপি নাজিম উদ্দিন আলম। সেই মামলায় জ্যাকবকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। এ ছাড়া চলতি বছরের ১৪ জানুয়ারি জ্যাকব এবং তার স্ত্রী নীলিমা নিগার সুলতানা, মেয়ে জুল জালালে আল ইসলাম জেনিক ও ছেলে আবরার তপন ইসলাম জেনিলের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত। দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার মেট্রোপলিটন সিনিয়র স্পেশাল জজ জাকির হোসেন গালিব এ আদেশ দেন বলে জানা যায়।
একসময় নানা অনিয়ম আর দুর্নীতির অভিযোগে ভোলা-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য নুরুন্নবী চৌধুরী শাওনের বিরুদ্ধে দুদকে মামলা হয়েছিল। সেই মামলা থেকে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে অব্যাহতি নিয়ে নেয় বলে জানা যায়। তবে পরিবর্তিত সময়ে এসে আবারও দুদকের জালে ধরা পড়েছেন তিনি। গত ২৮ জানুয়ারি শাওন ও তার স্ত্রী ফারজানা চৌধুরীর বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুদক। মামলায় শাওনের বিরুদ্ধে ৫১ কোটি ৯ লাখ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে। আর তার নামে থাকা ৩৩টি ব্যাংক হিসাবে ২০৮ কোটি ৭০ লাখ ৭৯ হাজার ৪২৩ টাকার সন্দেহজনক লেনদেন হয়েছে। শাওনের স্ত্রী ফারজানা চৌধুরীর বিরুদ্ধে ২ কোটি ২০ লাখ ৬১ হাজার টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে।
জানা গেছে, পরপর চারবার দুদকের ‘ক্লিনচিট’ নিয়েছিলেন ছাগলকাণ্ডে আলোচিত এনবিআরের সাবেক সদস্য মতিউর রহমান। প্রভাবশালী এই সরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ পেয়ে চার দফা অনুসন্ধান দল গঠন করে দুদক। প্রতিবারই তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির সত্যতা মেলেনি বলে তাকে অব্যাহতি দিয়ে অভিযোগ নথিভুক্ত করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। অবশেষে চলতি বছরের ৬ জানুয়ারি অবৈধ সম্পদ অর্জন ও সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে মতিউর রহমান, লায়লা কানিজ, তাঁদের ছেলে তৌফিকুর রহমান ও মেয়ে ফারজানা রহমানের বিরুদ্ধে পৃথক মামলা করেছে দুদক। এর আগে গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর মতিউর ও তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী শাম্মী আখতার শিবলীর বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা করে দুদক।
এদিকে এক কমিশনের আমলে অব্যাহতি নেওয়া এবং আরেক কমিশনের সময়ে একই ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে পুনঃতদন্ত হওয়া নিয়ে সংশ্লিষ্ট অনেকে মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। একই ব্যক্তিকে একবার ‘ক্লিনচিট’ দেয়ার পর আবার অনুসন্ধানে কিভাবে কোটি কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ খুঁজে পান, তা উদ্ঘাটন করে জড়িতদের কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করা উচিত বলে অনেকে অভিমত দেন।
এ বিষয়ে দুদকের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. আক্তার হোসেন বলেন, ‘বর্তমান কমিশনের সময়ে কোনো অভিযুক্ত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা দুর্নীতিবাজকে কোনো অভিযোগ থেকে দায়মুক্তি দেখিয়ে ক্লিন সার্টিফিকেট দেওয়া হয় না।’
তিনি আরও বলেন, ‘কোনো অভিযোগ একবার পরিসমাপ্তি হয়ে থাকলে পরবর্তী সময়ে যদি ওই অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে আরও তথ্য প্রমাণাধি পাওয়া যায় এবং প্রথমবার তার বিরুদ্ধে অভিযোগ পরিসমাপ্তি হয়ে যাওয়ার পরও তিনি যদি অবৈধ সম্পদ বা কোনো দুর্নীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে থাকেন তাহলে তার বিরুদ্ধে পুনরায় অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে কোনো বাধা নেই।’
দুদকের জাল থেকে আরও যারা পেয়েছিলেন অব্যাহতি
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আগেকার কমিশনের আমলে দুর্নীতির প্রমাণ পেয়ে মামলা দায়ের করার পরও পেট্রোবাংলার সাবেক চেয়ারম্যান হোসেন মনসুরকে দায়মুক্তি দিয়েছিল। এভাবে প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব ড. খোন্দকার শওকত হোসেন, আনন্দ শিপইয়ার্ডের মালিক আব্দুল্লাহিল বারী, রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান নূরুল হুদা, আলোচিত কাস্টমস কমিশনার নূরুল ইসলাম, সিভিল এভিয়েশনের প্রধান প্রকৌশলী শুভেন্দু গোস্বামী, বাপেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নওশাদুল ইসলাম, যুগ্মসচিব মো. আবুল হাসনাত হুমায়ন কবির, এলজিইডির সাবেক প্রধান প্রকৌশলী খলিলুর রহমান, জনস্বাস্থ্যের নির্বাহী প্রকৌশলী নূরুল কবির ভূঁইয়া, সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী সেলিম আজাদ খান, শাহরিয়ার শরিফ খান, রাজউকের নির্বাহী প্রকৌশলী সাইদুর রহমান, মো. সিরাজুল ইসলাম, ঢাকা ওয়াসার প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মো. নূরুল ইসলাম, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের প্রকল্প পরিচালক বেলাল হোসেন, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক কাজী মোস্তফা সারওয়ার, কাস্টমস কমিশনার ড. মো. শহিদুল ইসলাম, উপপ্রধান বন সংরক্ষক মো. শফিউল আলম চৌধুরী, বিডিবিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মঞ্জুর আহমেদ, গোয়াইনঘাটের সাবরেজিস্ট্রার স্বপ্না বেগম, স্বাস্থ্য শিক্ষা কর্মকর্তা মো. নাসির উদ্দিন, গণপূর্তের হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা একেএম মজিবুর রহমান ও সিটি ব্যাংকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ওয়াদুদ।
অনুসন্ধানে আরও জানা গেছে, পতিত সরকারের আমলে নারায়ণগঞ্জ-২ আসনের সাবেক সংসদ-সদস্য নজরুল ইসলাম বাবুর বিরুদ্ধে তিন দফা দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানে টিম গঠন করে দুদক। মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোম করে তার অন্তত ৫০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ এবং দেশে-বিদেশে বিপুল সম্পদের তথ্য গণমাধ্যমেও প্রকাশিত হয়। কিন্তু প্রতিবারই অভিযোগের নথি লম্বা সময় ফেলে রাখা হয়। এরপর রহস্যজনকভাবে তার বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়নি মর্মে অভিযোগ নথিভুক্ত করে তাকে ক্লিনচিট দেওয়া হয়। ২০১৯ সাল থেকে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধান করে আসছিল দুদক। অনুসন্ধানে দুদক নজরুল ইসলাম বাবু ও তাঁর পরিবারের বিপুল স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের তথ্য পায়, যা তাঁর বৈধ আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয় বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে।
জানা গেছে, কিশোরগঞ্জ-৫ আসনের সাবেক সংসদ-সদস্য আফজাল হোসেন, শেরপুর-১ আসনের সাবেক সংসদ-সদস্য আতিউর রহমান আতিক, চট্টগ্রাম-৩ আসনের সাবেক সংসদ-সদস্য মাহফুজুর রহমান মিতা, সাবেক সংসদ-সদস্য বিএম মোজাম্মেল হক এবং সিরাজুল ইসলাম মোল্লাকে দুর্নীতির অভিযোগ থেকে দায়মুক্তি দিয়েছিল দুদক।
দুদক সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী সরকারের পতনের পর একবার ক্লিন সার্টিফেকেট নেওয়া বা অব্যাহতিপ্রাপ্তরা আবারও দুদকের অনুসন্ধানে পড়ছেন। পুনরায় তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধে দুদক অনুসন্ধান চালানোর পাশাপাশি মামলা দায়ের করার কথা জানা যায়।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, স্বাধীন ও দক্ষ বিচার বিভাগ গড়ে তুলতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
তিনি বলেন, জুলাই বিপ্লব নতুন সভ্যতা গড়ে তোলার সুযোগ করে দিয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা এই সুযোগ কাজে লাগানোর জন্য বিচার বিভাগ সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান।
রোববার হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে আয়োজিত ‘বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও দক্ষতা’ বিষয়ক এক জাতীয় সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। এতে অন্যান্যের মধ্যে বাংলাদেশের অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান ও বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদীন বক্তব্য রাখেন।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) জানিয়েছে, তারা বাংলাদেশের আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতির পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাচন কমিশন (ইসি) ও সুশীল সমাজের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে।
রবিবার (২২ জুন) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ঢাকায় ইউরোপীয় দূতাবাস এমন তথ্য জানিয়েছে।
ইইউ দূতাবাস বিবৃতিতে জানায়, বাংলাদেশের জন্য আরও গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ নির্মাণে সুশীল সমাজকে ক্ষমতায়নে কাজ করছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন প্রতিনিধি ও এর অংশীদাররা।
ইউরোপীয় পার্টনারশিপ ফর ডেমোক্রেসির (ইপিডি) সহায়তায় এর অংশীদার সংগঠন আনফারেল ১৮ থেকে ২০ জুন ঢাকায় তিনদিনব্যাপী একটি ওয়ার্কশপের আয়োজন করে। এর বিষয়বস্তু ছিল নাগরিক নির্বাচন পর্যবেক্ষণ।
ইইউ দূতাবাস জানায়, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে সক্রিয় ও নিরপেক্ষ নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়ে সব অংশগ্রহণকারী একমত পোষণ করেছেন।
নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের জন্য সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা প্রণয়নে সহযোগিতা এবং এতে কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালনের কথা স্বীকার করেছে বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন।
দুই দিন বিরতি দিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আজ রবিবার রাজনৈতিক দলগুলোর দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনা শুরু হয়েছে।
রবিবার (২২জুন) বেলা ১১টা ২০ মিনিটে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এ আলোচনায় বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীসহ দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা অংশ নিয়েছেন।
এতে সভাপতিত্ব করছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ। আগের আলোচনার সমাপ্তি টানতেই আজকের এই বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানটি বাংলাদেশ টেলিভিশন-নিউজ সরাসরি সম্প্রচার করছে। বৈঠকে আলী রীয়াজ ছাড়াও আরও উপস্থিত রয়েছেন ঐকমত্য কমিশনের সদস্য জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী, পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রধান সফর রাজ হোসেন, নির্বাচন সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রধান বিচারপতি এমদাদুল হক এবং দুদক সংস্কার কমিশনের প্রধান ইফতেখারুজ্জামান।
এর আগে, গত ১৭ জুন দ্বিতীয় পর্যায়ের অসমাপ্ত আলোচনায় অংশ নেয়নি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে যোগাযোগের পর তার পরের দিন অবশ্য অংশ নিয়েছিল দলটি।
এদিকে সংসদের উচ্চকক্ষের আসন বণ্টন, জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি) গঠনসহ বেশ কয়েকটি বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংলাপে রাজনৈতিক দলগুলো এখনো কাছাকাছি আসতে পারেনি। প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতায় ভারসাম্য আনতেই এনসিসি গঠনের কথা বলা হচ্ছে।
রাষ্ট্রপতি নির্বাচন পদ্ধতি এবং সংরক্ষিত নারী আসনের নির্বাচন নিয়েও দলগুলোর ঐকমত্য হয়নি গত সপ্তাহে হওয়া চার দিনের সংলাপে। এ পর্যায়ে ঐকমত্যের সংজ্ঞা নিয়েও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতানৈক্য প্রকাশ পেয়েছে। কমিশন এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দেওয়ার কথাও ভাবছে।
গত সপ্তাহের সংলাপের অগ্রগতি পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, এই বিষয়গুলোতে একদিকে রয়েছে বিএনপি এবং সমমনা পাঁচটি দল; তাদের কাছাকাছি অবস্থান বামপন্থি সিপিবি, বাসদের। বিএনপির বিপরীত অবস্থানে রয়েছে জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি, ইসলামী আন্দোলন, এবি পার্টিসহ বাকি দলগুলো। যুগপৎ আন্দোলনের মিত্র গণঅধিকার পরিষদ, নাগরিক ঐক্য, গণসংহতি, জেএসডির অবস্থানও বিএনপির বিপরীতে।
নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে সংসদের প্রস্তাবিত উচ্চকক্ষের আসন বণ্টন, প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা হ্রাসে জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি) গঠনের প্রস্তাবের বিপক্ষে অনড় অবস্থান ধরে রেখেছে বিএনপি এবং সমমনা এলডিপি, এনডিএম, লেবার পার্টি, ১২ দলীয় জোট এবং ১১ দলীয় জোট।
চার দিনের সংলাপে ৩০ রাজনৈতিক দল এবং জোট শুধু ৭০ অনুচ্ছেদ শিথিলে শর্ত সাপেক্ষে ঐকমত্য হয়েছে। যদিও জামায়াত বলেছে, শুধু অর্থবিল এবং আস্থা প্রস্তাব নয়, সংবিধান সংশোধনেও এমপিরা দলের বিরুদ্ধে ভোট দিতে পারবেন না। বিএনপি বলেছে, যুদ্ধাবস্থায়ও দলীয় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ভোট দিতে পারবেন না এমপিরা।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের নাগরিকদের শরণার্থী হিসেবে নিবন্ধনের সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে। ২০২০ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত প্রতি বছরই এই সংখ্যা বেড়েছে। শুধু ২০২৪ সালেই জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার কাছে ২৮ হাজার ৪৭৩ বাংলাদেশি শরণার্থী হিসেবে নিবন্ধিত হয়েছেন।
তবে শুধু শরণার্থী নয়, রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদনও করছেন অনেক বাংলাদেশি। ২০২৪ সালে এক লাখ ৮ হাজার ১৩১ বাংলাদেশি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করেছেন। অধিকাংশ বাংলাদেশি আশ্রয়প্রার্থী ইউরোপ ও আমেরিকার দেশগুলোতে আশ্রয়ের জন্য আবেদন করেন। জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থার (ইউএনএইচসিআর) পরিসংখ্যান থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালে ২৪ হাজার ১২৬ বাংলাদেশি জাতিসংঘের কাছে শরণার্থী হিসেবে নিবন্ধিত হয়েছেন। ২০২২ সালে ২৩ হাজার ৯৩৫ জন, ২০২১ সালে ২২ হাজার ৬৭২ জন এবং ২০২০ সালে ১৮ হাজার ৯৪৮ জন বাংলাদেশি নিজেদের শরণার্থী দাবি করে জাতিসংঘের কাছে আবেদন করেন। এছাড়া ২০১৯ সালে শরণার্থী হিসেবে জাতিসংঘের কাছে বাংলাদেশিদের আবেদনের সংখ্যা ছিল ২২ হাজার ৭৬৬, ২০১৮ সালে ২১ হাজার ২২ এবং ২০১৭ সালে ১৬ হাজার ৭৮০টি।
২০২৪ সালে এক লাখ ৮ হাজার ১৩১ বাংলাদেশি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করেছেন। এছাড়া ২০২৩ সালে ৭৫ হাজার ৮৬৭ জন বাংলাদেশি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করেছেন। ২০২২ সালে ৬১ হাজার ২৯৮ জন, ২০২১ সালে ৬৫ হাজার ৪৯৫ এবং ২০২০ সালে ৬৪ হাজার ৬৩৬ জন বাংলাদেশি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রাজনৈতিক আশ্রয় চান। ২০১৯ সালে এ সংখ্যা ছিল ৬২ হাজার ৮৬০ এবং ২০১৮ সালে ৬২ হাজার ৮৬০।
তবে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার তথ্যে যে চিত্র উঠে এসেছে তাতে দেখা যায়, আশ্রয়প্রার্থীদের বেশিরভাগই সুযোগসন্ধানী বা পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়েছেন।
অভিবাসন ও শরণার্থীবিষয়ক বিশেষজ্ঞ আসিফ মুনীর বলেন, অনেকে অবৈধ পথে লাখ লাখ টাকা দিয়ে ইউরোপ যাচ্ছেন। সেখানে গিয়ে অবৈধ হয়ে থাকেন বছরের পর বছর। এরপর এরা শরণার্থী হিসেবে স্থায়ী হওয়ার আবেদন করেন।
তিনি বলেন, কিছু দেশ যুদ্ধবিধ্বস্ত, যেমন মিয়ানমার, সিরিয়া, আফগানিস্তান- এসব দেশ থেকে কেউ গেলেই অটোমেটিক তারা শরণার্থী হিসেবে বিবেচিত হন। কিন্তু আমাদের দেশের ক্ষেত্রে এটা প্রযোজ্য না। আমাদের অনেকে অবৈধ হিসেবে গিয়ে শরণার্থী পরিচয় দেন, কিন্তু ইউরোপ জানে এরা অবৈধ অভিবাসী।
আসিফ মুনীর আরও বলেন, তবুও ইউরোপের দেশ ইতালি, ফ্রান্স আমাদের এই অবৈধ অভিবাসীদের গ্রহণ করছে। কিন্ত বাস্তবিক অর্থে যারা অবৈধ পথে এসব দেশে যাচ্ছেন এরা শরণার্থী নন। কিন্তু বাংলাদেশে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর বহু মানুষ ইউরোপে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। বিশেষ করে স্ক্যান্ডিনেভিয়ার দেশগুলোতে বহু বাংলাদেশি আছেন যারা শরণার্থী হিসেবে গিয়েছেন।
প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস দেশের সমুদ্রসীমার একটি পরিপূর্ণ হাইড্রোগ্রাফিক তথ্যভাণ্ডার গড়ে তুলতে আরো পেশাদারিত্ব, দক্ষতা, নিষ্ঠার সাথে কাজ করার জন্য হাইড্রোগ্রাফিক পেশাজীবীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতির ভিত আরো মজবুত ও সমৃদ্ধ করতে সমুদ্র তলদেশের নির্ভুল মানচিত্রায়নের মাধ্যমে একটি কার্যকর ও টেকসই সমুদ্রনীতি গড়ে তুলতে হবে।
‘বিশ্ব হাইড্রোগ্রাফি দিবস-২০২৫’ উপলক্ষ্যে আজ শুক্রবার এক বাণীতে তিনি এ আহ্বান জানান।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও বাংলাদেশে ‘বিশ্ব হাইড্রোগ্রাফি দিবস-২০২৫’ উদ্যাপন করা হচ্ছে জেনে আমি আনন্দিত।’
তিনি বাংলাদেশ নৌবাহিনীসহ দিবসটি আয়োজনের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন। একই সাথে এবছর দিবসটির প্রতিপাদ্য-‘সিবেড ম্যাপিং: এনাবলিং ওশান এ্যাকশন’- যার মাধ্যমে গভীর সমুদ্রের তলদেশের মানচিত্রায়নের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরা হয়েছে, অত্যন্ত যুক্তিযুক্ত হয়েছে বলে প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস মনে করেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশের জাতীয় অর্থনীতি, নিরাপত্তা ও পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষায় বঙ্গোপসাগর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শুধু বাংলাদেশই নয়, পার্শ্ববর্তী দেশগুলোও তাদের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য বঙ্গোপসাগরের ওপর অনেকাংশে নির্ভরশীল। তিনি বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার দেশকে একটি উৎপাদনমুখী ও আঞ্চলিক অর্থনৈতিক কেন্দ্রে রূপান্তরের লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে। এ লক্ষ্য অর্জনে সমুদ্র সম্পদকে আরো কার্যকরভাবে ব্যবহারে বিশদ, হালনাগাদ ও নির্ভুল হাইড্রোগ্রাফিক তথ্যের কোনো বিকল্প নেই।
প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চল ও সমুদ্রসীমার হাইড্রোগ্রাফিক জরিপ, চার্ট প্রস্তুত, সকল দেশি ও বিদেশি জাহাজের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ এবং আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী তথ্য-উপাত্ত বিনিময়ে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর হাইড্রোগ্রাফিক বিভাগ নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। বিশেষ করে জাতিসংঘের সমুদ্র আইন অনুযায়ী, আমাদের মহীসোপান অঞ্চল নির্ধারণ এবং সুনীল অর্থনীতি বিকাশে হাইড্রোগ্রাফিক বিভাগের কার্যক্রম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি আশা প্রকাশ করেন, আমাদের সামরিক ও নৌ-নিরাপত্তা নিশ্চিতের পাশাপাশি হাইড্রোগ্রাফি বিভাগ সমুদ্র বন্দরের উন্নয়ন, মৎস্য সম্পদ সংরক্ষণ, তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান এবং উপকূলীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় আরো সক্রিয় ভূমিকা পালন করবে।
তিনি ‘বিশ্ব হাইড্রোগ্রাফি দিবস-২০২৫’ উপলক্ষ্যে গৃহীত সকল কর্মসূচির সার্বিক সাফল্য কামনা করেন।
জলবায়ু সহনশীলতা, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, পরিবহন অবকাঠামো ও ব্যাংক খাতে সংস্কারে চারটি প্রধান উন্নয়ন প্রকল্পে অর্থায়নের জন্য এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) সঙ্গে ১৩০ কোটি ডলারের ঋণচুক্তি স্বাক্ষর করেছে বাংলাদেশ।
শুক্রবার (২০ জুন) রাজধানীর ইআরডি কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক অনুষ্ঠানে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) ও এডিবির মধ্যে এ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে ইআরডি সচিব মো. শাহরিয়ার কাদির সিদ্দিকী এবং এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর হো ইউন জিয়ং সংশ্লিষ্ট নথিতে সই করেন।
ইআরডি সচিব বলেন, ‘এই চুক্তিগুলো আমাদের জলবায়ু সহনশীলতা জোরদার, অবকাঠামো উন্নয়ন, পরিচ্ছন্ন জ্বালানির প্রসার ও আর্থিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার প্রচেষ্টায় একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি।’
তিনি আরও বলেন, ‘এডিবির সহায়তা আমাদের জাতীয় অগ্রাধিকার অনুযায়ী অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই উন্নয়নের পথে এগিয়ে যেতে সহায়তা করবে।’
যে ৪ প্রকল্পে অর্থায়ন করা হবে—৪০ কোটি ডলারের ‘জলবায়ু-স্থিতিস্থাপক অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন কর্মসূচি (সিআরআইডিপি)’ সই করেছে এডিবি ও বাংলাদেশ। এই কর্মসূচির লক্ষ্য জলবায়ু সহনশীলতা বৃদ্ধি, নির্গমন হ্রাস এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করা। এই প্রকল্পের আওতায় এজেন্সি ফ্রান্সেস ডি ডেভেলপমেন্ট (এএফডি) থেকে প্রায় ১১ কোটি ৩০ লাখ ডলার এবং এশীয় অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংক থেকে ৪০ কোটি ডলার সহ-অর্থায়ন পাবে বাংলাদেশ।
এ ছাড়া, বাংলাদেশ ক্লাইমেট ডেভেলপমেন্ট পার্টনারশিপ গঠন, দুর্যোগ ঝুঁকি অর্থায়ন জোরদার, জেন্ডার-সংবেদনশীল স্থানীয় অভিযোজন প্রচার এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও পরিবহন মাস্টার প্ল্যানকে সহায়তা করবে সিআরআইডিপি।
এরপর রয়েছে ২০ কোটি ডলারের ‘বিদ্যুৎ সঞ্চালন শক্তিশালীকরণ এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানি একীভূতকরণ প্রকল্প’। এই প্রকল্পের মাধ্যমে বগুড়া, চাঁদপুর, গোপালগঞ্জ, হবিগঞ্জ, পিরোজপুর ও সাতক্ষীরাসহ বিভিন্ন গ্রামীণ জেলায় বিদ্যুৎ সঞ্চালন অবকাঠামো উন্নীত করা হবে।
পাশাপাশি দক্ষিণ চট্টগ্রাম অঞ্চলে নবায়নযোগ্য জ্বালানির একীভূতকরণে সহায়তা করবে এই প্রকল্প, যা নির্ভরযোগ্য ও অন্তর্ভুক্তিমূলক বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করার পাশাপাশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে।
তাছাড়া, ঢাকা উত্তর-পশ্চিম আন্তর্জাতিক বাণিজ্য করিডোর উন্নয়নে ২০ কোটি ৪০ লাখ ডলারের একটি ঋণচুক্তি স্বাক্ষর করেছে এডিবি ও বাংলাদেশ সরকার। করিডোরটির উন্নয়নের মধ্য দিয়ে দেশের আঞ্চলিক বাণিজ্য আরও বিস্তৃত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এ প্রকল্পের আওতায় এলেঙ্গা থেকে রংপুর পর্যন্ত ১৯০ কিলোমিটার সড়ক সম্প্রসারণ ও আধুনিকায়ন করা হবে। প্রকল্পটি ভুটান, ভারত ও নেপালের সঙ্গে আঞ্চলিক সংযোগ উন্নয়নে সহায়তা করবে বলে বলা হয়েছে।
এতে জলবায়ু সহনশীল ডিজাইন ও জেন্ডার-সংবেদনশীল বৈশিষ্ট্য যেমন ফুটব্রিজ ও মটরবিহীন যানবাহনের জন্য আলাদা লেন অন্তর্ভুক্ত থাকবে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।
এদিকে, বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতকে স্থিতিশীল ও সংস্কারের পথে এগিয়ে নিতে ৫০ কোটি ডলারের ‘ব্যাংকিং খাতের স্থিতিশীলতা ও সংস্কার কর্মসূচি’ প্রকল্প নেওয়া হয়েছে।
এই সংস্কারকেন্দ্রিক কর্মসূচিটি নিয়ন্ত্রক তত্ত্বাবধান শক্তিশালী করবে, আর্থিক সম্পদের গুণমান উন্নত করবে এবং আর্থিক অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করবে বলে আশা করা হচ্ছে। তাছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের সক্ষমতা বাড়ানো ও খেলাপি ঋণ সম্পর্কিত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় এই প্রকল্প সহায়তা করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এই সমন্বিত সহায়তা প্যাকেজ বাংলাদেশের দীর্ঘমেয়াদী সহনশীলতা ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন লক্ষ্যে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে বলে মন্তব্য করেন হো ইউন জিয়ং।
বিভিন্ন দপ্তরে কর্মরত পাঁচজন সচিব বা সমপদমর্যাদার এবং একজন গ্রেড-১ কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠিয়েছে সরকার। গতকাল বৃহস্পতিবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের পৃথক প্রজ্ঞাপনে এ সিদ্ধান্ত জানানো হয়।
অবসরে পাঠানো কর্মকর্তারা হলেন- বাংলাদেশ কর্মচারী কল্যাণ বোর্ডের মহাপরিচালক (সচিব) কাজী এনামুল হাসান, জাতীয় পরিকল্পনা ও উন্নয়ন একাডেমির মহাপরিচালক (সচিব) সুকেশ কুমার সরকার, ভূমি আপিল বোর্ডের চেয়ারম্যান (সচিব) মুহম্মদ ইব্রাহিম, জাতীয় উন্নয়ন প্রশাসন একাডেমির রেক্টর (সচিব) মো. সহিদ উল্যাহ এবং ওএসডি সচিব মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন।
এ ছাড়া বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্যশিল্প করপোরেশনের চেয়ারম্যান (গ্রেড-১) লিপিকা ভদ্রকেও বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে।
প্রজ্ঞাপনগুলোতে জানানো হয়, তাদের চাকরিকাল ২৫ বছর পূর্ণ হয়েছে এবং সরকার জনস্বার্থে সরকারি চাকরি থেকে অবসর করা প্রয়োজন মর্মে বিবেচনা করে বিধায় তাদেরকে সরকারি চাকরি থেকে অবসর দেওয়া হয়েছে।
তারা বিধি অনুযায়ী অবসরজনিত সুবিধাদি পাবেন বলেও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালযয়ের প্রজ্ঞাপনগুলোতে জানানো হয়েছে।
উল্লেখ্য, আইন অনুযায়ী সরকার ২৫ বছর হয়ে গেলে একজন কর্মকর্তাকে অবসরে পাঠাতে পারে কিন্তু সেজন্য সুনির্দিষ্ট কারণ কখনো প্রকাশ করা হয় না।
লিবিয়া থেকে স্বেচ্ছায় দেশে ফেরার আগ্রহ প্রকাশ করা আরও ১২৩ অনিবন্ধিত বাংলাদেশি নাগরিককে গতকাল বৃহস্পতিবার দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, এসব বাংলাদেশির সবাই বুরাক এয়ারের একটি বিশেষ চার্টার্ড ফ্লাইটে (ইউজেড ০২২২) সকাল ৯টা ৫০ মিনিটে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছান।
উল্লেখ্য, প্রত্যাগতদের অধিকাংশই মানবপাচারের শিকার। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে, ত্রিপোলিতে বাংলাদেশ দূতাবাস, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) সমন্বিত উদ্যোগে প্রত্যাবাসন কার্যক্রমটি বাস্তবায়িত হয়েছে।
দেশে ফেরার পর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং আইওএম-এর প্রতিনিধিরা তাদের স্বাগত জানান ।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অধিকাংশ বাংলাদেশি সমুদ্রপথে ইউরোপে পৌঁছানোর উদ্দেশে অনিবন্ধিতভাবে লিবিয়ায় প্রবেশ করেছিলেন। লিবিয়ায় অবস্থানকালে তাদের অনেকেই মানব পাচারকারীদের দ্বারা অপহরণ ও নির্যাতনের শিকার হন।
সরকারি কর্মকর্তারা এসব অভিবাসীকে পরামর্শ দেন, যেন তারা অন্যদের এই ধরনের বিপজ্জনক ও অবৈধ পথে বিদেশ গমনের ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতন করেন এবং ভবিষ্যতে এমন যাত্রা থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দেন।
পুনর্বাসন সহায়তার অংশ হিসেবে আইওএম প্রত্যেককে নগদ ৬ হাজার টাকা, জরুরি খাদ্য সহায়তা, প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা এবং প্রয়োজনে অস্থায়ী আবাসনের ব্যবস্থা করেছে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, বর্তমানে লিবিয়ার বিভিন্ন বন্দিশিবিরে আটক থাকা অন্যান্য বাংলাদেশির নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনের কাজ চলছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ত্রিপোলিতে বাংলাদেশ দূতাবাস, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং আইওএম যৌথভাবে এ বিষয়ে কাজ করে যাচ্ছে।
রাঙ্গামাটি জেলার দুর্গম পাহাড়ে বিরল প্রজাতির গোলাপি রঙের নতুন হাতির বাচ্চা দেখা গেছে। দেশে প্রথমবারের মতো রাঙ্গামাটির পাহাড়ে দেখতে পাওয়া বিরল এই গোলাপি হাতির বাচ্চাটির বয়স দুই সপ্তাহের একটু বেশি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
জেলার বরকল উপজেলার সুভলংয়ের বরুনাছড়ি ইউনিয়নের ফরেস্টের এলিফ্যান্ট রেসপন্স টিম (ইআরটি) এর প্রধান সমন্বয়কারী মো. জাহাঙ্গীর আলম গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে এর আগে গোলাপি রঙের হাতির দেখা পাওয়া যায়নি। এটা বাংলাদেশের প্রাণিজগতে হাতির প্রথম বিস্ময়কর ঘটনা হতে পারে। রাঙ্গামাটি শহর থেকে এক থেকে দেড় ঘণ্টায় স্পিডবোটে করে ঘটনাস্থলে যাওয়া যায়। সাধারণ বোটে হলে সময় আরো একটু বেশি লাগতে পারে।
জেলার বরকল উপজেলার বরুনাছড়ি ইউনিয়নে দুর্গম পাহাড়ে হাতির অবস্থান সম্পর্কে মো. জাহাঙ্গীর আলম জানান, তিনিই প্রথম দেখতে পান একটি হাতির পাল গোলাপি রঙের হাতি শাবকসহ বরুনাছড়ি এলাকায় কাপ্তাই হ্রদ পার হতে । পরে জাহাঙ্গীর আলম সঙ্গে সঙ্গে সেই দৃশ্যটির ভিডিও ধারণ করে পার্বত্য চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগের সাবেক বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিমকে পাঠান। তিনি সেই ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করলে বিষয়টি জানাজানি হয়ে যায়।
তিনি জানান, বর্তমানে বরুনাছড়িতে হাতির নতুন গোলাপি বাচ্চাসহ দুটি হাতির শাবক এবং আরো ৬টি হাতিসহ সর্বমোট ৮টি হাতি রয়েছে। এর মধ্যে নতুন গোলাপি বাচ্চাসহ ৫টি একটি দলে, ২টি হাতি একসাথে এবং আরো একটি বড় হাতি সেখানে অবস্থান করছে। সরজমিনে দেখা যায়, সদ্য জন্ম নেয়া হাতির ছোট শাবকটি গোলাপি রঙের। সাধারণত বাচ্চা হাতির সারা গায়ের লোম কালো হলেও নতুন বাচ্চার গায়ের রং অনেকটাই গোলাপি এবং কিছুটা ব্যতিক্রম এই গোলাপি শাবক।
এ বিষয়ে রাঙ্গামাটি সার্কেলের বন সংরক্ষক মোহাম্মদ আবদুল আউয়াল সরকার বলেন, পাহাড়ে হাতি সংরক্ষণের জন্য বন বিভাগ ছাড়াও ফরেস্ট বিভাগের দায়িত্বরত ব্যক্তির পাশাপাশি আরো একটি ইআরটি রয়েছে। তারা সব সময় পাহাড়ে থাকা হাতির সমস্যাসহ নানা বিষয় তদারক করে। আমরা এই টিমের মাধ্যমেই গত ১৩ জুন গোলাপি রঙের হাতির নতুন শাবকের কথা জানতে পারি। খবর পেয়ে আমরা বন বিভাগের পক্ষ থেকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি।
তিনি বলেন, ‘নতুন এই বিস্ময়কর গোলাপি রঙের হাতির দিকে বন বিভাগ নজর রাখছে।’
হাতির বাচ্চাটির গায়ের রং গোলাপি হওয়ার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে বন সংরক্ষক মোহাম্মদ আবদুল আউয়াল সরকার বলেন, নিউট্রিশনজনিত কারণেও হাতির বাচ্চার রং এরকম পরিবর্তন হতে পারে। এটি একটি গবেষণার বিষয় এবং এটা নিশ্চিত করতে একটু সময় লাগবে।
বরুণাছড়ির ঘটনাস্থলেই দেখা হয় জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ও অধ্যাপক এম মনিরুল এইচ খানের সঙ্গে। তিনি হাতির বাচ্চার গোলাপি রঙের বিষয়ে বলেন, সাধারণত হাতির গায়ের রং কালচে ধরনের হয়ে থাকে।
হাতির চামড়ায় যে রঞ্জক পদার্থ তৈরি হয় তা যদি কোন অস্বাভাবিকতার কারণে তৈরি হতে না পারে সেটি কিছুটা ফ্যাকাসে বা গোলাপি রং ধারণ করে। এই নতুন হাতি শাবকটির ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। এটি অত্যন্ত বিরল ঘটনা এবং স্বাভাবিক অবস্থায় এটি হয় না।
তিনি বলেন, ‘হাতির জিনগত কোন অস্বাভাবিকতার কারণে অনেক সময় হাতির গায়ের রঙের ভিন্নতা আসে এবং এই ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে।’
অধ্যাপক এম মনিরুল এইচ খান বলেন, ভারতীয় উপমহাদেশ, মায়ানমার, থাইল্যান্ডসহ পুরো অঞ্চলে এশীয় হাতির রং এরকম গোলাপি হওয়ার ঘটনা অত্যন্ত বিরল। রাজাদের শাসনামলে এ ধরনের বিরল সাদাটে বা গোলাপি হাতিগুলো রাজাদের কাছে খুবই কদরের ছিল। রাজারা তাদের হাতিশালায় এসব হাতি শখ করে পুষতেন এবং হাতিগুলোকে তাদের বিভিন্ন ধর্মীয় ও রাষ্ট্রীয় কাজে ব্যবহার করতেন। তিনি এরকম বিরল হাতি সংরক্ষণে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগকে যথাযথ ভূমিকা পালনের সুপারিশ করেন।
তিনি বলেন, পুরো পার্বত্য চট্টগ্রামের যে সব অঞ্চলে বন্য হাতি আছে সে সব অঞ্চলের প্রায় বনাঞ্চলই দখল হয়ে বসতি, বাজারসহ বিভিন্ন অবকাঠামো গড়ে উঠছে। ক্রমেই ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে হাতির আবাসস্থলসহ পাহাড়ের বনাঞ্চল। এ কারণে এক সময় হাতির নিরাপদ আবাসভূমি এখন তাদের জন্য বিপদসংকুল হয়ে উঠেছে। বর্তমানে পাহাড়ে হাতি আর মানুষ অনেকটা একসঙ্গেই বসবাস করছে। যার কারণে হাতি আর মানুষের দ্বন্দ্ব অনেকটাই বেড়ে চলেছে এবং যার অনেক আলামত আমরা চারপাশেই দেখতে পাচ্ছি।
তিনি বিরল প্রাণীর অভয়ারণ্য তৈরির জন্য সরকারি বনভূমি সংরক্ষণ করে সেখানে প্রাকৃতিকভাবে স্থানীয় উদ্ভিদ বেড়ে ওঠার পরিবেশ তৈরি করতে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তিনি বলেন, প্রয়োজন হলে এনরিচমেন্ট প্ল্যান্টেশন বা স্থানীয় যে সব উদ্ভিদ প্রজাতি ও বৃক্ষ প্রজাতি আছে সেগুলো বন বিভাগের মাধ্যমে রোপণ ও সংরক্ষণে স্থানীয় জনগণকে সচেতন করতে হবে।
পাহাড়ের প্রত্যন্ত দুর্গম এলাকাতে গোলাপি হাতিটি দেখতে এখন প্রায় প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসছে গবেষকসহ উৎসুক জনগণ। হাতির বাচ্চাটি ছোট থাকায় মা হাতিসহ অন্য হাতিরা তাকে হাতির শুড়ের ওপর করেও কাপ্তাই লেক পাড় হতে দেখেছে স্থানীয় বাসিন্দারা। বর্তমানে যে টিলাতে হাতিগুলো অবস্থান করছে হাতির গোলাপি শাবকটি বড় না হওয়া পর্যন্ত এই বুনো হাতির দল সেখানেই অবস্থান করতে পারে বলে ধারণা করছেন ইআরটির সদস্যরা।
তবে পাহাড়ে বিরল প্রজাতির এই গোলাপি হাতির বাচ্চাসহ পুরো হাতির দলকে নিরাপদে রাখতে সেখানে মানুষের অবাধ বিচরণকে নিয়ন্ত্রণে আনার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা। তা না হলে যেকোনো সময় অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাসহ হাতির আক্রমণের শিকার হতে পারে মানুষ। তাই পুরো এলাকাটি সরকারিভাবে সংরক্ষণ করাটা অনেক জরুরি।
সূত্র: বাসস
রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেই গুম করা হতো বলে জানিয়েছেন গুম সংক্রান্ত তদন্ত কমিটির সভাপতি বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী। গুমের শিকার ব্যক্তিদের সম্ভাব্য ৪ ধরনের পরিণতি হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর গুলশানে সংবাদ সম্মেলনে গুমসংক্রান্ত তদন্ত কমিটির সভাপতি এসব তথ্য জানান। কমিশনে দাখিল করা অভিযোগ বিশ্লেষণে এসব তথ্য দেন তিনি।
তিনি বলেন, গুমের শিকার ব্যক্তিদের সম্ভাব্য যে ৪ ধরনের পরিণতি হয়েছে, তা হলো: ১. গুমের শিকার ব্যক্তিকে হত্যা করা। ২. বিচারের আগেই মিডিয়ার সামনে উপস্থাপন করে জঙ্গি তকমা দিয়ে বাংলাদেশেই বিচারাধীন বা নতুন ফৌজদারি মামলায় গ্রেফতার দেখানো।৩. তাকে সীমান্ত দিয়ে ভারতে পাঠিয়ে সে দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের মাধ্যমে গ্রেপ্তারের ব্যবস্থা করা। ৪. ভাগ্য সুপ্রসন্ন হলে, অল্পসংখ্যক ক্ষেত্রে মামলা না দিয়ে ছেড়ে দেওয়া।
গুম কমিশনের ২য় অন্তর্বর্তী প্রতিবেদন গত ৪ জুন প্রধান উপদেষ্টা বরাবর জমা দেওয়ার পর আজ দুপুরে রাজধানীর গুলশানে গুম সংক্রান্ত কমিশন অফ ইনকোয়ারির কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে মইনুল ইসলাম চৌধুরী এ সব কথা বলেন।
গুম কমিশনের সভাপতি বলেন, বিগত কর্তৃত্ববাদী সরকারের আমলে বিরোধী রাজনৈতিক শক্তি এবং ভিন্ন মতাবলম্বীদের বিরুদ্ধে পদ্ধতিগত দমননীতির অংশ হিসেবে গুমকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছিল।
তিনি বলেন, ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পরেও বহু অপরাধী ও তাদের শুভাকাঙ্ক্ষীরা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার কেন্দ্রে থাকায় অনেক জোরালো প্রমাণ ও নিদর্শন ধ্বংস, অনেক ক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক অসহযোগিতা, সাক্ষীদের ভয়ভীতি প্রদর্শনসহ নানারকম ভীতিকর ও আতঙ্কজনক পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। তবুও বহু ভুক্তভোগী জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তাদের অভিযোগ ও অভিজ্ঞতা জানিয়েছেন। তারা দেশীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে বিস্তারিতভাবে সে কাহিনি তুলে ধরেছেন।
গুম সংক্রান্ত কমিশন অফ ইনকোয়ারির সভাপতি আরো বলেন, বিগত সরকারের শাসনামলে গুম একটি সুশৃঙ্খল ও প্রাতিষ্ঠানিক রূপে ‘জঙ্গিবাদবিরোধী’ অভিযানের ছায়াতলে ইসলামি উগ্রবাদের হুমকিকে ব্যবহার করে রাজনৈতিক ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করা, আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জন ও শাসন দীর্ঘায়িত করার উদ্দেশে পরিচালিত হয়েছিল। ভুক্তভোগীদের মধ্যে ছিলেন- মেধাবী শিক্ষার্থী, রাজনৈতিক কর্মী ও সাংবাদিক থেকে সাধারণ জনগণ।
মইনুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, এ প্রক্রিয়ায় তারা ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থাকে অস্ত্র বানিয়েছিল। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও নিরাপত্তা বাহিনীকে রাজনৈতিক প্রভাবাধীন করে এবং নির্যাতন ও গোপন আটকের সংস্কৃতি প্রাতিষ্ঠানিকভাবে চালু করেছিল। এমনকি সাধারণ নাগরিকদের বেআইনি পন্থায় বারবার ভারতীয় বাহিনীর হাতেও তুলে দেওয়া হয়েছিল।
কমিশন অফ ইনকোয়ারি অ্যাক্টের ধারা ১০ এ(১) ও (২) অনুযায়ী কমিশনে দাখিলকৃত ১৩১টি অভিযোগের বিষয়ে আইন মোতাবেক জিডি রেকর্ডপূর্বক ভিকটিমদের সন্ধান ও উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনার জন্য পুলিশ মহাপরিদর্শক বরাবর প্রেরণ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, গোপন আটক কেন্দ্রের অস্তিত্ব এখন আর অস্বীকার করা যায় না। সকল ক্ষেত্রেই ভুক্তভোগীরা প্রায় একই ধরনের প্রক্রিয়ার শিকার হয়েছেন। পদ্ধতিগত নির্যাতন, সন্ত্রাসী হিসেবে প্রচার, একই ধরনের আইন অনুযায়ী অভিযোগ দায়ের ও একই ধরনের ভাষায় বর্ণনা। বিভিন্ন পটভূমি থেকে আসা ব্যক্তিদের অভিজ্ঞতার এই সামঞ্জস্য রাজনৈতিক উদ্দেশ্যকে স্পষ্ট করে।
তিনি বলেন, প্রতিবেদনে ১৯ শতাংশ ফেরত না আসা ১২ জন ভিকটিমের বিষয়ে অগ্রগতি তুলে ধরেছি, যাদের বিষয়ে প্রাথমিকভাবে অনুসন্ধান সম্পন্ন হয়েছে। তাদের গুমের জন্য কারা দায়ী, তা প্রাথমিকভাবে আমরা শনাক্ত করতে পেরেছি। চলমান অনুসন্ধানের স্বার্থে এই মুহূর্তে এর চেয়ে বেশি প্রকাশ করা সম্ভব হচ্ছে না।
ফিরে না আসা ভিকটিমদের বিষয়ে অপরাধী ও গুমের অপরাধ সংঘটনের স্থানসহ নানাবিধ বিষয়ে তথ্যের ঘাটতি বা পুরোনো কললিস্ট না পাওয়াসহ নানারকম বিলম্বঘটিত প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হলেও কমিশন আন্তরিকতার সঙ্গে অনুসন্ধান কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে বলেও জানান তিনি।
প্রতিবেদনে কমিশন সন্ত্রাসবিরোধী যে সব মামলায় অপব্যবহার হয়েছে, তা ন্যায় বিচারের মানদণ্ড বিবেচনায় নিয়ে দ্রুত নিষ্পত্তির ব্যবস্থা এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতনের সঙ্গে আলোচনার প্রেক্ষিতে মালয়েশিয়া-ইন্দোনেশিয়ার মতো উপযুক্ত কাউন্টার টেরোরিজম মেথড বের করার জন্য দুটি সুপারিশ করা হয়।
এ সময় গুম সংক্রান্ত কমিশন অফ ইনকোয়ারির সদস্য অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত বিচারক মো. ফরিদ আহমেদ শিবলী, মানবাধিকার কর্মী নূর খান, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কমিশনের সদস্য নাবিলা ইদ্রিস, মানবাধিকার কর্মী ও কমিশনের সদস্য সাজ্জাদ হোসেন উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকার তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের এজলাস থেকে হাজতখানায় নেওয়ার পথে পুলিশকে মারধর করে পালিয়েছেন হত্যা মামলার এক আসামি।
আসামি শরিফুল ইসলাম (২২) দিনাজপুর জেলার নবাবগঞ্জ থানার হরিপুর গ্রামের মৃত শফিক আহম্মেদের ছেলে। তিনি রাজধানীর খিলগাঁও থানার জিসান হোসেন (১৪) হত্যা মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি। মামলাটি বর্তমানে সাক্ষ্যগ্রহণের পর্যায়ে রয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১ টার পর সংশ্লিষ্ট আদালতের দায়িত্বে থাকা পুলিশ কনস্টেবল শহিদুল্লাহকে মারধর করে ছুটে পালিয়ে যান আসামি শরিফুল। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের হাজতখানার ইনচার্জ এসআই রিপন।
তিনি বলেন, আসামিকে আদালত থেকে হাজতখানায় নেওয়ার সময় পুলিশকে আঘাত করে তিনি পালিয়ে যায় আসামি শহিদুল।
ডিএমপির প্রসিকিশন বিভাগের এডিসি মাইন উদ্দিন বলেন, আসামির হাতে হাতকড়া পরানো ছিল। তিনি ধাতব কিছু দিয়ে হাতকড়া ঢিলা করে কৌশলে খুলে ফেলে। পরে পুলিশ কনস্টেবলের হাতে আঘাত করে পালিয়ে যায়।
তিনি বলেন, আমরা আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছি। কোতোয়ালি থানাকে জানানো হয়েছে আসামিকে গ্রেপ্তারের জন্য। তার বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি চলমান।
১৯ জুন ২০২৫ তারিখে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস (বিইউপি) এর ১৭তম বার্ষিক সিনেট সভা বিইউপির বিজয় অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন বিইউপির উপাচার্য ও সিনেট চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মোঃ মাহ্বুব-উল আলম, বিএসপি, এনডিসি, এএফডব্লিউসি, পিএসসি, এমফিল, পিএইচডি।
সভার শুরুতে বিইউপির উপাচার্য ও সিনেট চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মোঃ মাহ্বুব-উল আলম বিদায়ী সদস্যদের ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন এবং নবনিযুক্ত সদস্যদের স্বাগত জানান। পরে বিইউপির ট্রেজারার এয়ার কমডোর মোঃ রেজা এমদাদ খান, জিইউপি, বিইউপি, এনডিসি, পিএসসি, জিডি(পি), ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট ১৩৪ কোটি ৮ লক্ষ টাকা ও ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের ১৩৪ কোটি ৯৭ লক্ষ টাকার বাজেট উপস্থাপন করেন।
সিনেট সদস্যগণ ট্রেজারার এর বক্তৃতার ওপর আলোচনা করেন এবং সর্বসম্মতিক্রমে বাজেট প্রস্তাব অনুমোদন করেন। এছাড়াও সিনেট সভায় ১৭তম বার্ষিক প্রতিবেদন উপস্থাপিত ও সর্বসম্মতিক্রমে অনুমোদিত হয়। ১৭তম বার্ষিক সিনেট সভাটি সার্বিকভাবে সঞ্চালনা করেন বিইউপির রেজিস্ট্রার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোঃ রাব্বি আহসান, এনডিসি, পিএসসি।
সভায় সিনেট চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মাহ্বুব তাঁর বক্তব্যে বলেন, বিইউপি বয়সে নবীন হলেও এর শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও গবেষকগণের বিভিন্ন প্রতিযোগিতা, সেমিনার, ওয়ার্কশপ ও গবেষণা ভিত্তিক কার্যক্রমের অর্জনসমূহ জাতীয় আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে সুনাম বয়ে আনছে। যুগোপযোগী শিক্ষা প্রদান, গবেষণা ও উদ্ভাবনী কার্যক্রমে বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নিত হওয়ার লক্ষ্যে অত্র বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক একটি সুনির্দিষ্ট Academic Strategic Plan –২০৫০ প্রণয়ন করা হয়েছে।
Academic Strategic Plan এর মাধ্যমে পাঠ্যক্রমের আধুনিক মান নির্ধারণ, Outcome Based Education (OBE) কারিকুলাম প্রনয়ণ, গবেষণা, উদ্ভাবন, প্রকাশনা ও গবেষণা সহায়তার সক্ষমতা বৃদ্ধির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
মাননীয় উপাচার্য সকলকে অবহিত করেন যে বিইউপি’র গবেষণাভিত্তিক অগ্রযাত্রায় BUP Research Centre (BRC) অংঙ্গীভূত ফ্যাকাল্টি ও অধিভুক্ত প্রতিষ্ঠানসমূহে গবেষণা, উদ্ভাবন ও পরামর্শমূলক কার্যক্রমে গতিশীলতা আনার লক্ষ্যে কাজ করছে। 'Inspiring Innovation for Advancing Knowledge' শ্লোগানকে ধারণ করে, BUP Research Centre, গবেষকদের মানসম্মত গবেষণায় উৎসাহ দিচ্ছে এবং শিল্প-প্রতিষ্ঠান ও একাডেমিয়ার মধ্যে সংযোগ স্থাপনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
এছাড়াও তিনি উল্লেখ করেন, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক গবেষকদের গবেষণালব্ধ জ্ঞান প্রসারের উদ্দেশ্যে বিইউপি থেকে ৫টি জার্নাল প্রতিবছর নিয়মিত প্রকাশিত হচ্ছে যা সকলের মাঝে সমাদৃত। সিনেট চেয়ারম্যান আরও উল্লেখ করেন যে, শিক্ষার্থীদের শিক্ষার পাশাপাশি একজন সুশৃঙ্খল, নৈতিকতা সম্পন্ন সু-নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বিইউপি বদ্ধপরিকর এবং সে লক্ষ্যে প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছে। এছাড়াও শিক্ষার্থীদের চারিত্রিক গুণাবলি ও আত্মিক উন্নয়নের লক্ষ্যে সকল প্রোগ্রামের পাঠ্যক্রমে নৈতিক শিক্ষা অন্তর্ভুক্ত করার মাধ্যমে Need Based Education - কেও গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হচ্ছে। তিনি বলেন যে, আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষার্থীদের মানসম্মত কারিকুলাম ও শিক্ষা পরিবেশের পাশাপাশি বৈচিত্র্যময় সাংস্কৃতিক সান্নিধ্যের গুরুত্বকে সামনে রেখে বিইউপি'তে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তির প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এছাড়া, নবপ্রজন্মের মধ্যে নৈতিক মূল্যবোধ, সততা, চরিত্র গঠন ও সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা এবং দেশপ্রেম জাগ্রত করতে পড়াশোনার পাশাপাশি বাংলাদেশের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য, জাতীয় দিবসগুলোর তাৎপর্য ও মাহাত্ম্য তুলে ধরে বিইউপি’র বিভিন্ন আলোচনা সভা, সিম্পোজিয়াম, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজনের কথা উল্লেখ করেন।
এই সিনেট সভায় বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিব, বাংলাদেশ সশস্ত্রবাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা এবং বিইউপির উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থান দিবস হিসেবে এখন থেকে ৫ আগস্ট সরকারি ছুটি পালন করা হবে বলে জানিয়েছেন সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।
বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক সংবাদ সম্মেলনে ফারুকী এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, রবিবার উপদেষ্টা পরিষদ বৈঠকে ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলন দিবস হিসেবে জাতীয় দিবস ঘোষণার সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
ফারুকী বলেন, ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান ঘিরে আগামী ১ জুলাই থেকে কর্মসূচি শুরু হবে, চলবে ৫ আগস্ট পর্যন্ত। আগামী সোমবার মাসব্যাপী কর্ম পরিকল্পনা নিয়ে বিস্তারিত জানানো হবে। ১৪ জুলাই থেকে জুলাই কর্মসূচির মূল আয়োজন শুরু হবে। আন্দোলনে যেভাবে দেশ ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল, একইভাবে সবাইকে নিয়ে এ কর্মসূচি পালন করা হবে।’
পাশাপাশি ফারুকী জানান, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন রেডিও বাংলাদেশ বেতার ও বিটিভিকে স্বায়ত্তশাসিত করার চিন্তা করা হচ্ছে। শিক্ষা উপদেষ্টা ড. সিআর আবরার এ বিষয়ে কাজ করছেন।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম, উপ প্রেসসচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার ও সিনিয়র সহকারী প্রেস সচিব ফয়েজ আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।