বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনের একটি অংশের আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস।
ইউএনবি জানায়, তিন কিলোমিটার দূরে মরা ভোলা নদী থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে পানি নিয়ে আগুন নেভানো হয়েছে। বনে আগুনের ওই এলাকায় মাঝেমধ্যে ধোঁয়া দেখা যাচ্ছে। আগুনে এরই মধ্যে প্রায় ৪ একর বনভূমি পুড়ে গেছে।
বার্তা সংস্থাটি জানায়, রবিবার সকালে সুন্দরবনের আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে এসেছে বলে বন বিভাগ এবং ফায়ার সার্ভিস নিশ্চিত করেছে।
তদন্তে কমিটি
এদিকে সুন্দরবনে আগুনের ঘটনায় বন বিভাগ রবিবার ৩ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।
সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) ওই কমিটিকে আগামী সাত কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন।
সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) কাজী মুহাম্মদ নুরুল করিম জানান, শনিবার রাতভর বন বিভাগ এবং গ্রামবাসী মিলে আগুন নেভানোর কাজ করে। ভোলা নদী থেকে পানি নিয়ে তারা জ্বলতে থাকা আগুনেব ছিটিয়েছে। রবিবার সকাল ৮টার দিকে তাদের সঙ্গে ফায়ার ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আগুন নেভানোর কাজে যুক্ত হয়। ৩ কিলোমিটার দূরে মরা ভোলা নদীতে পাইপ লাইন বসিয়ে পানি নিয়ে আগুন নেভানোর কাজ চলছে। এরই মধ্যে আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে।
ডিএফও কাজী মুহাম্মদ নুরুল করিম আরও জানান, রবিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বনে আগুন জ্বলতে দেখা যায়নি। তবে বিচ্ছিন্নভাবে মাঝেমধ্যে কোনো কোনো স্থানে ধোঁয়া দেখা যাচ্ছে। ধোঁয়া দেখলে সঙ্গে সঙ্গে পাইপ দিয়ে সেখানে পানি ছিটানো হচ্ছে। আগুনে প্রায় ৪ একর বনের ক্ষতি হয়েছে।
ডিএফও কাজী মুহাম্মদ নুরুল করিমের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের ৪ মে সুন্দরবনে আগুনের ঘটনায় তদন্ত কমিটির পরামর্শ অনুযায়ী সুন্দরবনের ২৪, ২৫ এবং ২৭ নম্বর কম্পার্টমেন্টাল এলাকায় মৌয়ালদের পাশ (অনুমতি) দেওয়া বন্ধ রাখা হয়েছে। এ বছর ১ এপ্রিল থেকে সুন্দরবনে মধু আহরণ মৌসুম শুরু হবে।
ডিএফও কাজী মুহাম্মদ নুরুল করিমের ধারণা, মৌসুম শুরুর আগেই অবৈধ কোনো মৌয়াল সুন্দরবনে প্রবেশ করতে পারে। মৌয়ালের মশাল অথবা বিড়ি সিগারেটের অংশ থেকে সুন্দরবনে আগুন ধরতে পারে। এ ছাড়া আইন ভঙ্গ করে কোনো কোনো রাখাল ভোলা নদী পাড়ি দিয়ে তাদের গবাদি পশু নিয়ে সুন্দরবনে প্রবেশ করে। ওই রাখালদের ফেলে রাখা বিড়ি-সিগারেটের আগুন থেকেও সুন্দরবনে আগুনের ঘটনা ঘটতে পারে।
তিনি আরও জানান, সুন্দরবনে আগুনের সূত্রপাত এবং জীববৈচিত্র্যের ক্ষয়ক্ষতির হিসাব জানতে ৩ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির প্রধান করা হয়েছে সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) দ্বীপেন চন্দ্র দাসকে।
কমিটির অপর দুই সদস্য হলেন ধানসাগর স্টেশন কর্মকর্তা বিপুলেশ্বর চন্দ্র দাস এবং কলমতেজি টহল ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম।
কমিটির সদস্যদের আগামী সাত কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানান ডিএফও।
সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) দ্বীপেন চন্দ্র দাস জানান, সুন্দরবনে যে স্থানে আগুন লেগেছে, ওই এলাকার দেড় কিলোমিটারজুড়ে ফায়ার লেন কাটা হয়েছে। আগুন ফায়ার লেন অতিক্রম করতে পারেনি।
তিনি আরও জানান, শনিবার সকালের পর থেকে বন বিভাগের সদস্যরা একটানা আগুন নেভানোর কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। আগুন সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। আগুনে কিছু বলা এবং নলবন পুড়ে সামান্য ক্ষতি হয়েছে।
বাগেরহাটের শরণখোলা ফায়ার স্টেশনের ভারপ্রাপ্ত স্টেশন কর্মকর্তা আফতাব-ই-আলম জানান, সুন্দরবনে জ্বলতে থাকা আগুন সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। রবিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সুন্দরবনে জ্বলতে থাকা আগুন প্রায় ৯০ শতাংশ নিভে গেছে। এই মুহূর্তে কোথাও আগুন জ্বলতে দেখা যাচ্ছে না। তবে মাঝেমধ্যে বিচ্ছিন্নভাবে ধোঁয়া দেখা যাচ্ছে। ধোঁয়া দেখলেই সঙে সঙ্গে পানি ছিটানো হচ্ছে। সন্ধ্যার মধ্যে আগুন সম্পূর্ণ নেভানো সম্ভব হবে।
এ নিয়ে ১৯ বছরে সুন্দরবনে ২৯ বার আগুনের ঘটনা ঘটে। গত ৪ মে সুন্দরবনে আগুন লাগে।
বিভিন্ন সময়ে সুন্দরবনে আগুনে এ পর্যন্ত প্রায় ৮৫ একর বনভূমি পুড়ে গেছে।
অসুস্থতা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ কিংবা অন্য যেকোনো অপ্রত্যাশিত বিপর্যয়ের মুখে পড়ে ফের দারিদ্র্য সীমার নিচে নেমে যাওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে প্রায় সোয়া ৬ কোটি মানুষ। এরা দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ। মঙ্গলবার রাজধানীর হোটেল আমারিতে প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১০ থেকে ২০২২ সাল, এ সময়ে বাংলাদেশে ব্যাপকভাবে দারিদ্র্য হ্রাস পেয়েছে। ফলে ২ কোটি ২০ লাখ মানুষ দারিদ্র্য থেকে বেরিয়ে এসেছিল, এবং আরও ৯০ লাখ মানুষ অতি দারিদ্র্য থেকে বেরিয়ে এসেছিল। ফলে তাদের জীবনমানের উন্নতি হয়েছে, বিদ্যুৎ, শিক্ষা, পয়ঃনিষ্কাশনের মত জরুরি সেবাগুলো পাওয়াও সহজ হয়েছে। তবে ২০১৬ সাল থেকে দারিদ্র্য কমার গতি ধীর হয়েছে এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিও কম অন্তর্ভুক্তিমূলক হচ্ছে।
বাংলাদেশের দারিদ্র্য ও বৈষম্য মূল্যায়ন ২০২৫’ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১০ থেকে ২০২২ সময়ে চরম দারিদ্র্য ১২ দশমিক ২ শতাংশ থেকে কমে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ এবং মাঝারি দারিদ্র্য ৩৭ দশমিক ১ শতাংশ থেকে কমে ১৮ দশমিক ৭ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। তবে প্রায় ৬ কোটি ২০ লাখ মানুষ অসুস্থতা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ কিংবা অন্য যেকোনো অপ্রত্যাশিত বিপর্যয়ের মুখে পড়ে আবারও দারিদ্র্য সীমার নিচে নেমে যাওয়ার ঝুঁকিতে রয়ে গেছে।
২০১৬ সালের পর থেকে তুলনামূলকভাবে কম অর্ন্তভুক্তিমূলক হয়ে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতিপথ বদলে গেছে। দেখা গেছে, প্রবৃদ্ধির সুফল পেয়েছেন ধনী মানুষ, ফলে আয় বৈষম্য বেড়ে গেছে। কৃষির ওপর ভর করে গ্রামীণ এলাকাগুলো দারিদ্র্য হ্রাসে নেতৃত্বের ভূমিকায় উঠে আসে। একই সময়ে শহরে দারিদ্র্য হ্রাসের হার কমেছে। ২০২২ সালের মধ্যে প্রতি ৪ জনের মধ্যে ১ জন বাংলাদেশি শহরে বাস করতে শুরু করেছেন।
জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ রক্ষায় শিল্পে ব্যবহৃত রং, অ্যালুমিনিয়ামের বাসনপত্র এবং শিশুদের খেলনায় সিসার উপস্থিতি নিয়ন্ত্রণে হালনাগাদ বাংলাদেশ মান (বিডিএস) বাস্তবায়নে এবং কঠোর আইন প্রয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। মঙ্গলবার রাজধানীতে ‘সিসার বিষক্রিয়া প্রতিরোধ এবং শিল্পে ব্যবহৃত রং, রান্নার বাসনপত্র ও খেলনার মানদণ্ড হালনাগাদকরণ’ বিষয়ক এক উচ্চপর্যায়ের নীতি নির্ধারণী সংলাপে বক্তারা এ আহ্বান জানান।
বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই), ইউনিসেফ এবং এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (এসডো) যৌথভাবে এ সভার আয়োজন করে।
সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন সাবেক সচিব এবং এসডো’র চেয়ারপারসন সৈয়দ মার্গুব মোর্শেদ। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএসটিআই’র মহাপরিচালক (গ্রেড-১) এস এম ফেরদৌস আলম। স্বাগত বক্তব্য দেন বিএসটিআই মান উইংয়ের পরিচালক মো. সাইদুল ইসলাম।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে সৈয়দ মার্গুব মোর্শেদ বলেন, সিসা একটি নীরব ঘাতক, যা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে, বিশেষ করে শিশুদের মেধা ও স্নায়ুতন্ত্রকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। এটাকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। সরকার ইতোমধ্যে এটা কমাতে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। আমাদের সবার ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় এ ক্ষতিকর ধাতব উপাদান থেকে রক্ষা পেতে হবে।
তিনি আরও বলেন, ডেকোরেটিভ রঙের ক্ষেত্রে আমরা সফলতা পেয়েছি, কিন্তু শিল্পক্ষেত্রে ব্যবহৃত রং এবং নিত্যব্যবহার্য পণ্য যেমন বাসনপত্র ও খেলনায় সিসার ব্যবহার বন্ধে এখনই কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। আজকের এই নীতি সংলাপ সংশ্লিষ্ট সব সংস্থাকে এক ছাতার নিচে আনতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
বিএসটিআই-এর মহাপরিচালক এস এম ফেরদৌস আলম বলেন, বিএসটিআই ইতোমধ্যে ডেকোরেটিভ পেইন্টে সিসার মাত্রা ৯০ পিপিএম নির্ধারণ করে দক্ষিণ এশিয়ায় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। শিল্প, মেরিন এবং অটোমোবাইল পেইন্টের বাংলাদেশ মান (বিডিএস) প্রণয়ন করা হচ্ছে। আজকের আলোচনার সুপারিশমালা আমাদের বাংলাদেশ মান হালনাগাদ ও তা বাস্তবায়নে সহায়ক হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত রসায়ন বিভাগের প্রফেসর ড. সৈয়দ মো. সামসুদ্দিনের সভাপতিত্বে ও সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আরজু মিয়া।
আইইডিসিআর-এর পরিচালক প্রফেসর ড. তাহমিনা শিরিন, এসডোর নির্বাহী পরিচালক সিদ্দিকা সুলতানা, ইউনিসেফের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ড. প্রিসিলা ওবিল। এ ছাড়াও নিপসন, আইসিডিডিআরবি, এশিয়ান পেইন্টস, বার্জার পেইন্টস, পেইন্টস অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধিরা আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন।
নগরায়ণ, শিল্পায়ন এবং অপরিকল্পিত উন্নয়নের কারণে দেশের কৃষিজমি দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে বলে জানিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার। তিনি বলেছেন, ‘জলবায়ুর ক্ষতিকর প্রভাবে নতুন নতুন রোগ-বালাই দেখা দিচ্ছে, নতুন নতুন পোকামাকড়ের আবির্ভাব হচ্ছে। শুধু জমির পরিমাণ কমে যাওয়াই নয়-রাসায়নিক ভিত্তিক কৃষির ফলে জমির উর্বরতা নষ্ট হচ্ছে এবং সামগ্রিক কৃষি উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।
মঙ্গলবার রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে অনুষ্ঠিত ‘কৃষি জমি সুরক্ষা ও ভূমি ব্যবহার’-শীর্ষক জাতীয় কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা জানান। কর্মশালাটি আয়োজন করেছে বাংলাদেশ অ্যাগ্রোইকোলজি প্ল্যাটফর্ম।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা বলেন, ‘একসময় একই জমিতে এক, দুই বা তিন ধরনের ফসলের চাষ হতো। কিন্তু আধুনিক কৃষি পদ্ধতি ও ক্রমবর্ধমান চাপের কারণে এখন আর সেইভাবে বিভিন্ন ফসল ফলানো সম্ভব হচ্ছে না।’
ভূমির অধিকারের প্রসঙ্গ উঠলেই শুধু কৃষিখাতকে সামনে আনা হয়, অথচ বিষয়টি আরও বিস্তৃত। কৃষিতে কীটনাশকের পাশাপাশি অতিরিক্ত হার্বিসাইড ব্যবহারের ফলে শুধু কৃষিজমিই নয়, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতও গুরুতর ক্ষতির মুখে পড়ছে।
মৎস্য উপদেষ্টা বলেন, অ্যাকুয়াকালচারের মাধ্যমে দেশে মাছের উৎপাদন বেড়েছে ঠিকই, কিন্তু এটি কখনোই একমাত্র উৎস হতে পারে না। একসময় বাংলাদেশের ৬০ শতাংশ মাছ পাওয়া যেত মুক্ত জলাশয় থেকে এবং বাকি ৪০ শতাংশ আসত চাষের মাধ্যমে। কিন্তু বর্তমানে চিত্রটি উল্টো। উন্মুক্ত জলাশয়গুলোতে দূষণ, ভরাট, ও অনিয়ন্ত্রিত পর্যটনের কারণে দিন দিন মাছের প্রজনন ও বিচরণ ক্ষেত্র নষ্ট হচ্ছে, যা দীর্ঘমেয়াদে দেশের দেশিয় মাছের বৈচিত্র্য ও সম্পদকে হুমকির মুখে ফেলছে।
উন্নয়ন বিকল্পের নীতি নির্ধারণী গবেষণা (উবিনীগ)-এর পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম জনির সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব আবু তাহের মুহাম্মদ জাবের। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশনের সভাপতি মো. বদরুল আলম।
বক্তারা বলেন, কৃষি এখনো দেশের ১১ শতাংশ জিডিপির উৎস এবং অধিকাংশ গ্রামীণ মানুষের প্রধান জীবিকা। দেশের ৮.৮২ মিলিয়ন হেক্টর আবাদি জমি দ্রুত কমছে- প্রতিবছর প্রায় ৮০ হাজার হেক্টর কৃষিজমি হারিয়ে যাচ্ছে নগরায়ণ, শিল্পায়ন ও অপরিকল্পিত উন্নয়নের কারণে।
তারা বলেন, ভূমি দখল, বেসরকারিকরণ, রাসায়নিকের ক্ষতি ও জলবায়ু পরিবর্তন কৃষিজমির জন্য বড় হুমকি। কৃষিজমি সুরক্ষায় সরকারের প্রস্তাবিত আইনের কার্যকর বাস্তবায়নের ওপর তারা গুরুত্বারোপ করেন।
এ সময় কৃষি, ভূমি, পরিবেশ এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট অংশীজন এ আলোচনায় অংশ নেন।
‘নারীর শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, সামাজিক সুবিধা, এবং ন্যায়বিচারের মতো মৌলিক অধিকার সুরক্ষায় শক্তিশালী জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন আইন বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে সবার জন্য জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন নিশ্চিত করার অঙ্গীকার করলেও বিদ্যমান আইনের দুর্বলতা এই লক্ষ্য অর্জনে বড় বাধা হিসেবে কাজ করছে।’
মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস-২০২৫ উপলক্ষে গ্লোবাল হেলথ অ্যাডভোকেসি ইনকিউবেটর জিএইচএআইর সহযোগিতায়, গবেষণা ও অ্যাডভোকেসি প্রতিষ্ঠান প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান) আয়োজিত, ‘নারী অধিকার সুরক্ষায় শক্তিশালী নিবন্ধন আইন’ শীর্ষক ওয়েবিনারে এ বিষয় তুলে ধরেন বক্তারা।
দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য ‘নারী ও কন্যার প্রতি সহিংসতা বন্ধে ঐক্যবদ্ধ হই, ডিজিটাল নিরাপত্তা নিশ্চিত করি।
ওয়েবিনারে জানানো হয়, জন্ম নিবন্ধনের অভাবে বয়স প্রমাণ করা কঠিন হয় ফলে মেয়েরা বাল্যবিয়ের শিকার হয়। বাল্যবিয়ে নারীর ওপর শারীরিক ও মানসিক সহিংসতার ঝুঁকি বাড়ায়। অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েদের মধ্যে প্রারম্ভিক মাতৃত্বকালীন স্বাস্থ্যঝুঁকি ও মাতৃমৃত্যুর হার বেশি।
নিবন্ধনহীনতা নারীপাচার ও নারীদের ঝুঁকিপূর্ণ পেশা গ্রহণেও ভূমিকা রাখে। বাংলাদেশে সম্পত্তিহীন নারীদের মধ্যে মৃত্যু নিবন্ধন হার খুবই কম। নারীর জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধনের অগ্রগতি উল্লেখযোগ্যহারে বাড়াতে, আইন সংশোধন করে পরিবারের বদলে স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানকে নিবন্ধনের দায়িত্ব দিতে হবে, যাতে হাসপাতালে ঘটিত জন্ম ও মৃত্যু স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিবন্ধনের আওতায় আসে। বর্তমানে বাংলাদেশে জন্ম নিবন্ধনের হার মাত্র ৫০ শতাংশ এবং মৃত্যু নিবন্ধনের হার ৪৭ শতাংশ, যা আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক গড় হারের তুলনায় অনেক কম।
ওয়েবিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে. চৌধুরী বলেন, জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধনে লিঙ্গভিত্তিক বৈষম্য নারীদের অদৃশ্য করে তোলে। প্রতিটি নারীর পরিচয় ও অধিকার নিশ্চিত করতে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন আইন, ২০০৪ সংশোধনের মাধ্যমে শক্তিশালী করা জরুরি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সামিনা লুৎফা বলেন, ব্যক্তি ও রাষ্ট্রীয় জীবনে নারীর অধিকার ও মর্যাদা সুরক্ষায় সকল নারীর জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন নিশ্চিত করতে হবে।
জিএইচএআই বাংলাদেশ কান্ট্রি লিড মুহাম্মাদ রূহুল কুদ্দুস বলেন, হাসপাতালভিত্তিক জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন পদ্ধতি চালুর মাধ্যমে প্রত্যেক নারীকে নিবন্ধনের আওতায় আনা সম্ভব। এতে, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) ১৬.৯ (সবার জন্য বৈধ পরিচয়পত্র) অর্জন ত্বরান্বিত হবে।
ওয়েবিনারে আলোচক হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন অ্যান্টি টোব্যাকো মিডিয়া এলায়েন্স-আত্মার কো-কনভেনর নাদিরা কিরণ এবং জাতীয় দৈনিকে রিপোর্টার রাবেয়া বেবী। গণমাধ্যমকর্মী, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি ও সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা ওয়েবিনারে অংশ নেন।
প্রজ্ঞার নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়েরের সভাপতিত্বে ওয়েবিনারটি সঞ্চালনা ও উপস্থাপনা করেন সংগঠনের কো-অর্ডিনেটর মাশিয়াত আবেদিন।
মহিলা ও শিশুবিষয়ক উপদেষ্টা শারমিন এস মুর্শিদ বলেছেন, দেশের যেকোনো জায়গায় নারী ও শিশু নির্যাতন তথ্য ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মন্ত্রণালয়ে পৌঁছাতে হবে বলে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছে।
গতকাল সোমবার সচিবালয়ে তথ্য অধিদপ্তরের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ নির্দেশনা দেন।
শারমিন এস মুর্শিদ বলেন, ‘নারী ও শিশু নির্যাতনের তথ্য পাওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই ভিকটিমের কাছে সরকারি লোকজন পৌঁছে যাবে এবং তার চিকিৎসা ও আইনি সহায়তার জন্য সবকিছু করবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘১৬ দিনব্যাপী নারী নির্যাতন প্রতিরোধপক্ষ আগামীকাল (২৫ নভেম্বর) থেকে শুরু হচ্ছে এবং এটা শেষ হবে আগামী ১০ ডিসেম্বর। এই সময়কালে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রত্যেকটা কর্মকর্তা ও কর্মচারী সচেষ্টভাবে নারী নির্যাতন প্রতিরোধে কর্মক্ষম থাকবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের মিডিয়ার সঙ্গে খুব ঘন ঘন বসা হয় না। তবে ইচ্ছে আছে যে এই অনুষ্ঠান আয়োজনের পর থেকে আমরা আরও নিয়মিতভাবে বসব।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের ১৬ দিনব্যাপী যে আয়োজনটা হতে যাচ্ছে, সেটার যদিও একটি আন্তর্জাতিক সূত্র আছে। কিন্তু বাংলাদেশে, আমার সমাজে, আমার কমিউনিটিতে এর তাৎপর্য অপরিসীম।’
উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘আমরা সব সময় দেখে এসেছি যে রাজনৈতিক শাসকরা তাদের নানা রাজনৈতিক স্বার্থে মেয়েদের ওপর জুলুম করে। যেমন জমি যদি দখল করতে হয়, তবে নারীকে নির্যাতন করও, শিশুকে নির্যাতন করও। তাহলে সেই জমি থেকে পরিবারগুলো সরে যাবে। যদি নির্বাচনকে পক্ষে আনতে হয়, তবে একটি কমিউনিটির ওপরে সহিংসতা আরোপ করও আর সেই কমিউনিটির মেয়েদের ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দাও। তাহলে সেই গোষ্ঠী জায়গা থেকে সরে যাবে। এতে করে যারা রাজনৈতিক বদ উদ্দেশ্যে এই ঘটনাগুলো ঘটায়, তাদের লাভ হয়। এ থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে।’
উপদেষ্টা বলেন, ‘একটি আলোকিত সমাজে মেয়েদের প্রতি, শিশুদের প্রতি, নারীদের প্রতি যে স্বাভাবিক সম্মানবোধটুকু থাকে, সেটা যখন ভাঙতে শুরু করে সেই সমাজ; কিন্তু সার্বিকভাবে ভাঙতে থাকে। গত ১৬ বছরে একটি স্বৈরাচারী পরিবেশে আমরা এটার একটি চরম রূপ দেখেছি।’
তিনি বলেন, ‘যারা দেশকে ভালোবাসে, যারা শান্তি চায়, যারা পরিবেশে পরিবারে সমৃদ্ধি চায়, তাদের সকলের মনের গভীরে এই বোধটি কাজ করবে।’
তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. মাহফুজ আলম বলেছেন, গুজব ও অপতথ্যের বিরুদ্ধে গণমাধ্যমকে শক্ত অবস্থান নিতে হবে। একই সঙ্গে গণমাধ্যমের ওপর জনগণের আস্থাহীনতা দূর করতে হবে।
গতকাল সোমবার বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সদস্যদের অংশগ্রহণে ‘গণমাধ্যমের অপসাংবাদিকতা প্রতিরোধ এবং বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন’ বিষয়ক প্রশিক্ষণ কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল এই কর্মশালার আয়োজন করে।
গুজবের ব্যাপকতা তুলে ধরে তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা বলেন, জেনে-শুনে গুজব ও অপতথ্য ছড়ানো হচ্ছে। বিগত সরকারের ১৫ বছরের শাসনামলে অপতথ্যের ব্যাপকতা ঘনীভূত হয়েছে। ভূমিকম্প সম্পর্কিত সংবাদ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কিছু গণমাধ্যম ভূমিকম্প সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধির পরিবর্তে প্যানিক (আতঙ্ক) ছড়িয়েছে। এটি দুঃখজনক।
মাহফুজ আলম বলেন, গণমাধ্যমের ওপর জনগণের আস্থা না থাকলে যে কেউ যেকোন তথ্য দিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করবে এবং দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে। এজন্য গণমাধ্যমের ওপর জন-আস্থা ফেরাতে হবে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় গণমাধ্যমের দায়িত্বশীল ভূমিকা প্রত্যাশা করেন তিনি।
বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের কার্যক্রম তুলে ধরে উপদেষ্টা বলেন, এটি কোয়াসি জুডিশিয়াল (আধা-বিচারিক) প্রতিষ্ঠান। বিগত সরকার প্রতিষ্ঠানটিকে অকার্যকর করে রেখেছিল। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার প্রেস কাউন্সিলকে কার্যকর করার উদ্যোগ নিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, অধিকারের জায়গা থেকে সাংবাদিকদের প্রেস কাউন্সিলের দ্বারস্থ হওয়ার সুযোগ রয়েছে। তিনি বিদ্যমান আইনের মধ্যে থেকে প্রেস কাউন্সিলকে শক্তিশালী ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান।
বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান বিচারপতি এ. কে. এম. আব্দুল হাকিমের সভাপতিত্বে প্রশিক্ষণ কর্মশালায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব মাহবুবা ফারজানা। কর্মশালায় আরও বক্তব্য দেন দ্য ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস-এর সম্পাদক শামসুল হক জাহিদ ও ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি আবু সালেহ আকন। প্রশিক্ষণ কর্মশালায় ৫০ জন সাংবাদিক অংশগ্রহণ করেন। কর্মশালা শেষে অংশগ্রহণকারী সাংবাদিকদের মাঝে সনদ বিতরণ করা হয়।
নির্বাচন পর্যবেক্ষণের সময় শতভাগ স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে দায়িত্বপ্রাপ্তদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিন।
তিনি বলেন, যারা মাঠপর্যায়ে কাজ করবেন, অনুগ্রহ করে তারা শতভাগ নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করবেন। একই সঙ্গে আপনাদের পক্ষে যারা কাজ করবেন তাদেরকেও এ কথা জানিয়ে দেবেন। নির্বাচন কমিশনের একটাই এজেন্ডা-আর তা হল জাতিকে একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দেওয়া। তাই সর্বোচ্চ নিরপেক্ষতা বজায় রেখে কাজ করা সকলের জাতীয় দায়িত্ব।
আজ (মঙ্গলবার) সকালে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে ৪০টি পর্যবেক্ষক সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে সংলাপ চলাকালে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার স্বচ্ছতার সঙ্গে সকলকে রিপোর্ট করার আহ্বান জানান। তিনি আরও বলেন, নির্বাচনে কমিশনের নিজস্ব সুপারভাইজারি মেকানিজম থাকবে, অফিশিয়াল মেকানিজম থাকবে। কিন্তু আপনাদের চোখ দিয়েও আমরা এই নির্বাচনকে দেখতে চাই। যারা মাঠপর্যায়ে কাজ করবেন, তারা নির্বাচন সংক্রান্ত কাজগুলো স্বচ্ছভাবে হচ্ছে কিনা এবং আচরণ বিধিমালা ও আইনগুলো সঠিকভাবে পালন করা হচ্ছে কিনা সে বিষয়ে আমাদের জানাবেন।
সিইসি বলেন, যাদেরকে নিয়োগ করবেন তারা যাতে দলীয় প্রচার-প্রচারণা করে কাউকে প্রভাবিত করতে না পারেন, সে বিষয়টা খেয়াল করবেন। মনে রাখবেন, তাদের দায়িত্ব হবে পর্যবেক্ষণ করা; নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করা নয়।
তিনি বলেন, আপনাদেরকে সহযোগী হিসেবে পেতে চাই। আমরা জাতিকে ওয়াদা দিয়েছি একটি সুষ্ঠু, সুন্দর এবং বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন উপহার দেওয়ার। কিন্তু এটা ইলেকশন কমিশনের একার পক্ষে সম্ভব নয়। অতীতের ভুলভ্রান্তি থেকে শিক্ষা নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে চাই।
নির্বাচনের প্রতিটি স্তরে পর্যবেক্ষকদের ভূমিকা থাকবে উল্লেখ করে সিইসি বলেন, প্রচারকালীন পরিস্থিতি, কেন্দ্র ব্যবস্থাপনা বা প্রিজাইডিং অফিসার ও পুলিশের দায়িত্ব পালন এবং ভোটারদের কেন্দ্রে আসতে বাধা দেওয়া হচ্ছে কিনা-ইত্যাদি সম্পর্কে তারা রিপোর্ট দেবেন। তবে সেটি হতে হবে শতভাগ সত্যনির্ভর। কেননা এই রিপোর্টের ওপরই অনেক কিছু নির্ভর করবে।
এএমএম নাসির উদ্দিন বলেন, নির্বাচন কমিশনের ব্যবস্থাপনায় ত্রুটি বিচ্যুতি থাকলে তাও সংশোধন করা হবে। এ বিষয়েও আপনারা সুপারিশ দিতে পারবেন। আমরা স্বচ্ছতার সঙ্গে ভোটারবান্ধব পরিবেশে নির্বাচনের আয়োজন করতে চাই।
সংলাপে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ, আব্দুর রহমানেল মাছউদ, তাহমিদা আহমেদ, মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার ও সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদসহ কমিশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সূত্র: বাসস
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, ‘ভবিষ্যতে বড় ধরনের ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি কমাতে এখনই সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়া জরুরি। শুধু রাজউক নয়, সংশ্লিষ্ট সব সংস্থাকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। জননিরাপত্তার স্বার্থে প্রয়োজন হলে ব্যক্তিগত সম্পত্তির ঝুঁকি নিরূপণ ও কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণে সরকারের হস্তক্ষেপের ক্ষমতা থাকতে হবে।’
গতকাল সোমবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, বাংলাদেশ (আইইবি)–এর কাউন্সিল কক্ষে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) আয়োজিত ‘ভূমিকম্প ঝুঁকি হ্রাসে প্রস্তুতি ও করণীয়’ শীর্ষক সেমিনার ও মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ভূমিকম্পে প্রস্তুতির পাশাপাশি মানুষকে আরও সচেতন করতে হবে। তিনি প্রস্তাব করেন যে রাজউকের পাশাপাশি থার্ড পার্টির মাধ্যমে রিস্ক অ্যাসেসমেন্ট শুরু করা যেতে পারে। বিভিন্ন এলাকায় স্থানীয়দের সহায়তায় জরিপ কার্যক্রম দ্রুত শুরু করারও আহ্বান জানান তিনি। অপেক্ষা করার সুযোগ নেই, মানুষকে আশ্বস্ত করতে হবে যে সরকার ভূমিকম্প মোকাবিলায় সক্রিয়ভাবে কাজ করছে।
তিনি বলেন, পুরান ঢাকায় ঝুঁকিপূর্ণ কেমিক্যাল কারখানা, ঘনবসতি, বিল্ডিং কোড না মানাসহ নানা কারণে এলাকাটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। এসব কেমিক্যাল কারখানা স্থায়ীভাবে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার ওপর তিনি জোর দেন। জরুরি ভিত্তিতে রিস্ক অ্যাসেসমেন্ট কাজ বিশেষ নির্দেশনার মাধ্যমে শুরু করার পরামর্শও প্রদান করেন তিনি।
সরকারি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের ধীরগতির সমালোচনা করে পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, অনেক সিদ্ধান্তই বাস্তবায়নের অভাবে ঝুলে থাকে এগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে। রাজউককে প্রয়োজনীয় ক্ষমতা দিয়ে প্রক্রিয়াটি সহজ করে তোলাই এখন জরুরি।
তিনি আরও বলেন, আতঙ্ক নয়, এখন প্রয়োজন পরিকল্পিত উদ্যোগ; কীভাবে কাজ শুরু করা যায়, সেটিই গুরুত্বপূর্ণ।
সভায় আরও বক্তব্য রাখেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং শিল্প মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. নজরুল ইসলাম। সভায় সভাপতিত্ব করেন রাজউক চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. রিয়াজুল ইসলাম। এছাড়া সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা।
জীবনরক্ষাকারী ওষুধের মূল্য নির্ধারণ বিষয়ে সরকারের ক্ষমতা সীমিত করে ১৯৯৪ সালে জারি করা সার্কুলারকে অবৈধ ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে জনগণের স্বাস্থ্য সুরক্ষার স্বার্থে জীবনরক্ষাকারী সব ওষুধের মূল্য সরকারকে নির্ধারণ করার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
গতকাল সোমবার বিচারপতি মো. রেজাউল হাসান এবং বিচারপতি বিশ্বজিৎ দেবনাথের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় প্রকাশ করেছেন। এর আগে গত ২৫ আগস্ট ঘোষিত রায়টি প্রকাশ করা হয়েছে।
সিনিয়র অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ আদালতে বলেন, ওষুধ যেহেতু জীবনরক্ষার অপরিহার্য উপাদান, মূল্য বৃদ্ধি ও নিয়ন্ত্রণহীনতা সরাসরি নাগরিকের বেঁচে থাকার অধিকারের সঙ্গে সম্পর্কিত। তাই সরকারের ক্ষমতা সীমিত করার ওই সার্কুলার মৌলিক অধিকারের পরিপন্থি।
এর আগে ওষুধের মূল্য নিয়ন্ত্রণ-সংক্রান্ত ওই সার্কুলারকে চ্যালেঞ্জ করে হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ (এইচআরপিবি) ২০১৮ সালে জনস্বার্থে একটি রিট পিটিশন দায়ের করে। রুল জারির পর দীর্ঘ শুনানি শেষে বিচারপতি মো. রেজাউল হাসান ও বিচারপতি বিশ্বজিৎ দেবনাথের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রুল নিষ্পত্তি করে এই নির্দেশনা দেন।
রায়ে আদালত বলেন, ১৯৮২ সালের ওষুধ (নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাদেশ, যা বর্তমানে ওষুধ ও কসমেটিক্স আইন, ২০২৩-এ প্রতিস্থাপিত হয়েছে, তার বিধান অনুযায়ী ওষুধের যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণ সরকারের এখতিয়ার। সেই নির্দেশনা লঙ্ঘন করে ২৬ ফেব্রুয়ারি, ১৯৯৪-এর সার্কুলারে সরকার ১১৭টি ওষুধ ছাড়া বাকি সব ওষুধের মূল্য নির্ধারণের ক্ষমতা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের হাতে দিয়ে যে সিদ্ধান্ত নেয়- তা আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
রিটের পক্ষে সিনিয়র অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ আদালতে বলেন, ওষুধ যেহেতু জীবনরক্ষার অপরিহার্য উপাদান, মূল্য বৃদ্ধি ও নিয়ন্ত্রণহীনতা সরাসরি নাগরিকের বেঁচে থাকার অধিকারের সঙ্গে সম্পর্কিত। তাই সরকারের ক্ষমতা সীমিত করার ওই সার্কুলার মৌলিক অধিকারের পরিপন্থি।
বিচার ব্যবস্থাসহ সব ক্ষেত্রেই ডিজিটাইজেশনের দিকে এগোনোর সময় এসেছে উল্লেখ করে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, দেশে ই-পারিবারিক আদালতের মাধ্যমে নিঃসন্দেহে ভোগান্তি ও দুর্নীতি কমবে, সময়ও বাঁচবে। কারণ ই-পারিবারিক আদালত চালুর ফলে বিচারপ্রার্থীকে আর আগের মতো ঘোরতে হবে না।
গতকাল সোমবার ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালত ভবনে জগন্নাথ-সোহেল স্মৃতি মিলনায়তনে ই-পারিবারিক আদালত কার্যক্রমের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয় এই ই-পারিবারিক আদালত তৈরিতে সহযোগিতা করে।
বিভিন্ন সংস্কার কার্যক্রমের উদাহরণ দিয়ে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, আইন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে ২১টি রিফর্মের কাজ করা হয়েছে। তিনি মনে করেন, এসব সংস্কার টিকবে না, যদি না আইনজীবীসহ সংশ্লিষ্ট সবাই এতে যুক্ত না হন এবং ধারাবাহিকতা বজায় না থাকে।
আইন উপদেষ্টা বলেন, ই-জুডিসিয়ারি ও ই-রেজিস্ট্রেশন প্রকল্প আমরা শুরু করে দিয়ে যাব। আমরা আশা করব আমাদের যে রাজনৈতিক দলগুলো আছেন, ওনারা নিশ্চয়ই আমাদের চেয়ে দেশকে বেশি ভালোবাসেন। সেটা তারা প্রমাণ করবেন।
বাংলাদেশে সংস্কার নিয়ে কয়েক ধরনের বিভ্রান্তি কাজ করে উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, পারিবারিক বিরোধের ক্ষেত্রে আগে পারিবারিক আদালতে যেতে হতো। এখন পারিবারিক বিরোধের ক্ষেত্রে প্রথমে অবশ্যই লিগ্যাল এইড অফিসে যেতে হবে। সেখানে সন্তুষ্ট না হলেই কেবল পারিবারিক আদালতে যাওয়া যাবে। এতে ভোগান্তি ও দুর্নীতি কমবে, সময়ও বাঁচবে।
তিনি বলেন, আইন সংস্কারের মাধ্যমে এখন লিগ্যাল এইড অফিসে একজন বিচারকের স্থলে তিনজন বিচারক নিয়োগের বিধান করা হয়েছে। এত বড় পরিবর্তনের অবশ্যই একটি ইতিবাচক প্রভাব পড়বে যদি আমরা সবাই এই চর্চাটা শুরু করি। তিনি জানান, এখন ২০ জেলায় এই কার্যক্রম চালু করেছি, আমাদের স্বপ্ন আছে, যাওয়ার আগে ৬৪ জেলায় চালু করব। আমাদের একটি হিসাব আছে, যখন এই কার্যক্রম সারাদেশে সম্পূর্ণভাবে চালু হবে, তখন বাংলাদেশের মোট মামলার ১/৪ অংশ এমনকি ১/৩ অংশ লিগ্যাল এইড অফিসের মাধ্যমে নিষ্পত্তি হবে। আশা করি, এর ফলে আগামী ৫ বছরের মধ্যে মামলার জট অন্তত ৫০ শতাংশ কমে যাবে।
আইন উপদেষ্টা বলেন, আমার জানামতে, বাংলাদেশে অর্থনৈতিকভাবে সবচেয়ে বড় সংস্কার হলো ভ্যাট (মূল্য সংযোজন কর) চালু করা। প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, ‘ভ্যাট কী সংবিধান পরিবর্তন করে চালু করা হয়েছিল? না, এটা আইনের মাধ্যমে চালু করা হয়েছিল।’ বাংলাদেশে পরিবেশ সংরক্ষণের অনেক বড়-বড় নীতি পরিবেশ সংরক্ষণবিষয়ক আইন প্রণয়ন সংস্কারের মাধ্যমে হয়েছিল। বাংলাদেশে এসিড সন্ত্রাস নিয়ন্ত্রণও আইনের মাধ্যমে হয়েছিল। এ রকম অনেক বড় বড় সংস্কার পরিবর্তন আইনের মাধ্যমে হয়েছিল।
সিঙ্গাপুরের উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, সিঙ্গাপুরকে সংস্কার করতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী লি কুয়ান ইউর ১০ বছর সময় লেগেছে। কাজেই সংস্কার রাতারাতি করা সম্ভব না।
অনুষ্ঠানে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, ই-পারিবারিক আদালত বর্তমান সরকারের বিচার ব্যবস্থাকে আধুনিক ও যুগোপযোগী করার একটি কার্যকর উদ্যোগ।
তিনি আরও বলেন, বিচারপ্রার্থী জনগণ, বিচারক ও আইনজীবীদের জন্য ই-পারিবারিক আদালত অনেক বেশি সহায়ক হবে, এতে সময়, অর্থ ও যাতায়াতের কষ্ট লাঘব হবে। ই-পারিবারিক আদালত নারী ও শিশুর জন্য সবচেয়ে বেশি সহায়ক হবে।
এ সময় রিজওয়ানা হাসান আরও বলেন, ই-পারিবারিক আদালত স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার মাধ্যমে বিচার ব্যবস্থাকে আরও কার্যকর করতে সহায়ক হবে। তিনি আশা করেন, শিক্ষার্থীদের সম্পৃক্ত করা গেলে জনগণ আরও বেশি এর সুফল পাবে।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন, প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। স্বাগত বক্তব্য রাখেন, আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব লিয়াকত আলী মোল্লা।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ট্রাফিক আইন লঙ্ঘনের দায়ে ১ হাজার ৬৬৫টি মামলা করেছে।
সোমবার (২৪ নভেম্বর) রাতে ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, রবিবার (২৩ নভেম্বর) ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগ কর্তৃক রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে এসব মামলা করা হয়।
ডিএমপির ট্রাফিক সূত্রে জানা যায়, ট্রাফিক-মতিঝিল বিভাগে ২২টি বাস, ১টি ট্রাক, ২২টি কাভার্ড ভ্যান, ৫৮টি সিএনজি ও ১৭২টি মোটরসাইকেলসহ মোট ৩৪৫টি মামলা হয়েছে।
ট্রাফিক-ওয়ারী বিভাগে ২৩টি বাস, ১৩টি ট্রাক, ১০টি কাভার্ড ভ্যান, ১৯টি সিএনজি ও ৬৩টি মোটরসাইকেলসহ মোট ১৫০টি মামলা হয়েছে।
ট্রাফিক-তেজগাঁও বিভাগে ২৩টি বাস, ২টি ট্রাক, ১৩টি কাভার্ড ভ্যান, ৪৩টি সিএনজি ও ১৫১টি মোটরসাইকেলসহ মোট ২৬৬টি মামলা হয়েছে।
ট্রাফিক-মিরপুর বিভাগে ৬টি বাস, ৬টি ট্রাক, ১৩টি কাভার্ড ভ্যান, ১২টি সিএনজি ও ৭০টি মোটরসাইকেলসহ মোট ১৩৫টি মামলা হয়েছে।
অন্যদিকে ট্রাফিক, গুলশান বিভাগে ১৫টি বাস, ১টি ট্রাক, ১১টি কাভার্ড ভ্যান, ২০টি সিএনজি ও ১১৯টি মোটরসাইকেলসহ মোট ২৩১টি মামলা হয়েছে।
ট্রাফিক-উত্তরা বিভাগে ১৯টি বাস, ১১টি ট্রাক, ৮টি কাভার্ড ভ্যান, ৫৩টি সিএনজি ও ১০২টি মোটরসাইকেলসহ মোট ২৭১টি মামলা হয়েছে।
ট্রাফিক-রমনা বিভাগে ১২টি বাস, ২টি ট্রাক, ৭টি কাভার্ড ভ্যান, ৮টি সিএনজি ও ৫২টি মোটরসাইকেলসহ মোট ১২২টি মামলা হয়েছে।
ট্রাফিক-লালবাগ বিভাগে ১৪টি বাস, ৫টি ট্রাক, ১টি কাভার্ড ভ্যান, ১৩টি সিএনজি ও ৮৫টি মোটরসাইকেলসহ মোট ১৪৫টি মামলা হয়েছে।
এ ছাড়া অভিযানকালে মোট ৩৭৯টি গাড়ি ডাম্পিং ও ৯৫টি গাড়ি রেকার করা হয়েছে।
ঢাকা মহানগর এলাকায় ট্রাফিক শৃঙ্খলা রক্ষায় ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগের অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও জানানো হয়।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেছেন, নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলোকে নির্বাচন কমিশনের সহযোগী। আমরা একটি সুষ্ঠু, সুন্দর ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন উপহার দিতে পর্যবেক্ষকদের চোখ দিয়েই পুরো নির্বাচন প্রক্রিয়াটি দেখতে চাই। একইসঙ্গে সংস্থাগুলোর নিয়োগ করা মাঠকর্মীরা যাতে কোনো ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে বা প্রচারণায় যুক্ত না হন, সে বিষয়ে কঠোর নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি।
মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) স্থানীয় পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলোর সঙ্গে এক পরিচিতিমূলক সভায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার এসব কথা বলেন।
সিইসি বলেন, জাতিকে একটি বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন উপহার দেওয়ার যে ওয়াদা নির্বাচন কমিশন দিয়েছে, তা কমিশনের একার পক্ষে সম্ভব নয়। সবাই মিলে এই জাতীয় দায়িত্ব পালন করতে হবে। আমরা আপনাদের চোখ দিয়েও এই ইলেকশনটা দেখতে চাই। কারণ আপনাদের চোখ যদি দুষ্ট হয়, প্রপার না হয়, আমাদের নির্বাচনের দেখাটাও কিন্তু সঠিক হবে না।
প্রশিক্ষণের তাগিদ দিয়ে সিইসি বলেন, পর্যবেক্ষণের জন্য যাদের নিয়োগ দেওয়া হবে, বিশেষত নতুনদের, তাদের অবিলম্বে নির্বাচন ও নির্বাচনী ব্যবস্থা সম্পর্কে ওরিয়েন্টেশন এবং প্রশিক্ষণ দিতে হবে। মাঠকর্মীদের কর্মকাণ্ডই সংস্থার সুনাম (গুডউইল) এবং নির্বাচন কমিশনের কাছে তাদের ভাবমূর্তিকে প্রভাবিত করবে। এছাড়া রিটার্নিং অফিসার, পুলিশ অফিসারসহ সংশ্লিষ্টদের পারফরম্যান্স আইন অনুযায়ী হচ্ছে কি না, নির্বাচনী আচরণবিধি মানা হচ্ছে কি না—এসব বিষয়ে মাঠের বাস্তবতার ভিত্তিতে (Real Ground Realities) রিপোর্ট দিতে হবে।
সিইসি জানান, যদি কোনো ম্যানেজমেন্ট বা প্রসিডিউরাল ল্যাপস থাকে, তবে পর্যবেক্ষকদের দেওয়া সুপারিশ ভবিষ্যতে নির্বাচন প্রক্রিয়াকে সংস্কার ও উন্নত করতে সহায়ক হবে। পর্যবেক্ষকদের নিরপেক্ষতার ওপর সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। পর্যবেক্ষণের কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিরা রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়লে সবকিছু ড্যামেজ হয়ে যাবে।
তিনি সংস্থাগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, আপনারা যাদের এঙ্গেজ করবেন, তারা কোনো রাজনীতির সঙ্গে, কোনো পার্টির সঙ্গে জড়িত আছে কিনা, লিংক আছে কিনা, মিছিল-মিটিংয়ে গিয়েছে বা জড়িত আছে—এরকম কাউকে দয়া করে নিয়োগ দেবেন না। পর্যবেক্ষকের দায়িত্ব হবে ‘টু অবজার্ভ, নট টু ইন্টারভেন’ (পর্যবেক্ষণ করা, হস্তক্ষেপ না করা)। কোনো অনিয়ম হলে তা বন্ধ করা তার কাজ নয় বরং রিপোর্ট করাই তার প্রধান দায়িত্ব।
বাংলাদেশের বাস্তবতার প্রতি খেয়াল রাখার অনুরোধ জানিয়ে সিইসি বলেন, যেহেতু সব পর্যবেক্ষকই বাংলাদেশি, তাই বাংলাদেশের বাস্তবতার নিরিখে রিপোর্ট করতে হবে। বিদেশি প্রেক্ষাপটে দেশের নির্বাচনকে বিবেচনা করে রিপোর্ট না করতে অনুরোধ করেন। তিনি প্রত্যাশা করেন, তাদের রিপোর্টিং যেন স্মার্ট, ইমপ্লিমেন্টেবল এবং বাস্তবসম্মত হয়।
সিসি ক্যামেরা ও সাংবাদিকরাই কমিশনের চোখ
বক্তব্যের শেষে সিইসি জানান, তার সিসি ক্যামেরা হলো পর্যবেক্ষক এবং তার সিসি ক্যামেরা হলো সাংবাদিকরা। সবার সম্মিলিত সহযোগিতায় একটি সুন্দর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এবং পর্যবেক্ষকদের এখানে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে বলে জানান তিনি।
রাজধানীর মেট্রোরেল যাত্রীদের সুবিধার্থে নতুন অনলাইন রিচার্জ সেবা চালু হয়েছে আজ থেকে। যাত্রীদের মেট্রোরেলের স্থায়ী কার্ড—র্যাপিড পাস এবং এমআরটি পাস—স্টেশনে গিয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে রিচার্জ করার ঝামেলা এড়িয়ে ঘরে বসেই রিচার্জ করা যাবে।
মেট্রোরেলের র্যাপিড পাস ও এমআরটি পাস অনলাইন রিচার্জ প্রক্রিয়ার উদ্বোধন আজ মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর)।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন প্রধান উপদেষ্টার সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী শেখ মইনউদ্দিন।
বেলা পৌনে ১১টায় রাজধানীর আগারগাঁও মেট্রো স্টেশনে অনলাইনে রিচার্জ প্রক্রিয়া উদ্বোধন করা হবে বলে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য অফিসার রেজাউল করিম সিদ্দিকী।
ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) এর নির্বাহী পরিচালক নীলিমা আখতারের সভাপতিত্বে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব ড. মোহাম্মদ জিয়াউল হক এবং ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারুক আহমেদ।
মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, নতুন সেবার মাধ্যমে যাত্রীরা ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড, বিকাশ, নগদ, রকেটসহ সব ধরনের অনলাইন ব্যাংকিং ব্যবহার করে কার্ডে টাকা ভরতে পারবেন। তবে একক যাত্রার কার্ড অনলাইনে কেনা যাবে না; তা স্টেশনে গিয়ে কিনতে হবে।
কিভাবে রিচার্জ করবেন
ডিটিসিএর ওয়েবসাইট www.rapidpass.com.bd বা অ্যাপে লগইন করে ‘রিচার্জ’ অপশন নির্বাচন করতে হবে। এরপর র্যাপিড পাস নাকি এমআরটি পাস রিচার্জ করা হবে তা ঠিক করে ব্যাংক বা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে পেমেন্ট করতে হবে। টাকা পরিশোধের পর কার্ডটি একবার স্টেশনে থাকা এড ভ্যালু মেশিনে (এভিএম) স্পর্শ করতে হবে। একবার স্পর্শ করলেই রিচার্জ করা টাকা ব্যবহারের জন্য কার্যকর হবে।
ডিটিসিএর নীতিমালায় বলা হয়েছে, অনলাইন পেমেন্টের জন্য গ্রাহককে কিছু ফি দিতে হতে পারে। রিচার্জ করা টাকা তিন মাস পর্যন্ত অপেক্ষমাণ থাকবে। এভিএম-এ স্পর্শ না করলে টাকা গ্রাহকের অ্যাকাউন্টে ফিরে যাবে, তবে ১০ শতাংশ সার্ভিস চার্জ কেটে নেওয়া হবে। চাইলে সাত দিনের মধ্যে টাকা ফেরত নেওয়া যাবে, তবে তাতেও ১০ শতাংশ ফি প্রযোজ্য।
ডিটিসিএ জানিয়েছে, মেট্রোরেলের প্রতিটি স্টেশনে দুটি করে প্রশস্ত স্থানে এভিএম বসানো হবে। উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ১৬টি স্টেশনে ৩২টি এভিএম বসানোর প্রস্তুতি ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে।
মেট্রোরেলের স্থায়ী কার্ডে যাতায়াত করলে ১০ শতাংশ ছাড় পাওয়া যায়। বর্তমানে ৫৫ শতাংশ যাত্রী র্যাপিড বা এমআরটি পাস ব্যবহার করছেন। নতুন সেবা চালু হলে যাত্রীদের সময় বাঁচবে এবং ভোগান্তি কমবে।
ঢাকা মেট্রোরেল বর্তমানে সকাল সাড়ে ছয়টা থেকে রাত সাড়ে নয়টা পর্যন্ত চলাচল করছে। মতিঝিল থেকে প্রথম ট্রেন ছাড়ছে সকাল ৭টা ১৫ মিনিটে এবং শেষ ট্রেন রাত ১০টা ১০ মিনিটে। আগামী মাসে ট্রেনগুলোর মধ্যে আসার সময়ের ব্যবধান দুই মিনিট কমানো হবে। এতে দৈনিক যাত্রী চলাচল পাঁচ লাখ ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করছে কর্তৃপক্ষ।