রাজধানীর পল্টন দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন জাহিদুর রহমান নামের এক ব্যবসায়ী। হঠাৎ বাতাসে ধুলোবালি এসে নাকে-মুখে ঢুকে যায় তার। চারপাশে গাড়িগুলো পাল্লা দিয়ে হর্ন বাজিয়ে যাচ্ছে, দুই কান হাত দিয়ে চেপে ধরেও রেহাই পাচ্ছেন না।
তার ভাষ্যে, ‘মানুষ বাস করার মতো অবস্থায় নেই এই শহর। কেবল চাকরি করতে হবে বলে ঢাকায় আছি, নাহলে অনেক আগেই (এই শহর ছেড়ে) চলে যেতাম।’
‘সবকিছু ঢাকাকেন্দ্রিক হওয়ায় নাগরিকদের এই শহরে এসেই ভিড় করতে হচ্ছে। ইচ্ছা থাকলেও নিরাপদ জীবনের খোঁজে অন্যত্র যাওয়া সম্ভব নয়’, বুধবার (১৯ মার্চ) কথাগুলো বলছিলেন তিনি।
নগরীর গণপরিবহনগুলোতে বেশিরভাগ সময়ই যাত্রীদের দাঁড়ানোর মতো জায়গাও থাকে না। বাইরে বের হলে বাসের দরজায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যাত্রীদের ঝুলে থাকার দৃশ্য চোখে পড়তে বাধ্য।
ডিওএইচএসে বসে এসব কথারই পুনরাবৃত্তি করছিলেন বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা মারুফুল হক। বলেন, ‘অফিসের সময় বাসে জায়গা পাওয়া যায় না; আবার অফিস কামাইও দেওয়া যাবে না। যে কারণে লোকজন ঠেলেঠুলে হলেও বাসে উঠতে হয়। অনেকসময় ভেতরে একদমই জায়গা থাকে না, সেক্ষেত্রে দেরিতে অফিসে প্রবেশ এড়াতে গেটে ঝুলে পড়া ছাড়া উপায় থাকে না।’
‘ঢাকার সড়কে যানজট, বাসে ভিড়; আবার ফুটপাত দিয়ে হেঁটে চলাচল করবেন, তারও জো নেই। একে তো অনেক ফুটপাত ভাঙাচোরা, কোথাও আবার ম্যানহোলের ঢাকানা নেই; তার ওপর আবার ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ীদের কারণে হাঁটার জায়গাও নেই অনেক জায়গায়।’
মারুফুল বলেন, ‘অর্থাৎ চলাচলের সব বিকল্প বন্ধ। ফলে রাস্তায় বের হলেই দুর্ভোগ পোহাতে হবে—এ একপ্রকার নিশ্চিত।’
‘অথচ এই শহরেই আমাদের বাস করতে হচ্ছে। গাদাগাদি করে বাসে উঠি, যানজট ঠেলে কোনোরকমে অফিসে পৌঁছাই। ক্লান্তি নিয়ে সারা দিন কাজ করি।’
ঢাকার বিকল্প কোনো রাজধানীর দরকার আছে কি না—জানতে চাইলে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. এম শামসুল হক বলেন, ‘বিশ্বের চল্লিশটির মতো দেশ তাদের রাজধানী অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছে। কয়েকটি দেশ এ প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে। সর্বশেষ ইন্দোনেশিয়া তাদের রাজধানী পরিবর্তন করে নুসানতারায় নিয়ে গেছে। মিসরও চলে যাচ্ছে।’
কাজেই বাংলাদেশের রাজধানীও অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া এমন একটি বাস্তবতা, যা নিয়ে সমীক্ষারও প্রয়োজন নেই বলে মনে করেন তিনি।
শামসুল হক বলেন, ‘চিকিৎসক যেমন রোগীর রেকর্ড দেখলে বুঝতে পারেন, হার্টবিট ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে, তখন তো চিকিৎসকরা বলেন, এটা বেয়ন্ড রিপেয়ারড (মৃত্যু আসন্ন)। এরকম ঢাকার সবকিছুই এত তলানির দিকে চলে যাচ্ছে যে, এত এত বিনিয়োগ করার পরও অর্থাৎ এত চিকিৎসা করার পরও কোনো উন্নতি হচ্ছে না, একেবারে নন-রেসপন্সিভ।’
ভারত, পাকিস্তান, ব্রাজিল, নাইজেরিয়া, মিয়ানমার, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, মিসর ও দক্ষিণ কোরিয়াও তাদের রাজধানী পরিবর্তন করেছে কিংবা করছে। অতিরিক্ত জনসংখ্যা ও যানজটের কারণেই দেশগুলো তাদের রাজধানী পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ভূগর্ভস্থ পানি ফুরিয়ে যাওয়া, পরিবেশগত উদ্বেগ, দূষণ, প্রাকৃতিক বিপর্যয়—এমন নানা কারণে বিভিন্ন দেশের রাজধানী সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি আরও আধুনিক, স্মার্ট, পরিবেশগত টেকসই ও বিনিয়োগবান্ধব রাজধানী গড়ে তুলছে দেশগুলো।
বিকল্প রাজধানী হতে পারত পূর্বাচল
বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও ঢাকারও বিকল্প বের করা একটি চরম বাস্তবতা বলে উল্লেখ করেছেন ড. এম শামসুল হক।
তার ভাষ্যে, ‘অনেকের কাছে শকিং (তাক লাগানো) মনে হতে পারে, অনেকের কাছে এমন কিছু আবেগেরও মনে হতে পারে; কিন্তু আবেগ দিয়ে তো আর দেশ চলে না। যদি আমরা অনেক আগেই (এ বিষয়ে) চিন্তা করতাম, তাহলে অনেক সম্ভাবনা ছিল। এমনকি কম খরচে পূর্বাচলে আমরা বিকল্প রাজধানী করে ফেলতে পারতাম।’
‘পূর্বাচলের জায়গাটা অনেক উঁচু, বন্যামুক্ত। কৌশলগতভাবে একটি রাজধানী শহর বন্যামুক্ত হওয়া উচিত। সেক্ষেত্রে পূর্বাচল উঁচু জায়গায়, মাটিও অরিজিনাল।’
ঢাকার অন্যান্য জায়গায় মাটি ভরাট করে সবকিছু করা হয়েছে। মাটি ভরাট করে অবকাঠামো নির্মাণ করা হলে যেকোনো ভবনের ভিত্তি ব্যয় অনেক বেড়ে যায় বলে উল্লেখ করেন এই নগর প্রকৌশলী।
দুর্বল মাটিতে বিনিয়োগও খুব একটা কার্যকর হয় না জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বিনিয়োগের একটি অংশ দুর্বল মাটির জন্য নষ্ট হয়ে যায়। ফলে রাজধানী এমন একটি জায়গায় হতে হয়, যেখানকার মাটি ভালো। সে অনুসারে পূর্বাচল ভালো অপশন ছিল।’
‘অথচ সেখানে সাত হাজার একরের একটি টাউনশিপ গড়ে তোলা হয়েছে। প্লট দিয়ে ব্যক্তিকে কোটিপতি বানানো হয়েছে। এত বড় অন্যায় একবিংশ শতাব্দীতে কেউ করবে না, যেটা সেখানে হয়েছে।’
‘যদি আবাসনের কথা বলি, তাহলে ফ্ল্যাট দেওয়া যায়; কিন্তু আমাদের মতো জনবহুল দেশে প্লট দেওয়া যায় না।’
রাজধানী হিসেবে ঢাকার কার্যকারিতা নেই উল্লেখ করে এই অধ্যাপক বলেন, ‘তবে এটি নিয়ে বিতর্ক হতে পারে। সেক্ষেত্রে অবশ্য লাভেই হবে, কারণ তাতে মানুষের মধ্যে কোনো প্রশ্ন থাকলে তা দূর হয়ে যাবে, সিদ্ধান্ত নিতে সরকারের সুবিধা হবে।’
‘কিন্তু কেউ যদি এসব নিয়ে নাড়াচাড়াই না করেন, তাহলে একজন রোগী মারা যাচ্ছেন কিনা, পয়েন্ট অব নো রিটার্নের দিকে চলে যাচ্ছেন কিনা— তা কিন্তু বোঝা যাবে না। এতে আমরা একটি অদূরদর্শী জাতি হিসেবে পরিচিতি পাব।’
ইন্দোনেশিয়ার উদহারণ টেনে তিনি বলেন, ‘তারা জাকার্তা থেকে রাজধানী সরিয়ে নুসানতারায় নিয়ে গেছেন। এতে খরচ হয়েছে ৩৫ বিলিয়ন ডলার। গত অক্টোবরে তাদের কাজের প্রথম ধাপ শেষ হয়েছে। মিসরের রাজধানী কায়রো থেকে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। আমরা যে ছয়টি মেট্রো করতে যাচ্ছি, সেটারও ২০ থেকে ২৫ বিলিয়ন ডলার খরচ পড়বে।’
বিনিয়োগ ও পরিবেশবান্ধব, বাসযোগ্য, দূষণমুক্ত, গ্রিনসিটি হিসেবে ভাবলে ঢাকা কখনোই হবে না বলে জানান তিনি।
‘ঢাকায় যেভাবে ভূগর্ভস্থ পানি তোলা হচ্ছে, তাতে প্রতিনিয়ত আমাদের পানির স্তর নিচের দিকে নেমে যাচ্ছে, ফলে পানি গভীর থেকে গভীরে নেমে যাচ্ছে।’
‘জাকার্তায়ও একই অবস্থা হয়েছিল। সেখানে অতিরিক্ত জনসংখ্যার কারণে ভূগর্ভস্থ পানি বেশি তোলা হয়েছিল। একসময় দেখা গেল, পানি পাওয়া যাচ্ছে না। পানি না থাকলে বসতি হবে কীভাবে! ঢাকায়ও ভূগর্ভস্থ পানি দিন দিন তলানির দিকে চলে যাচ্ছে।’
শামসুল হক বলেন, ২০০৫ সালেও ঢাকা শহরে গাড়ির গতি ঘণ্টাপ্রতি ২৫ কিলোমিটার ছিল। এখন সেটা প্রতি ঘণ্টায় পাঁচ কিলোমিটারে নেমে এসেছে। ঢাকা শহরের হার্টবিট কমে শূন্যের দিকে যাচ্ছে। আমরা ঢাকাকে বাঁচাতে অনেক কিছু করেছি, কিন্তু ধীরে ধীরে এই শহরের অধঃপতন হয়েই চলেছে।’
জনবহুল শহর ঢাকা
আয়তনের তুলনায় ঢাকার জনসংখ্যা অনেক বেশি বলে মন্তব্য করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক ড. আকতার মাহমুদ।
তিনি বলেন, ‘ঢাকা শহরের জনসংখ্যা সমস্যাটাই হচ্ছে মূল বিষয়। মাত্র সাড়ে ৩০০ বর্গ কিলোমিটারের যে শহর, সেখানে প্রায় দেড় থেকে পৌনে দুই কোটি মানুষ বাস করছেন। যদিও বিবিএসের (বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো) পরিসংখ্যান বলছে, ঢাকার জনসংখ্যা এক কোটি ছয় লাখ, তবে সেটা সঠিক নয়।’
‘ঢাকায় ৪৮ হাজার মানুষ এক বর্গ কিলোমিটারের মধ্যে বাস করছেন। এতে সবচেয়ে জনবহুল রাজধানীর খেতাব পেয়েছে ঢাকা শহর। প্রতিটি জায়গার একটি ক্যারিং ক্যাপাসিটি (ধারণক্ষমতা) আছে, সেই ক্যাপাসিটির চেয়ে অনেক বেশি মানুষ ঢাকা শহরে বাস করেন।’
‘আদর্শগতভাবে একটি শহরে একরপ্রতি মানুষ বাস করা উচিত দুইশর কম। সেই তুলনায় ঢাকা শহরের একরপ্রতি জনঘনত্ব অনেক বেশি, কোনো কোনো এলাকায় সেটি সাড়ে ৩০০ পেরিয়ে যায়। যেমন, লালবাগ এলাকায় এই সংখ্যাটি ছয়শর মতো।’
ড. আকতার মাহমুদ বলেন, ‘ক্যারিং ক্যাপাসিটির বেশি পরিমাণ মানুষ যখন একটি জায়গায় বসবাস করেন, সেখানে কয়েকটি নেগেটিভ এক্সটারনালিটিজ (পরোক্ষ ক্ষতি) তৈরি হয়। এর মধ্যে বায়ুদূষণ, পানিদূষণ, শব্দদূষণ থেকে শুরু করে সব ধরনের দূষণ রয়েছে। নদী-নালা, খাল-বিলগুলোর অবস্থা দেখলেই এর প্রভাব বুঝতে পারবেন। এর পাশাপাশি মরার ওপর খাঁড়ার ঘায়ের মতো রয়েছে যানজট।’
তিনি বলেন, ‘এতে মানুষের জীবনমান অনেক খারাপ হয়ে যায়। জনসংখ্যার বিপরীতে যে পরিমাণ নাগরিক সুবিধা থাকা উচিত, সেটা থাকে না। যে কারণে দেখবেন, আমাদের স্কুলগুলোতে কোনো খেলার মাঠ নেই। বাচ্চারা মুরগির খোপের মতো একটি স্কুলঘরে ক্লাস করে। এতে তাদের মানসিক বিকাশ হয় না।’
শুধু তা-ই নয়, মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলো মেটানোও কঠিন হয়ে পড়ে বলে মন্তব্য করেন এই নগর-পরিকল্পনাবিদ।
‘আপনি দেখবেন, এখানে চিকিৎসকের সিরিয়াল পাওয়া যায় না। সব জায়গায় অতিরিক্ত ভিড়। যদি কোনো বাস স্টেশনে, হেলথকেয়ার কিংবা হাসপাতালে যান, কোথাও নাগরিক সুবিধা পাওয়া যাবে না। আবার পেতে হলে অনেক বেশি চেষ্টা করতে হয়। এর মানে হলো জনপরিসর অপ্রতুল। খোলা জায়গা ও পার্কগুলোর দিকে তাকান।’
‘সবকিছু বিচার বিশ্লেষণ করলে আমরা বলব যে ঢাকা শহরের জনসংখ্যা এত বেশি যে সেই অনুপাতে নাগরিক সুবিধা এখানে নেই,’ যোগ করেন তিনি।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সাবেক এই সভাপতি বলেন, ‘কুড়িগ্রাম থেকেও ঢাকায় মানুষ আসেন, আবার সাতক্ষীরা থেকেও আসেন। তিনটি প্রধান কারণে তারা আসেন: কর্মসংস্থান, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা। এছাড়া নদীভাঙনসহ আরও অনেক কারণ আছে।’
রাজধানী সরিয়ে নেওয়াই কি সমাধান
সেক্ষেত্রে ঢাকার এই জনচাপ কমাতে রাজধানী সরিয়ে নেওয়ার মতো সম্ভাবনার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে বিষয়টি একেবারে উড়িয়ে দেননি তিনিও। অন্য উপায়গুলোর সঙ্গে এটিও একটি ভেবে দেখার মতো বিষয় বলে জানান এই শিক্ষক।
তিনি বলেন, ‘ঢাকার শহরের এই পরিস্থিতি রাতারাতি সমাধান করা সম্ভব নয়। সেটি করতে গেলে কিছু কিছু কার্যক্রম বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে।’
‘সাংস্কৃতিক, ক্রীড়া, অর্থনীতি, লেখাপড়া, বিচারিক ও স্বাস্থ্যসেবা—সবকিছুর কেন্দ্র ঢাকা। সে কারণে কোনো কোনো দেশ এমন সমস্যায় পড়লে শহর থেকে কোনো কোনো কার্যক্রমকে কেন্দ্রবিমুখ করে ফেলে। কেউ কেউ রাজধানীও সরিয়ে নিয়েছে।’
তবে বাংলাদেশের মতো একটি দেশের রাজধানী সরিয়ে নেওয়া খুবই খরচের বিষয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘রাজধানী না সরিয়ে পুত্রজায়ায় একটি প্রশাসনিক এলাকা গড়ে তুলেছে মালয়েশিয়া। জার্মানিতে ফ্রাঙ্কফুট হয়েছে অর্থনৈতিক রাজধানী।’
‘এভাবে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক রাজধানী চট্টগ্রাম এবং প্রশাসনিক কাজের জন্য ঢাকা, চট্টগ্রাম কিংবা কুমিল্লার মতো একটি জায়গা নির্ধারণ করা যেতে পারে।’
এভাবে কিছু কিছু কাজ সরিয়ে নিয়ে রাজধানী না সরিয়েও ঢাকার ওপর চাপ কমিয়ে ফেলা সম্ভব বলে মত দেন আকতার মাহমুদ।
তার কথায়, ‘আমরা যেন সমস্ত কাজ ঢাকাকেন্দ্রিক করে না ফেলি। এখন যদি বিকেন্দ্রীকরণ করা হয়, তাহলে ঢাকার প্রতি মানুষের আকর্ষণ কমে যাবে, আর দেশের চারদিকে মানুষ ছড়িয়ে পড়বে।’
‘সমগ্র বাংলাদেশ নিয়ে পরিকল্পনা করাটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। অন্য বিভাগীয় ও জেলা শহরগুলোতে সরকারি বিনিয়োগ বাড়াতে হবে, যাতে কর্মসংস্থান তৈরি হয়। পাশাপাশি জেলা শহরগুলোতে বিনিয়োগে প্রণোদনা দিয়ে প্রাইভেট কোম্পানিগুলোকে উৎসাহিত করতে হবে। এভাবে কাজগুলো অন্য বিভাগীয় ও পৌর শহরে সরিয়ে নিতে হবে। তাহলে লোকজন নিজের বাড়িতে কিংবা এলাকার কাছাকাছি বসবাস করা শুরু করবে।’
রোহিঙ্গা সংকটের টেকসই সমাধান এবং তাদের নিরাপদে মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনে নতুন করে বৈশ্বিক প্রচেষ্টা বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশন (ওআইসি) ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের তৃতীয় কমিটিতে সর্বসম্মতিক্রমে এ বিষয়ে একটি প্রস্তাব গ্রহীত হয়েছে।
জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশ মিশন থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, বুধবার ১০৫টি দেশ এই প্রস্তাবের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে।
২০১৭ সাল থেকে প্রতি বছরই প্রস্তাবটি গ্রহণ করা হচ্ছে। এতে রাখাইন রাজ্যে মানবাধিকারের লাগাতার লঙ্ঘন, রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর নিপীড়ন, মানবিক সহায়তা প্রবেশাধিকারের ওপর বিধিনিষেধ এবং বাংলাদেশে ও প্রতিবেশী দেশগুলোতে রোহিঙ্গাদের অব্যাহত অনুপ্রবেশ নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।
এই প্রস্তাবে রোহিঙ্গাদের তাদের নিজ দেশে নিরাপদ, মর্যাদাপূর্ণ ও টেকসই প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করার জন্য টেকসই আন্তর্জাতিক সম্পৃক্ততারও আহ্বান জানানো হয়েছে।
প্রস্তাব গৃহীত হওয়ার পর, বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল সদস্য দেশগুলোকে তাদের অব্যাহত সমর্থনের জন্য ধন্যবাদ জানায়।
তবে প্রতিনিধি দলটি এ ব্যাপারে হতাশা প্রকাশ করে যে গত আট বছরে বাস্তুচ্যুত এই জনগোষ্ঠীর প্রত্যাবাসনের জন্য কোনও কার্যকর অগ্রগতি হয়নি।
প্রতিনিধিদল জোর দিয়ে বলেছে যে বাংলাদেশ আর ১৩ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেওয়ার বোঝা বহন করতে পারছে না। তাই তারা রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরাতে জরুরি আন্তর্জাতিক পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানায়।
জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান বলেছেন, নিজেদের অভ্যন্তরীণ ইস্যুতে কোনো দেশের হস্তক্ষেপ চায় না বাংলাদেশ। কলম্বো সিকিউরিটি কনক্লেভকে (সিএসসি) ‘উন্মুক্ত আঞ্চলিকতাবাদের’ ভিত্তিতে একটি উন্মুক্ত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক আঞ্চলিক বহুপক্ষীয় সংস্থা হিসেবে বিকশিত দেখতে চায় বাংলাদেশ। এই নিরাপত্তা ফোরাম পারস্পরিক আস্থা, সুবিধা ভাগাভাগি এবং কারও অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার নীতি অনুসরণ করে এগিয়ে যাবে। বৃহস্পতিবার ভারতের দিল্লিতে সিএসসি জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাদের সপ্তম সম্মেলনে বক্তব্যে বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান এই প্রত্যাশা তুলে ধরেন। দিল্লিতে ভারতের ফরেন সার্ভিস একাডেমি সুষমা স্বরাজ ইনস্টিটিউটের সম্মেলনকক্ষে সম্মেলনটি হয়।
স্বাগতিক দেশ হিসেবে ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল সম্মেলনের শুরুতে বক্তব্য দেন। বলেন, মহাসাগর আমাদের সবচেয়ে বড় ঐতিহ্য। এটি আমাদের অর্থনীতির চালিকাশক্তি। সদস্যরাষ্ট্রগুলো অভিন্ন সামুদ্রিক মানচিত্র ভাগাভাগি করে বলেই আঞ্চলিক শান্তি, নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা আমাদের দায়িত্ব। আমাদের একটি উন্মুক্ত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সামুদ্রিক এলাকা বিকাশের স্বার্থে আমাদের একটি সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখতে হবে।
অজিত দোভাল বলেন, ভারত সিএসসির সদস্যদেশগুলো নিয়ে পরিবর্তনশীল এবং ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জের অভিন্ন ঝুঁকি মোকাবিলায় একসঙ্গে কাজ করতে অঙ্গীকারবদ্ধ।
বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান বলেন, বঙ্গোপসাগরের একটি উপকূলীয় রাষ্ট্র হিসেবে ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধি আমাদের পারস্পরিক স্বার্থের বিষয়। বৈশ্বিক জিডিপি, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, জলবায়ু পরিবর্তন, প্রযুক্তিগত অগ্রগতি এবং কৌশলগত প্রভাব—এসব ক্ষেত্রেই ভারত মহাসাগরীয় এলাকার সম্মিলিত অংশীদারত্ব আমাদের আকাঙ্ক্ষা ও সামষ্টিক দৃষ্টিভঙ্গিকে গড়ে তোলে।
খলিলুর রহমান আরও বলেন, বাংলাদেশ ধারাবাহিকভাবে এমন মূল্যবোধ ও নীতিমালা অনুসরণ করে, যা সবার যৌথ সমৃদ্ধির জন্য একটি স্বাধীন, উন্মুক্ত, শান্তিপূর্ণ, নিরাপদ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক ভারত মহাসাগর নিশ্চিত করার দৃষ্টিভঙ্গিকে সমর্থন করে। যেখানে জাতীয় সার্বভৌমত্ব ও সমতা, রাজনৈতিক স্বাধীনতা, অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করা, আন্তর্জাতিক বিরোধের শান্তিপূর্ণ নিষ্পত্তি, আন্তর্জাতিক আইন এবং জাতিসংঘ সনদের নীতিমালা—এসবকে অবশ্যই প্রধান ভিত্তি হিসেবে থাকতে হবে। টেকসই উন্নয়ন, আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা, মানবিক সহায়তা এবং মৌলিক অধিকার ও স্বাধীনতা রক্ষায় আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা নিশ্চিত করতে হবে।
বাংলাদেশ সিএসসির পাঁচটি স্তম্ভের গুরুত্বকে স্বীকৃতি দেয় এবং এসব অগ্রাধিকারের মাধ্যমে সম্মিলিত নিরাপত্তা, আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও যৌথ সমৃদ্ধি বাড়ানোর লক্ষ্যে তাৎপর্য অনুধাবন করে বলে মন্তব্য করেন নিরাপত্তা উপদেষ্টা।
খলিলুর রহমান আরও বলেন, আমাদের অঞ্চলের সামুদ্রিক ক্ষেত্র আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ তার দায়িত্ব পালনে অটল। জলদস্যুতা, অবৈধ মাছ ধরা, সামুদ্রিক সন্ত্রাসবাদ ও অপরাধ মোকাবিলায় আমরা মিত্র দেশগুলোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছি। অতীতে বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাসবাদ ও উগ্রবাদের কিছু চ্যালেঞ্জ বাংলাদেশও মোকাবিলা করেছে। আমরা যেকোনো পরিস্থিতিতে সব রকম সন্ত্রাসবাদের প্রতি ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি অনুসরণ করি।’
সম্প্রতি বাংলাদেশ ভুয়া তথ্য ও বিভ্রান্তিমূলক তথ্যের (মিসইনফরমেশন ও ডিসইনফরমেশন) হুমকির মুখোমুখি হয়েছে বলে মন্তব্য করেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান। বাংলাদেশের অঙ্গীকার হলো নিজস্ব সাইবার স্পেস, গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো ও প্রযুক্তিকে সুরক্ষিত রাখা; শুধু নাগরিকদের নিরাপত্তা, গোপনীয়তা ও কল্যাণ নিশ্চিত করার জন্যই নয়, বরং নিশ্চিত করার জন্য যে বাংলাদেশ থেকে কোনো কর্মকাণ্ড যেন আঞ্চলিক বা বৈশ্বিক সম্প্রদায়ের জন্য হুমকিস্বরূপ না হয়।
খলিলুর রহমান আরও বলেন, আঞ্চলিক নিরাপত্তার জটিলতা মোকাবিলায় আমরা পারস্পরিক বিশ্বাস ও সম্মান, অভিন্ন স্বার্থ এবং সুবিধা ভাগাভাগির নীতিতে আমাদের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করি। একটি স্থিতিশীল, নিরাপদ ও সমৃদ্ধ অঞ্চল নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ হাতে হাত মিলিয়ে একসঙ্গে পথ চলতে ও কাজ করতে প্রস্তুত।
খলিলুর রহমান বলেন, আমরা কোনো বাইরের কিংবা অভ্যন্তরীণ কারণকে অন্য কোনো রাষ্ট্র বা জনগোষ্ঠীর জন্য হুমকিতে পরিণত হতে দিতে পারি না। পারস্পরিক বিশ্বাস ও স্বচ্ছতার ভিত্তিতে যেকোনো বিষয়ে অভিন্ন সমাধান খুঁজে পেতে আমরা প্রস্তুত। বাংলাদেশ এই কনক্লেভকে একটি উন্মুক্ত আঞ্চলিকতাবাদচালিত, উন্মুক্ত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক আঞ্চলিক বহুপক্ষীয় সংস্থা হিসেবে গড়ে ওঠার প্রত্যাশা করে।
জুলাই আন্দোলনে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় দোষী সাব্যস্ত করে আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। আবার শীর্ষ নেতৃত্বের বড় অংশ পলাতক বা বিদেশে আশ্রয় নিয়েছেন, অনেকে কারাগারে আছেন। এছাড়া রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগের কার্যক্রমও নিষিদ্ধ। সরকার স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছে, আগামী নির্বাচনে দলটি অংশ নিতে পারবে না। এমন পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগ কোন পথে হাঁটবে—সেই প্রশ্ন সামনে এসেছে।
আওয়ামী লীগের সূত্র এবং বিশ্লেষকদের মতে, আওয়ামী লীগের পথ চলার দুটি রাস্তা খোলা আছে। প্রথমত, যেভাবে তারা বিদায় হয়েছে, সেভাবে যদি আরেকটি গণঅভ্যুত্থান ঘটাতে পারে; যা প্রায় অসম্ভব। কারণ, দলীয় প্রধানসহ কেন্দ্রীয় নেতারা বিদেশে পলাতক। দেশে যারা ছিলেন, তাদের প্রায় সবাই কারাগারে। কেন্দ্রীয় নেতাদের বাইরে সাবেক মন্ত্রী, সংসদ সদস্য ও স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধিদের কাউকে প্রকাশ্যে দেখা যায় না। মাঝেমধ্যে ঝটিকা মিছিল করেন কেবল নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ কিংবা তরুণ নেতা-কর্মীরা।
আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্রের খবর- পলাতক নেতাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব আগের চেয়ে আরও বেড়েছে। বিশেষ করে ভারতের কলকাতায় থাকা নেতারা দলীয় সরকারের পতন ও দলের বর্তমান অবস্থার জন্য একে অপরকে দোষারোপ করছেন। দেশে থাকা তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের মাঠে নামাতে যে টাকা দরকার; তা কারা দেবেন, সেটা নিয়েও বিভেদ আছে। ফলে আওয়ামী লীগ দ্রুত সংগঠিত হয়ে কিছু করে ফেলবে, তেমনটি বিশ্বাস করছেন না দলের নেতারাই।
এছাড়া দলটির ফিরে আসার অপর যে পথ দেখছেন বিশ্লেষকরা, সেটা হচ্ছে ভুল স্বীকার করে ও ক্ষমা চেয়ে জনগণের কাছে আরেকবার সুযোগ প্রার্থনা করা। কিন্তু এখন পর্যন্ত সেই চিন্তা বা ইচ্ছা আওয়ামী লীগের কোনো পর্যায়েই নেই।
দলটির নেতাদের ভাষ্য, দোষ স্বীকার করার অর্থ হচ্ছে শেখ হাসিনা এবং দলটির নেতারা যে ছাত্র-জনতাকে হত্যা করেছেন, সেটা স্বীকার করে নেওয়া। এ জন্যই তারা দোষ স্বীকার করতে রাজি নন। এ ছাড়া নেতৃত্বে বড় ধরনের পরিবর্তন এনেও আওয়ামী লীগ ফিরে আসার চেষ্টা করতে পারে। দলটির ভেতরে এমন আলোচনা আছে যে দলের সভাপতি শেখ হাসিনা নিজে সরে গিয়ে পরিবারের অন্য সদস্যের হাতে ক্ষমতা ছাড়ার বিষয়ে আগ্রহ দেখিয়েছেন। কেন্দ্রীয় নেতা ও সাবেক মন্ত্রী-সংসদ সদস্যদের বেশির ভাগকেই দূরে সরিয়ে দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা আছে। তবে এটা এখনই করতে রাজি নন শেখ হাসিনা; বরং খারাপ সময় বিতর্কিত নেতাদের দিয়েই পার করতে চান তিনি।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক আল মাসুদ হাসানুজ্জামান বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ের পর আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব কাঠামোতে পরিবর্তনের বিষয়টি সামনে চলে এসেছে। সাংগঠনিকভাবে ও সাংবিধানিক রাজনীতিতে ফিরে আসতে হলে তাদের নেতৃত্বকে সুদূরপ্রসারী সিদ্ধান্ত নিতে হবে। দলটি নেতৃত্ব কাঠামো নিয়ে ভাববে বলে তিনি মনে করেন।
তবে আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব বড় বিপদে আছে, এটা সবাই স্বীকার করছেন দলটির নেতারা। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে কেন পড়তে হয়েছে, এর সমাধান কী, তা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে না।
এদিকে, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তরের ‘ফ্যাক্ট-ফাইন্ডি ‘প্রতিবেদনে ১ হাজার ৪০০ ছাত্র-জনতা হত্যার তথ্য এসেছে। ৩০ হাজারের মতো মানুষ আহত; যাদের অনেকেই চোখ হারিয়েছেন, হাত-পা হারিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। এসব আহত-নিহতের পরিবারের সদস্যদেরও ক্ষোভ রয়েছে আওয়ামী লীগের ওপর। ফলে গণঅভ্যুত্থানে হতাহতের দাগ মুছে যাবে, এটা মনে করার কারণ নেই। অভ্যুত্থানে আহত-নিহতের পরিবার আওয়ামী লীগের ফিরে আসা চাইবে না। এ কারণে সরকারের পক্ষে আওয়ামী লীগের প্রতি সহানুভূতি দেখানোর সুযোগ নেই। এ ছাড়া আওয়ামী লীগ বর্তমান সরকারের প্রতি বরাবরই শত্রুভাবাপন্ন। তাই সরকারও তাদের ছাড় দেবে না। বড়জোর আওয়ামী লীগের হয়ে কেউ ভোট করতে চাইলে তাতে হয়তো বাধা দেবে না।
বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর নেতা-কর্মীরা দীর্ঘ সাড়ে ১৫ বছর আওয়ামী লীগের হাতে নিপীড়ন-নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। বিএনপি ও জামায়াতের সূত্র বলছে, ভোটের মাঠে যত কৌশলই করা হোক না কেন, ক্ষমতায় গেলে এই দুই দলের কেউ-ই আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনাকে সাদরে গ্রহণ করবে না।
অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া তরুণদের রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) আওয়ামী লীগের প্রত্যাবর্তনের ঘোর বিরোধী। তাদের শক্তি এখন যা-ই থাকুক না কেন, সরকার তাদের চাওয়াকে গুরুত্ব দিয়ে থাকে। তবে এত কিছুর পরও আওয়ামী লীগের অনেক নেতা-কর্মী দেশে নিজেদের হারানো অবস্থান ফিরে পাওয়ার স্বপ্ন দেখেন।
আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, ভারতের সহযোগিতামূলক মনোভাব থেকে তারা ধরেই নিয়েছিলেন যে প্রতিবেশী প্রভাবশালী এই দেশ তাদের দেশে ফিরতে সহায়তা করবে। এই বার্তা দেশে থাকা তৃণমূলের নেতা-কর্মীদেরও দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে গত বছর ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পরও আশা দেখেছিলেন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। তবে ধীরে ধীরে সেই আশায় ভাটা পড়েছে। তবে এখনো দলটির অনেকে ভারতসহ বিদেশি শক্তিকে ত্রাতা হিসেবে দেখেন।
আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হয়ে গেলে পরবর্তী সরকারের ওপর রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ানোর চেষ্টা করতে হবে। এ ক্ষেত্রে জাতীয় পার্টি, ১৪-দলীয় জোটের পুরোনো মিত্রদের পাশে পাবে আওয়ামী লীগ। তবে সেটাও স্বপ্নই রয়ে যাবে বলে ধারণা বিশ্লেষকদের।
সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহাল করে রায় ঘোষণা করেছেন সুপ্রিম কোর্টে আপিল বিভাগ। এর মধ্য দিয়ে চৌদ্দ বছর আগে আদালতের রায়ে বাতিল হওয়া তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা আবারো ফিরে এলো। নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংক্রান্ত সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের রায়ের বিরুদ্ধে বৃহস্পতিবার সকালে রায় দেন সর্বোচ্চ আদালত।
এর আগে, গত ১১ নভেম্বর শুনানি শেষ করেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন সাত বিচারপতির আপিল বেঞ্চ।
আওয়ামী লীগের আমলে বাতিল হওয়া তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা দীর্ঘদিন ধরেই ফেরানোর দাবি জানিয়ে আসছিল বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। ২০২৪ সালের জুলাই অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর আবারও সর্বোচ্চ আদালতে ওঠে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিষয়টি।
চলতি বছরের ২৭ আগস্ট তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে করা আবেদন মঞ্জুর করে আপিলের অনুমতি দেওয়া হয়। ২১ অক্টোবর থেকে শুরু হয় আপিলের শুনানি।
ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানে যুক্ত হয়েছিল তত্ত্ববধায়ক সরকার ব্যবস্থা। লক্ষ্য ছিল, এর মধ্য দিয়ে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে রাজনীতিতে যে বিতর্ক রয়েছে তার সমাধান হবে। পরে এই ব্যবস্থা নিয়েও রাজনৈতিক বিতর্ক শুরু হলে ২০১১ সালে সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের ভিত্তিতে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের রায় দেয় আপিল বিভাগ। কিন্তু এরপর দলীয় সরকারের অধীনে হওয়া নির্বাচনগুলো নানাভাবে বিতর্কিত হয়েছে।
আদালতের রায়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরলেও আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এর বাস্তবায়ন সম্ভব নয় বলে জানিয়েছিলেন আইনজীবীরা। অর্থাৎ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনেই আগামী নির্বাচন হবে।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে আলোচিত বিষয়গুলোর একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা।
এটি কেবল একটি প্রশাসনিক কাঠামোর প্রশ্ন নয়, বরং দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পারস্পরিক আস্থাহীনতা ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে বিশ্বাস-অবিশ্বাসেরও একটি প্রতিফলন।
মূলত ক্ষমতাসীন দলের অধীনে নির্বাচনের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠার কারণেই বাংলাদেশের নির্বাচনী রাজনীতির ইতিহাসে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার বা কেয়ারটেকার সরকার ধারণার জন্ম।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার জন্ম হয়েছিল এক বিশেষ রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে। এরশাদের পতনের পর ১৯৯১ সালের নির্বাচন বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে একটি অনানুষ্ঠানিক অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে হলেও, ১৯৯৪ সালের মাগুরা উপনির্বাচনে ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ পরিস্থিতি পাল্টে দেয়।
১৯৯৬ সালে ক্ষমতাসীন দলের অধীনে কোনোভাবেই অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়, এই অভিযোগ তুলে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে বিরোধী দলগুলো তীব্র আন্দোলন শুরু করে।
আন্দোলনের মুখে ১৯৯৬ সালে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে সাংবিধানিক রূপ দেওয়া হয়।
যেখানে বলা হয়েছিল, নির্বাচিত সরকারের মেয়াদ শেষে একটি নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করবে, যার প্রধান কাজ হবে পরবর্তী তিন মাস বা ৯০ দিনের মধ্যে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন নিশ্চিত করা। এই ব্যবস্থার অধীনে ১৯৯৬ এবং ২০০১ সালে তুলনামূলকভাবে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা এবং এর ফলে উভয় নির্বাচনেই শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর সম্ভব হয়েছিল।
রাজনৈতিক বিতর্কের মুখে বাতিল: বাংলাদেশে ২০০৬ সালের পর থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার কাঠামো নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়। বিশেষ করে প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে তুমুল বিরোধ দেখা দেয়।
২০০৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন নিয়ে রাজনৈতিক অচলাবস্থার কারণে দেশে জরুরি অবস্থা জারি হয় এবং একটি সেনাসমর্থিত বিতর্কিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতা নেয়, যা পরবর্তীতে ১/১১ সরকার নামে পরিচিত হয়। এই সরকার দীর্ঘ দুই বছর ক্ষমতায় থেকে নিজেদের সাংবিধানিক এখতিয়ারের বাইরেও কাজ করে। এমন প্রেক্ষাপটে ২০১১ সালের ১০ মে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ত্রয়োদশ সংশোধনীকে অবৈধ ঘোষণা করে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করে সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে রায় দেন সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হকের নেতৃত্বাধীন সাত বিচারপতির আপিল বেঞ্চ।
ওই রায়ে বলা হয়েছিল, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা অর্থাৎ সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী আইন অগণতান্ত্রিক এবং তা সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
এরপর সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে এই ব্যবস্থা স্থায়ীভাবে বাতিল করা হয়।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলুপ্ত হওয়ার পর, বাংলাদেশে ক্ষমতাসীন দলের অধীনেই ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের নির্বাচনগুলো হয়। এই নির্বাচনগুলোর গ্রহণযোগ্যতা ও স্বচ্ছতা নিয়ে দেশের ভেতরে ও বাইরে ব্যাপক বিতর্ক রয়েছে।
প্রধান বিরোধী দলগুলো সবসময়ই অভিযোগ করেছে যে ক্ষমতাসীন দলের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়। তাদের মতে, এই ব্যবস্থায় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবের কারণে ভোটাররা স্বাধীনভাবে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে না।
অর্থ আত্মসাৎ মামলা তদন্তের স্বার্থে জাতীয় দলের ক্রিকেটার ও পতিত সরকারের সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) সাকিব আল হাসানসহ মোট ১৫ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
বৃহস্পতিবার দুদকের মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, পরস্পর যোগসাজশে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ সংক্রান্ত আইন (সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অধ্যাদেশ, ১৯৬৯ এর ১৭ ধারা) পরিকল্পিতভাবে লঙ্ঘন ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে অর্থ আত্মসাতের মামলার তদন্তের স্বার্থে এজাহারনামীয় সাকিব আল হাসানসহ মোট ১৫ আসামিকে আগামী ২৫ ও ২৬ নভেম্বর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে। ওই মামলায় এজাহারনামীয় ২ নম্বর আসামি সাকিব আল হাসানকে ২৬ নভেম্বর সকাল ১০টায় দুদকের ঢাকার প্রধান কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে মামলা সংশ্লিষ্ট বক্তব্য দিতে চিঠি পাঠানো হয়েছে।
গত ১৭ মে দুদক প্রধান কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক সাজ্জাদ হোসেন বাদী হয়ে শেয়ার বাজারে অর্থ লোপাটের মামলাটি দায়ের করেন। এতে আসামি করা হয়েছে সাকিবের মা শিরিন আক্তার, সমবায় অধিদপ্তরের উপ-নিবন্ধক আবুল খায়ের ওরফে হিরু, তার স্ত্রী কাজী সাদিয়া হাসান, আবুল কালাম মাদবর, কনিকা আফরোজ, মোহাম্মদ বাশার, সাজেদ মাদবর, আলেয়া বেগম, কাজী ফুয়াদ হাসান, কাজী ফরিদ হাসান, জাভেদ এ মতিন, জাহেদ কামাল, হুমায়ূন কবির ও তানভীর নিজামকে।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র করে ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে অসৎ অভিপ্রায়ে শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ সংক্রান্ত আইন লঙ্ঘনপূর্বক নিজের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিও অ্যাকাউন্টসমূহে অসাধু, অনৈতিক ও অবৈধ উপায়ে ফটকা ব্যবসার মতো ধারাবাহিক লেনদেন, প্রতারণামূলক সক্রিয় বাণিজ্য, জুয়ামূলক কার্যক্রমের মাধ্যমে বাজার কারসাজি করতেন। এভাবে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের প্রতারণার ফাঁদে ফেলে তাদের বিনিয়োগকৃত ২৫৬ কোটি ৯৭ লাখ ৭০ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেন এবং অর্জিত অপরাধলব্ধ অর্থ শেয়ার বাজার হতে সংঘবদ্ধভাবে উত্তোলন করেন।
এজাহারে আরও বলা হয়েছে, আসামি আবুল খায়ের ওরফে হিরুর ১৭টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে মোট ৫৪২ কোটি ৩১ লাখ ৫১ হাজার টাকার অস্বাভাবিক, অযৌক্তিক এবং সন্দেহজনক প্রকৃতির লেনদেন দেখা গেছে, যার পরিপ্রেক্ষিতে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪, দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭ এর ৫(২) এবং দন্ডবিধি, ১৮৬০ এর ৪০৯/৪২০/৪৬৭/৪৬৮/১২০বি/১০৯ ধারায় মামলাটি রুজু হয়েছে।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানার স্বামী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক শফিক আহমেদ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত ৮ কোটি ৬৫ লাখ ৪১ হাজার ৬০ টাকার সম্পদের অভিযোগে মামলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
বৃহস্পতিবার দুদকের প্রধান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে মামলার সিদ্ধান্ত অনুমোদন করা হয়। জানা গেছে, দুদকের সহকারী পরিচালক আফনান জান্নাত কেয়া শিগগিরই মামলাটি দায়ের করবেন।
দুদকের মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন গণমাধ্যমে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
দুদক সূত্রে জানা যায়, ড. শফিক আহমেদের নামে ১৫ কোটি ৩২ লাখ ৮৮ হাজার ২৯০ টাকা মূল্যের সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে। পাশাপাশি পারিবারিক ও অন্যান্য ব্যয় পাওয়া যায় দুই কোটি ৬৫ লাখ ৩ হাজার ৩৫২ টাকা। সবমিলিয়ে তার অর্জিত ও ব্যয়ের হিসাব দাঁড়ায় ১৭ কোটি ৯৭ লাখ ৯১ হাজার ৬৪২ টাকা। কিন্তু যাচাই-বাছাইয়ে তার বৈধ আয় পাওয়া যায় ৯ কোটি ৩২ লাখ ৫০ হাজার ৫৮২ টাকা। ফলে, ৮ কোটি ৬৫ লাখ ৪১ হাজার ৬০ টাকা জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ রয়েছে বলে অনুসন্ধানে প্রমাণ পাওয়া গেছে।
দুদক আরও জানায়, তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতি ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকার সময়ে দুর্নীতির মাধ্যমে এই সম্পদ অর্জন করেছেন বলে প্রাথমিকভাবে প্রমাণ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় দুদক আইন, ২০০৪-এর ২৭(১) ধারায় তার বিরুদ্ধে মামলা রুজুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেছেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানকে ফেরাতে ভারতকে চিঠি দেওয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে সাজাপ্রাপ্ত এই ব্যক্তিদের দেশে ফেরানোর জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিজে) যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকের পর বৃহস্পতিবার বিকালে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানাতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। এ সময় উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
আইন উপদেষ্টা বলেন, মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা এবং সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের প্রত্যর্পণের জন্য (ভারতের কাছে) চিঠি দেওয়া হচ্ছে। যেহেতু তারা এখন সাজাপ্রাপ্ত, কাজেই সরকার মনে করে ভারতের এখন বাড়তি দায়িত্ব রয়েছে তাদের ফেরত দেওয়ার জন্য। বাংলাদেশের মানুষের বিচারের আকাঙ্ক্ষা পূরণ করার জন্য ভারত যেন প্রত্যর্পণ চুক্তি অনুযায়ী তার দায়িত্ব পালন করে, সেটি স্মরণ করিয়ে ভারতকে চিঠি দেওয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে এই সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের দেশে ফেরানোর জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে কোনো রকম অ্যাপ্রোচ করতে পারেন কি না, সেটা বিচার-বিবেচনা করার জন্য অচিরেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
গণভোটে আইন ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রসঙ্গ: সংবাদ সম্মেলনে আইন উপদেষ্টা বলেন, আজ একটি ঐতিহাসিক রায় হয়েছে। দীর্ঘদিন সংগ্রাম করার পর তত্ত্বাবধায়ক সরকার পাওয়া গিয়েছিল। এটি ভোটের নিশ্চয়তা দিয়েছিল। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে কয়েকটি সুষ্ঠু নির্বাচন দেখা গিয়েছিল। ক্ষমতাসীন দল পরাজিত হতো। এটা স্বাভাবিক মনে হতো। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে সাবেক একজন বিচারপতির নেতৃত্বে রায় দিয়ে এটিকে অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছিল।
আইন উপদেষ্টা আরও বলেন, এ মুহূর্তে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনরুজ্জীবিত হয়েছে। কিন্তু এটা কার্যকর হবে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরে। কারণ, সংসদ ভেঙে যাওয়ার পর তত্ত্বাবধায়ক সরকার হয়। এখন সংসদের অস্তিত্ব নেই। উচ্চ আদালতের নির্দেশ মোতাবেক আগামীতে যে সংসদ গঠিত হবে, সেই সংসদ যখন ভেঙে যাবে, তারপর ১৫ দিনের মধ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হবে।
গণভোট করার জন্য আইন করার বিষয়ে আইন উপদেষ্টা বলেন, গণভোটের বিষয়ে অধ্যাদেশ সরকার দ্রুত করতে যাচ্ছে। আগামী তিন-চার কার্যদিবসের মধ্যে এটি হয়ে যাবে বলে আশা করছি।
দেশের গণতন্ত্রের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার সহায়ক ব্যবস্থা বলে মন্তব্য করেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। তিনি বলেছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বহালে দেশ গণতন্ত্রের মহাসড়কে হাঁটবে। এখন থেকে আর দিনের ভোট রাতে হবে না কিংবা মৃত মানুষ এসে ভোট দিয়ে যাবে না। বৃহস্পতিবার দেশের সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের পর বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সুপ্রিম কোর্টে নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাব দেন অ্যাটর্নি জেনারেল আসাদুজ্জামান। ত্রয়োদশ সংশোধনী মামলার রায়ের বিষয়ে জানাতে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
দেশের বিচারব্যবস্থা রাজনৈতিক পক্ষপাতদুষ্ট রায় দেয় কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, তিনি সেটি মনে করেন না। কোন রায় রাজনৈতিক পক্ষপাতদুষ্ট, আর কোন রায় আইনি ব্যাখ্যায় দেশের মানুষের স্বার্থ রক্ষা করবে, গণতন্ত্র রক্ষা করবে, মানুষের ভোটাধিকার রক্ষা করবে, আইনের শাসন রক্ষা করবে, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে পুনর্বহাল করবে, তা জাতি বিবেচনা করবে।
আসাদুজ্জামান বলেন, ‘আজকের (বৃহস্পতিবার) রায়ে আগের তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বহাল হলো। এটা কার্যকর হবে পরবর্তী সংসদ ভাঙার পরের ১৫ দিনের মধ্যে।
মো. আসাদুজ্জামান বলেন, পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রকাশের পর জানা যাবে, পরবর্তী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা কে হবেন। জানা যাবে, পূর্বের ব্যবস্থা অনুযায়ী হবে নাকি জুলাই সনদ অনুসারে।
আরেক প্রশ্নের জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফিরেছে। তবে এর গঠন কী হবে, তা ঠিক করবে পরবর্তী সংসদ।
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা সংবিধানে ১৯৯৬ সালে ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে আনা হয়েছিল। সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক না বলে তা সাংবিধানিক হিসেবেই রায়ে ঘোষিত হলো। তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বাংলাদেশের গণতন্ত্রের জন্য একটি সহায়ক ব্যবস্থা হিসেবে ফুল জাজমেন্টে আসবে বলে মনে করেন তিনি।
জুলাই সনদে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার যে রূপরেখা আছে, তার পরিবর্তন সম্ভব হবে কি না, জানতে চাইলে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, পার্লামেন্টের কিছু ডিসকাশন থাকবে। ২০ বছর পরে জনগণ যদি মনে করে এই ব্যবস্থা পচে গলে গেছে, এর থেকেও ভালো কোনো ব্যবস্থা গণতন্ত্র সংরক্ষণের জন্য প্রয়োজন, তাহলে অবশ্যই পার্লামেন্টের ডিসকাশন থাকবে।
সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, তার ভাই ও তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সাড়ে ৪ কোটিরও বেশি শেয়ার অবরুদ্ধ করেছে সিআইডি।
জাবেদ ও তার ভাই ইউসিবি ব্যাংক পিএলসির সাবেক পরিচালক আনিসুজ্জামান চৌধুরী রনি এবং রনির স্ত্রী মেঘনা ব্যাংক পিএলসির সাবেক পরিচালক ইমরানা জামান চৌধুরীর নামে এসব শেয়ারের মালিকানা ছিল।
গতকাল বুধবার সিআইডির পুলিশ সুপার (মিডিয়া) জসীম উদ্দিন খান স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, অভিযুক্তরা অবৈধ অর্থ দিয়ে এসব শেয়ার কিনেছিলেন।
এতে বলা হয়, ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালত ১৮ নভেম্বর সিআইডির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এসব সম্পদ জব্দের আদেশ দিয়েছেন।
এছাড়া ফিন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিটও এই অনুসন্ধান পরিচালনা করছে। অপরাধের বিস্তারিত তথ্য উদঘাটন, অজ্ঞাত অপর সদস্যদের শনাক্তকরণ ও অন্যান্য আইনানুগ প্রক্রিয়ার জন্য সিআইডির অনুসন্ধান এখনো অব্যাহত রয়েছে।
প্রাথমিক অনুসন্ধানে দেখা গেছে, অভিযুক্তদের নিয়ন্ত্রণাধীন ব্যক্তিগত হিসাব ও তাদের কাগজে প্রতিষ্ঠানের নামে মোট ৪ কোটি ৫৩ লাখ ৩০ হাজার ২০০ শেয়ার ক্রয় করা হয়েছিল। এর তৎকালীন বাজারমূল্য ছিল প্রায় ৫৯ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। পরে স্টক ডিভিডেন্ড যোগ হয়ে শেয়ার সংখ্যা বেড়ে ৪ কোটি ৬৪ লাখ ৬৩ হাজার ৪৫৫-এ উন্নীত হয়েছে।
অনুসন্ধানে আরও জানা গেছে, অভিযুক্তরা দীর্ঘদিন ধরে চাঁদাবাজি, জালিয়াতি ও সংঘবদ্ধ অপরাধের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অবৈধ অর্থ অর্জন করেছেন।
অবৈধ অর্থের একটি অংশ বিভিন্ন মাধ্যমে বিদেশে পাঠানো হয়েছিল এবং তা পুনরায় দেশে এনে বৈধ করার চেষ্টা করা হয়েছিল। ২০২২ সালের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত, সিঙ্গাপুর ও দুবাই থেকে মোট ২ কোটি ২২ লাখ ৫ হাজার ৪৪৪ মার্কিন ডলার দেশে আনা হয়। এই টাকা অভিযুক্তদের সহযোগী আবুল কাসেমের মাধ্যমে ইউসিবি ব্যাংক ও এনআরবিআইসি ব্যাংকের এফসি অ্যাকাউন্টে জমা করা হয়েছিল।
আগামী ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবসকে ঘিরে কোনো শঙ্কা নেই বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
গতকাল বুধবার সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে মহান বিজয় দিবস যথাযোগ্য মর্যাদায় উদযাপনের লক্ষ্যে জাতীয় কর্মসূচি সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়নকল্পে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণসহ সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়ে অনুষ্ঠিত আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায়কে ঘিরে দেশে কোনো অস্থিরতা নেই।’
তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনার রায়কে কেন্দ্র করে কোনো রকম অস্থিরতা সৃষ্টি হয়নি। বিজয় দিবসকে ঘিরেও কোনো অস্থিরতার সম্ভাবনা নেই।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিজয় দিবসের কর্মসূচিতে কোনো পরিবর্তন নেই। আগে যেভাবে সব কর্মসূচি হয়েছে, এবারও সেভাবে হবে। বরং আরও বেশি হবে। তবে গতবারের ন্যায় এবারও প্যারেড অনুষ্ঠিত হবে না।’
গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ছাড়া গত মঙ্গলবার দিবাগত রাতে ডিবি পরিচয়ে সাংবাদিককে তুলে নিয়ে পরে ফেরত দেওয়া প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, ‘এ বিষয়টা আমি প্রথম শুনলাম। অনুসন্ধান করার পর হয়তো আমি বিষয়টা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারব। বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা হবে।’
ব্রিফিংয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মো. খোদা বখস চৌধুরী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
কার্যক্রম নিষিদ্ধ দল আওয়ামী লীগের ‘জন্মস্থান’ খ্যাত পুরান ঢাকার হৃষিকেশ দাস রোডের রোজ গার্ডেন কেনার নামে রাষ্ট্রের ৩৩২ কোটি টাকার ক্ষতির অভিযোগে অনুসন্ধানে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
গতকাল বুধবার রাজধানীর সেগুন বাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে সংস্থাটির জনসংযোগ কর্মকর্তা আকতারুল সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে এই তথ্য জানান। তিনি বলেন, ‘অনুসন্ধানে যাদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যাবে, তাদের বিরুদ্ধেই কমিশন ব্যবস্থা নেবে।’
দুদক জানায়, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের কিছু অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে ‘রোজ গার্ডেন’ বাড়িটি কেনার মাধ্যমে রাষ্ট্রের ৩৩২ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযোগ পাওয়ার পর দুদক বিষয়টি যাচাই-বাছাই করতে অভিযান চালায়। অভিযানে প্রাপ্ত তথ্য ও নথির ভিত্তিতে কমিশন প্রাথমিক অনুসন্ধান শুরু করেছে।
২০১৮ সালে ব্যক্তি মালিকানাধীন পুরাকীর্তি হিসেবে সংরক্ষিত ‘রোজ গার্ডেন’ ভবনটি কিনে নেয় তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। এজন্য ব্যয় হয় ৩৩১ কোটি ৭০ লাখ ২ হাজার ৯০০ টাকা।
ওই বছরের ৮ আগাস্ট সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে আওয়ামী লীগের জন্মস্থান এবং গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ইতিহাসের স্বাক্ষী রোজ গার্ডেন ভবনটি অধিগ্রহণের প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়। পরে সরকার ওই ব্যক্তিমালিকানাধীন পুরাকীর্তিটি কিনে নেয়।
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, হৃষিকেশ দাস নামে এক ব্যবসায়ী ১৯৩১ সালে প্রায় ২২ বিঘা জমির ওপর ওই বাগানবাড়ি নির্মাণ করেন। বাড়ির চারপাশ তিনি সাজিয়ে তোলেন বিভিন্ন দেশ থেকে আনা দুর্লভ প্রজাতির গোলাপের বাগানে। তখন থেকে এর নাম হয় ‘রোজ গার্ডেন’। ১৯৩৬ সালে ঢাকার বই ব্যবসায়ী খান বাহাদুর মৌলভী কাজী আবদুর রশীদের কাছে ওই সম্পত্তি বিক্রি করে দেন হৃষিকেশ দাস। কাজী আবদুর রশীদ সেখানে প্রভিন্সিয়াল লাইব্রেরি গড়ে তোলেন।
১৯৪৯ সালের ২৩ জুন এই রোজ গার্ডেনেই গঠিত হয় পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ। ১৯৫৫ সালে ‘মুসলিম’ শব্দটি বাদ দিয়ে এ দলের নতুন নাম হয় ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ’।
২০১৮ ব্যক্তি মালিকাধীন পুরাকীর্তি হিসেবে সংরক্ষিত ওই বাড়ি কিনে নেয় তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। এতে সরকারের ৩৩১ কোটি ৭০ লাখ দুই হাজার ৯০০ টাকা ব্যয় হওয়ার কথা জানায় সরকার।
গত বছরের ৫ আগস্ট ওসি সায়েদের নির্দেশেই আশুলিয়া থানার সামনে সরাসরি গুলি চালিয়ে ছাত্র-জনতাকে হত্যা করে পুলিশ সদস্যরা। পরে ওসির নির্দেশেই পেট্রোল ঢেলে ৬ মরদেহ পুড়িয়ে দেয় তারা। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২-এ গতকাল বুধবার ৬ লাশ পোড়ানোর মামলায় এ লোমহর্ষক বর্ণনা দিয়েছেন রাজসাক্ষী এসআই আফজালুল হক।
সাক্ষ্যে শহীদদের জন্য কিছু করতে না পারার কথা জানিয়ে, শহীদ পরিবার ও ট্রাইব্যুনালের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন তিনি।
এসআই আফজালুল বলেন, আশুলিয়া থানার সামনে এএসআই বিশ্বজিৎসহ আরও কয়েকজন পুলিশ সদস্য ছাত্র-জনতার মিছিল লক্ষ্য করে সরাসরি গুলি করে।
এ সময় কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকে। তখন ওসি সায়েদ তার ঊর্ধ্বতন কারও সাথে ফোনে কথা বলছিলেন বলে দেখেন রাজসাক্ষী আফজালুল।
পরে ওসি সায়েদের নির্দেশ মরদেহগুলো প্রথমে একটি ভ্যানে এবং পরে পিকআপে উঠায়। এরপর এ বিষয়ে ওসি সায়েদ এসআই মালেক ও এএসআই বিশ্বজিতের সাথে পরামর্শ করেন। তখন তা দেখে আফজালুল নিজে তার পিস্তল সাথে নিয়ে থানা ত্যাগ করেন। এর ১০ দিন পর ১৫ আগস্ট থানায় এসে তিনি অস্ত্র জমা দেওয়ার সময় জানতে পারেন, মরদেহগুলো ওসি সায়েদ ও বিশ্বজিৎসহ অন্যরা পেট্রোল দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছেন।
রাজনৈতিক দলগুলোকে নির্বাচনী আচরণবিধি প্রতিপালনে যথাযথভাবে ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন।
গতকাল বুধবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনের সেমিনার কক্ষে আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচন উপলক্ষে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে একটি সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। তখন সভাপতির বক্তব্যে এই তিনি আহবান জানান।
সিইসি বলেন, ‘ভোট গ্রহণের প্রতিটি পদক্ষেপে আপনাদের সকলের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা অতীতে কেয়ারটেকার আমলে দুই-তিনটা নির্বাচন দেখেছি, নির্বাচনী আচরণবিধি পালনের ব্যাপারে দলগুলো ব্যাপক ভূমিকা রেখেছে। নির্বাচনী আচরণবিধি মেনে চলার জন্য আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চাইতেও প্রতিটা রাজনৈতিক দল এবং তাদের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা বড় ভূমিকা পালন করতে পারে। তাই এ ক্ষেত্রে আমরা আশা করব আপনারা আমাদের ও দেশের জনগণের প্রত্যাশিত ভূমিকা পালন করবেন।’
তিনি বলেন, শুধু নির্বাচন কমিশন একা নয়, একটা সুন্দর আর গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করার জন্য আপনারাও জাতির কাছে অঙ্গিকারবদ্ধ। এতদিনের সংলাপে ‘আমরা একটা গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চাই না’ এমন বক্তব্য কোনো রাজনৈতিক দল দেয়নি। সবাই একটা সুন্দর, গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য জাতির কাছে ওয়াদা করেছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘এটাই স্বাভাবিক, কারণ আপনারা তো দেশের জন্য রাজনীতি করেন, দেশের কথা ভাবেন, মঙ্গল কামনা করেন- এই বিশ্বাস আমাদের আছে, তাই আমরাও জাতির কাছে কথা দিয়েছি এবং প্রধান উপদেষ্টাও অঙ্গিকার করেছেন এই নির্বাচনকে ঘিরে একটি জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলা হবে।’
সিইসি জানান, আচরণবিধির খসড়ায় নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের অনেকগুলো সুপারিশ এখানে সন্নিবেশিত করা হয়েছে। এরপর এটি ওয়েবসাইটে দিয়ে জনগণের মতামত চেয়েছিলাম। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল লিখিতভাবে তাদের মতামত দিয়েছে, বিভিন্ন অন্যান্য সংস্থাও লিখিতভাবে মতামত দিয়েছে। সবার মতামত পর্যালোচনা করে এটা চূড়ান্ত করা হয়েছে।
তবে, আচরণবিধি প্রস্তুত করাটা বড় কাজ নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, একটা সুন্দর নির্বাচনের জন্য আচরণবিধি পরিপালনটাই হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের প্রত্যাশা যে রাজনৈতিক দলগুলো এই আচরণবিধি পরিপালনে প্রত্যাশিত ভূমিকা রাখবেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা সবাই জানি যে দেশের ভোটাররা একটু ভোট বিমুখ হয়ে গিয়েছিল গত ১০-১৫ বছরে, তারা ভোটবিমুখ, কেন্দ্রবিমুখ হয়ে ভোট দিতে আসতে চায়নি। জাতীয় নেতারা, যাদের সাথে সরাসরি তৃণমূলের সম্পর্ক রাখেন, তৃণমূলের মানুষ আপনাদের বক্তব্যের দ্বারা প্রভাবিত হয়। ভোট দেওয়ার জন্য আপনারা জনগণকে একটু উদ্বুদ্ধ করবেন। আমরা চাই সবাইকে ভোটকেন্দ্রে নিয়ে আসতে, এবং আপনারা সেটি করতে সক্ষম।’
চলমান এ সংলাপে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো সানাউল্লাহ, আব্দুর রহমানেল মাছউদ, তাহমিদা আহমেদ, মো আনোয়ারুল ইসলাম সরকার ও নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদসহ কমিশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
গতকাল বুধবার সংলাপে সকালের বৈঠকে অংশ নেওয়া রাজনৈতিক দলগুলো ছিল- বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, বাংলাদেশ মাইনরিটি জনতা পার্টি-বিএমজেপি, ইনসানিয়াত বিপ্লব, বাংলাদেশ, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), গণসংহতি আন্দোলন, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন (এনডিএম) ও বাংলাদেশ লেবার পার্টি।
এছাড়া এদিন দুপুর ২টা থেকে বিএনপি, বিজেপি, গণঅধিকার পরিষদ, নাগরিক ঐক্য, বাংলাদেশ রিপাবলিকান পার্টি (বিআরপি) ও বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ)-মার্কসবাদী রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়।