প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে শ্রম সংস্কার কমিশন আজ তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।
কমিশনের সদস্যরা দুপুর ১২টার দিকে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার কাছে এ প্রতিবেদন হস্তান্তর করেন।
প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার বাসসকে এ কথা জানান।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গত ১৭ নভেম্বর, ২০২৪ তারিখে, বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব লেবার স্টাডিজ (বিআইএলএস) এর নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদকে প্রধান করে ১০ সদস্যের একটি শ্রম সংস্কার কমিশন গঠন করে।
কমিশনের অন্য সদস্যরা হলেন- শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব ড. মাহফুজুল হক, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্সটিটিউট অব বাংলাদেশ স্টাডিজের অধ্যাপক ড. জাকির হোসেন, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র টিইউসি’র চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিটির সভাপতি তপন দত্ত, বাংলাদেশ লেবার কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি এডভোকেট একেএম নাসিম, বাংলাদেশ এমপ্লয়ার ফেডারেশনের সাবেক সভাপতি এম কামরান টি রহমান, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘের সভাপতি চৌধুরী আশিকুল আলম, বাংলাদেশ লেবার ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক শাকিল আখতার চৌধুরী, আলোকচিত্রী ও শ্রমিক আন্দোলনের সংগঠক তাসলিমা আখতার এবং একজন ছাত্র প্রতিনিধি।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেছেন, কোনো কিছু চাপিয়ে দিচ্ছেনা ঐকমত্য কমিশন। রাজনৈতিক দলগুলোর অনুভূতি এবং বক্তব্য ধারণ করে সংশোধন প্রস্তাব আনছে কমিশন।
ঢাকায় ফরেন সার্ভিস একাডেমির দোয়েল হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর ২য় পর্যায়ের ১০ম দিনের আলোচনার শুরুতে অধ্যাপক আলী রীয়াজ আজ এ সব কথা বলেন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন কমিশনের সদস্য ড. ইফতেখারুজ্জামান, ড. বদিউল আলম মজুমদার, সফর রাজ হোসেন, ড. মো. আইয়ুব মিয়া এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার।
অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল নিয়ে অধিকাংশ দলের আপত্তি থাকার কারণে ভিন্ন ভিন্ন প্রস্তাব দিয়েছে কমিশন।
তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে যাতে কোনো ভুল বুঝাবুঝি না হয়, সেদিকে কমিশন নজর রাখছে। এর ফলে অনেক কিছু বাদ দিয়ে আমরা আলোচনায় অংশগ্রহণ করছি। রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সঙ্গে ইতিবাচক আলোচনা হচ্ছে উল্লেখ করে আলী রীয়াজ আরো বলেন, এ ধারা অব্যাহত রাখতে হবে। যতটা সম্ভব বেশি সময় মিলিত হয়ে যেন দ্রুত কাজ শেষ করা যায়, সেজন্য সবার সহযোগিতা প্রয়োজন। আলোচনায় নির্বাচনী এলাকা নির্ধারণ, তত্ত্বাবধায়ক সরকার এবং রাষ্ট্রপতির ক্ষমা প্রদর্শন এই তিনটি বিষয়ে আলোচনা হওয়ার ক্ষমতা রয়েছে।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আজকের আলোচনায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), গণঅধিকার পরিষদ, গণসংহতি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টিসহ ৩০টি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিগণ অংশগ্রহণ করেন। আজ উপজেলা পর্যায়ে অধস্তন আদালতের সম্প্রসারণ, জরুরি অবস্থা ঘোষণা, নারী প্রতিনিধিত্ব এ তিনটি বিষয় নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশন থেকে সোমবার (০৭ জুলাই) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ তথ্য জানানো হয়।
"আধুনিক নিরাপদ খাদ্যব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য দরকার দক্ষ মানবসম্পদ৷ একই সাথে প্রয়োজন ভালো মানের খাদ্য পরীক্ষাগার। আমি আনন্দের সাথে ঘোষণা করছি যে, জাপান সরকার ও জাইকার সহায়তায় ঢাকায় একটি ফুড সেফটি ল্যাবরেটরি প্রতিষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।" রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলের পদ্মা হল রুমে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ কর্তৃক আয়োজিত “Modern Food Safety System in Bangladesh” শীর্ষক সেমিনারে খাদ্য উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন খাদ্য মন্ত্রণালয়ের মাননীয় উপদেষ্টা জনাব আলী ইমাম মজুমদার, সম্মানিত অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত H.E. Mr. Shinichi Saida এবং জাইকা বাংলাদেশের চীফ রিপ্রেজেনটেটিভ Mr. Tomohide Ichiguchi। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব জনাব মোঃ মাসুদুল হাসান । উক্ত সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদের খাদ্য বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ইনস্টিটিউটের পরিচালক জনাব মঞ্জুর মোর্শেদ আহমেদ।
সেমিনারে প্রধান অতিথির ব্ক্তব্যে আলী ইমাম মজুমদার বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে খাদ্য রপ্তানির ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে এবং বিশ্বব্যাপী চাহিদাও আছে, তবে আমাদের খাদ্য রপ্তানির এসু্যোগ পুরোপুরি ব্যবহার করতে পারছি না, কারণ আমরা সর্বক্ষেত্রে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে পারছি না। যদি আমরা নিরাপদ খাদ্য ও গুণমান নিশ্চিত করতে পারি, তাহলে আন্তর্জাতিক খাদ্য বাজারে আমাদের প্রবেশাধিকার বাড়বে এবং খাদ্য ও কৃষি খাতে রপ্তানি আয় অনেক গুণ বৃদ্ধি পাবে।
আলী ইমাম মজুমদার আরও উল্লেখ করেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে এবং জাপান সরকারের আন্তরিক সহযোগিতায় একটি ঋণ চুক্তির মাধ্যমে ঢাকায় একটি আধুনিক নিরাপদ খাদ্য পরীক্ষাগার ভবন নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে, যা বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের জাতীয় রেফারেন্স পরীক্ষাগার হিসাবে কাজ করবে, এর পাশাপাশি একটি কার্যালয় ভবন এবং কর্মকর্তা ও খাদ্য ব্যবসায়ীদের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য একটি বিশেষ প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্মাণ করা হবে । চট্টগ্রাম ও খুলনায় বিভাগীয় নিরাপদ খাদ্য পরীক্ষাগার ও কার্যালয় ভবন নির্মাণ করে দেশব্যাপী খাদ্য পরীক্ষণ ও বিচারিক কার্যক্রম সুদৃঢ় করার প্রয়াস নিচ্ছি।
এছাড়া তিনি জাপান ও বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে চলমান বন্ধৃত্বপূর্ণ সম্পর্ক অটুট রাখার আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত H.E. Mr. Shinichi Saida বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যে দীর্ঘদিনের সুদৃঢ় অংশীদারিত্বের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, জাপান বহু বছর ধরে বাংলাদেশের জ্বালানি, বন্দর, সড়ক ও মহাসড়ক, মেট্রো, সেতু, কৃষিসহ নানা খাতে সহযোগিতা করে আসছে।
রাষ্ট্রদূত উল্লেখ করেন, নিরাপদ খাদ্য একটি নতুন খাত হিসেবে আমাদের সহযোগিতার পরিসরকে আরও বিস্তৃত করেছে, যা অত্যন্ত আনন্দজনক। তিনি জাপানে নিরাপদ খাদ্য ব্যবস্থার অগ্রযাত্রার তুলে ধরে বলেন জাপান কিভাবে প্রচলিত তাৎক্ষণিক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা থেকে সরে এসে নির্দেশনাভিত্তিক পরিদর্শনের দিকে ধীরে ধীরে অগ্রসর হয়েছে ।
তিনি বলেন, নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতকরণ কোনো একক সংস্থার কাজ নয়, বরং এটি একটি সমন্বিত প্রয়াসের দাবি রাখে। এক্ষেত্রে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সুস্পষ্ট দায়িত্ব বিভাজন এবং সমন্বিত কাঠামো গড়ে তোলার ওপর তিনি গুরুত্বারোপ করেন, যাতে একক লাইসেন্সিং ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়।
রাষ্ট্রদূত আরও জানান, বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে জাপান সরকার একটি ঋণচুক্তি স্বাক্ষর করেছে, যার মাধ্যমে খাদ্য পরীক্ষাগারের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে। পাশাপাশি, প্রযুক্তিগত সহযোগিতা প্রকল্পের মাধ্যমেও জাপান এ খাতে সহায়তা অব্যাহত রেখেছে।
তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, বাংলাদেশ সরকার পর্যাপ্তসংখ্যক নিরাপদ খাদ্য পরিদর্শক এবং খাদ্য পরীক্ষাগারে পেশাদার জনবল নিয়োগে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে, যাতে পরীক্ষাগারসমূহের কাঙ্ক্ষিত কার্যকারিতা অর্জিত হয় এবং একটি আধুনিক ও কার্যকর নিরাপদ খাদ্য ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা সম্ভব হয়।
সভাপতির বক্তব্যে খাদ্যসচিব জনাব মোঃ মাসুদুল হাসান বলেন, স্বল্পমেয়াদী ও আংশিক সমাধান যথেষ্ট না। আমাদের যা প্রয়োজন তা হলো একটি সম্পূর্ণ আধুনিক নিরাপদ খাদ্য ব্যবস্থা । বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ (BFSA) এবং JICA'র STIRC প্রকল্প, সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের সহযোগিতায় আধুনিক নিরাপদ খাদ্য ব্যবস্থা বিনির্মাণে নিরলস কাজ করছে৷
সকল দশটায় শুরু হওয়া এ সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন বিএফএসএ চেয়ারম্যান জাকারিয়া৷ তিনি বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের প্রতি জাইকার আন্তরিক সহযোগিতার জন্য জাইকা ও জাপাপন সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে মঞ্জুর মোর্শেদ আহমেদ বলেন, খাবার অনিরাপদতার কারণে প্রায় ২০০ প্রকারের রোগ হচ্ছে। প্রতিদিন বিশ্বব্যাপি গড়ে ১৬ লাখ মানুষ অনিরাপদ খাবার খেয়ে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। নিরাপদ খাবারগ্রহণ ছাড়া জাতিসংঘ টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রার (এসডিজি) ১ (শূন্য দারিদ্র্য), ২ (শূন্য ক্ষুধা) এবং ৩ (সুস্বাস্থ্য ও সুস্থতা) নং লক্ষ্যমাত্রা অর্জন ব্যাহত হবে বলে তিনি অভিহিত করেন। এছাড়া, আধুনিক নিরাপদ খাদ্য ব্যবস্থাপনার জন্য তিনি বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির যথাযথ ব্যবহারের উপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
সেমিনারে খাদ্য নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রতিনিধি, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি, ব্যবসায়ী সংগঠনের প্রতিনিধি, দাতা সংস্থার প্রতিনিধি, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধি, বিভিন্ন খাদ্য শিল্পের প্রতিনিধি, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধিবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন।
ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, রোববার অধিকৃত পশ্চিম তীরের নাবলুস শহরের কাছে ইসরাইলি সেনাবাহিনীর গুলিতে দুই ব্যক্তি নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
রামাল্লাহ থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর জানিয়েছে।
ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, রোববার বিকেলে নাবলুসের পূর্বে সালেম গ্রামে ইসরাইলি দখলদার বাহিনীর গুলিতে নিহত হয়েছেন।
নিহতরা হলেন, ২৩ বছর বয়সী কুসাই নাসের মাহমুদ নাসার এবং ৩৭ বছর বয়সী উইসাম ঘাসান হাসান শাতাইয়াহ।
ইসরাইলি সেনাবাহিনী তাৎক্ষণিকভাবে এ বিষেয়ে কোনও মন্তব্য করেনি।
৭ অক্টোবর, ২০২৩ সালে ফিলিস্তিনি ইসলামপন্থী আন্দোলন হামাসের ইসরাইলে হামলার ফলে গাজায় যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে পশ্চিম তীরে সহিংসতা বেড়েছে।
ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান অনুসারে, যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে পশ্চিম তীরে ইসরাইলি সেনা বা বসতি স্থাপনকারীরা কমপক্ষে ৯৪৯ জন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে। যাদের মধ্যে অনেকেই যোদ্বা এবং বেশ কয়েকজন বেসামরিক নাগরিকও রয়েছে।
ইসরাইলি সরকারি পরিসংখ্যান অনুসারে, ফিলিস্তিনিদের আক্রমণ বা ইসরাইলি সামরিক অভিযানে বেসামরিক নাগরিক ও নিরাপত্তা বাহিনীসহ কমপক্ষে ৩৫ জন ইসরাইলি নিহত হয়েছেন।
১৯৬৭ সাল থেকে ইসরাইল পশ্চিম তীর দখল করে আছে।
চাকরিতে পুনর্বহালসহ তিন দফা দাবিতে রাজধানীর কাকরাইল মসজিদ মোড়ে অবস্থান নেওয়া চাকরিচ্যুত বিডিআর সদস্যদের ওপর জলকামান ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করেছে পুলিশ। সোমবার দুপুর সোয়া ১২টার দিকে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনা-সংলগ্ন ওই এলাকায় এই ঘটনার সূত্রপাত হয়।
সরেজমিনে দেখা যায়, কাকরাইল মসজিদ মোড়ে অবস্থান নিয়ে আন্দোলন করছিলেন চাকরিচ্যুত বিডিআর সদস্যরা। পুলিশ তাদের সরে যাওয়ার আহ্বান জানালেও তারা তাতে সাড়া দেননি। পরে তাদের ওপর জলকামানে পানি এবং ছয়টি সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করা হয়। এ সময় সংঘর্ষে পুলিশ সদস্যসহ আন্দোলনকারীদের কয়েকজন আহত হন। এছাড়াও আন্দোলনকারীদের কয়েকজনকে আটক করে পুলিশ।
মাগুরায় সোমবার গভীর রাতে গোপন তথ্যের ভিত্তিতে মাগুরা জেলার শ্রীপুর উপজেলার নোহাটা গ্রামে মাগুরা আর্মি ক্যাম্প কর্তৃক একটি অস্ত্র অভিযান পরিচালনা করে দুইটি রিভলভার, ৮ রাউন্ড গোলাবারুদ ও কিছু দেশীয় অস্ত্রসহ প্রাক্তন আওয়ামীলীগ কর্মী এবং নাশকতা ও হত্যা মামলার পলাতক আসামি মোঃ মিজানুর রহমান টিটোকে গ্রেফতার করে। উল্লেখ্য, মোঃ মিজানুর রহমান টিটো শ্রীপুর থানা আওয়ামীলীগ এর সাবেক ক্রীড়া সম্পাদক কনক মোল্লার আপন বড় ভাই। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে নাশকতা ও হত্যা মামলা চলমান রয়েছে।
পরবর্তীতে তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, একই দিন সোমবার রাত ৩ টায় শ্রীপুর উপজেলার তারাউজিয়াল গ্রামের মোঃ শরিফুল ইসলাম সাচ্চুর বাসায় আরেকটি অভিযান পরিচালনা করে একটি বিদেশি পিস্তল (চায়না) এবং তিন রাউন্ড গোলাবারুদসহ মোঃ শরিফুল ইসলাম সাচ্চুকে গ্রেফতার করা হয়।
উভয় আসামিকে পুলিশের নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে এবং তাদের বিরুদ্ধে মামলার কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
চলতি বছরের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল আগামী ১০ জুলাই প্রকাশ করা হতে পারে। এ সম্পর্কিত একটি প্রস্তাব শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
সোমবার (৭ জুলাই) দুপুরে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক এস এম কামাল উদ্দিন হায়দার ইউএনবিকে বলেন, ‘এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা ফল প্রকাশে ১০ জুলাই সময় চেয়ে আমরা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে একটি প্রস্তাব পাঠিয়েছি, মন্ত্রণালয় থেকে এখন পর্যন্ত জবাব আসেনি।’
আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির তথ্যমতে, এবার সাধারণ ৯টি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে ১৪ লাখ ৯০ হাজার ১৪২ জন শিক্ষার্থী। অন্যদিকে, মাদরাসা বোর্ডের অধীনে দাখিলে অংশ নিয়েছে ২ লাখ ৯৪ হাজার ৭২৬ জন। আর কারিগরি বোর্ডের অধীনে পরীক্ষার্থী ছিল ১ লাখ ৪৩ হাজার ৩১৩ জন।
জুলাই অভ্যুত্থান পরবর্তী রাষ্ট্র সংস্কারে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে সবগুলো বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো একমত হবে না বলে মন্তব্য করেছেন কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ।
তিনি বলেন, ‘যাতে করে কোনো রকম ভুলবোঝাবুঝি কিংবা বিভ্রান্তির সৃষ্টি না হয়, সে জন্য আমাদের দিক থেকে আন্তরিক চেষ্টা থাকছে। আপনাদের (রাজনীতিবিদ) বক্তব্য কিংবা আকাঙ্ক্ষার সাথে সামঞ্জস্যবিধান করা যায়, সেটা দেখা হচ্ছে।’
সোমবার (৭ জুলাই) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমির দোয়েল হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সাথে রাজনৈতিক দলগুলোর দ্বিতীয় পর্যায়ের দশম দিনের আলোচনার শুরুতে তিনি এমন মন্তব্য করেন। এই আলোচনায় বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীসহ দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা অংশ নিয়েছেন।
বৈঠক সভাপতিত্ব করছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ। কমিশনের সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন প্রধান আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরী, পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রধান সফররাজ হোসেন, নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রধান বিচারপতি এমদাদুল হক এবং দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. ইফতেখারুজ্জামান।
আলী রীয়াজ বলেন, ‘যখন দলগুলোর সঙ্গে আলাদাভাবে যোগাযোগ করা হচ্ছে, তখন কমিশনের পক্ষ থেকে আমি সুস্পষ্টভাবে বলেছি, কমিশন যে প্রস্তাবই দিচ্ছে, সববিষয়ে একমত হওয়ারও কোনো বিষয় নেই। আমি বারবার বলেছি, সববিষয়ে আমরা একমত হবো না।’
উদহারণ দিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, ‘জাতীয় সাংবিধানিক কমিশন (এনসিসি) নিয়ে যে প্রস্তাব ছিল, সেটা নিয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ দলগুলো আপত্তি জানিয়েছে। তারই পরিপ্রেক্ষিতে আমরা ভিন্ন একটি প্রস্তাব এনেছি। নতুন কোনো প্রস্তাব না, সংশোধিত প্রস্তাব। সবাই যখন কাঠামোগত পরিবর্তনে জোর দিচ্ছেন, আমরা সেই জায়গাগুলোতে আপনাদের সাথে থাকছি।’
“মূলনীতির ক্ষেত্রে বহুত্ববাদ নিয়ে সবার আপত্তি ছিল, দ্বিতীয় সংশোধিত সংস্করণে সেটা ছিল না। কিংবা ধরুন, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন থেকে বলা হয়েছিল, চারটি প্রদেশ করার বিষয়ে, সেই আলোচনাও প্রাথমিকভাবে বেশিরভাগ দল থেকে ‘এই অবস্থায় বর্তমানে করার’ বিষয়ে একমত হওয়া যায়নি। কাজেই সেটা আলোচনায় আসিনি।”
আলী রীয়াজ বলেন, ‘অনেক কিছু বাদ দিয়ে অগ্রসর হতে হচ্ছে। কারণ সব বিষয়ে একমত হওয়া যাবে না। তবুও আমাদের চেষ্টা করতে হবে, এগুলো বাদ দিয়ে যেসব জায়গায় আমরা একমত হতে পারি, সেই জায়গায় যেতে আসতে পারি, সেই চেষ্টা করতে হবে।’
‘আলোচনায় কিছু বিষয়ে অগ্রগতি হয়েছে। কিছু বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। কিছু বিষয় এখনো আলোচিত হয়নি। তবে, যেসব বিষয়ে প্রাথমিকভাবে ঐকমত্য হয়েছে, সেগুলো আজ আলোচনায় আনিনি। রাজনৈতিক দিক বিবেচনায় আপনারা যে-যার অবস্থানে থাকবেন। কিন্তু সবাই চেষ্টা করছেন, এক জায়গায় আসার, ঐকমত্যে পৌঁছানোর। আমরা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে আলোচনা করে একমত হওয়ার চেষ্টা করছি।’
তিনি বলেন, ‘সময়ের স্বল্পতা আছে আমাদের। সেটা আপনারা নিশ্চিয়ই বিবেচনা করবেন। এই সপ্তাহে প্রাথমিকভাবে ভেবেছিলাম, আজকের পরে বাকি সময়টা আপনাদের সাংগঠনিক ও অন্যান্য কাজে ব্যস্ততার জন্য কিংবা অনানুষ্ঠানিক যোগাযোগের জন্য।’
‘কিন্তু বেশিরভাগ দলের পক্ষ থেকে যে মত পাওয়া গেছে, তাতে সম্ভবত এ সপ্তাহে আরও একদিন আমরা বসব। আগামী সপ্তাহে শহীদ আবু সাঈদ ও মুগ্ধের শাহাদাতবার্ষিকীসহ বেশ কিছু কর্মসূচি রয়েছে। তারমধ্যেও একটু সময় বের করে আমাদের এই আলোচনাটা অব্যাহত রাখতে হবে,’ যোগ করেন তিনি।
রাজনীতিবিদদের উদ্দেশ্যে কমিশনের সহাসভাপতি আরও বলেন, আপনারা সাংগঠনিক কর্মসূচির পাশাপাশি, ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়টিও যদি বিবেচনায় রাখেন, তাহলে আমাদের সবার কাজের অগ্রগতির সুযোগ হবে।
তিনি বলেন, ‘আপনাদের সঙ্গে আলোচনা শেষ করে কমিশন বসছে, কীভাবে সংশোধিতভাবে জিনিসগুলোকে আপনাদের অবস্থানকে ধারণ করেই তৈরি করা যায়, সেই চেষ্টা আমাদের আছে। সেটা আমরা অব্যাহত রাখবো। যাতে করে কোনো রকম ভুলবোঝাবুঝি কিংবা বিভ্রান্তির সৃষ্টি না হয়, সে জন্য আমাদের দিক থেকে সর্বান্তকরণে আন্তরিক চেষ্টা থাকছে। আপনাদের বক্তব্য কিংকা আকাঙ্ক্ষার সাথে সামঞ্জস্যবিধান করা যায়।’
সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা বাতিলের দাবিতে ২০২৪ সালের ৮ জুলাই দ্বিতীয় দিনের মতো সারাদেশে ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি পালন করেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
এদিন কেন্দ্রীয়ভাবে রাজধানীর শাহবাগের পাশাপাশি ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলের সামনের মোড়, বাংলামটর, মিন্টো রোড, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, কাঁটাবন, নীলক্ষেত, সায়েন্সল্যাব, চানখাঁরপুল, গুলিস্তান জিরো পয়েন্টসহ ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন আন্দোলনকারীরা। এছাড়াও দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের চাকরিপ্রত্যাশী শিক্ষার্থীরা ঢাকামুখী সড়ক ও রেলপথ অবরোধ করেন।
এদিন অবরোধ কর্মসূচি শেষে দাবি আদায়ে সরকারকে তিন দিনের আল্টিমেটাম দেন আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম। আন্দোলন সফল করতে এদিন ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের’ ব্যানারে ৬৫ সদস্যের সমন্বয়ক কমিটি গঠন করা হয় । এর মধ্যে আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া ২৩ জনকে সমন্বয়ক এবং ৪২ জনকে সহ-সমন্বয়ক করা হয়।
এছাড়াও এদিন কোটা বাতিলে এক দফা কর্মসূচি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। কর্মসূচি অনুযায়ী, মঙ্গলবার (৯ জুলাই) ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনসহ অনলাইন-অফলাইনে গণসংযোগ করা হবে। পরের দিন বুধবার (১০ জুলাই) সারাদেশে সর্বাত্মক ব¬কেড কর্মসূচি পালন করা হবে।
নাহিদ ইসলাম বলেন, মঙ্গলবার (৯ জুলাই) ব্লকেড কর্মসূচি থাকবে না। ছাত্র ধর্মঘট এবং ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন কর্মসূচি পালন করা হবে। আমরা সারাদেশে সর্বাত্মক অবরোধ কর্মসূচির পরিকল্পনা করছি। এজন্য মঙ্গলবার সারাদেশে অনলআইন ও অফলাইনে গণসংযোগ করব। বুধবার সারাদেশে সর্বাত্মক ব¬কেড কর্মসূচি পালন করা হবে।
‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে ৮ জুলাই রাজধানীর পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়ক ও রেলপথ অবরোধ করেন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থীরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ রাজধানীর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের হাজার হাজার শিক্ষার্থী কর্মসূচিতে অংশ নেন।
এদিন বিকেল ৪টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ ব্যানারে মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে কিছু অংশ কারওয়ান বাজার মোড়ে গিয়ে রাস্তা অবরোধ করে। আর কিছু অংশ শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নেয়। এছাড়াও কারওয়ান বাজার থেকে ফার্মগেটমুখী মোড় অবরোধ করেন তেজগাঁও কলেজ ও সরকারি তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা।
গাবতলী হয়ে ঢাকায় প্রবেশ পথ বন্ধ করে দেন মিরপুর সরকারি বাঙলা কলেজের শিক্ষার্থীরা। এর ফলে ঢাকায় যান চলাচল স্থবির হয়ে পড়ে। পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী বিকেলে চারটার দিকে সায়েন্সল্যাব মোড় অবরোধ করেন ঢাকা কলেজ ও ইডেন মহিলা কলেজের শিক্ষার্থীরা।
‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচিতে রাজধানী ঢাকা কার্যত অচল হয়ে পড়ায় ডিজিএফআই পরবর্তী কর্মসূচি ক্যাম্পাসে সীমাবদ্ধ রাখতে সমন্বয়কদের চাপ দিতে থাকে। সোমবার ব্লকেড শুরু হওয়ার আগেই নাহিদ ইসলাম, সারজিস আলম, হাসনাত আবদুল্লাহ, আসিফ মাহমুদ সজিব ভূঁইয়া ও আবু বাকেরকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য কার্যালয় সংলগ্ন লাউঞ্জে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়। এদিন ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি ছিল বিকেলে ৩ টা থেকে। সমন্বয়করা যাতে ঠিক সময়ে কর্মসূচিতে উপস্থিত হতে না পারে, সেই জন্যই আলোচনার নামে কালক্ষেপণ করতে থাকেন ডিজিএফআই’র কর্মকর্তা।
এদিকে রাজধানীর পুরান ঢাকার বিভিন্ন সড়কে অবস্থান নেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মিছিল নিয়ে বাংলাবাজার, ভিক্টোরিয়া পার্ক ও রায়সাহেব বাজার হয়ে তাঁতীবাজার মোড় অবরোধ শেষে বংশালে এসে পৌঁছালে পুলিশ সেখানে ব্যারিকেড দেয়। পরে ব্যারিকেড ভেঙে সচিবালয়ের সামনে জিপিও মোড় অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। সন্ধ্যা ৭টার দিকে অবরোধ তুলে নিলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
বাংলা ব্লকেড কর্মসূচির অংশ হিসেবে ঢাকা-রাজশাহী রেললাইন অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এর আগে সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোডে মানববন্ধন করেন তারা। পরে মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেহেরচন্ডী সংলগ্ন ঢাকা-রাজশাহী রেলপথে অবস্থান নেন।
এদিন বিকেল ৩টার দিকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। এতে সড়কের উভয় লেনে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়।
এছাড়াও টানা তৃতীয় দিনের মতো ঢাকা-ময়মনসিংহ রেলপথে ট্রেন আটকে আন্দোলন করেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) শিক্ষার্থীরা। এদিন দুপুর দেড়টা থেকে সোয়া ৩টা পর্যন্ত কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের জব্বারের মোড়-সংলগ্ন এলাকায় জামালপুর এক্সপ্রেস ট্রেন আটকে রেললাইন অবরোধ করেন তারা।
এদিন সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়ক অবরোধ করেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) শিক্ষার্থীরা। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রাম কলেজের শিক্ষার্থীরা। ঢাকা সাতক্ষীরা মহাসড়ক অবরোধ করেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। ঢাকা-রংপুর মহাসড়ক অবরোধ করেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শেকৃবি) শিক্ষার্থীরা বেলা সাড়ে ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত আগারগাঁও মোড় অবরোধ করেন। রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ও কারমাইকেল কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কয়েক হাজার শিক্ষার্থী মহানগরীর মডার্ন মোড়ে অবরোধ করেন। এছাড়া বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) শিক্ষার্থীরা দুপুর ১২টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক এবং খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বেলা সাড়ে ৩টায় জেলার সাচিবুনিয়া বিশ্বরোড মোড় অবরোধ করেন।
মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে দেশের ৬ জেলায় সকাল ৯ টা থেকে সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি বা বজ্রবৃষ্টি হতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। এসব এলাকার নদীবন্দর সমূহকে ১ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
সোমবার (৭ জুলাই) এক সতর্কবার্তায় এ তথ্য জানিয়েছে রাষ্ট্রীয় এই সংস্থাটি। সতর্কবার্তায় বলা হয়েছে, খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজার অঞ্চলের ওপর দিয়ে দক্ষিণ-পূর্ব বা দক্ষিণ দিক থেকে ঘণ্টায় ৪৫-৬০ কিমি বেগে অস্থায়ীভাবে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি বা বজ্রবৃষ্টি হতে পারে। এসব এলাকার নদীবন্দরকে ১ নম্বর সতর্কসংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
এদিকে, পৃথক আরেক সতর্কবার্তায় মৌসুমি বায়ুর সক্রিয়তার কারণে তিন বিভাগে ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
এতে বলা হয়েছে, দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু সক্রিয়তার কারণে আজ (সোমবার) সকাল ১০টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রাম, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের কোথাও কোথাও ভারী (৪৪-৮৮ মিমি/২৪ ঘণ্টা) থেকে অতি ভারী (১৮৮ মিমি/২৪ ঘণ্টা) বর্ষণ হতে পারে।
এ ছাড়া, সোমবার সকাল ৯ টা থেকে সারাদেশের পরবর্তী ১২০ ঘণ্টার পূর্বাভাসে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ এবং তৎসংলগ্ন এলাকায় একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়েছে। মৌসুমী বায়ুর অক্ষের বর্ধিতাংশ রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, বিহার, লঘুচাপের কেন্দ্রস্থল ও বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চল হয়ে আসাম পর্যন্ত বিস্তত রয়েছে। এর একটি বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত। মৌসুমী বায়ু বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে সক্রিয় এবং অন্যত্র মোটামুটি সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে প্রবল অবস্থায় রয়েছে।
এতে আরও বলা হয়, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারী ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বষ্টি হতে পারে। সেইসঙ্গে খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারী ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে।
তাছাড়া, দেশের দক্ষিণাঞ্চলে দিনের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে এবং অন্যত্র তা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। সারাদেশে রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
এদিকে, গত ২৪ ঘণ্টায় কক্সবাজারে সর্বোচ্চ ১৪৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এ সময় শ্রীমঙ্গলে সর্বোচ্চ তাপমাত্র ৩৫ দশমিক ৮ ডিগ্রি এবং সিলেটে সর্বনিম্ন ২৩ দশমিক ৮ ডিগ্রি রেকর্ড করা হয়েছে।
চট্টগ্রামের বহুল আলোচিত নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) আজ সোমবার থেকে পরিচালনা করছে চট্টগ্রাম ড্রাইডক কর্তৃপক্ষ। রবিবার (৬ জুলাই) দিবাগত রাত ১২টায় বাংলাদেশ নৌবাহিনীর কাছে এনসিটি হস্তান্তর করেছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ।
চুক্তি শেষ হওয়ায় ১৭ বছর পর এনসিটি ছেড়েছেন সাইফ পাওয়ার টেক। আজ সোমবার থেকে টার্মিনাল পরিচালনা শুরু করেছে নৌবাহিনীর মাধ্যমে ড্রাইডক। তবে আইনি বাধ্যবাধকতা থাকায় সরাসরি নৌবাহিনীকে না দিয়ে তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন প্রতিষ্ঠান ড্রাইডকের সঙ্গে এনসিটি পরিচালনার চুক্তি করেছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।
চট্টগ্রাম ড্রাইডক লিমিটেড রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন এবং বাংলাদেশ নৌবাহিনী পরিচালিত একটি সামরিক জাহাজ মেরামতকারী প্রতিষ্ঠান। চট্টগ্রাম বন্দরের সীমানার মধ্যেই এটির অবস্থান।
চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব ওমর ফারুক জানান, সরকারের সিদ্ধান্ত পাওয়ার পর ড্রাইডকের সঙ্গে এনসিটি পরিচালনার চুক্তির বিষয়টি বন্দর কর্তৃপক্ষের বোর্ড সভায় অনুমোদন হয়েছে। সোমবার ড্রাইডকের সঙ্গে ছয় মাসের জন্য এনসিটি পরিচালনার চুক্তি করেছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। একই দিন সাইফ পাওয়ার টেকে আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব হস্তান্তর করেছে। আজ সোমবার থেকে নৌবাহিনীর মাধ্যমে এটি পরিচালনা করছে চিটাগাং ড্রাইডক।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, টেকনিক্যাল কারণে নৌবাহিনী সরাসরি টার্মিনাল পরিচালনার দায়িত্ব নিতে পারেনি। তবে ড্রাইডকের মাধ্যমে তারা এটি পরিচালনা করবে।
সাইফ পাওয়ারটেকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তরফদার রুহুল আমীন গণমাধ্যমকে জানান, নৌবাহিনীকে দায়িত্ব হস্তান্তর করেছেন তারা। এনসিটি ছাড়লেও তাদের কার্যক্রম চুক্তি অনুযায়ী বহাল আছে সিসিটিতে।
চট্টগ্রাম বন্দরে চারটি কনটেইনার টার্মিনাল আছে। এগুলো হলো– চিটাগং কনটেইনার টার্মিনাল (সিসিটি), নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি), জেনারেল কার্গো বার্থ (কনটেইনার ও বাল্ক-জিসিবি) এবং পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল (পিসিটি)। চট্টগ্রাম বন্দরে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে হ্যান্ডলিং হওয়া ৩২ লাখ টিইইউস কনটেইনারের মধ্যে ৪৪ শতাংশ এককভাবে পরিচালনা হয়েছে এনসিটি থেকেই।
প্রসঙ্গত, ২০০৭ সাল থেকে এনসিটি পরিচালনা করছিল সাইফ পাওয়ারটেক।
মুসলিম বিশ্বকে সহায়তা করতে আরও বেশি সামাজিক ব্যবসায় এগিয়ে আসতে ইসলামিক এনজিওগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
রবিবার (৬ জুলাই) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় মুসলিম বিশ্বের বিভিন্ন এনজিও নেতাদের একটি দলের সঙ্গে সাক্ষাতকালে তিনি এমন মন্তব্য করেছেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমাদের বিশ্বে আমরা নারীদের গুরুত্ব দিই, স্বাস্থ্যসেবার ওপরও জোর দিই। আপনি যদি দরিদ্র হন, তাহলে আপনার স্বাস্থ্যসেবা সমস্যা থাকবে। আমরা স্বাস্থ্যসেবাকে দরিদ্রদের সহায়তার একটি মাধ্যম হিসেবে দেখেছি।’
তিনি বলেন, এই সহায়তা কার্যকরভাবে চালিয়ে নেওয়ার একটি ভালো উপায় হচ্ছে সামাজিক ব্যবসা।
এ সময়ে বিশ্বের তরুণদের সামাজিক ব্যবসা গ্রহণ করে উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য উৎসাহিত করেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানায়, সভায় উপস্থিত এনজিও নেতারা বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ড. ইউনূস যে সামাজিক ব্যবসার প্রচার চালিয়েছেন, তা তাদের নিজ নিজ দেশে একই ধরনের উদ্যোগ নিতে উৎসাহিত করেছে।
সভায় বিদেশি প্রতিনিধিদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, তুরস্কের দ্য ইউনিয়ন অব এনজিওস অব দ্য ইসলামিক ওয়ার্ল্ডের (ইউএনআইডব্লিউ) সেক্রেটারি জেনারেল আইয়ুপ আকবাল, অ্যাসেম্বলি অব টার্কিশ আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশন্সের (এটিএএ) প্রতিনিধি মুহাম্মদ হুসেইন আক্তা, মালয়েশিয়ার ওয়াদাহ ও ইউএনআইডব্লিউয়ের ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেল ফাওয়াজ বিন হাসবুল্লাহ, পাকিস্তানের আল-খিদমত ফাউন্ডেশনের প্রেসিডেন্ট এবং ইউএনআইডব্লিউয়ের ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ আবদুস শাকুর এবং ইন্দোনেশিয়ার ইউএনআইডব্লিউ অডিটিং বোর্ডের সদস্য ড. সালামুন বশরি।
এছাড়া অন্যদের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ও বিআইআইটির প্রেসিডেন্ট প্রফেসর মাহবুব আহমেদ, এসএসডব্লিউএবির চেয়ারম্যান ও ইউএনআইডব্লিউর হাই অ্যাডভাইজরি বোর্ডের সদস্য এস এম রাশেদুজ্জামান, কৃষিবিদ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও ইউএনআইডব্লিউ কাউন্সিল মেম্বর ড. আলী আফজাল এবং বিআইআইটির মহাপরিচালক ও আইআইআইটির কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ ড. এম আবদুল আজিজ উপস্থিত ছিলেন।
সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা বাতিল করে ২০১৮ সালে জারি করা পরিপত্র পুনর্বহালসহ চার দফা দাবিতে ২০২৪ সালের ৭ জুলাই ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর ব্যানারে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি পালন করেন। শিক্ষার্থীদের এ কর্মসূচির কারণে স্থবির হয়ে পড়ে ঢাকা শহর।
এদিন রাজধানী ঢাকা ছাড়াও রাজশাহী, চট্টগ্রাম, বরিশাল, কুমিল্লা, খুলনা, রংপুর, সাভার, সিলেট, দিনাপজুর গাজীপুরসহ দেশের বিশ্ববিদ্যালয় এলাকাগুলো উত্তাল হয়ে উঠে। বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীরা সড়ক-মহাসড়ক অবরোধ করে সারা দিন অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। পরের দিন সোমবার (৮ জুলাই) এ কর্মসূচি চলবে বলেও ঘোষণা দেওয়া হয়।
৭ জুলাই আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম কর্মসূচি ঘোষণা দিয়ে বলেন, ‘আগামীকাল বেলা সাড়ে তিনটা থেকে ব্লকেড শুরু হবে। এর আগেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারের সামনে জমায়েত হবেন। কোনো আবাসিক হলে বাধা দেওয়া হলে আমাদের জানাবেন। আমরা সম্মিলিতভাবে সেই হল ঘেরাও করব।’
৮ জুলাই থেকে এক দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু হবে জানিয়ে নাহিদ ইসলাম বলেন, সব গ্রেডে অযৌক্তিক কোটা বাতিল করে ন্যূনতম কোটা রাখতে হবে। পাশাপাশি সংসদে আইন পাস করে কোটা সমন্নয় করতে হবে।
তিনি বলেন, আমরা নাতিপুতি-পৌষ্য কোটাকে অযৌক্তিক কোটা মনে করছি। দাবি মেনে নিলে আজকেই আমরা পড়ার টেবিলে ফিরে যাব।
আগামীকাল থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস বর্জনের ঘোষণা দিয়ে নাহিদ বলেন, দবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত অবরোধ কর্মসূচি চলবে এবং ফার্মগেট পর্যন্ত অবরোধ করা হবে।
এদিন সন্ধ্যায় আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম, সারজিস আলম ও হাসনাত আবদুল্লাহর সঙ্গে আলোচনা করেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। আলোচনা শেষে ফিরে এসে হাসনাত আবদুল্লাহ জানান, ‘প্রধানমন্ত্রীর একদল প্রতিনিধির সঙ্গে আলোচনা করতে তাদের ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়।’
পূর্বঘোষিত ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি অনুযায়ী রোববার (৭ জুন) রাজধানী ঢাকার আটটি স্থানে সড়ক অবরোধ করেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। কেন্দ্রীয়ভাবে শাহবাগ মোড় অবরোধ করা হয়। এছাড়া সায়েন্স ল্যাবরেটরি, নিউমার্কেট, নীলক্ষেত, চানখাঁরপুল ও আগারগাঁওয়েও সড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা।
বাংলা ব্লকেড কর্মসূচির অংশ নিতে বেলা আড়াইটার পর বিভিন্ন আবাসিক হল ও বিভাগের শিক্ষার্থীরা খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে জড়ো হতে থাকেন। বেলা সোয়া তিনটার মধ্যে গ্রন্থাগারের সামনে কয়েক হাজার শিক্ষার্থী জড়ো হন। বেলা সাড়ে তিনটার দিকে শুরু হয় মিছিল-স্লোগান। পরে বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে বিকেল চারটার দিকে শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন কয়েক হাজার শিক্ষার্থী। এ সময় শাহবাগ মোড় দিয়ে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
এদিকে বোরহান উদ্দিন কলেজের শিক্ষার্থীরা বিকেলে রাজধানীর চানখাঁরপুল মোড় অবরোধ করেন। বেলা পৌনে দুইটার দিকে সায়েন্সল্যাব মোড় অবরোধ করেন ঢাকা কলেজের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। অপরদিকে ইডেন মহিলা কলেজের শিক্ষার্থীরা রাজধানীর নীলক্ষেত মোড় অবরোধ করেন। এছাড়া আগারগাঁওয়ে সড়ক অবরোধ করেন শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
৭ জুলাই কোটাব্যবস্থা বাতিলের দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা সোয়া চার ঘণ্টা রাজধানীর শাহবাগ মোড় অবরোধ করে রাখেন। রাত আটটার দিকে অবরোধ তুলে নিলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
এদিন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বেলা ১১টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকসংলগ্ন ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে অবরোধ শুরু করেন। এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি কয়েকটি সড়ক ঘুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে গিয়ে শেষ হয়।
এদিন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও চার দফা দাবিতে বাংলা ব¬কেড কর্মসূচি পালন করেন। বিকেল চারটায় নগরীর ষোলশহর রেলস্টেশন থেকে মিছিলের মধ্য দিয়ে কর্মসূচির শুরু হয়। তবে পুলিশের বাধার মুখে মিছিলের গন্তব্য পরিবর্তন করে শিক্ষার্থীরা নগরীর মুরাদপুর হয়ে বহদ্দারহাটের উড়ালসড়ক পর্যন্ত যেতে চাইলে পুলিশ তাদের আটকে দেয়। এ সময় শিক্ষার্থীরা পুলিশের উদ্দেশ্যে ‘ভুয়া, ভুয়া’ স্লোগান দেন।
কোটাব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে পথনাটক, কবিতা, গান পরিবেশন করে ব্যতিক্রমী সাংস্কৃতিক প্রতিবাদ জানায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত সোমবার (৮ জুলাই) থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম ও বাস চলাচল বন্ধের ঘোষণা দেন আন্দোলনকারীরা।
এদিন বেলা ১১টার দিকে কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্যুঞ্জয়ী মুজিব ম্যুরালের সামনে প্ল্যাকার্ড, ব্যানার ও ফেস্টুন এবং জাতীয় পতাকা নিয়ে জড়ো হন শতাধিক শিক্ষার্থী। পরে তারা মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে প্রধান ফটক হয়ে কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ মহাসড়ক অবরোধ করেন।
এদিন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও ক্যাম্পাসে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেন। বৃষ্টির মধ্যে দুপুর ১২টা থেকে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকের সামনে ঢাকা-কুয়াকাটা মহাসড়ক অবরোধ করেন।
৭ জুলাই বিকেল চারটায় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কোটবাড়ি অংশে অবস্থান নেন। ৪৫ মিনিট ধরে অবরোধের ফলে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়।
দিনাজপুরের হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সকাল ১০ টা থেকে ক্যাম্পাসের প্রধান ফটকে জড়ো হতে থাকেন। পরে বেলা ১১টায় দিনাজপুর-রংপুর মহাসড়ক অবরোধ করেন। পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা তাদের অবরোধ প্রত্যাহারের অনুরোধ করেন। আধা ঘণ্টা পর শিক্ষার্থীরা সড়ক থেকে সরে যান। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে কয়েকটি সড়কে তারা বিক্ষোভ মিছিল করেন।
এছাড়াও বিকেল পাঁচটা থেকে সন্ধ্যা পৌনে সাতটা পর্যন্ত গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার পাথালিয়ায় অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এ সময় মহাসড়কের দুই পাশে যানবাহন আটকা পড়ে।
দেশব্যাপী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একাত্মা জানিয়ে বিক্ষোভ ও অবরোধ কর্মসূচি পালন করেন রাজধানীর শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শেকৃবি) শিক্ষার্থীরা। বিকেল ৩টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে তারা রাজধানীর আগারগাঁও মোড় অবরোধ করেন। সোয়া ৬টার দিকে অবরোধ তুলে নিলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবি) শিক্ষার্থীরা দুই ঘণ্টা সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। বিকেল ৪টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকের সামনে এ কর্মসূচির কারণে সড়কের দুই পাশে শত শত যানবাহন আটকে যায়। পরে এক দফা দাবি ঘোষণা করে অবরোধ তুলে নেন তারা।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী জানিয়েছেন, সম্প্রতি মালয়েশিয়া থেকে ফেরত পাঠানো তিনজন বাংলাদেশি জঙ্গি নয়, বরং তাদের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছিল।
রবিবার (৬ জুলাই) হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রপ্তানি কার্গো ভিলেজ পরিদর্শন শেষে তিনি সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘বাংলাদেশে কোনো জঙ্গি নেই। মালয়েশিয়া থেকে যাদের ফেরত পাঠানো হয়েছে তাদের সঙ্গেও জঙ্গিবাদের কোনো সম্পর্ক নেই।’
মালয়েশিয়ার পুলিশপ্রধানের বিবৃতি উপদেষ্টা বলেন, ‘তারা ফেরত পাঠানো বাংলাদেশিদের জঙ্গি বলেছে কিনা সে ব্যাপারে আমার জানা নেই। মালয়েশিয়া থেকে অফিশিয়ালি আমাদের কিছু জানানো হয়নি। ইতোমধ্যে আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ নিয়ে একটি বিবৃতিও দিয়েছে।’
গত ১০ মাসে দেশে জঙ্গিবাদের কোনো খবর পাওয়া যায়নি। সবার আন্তরিক প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ থেকে জঙ্গিবাদ দূর করা গেছে বলে জানান তিনি।
এর বাইরে বিমানবন্দরের রপ্তানি কার্গো ভিলেজ প্রসঙ্গে উপদেষ্টা বলেন, এনবিআরের নানা ঝামেলার কারণে এ কয়দিন রপ্তানি কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হয়েছে। বিশেষ করে যারা বিদেশে কৃষিপণ্য রপ্তানি করে তারা বিপাকে পড়েছেন।
নতুন টার্মিনালে কৃষিপণ্য রপ্তানিতে হিমাগার সুবিধা রাখা হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, শাক-সবজির মতো কৃষিপণ্যের রপ্তানি বৃদ্ধিতে এবং পণ্য লোডিংয়ের আগে হিমাগার সুবিধা বিস্তৃত করতে সরকার সচেষ্ট রয়েছে।
এ সময় এক পণ্যের ওপর নির্ভর না করে রপ্তানি বাণিজ্য বিস্তৃত করার ওপর জোর দেন উপদেষ্টা।