শুরু হচ্ছে মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দর প্রকল্পের যাত্রা। এ সমুদ্র বন্দর নির্মাণে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে জাপানি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে। এরপর শুরু হবে দুটি জেটির সমন্বয়ে একটি টার্মিনালের নির্মাণকাজ, যা ২০২৯ সালের দিকে শেষ হবে। এতে দেশের সমুদ্রবাণিজ্যের চেহারা পাল্টে যাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মোহাম্মদ ওমর ফারুক সংশ্লিষ্টদের অন্যতম একজন। তিনি বলেন, ২২ এপ্রিল মঙ্গলবার ঢাকার হোটেল লো মেরিডিয়ানের বলরুমে জাপানি সাহায্য সংস্থা জাইকার সঙ্গে মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণকাজের চুক্তি সম্পাদিত হয়েছে।
এখন জাপানি প্রতিষ্ঠানটি মাতারবাড়িতে দুটি জেটি নির্মাণের কাজ শুরু করবে। জেটি দুটির একটির দৈর্ঘ্য ৪৬০ মিটার। এটিতে শুধু কন্টেনার হ্যান্ডলিং করা হবে। অপরটি মাল্টিপারপাস জেটি, যেটির দৈর্ঘ্য ৩০০ মিটার। নির্মিত জেটিতে ১৪ মিটার ড্রাফটের বিশালাকারের কন্টেইনার কিংবা কার্গো জাহাজ ভেড়ানো সম্ভব হবে। একই সঙ্গে বড় আকৃতির তিনটি, মাঝারি আকৃতির হলে চারটি মাদার ভ্যাসেল বার্থিং দেওয়া যাবে।
ইতোমধ্যে সাড়ে ১২ মিটার ড্রাফটের জাহাজ চ্যানেলটিতে ভেড়ানো হয়েছে। জাহাজটিতে ৬৫ হাজার ২৫০ টন কয়লা ছিল। এ বন্দরে অনায়াসে এক লাখ টন পণ্যবোঝাই জাহাজ বার্থিং দেওয়া সম্ভব হবে বলেও মন্তব্য করেন সচিব ওমর ফারুক। তিনি বলেন, জোয়ার-ভাটার বাধা না থাকায় এই চ্যানেলটিতে রাতে দিনে ২৪ ঘণ্টা জাহাজ ভিড়ানোর সুবিধা রয়েছে। গভীর সমুদ্রবন্দর নিয়ে বাংলাদেশের যে সীমাবদ্ধতা ছিল মাতারবাড়ি তা পুরোপুরি কাটিয়ে দিতে যাচ্ছে। এক লাখ টন ধারণক্ষমতার কার্গো জাহাজ কিংবা ৮-১০ হাজার টিইইউএস কন্টেনার বহনকারী জাহাজ ভিড়ানো শুরু করা হলে পণ্য পরিবহন খরচ বহুলাংশে কমে যাবে।
ইতোমধ্যে একটি সমীক্ষায় উল্লেখ করা হয়েছে যে, মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দরে ২০২৯ সালের মধ্যে বছরে ১১ লাখ এবং ২০৪১ সালে ২৬ লাখ টিইইউএস কন্টেনার হ্যান্ডলিং করা যাবে। বন্দর সূত্র জানায়, মাতারবাড়িতে ১২শ মেগাওয়াটের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে জাপানের আর্থিক সহায়তায়। জাইকা এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কারিগরি এবং আর্থিক সহায়তা দিয়ে আসছে। কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিপিজিসিবিএল) এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র নিয়ন্ত্রণ করছে।
১২শ মেগাওয়াটের এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রে প্রতিদিন ১০ হাজার টন কয়লা পোড়ানো হয়। দুই মাসের প্রয়োজনীয় অন্তত ৬ লাখ টন কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রটিতে মজুদ রাখতে হয়। বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির প্রয়োজনীয় জ্বালানির জোগান দিতে বিদেশ থেকে প্রতি মাসে অন্তত তিন লাখ টন কয়লা আমদানি করতে হয়। এক একটি জাহাজে ৬০ হাজার টন কয়লা পরিবহন করলেও মাসে অন্তত ৫টি মাদার ভ্যাসেল এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্যই হ্যান্ডলিং করতে হচ্ছে।
মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি এবং কয়লা আমদানির পথঘাট তৈরি করতে ১৪.৩ কিলোমিটার দীর্ঘ ২৫০ মিটার প্রস্থের ১৬ মিটার গভীর একটি চ্যানেল তৈরি করা হয়। এই চ্যানেল তৈরির পর জাইকার একটি প্রতিনিধিদল চট্টগ্রাম বন্দরে এসে মাতারবাড়িতে গভীর সমুদ্রবন্দর করা যায় মন্তব্য করে পুরো বিষয়টি উপস্থাপন করে। তারা জানান যে, কয়লাবিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য যেই চ্যানেলটি তৈরি করা হয়েছে সেটিকে যদি পাশে ১০০ মিটার বাড়িয়ে ৩৫০ মিটার এবং গভীরতা ২ মিটার বাড়িয়ে ১৮ মিটার করা হয় তাহলে এটি গভীর সমুদ্রবন্দর হিসেবে ব্যবহৃত হবে। বন্দর কর্তৃপক্ষের তৎকালীন শীর্ষ কর্মকর্তারা গভীর সমুদ্রবন্দরের বিষয়টি নিয়ে অগ্রসর হলে নতুন করে পরিকল্পনা গ্রহণ এবং মাতারবাড়ি বন্দর উন্নয়ন নামে আলাদা একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়।
শুরুতে ১৭ হাজার ৭৭৭ কোটি ১৬ লাখ ১৩ হাজার টাকা ব্যয়ে মাতারবাড়ি বন্দর উন্নয়ন প্রকল্প নামের প্রকল্পটি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন শুরু হয়। সমুদ্রবন্দর নির্মাণের জন্য চ্যানেলের প্রশস্ততা ১০০ মিটার বর্ধিত করে ৩৫০ মিটারে উন্নীত করা হয়। গভীরতাও ১৮ মিটার (এমএসএল) করা হয়েছে। নির্মিত চ্যানেল ও হারবার নিরাপদ ও সুরক্ষিত করার জন্য সিপিজিসিবিএল কর্তৃক ১,৭৫৩ মিটার উত্তর ব্রেকওয়াটার, ৭১৩ মিটার দক্ষিণ ব্রেকওয়াটার এবং উত্তর দিকে ১৮০২.৮৫ মিটার রিভেটমেন্ট নির্মাণ করা হয়।
২০১৮ সাল থেকে এসব কার্যক্রম শুরু হয়। জাপানের আর্থিক সহায়তার পাশাপাশি বন্দর কর্তৃপক্ষ নিজস্ব তহবিল থেকে প্রকল্পের খরচ জোগান দিতে থাকে। প্রকল্পটির জন্য জাইকা ১২ হাজার ৮৯২ কোটি ৭৬ লাখ ৫ হাজার টাকা ঋণ সুবিধা প্রদান করে। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ নিজস্ব তহবিল থেকে ২ হাজার ২১৩ কোটি ২৪ লাখ ৯৪ হাজার এবং সরকারের ২ হাজার ৬৭১ কোটি ১৫ লাখ ১৪ হাজার টাকা মিলে প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন করার পরিকল্পনা করা হয়। ২০২৬ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে এই প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল।
কিন্তু প্রকল্প গ্রহণের পরে কিছু ক্ষেত্রে খরচ বাড়তে থাকে। বিশেষ করে নির্মাণ সামগ্রির মূল্যবৃদ্ধি এবং আনুষঙ্গিক খরচ বৃদ্ধি পাওয়ায় ব্যয় পুনর্নির্ধারণ করা হয়। দ্বিতীয় দফায় ব্যয় সংশোধন করে নির্ধারণ করা হয় ১৭ হাজার ৮০৭ কোটি টাকা। সময় রাখা হয় ২০২৬ সাল পর্যন্ত। কিন্তু পরবর্তীতে নানা প্রতিকুলতায় প্রকল্পের ব্যয় বাড়তে থাকে। প্রায় সাত হাজার কোটি টাকা বাড়িয়ে নির্ধারণ করা হয় ২৪ হাজার ৩৮১ কোটি টাকা। কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য যে চ্যানেল ও জেটি নির্মাণ করা হয়েছিল তা বন্দর কর্তৃপক্ষের নিকট হস্তান্তর করেছে সিপিজিসিবিএল। একই সঙ্গে ওই চ্যানেল ও জেটি নির্মাণে যে বিপুল অর্থ ব্যয় হয়েছে তার দায়ও বন্দর কর্তৃপক্ষের ওপর দেওয়া হয়।
এবার নতুন করে জাপানি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করে পুরো প্রকল্পটি সম্পন্ন করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নৌ উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ড. সাখাওয়াত হোসেন মাতারবাড়ি বন্দর পরিদর্শনের পর পুরো কার্যক্রমে গতিশীলতা আসে বলে উল্লেখ করে সূত্র জানিয়েছে যে, জাইকা প্রকল্পের জন্য অর্থায়ন করবে। প্রথম ধাপে ৬ হাজার ১৯৬ কোটি টাকা ব্যয়ে দুটি জেটি, টার্মিনাল এবং ব্যাকইয়ার্ড ফ্যাসিলিটি গড়ে তোলা হবে।
এই ব্যয়ের পুরো অর্থের যোগান দেবে জাপানি সংস্থা জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা)। জেটি এবং টার্মিনাল নির্মাণ করবে জাপানি প্রতিষ্ঠান পেন্টা ওশান এবং থোয়া করপোরেশন। প্রতিষ্ঠান দুটির সঙ্গে এই চুক্তি স¤পাদিত হয়েছে। প্রতিষ্ঠান দুটি যৌথভাবে আগামী ৪ বছরের মধ্যে ৪৬০ মিটার দীর্ঘ একটি কন্টেনার জেটি এবং ৩০০ মিটার দীর্ঘ একটি মাল্টিপারপাস জেটি নির্মাণ করবে। দুটি জেটির জন্য সমন্বিতভাবে নির্মাণ করা হবে একটি টার্মিনাল।
বন্দরের তথ্যমতে, মহেশখালীর ১ হাজার ৩০ একর জায়গায় বন্দরের অবকাঠামো এবং ব্যাকইয়ার্ড নানা ফ্যাসিলিটি গড়ে তোলা হবে। আগামী ২০২৯ সালে মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দরের বাণিজ্যিক কার্যক্রম পুরোদমে কাজ শুরু করবে। এর মাধ্যমে মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণে নতুন গতিশীলতা তৈরি হবে। পাল্টে যাবে সমুদ্রবাণিজ্যের চেহারা।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, ‘দুর্নীতি লাখো মানুষের প্রতিদিনের জীবনকে দম বন্ধ করে ফেলেছে। বহু বছর অব্যবস্থাপনার পর দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই অবশ্যই কঠিন হবে। কিন্তু বাংলাদেশের ইতিহাসই প্রমাণ করে, যখন সৎ নেতৃত্ব, শৃঙ্খলা ও জনগণের সমর্থন একসঙ্গে আসে, তখন পরিবর্তন অসম্ভব নয়। জনগণ যদি দায়িত্ব দেয়, বিএনপি আবার সেই লড়াইয়ের নেতৃত্ব দিতে প্রস্তুত।’
মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবসে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে এ কথা বলেন। তিনি তার পোস্টে দুর্নীতির বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেন। পাশাপাশি ভবিষ্যতে রাষ্ট্রক্ষমতায় গেলে দুর্নীতির বিরুদ্ধে বিএনপি কী ধরনের পদক্ষেপ নেবে, সে বিষয় নিয়েও লেখেন তিনি।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তার পোস্টে লিখেছেন, ‘দুর্নীতি কীভাবে বাংলাদেশকে পঙ্গু করে দিচ্ছে, তা বুঝতে দূরে যাওয়ার দরকার নেই। মেধার ভিত্তিতে চাকরি খুঁজতে বের হওয়া একজন গ্র্যাজুয়েটের সঙ্গে কথা বললেই বুঝবেন। মাসের পর মাস ধরে একটি সাধারণ সরকারি সেবা পেতে হিমশিম খাওয়া কৃষকের দিকে তাকান। হাসপাতালে গিয়ে এক তরুণের পরিবার কীভাবে ভোগান্তিতে পড়ে, সেটা শুনুন। অথবা ব্যবসা বাঁচিয়ে রাখতে ঘুষ দিতে বাধ্য হওয়া উদ্যোক্তাদের ভোগান্তি দেখুন।’
দুর্নীতি লাখো মানুষের প্রতিদিনের জীবনকে দম বন্ধ করে ফেলেছে বলে উল্লেখ করেন তারেক রহমান। তিনি আরও বলেন, ‘খাবারের দাম কেন বাড়ে, স্কুলে ভালো পড়াশোনা কেন মেলে না, রাস্তায় কেন নিরাপত্তা নেই-সবকিছুর পেছনে সেই একই কারণ, দুর্নীতি।’
বাংলাদেশে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই নতুন নয় বলে উল্লেখ করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এটা বহু যুগের আলোচনার বিষয়। আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস আমাদের সেই লড়াইয়ের কথা মনে করিয়ে দেয়, আর মনে করিয়ে দেয় সেই সময়টাও, যখন বাংলাদেশ সত্যিকারের অগ্রগতি করেছিল। আর সেই সময়টা এসেছে মূলত বিএনপির আমলে।’
তারেক রহমান আরও বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান প্রশাসনে শৃঙ্খলা ফেরানো, পরিচ্ছন্ন সরকারি সেবা আর অর্থনীতিকে মুক্ত করার কাজে হাত দিয়েছিলেন, যা অনিয়ম-ক্ষমতার অপব্যবহার কমিয়ে দিয়েছিল। তারপর প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সময়ে সরকারি প্রতিষ্ঠানে আধুনিকায়ন শুরু হয়। নতুন ক্রয় নীতিমালা, কঠোর আর্থিক আইন, শক্তিশালী অডিট ব্যবস্থা, আর স্বচ্ছ নজরদারি কার্যকর করা হয়।’
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আরও বলেন, ‘সবচেয়ে বড় পদক্ষেপ ছিল ২০০৪ সালে দুদক গঠন। এটি এমন এক স্বাধীন কমিশন, যেখানে সরকার চাইলে হস্তক্ষেপ করতে পারে না। বিশ্বব্যাংক, এডিবি- সবাই বলেছিল, এটি বাংলাদেশের জবাবদিহির বড় অগ্রগতি।’
তারেক রহমান বলেন, ‘টিআইবির জরিপেও দেখা গেছে, ২০০২ থেকে ২০০৫ সালের মধ্যে পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। মানুষ নিজেরাই বলেছে, দুর্নীতি কমেছে। এটা কোনো গল্প নয়, এটা তখনকার সংস্কারের প্রমাণ।’
তারেক রহমান উল্লেখ করেন, বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে বাজেট নিয়ন্ত্রণ, অডিট, ব্যাংকিং ও মানিলন্ডারিংবিরোধী আইন প্রণয়নের মাধ্যমে শক্তিশালী অর্থ ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলে। প্রতিযোগিতামূলক দরপত্র ও নিয়মের মধ্যে সরকারি স্বচ্ছ ক্রয়নীতি চালু করে, যা পরবর্তী সময়ে দেশের সবচেয়ে বড় স্বচ্ছতার আইনের ভিত্তি তৈরি করে। টেলিকম, মিডিয়া, বিমান পরিবহন খাতে উন্মুক্ত বাজার গড়ে তোলে প্রতিযোগিতা বাড়ানো হয়। ফলে দুর্নীতি কমে, সাধারণ মানুষের সুযোগ বাড়ে। এছাড়া প্রশাসনের জটিলতা কমিয়ে এবং জবাবদিহি বাড়ানোর মাধ্যমে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ করা হয়।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘এসব পদক্ষেপের মাধ্যমে দেশে এমন কিছু বড় পরিবর্তন ঘটেছে, যার জন্য তার দল গর্ব করতে পারে। দুর্নীতি কমানোর ক্ষেত্রে ধারাবাহিক রেকর্ড একমাত্র বিএনপিরই আছে।’
আগামী দিনে দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ আরও শক্তভাবে চালাতে বিএনপির কিছু পরিকল্পনা তুলে ধরেন তারেক রহমান। সেগুলো হলো—
১. প্রতিষ্ঠানের স্বাধীনতা: আদালত, দুদক, নির্বাচন কমিশন, সরকারি সেবা; কেউই যেন রাজনৈতিক চাপের মধ্যে না থাকে।
২. পুরোপুরি স্বচ্ছতা: উন্মুক্ত দরপত্র, সম্পদ বিবরণী, রিয়েল–টাইম অডিট ও শক্তিশালী তথ্য অধিকার আইন।
৩. বিচার ও আইনশৃঙ্খলা সংস্কার: পেশাদার পুলিশিং, দ্রুত মামলা নিষ্পত্তি ও ডিজিটাল তথ্যপ্রমাণ।
৪. ই-গভর্ন্যান্স: লাইসেন্স, জমি, পেমেন্ট- সব অনলাইনে এনে ঘুষের সুযোগ কমানো (বিশ্বমান অনুযায়ী ৩০ থেকে ৬০ শতাংশ দুর্নীতি কমতে পারে)।
৫. হুইসেল ব্লোয়ার সুরক্ষা: অনিয়ম ফাঁস করতে যারা সাহস দেখায়, তাদের নিরাপত্তা প্রদান।
৬. নৈতিক শিক্ষা: স্কুল-কলেজ থেকেই সততার চর্চা পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করা।
৭. শক্তিশালী আর্থিক নজরদারি: ডিজিটাল ব্যয় ট্র্যাকিং ও স্বাধীন অডিট এবং সংসদের কঠোর তদারকি।
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর সব ধরনের বেআইনি ও অনুমোদনহীন জনসমাবেশ এবং আন্দোলন থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বৈঠকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী স্পষ্ট করেছেন যে, দেশ এখন নির্বাচনমুখী হওয়ায় সব দাবি-দাওয়া আপাতত স্থগিত রেখে তা পরবর্তী নির্বাচিত সরকারের কাছে উপস্থাপন করা উচিত।
বৈঠক শেষে জানানো হয়, তফসিল ঘোষণার পরপরই নির্বাচনী পরিবেশ নিশ্চিত করতে সশস্ত্র বাহিনীসহ দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সব বাহিনী জোরালোভাবে কাজ শুরু করবে। দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সশস্ত্র বাহিনী ও অন্যান্য বাহিনী মিলিয়ে প্রায় ৯ লাখ সদস্য নিয়োজিত থাকবেন। এছাড়া সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন পরিচালনার জন্য ইতিমধ্যে রেকর্ডসংখ্যক দেড় লাখ পুলিশ সদস্যকে বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলা হয়েছে, তফসিল ঘোষণার পর জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করে এমন কোনো বেআইনি সমাবেশ বা আন্দোলন কঠোরহস্তে দমন করা হবে এবং যারা এ ধরনের কর্মকাণ্ডে জড়াবেন, তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, গত দেড় বছরে বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে দুই হাজারের বেশি আন্দোলন বা বিক্ষোভ হয়েছে এবং সরকার যৌক্তিক দাবিগুলোর ক্ষেত্রে সবসময় আলোচনার মাধ্যমে সমাধানে পৌঁছানোর চেষ্টা করেছে। তবে বর্তমান সময়ে কেউ যেন দাবি-দাওয়ার নামে উত্তেজনা সৃষ্টি বা স্বাভাবিক পরিবেশ বিঘ্নিত না করেন, সে বিষয়ে তিনি সবার সহযোগিতা কামনা করেন।
পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলমের অপসারণ ও শাস্তির দাবিতে রাজধানীর শাহবাগ মোড় অবরোধ করেছে ‘শহীদ পিন্টু স্মৃতি সংসদ’। মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) বিকেল ৩টার দিকে সংগঠনের নেতাকর্মীরা সড়ক অবরোধ করলে গুরুত্বপূর্ণ এই মোড় দিয়ে যান চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনিরুজ্জামান বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, পিন্টু হত্যার বিচারের দাবিতে আন্দোলনকারীরা রাস্তা আটকে বিক্ষোভ করছেন এবং পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চালাচ্ছে।
অবরোধ কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে বিএনপির সাবেক সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক নাসির উদ্দিন আহাম্মেদ পিন্টুর স্ত্রী নাসিমা আক্তার কল্পনা অভিযোগ করেন, তার স্বামীকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে, যা স্বাধীন তদন্ত কমিশনের প্রতিবেদনেও প্রমাণিত হয়েছে। তিনি বলেন, হাইকোর্টের নির্দেশনা অমান্য করে চিকিৎসার বদলে পিন্টুকে রাজশাহী কারাগারে পাঠানো হয়েছিল এবং রিমান্ডে নির্যাতনের কারণে তার চোখ নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। এমনকি আদালতের নির্দেশ থাকার পরও তাকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা বা থেরাপি দেওয়া হয়নি বলে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
অন্যদিকে, শহীদ পিন্টু স্মৃতি সংসদের সভাপতি রফিক আহমেদ ডলার দাবি করেন, পিলখানা হত্যাকাণ্ড ও ৫৭ সেনা কর্মকর্তা হত্যা মামলায় স্বাধীন তদন্ত কমিশনের প্রতিবেদনে সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাদের নাম আসার প্রেক্ষাপটে বর্তমান আইজিপিকে অবিলম্বে অপসারণ করতে হবে। পিন্টু হত্যার দ্রুত বিচার এবং আইজিপির দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, সরকার আইজিপির বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নেওয়া পর্যন্ত তাদের এই দাবি অব্যাহত থাকবে।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নাম পরিবর্তনের ঘোষণা দিয়েছেন। এখন থেকে এই মন্ত্রণালয়টি ‘নারী ও শিশু মন্ত্রণালয়’ নামে পরিচিত হবে। মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বেগম রোকেয়া দিবসের অনুষ্ঠানে তিনি এই গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা দেন।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানিয়েছে, অনুষ্ঠানে ড. ইউনূস মন্ত্রণালয়ের বিদ্যমান নাম ‘মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়’ পরিবর্তন করে ‘নারী ও শিশু মন্ত্রণালয়’ করার নির্দেশনা দিয়েছেন। অনুষ্ঠানে নারী ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদের সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সিনিয়র সচিব মমতাজ আহমেদ।
বক্তব্যে প্রধান উপদেষ্টা বেগম রোকেয়ার আদর্শ ও দর্শনকে ধারণ করে নতুন বাংলাদেশ গড়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, বেগম রোকেয়া কখনো সমাজকে বাদ দিয়ে কিছু করেননি, বরং সমাজকে সঙ্গে নিয়েই এগিয়েছেন। ১০০ বছর আগেই তিনি নারীদের শিক্ষার মাধ্যমে অন্ন উপার্জনের পথ দেখিয়েছেন। ড. ইউনূস আক্ষেপ করে বলেন, আমরা দিবসটি আয়োজন করছি ঠিকই, কিন্তু তাঁর শিক্ষা পুরোপুরি গ্রহণ করতে পারছি না। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে রোকেয়ার আদর্শকে সঙ্গী করলেই কেবল সামনের দিকে অগ্রসর হওয়া সম্ভব।
সাম্প্রতিক গণ-অভ্যুত্থানে নারীদের অসামান্য অবদানের কথা স্মরণ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, মেয়েরা এই অভ্যুত্থানে তাদের নেতৃত্বের প্রমাণ দিয়েছে। আজকের নারীসমাজ গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী এক নতুন শক্তি। তাদের হাত ধরেই নতুন বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হয়েছে, যা শুধু নারীদের নয়, পুরো জাতিকে উজ্জীবিত করবে। নারীদের নেতৃত্ব ও অবদানকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে এবং তাদের সামনে রেখেই নতুন বাংলাদেশ গড়ে তোলার ওপর জোর দেন তিনি।
নারীশিক্ষা, মানবাধিকার, নারী অধিকার ও জাগরণে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ চারজন বিশিষ্ট নারীর হাতে সম্মানজনক ‘বেগম রোকেয়া পদক’ তুলে দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি নির্বাচিতদের হাতে এই পদক প্রদান করেন।
এ বছর বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের জন্য চারজন নারীকে এই সম্মাননা দেওয়া হয়েছে। পদকপ্রাপ্তরা হলেন—নারীশিক্ষা ও গবেষণা ক্যাটাগরিতে রুভানা রাকিব, নারী অধিকার (শ্রম অধিকার) ক্যাটাগরিতে কল্পনা আক্তার, মানবাধিকার শ্রেণিতে নাবিলা ইদ্রিস এবং নারী জাগরণ (ক্রীড়া) ক্যাটাগরিতে ঋতুপর্ণা চাকমা।
মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে বেগম রোকেয়ার কর্ম ও আদর্শকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করা হয়। উল্লেখ্য, প্রতিবছর ৯ ডিসেম্বর বেগম রোকেয়া দিবস হিসেবে পালিত হয়। নারীর ক্ষমতায়ন, শিক্ষা, আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন এবং সমতাভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় বেগম রোকেয়ার অসামান্য অবদান ও নারী জাগরণে তিনি অন্তহীন প্রেরণার উৎস। দিবসটি উপলক্ষে মন্ত্রণালয় বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে।
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার কাঙ্ক্ষিত উন্নতি না হওয়ায় আপাতত তাঁর লন্ডন যাত্রা স্থগিত থাকছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তাঁর যকৃৎ বা লিভারের জটিলতা কিছুটা নিয়ন্ত্রণে থাকলেও কিডনি সংক্রান্ত সমস্যা নিয়ে তাঁরা বেশ উদ্বিগ্ন। ৮০ বছর বয়সী সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল না হওয়া পর্যন্ত তাঁকে বিদেশে নেওয়ার ঝুঁকি নিতে চাইছেন না বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দল।
গত ২৩ নভেম্বর থেকে রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন তিনি। শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে ২৭ নভেম্বর তাঁকে নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে (সিসিইউ) স্থানান্তর করা হয়। তিনি দীর্ঘদিন ধরে বাত, বহুমূত্র, যকৃৎ, বৃক্ক, ফুসফুস, হৃদরোগ ও চোখের সমস্যায় ভুগছেন। তাঁর চিকিৎসায় দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে গঠিত চিকিৎসক দল নিয়মিত বৈঠক করে চিকিৎসার ধরন পরিবর্তন করছেন।
চিকিৎসক দলের একজন সদস্য জানিয়েছেন, বয়োজ্যেষ্ঠ এই নেত্রীর শারীরিক উন্নতি হচ্ছে অত্যন্ত ধীরগতিতে। একটি রোগের জটিলতা কমলে আরেকটি নতুন করে দেখা দিচ্ছে। বর্তমানে কিডনি জটিলতা ভোগাচ্ছে বেশি। রক্তে ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে অনেক আগেই, যা নিয়ন্ত্রণে রাখতে নিয়মিত ডায়ালাইসিস করতে হচ্ছে। ডায়ালাইসিস বন্ধ করলেই অবস্থার অবনতি ঘটছে। নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে তাঁকে সর্বাধুনিক চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে এবং বিভিন্ন পরীক্ষার ফলাফল বা শারীরিক নির্দেশকগুলো খুব একটা খারাপ না এলেও তিনি পুরোপুরি ঝুঁকিমুক্ত নন।
চিকিৎসকদের পরামর্শে গুলশানের বাসা থেকে তাঁর জন্য প্রতিদিন খাবার পাঠানো হচ্ছে। হাসপাতেলে শাশুড়ির শয্যাপাশে দিনের অধিকাংশ সময় কাটাচ্ছেন পুত্রবধূ ডা. জোবাইদা রহমান, যিনি চিকিৎসাসংক্রান্ত বিষয়গুলো সমন্বয় করছেন। এছাড়াও ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী এবং গৃহকর্মী ও ব্যক্তিগত সহায়করা সার্বক্ষণিক তাঁর সঙ্গে রয়েছেন। ভাই শামীম এস্কান্দার ও তাঁর স্ত্রীও নিয়মিত খোঁজখবর রাখছেন।
উন্নত চিকিৎসার জন্য সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে যুক্তরাজ্যে নিয়ে যেতে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স আজ মঙ্গলবার আসছে না। বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের কাছে বিমান পরিচালনাকারী সংস্থাটি মঙ্গলবারের নির্ধারিত সময়সূচি বাতিলের আবেদন করেছে। এ নিয়ে পঞ্চমবারের মতো পেছাল তাঁর বিদেশ যাত্রা। বিএনপি নেতারা জানিয়েছেন, যাত্রার বিষয়টি সম্পূর্ণ নির্ভর করছে তাঁর শারীরিক অবস্থার ওপর এবং এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দল।
বাঙালি নারী জাগরণের অগ্রদূত মহীয়সী নারী বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ১৮৮০ সালের ৯ ডিসেম্বর রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার পায়রাবন্দ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। আবার ১৯৩২ সালের এই একই দিনে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। নারীমুক্তির এই পথিকৃৎকে শ্রদ্ধা জানাতে আজ পায়রাবন্দে তাঁর স্মৃতিবিজড়িত পৈতৃক ভিটায় বিশেষ আয়োজন করা হয়েছে।
দিবসটি উপলক্ষে এবার এক ঐতিহাসিক উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বেগম রোকেয়ার জন্মভিটা ও আঁতুড়ঘরের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রহণ করতে যাচ্ছে রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়। আজ মঙ্গলবার বাংলা একাডেমি ও বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে এ-সংক্রান্ত একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে। বাংলা একাডেমির মহাপরিচালকের উপস্থিতিতে এই দায়িত্ব হস্তান্তরের ফলে রোকেয়ার আঁতুড়ঘরের সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ এবং তাঁকে নিয়ে গবেষণার নতুন দ্বার উন্মোচিত হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শওকাত আলী। এতে দেশ-বিদেশের পর্যটক ও গবেষকরা নতুন সুযোগ পাবেন।
তৎকালীন রক্ষণশীল সমাজের হাজারো বাধা ডিঙিয়ে বেগম রোকেয়া নারীর জন্য শিক্ষার আলো জ্বালিয়েছিলেন। ভাই ইব্রাহীমের সহায়তায় গভীর রাতে মোমের আলোয় তিনি অক্ষরজ্ঞান লাভ করেন, যা তাঁর মনোজগতের দুয়ার খুলে দেয়। তাঁর লেখা ‘সুলতানার স্বপ্ন’ আজও নারী স্বাধীনতার এক অনন্য দলিল। পায়রাবন্দ বেগম রোকেয়া স্মৃতি মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ আবু আল বাকেরের মতে, রোকেয়া পায়রাবন্দের মানুষের কাছে শুধু গর্ব নন, তিনি এক ধরনের স্বপ্ন। স্থানীয় গবেষক ও শিক্ষাবিদদের দাবি, পায়রাবন্দকে নারী ক্ষমতায়নের ‘আদর্শ গ্রাম’ ঘোষণা করা হোক, কারণ এখান থেকেই নারী জাগরণের সূচনা হয়েছিল।
তবে স্থানীয়দের মনে দীর্ঘদিনের ক্ষোভ ও হতাশা রয়েছে রোকেয়ার জন্মস্থানের অবহেলা নিয়ে। রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. তুহিন ওয়াদুদ আক্ষেপ করে জানান, নারী মুক্তির দিশারি হয়ে জন্মালেও রোকেয়ার জন্মভিটা দীর্ঘকাল অবহেলার অন্ধকারে ঢাকা ছিল। এছাড়া রোকেয়ার দেহাবশেষ ভারত থেকে দেশে ফিরিয়ে আনার দাবিটিও দীর্ঘদিনের। ১৯৩২ সালে কলকাতায় মৃত্যুর পর সোদপুর পানিহাটিতে তাঁকে দাফন করা হয়। ২০০৯ সালে পায়রাবন্দে এক আলোচনা সভায় তাঁর ভাইয়ের মেয়ে রনজিনা সাবের ফুপুর দেহাবশেষ ফিরিয়ে আনার দাবি জানিয়েছিলেন। তৎকালীন জেলা প্রশাসক এ বিষয়ে উদ্যোগ নিলেও কাগজে-কলমে তার কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি হয়নি। রোকেয়া অনুরাগীদের আক্ষেপ, পায়রাবন্দে তাঁর বাবার সম্পদ ও কবর থাকলেও তিনি নিজে শুয়ে আছেন ভিনদেশে।
বেগম রোকেয়া দিবস উপলক্ষে রংপুর জেলা প্রশাসন ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দিনব্যাপী পৃথক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে সকালে রোকেয়ার আঁতুড়ঘরে শ্রদ্ধা নিবেদন, আলোচনা সভা, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এ ছাড়া আয়োজন করা হয়েছে চার দিনব্যাপী ‘রোকেয়া মেলা’। শীতের হিমেল ভোরে কুয়াশা ভেদ করে পায়রাবন্দে আজ জ্বলে উঠেছে রোকেয়ার স্মৃতির আলো, যে আলোয় উদ্ভাসিত হতে চায় আগামীর বাংলাদেশ।
নির্বাচনের মনোনয়নকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিএনপির মধ্যে চরম অন্তঃকোন্দল দেখা দিয়েছে। সে দিকে ইঙ্গিত করে দলের নেতাকর্মীদের সতর্ক করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সামনে কঠিন যুদ্ধ উল্লেখ করে বিভেদ মিটিয়ে ঐক্যবদ্ধ না হলে ভয়াবহ কিছু অপেক্ষা করছে বলে সতর্ক করেছেন তিনি।
সোমবার (৮ ডিসেম্বর) বিকেলে রাজধানীর খামারবাড়ির কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে বিএনপি আয়োজিত ‘বাংলাদেশ গড়ার পরিকল্পনা’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। তারেক রহমান লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন।
মনোনয়ন নিয়ে বিরোধের দিকে ইঙ্গিত করে তারেক রহমান বলেন, ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দ নয়, মুখ্য ধানের শীষ, দল এবং দেশের উন্নয়ন পরিকল্পনা। ঐক্যবদ্ধ না হলে সামনে ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, কম-বেশি যেটা ভালো মনে হয়েছে, সেই সিদ্ধান্তই নেওয়া হয়েছে। তোমার এলাকায় প্রার্থী ঘোষণা হয়েছে; হয়তো তুমি যাকে পছন্দ করতে, সে মনোনয়ন পায়নি—যে পেয়েছে তার সঙ্গে তোমার যোগাযোগ কম। কিন্তু আরে ভাই, তুমি তো প্রার্থীর জন্য নয়, তুমি ধানের শীষের জন্য, দলের জন্য! এখানে প্রার্থী মুখ্য নয়, মুখ্য তোমার দল, দেশের উন্নয়ন পরিকল্পনা, মুখ্য ধানের শীষ।
তারেক রহমান বলেন, সামনের যুদ্ধটা অনেক কঠিন। ঐক্যবদ্ধ না হতে পারলে সামনে ভয়াবহ কিছু অপেক্ষা করছে। আন্দোলনের সময় যেমন জনগণকে বুঝিয়েছিলে, তেমনি দেশ গড়ার পরিকল্পনা সম্পর্কেও তাদের বোঝাতে হবে, সম্পৃক্ত করতে হবে। জনগণের অংশগ্রহণ ছাড়া কোনো কিছুই বাস্তবায়ন সম্ভব নয়।
এ সময় তিনি জামায়াতে ইসলামীর দিকে ইঙ্গিত করে দলটির কিছু বক্তব্যের সমালোচনাও করেন। তিনি বলেন, এখন দেশে এক ধরনের প্রচারণা চলছে- একজন বিশেষ কেউ ভালো, আর বাকি সবাই খারাপ এটা গণতন্ত্রের জন্য ডেঞ্জেরাস ব্যাপার।
তারেক রহমান বলেন, গত ১৬ বছর একটা দল প্রচার করত শুধু তারাই ভালো আর বাকি সবাই খারাপ। ৫ তারিখের পর সেটির বোধহয় কোনো পরিবর্তন হয়নি।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, এখনো আবার এক ধরনের প্রচারণা চলছে যে, একজন ভালো আর বাকি সবাই খারাপ। এসব প্রচারণা পরিবর্তন অত্যন্ত জরুরি।
বর্তমান দেশের অর্থনৈতিক দুরবস্থা চলছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ধ্বংস। সেই অবস্থা পরিবর্তন করতে হলে জনগণের অংশগ্রহণ ছাড়া আমরা পারব না।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর সভাপতিত্বে ও যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেলের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন- চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জিয়াউদ্দিন হায়দার, ডা. মাহদী আমিন, ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমিনুল হক, যুবদল সভাপতি আবদুল মোনায়েম মুন্না, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এসএম জিলানী, কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুল, ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নিপুন রায় চৌধুরী, ছাত্রদল সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব প্রমুখ।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান বলেছেন, ‘আমরা ইতিমধ্যেই ঋণের ফাঁদে পড়েছি; এ সত্য স্বীকার না করলে সামনে এগোনো সম্ভব নয়।’
এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ‘কয়েক বছর আগেও আমাদের কর-জিডিপি অনুপাত ১০ শতাংশের বেশি ছিল, এখন তা ৭ শতাংশের ঘরে ঘোরাফেরা করছে। সমস্যাটি কোথায়, তা স্পষ্টভাবে চিহ্নিত করতে হবে। কর-জিডিপি অনুপাত কমার একটি বড় কারণ হলো, জিডিপির সব খাত থেকে রাজস্ব সংগ্রহ সম্ভব হচ্ছে না।
সোমবার (৮ ডিসেম্বর) রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত সেমিনারে এসব কথা বলেন এনবিআর চেয়ারম্যান।
বাংলাদেশ পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি) ‘বাংলাদেশ স্টেট অব দ্য ইকোনমি ২০২৫’ ও ‘টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এসডিজি) অগ্রগতি প্রতিবেদন ২০২৫’ প্রকাশ ও উপস্থাপন উপলক্ষে এ সেমিনার আয়োজন করে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন, প্রধান উপদেষ্টার অর্থবিষয়ক বিশেষ সহকারী আনিসুজ্জামান চৌধুরী। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের এসডিজিবিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ, অর্থ বিভাগের সচিব মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদার ও পরিকল্পনা বিভাগের সচিব এস এম শাকিল আখতার।
এতে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন, পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) সদস্য মঞ্জুর হোসেন। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জিইডির অতিরিক্ত সচিব মনিরা বেগম।
অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেই এনবিআর দুই ভাগ হয়ে দুজন সচিবের নেতৃত্বে কাজ শুরু করবে বলে জানান এনবিআর চেয়ারম্যান।
অনুষ্ঠানে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘প্রয়োজনীয় সংস্কার ও আর্থিক শৃঙ্খলা নিশ্চিত করে রাজস্ব আদায় বাড়াতে না পারলে বাংলাদেশ গুরুতর ঋণের ফাঁদে পড়ে যেতে পারে, এম আশঙ্কা আছে।’
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘ঋণের ফাঁদে পড়া আমাদের দেশের জন্য ভালো হবে না। তখন ঋণ নিয়ে আবার ঋণ পরিশোধ করতে হবে। ইতোমধ্যে রাজস্ব বাজেটে ব্যয়ের প্রধান খাতের মধ্যে ছিল সরকারি কর্মচারীদের বেতন ও পেনশন। এরপর দ্বিতীয় স্থানে ছিল কৃষি ও শিক্ষা। কিন্তু কৃষি ও শিক্ষার মতো খাত পেছনে ফেলে এখন জায়গা এখন নিয়েছে ঋণের সুদ পরিশোধ।’
২০২৫ অর্থবছরের শেষ ছয় মাসে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে পুনরুদ্ধারের আশাব্যঞ্জক লক্ষণ দেখা গেছে।
সোমবার (৮ ডিসেম্বর) পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) প্রকাশিত ‘বাংলাদেশ স্টেট অব দ্য ইকোনমি ২০২৫’ প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বিভিন্ন পূর্বাভাসে প্রবৃদ্ধি শ্লথ হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করা হলেও বর্তমানে প্রধান সূচকগুলো ধীরে ধীরে পুনরুদ্ধারের দিকেই ইঙ্গিত করছে।
জিইডির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ২০২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি আগের বছরের তুলনায় কম থাকবে বলে বড় উন্নয়ন সহযোগীরা ধারণা করছে।
বিশ্বব্যাংক ৩.৩ শতাংশ থেকে ৪.১ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছে, আর এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) পূর্বাভাস দিয়েছে ৩.৯ শতাংশ। তবে ২০২৬ অর্থবছরে অর্থনীতি গতি সঞ্চার করবে এবং প্রবৃদ্ধি ৫.১ শতাংশ থেকে ৫.৩ শতাংশে উন্নীত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
প্রতিবেদনটিতে বাংলাদেশের বহিঃখাতের উল্লেখযোগ্য স্থিতিশীলতার কথা বলা হয়েছে। শক্তিশালী রেমিট্যান্স প্রবাহ, আমদানি স্থিতিশীলতা এবং মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানির পুনরুদ্ধার অভ্যন্তরীণ চাহিদা বৃদ্ধির পাশাপাশি বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরার ইঙ্গিত দিচ্ছে।
রপ্তানি আয়ও শক্তিশালী রয়েছে, যা তৈরি পোশাক (আরএমজি) খাতের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বৃদ্ধি, নীতি মেনে চলা এবং বাজার বহুমুখীকরণের মাধ্যমে সম্ভব হয়েছে।
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ তিন মাসের বেশি আমদানি ব্যয় মেটাতে সক্ষম অবস্থায় স্থিতিশীল রয়েছে, যা বিচক্ষণ সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার প্রতিফলন।
প্রতিবেদনটিতে আরও বলা হয়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) দুই বিভাগে ভাগ করার সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে এনবিআর কর্মকর্তাদের কর্মবিরতির কারণে জুন মাসে রাজস্ব সংগ্রহ মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হয়। পরে কর্মসূচি প্রত্যাহারের ফলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয় এবং রাজস্ব আদায় পুনরায় শুরু হয়।
জিইডি জোর দিয়ে বলেছে, মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, বিনিয়োগকারীদের আস্থা পুনরুদ্ধার এবং আর্থিক খাত স্থিতিশীল করা ২০২৫-২৬ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি বাড়ানোর জন্য অপরিহার্য। যদিও অনেক পূর্বাভাস পুনরুদ্ধারের ইঙ্গিত দিচ্ছে, তবে প্রবৃদ্ধি কতটা কর্মসংস্থান সৃষ্টি, দারিদ্র্য হ্রাস এবং জীবনমান উন্নয়নে রূপান্তরিত হবে তা কার্যকর নীতি, শক্তিশালী আর্থিক খাতের শাসন এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন কৌশলের ওপর নির্ভর করবে।
প্রতিবেদনটিতে দুর্বল বেসরকারি বিনিয়োগ ও শিল্প কার্যক্রমকে প্রবৃদ্ধির বড় বাধা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। বিপরীতে, রেমিট্যান্স প্রবাহ, রপ্তানি কার্যকারিতা এবং উৎপাদন খাতের আউটপুট-বিশেষ করে তৈরি পোশাক শিল্প-প্রবৃদ্ধির প্রধান চালিকা শক্তি হিসেবে কাজ করছে এবং ২০২৬ অর্থবছরেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।
তবে বাংলাদেশকে সীমিত রিজার্ভ, বিনিয়োগকারীদের আস্থার সংকট, ক্রেতাদের পরিবর্তিত পছন্দ এবং বৈশ্বিক বাণিজ্য উত্তেজনা ও ভূরাজনৈতিক অনিশ্চয়তার মতো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে।
প্রতিবেদনটিতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশ এখন একটি গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে। বৃহৎ ও ক্রমবর্ধমান শ্রমবাজারের চাহিদা মোকাবিলা, উৎপাদনশীলতা বাড়ানো-বিশেষত পোশাক ও এসএমই খাতে রেমিট্যান্স বৃদ্ধি এবং মানবসম্পদ উন্নয়নে বিনিয়োগকে জাতীয় অগ্রাধিকার দিতে হবে।
উদীয়মান দুর্বলতাগুলো- বিশেষ করে মূল্যস্ফীতি, আর্থিক খাতের অস্থিরতা, দুর্বল বিনিয়োগ পরিবেশ, সুশাসন সংকট এবং বৈদেশিক ঝুঁকি সমাধান করতে ব্যর্থ হলে প্রবৃদ্ধি মন্থর হতে পারে, জীবনমান খারাপ হতে পারে, দারিদ্র্য বাড়তে পারে এবং বৈষম্য দেখা দিতে পারে।
অন্যদিকে, সময়োপযোগী ও সমন্বিত নীতি সংস্কার, শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান এবং স্পষ্ট নীতিগত বার্তা প্রদান নিশ্চিত করতে পারলে বাংলাদেশ পুনরায় গতি ফিরে পাবে এবং আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি অর্জনের সুযোগ তৈরি হবে।
জিইডি উপসংহারে বলেছে, কাঠামোগত সংস্কার ও উদ্ভাবননির্ভর অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি দ্বারা সমর্থিত একটি সুপরিকল্পিত জাতীয় টেকসই উন্নয়ন কৌশল ভবিষ্যৎ উন্নয়ন পরিকল্পনাকে পরিচালিত করবে, যা স্থিতিস্থাপকতা ও দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক শক্তি বাড়াবে।
সূত্র : বাসস
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের সব কার্যক্রম স্থগিত চেয়ে দায়ের করা রিট আবেদনটি খারিজ করে দিয়েছেন হাইকোর্ট। সোমবার বিচারপতি শিকদার মাহমুদুর রাজী ও বিচারপতি রিয়াজউদ্দিন আহমেদের হাইকোর্ট বেঞ্চ রিটটি ‘উত্থাপিত হয়নি’ বা ‘নট প্রেসড’ মর্মে খারিজের এই আদেশ দেন।
রিটকারী আইনজীবী ও বাংলাদেশ কংগ্রেসের মহাসচিব মো. ইয়ারুল ইসলাম জানান, শুনানির সময় আদালত পর্যবেক্ষণ দেন যে দেশ বর্তমানে নির্বাচনমুখী। নির্বাচনের এই সময়ে এমন রিট আবেদন উপযোগী নয়। আদালতের এমন পর্যবেক্ষণ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থ বিবেচনায় নিয়ে তিনি রিট আবেদনটি আর শুনানির জন্য উপস্থাপন করেননি। ফলে আদালত সেটি মেরিটে বা বিষয়বস্তুর গভীরে না গিয়ে ‘উত্থাপিত হয়নি’ মর্মে খারিজ করে দেন।
এর আগে গত ৩ ডিসেম্বর নির্বাচন স্থগিত চেয়ে এই রিটটি দায়ের করা হয়েছিল। রিটে মূল যুক্তি হিসেবে বলা হয়, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন স্বাধীনভাবে নির্বাচন পরিচালনা করার কথা। কিন্তু বিদ্যমান ব্যবস্থায় কমিশনের নিজস্ব জেলা ও উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা থাকার পরও জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) রিটার্নিং ও সহকারী রিটার্নিং অফিসার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। রিটকারীর মতে, ডিসি ও ইউএনওরা নির্বাহী বিভাগের কর্মকর্তা। তাদের দিয়ে নির্বাচন পরিচালনা করলে কমিশন কার্যত নির্বাহী বিভাগের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে, যা সংবিধানের ও কমিশনের স্বাধীনতার পরিপন্থী।
আবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, বিচার বিভাগের স্বাধীনতার জন্য যেমন জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশন ও স্বতন্ত্র সচিবালয় রয়েছে, তেমনি নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনতা নিশ্চিতে একটি ‘ইলেকটোরাল সার্ভিস কমিশন’ গঠন করা আবশ্যক। নির্বাহী বিভাগ থেকে প্রেষণে সচিব নিয়োগ না দিয়ে কমিশনের নিজস্ব দক্ষ ও অভিজ্ঞ জনবল তৈরির মাধ্যমে সচিব নিয়োগের দাবি জানানো হয়। এসব আইনি ও কাঠামোগত সংস্কারের বিষয়ে রুল জারির আর্জি জানানোর পাশাপাশি রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সব কার্যক্রম স্থগিত রাখার নির্দেশনা চাওয়া হয়েছিল ওই রিটে।
জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সংঘটিত হত্যা ও গণহত্যার অভিযোগে দায়ের করা মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপদেষ্টাসহ ১৬ জনকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। সোমবার (৮ ডিসেম্বর) আদালতের কার্যক্রম শেষে দুপুরে প্রিজনভ্যানে ওঠার সময় এক নাটকীয় দৃশ্যের অবতারণা হয়। সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক ভ্যানে উঠেই জাতীয় সংগীত গাইতে শুরু করেন। এ সময় তার সঙ্গে ভ্যানে থাকা অন্য আসামিদেরও সুর মেলাতে শোনা যায়।
এর আগে সকালে কেরানীগঞ্জ ও কাশিমপুরসহ বিভিন্ন কারাগার থেকে কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে হেভিওয়েট এই ১৬ আসামিকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। ট্রাইব্যুনালে মামলার অগ্রগতি তুলে ধরে প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম তদন্ত শেষ করতে আরও দুই মাসের সময় প্রার্থনা করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল আগামী বছরের ৯ ফেব্রুয়ারি প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন।
আজ আদালতে হাজির করা আসামিদের মধ্যে ছিলেন সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, সাবেক মন্ত্রী ও ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু, সাবেক মন্ত্রী আমির হোসেন আমু, কামরুল ইসলাম, আব্দুর রাজ্জাক, শাজাহান খান, গোলাম দস্তগীর গাজী এবং সাবেক বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক। অসুস্থতার কারণে সাবেক মন্ত্রী ফারুক খানকে আদালতে আনা হয়নি।
ইতোমধ্যে সালমান এফ রহমান, আনিসুল হক, হাসানুল হক ইনু ও জুনাইদ আহমেদ পলকের বিরুদ্ধে পৃথক ফরমাল চার্জ দাখিল করেছে প্রসিকিউশন। এর মধ্যে জুলাই অভ্যুত্থানে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে গণহত্যার দায়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় এবং পলকের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আমলে নিয়ে জয়ের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। এছাড়া কারফিউ জারির মাধ্যমে ছাত্র-জনতা হত্যার অভিযোগে আনিসুল হক ও সালমান এফ রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নিয়ে শুনানির দিন ধার্য করেছেন আদালত।
অন্যদিকে, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এবং যুবলীগ সভাপতিসহ সাতজনের বিরুদ্ধে তদন্ত শেষ হয়েছে বলে জানিয়েছে প্রসিকিউশন। ওবায়দুল কাদেরসহ ৪৫ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের দিন ধার্য থাকলেও চারজনের বিরুদ্ধে আগেই অভিযোগ দাখিল হওয়ায় তাদের অব্যাহতি চাওয়া হয়েছে। বাকিদের বিরুদ্ধে শিগগিরই আনুষ্ঠানিক অভিযোগ বা ফরমাল চার্জ দাখিল করা হবে।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও উৎসবমুখর করে তুলতে সরকার সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণ করছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। সোমবার সচিবালয়ে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদের সভা শেষে এক ব্রিফিংয়ে তিনি এ কথা জানান।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, নির্বাচনের প্রস্তুতি অত্যন্ত সন্তোষজনকভাবে এগিয়ে চলছে। একটি নিরপেক্ষ ও আনন্দঘন পরিবেশে ভোটগ্রহণ নিশ্চিত করতে যা যা করণীয়, তার সবই করা হচ্ছে। এর অংশ হিসেবে পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট সব বাহিনীকে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে, যা আগামী জানুয়ারির মধ্যেই সম্পন্ন হবে। নির্বাচনের স্বচ্ছতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে এবার বিশেষ প্রযুক্তির ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে। ভোটের সময় দায়িত্বপালনরত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের শরীরে ‘বডি ওর্ন ক্যামেরা’ থাকবে। পাশাপাশি ভোট চলাকালীন প্রতিটি কেন্দ্রে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করার কথাও জানান তিনি।
ব্রিফিংয়ে নির্বাচনের প্রস্তুতির পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির সাম্প্রতিক একটি ঘটনা নিয়েও কথা বলেন উপদেষ্টা। রংপুরে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তার স্ত্রীকে নির্মমভাবে হত্যার ঘটনায় তিনি তীব্র নিন্দা জানান। একই সঙ্গে এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত অপরাধীদের দ্রুততম সময়ের মধ্যে খুঁজে বের করে কঠোর শাস্তির মুখোমুখি করার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দেন তিনি।