বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবার নিজেও তার দেশে ফেরার তারিখ উল্লেখ করেছেন। বিজয় দিবস উপলক্ষে লন্ডনে এক আলোচনা সভায় তিনি বলেছেন, ‘ইনশাআল্লাহ, আমি আগামী ২৫ ডিসেম্বর দেশে ফিরে যাব। আপনাদের সঙ্গে দীর্ঘ প্রায় ১৮ বছর কাজ করেছি।’
একইসঙ্গে দেশে ফেরার সময় লন্ডনের বিমানবন্দরে কোনও ধরনের হট্টগোল সৃষ্টি না করার অনুরোধ জানান। কেউ যেন বিমানবন্দরে না যান— এমন অনুরোধ করেন তিনি।
মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে লন্ডন বিএনপি আয়োজিত লন্ডনের সিটি প্যাভিলিয়নে আলোচনা সভায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এসব কথা বলেন।
এসময় তারেক রহমান সকলের প্রতি ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘দেশে ষড়যন্ত্র থেমে নেই, সামনে কঠিন সময়। এই নির্বাচনও খুব সহজ নয়। তাই সকলে ঐক্যবদ্ধ থাকুন।’
তিনি বলেন, ‘আমি এক বছর আগে আপনাদেরকে বলেছিলাম, সামনে কিন্তু কঠিন সময়। ষড়যন্ত্র থেমে নেই এবং এই নির্বাচনও কিন্তু খুব সহজ নয়। আপনারা অনেকেই কিন্তু ব্যাপারটা এখন বুঝতে পারছেন। এক বছর আগে যা বলেছি সেটা কিন্তু হচ্ছে।’
প্রবাসীদের সাথে এই অনুষ্ঠানটি একদিকে বিজয় দিবসের অনুষ্ঠান হলেও অন্যদিকে ছিল বিদায় অনুষ্ঠানও।
তিনি বলেন, ‘আমি এক বছর আগে আপনাদেরকে বলেছিলাম সামনে আমাদের কঠিন সময়। ষড়যন্ত্র থেমে নেই এবং এই নির্বাচনও কিন্তু খুব সহজ নয়। এখন আমি আবারও বলছি, সামনের সময় কিন্তু খুব সুবিধার না। কাজেই সকলকে সজাগ থাকতে হবে, সকলকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।’
প্যাভিলিয়নে হল ভর্তি প্রবাসীদের উদ্দেশে তারেক প্রশ্ন রাখেন, ‘আপনারা কী ঐক্যবদ্ধ থাকতে পারবেন?’
প্রবাসীরা উচ্চ কন্ঠে ‘হ্যাঁ’ সূচক জবাব দিলে তিনি বলেন, ‘ঐক্যবদ্ধ থাকতে পারলেই আমরা আমাদের এই যে পরিকল্পনার (দেশ গড়ার পরিকল্পনা) কথা বললাম তা সফল করতে পারব, ঐক্যবদ্ধ থাকলেই আমরা আমাদের প্রত্যাশিত বাংলাদেশকে গড়ে তুলতে পারব, ঐক্যবদ্ধ থাকলেই আমরা বাংলাদেশের জবাবদিহিমূলক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারব।’
যুক্তরাজ্যের উদাহরণ টেনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘এই ব্রিটেনে যে আপনারা আছেন এই দেশে জবাবদিহিমূলক ব্যবস্থা আছে বলেই এই দেশের মানুষ তার ন্যায্যতা থেকে বঞ্চিত হয় না। বাংলাদেশের মানুষ বহু বহু যুগ ধরে তাদের ন্যায্যতা থেকে বঞ্চিত হয়েছে।’
‘কাজেই আসুন বাংলাদেশের মানুষের ন্যায্য অধিকার যদি ফিরিয়ে দিতে হয় যে কোনো মূল্যে আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। ঐক্যবদ্ধ না থাকার কোনই বিকল্প নেই।’ যোগ করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, ইউনাইটেড বি স্ট্যান্ড, ডিভাইডেড উই ফল’। কাজেই এই কথাটি আমাদের সকলকে মনে রাখতে হবে।’
তারেক রহমানের বক্তব্যের শুরুতে বিদায়ের কথা উচ্চারিত হয়। এ সময়ে তিনি প্রবাসীদের প্রতি তার কৃতজ্ঞতাও প্রকাশ করেন। প্যাভিলিয়ন ছিল কানায় কানায় পূর্ণ। তিল পরিমাণ ঠাঁই ছিল না। বক্তব্যের মধ্যে বিভিন্ন সময়ে নেতা-কর্মীদের শান্ত থাকার অনুরোধ জানান তিনি।
সকলের কাছে দোয়া চেয়ে তারেক রহমান ২৫ তারিখে দেশে ফিরে আসার কথা জানান।
তিনি বলেন, সকলের কাছে দোয়া চেয়ে নিচ্ছি। আপনারা দয়া করে দোয়া করবেন। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জন্য দোয়া করবেন। আপনাদের সামনে যে পরিকল্পনা তুলে ধরেছি দেশ এবং দেশের মানুষের জন্য সেই কাজগুলো আমি যেন সম্পূর্ণ করতে পারি।’
উপস্থিত নেতাকর্মীদের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, ‘আমি একটি বিনীত অনুরোধ করতে চাই। আপনাদের সাথে আমি ১৮ বছর ছিলাম। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অনেক মানুষের সাথে দেখা হয়েছে। আপনাদের সাথে বহু স্মৃতি আমার রয়ে গিয়েছে, আপনাদের সাথে বহু দুঃখ কষ্ট আমি শেয়ার করেছি।’
তিনি বলেন, ‘আপনারা বিভিন্ন সময় যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশের প্রবাসী বিশেষ করে যারা জাতীয়তাবাদী বাংলাদেশী রাজনীতিতে বিশ্বাস করেন আপনারা বিভিন্ন সময়ে আমার, আমার পরিবারের, দলের বিপদের সময় আমাকে মানসিকভাবে সাহস দিয়েছেন, সহযোগিতা করেছেন, সমর্থন যুগিয়েছেন। কিন্তু এখানে এই ঘরে উপস্থিত প্রত্যেকটি মানুষের কাছে আমার অনুরোধ দয়া করে ২৫ ডিসেম্বর আমার দেশে ফেরার দিন কেউ আপনারা এয়ারপোর্টে যাবেন না।’
তিনি বলেন, ‘কারণ এয়ারপোর্টে গেলে একটি হট্টগোল তৈরি হবে এবং মানুষ জানবে যে এরা সব বাংলাদেশি। এতে দেশের সুনাম নষ্ট হবে, দলের সুনাম নষ্ট হবে।’
তারেক রহমান বলেন, ‘যারা সেদিন এয়ারপোর্টে যাবেন না, আমার আজকের এই অনুরোধ যারা রাখবেন আমি ধরে নেবো তারা দল এবং সর্বোপরি দেশের সম্মানের প্রতি মর্যাদা রাখবেন। আর আমার মানা করা সত্ত্বেও আমার অনুরোধ করার পরেও যারা যাবেন আমি ধরে নিতে পারি তারা ব্যক্তিগত স্বার্থের জন্য সেখানে গিয়েছেন।’
বক্তব্যে শেষে দেড় মিনিটের একটি ভিডিও দেখানো হয় যেখানে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ থেকে ২৪ এর ফ্যাসিস্টদের পতন এবং গণঅভুত্থানের পরে নতুন বাংলাদেশ গড়ার কথা বলা হয়েছে।
তারেক রহমান তার বক্তব্যে বাংলাদেশকে একটি সুখী, কল্যাণকর রাষ্ট্রে পরিণত করতে তার প্রণীত দেশ গড়ার পরিকল্পনাগুলো তুলে ধরেন। এতে ফ্যামিলি কার্ড, ফার্মাস কার্ড, স্বাস্থ্য কার্ড, বেকার সমস্যা সমাধান প্রভৃতি বিষয়গুলো উপস্থাপন করেন তিনি।