শনিবার, ১৭ মে ২০২৫
৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি কর্মী নেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত: স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা

যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। ছবি: সংগৃহীত
বাসস
প্রকাশিত
বাসস
প্রকাশিত : ১৬ মে, ২০২৫ ১৮:২৫

স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেছেন, মালয়েশিয়া আগামী বছরগুলোতে ‘বিপুল সংখ্যক’ বাংলাদেশি কর্মী নেওয়ার ব্যাপারে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

তিনি তার ভেরিফাইড ফেসবুকে এক পোস্টে বলেন, ‘মালয়েশিয়া আগামী বছরগুলোতে ‘বিপুল সংখ্যক’ বাংলাদেশি কর্মী নেওয়ার ব্যাপারে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কর্মীদের বেতন, নিরাপত্তা এবং সার্বিক কল্যাণ নিশ্চিত করার আশ্বাসও দিয়েছে দেশটি।’

উপদেষ্টা তার পোস্টে আরো বলেছেন, মালয়েশিয়ার পুত্রাজায়ায় প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড.আসিফ নজরুল এবং মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মধ্যে বৈঠকে এই বিষয়ে আলোচনা হয়।

আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘বৈঠকে দুটি মূল বিষয়কে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়-মালয়েশিয়ায় কর্মরত বাংলাদেশি কর্মীদের বেতন ও অন্যান্য সুবিধা নিশ্চিত করা এবং একটি স্বচ্ছ নিয়োগ প্রক্রিয়ার অধীনে নতুন কর্মী পাঠানোর সুশৃঙ্খল রূপরেখা তৈরি করা।’


অনিয়ম-দুর্নীতি: গণপূর্তের ‘বিতর্কিত’ প্রকৌশলীদের দিকে দুদকের নজর

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
সৈয়দ ইকবাল
    * ফ্ল্যাট-প্লট-বালিশ কাণ্ডের প্রকৌশলীরা এখনো বহাল তবিয়তে * দুদকের অনুসন্ধানকারী টিম গঠন * দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হলেই ব্যবস্থা: আদিলুর রহমান খান

গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে দেশের সব মন্ত্রণালয়-অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন সরকারি অফিসে দুর্নীতি আর অনিয়মের খবর পাওয়া যাচ্ছে। ৫ আগস্টের আগে এসব দুর্নীতির খবর অনেকটা চাপা পড়ে ছিল। দু-একটি দুর্নীতির খবর শোনা গেলেও তা তদন্তের নামে আসল খবর জানা যায়নি। এখন পরিবর্তিত সময়ে হরহামেশাই বিগত সরকারের আমলের নানা দুর্নীতি-অনিয়মের খবর জানা যাচ্ছে। নানা তদন্তে বের হয়ে আসছে দুর্নীতিবাজ রাঘববোয়ালদের খবর। তেমনি একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান গণপূর্ত অধিদপ্তর।

জানা গেছে, সরকারি যতগুলো প্রতিষ্ঠান-মন্ত্রণালয় গত ১৫ বছর ধরে দুর্নীতির মহোৎসবে পরিণত হয়েছে তারমধ্যে গণপূর্তের নাম সবার সামনে থাকবে। এই মন্ত্রণালয়ে হাজার হাজার কোটি টাকা দুর্নীতির খবরের পাশাপাশি সেখানকার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিদেশে টাকা পাচারের তথ্যও জানা গেছে।

তাই গণপূর্ত অধিদপ্তরের একটি প্রভাবশালী দুর্নীতিবাজ চক্রের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) অনুসন্ধান শুরু করেছে বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে। জানা গেছে, বিগত সরকারের সময় গড়ে ওঠা এই সিন্ডিকেটের সদস্যরা বিভিন্ন প্রকল্পে অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে হাতিয়েছেন হাজার হাজার কোটি টাকা। দুদকের অনুসন্ধানে অধিদপ্তরের সাবেক ও বর্তমান প্রকৌশলীদের বিপুল সম্পদের তথ্য মিলেছে বলেও জানা যায়।

এদিকে দুদকের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, প্রাথমিক অনুসন্ধানে এক ডজনেরও বেশি প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে প্রমাণ পাওয়া গেছে। দুদকের একাধিক সূত্র থেকে জানা যায়, এবার প্রভাব কাজে না লাগলে গণপূর্তের অনেক রাঘববোয়াল আইনের ফাঁদে পড়বেন। ইতোমধ্যে সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিমের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে সংস্থাটি। গত ১৯ ফেব্রুয়ারি অবৈধভাবে প্রায় ১২ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনসহ ৭ কোটি টাকার সন্দেহজনক লেনদেনের অভিযোগে সাবেক এই মন্ত্রী ও তার স্ত্রী ফিরোজা পারভীনের বিরুদ্ধে দুটি মামলা করেছে দুদক।

অন্যদিকে দুদকের বিভিন্ন নথি পর্যালোচনা থেকে জানা গেছে, যাদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান চলছে তারা সবাই বিগত সরকারের সময় গড়ে ওঠা আলোচিত টেন্ডার সিন্ডিকেটের সদস্য। তারা হলেন- জিকে শামীম, গোল্ডেন মনির ও সাজিন এন্টারপ্রাইজের শাহাদাত হোসেনসহ আরও অনেকে। এরা সবাই দুর্নীতিবাজ ঠিকাদারদের সঙ্গে যোগসাজশে বিপুল অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। প্রধান অভিযুক্তদের মধ্যে রয়েছেন: সাবেক সচিব শহীদ উল্লা খন্দকার, সাবেক প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম ও শাহাদাত হোসেন, অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মোসলেহ উদ্দিন ও ড. মঈনুল ইসলাম, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী এ কে এম সোহরাওয়ার্দী ও ফজলুল হক মধু, সাবেক অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী প্রদীপ কুমার বসু, নির্বাহী প্রকৌশলী শওকত উল্লাহ ও ইলিয়াস আহমেদ এবং সহকারী প্রধান মুমিতুর রহমান।

অন্যদিকে রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি বালিশকাণ্ডের প্রাক্কলন তৈরিতে অস্বাভাবিক দর নির্ধারণ করেন। তার ছেলের মাধ্যমে বিদেশে টাকা পাচার করেন। শাহাদাত হোসেনও একইভাবে বিভিন্ন প্রকল্পে দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল সম্পদ গড়েছেন।

মোসলেহ উদ্দিনকে পরিচিত ‘মিস্টার ১৫ পার্সেন্ট’ নামে। বর্তমানে জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষে কর্মরত এই কর্মকর্তা অস্ট্রেলিয়া ও দুবাইয়ে অর্থপাচার করেছেন বলে দুদকের কাছে তথ্য রয়েছে। বিভিন্ন ঠিকাদারের সঙ্গে তার গোপন চুক্তির প্রমাণ পাওয়া গেছে।

অন্যদিকে, ড. মঈনুল ইসলাম সরকারি চাকরিতে অনুপস্থিত থেকে বিদেশে থেকে ফিরে পুনরায় চাকরিতে বহাল হন রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে। তার বিরুদ্ধে বিদেশে অর্থপাচার ও নামে-বেনামে শত শত একর জমির মালিক হওয়ার অভিযোগ আছে।

তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী এ কে এম সোহরাওয়ার্দী ১৬ বছর ঢাকায় থেকে প্লট ও ফ্ল্যাটের মালিক হয়েছেন। প্রদীপ কুমার বসু দুর্নীতির দায়ে বরখাস্ত হয়েছেন। রোকনউদ্দিন অস্ট্রেলিয়ায় পলাতক অবস্থায় স্ত্রীর নামে ব্যবসা পরিচালনা করছেন বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।

এ ছাড়া অন্য অভিযুক্তদের মধ্যে ফজলুল হক মধু, ইলিয়াস আহমেদ ও মুমিতুর রহমান আছেন, যারা সরকারি প্রকল্পে কাজ না করেই বিল পরিশোধ, টেন্ডার সিন্ডিকেট ও রাজনৈতিক সুবিধাভোগের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন।

দুদকের কমিশনার (তদন্ত) মিঞা মুহাম্মদ আলি আকবার আজিজী গণমাধ্যমকে জানান, সরকারি অফিসগুলোকে দুর্নীতিমুক্ত করাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ। প্রাথমিক যাচাই শেষে অনুসন্ধান টিম গঠন করা হয়েছে। তাদের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

জানা গেছে, দুদকের এ অনুসন্ধানকারী টিমে রয়েছেন পরিচালক আব্দুল মাজেদ, উপপরিচালক গুলশান আনোয়ার, সহকারী পরিচালক মাহমুদুল হাসান ভূঁইয়া ও উপসহকারী পরিচালক এলমান আহাম্মদ অনি। অনুসন্ধান টিমের সদস্যদের রদবদল হলেও সংস্থাটি দ্রুত প্রতিবেদন চূড়ান্ত করার চেষ্টা করছে।

জিকে শামীমের সহযোগীরা এখনো গণপূর্তের সিন্ডিকেট

অভিযোগ রয়েছে, গণপূর্ত অধিদপ্তরে যেই জিকে শামীম সিন্ডিকেট নিয়ে সবচেয়ে বেশি সমালোচনা হয়েছে, সেই সিন্ডিকেট আবারও সক্রিয় হয়ে উঠেছে। ৫ আগস্টের পর সেই চক্রকে ঢাকার বাইরে পাঠানো হলেও নানা তদবির-বাণিজ্যে তারা আবার ঢাকায় চলে আসছেন বলে জানা গেছে।

রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ বিশেষ বিশেষ স্থাপনাসমূহের রক্ষণাবেক্ষণ ও প্রকল্পের দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম। এর আগে ছিলেন গুরুত্বপূর্ণ স্থান ই/এম বিভাগ- ২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে। নানান দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণে আওয়ামী লীগের আমলে বদলি করা হয় রাজশাহী ডিভিশন। সেখানে নিয়মিত অফিস না করেই বেতন নিতেন জাহাঙ্গীর। আবার ঢাকায় ফিরতে নানান স্থান দিয়ে তদবির করার খবর পাওয়া গেছে। মাত্র ৮ মাসের মাথায় ফিরে এসেছেন তার কমিশন খ্যাত ঢাকায়।

সূত্র জানিয়েছে, গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমলে টেন্ডারবাণিজ্যে কোটি কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন গণপূর্ত অধিদপ্তরের ই/এম নির্বাহী প্রকৗশলী মো. জাহাঙ্গীর আলম। তার বিরুদ্ধে বিভিন্নভাবে অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জনের খবর পাওয়া যাচ্ছে।

জানা গেছে, গণপূর্তের নির্বাহী প্রকৗশলী মো. জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে ঘুষ-দুর্নীতি, অবৈধ সম্পদ অর্জনের বিষয়ে ব্যাপকভাবে আলোচনা সমালোচনার ঝড় ওঠে। মাত্র ৯ বছর গণপূর্তে চাকরি করে তিনি এখন শত কোটি টাকার মালিক বনে যান। এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে নারী কেলেঙ্কারিসহ অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়ার অভিযোগ রয়েছে।

আলোচিত আরেক প্রকৌশলী মো. ফজলুল হক (মধু)। গণপূর্ত অধিদপ্তরের অধীনে বাস্তবায়নাধীন আগারগাঁও ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স হাসপাতাল নির্মাণ প্রকল্পের কাজে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে সাড়ে ১০ কোটি টাকা অতিরিক্ত বিল প্রদান করা হয়েছে জেলহাজতে থাকা এসএম গোলাম কিবরিয়া ওরফে জিকে শামীমের প্রতিষ্ঠানকে। এ ব্যাপারে চিঠিও দেওয়া হয়েছে তাকে। কিন্তু তারপরও গণপূর্তের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অবৈধভাবে অতিরিক্ত বিল প্রদানের জন্য দায়ী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থাই নেননি। তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা বা তদন্ত কমিটিও গঠন করেননি। এমনকি শোকজ পর্যন্ত করেননি। বরং অযৌক্তিক কমিটি গঠন ও চিঠি চালাচালির মাধ্যমে সময় ক্ষেপণ এবং গুরুতর অপরাধকে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। শামীম গ্রেপ্তার হওয়ার পর ওই কর্মকর্তা আলোচনায় আসেন। ফেঁসেও যান তিনি, বেরিয়ে আসে জিকে শামীমের সঙ্গে তার সখ্যতার নানা তথ্য। এ কারণে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তার বিষয়ে তদন্তও করে।

ফজলুল হক (মধু) তৎকালীন সময়ে গণপূর্তের শেরে বাংলা নগর-১-এর নির্বাহী প্রকৌশলীর দায়িত্বে থাকলেও বর্তমানে পদোন্নতি পেয়ে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (উন্নয়ন) তিনি। সম্প্রতি তাকে পদোন্নতির সঙ্গে সঙ্গে এই গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়নও করা হয়েছে।

এসব অভিযোগ নিয়ে কথা হলে ফজলুল হক (মধু) বলেন, ‘তখন আমি কি কারণে ১০ কোটি টাকা অতিরিক্ত বিল দিয়েছিলাম সেটা নিয়ে অনেক কথা আছে। তবে তা নিয়ে এক প্রকার মীমাংসা হয়ে গেছে। এটা নিয়ে কথা না বলাই ভালো।’

এদিকে জানা গেছে, কাজ সম্পন্ন করার আগেই আলোচিত ঠিকাদার জি কে শামীমকে অবৈধভাবে অগ্রিম ১০ কোটি টাকা বিল পরিশোধ করার ঘটনায় গণপূর্ত অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী, শেরে বাংলা নগর-১ এর সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী (বর্তমানে রাজশাহীতে চলতি দায়িত্বে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হিসেবে কর্মরত) মোহাম্মদ ফজলুল হককে বেতন গ্রেড কমানোর শাস্তি দিয়ে বিভাগীয় মামলা থেকে অব্যাহতি দিয়েছে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়।

মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন অভিযুক্ত প্রকৌশলীকে বর্তমান বেতন গ্রেডের প্রারম্ভিক ধাপে নামিয়ে দেওয়ার বিষয়ে গত ২৫ জানুয়ারি এক অফিস আদেশ জারি করেন।

তবে জানা গেছে, ফজলুল হক (মধু) রাজশাহীতে গিয়ে থেমে নেই। সেখানে গড়ে তুলেছেন সিন্ডিকেট। ঢাকায় রেখে যাওয়া ঠিকাদারদেরও শেল্টার দিচ্ছেন তিনি। সেই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ভাগিয়ে নিচ্ছেন কোটি কোটি টাকার কাজ।

গণপূর্ত অধিদপ্তর শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের (বি ২০০৫) তথাকথিত সভাপতি রেজাউল করিম রেজা একটি আতঙ্কের নাম।

আওয়ামী লীগের একনিষ্ঠ কর্মী এবং আওয়ামী লীগ ক্ষমতাকালে সিন্ডিকেটের প্রধান হিসেবে কাজ করেছে সে। বর্তমানেও তার দাপট এবং ক্ষমতা আকাশচুম্বী বলে জানা গেছে। একাধিক সূত্রের তথ্যমতে, অধিদপ্তরের সকল কাজকর্ম নিয়ন্ত্রণ করার জন্য তৈরি হয়েছে রেজা সিন্ডিকেট। এ সিন্ডিকেট নানাবিধ কাজ করে, এর মধ্যে রয়েছে চেক জালিয়াতি, প্রতারণার মাধ্যমে চাকরি নেওয়া ও দেওয়া, ঘুষের মাধ্যমে পদোন্নতি, গণপূর্তের বাসা বরাদ্দ দেওয়ার নামে ঘুষ গ্রহণ, বরাদ্দকৃত বাসা বহিরাগতদের ভাড়া দিয়ে বানিজ্য, আর বদলি বাণিজ্যতো আছেই। তিনি সরকারি চাকরি করা সত্ত্বেও ঠিকাদারি লাইসেন্স করে ঠিকাদারি বাণিজ্য নির্বিঘ্নে চালিয়ে যাচ্ছেন বলেও জানা যায়।

দুদক রেজার বিরুদ্ধে অভিযোগ দাখিল হলে কমিশন গত বছরের ১১ জুলাই (১৬৮৪ স্মারক) একটি চিঠি প্রেরণ করে গণপূর্ত অধিদপ্তর বরাবর। চিঠিতে উল্লেখ করা হয় মোহাম্মদ রেজাউল করিম বাংলাদেশ গণপূর্ত অধিদপ্তর শ্রমিক কর্চারী ইউনিয়ন, ঢাকা, এর বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের বিষয়ে সঠিক তদন্ত করে পত্র এবং প্রমাণাদি চায় সংস্থাটি।

এদিকে পতিত সরকারের আমালে দলীয়করণ, স্বজনপ্রীতি, বিতর্কিত কর্মকাণ্ড, অনিয়ম-দুর্নীতির সামনের সারিতে ছিলেন গণপূর্ত অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান হাবীব। হাসিনা সরকারের আমলের যে কজন প্রভাবশালী পূর্ত প্রকৌশলী জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতা হত্যা মামলার আসামি করা হয়েছে আহসান হাবিব তাদের অন্যতম বলে জানা যায়। বঙ্গবন্ধু পরিষদের প্রভাবশালী সদস্য পরিচয় দেওয়া আহসান হাবিব হাসিনা সরকারের সময় ঢাকা পোস্টিংয়ের চেষ্টা করেও বারবার ব্যর্থ হয়ে সাভার ও নারায়ণগঞ্জে ঘুরতে থাকেন। তবে ভাগ্য পাল্টে যায় হাসিনার পতনের পর। নানা তদবির দেন- দরবার করে ঢাকা আসেন। আহসান হাবীব গণপূর্ত বিভাগ নারায়ণগঞ্জে যোগদান করেন ২০২৩ সালের ৩০ অক্টোবর আর ২০২৪ সালের ৯ অক্টোবর তাকে ঢাকা গণপূর্ত বিভাগ -১ বদলি করা হয়। যদিও এর আগেও তিনি ঢাকায় মেডিকেল বিভাগে ছিলেন তখন নানা দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ উঠলে তাকে সাভার বদলি করা হয়।

হত্যা মামালার আসামি, দুর্নীতির সুনির্দিষ্ট অভিযোগ তবুও ঢাকায় পোস্টিং এসব নিয় বেশ গুঞ্জন চলছে খোদ দপ্তরেই। একাধিক সূত্র নিশ্চিত করছে, আহসান হাবীব আওয়ামী লীগ সরকারের সময় ঢাকায় নির্বাহী প্রকৌশলীদের যে সিন্ডিকেট গড়ে উঠে তার অন্যতম সদস্য। দুর্নীতি আর অনিয়মের মাধ্যমে গড়েছেন সম্পদের পাহাড়। ঢাকার একাধিক এলাকায় রয়েছে প্লট-ফ্ল্যাটও। এসব অভিযোগের বিষয়ে কথা বলার জন্য আহসান হাবিবকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি তা রিসিভ করেননি।

দুদকের তথ্যমতে, ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে জি কে শামীমের ‘সহযোগী’ গণপূর্তের ১১ প্রকৌশলীকে জিজ্ঞাসাবাদ করার সিদ্ধান্ত নেয় সংস্থাটি। তাদের বিরুদ্ধে যুবলীগের কথিত নেতা ও ঠিকাদার গোলাম কিবরিয়া শামীমকে (জি কে শামীম) সহযোগিতার অভিযোগও খতিয়ে দেখবে সংস্থাটি। দুদকের ঊর্ধ্বতন সূত্র এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।

সেই তালিকায় ছিলেন- অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. রোকন উদ্দিন ও আবদুল মোমেন চৌধুরী, নির্বাহী প্রকৌশলী স্বপন চাকমা, মোহাম্মদ শওকত উল্লাহ, মো. ফজলুল হক, আবদুল কাদের চৌধুরী, আফসার উদ্দিন, মো. ইলিয়াস আহমেদ ও ফজলুল হক মধু এবং গণপূর্ত সার্কেল-৪-এর উপ-সহকারী প্রকৌশলী আলী আকবর সরকার।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গণপূর্তের একাধিক প্রকৌশলী জানিয়েছেন, বিগত সরকারের আমলে তারা অনেক দুর্নীতি-অনিয়ম করেছেন। নামে-বেনামে বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন। এদের ক্ষমতার উৎস কি? তা ভবনের সবারই অজানা নয়। আমরা চাই দুর্নীতি করে যত সম্পদ অর্জন করেছেন তা বাজেয়াপ্ত করা হোক। তাদের আইনের আওতায় দ্রুত বিচার হোক।

এ বিষয়ে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান এক অনুষ্ঠানে গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, ‘যারা অতীতে দুর্নীতি করেছেন তাদের তালিকা হচ্ছে। ইতোমধ্যে এ নিয়ে কাজও শুরু হয়েছে। যাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির সুনির্দিষ্ট অভিযোগ প্রমাণিত হবে তাদের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’

গণপূর্তে দুদকের অনুসন্ধানের বিষয়ে এক ব্রিফিংয়ে সংস্থাটির মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. আক্তার হোসেন বলেন, ‘ইতোমধ্যে সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগের ভিত্তিতে দুদকের এনফোর্সমেন্ট টিম নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছে। সেখান থেকে প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত দুদকের টিম খতিয়ে দেখছে। তথ্য-উপাত্ত পর্যালোচনা করে দুদক সেই প্রতিষ্ঠান বা অধিদপ্তরগুলোতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে পরবর্তী পদক্ষেপ নিচ্ছে। তাই সুনির্দিষ্ট কোনো দুর্নীতির খবর আমরা সাংবাদিকদের মাধ্যমেও জানতে চাই। এতে আমরা কাজ করতে আরও সুবিধা হবে। সরকারি-বেসরকারি যেকোনো খাত কিংবা ব্যক্তির বিরুদ্ধে দুর্নীতির খবরকে দুদক খুব গুরুত্বসহকারে নিচ্ছে।’

এদিকে একটি মামলায় দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় গত ২৭ মার্চ জি কে শামীমকে সাড়ে ৫ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। ওই মামলায় তার মাকে খালাস দেওয়া হয়। অবৈধ ও জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুদকের করা মামলায় ক্যাসিনোকাণ্ডে আলোচিত এ ঠিকাদারকে পাঁচ বছর ৬ মাস সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। দণ্ডের পাশাপাশি তাকে এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড অনাদায়ে আরও তিন মাস বিনাশ্রম কারাভোগ করতে হবে বলে বিচারক রায়ে উল্লেখ করেন। এ ছাড়া জি কে শামীমের ২৯৭ কোটি ৮ লাখ ৯৯ হাজার টাকার অবৈধ সম্পদ রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

একই সঙ্গে জি কে শামীমের বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিংয়ের অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত না হওয়ায় তাকে খালাস দেওয়া হয়েছে। তার মা আয়েশা আক্তারের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জন ও মানিলন্ডারিংয়ের অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাকে খালাস দিয়েছেন আদালত।

২০১৯ সালের ২১ অক্টোবর জি কে শামীম ও তার মা আয়েশা আক্তারের বিরুদ্ধে ২৯৭ কোটি ৮ লাখ ৯৯ হাজার টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১-এ সংস্থাটির উপ-পরিচালক মো. সালাহউদ্দিন বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন।

এদিকে এক সূত্র জানায়, সাবেক সচিব শহীদ উল্লা খন্দকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্পে দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এবং বালিশকাণ্ডে জড়িত ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে অতিরিক্ত মূল্যে কাজ পাইয়ে দেন। তিনি পরে তদন্ত প্রতিবেদন গায়েব করে রাঘববোয়ালদের বাঁচান। রাজউক ও জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ থেকে পরিবারের সদস্যদের নামে প্লট বরাদ্দ নিয়ে বিক্রি করে বিপুল অর্থ আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।


মর্যাদা, ন্যায্যতা ও সমতার ডাক

* ‘নারীর ডাকে মৈত্রী যাত্রা’ * অধিকার আদায়ের প্রত্যয়
ছবি: সৈয়দ মাহামুদুর রহমান
আপডেটেড ১৬ মে, ২০২৫ ২২:২০
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

সমতার দাবিতে রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে আজ শুক্রবার ‘নারীর ডাকে মৈত্রী যাত্রা’ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে এই কর্মসূচি শুরু হয়।

‘সমতার দাবিতে আমরা’ স্লোগানে এই কর্মসূচিতে প্রগতিশীল নারী, শ্রমিক, শিক্ষার্থী, শিক্ষক, সাংস্কৃতিককর্মী, পেশাজীবীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার কয়েক হাজার মানুষ অংশ নেন।

সেখানে উপস্থিত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক রেহনুমা আহমেদ বলেন, ‘আমরা নারীর ডাকে সাড়া দিয়ে আজ এখানে এসেছি- সবাইকে এটা জানাতে যে, আমরা আমাদের অধিকার বিষয়ে সচেতন এবং সেই অধিকার আদায়ে আমরা একতাবদ্ধ। এখানে আমরা কারও বিষোদগার করছি না, কোনো চিৎকার বা গালাগাল নেই। নারীদের একতা প্রদর্শনের জন্য আজ আমরা এখানে এসেছি।’

এনজিওকর্মী নাজিফা রায়দাহ জানান, সারা দেশে নারীর প্রতি সব ধরনের সহিংসতার প্রতিবাদে এখানে এসেছেন তিনি।

তিনি বলেন, ‘ফ্যাসিবাদী শাসনের পতনের পর আমরা ভেবেছিলাম আমাদের অধিকারের জন্য রাস্তায় নামতে হবে না। কিন্তু আমরা ক্রমাগত দেখছি নারীরা জনসমক্ষে হয়রানি ও মারধরের শিকার হচ্ছেন, তাদের ওপর মব হামলার হুমকি আসছে। মব হামলাকারীরা নারীকে ঘরে বন্দি করে রাখতে চায়। আমরা আমাদের মর্যাদা ও ন্যায্যতার জন্য এবং নারীর প্রতি সব ধরনের সহিংসতার প্রতিবাদে এখানে এসেছি।’

হিল উইমেন্স ফেডারেশন, আদিবাসী ইউনিয়ন, গার্মেন্টস শ্রমিক মুক্তি আন্দোলন, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, নারী মুক্তি কেন্দ্র, উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, বিজ্ঞান আন্দোলন মঞ্চ, সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম, বাংলাদেশ নারী জোট, নারী সংহতি, ছাত্রফ্রন্ট (মার্কসবাদী), তীরন্দাজ ও শ্রমিক অধিকার আন্দোলন প্রভৃতি সংগঠন এই কর্মসূচিতে সংহতি জানিয়ে অংশ নেয়।

এই আয়োজন উপলক্ষে ৩১টি স্লোগানের একটি তালিকা করেছেন বলে জানিয়েছেন আয়োজকরা। স্লোগানগুলোতে নারীর অধিকার, মর্যাদা, নিরাপত্তা, শ্রমিকের অধিকার, ফ্যাসিবাদের বিরোধিতাসহ বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। ফিলিস্তিনিদের পক্ষেও স্লোগান রাখা হয়।

বিভিন্ন জাতি-গোষ্ঠীর মানুষের সমন্বিত সাংস্কৃতিক পরিবেশনার মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হয়। পরে মঞ্চ থেকে একটি আনুষ্ঠানিক ঘোষণা পাঠ করা হয়, যা আন্দোলনের মূল দাবি এবং দৃষ্টিভঙ্গির রূপরেখা তুলে ধরে। ঘোষণাপত্রে নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা ও বৈষম্য প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে।

ঘোষণাপত্রটি পাঠ করেন জুলাই শহীদ পরিবারের তিনজন নারী সদস্য। ঘোষণাপত্রে বলা হয়, চব্বিশের অভূতপূর্ব জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পরে আজ আমরা এক গুরুত্বপূর্ণ ও জরুরি মুহূর্তে ঐক্যবদ্ধ হয়েছি। আমাদের দাবি একটি গণতান্ত্রিক ও ন্যায়ভিত্তিক বাংলাদেশ। যেখানে সব মানুষের মর্যাদা ও অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে বৈষম্যবিরোধিতা ও সাম্যের যৌথ মূল্যবোধের ওপর। সমতা ও ন্যায্যতার পথে এ মৈত্রীযাত্রায় আমরা সবাইকে স্বাগত জানাই।

আজ আমাদের সঙ্গে রয়েছেন জুলাই অভ্যুত্থানে আহত ও নিহতদের স্বজন, মানবাধিকারকর্মী, পেশাজীবী, শিল্পী, গার্মেন্টস শ্রমিক, চা-বাগানের শ্রমিক, যৌনকর্মী, প্রতিবন্ধী অধিকারকর্মী, তৃতীয় লিঙ্গ, তরুণ-তরুণী, শিক্ষার্থী, আদিবাসী, অবাঙালি অন্যান্য প্রান্তিক সম্প্রদায়ের মানুষ।

এতে বলা হয়, কিন্তু আমরা উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি, অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়েও নারীসহ অন্যান্য প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর এ অগ্রযাত্রায় নানান প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে চলেছে প্রতিক্রিয়াশীলগোষ্ঠী ও পিতৃতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা। নারীর স্বাভাবিক জীবনযাত্রার ক্ষেত্রেও তারা বাধা তৈরি করছে। ব্যক্তিগত আক্রমণ, সিদ্ধান্ত গ্রহণে বাধা এবং অনলাইনে হয়রানি করে রাজনৈতিক পরিসরে নারীর অংশগ্রহণ নিরুৎসাহিত করার তৎপরতা দিবালোকের মতো স্পষ্ট।

বিভিন্ন স্থানে অতর্কিত হামলা, আন্দোলনে বাধা, পরিকল্পিত মব আক্রমণ, মোরাল পুলিশিং, যৌন নিপীড়ন, ধর্ষণ ও সংঘবদ্ধ ধর্ষণ, প্রকাশ্যে মারধর এবং নানান ধরনের হুমকি প্রদান অব্যাহত রয়েছে।

আরও বলা হয়, সম্প্রতি নারী অধিকার সংক্রান্ত সংস্কার উদ্যোগের অংশ হিসেবে নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়। বিভিন্ন খাতে সংস্কারের উদ্দেশ্যে সরকার কর্তৃক গঠিত অন্যান্য কমিশনের মতোই এ কমিশনটি গঠিত হয়েছিল। এ কমিশন শ্রমজীবী নারী, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর নারী ও অর্থনৈতিকভাবে পশ্চাৎপদ নারীর জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে ৪৩৩টি সুপারিশ পেশ করে। অন্য সব কমিশনের মতোই এ কমিশনের সুপারিশেও ছিল নানা আলোচনা-সমালোচনার উপাদান।

কিন্তু আমরা দেখেছি রিপোর্ট প্রকাশের পর থেকেই অধিকাংশ গুরুত্বপূর্ণ ও মৌলিক অধিকার সংক্রান্ত সুপারিশগুলোকে ইচ্ছাকৃতভাবে এড়িয়ে গিয়ে এবং গঠনমূলক আলোচনা-সমালোচনার সুযোগ না রেখে নানা ধরনের অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। দেশবাসীর সামনে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে ভুল ব্যাখ্যা উপস্থাপন করা হচ্ছে। জনসম্মুখে কমিশনের সদস্যদের জঘন্যভাবে অপমান করা হয়েছে।

‘এত কিছুর মধ্যে আমরা দেখলাম, জুলাইয়ে অসংখ্য নারীর আত্মত্যাগ ও শহীদদের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নারীর ওপর অব্যাহত নিপীড়ন, অবমাননা ও অপমানের বিরুদ্ধে আশ্চর্যরকম নিশ্চুপ। সরকারের নিজের তৈরি করা নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের সদস্যদের ওপর এ ধরনের ন্যক্কারজনক আক্রমণের পরেও সরকার কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।’

ঘোষণাপত্রে বেশ কয়েকটি দাবি উপস্থাপন করা হয়। সেগুলো হলো- অন্তর্বর্তী সরকারকে তার সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন করতে হবে, বিশেষত নারী ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সহিংসতার হুমকি, নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন ঘিরে গুজব ও অপপ্রচার এবং ধর্মীয় মূল্যবোধকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে আতঙ্ক সৃষ্টির বিরুদ্ধে সরকারকে ব্যবস্থা নিতে হবে।

যারা আমাদের সমর্থন চায় নির্বাচনী অঙ্গীকারের মাধ্যমে হোক বা সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়ে হোক। তাদের স্পষ্ট করতে হবে নারী, শ্রমিক, জাতি, ধর্ম, ভাষা ও লিঙ্গীয় সংখ্যালঘুদের অধিকার এবং এসব জনগোষ্ঠীর পূর্ণ রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও ব্যক্তিগত মুক্তির বিষয়ে তাদের অবস্থান কী। বিশেষ করে আসন্ন নির্বাচন থেকে তাদের প্রার্থীদের অন্তত শতকরা ৩৩ ভাগ (ক্রমান্বয়ে জনসংখ্যার অনুপাতে) নারী হতে হবে।

নারী ও প্রান্তিক জনগণের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নে অন্তর্বর্তী সরকারকে আশু পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

ঘোষণাপত্রে বলা হয়, আমাদের বিরুদ্ধে সহিংসতা ও বৈষম্য চালিয়ে যাওয়ার অপচেষ্টা আমরা মেনে নেবো না। আমাদের মৌলিক অধিকারগুলোকে অস্বীকার করার ষড়যন্ত্র আমরা প্রতিরোধ করব। বিশৃঙ্খলা ও বিভ্রান্তি সৃষ্টির চেষ্টা, সংস্কৃতি ও ধর্মকে দমনমূলক অস্ত্রে পরিণত করার চেষ্টা আমরা প্রতিরোধ করব। ইতিহাস বিচ্ছিন্ন কূপমণ্ডূকতার মাধ্যমে সহিংসতা ও বৈষম্য চালিয়ে যাওয়ার প্রচেষ্টাকে আমরা কিছুতেই সফল হতে দেব না। আমাদের সংস্কৃতি, ধর্ম ও ইতিহাস দারুণ বৈচিত্র্যময় এবং সংবেদনশীল। সেই বিশালতাকে উপেক্ষা করে আমরা গুটি কয়েক মানুষের সংকীর্ণ ব্যাখ্যাকে সার্বজনীন হতে দেব না। আমরা অধিকার ও ধর্মের মধ্যে দ্বন্দ্ব তৈরি করতে দেব না, মর্যাদা নিয়ে কোনো ধরনের দ্ব্যর্থকতা মেনে নেবো না। আমরা সরকার ও প্রতিটি রাজনৈতিক দলের নারীবিষয়ক অবস্থান নজরদারিতে রাখব। যে ক্ষমতা কাঠামো এসব জুলুমবাজি জিইয়ে রাখে, আমরা সেই কাঠামোকে ভাঙব।

আরও বলা হয়, আমরা চুপ করব না, হুমকির মুখে নত হবো না। আমরা আমাদের অধিকার আদায়ের দাবিতে অটল থাকব। ন্যায়ভিত্তিক বাংলাদেশের স্বপ্ন ও তা প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে আমরা হাল ছাড়ব না। আজ যারা আমাদের সঙ্গে রয়েছেন তাদের ধন্যবাদ। আমাদের লড়াই অব্যাহত থাকবে।

পরে অনুষ্ঠানস্থল থেকে একটি র‌্যালি শুরু হয়ে খামারবাড়ি অভিমুখে যাত্রা করে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে গিয়ে শেষ হয়।


টেকসই সংস্কারে বাংলাদেশকে সহযোগিতার আশ্বাস জাতিসংঘের

বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী গোয়েন লুইস। ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
unb

স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে উত্তরণের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে বাংলাদেশকে টেকসই সংস্কারে সহযোগিতা করতে জাতিসংঘ প্রস্তুত রয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশে সংস্থাটির আবাসিক সমন্বয়কারী গোয়েন লুইস।

বৃহস্পতিবার (১৫ মে) বাংলাদেশ সরকার ও জাতিসংঘ কান্ট্রি টিমের যৌথ স্টিয়ারিং কমিটির (জেএসসি) দ্বিবার্ষিক সভায় তিনি এ আশ্বাস দেন।

সভায় যৌথভাবে সভাপতিত্ব করেন অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব শাহরিয়ার কাদের সিদ্দিকী এবং গোয়েন লুইস। এতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও জাতিসংঘের জ্যেষ্ঠ প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

লুইস বলেন, ‘বাংলাদেশের এলডিসি তালিকা থেকে উত্তরণের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে টেকসই সংস্কার, জলবায়ু সহনশীলতা, অর্থনৈতিক রূপান্তর, জেন্ডার সমতা ও সমাজের কেউ যেন পিছিয়ে না পড়ে সেজন্য সহযোগিতা করতে জাতিসংঘ প্রস্তুত রয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের জন্য বিগত বছরটি চ্যালেঞ্জিং ছিল, যদিও এই সময়ে বাংলাদেশের মানুষ আত্মমর্যাদাবোধ ও দৃঢ়তা প্রদর্শন করেছে।’ এই সময়ে বাংলাদেশ ও জাতিসংঘের অংশীদারত্বের জন্য তিনি গর্ববোধ করেন উল্লেখ করে বলেন, ‘এই অংশীদারত্ব আমাদের যৌথ মূল্যবোধ ও আকাঙ্ক্ষার ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে।’

বৈঠকে জাতিসংঘ টেকসই উন্নয়ন সহযোগিতা কাঠামোর (ইউএনএসডিসিএফ) বাস্তবায়ন মূল্যায়ন কর্মসূচির আওতায় ২০২৪ সালের বাংলাদেশের জাতিসংঘ কান্ট্রি রেজাল্ট রিপোর্ট প্রকাশ এবং আগামী বছরের জন্য কৌশলগত অগ্রাধিকার অনুমোদন করা হয়।

জাতিসংঘ ২০২৪ সালে উন্নয়ন কর্মসূচিতে ২১ কোটি ৫০ লাখ ডলার দিয়েছে বাংলাদেশকে। এই অর্থায়নের আওতায় উল্লেখযোগ্য কাজগুলো হচ্ছে— বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে মসৃণ উত্তরণ কৌশল তৈরিতে সহায়তা, বেসরকারি খাতের সঙ্গে অংশীদারত্বে ৪ হাজারের বেশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি, ১১৬টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের টার্নওভার উন্নত করতে সহায়তা এবং ১১ হাজারের বেশি তরুণ-তরুণীকে ডিজিটাল দক্ষতা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা।

জাতিসংঘের এ সহায়তার আওতায় অন্তত ৪ কোটি মানুষ সামাজিক সুরক্ষা সেবা পেয়েছেন। এর মধ্যে শিশু সুরক্ষা কর্মসূচি থেকে উপকৃত হয়েছে ৫ লাখ ৮০ হাজার। এ ছাড়া সারা দেশে ৫৬ লাখ কিশোরীকে জরায়ুমুখের ক্যান্সার থেকে রক্ষা করার জন্য হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাসের টিকা দেওয়া হয়েছে। এতে দেশে ১০ থেকে ১৪ বছর বয়সী মেয়েদের অন্তত ৯৩ শতাংশ টিকা পেয়েছে।

তাছাড়া জলবায়ু দুর্যোগে চিহ্নিত বছরে ৪ কোটি ৪০ লাখ ডলারের বন্যা ও ঘূর্ণিঝড় সহায়তা সমন্বয় করেছে সংস্থাটি। পাশাপাশি প্রায় ১৭ লাখ ২০ হাজার দুর্যোগকবলিত মানুষকে মানবিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে এবং ২০ লাখ মানুষের মধ্যে জলবায়ু ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করা হয়েছে।

অর্থ সহায়তার পাশাপাশি শাসনব্যবস্থা ও লিঙ্গ সমতার কাজের মাধ্যমে জাতিসংঘ গ্রামীণ এলাকার ৬৬ শতাংশ গ্রাম্য আদালত কার্যকর করতে সহায়তা করেছে। প্রায় ৬ কোটি ১০ লাখ মানুষের কাছে এই সেবা পৌঁছে গেছে। এ ছাড়া, যৌন হয়রানি প্রতিরোধ ও সুরক্ষা বিলকে সমর্থনের পাশাপাশি গার্হস্থ্য সহিংসতা আইন সংশোধনের পক্ষেও প্রচার চালিয়েছে জাতিসংঘ।

বৈঠকে সরকার অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা এক বছর বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়ায় জাতীয় উন্নয়ন পরিকল্পনার সঙ্গে সামঞ্জস্য বজায় রাখতে আনুষ্ঠানিকভাবে ইউএনএসডিসিএফ (২০২২-২০২৬) এক বছরের সম্প্রসারণের অনুমোদন দেয় জেএসসি।

বৈঠক শেষে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য ঘোষণাপত্র এবং যুব সম্পৃক্ততা নিয়ে জাতিসংঘ কী কী কাজ করে থাকে, তা নিয়ে একটি সেশন হয়।

সভায় অংশগ্রহণকারীরা গত বছরের ‘সামিট অফ দ্য ফিউচারের’ ধারাবাহিকতায় তরুণদের কণ্ঠস্বর তুলে ধরেন এবং আন্তঃপ্রজন্ম সমতাকে জাতীয় নীতিমালার অগ্রাধিকার হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়েও আলোচনা করেন।

এ সময় জাতিসংঘের চলমান অংশীদারত্বের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন ইআরডি সচিব শাহরিয়ার কাদের। পাশাপাশি সম্প্রসারিত ইউএনএসডিসিএফ এই পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সহযোগিতা আরও সুদৃঢ় করতে একটি শক্তিশালী প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

শাহরিয়ার কাদের বলেন, ‘বাংলাদেশ ক্লাইমেট ডেভেলপমেন্ট পার্টনারশিপের মতো জলবায়ু অর্থায়ন প্ল্যাটফর্মের অগ্রগতিকে আমরা স্বাগত জানাই। এ ব্যাপারে জাতিসংঘ ও উন্নয়ন অংশীদারদের সমর্থন অব্যাহত থাকা প্রয়োজন।’

তিনি আরও বলেন, “প্রধান উপদেষ্টার ‘তিন শূন্য নীতির’ লক্ষ্য পূরণে যুবকদের কর্মসংস্থান, সামাজিক উদ্যোগ এবং প্রভাবভিত্তিক অর্থায়নকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। একই সঙ্গে পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা, স্থানীয় শাসনব্যবস্থা এবং আসন্ন সংস্কার ও নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে জাতিসংঘের কার্যকর সহায়তা জরুরি।”

এদিন সভা শেষে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পরবর্তী পদক্ষেপে সম্মতি দেওয়া হয়। এর মধ্যে রয়েছে— চলতি বছেরের শেষ নাগাদ ইউএনএসডিসিএফের চূড়ান্ত বছর মূল্যায়নের সূচনা এবং এসডিজি বাস্তবায়ন ও এলডিসি উত্তরণে গতি আনার প্রতিশ্রুতি।

ইউএনএসডিসিএফ কাঠামোটি এসডিজি অর্জনে জাতিসংঘের পাঁচটি কৌশলগত অগ্রাধিকার নির্ধারণ করে। এর মধ্যে রয়েছে— অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়ন; সমতার ভিত্তিতে মানবসম্পদ উন্নয়ন ও কল্যাণ; টেকসই, সহনশীল ও উপযোগী পরিবেশ; রূপান্তর, অংশগ্রহণ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সুশাসন এবং লিঙ্গ-সমতা ও লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা নির্মূল।

জেএসসির পরবর্তী সভা চলতি বছরের শেষ দিকে অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের ঢাকা কার্যালয়।


জবি শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের তিন দফা মেনে নিয়েছে সরকার

ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
জবি প্রতিনিধি

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) তিন দফা দাবি মেনে নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। আগামী সাত দিনের মধ্যে এসব বিষয়ে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এদিকে দীর্ঘ তিন দিন ও দুই রাত মিলিয়ে টানা প্রায় ৬০ ঘণ্টা ধরে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের পানি পান করিয়ে অনশন ভাঙালেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. রেজাউল করিম।

শুক্রবার সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. রইছ উদ্দিন গণমাধ্যমকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেন। অর্থ মন্ত্রণালয় ও উপদেষ্টার কার্যালয়ের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন।

এদিকে সন্ধ্যা ৭টা ২৬ মিনিটে সংবাদ সম্মেলনে এই চার সিদ্ধান্ত জানায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. রেজাউল করিম।

উপাচার্য অধ্যাপক ড. রেজাউল করিম জানান, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বাজেট বৃদ্ধির মাধ্যমে প্রথম দাবির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আবাসন সংকটের কথা ভেবে খুব দ্রুত অস্থায়ী হল নির্মাণ করা হবে। দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ অতিদ্রুত বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়েছে এবং ইতিমধ্যে কাজ চলছে।

এর আগে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দাবিকে কেন্দ্র করে চলমান টানা তৃতীয় দিনের আন্দোলনের মধ্যেই শিক্ষা উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে বসেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির নেতারা। শুক্রবার দুপুরে শুরু হওয়া বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) কার্যালয়ে এই বৈঠকে অংশ নেন শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. রইস উদ্দিন, ড. বেলাল হোসাইনসহ একটি প্রতিনিধি দল।

দাবি আদায়ে গত বুধবার প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন ‘যমুনা’ অভিমুখে লংমার্চ করার সময় কাকরাইলে পুলিশের বাধার মুখে পড়েন জবি শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। ব্যারিকেড ভাঙার চেষ্টা করলে পুলিশ লাঠিচার্জ, কাঁদানে গ্যাস, সাউন্ড গ্রেনেড ও জলকামান ব্যবহার করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এতে অর্ধশতাধিক শিক্ষক-শিক্ষার্থী আহত হন।

শিক্ষার্থীদের চার দফা দাবি হলো-আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থীর জন্য আবাসন বৃত্তি ২০২৫-২৬ অর্থবছর থেকে কার্যকর, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত পূর্ণাঙ্গ বাজেট কাঁটছাট না করেই অনুমোদন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ পরবর্তী একনেক সভায় অনুমোদন করে অগ্রাধিকার প্রকল্পের আওতায় বাস্তবায়ন এবং শিক্ষকদের ওপর হামলাকারী পুলিশদের বিচারের আওতায় আনা।


ডিজিটাল রূপান্তরে নারী-পুরুষের সমান সুযোগ নিশ্চিতে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১৬ মে, ২০২৫ ২০:১৬
বাসস

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের চেতনাকে ধারণ করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ডিজিটাল রূপান্তরের সকল ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের সমান সুযোগ ও অধিকার নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

তিনি বলেন, টেলিযোগাযোগ সেবা ও তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারসহ ডিজিটাল রূপান্তরে নারী-পুরুষের সমান অংশগ্রহণ একটি বৈষম্যমুক্ত ও আধুনিক সমাজ বিনির্মাণের পূর্বশর্ত।

আগামীকাল ১৭ মে ‘বিশ্ব টেলিযোগাযোগ ও তথ্য সংঘ দিবস’ উপলক্ষে আজ শুক্রবার দেয়া এক বাণীতে প্রধান উপদেষ্টা এসব কথা বলেছেন। এবারে দিবসটির প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে ‘জেন্ডার ইক্যুয়ালিটি ইন ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন’ বা ‘ডিজিটাল রূপান্তরে নারী-পুরুষের সমতায়ন’।

প্রধান উপদেষ্টা তাঁর বাণীতে আরও বলেছেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশের টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উন্নয়নে খুবই আন্তরিক। তথ্যপ্রযুক্তি খাতের সকল কর্মকাণ্ডে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, জনগণের সরকারি সেবা প্রাপ্তি সহজতর করতে ও হয়রানি কমাতে ডিজিটাল সেবা কেন্দ্র ‘নাগরিক সেবা’ তৈরির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সারা দেশে ইউনিয়ন নাগরিক সেবাকেন্দ্রের মাধ্যমে বিভিন্ন তথ্যপ্রযুক্তি সেবা চালু করা হচ্ছে।

তিনি বলেন ‘নারী উদ্যোক্তাদের জন্য বিশেষ ফ্রিল্যান্সিং ট্রেনিং এবং মেয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য শি-এসটিইএম ট্রেনিংয়ের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ স্যাটেলাইট ভিত্তিক উচ্চগতির ইন্টারনেট নেটওয়ার্কে যুক্ত হতে যাচ্ছে যা প্রত্যন্ত ও দুর্গম অঞ্চলসহ সারা দেশে নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট সেবা নিশ্চিতের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক।’

প্রধান উপদেষ্টা জনগণের জন্য বিশ্বমানের টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি সেবা নিশ্চিত করতে সকলকে একসাথে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘আমার দৃঢ় বিশ্বাস সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক, প্রগতিশীল ও সমতা ভিত্তিক বাংলাদেশ গড়ে উঠবে, নিশ্চিত হবে ডিজিটাল সমতা।’


কোরবানি ঈদে প্রতি হাটে মোবাইল ভেটেরিনারি ক্লিনিক বসবে

ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১৬ মে, ২০২৫ ২০:১৭
বাসস

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, আসন্ন কোরবানির ঈদ উপলক্ষে পশুর হাটগুলোতে মোবাইল ভেটেরিনারি ক্লিনিক বসবে। জেলা পর্যায়ে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর থেকে বসানো ক্লিনিকে ভেটেরিনারি সার্জন থাকবেন, তারা চিকিৎসা সেবা প্রদান করবেন।

উপদেষ্টা আজ শুক্রবার রাজশাহী সার্কিট হাউস সম্মেলন কক্ষে বিভাগীয় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক মতবিনিময়সভায় এসব কথা বলেন।

প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা বলেন, গবাদি পশুর পাশাপাশি মানুষেরও কিছু চিকিৎসা সেবা থাকা দরকার। গরু-ছাগলের ক্রয়-বিক্রয়ের সঙ্গে জড়িত মানুষরা যেন নিরাপদে যাতায়াত করতে পারে তারও ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।

সীমান্ত দিয়ে প্রতিবেশী দেশের গরু প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ প্রসঙ্গে উপদেষ্টা বলেন, কোরবানি ঈদের ব্যাপারে মন্ত্রণালয়ের সভা হয়েছে। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী বাইরের পণ্য ভেতরে নিয়ে আসার চেষ্টা করবে, তা বন্ধ করা দরকার। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বিজিবি ও নৌপুলিশকে এ বিষয়ে কঠোর মনিটরিং এর নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতে বাণিজ্যিক বিদ্যুৎ বিল নির্ধারণকে দুঃখজনক উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, কৃষিতে যে হারে বিদ্যুৎ বিল নেয়া হয় একই হারে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদে নেয়া হয় না। এতে ছোট ছোট খামারিরা খুবই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বিষয়টি নিরসনে অর্থ মন্ত্রণালয়ে ডিও লেটার দেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

এসময় ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ, প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ (পিআইবি) এর মহাপরিচালক ফারুক ওয়াসিফ, রাজশাহী বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ দপ্তরের পরিচালক ডা. আনন্দ কুমার অধিকারী, রাজশাহী বিভাগীয় মৎস্য অধিদপ্তরের পরিচালক মো. সাইফুদ্দিন ইয়াহিয়া, জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর আলম, জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আতোয়ার রহমান, বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট রাজশাহী আঞ্চলিক কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও স্টেশন ইনচার্জ ড. মোহাম্মদ আব্দুর রশিদসহ বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।


দাবি আদায়ে এবার জবি শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের গণঅনশন, ইউজিসিতে বৈঠক

গণঅনশন কর্মসূচিতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। ছবি: মেহেরাবুল ইসলাম সৌদিপ
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
জবি প্রতিনিধি

দাবি আদায়ে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনা অভিমুখে রাজধানীর কাকরাইল মোড়ে গণঅনশন কর্মসূচি শুরু করেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। এদিকে শিক্ষার্থীদের দাবিকে কেন্দ্র করে চলমান টানা তৃতীয় দিনের আন্দোলনের মধ্যেই শিক্ষা উপদেষ্টার সঙ্গে ইউজিসিতে বৈঠকে বসেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির নেতারা।

শুক্রবার বিকেল পৌনে চারটা নাগাদ এ অনশন শুরু করেন বিশ্ববিদ্যালয়টিতে অধ্যয়নরত বিভিন্ন বিভাগ ও ইন্সটিটিউটের শিক্ষার্থীরা। গণঅনশনে বর্তমান শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি যোগ দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থীরাও।

শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের গণঅনশনে অংশ নিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ক্রিয়াশীল সংগঠন ও ছাত্র সংগঠনগুলো নেতৃবৃন্দ ও সদস্যরা। এছাড়াও বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে অংশ নিচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকরাও। অনশনে অংশ নিতে শিক্ষার্থীরা অনশন ডেস্কে নাম লিখে যুক্ত হয়েছেন এবং যারা সরাসরি অনশনে না বসে কর্মসূচিকে সমর্থন করছেন, তারা অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন। বর্তমানে অনশনরত শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৫০ জনেরও বেশি।

ছবি: মেহেরাবুল ইসলাম সৌদিপ

আন্দোলনকারীরা জানিয়েছেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা রাজধানীর কাকরাইল মোড়ে অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন।

এ ব্যাপারে ফিন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক মনজুর মোরশেদ বলেন, আমাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা মাঠে থাকবো। সকাল থেকে গণ অনশনে বসার কথা ছিলো। কোনো সিদ্ধান্ত না আসায় আমরা এখন থেকেই গণ অনশনের ঘোষণা দিচ্ছি। আমরা এখন থেকে অনশন শুরু করবো।

তিনি আরও বলেন, আমাদের এই শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে কিছু গোষ্ঠী চক্রান্ত করছে। আমরা সবাই শান্তিপূর্ণভাবে দাবি আদায়ের আন্দোলন করবো। এভাবেই আমরা সবাইকে দেখিয়ে দেবো কিভাবে শান্ত থেকে দাবি আদায় করতে হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রদলের সদস্য সচিব শামসুল আরেফিন বলেন, “আমরা প্রধান উপদেষ্টাকে বলতে চাই, আপনি ঘুম থেকে উঠুন। আর ঘুমাবেন না। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় তার যৌক্তিক দাবিতে আপনার দুয়ারে এসে দাঁড়িয়েছে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শুনতে চায় আপনি আমাদের জন্য কি বার্তা নিয়ে আসেন।'

শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. শাহরিয়ার হোসেন বলেন, ‘আমাদের যৌক্তিক দাবিগুলো দীর্ঘদিন ধরে উপেক্ষিত হয়ে আসছে। ফলে শিক্ষার্থীরা বাধ্য হয়ে অনশনে বসেছে।’

একইসঙ্গে শিবিরের শাখা সেক্রেটারি রিয়াজুল ইসলাম অনশনে বসে বলেন, ‘আমরা চাই আমাদের দাবি পূরণ হোক, আমরা বিজয় মিছিল নিয়ে আবার ক্যাম্পাসে ফিরে যেতে চাই।’

শাখা ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি একেএম রাকিব বলেন, ‘আন্দোলনের দুই দিন পেরিয়ে যাওয়ার পরও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো ইতিবাচক সাড়া না পেয়ে আমরা অনশনের কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়েছি। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত এই কর্মসূচি চলবে।’

গণঅনশনে নেতৃত্বদানকারী ছাত্র অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাকিব হাসান বলেন, আমাদের আন্দোলন এমন জায়গায় এসে পৌঁছেছে যে এখন আর পেছনে ফেরার কোনো সুযোগ নেই। আমরা বিজয় না নিয়ে ফিরছি না।

অনশনে বসা শিক্ষার্থী কামরুন নাহার বলেন, ‘আমরা আমাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত অনশণ থেকে উঠবো না। আনরা যখন লংমার্চ নিয়ে আসি তখন আমাদের উপর পুলিশ হামলা করে আমাদের আহাত করে, আমাদের শিক্ষকদের আহত করে। আমরা আমাদের অধিকার নিয়ে ফিরে যাবো।’

এর আগে, ১৪ মে দিনটিকে ‘জবি কালো দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করেছে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। ওই দিন সরকারের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কর্তৃক শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের উপর হামলা, মারধর এবং লাঞ্ছনার ঘটনার প্রতিবাদেই এই ঘোষণা দেয়া হয়। আন্দোলনকারীরা এ আন্দোলনকে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও সাংবাদিকদের ওপর পুলিশের বর্বরতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ এবং গণতান্ত্রিক অধিকারের দাবিতে একটি শান্তিপূর্ণ প্রতিরোধ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। ওইদিন থেকেই দাবি আদায়ে কাকরাইল মোড়ে অবস্থান শুরু করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা।

এদিকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দাবিকে কেন্দ্র করে চলমান টানা তৃতীয় দিনের আন্দোলনের মধ্যেই শিক্ষা উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে বসেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির নেতারা। শুক্রবার দুপুরে শুরু হওয়া বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) কার্যালয়ে এই বৈঠকে অংশ নেন শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. রইস উদ্দিন, ড. বেলাল হোসাইনসহ একটি প্রতিনিধি দল।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. তাজাম্মুল হক বলেন, সরকারের উচ্চপর্যায়ে সংশ্লিষ্টজন শিক্ষা মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের মধ্যে একটি বহুপক্ষীয় বৈঠক হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে এখন ইউজিসতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মোশাররফ হোসেন, সেক্রেটারি অধ্যাপক ড. রইস উদ্দিন ও জয়েন্ট সেক্রেটারি অধ্যাপক ড. বিলাল হোসাইনের সঙ্গে একটি সমোঝোতা বৈঠক হচ্ছে। আশা করি ইতিবাচক সিদ্ধান্ত বেরিয়ে আসবে।’

শিক্ষার্থীরা বলছেন, ‘আমরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা আন্দোলন করে যাচ্ছি। আমাদের বেলায় করা হয় লাঠিচার্জ। আর ঢাবি থেকে কেউ এলে তার জন্য ঠান্ডা পানি ছিটানো হয়। আমাদের দাবি যৌক্তিক দাবি। আমাদের দাবি মেনে নিতে হবে।’

গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী রাকিব বলেন, ‘আমরা মোড়ে আসামাত্রই অতর্কিতভাবে আমাদের ওপর হামলা করা হয়েছে। আমাদের ওপর গুলি করা হয়েছে। এখনো পর্যন্ত প্রশাসন থেকে কোনো বার্তা আসেনি।’

এর আগে বুধবার প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন ‘যমুনা’ অভিমুখে লংমার্চ করার সময় কাকরাইলে পুলিশের বাধার মুখে পড়েন জবি শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। ব্যারিকেড ভাঙার চেষ্টা করলে পুলিশ লাঠিচার্জ, কাঁদানে গ্যাস, সাউন্ড গ্রেনেড ও জলকামান ব্যবহার করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এতে অর্ধশতাধিক শিক্ষক-শিক্ষার্থী আহত হন।

শিক্ষার্থীদের চার দফা দাবি হলো-আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থীর জন্য আবাসন বৃত্তি ২০২৫-২৬ অর্থবছর থেকে কার্যকর, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত পূর্ণাঙ্গ বাজেট কাঁটছাট না করেই অনুমোদন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ পরবর্তী একনেক সভায় অনুমোদন করে অগ্রাধিকার প্রকল্পের আওতায় বাস্তবায়ন এবং শিক্ষকদের ওপর হামলাকারী পুলিশদের বিচারের আওতায় আনা।


তথ্য উপদেষ্টার মাথায় বোতল নিক্ষেপের ঘটনায় একজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে ডিবি

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
বাসস

রাজধানীর কাকরাইলে তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলমকে লক্ষ্য করে পানির বোতল নিক্ষেপের ঘটনায় একজনকে ডিবি কার্যালয়ে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

আজ শুক্রবার ডিএমপির মিডিয়া বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান এ তথ্য জানান। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাকে তার অভিভাবকের কাছে হস্তান্তর করা হবে বলেও জানান তিনি।

গত বুধবার রাত ১০টার পর কয়েকটি দাবিতে আন্দোলনরত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলতে কাকরাইল মসজিদের সামনে যান তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম।

সেখানে তিনি কথা বলার একপর্যায়ে একটি প্লাস্টিকের পানির বোতল উড়ে এসে তার মাথায় পড়ে। এরপর আর কথা না বলে সেখান থেকে চলে যান মাহফুজ আলম।


কক্সবাজার থেকে উড্ডয়নের পর খুলে পড়ল বিমানের চাকা

ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
unb

কক্সবাজার বিমানবন্দর থেকে ছেড়ে আসা বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটের চাকা খুলে নিচে পড়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। তবে এ ঘটনায় কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) এবিএম রওশন কবীর ইউএনবিকে ফোনে এ তথ্য জানান।

তিনি বলেন, ‘কী কারণে এমনটি ঘটেছে, তা সঠিক বলা যাচ্ছে না। ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্ট পরীক্ষা-নীরিক্ষা করার পর বলা যাবে। তবে ঢাকা হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ফ্লাইটটি নিরাপদে ল‍্যান্ড করেছে।’

এদিকে, কক্সবাজার এয়ারপোর্ট কন্ট্রোল রুম থেকে জানানো হয়, কক্সবাজার বিমানবন্দরের রানওয়ে থেকে আকাশে উড্ডয়নের পরই পেছনের একটি চাকা খুলে নিচে পড়ে যায়। আজ দুপর ১টা ১৭ মিনিটে বিজি ৪৩৬ বিমানটি ৭‌১ যাত্রী নিয়ে উড্ডয়ন করে এবং ২ টা ১৭ মিনিটে বিমানটি নিরাপদে ঢাকায় অবতরণ করেছে।


ঢাকার বাতাস আজ ছুটির দিনেও ‘অস্বাস্থ্যকর’, দূষণে বিশ্বের দ্বিতীয়

ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
unb

বিশ্বের দূষিত শহরের তালিকায় আজ ছুটির দিনেও ঢাকার বাতাসের মান ‘অস্বাস্থ্যকর’ পর্যায় রয়েছে।

শুক্রবার (১৬ মে) সকাল ৯টা ১৩ মিনিটে ১৭৯ একিউআই স্কোর নিয়ে দূষিত বাতাসের শহরগুলোর তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে শহরটি।

ভারতের দিল্লি, সেনেগালের ডাকার ও চিলির সান্তিয়াগো যথাক্রমে ১৯০, ১৬৭ ও ১৫৯ একিউআই স্কোর নিয়ে তালিকার প্রথম, তৃতীয় ও চতুর্থ স্থান দখল করেছে।

যখন কণা দূষণের একিউআই মান ৫০ থেকে ১০০ এর মধ্যে থাকে, তখন বায়ুর গুণমানকে ‘মাঝারি’ বলে বিবেচনা করা হয়। সূচক ১০১ থেকে ১৫০ এর মধ্যে হলে ‘সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এ সময় সাধারণত সংবেদনশীল ব্যক্তিদের দীর্ঘ সময় ধরে বাইরে না থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়।

১৫১ থেকে ২০০ এর মধ্যে হলে ‘অস্বাস্থ্যকর’ হিসেবে বিবেচিত হয়। সেটা বেড়ে ২০১ থেকে ৩০০ এর মধ্যে চলে এলে ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ বলে মনে করা হয়। ৩০১ এর বেশি হলে ‘বিপজ্জনক’ পর্যায়ে পৌঁছায়। এতে বাসিন্দাদের জন্য মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি করে।

একিউআই সূচক ৫টি দূষণের ওপর নির্ভরশীল। সেগুলো হলো- অতিক্ষুদ্র বস্তুকণা (পিএম১০ ও পিএম২.৫), এনও২, সিও, এসও২ ও ওজোন। ঢাকা দীর্ঘদিন ধরে বায়ুদূষণজনিত সমস্যায় জর্জরিত। এর বায়ুর গুণমান সাধারণত শীতকালে অস্বাস্থ্যকর হয়ে ওঠে এবং বর্ষাকালে উন্নত হয়।

ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশনের (ডব্লিউএইচও) মতে, বায়ু দূষণের কারণে প্রতি বছর বিশ্বব্যাপী আনুমানিক ৭০ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়। বায়ুদূষণে প্রধানত স্ট্রোক, হৃদরোগ, ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ, ফুসফুসের ক্যান্সার ও শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ থেকে মৃত্যুর হার বাড়ে।

২০১৯ সালের মার্চে পরিবেশ অধিদপ্তর ও বিশ্বব্যাংকের একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ঢাকার বায়ুদূষণের ৩টি প্রধান উৎস হলো— ইটভাটা, যানবাহনের ধোঁয়া ও নির্মাণ সাইটের ধুলো।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘দূষণে শহরটি ক্রমাগত বসবাসের অযোগ্য হলেও সরকার কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে না।’ সম্প্রতি পরিবেশ, বন ও জলবায়ু বিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে সরকার সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এ লক্ষ্যে একটি টাস্কফোর্স গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। টাস্কফোর্সটি আগামী বর্ষাকাল পর্যন্ত কাজ করবে।


তথ্য উপদেষ্টার সঙ্গে ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সাক্ষাৎ

ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
বাসস

অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. মাহফুজ আলমের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুক। গতকাল বৃহস্পতিবার (১৫ মে) বিকেলে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে এই সাক্ষাৎ অনুষ্ঠিত হয়।

সাক্ষাতে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের চলমান কার্যক্রম বিষয়ে আলোচনা করা হয়।

এ সময় তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা জানান, গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী বেশ কিছু সংস্কার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। সাংবাদিকদের দায়িত্ব ও সুরক্ষা-সংক্রান্ত অধ্যাদেশ প্রণয়নের বিষয়ও বিবেচনা করা হচ্ছে।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঘটনা প্রবাহের তথ্য প্রচারে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম তুলে ধরে তিনি বলেন, মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ওপর বেশ কয়েকটি প্রামাণ্যচিত্র তৈরি করা হয়েছে এবং সেগুলো গণমাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে। এর পাশাপাশি জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ওপর কয়েকটি প্রকাশনাও তৈরি করা হয়েছে।

সাক্ষাতকালে উপদেষ্টা আরও জানান, আগামী ৫ই আগস্ট উদ্‌যাপন উপলক্ষ্যে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আরও কিছু প্রামাণ্যচিত্র ও প্রকাশনা তৈরি করা হবে।

গণমাধ্যমের স্বাধীনতা প্রসঙ্গে উপদেষ্টা বলেন, দেশের গণমাধ্যমের ওপর সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে না। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার গণমাধ্যমের স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠায় কাজ করছে।

সাক্ষাৎকালে ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুক বলেন, এ বছর বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম সূচকে বাংলাদেশ উন্নতি করেছে।

এ সাফল্যের জন্য তিনি বাংলাদেশ সরকারকে ধন্যবাদ জানান।

এ সময় ব্রিটিশ গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও দায়িত্বশীলতার বিষয়ে হাইকমিশনার তার অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন।

তিনি বাংলাদেশের গণমাধ্যমের উন্নয়নে একসঙ্গে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেন।

সাক্ষাতে দুই দেশের মধ্যকার স্বার্থসংশ্লিষ্ট বেশ কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। এ সময় ব্রিটিশ হাইকমিশনের সেকেন্ড সেক্রেটারি এলি বুট উপস্থিত ছিলেন।


জাতিসংঘ-বাংলাদেশ টেকসই উন্নয়নে যৌথ অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত

ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
বাসস

জাতিসংঘ এবং বাংলাদেশ টেকসই উন্নয়নের জন্য যৌথ অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছে। বাংলাদেশ সরকার এবং জাতিসংঘ কান্ট্রি টিম গতকাল বৃহস্পতিবার জয়েন্ট স্টিয়ারিং কমিটির (জেএসসি) দ্বিবার্ষিক বৈঠকে এ অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে।

বৈঠকে জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন সহযোগিতা কাঠামোর (ইউএনএসডিসিএফ) বাস্তবায়ন মূল্যায়ন, ২০২৪ সালে বাংলাদেশের জাতিসংঘ কান্ট্রি রেজাল্ট রিপোর্ট প্রকাশ এবং আগামী বছরের জন্য কৌশলগত অগ্রাধিকার অনুমোদন করা হয়।

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব মো. শাহরিয়ার কাদের সিদ্দিকী এবং বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী মিস গোয়েন লুইসের যৌথ সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সভায় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এবং জাতিসংঘ সংস্থাগুলোর সিনিয়র প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন। সরকারি সিদ্ধান্তের আলোকে অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা এক বছরের জন্য বর্ধিতকরণ, এবং জাতীয় উন্নয়ন পরিকল্পনার সাথে সামঞ্জস্য বজায় রাখার জন্য জেএসসি আনুষ্ঠানিকভাবে ইউএনএসডিসিএফ (২০২২-২০২৬) এক বছরের সম্প্রসারণের অনুমোদন দেয়।

জেএসসি রাজনৈতিক পটপরিবর্তন, জলবায়ু-কেন্দ্রিক দুর্যোগ এবং সংস্কার প্রক্রিয়া গতিশীলতা বিবেচনায় রেখে অভিযোজন ক্ষমতা এবং শাসনব্যবস্থা সংস্কার, মানবাধিকার ও প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধিতে জাতিসংঘের সহায়তার বিষয়গুলো তুলে ধরেছে।

জাতিসংঘ ২০২৪ সালে উন্নয়ন কর্মসূচিতে ২১৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রদান করেছে। উল্লেখযোগ্য কাজগুলো হচ্ছে, বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের জন্য মসৃণ উত্তরণ কৌশল তৈরিতে সহায়তা, বেসরকারি খাতের সঙ্গে অংশীদারিত্বে ৪ হাজারের বেশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি, ১১৬টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের টার্নওভার উন্নত করতে সহায়তা প্রদান এবং ১১ হাজারের বেশি তরুণ-তরুণীকে ডিজিটাল দক্ষতা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছে।

জাতিসংঘের সহযোগিতার ফলে ৪ কোটি মানুষ সামাজিক সুরক্ষা সেবায় প্রবেশাধিকার পেয়েছে। এর মধ্যে ৫ লাখ ৮০ হাজার শিশু সুরক্ষা কর্মসূচি থেকে উপকৃত হয়েছে। সারা বাংলাদেশে ৫৬ লক্ষ কিশোরীকে জরায়ুমুখের ক্যান্সার থেকে রক্ষা করার জন্য হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাসের টিকা দেয়া হয়েছে, যেখানে সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর ১০ থেকে ১৪ বছর বয়সী মেয়েদের ৯৩ শতাংশ অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।

সভায় মিস গোয়েন লুইস বলেন, ‘বাংলাদেশের জন্য বিগত বছরটি চ্যালেঞ্জিং ছিল, যদিও এই সময়ে বাংলাদেশের মানুষ আত্মমর্যাদাবোধ ও দৃঢ়তা প্রদর্শন করেছে। বাংলাদেশ একটি স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে এবং আমরা স্থায়ীভাবে সংস্কার, জলবায়ু অভিঘাত সহিষ্ণুতা, অর্থনৈতিক রূপান্তর, জেন্ডার সমতা এবং সমাজের কেউ যেন পিছিয়ে না পড়ে সেজন্য সহায়তা দিতে প্রস্তুত।’

সিদ্দিকী জাতিসংঘের অব্যাহত অংশীদারিত্বের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা পুনর্ব্যক্ত করেন এবং আশা প্রকাশ করেন যে, সম্প্রসারিত ইউএনএসডিসিএফ এই পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সহযোগিতা আরও সুদৃঢ় করতে একটি শক্তিশালী প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করবে।

সহযোগিতা কাঠামোটি বাংলাদেশে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনের জাতিসংঘের পাঁচটি কৌশলগত অগ্রাধিকারের নির্ধারণ করে: এর মধ্যে রয়েছে অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়ন, সমতার ভিত্তিতে মানব উন্নয়ন ও কল্যাণ, টেকসই, সহনশীল ও উপযোগী পরিবেশ, রূপান্তরমূলক, অংশগ্রহণমূলক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সুশাসন এবং জেন্ডার সমতা ও জেন্ডার-ভিত্তিক সহিংসতা নির্মূল অন্যতম।


banner close