ডিজিএফআইয়ের সাবেক মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) শেখ মামুন খালেদ, তার স্ত্রী নিগার সুলতানা খালেদ, কর কমিশনার আবু সাঈদ মো. মুস্তাক এবং জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই)-এর সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল টি. এম. জোবায়েরের ভায়রা ভাই খন্দকার আবুল কাইয়ুমের বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পৃথক দুটি আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আজ বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ জাকির হোসেন গালিব এ আদেশ দেন।
দুদকের জনসংযোগ বিভাগের উপ-পরিচালক মো. আকতারুল ইসলাম এ তথ্য জানান।
শেখ মামুন খালেদের বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞার আবেদনে বলা হয়, তার বিরুদ্ধে অবৈধভাবে শেয়ার ব্যবসা, ক্ষমতার অপব্যবহার, বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ এবং জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে অনুসন্ধান চলছে। তদন্তকালে জানা যায়, তিনি ও তার পরিবারের সদস্যরা দেশত্যাগ করে বিদেশে পলায়ন করতে পারেন। তাই সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে তাদের বিদেশ গমন নিষিদ্ধ করা জরুরি।
কর কমিশনার আবু সাঈদ মো. মুস্তাক ও খন্দকার আবুল কাইয়ুমের বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞার আবেদনে উল্লেখ করা হয়, এনএসআইয়ের সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল টি. এম. জোবায়েরের বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহণ, চাকরি প্রদানে ক্ষমতার অপব্যবহার এবং কোটি কোটি টাকার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া, তার নামে ও পরিবারের সদস্যদের নামে দেশে-বিদেশে সম্পদ ক্রয় ও অর্থ পাচারের বিষয়েও অনুসন্ধান চলছে।
আাবেদনে আরও বলা হয়, আবু সাঈদ মো. মুস্তাক ও খন্দকার আবুল কাইয়ুম নিজ উদ্যোগে ও বিভিন্ন উপায়ে টি. এম. জোবায়েরের অবৈধভাবে অর্জিত স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে স্থানান্তর করেছেন। তারাও দেশ ছেড়ে পালাতে পারেন। সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে তাদের বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা জারি করা প্রয়োজন।
জামালপুরে এক মেয়ে শিশু কে অপহরণের মামলায় সুজন নামের এক যুবককে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড প্রদান করেছে আদালত।
সোমবার (১০ নভেম্বর) জামালপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল ১ এর বিচারক মুহাম্মদ আব্দুর রহিম এই রায় ঘোষণা করেন। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ফজলুল হক বলেন, শরিয়তপুর জেলার ভেদরগঞ্জ এলাকার ব্যবসায়ী সুজন জামালপুরে বানিজ্য মেলায় ব্যবসা করতে এসে শহরের ফিশারী মোড় এলাকায় পিয়ারুল ইসলামের গোডাউন ভাড়া নেন। পরিচয়ের সুবাদে পিয়ারুলের ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ুয়া মেয়েকে বিয়ের প্রস্তাব দেয় সুজন। কিন্তু পরিবারের লোকজন প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় গত ২০২২ সালের ২১ নভেম্বর স্কুলে যাওয়ার পথে সুজন ও তার সহযোগীরা ওই মেয়ে শিশুকে একটি মাইক্রোবাসে তুলে অপহরণ করে। এই ঘটনায় একই বছরের ৪ ডিসেম্বর জামালপুর সদর থানায় মামলা দায়ের করেন অপহৃত মেয়ের মা নাছিমা বেগম। পরবর্তীতে প্রায় এক মাস পর অপহরণের শিকার ওই শিশুকে উদ্ধার করে পুলিশ। গত ২০২৩ সালের ১৯ এপ্রিল ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত সুজনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে পুলিশের তদন্তকারী কর্মকর্তা। মামলায় ১০ জন সাক্ষীর মধ্যে ৪ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে আসামীর অনুপস্থিতে আজ রায় ঘোষণা করেন বিচারক মুহাম্মদ আব্দুর রহিম। দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় রায়ে আসামী সুজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড প্রদান করা হয়। জরিমানার অর্থ ভূক্তভোগী শিশুকে প্রদানের আদেশ দেয় আদালত। মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট ফজলুল হক ও আসামী পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট মোবারক।
ক্যান্সার আক্রান্ত মা ও তার পঙ্গু ছেলের পাশে দাঁড়িয়েছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের ( বিএনপি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
‘ছেলে হয়ে যাচ্ছে পঙ্গু, মায়ের ক্যান্সার’— দেশের একটি বেসরকারি টেলিভিশন সম্প্রতি এই শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশের পর বিষয়টি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও ‘আমরা বিএনপি পরিবার’-এর প্রধান পৃষ্ঠপোষক তারেক রহমান-এর নজরে আসে। এরপর তিনি ‘আমরা বিএনপি পরিবার’-এর আহবায়ক আতিকুর রহমান রুমনকে নির্দেশ দেন অসহায় এই পরিবারটির সার্বিক খোঁজ-খবর নিতে।
এরই ধারাবাহিকতায় আজ সোমবার সকালে রাজধানীর পান্থপথের একটি হাসপাতালে সংশ্লিষ্ট পরিবারটির সাথে সাক্ষাৎ করতে যায় ‘আমরা বিএনপি পরিবার’ এর একটি প্রতিনিধি দল।
উক্ত সাক্ষাৎ অনুষ্ঠানে ‘আমরা বিএনপি পরিবার’-এর আহবায়ক আতিকুর রহমান রুমন-এর নেতৃত্বে প্রতিনিধি দল অসহায় পরিবারটির সদস্যদের কাছে চিকিৎসা সহায়তা তুলে দেয়। এ সময়ে রুমন সংশ্লিষ্ট পরিবারটির প্রতি বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান-এর সহমর্মিতার বার্তা পৌঁছে দেন এবং তাদের পাশে থাকার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন— ‘আমরা বিএনপি পরিবার’-এর উপদেষ্টা ইঞ্জিনিয়ার মোস্তফা-ই-জামান সেলিম, সংগঠনটির সদস্য সচিব কৃষিবিদ মোকছেদুল মোমিন মিথুন, সদস্য মাসুদ রানা লিটন, মুস্তাকিম বিল্লাহ, ফরহাদ আলী সজীব ও শাহাদাত হোসেন।
এছাড়া আরও উপস্থিত ছিলেন— জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম-সম্পাদক হাসনাইন নাহিয়ান সজীব, বুয়েট ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার আবু হানিফ, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক মাহমুদ ইসলাম কাজল, মিরপুর থানা বিএনপি নেতা শাকিল আহমেদ ও বনানী থানা বিএনপি নেতা সায়হাম সিকান্দার পাপ্পু, ছাত্রদল নেতা মশিউর রহমান মহান ও আব্দুল্লাহ আল মিসবাহ প্রমুখ।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, নিষিদ্ধ রাজনৈতিক দল বা সন্ত্রাসী সংগঠনগুলো যদি কোনো ধরনের বিক্ষোভের চেষ্টা করে, তবে আইন তার সর্বোচ্চ শক্তি প্রয়োগ করবে।
সোমবার (১০ নভেম্বর) সকালে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে তিনি লিখেন, “বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ (বিএএল), তাদের সহযোগী এবং গণহত্যাকারী নেত্রী সম্ভবত ভাবছেন, এটি আবারও ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবরের মতো সময়। তারা কল্পনা করছে—দুপুরবেলা ডজনখানেক মানুষকে হত্যা করে হাজার হাজার সন্ত্রাসীকে ঢাকার কেন্দ্রে পাঠিয়ে রাস্তাগুলো দখল করবে। দুঃখিত, এখন এটি নতুন বাংলাদেশ।”
শফিকুল আলম আরও বলেন, “জুলাই বিপ্লবীদের ধৈর্য পরীক্ষা করবেন না এবং মনে রাখবেন—এটি ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর নয়। এটি জুলাই—চিরদিনের জুলাই।”
তিনি দেশের মানুষকে সচেতন থাকার আহ্বান জানিয়ে সতর্ক করেছেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা নিষিদ্ধ কোনো দলের আন্দোলন ঠেকাতে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেবে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রশাসন এ ধরনের বিক্ষোভ রোধে নিরাপত্তা বাড়িয়েছে এবং সম্ভাব্য ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় নজরদারি জোরদার করা হয়েছে।
অনলাইনে মূল্য সংযোজন কর (মূসক) ফেরত বা ভ্যাট রিফান্ড প্রক্রিয়া চালু করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। ব্যবসায়ীদের দাবির প্রেক্ষিতে হয়রানি হ্রাসে অনলাইন ভ্যাট রিফান্ড মডিউল চালু করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
সোমবার (১০ নভেম্বর) এক প্রজ্ঞাপন ইস্যু করে সংস্থাটি জানিয়েছে অনলাইনে ভ্যাট রিফান্ড আবেদন গ্রহণ, প্রক্রিয়াকরণ এবং সরাসরি করদাতার ব্যাংক হিসাবে অনলাইনে ভ্যাট রিফান্ড স্থানান্তরের লক্ষ্যে অনলাইন ভ্যাট রিফান্ড মডিউল চালু হয়েছে। যখন কোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান কাঁচামাল বা সেবা কিনে, তখন সে ইনপুট ভ্যাট প্রদান করে। আবার সেই পণ্য বা সেবা বিক্রি করলে গ্রাহকের কাছ থেকে আউটপুট ভ্যাট গ্রহণ করে। যদি ইনপুট ভ্যাটের পরিমাণ আউটপুট ভ্যাটের চেয়ে বেশি হয়, তখন অতিরিক্ত ভ্যাট রিফান্ড হিসেবে দাবি করতে পারে।
এ বিষয়ে এনবিআরের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আল আমিন শেখ বলেন, ভ্যাট রিফান্ডের অর্থ সরাসরি করদাতার ব্যাংক হিসাবে স্থানান্তরের জন্য অনলাইন ভ্যাট রিফান্ড মডিউল চালু হয়েছে। এর মাধ্যমে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চলমান ডিজিটালাইজেশন কার্যক্রম আরেক ধাপ এগিয়ে গেল। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সব কার্যক্রম ধীরে ধীরে সম্পূর্ণ অটোমেশনের আওতায় আনার প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।
এতদিন ভ্যাট রিফান্ড না পাওয়ার অভিযোগ করতেন ব্যবসায়ীরা। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সঙ্গে বিভিন্ন বৈঠকে ভ্যাট রিফান্ডের দাবিও তুলতেন। এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আব্দুর রহমান খান ব্যবসায়ীদের ভ্যাট রিফান্ড দেওয়ার কথা জানিয়েছিলেন।
সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে এনবিআর চেয়ারম্যান এ বিষয়ে বলেন, ভ্যাট রিটার্ন সম্পূর্ণ অটোমেশনে চলে যাবে। ভ্যাটে আমরা কোনো পেপার রিটার্ন নেব না। সার্ভারে চাপ কমাতে ব্যবসাভেদে রিটার্ন দাখিলে শর্ত শিথিল করা হয়েছে।
বিদ্যমান ভ্যাট ব্যবস্থাপনার ইন্টিগ্রেটেড ভ্যাট অ্যাডমিনিস্ট্রেশন সিস্টেমের (আইভাস) সঙ্গে অর্থ বিভাগের আইবাস প্ল্যাস প্ল্যাসের আন্ত:সংযোগ স্থাপন করা হবে। করদাতার প্রাপ্য ভ্যাট রিফান্ডের অর্থ বিইএফটিএন'র মাধ্যমে সরাসরি করদাতাগণের নির্ধারিত ব্যাংক অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
অনলাইন প্রক্রিয়া
এনবিআর সূত্রে জানা যায়, নতুন এই মডিউলের মাধ্যম এ একজন করদাতা অনলাইনে মূসক রিটার্নের মাধ্যমে তার প্রাপ্য ভ্যাট রিফান্ডের আবেদন দাখিল করতে পারবেন। সংশ্লিষ্ট মূসক কমিশনারেট অনলাইনে প্রাপ্ত আবেদনটি ভ্যাট আইনের বিধি-বিধানগুলো যথাযথভাবে অনুসরণ করে যাচাই-বাছাই শেষে ভ্যাট রিফান্ড অনুমোদন করে তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে আইবাস আইবাস প্ল্যাস প্ল্যাসের মাধ্যমে বিইএফটিএন ব্যবহার করে সরাসরি করদাতার ব্যাংক হিসাবে স্থানান্তর করবে। নতুন প্রবর্তিত এ পদ্ধতিতে করদাতাদের ভ্যাট রিফান্ডের আবেদন দাখিল অথবা ভ্যাট রিফান্ডের চেক গ্রহণ করার জন্য ভ্যাট অফিসে যেতে হবে না বিধায় করদাতার সময় ও অর্থ সাশ্রয় হবে এবং রিফান্ড প্রদান প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
নতুন প্রবর্তিত মডিউলের মাধ্যমে রিফান্ড আবেদনগুলো প্রক্রিয়াকরণের লক্ষ্যে আইভাস এ ইতঃপূর্বে অনলাইনে বা ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে হার্ডকপির মাধ্যমে দাখিলকৃত সব অনিষ্পন্ন রিফান্ড আবেদনের অর্থসহ সমুদয় রিফান্ড প্রাপ্তির লক্ষ্যে করদাতাগণকে আইভাস সিস্টেমের মাধ্যমে অনলাইনে মূসক-৯.১ ফরমের মাধ্যমে নতুন করে আবেদন দাখিল করতে হবে।
আরও জানা যায়, মডিউলটি যথাযথভাবে ব্যবহার করে করদাতাদের দক্ষতার সঙ্গে দ্রুত সেবা প্রদানের লক্ষ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ইতোমধ্যে সব ভ্যাট কমিশনারেটের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য প্রশিক্ষণের আয়োজন করেছে। করদাতারা সংশ্লিষ্ট মূসক কমিশনারেটে যোগাযোগ করে অনলাইনে ভ্যাট রিফান্ড প্রাপ্তির বিষয়ে প্রয়োজনীয় তথ্য এবং সহযোগিতা গ্রহণ করতে পারবেন।
সম্প্রতি পেঁয়াজের দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পেয়েছে। এক সপ্তাহ ধরে বাজারে চলছে অস্থিরতা। কেজিপ্রতি হঠাৎ ৩০ থেকে ৪০ টাকা বৃদ্ধি পেয়ে দাম ১১০ টাকা ছাড়িয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে মধ্যস্বত্বভোগীদের সরাসরি কারসাজির তথ্য জানার পরও পেঁয়াজের দাম কমাতে আমদানির হঁশিয়ারি দিয়েছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন।
অন্যদিকে, আমদানির অনুমতি দেওয়ার সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন (বিটিটিসি)। গত বৃহস্পতিবার বাণিজ্য সচিব ও কৃষি সচিবকে পাঠানো চিঠিতে বিটিটিসি জানায়, বাজারে পেঁয়াজের দাম কেজিতে ১১০ টাকা ছাড়িয়েছে। তাই সরবরাহ বাড়াতে আমদানির অনুমতি দেওয়া যেতে পারে। যদিও ট্যারিফ কমিশন বলছে, বাজারে পেঁয়াজের অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধির পেছনে বাজার ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা ও মধ্যস্বত্বভোগীদের কারসাজি সরাসরি দায়ী।
এদিকে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, দেশে এখন পেঁয়াজের কোনো ঘাটতি নেই। অন্তত ৭৫ হাজার টন নতুন দেশি পেঁয়াজ চলতি মাসেই বাজারে আসছে। আমদানিকারকদের একটি অংশ আমদানির অনুমতি না পেয়ে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে পেঁয়াজের দাম বাড়ানোর চেষ্টা করছে। এ মুহূর্তে আমদানির অনুমতি দিলে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। তাদের দাবি, চলতি মাসে নতুন দেশি পেঁয়াজ বাজারে আসছে। তাই এখনই আমদানির অনুমতি দিলে কৃষক ন্যায্যমূল্য পাবেন না, যা দীর্ঘ মেয়াদে উৎপাদনে অনীহা সৃষ্টি করবে। বর্তমানে যথেষ্ট পরিমাণ পেঁয়াজ মজুত আছে এবং দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে তদারকি কার্যক্রম চলছে।
গতকাল রোববার বিকালে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে পেঁয়াজের বর্তমান বাজার পরিস্থিতি নিয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফকালে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, দেশে পেঁয়াজের বাম্পার ফলন হয়েছে। কোনো সংকট নেই। পেঁয়াজ সংরক্ষণের জন্য সরকার ১০ হাজার হাই ফ্লো মেশিনও সরবরাহ করেছে। আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে নতুন পেঁয়াজ বাজারে আসবে। ফলে বাজার স্বাভাবিক না হলে আমরা আমদানির অনুমোদন দেওয়ার সিদ্ধান্ত দেব।
তিনি বলেন, পেঁয়াজ আমদানির জন্য দুই হাজার ৮০০ আমদানির আবেদন পড়েছে এর ১০ শতাংশ যদি অনুমোদন দেওয়া হয় তাহলে বাজারে পেঁয়াজে সয়লাব হয়ে যাবে। কৃষক ক্ষতির মুখে পড়বেন। এজন্য আমরা সামগ্রিক বিবেচনায় পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি।
পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি মজুতদার বা সিন্ডিকেটের কারণে হয়েছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, আমার কাছে মজুতদারি বা সিন্ডিকেটের খবর নেই। সাময়িক সংকট তৈরি হয়েছে। আশাকরি দ্রুত সংকট কেটে যাবে। তিনি আরো বলেন, সীমান্তের ওপারে বাংলাদেশে রপ্তানির জন্য পেঁয়াজ মজুত করা হচ্ছে বলে আমাদের কাছে খবর রয়েছে।
ট্যারিফ কমিশনের আমদানির সুপারিশ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পেঁয়াজের উচ্চমূল্যের সুবিধা সরাসরি কৃষকের কাছে পৌঁছাচ্ছে না, বরং মধ্যস্বত্বভোগীরা এ সুযোগ নিচ্ছেন। আমদানির সুযোগ দিলে বাজারে মধ্যস্বত্বভোগীদের প্রভাব কমে যাবে এবং ভোক্তারা যৌক্তিক মূল্যে পেঁয়াজ কিনতে পারবেন।
ট্যারিফ কমিশন সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি দেশে পেঁয়াজের মূল্য অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ায় দেশে পেঁয়াজের চাহিদা, উৎপাদন, স্থানীয় বাজারমূল্য, আন্তর্জাতিক বাজারমূল্য, বিদ্যমান আমদানি শুল্কসহ সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করা হয়েছে।
সরকারি সংস্থা টিসিবির তথ্য বিশ্লেষণ করে ট্যারিফ কমিশন বলছে, ২০২৩ সালের মার্চে পেঁয়াজের মূল্য গড়ে কেজিপ্রতি ৩৩ টাকা ছিল, যা নভেম্বরে দাঁড়ায় ১১৫ টাকায়। অর্থাৎ, মার্চের তুলনায় নভেম্বরে দাম বাড়ে ২৪৮ শতাংশ। ২০২৪ সালের এপ্রিলে গড় মূল্য ছিল ৬৩ টাকা, যা নভেম্বরে বেড়ে হয় ১৩০ টাকা। সেই হিসাবে এপ্রিলের তুলনায় নভেম্বরে দাম বেড়েছে ১০৬ শতাংশ। চলতি বছরের মার্চে সর্বনিম্ন দর ছিল ৪২ টাকা, যা নভেম্বরে ১৫০ শতাংশ বেড়ে হয় ১০৫ টাকা। পর্যালোচনায় দেখা যায়, পেঁয়াজের দাম মার্চ-এপ্রিলের তুলনায় নভেম্বরে ১০০ শতাংশের বেশি বেড়ে গেছে। এ ধরনের সমস্যার দীর্ঘমেয়াদি সমাধান প্রয়োজন। এ বছরও মুড়িকাটা পেঁয়াজের রোপণ সময় বিলম্বিত হওয়ায় তা উৎপাদন মৌসুমেও বিলম্বিত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
কমিশন বলে, গত দুই-তিন মাসে পেঁয়াজের মূল্য স্থিতিশীল থাকলেও গত এক সপ্তাহে দাম বেড়েছে ৩৭ থেকে ৪২ শতাংশ। প্রতি বছর অক্টোবর-ডিসেম্বরে দাম বাড়ার প্রবণতা থাকলেও গত সপ্তাহে দাম বেড়েছে অস্বাভাবিকভাবে, যা বাজার ব্যবস্থাপনা ও মধ্যস্বত্বভোগীদের কারসাজির সরাসরি ইঙ্গিত দেয়।
ট্যারিফ কমিশন মতে, পার্শ্ববর্তী দেশে পেঁয়াজের দাম এখন কেজিতে প্রায় ১৬ টাকা, অর্থাৎ টনে ১৯৫ ডলার। সেই হিসাবে ১০ শতাংশ শুল্ককর বহাল রেখেও পেঁয়াজ আমদানি করা গেলে দেশে কেজিপ্রতি ৫০ টাকার কম দামে বিক্রি করা সম্ভব।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, অক্টোবর পর্যন্ত বাজারে দেশি পেঁয়াজের সরবরাহ থাকলেও, এখন তা কমে গেছে। ফলে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। কারণ এ বছর পেঁয়াজের আমদানি খুব বেশি হয়নি। দেশি পেঁয়াজের ওপর বাজার নির্ভর ছিল।
নভেম্বরে দাম ঊর্ধ্বমুখী থাকতে পারে উল্লেখ করে পেঁয়াজ আমদানি শুরু হলে দাম কমবে বলে দাবি ব্যবসায়ীদের। পেঁয়াজ আমদানি করা গেলে দেশে কেজিপ্রতি ৫০ টাকার কম দামে বিক্রি করা সম্ভব। বর্তমানে পেঁয়াজের ওপর ১০ শতাংশ শুল্ক প্রযোজ্য।
বাংলাদেশের পেঁয়াজ আমদানি প্রধানত ভারত থেকে হয়। এছাড়া তুরস্ক, পাকিস্তান, মিয়ানমার, চীন ও মিসর থেকেও পেঁয়াজ আসে। গত অর্থবছরে মোট চার লাখ ৮৩ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় পৃথক অভিযান চালিয়ে নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ২৫ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ।
গ্রেপ্তাররা হলেন- নওপাড়া ইউনিয়ন শ্রমিক লীগের সভাপতি রূপচান বেপারী, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের বিজ্ঞানবিষয়ক সম্পাদক আবরার খান তাহমিদ ওরফে তাহমিদ আশরাফ (২২), নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রায়হান খান আজাদ (২৭), শের-ই-বাংলা নগর থানা আওয়ামী লীগের সাবেক কোষাধ্যক্ষ এ বি এম নুরুল হক ওরফে ছোটন চৌধুরী (৬৯), শাহবাগ থানা আওয়ামী লীগের সাবেক শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক মো. আবুল কালাম আজাদ ওরফে বাবলু, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য মো. গিয়াস উদ্দিন খোকন (৭০), মিরপুর মডেল থানা আওয়ামী লীগের সহ-সাধারণ সম্পাদক মো. মিজানুর রহমান ভূইয়া, ভাষানটেক থানা যুবলীগের সদস্য মো. সিরাজুল ইসলাম ওরফে আহমাদ আলী (৪০), মোহাম্মদপুর থানা শ্রমিক লীগের সাবেক সহ-সভাপতি মো. জসিম ওরফে বিল্লাল।
গ্রেপ্তারদের মধ্যে আরও রয়েছেন- গেন্ডারিয়া থানা মৎস্যজীবী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. মাহবুব রহমান (৫৫), শ্যামপুর থানা যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. জাহাঙ্গীর আলম (৪০), কুমিল্লার মেঘনা উপজেলার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার আবুল কালাম (৪০), আশুলিয়া থানা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মো. শাহজালাল (৩৮), রায়েরবাগ ইউনিট যুবলীগের সেক্রেটারি মো. দেলোয়ার হোসেন ওরফে পলাশ, শরীয়তপুরের নড়িয়া থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইউনুস সরদার (৪৫), পল্টন থানা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আকবর হোসেন (৫২), পল্টন থানা যুবলীগের সাবেক সভাপতি মো. আবু সাঈদ (৫৬), নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মো. সামছুদ্দিন আহমেদ সেলিম (৬২), হবিগঞ্জের লাখাই উপজেলা কৃষক লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রায়হান উদ্দিন রেহান (৫১), আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ উপকমিটির সহ-সম্পাদক মো. মেজবাহ উদ্দিন প্রিন্স (৪৩), সিলেট মহানগর যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক মরিয়ম পারভীন, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. নাসির সরকার ওরফে গলাকাটা নাছির (৫৪), নেত্রকোনা শ্রমিক লীগের সদস্য আলী হোসেন (৩১), কুমিল্লার ৬নং নিকলি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. মানিক খন্দকার (৫২) এবং বরগুনার তালতলী উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. হাবিবুর রহমান কামাল (৪২)।
রোববার ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় রাজধানীর বিভিন্ন বিভাগে অভিযান পরিচালিত হয়। এর মধ্যে ডিবি মিরপুর বিভাগ তিনজন, রমনা বিভাগ তিনজন, সাইবার বিভাগ দুজন, মতিঝিল বিভাগ চারজন, ওয়ারী বিভাগ পাঁচজন, উত্তরা বিভাগ দুজন, তেজগাঁও বিভাগ দুজন, লালবাগ বিভাগ তিনজন এবং গুলশান বিভাগ একজনকে গ্রেপ্তার করেছে। গ্রেপ্তারদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তারা ঢাকা শহরে ঝটিকা মিছিলের মাধ্যমে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি ও আইনশৃঙ্খলা বিঘ্ন করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিল। পাশাপাশি তারা আগামী ১০-১২ নভেম্বর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনাসহ রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগের স্লোগান সংবলিত এক লাখ গ্যাস বেলুন ওড়ানোর পরিকল্পনা করছিলেন।
ডিসি তালেবুর রহমান জানান, রাজধানীর শাহবাগ, মিরপুর, রমনা, তেজগাঁও, মতিঝিল, ওয়ারী, উত্তরা, লালবাগ ও গুলশান এলাকায় পৃথক সময় ও স্থানে অভিযান পরিচালনা করে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ও নাশকতা প্রতিরোধে এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে। গ্রেপ্তারদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিষয়ে রায়ের তারিখ নির্ধারণ উপলক্ষে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন (রাষ্ট্রপক্ষ) অনিরাপদ বোধ করছে না।
রোববার ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে এক ব্রিফিংয়ে প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার হুসাইন তামীম সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন।
শেখ হাসিনার পাশাপাশি এ মামলার অপর দুই আসামি হলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ও পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। এর মধ্যে মামুন নিজের দোষ স্বীকার করে ‘অ্যাপ্রুভার’ (রাজসাক্ষী) হয়েছেন।
গত ২৩ অক্টোবর এ মামলায় যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হয়েছে। এখন মামলাটি রায়ের অপেক্ষায় রয়েছে। ১৩ নভেম্বর ট্রাইব্যুনাল জানাবেন, রায় কবে হবে।
সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার বলেন, শেখ হাসিনার মামলার রায়ের তারিখ নির্ধারণ করা হবে ১৩ নভেম্বর। এর জন্য প্রসিকিউশনের প্রস্তুতির কিছু নেই। প্রসিকিউশন অনিরাপদ বোধও করছে না।
তিনি আরও বলেন, প্রসিকিউশনের দায়িত্ব হলো ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা থেকে যেসব অভিযোগ আনা হয়, সেটি ট্রাইব্যুনালে প্রমাণ করার জন্য চেষ্টা করা। সাক্ষ্য উপস্থাপন করা, যুক্তিতর্ক তুলে ধরা। আর ট্রাইব্যুনালের দায়িত্ব হলো যুক্তিতর্ক এবং সাক্ষ্য বিবেচনায় রায় প্রদান করা। এর বাইরে প্রসিকিউশনের আর কোনো দায়িত্ব নেই। প্রসিকিউশন অন্য কোনো বিষয়ে খেয়াল করছে না।
এ সময় একজন সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, ১৩ নভেম্বর উপলক্ষে এরই মধ্যে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে কর্মসূচি দেওয়া হয়েছে। বিএনপির দিক থেকেও বেশ কথাবার্তা বলা হচ্ছে। রাজনীতি উত্তপ্ত হচ্ছে। ১৩ নভেম্বরকে কেন্দ্র করে আলাদা করে নিরাপত্তা বাড়ানো হচ্ছে কি না?
এর জবাবে প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো রাজনৈতিক কর্মসূচি গ্রহণ করবে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সেটার বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। প্রসিকিউশনের সঙ্গে রাজনৈতিক কর্মসূচি বা আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের কোনো সম্পর্ক নেই।
আরেকজন সাংবাদিক প্রশ্ন করেন প্রসিকিউশন বাড়তি কোনো চাপ অনুভব করছে কি না? এর জবাবে প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার বলেন, প্রসিকিউশন এই পরিস্থিতিতে কোনো বাড়তি চাপ অনুভব করছে না। প্রসিকিউশন শুধু মামলার অভিযোগ প্রমাণের জন্য আইনের মধ্য থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে।
সরকার থেকে পদত্যাগ করে ঢাকা থেকেই নির্বাচন করার কথা জানিয়েছেন স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।
রোববার কুমিল্লা-৩ আসনের বদলে ঢাকা-১০ আসনের ভোটার হতে ধানমন্ডি থানা নির্বাচন অফিসে গিয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে আলাপকালে এমনটা জানান তিনি।
উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘যেহেতু ঢাকা থেকে নির্বাচন করবো এটা মোটামুটি নিশ্চিত, সেই জায়গা থেকেই নিজের ভোটটা ঢাকায় নিয়ে আসা। কারণ, ভোটটা যাতে অপচয় না হয়। আমি যদিও ভোটার হয়েছি আগে, কিন্তু কোনও নির্বাচনে ভোট দিতে পারিনি। আমি ভোটার হওয়ার পর দুটি নির্বাচন হয়েছে, ২০১৮ ও ২০২৪ সালে। আপনারা সবাই জানেন এই সময়ে কেউ ভোট দিতে পারেনি। এই নির্বাচনে যাতে ভোট দিতে পারি, সেটি নিশ্চিত করালাম।’
ঢাকা-১০ আসন থেকে নির্বাচনের গুঞ্জন নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কোথা থেকে করবো এ বিষয়ে এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি, তবে ঢাকা থেকেই করবো। এখন পর্যন্ত পরিকল্পনা স্বতন্ত্র নির্বাচন করার, তারপরও দেখা যাক কী হয়। আমার কারও সঙ্গে কোনও আলোচনা হয়নি। কোনও রাজনৈতিক দল কোনও আসন ফাঁকা রাখলো কী রাখলো না, সেটি আমার দেখার বিষয় না। আমি আমার সিদ্ধান্ত এককভাবেই নেবো।’
ভোটার এলাকা পরিবর্তন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমার সরকার থেকে পদত্যাগ করে ধানমন্ডি এলাকায় থাকার পরিকল্পনা আছে। সেই জায়গা থেকেই যেখানে থাকবো, সেখানেই ভোটার হওয়া। নির্বাচন করার জন্য কোথায় ভোটার হলেন, সেটি গুরুত্বপূর্ণ না, দেশের নাগরিক ও ভোটার হলেই যথেষ্ট। এই জায়গা থেকেই ঢাকায় ভোটার হওয়া, যাতে নির্বাচনের সময় আমার ভোটটা অপচয় না হয়।’
কবে নাগাদ পদত্যাগ করতে পারেন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘নিশ্চিতভাবেই বলছি, আমি নির্বাচন করবো। তবে কবে নাগাদ পদত্যাগ করবো সেটি সরকারের উচ্চপর্যায়ের সঙ্গে বসে সিদ্ধান্তের ওপর অনেকটাই নির্ভর করছে। আলোচনা করে সে বিষয়ে দ্রুতই জানাবো।’
জুলাই সনদ নিয়ে অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘জুলাই সনদ নিয়ে এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না। সরকার জনগণকে নিয়েই ভাবছে। বিচার, সংস্কার, গণতান্ত্রিক রূপান্তর নিয়ে সমানভাবেই এগিয়ে চলছে। বিচারের বিষয়ে এ মাসের মধ্যেই গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হবে। আর সংস্কার কার্যক্রম চলমান। নির্বাচন নিয়ে সরকার খুব স্পষ্ট।’
রপ্তানির আড়ালে প্রায় ১২০০ কোটি টাকা (৯৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) বিদেশে পাচারের অভিযোগে বেক্সিমকো গ্রুপের চেয়ারম্যান এএসএফ রহমান ও ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমানসহ আরও কয়েকজনের বিরুদ্ধে দায়ের করা ১৭টি মানিলন্ডারিং মামলার অভিযোগপত্র দাখিলের অনুমোদন দিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
রোববার বিকেলে রাজধানীর মালিবাগে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি জানান সিআইডির প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি ছিগবাত উল্লাহ।
তিনি বলেন, সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিটের তদন্তে প্রমাণ মিলেছে ২০২০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে বেক্সিমকো গ্রুপের অন্তর্ভুক্ত ১৭টি করপোরেট প্রতিষ্ঠান বৈদেশিক বাণিজ্যের নামে বিপুল অর্থ বিদেশে পাচার করেছে।
তদন্তে জানা যায়, এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে-অ্যাডভান্স গার্মেন্টস, অ্যাপোলো এপারেলস, অটোম্যান লুপ অ্যাপারেলস, বিক্সটেক্স গার্মেন্টস, কসমোপলিটান অ্যাপারেলস, কজি অ্যাপারেলস, ইসেস ফ্যাশন ইন্টারন্যাশনাল, কাঁচপুর অ্যাপারেলস, মিড ওয়েস্ট গার্মেন্টস, পিয়ারলেস গার্মেন্টস, পিঙ্ক মেকার গার্মেন্টস, প্লাটিউর গার্মেন্টস, স্কাইনেট অ্যাপারেলস, স্প্রিংফুল অ্যাপারেলস, আরবান ফ্যাশন ও উইন্ট্রা ইস্প্রিন্ট গার্মেন্টস লিমিটেড।
এসব প্রতিষ্ঠান জনতা ব্যাংকের মতিঝিল শাখা থেকে এলসি খুলে রপ্তানি দেখালেও বিপরীতে বৈদেশিক মুদ্রা দেশে ফেরত আনেনি। বরং সেই অর্থ দুবাইভিত্তিক আর আর গ্লোবাল ট্রেডিং লিমিটেডের মাধ্যমে আমিরাত, সৌদি আরব, দক্ষিণ আফ্রিকা, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও আয়ারল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশে পাঠানো হয়েছে।
আর আর গ্লোবাল ট্রেডিং লিমিটেডের মালিকানা রয়েছে সালমান এফ রহমানের ছেলে আহমেদ শায়ান ফজলুর রহমান এবং চেয়ারম্যান এএসএফ রহমানের ছেলে আহমেদ শাহরিয়ার রহমানের নামে।
২০২০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে এই প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে ৯৬ লাখ ৯৬ হাজার ৬৮০ মার্কিন ডলার রপ্তানি দেখানো হলেও, এর বিপরীতে কোনো অর্থ দেশে ফেরত আসেনি। যা সরাসরি মানিলন্ডারিংয়ের শামিল বলে সিআইডির তদন্তে উঠে এসেছে।
২০২৪ সালের ১৭ ও ১৮ সেপ্টেম্বর মতিঝিল থানায় ১৭টি মামলা দায়ের করে সিআইডি। পরবর্তী তদন্ত শেষে অভিযোগপত্র দাখিলের অনুমোদন চাওয়া হলে তা সম্প্রতি অনুমোদন পায়।
সম্পদ ক্রোক ও নিষেধাজ্ঞা
আদালতের নির্দেশে আসামিদের ঢাকার দোহার উপজেলার প্রায় ২ হাজার শতক জমি ও স্থাপনা, গুলশানের দ্য এনভয় বিল্ডিংয়ের ৬ হাজার ১৮৯.৫৪ বর্গফুট ফ্ল্যাট এবং গুলশান ৬৮/এ, রোড ৩১’এর ২ হাজার ৭১৩ বর্গফুট ট্রিপ্লেক্স ফ্ল্যাট ক্রোক করেছে সিআইডি। এছাড়া আসামিদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করা হয়েছে এবং বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। ক্রোককৃত সম্পত্তির বাজারমূল্য আনুমানিক ৬০০ থেকে ৭০০ কোটি টাকা।
মামলাগুলোয় বেক্সিমকো চেয়ারম্যান এএসএফ রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান, আহমেদ শায়ান ফজলুর রহমান, আহমেদ শাহরিয়ার রহমানসহ মোট ২৮ জন ব্যক্তি ও ১৯টি প্রতিষ্ঠানকে আসামি করা হয়েছে।
এ বছরের জানুয়ারিতে অটোম্যান লুপ অ্যাপারেলসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওয়াসিউর রহমানকে গ্রেপ্তার করে সিআইডি। বর্তমানে কারাগারে থাকা সালমান এফ রহমানকেও এ মামলাগুলোয় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট জানায়, ট্রেড-বেইজড মানিলন্ডারিংয়ের এই জটিল তদন্ত দ্রুততম সময়ে সম্পন্ন করে রাষ্ট্রের আর্থিক স্বার্থ রক্ষায় আমরা নিরলসভাবে কাজ করছি।
প্রাথমিক অনুসন্ধান শেষে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগমের সাবেক দুই ব্যক্তিগত কর্মকর্তা (পিও) তুহিন ফারাবি ও মাহমুদুল হাসানের সম্পদের হিসাব চেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তাদেরকে ২১ কর্মদিবসের মধ্যে এ বিষয়ক তথ্য দিতে বলা হয়েছে।
পৃথকভাবে তাদের কাছে সম্পদ বিবরণী দাখিলের জন্য গত বৃহস্পতিবার নোটিশ পাঠানোর তথ্য দিয়েছিল দুদক। সংস্থাটির উপপরিচালক ও জনসংযোগ কর্মকর্তা আকতারুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চত করেন।
সাবেক দুই পিও এর সম্পদের হিসাব চাওয়ার বিষয়ে কমিশনের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে বলেন, দায়িত্ব পালনকালে অনিয়ম ও অস্বাভাবিক সম্পদ অর্জনের অভিযোগের ভিত্তিতে প্রাথমিক অনুসন্ধান শেষে এই নোটিশ পাঠানো হয়েছে। সম্পদ বিবরণী জমা পড়ার পর তা যাচাই-বাছাইয়ের জন্য পৃথক কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া হবে।
তুহিন ফারাবি ও মাহমুদুল হাসানের বিরুদ্ধে অভিযোগ- তারা চিকিৎসক বদলি, দরপত্র প্রভাবিত করা এবং প্রশাসনিক ‘তদবিরের মাধ্যমে বিপুল সম্পদ’ অর্জন করেছেন।
প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে অনুসন্ধান শেষের তথ্য দিয়ে তুহিন ফারাবি ও মাহমুদুল হাসনকে দেওয়া পৃথক নোটিশে বলা হয়, দুর্নীতি দমন কমিশনের ‘স্থির বিশ্বাস’ তারা ‘জ্ঞাত আয়ের বহির্ভূত’ স্বনামে/বেনামে বিপুল পরিমাণ সম্পদ/সম্পত্তির মালিক হয়েছেন।
‘সেহেতু দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ (২০০৪ সনের ৫ নং আইন) এর ধারা ২৬ এর উপ-ধারা (১) দ্বারা অর্পিত ক্ষমতাবলে আপনি আপনার নিজের, আপনার স্ত্রী এবং আপনার উপর নির্ভরশীল ব্যক্তিবর্গের স্বনামে/বেনামে অর্জিত যাবতীয় স্থাবর/অস্থাবর সম্পত্তি, দায়-দেনা, আয়ের উৎস ও উহা অর্জনের বিস্তারিত বিবরণী অত্র আদেশ প্রাপ্তির ২১ (একুশ) কার্যদিবসের মধ্যে এতসঙ্গে প্রেরিত ছকে দাখিল করিতে নির্দেশ দেওয়া যাইতেছে।’
এছাড়া নোটিশে তাদের সতর্ক করে বলা হয়, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সম্পদ বিবরণী দাখিল না করলে বা মিথ্যা তথ্য দিলে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪-এর ধারা ২৬(২) অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এর আগে দুদকের আবেদনের পর গত ২৭ মে আদালত তুহিন ফারাবি ও মাহমুদুল হাসানের বিদেশ যাওয়ায় নিষেধাজ্ঞা দেয়। গত ২১ মে দুদকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে মাহমুদুল হাসান সাংবাদিকদের বলেন, ‘অভিযোগগুলো ভিত্তিহীন। আমি উপদেষ্টার পিও পদ থেকেও পদত্যাগ করছি।’
সুপ্রিম কোর্টের তিন আইনজীবী গত ২৭ এপ্রিল তাদের বিরুদ্ধে তদবির বাণিজ্যের অভিযোগ এনে দুদকে অনুসন্ধানের আবেদন করেন। এরপর দুদক তাদের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অনুসন্ধান শুরু করে।
দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে থাকা সেনাবাহিনীর অর্ধেক সদস্যকে মাঠ থেকে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। এসময় তিনি ঢাকায় আওয়ামী লীগের লকডাউন কর্মসূচি ঘিরে ‘কোনো ধরনের আশঙ্কা নেই,’ বলেও উল্লেখ করেন।
রোববার সচিবালয়ে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত কোর কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
গত মঙ্গলবার সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক কোর কমিটির সভা হয়। ওই সভার সিদ্ধান্তের বরাতে সেদিন একটি জাতীয় দৈনিকের প্রতিবেদনে বলা হয়, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকা সেনাবাহিনীর ৫০ শতাংশ সদস্যকে মাঠ থেকে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে।
ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্রাম ও নির্বাচনকালীন প্রশিক্ষণের জন্য অর্ধেক সদস্যকে সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়, যা পরের দিন (বুধবার) থেকে কার্যকর হওয়ার কথা।
তবে রোববারের ব্রিফিংয়ে এ বিষয়ে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘এই মুহূর্তে সেনাবাহিনী আগে যেমন ছিল, তেমনই থাকবে।’
তিনি বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে থাকা সেনাবাহিনীর ৫০ শতাংশ সদস্যকে মাঠ থেকে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে না; এ সংক্রান্ত যা ছড়িয়েছে সেটা গুজব, এরকম কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।’
এদিকে ১৩ নভেম্বর কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ঢাকায় যে লকডাউন কর্মসূচি দিয়েছে, ব্রিফিংয়ে সে বিষয়েও প্রশ্ন করা হয় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে। জবাবে তিনি বলেন, ‘কোনো ধরনের আশঙ্কা নেই।’
আওয়ামী লীগের কর্মসূচিতে সরকার শঙ্কিত কি না জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, তারা লকডাউন বা শাটডাউনের যে কর্মসূচি রেখেছে সেই বিষয়ে সরকার শঙ্কিত নয়।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিন বলেছেন, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হতে যাচ্ছে মাইলফলক।
রোববার নির্বাচন কমিশনের (ইসি) অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে এক ভিডিও বার্তায় তিনি এমন মন্তব্য করেন।
সিইসি বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন হতে যাচ্ছে আমাদের জন্য একটা মাইলফলক। একদিকে সারাবিশ্বে তাকিয়ে আছে। আরেকদিকে দেশবাসী অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে। আমাদের তরুণ সমাজ বিশেষত যারা প্রথমবারের মতো ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পাচ্ছেন, তাদের যে আগ্রহ, তা আমাদের জন্য অত্যন্ত আশাব্যাঞ্জক। আপনার ভোট আপনার শক্তি। নিজে ভোটাধিকার প্রয়োগ করুন এবং অন্যকেও ভোটদানে উৎসাহিত করুন।
নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো, সানাউল্লাহ বলেন, প্রধান উপদেষ্টার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী, প্রথমবারের মতো প্রবাসী থেকে আপনার ভোট নিশ্চিতকল্পে নির্বাচন কমিশন একনিষ্ঠভাবে কাজ করে যাচ্ছে। আশাকরি সবার সহযোগিতায় এ উদ্যোগ সফল হবে।
নির্বাচন কমিশনার আবদুর রহমানেল মাছউদ বলেন, নির্বাচনকালীন আপনার দেওয়া একটা ভুল ও মিথ্যা তথ্যের কারণে সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ বাধাগ্রস্ত হয়ে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ব্যাহত হতে পারে। আমাদের সবার দায়িত্ব, যেন কোনো কোনো খবর অন্ধভাবে বিশ্বাস করে যেন বিভ্রান্ত না হই। সত্যিকারের উৎস থেকে খবর সংগ্রহ করতে হবে বা সরাসরি নির্বাচন কমিশন বা উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে।
নির্বাচন কমিশনার আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, প্রত্যেক প্রার্থী ও সবার প্রতি আহ্বান, আচরণ বিধি ও বিধি-বিধান কঠোরভাবে মেনে চলবেন।
নির্বাচন কমিশনার বেগম তাহমিদা আহমেদ বলেন, নারী পুরুষ প্রায় সমান সমান। ভোট অবশ্যই জেন্ডারবান্ধব হতে হবে। কাউকে অধিকার বঞ্চিত করার অধিকার কারো নেই। তারা যাতে সঠিকভাবে সর্বাধিক ভোট দিতে পারে আমরা সেভাবে কাজ করে যাচ্ছি।
ইসি সচিব আখতার আহমেদ বলেন, ভোট একটা সমন্বয়ের ব্যাপার। প্রত্যেকটা মানুষের সহযোগিতা প্রয়োজন। আমরা অঙ্গীকার করছি জাতিকে একটা ভালো নির্বাচন উপহার দেবো।
আগামী ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে তফসিল দিয়ে ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ভোটগ্রহণ করতে চায় নির্বাচন কমিশন। এজন্য সব প্রস্তুতি গুছিয়ে নিচ্ছে সংস্থাটি।
ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড থেকে ঋণের নামে ৯ হাজার ২৮৩ কোটি ৯৩ লাখ টাকা আত্মসাৎসহ সিঙ্গাপুরে অর্থ পাচারের অভিযোগে এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলমসহ ৬৭ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। লভ্যাংশ ও সুদসহ বর্তমানে ওই অর্থের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ৪৭৯ কোটি ৬২ লাখ টাকা। পরিমাণের দিক থেকে এটি দুদকের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ দুর্নীতির মামলা বলে জানিয়েছে দুদক।
রোববার রাজধানীর সেগুন বাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে সংস্থাটির জনসংযোগ বিভাগের সহকারী পরিচালক মো. তানজির আহমেদ এক নিয়মিত মিডিয়া ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান।
মামলার উল্লেখযোগ্য আসামিরা হলেন- এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলম, স্ত্রী ফারজানা পারভীন, ভাই সহিদুল আলম ও রাশেদুল আলম, এস আলম গ্রুপের বিভিন্ন কর্মকর্তা, ইসলামী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মাহবুব উল আলম ও মোহাম্মদ মনিরুল মাওলা, অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ কায়সার আলী, উপব্যবস্থাপনা পরিচালক তাহের আহমেদ চৌধুরীসহ সাবেক ও বর্তমান পরিচালক ও বিনিয়োগ কমিটির সদস্যরা।
দুদক জানায়, ২০১৭ সালে ব্যাংকটি এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে আসার পর ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের বিনিয়োগ কার্যক্রমে ব্যাপক অনিয়ম সংঘটিত হয়। ব্যাংকের আইটি সফটওয়্যার ‘টর্চ’-এ জালিয়াতি করে অনুমোদন ছাড়া ঋণসীমা বৃদ্ধি, মেয়াদ পরিবর্তন ও বিনিয়োগ অনুমোদন দেওয়া হয়।
২০২০ সালের ৭ সেপ্টেম্বর ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ এস আলম রিফাইন্ড সুগার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ঋণসীমা ২ হাজার ৪০০ কোটি টাকা থেকে ৩ হাজার ৮০০ কোটি টাকায় উন্নীত করে- যা ব্যাংকের মূলধনের ৩৫ শতাংশেরও বেশি। এতে ব্যাংক কোম্পানি আইন, ১৯৯১-এর ২৬ খ (১) ধারা এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের বিআরপিডি সার্কুলার নং-০২/২০১৪ ও ১৬/২০১৮ এর একক ঋণগ্রহীতা সংক্রান্ত বিধান স্পষ্টভাবে লঙ্ঘিত হয়।
অনুসন্ধান প্রতিবেদনে বলা হয়, এস আলম রিফাইন্ড সুগার, এস আলম স্টিলস ও এস আলম ট্রেডিং কোম্পানি লিমিটেডের অনুকূলে অপ্রতুল জামানত রেখে ঋণ অনুমোদন ও নবায়ন করা হয়। গ্রাহকের ব্যবসায়িক টার্নওভার, আয় ও পারফরম্যান্স সন্তোষজনক না থাকা সত্ত্বেও ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঋণ বৃদ্ধি অনুমোদন করেন।
এছাড়া, ব্যাংকের সাবেক উপব্যবস্থাপনা পরিচালক তাহের আহমেদ চৌধুরীর নেতৃত্বে আইটি বিভাগে সফটওয়্যার ম্যানিপুলেশনের মাধ্যমে প্রায় ৫ হাজার ৯০০ কোটি টাকা অনুমোদন বিহীনভাবে স্থানান্তর করা হয়। ১৩৪টি ডিলের মাধ্যমে আহসান এন্টারপ্রাইজ, ইউনিক ট্রেডার্স, এপারচার ট্রেডিং, আনসার এন্টারপ্রাইজসহ নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানে টাকা স্থানান্তর করা হয়, যা পরবর্তীতে এস আলম গ্রুপের স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান যেমন গ্লোবাল ট্রেডিং কর্পোরেশন, সোনালী ট্রেডার্স, এস এস পাওয়ারসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে স্থানান্তর করা হয়।
২০২৩ সালের ৫ ডিসেম্বর ইসলামী ব্যাংকের খাতুনগঞ্জ শাখা থেকে স্থানান্তরিত ২৯০ কোটি টাকার সমপরিমাণ ২ কোটি ৩৫ লাখ ৮০ হাজার মার্কিন ডলার সিঙ্গাপুরের ব্যাংক অব চায়না শাখায় এস এস পাওয়ার-১ লিমিটেডের অফশোর অ্যাকাউন্টে পাঠানো হয়, যা অর্থপাচারের স্পষ্ট প্রমাণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।
এ ঘটনায় মোট ৬৭ জনের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধি ১৮৬০ এর ৪০৯/৪০৬/১০৯/৪২০/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১/১২০(বি) ধারা, দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন ১৯৪৭ এর ৫(২) ধারা এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২ এর ৪(২) ও ৪(৩) ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে জানায় দুদক।
দুদক জানিয়েছে, এ মামলায় তদন্তের পরিপ্রেক্ষিতে আরও নতুন নাম যুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ইসলামী ব্যাংকের অর্থনৈতিক অনিয়মের এই ঘটনা এখন দেশের সবচেয়ে আলোচিত দুর্নীতির কেলেঙ্কারি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী সরকারের পতনের পর দেশের আর্থিক খাতে এস আলম গ্রুপের নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয় সামনে আসে। এস আলম গ্রুপের বিরুদ্ধে দুদকে আরও কয়েকটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।