দেশের মানুষ এখনও ভালোভাবে আম খাওয়ার সুবিধা না পেলেও এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেছে আম রপ্তানির কার্যক্রম। গতকাল যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, সৌদি আরব, কাতার ও বাহরাইনে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশ থেকে আম রপ্তানির কার্যক্রম শুরু হয়। এসব দেশে ১৩ টন আমের চালান পাঠানো হয়েছে। গতকাল প্রধান অতিথি হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে আম রপ্তানি উদ্বোধন করেন কৃষি উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
রাজধানীর ফার্মগেটে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল মিলনায়তনে আয়োজিত আম রপ্তানির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপদেষ্টা বলেন, আম রপ্তানি বাড়াতে সরকার কাজ করছে। কারণ বিদেশে বাংলাদেশের আমের বিপুল চাহিদা রয়েছে।
উপদেষ্টা এ সময় বলেন, আমের উৎপাদন ও রপ্তানি বাড়াতে প্রকল্পের মাধ্যমে আম উৎপাদন করা হচ্ছে। আম চাষীদের প্রয়োজন বিবেচনায় নিয়ে কৃষি প্রণোদনা দেওয়া হবে। স্বল্প মূল্যে হর্টিকালচার সেন্টার থেকে কৃষকরা উন্নত জাতের আমের চারা পাবেন। প্রণোদনার মাধ্যমে হর্টিকালচার সেন্টারে আমের চারার উৎপাদন বাড়াতে উপদেষ্টা এ সময় নির্দেশ দেন।
কৃষকদের স্বার্থ রক্ষার বিষয়ে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করতে সবাইকে আহ্বান জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, কৃষক যাতে উৎপাদিত ফসলের ন্যায্য দাম পান সে বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে।
দেশে কৃষি জমির পরিমাণ কমলেও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সুবাদে বিভিন্ন ফসলের উৎপাদন কয়েকগুণ বেড়েছে। আম চাষের ক্ষেত্রেও উৎপাদন বাড়ানোর প্রযুক্তি ও জাত উন্নয়নে গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোকে জোর দিতে হবে বলে উপদেষ্টা উল্লেখ করেন। আম চাষি ও রপ্তানিকারকগণ বাগানে আমের ব্যাগিং, প্যাকিং, পরিবহন, প্রণোদনাসহ বিভিন্ন সমস্যার কথা জানালে উপদেষ্টা বিষয়গুলো সমাধানে কাজ করার আশ্বাস দেন।
কৃষি সচিব ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. মো. মাহমুদুর রহমান, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. ছাইফুল আলম, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. নাজমুন নাহার করিম উপস্থিত ছিলেন।
বিগত ১৫ বছরের দুর্নীতি ও চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে দেশের আর্থিক খাত ‘অত্যন্ত খারাপ’ অবস্থায় আছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু।
গতকাল শনিবার রাজধানীতে ‘বাজেট ভাবনা ২০২৫-২৬’ শিরোনামে এক গোলটেবিল আলোচনায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘বাংলাদেশের আর্থিক খাতের দুটি সমস্যা- ব্যাংকের পরিচালনা কমিটি, তারা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে, রাজনৈতিক সহায়তায় একটি লুটপাট চালিয়েছে গত ১৫ বছর- এটি নিঃসন্দেহে আমরা বলতে পারি। আর দ্বিতীয়টি হলো, আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে একদম আইসিইউতে আছে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ।
যদি বিনিয়োগ আইসিইউতে থাকে, তাহলে যে বিনিয়োগকারী, সে তো বিনিয়োগ ফেরত নিতে পারছে না।’
আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, ‘একটি হলো ব্যাংকের নিজস্ব অনিয়ম, নিজস্ব দুর্নীতি; আরেকটি হলো সাধারণ নিয়মে অর্থনীতির সমস্যা। সে সমস্যার কারণে যে ঋণ নিয়েছে, সে এখন ঋণটি পরিশোধ করতে পারছে না। এই সবগুলোর সমন্বয়ে আসলেই; কিন্তু বাংলাদেশের আর্থিক খাত অত্যন্ত খারাপ অবস্থায় আছে। যে যাই বলুক।’
সব জায়গায় এখনো বৈষম্য বিদ্যমান রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের কোনো ক্ষেত্রে বৈষম্য নেই? আয়ের বৈষম্য, সামাজিক বৈষম্য, সম্পদের বৈষম্য, রাজনৈতিক বৈষম্য- সবই বাংলাদেশে দিন দিন বেশি হচ্ছে। সরকারের কার্যক্রম বাংলাদেশে প্রতিনিয়তই প্রতিটি ক্ষেত্রে একটি বৈষম্য সৃষ্টি করেছে। আমাদের এগুলো শনাক্ত করতে হবে।’
ভালো বাজেটের প্রত্যাশা করে তিনি বলেন, ‘ভালো বাজেট বলতে আমরা ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধিতে সাহায্য চাই, অর্থনৈতিক কার্যকলাপ বৃদ্ধি চাই, স্থানীয় শিল্পের উৎপাদন বৃদ্ধি চাই, উৎপাদন এবং ব্যবসা-বাণিজ্যকে আরও প্রতিযোগিতামূলক করতে চাই।’
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে প্রায় ১৬৮ জন পথশিশু নিহত হয়েছে। তবে জাতীয় পর্যায়ে নথিভুক্ত ১৩ হাজার ৫২৯ জন আহত ব্যক্তির মধ্যে শিশুদের বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যায়নি।
গতকাল শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের আবদুস সালাম মিলনায়তনে ঢাকার সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের ওপর ‘রাজনৈতিক সহিংসতার দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব: জুলাই-আগস্ট ২০২৪ প্রেক্ষাপট’ গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়। গ্লোবাল ফান্ড ফর চিলড্রেনের অর্থায়নে একমাত্র সোসাইটি ও লোকাল এডুকেশন অ্যান্ড ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (লিডো) এ গবেষণা পরিচালনা করে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গুলি বা ছররা গুলির কারণে গুরুতর চোখের আঘাতের জন্য ৫০৬ জনকে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এর মধ্যে অন্তত ৬০ জন শিশু ছিল। তাদের মধ্যে একজন ৯ বছর বয়সি পথশিশু চিরতরে দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছে। আটকের ফলে শিশুরা মারাত্মকভাবে প্রভাবিত হয়। কাওরান বাজারে ৪৩ জন পথশিশুকে কোনও আইনি সহায়তা ছাড়াই আটক রাখা হয়। তাদের মধ্যে শারীরিক নির্যাতনের চিহ্ন দেখা গেছে।
এছাড়া ব্র্যাক জানায়, অস্থিরতার সময় ঢাকার ৬২ শতাংশ পথশিশু আশ্রয়স্থল হারায়। সীমান্ত এলাকায় অভিভাবকহীন শিশুদের সংখ্যা ২০০ শতাংশ বৃদ্ধি পাওয়ার তথ্য দেয় ইউনিসেফ। এইচআরডাব্লিউ স্যাটেলাইট থেকে পাওয়া চিত্রে পুলিশি অভিযানের পরে অনেক আশ্রয়স্থল পরিত্যক্ত অবস্থায় দেখা গেছে।
এ গবেষণায় পথে বসবাসরত, প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ৭০ জন শিশুর সঙ্গে করা কেস স্টাডি থেকে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়েছে। কেস স্টাডিটি ব্যাপকভাবে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়া এলাকাগুলোকে চিহ্নিত করে, সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে সম্পন্ন করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে আরও জানানো হয়, আন্দোলন চলাকালীন পথশিশুরা চরম সহিংসতা ও বিশৃঙ্খলার মুখোমুখি হয়। ৭২ শতাংশ শিশু সহিংসতার ফলে আক্রমণের শিকার হয়েছে, কেউ সরাসরি আঘাত পেয়েছে, আবার কেউ নির্মম দৃশ্য প্রত্যক্ষ করেছে। প্রায় অর্ধেক, অর্থাৎ ৪৮ শতাংশ পথশিশু সরাসরি আহত হয়। এর মধ্যে মাথায় আঘাত, ছররা গুলির আঘাতপ্রাপ্ত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। ১৩ শতাংশ শিশুর গুলিবিদ্ধ হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। অতিরিক্ত ২৬ শতাংশ শিশু শারীরিকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত না হলেও, বন্ধু বা পরিচিতদের মারধর ও আটক হতে দেখেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সহিংসতা শুরুর আগে পথশিশুদের মধ্যে সচেতনতার মাত্রা ছিল ভিন্ন। ৪১ শতাংশ শিশুর সহিংসতা সম্পর্কে কোনও ধারণাই ছিল না। তারা কেবল চারপাশে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়লে বিষয়টি জানতে পারে। অন্যদিকে, ৩৬ শতাংশ শিশু আন্দোলনের লক্ষ্য সম্পর্কে অবগত ছিল। এছাড়া অংশগ্রহণও ছিল বিচিত্র; ৫৫ দশমিক ৭ শতাংশ শিশু সক্রিয়ভাবে সহিংসতায় যুক্ত হয় এবং ৩৪ দশমিক ৩ শতাংশ ব্যক্তি-উদ্যোগ বা সংহতির কারণে অংশ নেয়। অংশগ্রহণ বা বিরত থাকার সিদ্ধান্ত গঠনে ব্যক্তিগত বিশ্বাস, সহকর্মী ও রাজনৈতিক দলভুক্ত ব্যক্তির প্রভাব এবং নিরাপত্তাজনিত উদ্বেগের বিষয়টি প্রভাব ফেলেছে।
এতে বলা হয়, অনেক পথশিশুর জন্য সাধারণ জীবনধারণই কঠিন হয়ে পড়ে; কারফিউয়ের কারণে ৫৪ শতাংশ শিশু খাদ্য, পানি বা আশ্রয়ের জন্য সংগ্রাম করেছে এবং ৬০ শতাংশ শিশুর আয় ব্যবস্থাও ব্যাহত হয়েছে। এইসব কষ্টের মধ্যেও কেউ কেউ বন্ধু, পরিচিত ব্যক্তি ও কমিউনিটির সহায়তায় কিছুটা সামলে উঠতে পেরেছে। তবে মানসিক ক্ষতি ছিল গভীর। ৬১ শতাংশ শিশু মানসিক আঘাত, ভয় ও আতঙ্কের কথা জানিয়েছে; প্রায় অর্ধেক শিশুই দুঃস্বপ্ন বা মানসিকভাবে ভেঙে পড়ার অভিজ্ঞতা ভাগ করেছে এবং ৭৫ শতাংশ এর বেশি শিশু এখনও চাপ, দুঃখ ও উদ্বেগ নিয়ে বেঁচে আছে। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহিংসতা থেকে সৃষ্ট ট্রমা ছিল ব্যাপক।
লিডোর গবেষণা প্রতিবেদন বলছে, সহিংসতা পরবর্তী পর্যায়ে ৬১ শতাংশ শিশু এখন তাদের এলাকায় তুলনামূলক নিরাপদ বোধ করে; পুলিশ ও গ্যাং-সংক্রান্ত অরাজকতার সংখ্যা কমেছে বলে মনে করছে, তবে মানসিক ক্ষত রয়ে গেছে। সহায়তার ক্ষেত্রে ৪১ শতাংশ শিশু এনজিও বা কমিউনিটির সাহায্য পেয়েছে, ৩৪ শতাংশ শিশু পরিচিত ব্যক্তি, ২২ শতাংশ কমিউনিটি নেটওয়ার্কের ওপর নির্ভর করেছে, আর মাত্র ১৯ শতাংশ পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে পেরেছে। তবুও অনেকেই এখনও চরম পরিবেশে টিকে আছে। ৩৩ শতাংশ ভিক্ষাবৃত্তি, ২৩ শতাংশ আবর্জনা বা বোতল কুড়িয়ে জীবন চালায়। অনেকে রেলস্টেশন কিংবা রাস্তার পাশে ঘুমায়। যদিও ৪০ শতাংশ শিশু নিজেদের শারীরিকভাবে সুস্থ বলে জানিয়েছে, তাদের সার্বিক পরিস্থিতি এখনও ঝুঁকিপূর্ণ।
গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপনকালে প্রধান গবেষক অধ্যাপক ড. নিলয় রঞ্জন বিশ্বাস বলেন, বিগত তিন দশক ধরে রাজনৈতিক সহিংসতায় পথে বসবাসরত শিশুরা প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে ব্যবহার হয়ে আসছে। এর ফলে, এসব শিশু শারীরিক ও মানসিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনেও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সাধন করতে শিশুদের ব্যবহার করতে দেখা গেছে এবং সহিংসতার কারণে তাদের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়েছে। সহিংসতার ফলে হতাহতের সংখ্যা এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা ঘিরে নানা বিশ্লেষণ ও বিতর্ক দেখা গেলেও সেখানে ঢাকার পথে বসবাসরত অবহেলিত শিশুদের ওপর এই সহিংসতার প্রাণঘাতী প্রভাব মূলধারার আলোচনাগুলোতে উপেক্ষিতই থেকে গেছে। পরবর্তী সময়ে ক্রমাগত আমাদের স্মৃতির বাইরে চলে গেছে। এই শিশুদের অভিজ্ঞতা শুধু শারীরিক আঘাতেই সীমাবদ্ধ ছিল না; তারা দীর্ঘমেয়াদি মানসিক ট্রমা, জীবিকার পথে বাধা, বাস্তুচ্যুতির মুখোমুখি হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, সুবিধাবঞ্চিত শিশুরা পথকে কেন্দ্র করেই তাদের জীবিকা নির্বাহ করে। তাদের আশ্রয়স্থলও হয় এই পথ। তাই রাজপথে সংগঠিত এই রাজনৈতিক সহিংসতা, তাদের এই দুর্বিষহ সামগ্রিক জীবন প্রবাহকে আরও মারাত্মক ঝুঁকির মুখোমুখি করে তোলে।
জুন মাসের ডিজেল, পেট্রল ও অকটেনের দাম কমিয়েছে সরকার।
আজ শনিবার জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিবৃতিতে এ কথা জানানো হয়।
এতে বলা হয়, বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য হ্রাস/বৃদ্ধির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে দেশে ভোক্তাপর্যায়ে প্রতিমাসে জ্বালানি তেলের মূল্য নির্ধারণের লক্ষ্যে সংশোধিত প্রাইসিং ফর্মুলার আলোকে জুন ২০২৫ মাসের জন্য তুলনামূলক সাশ্রয়ী মূল্য জ্বালানি তেল সরবরাহ নিশ্চিতকরণের নিমিত্ত ডিজেলের বিক্রয়মূল্য প্রতি লিটার ১০৪ টাকা হতে দুই টাকা কমিয়ে ১০২ টাকা, অকটেন ১২৫ টাকা হতে তিন টাকা কমিয়ে ১২২ টাকা, পেট্রলের মূল্য ১২১ টাকা হতে তিন টাকা কমিয়ে ১১৮ টাকা এবং কেরোসিনের মূল্য ১১৪টাকায় পুনর্নির্ধারণ/সমন্বয় করা হয়েছে।
নির্ধারিত মূল্য ১ জুন থেকে কার্যকর হবে বলেও জানানো হয়।
এর আগে, গত ৩০ এপ্রিল জ্বালানি তেলের দাম লিটারপ্রতি এক টাকা কমিয়ে প্রজ্ঞাপন দিয়েছিল মন্ত্রণালয়। তখন থেকে ডিজেল প্রতি লিটার ১০৪ টাকা, কেরোসিন ১০৪ টাকা, অকটেন ১২৫ টাকা এবং পেট্রল ১২১ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বিশ্ববাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে গত বছরের মার্চ থেকে জ্বালানি তেলের স্বয়ংক্রিয় মূল্য নির্ধারণ করে আসছে সরকার। এই হিসেবে প্রতি মাসে নতুন দাম ঘোষণা করছে সরকার।
পানি সম্পদ এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন,পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জনগণের সাথে আরও নিবিড় সম্পর্ক স্থাপন করতে হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জনগণ থেকে প্রাপ্ত অভিযোগ ও আবেদনের উত্তর দিতে হবে, জনগণকে আশ্বস্ত করতে হবে, তাদের অভিযোগগুলো আমলে নিয়ে দ্রুততম সময়ের মধ্যে প্রতিকারসহ নিষ্পত্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
উপদেষ্টা আজ (শনিবার) ঢাকায় গ্রীন রোডস্থ পানি ভবনের মাল্টিপারপাস হলে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৫৩ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে 'পানি খাতে সংস্কার' শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তৃতায় এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, এই বর্ষার সময়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ০৯ টি জোনের প্রধান প্রকৌশলী-সহ ঊদ্ধতন প্রকৌশলীদের নিয়মিত মাঠে যেতে হবে। তিনি জোনের প্রধান প্রকৌশলীদের মাঠ পর্যায়ে মনিটরিং কার্যক্রম জোরদার করার নির্দেশ দেন যাতে করে মানুষের ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনতে তাৎক্ষণিক সাড়া দেয়া যায়।
পানি সম্পদ উপদেষ্টা আরও বলেন, আমরা আসন্ন বর্ষাকে সামনে রেখে একটা টাস্কফোর্স গঠন করতে চাই যেখানে পানি সম্পদ
সচিবের নেতৃত্বে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ডিজি, এডিজি এবং সারাদেশের ০৯ জোনের ০৯ জন প্রধান প্রকৌশলী সমন্বয়ে একটা টাস্কফোর্স কাজ করবে। এই টাস্কফোর্স দেখবে এই বর্ষায় কোথায় কোথায় জরুরি ভিত্তিতে আমাদের যেতে হবে, জরুরী ভিত্তিতে কোথায় কোথায় কাজ করতে হবে। তিনি বলেন, সারাদেশের ০৯ জোনের ০৯ জন প্রধান প্রকৌশলীরদের মধ্যে থেকে যে প্রধান প্রকৌশলীর কাজ সবচেয়ে ভালো হবে এবং যার বিরুদ্ধে দুর্নীতির কোনো অভিযোগ থাকবেনা, বর্ষা শেষে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় তাকে একটা পুরস্কার দেবে। একই সাথে ০৯টি জোনের তরুণ প্রকৌশলীদের মধ্যে যে সবচাইতে ভালো কাজ করবে, যার বিরুদ্ধে কোনো দুর্নীতির অভিযোগ থাকবে না তাকেও পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় পুরস্কৃত করবে। হৃদয়ে ধারণ করে কাজ করার জন্য তিনি সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আহ্বান জানান।
উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসান বলেন, খুব সহসাই তুরাগ নদী দখল ও দূষণমুক্ত করনের কর্মপরিকল্পনাটা চূড়ান্ত হয়ে যাচ্ছে, আমরা আশা করছি আগামী সেপ্টেম্বর মাস থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে তুরাগ নদী দখল ও দূষণমুক্তকরণের কাজটা শুরু করে দিতে পারবো। এক্ষেত্রে এডিবি তুরাগের সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ করে দিবে বলে আশ্বস্ত করেছে।
উপদেষ্টা আরও বলেন, বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, বালু এবং শীতলক্ষ্যা এ ৪টি নদী দখল ও দূষণমুক্তকরণের পরিকল্পনাটা আমরা চূড়ান্ত করে দিয়ে যাব যাতে পরের সরকার এসে এই নদীগুলো দূষণমুক্তকরণের কাজ এগিয়ে নিতে পারে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের ৬৪ টি জেলা থেকে ৬৪ টি নদী পরিষ্কারকরণের কর্মপরিকল্পনা আমরা এনেছি। তার থেকে ৭ বিভাগের ৭টি নদী, কক্সবাজারের বাঁকখালি এবং ঢাকার চারপাশের ০৪টি সহ মোট ১২টি নদী দখল ও দূষণমুক্ত করণের পরিকল্পনা আমরা চূড়ান্ত করছি। এছাড়া লবণদহ, হাড়িধোয়া এবং সুতাং এই তিনটি নদী দখল ও দূষণমুক্তকরণের কাজটি আমরা জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্টফান্ড থেকে বরাদ্দ দিয়ে কাজ করা শুরু করে দেব।
অনুষ্ঠানে পানি উন্নয়ন বোর্ডের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ড. শ্যামল চন্দ্র দাস দিবসের তাৎপর্য উল্লেখ করে বক্তব্য উপস্থাপন করেন।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব নাজমুল আহসান এবং ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক মোঃ তাহমিদুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) মিজানুর রহমান। আলোচনা অনুষ্ঠানে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড.আ.ন.ম বজলুর রশীদ-সহ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বৃন্দ, মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বিভিন্ন দপ্তর-সংস্থার প্রধানগণ, পানি উন্নয়ন বোর্ডের অতিরিক্ত মহাপরিচালকগণ, প্রধান প্রকৌশলী-সহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
চিকিৎসক-কর্মচারীদের সঙ্গে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহতদের সংঘর্ষের জেরে জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইন্সটিটিউট ও হাসপাতালে সেবা কার্যক্রম চারদিন ধরে বন্ধ রয়েছে। এতে, বিপাকে পড়েছেন রোগী ও স্বজনরা।
শনিবারও (৩১ মে) হাসপাতালের ফটক বন্ধ থাকায় ঢাকার বাইরে থেকে যারা চিকিৎসা নিতে এসেছেন, তাদেরও ফেরত যেতে হয়েছে। অচলাবস্থা শেষে চিকিৎসাসেবা কবে চালু হবে, সে বিষয়েও কিছু বলছে না কর্তৃপক্ষ।
বুধবার (২৮ মে) সংঘর্ষের ঘটনা ঘটলেও চারদিন ধরে চিকিৎসা সেবা বন্ধ করে রেখেছে কতৃপক্ষ। হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে রোগীরা আসছেন। কিন্তু ফটক বন্ধ থাকায় ভেতরে যেতে পারছেন না তারা, গেইটের বাইরে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে চলে যেতে হচ্ছে।
এদিকে, বিপাকে পড়েছেন চিকিৎসাধীন ব্যক্তিরাও। জুলাই যোদ্ধা মনির নিজের দুর্দশার কথা তুলে ধরে বলেন, ‘কি আর করবো ভাই বলেন? কাকে দুঃখের কথা বলবো? চারদিন ধরে হাসপাতাল বন্ধ, চিকিৎসা সেবা বাদ দেন। খাবারও দেওয়া হচ্ছে না। তাই বাসায় চলে আসতে হয়েছে।’
এ বিষয়ে হাসপাতালের কনসালটেন্ট সঞ্জয় কুমার বলেন, ‘আমাদের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জান-এ আলম মৃধার নির্দেশনায় আমরা চিকিৎসকরা কেউ হাসপাতালে যাচ্ছি না। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তখন ওনার নির্দেশনাতেই সেবা দিতে যাবো।
তিনি আরও জানান, ‘২৮ মে জুলাই আন্দোলনে আহতরা তাদের চিকিৎসা সেবা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন এবং এক সময় আমাদের স্টাফদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। সেদিন সেবা চালু ছিলো। তবে ২৯ মে থেকে পুরোদমে সেবা বন্ধ।
এ ব্যাপারে ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জান-এ আলমের সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও পাওয়া যায়নি। তবে সংবাদমাধ্যমকে তিনি বলেন, ‘পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর সঙ্গে আমরা যোগাযোগ করেছি। নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আগ পর্যন্ত কাজে ফিরতে চাচ্ছেন না চিকিৎসক ও নার্সরা। আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে এ বিষয়ে কোনো নিশ্চয়তা পাইনি।’
দ্রুতই চিকিৎসা সেবা চালু করতে চেষ্টা করছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘কিন্তু কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতেও সতর্ক থাকতে হচ্ছে।’
গত বুধবার (২৮ মে) চিকিৎসা সংক্রান্ত ত্রুটি হচ্ছে— এই অভিযোগে হাসপাতালটির চিকিৎসক ও স্টাফদের হামলা করে জুলাই আন্দোলনের আহতরা। এতে চিকিৎসকসহ প্রায় ১৫ জন স্টাফ আহত হন। এরপরই ন চিকিৎসক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা হাসপাতাল ছেড়ে চলে গেলে বন্ধ হয়ে যায় সেবা কার্যক্রম।
এর আগে, গত রবিবার (২৫ মে) চক্ষু বিজ্ঞান হাসপাতালে চিকিৎসাধীন চার জুলাইযোদ্ধা বিষপান করেন। তাদের অভিযোগ— উন্নত চিকিৎসা বা পুনর্বাসনের বিষয়ে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না।
এরপর মঙ্গলবার দুপুরে চক্ষু বিজ্ঞান হাসপাতালের পরিচালককে অবরুদ্ধ করেন আহতরা। একঘণ্টার বেশি সময় অবরুদ্ধ থাকার পর হাসপাতাল সেনাবাহিনীর সহায়তায় তাকে উদ্ধার করা হয়।
এরপর বুধবার সকাল থেকে, নিরাপত্তার দাবি তুলে কর্মবিরতিতে যান হাসপাতালের কর্মচারীরা। এরপরেই, হাসপাতালের কর্মচারীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন জুলাই আন্দোলনে আহতরা।
আগামী ২ জুন ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য জাতীয় বাজেট ঘোষণা করতে যাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। দেশের অর্থনীতি নানা চাপের মুখে পড়লেও এই বাজেট স্থিতিশীলতা ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
জুলাই অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর এটি হতে যাচ্ছে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম বাজেট। আগামী ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচন দিলে অন্তর্বর্তী সরকারের একমাত্র বাজেট হবে এটি।
বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ অনিশ্চয়তার মধ্যে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, বেসরকারি বিনিয়োগ জোরদার করা এবং সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে মজবুত করার মতো চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি বর্তমান সরকার।
সংসদ না থাকায় ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের বাজেট এবার রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার মাধ্যম বিটিভিসহ অন্যান্য বেসরকারি গণমাধ্যমে একযোগে প্রচার করা হবে। আগামী ২ জুন সোমবার বিকাল ৪টায় অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের বাজেট বক্তৃতা সম্প্রচার করা হবে। বৃহস্পতিবার এক তথ্যবিবরণীতে এমন খবর দিয়েছে সরকার।
সবশেষ সংসদের বাইরে বাজেট দেওয়া হয়েছিল ২০০৮ সালে। তখন ক্ষমতায় ছিল সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার। ওই বছরের ৯ জুন তখনকার অর্থ উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম ২০০৮-০৯ অর্থবছরের জন্য ৯৯ হাজার ৯৬২ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করেছিলেন।
এবারের বাজেট কিছুটা ছোট হবে বলে ধারণা করছেন বিশ্লেষকরা। ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার বাজেট দিয়ে গিয়েছিলেন আওয়ামী লীগ সরকারের অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী।
জুলাইয়ে নতুন অর্থবছর শুরুর পর ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। এবার বাজেটের আকার সামান্য ছোট হবে বলে ধারণা দিচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা। খসড়া অনুযায়ী বাজেটের আকার ঠিক হয়েছে ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার মত।
ওই অংক চূড়ান্ত হলে স্বাধীনতার পর এই প্রথম বাজেটের আকার আগের অর্থবছরের তুলনায় কমছে।
অর্থনৈতিক শৃঙ্খলা বজায় রাখার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এবারের বাজেট কমানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা। ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট ঘাটতি দুই লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকা ধরা হয়েছে, যা চলতি বছরের দুই লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকার থেকে কম।
অর্থাৎ বাজেট ঘাটতি মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৩.৬২ শতাংশ হবে। এই ঘাটতি পূরণের জন্য সরকার বিদেশি ঋণ, ব্যাংক ঋণ এবং সঞ্চয়পত্রের ওপর নির্ভর করবে।
অর্থ উপদেষ্টা জানান, জিডিপির উচ্চাকাঙ্ক্ষী প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৫.৫ শতাংশ, যা চলতি বছরের সংশোধিত বাজেটের ৫.২৫ শতাংশের থেকে কিছুটা বেশি। তবে বিশ্বব্যাংক, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল এবং এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ৫ শতাংশের নিচে প্রবৃদ্ধি অনুমান করছে।
সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে। এটিকে সাত শতাংশে নামিয়ে আনতে চাচ্ছে সরকার। যদিও অর্থনীতিবিদরা সতর্ক করে বলেছেন যে, চলমান মূল্যস্ফীতির চাপ এই লক্ষ্য পূরণে বাধা সৃষ্টি করতে পারে।
নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠীর আর্থিক সুরক্ষার জন্য বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি সম্প্রসারিত হবে। সুবিধাভোগীর সংখ্যা ও ভাতা উভয়ই বৃদ্ধি পাবে। কৃষি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং প্রযুক্তি খাত বাজেটের অগ্রাধিকারপূর্ণ খাত হিসেবে বিবেচিত হয়েছে।
বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) বরাদ্দ চলতি রাজস্ব বছরে দুই লাখ ৬৫ হাজার টাকা থেকে কমিয়ে দুই লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা রাখা হয়েছে। এতে সরকার যে বিনিয়োগবান্ধব পদক্ষেপ নিচ্ছে, তা স্পষ্ট হয়ে উঠছে।
আসন্ন বাজেটকে ব্যবসা-বান্ধব আখ্যায়িত করে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, বিনিয়োগ বৃদ্ধি, জিডিপির প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান তৈরির লক্ষ্যে করনীতি প্রণয়ন করা হয়েছে।
২০২৫-২৬ অর্থবছরের রাজস্ব সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পাঁচ লাখ ১৮ হাজার কোটি টাকা। যা চলতি অর্থবছরের চার লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা থেকে বৃদ্ধি পেয়েছে। যদিও পাঁচ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকার আগ্রাসী লক্ষ্য নির্ধারণ করতে পরামর্শ দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা সংস্থা আইএমএফ।
অনুন্নয়ন বাজেট পাঁচ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকায় পৌঁছাবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে। এতে বর্তমান রাজস্ব বছরের বরাদ্দের চেয়ে যা ২৮ হাজার কোটি টাকা বাড়বে।
সরকার রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতি পূরণের জন্য বিশেষ বরাদ্দ রাখবে। কৃষি, সার ও বিদ্যুতের জন্য ভাতা অব্যাহত থাকবে। তবে, বাজেট ঘোষণার প্রাক্কালে জনমনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। কেউ শক্তিশালী সামাজিক নিরাপত্তা ও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের আশা করছেন, আবার কেউ বাস্তবায়নের জটিলতাকে নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন।
কাঠামোগত সংস্কার ও কার্যকর বাস্তবায়ন ছাড়া বাজেটের উচ্চাকাঙ্ক্ষী লক্ষ্য পূরণ কঠিন হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন অর্থনীতিবিদরা। তারা সম্পদ কর বাড়ানো এবং কর আদায় ব্যবস্থার উন্নয়নের মাধ্যমে সরাসরি কর বৃদ্ধি এবং পরোক্ষ করের ওপর নির্ভরতা কমানোর পরামর্শ দিয়েছেন।
আজ বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস।
বিকল্প খাদ্য ফসল উৎপাদন ও বিপণনের সুযোগ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং টেকসই ও পুষ্টিকর ফসল চাষে তামাক চাষিদের উৎসাহিত করতে এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘গ্রো ফুড, নট টোব্যাকো’।
তামাক উৎপাদনে কোম্পানির কূটকৌশল উন্মোচনও এবারের বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবসের একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য। ‘তামাক নয়, খাদ্য ফলান’ এই প্রতিপাদ্য নিয়ে বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে দিবসটি উদযাপিত হচ্ছে।
দিবসটি উদযাপন উপলক্ষে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য বিভাগের আওতাধীন জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেল (এনটিসিসি) প্রতিবছরের মত এবারও যথাযথ গুরুত্বের সাথে দিবসটি উদযাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
এ লক্ষ্যে আজ সকাল ৮ টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যায়য়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে থেকে একটি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়।
তামাক চাষ কৃষকের স্বাস্থ্য, মাটির স্বাস্থ্য এবং সার্বিকভাবে গোটা জনস্বাস্থ্য ও পৃথিবীর স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে। দীর্ঘমেয়াদে বৈশ্বিক প্রতিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং খাদ্য সংকট সৃষ্টিতেও ভূমিকা রাখে তামাক। বিশ্বব্যাপী ক্রমবর্ধমান খাদ্য সংকটের পেছনে সংঘাত-যুদ্ধ, জলবায়ু পরিবর্তন এবং কোভিড-১৯ মহামারির অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রভাবের পাশাপাশি তামাক চাষের একটি প্রভাব রয়েছে। বর্তমানে পৃথিবীর ১২৫টিরও বেশি দেশের প্রায় ৪ মিলিয়ন হেক্টর জমিতে তামাক চাষ হয় এবং শীর্ষ তামাক উৎপাদনকারী দেশগুলোর অধিকাংশই নিম্ন ও মধ্যম আয়ভুক্ত দেশ। অন্যদিকে পৃথিবীব্যাপী উৎকৃষ্ট মানের জমি ক্রমবর্ধমানহারে তামাকচাষে ব্যবহৃত হওয়ায় খাদ্য ফসলের ভূমি ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে। এসব জমি খাদ্যফসল ফলানোর কাজে ব্যবহার করা গেলে লক্ষ লক্ষ মানুষের খাদ্য চাহিদা পূরণের পাশাপাশি খাদ্য নিরাপত্তার সংকট মোকাবেলায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা সম্ভব।
বাংলাদেশে আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ খুবই কম, মাত্র ৩ কোটি ৭৬ লক্ষ ৭ হাজার একর। অথচ তামাক চাষে ব্যবহৃত মোট জমির পরিমাণের দিক থেকে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ১৩তম। বিশ্বের মোট তামাকের ১.৩ শতাংশই উৎপাদিত হয় বাংলাদেশে। তামাকচাষের কারণে খাদ্য ফসলের জমি ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়েছে। বাংলাদেশে রবি মৌসুমের প্রধান খাদ্য ফসলগুলোর মধ্যে বোরো, গম এবং আলু অন্যতম এবং এ মৌসুমেই তামাক চাষ হয়ে থাকে।
অন্য দিকে বাংলাদেশে তামাকজনিত অসুস্থতায় প্রতি বছর ১ লক্ষ ৬১ হাজার মানুষ মৃত্যুবরণ করে। দেশে মৃত্যু এবং পঙ্গুত্বের প্রধান চারটি কারণের একটি তামাক।
তামাকজনিত রোগের চিকিৎসা ব্যয় ও কর্মক্ষমতা হ্রাসের আর্থিক ক্ষতি প্রায় ৩০ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা। তামাকের এসব ক্ষতিকর দিক বিবেচনা করেই তামাক নিয়ন্ত্রণকে জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন অভীষ্টের অন্তর্ভুক্ত (টার্গেট ৩এ) করা হয়েছে। কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে তামাকের সরবরাহ এবং চাহিদা কমিয়ে আনাই হতে পারে তামাকের নেতিবাচক প্রভাব কাটিয়ে ওঠার সঠিক উপায়।
বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস প্রতি বছর ৩১ মে তারিখে বিশ্বজুড়ে পালন করা হয়। ২৪ ঘণ্টা সময়সীমা ধরে তামাক সেবনের সমস্ত প্রক্রিয়া থেকে বিরত থাকতে উৎসাহিত করার উদ্দেশ্যে দিবসটি পালন শুরু হয়। এছাড়াও দিবসটির উদ্দেশ্য তামাক ব্যবহারের ব্যাপক প্রাদুর্ভাব এবং স্বাস্থ্যের ওপর এর নেতিবাচক প্রভাবের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করানো যা বর্তমানে প্রতি বছর বিশ্বব্যাপী প্রায় ৬০ লক্ষ মানুষের মৃত্যুর কারণ হিসেবে বিবেচিত এবং যার মধ্যে ধূমপানের পরোক্ষ ধোঁয়ার প্রভাবের কারণে প্রায় ৬ লক্ষ অ-ধূমপায়ী ক্ষতিগ্রস্ত হবার সম্ভাবনা রয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) সদস্য রাষ্ট্রসমূহ ১৯৮৭ সালে বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস চালু করে।
বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা দ্বারা পরিচালিত আটটি বৈশ্বিক জনস্বাস্থ্য প্রচারাভিযানের মধ্যে একটি, অন্যান্য দিবসগুলোর মধ্যে রয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস, বিশ্ব রক্তদাতা দিবস, বিশ্ব টিকা সপ্তাহ, বিশ্ব যক্ষ্মা দিবস, বিশ্ব ম্যালেরিয়া দিবস, বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস এবং বিশ্ব এইডস দিবস।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানি সম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ইয়ুথ ক্লাইমেট কোয়ালিশন উদ্বোধনকালে বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি মোকাবিলায় তরুণদের ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
উপদেষ্টা শনিবার ঢাকার আগারগাঁওয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরে ‘ম্যানিফেস্টো টক: ইয়ুথ, এনভায়রনমেন্ট এন্ড ক্লাইমেট’ শীর্ষক আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন।
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি মোকাবিলায় তরুণদের ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। যেকোনো ধরনের লোভ, ক্ষমতার মোহ, আর্থিক অনিয়ম ও দুর্নীতি থেকে দূরে থেকে তাদের এই দেশের জন্য কাজ করতে হবে।
এসময় পরিবেশ রক্ষার্থে সরকারের পরিকল্পনা সম্পর্কে জানাতে গিয়ে তিনি বলেন, বায়ুদূষণ মোকাবেলায় সরকার তিনটি বড় উদ্যোগ নিয়েছে-পুরনো বাস অপসারণ, ইলেকট্রিক যানবাহন চালু এবং ঢাকার চারপাশে নতুন ইটভাটা স্থাপন নিষিদ্ধ। আমরা উন্নয়ন চাই, তবে প্রকৃতিকে ধ্বংস করে নয়। জলাশয় ভরাট, পাহাড় কাটা কিংবা বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় অবহেলা চলতে পারে না। প্রকৃতিকে সম্মান জানিয়ে উন্নয়ন পরিকল্পনা করতে হবে।
পলিথিন বন্ধে নাগরিক সমাজের ভূমিকার কথা উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, শুধু সরকারের নয়, সকলের দায়িত্ব পরিবেশ রক্ষা করা। বাজারে গেলে পাট বা কাপড়ের ব্যাগ ব্যবহার করুন।
এসময় তিনি উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে তিনটি মডেল প্রকল্প নেওয়ার প্রস্তাব করেন।
তিনি বলেন, টেকসই, পচনশীল ও পুনর্ব্যবহারযোগ্য উপায়ে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করতে হবে। সিঙ্গল-ইউজ প্লাস্টিক দ্রুত নিষিদ্ধ করতে হবে।
আমিনবাজার ও মাতুয়াইলের ময়লার স্তূপ থেকে সৃষ্ট আগুন জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, এতে আশপাশের মানুষের ফুসফুস ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ছে।এ সমস্যার দ্রুত সমাধান করতে হবে।
উপদেষ্টা বলেন, রাস্তা সম্প্রসারণের নামে পুরোনো গাছ কাটা চলবে না। গাছ রেখে উন্নয়ন পরিকল্পনা করতে হবে। বন বিভাগ ও গণপূর্ত অধিদপ্তর মিলে জাদুঘরের নকশা পরিবর্তনের মাধ্যমে গাছ রক্ষার চেষ্টা করছে-এটাই আশার বার্তা।
তিনি আরো জানান, ইউক্যালিপটাস ও আকাশমণি গাছ পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর প্রমাণিত হওয়ায় তা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। পরিবেশবান্ধব গাছ লাগানোর ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে।
অনুষ্ঠানে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ, পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক জিয়াউল হক ও স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়াও, তরুণদের নেতৃত্বাধীন ১৬টি সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত ইয়ুথ ক্লাইমেট কোয়ালিশন আয়োজিত অনুষ্ঠানে তরুণ জলবায়ুকর্মীসহ দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দও অংশ নেন এবং নিজ নিজ দলের পক্ষ থেকে জলবায়ু ও পরিবেশ বিষয়ে তাদের অবস্থান তুলে ধরেন। আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের ইশতেহারে পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তনকে গুরুত্ব দেওয়া হবে বলেও তারা জানান।
ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ায় ভিজিডি ও ভিজিএফের জন্য বরাদ্দকৃত ৬৪ বস্তায় ২৭৬০ কেজি চাল জব্দ করা হয়েছে।
গতকাল শনিবার (৩১মে) ভোরে উপজেলার ভবানীপুর ইউনিয়নের কান্দানিয়া কচুয়ার মোড় এলাকার আইনাল হকের (৫৫) বসত বাড়িতে অভিযান চালিয়ে চাল গুলো জব্দ করে থানা পুলিশ। তবে এ ঘটনায় জড়িত কাউকে আটক করতে পারেনি পুলিশ ।
পুলিশ জানায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে কচুয়ার মোড় এলাকার ব্যবসায়ী আইনাল হকের (৫৫) বাড়িতে সরকারি চাল মজুদ রাখা হয়েছে এমন সংবাদ পায় পুলিশ। পরে শনিবার ভোরে পুলিশের একটি দল সেখানে অভিযান চালিয়ে ৫০ কেজি চালের সরকারি সিল যুক্ত ২০ বস্তা ও ৪৪ টি ভিন্ন বস্তায় ৪০ কেজি করে মোট ২৭৬০ কেজি চাল উদ্ধার করে। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে পালিয়ে যায় আইনাল হক। তিনি কান্দানিয়া কচুয়ার মোড় গ্রামের কুশা বেপারীর ছেলে। আইনাল হক দীর্ঘদিন ধরে কালোবাজারির সাথে জড়িত বলে জানান স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান জবান আলী। জব্দকৃত চালগুলো প¦ার্শবর্তী ভালুকা উপজেলার উথুরা থেকে কেনা হয়েছে বলেও তিনি জানান।
এ বিষয়ে ফুলবাড়িয়া থানার ওসি মোহাম্মদ রকনুজ্জামান বলেন, সরকারি ভাবে বিতরণের জন্য ভিজিডি ও ভিজিএফের চাল গুলো হয়তো কারো কাছ থেকে কিনে মজুদ করা হয়েছিল। পুলিশের উপস্থিতি পেয়ে আইনাল পালিয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে থানায় মামলার প্রস্তুতি চলছে। এ চাল কীভাবে সেখানে গেলো, এর সঙ্গে আরও কারা জড়িত তদন্তে তা বের করা হবে।
এ ব্যাপারে ফুলবাড়িয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আরিফুল ইসলাম দৈনিক বাংলাকে বলেন, এ ঘটনায় অধিকতর তদন্ত করে জড়িতদের সনাক্ত করে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মানিকগঞ্জ-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও কণ্ঠশিল্পী মমতাজ বেগমের দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। হরিরামপুর থানায় দায়ের করা হামলা ও ভাঙচুরের মামলায় গতকাল শুক্রবার দুপুরে মানিকগঞ্জ চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-৩ এর বিচারক দোলন বিশ্বাস এ রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এর আগে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সিংগাইর থানায় দায়ের করা হত্যা মামলায় চার দিনের রিমান্ড শেষে কড়া নিরাপত্তায় মমতাজকে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-৩ এ হাজির করা হয়। এ সময় সাবেক এই সংসদ সদস্যকে ফুরফুরে মেজাজে দেখা গেছে।
এদিকে আদালত চত্বরে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয় পুলিশ। তবে আজকে মমতাজকে আদালতে আনা হলেও আগের দুই দিনের মতো বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের আদালত চত্বরে দেখা যায়নি।
কোর্ট ইন্সপেক্টর মো. আবুল খায়ের জানান, সিংগাইর থানার হত্যা মামলায় চার দিনের রিমান্ডে শেষে মমতাজ বেগমকে আদালতে আনা হয়। আদালতের বিচারক হরিরামপুর থানায় দায়ের করা হামলা ও ভাঙচুরের মামলায় পুনরায় মমতাজকে দুই দিনের রিমান্ডে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
এর আগে গত ২২ মে মানিকগঞ্জ চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-১ এর বিচারক মোহাম্মদ আব্দুন নূর সিংগাইর উপজেলার চার হত্যা মামলায় মমতাজের চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। একই দিন চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-৩ এর বিচারক আইভি আক্তার হরিরামপুর থানার হামলা, মারধর ও ভাঙচুরের মামলায় দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। ওই দিন আদালতের হাজতখানা থেকে মমতাজকে প্রিজন ভ্যানে তোলার সময় বিএনপির নেতাকর্মী ও বিক্ষুব্ধ জনতা তাকে লক্ষ্য করে ডিম নিক্ষেপ করে।
এরপর গত ২৭ মে দ্বিতীয় বারের মতো সিংগাইরের হত্যা মামলার নিয়মিত হাজিরা দিতে কাশিমপুর কারাগার থেকে মমতাজকে মানিকগঞ্জের আদালতে আনা হয়। ওই দিন আদালত শুনানি শেষে জামিন নামুঞ্জুর করে মমতাজকে হরিরামপুর থানার মামলায় দুই দিনের রিমান্ডে পাঠানোর আদেশ দেন। এ সময় আবারও প্রিজনভ্যানে তোলার সময় মমতাজকে লক্ষ্য করে কয়েকটি ডিম নিক্ষেপ করে বিক্ষুব্ধ জনতা।
প্রসঙ্গত, ২০১৩ সালে হরতালের দিন সিংগাইর উপজেলার গোবিন্দল এলাকায় হরতাল-সমর্থনে একটি মিছিলে পুলিশের গুলিতে চারজন নিহত হন। প্রায় এক যুগ পর চলতি বছরের ২৫ অক্টোবর নিহত এক ব্যক্তির স্বজন মজনু মোল্লা সিংগাইর থানায় মমতাজ বেগমকে প্রধান আসামি করে হত্যা মামলা করেন।
বাংলাদেশের ৮০ হাজার ৭২৩ জন হজযাত্রী এ পর্যন্ত সৌদি আরবে পৌঁছেছেন।
আজ রাতে হজযাত্রীদের নিয়ে যাওয়ার নির্ধারিত শেষ ফ্লাইটসহ মোট ২০৮টি ফ্লাইটে এখন পর্যন্ত মোট ৮০ হাজার ৭২৩ জন বাংলাদেশি হজযাত্রী সৌদি আরব পৌঁছেছেন বলে জানিয়েছেন হজ অফিসের কর্মকর্তারা।
এ বিষয়ে হজ অফিসের প্রকাশ করা একটি বুলেটিনে বলা হয়েছে, ‘গতকাল রাত পর্যন্ত সৌদি আরবে অন্তত ১৫ জন হজযাত্রী বার্ধক্যজনিত জটিলতা এবং নানা ধরনের স্বাস্থ্যগত সমস্যার কারণে মারা গেছেন।’
চলতি বছর সরকারি ব্যবস্থাপনায় ৫,২০০ জন এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ৮১,৯০০ জনসহ মোট ৮৭ হাজার ১০০ জন বাংলাদেশি পবিত্র হজ পালন করছেন।
হজ অফিসের একটি সূত্র জানায়, হজ পালনে হজযাত্রীদের বিভিন্ন সুবিধা-অসুবিধা নিয়ে আলোচনা করতে গতকাল রাতে মক্কায় বাংলাদেশ হজ অফিসের সম্মেলন কক্ষে হজ প্রতিনিধিদল-২০২৫ এর একটি বিশেষ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন ধর্ম বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আ. ফ. ম খালিদ হোসেন।
সভায় মক্কা, মিনা ও আরাফাত ময়দানের হজযাত্রীদের জন্য সুষ্ঠু ও নিরাপদ আবাসন, পরিবহণ, খাদ্য এবং অন্যান্য বিষয় নিশ্চিত করাসহ হজ ব্যবস্থাপনার প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা করা হয়।
আলোচনায় আরও অংশ নেন সচিব একেএম আফতাব হোসেন প্রামাণিক, হজ প্রতিনিধিদলের সদস্যবৃন্দ, প্রশাসনিক দলের টিম লিডার, কাউন্সিলর হজ, মেডিকেল টিম লিডার, সভাপতি ও মহাসচিব (হাব), আইটি টিম লিডার এবং অন্যান্য সদস্য ।
ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ হজ অফিসের পরিচালক এম লোকমান হোসেন বাসস’কে জানান, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স এখন পর্যন্ত ১০৪টি ফ্লাইট পরিচালনা করে ৪০,২৪৯ জন হজযাত্রীকে বহন করেছে। অন্য এয়ারলাইন্সগুলোর মধ্যে সৌদি এয়ারলাইন্স ৭৬টি ফ্লাইট পরিচালনা করে ২৯,১৪৪ জন হজযাত্রী বহন করেছে। এছাড়া রিয়াদ-ভিত্তিক ফ্লাইনাস এয়ারলাইন্স ২৮টি ফ্লাইট পরিচালনা করে ১১,৩৩০ জন হজযাত্রী পরিবহণ করেছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ১১৮টি, সৌদি এয়ারলাইন্স ৮০টি এবং ফ্লাইনাস এয়ারলাইন্স ৩৪টি হজ ফ্লাইট পরিচালনা করবে।
তিনি আরো বলেন, সরকারের আন্তরিক প্রচেষ্টায় ঢাকায় সৌদি দূতাবাস বাংলাদেশি হজযাত্রীদের পাসপোর্টের বিপরীতে ৮৬,৯৪৫টি ভিসা ইস্যু করেছে। সরকারি ও বেসরকারি উভয় ব্যবস্থাপনাতেই শতভাগ ভিসা ইস্যু করা হয়।
উল্লেখ্য, ৩৯৮ হজযাত্রী নিয়ে প্রথম হজ ফ্লাইট ২৯ এপ্রিল ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে রওনা হয়।
এ বছর আরবি চন্দ্র ক্যালেন্ডার অনুসারে ৬ জুন হজ অনুষ্ঠিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
হজ পালন শেষে হাজীদের জন্য নির্ধারিত ফিরতি ফ্লাইট পরিচালনা কার্যক্রম ১০ জুন শুরু হয়ে আগামী ১০ জুলাই শেষ হবে।
ঈদ উপলক্ষে আজ শনিবার থেকে শুরু হচ্ছে বিশেষ ট্রেন যাত্রা। এ সময় ট্রেনের সময়ানুবর্তিতা বজায় রাখা ও শিডিউল বিপর্যয় নিরসনে বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে।
এরমধ্যে নিরাপদ ও সুষ্ঠুভাবে ট্রেন পরিচালনা নিশ্চিত করে যাত্রী সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে সময়ানুবর্তিতা রক্ষার জন্য ডিভিশনাল ও জোনাল কন্ট্রোলে পৃথক পৃথক মনিটরিং সেল গঠন করে কর্মকর্তাদের ইমার্জেন্সি ডিউটি প্রদান করা হবে। ঈদ উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ রেলওয়ের নেওয়া কর্মপরিকল্পনা থেকে এ সিদ্ধান্ত জানা গেছে।
কর্মপরিকল্পনায় বলা হয়েছে, সময়ানুবর্তিতা রক্ষায় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ও জংশন স্টেশন এবং সিগন্যাল কেবিনে কর্মকর্তা ও পরিদর্শকদের তদারকির মাধ্যমে ট্রেন পরিচালনা করা হবে। দুর্ঘটনা প্রতিরোধ ও ট্রেন শিডিউল অড়্গুন্ন রাখার স্বার্থে রেলপথ পেট্রোলিংয়ের ব্যবস্থা করা হবে।
এতে আরো বলা হয়, ঈদ উপলক্ষে অতিরিক্ত যাত্রী চাহিদা পূরণের জন্য পাহাড়তলী ওয়ার্কশপ থেকে ২৯টি এমজি ও সৈয়দপুর ওয়ার্কশপ থেকে ১৫টি বিজি কোচসহ সর্বমোট ৪৪টি কোচ যাত্রীবাহী সার্ভিসে যুক্ত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এ ছাড়া ঈদ উপলক্ষে মোট ২৭টি (পূর্বাঞ্চলে এমজি ১৮টি ও পশ্চিমাঞ্চলে বিজি ৯টি) লোকোমোটিভ যাত্রীবাহী ট্রেনে ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত রাখা হবে।
আজ সকাল নয়টা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত দেশের অভ্যন্তরীণ নদীবন্দর সমূহের জন্য ১নং সতর্কতা সংকেত জারি করা হয়েছে।
আজ এ বিষয়ে আবহাওয়া অধিদপ্তরের প্রকাশিত এক বিশেষ বুলেটিনে বলা হয়েছে, ‘নোয়াখালী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, এবং সিলেট অঞ্চল সমূহের উপর দিয়ে দক্ষিণ -দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় ৪৫-৬০ কি.মি. বেগে অস্থায়ীভাবে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রবৃষ্টি হতে পারে। এসব এলাকার নদীবন্দর সমূহকে ১ নম্বর (পুনঃ) ১ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।’
এছাড়া, দেশের উপকূলীয় অঞ্চল ও সমুদ্রবন্দরের জন্য প্রযোজ্য অপর এক বিশেষ আবহাওয়া বুলেটিনে বলা হয়েছে, ‘সমুদ্র বন্দরসমূহ, উত্তর বঙ্গোপসাগর ও বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় ঝড়ো হাওয়া বয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরসমূহকে সংকেত নামিয়ে ফেলতে বলা হয়েছে।’
উল্লেখ্য, সকালে আবহাওয়া অধিদপ্তর আজ আবহাওয়ার সিনপটিক অবস্থা সম্পর্কে জানিয়েছে যে- শেরপুর ও তৎসংলগ্ন মেঘালয়ে অবস্থানরত সুস্পষ্ট লঘুচাপটি দুর্বল হয়ে গুরুত্বহীন হয়ে পড়েছে। এটি আরও উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে ক্রমান্বয়ে দুর্বল হয়ে যেতে পারে। দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর বাংলাদেশের উপর বিস্তার লাভ করেছে। মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের উপর মোটামুটি সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারি অবস্থায় রয়েছে।