চলতি বছরের মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) ও সমমান পরীক্ষার ফল আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে প্রকাশিত হবে। ফলাফল শিক্ষা বোর্ডগুলোর ওয়েবসাইটে, সংশ্লিষ্ট পরীক্ষাকেন্দ্র বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং এসএমএসের মাধ্যমে প্রকাশ করা হবে।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ও আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. খন্দোকার এহসানুল কবির স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানা যায়। আজ আনুষ্ঠানিকভাবে ফল প্রকাশের পর শিক্ষা বোর্ডগুলোর ওয়েবসাইট ও এসএমএসের মাধ্যমে ফল জানা যাবে। ওয়েবসাইটে রোল নম্বর, রেজিস্ট্রেশন নম্বর, পরীক্ষার নাম, বছর ও শিক্ষাবোর্ড সিলেক্ট করে ‘সাবমিট’ বাটনে ক্লিক করে ফল জানা যাবে।
এছাড়া যেকোনো মোবাইল ফোনে এসএমএসের মাধ্যমেও ফল জানা যাবে। ফোনের মেসেজ অপশনে গিয়ে SSC লিখে স্পেস দিয়ে বোর্ডের নামের প্রথম তিন অক্ষর লিখে স্পেস দিয়ে রোল নম্বর লিখে আবার স্পেস দিয়ে পাসের বছর লিখে পাঠাতে হবে ১৬২২২ নম্বরে। উদাহরণ: SSC Dha ১২৩৪৫৬ ২০২৫ লিখে ১৬২২২ নম্বরে পাঠাতে হবে। ফিরতি এসএমএসে জানা যাবে ফল।
উল্লেখ্য, মাদ্রাসা বোর্ডের জন্য বোর্ডের নামের প্রথম তিন অক্ষরের ক্ষেত্রে Mad এবং বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের জন্য Tec লিখতে হবে।
ফলাফল নিয়ে অসন্তুষ্ট শিক্ষার্থীদের জন্য প্রতিবারের মতো এবারও খাতা চ্যালেঞ্জ বা ফল পুনঃনিরীক্ষার আবেদনের সুযোগ পাবেন। খাতা পুনঃনিরীক্ষণের জন্য এসএমএসের মাধ্যমে ১১ জুলাই থেকে ১৭ জুলাইয়ের পর্যন্ত আবেদন করা যাবে।
শুধু টেলিটক মোবাইলের মাধ্যমে ওই ফলাফল পুনঃনিরীক্ষণের জন্য আবেদন করা যাবে। আবেদন করার নিয়ম- RSC<Space> Board Name (First 3 letters)<Space>Roll<Space>Subject Code লিখে পাঠিয়ে দিতে হবে ১৬২২২ নাম্বারে। একাধিক Subject Code Type এর ক্ষেত্রে কমা (,) ব্যবহার করতে হবে, যেমন-১০১,১০২,১০৩। প্রতি পত্রের জন্য আবেদন ফি হবে ১৫০/- (একশত পঞ্চাশ) টাকা।
গত ১০ এপ্রিল সারাদেশে একযোগে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হয়। লিখিত পরীক্ষা শেষ হয় গত ১৩ মে। ব্যবহারিক পরীক্ষা ১৫ থেকে ২২ মের মধ্যে অনুষ্ঠিত হয়। দেশের সব শিক্ষা বোর্ডের অধীনে মোট ১৯ লাখ ২৮ হাজার পরীক্ষার্থী এ পরীক্ষায় অংশ নেবে। এর মধ্যে ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় পরীক্ষার্থী রয়েছে ১৪ লাখ ৯০ হাজার ১৪২ জন। এর মধ্যে ছাত্র ৭ লাখ এক হাজার ৫৩৮ জন এবং ছাত্রী ৭ লাখ ৮৮ হাজার ৬০৪ জন। পরীক্ষাকেন্দ্রের সংখ্যা ২ হাজার ২৯১টি, প্রতিষ্ঠান সংখ্যা ১৮ হাজার ৮৪টি।
মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে পরীক্ষার্থী রয়েছেন ২ লাখ ৯৪ হাজার ৭২৬ জন। এর মধ্যে ছাত্র এক লাখ ৫০ হাজার ৮৯৩ জন এবং এক লাখ ৪৩ হাজার ৮৩৩ জন ছাত্রী। এই বোর্ডের অধীনে পরীক্ষাকেন্দ্রের সংখ্যা ৭২৫টি। প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৯ হাজার ৬৩টি।
বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে সর্বমোট পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ১ লাখ ৪৩ হাজার ৩১৩ জন। এর মধ্যে ছাত্র ১ লাখ ৮ হাজার ৩৮৫ এবং ছাত্রী ৩৪ হাজার ৯২৮ জন।
অতিবৃষ্টির কারণে সম্প্রতি ফেনী ও নোয়াখালী জেলায় সৃষ্ট বন্যা ও জলাবদ্ধতা পরিস্থিতি নিয়ে আজ বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের সভায় আলোচনা হয়েছে। সভায় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টাগণ বন্যা ও তৎপরবর্তী গৃহীত ব্যবস্থা নিয়ে তাঁদের মতামত ও করণীয় তুলে ধরেন।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে উপদেষ্টা পরিষদের এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠকে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে মুসাপুর রেগুলেটর ও বামনি ক্লোজার এর নকশা চূড়ান্তকরণ, ফেনীতে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প চূড়ান্তকরণ এবং নোয়াখালীর খাল ও ড্রেনেজ অবমুক্ত করার প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে আলোচনা হয়।
এর পাশাপাশি, দুর্যোগ মোকাবিলায় বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে এই দুই জেলার ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ মেরামত, তীর প্রতিরক্ষা ও পানি নিয়ন্ত্রণ অবকাঠামো মেরামতের কাজ চলমান রয়েছে বলেও উপদেষ্টামণ্ডলীকে অবহিত করা হয়েছে।
উপদেষ্টা পরিষদের সভায় দুই জেলায় চলমান বন্যা ও জলাবদ্ধতা পরিস্থিতিতে ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রণালয় এবং স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কী কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা থাকলেও কোনো ধরনের সিদ্ধান্তে না পৌঁছে আপাতত এ বিষয়ে আলোচনা মুলতবির সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন।
আলোচনার মধ্যাহ্নভোজের বিরতিতে রাজনৈতিক দলগুলো জানায়, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার কাঠামোগত বিষয় সংসদের উচ্চকক্ষ এবং নিম্নকক্ষের ওপরে নির্ভরশীল হওয়ায় আগে উচ্চকক্ষের বিষয়ে সিদ্ধান্তে আসতে হবে।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, বিগত সময়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধানের সঙ্গে বিচার বিভাগকে মেলানোর অভিজ্ঞতা সুখকর ছিল না। একইভাবে কোনো উপায় না পেয়ে রাষ্ট্রপতিকে প্রধান উপদেষ্টা করার সিদ্ধান্তও ভালো ফল বয়ে আনেনি।
যেহেতু তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিষয়টি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত, তাই এর দায়িত্ব সংসদের হাতে রাখার প্রস্তাব দিয়েছে বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল। এ লক্ষ্যে উচ্চকক্ষ এবং নিম্নকক্ষ মিলিয়ে সাত সদস্যের কমিটি গঠনের প্রসঙ্গ এসেছে বলে জানান সাকি।
এই কমিটি সর্বসম্মতিক্রমে কিংবা ভোটের মাধ্যমে র্যাংকিং ব্যবস্থায় জাতীয় নির্বাচনের আগে প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচিত করবেন।
‘কিন্তু উচ্চকক্ষের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না হওয়ায় এখনো তত্ত্বাবধায়ক সরকার নির্বাচনের কাঠামোগত সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হয়নি,’ বলেন সাকি।
বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নাম এবং ক্ষমতার পরিবর্তন আনা প্রয়োজন। যদি প্রতিবার নির্বাচনের আগে এমন একটি সরকারের প্রয়োজন হয়, তাহলে আসলে দেশের কী সংস্কার হলো—এ নিয়ে প্রশ্ন উঠবে।
‘আপাতত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নাম নির্দলীয় নিরপেক্ষ নির্বাচন তদারকি সরকার করা উচিত। এই সরকারের একমাত্র কাজ হবে জাতীয় নির্বাচন দেওয়া। নির্বাচনের বাইরে কোনো সিদ্ধান্ত এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচনও এ সরকারের অধীনে করার প্রয়োজন নেই,’ প্রস্তাব দেন রুহিন।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পাশাপাশি প্রধান বিচারপতি নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়েও রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কমিশনের আলোচনা হয়েছে। আলোচনায় বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল আপিল বিভাগে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে একজন বিচারপতির পরিবর্তে দুজনের মধ্য থেকে একজনকে বেছে নেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে।
তবে বিগত সরকারের বিচারপতি নিয়োগ প্রশ্নবিদ্ধ উল্লেখ করে এবি পার্টির মহাসচিব আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেন, ‘বিচার বিভাগের অনেক বিচারপতি আওয়ামী লীগ আমলের নিয়োগপ্রাপ্ত। এদের অনেকে যোগ্যতার ভিত্তিতে নয়, নিয়োগ পেয়েছে দলীয় স্বার্থ বিবেচনায়। এদের মধ্য থেকে যারা জ্যেষ্ঠ, তাদের প্রধান বিচারপতি করা হলে বিচার বিভাগের স্বচ্ছতা ক্ষুণ্ণ হবে।’
প্রধান বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে পুরো বিচার ব্যবস্থা ঢেলে সাজানোর ব্যাপারে জোর দেন এ রাজনৈতিক নেতা।
চলতি মাসের মধ্যেই জুলাই সনদ প্রস্তুত করা সম্ভব বলে জানিয়েছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ। এ সময়ে রাষ্ট্র সংস্কারের মৌলিক বিষয়গুলোতে রাজনৈতিক দলগুলোকে ঐকমত্যে আসার বিষয়েও তাগিদ দিয়েছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমির দোয়েল হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সাথে রাজনৈতিক দলগুলোর দ্বিতীয় পর্যায়ের একাদশতম দিনের আলোচনার শুরুতে এসব কথা বলেন তিনি।
‘রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের মতানৈক্য নেই। সবাই একই উদ্দেশ্যে কাজ করছে এবং এ মাসের মধ্যেই জুলাই সনদ প্রস্তুত সম্ভব হবে’ বলেন আলী রিয়াজ।
যে সব বিষয়ে আলোচনা অগ্রসর হয়েছে, তা দ্রুত নিষ্পত্তি করতে চায় কমিশন বলেও জানান এই শিক্ষক। তিনি বলেন, ‘প্রথম পর্যায়ের দুমাসের আলোচনায় অনেক বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে, যা জাতীয় সনদ তৈরির ক্ষেত্র অনেকটা এগিয়ে নিয়ে গেছে। রাষ্ট্র সংস্কারের মৌলিক বিষয়গুলোতে একমত হওয়া প্রয়োজন।’
‘রাষ্ট্রকে এমন একটি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে হবে, যাতে করে ভবিষ্যতে কখনো ফ্যাসিবাদী শাসন ফিরে না আসে’, যোগ করেন কমিশনের এই সহসভাপতি।
আলোচনায় বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), গণঅধিকার পরিষদ, গণসংহতি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টিসহ ৩০টি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করেন।
আলোচনায় কমিশনের সদস্য হিসেবে উপস্থিত আছেন বিচারপতি এমদাদুল হক, ড. ইফতেখারুজ্জামান, ড. বদিউল আলম মজুমদার, সফর রাজ হোসেন, ড. আইয়ুব মিয়া এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার।
১১তম দিনের আলোচনায় প্রধান বিচারপতি নিয়োগ, তত্ত্বাবধায়ক সরকার এবং জরুরি অবস্থা ঘোষণা—এ তিনটি বিষয় নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে।
ওয়াশিংটন ডিসিতে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে দ্বিতীয় দফার শুল্ক বিষয়ক বৈঠকের প্রথম দিন শেষ হয়েছে। আলোচনায় উভয় দেশের বাণিজ্য সম্পর্কের নানা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় প্রাধান্য পায় বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার।
বাংলাদেশ সময় বৃহস্পতিবার রাত ৯টায় দুপক্ষের মধ্যে দ্বিতীয় দিনের আলোচনা শুরু হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। আলোচনা চলবে শুক্রবারও।
আজাদ মজুমদার জানিয়েছেন, আলোচনা অত্যন্ত বিস্তৃত ছিল। দুই দেশের বাণিজ্য সম্পর্কের প্রায় সব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এ সময় উঠে আসে।
ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার বাণিজ্য বিষয়ক উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দিন।
ঢাকায় অবস্থান করেও ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান এবং প্রধান উপদেষ্টার আইসিটি ও টেলিকম বিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। এ ছাড়া বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারাও আলোচনায় অংশ নেন।
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে কৃষি, জ্বালানি, বাণিজ্য ও কপিরাইট সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থার সিনিয়র প্রতিনিধিরা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কথোপকথনের একটি ফাঁস হওয়া অডিও রেকর্ডিং থেকে জানা যায়, গত বছরের জুলাইয়ে শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বাধীন বিক্ষোভে প্রাণঘাতী শক্তি প্রয়োগের অনুমতি তিনি নিজেই দিয়েছিলেন।
বিবিসি আইয়ের যাচাই করা ওই রেকর্ডিং অনুসারে, শেখ হাসিনা তাঁর নিরাপত্তা বাহিনীগুলোকে বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে ‘প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার’ করার অনুমতি দিয়েছেন এবং ‘তারা (এসব বাহিনীর সদস্যরা) যেখানেই তাদের (আন্দোলনকারী) পাবেন, গুলি করবেন।’
অজ্ঞাতপরিচয় একজন ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তার সঙ্গে শেখ হাসিনার কথোপকথনের ফাঁস হওয়া অডিওটি এখন পর্যন্ত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ যে তিনি সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারীদের গুলি করার জন্য সরাসরি অনুমতি দিয়েছিলেন।
ফাঁস হওয়া অডিওটি সম্পর্কে জানেন, এমন একটি সূত্র বিবিসিকে জানিয়েছে, গত ১৮ জুলাই নিজের সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে শেখ হাসিনা ওই ফোনালাপ করেন।
চলতি বছরের মার্চের শুরুতে ফোনালাপের অডিওটি কে ফাঁস করেছেন, তা স্পষ্ট নয়। বিক্ষোভের পর থেকে শেখ হাসিনার কলের অসংখ্য ক্লিপ অনলাইনে প্রকাশিত হয়েছে, যার অনেকগুলোই যাচাই করা হয়নি।
গত ১৮ জুলাইয়ের ফাঁস হওয়া রেকর্ডিংয়ের কণ্ঠের সঙ্গে শেখ হাসিনার কণ্ঠস্বরের মিল শনাক্ত করেছে বাংলাদেশ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ।
বিবিসি আলাদাভাবে ইয়ারশটের অডিও ফরেনসিক বিশেষজ্ঞদের দিয়ে এ রেকর্ডিংয়ের সত্যতা যাচাই করেছে। তারা এটিতে এডিট করার বা কোনো রকম পরিবর্তন করার কোনো প্রমাণ পাননি। অডিওটি কৃত্রিমভাবে তৈরি করা হয়েছে, এমন সম্ভাবনাও খুবই কম বলে তারা জানিয়েছেন।
মানবাধিকার বা পরিবেশ রক্ষার ইস্যুতে অডিও-সংক্রান্ত তদন্তের কাজ করে অলাভজনক প্রতিষ্ঠান ইয়ারশট। তারা বলছে, ফাঁস হওয়া রেকর্ডিংটি সম্ভবত এমন একটি ঘরে ধারণ করা হয়েছিল, যেখানে ফোনকলটি স্পিকারে বাজানো হয়েছিল। কারণ, এতে স্বতন্ত্র টেলিফোনিক ফ্রিকোয়েন্সি ও ব্যাকগ্রাউন্ডে কিছু শব্দ ছিল।
ইয়ারশটের বিশেষজ্ঞরা রেকর্ডিংজুড়ে ইলেকট্রিক নেটওয়ার্ক ফ্রিকোয়েন্সি বা ইএনএফ শনাক্ত করেছেন। যে ফ্রিকোয়েন্সি অন্য একটি ডিভাইস থেকে অডিও রেকর্ডিংয়ের ক্ষেত্রে প্রায়ই উপস্থিত থাকে। এটি এমন এক সূচক, যার মানে হলো অডিওটিতে হেরফের করা হয়নি।
ইয়ারশটের বিশেষজ্ঞরা শেখ হাসিনার বক্তব্যে ছন্দ, স্বর ও শ্বাসের শব্দ বিশ্লেষণ করেছেন এবং ধারাবাহিক নয়েজের স্তরও শনাক্ত করেছেন। অডিওতে কৃত্রিম কোনো পরিবর্তন আনার প্রমাণ তারা খুঁজে পাননি।
ব্রিটিশ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনজীবী টবি ক্যাডম্যান বিবিসিকে বলেছেন, রেকর্ডিংগুলো তার (শেখ হাসিনার) ভূমিকা প্রমাণের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এগুলো স্পষ্ট ও সঠিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে এবং অন্যান্য প্রমাণ দ্বারা সমর্থিত।
টবি ক্যাডম্যান বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের পরামর্শক হিসেবে কাজ করছেন, যেখানে শেখ হাসিনাসহ অন্যদের বিরুদ্ধে মামলা চলছে।
আওয়ামী লীগের একজন মুখপাত্র বলেছেন, বিবিসির উল্লেখ করা টেপ রেকর্ডিংটি সত্য কি না, তা তারা নিশ্চিত করতে পারছেন না এবং এই টেপটিতে কোনো বেআইনি উদ্দেশ্য বা অসামঞ্জস্যপূর্ণ প্রতিক্রিয়া দিতেও দেখা যায়নি।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ২০৩ জনকে অভিযুক্ত করেছেন, যার মধ্যে ৭৩ জন গ্রেপ্তার রয়েছেন। আন্দোলনে পুলিশের ভূমিকা নিয়েও বাংলাদেশের আদালতে বিচার চলছে।
এদিকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ঢাকার অন্যতম ব্যস্ত এলাকা যাত্রাবাড়ীতে পুলিশের নির্বিচার গুলিতে কমপক্ষে ৫২ জন নিহত হন বলে বিবিসি আইয়ের একটি অনুসন্ধানে উঠে এসেছে।
ঘটনাটিকে বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ পুলিশি সহিংসতাগুলোর একটি হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
এই হত্যাকাণ্ড সেদিন ঘটেছিল, যেদিন শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে টানা ৩৬ দিন ধরে চলা বিক্ষোভের মুখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হন, ভারতে পালিয়ে যান।
গত বছর সরকারবিরোধী বিক্ষোভের শেষ দিনে ভয়াবহ ঘটনাটি কীভাবে ঘটেছিল, সেটি বের করার জন্য তখনকার শত শত ভিডিও, ছবি ও প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষ্যগ্রহণ এবং সেগুলো বিশ্লেষণের পাশাপাশি সরেজমিন বেশ কয়েকবার যাত্রাবাড়ীর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বিবিসি।
জাতিসংঘের প্রতিবেদন ও বিভিন্ন গণমাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে নানান খবর প্রকাশিত হলেও নির্বিচারে হত্যার ঘটনাটি কীভাবে শুরু ও শেষ হয়েছিল, তাতে কত মানুষ হতাহত হয়েছিলেন, সে সম্পর্কে বিবিসির অনুসন্ধানে এমন কিছু তথ্য ও বিবরণ উঠে এসেছে, যা আগে সেভাবে সামনে আসেনি।
আন্দোলনকারীদের ওপর নির্বিচার গুলি ও হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে বক্তব্য জানতে বাংলাদেশ পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে বাহিনীর একজন মুখপাত্র ঘটনা স্বীকার করেন। তিনি বিবিসিকে বলেন, ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় এ ধরনের দুঃখজনক ঘটনা ঘটেছে, যেখানে তৎকালীন পুলিশ বাহিনীর কিছু সদস্য অতিরিক্ত বলপ্রয়োগে লিপ্ত হয়েছিলেন এবং আন্দোলনকারীদের নিয়ন্ত্রণে অপেশাদার আচরণ করেছিলেন।’
অনুসন্ধান চলাকালে ঘটনার এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ ভিডিও বিবিসির হাতে আসে, যেখানে ৫ আগস্ট বিকেলে যাত্রাবাড়ীতে পুলিশের গুলিবর্ষণ শুরুর কিছু মুহূর্ত দেখা যায়।
ভিডিওটি এমন একজন আন্দোলনকারীর মুঠোফোন থেকে বিবিসি সংগ্রহ করেছে, যিনি নিজেও সেদিন পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারান। নিহত ওই আন্দোলনকারীর নাম মিরাজ হোসেন।
পুলিশ যখন বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলিবর্ষণ শুরু করে, সেই সময়ের ভিডিও ধারণ করেছেন মিরাজ হোসেন। মুঠোফোন ক্যামেরায় ওই ভিডিওতে মর্মান্তিকভাবে তার জীবনের শেষ মুহূর্তও ধরা পড়েছে।
মিরাজ হোসেনের মৃত্যুর পর পরিবারের সদস্যরা তার মুঠোফোনটি খুঁজে পান এবং ফোনে সংরক্ষিত ভিডিওটি বিবিসিকে দেন।
ভিডিওর মেটাডেটা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, সেদিন নির্বিচারে গুলিবর্ষণের ঘটনাটি শুরু হয়েছিল বেলা ২টা ৪৩ মিনিটে।
ভিডিওটিতে যাত্রাবাড়ী থানার মূল ফটকে বিক্ষোভকারীদের সামনে সেনাবাহিনীর একটি দলকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। এরপর হঠাৎই তারা ওই এলাকা থেকে সরে যায়।
এ ঘটনার কিছুক্ষণের মধ্যেই যাত্রাবাড়ী থানার ভেতরের পুলিশ সদস্যরা ফটকের সামনে অবস্থানরত বিক্ষোভকারী জনতার ওপর আকস্মিকভাবে গুলিবর্ষণ শুরু করেন।
থানার উল্টো দিকে অবস্থিত একটি ভবনের সিসিটিভি ক্যামেরা ফুটেজে দেখা যায়, পুলিশ গুলি চালানো শুরু করার পর প্রাণ বাঁচাতে গলির ভেতর দিয়ে ছুটে পালাচ্ছেন বিক্ষোভকারীরা।
ওই সময়ের আরেকটি ভিডিওতে আহত ব্যক্তিদের শরীরে লাথি মারতেও দেখা যায় পুলিশকে।
অনুসন্ধানে বিবিসি দেখেছে, ৫ আগস্ট বিকেলে যাত্রাবাড়ী থানার সামনে ৩০ মিনিটের বেশি সময় ধরে হত্যাকাণ্ড চালানো হয়েছিল।
ঘটনার সময়ের কিছু ড্রোন ভিডিও বিবিসির হাতে এসেছে। ভিডিওর মেটাডেটার তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, বেলা ৩টা ১৭ মিনিটেও যাত্রাবাড়ী থানার সামনের মহাসড়কে বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি চালাচ্ছিল পুলিশ। এরপর তাদের বড় একটি দলকে থানার উল্টো পাশে অবস্থিত একটি অস্থায়ী সেনা ব্যারাকে আশ্রয় নিতে দেখা যায়।
ড্রোন ভিডিওতে মহাসড়কের ওপর হতাহতদের একাধিক মৃতদেহ পড়ে থাকতেও দেখা গেছে। ভ্যান, রিকশা ও বাইকে করে আহত ব্যক্তিদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন আন্দোলনকারীরা।
পরবর্তী কয়েক ঘণ্টার মধ্যে আন্দোলনকারীদের একটি অংশ শাহবাগের দিকে চলে যান। আর যারা তখনো যাত্রাবাড়ীতে ছিলেন, তাদের মধ্যে বিক্ষুব্ধ একটি অংশ থানায় আগুন দেয়। এ ঘটনায় পুলিশের কমপক্ষে ছয় সদস্য নিহত হন।
৫ আগস্ট বিকালে পুলিশের নির্বিচার গুলির ঘটনার পর আহত ব্যক্তিদের আশপাশের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা বহু ব্যক্তিকে মৃত ঘোষণা করেন। সেদিন যাত্রাবাড়ীতে অন্তত ৩০ জন বিক্ষোভকারী নিহত হন বলে প্রাথমিকভাবে জানা যাচ্ছিল।
কিন্তু গণমাধ্যমে প্রকাশিত তখনকার খবর, নিহত ব্যক্তিদের পরিবারের সাক্ষাৎকার, হাসপাতালের নথি ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বিভিন্ন পোস্টের সত্যতা যাচাই করার পর বিবিসি দেখেছে, ৫ আগস্ট যাত্রাবাড়ীতে কমপক্ষে ৫২ জন সাধারণ মানুষ নিহত হন।
এর বাইরে সেদিন আরও অন্তত ছয় পুলিশ সদস্য নিহত হন।
৫ আগস্টের ঘটনায় যাত্রাবাড়ী থানার পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বেশ কিছু মামলা হয়েছে। এর মধ্যে থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হাসানের বিরুদ্ধেও মামলা করা হয়েছে, যিনি হত্যাকাণ্ড চলাকালে ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন।
পুলিশ বাহিনী জানিয়েছে, তারা ঘটনার সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তাদের বিচারের মুখোমুখি করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে।
বিবিসিকে এক ই-মেইল বার্তায় বাংলাদেশ পুলিশ বলেছে, তারা ইতিমধ্যে পুঙ্খানুপুঙ্খ ও নিরপেক্ষভাবে বিষয়টির তদন্ত কার্যক্রম শুরু করেছে। গণআন্দোলন–সংক্রান্ত যাবতীয় ফৌজদারি মামলা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা হচ্ছে, যাতে ঘটনার সঙ্গে যুক্ত প্রত্যেক অপরাধীকে আইনের আওতায় এনে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা যায়।
জাতীয় নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করার জন্য সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে ডিসেম্বরের মধ্যে প্রয়োজনীয় সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
আজ বুধবার প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে চলা এক সভায় প্রধান উপদেষ্টা এই নির্দেশ দেন।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সাংবাদিকদের বৈঠকের বিষয়ে ব্রিফ করেন।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব অপূর্ব জাহাঙ্গীর এবং আবুল কালাম আজাদ মজুমদার ও সিনিয়র সহকারী প্রেস সচিব আহমেদ ফয়েজ ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে নির্বাচনের আগে, নির্বাচনের সময় ও নির্বাচনের পরে আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য সাত দিনের জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের মোতায়েনের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানান তিনি।
তিনি জানান, আসন্ন নির্বাচনে প্রায় ৮ লাখ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য নিয়োজিত থাকবেন এবং নির্বাচনের আগে তাদের আরও প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।
তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. মাহফুজ আলমের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন ইউনেস্কোর বাংলাদেশ প্রতিনিধি সুসান ভাইজ।
বুধবার (৯ জুলাই) বিকেলে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে এই সাক্ষাৎ অনুষ্ঠিত হয়।
সাক্ষাৎকালে উপদেষ্টা জানান, গণমাধ্যম সংস্কারের লক্ষ্যে সরকার ইতোমধ্যে বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে। সংবাদপত্রের প্রচারসংখ্যা নিরীক্ষা পদ্ধতির সংস্কারে টাস্কফোর্স গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এছাড়া, সাংবাদিকতার অধিকার সুরক্ষা-সংক্রান্ত অধ্যাদেশ প্রণয়নের কাজ চলছে। স্বল্প সময়ের মধ্যে অধ্যাদেশ জারি করা হবে। গণমাধ্যম-বিষয়ক আরও কিছু সংস্কার কার্যক্রম আগামী কয়েক মাসের মধ্যে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন।
বাংলাদেশে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বর্তমান সময়ে গণমাধ্যমের ওপর সরকারের পক্ষ থেকে কোনো চাপ নেই। সংবাদ প্রচারের ক্ষেত্রে গণমাধ্যম সম্পূর্ণ স্বাধীন। সাক্ষাতে উপদেষ্টা আরও জানান, গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান ও সংশ্লিষ্ট অংশীজনের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে সংবাদপত্র ও সাংবাদিকদের জন্য অনুসরণীয় আচরণবিধি প্রণয়নেও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
সাক্ষাৎকালে ইউনেস্কোর আন্তর্জাতিক কনসালটেন্ট লিনা ফক্স উপস্থিত ছিলেন।
যুক্তরাষ্ট্রসহ পাঁচ দেশে ভোটার নিবন্ধন ও জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদান কার্যক্রম শুরু করার সম্মতি পেয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। অন্য চারটি দেশ হল- মালদ্বীপ, জর্ডান, দক্ষিণ আফ্রিকা ও ওমান।
বুধবার (৯ জুলাই) যুক্তরাষ্ট্রসহ পাঁচ দেশে ভোটার নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু করার জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মতি পত্র পেয়েছে ইসি।
বুধবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব শাকেরা আহমেদ স্বাক্ষরিত ইসিকে দেওয়া সম্মতি প্রদান সংক্রান্ত চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘উপর্যুক্ত বিষয়ে পত্রের প্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্র (লস এঞ্জেলেস), মালদ্বীপ, জর্ডান, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং ওমানে ভোটার নিবন্ধন ও জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) প্রদান কার্যক্রম চালু করার বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মতি জ্ঞাপন করা হলো। এ বিষয়ে পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।’
এর আগে গত ২ জুলাই ইসির জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের পরিচালক (নিবন্ধন ও প্রবাসী) মো. আব্দুল মমিন সরকার স্বাক্ষরিত ‘প্রবাসে বসবাসরত বাংলাদেশি নাগরিকগণের প্রবাসেই ভোটার নিরন্ধন ও জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদানের লক্ষ্যে কার্যক্রম শুরুর সম্মতি প্রদান’ সংক্রান্ত এ চিঠি পররাষ্ট্র সচিবকে দেওয়া হয়।
চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘বিশ্বের ৪০টি দেশে প্রবাসী বাংলাদেশি নাগরিকগণকে জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদানের লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশন সচিবালয় কর্তৃক পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মতিক্রমে সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব, ইতালি, যুক্তরাজ্য, কুয়েত, কাতার, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া ও কানাডায় ভোটার নিবন্ধন ও জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদান কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে।
অবশিষ্ট ৩১টি দেশের মধ্যে আজ বুধবার যুক্তরাষ্ট্র, ওমান, জর্ডান, দক্ষিণ আফ্রিকা, মালদ্বীপে প্রবাসী ভোটার তালিকা করার সম্মতি আজ পেয়েছে। এখন অবশিষ্ট আছে বাহরাইন, লেবানন, লিবিয়া, সুদান, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া, হংকং, মিশর, ব্রুনাই, মরিশাস, ইরাক, যুক্তরাষ্ট্র, গ্রিস, স্পেন, জার্মানি, জাপান, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ড, বেলজিয়াম, সুইজারল্যান্ড, ব্রাজিল, চীন, ইন্দোনেশিয়া, নিউজিল্যান্ড, রাশিয়া, তুরস্ক ও সাইপ্রাস।
চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘উপর্যুক্ত দেশগুলোতে ভোটার নিবন্ধন কার্যক্রম শুরুর সকল প্রস্তুতি নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের রয়েছে। অন্যান্য দেশের ন্যায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সম্মতি প্রদানের জন্য সিনিয়র সচিব, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর পত্র প্রেরণ করা হয়।
চিঠিতে আরো বলা হয়, এর মধ্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গত ২৫ মে জাপানে ভোটার নিবন্ধন ও জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদান কার্যক্রম শুরু করার সম্মতি প্রদান করেছে। এ প্রেক্ষিতে আগামী ১৫ জুলাইয়ে মধ্যে এ কার্যক্রম শুরুর প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে।
এ অবস্থায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে যুক্তরাষ্ট্র, মালদ্বীপ, তুরস্ক, জর্ডান, দক্ষিণ আফ্রিকা, ওমান, মিশর ও ফ্রান্সে ভোটার নিবন্ধন ও জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদানের কার্যক্রম শুরুর লক্ষ্যে অন্যান্য দেশের ন্যায় সম্মতি প্রদানের জন্য অনুরোধ করা হয়। এ দেশগুলোতে ভোটার নিবন্ধন কার্যক্রম শুরুর সকল প্রস্তুতি নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের রয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইসির জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক এ এস এম হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘আট দেশে ভোটার নিবন্ধন ও জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদান কার্যক্রম শুরু করার জন্য আমাদের (ইসি) প্রস্তুতি থাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছি। এ বিষয়ে ইতোমধ্যে কাজ শুরু হয়েছে।
ইসির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বর্তমানে সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব, যুক্তরাজ্য, ইতালি, কুয়েত, কাতার, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া ও কানাডায় প্রবাসীদের ভোটার নিবন্ধন ও এনআইডি প্রদানের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এসব দেশ থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ৪৭ হাজার ৩২ জন প্রবাসী ভোটার হতে আবেদন করেছেন। এর মধ্যে মিশন অফিস ২৯ হাজার ৫৬৩ জনের বায়োমেট্রিক গ্রহণ করেছে। ২০ হাজার ৪৫১ জনকে ভোটার হিসেবে অন্তর্ভুক্তির অনুমোদন দিয়েছে। আবেদন বাতিল হয়েছে ৩ হাজার ৬৭৭ জনের।
চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বলেছেন, বাংলাদেশের নেতৃত্ব যার কাছেই থাকুক, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়িয়ে দেশের টেকসই উন্নয়ন ও জনজীবনের মানোন্নয়নে সহায়তা অব্যাহত রাখবে চীন।
আজ বুধবার রাজধানীতে আয়োজিত এক সেমিনারে তিনি এ অঙ্গীকার করেন।
তিনি বলেন, বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ গঠনে প্রাতিষ্ঠানিক সুরক্ষা জরুরি। এ লক্ষ্যে বাংলাদেশ ও চীন যৌথভাবে কাজ করবে। পাশাপাশি, দ্বিপক্ষীয় বিনিয়োগ চুক্তি এবং মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) দ্রুত আলোচনার টেবিলে আনার আহ্বান জানান বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত ওয়েন।
রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘এই উদ্যোগ চীনা উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আস্থা ও আগ্রহ আরও বাড়াবে। বাংলাদেশি বন্ধুদের বলছি— চুক্তির বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নিন।’
সেমিনারে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন বলেন, ‘আমাদের একটা প্রবণতা ছিল—প্রতিশ্রুতি দেই, বাস্তবায়ন করি না। তবে সরকার এখন সেই সংস্কৃতি পরিবর্তনের চেষ্টা করছে। আশাকরি, আপনি (রাষ্ট্রদূত) বড় পরিবর্তন দেখবেন।’
বাংলাদেশে চীনা ব্যবসায়ী সংগঠন চাইনিজ এন্টারপ্রাইজ অ্যাসোসিয়েশন ইন বাংলাদেশ (সিইএবি) আয়োজিত ‘চীন–বাংলাদেশ শিল্প ও সরবরাহ চেইন সহযোগিতা’ শীর্ষক সেমিনারটি আয়োজন করে। এ সময়, শিল্প ও খাতভিত্তিক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
বিডা চেয়ারম্যান ছাড়াও বিভিন্ন সরকারি সংস্থা, বিভাগ ও দুই দেশের ব্যবসায়ী নেতারা সেমিনারে অংশ নেন।
রাষ্ট্রদূত বলেন, দুই দেশের নেতার কৌশলগত দিকনির্দেশনা অনুসরণ করে 'সুবর্ণ জয়ন্তী' সামনে রেখে উচ্চমানের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ বাস্তবায়ন, শিল্প ও সরবরাহ চেইন একীভূতকরণ, বিনিয়োগ ও বাণিজ্য বৃদ্ধির মাধ্যমে অর্থনৈতিক সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় পৌঁছাবে।
সেমিনারে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, সড়ক ও সেতু, বন্দর, টেক্সটাইল ও গার্মেন্টস, বাণিজ্য ও সেবা, রেলপথ ও বেসামরিক বিমান, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি এবং পানি ও পরিবেশ খাতভিত্তিক গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়। এতে বাজার বিশ্লেষণ, বিনিয়োগ সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ তুলে ধরা হয়েছে।
রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘দুই দেশের যৌথ প্রচেষ্টায় বাংলাদেশে চীনা কোম্পানিগুলো আরও সমৃদ্ধ হবে এবং দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন এবং জনগণের জীবনমান উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ এখন রূপান্তরের সন্ধিক্ষণে। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অর্থনীতি স্থিতিশীল ও ইতিবাচক ধারায় রয়েছে, ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ ক্রমশ উন্নত হচ্ছে—ফলে দক্ষিণ এশিয়ার একটি নতুন বিনিয়োগ গন্তব্যে পরিণত হচ্ছে বাংলাদেশ।’
রাষ্ট্রদূত জানান, চীনা কোম্পানিগুলো বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বিদেশি বিনিয়োগকারী গোষ্ঠী। তাদের দীর্ঘমেয়াদি অভিজ্ঞতা ও পর্যালোচনার আলোকে প্রকাশিত ১০টি প্রতিবেদনের মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকার উপকৃত হবে।
চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে বাংলাদেশে চীনা বিনিয়োগ ৩.৭ গুণ বেড়েছে। গত আগস্ট থেকে প্রায় ২০টি চীনা কোম্পানি বাংলাদেশি অংশীদারদের সঙ্গে চুক্তি সই করেছে। এসব চুক্তির সম্ভাব্য মোট বিনিয়োগের পরিমাণ ৪০ কোটি মার্কিন ডলার ছাড়িয়েছে।
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে বাংলাদেশে সর্ববৃহৎ সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগকারী দেশ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে চীন।
চট্টগ্রাম চায়নিজ ইকোনমিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল জোন নির্মাণ কাজ শুরু হতে যাচ্ছে।
বাহেরচর দ্বীপে চীনের ‘অ্যাগ্রিভোলটাইক্স ইকোনমিক জোন’ সংক্রান্ত দলিল সই হয়েছে। পাশাপাশি, মোংলা বন্দর এলাকায় চীন-বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চলের কাজও এগিয়ে চলেছে।
রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বলেন, চীন কেবল বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকেই নয়, ভবিষ্যতের নির্বাচিত সরকারকেও সমর্থন করে এবং বাংলাদেশ নিয়ে তাদের রয়েছে পূর্ণ আস্থা।
ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেছেন, মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থার অতীত ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে হবে। এ শিক্ষা ব্যবস্থার স্বাতন্ত্র্য বজায় রাখতে হবে।
তিনি বলেন, মাদ্রাসা শিক্ষা একটি বিশেষায়িত শিক্ষা ব্যবস্থা। একে ধরে রাখতে হবে। অতি আধুনিকতার নামে এ শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংসের মুখে পতিত হতে দেওয়া যাবে না।
বুধবার (৯ জুলাই) ঢাকার আইডিইবি মিলনায়তনে ‘টেকসই উন্নয়নে আলিয়া মাদ্রাসা শিক্ষা ধারা: চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন।
বাংলাদেশ মাদ্রাসা ছাত্রকল্যাণ পরিষদ এ সেমিনারের আয়োজন করে।
ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, আলিয়া মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থা যুগযুগ ধরে সমগ্র ভারত উপমহাদেশে ইসলামি জ্ঞান চর্চা, মূল্যবোধের বিকাশ ও ইসলামি চিন্তাধারা প্রসারে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখে আসছে। কিছু ত্রুটি-বিচ্যূতি থাকলেও এ শিক্ষা ব্যবস্থার অবদান বিশাল।
তিনি আরও বলেন, কোলকাতা আলিয়া মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার পর থেকে দেওবন্দ মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার পূর্ব পর্যন্ত মধ্যবর্তী ৮৬ বছর আলিয়া মাদ্রাসা শিক্ষায় শিক্ষিত আলেম-ওলামারাই ভারতে জ্ঞানের মশাল জ্বেলেছিলেন। এখনও আলিয়া মাদ্রাসা থেকে শিক্ষা অর্জন করে অনেক আলেম-ওলামা সমাজের বিভিন্ন স্তরে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছেন।
তিনি হীনম্মন্যতা বোধ থেকে বের হয়ে আসতে সকলকে অনুরোধ জানান।
ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থার টুটি যারা চেপে ধরতে চায়, তাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে। ফ্যাসিবাদ যেন পুনরায় সৃষ্টি হতে না পারে, সে বিষয়ে সকলকে সতর্ক থাকতে হবে।
মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদেরকে হতাশাগ্রস্ত না হয়ে, আশাবাদী হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
মাদ্রাসা শিক্ষার গুরুত্ব তুলে ধরে ড. খালিদ বলেন, বিগত ষোল বছর মাদ্রাসা শিক্ষাকে অবদমিত করে রাখা হয়েছিলো। সাধারণ কোন বিষয়ে অনার্স চালু করার ক্ষেত্রে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ছিলো ইতিবাচক, কিন্তু ইসলামি স্টাডিজ, আরবি সাহিত্য, ইসলামের ইতিহাস প্রভৃতি বিষয়ের ক্ষেত্রে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের দৃষ্টিভঙ্গি ছিলো নেতিবাচক। এই ধারা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তুলে দেওয়া হয়েছে। এখন মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থা উন্নত হবে।
বাংলাদেশ মাদ্রাসা ছাত্রকল্যাণ পরিষদের উপদেষ্টা অধ্যক্ষ মাওলানা যাইনুল আবেদীনের সভাপতিত্বে এ সেমিনারে প্রধান আলোচক ছিলেন ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. মো. শামসুল আলম।
এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের কারিকুলাম বিশেষজ্ঞ ড. মোহাম্মদ হেদায়েত উল্লাহ।
সেমিনারে অন্যান্যের মধ্যে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. আহমদ আলী, ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডীন অধ্যাপক মো. অলিউল্লাহ, বাংলাদেশ ইসলামি ছাত্র শিবিরের সভাপতি জাহিদুল ইসলাম প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্তি বাতিল করে বিআইটি মডেলের মতো স্বাধীন কমিশন গঠনের এক দফা দাবিতে বরিশাল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের শিক্ষার্থীরা বুধবার সকাল ১০টা থেকে বরিশাল-ভোলা মহাসড়ক অবরোধ করেন। প্রায় চার ঘণ্টা ধরে সড়কে গাছের গুঁড়ি ফেলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে আন্দোলনে অংশ নেন তারা। এতে উভয় দিকের যান চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়, আর ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা।
শিক্ষার্থীরা জানান, দীর্ঘ দুই মাস ধরে তারা স্বতন্ত্র কমিশন গঠনের দাবিতে ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন করে একাডেমিক কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ রেখে আন্দোলন চালিয়ে আসছেন। কিন্তু ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কোনো কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়ায় তারা বাধ্য হয়েই সড়ক অবরোধ করেন।
একপর্যায়ে পুলিশ আন্দোলনকারীদের সরাতে লাঠিচার্জ করলে উভয়পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, পুলিশের মৃদু লাঠিচার্যে তাদের অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। পরে শিক্ষার্থীরা সড়ক থেকে সরে এসে কলেজ ক্যাম্পাসের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ চালিয়ে যান।
শিক্ষার্থীরা স্পষ্ট জানিয়ে দেন, তাদের এক দফা দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন এবং সড়ক বা ক্যাম্পাস ছাড়বেন না।
এদিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বন্দর থানা পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। তবে শিক্ষার্থীরা দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। পুলিশের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য পাওয়া না গেলেও, বরিশাল সদর উপজেলার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (ভূমি) আজহারুল ইসলাম জানান, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দফায় দফায় আলোচনা চলছে। তাদের প্রতিনিধি দলকে জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে দায়িত্বশীলদের সঙ্গে বসানো হবে বলেও আশ্বাস দেন তিনি।
বরিশাল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের অধ্যক্ষ লিটন রাব্বানী জানান, শিক্ষার্থীদের দাবি সম্পর্কে মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা চলছে। দ্রুত সমাধানের আশ্বাসও দেন তিনি।
বাংলাদেশ ভুটানকে যে সকল অবকাঠামোগত সুবিধা প্রদান করছে, তার সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহার করতে দেশটির প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি উল্লেখ করেন, দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা সম্প্রসারণের জন্য এখনো উল্লেখযোগ্য সম্ভাবনা রয়েছে।
বাংলাদেশে নবনিযুক্ত ভুটানের রাষ্ট্রদূত দাশো কারমা হামু দর্জি আজ বুধবার ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেলে তিনি এ আহ্বান জানান।
রাষ্ট্রদূত দর্জি ভুটানের প্রধানমন্ত্রীর শুভেচ্ছা বার্তা অধ্যাপক ইউনূসের কাছে পৌঁছে দেন।
দীর্ঘদিনের ঐতিহাসিক সম্পর্ক ও বিদ্যমান চমৎকার সহযোগিতার কথা তুলে ধরে রাষ্ট্রদূত দর্জি বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ভুটানকে বিশেষ করে চিকিৎসা শিক্ষা এবং বাংলাদেশে একটি ভুটানি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে সহযোগিতার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
তিনি ভুটান ও বাংলাদেশের মধ্যে সম্পর্ক আরও গভীর করার আগ্রহের কথা পুনর্ব্যক্ত করেন।
উভয় দেশের জনগণের মধ্যে সম্পর্কের গুরুত্ব তুলে ধরে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, দুই দেশের যুবসমাজের একে অপরের দেশ ভ্রমণের মাধ্যমে পারস্পরিক সংস্কৃতি বোঝা ও বন্ধন সুদৃঢ় করা উচিত।
প্রধান উপদেষ্টা উল্লেখ করেন যে বাংলাদেশ সার্কের চেতনাকে ধরে রাখতে ও চালিয়ে যেতে আগ্রহী।
প্রধান উপদেষ্টা রাষ্ট্রদূতকে বাংলাদেশে স্বাগত জানিয়ে তাকে পূর্ণ সহযোগিতার আশ্বাস দেন এবং আশা প্রকাশ করেন যে, তার কার্যকালীন সময়ে দুই দেশের সম্পর্ক আরও দৃঢ় হবে।