প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস আজ জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় ‘৩৬ জুলাই উদ্যাপন’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে জুলাই ঘোষণাপত্র পাঠ করেছেন।
এ সময় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে মঞ্চে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
জুলাই ঘোষণাপত্র হলো ২০২৪ সালের জুলাই গণঅভ্যুত্থানের একটি দলিল, যার মাধ্যমে জুলাই গণঅভ্যুত্থানকে রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিকভাবে স্বীকৃতি দেওয়া হবে।
জুলাই ঘোষণাপত্র নিচে হুবহু তুলে ধরা হলো-
১। যেহেতু উপনিবেশ বিরোধী লড়াইয়ের সুদীর্ঘকালের ধারাবাহিকতায় এই ভূখণ্ডের মানুষ দীর্ঘ ২৩ বছর পাকিস্তানের স্বৈরশাসকদের বঞ্চনা ও শোষণের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিল এবং নির্বিচার গণহত্যার বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধ গড়ে ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ স্বাধীনতা ঘোষণা করে জাতীয় মুক্তির লক্ষ্যে রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছিল;
এবং
২। যেহেতু, বাংলাদেশের আপামর জনগণ দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে এই ভূখণ্ডে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে বিবৃত সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচারের ভিত্তিতে উদার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বিনির্মাণের আকাঙ্ক্ষাকে বাস্তবায়নের জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করেছে;
এবং
৩। যেহেতু স্বাধীন বাংলাদেশের ১৯৭২ সালের সংবিধান প্রণয়ন পদ্ধতি, এর কাঠামোগত দুর্বলতা ও অপপ্রয়োগের ফলে স্বাধীনতা-পরবর্তী আওয়ামী লীগ সরকার মুক্তিযুদ্ধের জনআকাঙ্ক্ষা পূরণে ব্যর্থ হয়েছিল এবং গণতন্ত্র ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যকারিতা ক্ষুণ্ন করেছিল;
এবং
৪। যেহেতু স্বাধীনতা-পরবর্তী আওয়ামী লীগ সরকার স্বাধীনতার মূলমন্ত্র গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার বিপরীতে বাকশালের নামে সাংবিধানিকভাবে একদলীয় শাসনব্যবস্থা কায়েম করে এবং মতপ্রকাশ ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা হরণ করে, যার প্রতিক্রিয়ায় ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর দেশে সিপাহি-জনতার ঐক্যবদ্ধ বিপ্লব সংঘটিত হয় এবং পরবর্তী সময়ে একদলীয় বাকশাল পদ্ধতির পরিবর্তে বহুদলীয় গণতন্ত্র, মতপ্রকাশ ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা পুনঃপ্রবর্তনের পথ সুগম হয়,
এবং
৫। যেহেতু আশির দশকে সামরিক স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে দীর্ঘ নয় বছর ছাত্র-জনতার অবিরাম সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ১৯৯০ সালের গণঅভ্যুত্থান সংঘটিত হয় এবং ১৯৯১ইং সনে পুনরায় সংসদীয় গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়।
এবং
৬। যেহেতু দেশি-বিদেশি চক্রান্তে সরকার পরিবর্তনের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ব্যাহত হওয়ায় ১/১১ -এর ষড়যন্ত্রমূলক ব্যবস্থার মাধ্যমে বাংলাদেশে শেখ হাসিনার একচ্ছত্র ক্ষমতা, আধিপত্য ও ফ্যাসিবাদের পথ সুগম করা হয়;
এবং
৭। যেহেতু গত দীর্ঘ ষোল বছরের ফ্যাসিবাদী, অগণতান্ত্রিক এবং গণবিরোধী শাসনব্যবস্থা কায়েমের লক্ষ্যে এবং একদলীয় রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার অতি উগ্র বাসনা চরিতার্থ করার অভিপ্রায়ে সংবিধানের অবৈধ ও অগণতান্ত্রিক পরিবর্তন করা হয় এবং যার ফলে একদলীয় একচ্ছত্র ক্ষমতা ও আধিপত্য প্রতিষ্ঠার পথ সুগম হয়;
এবং
৮। যেহেতু শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সরকারের দুঃশাসন, গুম-খুন, আইন-বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হরণ এবং একদলীয় স্বার্থে সংবিধান সংশোধন ও পরিবর্তন বাংলাদেশের সকল রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানসমূহকে ধ্বংস করে;
এবং
৯। যেহেতু, হাসিনা সরকারের আমলে তারই নেতৃত্বে একটি চরম গণবিরোধী, একনায়কতান্ত্রিক, ও মানবাধিকার হরণকারী শক্তি বাংলাদেশকে একটি ফ্যাসিবাদী, মাফিয়া এবং ব্যর্থ রাষ্ট্রের রূপ দিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করে;
এবং
১০। যেহেতু, তথাকথিত উন্নয়নের নামে শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী নেতৃত্বে সীমাহীন দুর্নীতি, ব্যাংক লুট, অর্থ পাচার ও অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংসের মধ্য দিয়ে বিগত পতিত দুর্নীতিবাজ আওয়ামী লীগ সরকার বাংলাদেশ ও এর অমিত অর্থনৈতিক সম্ভাবনাকে বিপর্যস্ত করে তোলে এবং এর পরিবেশ, প্রাণবৈচিত্র্য ও জলবায়ুকে বিপন্ন করে;
এবং
১১। যেহেতু শেখ হাসিনার ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক দল, ছাত্র ও শ্রমিক সংগঠনসহ সমাজের সর্বস্তরের জনগণ গত প্রায় ষোল বছর যাবৎ নিরন্তর গণতান্ত্রিক সংগ্রাম করে জেল-জুলুম, হামলা-মামলা, গুম-খুন ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়;
এবং
১২। যেহেতু বাংলাদেশে বিদেশি রাষ্ট্রের অন্যায় প্রভুত্ব, শোষণ ও খবরদারিত্বের বিরুদ্ধে এদেশের মানুষের ন্যায়সংগত আন্দোলনকে বহিঃশক্তির তাঁবেদার আওয়ামী লীগ সরকার নিষ্ঠুর শক্তিপ্রয়োগের মাধ্যমে দমন করে;
এবং
১৩। যেহেতু অবৈধভাবে ক্ষমতা অব্যাহত রাখতে আওয়ামী লীগ সরকার তিনটি প্রহসনের নির্বাচনে (২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ এর জাতীয় সংসদ নির্বাচন) এদেশের মানুষকে ভোটাধিকার ও প্রতিনিধিত্ব থেকে বঞ্চিত করে;
এবং
১৪। যেহেতু, আওয়ামী লীগ আমলে ভিন্নমতের রাজনৈতিক নেতা-কর্মী, শিক্ষার্থী ও তরুণদের নিষ্ঠুরভাবে নির্যাতন করা হয় এবং সরকারি চাকুরিতে একচেটিয়া দলীয় নিয়োগ ও কোটাভিত্তিক বৈষম্যের কারণে ছাত্র, চাকুরি প্রত্যাশী ও নাগরিকদের মধ্যে চরম ক্ষোভের জন্ম হয়;
এবং
১৫। যেহেতু বিরোধী রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের ওপর চরম নিপীড়নের ফলে দীর্ঘদিন ধরে জনরোষের সৃষ্টি হয় এবং জনগণ সকল বৈধ প্রক্রিয়া অবলম্বন করে ফ্যাসিবাদবিরোধী লড়াই চালিয়ে যায়;
এবং
১৬। যেহেতু, সরকারি চাকরিতে বৈষম্যমূলক কোটাব্যবস্থার বিলোপ ও দুর্নীতি প্রতিরোধে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে আওয়ামী লীগ সরকার কর্তৃক ব্যাপক দমন-পীড়ন, বর্বর অত্যাচার ও মানবতাবিরোধী হত্যাকাণ্ড চালানো হয়, যার ফলে সারা দেশে দল-মত নির্বিশেষে ছাত্র-জনতার উত্তাল গণবিক্ষোভ গণঅভ্যুত্থানে রূপ নেয়;
এবং
১৭। যেহেতু ফ্যাসিস্ট শক্তির বিরুদ্ধে অদম্য ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে রাজনৈতিক দল, ধর্মীয়, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, পেশাজীবী, শ্রমিক সংগঠনসহ সমাজের সকল স্তরের মানুষ যোগদান করে এবং আওয়ামী ফ্যাসিবাদী বাহিনী রাজপথে নারী-শিশুসহ প্রায় এক হাজার মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করে, অগণিত মানুষ পঙ্গুত্ব ও অন্ধত্ব বরণ করে এবং আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে সামরিক বাহিনীর সদস্যগণ জনগণের গণতান্ত্রিক লড়াইকে সমর্থন প্রদান করে;
এবং
১৮। যেহেতু, অবৈধ শেখ হাসিনা সরকারের পতন, ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ ও নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের লক্ষ্যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে জনগণ অসহযোগ আন্দোলন শুরু করে, পরবর্তী সময়ে ৫ আগস্ট ঢাকা অভিমুখে লংমার্চ পরিচালনা করে এবং ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনরত সকল রাজনৈতিক দল, ছাত্র-জনতা তথা সর্বস্তরের সকল শ্রেণি, পেশার আপামর জনসাধারণের তীব্র আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে গণভবনমুখী জনতার উত্তাল যাত্রার মুখে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা ৫ আগস্ট ২০২৪ তারিখে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়;
এবং
১৯। যেহেতু বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক সংকট মোকাবেলায় গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ব্যক্ত জনগণের সার্বভৌমত্বের প্রত্যয় ও প্রয়োগ রাজনৈতিক ও আইনি উভয় দিক থেকে যুক্তিসংগত, বৈধ ও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত;
এবং
২০। যেহেতু জনগণের দাবি অনুযায়ী এরপর অবৈধ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ ভেঙে দেওয়া হয় এবং সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুসারে সুপ্রিম কোর্টের মতামতের আলোকে সাংবিধানিকভাবে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে ৮ আগস্ট ২০২৪ তারিখে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হয়;
এবং
২১। যেহেতু, বাংলাদেশের সর্বস্তরের জনগণের ফ্যাসিবাদবিরোধী তীব্র আকাঙ্ক্ষা এবং ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ফ্যাসিবাদ, বৈষম্য ও দুর্নীতিমুক্ত সমাজ ও রাষ্ট্র বিনির্মাণের অভিপ্রায় প্রকাশিত হয়;
এবং
২২। সেহেতু, বাংলাদেশের জনগণ সুশাসন ও সুষ্ঠু নির্বাচন, ফ্যাসিবাদী শাসনের পুনরাবৃত্তি রোধ, আইনের শাসন এবং অর্থনৈতিক ও সামাজিক ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে বিদ্যমান সংবিধান ও সকল রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের গণতান্ত্রিক সংস্কার সাধনের অভিপ্রায় ব্যক্ত করছে;
এবং
২৩। সেহেতু, বাংলাদেশের জনগণ বিগত ষোল বছরের দীর্ঘ ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলন-সংগ্রাম কালে এবং ২০২৪ সালের জুলাই গণ-অভ্যুত্থানকালীন সময়ে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার কর্তৃক সংঘটিত গুম-খুন, হত্যা, গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধ ও সকল ধরনের নির্যাতন, নিপীড়ন এবং রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি লুণ্ঠনের অপরাধসমূহের দ্রুত উপযুক্ত বিচারের দৃঢ় অভিপ্রায় ব্যক্ত করছে;
এবং
২৪। সেহেতু, বাংলাদেশের জনগণ জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সকল শহীদদের জাতীয় বীর হিসেবে ঘোষণা করে শহীদদের পরিবার, আহত যোদ্ধা এবং আন্দোলনকারী ছাত্রজনতাকে প্রয়োজনীয় সকল আইনি সুরক্ষা দেওয়ার অভিপ্রায় ব্যক্ত করছে।
এবং
২৫। সেহেতু, বাংলাদেশের জনগণ যুক্তিসংগত সময়ে আয়োজিতব্য অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ একটি নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত জাতীয় সংসদে প্রতিশ্রুত প্রয়োজনীয় সাংবিধানিক সংস্কারের মাধ্যমে দেশের মানুষের প্রত্যাশা, বিশেষত তরুণ প্রজন্মের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী আইনের শাসন ও মানবাধিকার, দুর্নীতি, শোষণমুক্ত, বৈষম্যহীন ও মূল্যবোধসম্পন্ন সমাজ এবং গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার অভিপ্রায় ব্যক্ত করছে।
এবং
২৬। সেহেতু বাংলাদেশের জনগণ এই প্রত্যাশা ব্যক্ত করছে যে একটি পরিবেশ ও জলবায়ু সহিষ্ণু অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই উন্নয়ন কৌশলের মাধ্যমে বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের অধিকার সংরক্ষিত হবে।
এবং
২৭। বাংলাদেশের জনগণ এই অভিপ্রায় ব্যক্ত করছে যে, ছাত্র-গণঅভ্যুত্থান ২০২৪-এর উপযুক্ত রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক স্বীকৃতি প্রদান করা হবে এবং পরবর্তী নির্বাচনে নির্বাচিত সরকারের সংস্কারকৃত সংবিধানের তফসিলে এ ঘোষণাপত্র সন্নিবেশিত থাকবে।
এবং
২৮। ৫ আগস্ট ২০২৪ সালে গণঅভ্যুত্থানে বিজয়ী বাংলাদেশের জনগণের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন হিসেবে এই ঘোষণাপত্র প্রণয়ন করা হলো।
প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান দিবস ২০২৫’ উপলক্ষে একটি স্মারক ডাকটিকিট, উদ্বোধনী খাম ও সিলমোহর অবমুক্ত করেছেন।
তিনি আজ মঙ্গলবার দুপুরে রাষ্ট্রীয় অতিথিভবন যমুনায় ডাকটিকিট, উদ্বোধনী খাম ও সিলমোহর অবমুক্ত করেন।
এ সময় শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আবরার, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম, শিল্প ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব আবদুন নাসের খান উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস উপলক্ষে আজ মঙ্গলবার রাত ৮ টা ২০ মিনিটে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেবেন।
বাংলাদেশ টেলিভিশন, বিটিভি নিউজ ও বাংলাদেশ বেতার ভাষণটি একযোগে সম্প্রচার করবে।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে এক বার্তায় এ তথ্য জানানো হয়েছে।
জুলাই ঘোষণাপত্র আজ বিকেল ৫টায় উপস্থাপন করা হবে।
জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় এক গণসমাবেশে গণঅভ্যুত্থানের সকল পক্ষের উপস্থিতিতে জুলাই ঘোষণাপত্র জাতির সামনে উপস্থাপন করা হবে।
প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার জানান, বাংলাদেশ টেলিভিশন অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচার করবে।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।
এদিকে রবিবার এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জুলাই ঘোষণা পত্রের খসড়া চূড়ান্ত করেছে। আগামী মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) বিকেল ৫টায় জাতির সামনে এটি উপস্থাপন করা হবে।’
দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় এক ধাপ এগিয়ে রয়েছে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার। সরকারের খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে বাংলাদেশে এ মুহুর্তে চাল ও গম মিলে মোট ২১ লাখ ৩১ হাজার মেট্রিক টন খাদ্যশস্য মজুদ আছে। সরকারের বর্ষপুর্তি উপলক্ষ্যে গণমাধ্যমকে দেয়া তথ্যে এ মজুদের কথা জানা গেছে।
খাদ্য মন্ত্রণালয় জানায়, বর্তমানে সরকারীভাবে ১৯ লাখ ৫৪ হাজার টন চাল এবং ১ লাখ ৭৭ হাজার টন গম মজুদ আছে। এ বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত মজুদের এই লক্ষ্যমাত্রায় আরো ৫ লাখ টন চাল ও চার লাখ টন গম আমদানীর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
খাদ্যপণ্যের বর্তমান পরিস্থিতি এবং এ বাজার ব্যবস্থায় চালের দাম ডিসেম্বর ২০২৪ এর তুলনায় জুন ২০২৫ পর্যন্ত পাইকারী ও খুচরা বাজারে যথাক্রমে ১.২২ টাকা ও ১.০৪ টাকা কমেছে বলে সরকারী তথ্যে উল্লেখ করা হয়েছে।
সরকারীভাবে এ বছর ৫ লাখ ৩৫ হাজার মেট্রিকটন ধান ও ১৯ লাখ ৬৭ হাজার মেট্রিকটন চাল সংগ্রহ করা হয়েছে। গতবছরের তুলনায় চলতি বছর ধান ও চাল মিলে মোট ৪ লাখ ৬১ হাজার মেট্রিকটন খাদ্যশস্য বেশি সংগ্রহ করেছে সরকার।
সরকারের কৃষি বিপনন অধিদপ্তরের সূত্র জানায়, জুন ২০২৪ মাসের তুলনায় জুন ২০২৫ মাসে মোটা চালের কেজি প্রতি জাতীয় পাইকারী গড় মুল্য প্রায় ১.৭৩ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং খোলা আটার কেজি প্রতি পাইকারী গড় মুল্য ০.৬৩ টাকা হ্রাস পেয়েছে। অন্যদিকে মোটা চালের কেজি প্রতি খুচরা মুল্য ২.১৮ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। আটা খোলা এর খুচরা মুল্য ০.৮৮ টাকা হ্রাস পেয়েছে।
খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, চলতি অর্থ বছরে মধুপুর, বরিশাল, ময়মনসিংহ ও নারায়ণগঞ্জে ৪টি আধুনিক সাইলো নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হওয়ার ফলে সরকারী খাদ্যশস্য মজুদ ধারন ক্ষমতা ২৩ লাখ ৮৮ হ্জাার মেট্রিক টনে উন্নীত হয়েছে।
এই মুহূর্তে সরকারি গুদামে খাদ্যপণ্য মজুদ আছে ১১ লাখ ৮৬ হাজার ৪০৮ টন। এর মধ্যে চাল সাড়ে সাত লাখ টন এবং গম চার লাখ ২৮ হাজার ৩৩৫ টন। বাকি খাদ্যপণ্যের মধ্যে ধান মজুদ রয়েছে। গত বছর এই সময়ে খাদ্যপণ্য মজুদ ছিল ১৪ লাখ চার হাজার টন। এর মধ্যে চাল ছিল ১২ লাখ ৪৮ হাজার ৩৫৪ টন এবং গম ছিল এক লাখ ৫৬ হাজার ২৩৫ টন।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের পদস্থ কর্মকর্তারা বলেন, এই মজুদকে সন্তোষজনক বলা যাবে না, আবার ঝুঁকিপুর্ণ বলাও ঠিক হবে না। মজুদ আরও বাড়ানো দরকার। এ ব্যাপারে আমাদের বেশ কিছু উদ্যোগ রয়েছে। এর মধ্যে দুই লাখ টন চাল-গম কেনার চুক্তি হয়েছে। স্থানীয়ভাবে প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ টন চাল কেনার টার্গেট আছে। তা পূরণ হবে বলে আশা করছি। পাশাপাশি আমদানি করা যেসব চাল-গম পাইপলাইনে আছে সেগুলো শিগগিরই আমরা পেয়ে যাব। এ ছাড়া সম্প্রতি বন্যায় ফসলের যে ধরনের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করা হয়েছিল, তা হয়তো হবে না। এদিক দিয়েও বলা যায় এ বছর দেশের খাদ্যশস্য মজুদের পরিমাণ ভাল
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা আরো জানান, দেশে খাদ্যশস্য উৎপাদনের জমির পরিমাণ কমে যাওয়ায় প্রায় ১৮ কোটি মানুষের জন্য খাবার নিশ্চিত করা সরকারের জন্য এখন বড় চ্যালেঞ্জ। অনেক সীমাবদ্ধতার মধ্যেও নতুন নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে খাদ্য উৎপাদন বাড়ানোর চেষ্টা করছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে সরকারের মজুদ বাড়াতে হচ্ছে। এখন ২২ লাখ টন খাদ্য মজুদের সক্ষমতা আছে। এটাকে বাড়িয়ে ৩০ লাখ টনে নিয়ে যাওয়া হবে। খাদ্য মজুদের সক্ষমতা বাড়ানোর বিষয়টি খুব বেশি প্রয়োজন।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, দেশে সাতটি সাইলো গুদাম নির্মাণাধীন রয়েছে। এগুলোর প্রতিটিতে প্রায় ৫০ হাজার টন খাদ্যশস্য রাখা যাবে। এর মধ্যে দু-একটি সাইলো গুদাম এমন জায়গায় নির্মাণ করা হয়েছে, এর কোনো প্রয়োজন ছিল না। আগের সরকারের একজন মন্ত্রীর ইচ্ছায় টাঙ্গাইলের মধুপুরে ২২০ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি সাইলো নির্মাণ করা হয়েছে। যেখানে মালপত্র আনা-নেওয়ার খরচ অনেক বেশি হবে। দাতাগোষ্ঠী ও সরকারি কর্মকর্তারাও রাজি ছিলেন না। সাধারণত এসব সাইলো নির্মাণ করা হয় নদীর পাড়ে বা যেখানে ট্রেন চলাচল করে। কিন্তু টাঙ্গাইলের পশ্চিমে যমুনা নদী থাকলেও সাইলোটি এমন জায়গায় করা হয়েছে, সেখানে ট্রাক ছাড়া অন্য কোনো বাহনে মালপত্র পরিবহন করা যাবে না। ময়মনসিংহেও প্রায় একই অবস্থা। ময়মনসিংহ সাইলোতে পরে রেলপথ টানা হয়েছে। এগুলো ব্যবহারযোগ্য হলে মজুদ বাড়ানোর সুযোগ হবে।
খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, সরকারী খাতে গম আমদানীর উৎস বহুমুখিকরনের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। ২০২৪/২৫ অর্থ বছরে যুক্তরাষ্ট্রসহ আর্জেন্টিনা, বুলগেরিয়া ও ইউক্রেন থেকে গম আমদানী করা হয়েছে। চলতি ২০২৫ সালে আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশ থেকে সরকারী খাতে গম আমদানীর কার্যক্রম গ্রহন করা হয়েছে।
দেশে খাদ্যশস্যের সরবরাহ নিশ্চিত করতে সরকারী ও বেসরকারী খাতে আমদানী বৃদ্ধি করা হয়েছে।
চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত খাদ্যশস্য মজুদের লক্ষ্যমাত্র ২৬ লাখ টনেরও বেশি রাখা হয়েছে।
মাত্র ২৯ কিলোমিটার রেলপথ। কিন্তু এই পথ পাড়ি দিতেই সময় লাগে আড়াই ঘণ্টা। কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারী থেকে জেলা শহর কুড়িগ্রাম পর্যন্ত চলাচলকারী একমাত্র লোকাল ট্রেনটি প্রতিদিন মাত্র একবার চলাচল করে, তাও নির্ধারিত সময়ের চেয়ে দেরিতে। ভাঙাচোরা লাইনে ট্রেনের গতি ঘণ্টায় ১০–১৫ কিলোমিটার, যেখানে ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক চলে ৪০–৪৫ কিলোমিটার বেগে।
কুড়িগ্রাম–রমনা রেলরুটে কুড়িগ্রাম, পাঁচপীর, উলিপুর, বালাবাড়ী ও রমনা—এই পাঁচটি স্টেশন থাকলেও কার্যত রেলসেবার মান এখন নাজুক। চিলমারীর রমনা স্টেশনে প্রতিদিন শত শত যাত্রী ট্রেনের জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেন।
৬৫ বছর বয়সী ট্রেনযাত্রী মফির উদ্দিন বলেন, ‘একসময় রমনা স্টেশন ছিল ব্যস্ততম। প্রতিদিন তিন জোড়া ট্রেন চলত। এখন কখনো চলে, কখনো চলে না। তবুও অপেক্ষা করি, কারণ ট্রেনেই সবচেয়ে সাশ্রয়ী ও নিরাপদ যাতায়াত হয়।’
স্থানীয় স্কুলশিক্ষক আব্দুস সালাম বলেন, ‘চিলমারী নদীভাঙন ও দারিদ্র্যপীড়িত এলাকা। এখানকার অনেক মানুষ কুড়িগ্রাম বা অন্য শহরে গিয়ে দিনমজুরির কাজ করেন। স্বল্প খরচে যাতায়াতের জন্য ট্রেনই তাঁদের একমাত্র ভরসা। কিন্তু রেললাইন এত খারাপ যে যাতায়াত দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘রেলপথ পুনর্বাসনের একটি প্রকল্প শুরু হলেও কার্যত কোনো অগ্রগতি নেই। দুদফা মেয়াদ বাড়ানোর পরও কাজ হয়নি। চিলমারীকে বরাবরই অবহেলিত রাখা হচ্ছে। আমরা আর বৈষম্য চাই না।’
চিলমারী নৌবন্দরকেন্দ্রিক যাত্রীচাপের কথাও তুলে ধরেন সালাম। ‘প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ এই বন্দরে আসা–যাওয়া করেন। রেলসুবিধা উন্নত করা গেলে তাঁদের বড় উপকার হতো,’ বলেন তিনি।
রেলওয়ের তথ্য অনুযায়ী, চিলমারী–কুড়িগ্রাম রেলপথ পুনর্বাসন ও আধুনিকায়নের জন্য ২০২৩ সালে দুটি পৃথক প্যাকেজে প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। কুড়িগ্রাম–উলিপুর ১৯ কিলোমিটার অংশের ব্যয় ধরা হয় ২৯ কোটি টাকা এবং রমনা–উলিপুর ১০ কিলোমিটার অংশে ব্যয় ধরা হয় ৩৩ কোটি ৭০ লাখ টাকা।
প্রকল্পের আওতায় মাটি ভরাট, প্রটেকশন ওয়াল নির্মাণ, নতুন রেললাইন ও স্লিপার বসানো এবং ১২টি সেতু–কালভার্ট সংস্কারের কথা ছিল। কাজ শুরুর সময় ছিল ২০২৩ সালের নভেম্বর এবং শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২৫ সালের জানুয়ারি। পরে মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২৫ সালের জুন এবং সর্বশেষ ২০২৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়।
প্রকল্পের দায়িত্বে থাকা বিশ্বাস কনস্ট্রাকশন লিমিটেডের ম্যানেজার রুবেল ইসলাম বলেন, ‘আর্থিক সংকটে ভুগছি। রেলওয়ের কাছ থেকে আমাদের কাজের অর্ধেক বিল এখনো বকেয়া। ফলে প্রয়োজনীয় মালামাল কিনতে পারছি না, কাজও এগোচ্ছে না।’
তিনি জানান, ‘কুড়িগ্রাম–উলিপুর অংশে প্রায় ৮০ শতাংশ কাজ শেষ হলেও রমনা–উলিপুর অংশে কাজ হয়েছে মাত্র ২৫ শতাংশ। আমরা যদি সম্পূর্ণ বিল পেতাম, তাহলে দ্রুত কাজ শেষ করা সম্ভব হতো।’
লালমনিরহাট রেলওয়ে বিভাগের বিভাগীয় প্রকৌশলী শিপন ইসলাম বলেন, ‘ঠিকাদার আর্থিক সংকটে থাকায় প্রকল্পের অগ্রগতি হয়নি। তাঁদের বারবার তাগাদা দেওয়া হচ্ছে। আমরা উপরের দপ্তরে জানিয়েছি, যাতে বিল অনুমোদন হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘রেলপথটির পুনর্বাসন শেষ হলে চিলমারী–কুড়িগ্রাম রুটে দ্রুত গতিতে ট্রেন চালানো যাবে এবং নতুন ট্রেনও যুক্ত করা সম্ভব হবে। চলতি বছরের মধ্যেই প্রকল্প শেষ করার চেষ্টা চলছে।’
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. সি আর আবরার বলেছেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে যারা জীবন দিয়েছে, পঙ্গুত্ববরণ করেছে, দৃষ্টি হারিয়েছে জাতি হিসেবে তাদের এ ত্যাগ বৃথা যেতে দেয়া যাবে না। গণঅভ্যুত্থানে আহত ও নিহতেদর যেন আমরা ভুলে না যাই।
আজ সায়দাবাদ সংলগ্ন গোলাপবাগ মাঠে কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের আয়োজনে মাদরাসা রেজিস্ট্যান্স ডে পালন উপলক্ষে শহীদদের স্মরণে জুলাই ২৪ পুনর্জাগরণ অনুষ্ঠানমালা উদযাপন ও সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
উপদেষ্টা বলেন, এখানে প্রদর্শিত প্রেরণার প্রজন্ম ডকুমেন্টরিতে যা দেখলাম এবং যা শুনলাম তা ভুলে যাবার নয়। প্রতিদিন রাস্তায় বের হলেই দেয়ালে বিভিন্ন লেখা দেখি। বিভিন্ন গ্রফিটিতে নতুন বাংলাদেশ গঠনে তরুণদের প্রত্যয় ও আকাঙ্ক্ষার কথা ফুটে উঠেছে। আমরা যেন তাঁদের এ প্রত্যয় ও আকাঙ্ক্ষার কথা ভুলে না যাই। এসকল লেখাগুলো আমাদের প্রতিদিন স্মরণ করিয়ে দেয় জুলুম ও নির্যাতন কথা।
তিন বলেন, একসময় আমাদের দেশে জঙ্গি নাটক সাজানো হয়েছে। এসব জঙ্গি নাটক সাজিয়ে নিরীহ মানুষদের উপর বর্বর নির্যাতন চালানো হয়েছে। সেই সময় আশাহত ছিলাম, মনে হয়েছিল আমরা আর স্বাধীনভাবে চলতে পারব না। কিন্তু এই গণঅভুত্থান আমাদের নতুন বাংলাদেশ গড়ার সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে ও স্বাধীনভাবে চলার সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে।
অনুষ্ঠানে কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব ড. খ ম কবিরুল ইসলাম বলেন, পূর্বের শাসনামলে গুম, খুন, অত্যাচার ও নিপীড়নের শিকার হয়েছে আলেম সমাজ। দাড়ি টুপি দেখলেই তাদের ধরে নিয়ে যাওয়া হতো। চব্বিশের ঐতিহাসিক জুলাই গণঅভ্যুত্থানে মাদরাসার শিক্ষার্থী ও আলেম সমাজ যে আত্মত্যাগ ও অদম্য সাহসিকতা দেখিয়ে তা ভুলে যাওয়ার নয়। সকল পর্যায়ের ছাত্র, জনতা, কৃষক, শ্রমিক সর্বস্তরের জনগণ রাজপথে নেমে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল যার ফলে ফ্যসিবাদের বিদায় হয়েছিল। যাত্রাবাড়ী ছিল গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম প্রধান কেন্দ্র ।
চলচ্চিত্র প্রদর্শন এবং বিভিন্ন ইসলামিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে মাদরাসা রেজিস্ট্যান্স ডে পালিত হয়।
তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মোঃ মাহফুজ আলম বলেছেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানকে জনস্মৃতিতে রাখতে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় কাজ করছে। মন্ত্রণালয়ের অধীন দপ্তর-সংস্থাসমূহ জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ঘটনাপ্রবাহের তথ্য সংরক্ষণের পাশাপাশি প্রচারের উদ্যোগ নিয়েছে। সোমবার (৪ঠা আগস্ট) বিকালে চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তর (ডিএফপি)-এর আয়োজনে রাজধানীর তথ্য ভবন প্রাঙ্গণে প্রকাশনা উৎসবে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রকাশনা উৎসবের উদ্দেশ্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থান নিয়ে সরকারের বিভিন্ন দপ্তর-সংস্থার প্রকাশিত গ্রন্থসমূহ প্রদর্শনের জন্য এই উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। এই প্রকাশনা উৎসবে গণঅভ্যুত্থানের ওপর প্রকাশিত গ্রন্থের পাশাপাশি বিভিন্ন স্থিরচিত্র, পোস্টার ও গ্রাফিতি প্রদর্শন করা হয়েছে। এর মাধ্যমে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ঘটনাপ্রবাহের তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে।
মাহফুজ আলম বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে এ পর্যন্ত তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের অধীন দপ্তর-সংস্থাসমূহ জুলাই গণঅভ্যুত্থান নিয়ে অনেকগুলো গ্রন্থ প্রকাশ করেছে। এছাড়া, তথ্য অধিদফতর (পিআইডি), প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ (পিআইবি), বাংলাদেশ বেতার, বিটিভিসহ অন্যান্য দপ্তর-সংস্থা গণঅভ্যুত্থানের দলিলাদি সংরক্ষণ ও প্রচারের কাজ করছে।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রচার নিয়ে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা তুলে ধরে তিনি বলেন, চলতি অর্থবছরে গণঅভ্যুত্থানকেন্দ্রিক কয়েকটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করা হবে। এর পাশাপাশি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে জুলাই গণঅভ্যুত্থান নিয়ে বেশ কিছু পর্যালোচনামূলক গ্রন্থ প্রকাশ করা হবে।
প্রকাশনা উৎসবে তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা ডিএফপি প্রকাশিত '৩৬ জুলাই গ্রাফিতিতে বাংলাদেশ (দ্বিতীয় খণ্ড)' এবং 'তারুণ্যের বাংলাদেশ' গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করেন। এ সময় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব মাহবুবা ফারজানা, তথ্য অধিদফতরের প্রধান তথ্য অফিসার মো. নিজামূল কবীর, গণযোগাযোগ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ফায়জুল হক, জাতীয় গণমাধ্যম ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক মুহাম্মদ হিরুজ্জামান এনডিসি এবং বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভের মহাপরিচালক মো. আবদুল জলিল উপস্থিত ছিলেন।
মোড়ক উন্মোচনের পর উপদেষ্টা প্রকাশনা উৎসবের বিভিন্ন স্টল ঘুরে দেখেন।
জুলাইয়ে শহীদদের ত্যাগ জাতিকে একটি ন্যায় ও সাম্যভিত্তিক, বৈষম্য ও দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপ ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
তিনি বলেন, ‘জুলাই আমাদের নতুন করে আশার আলো- একটি ন্যায় ও সাম্যভিত্তিক, বৈষম্য ও দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখিয়েছে। হাজারো শহীদের আত্মত্যাগ আমাদের রাষ্ট্র সংস্কারের যে সুযোগ এনে দিয়েছে তা যেকোনো মূল্যে রক্ষা করতে হবে।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘পতিত স্বৈরাচার ও তার স্বার্থলোভী গোষ্ঠী এখনও দেশকে ব্যর্থ করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। দলমত নির্বিশেষে সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে এই ষড়যন্ত্রকে মোকাবিলা করতে হবে। আসুন সবাই মিলে আমরা এমন এক বাংলাদেশ গড়ে তুলি, যেখানে আর কোনো স্বৈরাচারের ঠাঁই হবে না।’
সোমবার (৪ আগস্ট) জুলাই গণ-অভ্যুত্থান দিবসে এক বাণীতে প্রধান উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘বাংলাদেশের ইতিহাসের এক অবিস্মরণীয় দিন আজ। এক বছর আগে এই দিনে জুলাই গণ-অভ্যুত্থান পূর্ণতা পায়, দীর্ঘদিনের ফ্যাসিবাদী শাসন থেকে মুক্ত হয় প্রিয় স্বদেশ। বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণ, যাদের যূথবদ্ধ আন্দোলনের ফসল আমাদের এই ঐতিহাসিক অর্জন, তাদের সবাইকে আমি এই দিনে আন্তরিক অভিনন্দন জানাই।
তিনি বলেন, আজ আমি স্মরণ করছি সেই সব সাহসী তরুণ, শ্রমিক, দিনমজুর ও পেশাজীবীদের, যারা ফ্যাসিবাদী শক্তিকে মোকাবিলা করতে গিয়ে শাহাদত বরণ করেছেন। গণ-অভ্যুত্থানে শাহাদত বরণকারী সবার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে আহত সকল জুলাই যোদ্ধা, চিরতরে পঙ্গু হওয়া ও দৃষ্টিশক্তি হারানো সকল জুলাই যোদ্ধাকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন অধ্যাপক ইউনূস।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, টানা ১৬ বছরের স্বৈরাচারী অপশাসনের বিরুদ্ধে সম্মিলিত বিস্ফোরণ ছিল জুলাই গণ-অভ্যুত্থান। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের মূল লক্ষ্য ছিল— একটি বৈষম্যহীন, দুর্নীতি ও স্বৈরাচারমুক্ত নতুন রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা। দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করে রাষ্ট্রকে জনগণের হাতে ফিরিয়ে দেওয়া। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পরে এ সকল লক্ষ্য বাস্তবায়নে রাষ্ট্রযন্ত্রের সকল খাতে ব্যাপক সংস্কার কার্যক্রম গ্রহণ করেছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
তিনি বলেন, জুলাই গণহত্যার বিচারের কার্যক্রম দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। জুলাই শহীদদের স্মৃতি রক্ষা ও আহত জুলাই যোদ্ধাদের পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
ড. ইউনূস বলেন, আমাদের গণতান্ত্রিক অভিযাত্রাকে ত্বরান্বিত করতে রাজনৈতিক ও নির্বাচন ব্যবস্থা এবং প্রয়োজনীয় সকল সংস্কারে রাজনৈতিক দল ও অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা চলমান।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, একটি টেকসই রাজনৈতিক সমাধানের পাশাপাশি শান্তিপূর্ণ, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের কাছে রাষ্ট্রের সকল ক্ষমতা ফিরিয়ে দিতে অন্তর্বর্তী সরকার অঙ্গীকারবদ্ধ।
অধিগ্রহণকৃত জমি যে কাজের জন্য নেয়া হচ্ছে সে কাজ ব্যতিত অন্য কাজে ব্যবহার করা যাবে না। জমি ব্যবহৃত নাহলে জেলা প্রশাসকের নিকট সেই জমি ফেরত দিতে হবে। অধিগ্রহণ করা অব্যবহৃত ও বেদখলকৃত জমি পুনরুদ্ধার করা খুবই জরুরি। আমাদের ভূমি দিনে দিনে হ্রাস পাচ্ছে তাই জমির সঠিক ব্যবহারে নিশ্চিত করতে হবে। একসময় জেলা,উপজেলা এবং গ্রামে পোস্ট অফিস, টেলিফোন এক্সচেঞ্জ,টেলিগ্রাফ অফিস ছিল সেগুলো কোথায়? সেইসব প্রতিষ্ঠানের জমি উদ্ধার করে অন্ততপক্ষে বনায়ন করা হলেও ভূমিগুলো সরকারের দখলে থাকবে। এই ধরনের জমি পুনরুদ্ধার ও ব্যবহারের জন্য যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া সময়ের দাবি বলেন; ভূমি উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার।
আজ ভূমি মন্ত্রণালয়ের সম্মেলনকক্ষে ভূমি উপদেষ্টার সভাপতিত্বে ‘অধিগ্রহণকৃত অব্যবহৃত ও বেদখল জমি ব্যবহার ও পুনরুদ্ধার’ বিষয়ক উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি’র ১ম সভা অনুষ্ঠিত হয়।
ভূমি উপদেষ্টা আরো বলেন; অব্যবহৃত ও বেদখল জমি উদ্ধার করা রাষ্ট্রের জন্য খুবই কল্যাণকর। এতে রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়াতে সাহায্য করবে,কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে,খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সহায়ক হবে,ভূমি রাজস্ব বৃদ্ধি পাবে এবং পরিকল্পিত নগরায়ণ ইতিবাচক ভুমিকা রাখবে,যা জীবনযাত্রার মান উন্নত in করবে। অব্যবহৃত ও বেদখল জমি উদ্ধার করা রাষ্ট্রের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় এবং রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন; অধিগ্রহণকৃত অব্যবহৃত ও বেদখল জমির তথ্য জেলা প্রশাসকদের কাছ থেকে নিতে হবে। এছাড়াও মন্ত্রণালয় ও এর অধিদপ্তর থেকেও অব্যবহৃত ভূমির তথ্য নিতে হবে। উভয় তথ্যf ক্রস চেক করলে প্রকৃত হিসাব পাওয়া যাবে। এছাড়া সরকারি প্রতিষ্ঠানের জমির প্রয়োজন হলেও কিনে নিতে হবে ,নামমাত্র মুল্যে নয়। প্রকৃত মুল্যে কিনতে হবে। প্রয়োজনে আইনের সংশোধন ও নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে।
গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান বলেন; অর্পিত সম্পত্তি ও শত্রু সম্পত্তির ক্ষেত্রে আইনজীবী নিয়োগে আরো শর্তক হতে হবে। অন্যথায় জমিগুলো সব বেদখল হয়ে যাবে। ঢাকা শহরের কয়েক হাজার অর্পিত সম্পত্তি রয়েছে যার অধিকাংশ বেদখলে। এসব ক্ষেত্রে আইনজীবীদের সম্মানি খুবই কম এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
সভায় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানকে কো অপ্ট করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এছাড়াও ভূমি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এএসএম সালেহ আহমেদ এর নেতৃত্বে ‘স্টক টেকিং’ কমিটি এবং সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ এর সিনিয়র সচিব মোঃ এহছানুল হক এর নেতৃত্বে ‘ব্যবহার সংক্রান্ত’ কমিটি করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
সভায় উপস্থিত ছিলেন ভূমি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এএসএম সালেহ আহমেদ; সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ এর সিনিয়র সচিব মোঃ এহছানুল হক ; সেতু বিভাগের সচিব মোহাম্মদ আবদুর রউফ;কৃষি সচিব এমদাদ উল্লাহ মিয়ান; পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব নাজমুল আহসান;ঢাকার বিভাগীয় কমিশনারসহ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ।
গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় এবং রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খানসহ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ব্ধতন কর্মকর্তাবৃন্দ।
প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস আগামীকাল মঙ্গলবার বিকেল ৫টায় জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় জুলাই ঘোষণাপত্র পাঠ করবেন।
বাংলাদেশ টেলিভিশন অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচার করবে।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং এক বার্তায় এ তথ্য জানিয়েছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. সি আর আবরার সাথে সোমবার (৪আগষ্ট) ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত সাক্ষাৎ করেন। বাংলাদেশ এবং ফিলিস্তিনের শিক্ষাব্যবস্থাকে উভয়ের সহযোগিতার মাধ্যমে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে একমত পোষণ করেন শিক্ষা উপদেষ্টা । উভয় দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে দুজনের মধ্যে অত্যান্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।
বাংলাদেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষাবৃত্তি প্রদানের মাধ্যমে ফিলিস্তিনের ছাত্রছাত্রীদেরকে বাংলাদেশে লেখাপড়া করার সুযোগ প্রদান করেছে এ জন্য ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত শিক্ষা উপদেষ্টা ড. সি আর আবরারকে ধন্যবাদ জানান।
ফিলিস্তিনের শিক্ষা বিস্তারে বাংলাদেশের অবদানকে তারা বিশেষ গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করছে এবং বাংলাদেশের এ সহযোগতিার জন্য ফিলিস্তিনের বর্তমান শিক্ষামন্ত্রী বাংলাদেশ সফরের আগ্রহ ব্যক্ত করেছেন। বর্তমানে গাজায় যে সংকট চলছে এ সংকটে বাংলাদেশের ভূমিকার প্রশংসা করেন ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত। তিনি জানান বাংলাদেশ থেকে শিক্ষা অর্জন করে ৪১ জন চিকিৎসক গাজায় আহতদের চিকিৎসা সেবা প্রদান করছেন এ জন্য ফিলিস্তিনের জনগণ বাংলাদেশের প্রতি কৃতজ্ঞ। বাংলাদেশের এ অবদানকে স্মরণীয় হিসেবে রাখবেন বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। যখন ফিলিস্তিন মুক্ত হবে তখন তারা বাংলাদেশের ছাত্রছাত্রীদেরকে ফিলিস্তিনে পড়াশুনার সুযোগ করে দেওয়ার মাধ্যমে এ অবদানের পরিপূরক হিসেবে বাংলাদেশের এ ঋণ পরিশোধের চেষ্টা করবেন বলে জানান তিনি।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় ও শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান আজ মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় অবস্থিত থ্রি-অ্যাঙ্গেল মেরিন লিমিটেড শিপইয়ার্ড পরিদর্শন করেছেন। শিপইয়ার্ডে দুটিতে বাংলাদেশ ইনল্যান্ড ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট কর্পোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি)-এর জন্য নির্মাণাধীন জলযানের কাজের অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করেন তিনি।
বিআইডব্লিউটিসি'র জন্য ৩৫টি বাণিজ্যিক জলযান ও ৮টি সহায়ক জলযান সংগ্রহ এবং ২টি নতুন স্লিপওয়ে নির্মাণ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় এ শিপইয়ার্ডে ১৮টি নৌযান নির্মাণাধীন রয়েছে। পরিদর্শনকালে নৌপরিবহন এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা নির্মাণ কাজের গতি ও মান নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্টদের কঠোর নির্দেশনা দেন। পরে তিনি নারায়ণগঞ্জের আনন্দ শিপইয়ার্ড পরিদর্শন করে সেখানে নির্মাণাধীন সী ট্রাক (Sea Truck)-এর নির্মান কাজের গুনগতমান এবং কার্যকর ব্যাবহারের প্রতি গুরুত্বারোপ করেন।
নৌপরিবহন উপদেষ্টা শিপইয়ার্ডে কর্মরত শ্রমিকদের নিরাপত্তা ও উন্নত কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করতে কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের জাহাজ নির্মাণ শিল্পের শ্রমিকদের দক্ষতা বৃদ্ধি পেয়েছে। এখন তাদের স্বাস্থ্যঝুকি কমানো নিরাপত্তা ও সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে সরকার কাজ করছে।
উপদেষ্টা আশা প্রকাশ করেন যে, থ্রি-অ্যাঙ্গেল মেরিনের ১৮টি নৌযান সেপ্টেম্বর ২০২৪ এর মধ্যে বিআইডব্লিউটিসির কাছে হস্তান্তর করা শুরু হবে। এছাড়া, আনন্দ শিপইয়ার্ডে নির্মাণাধীন ৪টি সী ট্রাক এর কাজ দ্রুত এগিয়ে চলেছে। তিনি দ্বীপাঞ্চল (সন্দীপ, হাতিয়া, মহেশখালী) ও অন্যান্য প্রত্যন্ত এলাকায় নৌযোগাযোগ সুবিধা সম্প্রসারণের কথা উল্লেখ করে বলেন, সরকার জনবান্ধব নীতির মাধ্যমে এসব অঞ্চলের মানুষের দুর্ভোগ লাঘব করতে কাজ করছে।
তিনি জানান, থ্রি-অ্যাঙ্গেল মেরিন লিমিটেড শিপইয়ার্ড এবং আনন্দ শিপইয়ার্ড শুধু দেশেই নয়, বিদেশেও বিশেষত নাইজেরিয়া এর সাথে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের মাধ্যমে) জাহাজ নির্মাণ শিল্পের সম্প্রসারণ ঘটাতে পারে।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, থ্রি-অ্যাঙ্গেল মেরিন লিমিটেড কর্তৃক অয়েল ট্যাংকার নির্মাণ সম্পন্ন হলে দেশে জ্বালানি পরিবহন খরচ উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পাবে।বাংলাদেশের জাহাজ নির্মাণ শিল্প এখন বিশ্বমানের। আনন্দ শিপইয়ার্ডের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো শুধু দেশীয় চাহিদা মেটাচ্ছে না, বরং আন্তর্জাতিক পর্যায়েও বাংলাদেশের সক্ষমতার স্বাক্ষর রাখছে।আনন্দ শিপইয়ার্ডে নির্মিত সী ট্রাক ও অন্যান্য জলযান আধুনিক প্রযুক্তি ও স্থানীয় দক্ষতায় তৈরি হচ্ছে। তিনি বলেন, এখানকার শ্রমিক ও প্রকৌশলীরা প্রমাণ করেছেন যে বাংলাদেশে বিশ্বমানের জাহাজ নির্মাণ সম্ভব। বিদেশে রপ্তানির মাধ্যমে এই শিল্প আরও সম্প্রসারিত হবে।
পরিদর্শনকালে বিআইডব্লিউটিসির চেয়ারম্যান মোঃ সলিম উল্লাহ, বিআইডব্লিউটিসির প্রকল্প পরিচালক ও প্রধান প্রকৌশলী জিয়াউল ইসলাম, নারায়নগঞ্জ ও মুন্সিগঞ্জের কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, 'জুলাই থাকবে'- মীর মুগ্ধ মঞ্চ সেই বার্তাই দিচ্ছে। এটি মনে করিয়ে দেয়, স্বৈরাচারী ও ফ্যাসিবাদী শাসনব্যবস্থা বাংলাদেশে টিকতে পারবে না।
তিনি সোমবার (৪ আগষ্ট) ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি) কর্তৃক বাস্তবায়িত জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বীর শহিদ মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণে উত্তরা ৩ নম্বর সেক্টরের রবীন্দ্র সরোবরে নির্মিত “মুগ্ধ মঞ্চ”-এর উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা বলেন, গত ১৫-১৭ বছর মানুষ কথা বলতে পারেনি। তবে এর অর্থ এই নয় যে ভবিষ্যতেও জনগণ কথা বলতে পারবে না বা শাসকগোষ্ঠী প্রশ্নবিহীনভাবে ক্ষমতায় থাকবে। এই মঞ্চ সেই প্রতিবাদের প্রতীক।
শহীদদের বাবা-মায়ের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, "আপনারা যে দাবিগুলো তুলে ধরেছেন, আমরা তা সমর্থন করি। আমরা এমন বাংলাদেশ চাই, যেখানে কোনো মায়ের বুক খালি হবে না, কোনো বাবাকে আর সন্তানের লাশ কাঁধে বহন করতে হবে না।"
তিনি বলেন, "আমরা আন্দোলন করব, প্রতিবাদ করব। কিন্তু আমাদের বুকে যারা গুলি চালায়—সেই ধরনের পুলিশ বাহিনী আমরা চাই না।" ২০১৮ সালের নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, "তখন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা বলেছিল—রাষ্ট্রের মেরামত দরকার। ২০২৪ সালের জুলাইয়ে ছাত্র-জনতা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে তা আরও একবার প্রমাণ করেছে। তাই বলছি—রাষ্ট্রের মেরামত চলবে, এবং তা অব্যাহত রাখতে হবে।"
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজের সভাপতিত্বে আয়োজিত অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী-এর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-এর সিনিয়র যুগ্ম সদস্যসচিব ডা. তাসনিম জারা, ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো: আসাদুজ্জামান, নারী শহীদ নাঈমা সুলতানার মা, শহীদ জাবিরের বাবা, জুলাই আহত যোদ্ধা আব্দুল আজিজ।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন শহীদ মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধের ভাই মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ।