ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে ভোটগ্রহণের সমস্ত প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। আজ মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত হবে ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন-২০২৫। সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে প্রত্যাশা করছে বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষ, প্রার্থী ও ভোটাররা।
এবারের নির্বাচনে মোট ৮টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ৮১০টি বুথ স্থাপন করা হয়েছে। একজন ভোটার গড়পড়তা ১০ মিনিট সময় ব্যয় করে ভোটদান শেষ করতে পারবেন।
সকাল ৮টা থেকে বিরতিহীনভাবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ চলবে। তবে বিকেল ৪টার মধ্যে বুথে উপস্থিত সকল ভোটারদের ভোট দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে, এমনকি লাইনে দাঁড়ানো ভোটারদেরও ভোট দেওয়ার সুযোগ থাকবে বলে প্রশাসন জানায়। নির্বাচনের দিন ক্যাম্পাসে সকল শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের জন্য অতিরিক্ত বাসের ব্যবস্থা থাকবে। ভোটারদের সময়মতো উপস্থিতি নিশ্চিতে সব বাস সার্ভিসের সময়সূচি অনুযায়ী চলবে।
এবারের ডাকসু নির্বাচনে ২৮টি পদের বিপরীতে মোট ৪৭১ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে নারী প্রার্থী আছেন ৬২ জন।
জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, ইসলামী ছাত্রশিবির, বামজোট, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন, গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ, ছাত্র অধিকার পরিষদের মতো রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনে নিজেদের প্যানেল দিয়েছে। স্বতন্ত্র প্রার্থীর সংখ্যাও কয়েক শতাধিক।
প্রায় ৪০ হাজার ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন, তা ধরেই প্রস্তুতি নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। তফসিল অনুযায়ী, আজ ডাকসুর ২৮টি ও হল সংসদ নির্বাচনের ১৩টি মিলিয়ে মোট ৪১টি ভোট দেবেন ঢাবি শিক্ষার্থীরা।
অন্যবারের তুলনায় এবার ডাকসুতে ব্যালটের আকার বেড়েছে। এবার ডাকসুতে থাকছে পাঁচ পৃষ্ঠার ব্যালট। আর হল সংসদের থাকছে এক পৃষ্ঠার ব্যালট। এ ভোট দিতে হবে অপটিক্যাল মার্ক রিকগনিশন (ওএমআর) শিটে।
এরই মধ্যে ভোট দেওয়ার নিয়মকানুন ভিডিও চিত্রের মাধ্যমে তুলে ধরেছে চিফ রিটার্নিং কর্মকর্তার অফিস। এই ভিডিও চিত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে প্রকাশ করা হয়েছে।
পাশাপাশি ভোট প্রদানে ছাত্র–ছাত্রীকে উৎসাহিত করতে তিনটি অনুষদ ও একটি ইনস্টিটিউটে সভা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এসব সভায়ও নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে নতুন ভোটারদের ভোটদানের পদ্ধতি সম্পর্কে জানানো হয়েছে।
ভোটার তার সুবিধাজনক সময়ে নির্ধারিত ভোটকেন্দ্রে যাবেন। ভোটকেন্দ্রে থাকা পোলিং কর্মকর্তাকে ভোটার তার পরিচয় নিশ্চিত করবেন।
ভোটার প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী হলে তার লাইব্রেরি কার্ড অথবা পে-ইন স্লিপ দেখিয়ে পরিচয় নিশ্চিত করবেন। অন্য বর্ষের শিক্ষার্থীরা হল আইডি কার্ড, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইডি কার্ড অথবা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় লাইব্রেরি কার্ড দেখিয়ে পরিচয় নিশ্চিত করবেন।
পরিচয় নিশ্চিতের পর ভোটারের আঙুলে অমোচনীয় কালির দাগ দেবেন ভোট গ্রহণ কর্মকর্তা।
ভোটার তালিকায় নিজের নামের পাশে স্বাক্ষর করবেন ভোটার। এরপর পোলিং কর্মকর্তাকে ভোটার নম্বর জানাতে হবে।
নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী ভোটারদের ব্যাগ, মোবাইল ফোন, স্মার্ট ওয়াচ, যেকোনো ধরনের ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস, পানির বোতল ও তরল জাতীয় কোনো পদার্থ নিয়ে ভোটকেন্দ্রে প্রবেশে থাকছে নিষেধাজ্ঞা।
ডাকসু নির্বাচন ঘিরে গতকাল সোমবার রাত ৮টা থেকে টানা ৩৪ ঘণ্টা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব প্রবেশপথ সর্বসাধারণের জন্য বন্ধ করা হয়েছে, যা কাল বুধবার সকাল ৬টা পর্যন্ত বলবত থাকবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ থেকে বলা হয়েছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশপথ (শাহবাগ, পলাশী, দোয়েল চত্বর, শিববাড়ী ক্রসিং, ফুলার রোড, উদয়ন স্কুল ও নীলক্ষেত) সর্বসাধারণের জন্য বন্ধ থাকবে। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈধ আইডি কার্ডধারী শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রবেশ করতে পারবেন। এছাড়া, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের পরিবারের সদস্যরা নিজ নিজ শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পরিচয়পত্রের ফটোকপি দেখিয়ে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে পারবেন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টিকারযুক্ত ও জরুরি সেবায় নিয়োজিত যানবাহন (অ্যাম্বুলেন্স, চিকিৎসক, রোগী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সাংবাদিক ও ফায়ার সার্ভিসের যানবাহন) ছাড়া অন্য কোনো যানবাহন ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে পারবে না।
ডাকসু নির্বাচনে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীরাও ভোট দেবেন। তারা ভোট দেবেন ব্রেইল পদ্ধতিতে। সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ভোট ব্যবস্থা করা হয়েছে উল্লেখ করে রিটার্নিং কর্মকর্তা সহযোগী অধ্যাপক শারমীন কবীর বলেন, ‘যেসব শিক্ষার্থীর দৃষ্টিপ্রতিবন্ধকতা রয়েছে এবং যারা ব্রেইল পড়তে পারেন, তাদের জন্য প্রথমবারের মতো আমরা ব্রেইল পদ্ধতিতে ব্যালট পেপার ছাপিয়েছি।’
আপত্তি নিষ্পত্তি ও সংশোধনের পর এবারের নির্বাচনে মোট ভোটারের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৯ হাজার ৭৭৫ জন। এর মধ্যে ২০ হাজার ৮৭৩ জন ছাত্র এবং ১৮ হাজার ৯০২ জন ছাত্রী ভোটার রয়েছেন।
ছাত্র ভোটারদের মধ্যে অমর একুশে হলে ১২৯৫ জন, কবি জসীমউদ্দিন হলে ১৩০৩ জন, জগন্নাথ হলে ২২২২ জন, শেখ মুজিবুর রহমান হলে ১৬০৬ জন, ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ হলে ১৯৯৮ জন, ফজলুল হক মুসলিম হলে ১৭৬২ জন, বিজয় একাত্তর হলে ২০২৭ জন, মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলে ১৭৫১ জন, শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলে ১৯৫৭ জন, সলিমুল্লাহ মুসলিম হলে ৬৬৪ জন, মাস্টারদা সূর্যসেন হলে ১৪৯৯ জন, স্যার এ এফ রহমান হলে ১৩৭৭ জন এবং হাজী মুহাম্মদ মুহসীন হলে ১৪০২ জন রয়েছেন।
এছাড়া, ছাত্রী ভোটারদের মধ্যে রোকেয়া হলে ৫৬৪১ জন, শামসুন নাহার হলে ৪০৮৪ জন, বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হলে ২১০৩ জন, কবি সুফিয়া কামাল হলে ৪৪৩৪ জন এবং ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে ২৬৪০ জন আছেন।
ডাকসু নির্বাচন ঘিরে গতকাল সোমবার বিকেল থেকে বন্ধ রয়েছে ঢাবি মেট্রো স্টেশন। গতকাল বিকেল ৪টা থেকে ও আজ পুরো দিন স্টেশন বন্ধ থাকবে বলে জানিয়েছে মেট্রোরেল পরিচালনাকারী কোম্পানি ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)। ডিএমটিসিএলের এক বিজ্ঞপ্তিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্টেশনসংলগ্ন যাতায়াতের জন্য বিকল্প পন্থা অবলম্বন করার আহ্বান জানানো হয়।
সারাদেশ আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে: উপাচার্য
বহুল প্রতীক্ষিত ডাকসু নির্বাচনে শিক্ষার্থীদের নির্ভয়ে ভোটকেন্দ্রে আসতে বলেছেন ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খান। তিনি বলেন, সারাদেশ আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। তারা শুভ কামনা জানাচ্ছেন। এখন একটি ভালো নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্রের উত্তরণের প্রক্রিয়াকে, গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দীর্ঘদিন ধরে যে কাজ করছে, তাতে তোমরা তোমাদের ভূমিকা পালন করবে, সেটাই প্রত্যাশা করছি।
গতকাল বিকাল পৌনে ৪টার দিকে এক ভিডিও বার্তায় তিনি এ আহ্বান জানান। বিশ্ববিদ্যালয়ে অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে এ ভিডিও বার্তা দেওয়া হয়েছে।
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে উপাচার্য বলেন, ‘ডাকসু নির্বাচন তোমরা চেয়েছো; গভীরভাবে প্রত্যাশা করেছো; গণঅভ্যুত্থানের মৌলিক মূল্যবোধগুলোর সঙ্গে এটি সংগতিপূর্ণও। গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়া, অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের জন্য সমন্বিত একটি প্রাতিষ্ঠানিক একটি ভয়েস তৈরি করা। এসব গুরুত্বপূর্ণ মূল্যবোধকে আমরা তুলে ধরবার জন্য তোমাদের আগ্রহে এবং ব্যাপক চাহিদার ভিত্তিতে ডাকসু নির্বাচন আয়োজন করেছি। তোমাদের অনুষ্ঠান নির্ভয়ে তোমরা ভোট দিতে আসবা, আমরা তোমাদের জন্য অপেক্ষা করছি।’
এবারের ডাকসু নির্বাচনকে ঐতিহাসিক উল্লেখ করে অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান বলেন, ‘এবারের নির্বাচনটি বিভিন্ন কারণে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ নির্বাচন ঐতিহাসিক। এবার অনেক কিছু আমরা করেছি, যা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে আগে ঘটেনি। আমাদের ৮১০টি বুথ থাকবে। প্রায় ৪০ হাজার ভোটার। প্রথমবারের মতো আমরা হল থেকে বেরিয়ে এসে কেন্দ্রীয়ভাবে ৮টি কেন্দ্রে এ নির্বাচনের ব্যবস্থা করেছি। সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা নিশ্চিতের জন্য সব রকম পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সিসিটিভি ক্যামেরা, তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা; প্রশিক্ষিত ও নিবেদিতপ্রাণ পোলিং কর্মকর্তা।’
জয়-পরাজয় মেনে নেওয়ার মানসিকতা থাকতে হবে উল্লেখ করে প্রার্থীদের উদ্দেশে উপাচার্য বলেন, ‘সব প্রতিকূলতা অতিক্রম করে এ পর্যায়ে এসেছি পরস্পর পরস্পরের হাত ধরে। এখন বাকি পথটুকু আমরা খুব স্বচ্ছন্দে পার হতে পারব বলে বিশ্বাস করি। যেহেতু নির্বাচন প্রক্রিয়া; কিছু প্রার্থী জিতবেন, কিছু প্রার্থী জিতবেন না। জয়-পরাজয় থাকবে। কিন্তু মনে রাখতে হবে, বিজয়ী এবং বিজিত; উভয়েরই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। গণতান্ত্রিক একটি প্রতিষ্ঠানকে সক্রিয়করণ বা প্রাতিষ্ঠানিকীকরণে আপনি আপনার ভূমিকা পালন করলেন। বহু বছর আমরা ঐতিহাসিক নির্বাচন প্রক্রিয়ার মধ্যদিয়ে যাচ্ছি। সেই প্রক্রিয়ায় বিজয়ী এবং বিজিতকে ভূমিকা রাখছেন এবং রাখতে হবে। এটিই বিরাট সার্থকতা।’
হস্তক্ষেপের প্রশ্নই আসে না: সেনাবাহিনী
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ছাত্র সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। গতকাল সোমবার বাহিনীর ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে পোস্ট করা এক বিবৃতিতে এমনটা জানানো হয়েছে।
আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরও (আইএসপিআর) তাদের পেজে পোস্টটি শেয়ার করেছে। এতে বলা হয়েছে, ‘বিশেষত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপের প্রশ্নই আসে না। এর আগেও সেনাবাহিনী কর্তৃক আনুষ্ঠানিক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বিষয়টি স্পষ্ট করা হয়েছে।’
একটি স্বার্থান্বেষী মহল উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে গুজব ছড়াচ্ছে উল্লেখ করে ওই বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘এ ধরনের বিভ্রান্তিকর অপপ্রচার স্বাভাবিক স্থিতিশীলতা বিনষ্টের অপচেষ্টা মাত্র, যা সার্বিক নির্বাচনী পরিবেশকে ব্যাহত করতে পারে।’
সেনাবাহিনীর বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আশা করে- দীর্ঘদিন পর অনুষ্ঠিতব্য কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচন যেন সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক চর্চার মাধ্যমে সুশৃঙ্খল ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয় এবং আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য উদাহরণ সৃষ্টি করে।’
নিরাপত্তা ব্যবস্থা যথেষ্ট জোরদার থাকবে : ডিএমপি কমিশনার
ডাকসু নির্বাচনে নিরাপত্তা ব্যবস্থা যথেষ্ট জোরদার থাকবে বলে জানিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী। সোমবার বিকেলে টিএসসিতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণ শেষে তিনি এ কথা জানান।
ডিএমপি কমিশনার জানান, গতকাল রাত ৮টা থেকে ১১ সেপ্টেম্বর দুপুর ১২টা পর্যন্ত ক্যাম্পাসে লাইসেন্সধারী অস্ত্র ব্যবহার করা যাবে না। এখন ১৭৭১ জন পুলিশ নিরাপত্তায় কাজ করছে, মঙ্গলবার ২০৯৬ জন থাকবে, এর বাইরে র্যাব ও বিজিবিসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও থাকবে।
তিনি বলেন, কোনো কারণে আইন হাতে তুলে নেয়া যাবে না। অবাঞ্ছিত লোকদের পুলিশের হাতে সোপর্দ করতে হবে। নিরাপত্তায় ৮টি চেকপোস্ট, মোবাইল পেট্রোল, বিশেষায়িত টিম, সোয়াদ টিম, ডিবি সাদা পোশাকে থাকবে এবং সিসি ক্যামেরায় মনিটরিং করা হবে।
যারা সাইবার অ্যাটাক করছে তাদের চিহ্নিত করা হচ্ছে বলেও জানান ডিএমপি কমিশনার।
উল্লেখ্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর এখন পর্যন্ত ডাকসু নির্বাচন হয়েছে ৩৭ বার। এবারের নির্বাচন হচ্ছে ৩৮তম বারের মতো। সর্বশেষ ২০১৯ সালে ডাকসু নির্বাচন হয়। তবে সে নির্বাচনও হয় উচ্চ আদালতের রায়ের পর। ওই নির্বাচনে ভিপি (সহসভাপতি) হন সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নুরুল হক নুর এবং জিএস (সাধারণ সম্পাদক) পদে ছাত্রলীগের (বর্তমানে নিষিদ্ধ) গোলাম রাব্বানী নির্বাচিত হন।
স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭২ সালের ডাকসু নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে ভিপি নির্বাচিত হন বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম এবং জিএস পদে নির্বাচিত হন মাহবুবুর জামান। স্বাধীনতার পর থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত ১৯ বার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও হয় মাত্র ৭ বার। এরপর ১৯৯১ সালের পর থেকে ডাকসু নির্বাচন যেন অতীত হয়ে যায়। দীর্ঘ সময় ডাকসু নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন, বিক্ষোভ, ধর্মঘট করে ডাকসু নির্বাচনের দাবি জানানো হয়। এরপর হাইকোর্টের দ্বারস্থ হওয়ায় ২০১৯ সালে হাইকোর্টের একটি রায়ে ডাকসু নির্বাচনের পথ খোলে।
প্রতিটি আসনে একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী থাকলেও সবাই তা পাবেন না উল্লেখ করে নেতাকর্মীদের বিএনপির মনোনীত প্রার্থীকে বিজয়ী করতে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
রোববার রাজধানীর বনানীতে প্রবাসে বিএনপির সদস্যপদ নবায়ন ও নতুন সদস্য সংগ্রহের অনলাইন পেমেন্ট গেটওয়ে কার্যক্রমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি অংশ নিয়ে এ মন্তব্য করেন তিনি।
নির্বাচনী আসন বণ্টন নিয়ে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের ঘোষণার পর নির্বাচন কমিশন যথাসময়ে তফসিল ঘোষণা করবে। এ নিয়ে বিএনপি সম্ভাব্য সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করছে।
তিনি বলেন, ৩০০ সংসদীয় আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রস্তুতি চলছে। সব সংসদীয় আসনে একাধিক ও যোগ্য প্রার্থী থাকার পরেও সবাইকে মনোনয়ন দেয়া সম্ভব নয়। যারা ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে বিএনপির সঙ্গে ছিলেন, তাদেরকেও আসন দিচ্ছে বিএনপি।
শিগগিরই মনোনীত প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করা হবে বলেও জানান তিনি।
অনেকে মনোনয়ন বঞ্চিত হবেন উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, মনোনয়ন বঞ্চিতদের দেশ ও জনগণের স্বার্থে, দলের সিদ্ধান্ত মেনে নিতে হবে। কারণ ব্যক্তির চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে দেশ বড়। দল যাকে মনোনয়ন দেবে তাদের পক্ষে কাজ করে, তাদের বিজয়ী করতে সব পর্যায়ের নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেন তিনি।
তারেক রহমান বলেন, ‘এমন কোনো আচরণ করবেন না, যাতে পুরো বিএনপি বিব্রত হয়।’
বিএনপির বিরুদ্ধে সংঘবদ্ধ অপপ্রচার চলছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিএনপির বিজয় ঠেকাতে আবারও একটি সংঘবদ্ধ অপপ্রচার ও অপকৌশল দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে। বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসীরা যদি ঐক্যবদ্ধ থাকে তবে কোনো ষড়যন্ত্র বিএনপিকে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করতে পারবে না।
এ সময় ফ্যাসিবাদবিরোধী সব পক্ষকে সচেতন থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, বিএনপি দায়িত্বশীল দল হিসেবে শুরু থেকেই ফ্যাসিবাদবিরোধী ঐক্য ধরে রাখতে সর্বোচ্চ ছাড় দিয়েছে। একদিকে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সমঝোতার পথ বেছে নিয়েছে, অপর দিকে যথাসাধ্য সম্ভব সরকারকে সহযোগিতা করে আসছে। কিন্তু প্রতিনিয়ত নিত্যনতুন শর্ত জুড়ে গণতন্ত্রের উত্তরণের পথকে সংকটাপন্ন করে তুলছে। এর পরিণতি সম্পর্কে সবাইকে সচেতন থাকা প্রয়োজন।
তিনি আরও বলেন, যথাসময়ে নির্বাচন হবে কিনা, জনমনে এমন সংশয় ও সন্দেহ তৈরি হয়েছে। এমন হবার কথা ছিল না। আগামীর জাতীয় নির্বাচন নিয়ে জনগণের সংশয় সন্দেহ গণতন্ত্র উত্তরণের পথকে সংকটাপন্ন করে তুলতে পারে। কৌশল ও অপকৌশলের পার্থক্য বুঝতে ব্যর্থ হলে অগণতান্ত্রিক বা অপশক্তির কাছে শেষ পর্যন্ত বিনাশর্তে আত্মসমর্পনের পথে হাঁটতে হয় কিনা এমন বিপদের কথাও সব রাজনৈতিক দলগুলোকে স্মরণ রাখার বিনীত অনুরোধ রাখেন।
তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. মাহফুজ আলমের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরামের (বিএসআরএফ) কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যবৃন্দ। গতকাল রোববার তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সাক্ষাৎ অনুষ্ঠিত হয়।
সাক্ষাৎকালে বিএসআরএফ-এর সভাপতি মাসউদুল হক জানান, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সচিবালয় বিটে কর্মরত অ্যাক্রিডিটেশন কার্ডধারী সাংবাদিকদের সচিবালয়ের ক্লিনিকে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ২০২৪ সালের ২২ ডিসেম্বর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগে পত্র পাঠানো হলেও এখনো তা বাস্তবায়িত হয়নি।
এসময় বিএসআরএফ-এর সভাপতি অ্যাক্রিডিটেশন কার্ডধারী সাংবাদিকদের জন্য সচিবালয়ের ক্লিনিকে স্বাস্থ্যসেবা চালুর বিষয়ে তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টার সহযোগিতা কামনা করেন। এছাড়া সচিবালয়ের ১ নম্বর গেটের পাশাপাশি ৫ নম্বর গেট দিয়েও অ্যাক্রিডিটেশন কার্ডধারী সাংবাদিকদের সচিবালয়ে প্রবেশের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তিনি উপদেষ্টাকে অনুরোধ জানান।
এ সময় তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা বিএসআরএফ-এর সভাপতির প্রস্তাব আন্তরিকভাবে বিবেচনা করার আশ্বাস দেন। সাক্ষাৎকালে বিএসআরএফ-এর সহ-সভাপতি মাইনুল হোসেন পিন্নু, সাধারণ সম্পাদক উবায়দুল্লাহ বাদলসহ কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
টেকসই ও বাসযোগ্য নগর গড়ে তুলতে, সরকারি ভবনগুলোতে গ্রিন বিল্ডিং বাধ্যতামূলক করা জরুরি। সরকারি স্থাপনাগুলোতে মানদণ্ড নিশ্চিত করতে পারলে, বেসরকারি খাতও তা অনুসরণ করবে।
গতকাল রোববার পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান আগারগাঁওয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর আয়োজিত ‘গ্রিন বিল্ডিংবিষয়ক কর্মশালায়’ প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, পরিবেশবান্ধব ভবন নির্মাণ এখন সময়ের দাবি।
রিজওয়ানা হাসান আরও বলেন, শুধু রঙ বা সার্টিফিকেশন দিয়ে ‘গ্রিন বিল্ডিং’ হবে না। এতে পরিকল্পনা, নকশা, নির্মাণ, ব্যবস্থাপনা ও রক্ষণাবেক্ষণ- সব ধাপে পরিবেশবান্ধব ধারণা ও প্রযুক্তির প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।
এ সময় তিনি ভবনের ছাদে সৌরবিদ্যুৎ স্থাপন, বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ, প্রাকৃতিক আলো ও বায়ুপ্রবাহ ব্যবহারের মতো নীতিমালা স্থাপনায় যুক্ত করার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ঢাকার খাল ও নদী রক্ষা, বর্জ্য ও শব্দ-দূষণ কমানো ও তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণসহ নগর পরিবেশের উন্নয়নে সাসটেইনেবল বিল্ডিং অপরিহার্য।
উপদেষ্টা এ সময় গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, পরিবেশ অধিদপ্তর, হাউজিং অ্যান্ড বিল্ডিং রিসার্চ ইন্সটিটিউট (এইচবিআরআই), স্থানীয় সরকার বিভাগ ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটি ‘গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিল’ গঠনের প্রস্তাব করেন।
এ কাউন্সিল গ্রিন বিল্ডিংয়ের মানদণ্ড নির্ধারণ, আইন হালনাগাদ এবং বাস্তবায়ন তদারকিতে ভূমিকা রাখবে বলেও উল্লেখ করেন।
কর্মশালায় উপস্থিত ছিলেন- পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ, রাজউক চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মো. রিয়াজুল ইসলাম, গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মো. খালেকুজ্জামান চৌধুরী, পরিবেশ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মো. জিয়াউল হক, পরিচালক এ কে এম রফিকুল ইসলাম, বিশ্বব্যাংকের পরিবেশ বিশেষজ্ঞ বুশরা নিশাত, এইচবিআরআই-এর প্রিন্সিপাল রিসার্চ অফিসার মো. নাফিজুর রহমান ও স্থপতি রফিক আজমসহ প্রকৌশলী, স্থপতি, গবেষক ও নীতিনির্ধারকরা।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস প্রকৃতি, পরিবেশ ও নদীকে নেতিবাচক প্রভাব থেকে মুক্ত রেখে সড়ক, রেল, বিমান ও নৌপথের সম্মিলিত উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার আহ্বান জানিয়েছেন ।
আজ রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় ‘সেন্ট্রাল ইন্টিগ্রেটেড মাল্টিমোডাল ট্রান্সপোর্ট সেক্টর মাস্টার প্ল্যান অব বাংলাদেশ’ সংক্রান্ত প্রান্তিক মূল্যায়ন ও কৌশলগত পরিকল্পনা বিষয়ক আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে তিনি এ আহ্বান জানান।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, সড়ক পরিবহন ও সেতু এবং রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন, নৌপরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় এবং রেলপথ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড. শেখ মইনউদ্দিন, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) ও বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন এবং ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যবসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব ও পদস্থ কর্মকর্তারা।
বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমাদের যোগাযোগ ব্যবস্থা খুবই হযবরল অবস্থায় রয়েছে। এটাকে দ্রুত শৃঙ্খলার মধ্যে আনা না গেলে পুরো ব্যবস্থাটা অর্থনীতির জন্য গলার ফাঁসে পরিণত হবে।’
তিনি বলেন, ‘পরিবেশের কোনো ক্ষতি না করেই আমাদেরকে কাজটা করতে হবে। নদীর ওপর কোনো আঘাত করা যাবে না, পানিকে শান্ত রাখতে হবে, মনে রাখতে হবে পানি আমাদের জন্য বিরাট সম্পদ।’
বৈঠকে সড়ক ও জনপথ বিভাগ একটি প্রাথমিক কৌশলগত পরিকল্পনা উপস্থাপন করে যা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা পারস্পরিক সমন্বয়ের ভিত্তিতে তৈরি করেন।
এই পরিকল্পনায় দেখানো হয়, সারাদেশের সব ধরনের যোগাযোগ ব্যবস্থার সমন্বয় এবং প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে অল্পবিস্তর সংস্কার ও সংযোজনের মাধ্যমে কিভাবে পুরো যোগাযোগ ব্যবস্থাকে শৃঙ্খলার মধ্যে নিয়ে আসা যায়।
এতে বলা হয়, দেশে বর্তমানে থাকা রেলপথ, নৌপথ এবং সড়কপথের যথাযথ ব্যবহার ও কিছু ক্ষেত্রে কিছুটা বাড়ানো গেলে এ ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নতি করা সম্ভব।
যোগাযোগ খাতের সবগুলো ব্যবস্থাকে সমন্বয়ের মাধ্যমে পরিকল্পনা প্রণয়ন করায় সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এই পরিকল্পনার ফলে প্রাথমিকভাবে একটি শক্তিশালী ধারণা পাওয়া গেল। এখন এটিকে বাস্তবায়নের জন্য কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
তিনি বলেন, পুরো পরিকল্পনাটা করতে হবে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিকে মাথায় রেখে। অভ্যন্তরীণ পরিকল্পনার পাশাপাশি আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক যোগাযোগ ব্যবস্থার ওপরও গুরুত্ব দিতে হবে।
‘আমরা যখন যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে নদীর কথা চিন্তা করব, তখন অবশ্যই আমাদেরকে মাথায় রাখতে হবে নদীগুলো আমাদের প্রাণ,’ বলেন প্রধান উপদেষ্টা।
পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, যেসব ক্ষেত্রে ছোট ছোট কিছু সড়ক নির্মাণ করে দিলেই পুরো অঞ্চলটাকে জাতীয় কানেক্টিভিটির মধ্যে নিয়ে আসা সম্ভব, সেসব ক্ষেত্রে দ্রুত পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে।
স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বলেন, স্থানীয় সরকার বিভাগের কাজগুলোকে আরও পরিকল্পিতভাবে করার লক্ষ্যে একই বিভাগে একটি প্ল্যানার্স উইং গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে মন্ত্রণালয়।
প্রাথমিক পরিকল্পনার বিষয়ে আলোচনায় প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড. শেখ মইনউদ্দিন বলেন, যোগাযোগের ক্ষেত্রে একটি সামষ্টিক মডেল দাঁড় করানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। এমনভাবে কাজ করা হচ্ছে, যার মাধ্যমে যেন অর্থনৈতিক লাইফলাইনটা গড়ে ওঠে।
বিডা চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী বলেন, ২০৩০ সালের মধ্যে চট্টগ্রামে আরও তিনটি নতুন বন্দর চালু হবে। এটাকে বিবেচনায় রেখে অবশ্যই এসব বন্দর থেকে সড়ক যোগাযোগ যেন সহজ ও কার্যকর হয় সে বিষয়ে দ্রুততার সঙ্গে উদ্যোগ নিতে হবে। সূত্র বাসস
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, সমাজ ও রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডে বিএনপির কোনো নেতাকর্মী জড়িত নয়। যদি কেউ বিএনপির নাম ব্যবহার করে এসব অপকর্ম করে তাদের কোনো ছাড় নয়। পাশাপাশি গণমাধ্যমকে সত্য ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন করতে হবে।
গতকাল শনিবার নয়াপল্টনের দলীয় কার্যালয়ে উপস্থিত সাংবাদিকদের উদ্দেশে তিনি এসব কথা বলেন।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, একটি অসত্য সংবাদে রাষ্ট্র ও সমাজের মাঝে অনেক বিভ্রান্তি সৃষ্টি হতে পারে। তিনি বলেন, কোনকিছু ঘটলেই বিএনপির ওপর দায় চাপানো কারো কারো অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। সমাজবিরোধী কাজে যেই জড়িত হবে তাকে আইনের আওতায় আনতে হবে।
রিজভী বলেন, রাউজানে কিছু সন্ত্রাসী অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার হয়েছে। অথচ, কয়েকটি গণমাধ্যমে বলা হলো এই অস্ত্রধারীরা বিএনপির লোক! কোনো প্রমাণ ছাড়া এগুলো লেখা দুঃখজনক। এই রাউজানে নানান অভিযোগে অনেক সিনিয়র নেতাদের বিরুদ্ধেও সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বিএনপি ১৫ বছরের অত্যাচার-অবিচার থেকে মুক্তির জন্য সংগ্রাম করেছে। জুলাই-আগস্টে এ আন্দোলন চূড়ান্ত রূপ নিয়েছে। মানুষ হয়ত কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস নিচ্ছে। কিন্তু এখনও আতংকমুক্ত নয়।
রিজভী বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির দৃশ্যমান উন্নতি দেখা যাচ্ছে না। নিত্যপণ্যের কৃত্রিম সংকট যারা সৃষ্টি করছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। বিশ্ববাজারে যখন গমের দাম কমেছে তখন বাংলাদেশে এর দাম বেড়েছে। জনগণকে নিরাপদ রাখার দায়িত্ব সরকারের। রাষ্ট্র এতে ব্যর্থ হলে যেকোন ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। সৃষ্টি হতে পারে সামাজিক অস্থিরতা।
নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার আজ বলেছেন, সরকার ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
গতকাল শনিবার কুয়াকাটায় অবস্থিত কোডেক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত ‘নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় ভোটগ্রহণকারী কর্মকর্তাদের দায়িত্ব পালনে নিরূপণ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক দিনব্যাপী কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
ইসি আনোয়ার বলেন, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নির্বাচন সম্পন্ন করতে সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিয়েছে সরকার।
তিনি বলেন, ‘বর্তমান নির্বাচনী আইন (আরপিও)-তে সংশোধন আনা হয়েছে। এখন রিটার্নিং কর্মকর্তারা চাইলে তাদের দায়িত্বপ্রাপ্ত আসনে ভোটগ্রহণ স্থগিত করতে পারবেন।’
এ সময় তিনি নির্বাচনে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের নির্ভয়ে দায়িত্ব পালন করার আহ্বান জানান।
উল্লেখ্য, কুয়াকাটা কোডেক ট্রেনিং সেন্টারের সভাকক্ষে এ কর্মশালার আয়োজন করে পটুয়াখালী জেলা সিনিয়র নির্বাচন অফিস। এ কর্মশালায় পটুয়াখালী জেলার আট উপজেলার নির্বাচন কর্মকর্তা ও সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের প্রায় ৬০ জন কর্মকর্তা অংশগ্রহণ করেন।
আজকের অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বরিশাল অঞ্চলের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. ফরিদুল ইসলাম।
কর্মশালায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন-নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ, পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ শহীদ হোসেন চৌধুরী, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অপু সরোয়ার ও নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের উপপ্রধান মুহাম্মদ মোস্তফা হাসান।
আগামী বছর জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর তাবলিগ জামাতের বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন ধর্মবিষয়ক উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন।
রোববার (২ নভেম্বর) সচিবালয়ে ধর্ম মন্ত্রণালয়ে তাবলিগের দুই পক্ষের সঙ্গে বৈঠক শেষে উপদেষ্টা এ কথা জানান।
বৈঠকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, শিল্প এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি উপস্থিত ছিলেন।
উপদেষ্টা জানান, দুই পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে ইজতেমার তারিখ ঠিক করা হবে।
বাংলাদেশে গ্রাম আদালত সক্রিয় করণ (৩য় পর্যায়) প্রকল্পের আওতায় নোয়াখালীতে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের ২ দিন ব্যাপী ২য় ব্যাচে গ্রাম আদালত বিষয়ে প্রশিক্ষণ শুরু হয়েছে।
শনিবার (০১ নভেম্বর) জেলা প্রশাসনের আয়োজনে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে এ প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত হয়।
প্রশিক্ষণে কোর্স ডিরেক্টর হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, জেলা প্রশাসক খন্দকার ইসতিয়াক আহমেদ এবং কোর্স কোর্ডিনেটর হিসেবে ছিলেন, উপপরিচালক (অ.দা.) মোহাম্মদ ইসমাইল।
এ সময় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের গ্রাম আদালতের উপর হাতে কলমে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। গ্রাম আদালত পরিচালনার উপর বড় পর্দায় নাটিকা প্রদর্শন করা হয়। প্রশিক্ষনে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানগণ গ্রাম আদালতের উপর একটি মক ট্রায়াল প্রদর্শন করেন।
প্রশিক্ষণ শেষে সমাপনী বক্তব্যে জেলা প্রশাসক ও কোর্স ডিরেক্টর খন্দকার ইসতিয়াক আহমেদ বলেন, গ্রামের বিরোধগুলো আপনারাই নিষ্পত্তি করে থাকেন। তবে সেই বিরোধগুলো যাতে গ্রাম আদালতের মাধ্যমেই নির্দিষ্ট নিয়ম অনুযায়ী সমাধা করা হয় সে দিকে লক্ষ রাখবেন। আপনাদের আন্তরিকতায় গ্রামের হতদরিদ্র মানুষগুলো অল্প সময়ে গ্রাম আদালতের সেবা নিতে পারবে। ছোটখোটো কোনো বিরোধ নিয়ে পক্ষরা যাতে থানা বা জেলা আদালতে না চলে যায় তার জন্য প্রত্যেক ইউনিয়ন পরিষদ থেকে গ্রাম আদালতের বিষয়ে প্রচার প্রচারণার ব্যবস্থাও করতে হবে।
গ্রাম আদালতে গত ৬ মাসে মামলা গ্রহণে ১ম, ২য় এবং ৩য় স্থান অর্জনকারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের পুরস্কৃত করা হয়।
প্রশিক্ষণ পরিচালনায় সহযোগিতা করেন, ডিস্ট্রিক্ট ম্যানেজার মো. আহসান উল্লাহ চৌধুরী মামুন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন, বেগমগঞ্জ উপজেলা সমন্বয়কারী মো. নুরে আলম সিদ্দিক এবং চাটখিল উপজেলা সমন্বয়কারী রবিউল হাসান, প্রোগ্রাম এন্ড ফাইন্যান্স এসিস্ট্যান্ট ফয়েজ আহমেদ।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলায় আধিপত্য বিস্তার ও পূর্ববর্তী বিরোধকে কেন্দ্র করে আবারও গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এতে মনেক মিয়ার ছেলে শিপন মিয়া (৩০) নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় অন্তত চারজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।
শনিবার (১ নভেম্বর) রাতে উপজেলার বড়িকান্দি ইউনিয়নের গণিশাহ মাজার বাজার ও আশপাশের এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। পরে উভয় পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রাত আনুমানিক ৯টার দিকে বড়িকান্দি গণিশাহ মাজার বাজারের একটি হোটেলে স্থানীয় কুখ্যাত ডাকাত মোন্নাফ মিয়া ওরফে মনেক ডাকাতের ছেলে শিপন মিয়া (৩০) আড্ডা দিচ্ছিলেন। ওই সময় হঠাৎ একদল সশস্ত্র সন্ত্রাসী হোটেলে ঢুকে গুলি চালায়। এতে শিপন মিয়া ও হোটেলের দুই কর্মচারী ইয়াছিন (২০) এবং নূর আলম (১৮) গুলিবিদ্ধ হন।
গুলির শব্দে পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। হামলাকারীরা নির্বিঘ্নে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। গুলিবিদ্ধদের প্রথমে নবীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে তাদের আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকায় পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শিপন মিয়া মারা যান।
এ খবর ছড়িয়ে পড়লে শিপনের পক্ষের লোকজন বিক্ষুব্ধ হয়ে সশস্ত্র অবস্থায় প্রতিপক্ষের এলাকায় হামলা চালায়। তারা গণিশাহ মাজারের অদূরে তালতলায় গিয়ে স্থানীয় শিক্ষক এমরান হোসেন মাস্টারের অফিসে গুলি চালায়। এতে এমরান মাস্টার (৩৮) গুলিবিদ্ধ হন। তিনি ঢাকায় কর্মরত পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) বিল্লাল হোসেনের ছোট ভাই এবং শ্যামগ্রাম মোহিনী কিশোর উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক।
পরে বিক্ষুব্ধরা থোল্লাকান্দি গ্রামে প্রতিপক্ষের একাধিক বাড়িঘরে ভাঙচুর চালায়। এতে এলাকায় ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
খবর পেয়ে রাতেই নবীনগর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পিয়াস বসাক এবং নবীনগর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
নবীনগর থানার ওসি মো. শাহিনুর ইসলাম বলেন, “গুলিবর্ষণের খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, এটি আধিপত্য বিস্তার ও পূর্ব শত্রুতার জের ধরে ঘটেছে।”
এ ঘটনায় এলাকায় এখনো টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।
রাজধানীর মোহাম্মদপুরে ব্যবসায়িক আধিপত্য নিয়ে বিরোধের জেরে মো. রাসেল (২৮) নামে এক যুবককে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় বিপ্লব নামে আরও একজন আহত হয়েছেন।
শনিবার (২ নভেম্বর) রাত পৌনে ১০টার দিকে মোহাম্মদপুরের নবীনগর হাউসিং এলাকার ৪ নম্বর রোডে ঘটনাটি ঘটে । পুলিশ এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ‘পেপার বাবু’ ও তার সহযোগী মোবারককে আটক করেছে।
পুলিশ জানায়, রাতে রাসেল ও বিপ্লব নবীনগর হাউসিং এলাকায় অবস্থান করছিলেন। ওই সময় মোটরসাইকেলে এসে একদল দুর্বৃত্ত ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। রাসেলের ঘাড়ে কোপ লাগলে তিনি রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
রমনা জোনের সহকারী উপ-পুলিশ কমিশনার (এসি) আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, স্থানীয় এলাকায় মুরগির ব্যবসা ঘিরে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এই হত্যাকাণ্ড ঘটে। প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, নিহত রাসেল ও অভিযুক্ত পেপার বাবু একই ব্যবসায় যুক্ত ছিলেন এবং দীর্ঘদিন ধরে তাদের মধ্যে বিরোধ চলছিল।
তিনি আরও বলেন, “পেপার বাবুর বিরুদ্ধে হত্যা ও চাঁদাবাজিসহ একাধিক মামলা রয়েছে। ঘটনার পেছনে কারা মদদ দিয়েছে, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
পুলিশ জানায়, হত্যার ঘটনায় দায়ীদের বিরুদ্ধে মামলা প্রস্তুতির কাজ চলছে এবং এলাকার অন্যান্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
মাঝ কার্তিকে শনিবার দুপুরে নেমে আসে সন্ধ্যা, কালো মেঘ গর্জে নামলো বৃষ্টিও। বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর শনিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ছয় ঘণ্টায় রাজধানী ঢাকায় ৩২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে।
এই সময়ে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে টাঙ্গাইলে ৫৭ মিলিমিটার। এছাড়া কুড়িগ্রাম, রংপুর, নীলফামারী, রাজশাহী, পাবনা, দিনাজপুর, কুষ্টিয়া, ময়মনসিংহ, নেত্রকোণা, কিশোরগঞ্জ, গোপালগঞ্জ ও খুলনা জেলায় বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
'লঘুচাপের প্রভাবে এই বৃষ্টি,' বলেন আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মো. তরিফুল নেওয়াজ কবির।
এদিকে বিকেল থেকে শুরু হওয়া বৃষ্টি যেন থামছিল না। অঝোর ধারায় ঝরেই চলেছিল৷ একদিকে মুষলধারে বৃষ্টি; অন্যদিকে যানজট আর জলাবদ্ধতায় নাকাল ছিল রাজধানীবাসি।
শনিবার বিকাল চারটা নাগাদ ঢাকার আকাশ ঢেকে যায় কালো মেঘে। এরপর সাড়ে চারটা নাগাদ শুরু হয় গুড়িগুড়ি বৃষ্টি। বিকাল ৫টা নাগাদ বাড়তে শুরু হয় এই বৃষ্টি। সন্ধ্যা সাতটায় এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত প্রায় আড়াই ঘণ্টার বৃষ্টিতে রাজধানীর বেশিরভাগ অলিগলি পানিতে তলিয়ে গেছে। কিছু কিছু বড় সড়কের একপাশেও পানি জমে গেছে। বৃষ্টির কারণে দেখা দিয়েছে তীব্র যানজট। সব মিলিয়ে অফিস ফেরত সাধারণ মানুষ পড়েছেন চরম ভোগান্তিতে।
বিকাল ৫টার দিকে মতিঝিলের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে বের হন আয়েশা সুলতানা। নেমেই দেখেন তুমুল বৃষ্টি। যানবাহন পাওয়া যাচ্ছে না। যাবেন রামপুরা। রিকশা-সিএনজির চালকরা চাইছেন দ্বিগুণ ভাড়া। অগত্যা দ্বিগুণ ভাড়ায় রিকশা নেন তিনি। কাকরাইল এসে পড়েন যানজটে। সন্ধ্যা সাতটায়ও বাসায় পৌঁছাতে পারেননি বলে তিনি জানান।
একই অবস্থার শিকার ঢাকার প্রায় সব অফিস ফেরত সাধারণ মানুষের।
জরুরি কাজে বের হবেন রাজাবাজারের বাসিন্দা জামাল হোসেন। অঝোর বৃষ্টি বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়। পরে বৃষ্টি মাথায় নিয়েই বের হন তিনি। তবে বাঁধ সাধে রাস্তার ওপর জমে থাকা পানি। তার ভাষ্য, ঢাকার সড়কে হাঁটু পানি পার হওয়া যেন নদী পার হওয়ার মতোই বিড়ম্বনা।
এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যমতে, দক্ষিণ ছত্তিসগড় ও এর আশেপাশে যে সুস্পষ্ট লঘুচাপটি অবস্থান করছিল, সেটি উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে এগিয়ে দুর্বল হয়ে পড়েছে। বর্তমানে এটি লঘুচাপ আকারে পশ্চিমবঙ্গ ও আশেপাশের এলাকা থেকে উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে এগোচ্ছে, জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
এদিন রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, ঢাকা ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় এবং খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় হালকা থেকে মাঝারী ধরনের বৃষ্টির পূর্বাভাস ছিল।
সকাল নয়টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়, রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, ঢাকা ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় এবং খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেইসঙ্গে রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, ঢাকা ও সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে।
এদিকে আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর এবং এর আশেপাশের এলাকায় একটি লঘুচাপ সৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। লঘুচাপ সৃষ্টি হলে আগামী বুধবার থেকে আবারও বৃষ্টির প্রবণতা বাড়ার সম্ভাবনা আছে।'
তবে আর রোববারও চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি এবং বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে বলে পূর্বাভাসে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
বৃষ্টির প্রবণতা বাড়বে, নভেম্বরেও ভেজা আবহাওয়া
নভেম্বরের শুরুতেই দেশে বৃষ্টির প্রবণতা বাড়ছে। দুর্বল হয়ে পড়া লঘুচাপের পর আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই পূর্ব মধ্য বঙ্গোপসাগরে নতুন একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
এর প্রভাবে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি এবং কোথাও কোথাও ভারী বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে। একইসঙ্গে তাপমাত্রায় সামান্য ওঠানামা দেখা দিতে পারে—কোথাও কমবে, কোথাও আবার সামান্য বাড়বে।
শনিবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরবর্তী ১২০ ঘণ্টার জন্য দেওয়া পূর্বাভাসে এ তথ্য জানায় আবহাওয়া অধিদপ্তর।
আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক জানান, দক্ষিণ বিহার ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত সুস্পষ্ট লঘুচাপটি উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর ও দুর্বল হয়ে লঘুচাপে পরিনত হয়ে গুরুত্বহীন হয়ে পড়েছে। এটি আরও উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে ক্রমান্বয়ে দুর্বল হয়ে যেতে পারে। আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে পূর্ব মধ্য বঙ্গোপসাগর এবং তৎসংলগ্ন এলাকায় একটি লঘুচাপ সৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে
তিনি আরও জানান, পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় এবং রংপুর, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেইসাথে সারাদেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে। সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে।
আজ রোববার সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, ঢাকা ও খুলনা বিভাগের দুয়েক জায়গায় হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেইসঙ্গে সারাদেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী বর্ষণ হতে পারে। সারাদেশে দিনের এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
আগামী সোমবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় হালকা থেকে মাঝারী ধরনের বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া দেশের অন্যত্র আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। সারাদেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে।
আগামী মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, বরিশাল, ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং রংপুর, রাজশাহী, খুলনা ও ময়মনসিংহ বিভাগের দুয়েক জায়গায় বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সারাদেশে দিনের এবং রাতের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে
আগামী বুধবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, খুলনা, বরিশাল, ঢাকা, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের দুয়েক জায়গায় বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া দেশের অন্যত্র আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। সারাদেশে দিনের এবং রাতের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে।
বর্ধিত পাঁচ দিনের প্রথম দিকে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বৃদ্ধি পেতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। নতুন নির্দেশনায় বলা হয়েছে, একান্ত প্রয়োজন ছাড়া কোনো কর্মকর্তা বিদেশ সফরে যেতে পারবেন না।
বিদেশ ভ্রমণ সংক্রান্ত প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের আগের পরিপত্র এবং অর্থ বিভাগের গত ৮ জুলাইয়ের চিঠির বিষয়টি তুলে ধরে সম্প্রতি সরকারের সব সচিবের কাছে নতুন পরিপত্র পাঠানো হয়েছে। পরিপত্রের অনুলিপি উপদেষ্টাদের একান্ত সচিবদেরও দেওয়া হয়েছে।
পরিপত্রে বলা হয়েছে, লক্ষ্য করা যাচ্ছে, জারিকৃত পরিপত্রগুলোর নির্দেশনা যথাযথভাবে অনুসরণ না করে বিদেশ ভ্রমণের ঘটনা ঘটছে। মন্ত্রণালয়গুলোর দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টা ও সচিব একই সময়ে বৈদেশিক সফরে যাচ্ছেন। একই মন্ত্রণালয়ের অনেক কর্মকর্তা একসঙ্গে বিদেশে যাচ্ছেন। এ ধরনের প্রস্তাব প্রায়ই প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে পাঠানো হচ্ছে, যা আগের নির্দেশনাগুলোর পরিপন্থী।
সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণ সংক্রান্ত আগের সব নির্দেশনা প্রতিপালনের নির্দেশনা দিয়ে পরিপত্রে বলা হয়েছে, ‘এখন থেকে আগামী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়া পর্যন্ত একান্ত অপরিহার্য কারণ ছাড়া বিদেশ ভ্রমণ পরিহার করার অনুরোধ করা হলো।’
সীমান্ত রক্ষার দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আরাকান আর্মির পুতে রাখা মাইন বিষ্ফোরনে আহত হওয়ার পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরনকারী বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)-এর সাহসী সদস্য নায়েক মো. আক্তার হোসেন এর মরদেহ ভোলায় আসার পর জানাযা নামাজ শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।
কক্সবাজার ব্যাটালিয়ন ৩৪ বিজিবির এই সদস্য শুক্রবার দুপুর ১২টা ৩০ মিনিটে ঢাকার সিএমএইচ হসপিটালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন।
শনিবার (০১ নভেম্বর) সকালে বাংলাদেশ বিজিবির একটি টিম হেলিকপ্টার যোগে ভোলার দৌলতখান উপজেলায় তার নিজ গ্রামে মরদেহ নিয়ে আসে। পরে জানাযা নামাজ শেষে পূর্ণ সামরিক মর্যাদায় পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
নিহত নায়েক আক্তার হোসেন ভোলার দৌলতখান পৌরসভার ৯ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা বিজিবির অবসরপ্রাপ্ত হাবিলদার আব্দুল মান্নান মিয়ার পুত্র। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৪৫ বছর। জীবদ্দশায় তিনি স্ত্রী, ২ ছেলে, ১ মেয়েসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
গত ১২ অক্টোবর নায়েক আক্তার পেয়ারাবুনিয়া সীমান্ত এলাকায় টহলরত অবস্থায় মাইন বিস্ফোরণে গুরুতর আহত হন।
এরপর তাকে দ্রুত রামু সিএমএইচে নেওয়া হয় এবং প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে পরদিন হেলিকপ্টারে করে ঢাকা সিএমএইচে নেওয়া হয়। শুক্রবার সকালে হঠাৎ হার্ট অ্যাটাক হলে তার মৃত্যু হয়।
বিজিবির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, নায়েক আক্তার হোসেনের মৃত্যুতে পুরো বাহিনীতে গভীর শোক নেমে এসেছে।
এ বিষয়ে কক্সবাজার ব্যাটালিয়নের (৩৪ বিজিবি) অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এস এম খায়রুল আলম (পিএসসি) বলেন, দেশের সীমান্ত সুরক্ষার দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আমরা এক সাহসী সহযোদ্ধাকে হারালাম। নায়েক আক্তার হোসেনের আত্মত্যাগ আমাদের অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে। বিজিবির এ কর্মকর্তা শোক প্রকাশ করে আরও বলেন, শহীদ নায়েক আক্তার হোসেন দেশের জন্য আত্মোৎসর্গের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তার আত্মার মাগফিরাত ও শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানানো হয়।