গত ১১ বছরে দেশে সড়কে ৬২ হাজার ৬১৯টি দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৮৬ হাজার ৬৯০ জন। এসব দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন ১ লাখ ৫৩ হাজার ২৫৭ জন।
গতকাল শনিবার যাত্রী অধিকার দিবস উপলক্ষে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত ‘যাত্রী অধিকার প্রতিষ্ঠায় রাজনৈতিক অঙ্গীকার চাই’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী এ তথ্য তুলে ধরেন।
যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব বলেন, শুধু ঢাকায় প্রতিদিন যানজটে নষ্ট হচ্ছে ৩২ লাখ কর্মঘণ্টা। বার্ষিক অর্থনৈতিক ক্ষতি ৯৮ হাজার কোটি টাকা, জ্বালানি অপচয় ১১ হাজার কোটি টাকা, আর যানজটের কারণে সংসার ভাঙার ঝুঁকি ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে।
তাই সড়কে প্রতি বছর হাজারও প্রাণহানি রোধ ও ভয়াবহ যানজট নিরসনে নির্বাচনী ইশতেহারে উন্নত গণপরিবহন অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি।
সড়ক দুর্ঘটনার চিত্র তুলে ধরে যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব বলেন, গত এক দশকের বেশি সময়ে সড়ক দুর্ঘটনা, যানজট ও দূষণে দেশের অর্থনীতি, স্বাস্থ্য ও সামাজিক কাঠামো মারাত্মক ক্ষতির শিকার হয়েছে। কিন্তু কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। পরিবহন খাতে দুর্নীতি ও ভুল নীতির কারণে পরিস্থিতি আরও প্রকট হয়েছে।
যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব বলেন, গত ১১ বছরে দেশে সড়কে ৬২ হাজার ৬১৯টি দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৮৬ হাজার ৬৯০ জন। এসব দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন ১ লাখ ৫৩ হাজার ২৫৭ জন। শুধু ঢাকায় প্রতিদিন যানজটে নষ্ট হচ্ছে ৩২ লাখ কর্মঘণ্টা। বার্ষিক অর্থনৈতিক ক্ষতি ৯৮ হাজার কোটি টাকা, জ্বালানি অপচয় ১১ হাজার কোটি টাকা, আর যানজটের কারণে সংসার ভাঙার ঝুঁকি ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের বরাত দিয়ে যাত্রী কল্যাণ সমিতির এই মহাসচিব বলেন, দীর্ঘ যানজট শুধু সময় ও অর্থনৈতিক ক্ষতিই করছে না; নাগরিকদের মানসিক ও শারীরিক সুস্থতাও বিপন্ন করছে। এতে উচ্চ রক্তচাপ, শ্বাসকষ্ট, হৃদরোগ, ক্যান্সারসহ নানা রোগ বাড়ছে। একই সঙ্গে উদ্বেগ, খিটখিটে মেজাজ ও পারিবারিক অশান্তি দেখা দিচ্ছে। শিশুদের বুদ্ধির বিকাশ ব্যাহত হচ্ছে এবং টিনএজদের বিপথগামিতার অন্যতম কারণও যানজট ও বেকারত্ব।
দেশের অধিকাংশ চালকের লাইসেন্স নেই জানিয়ে আলোচনা সভায় যাত্রী কল্যাণ সমিতির সভাপতি শরিফ রফিকুজ্জামান বলেন, লাইসেন্সহীন ও মাদকাসক্ত চালকরা যাতে গাড়ি চালাতে না পারেন, সে বিষয়ে সরকারকে কঠোর হতে হবে। ঝুঁকিপূর্ণ বাঁকগুলো সোজা করে সড়ক সংস্কার না করলে দুর্ঘটনা এড়ানো যাবে না।
রফিকুজ্জামান আরও বলেন, বাসভাড়ার সঙ্গে যাত্রীদের কাছ থেকে ইন্স্যুরেন্সের টাকা নেওয়া হয়। কিন্তু দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত যাত্রীরা কোনোদিন এই সুবিধা পান না। ক্ষতিগ্রস্তদের পাওনা আদায়ে যাত্রীসাধারণকে আরও সচেতন হতে হবে।
গণঅধিকারের মুখপাত্র ফারুক খান বলেন, তারা চান, যাত্রী কল্যাণ সমিতি শক্তিশালী হয়ে সব সিদ্ধান্ত প্রণয়নে অংশগ্রহণ করবে, যাতে তাদের দাবি বাস্তবায়িত হয়। কোনো দল বা সরকারের বিরুদ্ধে নয়, জনগণের পক্ষের কথা তারা বলতে চান। তাদের লক্ষ্য হলো- যাত্রীদের অধিকার সুরক্ষিত রাখা, সৎ ও ন্যায়সংগতভাবে দাবি পূরণ করা।
আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন এবি পার্টির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক মেজর (অব.) আবদুল ওহাব মিনার, গণসংহতি আন্দোলনের সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য দীপক রয়, যাত্রীকল্যাণ সমিতির অর্থ সম্পাদক মাহমুদুল হাসান প্রমুখ।
করপোরেট সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্যে দেশের পোল্ট্রি খাত চরম সংকটে পড়েছে বলে অভিযোগ করেছে বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএ)। সংগঠনটি জানিয়েছে, সরকারের নীরবতা ও করপোরেট প্রভাবের কারণে প্রান্তিক খামারিরা টিকে থাকতে পারছেন না।
এমন পরিস্থিতিতে ৭ দফা দাবি ঘোষণা করে এগুলো বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত শনিবার থেকে সারাদেশে পর্যায়ক্রমে সব জেলা ও উপজেলায় ডিম ও মুরগি উৎপাদন বন্ধ থাকবে বলে জানিয়েছে বিপিএ। সংবাদমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানিয়েছে বিপিএ।
সংগঠনটি জানায়, দেশে ৫০ থেকে ৬০ লাখ মানুষ এই খাতের সঙ্গে যুক্ত, যার মধ্যে প্রায় ৪০ শতাংশ নারী ও ৬০ শতাংশ শিক্ষিত বেকার যুবক। কিন্তু করপোরেট সিন্ডিকেটের একচেটিয়া বাজার দখলের কারণে এই বৃহত্তম কৃষিভিত্তিক খাতটি ধ্বংসের পথে।
বিপিএ’র ৭ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে- করপোরেট সিন্ডিকেট ভেঙে দিয়ে ফিড, বাচ্চা, মেডিসিন ও ভ্যাকসিনের দাম সরকার কর্তৃক নির্ধারণ, কর্পোরেট প্রভাবমুক্ত, ন্যায্য ও স্বচ্ছ বাজারব্যবস্থা গড়ে তোলা, প্রান্তিক খামারিদের সংগঠনকে নীতিনির্ধারণ পর্যায়ে অন্তর্ভুক্তকরণ, ফিড, বাচ্চা ও ওষুধের বাজারে নিয়মিত অডিট ও প্রকাশযোগ্য প্রতিবেদন ব্যবস্থা চালু, উৎপাদন খরচ অনুযায়ী ১০ শতাংশ লাভ যুক্ত করে ডিম ও মুরগির ন্যায্য দাম নির্ধারণ, ক্ষতিগ্রস্ত খামারিদের জন্য জামানতবিহীন ঋণ, প্রণোদনা ও ভর্তুকি প্রদান, নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে দুর্নীতিগ্রস্ত ও কর্পোরেটপন্থি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিতে হবে।
ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধি ও টেকসই সংরক্ষণ নিশ্চিত করতে শনিবার থেকে শুরু হচ্ছে দেশব্যাপী জাটকা ইলিশ আহরণে নিষেধাজ্ঞা। এই নিষেধাজ্ঞা চলবে আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়েছে।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে এবং মৎস্য অধিদপ্তরের বাস্তবায়নে এ নিষেধাজ্ঞার আওতায় ২৫ সেন্টিমিটারের ছোট ইলিশ (জাটকা) আহরণ, পরিবহণ, বাজারজাতকরণ, ক্রয়-বিক্রয় ও মজুত সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ থাকবে।
এর আগে চলতি বছরের ৪ অক্টোবর থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুমে প্রজননক্ষম ইলিশ রক্ষায় ‘ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান-২০২৫’ বাস্তবায়ন করা হয়। সে সময়ে ডিমওয়ালা ইলিশ থেকে নিঃসৃত ডিমের পরিস্ফুটনের মাধ্যমে উৎপাদিত পোনা বর্তমানে উপকূলীয় নদ-নদী ও মোহনাসমূহে বিচরণ করছে। এসব পোনা নিরাপদে বেড়ে উঠতে পারলেই ভবিষ্যতে দেশের ইলিশ উৎপাদন আরো বৃদ্ধি পাবে।
মৎস্য সুরক্ষা ও সংরক্ষণ (সংশোধিত) অধ্যাদেশ, ২০২৫ এবং মৎস্য সুরক্ষা ও সংরক্ষণ বিধিমালা, ১৯৮৫ অনুযায়ী, উক্ত নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করলে অনধিক ২ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড অথবা অনধিক ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড, কিংবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হওয়ার বিধান রয়েছে।
মৎস্য অধিদপ্তর সারাদেশে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন, নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড, নৌ পুলিশ, র্যাব, ও স্থানীয় আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সহযোগিতায় কঠোরভাবে এ নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়ন করবে।
টানা নয় মাস বন্ধ থাকার পর আজ (১ নভেম্বর) থেকে আবারও পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়া হলো দেশের একমাত্র প্রবালদ্বীপ সেন্ট মার্টিন। তবে দ্বীপের জীববৈচিত্র্য ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য রক্ষায় এবার পর্যটকদের মানতে হবে ১২টি কঠোর নির্দেশনা। এসব নির্দেশনা মেনে আগামী বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত প্রতিদিন সর্বোচ্চ দুই হাজার পর্যটক দ্বীপে ভ্রমণের সুযোগ পাবেন।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মো. শাহিদুল আলম বলেন, “সেন্ট মার্টিনের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সরকারের জারি করা ১২টি নির্দেশনা এবার কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করবে জেলা প্রশাসন। আগে টেকনাফ থেকে জাহাজ চলাচল করলেও নিরাপত্তার কারণে এখন কক্সবাজার শহর থেকে সরাসরি পর্যটকবাহী জাহাজ সেন্ট মার্টিনে যাতায়াত করবে।”
বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের উপপরিচালক মহিবুল ইসলাম জানান, “সেন্ট মার্টিনে যেতে হলে পর্যটকদের অবশ্যই ট্যুরিজম বোর্ডের স্বীকৃত ওয়েব পোর্টালের মাধ্যমে অনলাইনে টিকিট কিনতে হবে। প্রতিটি টিকিটে ট্রাভেল পাস ও কিউআর কোড থাকবে। কিউআর কোড ছাড়া টিকিট নকল হিসেবে গণ্য হবে।”
পরিবেশ অধিদপ্তর জানিয়েছে, এবারও কক্সবাজার শহরের নুনিয়ারছড়া বিআইডব্লিউটিএ ঘাট থেকে পর্যটকবাহী জাহাজ সেন্ট মার্টিন যাবে। আইনগত কারণে উখিয়ার ইনানী থেকে যাতায়াতের অনুমতি থাকবে না।
গত ২৭ অক্টোবর পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে নীতিগত সম্মতি প্রদান করেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে আজ থেকে পর্যটক যাতায়াত আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হলো।
পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার জেলা কার্যালয়ের পরিচালক মো. জমির উদ্দিন বলেন, “সেন্ট মার্টিন দ্বীপে ভ্রমণের ক্ষেত্রে সরকারের নির্দেশনা কঠোরভাবে কার্যকর করা হবে। এর জন্য পরিবেশ অধিদপ্তর ও স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।”
সেন্ট মার্টিনে ভ্রমণের জন্য ১২ নির্দেশনা
প্রবাল ও সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য রক্ষায় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় গত ২২ অক্টোবর ১২ দফা নির্দেশনা জারি করেছে। সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:
বিআইডব্লিউটিএ ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়া কোনো নৌযান চলবে না।
পর্যটকদের অনলাইনে কিউআর কোডযুক্ত টিকিট ক্রয় বাধ্যতামূলক।
ভ্রমণের সময়সূচি ও পর্যটক উপস্থিতি কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত থাকবে।
নভেম্বরে রাত্রিযাপন নিষিদ্ধ; ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে সীমিত অনুমতি থাকবে।
ফেব্রুয়ারিতে দ্বীপে পর্যটক প্রবেশ সম্পূর্ণ বন্ধ থাকবে।
প্রতিদিন সর্বোচ্চ দুই হাজার পর্যটক প্রবেশ করতে পারবেন।
রাতে সৈকতে আলো জ্বালানো, উচ্চ শব্দে অনুষ্ঠান বা বারবিকিউ করা নিষিদ্ধ।
কেয়াবনে প্রবেশ বা কেয়া ফল সংগ্রহ–বিক্রয় করা যাবে না।
কাছিম, পাখি, প্রবাল, শামুক–ঝিনুকসহ জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি কঠোরভাবে দণ্ডনীয়।
সৈকতে মোটরসাইকেল, সি-বাইক বা মোটরচালিত যান চলাচল নিষিদ্ধ।
পলিথিন বহন করা যাবে না; একবার ব্যবহার্য প্লাস্টিক সামগ্রী ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে।
পর্যটকদের নিজের পানির বোতল বা ফ্লাস্ক সঙ্গে রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের ১ ফেব্রুয়ারি থেকে সেন্ট মার্টিনে পর্যটক যাতায়াত বন্ধ ছিল। পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সরকার দ্বীপে পর্যটক সীমিত করার সিদ্ধান্ত নেয়। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এবার নভেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত তিন মাস সীমিত আকারে পর্যটন চালু করা হচ্ছে।
আধুনিকতা ও পেশাদারিত্বের প্রতীক হিসেবে নতুন ইউনিফর্ম চালু করছে বাংলাদেশ পুলিশ। দীর্ঘদিনের প্রস্তুতি ও পরিকল্পনার পর অবশেষে আগামী ১৫ নভেম্বর থেকে মহানগর ও বিশেষায়িত ইউনিটগুলোতে চালু হচ্ছে এই নতুন লৌহবর্ণের ইউনিফর্ম।
পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (মিডিয়া) এ এইচ এম সাহাদাত হোসেন জানান, “লৌহবর্ণের এবং স্বতন্ত্র স্টাইলের নতুন পোশাক আগামী ১৫ নভেম্বরের মধ্যে সংশ্লিষ্ট ইউনিটগুলোতে সরবরাহ করা হবে। প্রাথমিকভাবে মহানগর ও বিশেষায়িত ইউনিটগুলো এটি পরবে, পরে ধাপে ধাপে রেঞ্জ ও জেলা পর্যায়ের সদস্যদের কাছেও এটি পৌঁছাবে।”
নতুন ইউনিফর্ম প্রথম ধাপে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি), চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ (সিএমপি), হাইওয়ে পুলিশ, রিভার পুলিশ এবং পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)–এর সদস্যদের জন্য চালু করা হচ্ছে।
এর আগে চলতি বছরের ২০ জানুয়ারি, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর গৃহীত বৃহত্তর সংস্কার উদ্যোগের অংশ হিসেবে বাংলাদেশ পুলিশ, বাংলাদেশ আনসার ও ভিডিপি, এবং র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব)-এর ইউনিফর্ম পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত অনুমোদিত হয়।
পুলিশ সদর দপ্তরের এক কর্মকর্তা জানান, নতুন ইউনিফর্মটি আধুনিকতা, পেশাদারিত্ব ও জবাবদিহির প্রতীক হিসেবে ডিজাইন করা হয়েছে। এর মাধ্যমে পুলিশ বাহিনীকে সময়োপযোগী, আস্থাশীল ও দৃঢ় ইমেজে উপস্থাপন করার লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। নতুন পোশাক শুধু রঙ বা ডিজাইনের পরিবর্তন নয়, এটি পুলিশের মানসিকতা ও সাংগঠনিক সংস্কৃতির নবযাত্রার প্রতীক।
নতুন পোশাকে ব্যবহৃত হবে উন্নত মানের কাপড়, আরামদায়ক ফিটিং এবং আন্তর্জাতিক মানের ডিজাইন, যাতে কর্মক্ষেত্রে দীর্ঘ সময় কাজের উপযোগিতা ও মর্যাদাবোধ বজায় থাকে।
ধাপে ধাপে জেলা ও রেঞ্জ পর্যায়ের পুলিশ সদস্যরাও এই নতুন ইউনিফর্মে যুক্ত হবেন।
পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হওয়া বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক এনায়েত করিম (মাসুদ করিম) সম্প্রতি রিমান্ডে ও আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে অন্তর্বর্তী সরকারকে নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন।
এর মধ্যে দিয়ে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের পতন ঘটিয়ে নতুন সরকার গঠনের বড় একটি ষড়যন্ত্র ফাঁস হয়েছে।
এনায়েত করিম নতুন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে কে প্রধান উপদেষ্টা এবং কে কে উপদেষ্টা হতে যাচ্ছিলেন, তাদের নামও প্রকাশ করেন।
নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, নতুন সরকার গঠনের এই ষড়যন্ত্রের নেটওয়ার্কে এনায়েত করিমের সঙ্গে দেশের অনেক রাঘববোয়াল জড়িত। এই ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নের জন্য দেশ-বিদেশে এনায়েত করিম ও সংশ্লিষ্টদের উপস্থিতিতে বেশ কয়েকটি বৈঠক হয়। বৈঠকগুলোয় উপস্থিত ছিলেন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী, সাবেক সেনা কর্মকর্তা এবং সাংবাদিক। ষড়যন্ত্রে
সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে যার নাম ঠিক করা হয়েছিল, তিনি একজন অর্থনীতিবিদ।
সূত্র আরো জানায়, এনায়েত করিম জবানবন্দিতে তার সাম্প্রতিক বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকের কথাও উল্লেখ করেছেন। তিনি বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন চুপ্পুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন বলেও জানা গেছে। এছাড়া অন্য একটি সূত্রে জানা গেছে, শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ আওয়ামী একটি ব্যবসায়ী গ্রুপ ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নে এনায়েত করিমকে ছয় কোটি টাকা দেয়।
রিমান্ডে ও আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে এনায়েত করিম নতুন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের যেসব সদস্যের নাম প্রকাশ করেন, ইতোমধ্যে তাদের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। সন্দেহ করা হচ্ছে, গত বৃহস্পতিবার সাবেক বিএনপি সরকারের প্রতিমন্ত্রী এহসানুল হক মিলনকে বিদেশযাত্রায় অনুমতি না দেওয়ার পেছনে এর সংযোগ থাকতে পারে। মিলন গতকাল শুক্রবার সংবাদ সম্মেলন করে তাকে কেন বিদেশে যেতে দেওয়া হয়নি, সরকারের কাছে তার কারণ জানতে চান। এর আগে বৃহস্পতিবার এহসানুল হক মিলন অবশ্য গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, তিনি পুরোনো পাসপোর্ট নিয়ে গিয়েছিলেন। সেখানে ‘মিলন’ নামটি লেখা ছিল না। তার এই ভুলের কারণে বিমানবন্দর থেকে তাকে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
এনায়েত করিমের জবানবন্দিতে উল্লিখিত ষড়যন্ত্রের কথা এমন এক সময় ফাঁস হয়, যখন দেশে এক ধরনের অস্থিরতা চলছে। ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন নিয়ে সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিরোধ লক্ষ করা যাচ্ছে। একে অপরকে আক্রমণ করে বক্তব্য দিচ্ছে। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন বানচালের চেষ্টা হতে পারে আশঙ্কা ব্যক্ত করেছেন। তিনি নির্বাচন চ্যালেঞ্জিং হবে এবং হঠাৎ করে আক্রমণ চলে আসতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন। অর্থাৎ এনায়েত করিমের ঘটনার মতো নতুন করে আরো ষড়যন্ত্রের আশঙ্কা রয়েছে।
গত ১৩ সেপ্টেম্বর রাজধানীর মিন্টো রোডের ডিবি অফিসের সামনে সন্দেহজনক ঘোরাঘুরির সময় পুলিশ এনায়েত করিমকে চ্যালেঞ্জ করলে তিনি নিজেকে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর এজেন্ট ও এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক বলে দাবি করেন। পুলিশ তাকে এবং পরে তার সহযোগী গোলাম মোস্তফাকে গ্রেপ্তার করে ৫৪ ধারায় আদালতে পাঠিয়ে সাতদিনের রিমান্ডে নেয়। রিমান্ডে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে এনায়েত করিম স্বীকার করেন, তার সিআইএর এজেন্ট ও এশিয়া অঞ্চলের পরিচালকের পরিচয় ভুয়া।
জিজ্ঞাসাবাদে তিনি আরো জানিয়েছিলেন, ২০১৪ সালে বিএনপি ভাঙার অ্যাসাইনমেন্টেও তিনি জড়িত ছিলেন। ডিজিএফআইয়ের তৎকালীন কর্মকর্তা ও ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’-এর যোগসাজশে তিনি ওই কাজ করেন। তিনি আরো স্বীকার করেন, দেশে যখনই কোনো রাজনৈতিক অস্থিরতার অবস্থা সৃষ্টি হয়, তথনই তিনি বাংলাদেশে আসেন এবং কিছু অর্থ বিনিয়োগ করে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেন। এভাবে তিনি ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের নির্বাচনে বাংলাদেশে এসে তৎপরতা চালান এবং তৎকালীন ডিজিএফআই ও ‘র’ যৌথভাবে তাকে ভাড়াটে হিসেবে কাজে লাগায়।
আজ থেকে কোনো জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) বিপরীতে ১০টির বেশি সক্রিয় সিম রাখা যাবে না। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) জানিয়েছে, অপারেটররা আজ থেকেই অতিরিক্ত সিম নিষ্ক্রিয় করার প্রক্রিয়া শুরু করবে।
এর আগে এনআইডি-প্রতি সর্বোচ্চ ১৫টি সিম ব্যবহারের সুযোগ ছিল। নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী এখন একজন গ্রাহক সর্বোচ্চ ১০টি সিম ব্যবহার করতে পারবেন—সব অপারেটর মিলিয়ে।
সম্প্রতি বিটিআরসি চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) এমদাদ উল বারী বলেন, শনিবার ( ০১ নভেম্বর) থেকেই অপারেটররা অতিরিক্ত সিম নিষ্ক্রিয় করবে। ডিসেম্বরের মধ্যে আমরা নিশ্চিত করব, কোনো এনআইডির নামে ১০টির বেশি সিম সক্রিয় থাকবে না।
বিটিআরসি সূত্র জানায়, সিম ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা ফেরানো ও প্রতারণা রোধে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হয়েছে। গ্রাহকরা চাইলে অনলাইনে বা *১৬০০২# ডায়াল করে নিজেদের এনআইডিতে নিবন্ধিত সিমের সংখ্যা যাচাই করতে পারবেন।
অন্যদিকে বিটিআরসি বলছে সিম বন্ধ করার ক্ষেত্রে ‘দৈবচয়ন’ নীতি অনুসরণ করা হবে।
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে বিটিআরসির সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, দৈবচয়ন অর্থ র্যান্ডম সিলেকশনের মাধ্যমে অতিরিক্ত সিম বাছাই করা হবে। এতে কোনো মানবিক সিদ্ধান্ত বা প্রভাবের সুযোগ থাকবে না। এই প্রক্রিয়া সম্পূর্ণভাবে কম্পিউটার অ্যালগরিদমের মাধ্যমে পরিচালিত হবে। কোনো নির্দিষ্ট নিয়ম বা অগ্রাধিকার না মেনে পুরোপুরি এলোমেলোভাবে বা স্বয়ংক্রিয় কম্পিউটার প্রোগ্রামের মাধ্যমে সিমের নম্বর বাছাই করা হবে। অর্থাৎ, যদি কারও নামে ১০টির বেশি সিম নিবন্ধিত থাকে, তবে অতিরিক্ত সিমগুলোর মধ্যে কোনগুলো বাতিল হবে তা কোনো মানুষ নির্ধারণ করবে না। বরং কম্পিউটার স্বয়ংক্রিয়ভাবে র্যান্ডমভাবে কিছু সিম বেছে নিয়ে বাতিল করবে।
উল্লেখ্য, ২০২৫ সালের মার্চ পর্যন্ত দেশে সক্রিয় মোবাইল সিমের সংখ্যা ১৮ কোটি ৬২ লাখ। অথচ প্রকৃত মোবাইল গ্রাহক মাত্র ৬ কোটি ৭৫ লাখ। এর মধ্যে ৮০ শতাংশের বেশি গ্রাহকের নামে ৫টির কম সিম রয়েছে। ৬ থেকে ১০টি সিম আছে প্রায় ১৬ শতাংশ গ্রাহকের নামে, আর ১১টির বেশি সিম ব্যবহার করেন মাত্র ৩ শতাংশ।
জুলাই অভ্যুত্থানের পর দায়িত্ব নেওয়া অন্তর্বর্তী সরকারের শাসনকালের ১৪ মাসে ৪০ জন বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। এ ঘটনা মাসের হিসেবে সবচেয়ে বেশি ঘটেছে গত বছরের সেপ্টেম্বরে, ৯টি; আর গত তিন মাসে ঘটেছে ১১টি।
মানবাধিকার সংস্থা অধিকার তাদের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরেছে। সম্প্রতি দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে ত্রৈমাসিক প্রতিবেদন নিজেদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে সংস্থাটি, সেখানে ১৪ মাসের তথ্যও তুলে ধরা হয়।
অধিকার এই হিসাব করেছে ২০২৪ সালের ৯ আগস্ট থেকে। ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে এর চার দিন আগেই আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। তাদের দেড় দশকের শাসনকালে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডসহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের ব্যাপক অভিযোগ নিয়ে সরব ছিল দেশি–বিদেশি মানবাধিকার সংগঠনগুলো।
এরপর ৮ আগস্ট যে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়, সেই সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন অধিকারের প্রতিষ্ঠাতা আদিলুর রহমান খান। বিতর্কিত তথ্যপ্রযুক্তি আইনের মামলায় তিনি আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দণ্ডিত হয়েছিলেন, জুলাই অভ্যুত্থানের পর হাইকোর্টের রায়ে খালাস পান তিনি।
অধিকারের প্রতিবেদনে দেখানো হয়েছে, গত বছরের আগস্টের ৯ তারিখের পর ওই মাসে দেশে কোনো বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটেনি। সেপ্টেম্বরে নয়জনের পর অক্টোবর, নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে একজন করে মারা যান। এরপর ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে মারা যান পাঁচজন, ফেব্রুয়ারিতে তিনজন মারা যান। মার্চ ও এপ্রিল মাসে মারা যান একজন করে দুজন। এরপর মে, জুন, জুলাই, আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে বিচারবহির্ভূত হত্যকাণ্ডের শিকারের সংখ্যা যথাক্রমে চার, তিন, ছয়, তিন ও দুই।
এই ৪০ জনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১৯ জন গুলিতে মারা গেছেন, নির্যাতনে মারা গেছেন ১৪ জন, পিটিয়ে মারা হয়েছে সাতজনকে।
গত জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত যে ১১ জন নিহত হয়েছেন, তার তিনটি ঘটনার জন্য পুলিশ, একটি ঘটনার জন্য সেনাসদস্য এবং সাতটি ঘটনার জন্য যৌথ বাহিনীকে দায়ী করেছে অধিকার।
অধিকারের পরিসংখ্যান অনুসারে গত ১৪ মাসে মব সন্ত্রাসের শিকার হয়ে নিহত হয়েছেন ১৫৩ জন। এই ঘটনা সবচেয়ে বেশি ঘটেছে গত সেপ্টেম্বর মাসে, ১৮টি। গত বছরের সেপ্টেম্বরে এ ঘটনা ছিল ১৭টি। গত তিন মাসে এমন ঘটনার সংখ্যা ৪৫টি।
অন্তর্বর্তী সরকারের সময় ৭ হাজার ৯৭৯টি রাজনৈতিক সহিংসতার হিসাব দিয়েছে অধিকার। এ ঘটনা সবচেয়ে বেশি ঘটেছে এ বছরের মার্চে, ৯৪৪টি। ৮৬২টি রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনা ঘটে গত বছরের সেপ্টেম্বরে। গত বছরের আগস্টে (৯–৩১ আগস্ট) সংখ্যাটি ছিল ৫০০। ৭৯৮টি ঘটনা ঘটে এ বছরের এপ্রিলে। গত জুন, জুলাই ও আগস্টে সংখ্যাটি ছিল যথাক্রমে ৪৮৯, ৫৭৯ ও ৬৫৮। গত সেপ্টেম্বরে সংখ্যাটি নেমে দাঁড়ায় ৩০০টিতে।
১৪ মাসে রাজনৈতিক সহিংসতায় নিহত হন ২৮১ জন। সবচেয়ে বেশি ব্যক্তি নিহত হন এ বছরের মার্চে ৪৪ জন, এরপর এক মাসে বেশি নিহত হন গত বছরের আগস্টের ২৩ দিনে, ৩৩ জন।
অধিকারের পরিসংখ্যান অনুসারে, এ সময়কালে সাংবাদিকদের ওপর হামলার ২৪২টি ঘটনা ঘটে। সবচেয়ে বেশি ঘটেছে গত সেপ্টেম্বরে, ৩৪টি। এ ছাড়া গত মার্চ মাসে ৩০টি, মে মাসে ২৮টি, আগস্টে ২৬টি, ফেব্রুয়ারিতে ২৫টি ঘটনায় আক্রান্ত হন সাংবাদিকরা।
দেশ এক ‘বিরাট সংকটে’ পড়েছে, যা থেকে উদ্ধারের ক্ষমতা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নেই বলে মনে করছেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না। তিনি এও মনে করেন, এই সংকট থেকে উদ্ধারে এখন বিএনপিকেই ভূমিকা নিতে হবে।
গতকাল শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় দেশের বর্তমান পরিস্থিতি তুলে ধরে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি বলেন, ‘আমি বাস্তবতায় মনে করি, দেশ এক বিরাট সংকটের মধ্যে পড়েছে। এখন নির্ভর করবে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ভাইয়েরা কী করেন।
এই সংকট থেকে যদি মনে করেন, এই সরকার জাতিকে উদ্ধার করবে… এই সরকারের সেই ক্ষমতাই নাই।’
জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন যে সুপারিশমালা মঙ্গলবার অন্তর্বর্তী সরকার প্রধান মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে তুলে দিয়েছে তা নিয়ে বিএনপি প্রবল আপত্তি তুলেছে। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই সুপারিশমালাকে অগ্রহণযোগ্য বলেছেন।
তিনি বলেন, ‘জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের আইনি ভিত্তি দেওয়ার জন্য জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশন তাদের সুপারিশ সরকারের কাছে পেশ করেছে। সেখানে যে সকল বিষয়ে ভিন্নমত বা নোট ডিসেন্টসহ ঐকমত্য হয়েছে, তার উল্লেখ না রেখে দীর্ঘ আলোচনায় যেসব প্রসঙ্গ আলোচনা আসেনি, তা অন্তর্ভুক্ত করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের অন্য সকল সুপারিশ অগ্রহণযোগ্য বিধায় আমরা একমত হতে পারছি না।’
সুপারিশমলায় সাংবিধানিক আদেশ জারি করে গণভোটের মাধ্যমে সনদ বাস্তবায়নের কথা বলা হয়েছে।
তাতে বলা হয়েছে, ওই আদেশ জারির পর জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে যথোপযুক্ত সময়ে অথবা নির্বাচনের দিন গণভোট হবে। তবে কখন সেই ভোট হবে তা নিয়ে বিএনপির সঙ্গে জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপির প্রবল মতবিরোধ রয়েছে।
জামায়াতসহ আটটি দল বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশনের সামনে বিক্ষোভ করেছে। তারা কমিশনকে স্মারকলিপি দিয়ে নভেম্বরের মধ্যে গণভোট দাবি করেছে।
এমন পরিস্থিতির কারণে দেশে সংকট তৈরি হয়েছে মন্তব্য করে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি বলেন, ‘আমি বলি, আজ সমস্ত দায়িত্ব বিএনপির ওপরে। আমি বিএনপি করি না, বিএনপির সব প্রস্তাব মানিও না, বিএনপি সবচাইতে ভালো দল আমি তাও বলি না…এর চাইতেও ভালো হতে পারে।’
‘কিন্তু বর্তমান সময়ের জন্য এখন ‘রিলে রেইসের’ কাঠি বিএনপির হাতে। তাদের সেই ভূমিকা পালন করতে পারতে হবে।’
জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডির ৫৩তম প্রতিষ্ঠবার্ষিকীর আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখছিলেন মান্না।
দলটির প্রতিষ্ঠাতা আ স ম আবদুর রব অসুস্থ থাকার জন্য অনুষ্ঠানে আসতে পারেননি। তবে তার লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনানো হয়।
সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
সভায় অতিথির বক্তব্যে নাগরিক ঐক্যের নেতা মান্না বলেন, ‘অনেকে জিজ্ঞাসা করেন আমাকে, ওরা (জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশন) এরকম কাজ করল কেন?’
তিনি ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশমালায় ভিন্নমত বা নোট ডিসেন্টসহ ঐকমত্য হয়েছে, তার উল্লেখ না রেখে দীর্ঘ আলোচনায় যেসব প্রসঙ্গ আলোচনায় আসেনি, তা অন্তর্ভুক্ত করার বিষটিকে বোকামি, নিবুর্দ্ধিতা ও মুর্খতা মনে করেন।
‘যদি বুঝতেন তাহলে এটা বদলাবার আগে বিএনপির সাথে কথা বলতেন, আমাদের সাথে কথা বলতেন। কারো সাথে তো কথা বলেন নাই। নিজের নিজের মতো করতে গেছেন…এটা এখন হজম করতে পারবেন। যদি তারা মনে করেন একই দিনে গণভোট ও জাতীয় নির্বাচন করলেই বিএনপি খুশি হয়ে যাবে তা আমার মনে হয় না। সিদ্ধান্ত নিতে হবে প্রধানত বিএনপির।’
মান্না বলেন, ‘আমরা চেয়েছি, সিদ্ধান্তগুলো, দ্বিমতগুলো জনগণের কাছে যাক। সরকার যে ‘থু থু ফেলেছে, সেই থু থু চাটবে’ আবার…আমি জানি না। কিন্তু তাদের তো ‘চাটতে’ হবে। না হলে ওনারা এভাবেই যদি করতে চান, বিএনপি যদি না মানে।’
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ‘জামায়াতের মতো আন্দোলন না করার যে কথা মির্জা ফখরুল বলেছেন’, তা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘জামায়াত তো আবার আন্দোলন আন্দোলনে খেলে। কর্মসূচির নামে সভা করে, বড় কর্মসূচি দেয় না। তারা জানে যে, এই কর্মসূচি মানুষ খাবে না। পিআর লোক বুঝে? বুঝে না। আর সেগুলো নিয়ে কথা বলে বুঝে? বুঝে না।’
সভায় সভাপতিত্ব করেন জেএসডির সহসভাপতি তানিয়া রব। তিনি বলেন, ‘আমরা সব দলগুলো এই অন্তবর্তীকালীন সরকারকে সমর্থন দিয়েছি। কিন্তু সেখান থেকে কী হলো? প্রতিদিন আমরা প্রতারিত হচ্ছি।’
জুলাই সনদে স্বাক্ষরের পরে এখন নানা ধরনের কথাবার্তা হচ্ছে, যে কারণে ঠিক কাজ করেছেন কি না তা ভাবতে হচ্ছে, বলেন তানিয়া রব।
জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপিকে ‘মাথা ঠাণ্ডা’ করার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, ‘তোমরা দেশের ভালোটা বুঝো, বুঝার চেষ্টা করো। আমাদের সাথে কথা বলে অভিজ্ঞতা নাও এবং সেইভাবে তোমরা পথ তৈরি কর। তোমরা নেহায়েত শিশু। আমি মনে করি, তোমাদের বীরত্বের জন্য আমি কৃতিত্ব দিতে চাই। কিন্তু তোমরা এখন যেটা করছো, এই মুহূর্তে যেটা করছো, সেটা ঠিক রাষ্ট্রকে যে কোথায় নিয়ে পৌঁছাবে তা কিন্তু একটা অজানা আতঙ্কের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন-বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণফোরামের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সুব্রত চৌধুরী, ভাসানী জনশক্তি পার্টির শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, এবি পার্টির সভাপতি মজিবুর রহমান মঞ্জু, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নূর, জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহিদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন।
সূত্র: বিডিনিউজ
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকার, জাতীয় ঐকমত্য কমিশন দেশ ও জনগণের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) ৫৩ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন তিনি।
জুলাই জাতীয় সনদ ও তা বাস্তবায়নের সুপারিশ নিয়ে আলোচনা সভায় কথা বলেন বিএনপির মহাসচিব। তিনি বলেন, দেখা গেল, যখন এটা (সুপারিশ) তারা (জাতীয় ঐকমত্য কমিশন) উপস্থাপন করল অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কাছে, তখন সেটায় অনেক পার্থক্য। বিশেষ করে তারা যে নোট অব ডিসেন্টগুলো দিয়েছিলেন, সেগুলো যেন সুপারিশে উল্লেখ করা হয়, তেমনটা বলেছিলেন। এ ব্যাপারে তারা আস্থা-বিশ্বাস রেখেছিলেন। কিন্তু সেই আস্থা, বিশ্বাসের সঙ্গে তারা বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। যেটা তারা তাদের কাছ থেকে আশা করেননি।
বিএনপি সংস্কারের পক্ষের দল বলে মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, মতভেদ থাকলেও তারা জুলাই সনদে স্বাক্ষর করেছেন। যেসব প্রস্তাব নিয়ে ভিন্নমত ছিল, সেখানে তারা ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিয়েছে। জনগণের ভোটে ক্ষমতায় গেলে তারা সেগুলো বাস্তবায়ন করবেন। জনগণ ভোট না দিলে বাস্তবায়ন করবেন না।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আমাদের মতভেদ থাকলেও মূল যে সনদ, সেই সনদে আমরা স্বাক্ষর করেছিলাম। এটাই নিয়ম যে, আমরা যদি নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে ক্ষমতায় যাই, মানুষ যদি আমাদের ভোট দেয়, তাহলে আমরা সেই বিষয়গুলো আবার সামনে নিয়ে আসব। সেটাকে আমরা পার্লামেন্টে পাস করে দেশের যে পরিবর্তন, সেই পরিবর্তনটা নিয়ে আসব।’
বিএনপিকে সংস্কারের বিপক্ষের দল হিসেবে উপস্থাপন করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, বিএনপির জন্ম হয়েছে সংস্কারের মধ্যে দিয়ে। ১৯৭৯ সালে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান একদলীয় শাসনব্যবস্থার পরিবর্তে বহুদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
তিনি বলেন, ‘আমি খুব পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, আমরা নির্বাচন করব, নির্বাচন করতে চাই। আমরা ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা যে ঘোষণা দিয়েছেন সেই ঘোষণার সঙ্গে একমত হয়ে আমরা নির্বাচন চাই।’
‘সেই নির্বাচনকে আজকে বানচাল করার জন্য, সেই নির্বাচনকে বিলম্বিত করবার জন্য একটা মহল উঠে পড়ে লেগেছে। বিভিন্নভাবে বিভিন্ন কথাবার্তা বলে জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। কিন্তু আমরা পরিষ্কার করে বলতে চাই, গণভোট নির্বাচনের আগে করার কোনো সুযোগ এখন আর নাই। নির্বাচনের দিনই গণভোট হবে সে কথা আমরা পরিষ্কার করে বলেছি।’
জাতীয় নির্বাচনের সঙ্গে এক দিনে গণভোট আয়োজনের বিষয়টি স্পষ্ট করে তিনি বলেন, সেখানে দুটি কারণে ভোট হবে, একটি গণভোটের জন্য, আরেকটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য। ‘সুতরাং এই বিষয়ে কোনো দ্বিমত কারো থাকবে বলে আমি অন্তত মনে করি না।’
জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট করার ‘কোনো সুযোগ নেই’ মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘যারা এ নিয়ে রাস্তায় নেমে গোলমাল করছেন, তাদের অনুরোধ করব, জনগণকে আর বিভ্রান্ত করবেন না। এক সময় আপনারা পাকিস্তানের পক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন, মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিলেন। আজ জনগণ যে নির্বাচন চায়, তার বিরোধিতা করবেন না। এই দেশের মানুষ দেশ বিক্রির রাজনীতিকে ক্ষমা করে না।’
ফখরুলের অভিযোগ, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারই দেশে চলমান রাজনৈতিক সংকট তৈরি করেছে। তিনি বলেন, ‘আপনারা (অন্তর্বর্তী সরকার) যে কমিশন তৈরি করেছেন, সেই কমিশন ঐকমত্যের নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছে। সংস্কার ও বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আমরা অনেক ক্ষেত্রে একমত হয়েছিলাম। কয়েকটি বিষয়ে মতভেদ থাকায় আমরা ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দেই। অর্থাৎ আমাদের মধ্যে মতভেদ থাকলেও মূল বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছেছিলাম, এটাই নিয়ম।’
সভায় জেএসডির সভাপতি আ স ম আব্দুর রবের রাজনৈতিক অবদান স্মরণ করেন বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের পরে দেশ যখন একদলীয় শাসনব্যবস্থার জাঁতাকলে, তখন আ স ম আব্দুর রবের মতো রাজনীতিবিদেরা দেশকে উদ্ধার করেছিল। তিনি আ স ম আব্দুর রবের দ্রুত সুস্থতা কামনা করেন। আগামীতে নির্বাচিত হলে বিএনপির ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে যুক্ত থাকা রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে জাতীয় সরকার গঠন করবে বলে জানান বিএনপির মহাসচিব।
বর্তমানে দেশ গভীর সংকটে রয়েছে বলে মন্তব্য করেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না। তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার দেশের মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করছে। ভবিষ্যতে যে সরকার নির্বাচন আয়োজন করবে, সেই সরকার যদি প্রতারক হয়, তাহলে আর কী করার আছে বলে হতাশা প্রকাশ করেন তিনি।
মাহমুদুর রহমান মান্না মনে করেন, নির্বাচনের আগে গণভোট আয়োজনের মতো পরিস্থিতি বর্তমানে দেশে নেই। দেশের বর্তমান সংকট থেকে উত্তরণের একমাত্র উপায় হলো, দ্রুত সময়ে নির্বাচন আয়োজন করা।
আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, ‘আমাদের ইতিহাসের দুর্ভাগ্য হচ্ছে, বারবার আমরা স্বৈরাচারকে সরাই, আবার আমাদের মধ্যে থেকেই স্বৈরাচার জন্ম হয়। তাই ঐতিহাসিকভাবে আমাদের প্রতিনিয়ত লড়াইয়ের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। গণঅভ্যুত্থানের পরে আমরা ভেবেছিলাম, আমাদের দেশে নতুন রাজনীতির উত্থান হবে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, চব্বিশ-পরবর্তী দেশের রাজনীতি বিএনপি ও জামায়াতের দ্বিদলীয় রাজনীতিতে আবদ্ধ করার চেষ্টা করছে।’
গণভোটকে অনেকে সংসদের আসন নির্ধারণের ‘টুল’ হিসেবে ব্যবহার করছেন বলে অভিযোগ করেন গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক। তিনি প্রশ্ন তোলেন, আজকে যে গণভোটের দাবিটা তোলা হচ্ছে, ডিসেম্বরে যদি জাতীয় নির্বাচনের তফসিল হয়, সময় আছে এক মাস, এই সময়ে কি আরেকটা নির্বাচন সম্ভব?
গণভোট ইস্যুতে সিদ্ধান্ত যাই হোক না কেন আগামী জাতীয় নির্বাচন ১৫ ফেব্রুয়ারির আগেই হবে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। তিনি বলেন, কোনো শক্তি এটাকে ঠেকাতে পারবে না।
শুক্রবার নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (নোবিপ্রবি) ‘জুলাই কন্যা ফাউন্ডেশন’ আয়োজিত এক অনুষ্ঠান শেষে তিনি এ কথা বলেন।
শফিকুল আলম বলেন, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল তাদের মতামত দিয়েছে। আমরা এটাকে হুমকি হিসেবে দেখছি না। যেটা সবচেয়ে উত্তম সেটাই করবেন প্রধান উপদেষ্টা। আগামী ১৩ নভেম্বর আদালত শেখ হাসিনার বিচারের দিন জানাবেন। সবকিছুই নিয়মতান্ত্রিকভাবেই চলবে।
গণঅভ্যুত্থানে নারীদের ভূমিকা উল্লেখ করে তিনি বলেন, স্বৈরাচার পতন ও গণঅভ্যুত্থানে পুরুষ ও নারীরা একসঙ্গে রাজপথে কাঁধে-কাঁধ মিলিয়ে কাজ করেছে। এখন আর নারীরা পিছিয়ে নেই। সব ক্ষেত্রেই তারা প্রতিনিধিত্ব করছেন। আমরাও চাই নারীরা এগিয়ে যাক।
এর আগে নোবিপ্রবি কেন্দ্রীয় অডিটোরিয়ামে তরুণদের জ্ঞান ও মেধার বিকাশকে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে জুলাই কন্যা ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ‘মাইন্ডব্রিজ ও নলেজ কম্পিটিশন ২০২৫’ এর আয়োজন করা হয়।
এতে জুলাই কন্যা ফাউন্ডেশনের সভাপতি জান্নাতুল নাঈম প্রমির সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য রাখেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ইসমাইল, নোয়াখালীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. ইসমাঈল হোসেন প্রমুখ।
ধর্ম উপদেষ্টা আল্লামা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেছেন, মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালনকালে ১৫ মাসে আমার যথেষ্ট সফলতা আছে। আর যেগুলো আমি করতে পারিনি সেগুলো আমার ব্যর্থতা। এতে আমার করার কিছু ছিল না। কারণ ১৫ বছরের জঞ্জাল ১৫ মাসে পরিষ্কার করা যায় না।
শুক্রবার পঞ্চগড় জেলা শহরের রৌশনাবাগ এলাকার দারুল উলুম মদিনাতুল ইসলাম মাদরাসা মাঠে পঞ্চগড় জেলার সকল তৌহিদী জনতার উদ্যোগে আজিমুশ্বান শানে রিসালাত সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, আমাদের সরকারের বয়স ১৫ মাস। আমরা বেশ কিছু পরিবর্তন এনেছি। হজ ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন এনেছি। মডেল মসজিদগুলো, যেগুলো নির্মাণে দুর্নীতি অথবা অনিয়ম আছে, এগুলোর জন্য আমরা পাওয়ার ফুল কমিটি গঠন করেছি। তারা অতিসত্বর আমাদের কাছে রিপোর্ট দেবেন। ইসলামিক ফাউন্ডেশনে বেশ কিছু অনিয়ম ছিল। আমরা একজন সাবেক বিচারপতির নেতৃত্বে তদন্ত কমিটি গঠন করেছিলাম। কালকে আমাকে রিপোর্ট দিয়েছেন এবং উনার তদন্ত অনুযায়ী আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা নেব।
তিনি আরও বলেন, হজের টাকা ফেরত দিয়েছি ৩৯ কোটি। যেগুলো এজেন্সির টাকা সৌদি আরবে ছিল। আমার মন্ত্রণালয়ে আমার জানামতে দুর্নীতির কোনো স্কোপ নেই। আমি নিজেও দুর্নীতির সাথে যুক্ত নই। আমার অফিসাররাও যাতে দুর্নীতিমুক্ত থাকে, আমি যথেষ্ট সোচ্চার আছি। আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করেছি এবং একটি ট্রান্সপারেন্ট গভর্নমেন্ট প্রশাসন স্থাপন করতে সক্ষম হয়েছি।
অনুষ্ঠানে সম্মেলন বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি মাওলানা আব্দুল হান্নানের সভাপতিত্বে সাধারণ সম্পাদক হাফেজ মাওলানা মাহমুদুল আলম, জেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির ইকবাল হোসাইন, নায়েবে আমির মাওলানা মফিজ উদ্দীন, সাধারণ সম্পাদক মাওলানা দেলোয়ার হোসাইন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সভাপতি আব্দুল হাই, সহ-সভাপতি ক্বারী মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ, সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সুলতান মাহমুদ, খেলাফত মজলিসের সভাপতি হাফেজ মীর মোর্শেদ তুহিন উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে, ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেনকে ক্রেস্ট ও ফুলের তোড়া দিয়ে বরণ করে নেয়া হয়। পরে পঞ্চগড় তৌহিদী জনতার পক্ষ থেকে ১২টি দাবি সম্বলিত স্মারকলিপি তুলে দেন ওলামায়ে কেরামগণ।
প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, সমবায়ভিত্তিক অর্থনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে একটি আত্মনির্ভরশীল বাংলাদেশ গড়ে তোলা সম্ভব।
তিনি বলেন, ‘বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সমবায় খাতকে আধুনিক ও গতিশীল করতে নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। আমি বিশ্বাস করি, কৃষি, মৎস্য, পশুপালন, সঞ্চয় ও ঋণদান এবং কুটিরশিল্প প্রভৃতি ক্ষেত্রে সমবায়ভিত্তিক অর্থনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে একটি আত্মনির্ভরশীল বাংলাদেশ গড়ে তোলা সম্ভব।’
আগামীকাল ‘৫৪তম জাতীয় সমবায় দিবস’ উপলক্ষে দেওয়া এক বাণীতে প্রধান উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘সাম্য ও সমতায়, দেশ গড়বে সমবায়’ এ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে প্রতি বছরের ন্যায় এবারও ১ নভেম্বর, ২০২৫ যথাযোগ্য মর্যাদায় দেশব্যাপী ‘৫৪তম জাতীয় সমবায় দিবস’ উদ্যাপিত হচ্ছে জেনে আমি আনন্দিত। এ উপলক্ষে আমি সকল সমবায়ী ও দেশবাসীকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাচ্ছি।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, দেশ ও জনগণের উন্নয়নে গৃহীত যেকোনো কার্যক্রম সফলভাবে বাস্তবায়নে সামাজিক সম্পৃক্ততা নিশ্চিত অপরিহার্য। সমবায়ের অমিত সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে এ কাজ আমরা অনায়াসে করতে পারি। সমবায় সমিতিগুলো শুধু আর্থিক প্রতিষ্ঠানই নয় বরং সমাজের নানাবিধ সমস্যা দূর করতে বহুমুখী কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, দেশের সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জীবনমান উন্নয়ন, দক্ষ জনশক্তি তৈরি ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে সমবায় আন্দোলনের বিকল্প নেই। অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকার একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক, ন্যায়ভিত্তিক ও টেকসই সমাজ প্রতিষ্ঠার পথে এগিয়ে যেতে চায়। এ লক্ষ্য বাস্তবায়নের মাধ্যমে একটি বৈষম্যমুক্ত নতুন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় সমবায়ের ভূমিকা অপরিসীম।
তিনি সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘আসুন, সমবায়ের চেতনাকে ধারণ করে সাম্য ও সমতায় আমরা সকলে মিলে গড়ে তুলি নতুন বাংলাদেশ।’
প্রধান উপদেষ্টা ‘৫৪তম জাতীয় সমবায় দিবস, ২০২৫’ উপলক্ষে গৃহীত সকল কর্মসূচির সার্বিক সাফল্য কামনা করেন। সূত্র: বাসস
শাপলা প্রতীকের দাবিতে অনড় অবস্থান জানিয়ে আসছিল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। তবে ইসির প্রতীক তালিকায় না থাকায় এই প্রতীক দেওয়া যাবে না বলে এত দিন বলে আসছিল নির্বাচন কমিশন (ইসি)। গতকাল বৃহস্পতিবার ইসির নতুন যে প্রতীক তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে, তাতে ‘শাপলা কলি’ যুক্ত করা হয়েছে।
গতকাল নির্বাচন কমিশনের সচিব আখতার আহমেদ স্বাক্ষরিত এ-সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন প্রকাশ করা হয়েছে। তাতে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের জন্য প্রতীকের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। এতে শাপলা কলিসহ বেশ কিছু প্রতীক সংযোজন ও বিয়োজন করা হয়েছে।
গত ২৪ সেপ্টেম্বর ১১৫টি প্রতীক সংরক্ষণ করে সর্বশেষ প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল নির্বাচন কমিশন। সেখানে শাপলা কলি ছিল না।
গত বছর আওয়ামী লীগ সরকার পতনের আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকা ছাত্র–তরুণদের উদ্যোগে গঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) কয়েক মাস আগে ইসির পর্যালোচনায় নিবন্ধনযোগ্য দল বিবেচিত হয়। এর পর থেকে এনসিপিকে শাপলা প্রতীক বরাদ্দের দাবি জানিয়ে আসছিলেন দলটির নেতারা।
এ বিষয়ে অপরাগতা জানিয়ে আসছিলেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দীনসহ নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা। সর্বশেষ ২৩ সেপ্টেম্বর নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব আখতার আহমেদ এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘এনসিপি শাপলা প্রতীক পাচ্ছে না, কারণ হচ্ছে যে আমাদের ১১৫টার যে শিডিউলটা করা হয়েছে, সেখানে শাপলা প্রতীক নেই।’
তবে গত সোমবার এনসিপিকে শাপলা প্রতীক না দেওয়ার কোনো প্রশ্নই নেই মন্তব্য করে দলটির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেছিলেন, ‘যেহেতু আইনগত বাধা নেই, আমরা আমাদের জায়গা থেকে শাপলা আদায় করে নেব।’
গতকাল প্রকাশিত ইসির নতুন প্রতীকের তালিকায় ‘শাপলা কলি’ প্রতীক যুক্ত করা হলো।