মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার উমেদপুর ইউনিয়নের কাচিকাটা গ্রামের নিজ বাড়ী থেকে ৬০ বছরের বৃদ্ধা রেনু বেগমের গলাকাটা রক্তাক্ত লাশ গত ২১ সেপ্টেম্বর উদ্ধার করে শিবচর থানা পুলিশ। এ ঘটনায় হত্যার মোটিভ সনাক্তে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কাজ শুরু করে এবং গোয়েন্দা সূত্রের ভিত্তিতে স্বল্প সময়ের মধ্যে RAB-8 (সিপিসি), মাদারীপুরের একটি টিম ও পুলিশর একটি সমেত শিবচর থানাধীন পাচ্চর এলাকা থেকে হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত কাজী মাহমুদ রাসেল সবুজ নামে একজনকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। গ্রেফতারের পর সবুজকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে জানা যায়, সে একাই এই হত্যাকান্ডটি সংঘটিত করেছে। মূলতঃ তাকে ও তার স্ত্রীকে দেয়া চোরের অপবাদের প্রতিশোধ নিতেই এ হত্যাকাণ্ডটি ঘটিয়েছে বলে সে জানায়। শুক্রবার (২৬ সেপ্টেম্বর) সকালে সবুজের পাচ্চরের বাসায় অভিযান চালিয়ে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত রক্তমাখা ছুরি (হাসুয়া/কাঁচি) উদ্ধার করে শিবচর থানা পুলিশ। আসামি সবুজের খাটের নীচে লুকিয়ে রাখা ছুরির সাথে রেনু বেগমের বাসা থেকে চুরি হওয়া একটি রাইস কুকারও উদ্ধার করা হয়েছে।
হত্যাকাণ্ডের পর লুট হওয়া দু'টি মোবাইলের একটি (স্যামসাং বাটন ফোন) আসামি সবুজের নিকট থেকে উদ্ধার করা হয়। অপর একটি স্মার্ট ফোন (রিয়েলমি) হত্যাকারী সবুজ খুলনায় এক মোবাইলের দোকানে ৪০০০/- টাকায় বিক্রি করে দিলে, সেটিও খুলনা থেকে উদ্ধার করে শিবচর থানা পুলিশের আরেকটি টিম। ভিকটিম রেনু বেগমকে হত্যার পর তার কানের স্বর্ণের দুল নিয়ে যায় আসামি সবুজ এবং তা ১৪ হাজার টাকায় শিবচরের একটি জুয়েলারি দোকানে বিক্রি করে। সবুজের স্বীকারোক্তি মতে স্বর্ণের কানের দুলগুলোও উদ্ধার করা হয় স্বর্ণের দোকান থেকে। এছাড়াও রেনু বেগমের আলমারী থেকে লুট করে নেয়া ১৫৩০/- টাকাও উদ্ধার করা হয় আসামি সবুজের নিকট থেকে।
আসামি সবুজকে ২৬ সেপ্টেম্বর (শুক্রবার) বিকালে বিজ্ঞ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে হাজির করা হলে সে রেনু বেগমকে জবাই করে হত্যার ঘটনায় ফৌজদারি কার্যবিধি ১৬৪ ধারা মোতাবেক বিজ্ঞ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে। বিষয়টি নিশ্চিত করে প্রেস রিলিজ করেছেন মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অবস) মোঃ জাহাঙ্গীর আলম।
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা-২০২৫ উপলক্ষে সীমান্তবর্তী এলাকা এবং রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের ২,৮৫৭টি পূজামণ্ডপের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে কাজ করছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এর ৪৩০ প্লাটুন সদস্য। সীমান্তবর্তী এলাকাসহ সারাদেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিজিবির ২৪টি বেইজ ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে। উৎসব চলাকালে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে কাজ করছে তারা।
বিজিবির নিরাপত্তাধীন মোট ২,৮৫৭টি পূজামণ্ডপের মধ্যে সীমান্তবর্তী (সীমান্তের ০৮ কিলোমিটারের মধ্যে এবং পার্বত্য এলাকার ১৫টি পূজামণ্ডপসহ) এলাকায় ১,৪১১টি এবং সীমান্তবর্তী এলাকার বাইরে রয়েছে ১,৪৪৬টি পূজামণ্ডপ। বাইরের পূজামণ্ডপসমূহের মধ্যে রাজধানী ঢাকা এবং নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর সিটি করপোরেশন এলাকায় মোট ৪৪১টি; চট্টগ্রাম মহানগরী, রাউজান ও রাঙ্গুনিয়ায় মোট ৬৯৪টি এবং অন্যান্য স্থানে ৩১১টি পূজামণ্ডপ রয়েছে। পূজা উপলক্ষে যেকোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা প্রতিরোধে বিজিবির গোয়েন্দা নজরদারি শক্তিশালী করার পাশাপাশি সীমান্ত এলাকায় বিশেষ টহল পরিচালনা করা হচ্ছে।
বিজিবি সর্বদা জাতীয় শান্তি, নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় অঙ্গীকারবদ্ধ। দেশের জনগণ যাতে নির্বিঘ্নে এবং শান্তিপূর্ণ পরিবেশে দুর্গাপূজা উদযাপন করতে পারে সেলক্ষ্যে বিজিবি সারাদেশে স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী অন্যান্য সংস্থার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সমন্বয়ের মাধ্যমে সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে কাজ করে যাচ্ছে।
ভুটানের প্রধানমন্ত্রী শেরিং তোবগে বাংলাদেশের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) স্বাক্ষর এবং দুই দেশের অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোর মধ্যে সংযোগ স্থাপনে গভীর আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
তিনি বলেন, এ উদ্যোগ বাণিজ্য ও বিনিয়োগকে নতুন মাত্রা দেবে।
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনের ফাঁকে সংস্থাটির সদর দপ্তরে শুক্রবার বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে তোবগে এ প্রস্তাব দেন।
তিনি জানান, ভুটানের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল ‘গেলেপু মাইন্ডফুলনেস সিটি (জিএমসি)’কে কুড়িগ্রামে ভুটানি বিনিয়োগকারীদের জন্য বরাদ্দকৃত বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের সঙ্গে যুক্ত করা গেলে উভয় দেশ ব্যাপকভাবে উপকৃত হবে।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস এই প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, ‘বাংলাদেশ ও ভুটান উন্নত যোগাযোগ, বাণিজ্য ও বিনিয়োগের মাধ্যমে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারে।’
তিনি দুই দেশকে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণের সব সুযোগ অনুসন্ধানের আহ্বান জানান।
ভুটানের প্রধানমন্ত্রী ধর্মীয় পর্যটন প্রসারে তাঁর সরকারের পরিকল্পনার কথাও তুলে ধরেন। তিনি উল্লেখ করেন, বাংলাদেশি বৌদ্ধ ভিক্ষুরা ভুটানে যেতে পারেন, যা পর্যটন বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
তোবগে জানান, ভুটান তাদের জলবিদ্যুৎ সম্ভাবনাকে বাংলাদেশের জন্য কাজে লাগাতে চায়। একই সঙ্গে তিনি জানান, ভুটানের ওষুধশিল্পে বাংলাদেশী বিনিয়োগকে স্বাগত জানাতে আগ্রহী তাঁর সরকার। এছাড়া তিনি ফাইবার অপটিক সংযোগ স্থাপনে বাংলাদেশের সহযোগিতা কামনা করেন।
দুই নেতা রোহিঙ্গা সংকট নিয়েও আলোচনা করেন। ভুটানের প্রধানমন্ত্রী জানান, রোহিঙ্গা ইস্যুতে ৩০ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ আয়োজিত পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে তাঁর দেশ অংশ নেবে।
অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বের প্রশংসা করে তোবগে বলেন, বাংলাদেশ এখন ‘সঠিক নেতৃত্বে রয়েছে। তিনি তাঁকে তাঁর ব্যক্তিক ‘আদর্শ’ উল্লেখ করে শ্রদ্ধাভরে সম্বোধন করেন—‘মাই প্রফেসর।’
ভুটানের প্রধানমন্ত্রী সম্প্রতি থিম্পুতে উদ্বোধন হওয়া বাংলাদেশের নতুন চ্যান্সারি ভবনের নকশারও প্রশংসা করেন, যা ‘হিমালয়ের পাদদেশে বঙ্গোপসাগর’ থিমে নির্মিত হয়েছে।
বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস ভুটানের প্রধানমন্ত্রীকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান। তোবগে আমন্ত্রণ গ্রহণ করে বলেন, তিনি সম্ভবত আগামী ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন হওয়ার আগে এ সফর করবেন।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের (ইউএনজিএ) ৮০তম অধিবেশনে অংশ নিতে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সফরসঙ্গীদের সংখ্যা নিয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) সাম্প্রতিক দাবি ‘ভুল তথ্যের ওপর ভিত্তি করে এবং যাচাইবাছাইবিহীন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের পোস্ট থেকে নেওয়া।’
শুক্রবার নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে প্রেস সচিব উল্লেখ করেন, ‘প্রধান উপদেষ্টার বর্তমান প্রতিনিধি দল অতীতের হাসিনা আমলের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে ছোট এবং অনেক বেশি মনোযোগী, কর্মঠ ও ফলাফলমুখী।’
তিনি বলেন, টিআইবি দীর্ঘদিন ধরে স্বচ্ছতার পক্ষে কাজ করছে এবং একটি মর্যাদাপূর্ণ নাগরিক সমাজ সংগঠন। ‘তবে যাচাই করা তথ্যের পরিবর্তে গুজব ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ভুয়া তথ্যের ওপর নির্ভর করে জনসম্মুখে বিবৃতি দেওয়া হতাশাজনক।’
প্রেস সচিবের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এবারের প্রতিনিধি দলের সদস্য সংখ্যা ৬২—যা টিআইবির দাবি করা ১০০-এর বেশি নয়। গত বছর প্রতিনিধি দলের সদস্য ছিল ৫৭ জন, তবে এতে প্রধান উপদেষ্টার আমন্ত্রণে ভ্রমণ করা ছয়জন বিশিষ্ট রাজনীতিবিদকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি বলেও তিনি পরিষ্কার করেন।
শফিকুল আলম জানান, এবারের সফরসঙ্গীদের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ নিরাপত্তা কর্মকর্তা, যারা প্রধান উপদেষ্টা ও অন্যান্য শীর্ষ কর্মকর্তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দায়িত্ব পালন করছেন। ‘আওয়ামী লীগের সমর্থকদের পক্ষ থেকে আসা প্রকাশ্য হুমকির কারণে এই নিরাপত্তা ব্যবস্থা অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। অনেক কর্মকর্তা প্রতিদিন টানা ১৬ ঘণ্টা পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করছেন’ বলে তিনি উল্লেখ করেন।
তিনি আরও জানান, গত পাঁচ দিনে বাংলাদেশের প্রতিনিধি দল অন্তত এক ডজন উচ্চপর্যায়ের বৈঠক করেছে, যার মধ্যে ছয়টির বেশি রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক অন্তর্ভুক্ত।
প্রেস সচিব বলেন, ‘প্রতিনিধি দলের উদ্দেশ্য হলো জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের মতো বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক আসরে বাংলাদেশের জনগণের স্বার্থ তুলে ধরা, যেখানে বৈশ্বিক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।’
তিনি উল্লেখ করেন, এবারের সাধারণ পরিষদের অধিবেশন বাংলাদেশের জন্য বিশেষ গুরুত্ব বহন করছে, এমন সময়ে যখন ‘বিভিন্ন মহল দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে এবং জুলাই গণঅভ্যুত্থান নিয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছে।’
প্রেস সচিব অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগ ও তাদের সহযোগীরা কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও জুলাই গণঅভ্যুত্থান সম্পর্কে ভুয়া তথ্য ছড়াচ্ছে এবং বিদেশে লবিং করছে, যেখানে কিছু আন্তর্জাতিক মহলের নীরব সমর্থনও রয়েছে।
তিনি জানান, সফরসঙ্গী তালিকায় এমন ব্যক্তিরাও আছেন, যারা আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিতব্য রোহিঙ্গা সম্মেলনে বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করবেন। এটি প্রমাণ করে যে জরুরি মানবিক ও নিরাপত্তা ইস্যুতে ঢাকা নেতৃত্ব অব্যাহত রেখেছে।
এছাড়া কয়েকজন উপদেষ্টা আনুষ্ঠানিক প্রতিনিধি দলের বাইরে থেকেও বৈশ্বিক সমকক্ষদের সঙ্গে বৈঠকে যোগ দিচ্ছেন। পাশাপাশি দেশের জনপ্রিয় রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদেরও এ সফরে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে, যাদের সহায়তায় বেশ কিছু কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করছেন।
প্রেস সচিব বলেন, ‘এই অন্তর্ভুক্তিমূলক পদক্ষেপ স্পষ্ট বার্তা দেয় যে, বাংলাদেশ শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক উত্তরণের প্রতি দৃঢ় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
সূত্র : বাসস
ক্রমবর্ধমান শ্রমশক্তির চাহিদা মেটাতে বাংলাদেশ থেকে দক্ষ ও অদক্ষ কর্মী নিয়োগের ব্যাপারে গভীর আগ্রহ প্রকাশ করেছে আলবেনিয়া।
বৃহস্পতিবার জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনের ফাঁকে জাতিসংঘ সদর দফতরে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে এ প্রস্তাব দেন আলবেনিয়ার প্রেসিডেন্ট বাজরাম বেগাজ।
প্রেসিডেন্ট বেগাজ বলেন, ‘আমাদের দেশে শ্রমশক্তির প্রয়োজন। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি আলবেনীয় কোম্পানি বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগের আবেদন করেছে।’
তিনি জানান, দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা আরও সম্প্রসারিত হতে পারে, বিশেষত পর্যটন খাতে। আলবেনিয়ার দক্ষিণ উপকূলকে সম্ভাবনাময় গন্তব্য হিসেবে তুলে ধরে তিনি বাংলাদেশি পর্যটকদের আমন্ত্রণ জানান।
প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস এই প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, তরুণ ও উদ্যমী কর্মশক্তির কারণে বাংলাদেশ আলবেনিয়ার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে অবদান রাখতে সক্ষম। তিনি আলবেনীয় সরকারকে ভিসা প্রক্রিয়া সহজ করার আহ্বান জানান। বর্তমানে বাংলাদেশি নাগরিকদের ভিসার জন্য নয়াদিল্লি পর্যন্ত যেতে হয় বলেও উল্লেখ করেন।
জবাবে প্রেসিডেন্ট বেগাজ জানান, বাংলাদেশিদের জন্য ই-ভিসা চালুর বিষয়টি আলবেনিয়া বিবেচনা করছে। পাশাপাশি তিনি উচ্চপর্যায়ের সরকারি সফর বিনিময়সহ প্রাতিষ্ঠানিক সম্পৃক্ততা বাড়ানোর ওপর জোর দেন।
প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বৈঠকে বলেন, বাংলাদেশ চিকিৎসক-নার্স থেকে শুরু করে কারখানা ও কৃষিখাতের কর্মীসহ বহুমুখী শ্রমশক্তি সরবরাহে সক্ষম। এ ক্ষেত্রে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের ওপর তিনি গুরুত্বারোপ করেন।
এছাড়া প্রেসিডেন্ট বেগাজ জানান, আলবেনিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ভর্তির বিদ্যমান ব্যবস্থার আওতায় বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের স্বাগত জানাতে প্রস্তুত।
বৈঠকে এসডিজি বিষয়ক সিনিয়র সচিব লামিয়া মোরশেদ উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস আজ (শুক্রবার) জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের (ইউএনজিএ) ৮০তম অধিবেশনে ভাষণ দেবেন।
সূচি অনুযায়ী নিউইয়র্ক স্থানীয় সময় সকাল ৯টায় অধিবেশন শুরু হবে। প্রধান উপদেষ্টা দিনের ১০ম বক্তা হিসেবে ভাষণ দেবেন।
প্রধান উপদেষ্টা তাঁর ভাষণে অন্তর্বর্তী সরকারের নেওয়া সংস্কার কার্যক্রম, ২০২৪ সালের জুলাই মাসের গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা, ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের অঙ্গীকার, জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার এবং রোহিঙ্গা সঙ্কটের বিষয় তুলে ধরবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম বৃহস্পতিবার এক ব্রিফিংয়ে জানান, অধ্যাপক ইউনূস গত ১৪ মাসে অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার কার্যক্রম এবং দেশের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের অগ্রগতি সম্পর্কে বিশ্ব সম্প্রদায়কে জানাবেন।
তিনি আরও বলেন, গণতান্ত্রিক উত্তরণ নিশ্চিত করতে সরকারের নেওয়া উদ্যোগও ভাষণে গুরুত্ব পাবে।
প্রেসসচিবের ভাষায়, ‘মূল বার্তাটি হবে— বিশ্ববাসীর কাছে প্রধান উপদেষ্টা তুলে ধরবেন আগামী বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনটি হবে অবাধ, সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ, বিশ্বাসযোগ্য এবং উৎসবমুখর।’
সূত্র : বাসস
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার ঘনিষ্ঠদের বিচার অন্তর্বর্তী সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে গত বুধবার ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার স্টাবের সঙ্গে বৈঠকে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে সংস্থার সদর দপ্তরে দেশের রাষ্ট্র বা সরকার প্রধানদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় গতকাল বৃহস্পতিবার তিনি নেদারল্যান্ডসের প্রধানমন্ত্রী ডিক স্কুফ এবং এর আগে গত বুধবার পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ, ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি, ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার স্টাব ও কসোভোর প্রেসিডেন্ট ভিওসা ওসমানির সঙ্গে বৈঠক করেন।
ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আন্তর্জাতিক আইনমান অনুসরণ করেই এই বিচার পরিচালিত হচ্ছে। বিচারাধীন থাকা সত্ত্বেও তিনি (হাসিনা) উসকানিমূলক ও অস্থিতিশীলতা সৃষ্টিকারী মন্তব্য করছেন। তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য আমরা প্রত্যর্পণ চেয়েছি।’
বৈঠকে বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় নির্বাচন, জাতিসংঘ সংস্কার, রোহিঙ্গা সংকট, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, আসিয়ানভুক্তির প্রচেষ্টা, শেখ হাসিনা ও তার সহযোগীদের বিচার এবং নেপাল-ভুটান থেকে জলবিদ্যুৎ পাওয়ার উদ্যোগসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়।
এ সময় অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অব্যাহত সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘গত ১৪ মাসে আমরা (অন্তর্বর্তী সরকার) অভূতপূর্ব আন্তর্জাতিক সমর্থন পেয়েছি।’
তিনি জানান, অন্তর্বর্তী সরকার আগামী ফেব্রুয়ারিতে অবাধ, সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘গত ১৫ বছর ধরে আমাদের জনগণ অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন থেকে বঞ্চিত হয়েছে। এখন তারা ফেব্রুয়ারির জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন।’
বাংলাদেশে বড় ধরনের রাজনৈতিক ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার চলছে এবং রাজনৈতিক দলগুলো জুলাই চার্টারে সই করবে বলে আশা করা হচ্ছে বলেও ফিনিশ প্রেসিডেন্টকে জানান তিনি।
অধ্যাপক ইউনূসের বৈঠক ও শেহবাজ শরীফের মধ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠকে দুই নেতা বাংলাদেশের আসন্ন সাধারণ নির্বাচন, অন্তর্বর্তী সরকারের গৃহীত সংস্কার কার্যক্রম, পাকিস্তানে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া বিধ্বংসী বন্যা, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ এবং আঞ্চলিক সহযোগিতার সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেন।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস পাকিস্তানে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া বন্যায় এক হাজারের বেশি মানুষের প্রাণহানির জন্য গভীর শোক প্রকাশ এবং আন্তরিক সমবেদনা জ্ঞাপন করেন। প্রধানমন্ত্রী শরীফ বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ক্রমবর্ধমান প্রভাবের কারণে এ ধরনের বিপর্যয়ের সংখ্যা ও তীব্রতা বাড়ছে।
অধ্যাপক ইউনূস জানান, বাংলাদেশে ফেব্রুয়ারি মাসে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তিনি ১১টি কমিশনের প্রস্তাবিত গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার দেশকে অর্থবহ রাজনৈতিক রূপান্তরের দিকে নিয়ে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন।
অধ্যাপক ইউনূস উল্লেখ করেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ও রাজনৈতিক দলের মধ্যে আলোচনা শেষ পর্যায়ে রয়েছে এবং দলগুলো ‘জুলাই সনদে’ স্বাক্ষর করবে, যেখানে সাংবিধানিক ও রাজনৈতিক সংস্কারের বিষয়বস্তুগুলো অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
উভয় নেতা আলোচনা করেন যে সম্প্রতি কয়েক বছরে সার্ক কার্যত নিস্ক্রিয় হয়ে পড়ায় আঞ্চলিক সহযোগিতা বাড়ানোর বিকল্প উপায় অনুসন্ধান করা উচিত।
প্রধানমন্ত্রী শরীফ ড. ইউনূসকে অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে পাকিস্তান সফরের আমন্ত্রণ জানান।
ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনির সঙ্গে অধ্যাপক ইউনূস ইতালি-বাংলাদেশ বিজনেস ফোরাম গঠনের প্রস্তাব দেন, যার উদ্দেশ্য বাংলাদেশে ইতালিয়ান বিনিয়োগ সম্প্রসারণ করা।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস এ প্রস্তাবকে স্বাগত জানান এবং বলেন দুই দেশের দীর্ঘদিনের সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতা বিস্তারের বড় সম্ভাবনা রয়ে গেছে।
উভয় নেতা বৈঠকে বাংলাদেশের আসন্ন সাধারণ নির্বাচন, অভিবাসন চ্যালেঞ্জ, রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকট এবং আগামী ডিসেম্বরে প্রধানমন্ত্রী মেলোনির বাংলাদেশে সম্ভাব্য সফর নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন।
অভিবাসন বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী মেলোনি ইতালির পক্ষ থেকে ঢাকার সঙ্গে গঠনমূলকভাবে কাজ করার ইচ্ছে প্রকাশ করেন, যাতে দুদেশের জন্য নিরাপদ অভিবাসনের পথ নিশ্চিত করা যায়।
তিনি মানবপাচারের বিরুদ্ধে শক্তিশালী ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা পুনর্ব্যক্ত করেন, যা ভূমধ্যসাগরে শত শত মানুষের প্রাণহানির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস জানান, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার ইতোমধ্যেই মানবপাচারের বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীলতা নীতি গ্রহণ এবং নিরাপদ অভিবাসনের জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ কার্যকর করেছে।
তিনি বলেন, ‘মানবপাচার রোধে আরও সমন্বিত আন্তর্জাতিক উদ্যোগের প্রয়োজন।’
বাংলাদেশে রাজনৈতিক রূপান্তরের প্রসঙ্গে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, দেশ ফেব্রুয়ারি মাসে সাধারণ নির্বাচন আয়োজনের পথে রয়েছে, এরপর তিনি তার পূর্ববর্তী ভূমিকায় ফিরে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন।
প্রধানমন্ত্রী মেলোনি অধ্যাপক ইউনূসের গত ১৪ মাসের অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্বের প্রশংসা এবং নিশ্চিত করেন যে ইতালি ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্যতম দেশ যারা বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ নির্বাচনের জন্য সমর্থন জানাবে।
দুই নেতা রোহিঙ্গা সংকট নিয়েও গঠনমূলক আলোচনা করেন। অধ্যাপক ইউনূস বাংলাদেশে আশ্রয়প্রাপ্ত এক মিলিয়নেরও বেশি রোহিঙ্গার জন্য আন্তর্জাতিক সহায়তা বাড়ানোর আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী মেলোনি আগামী সপ্তাহে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত রোহিঙ্গা সংকটবিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল পাঠানোর অঙ্গীকার করেন।
সূত্র: বাসস/ইউএনবি
আগামী ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথমার্ধে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন করার জন্য চূড়ান্ত প্রস্তুতি চলছে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন।
আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে নিজ কার্যালয়ে এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।
সিইসি এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেন, ‘ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন করার জন্য আমাদের চূড়ান্ত প্রস্তুতি চলছে।
আগামী বছর রমজানের আগে ফেব্রুয়ারি মাসে প্রথমার্ধে নির্বাচন করার জন্য যা যা প্রস্তুতি নেওয়া দরকার, আমরা জোরে-সোরে নিচ্ছি।’
সিইসি বলেন, ‘আমাদের মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা এখন নিউইয়র্কে আছেন। আপনারা দেখেছেন, যার সাথে উনি দেখা করছেন তাকেই বলছেন যে, আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে। আমি গণতান্ত্রিক পন্থায় ক্ষমতা হস্তান্তর করতে চাই। একটা সুন্দর নির্বাচন, ঐতিহাসিক নির্বাচন দিতে চাই। উনার ওই কথাগুলোকে বাস্তবায়ন করার জন্যই আমরা কিন্তু কাজ করছি। একবার একটা ঐতিহাসিক নির্বাচন যাতে হয়। আর এই ঐতিহাসিক নির্বাচন কিন্তু আপনাদের (গণমাধ্যম) ছাড়া পারবো না। আমরা যতো ভালোই করি না কেন, এখন আপনারা যদি উল্টোটা বলেন, তাহলে সব শেষ, বরবাদ হয়ে যাবে।’
গণমাধ্যমের সহযোগিতা প্রয়োজন উল্লেখ করে সিইসি বলেন, ‘আপনাদের (গণমাধ্যমের) সহযোগিতা লাগবে।
আমাদের আন্তরিকতা নিয়ে আপনারা একটু মানুষকে বুঝাবেন। আমরা কারো কথায় চলতে চাই না। আমরা বিবেকের তাড়নায় চলি। আইন অনুযায়ী চলতে চাই। সংবিধান অনুযায়ী চলতে চাই এবং একটা সরল সোজা পথে চলতে চাই, কোনো বাঁকা পথে নয়। কাউকে কোনো ফেভার করার জন্য না। নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে চাই। এই জিনিসটা, আমাদের বক্তব্যটা আপনারা সবার কাছে একটু তুলে ধরবেন।’
রাজনৈতিক দলের সহযোগিতা ছাড়া সুন্দর নির্বাচন করা সম্ভব নয় উল্লেখ করে সিইসি বলেন, রাজনৈতিক দল হলো আমাদের মূল স্টেকহোল্ডার। তাদের সহযোগিতা ছাড়া সুন্দর নির্বাচন করা সম্ভব নয়।
দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার মন্তব্য প্রতিবেদন উল্লেখ করে সিইসি বলেন, সব খেলোয়াড়রা যদি ফাউল করার নিয়তে মাঠে নামে তাহলে রেফারির পক্ষে তো এই ম্যাচ পণ্ড হওয়া থেকে রক্ষা করা সম্ভব না। সুতরাং খেলোয়াড়দের তো ফাউল করার নিয়ত থেকে একটু দূরে থাকতে হবে।
তিনি বলেন, যাতে ফাউল না করতে পারেন তার যাবতীয় ব্যবস্থা আমরা নিব ইনশাআল্লাহ। আমি বিশ্বাস করি আমাদের যারা স্টেক হোল্ডার যারা খেলবেন ইলেকশনের মাঠে, তারা সব ফাউল করার নিয়তে নামবেন না।
তারা একটা সুন্দর নির্বাচনের নিয়তেই নামবেন। একটা ভালো নির্বাচনের নিয়তে নামবেন, এ বিশ্বাস আমার আছে। কারণ, একটা বিশাল বিপ্লবের মধ্য দিয়ে আমরা কিন্তু এই অবস্থায় আছি। একটা ক্রান্তি লগ্নে আছি।
উনারা জানেন, সুতরাং কেউ আমাকে কেউ এ পর্যন্ত বলেন নাই যে, আমি ফাউল খেলার নিয়তে ইলেকশনে যাব। ইলেকশনে ভোট ডাকাতি করব, সন্ত্রাস করব এমন কেউ বা কোনো রাজনীতিবিদ বলেন নাই। সুতরাং আমি ধরে নিচ্ছি যে, উনারা সুন্দরভাবে সহযোগিতা করবে। তবে সরকার উনাদের সাথে আলাপ আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন।
তিনি আরো বলেন, চার থেকে পাঁচ জন নেতা আমেরিকাও গেছেন। মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার সাথে ওখানেও তো আলাপ-আলোচনা করার একটা সুযোগ পাবেন। আমার কিন্তু আমাদের রাজনীতিবিদদের ওপর আস্থা আছে। এটা আমার সব সময় ছিল।
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের দুর্গাপূজা উপলক্ষে সোনামসজিদ স্থলবন্দর দিয়ে টানা ৮ দিন আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম বন্ধ থাকবে।
আগামীকাল ২৬ সেপ্টেম্বর (শুক্রবার) থেকে ৩ অক্টোবর (শুক্রবার) পর্যন্ত দেশের দ্বিতীয় বৃহতম এই স্থলবন্দরে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম বন্ধ থাকবে।
আগামী ৪ অক্টোবর (শনিবার) থেকে যথারীতি বন্দরে আমদানি-রফতানি কার্যক্রম পুনরায় চালু হবে। তবে সোনামসজিদ ইমিগ্রেশন পথে ভিসাপ্রাপ্ত যাত্রীদের যাতায়াত প্রতিদিনই চালু থাকবে বলে বন্দর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
সোনামসজিদ বন্দর পরিচালনাকারী পানামা পোর্ট লিংক লিমিটেডের অপারেশন ম্যানেজার কামাল খান জানান, বন্দর কাস্টমস গতকাল বুধবার দুপুরে পত্র দিয়ে জানিয়েছে যে, এবছর দুর্গাপূজা উপলক্ষে সরকারি ছুটি হওয়ায় ১ এবং ২ অক্টোবর বন্দরে আমদানি ও রফতানি সংক্রান্ত সব কার্যক্রম বন্ধ থাকবে।
অপরদিকে সোনামসজিদের বিপরীতে ভারতের মহদিপুর রপ্তানিকারক সমিতি গতকাল বুধবার পত্র দিয়ে জানিয়েছে যে, দুর্গাপূজা উপলক্ষে ২৭ সেপ্টেম্বর থেকে ২ অক্টোবর পর্যন্ত বন্দরের সব কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। তিনি আরও জানান, আগামী ২৬ সেপ্টেম্বর ও ৩ অক্টোবর শুক্রবার বন্দরের সাপ্তাহিক ছুটি। ফলে সব মিলিয়ে টানা ৮ দিন বন্দরে কোনো আমদানি ও রপ্তানি করা হবে না।
সোনামসজিদ স্থলবন্দর সিএন্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের অহ্বায়ক মোস্তাফিজুর রহমান কাস্টমস ও মহদিপুর রপ্তানিকারক সমিতির পত্র পাওয়ার কথা জানিয়ে বলেন, বন্ধের মধ্যে বন্দরের অভ্যন্তরীণ পণ্য লোড, আনলোড, পরিবহন, গুদামজাতকরণসহ কিছু নিজস্ব কার্যক্রম চালু থাকবে। সরকারি ছুটির দিন ব্যতীত কাস্টমস খোলা থাকবে। সোনামসজিদ ও মহদিপুর ইমিগ্রেশন পথে পাসপোর্টধারীদের যাতায়াত প্রতিদিনই যথারীতি অব্যাহত থাকবে।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিগুলোকে বাংলাদেশে আরও বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন।
বুধবার নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিত যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ এক্সিকিউটিভ বিজনেস গোলটেবিল আলোচনায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি এ আহ্বান জানান।
‘অ্যাডভান্সিং রিফর্ম, রেজিলিয়েন্স অ্যান্ড গ্রোথ’ শীর্ষক এ আলোচনার আয়োজন করে ইউএস-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিল (ইউএসবিবিসি)।
প্রধান উপদেষ্টা অনুষ্ঠানে মেটলাইফ, শেভরন এবং এক্সেলেরেটসহ শীর্ষ মার্কিন কোম্পানিগুলোকে বাংলাদেশে নতুন বিনিয়োগের সুযোগ কাজে লাগানোর আহ্বান জানান।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম পরে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
শফিকুল আলম বলেন, প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র সফরে আসা বাংলাদেশের ছয়জন রাজনৈতিক নেতা সভায় উপস্থিত ছিলেন এবং তাদেরকে মার্কিন শীর্ষ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়।
নরসিংদীর পলাশ উপজেলার ঘোড়াশাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিটের চেষ্টায় ১ ঘণ্টা পর আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে বলে জানানো হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) ভোর সাড়ে ৪টার দিকে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ট্রান্সফরমারে এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।
পলাশ ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন অফিসার আব্দুল শহিদ জানান, আজ (বৃহস্পতিবার) ভোরে ঘোড়াশাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের একটি ১৩২-৩৩ কেভির ট্রান্সফরমারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। তারা খবর পেয়ে ভোর ৫টার দিকে ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। পরে ২টি ইউনিটের ১ ঘণ্টায় চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। আগুনে ট্রান্সফরমারটি পুড়ে গেছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
শহিদ আরও বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে শর্ট সার্কিট থেকে এ অগ্নিকাণ্ড ঘটে থাকতে পারে। তদন্ত সাপেক্ষে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ পরে জানা যাবে।
এদিকে, ভোরে অগ্নিকাণ্ডের পর থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত পলাশ উপজেলা ও পাশ্ববর্তী কালীগঞ্জ বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ে। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হয়।
ঘোড়াশাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রধান প্রকৌশলী এনামুল হকের কাছে অগ্নিকাণ্ডের বিষয়ে জানতে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে ব্যস্ততার কারণ দেখিয়ে তিনি পরে ফোন দিতে বলেন।
বাংলাদেশে গত একদিনে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে আরো পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে; এ নিয়ে এ বছর মশাবাহিত এ রোগে মোট ১৮৭ জনের প্রাণ গেল।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গতকাল বুধবারের বুলেটিনে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৬৬৮ জন রোগী। তাতে এ বছর হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৩ হাজার ৮৪১ জনে।
গত একদিনে মৃত ব্যক্তিদের মধ্যে দুজন মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটে এক জন করে চিকিৎসাধীন ছিলেন।
তাদের মধ্যে দুজনের বয়স ৬০ বছর। বাকিদের বয়স হয়েছিল যথাক্রমে ৫০, ৫৫ এবং ১২ বছর। তাদের তিনজন নারী, দুজন পুরুষ।
গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্তদের নিয়ে সেপ্টেম্বর মাসে ভর্তি রোগীর সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১২ হাজার ৩৬৫ জন, যা এ বছরের সর্বোচ্চ। এর আগে জুলাই মাসে ১০ হাজার ৬৮৪ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল।
এছাড়া জানুয়ারিতে ১১৬১ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৩৭৪ জন, মার্চে ৩৩৬ জন, এপ্রিলে ৭০১ জন, মে মাসে ১৭৭৩ জন, এছাড়া জুন মাসে ৫৯৫১ জন, অগাস্টে ১০ হাজার ৪৯৬ জন ডেঙ্গুরোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন।
এ বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে সবচেয়ে বেশি ৬৫ জনের মৃত্যুও হল সেপ্টেম্বর মাসে। এর আগে জুলাই মাসে ৪১ জনের মৃত্যু হয়েছিল ডেঙ্গু জ্বরে।
এছাড়া জানুয়ারিতে ১০ জন, ফেব্রুয়ারিতে তিন জন, এপ্রিলে সাত জন, মে মাসে তিন জন, জুন মাসে ১৯ জন, অগাস্ট মাসে ৩৯ জন মারা যান। মার্চ মাসে কোনো রোগীর মৃত্যু হয়নি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বুলেটিনে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ভর্তি নতুন রোগীদের মধ্যে ১৬৭ জনই ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকায়।
এছাড়া ঢাকা বিভাগে ১২৬ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ৩০ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ১০৬ জন, খুলনা বিভাগে ৪১ জন, রাজশাহী বিভাগে ৩৫ জন, রংপুর বিভাগে পাঁচ জন এবং বরিশাল বিভাগে ১৫৮ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন।
ডেঙ্গু নিয়ে বর্তমানে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন ২০১৬ জন রোগী। তাদের মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ৭৫৭ জন, ঢাকার বাইরের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি ১২৫৯ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ও মৃত্যুর তথ্য রাখে ২০০০ সাল থেকে। এর মধ্যে ২০২৩ সালে এ রোগ নিয়ে সবচেয়ে বেশি ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়। ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে সবচেয়ে বেশি ১৭০৫ জনের মৃত্যুও হয় ওই বছর।
সাত কলেজকে গিনিপিগ বানিয়ে কলেজের নাম বা কাঠামো পরিবর্তন করে প্রস্তাবিত সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি গঠন করা যাবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন কলেজের শিক্ষকরা।
গতকাল বুধবার দুপুরে ঢাকা কলেজের সামনে ‘বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতি’র পক্ষ থেকে আয়োজিত এক মানববন্ধনে এই হুঁশিয়ারি দেন বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তারা।
তারা বলেন, সেন্ট্রাল বিশ্ববিদ্যালয় সাত কলেজ গিলে ফেলতে চাইছে। প্রস্তাবিত খসড়ায় সাত কলেজে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও কর্মচারীদের স্বার্থ চরমভাবে ক্ষুণ্ন হয়েছে। এ সময়, সরকারের এমন কর্মকাণ্ডে গভীর উদ্বেগ জানান তারা। কলেজগুলোর ঐতিহ্য উচ্চ মাধ্যমিক স্তর। উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের স্বার্থবিরোধী কোনো সিদ্ধান্ত শিক্ষকরা গ্রহণ করবে না। সেইসঙ্গে, সাত কলেজের নাম বা কাঠামো পরিবর্তন করে কোনো অনুষদে অথবা স্কুলে রূপান্তর করা যাবে না বলেও স্পষ্ট হুঁশিয়ারি দেন তারা।
মানববন্ধনে শিক্ষকরা বলেন, ‘ঢাকার সাত কলেজকে কেন্দ্র করে প্রস্তাবিত সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির কাঠামো কেমন হবে, তা নিয়ে আমরা সাত কলেজে কর্মরত শিক্ষকরা স্বীর্ঘদিন ধরে আলোচনা করে আসছি। এ বিষয়ে আমরা ইতোমধ্যে ইউজিসি, শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সকল কর্তৃপক্ষকে স্মারকলিপি প্রদান করেছি এবং আমাদের উদ্বেগের বিষয়গুলো স্পষ্টভাবে জানিয়েছি। অথচ দুঃখজনকভাবে দেখা গেল যে আমাদের উদ্বেগ ও প্রস্তাবকে কোনো গুরুত্ব না দিয়েই বিশ্ববিদ্যালয়ের খসড়া প্রস্তাব প্রকাশ করা হয়েছে। প্রকাশিত খসড়ায় সাত কলেজে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী, কলেজে কর্মরত শিক্ষক ও কর্মচারীদের স্বার্থ মারাত্মকভাবে স্বপ্ন হয়েছে।’
এর পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষকরা লিখিত বক্তব্যে ৮ দফা দাবি উত্থাপন করেন।
বক্তব্যে শিক্ষকরা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রস্তাবিত কাঠামো অনুযায়ী বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের সদস্যগণ ঢাকা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও প্রশাসনিক কাঠামোর অন্তর্ভুক্ত না হওয়ায় যেসব শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা প্রস্তাবিত কাঠামো অনুযায়ী ঢাকা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, তাদের একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনা করার আইনি ভিত্তি বিসিএস শিক্ষকদের নেই।
এ সময় খসড়া অধ্যাদেশে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার সদস্যদের অবস্থান নিশ্চিত না করলে তারা ঢাকা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো কার্যক্রম পরিচালনা করবেন না বলে হুঁশিয়ারি প্রদান করেন।
তবে যেসব শিক্ষাবর্ষ ঢাকা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্ভুক্ত নয়, তাদের কার্যক্রম যথারীতি চলমান থাকবে বলেও জানান তারা।