তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. মাহফুজ আলম বলেছেন, আবরার ফাহাদের শাহাদত জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে বড় প্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে। তাঁর আত্মত্যাগ বৃথা যায়নি। তাঁর শাহাদতের ফলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভিন্ন মত প্রকাশের সুযোগ তৈরি হয়েছে, যা শিক্ষার্থীরা কাজে লাগিয়েছে।
আজ মঙ্গলবার শাহবাগের জাতীয় জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তনে শহীদ আবরার ফাহাদের ষষ্ঠ শাহাদতবার্ষিকী উপলক্ষ্যে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানভিত্তিক প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধনী পর্বে তিনি এসব কথা বলেন। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় এই প্রদর্শনীর আয়োজন করে।
বিগত সরকারের ১৬ বছরের দুঃশাসনের সমালোচনা করে উপদেষ্টা বলেন, ওই সময় আবরার ফাহাদের মতো হাজারো শিক্ষার্থী নিপীড়নের শিকার হয়েছেন। অনেকে মৃতপ্রায় অবস্থায় বেঁচে গেছেন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কিছু সদস্য নিজেই শিক্ষার্থীদের পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছেন। কারাগারে ভিন্ন মতাবলম্বী শিক্ষার্থীদের চিকিৎসা দেওয়া হয়নি। হলগুলো থেকে শিবিরের নামে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মারধর করে বের করে দেওয়া হতো।
তিনি বলেন, আবরার ফাহাদের শাহাদতের গভীর তাৎপর্য রয়েছে, যা অনুধাবন করা জরুরি।
উপদেষ্টা বলেন, ‘শেখ হাসিনা যে ভুল করেছেন, আমরা সেই ভুল করতে চাই না। ফ্যাসিজম যে প্রক্রিয়ায় তৈরি হয়, আমরা সেই পথে যেতে চাই না।’
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের শক্তির মধ্যে বিভাজনকে অপ্রত্যাশিত ও দুঃখজনক আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, বিভাজন এড়িয়ে নাগরিকদের জন্য নিরাপদ রাষ্ট্র ও সরকারব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় কাজ করতে হবে।
নিজেকে রাষ্ট্র গড়ার পক্ষের লোক হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদী সাংস্কৃতিক ব্যবস্থার বিপরীতে জনগণের সামনে একটি ভালো বিকল্প উপস্থাপন করতে হবে। তা না হলে জনগণ আবার পুরাতন ব্যবস্থায় ফিরে যাবে।
তিনি বলেন, আমাদের দীর্ঘ সাংস্কৃতিক লড়াই চালিয়ে যেতে হবে। বহু ভাষা, বহু সংস্কৃতি ও বহু ঐতিহ্যের বাংলাদেশ গড়ে তুলতে সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।
অনুষ্ঠানে সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেন, ‘২০১৯ সালে বুয়েটে ছাত্রলীগের গুণ্ডারা আবরার ফাহাদকে হত্যা করেছে। তারা ভেবেছিল, তাঁকে হত্যা করে আধিপত্যবিরোধী কণ্ঠ স্তব্ধ করা যাবে। কিন্তু ইতিহাস বলে, এমন কণ্ঠ কখনো স্তব্ধ হয় না।’
তিনি বলেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী প্রত্যেকে আবরার ফাহাদের হৃৎস্পন্দন ধারণ করেছেন। তিনি তাঁর আত্মত্যাগকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ন্যারেটিভ তৈরির প্রসঙ্গে তিনি বলেন, গণ-অভ্যুত্থানপরবর্তী সময়ের অন্যতম কাজ হলো জুলাইয়ের ন্যারেটিভ তৈরি করা। পাশাপাশি বিগত সরকারের ১৬ বছরের দুঃশাসনের ন্যারেটিভও তৈরি করতে হবে। সাংস্কৃতিক বৈষম্যকে ফ্যাসিবাদের অন্যতম কারণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ধর্ম ও রাজনৈতিক বিশ্বাসের কারণে কাউকে আলাদা করা যাবে না। সকল জাতিগোষ্ঠীকে একত্রিত করতে হবে।
তিনি বলেন, আমাদের এমন এক বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে, যা ইতিহাসের সব অধ্যায়কে ধারণ করবে। তিনি ‘বাংলাদেশ’ ও ‘বাংলাদেশপন্থা’য় এক থাকার আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব মাহবুবা ফারজানা।
উদ্বোধনী পর্ব শেষে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানভিত্তিক প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়। সন্ধ্যায় একই স্থানে ‘চলচ্চিত্রে জুলাই’ শীর্ষক প্যানেল আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়, এতে অংশ নেন জুলাই গণ-অভ্যুত্থান নিয়ে নির্মিত ও নির্মিতব্য চলচ্চিত্রের নির্মাতা ও কলাকুশলীরা। অনুষ্ঠানে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় এবং এর অধীনস্থ দপ্তর-সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
আজ ৭ ডিসেম্বর সাতক্ষীরাবাসীর জীবনে এক মহিমান্বিত দিন। ১৯৭১ সালের এই দিনে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর কবল থেকে সাতক্ষীরা সম্পূর্ণ মুক্ত ঘোষণা করা হয়। দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ, অসংখ্য ত্যাগ, মুক্তিযোদ্ধার আত্মোৎসর্গ এবং সাহসিকতার ফলেই অর্জিত হয় এই গৌরবময় বিজয়।
১৯৭১ সালের এই দিনে সাতক্ষীরার দামাল ছেলেরা থ্রি নট থ্রি আর এসএলআরের ফাঁকা গুলি ছুড়তে ছুড়তে সাতক্ষীরা শহরে প্রবেশ করেন। ওড়ানো হয় স্বাধীন বাংলার পতাকা।
৯নং সেক্টরের অধীনে মুক্তিযুদ্ধের শুরু থেকেই সাতক্ষীরা ছিল প্রতিরোধ সংগ্রামের প্রধান ক্ষেত্র। পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের দোসর রাজাকার-আলবদররা এ অঞ্চলে ভয়াবহ নির্যাতন, লুটপাট ও হত্যাযজ্ঞ চালায়। তবে বীর মুক্তিযোদ্ধারা জীবনবাজি রেখে প্রতিটি আক্রমণের জবাব দেন। সংগঠিত প্রতিরোধের মাধ্যমে ক্রমান্বয়ে সাতক্ষীরার বিভিন্ন এলাকা টাউনশ্রীপুর, ভোমরা, সাতক্ষীরা সদর শত্রুমুক্ত হতে থাকে।
১৯৭১ সালের ৭ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা সমন্বিত আক্রমণে পাকিস্তানি বাহিনীকে পরাজিত করে সাতক্ষীরা জেলার নিয়ন্ত্রণ নেন। এদিন সাতক্ষীরার আকাশে উড়েছিল স্বাধীন বাংলার পতাকা। মানুষের মুখে ফুটে ওঠে আনন্দের উচ্ছ্বাস-হানাদারমুক্ত স্বভূমিতে ফিরে আসার উষ্ণতার অনুভূতি।
সাতক্ষীরাকে মুক্ত করতে শহীদ নাজমুল, শহীদ কাজলদের মতো যারা আত্মোৎসর্গ করেছেন, তারা জাতির ইতিহাসে চিরস্মরণীয়। তাদের মহান ত্যাগের বিনিময়েই আজকের এই স্বাধীন মাটি, স্বাধীন দেশ।
মুক্তিযোদ্ধা মিজানুর রহমান জানান, মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার জন্য সাতক্ষীরা ট্রেজারি থেকে অস্ত্র লুট আর ন্যাশনাল ব্যাংক থেকে অলঙ্কার ও টাকা-পয়সা লুটের মধ্য দিয়ে শুরু মুক্তির সংগ্রাম। অষ্টম ও নবম সেক্টরের অধীনে ভারতের বিভিন্ন এলাকায় ট্রেনিং শেষে ২৯ এপ্রিল সাতক্ষীরার ভোমরা সীমান্তে প্রথম সম্মুখযুদ্ধ শুরু হয়। এ সময় পাকসেনাদের ২ শতাধিক সৈন্য নিহত হয়। ১৭ ঘণ্টাব্যাপী এ যুদ্ধে শহীদ হন মাত্র ৩ জন মুক্তিযোদ্ধা। আহত হন ২ জন। এরপর থেমে থেমে চলতে থাকে সাতক্ষীরার বিভিন্ন এলাকায় মুক্তিযোদ্ধাদের গুপ্ত হামলা। এসব যুদ্ধের মধ্যে ভোমরার যুদ্ধ, টাউনশ্রীপুর যুদ্ধ, বৈকারী যুদ্ধ, খানজিয়া যুদ্ধ উল্লেখযোগ্য। এ সব যুদ্ধে শহীদ হন সাতক্ষীরার ৩৩ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা। সন্তান হারানোর বেদনা ভুলে সেদিন মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে রাস্তায় নেমে আসেন সাতক্ষীরার মুক্তিপাগল আপামর জনতা।
বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সাতক্ষীরা ইউনিটের আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা সম শহিদুল ইসলাম জানান, ১৯৭১ সালের ২ মার্চ সাতক্ষীরা শহরে পাকিস্তানবিরোধী মিছিলে রাজাকাররা চাপড়া লজের সামনে গুলি করে হত্যা করে শহীদ আব্দুর রাজ্জাককে। আর সেখান থেকে শুরু হয় সাতক্ষীরার দামাল ছেলেদের মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়া। ২৯ এপ্রিল সাতক্ষীরার ভোমরা সীমান্তে প্রথম সম্মুখযুদ্ধ শুরু হয়।
মুক্তিযোদ্ধারা ওয়্যার হাউস উড়িয়ে দেন। এতে ব্যাপক ভীত-সন্ত্রস্ত হয় পাকসেনারা। রাতের আঁধারে বেড়ে যায় গুপ্ত হামলা। পিছু হটতে শুরু করে পাকসেনারা। ৬ ডিসেম্বর রাতে মুক্তিযোদ্ধাদের হামলায় টিকতে না পেরে বাঁকাল, কদমতলা ও বিনেরপোতা ব্রিজ উড়িয়ে দিয়ে পাকবাহিনী সাতক্ষীরা থেকে পালিয়ে যায়। ৭ ডিসেম্বর জয়ের উন্মাদনায় মেতে ওঠেন সাতক্ষীরার দামাল ছেলেরা।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শাহাদাত বরণকারী ১১৪ জনের পরিচয় শনাক্ত করতে, রায়েরবাজার কবরস্থান থেকে লাশ উত্তোলন করা শুরু করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। রবিবার (৭ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে সিআইডির প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মো. ছিবগাত উল্লাহ এ তথ্য জানান।
রবিবার সকাল থেকে মরদেহ উত্তোলনের কাজ শুরু করেছে সংস্থাটি। মরদেহগুলো তোলার পর ময়নাতদন্ত ও ডিএনএ নমুনা নিয়ে আবার যথাযথ প্রক্রিয়ায় দাফন করা হবে।
ছিবগাত উল্লাহ বলেন, ‘এই কবরস্থানে যারা নাম-পরিচয়হীন অবস্থায় শুয়ে আছেন, তাদের পরিচয় তখন যাচাই-বাছাই করা হয়নি। তাদের পরিচয় উদঘাটন করা জাতির প্রতি আমাদের একটি দায়িত্ব। আজ সেই মহান কাজের সূচনা হলো।’
জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থার (ওএইচসিএইচআর) মাধ্যমে আর্জেন্টিনা থেকে ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ লুইস ফন্ডিব্রাইডার ঢাকায় এসে পুরো কার্যক্রমে নেতৃত্ব দিচ্ছেন বলে জানান তিনি।
তিনি আরো বলেন, ‘এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে একাধিক বৈঠক হয়েছে। এ ব্যাপারে অজ্ঞাত শহীদদের পরিবার আবেদন করেছে। বিজ্ঞ আদালতের নির্দেশে এসব কাজ পরিচালিত হচ্ছে। আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুসরণ করে কবরস্থান থেকে ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য লাশ উত্তোলন করা হচ্ছে।’
সিআইডি প্রধান বলেন, ‘লাশ শনাক্তের জন্য ইতিমধ্যে ১০ জন আবেদন করেছেন। তবে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, এখানে শহীদের সংখ্যা ১১৪ জনের বেশি। প্রকৃত সংখ্যা লাশ উত্তোলনের পর জানা যাবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘লাশগুলোর পোস্টমর্টেম করা হবে এবং ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হবে। পরে ডিএনএ প্রোফাইল তৈরি করে ধর্মীয় সম্মান বজায় রেখে পুনঃদাফন করা হবে।’
মো. ছিবগাত উল্লাহ বলেন, ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদদের পরিচয় শনাক্ত হলে, পরিবার চাইলে লাশ তাদের কাছে হস্তান্তর করা হবে। ডিএনএ সংগ্রহের পর, যে কেউ আবেদন করলে সহজেই শনাক্ত করা যাবে। সিআইডির হটলাইন নম্বরগুলো জানিয়ে দেওয়া হবে, যাতে যে কেউ যোগাযোগ করতে পারেন।’
গত ৪ আগস্ট মোহাম্মদপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মাহিদুল ইসলামের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান ১১৪টি মরদেহ উত্তোলনের নির্দেশ দেন। আদালতের আদেশ অনুযায়ী, ২০২৪ সালের জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানে নিহত অজ্ঞাত ব্যক্তিদের পরিচয় শনাক্তের জন্যই এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। গত বছর বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় নিহত ১১৪ জন শহিদকে অজ্ঞাত পরিচয়ে মোহাম্মদপুরের রায়েরবাজার কবরস্থানে দাফন করা হয়।
কক্সবাজারের টেকনাফ উপকূলঘেঁষা দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিনকে প্লাস্টিক দূষণমুক্ত রাখতে দুই দিনব্যাপী ব্যাপক পরিচ্ছন্নতা কর্মসূচি পরিচালনা করেছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন কেওক্রাডং বাংলাদেশ। দ্বীপের অলিগলি, সৈকত ও জনসমাগম এলাকা থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে প্রায় ১ হাজার ৮৫০ কেজি অপচনশীল বর্জ্য। সংগৃহীত এসব বর্জ্য নৌপথে এনে পরে টেকনাফে পরিবেশবান্ধবভাবে অপসারণ করা হয়।
জানা যায়, শুক্রবার শুরু হয়ে শনিবার বিকেলে শেষ হওয়া এ অভিযানে স্থানীয় বাসিন্দা, বিভিন্ন পেশার মানুষ ও সেন্ট মার্টিনের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের নিয়ে মোট পাঁচ শতাধিক স্বেচ্ছাসেবক অংশ নেন। এই কর্মসূচির সহযোগিতায় ছিল ইউনিলিভার বাংলাদেশ।
কর্মসূচির সমন্বয়কারী মুনতাসির মামুন বলেন, দ্বীপের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে থাকা প্লাস্টিক বোতল, পলিথিন, প্যাকেটসহ নানা ধরনের বর্জ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। তার ভাষায়, “সেন্ট মার্টিন ছোট একটি দ্বীপ। এখানে প্রতিদিন জমতে থাকা প্লাস্টিক যদি মূল ভূখণ্ডে নিয়ে না যাওয়া হয়, তবে তা একসময় সমুদ্রের জন্য ভয়াবহ ঝুঁকি তৈরি করবে। আমাদের প্রচেষ্টা ছিল সেই ক্ষতির পরিমাণ যতটা সম্ভব কমানো।”
তিনি আরও বলেন, পর্যটনের সম্ভাবনাময় দ্বীপটিতে সারা বছর পর্যটক প্রবেশের সুযোগ রাখা যেতে পারে; তবে সেই সংখ্যা অবশ্যই নিয়ন্ত্রিত হওয়া উচিত। এতে পরিবেশের ওপর অতিরিক্ত চাপ পড়বে না।
সেন্ট মার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ছৈয়দ আলম কেওক্রাডং বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, “প্রায় ১৫ বছর ধরে তারা দ্বীপে পরিচ্ছন্নতার কাজ করে যাচ্ছে। স্থানীয় জনগণ ও পর্যটক সবাই সচেতন হলে সেন্ট মার্টিনকে বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব।”
একই মত প্রকাশ করেন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফয়েজুল ইসলাম। তিনি জানান, পর্যটন মৌসুমে হাজারো ভ্রমণপিপাসু এখানে আসেন। তাদের রেখে যাওয়া বর্জ্যই দ্বীপের পরিবেশগত ক্ষতির বড় কারণ। “এ ধরনের উদ্যোগ নিয়মিত হলে প্রবাল দ্বীপের সৌন্দর্য আগের মতোই অক্ষুণ্ণ থাকবে,” বলেন তিনি।
পরিচ্ছন্নতা অভিযানের আয়োজকরা জানান, এর আগেও তারা দ্বীপে একাধিকবার এমন কর্মসূচি হাতে নিয়েছেন। ভবিষ্যতেও পরিবেশ রক্ষায় এই কার্যক্রম অব্যাহত রাখার পরিকল্পনা রয়েছে।
দেশের বাজারে পেয়াজের দাম সহনীয় রাখতে আগামীকাল রোববার (৭ ডিসেম্বর) থেকে সীমিত পরিসরে পেঁয়াজ আমদানির জন্য অনুমোদন (আইপি) দিয়েছে সরকার।
এতে প্রতিদিন ৫০টি করে আইপি (আমদানি অনুমতি) ইস্যু করা হবে। প্রত্যেকটি আইপিতে সর্বোচ্চ ৩০ টন পেঁয়াজের অনুমোদন দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়।
শনিবার (৬ ডিসেম্বর) কৃষি মন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পেঁয়াজের বাজার সহনীয় রাখতে ৭ ডিসেম্বর থেকে সীমিত আকারে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি প্রদান করা হবে। প্রতিদিন ৫০টি করে আইপি (আমদানি অনুমতি) ইস্যু করা হবে। প্রত্যেকটি আইপিতে সর্বোচ্চ ৩০ টন পেঁয়াজের অনুমোদন দেওয়া হবে।
কৃষি মন্ত্রণালয় জানায়, ১ আগস্ট থেকে অদ্যাবধি যেসব আমদানিকারক রপ্তানি অনুমতির জন্য আবেদন করেছেন, কেবল তারাই আবেদন পুনরায় দাখিল করতে পারবেন।
এ ছাড়া একজন আমদানিকারক একবারের জন্য আবেদনের সুযোগ পাবেন বলেও জানানো হয়।
তাতে আরো জানানো হয়, পেঁয়াজের বাজার সহনীয় রাখতে পুনরাদেশ না দেওয়া পর্যন্ত এ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।
বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে লন্ডনে নেওয়ার জন্য নির্ধারিত এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ফ্লাইটকে ‘ভিভিআইপি’ হিসেবে অনুমোদন দিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষও ফ্লাইটের ল্যান্ডিং ক্লিয়ারেন্স দিয়েছে।
শনিবার (৬ ডিসেম্বর) বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক ক্যাপ্টেন এস এম রাগীব সামাদ।
তিনি জানান, বেগম খালেদা জিয়াকে নিতে ৯ ডিসেম্বর এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ঢাকায় পৌঁছাবে এবং ১০ ডিসেম্বর ঢাকা ত্যাগ করবে। ভিভিআইপি মুভমেন্ট বিবেচনায় রেখে ল্যান্ডিং থেকে টেকঅফ পর্যন্ত সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ও অপারেশনাল প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
রাগীব সামাদ বলেন, “ফ্লাইটের প্রয়োজনীয় রুট ও অবতরণের সময় নিশ্চিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সব সংশ্লিষ্ট ইউনিটকে সক্রিয় করে দেওয়া হবে। যেন কোনো ধরনের বিঘ্ন ছাড়াই এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের চলাচল সম্পন্ন করা যায়।”
এর আগে উন্নত চিকিৎসার জন্য গত জানুয়ারিতে লন্ডনে গিয়েছিলেন খালেদা জিয়া। সেখানে প্রথমে হাসপাতালে, পরে ছেলে তারেক রহমানের বাসায় থেকে তিনি চিকিৎসা নেন। প্রায় চার মাস পর গত ৬ মে তিনি দেশে ফেরেন।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া অসুস্থ অবস্থায় গত ২৩ নভেম্বর দিবাগত রাত থেকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।
জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের রায়েরবাজার কবরস্থানে দাফন করা অজ্ঞাত ১৮২ শহীদের মরদেহ উত্তোলনের প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে আগামী ৭ ডিসেম্বর (রবিবার)।
শহীদদের ডিঅক্সিরাইবোনিউক্লিক অ্যাসিড (ডিএনএ) নমুনা সংগ্রহে রবিবার থেকে কাজ শুরু করবে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ ডাক্তার লুইস ফন্ডেব্রিডার এবং সিআইডি প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মো. ছিবগাত উল্লাহসহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে এই কাজ শুরু হবে।
এর আগে গত ২ ডিসেম্বর রায়েরবাজার বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে অজ্ঞাত শহীদদের কবর পরিদর্শন করেন সিআইডির কর্মকর্তরা।
গত ৪ আগস্ট ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান পুলিশের আবেদনের প্রেক্ষিতে মরদেহ উত্তোলনের নির্দেশ দেন। পুলিশের পক্ষ থেকে আদালতে আবেদনটি করেন মোহাম্মদপুর থানার উপপরিদর্শক মাহিদুল ইসলাম।
আবেদনে বলা হয়, কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে শুরু হয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষ জীবন দেন।
সিআইডির ফরেনসিক ইউনিটের কর্মকর্তারা জানান, বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে জুলাই আন্দোলনে অজ্ঞাত শহীদদের মরদেহ উদ্ধারে কবরস্থান এলাকায় তাবু স্থাপন করা হয়েছে। সেখানেই মরদেহ উত্তোলন করার পর প্রক্রিয়াগত সব কাজ করা হবে।
এই অস্থায়ী তাবুতে ময়নাতদন্ত করা হবে। এরপর আবার মরদেহ যথাযথ প্রক্রিয়ায় দাফন করা হবে।
বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার চিকিৎসার বিষয়ে মেডিক্যাল বোর্ডের সর্বোচ্চ চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। আমরা আশাবাদী তিনি সুস্থ হয়ে উঠবেন বলে জানান বেগম খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন।
তিনি বলেন, এর আগে এর চেয়েও প্রতিকূল অবস্থায় খালেদা জিয়া সুস্থ হয়েছেন। ডা. জাহিদ দেশবাসীকে আহবান জানিয়ে বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের গুজবে কেউ বিভ্রান্ত হবেন না।
শনিবার (৬ ডিসেম্বর) বিকেলে বেগম খালেদা জিয়ার বর্তমান স্বাস্থ্য পরিস্থিতি নিয়ে এভারকেয়ার হাসপাতালের সামনে ব্রিফিংকালে তিনি একথা বলেন।
ডা. জাহিদ জানান, বোর্ডের পরামর্শক্রমে খালেদা জিয়াকে দেশের বাইরে নিতে চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। কিন্তু কাতার সরকার এয়ার অ্যাম্বুলেন্স পাঠানোর যে উদ্যোগ নিয়েছিল সেটা কারিগরি ত্রুটিতে আসতে পারেনি। পরবর্তীতে অন্য ব্যবস্থা নিলেও বোর্ডের সদস্যরা জরুরিভাবে সভা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন ওই মুহূর্তে ফ্লাই করা সঠিক হবে না। সেজন্য বিদেশ নেওয়ার বিষয়টি বিলম্বিত হচ্ছে। ভবিষ্যতে হয়তো শারীরিক অবস্থা বলে দেবে উনাকে কখন ও কবে নেওয়া যাবে।
তিনি বলেন, আমাদের মেডিকেল অ্যাম্বুলেন্স তৈরি আছে। দেশনেত্রীর চিকিৎসা ও শারীরিক অবস্থা ইউকে, আমেরিকা, চীন থেকে তার ফিজিক্যাল কন্ডিশনের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে। দেশের সব মানুষ তার সুস্থতা চায়। তার স্বাস্থ্যে আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার।
তিনি আরও বলেন, বেগম জিয়ার চিকিৎসায় তারেক রহমানও সার্বক্ষণিক সম্পৃক্ত আছেন। তার স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমান এখন ঢাকায় এসে সার্বক্ষণিক দেখভাল করছেন। তিনি নিজেও মেডিক্যাল বোর্ডের সদস্যদের পরামর্শ নিচ্ছেন। এ অবস্থার মধ্যে বোর্ডের সদস্যরা দৃঢতার সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলা করছেন। খালেদা জিয়া ফ্লাই করার অবস্থায় পৌঁছালেই চিকিৎসার জন্য লন্ডন নেওয়া হবে।
মার্কিন শুল্ক চাপে পোশাক রপ্তানিতে ইউরোপের বাজারের দিকে ঝুঁকছে চীন, ভারতসহ বাংলাদেশের প্রতিযোগী দেশগুলো। এতে তীব্র প্রতিযোগিতার মুখে পড়ছে দেশের পোশাক রপ্তানিকারকরা। সুযোগ বুঝে বিদেশি ক্রেতারা দিচ্ছেন দাম কমিয়ে। চলতি বছর ইউরোপের বড় ক্রেতা জার্মানিসহ ইউরোপের ১২টি দেশে কমেছে রপ্তানি। এতে বেশি বিপাকে পড়েছে ছোট ও মাঝারি পোশাক কারখানা।
ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে দরকষাকষির পর বাংলাদেশ থেকে পণ্য আমদানিতে শুল্ক হার ২০ শতাংশে নামলে শীর্ষ রপ্তানি খাত তৈরি পোশাক শিল্পে কিছুটা স্বস্তি ফিরে। বাড়তি শুল্ক ও মজুরির কারণে চীনের অনেক ক্রয়াদেশ বাংলাদেশে আসবে এমন প্রত্যাশাই ছিল পোশাক শিল্প মালিকদের। তবে মার্কিন অর্থনীতির মন্দাভাবের কারণে সে আশা পূরণ হয়নি।
অধিকাংশ আমদানিকারক ও ক্রেতা বাড়তি শুল্কের ভার নিতে রাজি না হওয়ায় সংকটে আছেন রপ্তানিকারককরা। ত্রিপক্ষীয় দরকষাকষি নিয়ে টানাপড়নে গত তিন মাসে ধারাবাহিকভাবে কমেছে ক্রয়াদেশ। সঙ্গে যুক্ত হয়েছে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা। নির্বাচনকে ঘিরে সম্ভাব্য রাজনৈতিক অস্থিরতার শঙ্কায় অর্ডার দিতে ভরসা পাচ্ছে না ক্রেতারা।
চট্টগ্রামের ক্লিফটন গ্রুপ ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মহিউদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘মনে করেছিলাম বাংলাদেশ একটি ভালো পর্যায়ে আছে ইন্ডিয়া এবং চায়নার তুলনায়। চাহিদা কম থাকায় আমাদের অর্ডার কম হচ্ছে। আমাদের খুব হার্ড টাইম যাচ্ছে।’
বিজিএমইএ পরিচালক সাইফুল্লাহ মনসুর বলেন, ‘রিটেইলাররা বলতেছে আমি কোনোভাবেই এটি ক্রেতাদের ওপর ইম্পজ করতে পারব না। ২০ শতাংশের অ্যাডজাস্টমেন্ট নিয়েই বড় শঙ্কা আমাদের। আর দ্বিতীয় বিষয়টি হলো বাংলাদেশে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা।’
বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের ৪৮ শতাংশ রপ্তানির হয় ইউরোপে। এ মহাদেশে এককভাবে সবচেয়ে বড় ক্রেতা জার্মানি। এছাড়া ফ্রান্স, বেলজিয়াম, ডেনমার্ক, সুইডেনসহ ১২টি দেশে রপ্তানি কমেছে তিন থেকে সবোর্চ্চ ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত। মার্কিন শুল্ক চাপের কারণে প্রতিযোগী অধিকাংশ দেশ ইউরোপে ঝুঁকে পড়ায় সেখানে মূল্য নিয়ে তীব্র প্রতিযোগিতার মুখে পড়তে হচ্ছে বাংলাদেশি রপ্তানিকারকদের। এ অবস্থায় কোন কোন দেশ কম মূল্য ক্রয়াদেশ নিলেও বন্দরের ট্যারিফসহ বিভিন্ন খাতে খরচ বাড়ায় বিপাকে বাংলাদেশি রপ্তানিকারকরা।
বিজিএমইএ সহ-সভাপতি রফিক চৌধুরী বলেন, ‘আগে যারা ইউরোপ মার্কেটে কাজ করত, ওদের সঙ্গে আমাদের এটি প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গেছে। কার থেকে কে কম প্রাইজে অর্ডার নিবে। এতে আমরা বিপদে পড়ে যাচ্ছি।’
বিজিএমইএ পরিচালক রাকিবুল আলম চৌধুরী বলেন, ‘ইন্ডিয়া মার্কেট যখন ইউরোপে যাচ্ছে তখন আমরা ইউরোপের অর্ডার কম পাচ্ছি। সেই সঙ্গে আমাদের টেরিফ কমেনি, লোকাল প্রাইজ বেড়ে যাচ্ছে। সেক্ষেত্রে কস্টিং এর দিক দিয়ে অন্যান্য কান্ট্রির সঙ্গে আমরা পারছি না। কারণ আমাদের কম্পিটিটর হলো বাহিরের কান্ট্রি।’
অর্ডার না থাকায় আর্থিক সংকটে অনেক কারখানা বেতন দিতে না পারলেও ব্যাংক থেকে সহযোগিতা পাচ্ছে না। সংকট কাটিয়ে উঠতে সরকারের কাছ থেকে নীতি সহায়তা ও স্বল্প সুদে ঋণ চান উদ্যোক্তারা।
বিজিএমই সহ-সভাপতি রফিক চৌধুরী বলেন, ‘খারাপ সময় যাচ্ছে। বেতন দিতে পারছে না সঠিকভাবে। ব্যাংকগুলোও আর সেভাবে এগিয়ে আসছে না সাপোর্ট দিতে। ৫টি ব্যাংককে একসঙ্গে মার্জ করাতে কোনো ফান্ডই পাওয়া যাচ্ছে না।’
বিজিএমইএ পরিচালক সাইফুল্লাহ মনসুর বলেন, ‘ব্যাংকের যে সহযোগিতা এক্সপোর্টারদের দেয়া দরকার আমরা নতুন কিছুই চাচ্ছি না। পৃথিবীতে এক্সপোর্টদের যেভাবে নার্সিং করে বাংলাদেশে সেভাবে করে না। সরকারের পক্ষ থেকে আমাদের যদি সহায়তা করা হয় তাহলে আমাদের আরও ভালো হবে।’
২০২৫-২৬ অর্থবছরে পোশাক রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা প্রায় ৪৫ বিলিয়ন ডলার। অক্টোবর পর্যন্ত অর্থবছরের প্রথম চার মাসে রপ্তানি হয়েছে প্রায় ১৩ বিলিয়ন ডলার।
বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মেডিকেল বোর্ড সবুজ সংকেত দিলেই ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেবে কাতারের রয়েল এয়ার অ্যাম্বুলেন্স।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এনামুল হক চৌধুরী গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানিয়েছেন। দলের পক্ষ থেকে কাতারের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে তিনিই এই বিষয়ে সার্বক্ষনিক যোগাযোগ রক্ষা করছেন।
এনামুল হক চৌধুরী বলেন, ‘ম্যডামের মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্তক্রমে কাতারের রয়েল অ্যাম্বুলেন্স বাংলাদেশ আসবে। তারা এখন সেইভাবে প্রস্তুত আছেন। মেডিকেল বোর্ড যখনই সিদ্ধান্ত জানাবে তখনই এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হবে এবং বেগম জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডন নিয়ে যাবে। সবকিছুই কাতার কর্তৃপক্ষ অ্যারেজমন্ট করেছে।’
জার্মানি থেকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স আনার বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা নই, কাতার কর্তৃপক্ষই জার্মানি থেকে একটি অত্যাধুনিক এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের অ্যারেজমেন্ট করে দিচ্ছে।
এনামুল হক জানান, বিএনপি চেয়ারপারসন ও বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রীর জন্য রয়েল কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধায়নে সবকিছু করা হচ্ছে। এখানে আমাদের কিছু নেই।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া শারীরিক অবস্থা আগের মতই আছে। মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে বেগম খালেদা জিয়াকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখে চিকিৎসা দিচ্ছেন।
একাধিক চিকিৎসকের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, বিএনপি চেয়ারপারসন এখনও ফ্লাই করার সক্ষমতা অর্জন করেননি। সেজন্য লন্ডন যাত্রা বিলম্ব হচ্ছে।
তারা আরও জানান, গত দু’দিনে মেডিকেল বোর্ড কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছে। সেগুলোর প্রতিবেদনও তারা পর্যালোচনা করছেন। গতকাল (শুক্রবার) দু’দফা মেডিকেল বোর্ডের বৈঠক হয়। প্রতিদিনই বোর্ডের সভায় খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার নিয়মিত প্রতিবেদনগুলো পর্যালোচনা করা হচ্ছে।
গত ২৩ নভেম্বর থেকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চকিৎসাধীন আছেন বেগম খালেদা জিয়া।
অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে একদল বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সমন্বয়ে মেডিকেল বোর্ড তাঁর চিকিৎসা দিচ্ছে। তারেক রহমানের সহধর্মিনী ডা. জুবাইদা রহমানও সেই বোর্ডের সদস্য।
বেগম খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডন নিয়ে যেতে শুক্রবার ডা. জুবাইদা ঢাকায় এসে পৌঁছান।সূত্র : বাসস
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, রাষ্ট্র ও সমাজে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা করতে আমাদের নিরলস চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। স্বৈরাচার পতন ও গণতন্ত্র মুক্তি দিবস উপলক্ষে শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) দেওয়া বাণীতে তিনি এ কথা বলেন।
তারেক রহমান বলেন, অবিস্মরণীয় একটি দিন ৬ ডিসেম্বর। ১৯৯০ সালের এ দিনে রক্তাক্ত পিচ্ছিল পথে অবসান হয়েছিল স্বৈরশাসনের। এরশাদ বিরাশির ২৪ মার্চ পেশাগত বিশ্বস্ততা ও শপথ ভেঙে অস্ত্রের মুখে নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আব্দুস সাত্তারকে ক্ষমতাচ্যুত করে গণতন্ত্র হত্যা করে জারি করেছিলেন অসাংবিধানিক শাসন; যে সাংবিধানিক রাজনীতি ছিল বহুদলীয় গণতন্ত্রের নিশ্চয়তা, যার সূচনা করেছিলেন স্বাধীনতার মহান ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান।
তারেক রহমান বলেন, একনায়ক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেন। গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে দীর্ঘ ৯ বছর দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে নিরন্তর সংগ্রাম চালিয়ে আপসহীন নেত্রী হিসেবে খ্যাতি লাভ করেন। গড়ে তোলেন এক দুর্বার গণআন্দোলন। এরই ধারাবাহিকতায় নব্বইয়ের ৬ ডিসেম্বর এই দিনে ছাত্র-জনতার মিলিত শক্তিতে স্বৈরাচারকে পরাজিত করে মুক্ত হয়েছিল গণতন্ত্র।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, অর্জিত গণতন্ত্রের চেতনায় আবারও ছাত্র-জনতা ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট এক হিংস্র ফ্যাসিবাদী শক্তিকে পরাস্ত করে। ঐতিহাসিকভাবেই ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ ছিল গণতন্ত্রের ভয়ংকর শত্রু। ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার দুঃশাসনের অবসানের পর আবারও গণতন্ত্রের সম্পূর্ণ পুনরুজ্জীবন এবং রাষ্ট্র ও সমাজে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা করতে আমাদের নিরলস সংগ্রাম অব্যাহত রাখতে হবে।
তারেক রহমান বলেন, শেখ হাসিনার দুঃশাসনে ‘গণতন্ত্রের মা’ দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ওপর জেল-জুলুমসহ নানামাত্রিক নিপীড়ন নামিয়ে আনা হয়েছিল। অবিরাম নির্যাতনের কষাঘাতে অসুস্থ দেশনেত্রীর জীবন এখন চরম সংকটে। আল্লাহর কাছে তার সুস্থতা কামনা করছি। এছাড়া দেশের জাতীয়তাবাদী শক্তির লাখ লাখ নেতাকর্মীকে সীমাহীন অত্যাচার-নির্যাতন করা হয়েছিল। সারাদেশ অবরুদ্ধ করা হয়েছিল।
তিনি বলেন, আজকের এ দিনে আমি ‘৮২ থেকে ৯০’ পর্যন্ত রক্তস্নাত স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে আত্মদানকারী বীর শহীদদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই এবং তাদের রুহের মাগফিরাত কামনা করি। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের এ স্মরণীয় দিনে আমি শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাই স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী গণতন্ত্রের হেফাজতকারী দেশবাসীকে। গণতন্ত্রবিরোধী পরাজিত শক্তির যাতে আর পুনরুত্থান না ঘটে, সেজন্য গণতান্ত্রিক শক্তিকে সবসময় ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানাই।
বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য লন্ডনে নিয়ে যেতে জার্মানি থেকে একটি এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ঢাকায় আসছে। কাতার সরকারের ব্যবস্থাপনায় জার্মানি থেকে আনা এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে শনিবার (৬ ডিসেম্বর) বিকেলে খালেদা জিয়াকে নিয়ে চিকিৎসার জন্য লন্ডনের উদ্দেশে রওনা হওয়ার কথা রয়েছে।
ঢাকায় কাতার দূতাবাসের জনসংযোগ কর্মকর্তা আসাদুর রহমান আসাদ বলেন, কাতার সরকারের ব্যবস্থাপনায় জার্মানি থেকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ঢাকায় আসছে। শনিবার বিকেলে ওই এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ঢাকায় পৌঁছানোর কথা রয়েছে।
এ বিষয়ে বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান বলেন, কাতার রাজপরিবারের এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটিতে কারিগরি ত্রুটি থাকায় কাতারের আমির তার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী অন্য একটি এয়ার অ্যাম্বুলেন্স পাঠাচ্ছেন, যা শনিবার বিকেল ৫টায় ঢাকায় অবতরণ করবে।
তিনি দাবি করেন, এখন যে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি আসছে, সেটিও কাতারের এয়ার অ্যাম্বুলেন্স কিন্তু জার্মান কোম্পানির তৈরি। কাতার জার্মানি থেকে কোনো এয়ার অ্যাম্বুলেন্স বাংলাদেশে পাঠাচ্ছে না।
ঢাকার একটি কূটনৈতিক সূত্র জানায়, জার্মান প্রাইভেট এয়ার অ্যাম্বুলেন্স কোম্পানি ‘এফএআই রেন্ট এ জেট জিএমবিএইচ’-এর সিএল৬০ (বোম্বার্ডিয়ার চ্যালেঞ্জার ৬০০ সিরিজ) জেটে খালেদা জিয়াকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে নিয়ে লন্ডনের উদ্দেশ্যে রওনা হবে।
বিমানটি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে জর্জিয়ার রাজধানী তিবলিসি হয়ে সরাসরি লন্ডন যাবে। শনিবার (৬ ডিসেম্বর) বিকেলেই এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটির খালেদা জিয়াকে নিয়ে রওনা দেওয়ার কথা রয়েছে।
খালেদা জিয়াকে শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) ভোরে লন্ডনে নেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কারিগরি সমস্যার কারণে গত বৃহস্পতিবার কাতারের এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি আসেনি।
শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) সকালে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, কারিগরি ত্রুটির কারণে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স শুক্রবার আসছে না। সব ঠিক থাকলে সেটা শনিবার পৌঁছাতে পারে।
তিনি আরও বলেন, ম্যাডামের শরীর যদি যাত্রার উপযুক্ত থাকে এবং মেডিকেল বোর্ড যদি সিদ্ধান্ত দেয়, তাহলে ইনশাআল্লাহ ৭ তারিখ (রোববার) ফ্লাই করবেন।
এর আগে উন্নত চিকিৎসার জন্য গত জানুয়ারিতে লন্ডনে গিয়েছিলেন খালেদা জিয়া। সেখানে প্রথমে হাসপাতালে, পরে ছেলে তারেক রহমানের বাসায় থেকে তিনি চিকিৎসা নেন। প্রায় চার মাস পর গত ৬ মে তিনি দেশে ফেরেন।
গত ২৩ নভেম্বর রাতে শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরীক্ষায় ফুসফুসে সংক্রমণ ধরা পড়ায় তাকে ভর্তি করা হয়। গত রোববার ভোরের দিকে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে এসডিইউ থেকে সিসিইউতে নেওয়া হয়।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারকের (এমওইউ) আলোকে দেশটি থেকে ৬০ হাজার ৯৫০ মেট্রিক টন গমবাহী জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে পৌঁছেছে।
শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) খাদ্য মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়, বাংলাদেশ ইতোমধ্যে সরকার টু সরকার (জি টু জি) ভিত্তিতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে গম আমদানি কার্যক্রম শুরু করছে। এই চুক্তির আওতায় মোট ৪ লাখ ৪০ হাজার মেট্রিক টন গম আমদানি করা হবে, যার প্রথম চালানে ৫৬ হাজার ৯৫৯ মেট্রিক টন গম গত ২৫ অক্টোবর, দ্বিতীয় চালানে ৬০ হাজার ৮০২ মেট্রিক টন গম ৩ নভেম্বর তারিখে এবং তৃতীয় চালানে ৬০ হাজার ৮৭৫ মেট্রিক টন গম ১৫ নভেম্বর দেশে পৌঁছেছে।
এবারেরটি আমদানিকৃত গমের চতুর্থ চালান। চুক্তি মোতাবেক ৪ লাখ ৪০ হাজার মেট্রিক টন গমের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র থেকে চারটি চালানে মোট ২ লাখ ৩৯ হাজার ৫৮৬ মেট্রিক টন গম দেশে পৌঁছেছে।
খাদ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, জাহাজে রাখা গমের নমুনা পরীক্ষার কার্যক্রম ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। গমের নমুনা পরীক্ষা শেষে দ্রুত তা খালাসের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
উন্নত চিকিৎসার জন্য বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে লন্ডনে নেওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়েছে। কাতারের পাঠানো এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে লন্ডনে যাবেন তিনি।
এদিকে বেগম জিয়াকে চিকিৎসার জন্য লন্ডনে নিতে যুক্তরাজ্যের স্থানীয় সময় গতকাল বৃহস্পতিবার বাংলাদেশের পথে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্ত্রী জুবাইদা রহমান রওনা দেওয়ার খবর পাওয়া যায়। অন্যদিকে খালেদা জিয়াকে নেওয়ার জন্য কাতারের আমিরের পাঠানো এয়ার অ্যাম্বুলেন্স গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকায় এলে আজ শুক্রবার ভোর ৪টা থেকে ৬টার মধ্যে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটিতে লন্ডনে যাওয়ার কথা থাকলেও তা কিছুটা বিলম্ব হয়েছে বলে জানা যায়।
গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা ৩টার আগে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে সাংবাদিকদের বেগম জিয়ার চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন এ তথ্য জানিয়েছিল।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুসারে তাকে লন্ডনে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয় বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
এদিকে গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা ৩টার পরে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ব্রিফ করেন। তিনি জানান, ‘বৃহস্পতিবার (গতকাল) রাতের মধ্যেই কাতারের আমিরের পাঠানো এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি ঢাকায় এসে পৌঁছাবে। শুক্রবার (আজ) ভোরের মধ্যে খালেদা জিয়াকে নিয়ে এটি লন্ডন যাত্রা করবে।’
এদিকে ব্রিফিংয়ে জাহিদ হোসেন বলেন, ‘মেডিকেল বোর্ডের সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত এবং খালেদা জিয়ার বর্তমান শারীরিক অবস্থার ভিত্তিতে তাকে কাতার রয়্যাল এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে লন্ডনের একটি নির্ধারিত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে।’
জাহিদ হোসেন আরও বলেন, ‘বিমানে যাতে যেকোনো প্রতিকূলতার মধ্যেও তাকে সুস্থভাবে চিকিৎসা দেওয়া যায়, সেই লক্ষ্যে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে।’
খালেদা জিয়ার বর্তমান শারীরিক পরিস্থিতি জানতে চাইলে জাহিদ হোসেন বলেন, ‘মেডিকেল বোর্ডের পরামর্শের বাইরে কিছু চিন্তা করা হচ্ছে না। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের নিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার তিনবার ভার্চুয়ালি মিটিং করা হয়েছে। যুক্তরাজ্য ও চীনের চিকিৎসকরা সশরীর দেখেছেন। তাদের সবার সঙ্গে সর্বশেষ আলোচনা হয়েছে। খালেদা জিয়াকে লন্ডনে উন্নত চিকিৎসাসেবা দিতে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি পাঠাবে কাতার। গতকাল বৃহস্পতিবার কাতার সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের কাছে এ বিষয় নিশ্চিত করে।’
এদিকে কাতারের আমিরের বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্স গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকায় পৌঁছানোর কথা এদিন বিকেলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ কথা বলেছিলেন। তবে সন্ধ্যার পর দলটির মিডিয়া উইং জানিয়েছে, এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে কিছু টেকনিক্যাল (কারিগরি) সমস্যা দেখা দিয়েছে। এ কারণে এর যাত্রা বিলম্বিত হয়।
অবশ্য বিএনপির সূত্র বলছে, এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ঢাকায় পাঠানোর জন্য দ্রুত প্রস্তুত না হলে কাতার কর্তৃপক্ষ খালেদা জিয়াকে লন্ডনে নিতে বিকল্প ব্যবস্থা করার কথাও চিন্তা করছে।
এদিকে লন্ডনের স্থানীয় সময় গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় (বাংলাদেশের সময় অনুযায়ী প্রায় মধ্যরাত) জুবাইদা রহমান ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন বলে বিএনপির সূত্রগুলো জানিয়েছে। তারা বলেছে, আজ শুক্রবার দিনের প্রথমার্ধে তিনি ঢাকায় পৌঁছাতে পারেন। পরে শাশুড়িকে দেখতে সরাসরি ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে যেতে পারেন জুবাইদা রহমান। খালেদা জিয়ার সঙ্গে লন্ডন-যাত্রায়ও শরিক হতে পারেন চিকিৎসক জুবাইদা।
এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের উপদেষ্টা মাহদী আমিন নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে এক পোস্টে জানান, জুবাইদা রহমান বৃহস্পতিবারই বাংলাদেশের উদ্দেশে রওনা হচ্ছেন। তিনি লেখেন, ‘জুবাইদা রহমান দেশের উদ্দেশে রওনা হয়ে কাল (শুক্রবার) সকালে ঢাকা পৌঁছানোর চেষ্টা করবেন, যেন সঙ্গে থেকে দেশনেত্রীকে কাতারের অত্যাধুনিক এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে লন্ডন নিয়ে যেতে পারেন। তবে তার আগেই যদি ফ্লাইটের ব্যবস্থা করা যায় কিংবা তার আসা না হয়, সেই বিবেচনায় লন্ডনের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রিচার্ড বিল ইতোমধ্যে ঢাকায় এসেছেন। ম্যাডামের পুত্রবধূ সৈয়দা শামিলা রহমান, কয়েকজন চিকিৎসক ও কর্মকর্তাও এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে সার্বক্ষণিক পাশে থাকবেন বলে জানা গেছে।’
এদিকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকায় কাতার দূতাবাস পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গত ৩০ নভেম্বরের কূটনীতিক পত্রের অনুরোধে সম্মতি জানিয়েছে।
এর আগে ২৯ নভেম্বর এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করতে বিএনপির পক্ষ থেকে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঢাকায় কাতারের রাষ্ট্রদূত সেরাইয়া আলী আল কাহতানির কাছে চিঠি লেখেন। পরদিন ৩০ নভেম্বর গুরুতর অসুস্থ বিএনপি চেয়ারপারসনের লন্ডনে উন্নত চিকিৎসা নিশ্চিতের জন্য জরুরি ভিত্তিতে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করার অনুরোধ জানায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
ওই চিঠিতে চিকিৎসা নিতে গত জানুয়ারিতে লন্ডনে যাত্রার সময় খালেদা জিয়ার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করায় কাতারের আমিরের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানো হয়। সেবার জানুয়ারিতে ঢাকা থেকে লন্ডন এবং মে মাসে লন্ডন থেকে ঢাকায় খালেদা জিয়াকে কাতার রয়েল এয়ার অ্যম্বুলেন্সের মাধ্যমে যাতায়াত করানো হয়েছিল।
বেগম জিয়ার সঙ্গে ১৪ জন, থাকবেন পুত্রবধূ শামিলা ও ছয় চিকিৎসক
এদিকে বিএনপির দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানিয়েছে, খালেদা জিয়ার সঙ্গে লন্ডন যাত্রায় থাকবেন ১৪ জন। ওই সূত্র জানায়, খালেদা জিয়ার সঙ্গে যে ১৪ জন যাচ্ছেন তারা হলেন, খালেদা জিয়ার পুত্রবধূ সৈয়দা শামিলা রহমান, চিকিৎসক আবু জাফর মো. জাহিদ হোসেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মোহাম্মদ এনামুল হক চৌধুরী, চিকিৎসক ফখরুদ্দিন মোহাম্মদ সিদ্দিকি, চিকিৎসক মো. শাহাবুদ্দিন তালুকদার, চিকিৎসক নূরউদ্দিন আহমদ, চিকিৎসক মো. জাফর ইকবাল, চিকিৎসক মোহাম্মদ আল মামুন, স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের (এসএসএফ) হাসান শাহরিয়ার ইকবাল, স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের সৈয়দ সামিন মাহফুজ, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সহকারী মো. আবদুল হাই মল্লিক, সহকারী ব্যক্তিগত সচিব মো. মাসুদুর রহমান, গৃহকর্মী ফাতেমা বেগম ও গৃহকর্মী রূপা শিকদার।
১২ দিন ধরে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তার শারীরিক অবস্থা অপরিবর্তিত রয়েছে বলে জানা গেছে। তাকে নিয়ে দেশের মানুষ উদ্বেগে রয়েছে। দেশজুড়ে খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনা দোয়া-মাহফিল ও মোনাজাতের আয়োজন চলছে। দলীয় নেতা-কর্মীরা ছাড়াও দেশের সাধারণ মানুষ দোয়া করতে থাকেন তাদের প্রিয় নেত্রীর জন্য। এছাড়া এভারকেয়ার হাসপাতালের সামনে দিনরাত নেতা-কর্মীদের ভিড় দেখা যায়।
এভারকেয়ার হাসপাতালের একটি সূত্র জানায়, অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে গঠিত মেডিকেল বোর্ডের অধীন খালেদা জিয়ার চিকিৎসা কার্যক্রম চলে।
বিএনপির একটি সূত্র জানায়, খালেদা জিয়ার ফুসফুসে সংক্রমণের কারণে যে জটিলতা তৈরি হয়েছিল, সেটা কিছুটা উন্নতির দিকে। তবে হৃদযন্ত্রে জটিলতা রয়েছে। বাকি সমস্যাগুলো অনেকটাই অপরিবর্তিত।
২৩ নভেম্বর রাতে শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরীক্ষায় ফুসফুসে সংক্রমণ ধরা পড়ায় তাকে ভর্তি করা হয়। গত রোববার ভোরের দিকে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে এসডিইউ থেকে সিসিইউতে নেওয়া হয়।
খালেদা জিয়ার চিকিৎসার সহায়তায় যুক্তরাজ্যের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রিচার্ড বিয়েল গত বুধবার বিকেলে ঢাকায় আসেন। তার চিকিৎসায় সহায়তা করতে যোগ দেন চীন থেকে আসা চার সদস্যের আরেকটি চিকিৎসক দল।
দেশের একদল বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিনস হাসপাতালের চিকিৎসক এবং লন্ডন ক্লিনিকের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সমন্বয়ে গঠিত মেডিকেল বোর্ডের অধীন খালেদা জিয়ার চিকিৎসা চলে। তার চিকিৎসায় সহায়তা করতে গত ১ ডিসেম্বর চীনের চিকিৎসকদের পাঁচ সদস্যের একটি অগ্রবর্তী দল ঢাকায় আসে।
এর আগে উন্নত চিকিৎসার জন্য গত জানুয়ারি মাসে লন্ডনে গিয়েছিলেন খালেদা জিয়া। সেখানে প্রথমে হাসপাতালে, পরে ছেলে তারেক রহমানের বাসায় থেকে তিনি চিকিৎসা নেন। প্রায় চার মাস পর গত ৬ মে তিনি দেশে ফেরেন।